আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। গত সপ্তাহে আমরা এমন এক সাফল্য অর্জন করলাম যা আমাদের সবাইকে গর্বিত করেছে। আপনারা হয়ত শুনেছেন যে ভারত গত সপ্তাহে চারশো বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৩০ লক্ষ কোটি টাকার রপ্তানীর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। প্রাথমিক ভাবে শুনে মনে হয় যে আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত একটা ব্যাপার, কিন্তু এটা আর্থিক ব্যবস্থার থেকেও বেশি, ভারতের সামর্থ্য, ভারতের সম্ভাবনার সঙ্গে যুক্ত বিষয়। এক সময় ভারত থেকে রপ্তানীর পরিমাণ কখনও একশো বিলিয়ন, কখনও দেড়শো বিলিয়ন, কখনও দু’শো বিলিয়ন হত, আর আজ, ভারত চারশো বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছে। এর একটা অর্থ হল যে ভারতে তৈরি জিনিসের চাহিদা বাড়ছে বিশ্বজুড়ে, দ্বিতীয় অর্থ হল যে ভারতের সরবরাহ শৃঙ্খল দিনে-দিনে শক্তিশালী হয়ে উঠছে আর এর একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও রয়েছে। দেশ, বড় পদক্ষেপ তখনই নেয় যখন স্বপ্নের থেকেও বড় হয়ে ওঠে সঙ্কল্প। যখন রাতদিন নিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্কল্পের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন সেই সঙ্কল্প বাস্তবায়িতও হয়, আর আপনারা দেখুন, কোনও ব্যক্তির জীবনেও তো এমনটাই হয়। যখন কারও সঙ্কল্প, তাঁর চেষ্টা , তাঁর স্বপ্নের থেকেও বড় হয়ে যায় তখন সফলতা নিজে পায়ে হেঁটে তাঁর কাছে আসে।
বন্ধুগণ, দেশের নানা কোণ থেকে নতুন-নতুন পণ্য এখন বিদেশে যাচ্ছে। অসমের হাইলাকান্দির চামড়ার তৈরি পণ্য হোক বা উসমানাবাদের তাঁতের পণ্য, বীজাপুরের ফল-সব্জি হোক বা চন্দৌলির ব্ল্যাক রাইস, সবকিছুর রপ্তানী বাড়ছে। এখন লাদাখের বিশ্বখ্যাত অ্যাপ্রিকট আপনি দুবাইতেও পাবেন আর সৌদি আরবে তামিলনাড়ুর থেকে পাঠানো কলা পাওয়া যাবে। এখন সবথেকে বড় কথা হল যে নতুন-নতুন পণ্য, নতুন-নতুন দেশে পাঠানো হচ্ছে। যেমন হিমাচল, উত্তরাখণ্ডে উৎপন্ন বাজরা জাতীয় মোটা দানার শস্যের প্রথম কিস্তি ডেনমার্কে রপ্তানী করা হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা আর চিত্তুর জেলার বঙ্গনপল্লী আর সুবর্ণরেখা আম দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানী করা হয়েছে। ত্রিপুরা থেকে তাজা কাঁঠাল আকাশপথে লণ্ডনে রপ্তানী করা হয়েছে, আরও কী, প্রথম বার নাগাল্যাণ্ডের রাজালঙ্কা লণ্ডনে পাঠানো হয়েছে। এইভাবেই ভালিয়া গমের প্রথম কিস্তি গুজরাত থেকে কেনিয়া আর শ্রীলঙ্কায় রপ্তানী করা হয়েছে। অর্থাৎ, এখন আপনি অন্য দেশে গেলে, আগের থেকে অনেক বেশি মেড ইন ইণ্ডিয়া পণ্য আপনার চোখে পড়বে।
বন্ধুগণ, এই তালিকা অনেক লম্বা আর যত লম্বা এই তালিকা, ততটাই বড়ো মেক ইন ইণ্ডিয়ার শক্তি, ততটাই বিরাট ভারতের সামর্থ্য, আর সামর্থ্যের ভিত্তি – আমাদের কৃষক, আমাদের কারিগর, আমাদের তন্তুবায় শিল্পী, আমাদের ইঞ্জিনীয়ার, আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, আমাদের অতি ক্ষুদ্র , ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পোদ্যোগ, বিভিন্ন পেশার অনেক মানুষ, এঁরা সব এর সত্যিকারের শক্তি। এঁদের পরিশ্রমেই চারশো বিলিয়ন ডলারের রপ্তানীর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে আর আমি খুশী যে ভারতের মানুষের এই সামর্থ্য বিশ্বের কোণায়-কোণায়, নতুন বাজারে পৌঁছচ্ছে। যখন এক-একজন ভারতবাসী লোকালের জন্য ভোকাল হন তখন লোকালের গ্লোবাল হতে দেরি হয় না। আসুন, আমরা স্থানীয় পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে নিয়ে যাই আর আমাদের উৎপাদিত বস্তুর খ্যাতি আরও বাড়াই।
বন্ধুরা, 'মন কি বাত'-এর শ্রোতাদের এটা জেনে ভালো লাগবে যে দেশীয় পর্যায়েও আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সাফল্য আমাদের গর্বিত করে। আজ আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সরকারি স্তরে ক্রয়-এর জন্য গভর্নমেন্ট ই-মার্কেট প্লেস অর্থাৎ জিইএম- এর বড় অংশীদার। প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। গত এক বছরে জিইএম পোর্টাল-এর মাধ্যমে সরকার, এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি কেনাকাটা করেছে। দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, ছোটো দোকানদার তাদের পণ্য সরাসরি সরকারের কাছে বিক্রি করেছে। একটা সময় ছিল যখন শুধুমাত্র বড় কোম্পানিগুলিই সরকারের কাছে পণ্য বিক্রি করতে সক্ষম হতো। কিন্তু এখন দেশ বদলাচ্ছে, পুরনো ব্যবস্থাও বদলাচ্ছে। এখন ছোটোর চেয়ে ছোট দোকানদাররাও তাদের পণ্য জিইএম পোর্টালের মাধ্যমে সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারে। এটাই নতুন ভারত। সে শুধু বড় স্বপ্নই দেখে না, সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর সাহসও দেখায়, যেখানে আগে কেউ আসেনি। এই সাহসের জোরেই আমরা ভারতীয়রা আত্ম নির্ভর ভারতের স্বপ্ন পূরণ করব।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সাম্প্রতিক পদ্ম পুরস্কার অনুষ্ঠানে আপনারা নিশ্চয়ই বাবা শিবানন্দজিকে দেখেছেন। ১২৬ বছর বয়সী প্রবীনের উচ্ছ্বাস দেখে আমার মতো সবাই নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন, আর আমি দেখলাম, কিভাবে এক নিমেষে তিনি নন্দী মুদ্রায় প্রণাম করতে লাগলেন। আমিও বাবা শিবানন্দজিকে নত হয়ে বারবার প্রণাম করলাম। ১২৬ বছর বয়সী বাবা শিবানন্দের বয়স এবং ফিটনেস, দুটোই, আজ দেশে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকের মন্তব্য দেখলাম, যে বাবা শিবানন্দ তাঁর বয়সের চেয়ে চার গুণ কম বয়সীদের চেয়েও ফিট। সত্যিই, বাবা শিবানন্দের জীবন আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে। আমি তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করছি। ওঁর মধ্যে যোগব্যায়ামের প্রতি একটা আলাদা আবেগ আছে এবং তিনি খুব স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন।
জীবেম শরদহ্ শতম্।
আমাদের সংস্কৃতিতে সকলকে সুস্থ জীবনসহ শতায়ু হওয়ার শুভকামনা প্রদান করা হয়। আমরা ৭ই এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করব। আজ সমগ্র বিশ্বে স্বাস্থ্য নিয়ে ভারতীয় চিন্তাধারা, সেটা যোগ হোক অথবা আয়ুর্বেদ, সব কিছুর প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে। আপনারা দেখেছেন যে গত সপ্তাহে কাতারে একটি যোগ অনুশীলনের কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছিল। এতে ১১৪টি দেশের নাগরিকরা অংশগ্রহণ করে নতুন ওয়ার্ল্ড রেকর্ড তৈরি করেছেন। এভাবেই আয়ুস শিল্পের বিপণন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ৬বছর আগে আয়ুর্বেদের সঙ্গে যুক্ত ওষুধের বাজার ২২,০০০ কোটি টাকার কাছাকাছি ছিল। এখন আয়ুষ উৎপাদন শিল্প প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে সম্ভাবনা অনবরত বেড়েই চলেছে। স্টার্ট আপসের দুনিয়াতেও আয়ুষ আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে।
বন্ধুরা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের অন্য স্টার্ট আপসের সম্বন্ধে তো আমি আগেও অনেকবার কথা বলেছি, কিন্তু এইবার আয়ুস স্টার্ট আপস নিয়ে আপনাদের সঙ্গে বিশেষভাবে কথা বলব। একটা স্টার্ট আপ রয়েছে যার নাম কপিভা। এই নামের মধ্যেই এর অর্থ লুকিয়ে রয়েছে - ক এর অর্থ কফ, পি এর অর্থ পিত্ত, এবং বা এর অর্থ বাত। এই স্টার্টআপ আমাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য গড়ে উঠেছে। আরেকটি স্টার্টআপ নিরোগ-স্ট্রীট রয়েছে, আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ব্যবস্থার এক আশ্চর্য ধারণা। এখানে প্রযুক্তি ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা সারা পৃথিবীর আয়ুর্বেদ ডাক্তারদের সরাসরি সাধারন মানুষদের সঙ্গে যুক্ত করে। ৫০ হাজারেরও বেশি চিকিৎসক এর সঙ্গে যুক্ত। এমনই আত্রেয় ইনোভেশন একটি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের প্রযুক্তি সংক্রান্ত স্টার্ট আপ যা সর্বাঙ্গীণ সুস্থতার জন্য কাজ করছে। ইক্সোরিয়েল কেবলমাত্র অশ্বগন্ধা প্রয়োগ নিয়েই সচেতনতা বৃদ্ধি করেনি বরং উন্নত গুণমানের পণ্যসামগ্রীর বিষয়েও বড় মাত্রা যোগ করেছে। কিওরভেদাও শেকড়-বাকড় এর আধুনিক প্রয়োগ এবং এ বিষয়ের ঐতিহ্য ও জ্ঞানের সমন্বয়ে সর্বাঙ্গীণ জীবনযাত্রা নিয়ে ডায়েটরি সাপ্লিমেন্টসের তৈরি করেছে।
বন্ধুরা, আমি মাত্র কয়েকটা নাম বললাম, এই লিস্ট আসলে অনেক লম্বা। এটি ভারতের তরুণ উদ্যম এবং ভারতে তৈরি নতুন সম্ভাবনার প্রতীক। আমার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নতুন শিল্পোদ্যোগ বা স্টার্ট-আপ্সের বিশেষতঃ আয়ুষ স্টার্ট-আপ্সের কাছে একটা অনুরোধ রয়েছে। আপনারা অনলাইনে যে কোনও পোর্টাল তৈরি করুন, যা কিছু বিষয়বস্তু রচনা করুন করুন, তা রাষ্ট্রসঙ্ঘের মান্যতা প্রাপ্ত সবকটি ভাষায় তৈরি করার চেষ্টা করুন। বিশ্বে এমন বহু দেশ রয়েছে যেখানে ইংরাজি না বিশেষ বলা হয়, না কেউ বিশেষ বোঝে। সেই সব দেশের কথা মাথায় রেখে আপনারা তথ্যের প্রচার-প্রসার করুন। আমার বিশ্বাস, ভারতের আয়ুষ স্টার্ট-আপ্সের উন্নত গুণমানের পণ্য খুব শীঘ্রই বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।
বন্ধুরা, স্বাস্থ্যের সঙ্গে স্বচ্ছতার সোজাসুজি সম্পর্ক রয়েছে। "মন কি বাত"-এ আমরা সবসময় স্বচ্ছতায় আগ্রহীদের বিভিন্ন প্রচেষ্টা সম্পর্কে বলি। এমনি একজন স্বচ্ছতাগ্রহী হলেন চন্দ্রকিশোর পাতিলজি। উনি মহারাষ্ট্রের নাসিকে থাকেন। চন্দ্রকিশোরজি স্বচ্ছতা সম্পর্কে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তিনি গোদাবরী নদীর তীরে দাঁড়িয়ে জনসাধারণকে নদীতে আবর্জনা না ফেলতে উদ্বুদ্ধ করেন। যদি কাউকে আবর্জনা ফেলতে দেখেন, তৎক্ষণাৎ তাকে বারণ করেন। এই কাজে চন্দ্রকিশোরজি নিজের অনেক সময় ব্যয় করেন। বিকেল অব্দি তাঁর কাছে স্তুপাকৃত আবর্জনার জমা হয়ে যায়, যা সবাই নদীর জলে ফেলার জন্য এনেছিল। চন্দ্রকিশোরজির এই প্রচেষ্টা, সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং অনুপ্রেরণাও যোগায়। এই রকম আরো একজন স্বচ্ছতাগ্রহী - উড়িষ্যার পুরীর রাহুল মহারাণা। রাহুল প্রতি রবিবার সকাল-সকাল পুরীতে তীর্থ ক্ষেত্র ঘুরে ঘুরে প্লাস্টিকের আবর্জনা পরিষ্কার করেন। উনি এখনো পর্যন্ত কয়েকশো কিলো প্লাস্টিকের আবর্জনা ও জঞ্জাল পরিষ্কার করেছেন। পুরীর রাহুল হোক বা নাসিকের চন্দ্রকিশোর, এঁরা সবাই আমাদের অনেক কিছু শেখান। নাগরিক হওয়ার দরুন আমরা আমাদের কর্তব্য পালন করি, তা সে স্বচ্ছতা হোক, পুষ্টি হোক, বা টিকাকরণ, এই সকল প্রয়াস আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এবারে বলবো কেরালার মুপত্তাম শ্রী নারায়ণনজী কথা। তিনি এক প্রকল্প শুরু করেছেন যার নাম - ‘পটস ফর ওয়াটার অফ লাইফ’. আপনি যখন এই প্রকল্প সম্পর্কে জানবেন তখন ভাববেন কি অসাধারণ এই কাজ।
বন্ধুরা, গ্রীষ্মকালে পশুপাখিরা যাতে পানীয় জলের অভাবে কষ্ট না পায় সেজন্য মূপট্টম শ্রী নারায়ণনজী মাটির পাত্র বিলি করার কাজ করে চলেছেন। গরমে তিনি পশুপাখিদের এই কষ্ট দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতেন। তখন তিনি ভাবলেন, কেমন হয় যদি নিজেই মাটির পাত্র বিলি করা শুরু করেন... তাহলে অন্তত অন্যদের জন্য শুধু সেই পাত্র গুলোয় কেবল জল ভরার কাজটিই পড়ে থাকে! আপনারা শুনলে অবাক হয়ে যাবেন, নারায়ণনজী যত মাটির পাত্র বন্টন করেছেন, তার সংখ্যা এক লক্ষের গন্ডী পার করতে চলেছে। তার এই অভিযানে, এক লক্ষ-তম পাত্রটি তিনি গান্ধীজী স্থাপিত সবরমতী আশ্রমে প্রদান করবেন। ঠিক এই সময়, যখন গ্রীষ্মের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে, তখন নারায়ণনজী'র এই কাজ আমাদের সকলকে নিশ্চয়ই অনুপ্রাণিত করবে, এবং আমরাও এই গ্রীষ্মে পশুপাখি বন্ধুদের জন্য জলের ব্যবস্থা করব!
বন্ধুরা, আমি মন-কী-বাত অনুষ্ঠানের শ্রোতাদেরও অনুরোধ করবো, আমরা যেন সেই প্রতিজ্ঞা অবশ্যই পালন করি। পানীয় জলের প্রতিটি বিন্দু সংরক্ষণের জন্য আমরা যা কিছু করতে পারি তা যেন অবশ্যই করি। তাছাড়া, জলের পুনর্ব্যবহারের বিষয়েও আমাদের সমান গুরুত্ব দিতে হবে। গৃহস্থালির ব্যবহার করা জল ধোয়ার কাজে এবং বাগানে জল দেবার কাজে পুনরায় ব্যবহার করা উচিত। সামান্য চেষ্টা করলেই আপনি আপনার বাড়িতেই এমন ব্যবস্থা করে নিতে পারবেন। রহীম দাসজী বহু যুগ আগে হয়তো সেই উদ্দেশ্যেই বলে গিয়েছিলেন - "রহিমান পানি রাখিয়ে, বিন পানি সব শূন" অর্থাৎ এই বলে রহিম জী জলের মাহাত্য বোঝাতে চেয়েছিলেন। কারণ জল ছাড়া সবকিছুই বৃথা। জল সংরক্ষণের এই কাজে আমি ছোট্ট বন্ধুদের কাছে অনেক বেশি প্রত্যাশা করি। স্বচ্ছতাকে যেভাবে আমাদের ছোট্ট ছোট্ট বন্ধুরা জন-আন্দোলনে পরিণত করেছে, ঠিক সেভাবেই ওয়াটার ওয়ারিয়র হয়ে তারা জল সংরক্ষণেও সহায়তা করতে পারে।
বন্ধুরা, চিরকালই আমাদের দেশে পানীয় জলের সংরক্ষণ ও জলের উৎস গুলির সুরক্ষা করা আমাদের সামাজিক উদ্যোগের একটা অংশ। আমি আনন্দিত যে আমাদের দেশে অনেকেই জল সংরক্ষণকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে গ্রহণ করেছেন করে। যেমন চেন্নাইয়ের এক বন্ধু অরুণ কৃষ্ণমূর্তি জী। অরুন জী, তার এলাকায় পুকুর ও দীঘিগুলি পরিষ্কার রাখার কাজ করে চলেছেন। উনি দেড়শোর-ও বেশী দিঘি ও পুকুর পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, এবং তা সাফল্যের সঙ্গে পূর্ণও করেছেন। ঠিক সেরকমই মহারাষ্ট্রের এক বন্ধু রোহন কালে। রোহন পেশাগতভাবে একজন এইচআর প্রোফেশনাল। তিনি মহারাষ্ট্রের শত শত স্টেপওয়েলস অর্থাৎ সিঁড়ি যুক্ত পুরনো জলুকুপগুলির সংরক্ষণের প্রচার চালাচ্ছেন। এগুলোর মধ্যে অনেক কুয়োই বহু প্রাচীন, এবং আমাদের পরম্পরার একটা অংশ।
সিকান্দ্রাবাদের বংশী লাল পেট কুঁয়ো এরকমই একটি step well। বহু বছর উপেক্ষিত থাকার ফলে এই স্টেপ ওয়েল মাটি আর আবর্জনায় ভরে গেছিল। কিন্তু এখন এই স্টেপ ওয়েল-কে পুনরুজ্জীবিত করার অভিযান জন অংশীদারির মাধ্যমে শুরু হয়েছে।
বন্ধুরা, আমি তো সেই রাজ্য থেকে এসেছি, যেখানে সবসময়ই জলের ঘাটতি থাকে। গুজরাতে এই স্টেপ ওয়েল-কে ভাভ বলা হয়। গুজরাতের মতো রাজ্যে ভাভের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কুঁয়ো বা বাউড়ি সংরক্ষণে 'জল মন্দির যোজনা' একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। পুরো গুজরাটে অনেক বাউড়িকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। এর ফলে এই এলাকায় জলস্তর বৃদ্ধিতেও সাহায্য হয়েছে। এরকমই অভিযান আপনারা স্থানীয় স্তরেও চালাতে পারেন। চেক ড্যাম বানানো হোক বা বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই সমষ্টিগত প্রচেষ্টারও প্রয়োজন আছে। যেরকম স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে আমাদের দেশের প্রত্যেক জেলায় অন্তত ৭৫টি অমৃত সরোবর বানানো যেতে পারে। কিছু পুরানো সরোবরকে সংস্কার করা যেতে পারে আর কিছু নতুন সরোবরও বানানো যেতে পারে। আমার বিশ্বাস আপনারা এই লক্ষ্যে কিছু না কিছু উদ্যোগ নিশ্চয়ই নেবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী 'মন কি বাত'-এর একটা সৌন্দর্য এটাও যে এখানে আমি আপনাদের বার্তা বিভিন্ন ভাষায় ও বিভিন্ন উপভাষায় পাই। অনেকে মাইগভে অডিও মেসেজও পাঠান। ভারতের সংস্কৃতি, আমাদের ভাষা, আমাদের উপভাষা, আমাদের থাকা-খাওয়ার অভ্যাস, এইসব বিবিধতা আমাদের অনেক বড় শক্তি। পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত ভারতের এই বিবিধতা ভারতকে এক করে রেখেছে, 'এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত' বানিয়েছে। আর এতেও আমাদের ঐতিহাসিক স্থান আর পৌরাণিক কাহিনী উভয়েরই ভূমিকা আছে। আপনি ভাবছেন এই কথাগুলো আমি এখন আপনাদের কেন বলছি। এর কারণ হলো মাধবপুর মেলা। মাধবপুর মেলা কোথায় বসে, কেন বসে, কিভাবে এটি ভারতের বিবিধতার সঙ্গে জড়িত এটা জানতে শ্রোতাদের খুব আকর্ষণীয় লাগবে।
বন্ধুরা, মাধবপুর মেলা গুজরাটের পোরবন্দরে সমুদ্রতটে অবস্থিত মাধবপুর গ্রামে হয়। কিন্তু এই মেলার সঙ্গে ভারতের পূর্বভাগেরও সম্পর্ক রয়েছে। আপনারা ভাবছেন এও কী করে সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তরও পুরাণের এক আখ্যানে পাওয়া যায় কথিত আছে হাজার-হাজার বছর আগে, ভগবান শ্রী কৃষ্ণের বিবাহ উত্তরপূর্বের রাজকুমারী রুক্মিণীর সঙ্গে হয়েছিল। এই বিবাহ পোরবন্দরের মাধবপুর গ্রামে সম্পন্ন হয়েছিল আর সেই বিবাহের প্রতীক হিসেবে আজও ওই জায়গায় মাধবপুর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব আর পশ্চিমের এই গভীর সম্পর্ক আমাদের ঐতিহ্য। সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে এবং মানুষের প্রয়াসে এখন মাধবপুরের মেলায় নতুন-নতুন জিনিস যুক্ত হচ্ছে।
আমাদের এখানে কন্যা পক্ষকে ঘরাতি বলে এবং আজকাল এই মেলার সময় উত্তরপূর্ব থেকে বহু ঘরাতি আসছেন। এক সপ্তাহ ধরে চলা এই মেলায় এখন উত্তরপূর্ব অঞ্চলের সব রাজ্য থেকে শিল্পী আসেন, হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত বহু শিল্পী আসেন এবং এই মেলাকে আরও উজ্জ্বল করে তোলেন।
এক সপ্তাহ ধরে চলা এই মাধবপুর মেলায় পশ্চিম ও পূর্বের সংস্কৃতির অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটে এবং এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের এক অপরুপ নিদর্শন হয়ে ওঠে এই মেলা। আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি এই মেলার সম্বন্ধে পড়ুন ও জানুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দেশে চলা আজাদী কী অমৃত মহোৎসব জনসাধারণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুন্দর নিদর্শন হয়ে উঠছে। কিছুদিন আগে ২৩শে মার্চ শহীদ দিবসের দিন দেশের ভিন্ন-ভিন্ন অংশে বহু অনুষ্ঠান হয়। আমাদের দেশ স্বাধীনতার নায়ক-নায়িকাদের শ্রদ্ধাপূর্বক স্মরণ করে ওই দিন। ওই দিনই কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বিপ্লবী ভারত গ্যালারি জনসাধারণের জন্য উৎসর্গ করার সুযোগ হয় আমার।
ভারতের বীর বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা অর্পণের জন্য সৃষ্ট এটি একটি বিশেষ গ্যালারি। সময় পেলে অবশ্যই এই গ্যালারিটি দেখতে যাবেন আপনারা। বন্ধুরা এপ্রিল মাসে আমরা দু’জন বিখ্যাত মানুষের জন্মবার্ষিকী পালন করব। এঁরা দুজনেই ভারতীয় সমাজের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিলেন। এই দু’জন মহতি হলেন মহাত্মা ফুলে এবং বাবাসাহেব আম্বেদকর। মহাত্মা ফুলের জন্ম জয়ন্তী ১১ই এপ্রিল এবং বাবাসাহেবের জন্মজয়ন্তী আমরা ১৪ই এপ্রিল পালন করব। এই দুই মহাপুরুষ ভেদাভেদ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিশাল সংগ্রাম করেন। মহাত্মা ফুলে ওই সময়ে মেয়েদের জন্য স্কুল খোলেন, কন্যা শিশু হত্যার বিরুদ্ধাচরণ করেন। তিনি জলসঙ্কট থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যও বড় অভিযান চালান।
বন্ধুগণ, মহাত্মা ফুলের বিষয়ে আলোচনার সময় সাবিত্রী বাই ফুলের উল্লেখ করাও জরুরী। সাবিত্রী বাই ফুলে বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার নির্মাণে বড়ো ভূমিকা পালন করেছিলেন। একজন শিক্ষিকা এবং একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবে উনি সমাজে চেতনা সৃষ্টি করেছিলেন এবং সাহসও জুগিয়েছিলেন। দুজনে মিলে সত্যশোধক সমাজের প্রতিষ্ঠা করেন। মানুষের ক্ষমতায়নের চেষ্টা করেন। আমরা বাবা সাহেব আম্বেদকরের কাজেও মহাত্মা ফুলের প্রভাব পরিষ্কার দেখতে পাই। উনি বলতেন কোনো সমাজের বিকাশের মূল্যায়ন সেই সমাজের মহিলাদের অবস্থা দেখে বোঝা যায়। মহাত্মা ফুলে, সাবিত্রী বাই ফুলে, বাবা সাহেব আম্বেদকরের জীবন থেকে প্রেরণা নিয়ে আমি প্রত্যেক মা-বাবা, অভিভাবকদের অনুরোধ করছি যে তাঁরা যেন মেয়েদের অবশ্যই শিক্ষিত করেন। মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করানোর সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য কিছুদিন আগেই কন্যা শিক্ষা প্রবেশ উৎসব শুরু করা হয়েছে, যে মেয়ের পড়াশোনা কোনো কারণে মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের দ্বিতীয়বার স্কুলে ভর্তি করানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বন্ধুরা, এটা আমাদের সকলের জন্য সৌভাগ্যের কথা যে বাবা সাহেবের সঙ্গে জুড়ে থাকা পাঁচটি তীর্থস্থানের জন্য কাজ করার সুযোগ পাওয়া গেছে। ওঁর জন্মস্থান মহু হোক, মুম্বাইতে চৈত্যভূমি হোক, লন্ডনে ওঁর বাড়ী হোক, নাগপুরে দীক্ষাভূমি হোক বা দিল্লিতে মহাপরিনির্বান স্থল, আমার সব স্থানগুলিতে, সব তীর্থস্থানগুলিতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। আমি মন কি বাতের শ্রোতাদের কাছে অনুরোধ করবো যে তাঁরা যেন মহাত্মা ফুলে, সাবিত্রী বাই ফুলে, বাবা সাহেব আম্বেদকরের সঙ্গে জুড়ে থাকা সবকটি জায়গা দর্শন করেন। আপনার সেখানে অনেক কিছু শেখার বিষয় পাবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাত অনুষ্ঠানে এইবারেও অনেক বিষয়ে কথা বললাম। আগামী মাসে অনেক উৎসব আসছে। কিছুদিন বাদেই নবরাত্রি আসছে। নবরাত্রিতে আমরা ব্রত-উপবাস, শক্তির আরাধনা করি, শক্তির পূজা করি, অর্থাৎ আমাদের সংস্কার আমাদের আনন্দ করতে শেখায় আবার নিয়ন্ত্রণ করতেও শেখায়। দৃঢ়তা এবং তপস্যা আমাদের কাছে উৎসবই, সেইজন্য নবরাত্রি আমাদের সবার কাছে খুবই বিশেষ পার্বণ। নবরাত্রির প্রথম দিনই গুড়িপাড়োয়া উৎসব আছে। এপ্রিল মাসেই ইস্টারও আছে আবার রমজানের পবিত্র দিনও শুরু হচ্ছে। আমরা সকলকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের উৎসব পালন করবো, ভারতের বৈচিত্রকে আরও শক্তিশালী করবো। সবার এটাই কামনা। এইবারে মন কি বাতে এইটুকুই। আগামী মাসে আপনাদের সঙ্গে নতুন বিষয়ে কথা বলবো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। গত সপ্তাহে আমরা এমন এক সাফল্য অর্জন করলাম যা আমাদের সবাইকে গর্বিত করেছে। আপনারা হয়ত শুনেছেন যে ভারত গত সপ্তাহে চারশো বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৩০ লক্ষ কোটি টাকার রপ্তানীর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। প্রাথমিক ভাবে শুনে মনে হয় যে আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত একটা ব্যাপার, কিন্তু এটা আর্থিক ব্যবস্থার থেকেও বেশি, ভারতের সামর্থ্য, ভারতের সম্ভাবনার সঙ্গে যুক্ত বিষয়। এক সময় ভারত থেকে রপ্তানীর পরিমাণ কখনও একশো বিলিয়ন, কখনও দেড়শো বিলিয়ন, কখনও দু’শো বিলিয়ন হত, আর আজ, ভারত চারশো বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছে। এর একটা অর্থ হল যে ভারতে তৈরি জিনিসের চাহিদা বাড়ছে বিশ্বজুড়ে, দ্বিতীয় অর্থ হল যে ভারতের সরবরাহ শৃঙ্খল দিনে-দিনে শক্তিশালী হয়ে উঠছে আর এর একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও রয়েছে। দেশ, বড় পদক্ষেপ তখনই নেয় যখন স্বপ্নের থেকেও বড় হয়ে ওঠে সঙ্কল্প। যখন রাতদিন নিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্কল্পের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন সেই সঙ্কল্প বাস্তবায়িতও হয়, আর আপনারা দেখুন, কোনও ব্যক্তির জীবনেও তো এমনটাই হয়। যখন কারও সঙ্কল্প, তাঁর চেষ্টা , তাঁর স্বপ্নের থেকেও বড় হয়ে যায় তখন সফলতা নিজে পায়ে হেঁটে তাঁর কাছে আসে।
বন্ধুগণ, দেশের নানা কোণ থেকে নতুন-নতুন পণ্য এখন বিদেশে যাচ্ছে। অসমের হাইলাকান্দির চামড়ার তৈরি পণ্য হোক বা উসমানাবাদের তাঁতের পণ্য, বীজাপুরের ফল-সব্জি হোক বা চন্দৌলির ব্ল্যাক রাইস, সবকিছুর রপ্তানী বাড়ছে। এখন লাদাখের বিশ্বখ্যাত অ্যাপ্রিকট আপনি দুবাইতেও পাবেন আর সৌদি আরবে তামিলনাড়ুর থেকে পাঠানো কলা পাওয়া যাবে। এখন সবথেকে বড় কথা হল যে নতুন-নতুন পণ্য, নতুন-নতুন দেশে পাঠানো হচ্ছে। যেমন হিমাচল, উত্তরাখণ্ডে উৎপন্ন বাজরা জাতীয় মোটা দানার শস্যের প্রথম কিস্তি ডেনমার্কে রপ্তানী করা হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা আর চিত্তুর জেলার বঙ্গনপল্লী আর সুবর্ণরেখা আম দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানী করা হয়েছে। ত্রিপুরা থেকে তাজা কাঁঠাল আকাশপথে লণ্ডনে রপ্তানী করা হয়েছে, আরও কী, প্রথম বার নাগাল্যাণ্ডের রাজালঙ্কা লণ্ডনে পাঠানো হয়েছে। এইভাবেই ভালিয়া গমের প্রথম কিস্তি গুজরাত থেকে কেনিয়া আর শ্রীলঙ্কায় রপ্তানী করা হয়েছে। অর্থাৎ, এখন আপনি অন্য দেশে গেলে, আগের থেকে অনেক বেশি মেড ইন ইণ্ডিয়া পণ্য আপনার চোখে পড়বে।
বন্ধুগণ, এই তালিকা অনেক লম্বা আর যত লম্বা এই তালিকা, ততটাই বড়ো মেক ইন ইণ্ডিয়ার শক্তি, ততটাই বিরাট ভারতের সামর্থ্য, আর সামর্থ্যের ভিত্তি – আমাদের কৃষক, আমাদের কারিগর, আমাদের তন্তুবায় শিল্পী, আমাদের ইঞ্জিনীয়ার, আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, আমাদের অতি ক্ষুদ্র , ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পোদ্যোগ, বিভিন্ন পেশার অনেক মানুষ, এঁরা সব এর সত্যিকারের শক্তি। এঁদের পরিশ্রমেই চারশো বিলিয়ন ডলারের রপ্তানীর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে আর আমি খুশী যে ভারতের মানুষের এই সামর্থ্য বিশ্বের কোণায়-কোণায়, নতুন বাজারে পৌঁছচ্ছে। যখন এক-একজন ভারতবাসী লোকালের জন্য ভোকাল হন তখন লোকালের গ্লোবাল হতে দেরি হয় না। আসুন, আমরা স্থানীয় পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে নিয়ে যাই আর আমাদের উৎপাদিত বস্তুর খ্যাতি আরও বাড়াই।
বন্ধুরা, 'মন কি বাত'-এর শ্রোতাদের এটা জেনে ভালো লাগবে যে দেশীয় পর্যায়েও আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সাফল্য আমাদের গর্বিত করে। আজ আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সরকারি স্তরে ক্রয়-এর জন্য গভর্নমেন্ট ই-মার্কেট প্লেস অর্থাৎ জিইএম- এর বড় অংশীদার। প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। গত এক বছরে জিইএম পোর্টাল-এর মাধ্যমে সরকার, এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি কেনাকাটা করেছে। দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, ছোটো দোকানদার তাদের পণ্য সরাসরি সরকারের কাছে বিক্রি করেছে। একটা সময় ছিল যখন শুধুমাত্র বড় কোম্পানিগুলিই সরকারের কাছে পণ্য বিক্রি করতে সক্ষম হতো। কিন্তু এখন দেশ বদলাচ্ছে, পুরনো ব্যবস্থাও বদলাচ্ছে। এখন ছোটোর চেয়ে ছোট দোকানদাররাও তাদের পণ্য জিইএম পোর্টালের মাধ্যমে সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারে। এটাই নতুন ভারত। সে শুধু বড় স্বপ্নই দেখে না, সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর সাহসও দেখায়, যেখানে আগে কেউ আসেনি। এই সাহসের জোরেই আমরা ভারতীয়রা আত্ম নির্ভর ভারতের স্বপ্ন পূরণ করব।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সাম্প্রতিক পদ্ম পুরস্কার অনুষ্ঠানে আপনারা নিশ্চয়ই বাবা শিবানন্দজিকে দেখেছেন। ১২৬ বছর বয়সী প্রবীনের উচ্ছ্বাস দেখে আমার মতো সবাই নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন, আর আমি দেখলাম, কিভাবে এক নিমেষে তিনি নন্দী মুদ্রায় প্রণাম করতে লাগলেন। আমিও বাবা শিবানন্দজিকে নত হয়ে বারবার প্রণাম করলাম। ১২৬ বছর বয়সী বাবা শিবানন্দের বয়স এবং ফিটনেস, দুটোই, আজ দেশে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকের মন্তব্য দেখলাম, যে বাবা শিবানন্দ তাঁর বয়সের চেয়ে চার গুণ কম বয়সীদের চেয়েও ফিট। সত্যিই, বাবা শিবানন্দের জীবন আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে। আমি তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করছি। ওঁর মধ্যে যোগব্যায়ামের প্রতি একটা আলাদা আবেগ আছে এবং তিনি খুব স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন।
জীবেম শরদহ্ শতম্।
আমাদের সংস্কৃতিতে সকলকে সুস্থ জীবনসহ শতায়ু হওয়ার শুভকামনা প্রদান করা হয়। আমরা ৭ই এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করব। আজ সমগ্র বিশ্বে স্বাস্থ্য নিয়ে ভারতীয় চিন্তাধারা, সেটা যোগ হোক অথবা আয়ুর্বেদ, সব কিছুর প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে। আপনারা দেখেছেন যে গত সপ্তাহে কাতারে একটি যোগ অনুশীলনের কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছিল। এতে ১১৪টি দেশের নাগরিকরা অংশগ্রহণ করে নতুন ওয়ার্ল্ড রেকর্ড তৈরি করেছেন। এভাবেই আয়ুস শিল্পের বিপণন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ৬বছর আগে আয়ুর্বেদের সঙ্গে যুক্ত ওষুধের বাজার ২২,০০০ কোটি টাকার কাছাকাছি ছিল। এখন আয়ুষ উৎপাদন শিল্প প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে সম্ভাবনা অনবরত বেড়েই চলেছে। স্টার্ট আপসের দুনিয়াতেও আয়ুষ আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে।
বন্ধুরা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের অন্য স্টার্ট আপসের সম্বন্ধে তো আমি আগেও অনেকবার কথা বলেছি, কিন্তু এইবার আয়ুস স্টার্ট আপস নিয়ে আপনাদের সঙ্গে বিশেষভাবে কথা বলব। একটা স্টার্ট আপ রয়েছে যার নাম কপিভা। এই নামের মধ্যেই এর অর্থ লুকিয়ে রয়েছে - ক এর অর্থ কফ, পি এর অর্থ পিত্ত, এবং বা এর অর্থ বাত। এই স্টার্টআপ আমাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য গড়ে উঠেছে। আরেকটি স্টার্টআপ নিরোগ-স্ট্রীট রয়েছে, আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ব্যবস্থার এক আশ্চর্য ধারণা। এখানে প্রযুক্তি ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা সারা পৃথিবীর আয়ুর্বেদ ডাক্তারদের সরাসরি সাধারন মানুষদের সঙ্গে যুক্ত করে। ৫০ হাজারেরও বেশি চিকিৎসক এর সঙ্গে যুক্ত। এমনই আত্রেয় ইনোভেশন একটি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের প্রযুক্তি সংক্রান্ত স্টার্ট আপ যা সর্বাঙ্গীণ সুস্থতার জন্য কাজ করছে। ইক্সোরিয়েল কেবলমাত্র অশ্বগন্ধা প্রয়োগ নিয়েই সচেতনতা বৃদ্ধি করেনি বরং উন্নত গুণমানের পণ্যসামগ্রীর বিষয়েও বড় মাত্রা যোগ করেছে। কিওরভেদাও শেকড়-বাকড় এর আধুনিক প্রয়োগ এবং এ বিষয়ের ঐতিহ্য ও জ্ঞানের সমন্বয়ে সর্বাঙ্গীণ জীবনযাত্রা নিয়ে ডায়েটরি সাপ্লিমেন্টসের তৈরি করেছে।
বন্ধুরা, আমি মাত্র কয়েকটা নাম বললাম, এই লিস্ট আসলে অনেক লম্বা। এটি ভারতের তরুণ উদ্যম এবং ভারতে তৈরি নতুন সম্ভাবনার প্রতীক। আমার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নতুন শিল্পোদ্যোগ বা স্টার্ট-আপ্সের বিশেষতঃ আয়ুষ স্টার্ট-আপ্সের কাছে একটা অনুরোধ রয়েছে। আপনারা অনলাইনে যে কোনও পোর্টাল তৈরি করুন, যা কিছু বিষয়বস্তু রচনা করুন করুন, তা রাষ্ট্রসঙ্ঘের মান্যতা প্রাপ্ত সবকটি ভাষায় তৈরি করার চেষ্টা করুন। বিশ্বে এমন বহু দেশ রয়েছে যেখানে ইংরাজি না বিশেষ বলা হয়, না কেউ বিশেষ বোঝে। সেই সব দেশের কথা মাথায় রেখে আপনারা তথ্যের প্রচার-প্রসার করুন। আমার বিশ্বাস, ভারতের আয়ুষ স্টার্ট-আপ্সের উন্নত গুণমানের পণ্য খুব শীঘ্রই বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।
বন্ধুরা, স্বাস্থ্যের সঙ্গে স্বচ্ছতার সোজাসুজি সম্পর্ক রয়েছে। "মন কি বাত"-এ আমরা সবসময় স্বচ্ছতায় আগ্রহীদের বিভিন্ন প্রচেষ্টা সম্পর্কে বলি। এমনি একজন স্বচ্ছতাগ্রহী হলেন চন্দ্রকিশোর পাতিলজি। উনি মহারাষ্ট্রের নাসিকে থাকেন। চন্দ্রকিশোরজি স্বচ্ছতা সম্পর্কে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তিনি গোদাবরী নদীর তীরে দাঁড়িয়ে জনসাধারণকে নদীতে আবর্জনা না ফেলতে উদ্বুদ্ধ করেন। যদি কাউকে আবর্জনা ফেলতে দেখেন, তৎক্ষণাৎ তাকে বারণ করেন। এই কাজে চন্দ্রকিশোরজি নিজের অনেক সময় ব্যয় করেন। বিকেল অব্দি তাঁর কাছে স্তুপাকৃত আবর্জনার জমা হয়ে যায়, যা সবাই নদীর জলে ফেলার জন্য এনেছিল। চন্দ্রকিশোরজির এই প্রচেষ্টা, সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং অনুপ্রেরণাও যোগায়। এই রকম আরো একজন স্বচ্ছতাগ্রহী - উড়িষ্যার পুরীর রাহুল মহারাণা। রাহুল প্রতি রবিবার সকাল-সকাল পুরীতে তীর্থ ক্ষেত্র ঘুরে ঘুরে প্লাস্টিকের আবর্জনা পরিষ্কার করেন। উনি এখনো পর্যন্ত কয়েকশো কিলো প্লাস্টিকের আবর্জনা ও জঞ্জাল পরিষ্কার করেছেন। পুরীর রাহুল হোক বা নাসিকের চন্দ্রকিশোর, এঁরা সবাই আমাদের অনেক কিছু শেখান। নাগরিক হওয়ার দরুন আমরা আমাদের কর্তব্য পালন করি, তা সে স্বচ্ছতা হোক, পুষ্টি হোক, বা টিকাকরণ, এই সকল প্রয়াস আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এবারে বলবো কেরালার মুপত্তাম শ্রী নারায়ণনজী কথা। তিনি এক প্রকল্প শুরু করেছেন যার নাম - ‘পটস ফর ওয়াটার অফ লাইফ’. আপনি যখন এই প্রকল্প সম্পর্কে জানবেন তখন ভাববেন কি অসাধারণ এই কাজ।
বন্ধুরা, গ্রীষ্মকালে পশুপাখিরা যাতে পানীয় জলের অভাবে কষ্ট না পায় সেজন্য মূপট্টম শ্রী নারায়ণনজী মাটির পাত্র বিলি করার কাজ করে চলেছেন। গরমে তিনি পশুপাখিদের এই কষ্ট দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতেন। তখন তিনি ভাবলেন, কেমন হয় যদি নিজেই মাটির পাত্র বিলি করা শুরু করেন... তাহলে অন্তত অন্যদের জন্য শুধু সেই পাত্র গুলোয় কেবল জল ভরার কাজটিই পড়ে থাকে! আপনারা শুনলে অবাক হয়ে যাবেন, নারায়ণনজী যত মাটির পাত্র বন্টন করেছেন, তার সংখ্যা এক লক্ষের গন্ডী পার করতে চলেছে। তার এই অভিযানে, এক লক্ষ-তম পাত্রটি তিনি গান্ধীজী স্থাপিত সবরমতী আশ্রমে প্রদান করবেন। ঠিক এই সময়, যখন গ্রীষ্মের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে, তখন নারায়ণনজী'র এই কাজ আমাদের সকলকে নিশ্চয়ই অনুপ্রাণিত করবে, এবং আমরাও এই গ্রীষ্মে পশুপাখি বন্ধুদের জন্য জলের ব্যবস্থা করব!
বন্ধুরা, আমি মন-কী-বাত অনুষ্ঠানের শ্রোতাদেরও অনুরোধ করবো, আমরা যেন সেই প্রতিজ্ঞা অবশ্যই পালন করি। পানীয় জলের প্রতিটি বিন্দু সংরক্ষণের জন্য আমরা যা কিছু করতে পারি তা যেন অবশ্যই করি। তাছাড়া, জলের পুনর্ব্যবহারের বিষয়েও আমাদের সমান গুরুত্ব দিতে হবে। গৃহস্থালির ব্যবহার করা জল ধোয়ার কাজে এবং বাগানে জল দেবার কাজে পুনরায় ব্যবহার করা উচিত। সামান্য চেষ্টা করলেই আপনি আপনার বাড়িতেই এমন ব্যবস্থা করে নিতে পারবেন। রহীম দাসজী বহু যুগ আগে হয়তো সেই উদ্দেশ্যেই বলে গিয়েছিলেন - "রহিমান পানি রাখিয়ে, বিন পানি সব শূন" অর্থাৎ এই বলে রহিম জী জলের মাহাত্য বোঝাতে চেয়েছিলেন। কারণ জল ছাড়া সবকিছুই বৃথা। জল সংরক্ষণের এই কাজে আমি ছোট্ট বন্ধুদের কাছে অনেক বেশি প্রত্যাশা করি। স্বচ্ছতাকে যেভাবে আমাদের ছোট্ট ছোট্ট বন্ধুরা জন-আন্দোলনে পরিণত করেছে, ঠিক সেভাবেই ওয়াটার ওয়ারিয়র হয়ে তারা জল সংরক্ষণেও সহায়তা করতে পারে।
বন্ধুরা, চিরকালই আমাদের দেশে পানীয় জলের সংরক্ষণ ও জলের উৎস গুলির সুরক্ষা করা আমাদের সামাজিক উদ্যোগের একটা অংশ। আমি আনন্দিত যে আমাদের দেশে অনেকেই জল সংরক্ষণকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে গ্রহণ করেছেন করে। যেমন চেন্নাইয়ের এক বন্ধু অরুণ কৃষ্ণমূর্তি জী। অরুন জী, তার এলাকায় পুকুর ও দীঘিগুলি পরিষ্কার রাখার কাজ করে চলেছেন। উনি দেড়শোর-ও বেশী দিঘি ও পুকুর পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, এবং তা সাফল্যের সঙ্গে পূর্ণও করেছেন। ঠিক সেরকমই মহারাষ্ট্রের এক বন্ধু রোহন কালে। রোহন পেশাগতভাবে একজন এইচআর প্রোফেশনাল। তিনি মহারাষ্ট্রের শত শত স্টেপওয়েলস অর্থাৎ সিঁড়ি যুক্ত পুরনো জলুকুপগুলির সংরক্ষণের প্রচার চালাচ্ছেন। এগুলোর মধ্যে অনেক কুয়োই বহু প্রাচীন, এবং আমাদের পরম্পরার একটা অংশ।
সিকান্দ্রাবাদের বংশী লাল পেট কুঁয়ো এরকমই একটি step well। বহু বছর উপেক্ষিত থাকার ফলে এই স্টেপ ওয়েল মাটি আর আবর্জনায় ভরে গেছিল। কিন্তু এখন এই স্টেপ ওয়েল-কে পুনরুজ্জীবিত করার অভিযান জন অংশীদারির মাধ্যমে শুরু হয়েছে।
বন্ধুরা, আমি তো সেই রাজ্য থেকে এসেছি, যেখানে সবসময়ই জলের ঘাটতি থাকে। গুজরাতে এই স্টেপ ওয়েল-কে ভাভ বলা হয়। গুজরাতের মতো রাজ্যে ভাভের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কুঁয়ো বা বাউড়ি সংরক্ষণে 'জল মন্দির যোজনা' একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। পুরো গুজরাটে অনেক বাউড়িকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। এর ফলে এই এলাকায় জলস্তর বৃদ্ধিতেও সাহায্য হয়েছে। এরকমই অভিযান আপনারা স্থানীয় স্তরেও চালাতে পারেন। চেক ড্যাম বানানো হোক বা বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই সমষ্টিগত প্রচেষ্টারও প্রয়োজন আছে। যেরকম স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে আমাদের দেশের প্রত্যেক জেলায় অন্তত ৭৫টি অমৃত সরোবর বানানো যেতে পারে। কিছু পুরানো সরোবরকে সংস্কার করা যেতে পারে আর কিছু নতুন সরোবরও বানানো যেতে পারে। আমার বিশ্বাস আপনারা এই লক্ষ্যে কিছু না কিছু উদ্যোগ নিশ্চয়ই নেবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী 'মন কি বাত'-এর একটা সৌন্দর্য এটাও যে এখানে আমি আপনাদের বার্তা বিভিন্ন ভাষায় ও বিভিন্ন উপভাষায় পাই। অনেকে মাইগভে অডিও মেসেজও পাঠান। ভারতের সংস্কৃতি, আমাদের ভাষা, আমাদের উপভাষা, আমাদের থাকা-খাওয়ার অভ্যাস, এইসব বিবিধতা আমাদের অনেক বড় শক্তি। পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত ভারতের এই বিবিধতা ভারতকে এক করে রেখেছে, 'এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত' বানিয়েছে। আর এতেও আমাদের ঐতিহাসিক স্থান আর পৌরাণিক কাহিনী উভয়েরই ভূমিকা আছে। আপনি ভাবছেন এই কথাগুলো আমি এখন আপনাদের কেন বলছি। এর কারণ হলো মাধবপুর মেলা। মাধবপুর মেলা কোথায় বসে, কেন বসে, কিভাবে এটি ভারতের বিবিধতার সঙ্গে জড়িত এটা জানতে শ্রোতাদের খুব আকর্ষণীয় লাগবে।
বন্ধুরা, মাধবপুর মেলা গুজরাটের পোরবন্দরে সমুদ্রতটে অবস্থিত মাধবপুর গ্রামে হয়। কিন্তু এই মেলার সঙ্গে ভারতের পূর্বভাগেরও সম্পর্ক রয়েছে। আপনারা ভাবছেন এও কী করে সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তরও পুরাণের এক আখ্যানে পাওয়া যায় কথিত আছে হাজার-হাজার বছর আগে, ভগবান শ্রী কৃষ্ণের বিবাহ উত্তরপূর্বের রাজকুমারী রুক্মিণীর সঙ্গে হয়েছিল। এই বিবাহ পোরবন্দরের মাধবপুর গ্রামে সম্পন্ন হয়েছিল আর সেই বিবাহের প্রতীক হিসেবে আজও ওই জায়গায় মাধবপুর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব আর পশ্চিমের এই গভীর সম্পর্ক আমাদের ঐতিহ্য। সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে এবং মানুষের প্রয়াসে এখন মাধবপুরের মেলায় নতুন-নতুন জিনিস যুক্ত হচ্ছে।
আমাদের এখানে কন্যা পক্ষকে ঘরাতি বলে এবং আজকাল এই মেলার সময় উত্তরপূর্ব থেকে বহু ঘরাতি আসছেন। এক সপ্তাহ ধরে চলা এই মেলায় এখন উত্তরপূর্ব অঞ্চলের সব রাজ্য থেকে শিল্পী আসেন, হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত বহু শিল্পী আসেন এবং এই মেলাকে আরও উজ্জ্বল করে তোলেন।
এক সপ্তাহ ধরে চলা এই মাধবপুর মেলায় পশ্চিম ও পূর্বের সংস্কৃতির অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটে এবং এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের এক অপরুপ নিদর্শন হয়ে ওঠে এই মেলা। আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি এই মেলার সম্বন্ধে পড়ুন ও জানুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দেশে চলা আজাদী কী অমৃত মহোৎসব জনসাধারণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুন্দর নিদর্শন হয়ে উঠছে। কিছুদিন আগে ২৩শে মার্চ শহীদ দিবসের দিন দেশের ভিন্ন-ভিন্ন অংশে বহু অনুষ্ঠান হয়। আমাদের দেশ স্বাধীনতার নায়ক-নায়িকাদের শ্রদ্ধাপূর্বক স্মরণ করে ওই দিন। ওই দিনই কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বিপ্লবী ভারত গ্যালারি জনসাধারণের জন্য উৎসর্গ করার সুযোগ হয় আমার।
ভারতের বীর বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা অর্পণের জন্য সৃষ্ট এটি একটি বিশেষ গ্যালারি। সময় পেলে অবশ্যই এই গ্যালারিটি দেখতে যাবেন আপনারা। বন্ধুরা এপ্রিল মাসে আমরা দু’জন বিখ্যাত মানুষের জন্মবার্ষিকী পালন করব। এঁরা দুজনেই ভারতীয় সমাজের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিলেন। এই দু’জন মহতি হলেন মহাত্মা ফুলে এবং বাবাসাহেব আম্বেদকর। মহাত্মা ফুলের জন্ম জয়ন্তী ১১ই এপ্রিল এবং বাবাসাহেবের জন্মজয়ন্তী আমরা ১৪ই এপ্রিল পালন করব। এই দুই মহাপুরুষ ভেদাভেদ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিশাল সংগ্রাম করেন। মহাত্মা ফুলে ওই সময়ে মেয়েদের জন্য স্কুল খোলেন, কন্যা শিশু হত্যার বিরুদ্ধাচরণ করেন। তিনি জলসঙ্কট থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যও বড় অভিযান চালান।
বন্ধুগণ, মহাত্মা ফুলের বিষয়ে আলোচনার সময় সাবিত্রী বাই ফুলের উল্লেখ করাও জরুরী। সাবিত্রী বাই ফুলে বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার নির্মাণে বড়ো ভূমিকা পালন করেছিলেন। একজন শিক্ষিকা এবং একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবে উনি সমাজে চেতনা সৃষ্টি করেছিলেন এবং সাহসও জুগিয়েছিলেন। দুজনে মিলে সত্যশোধক সমাজের প্রতিষ্ঠা করেন। মানুষের ক্ষমতায়নের চেষ্টা করেন। আমরা বাবা সাহেব আম্বেদকরের কাজেও মহাত্মা ফুলের প্রভাব পরিষ্কার দেখতে পাই। উনি বলতেন কোনো সমাজের বিকাশের মূল্যায়ন সেই সমাজের মহিলাদের অবস্থা দেখে বোঝা যায়। মহাত্মা ফুলে, সাবিত্রী বাই ফুলে, বাবা সাহেব আম্বেদকরের জীবন থেকে প্রেরণা নিয়ে আমি প্রত্যেক মা-বাবা, অভিভাবকদের অনুরোধ করছি যে তাঁরা যেন মেয়েদের অবশ্যই শিক্ষিত করেন। মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করানোর সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য কিছুদিন আগেই কন্যা শিক্ষা প্রবেশ উৎসব শুরু করা হয়েছে, যে মেয়ের পড়াশোনা কোনো কারণে মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের দ্বিতীয়বার স্কুলে ভর্তি করানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বন্ধুরা, এটা আমাদের সকলের জন্য সৌভাগ্যের কথা যে বাবা সাহেবের সঙ্গে জুড়ে থাকা পাঁচটি তীর্থস্থানের জন্য কাজ করার সুযোগ পাওয়া গেছে। ওঁর জন্মস্থান মহু হোক, মুম্বাইতে চৈত্যভূমি হোক, লন্ডনে ওঁর বাড়ী হোক, নাগপুরে দীক্ষাভূমি হোক বা দিল্লিতে মহাপরিনির্বান স্থল, আমার সব স্থানগুলিতে, সব তীর্থস্থানগুলিতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। আমি মন কি বাতের শ্রোতাদের কাছে অনুরোধ করবো যে তাঁরা যেন মহাত্মা ফুলে, সাবিত্রী বাই ফুলে, বাবা সাহেব আম্বেদকরের সঙ্গে জুড়ে থাকা সবকটি জায়গা দর্শন করেন। আপনার সেখানে অনেক কিছু শেখার বিষয় পাবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাত অনুষ্ঠানে এইবারেও অনেক বিষয়ে কথা বললাম। আগামী মাসে অনেক উৎসব আসছে। কিছুদিন বাদেই নবরাত্রি আসছে। নবরাত্রিতে আমরা ব্রত-উপবাস, শক্তির আরাধনা করি, শক্তির পূজা করি, অর্থাৎ আমাদের সংস্কার আমাদের আনন্দ করতে শেখায় আবার নিয়ন্ত্রণ করতেও শেখায়। দৃঢ়তা এবং তপস্যা আমাদের কাছে উৎসবই, সেইজন্য নবরাত্রি আমাদের সবার কাছে খুবই বিশেষ পার্বণ। নবরাত্রির প্রথম দিনই গুড়িপাড়োয়া উৎসব আছে। এপ্রিল মাসেই ইস্টারও আছে আবার রমজানের পবিত্র দিনও শুরু হচ্ছে। আমরা সকলকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের উৎসব পালন করবো, ভারতের বৈচিত্রকে আরও শক্তিশালী করবো। সবার এটাই কামনা। এইবারে মন কি বাতে এইটুকুই। আগামী মাসে আপনাদের সঙ্গে নতুন বিষয়ে কথা বলবো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, নমস্কার। 'মন কি বাত'- এ আপনাদের সকলকে আরও একবার স্বাগত জানাই। আজ আমরা 'মন কি বাত' শুরু করব ভারতের সাফল্যের বিষয় উল্লেখ করে। এই মাসের শুরুতে, ভারত ইটালি থেকে নিজের এক বহুমূল্য ঐতিহ্য ফেরত আনতে সফল হয়েছে। এই ঐতিহ্য হলো অবলোকিতেশ্বর পদ্মপাণির হাজার বছরের থেকেও বেশি পুরনো এক মূর্তি। কয়েক বছর আগে এই মূর্তিটি বিহারের গয়াজী দেবীর স্থান কুন্ডলপুর মন্দির থেকে চুরি হয়েছিল। কিন্তু অনেক চেষ্টার পর ভারত এই মূর্তিটি ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। একইভাবে কয়েক বছর আগে তামিলনাড়ুর ভেলোর থেকে ভগবান অঞ্জনেয়ার হনুমানজীর মূর্তি চুরি হয়েছিল। হনুমানজীর এই মূর্তিটিও ৬০০-৭০০ বছরের পুরনো ছিল। এই মাসের শুরুতে অস্ট্রেলিয়াতে আমরা এটি পেয়েছি। আমাদের মিশন এটি পেয়েছে।
বন্ধুরা, হাজার হাজার বছরের আমাদের ইতিহাসে, দেশের কোণে কোণে, একের পর এক মূর্তি সর্বদাই তৈরি হতো, তাতে শ্রদ্ধা ছিল, শক্তি ছিল, দক্ষতা ছিল এবং তা ছিল বৈচিত্র্যে ভরপুর । আমাদের প্রতিটি মূর্তির ইতিহাসে তৎকালীন সময়ের প্রভাব স্পষ্ট ছিল। এগুলি ভারতীয় ভাস্কর্যের এক অপূর্ব নিদর্শন তো ছিলই, তাদের প্রতি আমাদের বিশ্বাসও যুক্ত ছিল। কিন্তু অতীতে অনেক মূর্তি চুরি করে ভারতের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কখনও এদেশে, কখনো ওদেশে এসব মূর্তি বিক্রি হতো এবং তাদের কাছে সেগুলো ছিল শুধুই শিল্পকর্ম। বিশ্বাস বা ইতিহাসের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক ছিল না। ভারতমাতার প্রতি আমাদের দায়িত্ব হল এই মূর্তি গুলো ফিরিয়ে আনা। এই মূর্তিগুলিতে ভারতের আত্মা আছে, বিশ্বাসের অংশ আছে। তাদের সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে। এই দায়িত্বের কথা উপলব্ধি করে ভারত নিজের উদ্যোগ বৃদ্ধি করে। এর ফলে , চুরি করার প্রবৃত্তি যাদের মধ্যে ছিল, তাদের মধ্যে এক ভয় জন্ম নেয়। যেসব দেশে এই মূর্তিগুলি চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তারাও এখন মনে করতে শুরু করেছে যে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোমল শক্তির যে কূটনৈতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে, সেখানেও মূর্তিগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ, এর সঙ্গে ভারতের অনুভূতি জড়িত, ভারতের শ্রদ্ধা যুক্ত। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে। এই কিছুদিন আগেও আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন, কাশি থেকে চুরি হয়ে যাওয়া মা অন্নপূর্ণা দেবীর মূর্তিও ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এটি ভারতের প্রতি বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের একটি উদাহরণ। ২০১৩ সাল পর্যন্ত মোটামুটি ১৩টি প্রতিমা ভারতে ফিরে এসেছিল। কিন্তু গত সাত বছরে ভারত সাফল্যের সাথে ২০০টিরও বেশি মূল্যবান মূর্তি ফিরিয়ে এনেছে। আমেরিকা, বৃটেন হল্যান্ড, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, এরকম অনেক দেশ ভারতের এই আবেগ বুঝতে পেরেছে এবং মূর্তিগুলোকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে যখন আমি আমেরিকায় গিয়েছিলাম, তখন সেখানে অনেক পুরোনো মূর্তি এবং সাংস্কৃতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস পেয়েছিলাম। দেশের কোনো মূল্যবান ঐতিহ্য যখন দেশে ফেরত আসে, তখন ইতিহাসের প্রতি যারা শ্রদ্ধাশীল, প্রত্নতত্ত্বের প্রতি যাঁদের আস্থা রয়েছে, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা এবং সর্বোপরি একজন ভারতীয় হিসেবে আমাদের সকলের সন্তুষ্টি খুবই স্বাভাবিক।
বন্ধুরা, ভারতীয় সংস্কৃতি এবং আমাদের ঐতিহ্যের কথা বলতে গিয়ে আমি আজ আপনাদের মন কি বাত অনুষ্ঠানে দু’জন লোকের কথা শোনাতে চাই। কয়েকদিন ধরে ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামে তানজানিয়ার দুই ভাই-বোন কিলি পল এবং তার বোন নীমাকে নিয়ে নানান কথাবার্তা হচ্ছে, আর আমার বিশ্বাস আপনারাও ওঁদের কথা অবশ্যই শুনেছেন। ওঁদের মধ্যে ভারতীয় সঙ্গীত নিয়ে বিশেষ উন্মাদনা রয়েছে, ভালোবাসা রয়েছে আর তাই ওঁরা ভীষণভাবেই জনপ্রিয়। ওঁদের যথাযথভাবে ঠোঁট নাড়ানো দেখে বোঝা যায় যে ওঁরা এই বিষয়টার জন্য কতটা পরিশ্রম করেন। কিছুদিন আগেই সাধারণতন্ত্র দিবসে আমাদের জাতীয় সংগীত 'জণ গণ মন' গাওয়ার সময় ওদের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। কয়েকদিন আগেই ওঁরা লতা দিদির একটি গান গেয়ে তাঁকে আবেগপ্রবণ শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছেন, আমি এই অদ্ভুত সৃজনশীলতার জন্য এই দু’জন ভাই-বোন কিলি আর নীমা - দু'জনকেই ভীষণভাবে প্রশংসাসূচক দৃষ্টিতে দেখি। কয়েকদিন আগে তানজানিয়ায় ভারতীয় দূতাবাসে এঁদের বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। ভারতীয় সংগীতের জাদু এমনই যে সবাইকে তা আকৃষ্ট করে। আমার মনে আছে কয়েক বছর আগে দেড়শোর থেকেও বেশি দেশে গায়ক-গায়িকা এবং সঙ্গীতজ্ঞরা নিজেদের দেশে নিজেদের পোশাকে পরম পূজনীয় বাপুর প্রিয় অর্থাৎ মহাত্মা গান্ধীর প্রিয় ভজন 'বৈষ্ণব জন' গাওয়ার সফল চেষ্টা করেছেন।
আজ যখন ভারত নিজের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকীর মতো গুরুত্বপূর্ণ উৎসব উদযাপন করছে, তখন দেশভক্তির গান নিয়েও এমন উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এখন বিদেশি নাগরিকরা সেখানকার বিখ্যাত গায়কদের ভারতের দেশভক্তির গান গাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। শুধু এটাই নয়, যদি তানজানিয়ায় কিলি আর নীমা ভারতের গান এভাবে লিপ-সিংক করে গাইতে পারে তাহলে আমার দেশে আমাদের দেশের অনেক ভাষায় এমন অনেক গান আছে, যা নিয়ে আমরাও এমন চেষ্টা করতে পারি। কোন গুজরাতি শিশু তামিল সংগীতের উপর করতে পারে, কোন কেরলের শিশু আসামের সংগীতের উপর করতে পারে, আবার কোন কন্নড় শিশু জম্মু-কাশ্মীরের গানের উপর করতে পারে। একটা এমন পরিবেশ আমরা তৈরি করতে পারি আমরা যেখানে ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-কে অনুভব করতে পারব। শুধু তাই নয় আমরা ‘আজাদী কা অমৃত মহোৎসবকে’ এরকম নতুন ভাবে পালন করতে পারি। আমি দেশের যুবক-যুবতীদের আহ্বান জানাচ্ছি যে আসুন ভারতীয় ভাষায় যেসব জনপ্রিয় গান রয়েছে আপনারা নিজেদের মতন করে তার ভিডিও বানান, আপনারাও জনপ্রিয় হবেন। আর দেশের বৈচিত্র্যের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের পরিচয়ও হবে ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই কয়েকদিন আগেই আমরা মাতৃভাষা দিবস পালন করেছি। বিদ্বান মানুষেরা মাতৃভাষা শব্দ কোথা থেকে এসেছে, কেমনভাবে এই শব্দের উৎপত্তি হয়েছে তা নিয়ে অনেক একাডেমিক শিক্ষামূলক তথ্য দিতে পারেন। আমি তো মাতৃভাষার জন্য এটাই বলতে পারি যেভাবে আমাদের জীবনকে যেভাবে আমাদের মা গড়ে দেয়, মাতৃভাষাও সেভাবেই আমাদের জীবনকে তৈরি করে। মা আর মাতৃভাষা দুইয়ে মিলেই জীবনের ভিত্তি মজবুত করে, তাকে চিরন্তন রাখে। যেমন আমরা আমাদের মাকে কখনোই ছাড়তে পারি না তেমন ভাবেই নিজের মাতৃভাষাকেও ছাড়তে পারিনা। আমার অনেক বছর আগের এক কথা মনে পড়ছে, আমি যখন আমেরিকা যাচ্ছিলাম, আলাদা আলাদা পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলাম, একবার এক তেলুগু পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম আমি, সেখানে খুব খুশির এক দৃশ্য দেখেছিলাম। সেই পরিবারের একজন আমায় বলেছিল যে তাঁরা তাঁদের পরিবারের মধ্যে একটি নিয়ম তৈরি করেছেন যে যতই কাজ থাকুক, তারা যদি শহরের বাইরে না থাকেন তাহলে পরিবারের সকল সদস্য ডিনার টেবিলে বসে একসঙ্গে রাতের খাবার খাবেন আর ডিনার টেবিলে অবশ্যই সকলে তেলুগু ভাষায় কথা বলবেন।
যে বাচ্চারা ওখানে জন্মেছিল, তাদের জন্যও এই নিয়ম বাধ্যতামূলক ছিল। নিজের মাতৃভাষার প্রতি এই পরিবারের প্রেম দেখে আমি খুবই প্রভাবিত হয়েছি।
বন্ধুরা, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও কিছু মানুষ এক মানসিক দ্বন্দ্বে ভোগেন, যার কারণে তারা নিজেদের ভাষা, পোশাক-আসাক, খাদ্যাভ্যাস নিয়ে সংকোচ বোধ করেন। এমনটা বিশ্বে আর কোথাও নেই। আমাদের গর্বের সঙ্গে নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলা উচিৎ। আর ভাষার ব্যাপারে ভারত এত সমৃদ্ধ যে পৃথিবীতে এর তুলনাই নেই আর। আমাদের ভাষা গুলির সৌন্দর্য হল- কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত, কচ্ছ থেকে কোহিমা পর্যন্ত, শত ভাষা, হাজার বুলি একে অন্যের থেকে একদম আলাদা হয়েও কোথাও গিয়ে ভাবাদর্শে এক। ভাষা অনেক, ভাব এক। বহু বছর ধরে আমাদের ভাষাগুলি একে অন্যের থেকে শিখে আসছে, একে অপরকে সমৃদ্ধ করেছে, একে অপরের বিকাশে সহায়ক হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ভাষা - তামিল আর ভারতীয় হিসেবে আমাদের গর্ব হওয়া উচিৎ যে আমাদের কাছে এরকম এক ঐতিহ্য আছে। এভাবেই যত পুরানো ধর্মশাস্ত্রগুলি আছে, তার অভিব্যক্তিও আমাদের সংস্কৃত ভাষায় আছে। ভারতবাসী প্রায় ১২১ কোটি। অর্থাৎ এটা গর্বের বিষয় যে ১২১ রকমের মাতৃভাষা এই দেশে রয়েছে। আর এর মধ্যে ১৪টি এমন ভাষা আছে, যাতে অন্তত এক কোটি মানুষ রোজ কথা বলেন, ব্যবহার করেন; অর্থাৎ, অনেক ইউরোপীয় দেশের জনসংখ্যা এক কোটিরও কম, তার চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ এই ১৪টি ভাষার সাথে যুক্ত। ২০১৯-এ হিন্দি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষাগুলির মধ্যে তৃতীয় স্থানে ছিল। ভারতীয়দের এই বিষয়ে গর্ব হওয়া উচিৎ। ভাষা কেবল অভিব্যক্তি প্রকাশের এক মাধ্যম নয়, ভাষা সমাজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বাচিঁয়ে রাখে। নিজের ভাষার ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছেন সুরিনামের সুরজন পরোহিজি। এই মাসের ২ তারিখে ওঁর ৮৪ বছর বয়স হল। ওঁর পূর্ব পুরুষরা বহু বছর আগে, রুজিরোজগারের খোঁজে হাজারো শ্রমিকদের সাথে সুরিনাম গিয়েছিলেন। সুরজন পরোহিজি হিন্দিতে চমৎকার কবিতা লেখেন। ওঁকে ওখানকার জাতীয় কবিদের মধ্যে গন্য করা হয়। আজও ওঁর ভারতের প্রতি ভালবাসা অটুট, মাটির টান বিদ্যমান। সুরিনামের লোকেরা সুরজন পরোহিজির নামে একটি সংগ্রহশালাও বানিয়েছেন। আমার জন্য একটি খুবই আনন্দের মূহুর্ত ছিল যখন আমি ২০১৫-তে ওঁকে সম্মানিত করার সুযোগ পাই।
বন্ধুরা, আজকে, অর্থাৎ ২৭শে ফেব্রুয়ারী মারাঠি ভাষা গৌরব দিবস।
সর্ব মারাঠী বন্ধু, ভগিনিনা মারাঠি ভাষা, দিনাচ্চা হার্দিক শুভেচ্ছা।
"সব মারাঠি বন্ধু, বোনেদের মারাঠি ভাষা দিবসের শুভেচ্ছা।"
মারাঠি কবিরাজ, বিষ্ণু বামন শীরওয়াডাকার জি, শ্রীমান কুসুমাগ্রজজি কে আজ শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।
আজ কুসুমাগ্রজজির জন্ম দিন। কুসুমাগ্রজজি মারাঠি ভাষায় কবিতা লিখেছেন, অনেক নাটক লিখেছেন, মারাঠি সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন।
বন্ধুরা, আমাদের ভাষার নিজস্ব গুণ রয়েছে, মাতৃভাষার নিজস্ব বিজ্ঞান রয়েছে। সেই বিজ্ঞানকে বুঝেই জাতীয় শিক্ষানীতিতে স্থানীয় ভাষায় পড়াশোনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রফেশনাল কোর্সগুলোও যেন স্থানীয় ভাষায় পড়ানো হয়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার অমৃতকালে আমাদের সকলের এক সঙ্গে এই উদ্যোগকে আরও ত্বরান্বিত করা উচিত, এ কাজ আমাদের আত্মমর্যাদার। আমি চাই, আপনার মাতৃভাষা যাই হোক না কেন, তার গুণাবলী সম্পর্কে অবশ্যই কিছু জানুন এবং কিছু অন্তত লিখুন।
বন্ধুরা, কয়েকদিন আগে আমার বন্ধু এবং কেনিয়ার পূর্ব প্রধানমন্ত্রী রাইলা ওডিঙ্গাজির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। এই বৈঠক চিত্তাকর্ষক কিন্তু বেশ আবেগপূর্ণ ছিল। আমরা যেহেতু খুব ভালো বন্ধু, তাই একে অপরকে মনের কথাও খোলাখুলিভাবে বলতে পারি। যখন আমরা কথা বলছিলাম, ওডিঙ্গাজি তাঁর মেয়ের কথা বললেন। তাঁর মেয়ে রোজমেরির ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে এবং সেই জন্য উনি তাঁর মেয়ের অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন। কিন্তু, এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় রোজমেরির দৃষ্টিশক্তি প্রায় চলে গিয়েছিল, তিনি প্রায় কিছুই দেখতে পেতেন না। এবার আপনি কল্পনা করতে পারেন যে মেয়েটির কী দুরবস্থা হয়েছিল এবং আমরাও অনুমান করতে পারি একজন বাবার জন্যে তা কতটা কষ্টকর পরিস্থিতি, তা আমরা অনুভব করতে পারি। তিনি তাঁর মেয়ের চিকিৎসার জন্য বিশ্বের সমস্ত হাসপাতালে চেষ্টা করেছেন, বিশ্বের এমন কোন বড় দেশ নেই, যেখানে তিনি তাঁর মেয়ের চিকিৎসার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেননি। বিশ্বের বড় বড় দেশে খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সাফল্য না পেয়ে একপ্রকার তিনি সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন, তাঁর বাড়িতে তখন হতাশার পরিবেশ। এই সময় কেউ তাঁকে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার জন্য ভারতে আসার পরামর্শ দিয়েছিলেন। যদিও তিনি মেয়ের জন্য অনেক কিছু করেছেন, ক্লান্ত ছিলেন, তবুও তিনি ভাবলেন দেখাই যাক একবার চেষ্টা করে, কি হয়? তিনি ভারতে আসেন, কেরালার একটি আয়ুর্বেদিক হাসপাতালে তাঁর মেয়ের চিকিৎসা করাতে শুরু করেন। তাঁর মেয়ে এখানে অনেকদিন থেকেছে। আয়ুর্বেদের এই চিকিৎসার প্রভাবে রোজমেরির দৃষ্টিশক্তি অনেকাংশে ফিরে আসে। আপনি কল্পনা করতে পারেন, যেন আবার নতুনকরে প্রাণের সঞ্চার হল, রোজমেরির জীবনে আলো ফিরে এলো। সম্পূর্ন পরিবারও যেন নতুন আলো নতুন জীবন ফিরে পেল। ওডিঙ্গাজি আমাকে আবেগপূর্ণ হয়ে বলেছিলেন তাঁর ইচ্ছা ভারতের আয়ুর্বেদের জ্ঞান, এই মহার্ঘ্য বিজ্ঞান, তিনি কেনিয়াতে নিয়ে যেতে চান। এতে যে ধরনের গাছপালা ব্যবহার করা হয় উনি সেইসব গাছের চাষ করবেন এবং আরও বেশি মানুষ যেন এর থেকে উপকৃত হয় তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।
এটা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয় আমাদের দেশ ও ঐতিহ্য একজনের জীবনে সীমাহীন এক কষ্ট দূর করতে সাহায্য করেছে। এটা শুনে আপনিও খুশি হবেন। এমন কোন ভারতীয় আছেন যে গর্বিত হবে না? আমরা সবাই জানি যে শুধু ওডিঙ্গাজিই নয়, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ আয়ুর্বেদ থেকে অনুরূপ উপকৃত হচ্ছেন। আয়ুর্বেদের অতি বড় প্রশংসাকারীর মধ্যে ব্রিটেনের প্রিন্স চার্লস'ও একজন! আমার সঙ্গে যখনই তাঁর দেখা হয়, তখনই তিনি আয়ুর্বেদ প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি ভারতের বহু আয়ুর্বেদিক সংস্থার খবর-ও রাখেন!
বন্ধুরা, গত সাত বছরে, আমাদের দেশে আয়ুর্বেদের প্রচার এবং সম্প্রসারণের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আমাদের ঐতিহ্যবাহী চিরাচরিত স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থাকে জনপ্রিয় করার যে সংকল্প, তা আরো সুদৃঢ় হয়েছে আয়ুষ মন্ত্রালয় গঠন হওয়ায়। আমি অত্যন্ত আনন্দিত কারণ সাম্প্রতিক অতীতে আয়ুর্বেদিক ক্ষেত্রেও বেশ কিছু নতুন স্টার্টআপ সামনে এসেছে। এ মাসের শুরুতে, আয়ুস স্টার্টআপ চ্যালেঞ্জ শুরু হয়েছিল। এই চ্যালেঞ্জের উদ্দেশ্য ছিল এই ক্ষেত্রে কর্মরত স্টার্টআপ গুলোকে চিহ্নিত করে, তাদের সাহায্য দেওয়া। যে সমস্ত যুবক-যুবতী বন্ধুরা এ বিষয়ে কাজ করছেন তাদের কাছে আমার আবেদন, তারা যেন এই চ্যালেঞ্জে অবশ্যই অংশগ্রহণ করেন।
বন্ধুরা, একবার যখন সকলে মিলে কিছু করার সংকল্প নেয় তখন অসাধ্য সাধন-ও সম্ভব হয়। সমাজে এমন অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে, যেখানে জনসাধারনের অংশগ্রহণ ও সমষ্টিগত প্রচেষ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। কাশ্মীরের শ্রীনগরে, "মিশন জল থল" নামে এমনই এক জন-আন্দোলন চলছে। এটি শ্রীনগরের হ্রদ ও জলাশয় গুলিকে পরিষ্কার করা ও পুরনো আকর্ষণ ফিরিয়ে আনার এক অনন্য প্রচেষ্টা। মিশন জল থল"-এ "কুশল সার" এবং " গিল সার"-কে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এখানে জনসাধারণের অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রযুক্তিরও অনেক সাহায্য নে য়া হচ্ছে। কোথায় কোথায় বেদখল হয়েছে, কোথায় অবৈধ নির্মাণ হয়েছে তা খুঁজে বার করতে এই এলাকার সমীক্ষাও করা হয়েছে। তার সঙ্গেই আবর্জনা পরিষ্কার ও প্লাস্টিক বর্জ্য সরানোর অভিযানও চালানো হয়েছে। মিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ে জলের পুরনো উৎস এবং জলাশয়ে জলের যোগান দেয় এমন উনিশটি ঝরনাকে পুনরুজ্জীবিত করার পূর্ণ চেষ্টা করা হয়েছে। এই পুনরুজ্জীবন প্রকল্পের গুরুত্ব নিয়ে জনসচেতনতা যাতে আরো বেশী বৃদ্ধি পায় সেজন্য স্থানীয় মানুষ এবং যুব বন্ধুদের ওয়াটার আম্বাস্যাডারও করা হয়েছে। এখন ওখানকার স্থানীয় মানুষেরা 'গিল সার লেকে' পরিযায়ী পাখি ও মাছের সংখ্যা যাতে আরো বাড়ে সেই উদ্যোগ নিয়েছেন, এবং তা দেখে আনন্দিতও হচ্ছেন। আমি এই সুন্দর প্রচেষ্টার জন্য শ্রীনগরের মানুষকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুরা, আট বছর আগে দেশে যে 'স্বচ্ছ ভারত মিশন' শুরু হয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পরিধি-ও বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন নতুন উদ্ভাবন সংযোজন হয়েছে। ভারতে আপনি যেখানেই যান, স্বচ্ছতার জন্যে কোনো না কোনো উদ্যোগ আপনি সর্বত্রই দেখতে পাবেন। আসামের কোকরাঝারের এমনই একটি প্রয়াস সম্পর্কে আমি জানতে পেরেছি। সেখানে প্রাতঃভ্রমণকারীদের একটি দল 'স্বচ্ছ ও সবুজ কোকরাঝাড় মিশনের' জন্য প্রশংসনীয় কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাঁরা নতুন ফ্লাইওভার এলাকায় তিন কিলোমিটার লম্বা রাস্তা পরিষ্কার করে, স্বচ্ছতা সম্পর্কে উৎসাহিত হওয়ার মতো বার্তা দিয়েছেন। ঠিক একইভাবে বিশাখাপত্তনমেও স্বচ্ছ ভারত অভিযানের জন্য পলিথিন-এর বদলে কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এখানকার লোক পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক উৎপাদনের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। এর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা বাড়িতেই জঞ্জালকে আলাদা করার সুফলের বিষয়ে সচেতনতাও প্রচার করছে। মুম্বাইয়ের সোমাইয়া কলেজের ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের স্বচ্ছতা অভিযানে সৌন্দর্যকেও অন্তর্ভূক্ত করে নিয়েছে। এঁরা কল্যাণ রেলওয়ে স্টেশনের দেয়ালগুলোকে সুন্দর পেইন্টিং দিয়ে সাজিয়েছে। রাজস্থানের সাওয়াই মাধোপুর-এর আরেকটি অনুপ্রেরণাদায়ক উদ্যোগের কথা আমি জানতে পেরেছি। এখানকার যুবকরা রনথম্বরে মিশন বিট প্লাস্টিক নামে একটি অভিযান চালাচ্ছে। এর আওতায় রনথম্বরের জঙ্গলের ভেতর থেকে সমস্ত প্লাস্টিক পলিথিন সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সবার প্রয়াসের মাধ্যমে এইরকমই ভাবনা জনসাধারণের যোগদানকে আরও মজবুত করে আর জনসাধারণের অংশগ্রহণ থাকলে বড়ো থেকে বড়ো লক্ষ্য অবশ্যই পূরণ হয়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ থেকে কিছুদিন বাদেই, ৮ই মার্চ সমগ্র বিশ্ব জুড়ে 'আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস' পালন করা হবে। মহিলাদের সাহস, দক্ষতা, প্রতিভার সঙ্গে জুড়ে থাকা কত উদাহরণ আমি মন কি বাত অনুষ্ঠানে নানা সময়ে ভাগ করে থাকি। আজ স্কিল ইন্ডিয়া হোক, স্বনির্ভর গোষ্ঠিই হোক, বা ছোট বড় উদ্যোগ হোক, মহিলারা সব জায়গায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আপনারা যে কোন ক্ষেত্রেই দেখুন, পুরোনো ধারণাগুলো ভেঙে যাচ্ছে। আজ, আমাদের দেশে সংসদ থেকে পঞ্চায়েত পর্যন্ত আলাদা আলাদা কার্যক্ষেত্রে, মহিলারা নতুন উচ্চতায় পৌছোতে পারছেন। সেনাবাহিনীতেও মেয়েরা এখন নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাতে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছে, দেশকে রক্ষা করছে। গত মাসে সাধারণতন্ত্র দিবসে আমরা দেখেছি আধুনিক যুদ্ধবিমানও মেয়েরা ওড়াচ্ছে । দেশও সৈনিক স্কুলগুলোতে মেয়েদের ভর্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে, আর সারা দেশে এখন সৈনিক স্কুলে মেয়েরা ভর্তি হচ্ছে। একইভাবে, আপনার স্টার্ট-আপ জগৎ-কে দেখুন, গত বছর দেশে হাজার রকমের স্টার্ট-আপ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক স্টার্ট-আপে মহিলারা পরিচালকের ভূমিকায় আছে। মহিলাদের মাতৃত্বকালীন অবকাশ বাড়ানোর মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ছেলে এবং মেয়েদের সমান অধিকার দেওয়ার জন্য বিয়ের বয়স সমান সমান করার জন্য দেশ চেষ্টা করছে। এইভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে আরও একটি বড়ো পরিবর্তনও হয়ত আপনারা দেখতে পাচ্ছেন! এই পরিবর্তন হলো আমাদের দেশের সামাজিক অভিযানগুলির সফলতা। ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’র সাফল্যকেই দেখুন, দেশে লিঙ্গ অনুপাত এখন অনেক ভালো হয়েছে। স্কুলে যাওয়া মেয়েদের সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের মেয়েরা যাতে মাঝপথে স্কুলছুট না হয় সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের। এইভাবেই, 'স্বচ্ছ ভারত অভিযানের' মধ্যে দিয়ে দেশের মহিলাদের এখন আর খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করতে হয় না । তিন তালাকের মতন সামাজিক কুপ্রথাও শেষও হতে চলেছে। যবে থেকে তিন তালাকের বিরুদ্ধে আইন এসেছে, তবে থেকে তিন তালাকের মামলা ৮০ শতাংশ কমে গেছে। এই এত কিছু পরিবর্তন এত কম সময়ের মধ্যে কি করে হচ্ছে? এটা পরিবর্তন এই জন্য সম্ভব হচ্ছে কারণ আমাদের দেশে পরিবর্তন এবং প্রগতিশীল প্রয়াসের নেতৃত্ব মহিলারা নিজেরাই দিচ্ছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আগামীকাল ২৮শে ফেব্রুয়ারি হল জাতীয় বিজ্ঞান দিবস। এই দিনটি রমন এফেক্ট-এর আবিষ্কারের জন্যও পরিচিত। আমি সি ভি রমন জির সঙ্গে সঙ্গে, সেই সমস্ত বৈজ্ঞানিকদের প্রতি সম্মানের সঙ্গে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করতে চাই, যাঁরা আমাদের বিজ্ঞান নিয়ে নানা গবেষোণাকে মসৃণ বানাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বন্ধুরা, আমাদের সহজ সরল জীবনযাত্রায় প্রযুক্তি একটা বিরাট স্থান তৈরি করেছে। কোন প্রযুক্তি ভালো বা কোনো প্রযুক্তির আরো ভালো ব্যবহার কিভাবে করা যায় - এইসব বিষয়ের ধারণা আমরা ভালোভাবে পেয়ে থাকি। কিন্তু এটাও সত্যি যে আমাদের পরিবারের বাচ্চাদের আমরা এটা বোঝাই না, যে ওই প্রযুক্তির ভিত্তি কি? তার পিছনের বিজ্ঞান কি? এইদিকে আমাদের মনোযোগ কখনোই যায়না। এই বিজ্ঞান দিবসে তে, আমার সমস্ত পরিবারের কাছে অনুরোধ আপনাদের বাচ্চাদের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই ছোট ছোট প্রয়াস গ্রহণ করুন। যেমন ধরুন যারা অস্পষ্ট দেখে, কিন্তু চশমা লাগানোর পরে তারা স্পষ্ট দেখতে পায়, এর পেছনের বিজ্ঞানটা কি তা বাচ্চাদের আমরা সহজেই বোঝাতে পারি । শুধুই চশমা দেখে আনন্দ পাবেন এমনটা নয়। এখন সহজেই আপনারা একটি ছোট কাগজের সাহায্যে ওকে বোঝাতে পারবেন। এখন ওরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, কিন্তু ক্যালকুলেটর কিভাবে কাজ করে? রিমোট কন্ট্রোল কি করে কাজ করে? সেন্সর কি জিনিস? এইরকম বিজ্ঞানের নানা কথাবার্তা ওদের সঙ্গে ঘরে আলোচনা করা হয় কি? হতে পারে খুব সহজেই। আমরা ঘরের রোজনামচায় দরকারি জিনিসের পিছনে কি বিজ্ঞান আছে এটা ওদের বোঝাতে পারি। সেই ভাবেই আমরা কি কখনো বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে আকাশ পর্যবেক্ষণ করেছি? রাতে তারাদের সম্পর্কে নিশ্চিত কথা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের নক্ষত্রপুঞ্জ দেখা যায়, তাদের সম্বন্ধে বলুন। এরকমভাবে আপনারা বাচ্চাদের মধ্যে পদার্থবিদ্যা আর জ্যোতির্বিদ্যার প্রতি নতুন আগ্রহ তৈরি করতে পারেন। আজকাল তো অনেক অ্যাপ-ও আছে যার মাধ্যমে আপনারা গ্রহ-নক্ষত্রকে চিহ্নিত করতে পারেন বা যে নক্ষত্র আকাশে দেখা যাচ্ছে তাকে চিনে নিতে পারেন, জানতে পারেন তার সম্বন্ধে। আমি আমাদের নতুন শিল্পোদ্যোগীদের- ও বলবো, আপনারা আপনাদের কৌশল আর সায়ন্টিফিক ক্যারেক্টার রাষ্ট্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কাজেও লাগান। এটা দেশের প্রতি আমাদের বিজ্ঞানের জন্য যৌথ দায়বদ্ধতাও বটে। যেরকম আজকাল আমি দেখছি আমাদের স্টার্টআপ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জগতে অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। ভার্চুয়াল ক্লাসের এই যুগে, এরকমই একটি ভার্চুয়াল ল্যাব, বাচ্চাদের কথা মাথায় রেখে বানানো যায়। আমরা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে বাচ্চাদের ঘরে বসেই রসায়নের গবেষণার অভিজ্ঞতা দিতে পারি। আমাদের শিক্ষক ও অভিভাবকদের কাছে আমার অনুরোধ যে আপনারা সবাই, ছাত্রছাত্রী ও বাচ্চাদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবার জন্য উৎসাহ দিন। ওদের সঙ্গে মিলে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন। আজ, আমি করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতীয় বৈজ্ঞানিকদের ভূমিকার প্রশংসা করতে চাই। তাঁদের কঠিন পরিশ্রমের জন্যই মেড ইন ইন্ডিয়া টিকা তৈরি সম্ভব হয়েছে যার ফলে সমগ্র বিশ্বের মানুষ বড় সাহায্য পেয়েছে। মানবতার জন্য বিজ্ঞানের এটাই তো উপহার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এ বারেও আমি বহু বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। আসন্ন মার্চ মাসে বহু উৎসব-পার্বণ রয়েছে, শিবরাত্রি রয়েছে এবং কিছুদিন পরেই আপনারা হোলি উৎসবের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। হোলি এমন একটি উৎসব যা আমাদের সবাইকে এক সূত্রে বেঁধে ফেলে। এখানে আপন-পর, শত্রুতা, বৈরি, ছোট-বড় সব বিভেদ মুছে যায়। এই জন্যই বলা হয়, হোলির রঙের থেকেও বেশি গাঢ় এই উৎসবের প্রেম ও সৌহার্দের রঙ। হোলিতে গুজিয়ার মিষ্টত্বের সঙ্গে থাকে সম্পর্কের অনন্য মিষ্টত্বও। এই সম্পর্কগুলি আমাদের আরও মজবুত করতে হবে। এবং সম্পর্ক বলতে আমি শুধু আপন পরিবারের কথা বলছি না, বলছি সেই সব সম্পর্কের কথা যেগুলি আপনার বৃহৎত্তর পরিবার সৃষ্টি করে। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিটিকেও আপনাদের মনে রাখতে হবে। এই পদ্ধতিটি হল - ভোকাল ফর লোকাল। একে সঙ্গে নিয়ে আমাদের উৎসব পালন করতে হবে। আপনারা উৎসবের সময় স্থানীয় জিনিস ক্রয় করুন যাতে আপনার চারপাশে থাকা মানুষজনের জীবন রঙ্গিন হয়ে ওঠে, রঙ্গিন থাকে, উদ্দীপনায় ভরা থাকে।
আমাদের দেশ যে সাফল্যের সঙ্গে করোনার মোকাবিলা করছে ও অগ্রসর হচ্ছে, তাতে উৎসব পালনের ক্ষেত্রেও উৎসাহ অনেক গুণ বেড়ে গেছে।
এই উৎসাহের সঙ্গেই আমাদের উৎসব পালন করতে হবে এবং তার পাশাপাশি সবাইকে সাবধানতাও অবলম্বন করতে হবে। আসন্ন উৎসবগুলি যাতে আপনাদের খুব ভাল কাটে এই কামনা করছি।
আমি সব সময়ই আপনাদের বার্তার, আপনাদের চিঠির, আপনাদের কথার অপেক্ষা করব। অনেক, অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ মন কি বাতের আরও এক পর্বের মাধ্যমে আমরা একত্রিত হচ্ছি। এটা ২০২২-এর প্রথম ‘মন কি বাত’। আজ আমরা এমন বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাব যা আমাদের দেশ আর দেশবাসীর সদর্থক প্রেরণা আর সামগ্রিক প্রয়াসের সঙ্গে জড়িত। আজ আমাদের পূজনীয় বাপু মহাত্মা গান্ধীজীর পুণ্যতিথিও বটে। ৩০শে জানুয়ারির এই দিন, আমাদের বাপুর শিক্ষাকে স্মরণ করায়। এই কিছুদিন আগেই আমরা সাধারণতন্ত্র দিবসও পালন করেছি। দিল্লীর রাজপথে আমরা দেশের শৌর্য আর সামর্থ্যের যে ঝলক দেখেছি তাতে সবার মন গর্ব আর উৎসাহে ভরে উঠেছে। একটা পরিবর্তন যা আপনারা লক্ষ্য করেছেন - তা হল এখন থেকে সাধারণতন্ত্র দিবসের সমারোহ ২৩শে জানুয়ারি অর্থাৎ নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী থেকে শুরু হয়েছে আর ৩০শে জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ গান্ধীজির পুণ্যতিথি অবধি চলবে। ইণ্ডিয়া গেটে নেতাজির ডিজিটাল মূর্তিও স্থাপন করা হয়েছে। এই বিষয়টিকে পুরো দেশ যেভাবে স্বাগত জানিয়েছে, দেশের প্রত্যেক কোণে যেমন আনন্দের ঢেউ উঠেছে, প্রত্যেক দেশবাসী যেভাবে নিজের অনুভব ব্যক্ত করেছে তা আমরা কখনই ভুলতে পারি না।
বন্ধুরা, আজাদির অমৃত মহোৎসবে দেশ এইসব প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজের রাষ্ট্রীয় প্রতীক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করছে। আমরা দেখলাম যে ইণ্ডিয়া গেটের কাছে অমর জওয়ান জ্যোতি আর পাশেই ন্যশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখাকে এক করে দেওয়া হল। এই মর্মস্পর্শী অনুষ্ঠান উপলক্ষে কত না দেশবাসী আর শহীদের পরিবারের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়েছে। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে শহীদ হওয়া দেশের প্রত্যেক বীরের নাম খোদিত হয়েছে ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে। সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কিছু সমরকর্মী আমাকে চিঠি লিখে বলেছেন যে – ‘শহীদদের স্মৃতির সামনে প্রজ্জ্বলিত অমর জওয়ান জ্যোতি শহীদদের অমরত্বের প্রতীক’। সত্যিই, অমর জওয়ান জ্যোতির মতই অমর আমাদের শহীদরা, ওঁদের প্রেরণা আর ওঁদের অবদানও অমর। আমি আপনাদের সবাইকে বলব, যখনই সুযোগ পাবেন তখনই ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে অবশ্যই যাবেন। নিজের পরিবার আর সন্তানদেরও অবশ্যই নিয়ে যাবেন। এখানে আপনি এক ভিন্ন শক্তি আর প্রেরণার অনুভব লাভ করবেন।
বন্ধুরা, অমৃত মহোৎসবের এই সব অনুষ্ঠানের মাঝে দেশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও প্রদান করা হয়েছে। একটি হল, ‘প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় বাল পুরস্কার’। এই পুরস্কার সেই সব শিশুরা পেল, যারা অল্প বয়সেই সাহসী আর প্রেরণাদায়ক কাজ করেছে। এই সব শিশুদের ব্যাপারে আমাদের সবার নিজেদের বাড়িতে জানানো উচিত। এতে আমাদের সন্তানরাও প্রেরণা পাবে আর তাদের ভেতরে দেশের নাম উজ্জ্বল করার উৎসাহ তৈরি হবে। দেশে সম্প্রতি পদ্ম সম্মানও ঘোষণা করা হয়েছে। পদ্ম পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে এমন অনেক নাম আছে যাঁদের সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানেন। এঁরা আমাদের দেশের আনসাঙ হিরোজ তথা অনামী বীর , যাঁরা সাধারণ পরিস্থিতির মধ্যেও অসাধারণ কাজ করেছেন। যেমন উত্তরাখণ্ডের বাসন্তী দেবীজী-কে পদ্মশ্রী দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে। বাসন্তী দেবী নিজের গোটা জীবন সংগ্রামের মধ্যে কাটিয়েছেন। অল্প বয়সেই তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়, আর তিনি একটি আশ্রমে থাকতে শুরু করেন। এখানে থেকে তিনি নদী বাঁচানোর জন্য লড়াই করেন আর পরিবেশ বাঁচাতে অসাধারণ অবদান রাখেন। তিনি মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্যও অনেক কাজ করেছেন। এভাবেই মণিপুরের সাতাত্তর বর্ষীয় লৌরেম্বম বীণো দেবী বহু দশক ধরে মণিপুরের লিবা টেক্সটাইল আর্টের সংরক্ষণ করছেন। তাঁকেও পদ্মশ্রী দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের অর্জুন সিং পদ্ম সম্মান পেয়েছেন বৈগা আদিবাসী নৃত্যকলাকে পরিচিত করানোর জন্য। পদ্ম সম্মান প্রাপক আর এক ব্যক্তি হলেন শ্রীমান অমাই মহালিঙ্গা নাইক। ইনি একজন কৃষক এবং কর্ণাটকের অধিবাসী। তাঁকে কেউ কেউ টানেল ম্যানও বলেন। ইনি চাষের ক্ষেত্রে এমন সব উদ্ভাবন করেছেন যা দেখে যে কেউ বিস্মিত হবেন। তাঁর প্রচেষ্টার অনেক বড় সুবিধা ছোট কৃষকরা পেয়েছেন। এমন আরও অনেক আনসাঙ হিরোজ রয়েছেন, দেশের জন্য অবদানের কারণে যাঁদের সম্মানিত করা হয়েছে। আপনারা অবশ্যই এঁদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। জীবনে অনেক কিছু শেখার রয়েছে এঁদের কাছ থেকে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে আপনারা সবাই আমাকে প্রচুর চিঠি আর বার্তা পাঠান, অনেক সুপারিশও পাঠান। এই ধারাবাহিকতার মধ্যেই এমন কিছু ঘটেছে যা আমার জন্য অবিস্মরণীয়। এক কোটিরও বেশি শিশু নিজের ‘মন কি বাত’ পোস্ট কার্ডের মাধ্যমে আমাকে লিখে পাঠিয়েছে। এই এক কোটি পোস্ট কার্ড দেশের আলাদা-আলাদা অংশ থেকে এসেছে, বিদেশ থেকেও এসেছে। সময় বার করে এরই মধ্য থেকে আমি অনেক পোস্টকার্ড পড়ার চেষ্টা করেছি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মের চিন্তাভাবনা যে কত ব্যাপক এবং বিস্তৃত, তা এই পোস্টকার্ডের মধ্যে ধরা পড়ে। আমি 'মন কি বাত' এর শ্রোতাদের জন্য বেশ কিছু পোস্ট কার্ড বাছাই করে রেখেছি যা আমি আপনাদের জানাতে চাই। যেমন এটি আসামের গুয়াহাটির ঋদ্ধিমা স্বর্গিয়ারির পোস্টকার্ড। ঋদ্ধিমা সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। সে লিখেছে যে সে স্বাধীনতার শতবর্ষে এমন এক ভারত দেখতে চায় যা বিশ্বের মধ্যে স্বচ্ছতম, সন্ত্রাসবাদ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত, ১০০% শিক্ষিত দেশ, দুর্ঘটনামুক্ত দেশ, এবং স্থিতিশীল প্রযুক্তির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা দিতে সক্ষম। ঋদ্ধিমা, আমাদের মেয়েরা যা ভাবে, দেশের জন্য যে স্বপ্ন দেখে তা পূর্ণ হবেই। যখন সকলের প্রচেষ্টা যুক্ত হবে, আপনাদের মত তরুণ প্রজন্ম সেই লক্ষ্যে কাজ করবে, তখন আপনার ভারত সেরকম ভাবেই গড়ে উঠবে, ঠিক যেমন আপনি চান। একটি পোস্ট কার্ড আমি উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের নব্যা ভার্মার কাছ থেকে পেয়েছি। নব্যা লিখেছেন -তার স্বপ্ন ২০৪৭ সালে এমন এক ভারত যেখানে প্রত্যেকে সসম্মানে জীবন ধারণ করতে পারেন, যেখানে কৃষকরা সমৃদ্ধ এবং কোন দুর্নীতি নেই। নব্যা দেশের জন্য আপনার স্বপ্ন খুবই প্রশংসনীয়। দেশও সেই দিকে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। আপনি দুর্নীতিমুক্ত ভারতের কথা বলেছেন। দুর্নীতি দেশকে ঘুণের মত ফাঁপা করে দেয়। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ২০৪৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করব কেন? আমাদের সকল দেশবাসীকে, আজকের তরুণ প্রজন্মকে একযোগে এই কাজ করতে হবে, দ্রুত করতে হবে এবং এর জন্য আমাদের কর্তব্যকে প্রাধান্য দেওয়া খুবই জরুরি; এটাই কর্তব্যবোধ। যেখানে কর্তব্য সর্বাগ্রে, সেখানে দুর্নীতির কোনো স্থান নেই।
বন্ধুরা, আমার সামনে আরো একটি পোস্ট কার্ড রয়েছে চেন্নাইয়ের মোহাম্মদ ইব্রাহিমের। ইব্রাহিম ২০৪৭ সালে ভারতকে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একটি বড় শক্তি হিসেবে দেখতে চান। তিনি চান চাঁদে ভারতের নিজস্ব গবেষণা কেন্দ্র তৈরি হোক এবং ভারত মঙ্গলে মানুষের বসতি স্থাপনের কাজ শুরু করুক। একই সঙ্গে, পৃথিবীকে দূষণমুক্ত করতে ভারতকেও বড় ভূমিকায় দেখতে চান ইব্রাহিম। ইব্রাহিম, আপনাদের মতো তরুণ যে দেশে রয়েছে, সেই দেশের পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়।
বন্ধুরা, আমার সামনে আরো একটি চিঠি রয়েছে। পাঠিয়েছে মধ্যপ্রদেশের রায়সেন থেকে সরস্বতী বিদ্যামন্দিরের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ভাবনা। প্রথমেই আমি ভাবনাকে বলব যে আপনি যেভাবে ভারতের পতাকা এঁকে পোস্ট কার্ড সাজিয়েছেন তা আমার খুব ভালো লেগেছে। বিপ্লবী শিরীষ কুমার সম্পর্কে লিখেছেন ভাবনা।
বন্ধুরা, আমি গোয়ার লরেন্সিয়া পেরেরার পোস্টকার্ডও পেয়েছি। তিনি দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। তার চিঠিরও বিষয় - স্বাধীনতার না জানা নায়ক। আমি তর্জমা করে আপনাদের বলছি। তিনি লিখেছেন - "ভিকাজি কামা ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত সাহসী নারীদের মধ্যে অন্যতম। মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য তিনি দেশে-বিদেশে বহু প্রচার অভিযান চালিয়েছেন। অনেক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। অবশ্যই ভিকাজি কামা ছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বীরাঙ্গনা। ১৯৬০ সালে, তিনি জার্মানিতে ভারতের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। এই পতাকা ডিজাইনে যে ব্যক্তি তাকে সাহায্য করেছিলেন, তিনি শ্রী শ্যামজি কৃষ্ণ বর্মা। শ্রী শ্যামজি কৃষ্ণ বর্মাজি ১৯৩০ সালে জেনেভায় দেহত্যাগ করেন। তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল, ভারতের স্বাধীনতার পর তাঁর অস্থি ভারতে আনা হোক। যদিও ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পরপরই তাঁর অস্থি ভারতে ফিরিয়ে আনা উচিত ছিল, কিন্তু সে কাজ হয়নি। হয়তো পরমাত্মা চেয়েছিলেন এই কাজ আমি করি এবং আমিও সেই কাজ করার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আমি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, ২০০৩ সালে তাঁর অস্থি ভারতে আনা হয়েছিল। শ্যামজি কৃষ্ণ বর্মাজির জন্মস্থান, কচ্ছের মান্ডভিতে, তাঁর স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধও তৈরি করা হয়েছে।
বন্ধুরা, ভারতের স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের উৎসাহ শুধু আমাদের দেশেই সীমাবদ্ধ নেই। আমি ভারতের মিত্র-দেশ ক্রোয়েশিয়া থেকেও ৭৫টি পোস্টকার্ড পেয়েছি। ক্রোয়েশিয়ার জাগ্রেবের স্কুল অফ অ্যাপ্লাইড আর্টস অ্যান্ড ডিজাইনের শিক্ষার্থীরা এই ৭৫টি কার্ড ভারতের জনসাধারণের উদ্দেশে পাঠিয়েছেন এবং অমৃত মহোৎসবের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। সকল দেশবাসীর পক্ষ থেকে আমি ক্রোয়েশিয়া এবং তার জনসাধারণকে ধন্যবাদ জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, চিরকালই ভারত জ্ঞান ও শিক্ষার তপভূমি। 'শিক্ষা'কে আমরা বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখিনি; বরং তাকে জীবনের সামগ্রিক অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখেছি। আমাদের দেশের প্রণম্য ও মহান ব্যক্তিদের সঙ্গেও শিক্ষার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। পন্ডিত মদনমোহন মালব্যজি যেমন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক তেমনই মহাত্মা গান্ধী "গুজরাট বিদ্যাপীঠ" প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। গুজরাটের 'আনন্দ'-এ 'বল্লভ বিদ্যানগর' বলে একটা ভারী সুন্দর জায়গা আছে। সর্দার প্যাটেলের ইচ্ছায়, 'ভাই কাকা' ও 'ভিকা ভাই' নামে তার দুই সহযোগী সেখানে তরুণদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছিলেন। একইভাবে পশ্চিমবঙ্গে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শান্তিনিকেতনের প্রতিষ্ঠা করেন। মহারাজা গায়কোয়াড়-ও প্রবল শিক্ষানুরাগীদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছিলেন এবং ডক্টর অম্বেদকর ও শ্রী অরবিন্দ সহ বহু প্রণম্য ব্যক্তিকে উচ্চশিক্ষার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন। এই মহান ব্যক্তিদের তালিকায় আরও একটি নাম হলো রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ সিং জী । রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ সিং জি, একটা কারিগরি স্কুল তৈরীর জন্য নিজের বাড়ি দান করেছিলেন। তিনি আলীগড় এবং মথুরায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরীর জন্য অনেক আর্থিক সাহায্যও করেছিলেন। কিছুদিন আগে, তাঁর নামে আলীগড়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। আমি আনন্দিত কারণ শিক্ষার আলো প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সেই প্রাণবন্ত ভাবনা ভারতে আজও রয়ে গেছে। আপনারা কি জানেন এই চিন্তাধারার সবচেয়ে সুন্দর দিকটি কী? তা হলো, শিক্ষার বিষয়ে এই সচেতনতা সমাজের প্রতিটি স্তরেই দেখা যাচ্ছে। তামিলনাড়ুর, তিরুপ্পুর জেলার উদুমলপেট ব্লকের বাসিন্দা তায়ম্মল-জী'র উদাহরণ ভীষণ-ই উৎসাহিত করার মত। তায়ম্মল-জী'র নিজের কোন জমিজমা নেই। বহু বছর ধরে তার পরিবার ডাবের জল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। আর্থিক অবস্থা ভালো না হলেও, তায়ম্মল-জী' তার ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার জন্য কোন প্রচেষ্টার ত্রুটি রাখেনি। তাঁর সন্তানেরা চিন্নবীরমপট্টী পঞ্চায়েত ইউনিয়ন মিডিল স্কুলে পড়তো। এমনই একদিন স্কুলে অভিভাবকদের সঙ্গে মিটিং-এর সময় কথা ওঠে, স্কুলের অবস্থা ও শ্রেণীকক্ষগুলোর সংশোধন প্রয়োজন, স্কুলের পরিকাঠামো ঠিক করা প্রয়োজন। তায়ম্মল-জী'ও সেই মিটিং-এ ছিলেন। তিনি সবকিছু শোনেন। সেই বৈঠকের আলোচনা একটা সময় অর্থাভাবের কারণে আটকে যায়। তারপর তায়ম্মলজী যা করেন তা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। যে তায়ম্মলজী ডাবের জল বিক্রি করে সামান্য পুঁজি জমা করেছিলেন, সেই মানুষটিই 'এক লক্ষ' টাকা স্কুলের জন্য দান করেন। সত্যিই, এমন কাজ করার জন্য অনেক বড় হৃদয়ের প্রয়োজন, সেবা করার মতো মানসিকতার প্রয়োজন। তায়ম্মলজীর কথায় এখন স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়, কিন্তু পরিকাঠামো ভালো হলে উচ্চমাধ্যমিক (Higher Secondary) পর্যন্ত পড়ানো শুরু হবে। শিক্ষাকে নিয়ে আমাদের দেশের ঠিক এই চিন্তাধারার বিষয়টিই আমি আলোচনা করছিলাম। আইআইটি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তনীর ঠিক এরকমই একটি দান সম্পর্কে আমি জানতে পেরেছি। আইআইটি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র জয় চৌধুরী আইআইটি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাউন্ডেশনকে এক মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা দান করেছেন।
বন্ধুরা, আমাদের দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বহু মানুষ আছেন, যারা অন্যের সহায়তা করে সমাজের প্রতি তাদের কর্তব্য পালন করছেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে এই ধরনের প্রচেষ্টা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে আমাদের বিভিন্ন আইআইটি'তে প্রায়শই -ই দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও এই ধরনের অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণের কমতি নেই। এই ধরনের প্রচেষ্টা যাতে আরো বাড়ে সেজন্য গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে আমাদের দেশে বিদ্যাঞ্জলি অভিযানও শুরু হয়েছে। এর উদ্দেশ্য আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং নিজস্ব অঞ্চলের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দেশজুড়ে স্কুল শিক্ষার গুণগত মান ভালো করা। বিদ্যাঞ্জলি সমষ্টিগত অংশীদারিত্ব এবং মালিকানার মনস্তত্ত্বকে প্রসারিত করছে। নিজের স্কুল কলেজের সঙ্গে সব সময় যুক্ত থাকা, নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী সেখানে কিছু অবদান রাখা ইত্যাদি, এ হল এমন একটি বিষয় যার আনন্দ এবং পরিতৃপ্তি একমাত্র অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েই লাভ করা যায়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রকৃতি প্রেম ও জীবের প্রতি সহানুভূতি আমাদের সংস্কৃতি এবং সহজাত অভ্যেস। আমাদের সেই সংস্কারেরই এক ঝলক সম্প্রতি দেখা গিয়েছিল, যখন মধ্যপ্রদেশের পাঞ্চ ব্যাঘ্র প্রকল্পে এক বাঘিনী পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেয়। এই বাঘিনীটিকে লোকে কলার ওয়ালি বাঘিনী বলতো। বন বিভাগ এর নাম দিয়েছিল T-15। এই বাঘিনীর মৃত্যু মানুষকে এতটা আবেগপ্রবণ করেছিল যেন তাদের কোন স্বজন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তারা প্রথামাফিক বাঘিনীর শেষকৃত্য করেছেন, তাকে পূর্ণ সম্মান ও ভালোবাসার সঙ্গে চিরবিদায় জানিয়েছেন। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনারাও নিশ্চয়ই দেখেছেন। প্রকৃতি ও জীবজন্তুর প্রতি আমাদের, ভারতবাসীর এই ভালোবাসা সারা দুনিয়ায় অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে। কলারওয়ালি বাঘিনী জীবদ্দশায় ২৯টি শাবকের জন্ম দিয়েছিল ও ২৫টিকে লালন পালন করে বড়ও করেছিল। আমরা এই T-15 এর জীবনকেও উদযাপিত করেছি, আবার দুনিয়া ছেড়ে যাওয়ার সময়ও তাকে আবেগপূর্ণ শেষ বিদায় জানিয়েছি। এটাই তো ভারতবাসীর মহৎ বৈশিষ্ট্য। আমরা সকল জীবজন্তুর সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করে নিই। এমনই একটি দৃশ্য এবছর সাধারণতন্ত্র দিবসের প্যারেডেও আমরা দেখতে পেয়েছি। এই প্যারেডে রাষ্ট্রপতির দেহরক্ষীর চার্জার ঘোড়া বিরাট শেষ বারের মতো অংশগ্রহণ করেছে। বিরাট ২০০৩ সালে রাষ্ট্রপতি ভবনে এসেছিল এবং প্রতিটি সাধারণতন্ত্র দিবসে কমান্ড্যান্ট চার্জার হিসেবে কুচকাওয়াজকে নেতৃত্ব দিত। যখন কোন বিদেশী রাষ্ট্রনায়ককে রাষ্ট্রপতি ভবনে স্বাগত জানানো হতো তখনো সে নিজের দায়িত্ব পালন করত। এবছর আর্মি ডে-র দিন বিরাটকে সেনাপ্রধান সিওএএস কমেন্ডেশন কার্ডও দিয়েছেন। বিরাটের এই বিরাট সেবা ও অবদান দেখে ওর অবসরের পর ততটাই আড়ম্বরের সঙ্গে তাকে বিদায় জানানো হয়েছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যখন একনিষ্ঠ হয়ে চেষ্টা করা হয়, সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করা হয় তখন তার ফলও পাওয়া যায়। এর এক উত্তম উদাহরণ সামনে এসেছে, অসম থেকে। অসমের নাম বললেই সেখানকার চা বাগান আর বহু সংখ্যক জাতীয় উদ্যানের কথা মনে পড়ে। তার সঙ্গে একশৃঙ্গ গন্ডার অর্থাৎ ওয়ান হর্ন রাইনোর ছবিও আমাদের মনে ভেসে ওঠে। আপনারা সবাই জানেন যে একশৃঙ্গ গন্ডার সর্বদাই অসমীয়া সংস্কৃতির অংশ হয়ে রয়েছে। ভারতরত্ন ভূপেন হাজারিকাজির বিখ্যাত গান প্রত্যেকের কানেই গুঞ্জরিত হয়েছে নিশ্চয়ই ।
বন্ধুরা, এই গানের অর্থ অত্যন্ত সুসংগত। এই গানে বলা হয়েছে, কাজিরাঙ্গার ঘন সবুজ পরিবেশ, হাতি আর বাঘের বাসস্থান, একশৃঙ্গ গন্ডারের পৃথিবী দেখো, পাখিদের মধুর কলকাকলি শোনো। অসমের বিশ্ব বিখ্যাত হাতে বোনা মুগা এবং এন্ডির পোশাকেও গন্ডারের আকৃতি দেখা যায়। অসমীয়া সংস্কৃতিতে যে গন্ডারের এত বড় মহিমা, তাকেও সংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। ২০১৩ সালে ৩৭টি ও ২০১৪ তে ৩২ টি গন্ডারকে চোরাশিকারিরা হত্যা করেছিল। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে গত ৭ বছর ধরে অসম সরকার বিশেষ প্রয়াসের মাধ্যমে গন্ডার শিকারের বিরুদ্ধে এক বিরাট বড় অভিযান চালিয়ে গিয়েছেন। গত ২২শে সেপ্টেম্বর “বিশ্ব গন্ডার দিবস” উপলক্ষে চোরা শিকারিদের থেকে উদ্ধার হওয়া ২৪০০টিরও বেশি শিং জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এটি চোরা শিকারিদের প্রতি এক কঠোর বার্তা ছিল। এমন বিভিন্ন প্রয়াসের ফলে এখন অসমে গন্ডার শিকারের ঘটনা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। যেখানে ২০১৩ তে ৩৭ টি গন্ডার মারা গিয়েছিল, সেখানে ২০২০-তে দুটি এবং ২০২১এ মাত্র একটি গন্ডার শিকারের ঘটনা সামনে এসেছে। আমি গন্ডার রক্ষার জন্য অসমবাসীর সংকল্পের প্রশংসা করছি।
বন্ধুরা, ভারতীয় সংস্কৃতির বহুবিধ রং ও আধ্যাত্মিক শক্তি সবসময়ই সারা পৃথিবীর মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করেছে। যদি আমি আপনাদের বলি যে ভারতীয় সংস্কৃতি আমেরিকা, কানাডা, দুবাই, সিঙ্গাপুর, পশ্চিম ইউরোপ এবং জাপানে খুবই জনপ্রিয়, তাহলে একথা আপনাদের খুবই সামান্য মনে হবে। আপনারা খুব একটা বিচলিত হবেন না। কিন্তু যদি আমি এটা বলি যে লাতিন আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকাতেও ভারতীয় সংস্কৃতির আকর্ষণ প্রবল তাহলে আপনারা নিশ্চয়ই একবার ভেবে দেখবেন। মেক্সিকোতে খাদির ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়ার কথাই হোক কিংবা ব্রাজিলে ভারতীয় পরম্পরাকে জনপ্রিয় করার প্রয়াস - "মন কি বাত" এ এই বিষয়গুলি নিয়ে আমরা আগে আলোচনা করেছি। আজ আমি আপনাদের আর্জেন্টিনায় উড্ডীয়মান ভারতীয় সংস্কৃতির ধ্বজার বিষয়ে বলব। আর্জেন্টিনায় আমাদের সংস্কৃতি খুবই জনপ্রিয়। ২০১৮ সালে আর্জেন্টিনায় যাওয়ার সময় আমি যোগের কার্যক্রম - "যোগা ফর পিস্" এ অংশগ্রহণ করেছিলাম। আর্জেন্টিনায় একটি সংস্থা আছে "হস্তিনাপুর ফাউন্ডেশন"। আপনারা শুনে আশ্চর্য হচ্ছেন না, কোথায় আর্জেন্টিনা আর সেখানেও হস্তিনাপুর ফাউন্ডেশন! এই ফাউন্ডেশন আর্জেন্টিনায় ভারতীয় বৈদিক পরম্পরা প্রসারের সঙ্গে যুক্ত। ৪০ বছর আগে এক ম্যাডাম, প্রফেসর এডা অ্যালব্রেখট এটি স্থাপন করেন। আজ প্রফেসর এডা অ্যালব্রেখট এর বয়স ৯০ হতে চলেছে।
ভারতের সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ কিভাবে হয় তাও খুব মজাদার। যখন ওঁর বয়স ১৮, তখন প্রথমবার ভারতীয় সংস্কৃতির শক্তির সঙ্গে ওঁর পরিচয় হয়। উনি ভারতে দীর্ঘ সময় কাটান। ভগবত গীতা, উপনিষদ সম্বন্ধে গভীরে পড়াশোনা করেন। আজ হস্তিনাপুর ফাউন্ডেশনে ৪০ হাজারেরও বেশি সদস্য আর আর্জেন্টিনা ও অন্য লাতিন আমেরিকার দেশে এর প্রায় ৩০ টি শাখা রয়েছে। হস্তিনাপুর ফাউন্ডেশন স্প্যানিশ ভাষায় একশোরও বেশি বৈদিক ও দার্শনিক গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। এদের আশ্রমও খুবই মনোগ্রাহী। আশ্রমে বারোটি মন্দির তৈরী করানো হয়েছে যেখানে ওদের দেবদেবীদের মূর্তি আছে। এই সবকিছুর কেন্দ্রে আছে এমন এক মন্দির যা অদ্বৈতবাদী ধ্যানের জন্য বানানো হয়েছে।
বন্ধুরা, এরকম শ’য়ে শ’য়ে উদাহরণ এটাই বলে যে আমাদের সংস্কৃতি শুধু আমাদের জন্যই নয় বরং সমগ্র পৃথিবীর জন্য একটি অমূল্য ঐতিহ্য। সারা দুনিয়ার লোক এই ব্যাপারে জানতে চায়, বুঝতে চায়, উপলব্ধি করতে চায়। আমাদেরও পুরো দায়িত্বে নিয়ে নিজেদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে নিজেদের জীবনের অংশ বানাতে হবে, জনসাধারণের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি এখন আপনাদের, বিশেষ করে তরুণদের একটি প্রশ্ন করতে চাই। আচ্ছা ভাবুনতো আপনি একবারে কতগুলি পুশ-আপ করতে পারেন। আমি এখন আপনাদের যা বলতে চলেছি, তা নিশ্চিত রূপে আপনাদের অবাক করে দেবে। মণিপুরে ২৪ বছরের যুবক থোউনাওজম নিরঞ্জায় সিং ১ মিনিটে ১০৯টি পুশ-আপের রেকর্ড গড়েছেন। নিরঞ্জয় সিং এর জন্য রেকর্ড ভাঙ্গা কোনো নতুন ব্যাপার নয়। এর আগেও তিনি এক মিনিটে এক হাতের সাহায্যে সবচেয়ে বেশি নাকল্ পুশ-আপ-এর রেকর্ড গড়েছেন। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস যে, নিরঞ্জয় সিং-কে দেখে আপনারা অনুপ্রাণিত হবেন আর শারীরিক ফিটনেসকে নিজেদের জীবনের অঙ্গ করে তুলবেন।
বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সঙ্গে লাদাখের একটি এমন তথ্য ভাগ করে নিতে চাই, যার সম্পর্কে শুনে আপনার নিশ্চয়ই গর্ববোধ হবে। লাদাখ তাড়াতাড়িই একটি চমৎকার ওপেন সিন্থেটিক ট্র্যাক আর অ্যাস্ট্রো টার্ফ ফুটবল স্টেডিয়াম উপহার পেতে চলেছে। এই স্টেডিয়াম ১০ হাজার ফিট এরও বেশি উচ্চতায় তৈরি হচ্ছে। আর তার নির্মাণ খুব শীঘ্রই সম্পূর্ণ হতে চলেছে। এটি লাদাখের সবথেকে বড় ওপেন স্টেডিয়াম হবে যেখানে ৩০ হাজার দর্শক একসঙ্গে বসতে পারবেন। লাদাখের এই আধুনিক ফুটবল স্টেডিয়ামে একটি ৮ লেন যুক্ত সিন্থেটিক ট্র্যাকও হবে। এছাড়াও এখানে ১০০০ শয্যার একটি হোস্টেলও তৈরি হবে। আপনাদের এটা জেনেও ভালো লাগবে যে এই স্টেডিয়ামকে ফুটবলের সব থেকে বড় সংস্থা ফিফা শংসায়িত করেছে। যখনই ক্রীড়াজগতে এরকম কোন বড় পরিকাঠামো তৈরি হয় তখন তা দেশের তরুণদের জন্য সুযোগ নিয়ে আসে। তার সঙ্গে যেখানে এই ব্যবস্থা হয় সেখানে দেশের মানুষের যাতায়াতও লেগে থাকে। পর্যটন উৎসাহিত হয় আর রোজগারের অনেক সুযোগ তৈরি হয়। এই স্টেডিয়ামের জন্য লাদাখের অনেক যুবক লাভবান হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ এ এইবারও আমরা অনেক বিষয়ে কথা বলেছি। আরো একটি বিষয় আছে, যা এই সময় সবারই মনে আছে আর তা হলো করোনা। করোনার নতুন ওয়েভকে ভারত অনেক সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করছে, আর গর্বের বিষয় হলো যে এখনো অবধি প্রায় সাড়ে চার কোটি কিশোর-কিশোরীও করোনা টিকার ডোজ নিয়ে নিয়েছে। এর অর্থ এই যে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যেই টিকা নিয়ে নিয়েছেন। এতে শুধুমাত্র আমাদের যুব সম্প্রদায় রক্ষা পাবে তাই নয়, তাদের পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে পারবে। আরেকটি ভালো কথা এই যে কুড়ি দিনের মধ্যে এক কোটি মানুষ সতর্কতামূলক ডোজ ও নিয়ে নিয়েছেন। আমাদের দেশের টিকার ওপর দেশবাসীর আস্থা আমাদের অনেক বড় শক্তির কারণ। এখন তো করোনা সংক্রমনের সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে; যেটা একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত। মানুষ সুরক্ষিত থাকুক, দেশের আর্থিক গতিবিধির দ্রুততা বজায় থাকুক, এটা প্রত্যেক দেশবাসীরই কামনা। আর আপনারা তো জানেনই যে “মন কি বাত”-এ কিছু কথা না বলে আমি থাকতেই পারিনা। যেরকম স্বচ্ছতা অভিযান কে আমাদের ভুললে চলবেনা, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে অভিযানে আমাদের আরও গতি আনতে হবে, ভোকাল ফর লোকাল এর মন্ত্র হলো আমাদের দায়িত্ব, আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের জন্য মনে প্রাণে আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। আমাদের সবার প্রচেষ্টায় দেশ বিকাশের নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। এই কামনার সঙ্গে আজ আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। এই সময় আপনারা ২০২১কে বিদায় জানানো এবং ২০২২কে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত রয়েছেন। নতুন বছরে প্রত্যেক ব্যক্তি, প্রত্যেক সংস্থা আরও ভালো কিছু করার ও হওয়ার সঙ্কল্প নেয়। গত সাত বছর ধরে আমাদের এই ‘মন কি বাত’ও ব্যক্তি, সমাজ, দেশের ভালো দিককে তুলে ধরে আরও ভালো হওয়ার, ভালো করার প্রেরণা দিয়ে আসছে। এই সাত বছরে ‘মন কি বাত’ করার সময় আমি সরকারের নানা সাফল্য নিয়েও আলোচনা করতে পারতাম। আপনাদেরও ভালো লাগত, আপনারাও প্রশংসা করতেন, কিন্তু এ আমার কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা যে সংবাদমাধ্যমের চাকচিক্য থেকে দূরে, সংবাদপত্রের শিরোনাম থেকে দূরে, এমন কোটি-কোটি মানুষ আছেন যাঁরা অনেক কিছু ভালোভাবে করছেন। তাঁরা দেশের আগামী ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের বর্তমানকে সঁপে দিয়েছেন। তাঁরা দেশের আগামী প্রজন্মের জন্য আজ সর্বশক্তি দিয়ে নিজেদের প্রয়াসে লেগে থাকেন। এমন মানুষদের কাহিনী বড় শান্তি দেয়, অনেক প্রেরণা দেয়। আমার জন্য ‘মন কি বাত’ সর্বদাই এমন সব মানুষের প্রচেষ্টার কাহিনীতে পূর্ণ, বিকশিত, সুসজ্জিত উপবন হয়ে রয়েছে, আর ‘মন কি বাত’এ প্রত্যেক মাসে এই উপবনের কোন পাপড়ি আপনাদের মধ্যে নিয়ে আসব সেই প্রয়াসই আমার থাকে । আমি আনন্দিত যে আমাদের বহু রত্ন প্রসবিনী বসুন্ধরার পুণ্য কাজের স্রোত অবিরাম বয়ে চলেছে । আর আজ যখন দেশ ‘অমৃত মহোৎসব’ উদযাপন করছে তখন এই যে জনশক্তি, জনে-জনে যে শক্তি, তার উল্লেখ, তার প্রয়াস, তার পরিশ্রম, এক অর্থে ভারতের আর মানবতার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের গ্যারান্টি দেয়।
বন্ধুরা, এটা জনশক্তিরই ক্ষমতা, যার ফলে ভারত একশো বছরের মধ্যে আসা সবথেকে বড় মহামারীর বিরুদ্ধে লড়তে পেরেছে। আমরা প্রত্যেকটি কঠিন সময়ে একে অন্যের সঙ্গে, একটি অভিন্ন পরিবারের মত থেকেছি। নিজের পাড়ায় বা শহরে কাউকে সাহায্য করতে হলে যার যতটুকু সামর্থ্য তার থেকে বেশি করার চেষ্টা করেছেন। আজ সারা বিশ্বে টিকাকরণের যে পরিসংখ্যান রয়েছে তার তুলনা ভারতের পরিসংখ্যানের সঙ্গে করলে বোঝা যাবে যে দেশ কী অভূতপূর্ব কাজ করেছে। কত বড় লক্ষ্য অর্জন করেছে। টিকার একশো চল্লিশ কোটি ডোজের সীমা পার করা, প্রত্যেক ভারতবাসীর নিজের সাফল্য। প্রত্যেক ভারতবাসীর প্রশাসনিক ব্যবস্থার উপর ভরসা এর মাধ্যমে তুলে ধরে, বিজ্ঞানের উপর ভরসা করে , বিজ্ঞানীদের উপর আস্থা রেখে আর সমাজের প্রতি নিজের দায়িত্ব পালন করা আমাদের প্রত্যেক ভারতবাসীর ইচ্ছাশক্তির প্রমাণও। কিন্তু বন্ধুরা, আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে করোনার এক নতুন ভ্যারিয়েন্ট ইতিমধ্যেই দরজায় কড়া নেড়েছে । গত দু’ বছরে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে যে বিশ্বব্যাপী এই মহামারীকে পরাজিত করতে হলে একজন নাগরিক হিসাবে আমাদের নিজেদের প্রয়াসও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই যে নতুন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এসেছে তার অধ্যয়ন আমাদের বিজ্ঞানীরা অবিরাম করে চলেছেন। প্রতিদিন নতুন তথ্য পাচ্ছেন তাঁরা, তাঁদের পরামর্শে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এমন সময়ে নিজে সজাগ থাকা, নিজে অনুশাসন পালন করা করোনার এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে দেশের খুব বড় শক্তি। আমাদের সঙ্ঘবদ্ধ শক্তিই করোনাকে পরাজিত করবে, এই দায়িত্ববোধ নিয়ে আমাদের ২০২২ সালে প্রবেশ করতে হবে ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মহাভারতের যুদ্ধের সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন – ‘নভঃ স্পৃশং দীপ্তম’ অর্থাৎ গর্বের সঙ্গে আকাশকে স্পর্শ করা। এটা ভারতীয় বায়ুসেনার আদর্শ বাক্যও। ভারত মাতার সেবাতে সমর্পিত অনেক জীবন আকাশের এই শিখরকে প্রতিদিন স্পর্শ করে, আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দেয়। এরকমই এক জীবন হলো গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিং-এর। বরুণ সিং যে হেলিকপ্টারকে উড়াচ্ছিলেন সেটি এ মাসে তামিলনাড়ুতে দূর্ঘটনার শিকার হয়। এই দূর্ঘটনায় আমরা দেশের প্রথম সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং তাঁর পত্নী সহ কত বীরদের হারিয়েছি। বরুণ সিংও মৃত্যুর সঙ্গে অনেকদিন পাঞ্জা লড়েছিলেন, কিন্তু তিনিও আমাদের ছেড়ে চলে যান। বরুণ যখন হাসপাতালে ছিলেন ওই সময় আমি সামাজিক মাধ্যমে এরকম কিছু দেখেছিলাম যা আমার মনকে আলোড়িত করেছিল। এ বছর অগাস্ট মাসে ওঁকে শৌর্য চক্রে সম্মানিত করা হয়েছিল। এই সম্মান পাওয়ার পর তিনি নিজের স্কুলের প্রিন্সিপ্যালকে একটা চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠি পড়ে প্রথম আমার মনে হয়েছে সফলতার শীর্ষে পৌঁছেও নিজের শেকড়ে জল দিতে ভোলেন নি তিনি। দ্বিতীয়ত – ওঁর যখন উদযাপন করার সময় ছিল তখন তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবেছিলেন। তিনি চাইতেন যে স্কুলে তিনি পড়েছেন, সেখানের বিদ্যার্থীদের জীবনও যেন এক উৎসবের রুপ নেয়। নিজের চিঠিতে বরুণ জী নিজের পরাক্রমের কথা বাড়িয়ে বলেন নি, উল্টে তিনি অসফলতার কথা বলেছেন। কিভাবে নিজের দুর্বলতাকে শক্তিতে পরিবর্তিত করেছিলেন তার বর্ননা করেন। এই চিঠির এক জায়গায় তিনি লিখেছেন -"সাধারণ হওয়া কোনো দোষ নয়। সবাই স্কুলে খুব ভালো ফল করবে বা ৯০ এর ঘরে নম্বর পাবে এটা সম্ভব নয়। যদি তুমি তা করতে পারো সেই কীর্তি নিঃসন্দেহে প্রসংশনীয়। কিন্তু, যদি তা না হয়, এরকম ভাবার কোনো কারণ নেই যে তুমি সারা জীবন সাধারণই থেকে যাবে। স্কুলে তুমি মধ্য মেধার কেউ হতে পারো কিন্তু সেটা তোমার আগামী জীবনের একমাত্র মাপকাঠি নয়। নিজের প্রতিভাকে চেনো। সাহিত্য, সঙ্গীত, আর্ট, গ্রাফিক্স ডিসাইন প্রভৃতি যাই হোক না কেন, একনিষ্ঠ ভাবে সেটা করে যাও। পরিশ্রম কর, নিজের সেরাটা দাও। কখনো এমন না হয়, রাতে শুতে যাওয়ার সময়ে ভাবতে হবে আমি আরো ভাল করতে পারতাম। বন্ধুরা, সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার জন্য উনি যে মন্ত্র দিয়েছেন তাও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। এই চিঠিতেই বরুণ সিং লিখেছিলেন, ''কখনো আশা ছেড়ো না। যা তুমি হতে চাও সেই লক্ষ্যের জন্য তুমি উপযুক্ত নও, এটা কখনোই ভেবোনা। এটা হয়তো সবসময় সহজ নয়, এর জন্য সময় এবং বিলাসিতার সঙ্গে আপস করতে হয়। আমি একজন মধ্যমেধার মানুষ ছিলাম এবং এখনও তাই আছি। আমার কর্মজীবনে আমি অনেক বাধা অতিক্রম করেছি। কখনো ভেবো না দ্বাদশ শ্রেণীর বোর্ডের পরীক্ষার নম্বর এটা সিদ্ধান্ত নেয় যে তুমি কতটা উচ্চতা ছুঁতে পারো। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখ এবং তার জন্য কাজ করো।’’
বরুণ লিখেছিলেন যে যদি একজন ছাত্রকেও অনুপ্রেরণা দিতে পারেন, সেটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আজ আমি বলতে চাই যে, তিনি সমগ্র দেশকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। ওঁর চিঠি শুধুমাত্র ছাত্রদের উদ্দেশে হলেও, তা আমাদের সমগ্র সমাজকে বার্তা দিয়েছে।
বন্ধুরা, প্রত্যেক বছর আমি এমনই বিষয়ের উপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করি। এই বছরও পরীক্ষার আগে আমি ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করার পরিকল্পনা করছি। এই অনুষ্ঠানের জন্য দুদিন পরে অর্থাৎ ২৮শে ডিসেম্বর থেকে mygov.in এ রেজিস্ট্রেশন শুরু হতে চলেছে। এই রেজিস্ট্রেশন ২৮ শে ডিসেম্বর থেকে ২০ শে জানুয়ারী পর্যন্ত চলবে। এর জন্য নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বাবা-মায়েদের নিয়ে অনলাইন প্রতিযোগিতা আয়োজিত হবে। আমি চাইবো আপনারা সকলেই এতে অংশ নিন। আপনাদের সকলের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হবে। আমরা সকলে মিলে পরীক্ষা, কেরিয়ার, সাফল্য এবং ছাত্র-জীবনের সঙ্গে যুক্ত নানা বিষয়ে আলোচনা করব।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি এখন আপনাদের কিছু শোনাতে চলেছি, যা দেশের সীমান্ত পেরিয়ে অনেক দূর থেকে এসেছে। এটা আপনাকে আনন্দ দেবে এবং অবাক করবে।
(ভোকাল)
বন্দে মাতরম। বন্দে মাতরম।
সুজলাং সুফলাং মলয়জশীতলাম।
শস্যশ্যামলাং মাতরম। বন্দে মাতরম।
শুভ্রজোৎস্নাপুলকিতযামিনী।
ফুল্লকুসুমিতদ্রুমদলশোভিনী।
সুহাসিনী সুমধুরভাষিণী।
সুখদাং, বরদাং মাতরম।
বন্দেমাতরম। বন্দেমাতরম।
আমার পূর্ণবিশ্বাস যে এটা শুনে আপনাদের খুব ভালো লেগেছে। আপনাদের গর্ব অনুভব হয়েছে। বন্দেমাতরম এর মধ্যে যে ভাবনা নিহিত রয়েছে, তা আমাদের গর্ব এবং উত্তেজনায় পরিপূর্ণ করে।
বন্ধুরা আপনারা নিশ্চয়ই এটা ভাবছেন, এই সুন্দর ভিডিওটি কোন জায়গার? কোন দেশ থেকে এসেছে? এর উত্তর আপনাদের বিস্ময় আরো বাড়িয়ে দেবে। যে ছাত্ররা এই বন্দেমাতরম গানটি প্রস্তুত করেছে তারা গ্রিসের। ওখানে ইলিয়ার হাইস্কুলে পড়াশোনা করে এই ছাত্র ছাত্রীরা। ওঁরা যেমন অত্যন্ত সুন্দর এবং আবেগ ভরে বন্দেমাতরম গেয়েছেন, তা চমৎকার এবং প্রশংসনীয়। এমনই প্রচেষ্টা দুই দেশের মানুষদের আরো কাছাকাছি নিয়ে আসে। আমি এই গ্রীসের ছাত্র ছাত্রী ও তাদের শিক্ষকদের অভিনন্দন জানাই। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব চলাকালীন তাদের এই প্রচেষ্টাকে আমি সাধুবাদ জানাই।
বন্ধুরা, আমি লখনউ নিবাসী নীলেশজির একটি পোস্টের বিষয়ে বলতে চাই। নীলেশজি লখনৌতে আয়োজিত এক অভিনব ড্রোন শোর এর খুব প্রশংসা করেছেন। এই ড্রোন শো লখনৌর রেসিডেন্সী অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আজও রেসিডেন্সীর দেওয়ালগুলি ১৮৫৭ এর প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামে সাক্ষী দেয়। রেসিডেন্সীতে আয়োজিত ড্রোন শো ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন ঘটনাবলীকে জীবন্ত করে তুলেছে౼ তা সে চৌরিচৌরা আন্দোলন হোক, কাকোরি ট্রেনের ঘটনা হোক বা নেতাজি সুভাষের অদম্য সাহস এবং পরাক্রমের কাহিনী, এই ড্রোন শো সবার মন জয় করেছে। আপনিও এই ভাবে আপনার শহরের, গ্রামের, স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অভিনব প্রচেষ্টার বিভিন্ন দিক সবার সামনে তুলে ধরতে পারেন। এতে টেকনোলজির সাহায্য নিতে পারেন। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি রোমন্থনের সুযোগ দেয়, তাকে অনুভব করার সুযোগ দেয়। এই মহোৎসব দেশের জন্য নতুন সংকল্প নেওয়ার, কিছু করার ইচ্ছাশক্তি জাগায়, এ এক প্রেরণাদায়ী উৎসব, এক প্রেরণাদায়ী সুযোগ। আসুন, স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান মনীষীদের কাছে আমরা প্রেরণা নিই এবং দেশের জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে আরও মজবুত করে তুলি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের ভারত অনেক অনন্য সাধারণ প্রতিভায় সমৃদ্ধ, যাদের কৃতিত্ব অন্যদেরও কিছু করার প্রেরণা যোগায়। এরকমই এক ব্যক্তিত্ব হলেন তেলেঙ্গানার ডাক্তার কুরেলা ভিটঠালাচার্য জি। তাঁর বয়স ৮৪ বছর। স্বপ্ন পূরণ করতে বয়স কোনো বাঁধা নয়, তার উদাহরণ ভিটঠালাচার্য জি। বন্ধুরা, ছোটবেলা থেকেই ভিটঠালাচার্য জির একটাই ইচ্ছে ছিল যে তিনি এক বড় লাইব্রেরী খুলবেন। দেশ তখন পরাধীন, পরিস্থিতি এমন ছিল যে ছোটবেলার সেই স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে গেলো। সময়ের সঙ্গে ভিটঠালাচার্য জি লেকচারার হলেন, তেলুগু ভাষার সুগভীর অধ্যয়ন করেছেন ও সেই ভাষায় তিনি অনেক সৃষ্টিশীল রচনাও লিখেছেন। ৬-৭ বছর আগে উনি ফের একবার নিজের স্বপ্নপূরণ করার উদ্যোগ নেন। উনি নিজের সংগ্রহের বই দিয়ে লাইব্রেরী শুরু করেন। সারা জীবনের উপার্জন এই কাজে উৎসর্গ করেন। ধীরে-ধীরে এই কাজে অংশগ্রহন করতে অন্য মানুষরা এগিয়ে আসতে থাকেন। যদাদ্রি-ভুবনাগিরি জেলার রমন্নাপেট ব্লকের এই লাইব্রেরীতে প্রায় ২ লক্ষ বই আছে। বিটঠল-আচার্যজি বলেন যে, তিনি চান না, পড়শোনা করতে তাঁকে যত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তা আর কাউকে কোনদিন হতে হয়। বহু ছাত্রছাত্রী ওঁর কাজের ফলে লাভবান হচ্ছে দেখে উনি খুব খুশি হন। ওঁর কাজ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এখন অন্য অনেক গ্রামের মানুষও তাঁদের এলাকায় গ্রন্থাগার বানানোর কাজ শুরু করেছেন।
বন্ধুরা, বই থেকে কেবল জ্ঞান লাভ হয়না, ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে এবং জীবন গড়ে তোলে। বই পড়ার নেশা একটি অদ্ভুত শান্তি দেয়। আজকাল আমি দেখি মানুষ বেশ গর্বের সঙ্গে বলে থাকেন যে এই বছর আমি এতগুলি বই পড়েছি। ভবিষ্যতে আমি এই-এই বইগুলি পড়তে চাই। এটা একটা খুব ভাল প্রবণতা যেটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিৎ। আমিও ‘মন কী বাত’এর শ্রোতাদের বলব এই বছরে যে ৫টি বই তাঁদের সবচেয়ে পছন্দ হয়েছে তার কথা তাঁরা যেন জানান। এর ফলে আপনি ২০২২এ অন্য পাঠকদের ভাল বই নির্বাচন করতে সাহায্য করবেন। এমন এক সময় যখন আমাদের স্ক্রিন টাইম বাড়ছে, তখন বই পড়াও যাতে আরও জনপ্রিয় হয় তার জন্য আমাদের সবাইকে একত্রে চেষ্টা করতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সম্প্রতি একটি খুব আকর্ষণীয় প্রচেষ্টার প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এই প্রচেষ্টার লক্ষ্য আমাদের প্রাচীন গ্রন্থ এবং সাংস্কৃতিক ভাবনাগুলিকে, কেবলমাত্র ভারতেই নয়, বরং সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয় করা। পুনেতে ভান্ডারকার ওরিয়েন্টাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট বলে একটি সেন্টার আছে। এই সেন্টারটি অন্য দেশের মানুষকে মহাভারতের মাহাত্ব্য বোঝানোর জন্য একটি অনলাইন কোর্স শুরু করেছে। আপনারা এটা শুনে আশ্চর্য হয়ে যাবেন যে, যদিও এই পাঠক্রমটি সবেমাত্র শুরু হয়েছে, কিন্তু এর অন্তর্ভুক্ত বিষয়বস্তু তৈরি করার কাজটি ১০০ বছরেরও বেশি আগে শুরু হয়েছিল। যখন এই প্রতিষ্ঠান এই পাঠক্রমটি শুরু করে তখন তারা দারুণ সাড়া পায়। আমি এই অসাধারণ প্রচেষ্টার আলোচনা এই জন্য করছি যাতে মানুষ জানতে পারেন আমাদের ঐতিহ্যের বিভিন্ন আঙ্গিককে আধুনিকভাবে কীভাবে উপস্থাপনা করা হচ্ছে। সাত সমুদ্র পারে বসে থাকা মানুষের কাছে এর সুফল পৌছনোর জন্যও নতুন নতুন পন্থাপদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে।
বন্ধুরা, আজ সারা দুনিয়া জুড়ে ভারতীয় সংস্কৃতির বিষয়ে জানার আগ্রহ বাড়ছে। পৃথক পৃথক বিভিন্ন দেশের মানুষ শুধু আমাদের সংস্কৃতির ব্যাপারে জানার জন্য উৎসুকই নন, তার প্রসারে তাঁরা সাহায্যও করছেন। এমনই একজন মানুষ হলেন সার্বিয়ান স্কলার ডক্টর মোমির নিকিচ। ইনি সংস্কৃত-সার্বিয় দুটি ভাষায় একটি অভিধান তৈরি করেছেন। এই অভিধানে অন্তর্ভুক্ত ৭০ হাজারেরও বেশী সংস্কৃত শব্দের সার্বিয়ান ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। আপনাদের এটা জেনে আরো ভালো লাগবে যে ডক্টর নিকিচ ৭০ বছর বয়সে সংস্কৃত ভাষা শিখেছেন। উনি বলেন এর অনুপ্রেরণা উনি পেয়েছেন মহাত্মা গান্ধীর রচনা পড়ে। অনুরূপ আরেকটি উদাহরণ মঙ্গোলিয়ার ৯৩ বছর বয়সি প্রফেসর জে.গেন্দেধরম। উনি বিগত চার দশকে ভারতের প্রায় চল্লিশটি প্রাচীন গ্রন্থ, মহাকাব্য ও রচনা মঙ্গোলিয়ান ভাষায় অনুবাদ করেছেন। আমাদের দেশেও এই রকম আবেগের সঙ্গে বহু মানুষ কাজ করছেন। আমি গোয়ার সাগর মূলেজীর প্রয়াস সম্বন্ধেও জানতে পেরেছি, যিনি শয়ে শয়ে বছরের প্রাচীন "কাবী" চিত্রকলার অবলুপ্তি রক্ষার কাজে ব্যাপৃত রয়েছেন। "কাবী" চিত্রকলা ভারতের প্রাচীন ইতিহাসের ধারক। "কাব" শব্দের অর্থ লাল মাটি। প্রাচীনকালে এই চিত্রকলায় লাল মাটির প্রয়োগ করা হত। গোয়ায় পর্তুগিজ শাসনকালে সেখান থেকে পালানোর সময় গোয়ার মানুষ অন্যান্য রাজ্যের মানুষদেরও এই আশ্চর্য চিত্রকলার সঙ্গে পরিচিত করিয়ে ছিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই চিত্রকলা বিলুপ্ত হয়ে পড়ছিল। কিন্তু সাগর মূলেজী এতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছেন। তার এই প্রয়াস অত্যন্ত প্রশংসাও অর্জন করছে।
বন্ধুরা, একটা ছোট প্রচেষ্টা, একটা ছোট্ট পদক্ষেপও আমাদের সমৃদ্ধ শিল্পকলাগুলির সংরক্ষণে অনেক বড় ভূমিকা নিতে পারে। যদি আমাদের দেশের মানুষ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন তাহলে দেশজুড়ে আমাদের প্রাচীন শিল্পকলাগুলিকে সাজিয়ে তোলা ও সংরক্ষণের আবেগ এক জনআন্দোলনের রূপ নিতে পারে। আমি এখানে মাত্র কয়েকটি প্রয়াসের বিষয়েই বললাম। দেশজুড়ে এই ধরনের বহু প্রয়াস হচ্ছে। আপনারা তার খবর নমো অ্যাপ এর মাধ্যমে আমার কাছে অবশ্যই পৌঁছে দেবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, অরুণাচল প্রদেশের মানুষ বছর ভর একটি অনন্য অভিযান চালাচ্ছেন, আর তার নাম দিয়েছেন "অরুণাচলপ্রদেশ এয়ারগান সারেন্ডার অভিযান"। এই অভিযানে মানুষ স্বেচ্ছায় নিজের এয়ারগান সারেন্ডার করছেন। কেন জানেন? যাতে অরুণাচল প্রদেশের পাখিদের নির্বিচারে শিকার করা বন্ধ করা যায়। বন্ধুরা, অরুণাচল প্রদেশ পাঁচশোরও বেশি প্রজাতির পাখির বাসস্থান। এদের মধ্যে এমন কিছু দেশি প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত যা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। কিন্তু এখন জঙ্গলে পাখিদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি বদলানোর জন্য এখন এয়ারগান সারেন্ডার অভিযান শুরু করা হয়েছে। বিগত কিছু মাসে পাহাড় থেকে সমতল এলাকা পর্যন্ত, এক সম্প্রদায় থেকে অন্য সম্প্রদায় পর্যন্ত, রাজ্যের সর্বত্রই মানুষ একে সাদরে গ্রহণ করেছে। অরুণাচলের লোক স্বেচ্ছায় এখনো পর্যন্ত ১৬০০-র ও বেশি এয়ারগান জমা দিয়ে ফেলেছেন। আমি অরুণাচলের মানুষদের এর জন্য প্রশংসা করছি, তাঁদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবার কাছ থেকেই ২০২২ এর সঙ্গে জড়িত অনেক বার্তা ও উপদেশ এসেছে। একটি বিষয় প্রতিবারের মত এবারেও অধিকাংশ বার্তায় লক্ষণীয়। সেটা হলো স্বচ্ছতা আর স্বচ্ছ ভারতের। স্বচ্ছতার এই সংকল্প শৃঙ্খলা, সচেতনতা আর সমর্পণের সাহায্যেই সম্পূর্ণ হবে। আমরা এনসিসি ক্যাডেট দের দিয়ে শুরু করা পুনিত সাগর অভিযানেও এর ঝলক দেখতে পাই। এই অভিযানে ৩০ হাজারেরও বেশি এনসিসি ক্যাডেট অংশগ্রহণ করে। এনসিসি ক্যাডেটসরা সমুদ্রতট পরিষ্কার করে। ওখানকার প্লাস্টিক আবর্জনা তুলে তা পুনর্ব্যবহারের জন্য জড়ো করে। আমাদের সমুদ্রতট, আমাদের পাহাড় তখনই ভ্রমণ যোগ্য হবে যখন তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে। অনেক মানুষ কোনো জায়গায় যাওয়ার স্বপ্ন আজীবন দেখে থাকেন, কিন্তু যখন ওখানে যান তখন জ্ঞানে বা অজ্ঞানে সেখানে নোংরা ফেলে আসেন। এটা প্রত্যেক দেশবাসীর দায়িত্ব যে, যে জায়গা আমাদের এত আনন্দ দেয়, আমরা যেন তাকে নোংরা না করি।
বন্ধুরা আমি 'সাফ ওয়াটার' নামে একটি স্টার্টাপের কথা জানতে পেরেছি যেটা কয়েকজন যুবক মিলে শুরু করেছেন। এটি কৃত্রিম মেধা আর ইন্টার্নেট অফ থিংস এর সাহায্যে মানুষকে তাদের এলাকায় জলের শুদ্ধতা আর গুণমান সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করে।এটা স্বচ্ছতারই পরবর্তী ধাপ। মানুষের স্বচ্ছ আর স্বাস্থোজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য এই স্টার্টাপের গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়ে একে একটি গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ডও দেওয়া হয়েছে।
বন্ধুরা, স্বচ্ছতার প্রতি এক ধাপ, এই প্রচেষ্টায়, কোনো প্রতিষ্ঠান হোক বা সরকার, প্রত্যেকেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আপনারা সবাই জানেন, আগে সরকারি অফিসে পুরনো ফাইল আর কাগজ কিভাবে স্তূপিকৃত হয়ে থাকত। যখন থেকে সরকার এই পুরানো পন্থা বদলাতে শুরু করেছে, এই ফাইল এবং কাগজের স্তূপ ডিজিটাইজ হয়ে কম্পিউটারে বিভিন্ন ফোল্ডারে ঢুকছে। যে কটা পুরানো এবং পড়ে থাকা ফাইল আছে তা সরানোর জন্য মন্ত্রক এবং বিভাগীয় স্তরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। এই অভিযানে বেশ কিছু মজার ব্যাপার ঘটেছে | ডাক বিভাগে যখন এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হলো, তখন তাদের সমস্ত জাঙ্ক ইয়ার্ড সম্পূর্ণ খালি হয়ে গেলো। এখন এই জাঙ্ক ইয়ার্ডকে একটি কোর্টইয়ার্ড এবং একটি ক্যাফেটেরিয়াতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। আরেকটি জাঙ্কিয়ার্ডকে টু হুইলার পার্কিংয়ের জায়গা করা হয়েছে। একইভাবে, পরিবেশ মন্ত্রক তার খালি জাঙ্কইয়ার্ডকে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রূপান্তরিত করেছে। এমনকি নগরোন্নয়ন মন্ত্রক একটি ‘স্বচ্ছ এটিএম’ স্থাপনও করেছে। এর উদ্দেশ্য হল মানুষ আবর্জনার বিনিময়ে নগদ নিয়ে যান। অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক, গাছ থেকে পড়া শুকনো পাতা ও জৈব বর্জ্য থেকে জৈব কম্পোস্ট তৈরি শুরু করেছে। এই বিভাগ বর্জ্য কাগজ থেকে স্টেশনারি তৈরির কাজও করছে। আমাদের সরকারি দপ্তরগুলোও স্বচ্ছতার মতো বিষয়ে এতটাই ইনোভেটিভ হতে পারে। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত, কেউ এমনটা বিশ্বাসই পারতো না, কিন্তু আজ এটি ব্যবস্থার অংশ হয়ে উঠছে। এটিই দেশের নতুন ভাবনা, যার নেতৃত্ব সকল দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে করছে। আমার প্রিয় দেশবাসী, 'মন কি বাত'-এ এবারও আমরা অনেক বিষয়ে কথা বলেছি। প্রতিবারের মতো এবারও এক মাস পর আমরা আবার মিলিত হবো, কিন্তু, ২০২২এ। প্রতিটি নতুন সূচনা নিজের সামর্থ্যকে চেনার সুযোগও নিয়ে আসে। যে লক্ষ্যপূরণ সম্পর্কে আমরা আগে কল্পনাও করিনি, আজ তার জন্য দেশ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এখানে বলা হয়েছে-
‘ক্ষণশ: কণাশশ্চৈব, বিদ্যাম অর্থ চ সাধয়েৎ,
ক্ষণে নষ্টে কুতো বিদ্যা, কণে নষ্টে কুতো ধনম’
অর্থাৎ, যখন আমাদের শিক্ষা অর্জন করতে হবে, নতুন কিছু শিখতে হবে, করতে হবে, তখন আমাদের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতে হবে। এবং যখন আমাদের অর্থ উপার্জন করতে হবে, অর্থাৎ উন্নতি করতে হবে, তখন প্রতিটি কণা, অর্থাৎ প্রতিটি সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত। কারণ, মুহূর্তকে হারানোর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যা আর জ্ঞান চলে যায়, এবং প্রতিটি কণার বিনাশের সঙ্গে সঙ্গে সম্পদ ও উন্নতির পথও বন্ধ হয়ে যায়। এইগুলো আমাদের সকল দেশবাসীর জন্য অনুপ্রেরণা। আমাদের কত কিছু শিখতে হবে, নতুন উদ্ভাবন করতে হবে, নতুন লক্ষ্য অর্জন করতে হবে, সুতরাং, আমাদের এক মুহূর্ত নষ্ট না করে লেগে পড়তে হবে। আমাদের দেশকে প্রগতির নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে হবে, তাই আমাদের প্রতিটি সম্পদকে সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করতে হবে। এটি একপ্রকার আত্মনির্ভর ভারতেরই মন্ত্র, কারণ আমরা যখন আমাদের সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করবো তা নষ্ট হতে দেবো না, তখনই আমরা লোকাল-এর ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত হবো, আর তখনই দেশ আত্মনির্ভর হবে। এই জন্য আসুন আমরা নতুন করে আমাদের সংকল্প করি যে, আমরা চিন্তার প্রসার ঘটাবো, আমরা বড় বড় স্বপ্ন দেখবো এবং সেই স্বপ্নপূরণ করতে নিজেদের সমস্ত শক্তি উজাড় করে দেব। এবং আমাদের স্বপ্ন শুধুমাত্র আমাদের মধ্যেই সীমিত থাকবে না। আমাদের স্বপ্ন এমন হবে যার সঙ্গে আমাদের দেশ ও সমাজের বিকাশ যুক্ত থাকবে, আমাদের প্রগতির মাধ্যমে দেশের উন্নতির পথ প্রশস্ত হবে এবং তার জন্য আমাদের আজ থেকেই লেগে পড়তে হবে, এক কণা সম্পদ বা একটা মুহূর্ত নষ্ট করা চলবে না। আমি সম্পুর্ণ বিশ্বাস করি যে, এই সংকল্পের সঙ্গেই আগামী বছরে দেশ এগিয়ে যাবে এবং ২০২২ সাল, এক নতুন ভারত নির্মাণের স্বর্ণালী অধ্যায়ের সূচনা করবে। এই আস্থার সঙ্গেই আপনাদের সকলকে আগামী ২০২২ সালের অনেক অনেক শুভকামনা। অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ আমরা ফের একবার ‘মন কি বাত’এর জন্য একসঙ্গে মিলিত হচ্ছি। দু’ দিন পরে ডিসেম্বর মাসও শুরু হচ্ছে আর ডিসেম্বর এলেই আমাদের এমন মানসিক ভাব তৈরি হয় যে চলো ভাই, বছরটা শেষ হয়ে গেল। এটা বছরের শেষ মাস আর নতুন বছরের জন্য নকশা-পরিকল্পনা তৈরি শুরু করে দিই। এই মাসেই দেশ ‘নেভি ডে’ আর ‘আর্মড ফোর্সেস ফ্ল্যাগ ডে’ পালন করে । আমরা সবাই জানি যে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীও পালন করছে দেশ। আমি এই সব উপলক্ষ্যে দেশের সুরক্ষা বাহিনীর কীর্তিকে স্মরণ করি, আমাদের বীরদের স্মরণ করি। আর বিশেষভাবে সেইসব বীরদের জন্মদাত্রী বীর মায়েদের স্মরণ করি। প্রত্যেক বারের মত এবারও আমি নমো অ্যাপে, মাইগভে সবার অনেক-অনেক পরামর্শ পেয়েছি। আপনারা আমাকে আপনাদের পরিবারের অংশ মনে করে নিজেদের জীবনের সুখদুঃখও ভাগ করে নিয়েছেন। এঁদের মধ্যে অনেক নব্য যুবক-যুবতী আছেন, ছাত্রছাত্রীরা আছেন। আমার সত্যিই খুব ভালো লাগে যে ‘মন কি বাত’এর আমাদের এই পরিবার নিরন্তর বড় তো হচ্ছেই, মনের দিক থেকে, উদ্দেশ্যের দিক থেকেও সংযুক্ত হচ্ছে আর আমাদের হওয়া গভীরতর সম্পর্ক, আমাদের অন্তরে, নিরন্তর এক সদর্থক প্রবাহ প্রবাহিত করাচ্ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাকে সীতাপুরের ওজস্বী লিখেছে যে অমৃত মহোৎসবের বিষয়ে আলোচনা তাঁর খুব পছন্দ হচ্ছে। সে নিজের বন্ধুদের সঙ্গে ‘মন কি বাত’ শোনে আর স্বাধীনতা সংগ্রামের ব্যাপারে কিছু জানার, শেখার ধারাবাহিক প্রয়াস বজায় যায়। বন্ধুরা, অমৃত মহোৎসব কিছু শেখানোর পাশাপাশি আমাদের দেশের জন্য কিছু করারও প্রেরণা দেয় আর এখন তো দেশের সাধারণ মানুষ হোন বা বিভিন্ন সরকার, পঞ্চায়েত থেকে সংসদ অবধি, অমৃত মহোৎসবের গুঞ্জন শোনা যায়, আর একটানা এই মহোৎসবের সঙ্গে জুড়ে থাকা কার্যক্রমের পালা চলছে। এমনই এক আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান কিছু দিন আগে দিল্লীতে হল। ‘আজাদী কি কঁহানী, বচ্চো কি জুবানি’ অনুষ্ঠানে শিশুরা স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত নানা কাহিনীকে পূর্ণ উৎসাহ নিয়ে পরিবেশন করেছিল। বিশেষ ব্যাপার এটাও ছিল যে এখানে ভারতের সঙ্গে নেপাল, মরিশাস, তানজানিয়া, নিউজিল্যাণ্ড আর ফিজির ছাত্রছাত্রীরাও যুক্ত হয়েছিল। আমাদের দেশের মহারত্ন ও এন জি সি। ও এন জি সি-ও কিছুটা ভিন্নভাবে অমৃত মহোৎসব পালন করছে। ও এন জি সি আজকাল তেলের খনিতে নিজেদের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষামূলক ভ্রমণের আয়োজন করছে। এই সব সফরে তরুণদের ও এন জি সি-র তেলের খনির কাজকর্ম সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হচ্ছে – উদ্দেশ্য এই যে আমাদের ভবিষ্যতের ইঞ্জিনীয়াররা রাষ্ট্রনির্মাণের প্রচেষ্টায় পুরো উৎসাহ আর উদ্যমের সঙ্গে যাতে অংশ নিতে পারে।
বন্ধুরা, স্বাধীনতার লড়াইতে আমাদের জনজাতিসমূহের অবদান মনে রেখে দেশ জনজাতীয় গৌরব সপ্তাহও পালন করেছে। দেশের ভিন্ন ভিন্ন অংশে এর সঙ্গে যুক্ত অনুষ্ঠানও হয়েছে। আন্দামান নিকোবর দ্বীপসমূহে জারোয়া আর ওঙ্গি, এমন জনজাতিসমূহর মানুষজন নিজেদের সংস্কৃতির প্রদর্শন করেছেন। এক অসাধারণ কাজ হিমাচল প্রদেশের ঊনার মিনিয়েচার রাইটার রাম কুমার জোশীজিও করেছেন। তিনি ডাকটিকিটের উপর, অর্থাৎ এত ছোট ডাকটিকিটের উপর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর অভূতপূর্ব স্কেচ তৈরি করেছেন। হিন্দীতে লেখা ‘রাম’ শব্দের উপর উনি স্কেচ তৈরি করেছেন, যেখানে সংক্ষেপে দু’জন মহাপুরুষের জীবনীও উৎকীর্ণ রয়েছে। মধ্যপ্রদেশের কাটনি থেকেও কিছু বন্ধু এক অবিস্মরণীয় দাস্তানগোঈ কর্মসূচী সম্পর্কে জানিয়েছেন। এতে রানী দুর্গাবতীর অদম্য সাহস আর বলিদানের স্মৃতিকে জীবন্ত করে তোলা হয়েছে। এমনই এক অনুষ্ঠান কাশীতে হয়েছে। গোস্বামী তুলসীদাস, সন্ত কবীর, সন্ত রুইদাস, ভারতেন্দু হরিশ্চন্দ্র, মুন্সী প্রেমচাঁদ আর জয়শঙ্কর প্রসাদের মত মহান ব্যক্তিদের সম্মানে তিন দিনের মহোৎসব আয়োজিত হয়েছিল। ভিন্ন ভিন্ন সময়পর্বে, এঁদের সবার, দেশের জনজাগরণেতে, খুব বড় ভূমিকা ছিল। আপনাদের মনে থাকবে, ‘মন কি বাত’এর আগের পর্বে আমি তিনটে প্রতিযোগিতার উল্লেখ করেছিলাম, প্রতিযোগিতার আলোচনা করেছিলাম - এক, দেশভক্তি নিয়ে গান রচনা, দেশভক্তির সঙ্গে যুক্ত, স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ঘটনা নিয়ে রঙ্গিন আলপনা আঁকা আর আমাদের শিশুদের মনে মহান ভারতের স্বপ্ন জাগানো ঘুমপাড়ানি গান রচনা করা। আমার আশা যে এই তিন প্রতিযোগিতার জন্য আপনারা অবশ্যই নাম নথিভুক্ত করেছেন, পরিকল্পনা তৈরিও শুরু করেছেন আর নিজেদের বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছেন। আমার আশা, উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে আপনারা ভারতের প্রত্যেক কোণায় অবশ্যই এই কর্মসূচীকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই আলোচনা থেকে আমি আপনাদের সোজা বৃন্দাবনে নিয়ে যাচ্ছি। বৃন্দাবন প্রসঙ্গে বলা হয় যে এটা ভগবানের প্রেমের প্রত্যক্ষ স্বরূপ। আমাদের সাধুরাও বলেছেন,
“ইয়হ আসা ধরি চিত্ত মে, ইয়হ আসা ধরি চিত্ত মে
কহত যথা মোতি মোর।
বৃন্দাবন সুখ রঙ কো, বৃন্দাবন সুখ রঙ কো,
কাহু না পায়ো ওউর”।
অর্থাৎ বৃন্দাবনের মহিমা আমরা সকলেই নিজেদের সাধ্যমত মূল্যায়ন করি বটে, কিন্তু বৃন্দাবনের যে সুখ, যে মোহ, তার শেষ পর্যন্ত কেউ পৌঁছতে পারেনা, সে তো অসীম। তাইতো বৃন্দাবন সমগ্র বিশ্বের মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করে। এর দৃষ্টান্ত আপনি বিশ্বের প্রত্যেক প্রান্তে খুঁজে পাবেন।
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় একটি শহর আছে, পার্থ। ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ এই জায়গার সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত, কারণ পার্থে প্রায়ই ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজিত হয়। পার্থে ''স্যাক্রেড ইন্ডিয়া গ্যালারি'' নামে একটি আর্ট গ্যালারিও আছে। এই গ্যালারি সোয়ান ভ্যালির একটি সুন্দর জায়গায় তৈরি করা হয়েছে, আর এটি অস্ট্রেলিয়ার এক নাগরিক জগত্তারিণী দাসীর প্রচেষ্টার ফলাফল। জগত্তারিণীজি যদিও অস্ট্রেলিয়ার নিবাসী, তাঁর জন্ম সেখানে হয়েছে, তিনি ওখানেই বড় হয়েছেন, কিন্তু ১৩ বছরেরও বেশি সময় তিনি বৃন্দাবনে কাটিয়েছেন। ওঁর মতে, উনি অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে তো গেছেন, নিজের দেশে ফিরে হয়তো গেছেন, কিন্তু উনি কখনোই বৃন্দাবনকে ভুলতে পারেননি। তাই তিনি বৃন্দাবন এবং তার আধ্যাত্মিক ভাবনার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়াতেও বৃন্দাবন তৈরি করেছেন। নিজের শিল্পকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে এক আশ্চর্য বৃন্দাবন সৃষ্টি করেছেন উনি। ওখানে যে সমস্ত মানুষের আসেন, তাঁরা নানা ধরনের শিল্প-সৃষ্টি দেখার সুযোগ পান। ওঁরা ভারতের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ তীর্থক্ষেত্র বৃন্দাবন, নবদ্বীপ এবং জগন্নাথধামের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি দেখতে পান। ওখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নানা শিল্প-সৃষ্টিরও প্রদর্শন করা হয়। একটা এমনও শিল্পকীর্তি প্রদর্শিত হয়, যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বতকে নিজের কড়ে আঙুলে ওঠাচ্ছেন, যার নিচে বৃন্দাবনের মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জগত্তারিণীজির এই চমৎকার প্রচেষ্টা অবশ্যই আমাদের কৃষ্ণ-ভক্তির শক্তির দর্শন করায়। আমি ওঁকে এই প্রচেষ্টার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখনই আমি অস্ট্রেলিয়ার পার্থে তৈরি হওয়া বৃন্দাবনের বিষয়ে কথা বলছিলাম। এখানেও একটা চমৎকার ইতিহাস রয়েছে যে অস্ট্রেলিয়ার একটা সম্পর্ক আমাদের বুন্দেলখন্ডের ঝাঁসির সঙ্গেও আছে, আসলে ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই লড়ছিলেন তখন ওঁর উকিল ছিলেন জন ল্যাঙ। জন ল্যাঙ মূলত অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসী ছিলেন। ভারতে থেকে উনি রানী লক্ষ্মীবাঈ-এর হয়ে এই মোকদ্দমা লড়েছিলেন। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁসি আর বুন্দেলখন্ডের যে কত বড় অবদান ছিল তা আমরা সকলেই জানি। এখানে রানী লক্ষ্মীবাঈ আর ঝলকারি বাঈ-এর মত বীরাঙ্গনারাও জন্মগ্রহণ করেছেন, অন্যদিকে এই অঞ্চল মেজর ধ্যানচাঁদের মত ক্রীড়া-রত্নকেও দেশকে দিয়েছে ।
বন্ধুরা, বীরত্ব কেবলমাত্র যে যুদ্ধের ময়দানেই দেখানো যায়, এমনটা জরুরি নয়। শৌর্য যখন একটা ব্রতের মত হয়ে যায় আর তা বিস্তৃত হয়, তখন প্রতিক্ষেত্রে তার কার্যসিদ্ধি ঘটতে থাকে। আমায় এমনই সাহসিকতার সম্বন্ধে শ্রীমতি জ্যোৎস্না চিঠি লিখে জানিয়েছেন, জালৌনে এক ঐতিহ্যবাহী নদী আছে, নুন নদী। নুন, এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য জলের প্রধান উৎস হিসেবে ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে নুন নদী বিলুপ্ত হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, যতটুকু অস্তিত্ব বেঁচে ছিল ওই নদীর, সেটুকুও নর্দমাইয় রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছিল। এতে কৃষকদের সেচের জন্য সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছিল। জালোনের লোকেরা এই পরিস্থিতি বদলানোর দায়িত্ব নিল। এই বছরের মার্চ মাসে এর জন্য একটি কমিটি বানানো হলো। হাজার হাজার গ্রামীণ এবং স্থানীয় মানুষরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এখানের পঞ্চায়েতগুলো গ্রামের মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করা শুরু করে, আর এখন খুবই কম সময়ে ও কম পরিশ্রমে এই নদী পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। বহু কৃষক লাভবান হয়েছে এতে। রণক্ষেত্রের বীরত্বের বাইরেও আলাদা বীরত্বের উদাহরণ এটা, আমাদের দেশবাসীর সংকল্পের শক্তি প্রদর্শন করে এবং এটাও বোঝায় যে আমরা যদি কোন বিষয়ে মনস্থির করি তাহলে কিছুই অসম্ভব নয়। তাইতো আমি বলি 'সবকা প্রয়াস'।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যখন আমি প্রকৃতির সংরক্ষণ করি, তখন তার পরিবর্তে প্রকৃতি ও আমাদের সংরক্ষণ ও সুরক্ষা প্রদান করে। এই কথাই আমরা নিজের জীবনে অনুভব করি, আর এমনই এক উদাহরণ তামিলনাড়ুর লোকেরা বৃহৎ আকারে তুলে ধরেছেন। এই উদাহরণ তামিলনাড়ুর তুতুকুড়ি জেলার। আমরা জানি যে উপকূলবর্তী এলাকায় অনেকবার জমি প্লাবিত হওয়ার ভয় থাকে। তুতুকুড়ির বেশ কয়েকটা ছোট দ্বীপ ও সমূদ্র তীরবর্তী জনপদের অবস্থা এমন ছিল, যেগুলো সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছিল। ওই অঞ্চলের লোকেরা আর বিশেষজ্ঞরা এই প্রাকৃতিক সংকট থেকে সুরক্ষার উপায় প্রকৃতির মাধ্যমেই খুঁজছিলেন। ওখানকার লোকেরা এই দ্বীপগুলোতে তাল গাছ লাগিয়েছেন। এই গাছ ঘূর্নিঝড় ও ঝড়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর মাটিরও সুরক্ষা প্রদান করে। এর মাধ্যমে এখন এই অঞ্চলকে বাঁচানোর এক নতুন আশা জেগেছে।
বন্ধুরা, প্রকৃতি থেকে আমাদের বিপদের সম্ভাবনা তখনই তৈরি হয় যখন আমরা তার ভারসাম্যকে বিনষ্ট করি অথবা তার পবিত্রতা নষ্ট করি। প্রকৃতি মায়ের মত আমাদের সুরক্ষা প্রদান করে আর আমাদের পৃথিবীতে নতুন নতুন রংয়ের ছোঁয়া দেয়।
এইমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখছিলাম, মেঘালয়ে একটি উড়ন্ত নৌকার ছবি খুব ভাইরাল হয়েছে। এই ছবি প্রথম দর্শনেই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আপনাদের মত অনেকেই হয়তো তা অনলাইনে নিশ্চয়ই দেখেছেন। হাওয়ায় ভাসমান এই নৌকাকে যখন আমরা খুব কাছ থেকে দেখি তখন বুঝতে পারি যে তা নদীর জলে ভাসছে। নদীর জল এতই স্বচ্ছ যে আমরা তার পাদদেশ দেখতে পাই তাই মনে হয় যেন নৌকা বাতাসে ভাসছে। আমাদের দেশে এমন অনেক রাজ্য, এমন অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে মানুষ তাদের প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের ধারাকে সংরক্ষিত রেখেছেন। তাঁরা প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জীবনধারাকে আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন। এটা আমাদের সকলের জন্যও অনুপ্রেরণা। আমাদের চারপাশে যা কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ হয়েছে, আমাদের উচিত তা সংরক্ষণ করা, তাদের আসল রূপে ফিরিয়ে আনা। এতে আমাদের সকলের মঙ্গল, বিশ্বেরও মঙ্গল।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সরকার যখন পরিকল্পনা করে, বাজেট বরাদ্দ করে, সময়মতো প্রকল্প শেষ করে, তখন মানুষ অনুভব করে যে সরকার কাজ করছে। কিন্তু সরকারের অনেক কাজে, উন্নয়নের অনেক পরিকল্পনার মধ্যে মানবিক সহানুভূতি সংক্রান্ত বিষয়গুলো সবসময়ই আলাদা আনন্দ দেয়। সরকারি প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনা কিভাবে বদলে দেয় কারো জীবন, সেই বদলে যাওয়া জীবনের অভিজ্ঞতাই বা কী? সেসব যখন শুনি তখন আমাদেরও মন ভরে যায়। মনকে তৃপ্ত করে এবং সেই পরিকল্পনাকে আরো বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অনুপ্রেরণাও দেয়। এটাই তো "স্বান্তঃ সুখায়"। তাই আজ ‘মন কি বাত’-এ আমাদের সঙ্গে এমন দুজন সঙ্গীও যোগ দিচ্ছেন, যারা নিজের সাহসিকতার বলে এক নতুন জীবন জয় করে এসেছেন। তাঁরা আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সাহায্যে চিকিত্সা করিয়ে একনতুন জীবন শুরু করেছেন। আমাদের প্রথম সঙ্গী হলেন রাজেশ কুমার প্রজাপতি যার হৃদরোগ বা হার্টের সমস্যা ছিল। আসুন, আমরা রাজেশ জির সঙ্গে কথা বলি-
প্রধানমন্ত্রীজী - রাজেশ জি নমস্কার।
রাজেশ প্রজাপতি - নমস্কার স্যার নমস্কার।
প্রধানমন্ত্রীজী - আপনার কি অসুখ ছিল রাজেশ জি? আপনি নিশ্চয়ই কোনো ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন, আমাকে একটু বুঝিয়ে বলুন, স্থানীয় ডাক্তার নিশ্চয়ই এমন কিছু বলেছিলেন তখন অন্য কোনো ডাক্তারের কাছেও গিয়েছিলেন? তখন আপনি কি ভাবছিলেন কি সিদ্ধান্ত নেবেন বা নেবেন না? ঠিক কী কী হয়েছিল?
রাজেশ প্রজাপতি - আমার হার্টে কিছু সমস্যা হয়েছিল স্যার। বুক জ্বালা হত স্যার, তখন আমি ডাক্তার দেখালাম। ডাক্তার প্রথমে বললেন হয়তো তোমার এসিড হয়েছে তাই বেশ কিছুদিন ধরে এসিডের ওষুধ খেলাম। যখন তাতে কিছু লাভ হল না তখন ডাক্তার কাপুর কে দেখালাম। উনি বললেন তোমার যা লক্ষণ দেখছি তা এনজিওগ্রাফিতে ধরা পড়বে, তাই উনি আমায় শ্রীরাম মূর্তি তে রেফার করলেন। ওখানে আমার অমরেশ আগরওয়ালজির সঙ্গে দেখা হলো, উনি আমার এনজিওগ্রাফি করলেন। তিনি জানালেন আমার শিরায় ব্লকেজ রয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম স্যার কত খরচ পড়বে? তিনি জিজ্ঞাসা করলেন আয়ুষ্মানের কার্ড রয়েছে কি, যা প্রধানমন্ত্রীজি বানিয়ে দিয়েছেন? আমি বললাম স্যার আমার কাছে সেই কার্ড আছে। তো তিনি আমার কার্ড নিলেন ও আমার চিকিৎসার সমস্ত খরচা ওই কার্ডের মাধ্যমেই হয়েছে। স্যার আপনি যে এই কার্ড বানিয়েছেন তা খুব ভালোভাবে আমাদের মতো গরিব মানুষদের নানান সুবিধা দিয়েছে। আপনাকে যে কিভাবে ধন্যবাদ জানাবো।
প্রধানমন্ত্রীজী -আপনি কি করেন রাজেশ জি?
রাজেশ প্রজাপতি -স্যার এখন আমি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি।
প্রধানমন্ত্রীজী - আপনার বয়স কত?
রাজেশ প্রজাপতি - ৩৯ বছর স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজী - এত অল্প বয়সে আপনার হার্টের সমস্যা শুরু হয়ে গেল।
রাজেশ প্রজাপতি - হ্যাঁ স্যার, কি আর বলবো!
প্রধানমন্ত্রীজী - আপনার পরিবারে আপনার বাবা বা মায়ের এই ধরনের কি কোন সমস্যা ছিল?
রাজেশ প্রজাপতি - না স্যার, কারোরই কোনো সমস্যা নেই স্যার, আমারই প্রথমে সমস্যা হলো।
প্রধানমন্ত্রীজী – এই যে আয়ুষ্মান কার্ড যা ভারত সরকার দিয়ে থাকে, দরিদ্রদের জন্য অনেক বড় প্রকল্প। তার সম্পর্কে আপনি জানলেন কিভাবে?
রাজেশ প্রজাপতি - স্যার এটা তো অনেক বড় প্রকল্প। এতে গরিব মানুষের অনেক লাভ হয়েছে এবং তারা খুব খুশিও স্যার। আমি হসপিটালে দেখেছি এই কার্ডের জন্য মানুষ কত সুবিধা পাচ্ছে। যখন ডাক্তারকে কেউ বলে আমার কাছে কার্ড রয়েছে স্যার, তখন ডাক্তার বলে- ঠিক আছে আপনি কার্ড নিয়ে আসুন, আমি সেই কার্ডে আপনার চিকিৎসা করে দেবো।
প্রধানমন্ত্রীজী -আচ্ছা, যদি কার্ড না থাকতো তাহলে ডাক্তার কত টাকা খরচা হবে বলেছিলেন?
রাজেশ প্রজাপতি - ডাক্তার বলেছিল যদি কার্ড না থাকে তাহলে অনেক টাকা খরচা পড়বে। তখন আমি বললাম স্যার আমার কাছে কার্ড রয়েছে। উনি আমাকে তখনই তা দেখাতে বললেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে তা দেখালাম ও সেই কারণেই আমার চিকিৎসা হলো। আমায় এক পয়সা খরচা করতে হয়নি। এমনকি ওষুধের খরচাও কার্ড থেকেই পাওয়া গেছে।
প্রধানমন্ত্রীজী - তাহলে রাজেশ জি আপনি এখন খুশী তো? শরীর ঠিক আছে?
রাজেশ প্রজাপতি - হ্যাঁ স্যার। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার। আপনি দীর্ঘজীবী হোন ও দীর্ঘ হোক আপনার শাসনকাল। আমার পরিবারের সবাই আপনাকে নিয়ে এত আনন্দিত যে কি বলবো।
প্রধানমন্ত্রী - রাজেশবাবু, আপনি আমাকে ক্ষমতায় থাকার শুভকামনা জানাবেন না, আমি আজকেও ক্ষমতায় নেই এবং ভবিষ্যতেও যেতে চাই না। আমি শুধু সেবায় থাকতে চাই। আমার কাছে এই প্রধানমন্ত্রীত্ব, এই পদ, এই সব কিছু ক্ষমতার জন্য নয় ভাই, সেবার জন্য।
রাজেশ প্রজাপতি - আমরা তো সেবাই চাই, আর কিছু না।
প্রধানমন্ত্রী - দেখুন, দরিদ্রদের জন্য এই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প নিজেই…
রাজেশ প্রজাপতি - হ্যাঁ স্যার, খুবই ভাল জিনিস।
প্রধানমন্ত্রী - কিন্তু দেখুন রাজেশবাবু, আপনি আমার একটা কাজ করে দিন, দেবেন?
রাজেশ প্রজাপতি - হ্যাঁ অবশ্যই করব, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী - দেখুন, বাস্তবে এই প্রকল্পের ব্যপারে বেশিরভাগ মানুষ জানেন না। আপনি একটা দায়িত্ব নিন। আপনার চারপাশে যত গরীব পরিবার আছে, আপনি তাঁদের এই প্রকল্পে আপনার কী-রকম লাভ হল, কীরকম সাহায্য মিলল তা জানাবেন?
রাজেশ প্রজাপতি - অবশ্যই জানাব স্যার।
প্রধানমন্ত্রী - আর তাঁদের এটাও বলবেন এরকম কার্ড বানাতে। বলা তো যায় না পরিবারে কখন বিপদ আসে এবং দরিদ্র মানুষ ওষুধ কিনতে সমস্যায় পড়েন। এটা তো ঠিক বিষয় নয়। এবং পয়সার অভাবে যদি তাঁরা ওষুধ না নেন এবং অসুখের চিকিৎসা না করেন তাহলে সেটা খুবই চিন্তার বিষয়। আর দরিদ্র মানুষদের কী হয় সেটা আমরা জানি যেমন আপনার হার্ট প্রব্লেম হওয়ার কারণে আপনি বহু মাস কোন কাজ করতে পারেননি নিশ্চয়।
রাজেশ প্রজাপতি - আমি তো দশ পাও চলতে পারতাম না, সিঁড়ি চড়তে পারতাম না, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী - বেশ রাজেশ বাবু তাহলে আপনি আমার একজন ভাল বন্ধু হয়ে যান। যত গরীব মানুষকে আপনি এই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের ব্যাপারে বোঝাতে পারবেন যত অসুস্থ লোকের সাহায্য করতে পারবেন তাতে আপনিও তৃপ্তি অনুভব করবেন এবং আমারও খুব আনন্দ হবে যে একজন রাজেশবাবুর শরীর তো ঠিক হল কিন্তু সেই রাজেশবাবু আরও কোটি-কোটি মানুষের রোগমুক্তি ঘটালেন। এই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প গরীবদের জন্য, মধ্যবিত্তদের জন্য, সাধারণ পরিবারদের জন্য, তাই ঘরে-ঘরে এই বার্তা পৌঁছে দেবেন আপনি।
রাজেশ প্রজাপতি - অবশ্যই পৌঁছে দেব, স্যার। আমি তো তিনদিন হাসপাতালে ছিলাম স্যার। বহু মানুষ দেখতে এসেছিল তখন, তাঁদের এই প্রকল্পের সব সুবিধের কথা আমি বলেছিলাম। কার্ড ফ্রি তে হবে এটাও বলেছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী - ঠিক আছে রাজেশ বাবু, আপনি নিজেকে সুস্থ রাখুন। একটু শরীরের কথা ভাবুন, আপনার বাচ্চাদের কথা ভাবুন, এবং জীবনে খুব উন্নতি করুন, আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুরা, আমরা রাজেশবাবুর কথা শুনলাম। আসুন এখন আমাদের সঙ্গে সুখদেবীজিও যোগ দিচ্ছেন। তিনি হাটুর সমস্যায় খুব বিপদে পড়েছিলেন। আসুন আমরা প্রথমে সুখদেবীজির থেকে তাঁর দুঃখের কথা শুনি এবং তারপর কীভাবে তাঁর জীবনে সুখ এল সেটাও শুনি।
মোদী জি - সুখদেবীজি নমস্কার। আপনি কোথা থেকে বলছেন?
সুখদেবী - দানদাপরা থেকে।
মোদী জি - সেটা কোন জেলায় পড়ে?
সুখদেবী - মথুরায়।
মোদী জি - মথুরায়! তাহলে তো আপনাকে নমস্কারও জানাতে হবে এবং তাঁর পাশাপাশি রাধে-রাধেও বলতে হবে।
সুখদেবীজি - হ্যাঁ, রাধে-রাধে!
মোদী জি - আচ্ছা আমি শুনেছি আপনি বেশ সমস্যায় ছিলেন। আপনার একটি অপারেশনও হয়েছিল। একটু বলবেন পুরো ব্যাপারটা?
সুখদেবীজি - হ্যাঁ আমার হাঁটু খারাপ হয়ে গেছিল। তাই অপারেশন করতে হয়েছিল। প্রয়াগ হাসপাতালে।
মোদী জি - আপনার বয়স কত? সুখদেবীজি।
সুখদেবীজি - ৪০ বছর।
মোদী জি - ৪০ বছর আর সুখদেবী নাম, আর সুখদেবীর অসুখ হল।
সুখদেবীজি - আমি তো ১৫-১৬ বছর বয়স থেকেই অসুস্থায় ভুগছি।
মোদী জি - আরে বাবা রে। এত কম বয়স থেকেই আপনি হাঁটুর সমস্যায় ভুগছেন?
সুখদেবীজি - একে গেঁটে বাত বলে, যা গাঁটে-গাঁটে ব্যথা সৃষ্টি করে যার ফলে আস্তে আস্তে হাঁটু খারাপ হয়ে গেল।
মোদী জি - তো আপনি ১৬ থেকে ৪০ বছর অব্দি এই রোগের কোন চিকিৎসা করাননি?
সুখদেবীজি - না, করিয়েছিলাম। ব্যথার ওষুধ খেতাম। ছোট-খাটো ডাক্তাররা যেসব দেশীয় ওষুধ আছে সেগুলো দিয়েছিলেন। হাতুড়ে ডাক্তাররা তো সুস্থ হাঁটু অচল করে দিয়েছিলেন। ১-২ কিলোমিটার চলেই আমার হাঁটু খারাপ হয়ে গেছিল।
মোদী জি - তা সুখদেবীজি অপারেশনের ভাবনা কখন মাথায় এল? এর টাকাপয়সার জোগাড় কী করে করেছিলেন? কী ভাবে হল এ সব?
সুখদেবীজি - আমি ওই আয়ুষ্মান কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা করাই।
মোদী জি - তার মানে আপনি আয়ুষ্মান কার্ড পেয়ে গেছিলেন?
সুখদেবীজি - হ্যাঁ।
মোদী জি - আর আয়ুষ্মান কার্ডের মাধ্যমে গরীবদের বিনামূল্যে চিকিৎসা হয় এটা জানতেন?
সুখদেবীজি - স্কুলে মিটিং হচ্ছিল। সেখানে আমার স্বামী জানতে পারেন। তারপর আমার নামে কার্ড তৈরি করেন।
মোদী জি - হ্যাঁ।
সুখদেবীজি - আর তারপর কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা হল। আমাকে কোন টাকা দিতে হয়নি, এবং খুব ভাল চিকিৎসা হয়েছে।
মোদী জি - আচ্ছা কার্ড যদি না হত আপনার তাহলে ডাক্তার কি বলেছিলেন এই চিকিৎসায় কত খরচ পড়ত?
সুখদেবীজি - আড়াই লক্ষ, তিন লক্ষ টাকা। ৬-৭ বছর আমি বিছানায় শুয়ে ছিলাম। ভগবানকে বলতাম আমায় তুলে নিতে, আমি বাঁচতে চাইনা।
মোদীজি - ৬-৭ বছর বিছানায়? বাপ-রে বাপ।
সুখদেবীজি - হ্যাঁ।
মোদীজি - ওহো।
সুখদেবী জি - একদমই উঠতে বসতে পারতাম না
মোদী জি - তা এখন আপনার হাঁটু আগের থেকে ভালো আছে?
সুখদেবী জি - আমি খুব ঘুরে বেড়াই। রান্নাঘরের কাজ করি। ঘরের কাজ করি। বাচ্চাদের খাবার তৈরি করে দিই।
মোদী জি - তার মানে "আয়ুষ্মান ভারত" এর কার্ড আপনাকে সত্যিসত্যিই আয়ুষ্মান করে দিয়েছে।
সুখদেবী জি - অনেক অনেক ধন্যবাদ! আপনার প্রকল্পের ফলে আমি সুস্থ হয়ে উঠেছি। নিজের পায়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছি।
মোদী জি - তাহলে এখন তো বাচ্চারাও নিশ্চয়ই খুব আনন্দিত!
সুখদেবী জি - আজ্ঞে হ্যাঁ। বাচ্চাদের তো তখন খুবই অসুবিধা হতো। মা যদি সমস্যায় থাকেন তাহলে বাচ্চাদের তো অসুবিধা হবেই।
মোদী জি - দেখুন, আমাদের স্বাস্থ্যই হল আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ। এই সুখী জীবন যাতে সবাই পেতে পারে সেটাই "আয়ুষ্মান ভারত" এর ভাবনা। আচ্ছা সুখদেবী জি, আপনাকে আমার তরফ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আরো একবার আপনাকে জানাই, রাধে রাধে।
সুখদেবী জি - রাধে রাধে, নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যুব সমাজের দ্বারা সমৃদ্ধ প্রতিটি দেশে তিনটি বিষয় গুরুত্ব বহন করে। সেগুলোই কখনো কখনো যুব সমাজের প্রকৃত পরিচয় হয়ে ওঠে প্রথম বিষয়টি হলো - আইডিয়াস এবং ইনোভেশন। দ্বিতীয়টি হল ঝুঁকি নেওয়ার আবেগ এবং তৃতীয়টি হলো ক্যান ডু স্পিরিট অর্থাৎ যেকোনো কাজ সম্পূর্ণ করার জেদ, তা সে পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক না কেন! যখন এই তিনটি বিষয় একত্রিত হয় তখন অভূতপূর্ব ফলাফল দেখা যায়। আশ্চর্য ব্যাপার ঘটে যায়। আজকাল আমরা চারদিকে শুনি স্টার্ট-আপ, স্টার্ট-আপ, স্টার্ট-আপ। একথা ঠিক যে এটা স্টার্ট-আপ এর যুগ আর এটাও সত্য যে স্টার্ট-আপের দুনিয়ায় ভারত আজ সারা বিশ্বে একরকম নেতৃত্ব দিচ্ছে। বছর বছর স্টার্ট-আপে রেকর্ড বিনিয়োগ হচ্ছে। এই ক্ষেত্রটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে। এমনকি দেশের ছোট ছোট শহরেও স্টার্ট-আপের প্রসার বাড়ছে। আজকাল "ইউনিকর্ন" শব্দটি খুব আলোচনায় রয়েছে। আপনারা সবাই নিশ্চয়ই এর সম্বন্ধে শুনেছেন। "ইউনিকর্ন" একটি এমন স্টার্ট-আপ যার ভ্যালুয়েশন কমপক্ষে এক বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় সাত হাজার কোটি টাকারও বেশি। বন্ধুরা, ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে বড়জোর ন'টি কি দশটি ইউনিকর্ন ছিল। আপনারা জেনে অত্যন্ত খুশি হবেন যে এখন ইউনিকর্নের দুনিয়াতেও ভারত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী এ বছরই একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। কেবল দশ মাসের মধ্যেই ভারতে প্রতি ১০ দিনে একটি ইউনিকর্ন তৈরি হয়েছে। এটা এজন্যও একটা বড় বিষয় কারণ আমাদের যুব সমাজ এই সাফল্য করোনা মহামারী চলাকালীন অর্জন করেছে। আজ ভারতে সত্তরটিরও বেশি ইউনিকর্ন তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ সত্তরটিরও বেশি স্টার্ট-আপ এমন যারা একশো কোটি ডলারের বেশি ভ্যালুয়েশন অতিক্রম করেছে। বন্ধুরা, স্টার্ট-আপের এই সাফল্যের ফলে সবার নজরে এসেছে এবং যেভাবে দেশ থেকে, বিদেশ থেকে, বিনিয়োগকারীদের তরফ থেকে সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে তা কয়েকবছর আগে সম্ভবত কেউ কল্পনাও করতে পারতেন না।
বন্ধুরা, স্টার্ট-আপের মাধ্যমে ভারতীয় যুবসমাজ আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধানেও নিজেদের অবদান রাখছেন। আজ আমরা এক যুবক ময়ূর পাটিলের সঙ্গে কথা বলব। উনি নিজের বন্ধুদের সঙ্গে মিলে দূষণ সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছেন।
মোদী জি - ময়ূর জি, নমস্কার।
ময়ূর পাটিল - নমস্কার, স্যার।
মোদী জি - ময়ূর জি, আপনি কেমন আছেন?
ময়ূর পাটিল - খুব ভালো, স্যার। আপনি কেমন আছেন?
মোদী জি - আমি খুব ভালো আছি। আচ্ছা আমাকে বলুন, আজ আপনি স্টার্ট-আপের দুনিয়ায় আছেন।
ময়ূর পাটিল - আজ্ঞে, হ্যাঁ।
মোদী জি - আর ওয়েস্ট থেকে বেস্ট ও করছেন।
ময়ূর পাটিল - আজ্ঞে, হ্যাঁ।
মোদী জি - পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন। আপনার সম্বন্ধে আমাকে একটু বলুন। আপনার কাজের বিষয়ে বলুন। আর এই কাজের পেছনে আপনার চিন্তাভাবনা কীভাবে এলো?
ময়ূর পাটিল: স্যার, যখন কলেজে ছিলাম তখনই আমার কাছে মোটরসাইকেল ছিল। যার মাইলেজ খুব কম ছিল আর কার্বন নিঃসরণ অনেক বেশি ছিল। ওটা টু-স্ট্রোক মোটরসাইকেল ছিল। নিঃসরণ কম করার জন্য আর মাইলেজ কিছুটা বাড়ানোর জন্য আমি চেষ্টা শুরু করেছিলাম। ২০১১-১২ নাগাদ ওটার মাইলেজ আমি প্রায় ৬২ কিলোমিটার পার লিটার পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমি অনুপ্রেরণা পেলাম এমন কিছু একটা তৈরী করার, যার মাস প্রোডাকশন করা সম্ভব। তাহলে বহু মানুষ তার সুফল পাবেন। ২০১৭-১৮ তে আমরা সেই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করলাম এবং রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের আধিকারিকরা দশটি বাসে তা ব্যবহার করলেন। তার ফলাফ্ল পরীক্ষা করে দেখা গেলো, বাসগুলির নিঃসরণ প্রায় চল্লিশ শতাংশ আমরা কমিয়ে দিতে পেরেছি।
মোদী জি - হুমম। আচ্ছা এই প্রযুক্তি যা আপনি সন্ধান করে পেয়েছেন তার পে্টেন্ট ইত্যাদি করিয়ে নিয়েছেন?
ময়ূর পাটিল - আজ্ঞে হ্যাঁ, পেটেন্ট হয়ে গিয়েছে। এবছর এটি পেটেন্ট অনুমোদনও পেয়েছে।
মোদী জি - আর একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কী পরিকল্পনা আছে আপনার? কীভাবে এগোচ্ছেন? যেমন বাসের রেজাল্ট এসে গেছে। তারও সব খুঁটিনাটি বিষয় প্রকাশিত হয়েছে নিশ্চয়ই। তা কীভাবে অগ্রসর হওয়ার কথা ভাবছেন?
ময়ূর পাটিল - স্যার, স্টার্টআপ ইন্ডিয়ার মধ্যে নীতি আয়োগ অটল নিউ ইন্ডিয়া চ্যালেঞ্জ থেকে আমরা অনুদান পেয়েছি, আর সেই অনুদানের ভিত্তিতে আমরা এখন কারখানা চালু করেছি, যেখানে আমরা এয়ার ফিল্টারের উৎপাদন করতে পারব।
মোদী জি - ভারত সরকারের তরফ থেকে কতটা অনুদান পেয়েছেন আপনারা?
ময়ূর পাটিল - ৯০ লাখ।
মোদী জি - ৯০ লাখ?
ময়ূর পাটিল - আজ্ঞে হ্যাঁ।
মোদী জি - আর তাতে আপনাদের কাজ হয়ে গিয়েছে?
ময়ূর পাটিল - হ্যাঁ, এখন তো চালু হয়ে গিয়েছে। প্রসেসে রয়েছে।
মোদী জী - আপনারা কতজন বন্ধু মিলে করছেন এইসব?
ময়ূর পাটিল - আমরা চারজন আছি স্যার।
মোদী জী - আর চারজন প্রথমে একসঙ্গে পড়াশোনা করতেন আর তখনই আপনাদের এই ভাবনা মাথায় আসে আগে এগোনোর।
ময়ূর পাটিল - হ্যাঁ। হ্যাঁ স্যার। আমরা কলেজেই ছিলাম আর কলেজে আমরা এসব ভাবি আর এটা আমারই আইডিয়া ছিলো যে আমি আমার মোটরসাইকেলের অন্তত দূষণ যাতে কমাতে পারি আর মাইলেজ বাড়াতে পারি।
মোদী জী - আচ্ছা দূষণ কম করেছেন, মাইলেজ বাড়িয়েছেন তাহলে গড়ে কত সাশ্রয় হয়?
ময়ূর পাটিল - স্যার মোটরসাইকেলে আমরা টেস্ট করেছিলাম। এর মাইলেজ ছিল ২৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার, সেটা বাড়িয়ে আমরা করলাম ৩৯ কিলোমিটার প্রতি লিটার, তাহলে প্রায় ১৪ কিলোমিটার এর লাভ হলো আর তার ফলে চল্লিশ শতাংশ কার্বন নিঃসরণও কমানো গেল। আর যখন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন এর বাসে এটা লাগানো হল করা হল তখন ১০% জ্বালানীর দক্ষতা বাড়ল হলো আর তাতেও ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ নিঃসরণ কম হল।
মোদী জী - ময়ূর আপনার সঙ্গে কথা বলে আমার খুব ভালো লাগলো আর আপনাদের বন্ধুদেরও আমার তরফ থেকে অভিনন্দন জানাবেন, যে কলেজ জীবনে নিজেদের যা সমস্যা ছিল তার সমাধানও আপনারা খুঁজেছেন আর এই সমাধানের পথ ধরে পরিবেশের সমস্যাকে সমাধান করার দায়িত্ব নিয়েছেন। আমাদের দেশের যুবকদের ক্ষমতা এতটাই যে, যেকোনো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে আর তার সমাধান খুঁজতে পারে। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের অনেক অভিনন্দন। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ময়ূর পাটিল - ধন্যবাদ স্যার। ধন্যবাদ।
বন্ধুরা, কিছু বছর আগেও যদি কেউ বলত যে সে ব্যবসা করতে চায় বা কোন নতুন কোম্পানি শুরু করতে চায় তখন পরিবারের প্রবীণদের উত্তর হতে যে "তুমি চাকরি কেন করতে চাও না! চাকরি করো। চাকরি তে নিরাপত্তা থাকে, বেতন থাকে। ঝামেলা কম হয়। কিন্তু আজ যদি কেউ নিজের কোম্পানি শুরু করতে চান, তার আশেপাশের সব লোক অনেক উৎসাহিত হন, আর এতে তাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতাও করেন। বন্ধুরা ভারতের উন্নয়নের টার্নিং পয়েন্ট এটাই, যেখানে এখন শুধু কর্মপ্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন না বরং কর্ম সংস্থানও তৈরি করছেন। এতে বিশ্বমঞ্চে ভারতের অবস্থান আরো মজবুত হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘আজ মন কি বাত’এ আমরা অমৃত মহোৎসবের কথা বললাম।অমৃত কালে কিভাবে আমাদের দেশবাসী নতুন নতুন সংকল্প পূরণ করেছেন তার চর্চা করলাম আর তার সঙ্গে ডিসেম্বর মাসে সেনার শৌর্যের সঙ্গে যুক্ত উপলক্ষ গুলিরও উল্লেখ করলাম। ডিসেম্বর মাসে আরেকটি বড় দিন আমাদের সামনে আসে যেটা থেকে আমরা প্রেরণা পাই। এই দিনটি হল ৬ই ডিসেম্বর বাবাসাহেব আম্বেদকর এর পূণ্য তিথি। বাবাসাহেব নিজের পুরো জীবন দেশ ও সমাজের প্রতি নিজ কর্তব্য পালনে সমর্পণ করেছিলেন। আমরা দেশবাসীরা এটা কখনও ভুলব না যে আমাদের সংবিধানের মূল ভাবনা, আমাদের সংবিধান আমাদের সকল দেশবাসীর কাছে নিজ নিজ কর্তব্য পালনের প্রত্যাশা করে। তাহলে আসুন আমরাও সংকল্প নিই যে অমৃত মহোৎসবে আমরা আমাদের কর্তব্য সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের প্রচেষ্টা করবো। এটাই হবে বাবা সাহেবের প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বন্ধুরা, এখন আমরা ডিসেম্বর মাসে প্রবেশ করছি। স্বাভাবিকভাবেই পরের মন কি বাত ২০২১ সালের শেষ মন কি বাত হবে। ২০২২ এ পুনরায় যাত্রা শুরু করা হবে আর আমি তো আপনাদের কাছ থেকে অনেক উপদেশের অপেক্ষা করতেই থাকি আর করতে থাকবোও। আপনারা এই বছরকে কিভাবে বিদায় জানাচ্ছেন, নতুন বছরে কী করতে চলেছেন এটা অবশ্যই বলবেন আর হ্যাঁ এটা কখনো ভুলবেন না করোনা এখনো চলে যায়নি। সর্তকতা অবলম্বন করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবাইকে নমস্কার। কোটি কোটি নমস্কার। আর আমি কোটি কোটি নমস্কার এইজন্যেও বলছি যে আজ একশো কোটি টিকার ডোজের পরে দেশ নতুন উৎসাহ, নতুন শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের টিকা কার্যক্রমের সাফল্য ভারতের সামর্থ্যকে তুলে ধরে, সম্মিলিত প্রয়াসের মন্ত্রের শক্তিকে তুলে ধরে।
বন্ধুরা, একশো কোটি টিকা ডোজের পরিসংখ্যান নিঃসন্দেহে খুব বড় কিন্তু এখানে ছোট-ছোট লক্ষ-লক্ষ প্রেরণাদায়ক আর গর্বে বুক ভরে দেওয়ার মত অনেক বিষয়, অনেক উদাহরণ জুড়ে আছে। অনেকে আমাকে চিঠি লিখে জানতে চেয়েছেন যে টিকাদান শুরু হতেই কীভাবে আমার মনে বিশ্বাস জন্মেছিল যে এই অভিযান এত বড় সাফল্য পাবে! আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই কারণে হয়েছিল যে আমি আমার দেশ, আমার দেশের মানুষের সঙ্গে সম্যকভাবে পরিচিত। আমি জানতাম যে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা দেশবাসীদের টিকাকরণের জন্য যে কোনো পরিশ্রম করতে কসুর করবেন না। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের নিশ্ছিদ্র পরিশ্রম আর সংকল্পর মাধ্যমে এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন, তাঁরা উদ্ভাবনের সাহায্যে নিজেদের দৃঢ়তার সঙ্গে মানবতার সেবার এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। তাঁদের কাজের অগণিত দৃষ্টান্ত রয়েছে, যার মাধ্যমে তাঁরা যাবতীয় বাধা পার করে বেশি-বেশি মানুষকে সুরক্ষা কবচ দিয়েছেন। আমরা অনেক বার খবরের কাগজে পড়েছি, বাইরেও শুনেছি যে এই কাজ করার জন্য আমাদের এই সব মানুষজন কত পরিশ্রম করেছেন। এক-একটা চমৎকার উদাহরণ রয়েছে আমাদের সামনে। আমি আজ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের শ্রোতাদের উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বর জেলার এমনই এক স্বাস্থ্যকর্মী পুনম নৌটিয়ালের সঙ্গে পরিচিত করাতে চাই। বন্ধুরা, এই বাগেশ্বর সেই উত্তরাখণ্ডের অন্তর্গত যে উত্তরাখণ্ড প্রথম ডোজ দেওয়ার লক্ষ্য একশো শতাংশ পূর্ণ করেছে। উত্তরাখণ্ডের সরকারও এই কারণে অভিনন্দনের দাবীদার কারণ এই ভূখণ্ড অত্যন্ত দুর্গম, অত্যন্ত কঠিন। এভাবেই হিমাচলও এমন কঠিন পথ অতিক্রম করে একশো শতাংশ ডোজ দেওয়ার কাজ করে নিয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে যে পুনমজী নিজের অঞ্চলের মানুষদের টিকাকরণের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী জী – পুনমজি নমস্কার।
পুনম নৌটিয়াল – স্যার, প্রণাম।
প্রধানমন্ত্রী জী – পুনমজী নিজের ব্যাপারে দেশের শ্রোতাদের বলুন।
পুনম নৌটিয়াল – স্যার, আমি পুনম নৌটিয়াল। স্যার, আমি উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বর জেলার চানী কোরালী সেন্টারে কাজ করছি স্যার। আমি একজন এ-এন-এম স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জী – পুনমজী, এটা আমার সৌভাগ্য যে আমার বাগেশ্বর যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল, সেটা এক অর্থে তীর্থক্ষেত্র। ওখানে পুরনো মন্দির ইত্যাদিও আছে। আমি দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছি যে বহু যুগ আগে মানুষ সেখানে কীভাবে কাজ করেছে।
পুনম নৌটিয়াল – হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জী – পুনমজী আপনি কি নিজের অঞ্চলের সব ব্যক্তির টিকাকরণ করিয়ে নিয়েছেন?
পুনম নৌটিয়াল – হ্যাঁ স্যার। সবারই হয়ে গিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জী – আপনাকে কোনো রকমের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে?
পুনম নৌটিয়াল – হ্যাঁ স্যার। স্যার, এখানে যেমন একটানা বৃষ্টি হলে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। স্যার, নদী পার করে গিয়েছি আমরা। আর স্যার প্রত্যেক বাড়িতে গিয়েছি, যেমন এন-এইচ-সি-ভি-সির প্রকল্পে আমরা বাড়িতে-বাড়িতে গিয়েছি। যে সব মানুষ সেন্টারে আসতে পারত না যেমন প্রবীণ মানুষ বা শারীরিকভাবে অসমর্থ মানুষ, গর্ভবতী নারী, ধাত্রী মহিলারা – এমন মানুষজন স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জী – কিন্তু ওখানে তো পাহাড়ে বাড়িঘর সব অনেক দূরে-দূরে।
পুনম নৌটিয়াল – হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী জী – তা এক দিনে কতটা করতে পারতেন আপনারা?
পুনম নৌটিয়াল – স্যার কিলোমিটারের হিসাবে – কখনও দশ কিলোমিটার কখনও আট কিলোমিটার।
প্রধানমন্ত্রী জী – যাই হোক, এই যে তরাই অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষজন তাঁরা বুঝতে পারবেন না, যে আট-দশ কিলোমিটার বলতে কতটা বোঝায়। আমি জানি যে পাহাড়ের আট-দশ কিলোমিটারের অর্থ গোটা দিন চলে যাওয়া।
পুনম নৌটিয়াল – হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী জী – কিন্তু এক দিনেই যেহেতু এটা খুব পরিশ্রমের কাজ আর টিকারকরণের যাবতীয় জিনিসপত্র বয়ে নিয়ে যেতে হয়। আপনার সঙ্গে কোনো সহায়ক থাকত কি?
পুনম নৌটিয়াল – হ্যাঁ স্যার, টিম মেম্বার, আমরা স্যার পাঁচ জন থাকতাম !
প্রধানমন্ত্রী জী – হ্যাঁ।
পুনম নটিয়াল - এদের মধ্যে একজন ডাক্তার, একজন এনএম, একজন ফারমাসিস্ট। একজন আশা মেম্বার আর অন্যজন ডাটা এনট্রি অপারেটার।
প্রধানমন্ত্রী জি - আচ্ছা এই যে ডাটা এনট্রির কাজ, ওখানে নেটওয়ার্ক পেয়ে যান, না বাগেশ্বর এসে করতেন?
পুনম নটিয়াল - স্যার, কোথাও কোথাও পাওয়া যেত নেটওয়ার্ক, নাহলে বাগেশ্বর ফেরত এসে করতাম।
প্রধানমন্ত্রী জি - আচ্ছা। আমাকে বলা হয়েছে পুনমজি, যে আপনি নির্দিষ্ট নিয়মের বাইরে গিয়ে অনেক লোকের টীকাকরন করিয়েছেন। এই ভাবনা কি করে আপনার মাথায় এল, এই কাজ কি করে করলেন?
পুনম নটিয়াল- আমরা সকলে, আমাদের পুরো টিম, এই সংকল্প গ্রহণ করেছিলাম যে কোনো একজন ব্যক্তিও যেন বাদ না পড়ে। আমাদের দেশ থেকে এই করোনা রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল করতে হবে। আমি আর একজন আশাকর্মী গ্রাম পিছু বকেয়া তালিকা তৈরী করি। সেই অনুযায়ী যারা সেন্টারে আসেন, তাদের সেখানেই টীকা দিই। যারা বাকি থেকে যান, তাদের এরপর আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টীকা দিই।
প্রধানমন্ত্রী জি - আচ্ছা লোকেদের বোঝাতে হতো?
পুনম নৌটিয়াল - হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জি - টিকা নেওয়ার জন্য লোকজনের কি আগ্রহ আছে?
পুনম নটিয়াল - হ্যাঁ স্যার, হ্যাঁ স্যার, হ্যাঁ, এখন তো লোকেরা বুঝে গেছে, প্রথম প্রথম আমাদের খুব অসুবিধা হত। তখন আমাদের অনেক বোঝাতে হত লোকজনদের, এই টীকা সুরক্ষিত এবং কার্যকরী। আমরা নিজেরাও টীকা নিয়েছি, আমাদের স্টাফেরাও সকলে টীকা নিয়েছে এবং সুস্থ আছে, বহাল তবিয়তে সকলে আপনাদের সামনে আছি।
প্রধানমন্ত্রী জি - কোথাও টীকা লাগানোর পর কোন রকম অভিযোগ এসেছে কি? পরে।
পুনম নটিয়াল- না, না স্যার, এরকম কিছু হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী জি – কিছু হয় নি?
পুনম নৌটিয়াল - না স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জি - সকলে সন্তুষ্ট ?
পুনম নৌটিয়াল - হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জি – সব ঠিক হয়ে গেছে ?
পুনম নটিয়াল - হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জি- আপনি খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন এবং খুব ভালো কাজ করেছেন। এই পুরো এলাকা কত দুর্গম আমি জানি। পায়ে হেটে যেতে হয়। একবার একটা পাহাড় চড়া আবার নামা, আবার পরের পাহাড় চড়া, ঘর গুলোও দূরে দূরে। তা সত্ত্বেও আপনারা সকলে এত ভাল কাজ করেছেন।
পুনম নটিয়াল- ধন্যবাদ স্যার, আমার সৌভাগ্য আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারলাম।
আপনার মত লাখো স্বাস্থ্য কর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই ভারত ১০০ কোটি টীকাকরণ সম্পূর্ণ করতে পেরেছে। আজ আমি শুধু আপনাদেরই কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি না, সেই সকল ভারতবাসীকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি যারা 'সকলের টিকা, বিনামূল্যে টিকা' এই অভিযানকে এতখানি সফল করেছেন। আপনাকে আপনার পরিবারকে আমার অনেক অনেক শুভকামনা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা জানেন আগামী রবিবার, ৩১শে অক্টোবর, সর্দার প্যাটেলের জন্মবার্ষিকী। 'মন কি বাত' -এর প্রতিটি শ্রোতা এবং আমার পক্ষ থেকে, আমি লৌহ মানবকে প্রণাম জানাই। বন্ধুরা, ৩১শে অক্টোবর, আমরা 'জাতীয় ঐক্য দিবস' হিসেবে উদযাপন করি। এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব যে আমরা এমন কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত হই যার মাধ্যমে ঐক্যের বার্তা ছড়ানো যায়। আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন যে সম্প্রতি গুজরাট পুলিশ কচ্ছের লাখপত দুর্গ থেকে স্ট্যাচু অফ ইউনিটি পর্যন্ত বাইক র্যালি বের করেছে। একতা দিবস উদযাপনে ত্রিপুরা থেকে স্ট্যাচু অফ ইউনিটি পর্যন্ত বাইক rally করছে ত্রিপুরা পুলিশের কর্মীরা। অর্থাৎ, পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত দেশকে সংযুক্ত করা হচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীর-এর পুলিশ কর্মীরা উরি থেকে পাঠানকোট পর্যন্ত একই রকম বাইক rally করে দেশের ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আমি এই সব জওয়ানদের স্যালুট জানাই। আমি জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার অনেক বোনের সম্পর্কেও জানতে পেরেছি। এই বোনেরা কাশ্মীরে সেনা ও সরকারি অফিস-এর জন্য তেরঙ্গা পতাকা সেলাই করছেন। এই কাজটি দেশপ্রেমে পরিপূর্ণ। আমি এই বোনেদের এই মনোভাব-এর প্রশংসা করি। আপনাদেরও অবশ্যই ভারতের ঐক্যের জন্য, ভারতের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য কিছু না কিছু করা উচিত। দেখবেন আপনারা মনে কতটা তৃপ্তি পান। বন্ধুরা, সর্দার সাহেব বলতেন যে - “আমরা আমাদের সমবেত উদ্যোগের মাধ্যমেই দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ না হই, তাহলে আমরা নিত্য নতুন দুর্যোগের ফাঁদে নিজেরাই পড়ে যাবো। অর্থাৎ জাতীয় ঐক্য থাকলে উচ্চতার শিখরে পৌঁছনো যায়, উন্নতি করা যায় । আমরা সর্দার প্যাটেলজির জীবন থেকে, তাঁর চিন্তাধারা থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। দেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক সম্প্রতি সর্দার সাহেবের উপর একটি সচিত্র জীবনী প্রকাশ করেছে। আমি চাই আমাদের সমস্ত তরুণ বন্ধুরা এটি অবশ্যই পড়েন। এটি আকর্ষণীয় উপায়ে আপনাকে সর্দার সাহেব সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেবে।
প্রিয় দেশবাসী, জীবন ধারাবাহিক অগ্রগতি চায়, উন্নয়ন চায়, উচ্চতা অতিক্রম করতে চায়। বিজ্ঞানের যতই অগ্রগতি হোক, অগ্রগতির গতি যতই দ্রুত হোক, বাড়ি যতই বড় হোক, তবুও জীবন অসম্পূর্ণ মনে হয়। কিন্তু, জীবনের সঙ্গে যখন গান-বাজনা, শিল্প, নৃত্য-নাট্য, সাহিত্য যুক্ত হয়, তখন তার ঔজ্বল্য ও প্রাণশক্তি বহুগুণ বেড়ে যায়। জীবনকে অর্থপূর্ণ হতে হলে, এই সবগুলি সমানভাবে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই বলা হয় যে এই সমস্ত পদ্ধতি, আমাদের জীবনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে, আমাদের শক্তি বৃদ্ধি করে। মানুষের অন্তরাত্মার বিকাশে, আমাদের আত্মার যাত্রাপথ তৈরিতে, সঙ্গীত এবং বিভিন্ন শিল্পের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে এবং তাদের একটি দুর্দান্ত শক্তি রয়েছে। সময় তাদের বাঁধতে পারে না, সীমানা আটকাতে পারে না, তাদের মত বা অমতের বেড়াজালে আবদ্ধ করা যায়না । অমৃত মহোৎসবকেও আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি, গান-বাজনার রঙে ভরিয়ে দিতে হবে। অমৃত মহোৎসবে গান-সংগীত-শিল্পের এই শক্তি সম্পর্কিত অনেক পরামর্শও পাচ্ছি আপনাদের কাছ থেকে। এই পরামর্শ আমার কাছে খুবই মূল্যবান। আমি এগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি ভাবনাচিন্তা করার জন্য। আমি আনন্দিত যে মন্ত্রণালয় এত অল্প সময়ের মধ্যে এই পরামর্শগুলিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তার উপর কাজ করেছে। এই পরামর্শগুলির মধ্যে একটি হলো দেশাত্মবোধক গান সম্পর্কিত প্রতিযোগিতা! স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশাত্মবোধক গান, বিভিন্ন ভাষায়, উপভাষা সমগ্র দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। এখন অমৃতকালে, আমাদের তরুণরা এই ধরনের দেশাত্মবোধক গান লিখে এই অনুষ্ঠানকে আরও আকর্ষণীয় করতে পারে। এসব দেশাত্মবোধক গান মাতৃভাষায় হতে পারে, জাতীয় ভাষায় হতে পারে, ইংরেজিতেও লেখা যেতে পারে। কিন্তু এটা অত্যন্ত প্রয়োজন যে এই রচনা যাতে নতুন ভারতের নতুন চিন্তাধারার হয়, দেশের বর্তমান সাফল্য থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য দেশের প্রতি সংকল্পকে ব্যক্ত করে। সংস্কৃতি দপ্তর তার মহকুমা স্তর থেকে রাষ্ট্রীয় স্তর পর্যন্ত সকলকেই এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছে।
বন্ধুরা, 'মন কি বাত'-এর এমনই একজন শ্রোতা উপদেশ দিয়েছেন যে 'অমৃত মহোৎসব'কে রঙ্গোলি শিল্পের সঙ্গেও যুক্ত করা উচিত। আমাদের এখানে এই রঙ্গোলির মাধ্যমে উৎসবে রঙ ছড়িয়ে দেবার সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। রঙ্গোলিতে দেশের বৈচিত্রের দেখা মেলে। আলাদা আলাদা রাজ্যে, বিভিন্ন নামে, আলাদা আলাদা বিষয়ে রঙ্গোলি তৈরি করা হয়। এইজন্যে সংস্কৃতি দপ্তর এই বিষয়ে জাতীয় প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে চলেছে। আপনারা কল্পনা করুন, যখন স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রঙ্গোলি তৈরি হবে, মানুষ নিজের দরজায়, দেওয়ালে স্বাধীনতা সংগ্রামে উৎসর্গীকৃত সেনানীদের ছবি আঁকবে, স্বাধীনতার কোন ঘটনা রং-এর মাধ্যমে প্রদর্শন করবে, তখন অমৃত মহোৎসবও আরো রঙিন হয়ে উঠবে।
বন্ধুরা, আমাদের এখানে ঘুমপাড়ানি গান শোনানোর প্রথাও রয়েছে। ঘুমপাড়ানি গানের মাধ্যমে ছোট বাচ্চাদের সংস্কার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়, আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে তাদের পরিচয় করানো হয়। ঘুম পাড়ানি গানেরও নিজের অনন্যতা রয়েছে। তাহলে, আসুন না আমরা এই অমৃতকালে এই শিল্পকে পুনর্জীবিত করি, আর দেশপ্রেমের ভাবনার সঙ্গে যুক্ত ঘুমপাড়ানি গান লিখি। কবিতা, গান কিছু-না-কিছু অবশ্যই লিখি যা খুব সহজেই প্রত্যেক ঘরে মায়েরা নিজেদের ছোট বাচ্চাদের শোনাতে পারে। এই ঘুমপাড়ানি গানে আধুনিক ভারতের প্রসঙ্গ থাকুক, একুশ শতকের ভারতের স্বপ্নের কথা থাকুক। আপনাদের, সকল শ্রোতার উপদেশের পরে সংস্কৃতি দপ্তর এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বন্ধুরা, এই তিনটি প্রতিযোগিতা ৩১শে অক্টোবর, সর্দার সাহেবের জন্মবার্ষিকী থেকে শুরু হতে চলেছে। আগামী দিনে সংস্কৃতি দপ্তর এই প্রতিযোগিতার বিষয়ে সমস্ত রকম তথ্য আপনাদের জানাবে। এইসব তথ্য মন্ত্রকের ওয়েব সাইটেও থাকবে, সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেওয়া হবে। আমি চাই যে আপনারা সকলেই এর সঙ্গে যুক্ত হন। আমাদের যুবকযুবতি বন্ধুরা অবশ্যই এতে নিজেদের শিল্পকলার, নিজেদের প্রতিভার প্রদর্শন করবেন। এতে আপনার অঞ্চলের শিল্প এবং সংস্কৃতিও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌছবে, আপনার গল্প পুরো দেশ শুনবে।
প্রিয় দেশবাসী, এই সময় আমরা অমৃত মহোৎসব এর মাধ্যমে দেশের বীর সন্তান সন্ততিদের, সেই মহান পূণ্যাত্মাদের স্মরণ করছি। পরের মাসে, ১৫ই নভেম্বর আমাদের দেশের এমনই এক মহাপুরুষ, বীর যোদ্ধা, ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্ম জয়ন্তী আসছে। ভগবান বিরসা মুন্ডাকে 'ধরতি আবা'ও বলা হয়। আপনারা কি জানেন এর মানে কি? এর অর্থ হলো ধরিত্রীর পিতা। ভগবান বিরসা মুন্ডা যেভাবে নিজের সংস্কৃতি, নিজের জঙ্গল, নিজের জমি রক্ষা করার জন্য লড়াই করেছেন, এটা কোন 'ধরতি আবা'ই করতে পারে। উনি আমাদের নিজের সংস্কৃতি আর শেকড়ের প্রতি গর্ব অনুভব করতে শিখিয়েছেন। বিদেশি শাসকেরা কতবার হুমকির মাধ্যমে ওঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু উনি আদিবাসী সংস্কৃতিকে কখনো ছাড়েননি। প্রকৃতি এবং বায়ুমন্ডল কে যদি আমাদের ভালবাসতে শিখতে হয় তাহলে সেখানেও ধরতি আবা ভগবান বিরসা মুন্ডা আমাদের বিশাল বড় প্রেরণা হতে পারেন। উনি বিদেশী শাসনের এমন নীতির পুরোদমে বিরোধিতা করেছিলেন যা প্রকৃতির ক্ষতি করে। দরিদ্র এবং সঙ্কটে থাকা মানুষের সাহায্য করার ক্ষেত্রেও ভগবান বিরসা মুন্ডা সবসময় এগিয়ে থাকতেন। সমাজের সমস্ত দুর্নীতি দূর করতে তিনি সমাজকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। উল্গুলান আন্দোলনের সময় ওঁর নেতৃত্বকে কে ভুলতে পারে? এই আন্দোলন ইংরেজদের কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এর পরেই ইংরেজরা ভগবান বিরসা মুন্ডাকে ধরার জন্য বিরাট পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। ব্রিটিশ সরকার তাঁর ওপর জেলে এত অত্যাচার করে যে মাত্র ২৫ বছর বয়েসেই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। কিন্তু শুধু তাঁর দেহই আমাদের ছেড়ে গেছে। মানুষের হৃদয়ে ভগবান বিরসা মুন্ডার স্থান চিরকালের জন্য থেকে গেছে। মানুষের কাছে তাঁর জীবন একটি বিশাল প্রেরণা শক্তি হিসেবে বিরাজ করে। আজও তাঁর সাহস ও বীরত্বের কাহিনী ও লোকগীতি ভারতের মধ্যভাগে ভীষণ জনপ্রিয়। আমি ধরতি আবা বিরসা মুন্ডা কে আমার প্রণাম জানাই এবং যুবসম্প্রদায়কে বলি তাঁর ব্যাপারে আরও পড়াশোনা করতে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাদের আদিবাসী সম্প্রদায়ের অবদান সম্বন্ধে আপনারা যত জানবেন তত গৌরব অনুভব করবেন ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ২৪শে অক্টোবর ইউএন ডে অর্থাৎ রাষ্ট্রসংঘ দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিনেই রাষ্ট্রসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম দিন থেকেই ভারত রাষ্ট্রসংঘের অংশ হিসাবে থেকেছে। আপনারা কি জানেন যে স্বাধীনতার আগেই অর্থাৎ ১৯৪৫এই ভারত সম্মিলিত রাষ্ট্রসংঘের সনদে সই করে? রাষ্ট্রসংঘের ক্ষেত্রে আরেকটি বিশেষ ব্যাপার হচ্ছে এর শক্তি ও প্রভাব বাড়াতে ভারতীয় নারী শক্তির বিশাল অবদান রয়েছে। ১৯৪৭-৪৮এ যখন ইউএন হিউমান রাইটসের ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন তৈরি হচ্ছিল তখন তাতে লেখা ছিল “ অল মেন আর ক্রিয়েটেড ইক্যুয়াল”। কিন্তু ভারতের একজন ডেলিগেট এতে আপত্তি জানান এবং তারপর ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশনে লেখা হয় “অল হিউম্যান বিয়িংস আর ক্রিয়েটেড ইক্যুয়াল”. এই কথাটি ভারতের বহু পুরনো লিঙ্গ সাম্যের ঐতিহ্যর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। আপনারা কি জানেন ভারতের সেই ডেলিগেটের নাম শ্রীমতি হান্সা মেহতা যার জন্য এই পরিবর্তনটি সম্ভব হয়েছিল? ঐ সময়েই ভারতের আরেক ডেলিগেট শ্রীমতি লক্ষ্মী মেনন লিঙ্গ সাম্যের বিষয়ে বলিষ্ঠ ভাবে নিজের বক্তব্য রাখেন। শুধু তাই নয়, ১৯৫৩তে শ্রীমতি বিজয়লক্ষী পন্ডিত ইউএন জেনারেল এসেম্বলির প্রথম মহিলা সভাপতি হন।
বন্ধুরা, আমরা এমন এক ভূমির সন্তান যারা বিশ্বাস করে, প্রার্থনা করেঃ
‘ওম দয়ৌঃ শান্তি শান্তিরন্তরিক্ষ
পৃথ্বী শান্তিরাপ শান্তিঃ শান্তিরোশধয়ঃ
বনস্তপ্তয়ঃ শান্তি শান্তিব্রহ্মঃদেবা শান্তির্বিশ্বেঃ
সর্বশান্তিঃ শান্তিরেবঃ শান্তিঃ সা মা শান্তিরেধিঃ
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ’
ভারত সবসময়ই বিশ্বশান্তির জন্য কাজ করেছে। আমরা গর্বিত যে ১৯৫০এর দশক থেকে ভারত সম্মিলিত রাষ্ট্র শান্তি মিশনের অংশ হিসেবে কাজ করছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও শ্রমিক সংক্রান্ত বিষয়েও ভারত অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়াও যোগ এবং আয়ুশকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে ভারত হু অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে। মার্চ ২০২১-এ হু ঘোষণা করেছিল ভারতে পরম্পরাগত চিকিৎসার একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র তৈরি হবে।
বন্ধুরা, রাষ্ট্রসংঘের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে আজ আমার অটলজির কথাও মনে পড়ছে। ১৯৭৭এ উনি রাষ্ট্রসংঘে হিন্দিতে ভাষণ দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। আজ আমি ‘মন কি বাত’ এর শ্রোতাদের অটলজির সেই ভাষণের একটি অংশ শোনাতে চাই। আসুন শুনি অটলজির সেই শক্তিশালী কন্ঠঃ
“এখানে আমি রাষ্ট্রের শাসন এবং মাহাত্ম্যের ব্যপারে ভাবছি না। সাধারণ মানুষের প্রতিষ্ঠা এবং প্রগতি আমার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্তত আমাদের সবার সাফল্য এবং ব্যর্থতা কেবলমাত্র একটি মাপকাঠিতে বিচার করা উচিত। আমরা কি সমগ্র মানব সমাজ, অর্থাৎ সমস্ত নর-নারী এবং শিশুর ন্যায় ও গরিমা দেওয়ার প্রতি যত্নশীল?
বন্ধুরা, অটলজির এই বাণী আমাদের আজও ঠিক দিশা দেখাতে সাহায্য করে। এই পৃথিবীকে আরও ভাল এবং সুরক্ষিত একটি প্ল্যানেট বানাতে ভারতের চেষ্টা সারা পৃথিবীর জন্য একটি বড় প্রেরণা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন আগে, অর্থাৎ ২১শে অক্টোবর আমরা পুলিশ স্মৃতি দিবস উদযাপন করেছি। যে সকল পুলিশকর্মী দেশের জন্য নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন এই দিনে আমরা তাঁদের বিশেষ রূপে স্মরণ করি। আমি আজ সেই পুলিশকর্মীদের সঙ্গে তাঁদের আত্মীয়স্বজনদেরও স্মরণ করতে চাইব। পরিবারের ত্যাগ ও সহযোগিতা ছাড়া পুলিশের মতন কঠিন সেবায় কাজ করা খুব মুশকিল। পুলিশ সেবার ব্যাপারে আরেকটা কথা মন কি বাতের শ্রোতাদের জানাতে চাই। একসময় মনে করা হত পুলিশ বা সেনাবাহিনীর কাজ কেবলমাত্র পুরুষরা করতে পারে। আজ কিন্তু সেই চিন্তাধারা বদলে গেছে। ব্যুরো অফ পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিসংখ্যান আমাদের জানাচ্ছে বিগত কয়েক বছরে মহিলা পুলিশকর্মীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে, ডবল হয়ে গেছে। ২০১৪তে যেখানে তাঁদের সংখ্যা ১ লক্ষ ৫ হাজারের কাছাকাছি ছিল, সেখানে ২০২০ তে প্রায় দুগুণের বেশি বাড়ার পর সেই সংখ্যা এখন ২ লক্ষ ১৫ হাজারে পৌঁছে গেছে। এমন কী কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীতেও বিগত ৭ বছরে মহিলাদের সংখ্যা প্রায় দিগুণ হয়ে গেছে। আর আমি কেবল পরিসংখ্যানের কথাই বলছি না, এখন দেশের মেয়েরা কঠিন থেকে কঠিনতর ডিউটিও সম্পূর্ণ সাহসিকতার সঙ্গে ও শক্তি দিয়ে করছেন। উদাহরণস্বরুপ, বহু মেয়ে এখন যেসব ট্রেনিং সবচেয়ে কঠিন মনে করে হয়, তার মধ্যে অন্যতম স্পেশালাইজড জাঙ্গল ওয়য়ারফেয়ার কম্যান্ডোর প্রশিক্ষণও নিচ্ছে। এঁরা আমাদের কোবরা ব্যাটেলিয়ানের অংশ হবে।
বন্ধুরা, আজকাল আমরা এয়ারপোর্ট, মেট্রো স্টেশন কিম্বা কোন সরকারি দপ্তরে গেলে দেখতে পাই সিআইএসএফের-এর সাহসী মহিলারা এসব সংবেদনশীল জায়গা রক্ষা করছেন। এর ইতিবাচক প্রভাব পুলিশ ফোর্সের পাশাপাশি আমাদের সমাজের মনোবলেও পড়ছে। মহিলা সুরক্ষাকর্মীর উপস্থিতিতে মানুষের মধ্যে, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে একটা সহজ বিশ্বাস জন্মায়। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা এঁদের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত মনে করেন। মহিলাদের সংবেদনশীলতার জন্যও মানুষ তাঁদের ওপর বেশি ভরসা করেন। আমাদের এই মহিলা পুলিশকর্মীরা দেশের লক্ষ-লক্ষ মেয়েদের জন্য আদর্শ স্থানীয় হচ্ছেন। মহিলা পুলিশকর্মীদের অনুরোধ করব তাঁরা যেন তাঁদের এলাকার স্কুলগুলি খুললে সেখানে যান, সেখানকার ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই কথোপকথনের মাধ্যমে আমাদের নতুন প্রজন্ম এক নতুন দিশা খুঁজে পাবে। শুধু তাই নয়, এর ফলে পুলিশের ওপর মানুষের বিশ্বাস আরও বাড়বে। আমি আশা করি ভবিষ্যতে আরো বেশি সংখ্যায় মহিলারা পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করবেন, আমাদের দেশের নতুন যুগকে নেতৃত্ব করবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার যে দ্রুততার সঙ্গে বাড়ছে, তা নিয়ে প্রায়শই "মন কি বাত" এর শ্রোতারা তাদের চিন্তা ভাবনা আমাকে লিখে পাঠান। আজ আমি এমনই একটি বিষয়ের আলোচনা আপনাদের সঙ্গে করতে চাই যা আমাদের দেশ, বিশেষত আমাদের তরুণ প্রজন্ম, এমনকি ছোট ছোট বাচ্চাদের কল্পনাতেও জাঁকিয়ে বসেছে। সে বিষয়টি হলো ড্রোন, ড্রোন টেকনোলজি। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত যখনই ড্রোনের কথা উঠত, তখন মানুষের মনে প্রথম ভাবনা কি আসত? আসত সেনা, অস্ত্র বা যুদ্ধের ভাবনা। কিন্তু আজ আমাদের এখানে কোন বিয়ের আসর বা অন্য কোন অনুষ্ঠান হলে আমরা ড্রোনের সাহায্যে ফটো ও ভিডিও তুলে থাকি। কিন্তু ড্রোনের কার্যকারিতা, তার ক্ষমতা শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। ভারত পৃথিবীর সেই প্রথম দেশগুলির অন্যতম, যারা ড্রোনের সাহায্যে নিজেদের গ্রামে জমির ডিজিটাল রেকর্ড তৈরি করছে। ভারত পরিবহণের ক্ষেত্রে ড্রোনের ব্যবহার বহুল ও ব্যাপক ভাবে করছে। তা গ্রামে চাষবাস হোক বা বাড়িতে জিনিসপত্রের ডেলিভারি। আপৎকালীন সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হোক কিংবা আইন ব্যবস্থার তত্ত্বাবধান। বেশি সময় বাকি নেই যখন আমরা দেখব যে ড্রোন আমাদের এই সব প্রয়োজনের জন্য ব্যবহার হবে। এর মধ্যে বেশিরভাগ কাজ তো শুরুও হয়ে গেছে। যেমন কিছুদিন আগে গুজরাতের ভাবনগরে ড্রোনের মাধ্যমে ক্ষেতে ন্যানো-ইউরিয়া ছড়ানো হল। কোভিড টিকা অভিযানেও ড্রোন নিজের ভূমিকা পালন করছে। তার একটি চিত্র আমরা মণিপুরে দেখতে পেয়েছি। সেখানে একটি দ্বীপে ড্রোনের মাধ্যমে টিকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তেলেঙ্গানাও ড্রোনের মাধ্যমে টিকা পৌঁছে দেবার জন্য ট্রায়াল সম্পূর্ণ করেছে। শুধু তাই নয়, এখন পরিকাঠামো সংক্রান্ত বড় বড় প্রকল্পর তত্ত্বাবধানের জন্যও ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি এমন একজন কম বয়সি ছাত্রের বিষয়েও পড়েছি যিনি নিজের ড্রোনের সাহায্যে মৎস্যজীবীদের জীবন রক্ষার কাজ করেছেন।
বন্ধুরা, আগে এই ক্ষেত্রে এত নিয়ম কানুন ও প্রতিবন্ধকতা ছিল যে ড্রোনের প্রকৃত ক্ষমতার ব্যবহারই সম্ভব ছিল না। যে প্রযুক্তিকে সুযোগের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিৎ ছিল তাকে সংকটের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়েছিল। যদি আপনার কোন কাজের জন্য ড্রোন ওড়ানোর প্রয়োজন হত তাহলে লাইসেন্স এবং পারমিশনের এত ঝঞ্ঝাট হত যে মানুষ ড্রোনের নাম শুনেই পিছিয়ে যেতেন। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এই মানসিকতাকে পরিবর্তন করে নতুন প্রকল্পকে গ্রহণ করার। তাই এই বছর ২৫ শে অগাস্ট দেশ এক নতুন ড্রোন নীতি নিয়ে এসেছে। এই নীতি ড্রোনের সঙ্গে যুক্ত বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাগুলির কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। এতে এখন প্রচুর ফর্মের চক্করেও পড়তে হবে না, আগের মত অত মাশুল ও দিতে হবে না। আমার আপনাদের বলতে আনন্দ হচ্ছে যে নতুন ড্রোননীতি আসার পরে অনেক ড্রোন স্টার্টআপে বিদেশি এবং দেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করেছে। অনেক কোম্পানি উৎপাদন কেন্দ্র ও তৈরি করছেন।
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী আর বিমানবাহিনী, ভারতীয় ড্রোন কোম্পানিকে ৫০০ কোটি টাকারও বেশির অর্ডার দিয়েছে। আর এটা তো সবে মাত্র আরম্ভ। আমাদের এখানেই থামলে হবে না। আমাদের ড্রোন প্রযুক্তিতে অগ্রণী দেশ হতে হবে। এর জন্য সরকার সবরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। আমি দেশের যুবকদের বলবো যে আপনারা ড্রোন নীতির ফলে তৈরি হওয়া সুযোগের সদ্ব্যবহার করার ব্যাপারে নিশ্চয়ই ভাবুন, এগিয়ে আসুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ইউ পি’র মেরঠ থেকে ‘মন কি বাত’ এর এক শ্রোতা শ্রীমতী প্রভা শুক্লাজি আমায় স্বচ্ছতা বিষয়ে একটি পত্র পাঠিয়েছেন। উনি লিখেছেন যে "ভারতে উৎসবের সময় আমরা সবাই স্বচ্ছতাকে উদযাপন করি। সেরকমই যদি আমরা স্বচ্ছতাকে রোজকার অভ্যেস বানিয়ে নিই তাহলে পুরো দেশ স্বচ্ছ হয়ে উঠবে।" আমার প্রভাজীর এই কথাটি খুবই পছন্দ হয়েছে। সত্যিই যেখানে সাফ সাফাই আছে, সেখানে স্বাস্থ্য আছে, যেখানে স্বাস্থ্য আছে, সেখানে সামর্থ্য আছে আর যেখানে সামর্থ্য আছে, সেখানে আছে সমৃদ্ধি। এই জন্যই তো দেশে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের উপর এত বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।
বন্ধুরা, আমার রাঁচি সংলগ্ন এক গ্রাম সপারোম নয়া সরায়, সম্বন্ধে জানতে পেরে খুব ভালো লেগেছে। এই গ্রামে একটি জলাশয় ছিল, কিন্তু গ্রামবাসীরা এই জলাশয়টিকে উন্মুক্ত শৌচালয় হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সময় যখন সবার ঘরে শৌচালয় তৈরি হয়ে গেল, তখন গ্রামের মানুষেরা ভাবলেন যে গ্রামকে স্বচ্ছ বাননোর পাশাপাশি সুন্দরও বানানো যাক। আর তারপরেই সবাই মিলে জলাশয়ের পাশে পার্ক বানিয়ে দেন। আজ ওই স্থান মানুষের জন্য, শিশুদের জন্য একটি সার্বজনীন স্থান হয়ে গেছে। এতে পুরো গ্রামের জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। আমি আপনাদের ছত্তিশগড় এর দেউর গ্রামের মহিলাদের সম্বন্ধেও বলতে চাই। এখানকার মহিলারা একটি স্বয়ং সহায়তা সংস্থা পরিচালনা করেন আর মিলেমিশে গ্রামের চৌমাথা রাস্তা আর মন্দির পরিষ্কার করে থাকেন।
বন্ধুরা, ইউপির গাজিয়াবাদের রামবীর তনওয়ার জি কে মানুষ 'পন্ড ম্যান' নামে চেনেন। রাম বীর জি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করার পরে চাকরি করছিলেন। কিন্তু ওঁর মনে স্বচ্ছতার কিরণ এতটাই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল যে তিনি চাকরি ছেড়ে জলাশয় পরিষ্কার করতে লেগে যান।রাম বীর জি এখনো অবধি বহু জলাশয় পরিষ্কার করে পুনর্জীবিত করে তুলেছেন।
বন্ধুরা, স্বচ্ছতার প্রচেষ্টা তখনই পুরোপুরি সফল হয় যখন প্রত্যেক নাগরিক স্বচ্ছতাকে নিজের দায়িত্ব ভাবে।এখন দীপাবলিতে আমরা সবাই নিজেদের ঘর পরিষ্কার করার কাজে শামিল হতে যাচ্ছি। কিন্তু এই সময়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে আমাদের ঘরের সঙ্গে আমাদের আশপাশও যেন পরিষ্কার থাকে। এরকম যেন না হয় যে আমরা নিজেদের ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে ঘরের আবর্জনা ঘরের বাইরে, আমাদের রাস্তায় পৌঁছে দিই। আর হ্যাঁ, আমি যখন স্বচ্ছতার কথা বলি তখন দয়া করে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক থেকে মুক্তির কথাও আমাদের ভুললে চলবে না। তাহলে আসুন, আমরা সংকল্প নিই যে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের উৎসাহে আমরা ভাটা পড়তে দেবো না। আমরা সবাই মিলে নিজেদের দেশকে সম্পূর্ণরূপে স্বচ্ছ বানাবো আর স্বচ্ছ রাখবো।
আমার প্রিয় দেশবাসী, অক্টোবরের পুরো মাসটাই উৎসবের রঙে রঙিন হয়ে থাকে এবং আর কিছুদিন পরে দীপাবলি তো আসছেই। দীপাবলি তারপর গোবর্ধন পূজা আর তারপর ভাইফোঁটা এই তিনটি উৎসব তো হবেই হবে। এই সময়ে ছট পূজাও হবে। নভেম্বরে গুরু নানক দেবজীর জয়ন্তীও আছে। এতগুলো উৎসব একসঙ্গে থাকলে তার প্রস্তুতিও অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। আপনারা সবাই এখন থেকেই কেনাকাটার প্ল্যান করতে শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু আপনাদের মনে করিয়ে দিই, কেনাকাটা মানে 'ভোক্যাল ফর লোক্যাল। আপনারা স্থানীয় সামগ্রী কিনলে আপনাদের উৎসবও আলোকিত হবে আর কোনো গরিব ভাই বোন, কোনো কারিগর, কোনো তন্তুবায়ের ঘরেও আলো জ্বলবে। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আমরা সবাই মিলে যে প্রচার করতে শুরু করেছি এবারের উৎসবে তা আরো মজবুত হবে। আপনারা নিজেদের এলাকার স্থানীয় পণ্য কিনুন, তার সম্বন্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ারও করুন। নিজের আশেপাশের লোকদেরও বলুন। আগামী মাসে আমাদের আবার দেখা হবে আর এভাবেই অনেক বিষয়ে আমরা চর্চা করব। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আপনারা জানেন যে এক জরুরী কর্মসূচীতে আমাকে আমেরিকা যেতে হচ্ছে, তাই আমি ভাবলাম যে ভালো হবে, যদি আমি আমেরিকা যাওয়ার আগেই ‘মন কি বাত’ রেকর্ড করে যাই। সেপ্টেম্বরের যে দিন ‘মন কি বাত’ নির্ধারিত, সেই তারিখেই আর একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন রয়েছে। এমনিতে তো আমরা অনেক দিবস মনে রাখি, নানারকম দিবস পালনও করি আর আমাদের বাড়িতে তরুণ পুত্র-কন্যা থাকলে তাদের জিজ্ঞাসা করলে গোটা বছরে কোন দিবস কখন আছে তার সম্পূর্ণ তালিকা শুনিয়ে দেবে। কিন্তু এমন আর একটা দিবস আছে যা আমাদের মনে রাখা উচিত আর এই দিবস এমনই যা ভারতের পরম্পরার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। সুদূর অতীত থেকে যে পরম্পরার সঙ্গে জুড়ে আছি আমরা তার সঙ্গেই যুক্ত করবে আমাদের। এটা হল ‘ওয়ার্ল্ড রিভার ডে’ অর্থাৎ ‘বিশ্ব নদী দিবস’। আমাদের এখানে বলা হয় –
‘পিবন্তি নদ্যঃ, স্বয়-মেভ নাভ্যঃ’
অর্থাৎ নদী নিজের জল নিজে পান করে না, বরং পরোপকারের জন্য দেয়। আমাদের জন্য নদী শুধু এক জড় বস্তুই নয়, আমাদের জন্য নদী এক জীবন্ত একক, আর তাই তো, সেইজন্যই তো আমরা, নদীকে ‘মা’ বলে ডাকি। আমাদের কত পরব, কত উৎসব, কত উচ্ছ্বাস, এই সবই আমাদের এই সব মায়েদের কোলে পালিত হয়।
আপনারা সবাই জানেন – মাঘ মাস এলে আমাদের দেশের বহু মানুষ পুরো এক মাস মা গঙ্গা বা অন্য কোনও নদীর তীরে কল্পবাস করেন। এখন তো এটা আর পরম্পরা নেই কিন্তু আগেকার দিনে তো রীতি ছিল যে বাড়িতে স্নান করলেও নদীকে স্মরণ করতাম। এই পরম্পরা আজ হয়ত লুপ্ত হয়ে গিয়েছে অথবা কোথাও সামান্য পরিমাণে টিঁকে রয়েছে কিন্তু একটা খুব বড় প্রথা ছিল যা সকালে স্নান করার সময়েই বিশাল ভারতের এক যাত্রা করিয়ে দিত, মানসিক যাত্রা! দেশের প্রত্যেকটি কোণার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রেরণা তৈরি হয়ে যেত। আর ওই যে ছিল, ভারতে স্নান করার সময় শ্লোক উচ্চারণের এক রীতি –
গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী।
নর্মদে সিন্ধু কাবেরী জলে অস্মিন্ সন্নিধি কুরু।।
আগে আমাদের বাড়িতে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ এই শ্লোক বাচ্চাদের মুখস্থ করাতেন আর এতে আমাদের দেশে নদী নিয়ে আস্থা জন্ম নিত। বিশাল ভারতের এক মানচিত্র মনে আঁকা হয়ে যেত। নদীর সঙ্গে এক বন্ধন তৈরি হত। যে নদীকে মায়ের রূপে দেখে, জেনে, জীবনধারণ করি আমরা সেই নদীর প্রতি এক আস্থার মনোভাব তৈরি হত। এ ছিল সংস্কার তৈরির এক প্রক্রিয়া।
বন্ধু, যখন আমরা আমাদের দেশে নদীর মহিমা নিয়ে কথা বলছি, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যেকে একটা প্রশ্ন তুলবেন আর প্রশ্ন তোলার অধিকারও আছে, আর এর জবাব দেওয়া আমাদের দায়িত্বও বটে। যে কেউ প্রশ্ন করবেন যে ভাই, আপনি নদীর এত প্রশস্তি করছেন, নদীকে ‘মা’ বলছেন, তাহলে নদী এত দূষিত হয়ে যাচ্ছে কেন? আমাদের শাস্ত্রে তো নদীকে সামান্য দূষিত করাও অন্যায় বলা হয়। আর আমাদের পরম্পরাও এমন, আপনারা তো জানেনই যে আমাদের হিন্দুস্থানের যে পশ্চিম ভাগ, বিশেষ করে গুজরাত আর রাজস্থান, সেখানে জলের খুব অভাব রয়েছে। অনেক বার আকাল দেখা দেয়। এখন এই কারণেই এখানকার সমাজ জীবনে এক নতুন পরম্পরা তৈরি হয়েছে। যেমন গুজরাতে বর্ষা শুরু হলেই জল-জীলনী একাদশী পালন করা হয়। অর্থাৎ আজকের যুগে আমরা যেটাকে বলি ‘ক্যাচ দ্য রেইন’ সেটাই করা হয় যে জলের এক-একটা বিন্দু জড়ো করা, জল-জীলনী। এইভাবে বর্ষার পরে বিহার আর পূর্বাঞ্চলে ছটের মহাপরব পালিত হয়। আমি আশা করি যে ছটের কথা মনে রেখে নদীর পাড়ে, ঘাটে পরিষ্কার করা আর মেরামতি করার কাজ শুরু করা হয়েছে। আমরা নদীকে পরিষ্কার করা আর দূষণমুক্ত রাখার কাজ সবার প্রচেষ্টা আর সবার সহযোগিতায় করতেই পারি। ‘নমামি গঙ্গে মিশন’ও আজ এগিয়ে চলেছে আর তাই এখানে সব মানুষের প্রচেষ্টা, এক রকমের জনজাগরণ, জন-আন্দোলন, তার অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে।
বন্ধু, যখন নদীর কথা হচ্ছে, মা গঙ্গার কথা হচ্ছে তখন আরও একটা কথার প্রতি আপনাদের মনযোগ আকর্ষণের ইচ্ছে হচ্ছে। আলোচনা যখন ‘নমামি গঙ্গের’ নিয়ে হচ্ছে তখন নিশ্চয়ই একটা বিষয়ে আপনাদের নজর পড়েছে আর আমাদের তরুণতরুনীদের নজর তো অবশ্যই পড়েছে। আজকাল এক বিশেষ ই-অকশন, ই-নীলাম চলছে। এই ইলেকট্রনিক নীলাম সেই সব উপহারের যা বিভিন্ন সময়ে মানুষজন আমাকে দিয়েছেন। এই নীলাম থেকে যে অর্থ আসবে তা ‘নমামি গঙ্গে’ মিশনের জন্যই সমর্পিত হয়। আত্মীয়তার যে ভাবনা থেকে আপনারা আমাকে উপহার দেন, এই অভিযান সেই ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করে।
বন্ধুরা, সারা দেশ জুড়ে নদীদের পুনর্জীবিত করার জন্য, পরিষ্কার জলের জন্য সরকার ও সমাজসেবী সংগঠনগুলি নিরন্তর কিছু না কিছু করে চলেছে। আজ থেকে নয়, অনেক দশক আগে থেকেই এই কাজ চলছে। কিছু মানুষ তো এমন কাজের জন্য নিজেকে সমর্পিত করে দিয়েছেন, এবং এই পরম্পরা, এই প্রয়াস, এই আস্থাই আমাদের নদীদের বাঁচিয়ে রেখেছে। ভারতবর্ষের যেকোনো প্রান্ত থেকেই যখন এমন খবর আমার কানে আসে, তখন আমার মনে সেই কৃতী ব্যক্তির প্রতি প্রভূত শ্রদ্ধা জন্মায়, আর ইচ্ছে করে সে কথা আপনাদের বলি। আমি তামিলনাড়ুর ভেল্লোর এবং তিরুভান্নামালাই জেলার একটি উদাহরণ দিতে চাই। সেখানে নাগানধী নামে এক নদী বয়ে গেছে। এই নাগা নদী বহু বছর আগে শুকিয়ে গিয়েছিল। তার ফলে সেখানকার জলস্তরও অনেক নিচে নেমে যায়। কিন্তু সেখানকার মহিলারা দৃঢ় সংকল্প নিলেন যে তাদের নদীকে তারা পুনর্জীবিত করবেন। তারপর তারা মানুষদের একত্রিত করলেন, সকলে কাজ ভাগ করে নিয়ে খাল কাটলেন, চেক ড্যাম বানালেন, রিচার্জ কুয়ো বানালেন। বন্ধুরা, আপনারাও জেনে খুশি হবেন যে আজ সেই নদী জলে ভরে উঠেছে, আর যখন নদী জলে ভরে ওঠে তখন মনে এক পরম শান্তি পাওয়া যায় যা আমি নিজে প্রত্যক্ষ ভাবে অনুভব করেছি।
আপনাদের মধ্যে অনেকেই নিশ্চয়ই জানেন, যে সবরমতীর তীরে মহাত্মা গান্ধী সবরমতী আশ্রম স্থাপন করেছিলেন, তা বিগত কিছু দশক ধরে শুকিয়ে গিয়েছিল। বছরে ছয় থেকে আট মাস জল চোখেই পড়তো না। কিন্তু নর্মদা নদী এবং সবরমতী নদীকে যুক্ত করা হয়েছে। আর আজ যদি আপনি আমেদাবাদ যান, তাহলে সবরমতী নদীর জল আপনার মনকে প্রফুল্ল করবে। এমনই বহু কাজ হয়ে চলেছে। তামিলনাড়ুতে আমাদের এই বোনেরা যেমন কাজ করছেন, দেশের আলাদা আলাদা প্রান্তেও তেমনই কাজ হচ্ছে। আমি তো জানি, আমাদের বহু ধার্মিক পরম্পরার সঙ্গে যুক্ত সাধু সন্ত, গুরুজনেরা নিজেদের আধ্যাত্মিক যাত্রার পাশাপাশি জলের জন্য, নদীর জন্য অনেক কিছু করছেন, বহু নদীর ধারে গাছ লাগানোর অভিযান চালাচ্ছেন। বহু নদীতে প্রবাহিত নোংরা জল আটকানোর কাজ হচ্ছে।
বন্ধুরা, "ওয়ার্ল্ড রিভার ডে" যখন আজ উদযাপিত হচ্ছে, তখন এই কাজে সমর্পিত সকলকে আমি শ্রদ্ধা জানাই, অভিনন্দন জানাই । কিন্তু প্রতিটি নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষদের কাছে, দেশবাসীর কাছে আমি অনুরোধ করে বলব, ভারতের প্রতিটি প্রান্তে বছরে একবার তো নদী উৎসব পালন করাই উচিত।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ছোট কথা বা ছোট বিষয়কে ছোট করে দেখার মত ভুল কখনোই করা উচিত নয়। ছোট ছোট প্রয়াস থেকে কখনো কখনো তো বিরাট বড় বড় পরিবর্তনও আসে। যদি মহাত্মা গান্ধীর জীবনের প্রতি আমরা দৃষ্টি দিই তাহলে আমরা প্রতি মুহূর্তে উপলব্ধি করব যে, ওঁর জীবনে ছোট ছোট কথার কি বিরাট গুরুত্ব ছিল! আর ছোট ছোট কথা দিয়ে বড় বড় সংকল্পকে উনি কিভাবে রূপ দিয়েছিলেন। আমাদের আজকের তরুণ প্রজন্মের এটা অবশ্যই জানা উচিত যে স্বচ্ছতা অভিযান কিভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনকে নিরন্তর উদ্দীপনা যুগিয়েছিল। মহাত্মা গান্ধীই স্বচ্ছতাকে জন-আন্দোলনের রূপ দিয়েছিলেন। মহাত্মা গান্ধী স্বচ্ছতাকে স্বাধীনতার স্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। আজ এত দশক পরে স্বচ্ছতা আন্দোলন আবারও একবার দেশকে নতুন ভারতের স্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত করার কাজ করেছে এবং আমাদের অভ্যাস পরিবর্তনের অভিযানেও পরিণত হচ্ছে। আমাদের এটা ভুললে চলবে না যে স্বচ্ছতা শুধুমাত্র একটি কর্মসূচি নয়, স্বচ্ছতা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলা সংস্কার থেকে নিবৃত্ত হওয়ার এক দায়িত্ব। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে স্বচ্ছতা অভিযান চালাতে হবে, তবেই সমগ্র সমাজ জীবনে স্বচ্ছতার অভ্যাস তৈরি হওয়া সম্ভব। তাই এটি দু এক বছর বা দু একটি সরকারের বিষয় নয়, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমাদের স্বচ্ছতা সম্বন্ধে সজাগ থেকে, ক্লান্তিহীনভাবে, সশ্রদ্ধ হয়ে অবিরাম এই স্বচ্ছতা অভিযান চালিয়ে যেতে হবে, আর আমি তো আগেও বলেছি যে এই স্বচ্ছতা - এটি পূজ্য বাপুকে এই দেশের পক্ষ থেকে এক বিরাট শ্রদ্ধাঞ্জলি। আর এই শ্রদ্ধাঞ্জলি আমাদের প্রতিবার দিয়ে যেতে হবে, নিরন্তর দিয়ে যেতে হবে।
বন্ধুরা, সবাই জানে যে আমি স্বচ্ছতা সম্পর্কে বলার কোন সুযোগ ছাড়ি না। হয়তো সেই জন্যই আমাদের 'মন কি বাত' এর একজন শ্রোতা শ্রীমান রমেশ প্যাটেল জি লিখেছেন - আমাদের বাপুর কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করে এবারের স্বাধীনতার "অমৃত মহোৎসবে" আর্থিক স্বচ্ছতার সংকল্পও নেওয়া উচিত। শৌচাগার নির্মাণ যেমন দরিদ্রদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে, তেমনি অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা দরিদ্রদের অধিকার নিশ্চিত করে, তাদের জীবনকে সহজ করে তোলে। আপনারা জেনে থাকবেন দেশে 'জন ধন' অ্যাকাউন্টের যে প্রয়াস শুরু হয়েছিল, তার ফলে আজ দরিদ্ররা তাঁদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি তাঁদের অধিকারের টাকা পাচ্ছেন, সেই জন্য দুর্নীতির মতো বাধা ও অনেকাংশ কম হয়েছে। এটা সত্য যে অর্থনৈতিক স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি খুব সাহায্য করতে পারে। এটা আমাদের জন্য আনন্দের বিষয় যে আজ গ্রামাঞ্চলেও ফিন-টেক ইউপিআই-এর মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেন করার পথে সাধারণ মানুষও যোগ দিচ্ছেন, এর প্রচলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি আপনাদের একটা পরিসংখ্যান দিই, যা জেনে আপনারা গর্বিত হবেন, গত আগস্ট মাসে ইউপিআই এর মাধ্যমে এক মাসে ৩৫৫ কোটি লেন্দেন করা হয়, অর্থাৎ একমাসেই প্রায়-প্রায় ৩৫০ কোটিরও বেশি লেনদেন, অর্থাৎ আমরা বলতে পারি যে গত আগস্ট মাসে, ৩৫০ কোটিরও বেশি বার ডিজিটাল লেনদেনের জন্য ইউপিআই ব্যবহার করা হয়েছে। আজ, ইউপিআই এর মাধ্যমে গড়ে ৬ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ডিজিটাল পেমেন্ট করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ হয়ে উঠছে, এবং আমরা জানি এখন ফিনটেকের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
বন্ধুরা, বাপু যেমন পরিষ্কার -পরিচ্ছন্নতাকে স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে খাদিকে স্বাধীনতার পরিচয়ে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। আজ, স্বাধীনতার ৭৫তম বছরে, যখন আমরা স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উদযাপন করছি, তখন আমরা সন্তুষ্টি নিয়ে বলতে পারি যে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে খাদির যে গৌরব ছিল, আজ আমাদের তরুণ প্রজন্ম খাদির সেই গৌরব অক্ষুন্ন রেখেছেন। আজ খাদি ও তাঁতের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর চাহিদাও বেড়েছে। আপনিও জানেন অনেকবার এমনও ঘটেছে যে দিল্লির খাদি শোরুম দিনে এক কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা করেছে। আমি আপনাকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ২রা অক্টোবর, পূজনীয় বাপুর জন্মবার্ষিকীতে, আসুন আমরা সবাই আবার নতুন রেকর্ড গড়ি। দীপাবলির উৎসব তো সামনেই রয়েছে, তাই আপনার শহরে যেখানে খাদি, তাঁত, হস্তশিল্পের জিনিস বিক্রি হয়, সেখান থেকে কেনাকাটা করে এই উৎসবের মরসুমে খাদি, হস্তশিল্প, কুটির শিল্পের এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হোন। আপনার প্রতিটি কেনাকাটা ' ভ্যোকাল ফর ল্যোকাল' প্রচারাভিযানকে শক্তিশালী করে তুলুক, পুরনো সব রেকর্ড ভেঙে দিক।
বন্ধুরা, অমৃত মহোৎসবের এই সময়ে, দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের অব্যক্ত কাহিনী জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে একটি প্রচারাভিযানও চলছে। এর জন্য উদীয়মান লেখক, দেশের ও বিশ্বের তরুণদের আহ্বান জানানো হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ নিবন্ধিকরন করেছেন, তাও আবার ১৪টি ভিন্ন ভাষায়। এবং এটাও আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে ২০ টিরও বেশি দেশের প্রবাসী ভারতীয় এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। আরও একটি আকর্ষণীয় তথ্য রয়েছে, প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি উদীয়মান লেখক স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত কাহিনীর খোঁজ করছেন। যাঁরা অজানা নায়ক নায়িকা, যাঁরা অজ্ঞাতনামা, যাদের নাম ইতিহাসের পাতায় দেখা যায় না, সেই অজানা নায়ক নায়িকাদের বিষয়ে কিছু লেখার উদ্যোগ নিয়েছেন নতুন উদীয়মান লেখক, অর্থাৎ দেশের তরুণ তরুণীরা সেইসব স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ইতিহাস, তাদের জীবন ও বিভিন্ন ঘটনাকে দেশের সামনে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাঁদের সম্বন্ধে গত ৭৫ বছরেও আলোচনা হয়নি। সকল শ্রোতার কাছে আমার অনুরোধ, শিক্ষা জগতের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আমার অনুরোধ আপনারাও এই তরুণ তরুনীদের অনুপ্রাণিত করুন। আপনিও এগিয়ে আসুন এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস যারা স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে ইতিহাস লিখছেন তারাও ইতিহাস তৈরি করবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সিয়াচেন হিমবাহ সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। এখানে ঠান্ডা এত ভয়ঙ্কর যে সাধারণ মানুষের পক্ষে সেখানে বসবাস করা দুঃসাধ্য। দূর দূর পর্যন্ত শুধুই বরফ আর গাছপালার তো কোনো চিহ্নই নেই। এখানে তাপমাত্রা হিমাংকের নীচে ৬০ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। কিছুদিন আগে সিয়াচেন এর এই দুর্গম এলাকায় ৮ জন ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের একটি দল এমন বিস্ময়কর কাজ করে দেখিয়েছে যা প্রতিটি দেশবাসীর গর্বের বিষয়। এই দল সিয়াচেন হিমবাহের ১৫ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত 'কুমার পোস্টে' পতাকা উত্তোলন করে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের এই দিব্যাঙ্গ বন্ধুরা যে কৃতিত্বের ছাপ রেখেছেন তা পুরো দেশের জন্য প্রেরণাদায়ক আর যখন আপনিও এই টিমের সদস্যদের সম্বন্ধে জানতে পারবেন আপনারাও আমারই মত সাহস আর উদ্যমে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবেন। এই সাহসী ভিন্নভাবে সক্ষম বন্ধুদের নাম হল মহেশ নেহরা, উত্তরাখণ্ডের অক্ষত রাওয়াত, মহারাষ্ট্রের পুষ্পক গবাণ্ডে, হরিয়ানার অজয় কুমার, লাদাখের লোবসং চস্পেল, তামিলনাড়ুর মেজর দ্বারকেশ, জম্মু-কাশ্মীরের ইরফান আহমেদ মির আর হিমাচল প্রদেশের চোঞ্জিন এঙ্গমো। সিয়াচেন হিমবাহকে জয় করার এই অভিযান ভারতীয় সেনার বিশেষ দলের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের জন্য সফল হয়েছে। আমি এই ঐতিহাসিক ও অভূতপূর্ব সাফল্যর জন্য এই দলের প্রশংসা করছি। এটি আমাদের দেশবাসীকে "ক্যান ডু কালচার", "ক্যান ডু ডিটারমিনেশন", "ক্যান ডু অ্যাটিটিউড" এর সঙ্গে প্রত্যেক বাধার সম্মুখীন হওয়ার ভাবনার প্রেরণা যোগায়।
বন্ধুরা, আজ দেশে ভিন্নভাবে সক্ষমদের কল্যাণের জন্য বহু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে একটি উদ্যোগ ওয়ান টিচার, ওয়ান কল এর সম্বন্ধে জানার সুযোগ আমি পাই। বরেলিতে এই অভিনব প্রচেষ্টা ভিন্নভাবে সক্ষম শিশুদের নতুন পথ দেখাচ্ছে। এই অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডভুউরা গঙ্গাপুর-এর একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল দীপমালা পান্ডেজি। করোনাকালে এই অভিযানের দরুন কেবলমাত্র বহুসংখ্যক শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তিই সম্ভব হয়নি এমনকি এর ফলে প্রায় ৩৫০ এর বেশি শিক্ষক সেবাব্রতের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছেন। এই শিক্ষক গ্রামে গ্রামে গিয়ে ভিন্নভাবে সক্ষম শিশুদের ডেকে আনেন, খুঁজে বের করেন আর তাদের কোনো না কোনো স্কুলে ভর্তি সুনিশ্চিত করান। দিব্যাঙ্গজনদের জন্য দীপমালাজি আর ওনার সহ শিক্ষকদের এই মহান উদ্যোগের জন্য আমি তাঁদের ভুয়সী প্রশংসা করছি। শিক্ষা ক্ষেত্রে এরকম প্রত্যেক উদ্যোগ আমাদের দেশের ভবিষ্যতকে সুসজ্জিত করে তুলবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ আমাদের জীবনের অবস্থা এমনই যে একদিনে করোনা শব্দটি কয়েকশোবার ধ্বনিত হয়, বিগত ১০০ বছরে আসা সব থেকে বড় বিশ্বব্যাপী মহামারী কোভিড নাইনটিন প্রত্যেক দেশবাসীকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। স্বাস্থ্যপরিষেবা ও সুস্থতা নিয়ে আজ প্রশ্ন আর সচেতনতাও বেশি। আমাদের দেশে পারম্পরিক রূপে এরকম প্রাকৃতিক সম্পদ প্রচুর মাত্রায় পাওয়া যায় যা ওয়েলনেস অর্থাৎ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক কার্যকরী। ওড়িশার কালাহান্ডির নান্দওল এর অধিবাসী পাতায়েত সাহুজী এই ক্ষেত্রে বহুদিন ধরে একটি অভিনব কাজ করে চলেছেন। উনি দেড় একর জমির উপর ভেষজ গাছ লাগিয়েছেন, শুধু তাই নয় সাহুজি এই ভেষজ গাছের তথ্য নথীভুক্তির কাজও করেছেন। আমায় রাঁচির সতীশ জী এরকমই আরো একটি তথ্য পত্র মারফত জানিয়েছেন। সতীশজী ঝাড়খন্ডে অ্যালোভেরা গ্রামের প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। রাঁচির পাশে দেবরি গ্রামের মহিলারা মঞ্জু কাচ্ছপজীর নেতৃত্বে বিরসা কৃষি বিদ্যালয় থেকে এলোভেরা চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এরপরে ওঁরা অ্যালোভেরা চাষ শুরু করেন। এই চাষ থেকে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে লাভ হয়েছে তাই নয় এমনকি ওই মহিলাদের আয়ও বেড়ে গেছে। কোভিড মহামারীর সময় ওঁদের ভালো আয় হয়েছে। এর একটি বড় কারণ ছিল যে স্যানিটাইজার বানানোর কোম্পানিগুলো সরাসরি ওনাদের কাছ থেকে অ্যালোভেরা কিনছিল। আজ এই কাজের সঙ্গে প্রায় ৪০ জন মহিলার দল যুক্ত। আরো অনেক একর জমিতে অ্যালোভেরার চাষ হয়। ওড়িশার পাতায়েত সাহুজী হোক বা দেওয়ারির মহিলাদের এই দল, এরা চাষবাস কে যেভাবে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত করেছেন তা দৃষ্টান্তমূলক।
বন্ধুরা, আসন্ন দোসরা অক্টোবর লাল বাহাদুর শাস্ত্রীজিরও জন্মজয়ন্তী। তাঁর স্মৃতিতে এই দিনটি আমাদের কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রয়োগ করার অনুপ্রেরণা দেয়। ভেষজ গাছের ক্ষেত্রে স্টার্ট আপ-কে উৎসাহ দিতে মেডি হাব টিবিআই নামক একটি ইনকিউবেটর, গুজরাটের আনন্দে কাজ করছে। ঔষধি ও সুগন্ধি গাছের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই ইনকিউবেটর খুব কম সময়ে ১৫ জন উদ্যোক্তাদের ব্যবসার ভাবনাকে সাহায্য করেছে। এই ইনকিউবেটর-এর সাহায্যেই সুধা চেব্রলুজী নিজের স্টার্ট আপ শুরু করেছেন। তাঁর কোম্পানিতে মহিলাদের প্রাধান্য দেয়া হয় এবং তাঁদের ওপরই উদ্ভাবনী ভেষজ ফর্মুলেশন-এর দায়িত্ব দেওয়া আছে। আর একজন উদ্যোক্তা, শুভাশ্রীজীও এই ঔষধি ও সুগন্ধি গাছের ইনকিউবেটর থেকে সুফল পেয়েছেন। শুভাশ্রীজীর কোম্পানি হার্বাল রুম আর কার ফ্রেশনার ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা একটি ভেষজ ছাদ বাগান বানিয়েছেন যেখানে চারশোরও বেশি ঔষধি গুল্ম আছে।
বন্ধুরা, বাচ্চাদের মধ্যে ঔষধি ও ভেষজ গাছের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর জন্য আয়ুষ মন্ত্রণালয় একটি মজাদার উদ্যোগ নিয়েছে এবং তার পুরো দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন আমাদের অধ্যাপক আয়ুষ্মানজী। আপনি হয়তো ভাবছেন যে, এই অধ্যাপক আয়ুষ্মান কে? আসলে অধ্যাপক আয়ুষ্মান একটি কমিক বই-এর নাম। এই বইয়ে বিভিন্ন কার্টুন চরিত্রদের মাধ্যমে ছোট ছোট গল্প তৈরী করা হয়েছে। এর পাশাপাশি অ্যালভেরা, তুলসী, আমলকি, গুলঞ্চ, নিম, অশ্বগন্ধা ও ব্ৰাহ্মীর মতো স্বাস্থ্যকর ঔষধি গাছের উপকারিতা বর্ণনাও করা হয়েছে।
বন্ধুরা, বর্তমান পরিস্থিতিতে যেভাবে ঔষধি গাছ ও ভেষজ দ্রব্যের প্রতি বিশ্বের মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, তাতে ভারতের কাছে অনেক সম্ভাবনার দিক খুলে গেছে। সম্প্রতি আয়ুর্বেদিক ও ভেষজ দ্রব্যের রপ্তানিতে অনেকটা বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। আমি বিজ্ঞানী, গবেষক এবং স্টার্ট আপ-এর ক্ষেত্রে সঙ্গে যুক্ত লোকেদের এইসব দ্রব্যের দিকে দৃষ্টিপাত করতে অনুরোধ করছি, যা মানুষের সুস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায় এবং আমাদের কৃষক ও যুবসম্প্রদায়ের আয়ের পথকে প্রশস্ত করতে সাহায্য করে।
বন্ধুরা, প্রথাগত কৃষিকাজ থেকে একটু এগিয়ে, কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রয়োগ, নতুন বিকল্প, নিরন্তর স্বনিযুক্তির নতুন পথ খুলে দিচ্ছে। পুলওয়ামা অঞ্চলের দুই ভাইয়ের গল্প এমনি একটি উদাহরণ। জম্মু কাশ্মীরের পুলওয়ামায় বিলাল আহমেদ শেখ ও মুনির আহমেদ শেখ যেভাবে নিজেদের জন্য নতুন পথ সৃষ্টি করেছেন তা নতুন ভারতের জন্য একটি নজির। ৩৯ বছর বয়সী বিলাল আহমেদ উচ্চ শিক্ষিত, অনেক ডিগ্রী আছে ওঁর। উচ্চ শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত অভিজ্ঞতাকে ব্যবহার করে আজ তিনি কৃষিক্ষেত্রে নিজের স্টার্ট আপ খুলেছেন। বিলালজী নিজের বাড়িতেই ভার্মি কম্পোস্টিং-এর একটি ইউনিট তৈরী করেছেন। এই ইউনিট থেকে তৈরী হওয়া জৈব সার দিয়ে তিনি শুধুমাত্র চাষে, লাভের মুখ দেখেছেন তা নয়, বহু মানুষের উপার্জনের পথও খুলে দিয়েছে। প্রতি বছর এই দুই ভাইয়ের ইউনিট থেকে কৃষকদের প্রায় তিন হাজার কুইন্টাল ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন হয়। আজ ওঁদের এই ভার্মি কম্পোস্টিং ইউনিটে ১৫জন কাজ করছেন। ওঁদের এই ইউনিটকে দেখতে প্রচুর লোক যাচ্ছেন যার একটা বড় অংশ হলো যুবক যুবতীরা, যারা কৃষিক্ষেত্রে কিছু করতে চাইছেন। পুলওয়ামার এই শেখ ভাইরা ‘জব সিকার’ হওয়ার থেকে ‘জব ক্রিয়েটর’ হওয়ার সংকল্প নিয়েছেন এবং আজ তাঁরা জম্মু কাশ্মীরেই শুধু নয়, গোটা দেশের মানুষকে নতুন পথ দেখাচ্ছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ২৫ সেপ্টেম্বর দেশের মহান সন্তান পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্ম জয়ন্তী। দীনদয়ালজী বিগত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে একজন ছিলেন। ওঁর অর্থনৈতিক ভাবনা, সমাজকে শক্তিশালী করতে ওঁর বিভিন্ন নীতি, ওঁর দেখানো অন্তদ্বয়ের মার্গ, আজ যতটা প্রাসঙ্গিক, ততটাই প্রেরণাদায়ক। তিন বছর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর ওঁর জন্ম জয়ন্তীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হেলথ অ্যাসুয়ারেন্স স্কিম - আয়ুষ্মান ভারত যোজনা শুরু করা হয়েছিল। আজ দেশের দুই থেকে সওয়া দুই কোটির বেশী গরিব মানুষ, আয়ুষ্মান যোজনার জন্য হাসপাতালে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা পেয়েছে। দরিদ্র মানুষের জন্য এত বড় মাপের যোজনা, দীনদয়ালজীর অন্তোদ্যয় দর্শনকেই সমর্পিত। আজকের তরুণরা যদি তার আদর্শ ও ম্যূল্যবোধকে নিজেদের জীবনে মেনে চলেন তবে তারাও লাভবান হবেন। একবার লখনউতে দীনদয়ালজী বলেছিলেন- "কত ভাল ভাল বিষয় আছে, গুণ আছে যা আমরা সমাজ থেকেই পাই। সামাজিক ঋণ শোধ করা আমাদের কর্তব্য, আমাদের বিচারধারা এরকম হওয়া উচিৎ ।"
দীনদয়ালজী আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছেন যে আমরা দেশ থেকে, সমাজ থেকে এত কিছু পাই, তা সে যে কোন জিনিস হোক। অতএব, আমরা দেশের প্রতি এই ঋণ কি করে শোধ করব সেই বিষয়ে ভাবা উচিৎ। এটা আজকের যুব সম্প্রদায়ের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
বন্ধুরা, দীনদয়ালজীর জীবন থেকে আমরা কখনও হার না মানার শিক্ষাও পাই। ভিন্ন রাজনৈতিক দৃষ্টি ও আদর্শ সত্ত্বেও ভারতের উন্নতির জন্য তিনি স্বদেশী মডেলের সংস্করণ থেকে কখনও সরে আসেন নি। আজ অনেক তরুণ তরুনী গড়পড়তা রাস্তায় না হেঁটে, স্বতন্ত্র ভাবে এগিয়ে যেতে চান, নিজেদের মত করে কাজ করতে চান। তারা দীনদয়ালজীর জীবন থেকে অনেক কিছু শিখতে পারেন। এইজন্য যুবদের আমার অনুরোধ তারা ওঁর সর্ম্পকে অবশ্যই জানুক।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা আজকে অনেক রকম বিষয়ে চর্চা করলাম। আমরা আলোচনাও করলাম, সামনেই সময়টা নানা উৎসবের। গোটা দেশ মর্যাদা পুরুষত্তোম শ্রীরামের অসত্যের উপর জয়ের উৎসব পালন করতে চলেছে। কিন্তু এই উৎসবের মধ্যে আমাদের অন্য এক লড়াইয়ের বিষয়েও মনে রাখতে হবে - সেটা হলো দেশের করোনার বিরুদ্ধে লড়াই। টিম ইন্ডিয়া এই লড়াইতে প্রতিদিন নতুন রেকর্ড তৈরি করছে। টিকাকরণে দেশ এমন অনেক রেকর্ড করেছে যার চর্চা সমগ্র বিশ্বে হচ্ছে। এই লড়াইতে ভারতবাসীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমাদের টিকা তো নিতেই হবে, কিন্তু এই বিষয়ও খেয়াল রাখতে হবে যে কেউ যাতে এই নিরাপত্তা চক্র থেকে বাদ না যায়। আপনার আশপাশে যে এখনো টিকা নেয়নি তাকেও টিকাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। টিকা নেওয়ার পরেও প্রয়োজনীয় বিধি পালন করতে হবে। আমি আশা করি এই লড়াইতেও আরও একবার টিম ইন্ডিয়া নিজের বিজয় পতাকা উত্তোলন করবে। আমরা পরের বার অন্য কোন বিষয়ে ‘মন কি বাত’ করব। আপনাদের সকলকে, প্রত্যেক দেশবাসীকে, উৎসবের অনেক অনেক শুভকামনা। ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আমরা সবাই জানি যে আজ মেজর ধ্যানচাঁদজির জন্মবার্ষিকী। এবং আমাদের দেশ তাঁর স্মরণে এই দিনটি জাতীয় ক্রীড়া দিবস হিসেবে উদযাপন করে। আমি ভাবছিলাম যে এই সময় হয়তো, মেজর ধ্যানচাঁদজির আত্মা যেখানেই থাকুক, তিনি নিশ্চয়ই খুব আনন্দ অনুভব করছেন। কারণ বিশ্বে ভারতীয় হকির জয়ডঙ্কা বেজে উঠেছিল ধ্যানচাঁদজির হকির সৌজন্যে। এবং চার দশক পরে, প্রায় ৪১ বছর পরে, ভারতের যুবসম্প্রদায়, ছেলে ও মেয়েরা হকিকে আরো একবার পুনরুজ্জীবিত করে তুলেছে। আর যতই পদক লাভ হোক, কিন্তু হকিতে পদক না পাওয়া পর্যন্ত ভারতের কোন নাগরিক জয়ের আনন্দ উপভোগ করতে পারে না, আর এইবার অলিম্পিকে হকিতে পদক লাভ হয়েছে, চার দশক পর। আপনি কল্পনা করতে পারেন মেজর ধ্যানচাঁদজির মন, তাঁর আত্মা যেখানেই থাকুক, সেখানে তিনি কত খুশি হবেন। ধ্যানচাঁদজির সারা জীবন খেলাধুলার জন্য সমর্পিত ছিল এবং সেই কারণেই আজ আমরা দেশের যুবদের মধ্যে, আমাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে খেলাধুলার প্রতি আকর্ষণ দেখতে পেয়েছি। বাবা-মাও খুশি হন যখন তাঁরা তাঁদের বাচ্চাদের খেলাধুলোয় এগিয়ে যেতে দেখেন। এই যে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে, আমি মনে করি এটাই মেজর ধ্যানচাঁদজির প্রতি মহান শ্রদ্ধাঞ্জলী।
বন্ধুরা , যখন খেলাধুলার কথা হয়, তখন আমাদের সামনে সমস্ত তরুণ প্রজন্মকে দেখতে পাওয়াটাই স্বাভাবিক। এবং যখন আমি তরুণ প্রজন্মকে লক্ষ্য করি, তখন তাদের মধ্যে অনেক বড় পরিবর্তন ধরা পড়ে। যুবদের মনের পরিবর্তন হয়েছে। আজকের তরুণ মন জীর্ণ পুরনো পন্থা থেকে সরে গিয়ে নতুন কিছু করতে চায়, ভিন্নভাবে কিছু করতে চায়। আজকের তরুণ মন চিরাচরিত পথে হাটতে চায় না। সে নতুন পথ তৈরি করতে চায়। অজানা জায়গায় পা রাখতে চায়। নতুন গন্তব্য, নতুন লক্ষ্য, রাস্তাও নতুন এবং ইচ্ছাও নতুন। আরে, তরুণ যদি একবার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, সেই কাজে উঠে পড়ে লাগে । দিনরাত পরিশ্রম করে। এই কিছুদিন আগেই আমরা দেখলাম ভারত নিজের মহাকাশ ক্ষেত্রকে উন্মুক্ত করেছে এবং সঙ্গে সঙ্গেই সেই সুযোগ তরুণ প্রজন্ম গ্রহণ করেছে ও তার লাভ তোলার জন্য কলেজের ছাত্রছাত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারী ক্ষেত্রে কর্মরত তরুণরা অনেক উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে এসেছে এবং আমি নিশ্চিত যে আগামী দিনে এই ধরনের বিপুল সংখ্যক কৃত্রিম উপগ্রহ থাকবে যেখানে আমাদের যুবরা, আমাদের ছাত্ররা, আমাদের কলেজ, আমাদের ইউনিভার্সিটি, পরীক্ষাগারে কাজ করে এমন সব ছাত্রছাত্রীরা কাজ করেছে ।
একইভাবে, আজ যে দিকেই তাকান, যে কোন পরিবারেই যান, পরিবার যতই ধনী হোক, শিক্ষিত হোক, কিন্তু পরিবারে তরুণদের সঙ্গে কথা বললে, তারা কি বলে -- সে তার পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে ভিন্ন মত পোষণ করে। বলে যে আমি স্টার্টআপ করব, নতুন উদ্যোগে চলে যাব। অর্থাৎ তার মন ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। আজ ছোট ছোট শহরে নতুন উদ্যোগের সংস্কৃতি প্রসারিত হচ্ছে এবং আমি তাদের মধ্যে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষণ দেখতে পেয়েছি। মাত্র কয়েকদিন আগে আমাদের দেশে খেলনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো । তৎক্ষণাৎ এই বিষয়টি আমাদের তরুণদের নজরে আসে, তারা সিদ্ধান্ত নেয় কিভাবে বিশ্বের দরবারে ভারতীয় খেলনা স্বীকৃতি লাভ করতে পারে। তাঁরা নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন এবং বিশ্বে খেলনার বিশাল বাজার রয়েছে, প্রায় ৬-৭ লক্ষ কোটি টাকার বাজার রয়েছে। সেখানে আজ ভারতের অংশ খুবই কম। কিন্তু খেলনা কিভাবে তৈরি করা যায়, খেলনায় কি বৈচিত্র থাকবে, খেলনায় কি প্রযুক্তি থাকবে, কিভাবে শিশুদের মনস্তত্ত্ব অনুযায়ী খেলনা বানানো যায়, আজ আমাদের দেশের যুবরা এইসব বিষয়ে মনোনিবেশ করছেন। তারা কিছু অবদান রাখতে চায়। বন্ধুরা, আরেকটি বিষয় আছে যা মনকে খুশিতে ভরিয়ে দেয় ও আমাদের বিশ্বাসকেও শক্তিশালী করে। সেটা কি, তা আপনি কখনো খেয়াল করেছেন? সাধারণত আমাদের স্বভাব হয়ে গিয়েছিল-- এটাই ঘটে, বন্ধু এমনটাই চলে, কিন্তু এখন দেখছি আমার দেশের যুব মন সেরার দিকেই নিজেকে কেন্দ্রীভূত করছে। সবার চেয়ে সেরা করতে চায়, সেরা ভাবে করতে চায়। এটিও জাতিকে এক মহান শক্তিতে পরিণত করবে ।
বন্ধুরা , এবারের অলিম্পিক বিশাল প্রভাব ফেলেছে। অলিম্পিক গেমস শেষ। এখন প্যারালিম্পিকস চলছে। ক্রীড়া জগতে আমাদের দেশ যা কিছু লাভ করেছে, তা বিশ্বের তুলনায় কম হতে পারে, কিন্তু আত্মবিশ্বাস জাগানোর জন্য অনেক কিছুই হয়েছে। আজকের যুব সমাজ শুধু খেলাধুলার দিকেই তাকিয়ে নেই বরং তারা এর সঙ্গে যুক্ত সম্ভাবনার দিকেও তাকিয়ে রয়েছে। তারা এর পুরো বাস্তুতন্ত্রকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, সামর্থকে বুঝছে এবং নিজেকে তার সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে যুক্ত করতে চাইছে। এখন তারা প্রচলিত জিনিসকে ছাড়িয়ে গিয়ে নতুনকে গ্রহণ করছে। আর আমার দেশবাসী, এখন এতটা গতি এসেছে, যে প্রতি পরিবারে খেলাধুলা সংক্রান্ত চর্চা শুরু হয়েছে। এবার আপনি বলুন, এখন এই গতিকে থামতে দেওয়া উচিত? বন্ধ করে দেওয়া উচিত? না। আপনিও নিশ্চয়ই আমার মত ভাবছেন ।
এখন দেশে খেলাধুলা, স্পোর্টস, স্পোর্টসম্যান স্পিরিট আর থামালে চলবে না। এই উদ্দীপনাকে পারিবারিক জীবনে, সামাজিক জীবনে, সমগ্র দেশবাসীর জীবনে স্থায়ী করতে হবে। শক্তি দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। ক্রমাগত নতুন শক্তি দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। ঘর হোক, বাহির হোক, গ্রাম হোক, শহর হোক, আমাদের খেলার মাঠ যেন ভরা থাকে। সকলেই খেলুক, সকলেই প্রস্ফুটিত হোক, আর আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে আমি লালকেল্লা থেকে বলেছিলাম, "সবকা প্রয়াস'' - হ্যাঁ সকলের প্রচেষ্টা। সকলের প্রচেষ্টার মাধ্যমেই ভারত খেলায় সেই উচ্চতায় পৌঁছতে পারে যা তার অধিকার। মেজর ধ্যানচাঁদ জির মত মানুষেরা যে পথ দেখিয়েছেন, তাতে এগিয়ে যাওয়া আমাদের কর্তব্য। অনেক বছর পরে দেশে এমন এক সময় এসেছে যে খেলার প্রতি পরিবার হোক, সমাজ হোক, রাজ্য হোক, রাষ্ট্র হোক, একই অনুভূতি নিয়ে সকলেই যুক্ত রয়েছেন।
আমার প্রিয় যুবা বন্ধুরা, আমাদের এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের স্পোর্টসে সাফল্য অর্জন করতে হবে। গ্রামে গ্রামে খেলার প্রতিযোগিতা অনবরত চলা উচিত। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে খেলা বিস্তৃতি লাভ করে, খেলার বিকাশ হয়, খেলোয়াড়াও এভাবেই উঠে আসেন। আসুন আমরা সকল দেশবাসী এই উদ্দীপনাকে যতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, যতটা আমরা যোগদান করতে পারি, ''সবকা প্রয়াস''- এই মন্ত্রের মাধ্যমে সফল করে দেখাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কাল জন্মাষ্টমী মহোৎসব । জন্মাষ্টমীর এই উৎসব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মোৎসব। আমরা ঈশ্বরের সকল রূপের সঙ্গে পরিচিত, চঞ্চল গোপাল থেকে শুরু করে বিশ্বরূপ ধারণ করা কৃষ্ণ পর্যন্ত। শাস্ত্রজ্ঞানী থেকে শুরু করে অস্ত্রধারী কৃষ্ণ পর্যন্ত। শিল্প হোক, সৌন্দর্য হোক, মাধুর্য হোক, সব স্থানেই কৃষ্ণ বিরাজমান। কিন্তু এই কথা আমি এই জন্য বলছি যে, জন্মাষ্টমীর কিছুদিন আগেই আমি এমন এক অত্যাশ্চর্য অনুভূতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছি যে আমার ইচ্ছে করছে এই কথাগুলো আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিই। আপনারা মনে করতে পারেন, এই মাসের কুড়ি তারিখে ভগবান সোমনাথ মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। সোমনাথ মন্দির থেকে তিন চার কিলোমিটার দূরে ভালকা তীর্থ স্থান, এই ভালকা তীর্থস্থানেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর জীবনের অন্তিম মুহূর্ত কাটিয়েছেন। একপ্রকার এই পৃথিবীতে ওঁর লীলার সমাপন হয়েছে এখানে। সোমনাথ ট্রাস্টের মাধ্যমে ওই সমস্ত অঞ্চলে উন্নয়নমূলক নানা কাজ চলছে। আমি ভালকা তীর্থ আর ওখানে হওয়া কাজের ব্যাপারে ভাবছিলাম, ঠিক তখনই আমার নজর পড়ে এক সুন্দর আর্ট বুকের উপর। এই বইটা আমার বাড়ির বাইরে কেউ আমার জন্য রেখে গিয়েছিল। এতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অনেক রূপের কথা, অনেক ছবি ছিল। সব মনমুগ্ধকর ছবি এবং খুব অর্থবহ ছবিও। আমি বইয়ের পাতা উল্টানো শুরু করলাম, তো আমার কৌতুহল বাড়লো। যখন আমি এই বইয়ের সব ছবি দেখলাম, ওর মধ্যে আমার জন্য লেখা এক বার্তা পড়লাম তখন আমার মনে হল ওঁর সঙ্গে দেখা করি। যিনি আমার বাড়ির বাইরে এই বই রেখে গেছেন, তাঁর সঙ্গে আমার দেখা করা উচিত। সেই কারণে আমার অফিস ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমার ওই আর্টবুক দেখে, শ্রীকৃষ্ণের নানা রূপ দেখে এতটাই কৌতূহল হয়, যে পরের দিনই তাকে দেখা করতে ডাকলাম। এই কৌতুহল এর জন্যই আমার দেখা হলো যদুরানী দাসীর সঙ্গে। উনি আমেরিকা নিবাসী, ওর জন্ম আমেরিকায়, বড় হয়েছেন আমেরিকায়। যদুরানী দাসী ইস্কনের সঙ্গে যুক্ত। হরেকৃষ্ণ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। আর তার এক বড় বৈশিষ্ট্য, উনি ভক্তি আর্টসে দক্ষ। আপনারা জানেন যে আর দুদিন পরে পয়লা সেপ্টেম্বর ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল প্রভুপাদ স্বামীর 125 তম জন্ম জয়ন্তী। যদুরানী দাসী এর জন্যেই ভারতবর্ষে এসেছিলেন। আমার সামনে বড় প্রশ্ন ছিল যে যাঁর জন্ম আমেরিকায় হয়েছে, যিনি ভারতীয় ভাবনার থেকে এত দূরে থেকেছেন, উনি কেমন করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এমন মনমুগ্ধকর ছবি আঁকতে পারেন। আমার তাঁর সঙ্গে দীর্ঘক্ষন কথা হয়েছিল, আমি আপনাদের তারই কিছু অংশ শোনাতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী : যদুরানীজি, হরে কৃষ্ণ! আমি ভক্তি আর্ট নিয়ে কিছু পড়াশোনা করেছি, কিন্তু আপনি আমাদের শ্রোতাদের এ বিষয়ে আরো কিছু বলুন। এই বিষয়ে আপনার আগ্রহ এবং আবেগ দারুন।
যদুরানীজি : ভক্তি আর্ট নিয়ে একটি নিবন্ধ রয়েছে যেটা ব্যাখ্যা করে যে এই শিল্প মন বা কল্পনা শক্তি থেকে উদ্ভূত হয় না বরং প্রাচীন বৈদিক শাস্ত্র ব্রহ্ম সংহিতা থেকে এর উৎপত্তি। 'ওয়েং ওঁকারায় পতিতং স্কিলতং সিকদং', বৃন্দাবনের গোঁসাই এর কথা, স্বয়ং ভগবান ব্রহ্মাও বলেছেন। "ঈশ্বর: পরমঃ, কৃষ্ণ ঃ, সচ্চিদানন্দ বিগ্রহঃ"। তিনি কিভাবে বাঁশি ধারণ করেন, কিভাবে তার এক অনুভূতি অন্য অনুভূতির সঙ্গে মিলে যায় তাই শ্রীমদ্ভগবত গীতার কথা '' বর্হাপিন্ড নটবরবপু কর্নায়ও, কর্ণিকারং'', তিনি একটি পদ্ম ফুল তাঁর কানে দেন, তার পদ্ম পায়ের ছাপ বৃন্দাবনের মাটিতে থাকে, গোরুর পালের মাধ্যমে তাঁর গৌরবের কথা ছড়িয়ে পরে, তাঁর বাঁশি সকল ভাগ্যবান মানুষের হৃদয় এবং মস্তিষ্ককে আকৃষ্ট করে।
কাজেই সবকিছুই প্রাচীন বৈদিক শাস্ত্র থেকে গৃহীত এবং এই শাস্ত্র গুলির শক্তি হলো অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা সম্পন্ন খাঁটি ভক্ত সাধকদের শক্তি। এই সাধনাকে তারা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন এবং তার জন্যই তা রূপান্তরে সক্ষম। এখানে আমার নিজস্ব শক্তি কিছুই নেই।
প্রধানমন্ত্রী : যদুরানী জি, আপনার জন্য আমার একটা অন্য ধরনের প্রশ্ন আছে। আপনি দীর্ঘদিন ধরে ভারতবর্ষের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। ১৯৬৬ থেকে একভাবে, এবং ১৯৭৬ থেকে প্রত্যক্ষভাবে। আপনি দয়া করে আমাকে বলবেন, ভারত বর্ষ আপনার কাছে কী অর্থ বহন করে?
যদুরানীজি: প্রধানমন্ত্রী জি আমার কাছে ভারতবর্ষই সব। কয়েকদিন আগে আমি মাননীয় রাষ্ট্রপতি জিকে বলছিলাম যে ভারত প্রযুক্তিগতভাবে এত উন্নতি করেছে এবং পাশ্চাত্যের অনুসরণে টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, আইফোন, বড় বড় বিল্ডিং ও অন্যান্য বহু সুযোগ-সুবিধা ও হচ্ছে, কিন্তু কি জানেন ওটা ভারতের আসল গৌরব নয় । ভারতকে যা গৌরবান্বিত করে তা হলো স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ অবতার রূপে এখানে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং অন্যান্য সকল অবতারেরা আবির্ভূত হয়েছিলেন। দেবাদিদেব মহাদেব, প্রভু রাম এখানে আবির্ভূত হয়েছিলেন । সব পবিত্র নদী গুলি এখানে অবস্থিত। বৈষ্ণব সংস্কৃতির সব পূণ্য স্থানগুলি এখানে রয়েছে। তাই ভারত বিশেষ করে বৃন্দাবন এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এটি সকল বৈকুণ্ঠ গ্রহগুলির উৎস । বৃন্দাবন এটি দ্বারিকার উৎস, সমগ্র জড়বস্তু সৃষ্টির উৎস। তাই আমি ভারতকে ভালবাসি।
প্রধানমন্ত্রী: ধন্যবাদ যদুরানী জি, হরেকৃষ্ণ।
বন্ধুরা বিশ্বের মানুষ যখন আজ ভারতীয় অধ্যাত্ম ও দর্শনের বিষয়ে এতকিছু চিন্তা করেন তখন আমাদেরও দায়িত্ব আমরা আমাদের এই মহান ঐতিহ্য কে এগিয়ে নিয়ে যাই। যা সেকেলে তাকে ত্যাগ করতেই হবে, কিন্তু যা কালজয়ী তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। আসুন, আমরা আমাদের পালা-পার্বণ গুলি উদযাপন করি তাদের পেছনের বৈজ্ঞানিক ভাবনা ও অর্থকে বুঝি। শুধু এটুকুই নয় প্রতিটি পার্বনেই কোন না কোন বার্তা রয়েছে, কোনো না কোনো সংস্কার রয়েছে। আমাদের সেটাও জানতে হবে, যাপন করতে হবে এবং অনাগত প্রজন্মদের জন্য উত্তরাধিকার রূপে এগিয়েও নিয়ে যেতে হবে। আমি আরো একবার সকল দেশবাসীকে জন্মাষ্টমীর অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই করোনাকালে স্বচ্ছতা বিষয়ে আমার যতটা বলা উচিত ছিল হয়তো তাতে কিছুটা খামতি রয়ে গিয়েছিলো। আমিও মনে করি স্বচ্ছতা অভিযানে আমাদের একটুও শিথিলতা দেখানো উচিত নয়। রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য সবার প্রচেষ্টা কিভাবে সবার উন্নতি সাধন করে, তার উদাহরণ আমাদের প্রেরনা যোগায় এবং কিছু করার জন্য এক নতুন উদ্যমে ভরে তোলে, নতুন বিশ্বাসে ভরপুর করে তোলে। আমাদের সংকল্পে প্রাণ সঞ্চার করে। আমরা এটা ভালভাবেই জানি যে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের প্রসঙ্গ যখনই আসে ইন্দোরের নাম আসবেই আসবে, কারণ ইন্দোর স্বচ্ছতা বিষয়ে নিজের একটা বিশেষ পরিচিতি তৈরি করেছে এবং ইন্দোরের নাগরিকরা এজন্য অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। আমাদের এই ইন্দোর অনেক বছর ধরেই স্বচ্ছ ভারত Ranking এ এক নম্বরে রয়েছে। এখন ইন্দোরের নাগরিকরা স্বচ্ছ ভারতের এই Ranking এ সন্তুষ্ট হয়ে বসে থাকতে রাজি নন। তারা এগিয়ে যেতে চান, নতুন কিছু করতে চান। তারা মনস্থির করে ফেলেছেন এবং ওয়াটার প্লাস সিটি তৈরি করার জন্য জান-প্রাণ দিয়ে কাজ করছেন। ওয়াটার প্লাস সিটি হল এমন শহর যেখানে ট্রিটমেন্ট ছাড়া কোন পয়ঃনিষ্কাসী জল কোন সার্বজনীন জলস্রোতে ফেলা হয় না। এখানকার নাগরিকরা নিজেরা এগিয়ে এসে নিজেদের নর্দমাগুলিকে সিউয়েজ লাইন এর সঙ্গে যুক্ত করেছেন। স্বচ্ছতা অভিযানও চালিয়েছেন আবার এর ফলে সরস্বতী ও কাহ্ন নদীতে পড়া নোংরা জল অনেক কমে গিয়েছে এবং পরিস্থিতির উন্নতি দেখা যাচ্ছে।
আজ যখন আমাদের দেশ আজাদী কা অমৃত মহোৎসব উদযাপন করছে তখন আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সংকল্পকে আমরা কখনোই দুর্বল হতে দেবো না। আমাদের দেশে যত বেশি শহর ওয়াটার প্লাস সিটি হবে ততই স্বচ্ছতাও বাড়বে, আমাদের নদীগুলিও পরিষ্কার হবে এবং জল সংরক্ষণের এক মানবিক দায়িত্ব পালনের কাজও হবে।
বন্ধুরা, আমার সামনে একটি দৃষ্টান্ত বিহারের মধুবনী থেকে এসেছে । মধুবনীতে ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও সেখানকার স্থানীয় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র একযোগে একটি ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এর লাভ কৃষকরা তো পাচ্ছেনই, এতে স্বচ্ছ ভারত অভিযান নতুন শক্তি পাচ্ছে । বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগের নাম হল "সুক্ষেত মডেল"। সুক্ষেত মডেলের উদ্দেশ্য হলো গ্রামে দূষণ কমানো। এর মাধ্যমে গ্রামের কৃষকদের থেকে গোবর এবং ক্ষেত ও ঘরবাড়ি থেকে পাওয়া অন্যান্য বর্জ্য একত্রিত করা হয়, এবং পরিবর্তে গ্রামবাসীদের রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের জন্য অর্থ প্রদান করা হয়। যে বর্জ্য গ্রাম থেকে একত্রিত হয় তা দিয়ে ।
ভারমি কম্পোস্ট বানানোর কাজও হচ্ছে। অর্থাৎ সুখেত মডেলটির ৪টে লাভ তো সহজেই চোখে পড়ছে। প্রথমত গ্রামগুলির দূষণ থেকে মুক্তি, দ্বিতীয়ত গ্রামগুলির আবর্জনার থেকে মুক্তি, তৃতীয়ত গ্রামের মানুষদের রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডারের জন্য অর্থ সংস্থান, এবং চতুর্থত গ্রামের কৃষকদের জন্য জৈবিক সারের ব্যবস্থা। আপনারা ভাবুন, এই ধরণের প্রচেষ্টা আমাদের গ্রামগুলির শক্তি কতটা বাড়িয়ে দিতে পারে? এটাই তো আত্মনির্ভরতার বিষয়-বস্তু। আমি দেশের প্রত্যেক পঞ্চায়েত কে বলব তাঁদের নিজেদের এলাকাগুলিতেও এরকম কিছু করার কথা তাঁরা যেন নিশ্চই ভাবেন। এবং বন্ধুরা, আমরা যখন একটা লক্ষ্য নিয়ে বেরিয়ে পড়ি তখন ফল পাওয়া নিশ্চিত হয়ে যায়।
এই যেমন আমাদের তামিল নাড়ুর শিবগঙ্গা জেলার কাঞ্জিরঙ্গাল পঞ্চায়েতের কথাই ধরুন। দেখুন এই ছোট্ট পঞ্চায়েতটি কি করেছে, এখানেও আপনারা ওয়েস্ট থেকে ওয়েলথ-এর আরেকটি মডেল দেখতে পাবেন। এখানকার গ্রাম পঞ্চায়েত স্থানীয় লোকেদের সঙ্গে মিলিত হয়ে আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করার একটি স্থানীয় প্রকল্প নিজেদের গ্রামে শুরু করেছে। পুরো গ্রামের আবর্জনা একত্রিত করা হয়, বিদ্যুৎ তৈরি হয় এবং বেঁচে যাওয়া অবশিষ্টাংশ কীটনাশক হিসেবে বিক্রিও করা হয়। গ্রামের এই পাওয়ার প্লান্ট প্রতিদিন দু টন আবর্জনা্র বাতিল করার ক্ষমতা রাখে।
এর থেকে তৈরি বিদ্যুৎ গ্রামের পথবাতি জ্বালাতে এবং অন্য প্রয়োজনে ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে পঞ্চায়েতের টাকা তো বাঁচছেই, উপরন্তু সেই পয়সা অন্য উন্নয়নের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এখন আপনারা আমায় বলুন, তামিল নাড়ুর শিবগঙ্গা জেলার একটা ছোট্ট পঞ্চায়েত আমাদের প্রত্যেক দেশবাসীকে কিছু করার প্রেরণা দিচ্ছে কি দিচ্ছে না? এঁরা চমৎকার কাজ করেছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাত এখন আর ভারতের সীমান্তের মধ্যে সীমিত নেই । পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মন কি বাত নিয়ে কথা হচ্ছে। এবং বিদেশের মাটিতে বসবাসকারী প্রচুর ভারতীয় সম্প্রদায়ের মানুষ আমাকে বহু নতুন তথ্য দিয়ে থাকেন। এবং মন কি বাতে বিদেশে যেসব আশ্চর্য কার্যকলাপ চলছে সেগুলো আপনাদের সঙ্গে মাঝে-মাঝে শেয়ার করতে আমারও ভাল লাগে। আজকেও আমি আপনাদের সঙ্গে এরকম কিছু মানুষের পরিচয় করাব, কিন্তু তার আগে আমি আপনাদের একটা অডিও শোনাতে চাই। মন দিয়ে শুনুন।
বন্ধুরা, ভাষাটা তো আপনারা নিশ্চয় চিনে ফেলেছেন। এখানে রেডিওতে সংস্কৃতে কথা হচ্ছে এবং যিনি বলছেন তিনি আরজে গঙ্গা। আরজে গঙ্গা গুজরাতের রেডিও জকিস গ্রুপের একজন সদস্যা। ওঁর আরও বেশ কিছু সঙ্গী রয়েছেন যেমন আরজে নীলম, আরজে গুরু ও আরজে হেতল। এঁরা সবাই মিলে গুজরাতের কেবাড়িয়াতে বর্তমান সময়ে সংস্কৃতের মান উন্নত করার চেষ্টা করছেন। এবং আপনারা জানেন আমি যে জায়গার কথা বলছি সেই কেবাড়িয়াতেই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ স্ট্যাচু, আমাদের দেশের গর্ব স্ট্যাচু অফ ইউনিটি, রয়েছে। আর এঁরা এমন সব রেডিও জকিস যারা এক সঙ্গে অনেকগুলি ভূমিকা পালন করেন। এঁরা গাইড হিসেবেও কাজ করেন, এবং তার সঙ্গে কমিউনিটি রেডিও ইনিশিয়েটিভ, রেডিও ইউনিটি ৯০ এফএম, তার সঞ্চালনাও করেন। এই আরজেরা তাঁদের শ্রোতাদের সঙ্গে সংস্কৃতে কথা বলেন, তাঁদের সংস্কৃতে খবরাখবর দেন।
বন্ধুরা, আমাদের এখানে সংস্কৃত সম্বন্ধে বলা হয়েছে-
অমৃতম সংস্কৃতম মিত্র, সরসম সরলম বচঃ
একতা মুলকম রাষ্ট্রে, জ্ঞান বিজ্ঞান পোষকম।
অর্থাৎ আমাদের সংস্কৃত ভাষা সরস-ও, সরল-ও। সংস্কৃত নিজের চিন্তাভাবনা, নিজের সাহিত্যের মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং রাষ্ট্রের একতা বিকশিত করে ও মজবুত করে।
সংস্কৃত সাহিত্যে মানবতা ও জ্ঞানের এমন এক দিব্যদর্শন রয়েছে যা যে কাউকে আকৃষ্ট করতে পারে। সম্প্রতি আমি এমন বেশ কিছু মানুষের ব্যপারে জানতে পেরেছি যারা বিদেশে সংস্কৃত পড়ানোর প্রেরণাদায়ক কাজ করছেন। এরকমি একজন ব্যক্তি শ্রী রাটগার কারটেনহোস্ট, যিনি আয়ারল্যান্ডের প্রখ্যাত সংস্কৃত পন্ডিত ও শিক্ষক। তিনি সেখানে বাচ্চাদের সংস্কৃত পড়ান। এদিকে আমাদের পূর্বে ভারত এবং থাইল্যান্ডের মাঝে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক মজবুত করার ক্ষেত্রেও সংস্কৃত ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ডঃ চিরায়ত প্রপন্ডবিদ্যা ও ডঃ কুসুম রক্ষামণী, এই দুজন থাইল্যান্ডে সংস্কৃত ভাষার প্রচার প্রসারে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। ওঁরা থাই এবং সংস্কৃত ভাষায় তুলনামূলক সাহিত্যও রচনা করেছেন। এরকম আরেকজন প্রফেসর আছেন, শ্রী বরিস জাখরিন, রাশিয়ার মস্কো স্টেট ইউনিভারসিটিতে ইনি সংস্কৃত পড়ান, তিনি বহু গবেষণপত্র এবং বই প্রকাশ করেছেন। তিনি বহু বই সংস্কৃত থেকে রুশ ভাষায় অনুবাদও করেছেন। ঠিক সেরকমই সিডনি সংস্কৃত স্কুল, অস্ট্রেলিয়ার সেই মুখ্য প্রতিষ্ঠানগুলির অন্যতম যেখানে শিক্ষার্থীদের সংস্কৃত পড়ান হয়। এই স্কুলটি বাচ্চাদের জন্য সংস্কৃত গ্রামার ক্যাম্প, সংস্কৃত নাটক ও সংস্কৃত দিবসের মত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বন্ধুরা সম্প্রতি যে সব প্রচেষ্টা হয়েছে তাতে সংস্কৃত নিয়ে একটি নতুন সচেতনতাবোধ তৈরি হয়েছে। এখন সময় এসেছে এই পথে আমাদের আরও অগ্রসর হওয়ার। আমাদের ঐতিহ্যকে লালন করা, তার সুরক্ষা করা, নতুন প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া আমাদের সবার কর্তব্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের তার ওপর অধিকারও রয়েছে। এখন সময় এসেছে এই সব কাজের জন্যও সবার প্রচেষ্টা আরও বাড়ুক।
বন্ধুরা যদি আপনি এই ধরনের প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত এমন কোন মানুষকে জানেন, এমন কোন খবর আপনাদের কাছে থাকে তাহলে দয়া করে #Celebrating Sanskrit -এর সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াতে ওনার সম্পর্কে যা জানেন তা অবশ্যই জানান। আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিনের মধ্যে বিশ্বকর্মা জয়ন্তী আসছে । ভগবান বিশ্বকর্মাকে আমাদের এখানে সৃজনশীলতার প্রতীক হিসেবে মানা হয়। যে ব্যাক্তি নিজের দক্ষতায় কোন জিনিসের নির্মাণ করেন, সৃষ্টি করেন, সেটা সেলাই-ফোঁড়াই হোক, সফটওয়্যার হোক কিংবা কৃত্রিম উপগ্রহ, এ সবই ভগবান বিশ্বকর্মার মহিমা। পৃথিবীতে যতই দক্ষতার পরিচয় আজ নতুনভাবে হোক না কেন কিন্তু আমাদের ঋষিরা হাজার বছর ধরে স্কিল আর স্কেল সম্পর্কে বলে দিয়েছেন। ওনারাও স্কিলকে, কৌশলকে আস্থার সঙ্গে জুড়ে আমাদের জীবন দর্শনের অঙ্গ করে দিয়েছেন। আমাদের কিছু বৈদিক সুক্তও ভগবান বিশ্বকর্মাকে সমর্পণ করা হয়েছে। সৃষ্টির যত বড় রচনাই হোক, যত নতুন আর বড় কাজ হয়েছে আমাদের শাস্ত্রে তার কৃতিত্ব ভগবান বিশ্বকর্মাকেই দেওয়া হয়েছে। এটা একদিক দিয়ে এই ধারণার প্রতীক যে সংসারে যা কিছু উন্নয়ন আর উদ্ভাবন হচ্ছে তা দক্ষতার জন্যই হচ্ছে। ভগবান বিশ্বকর্মা জয়ন্তী আর তার পুজোর পেছনে এটাই কারণ। আমাদের শাস্ত্রে কথিত আছে বিশ্বস্য কৃতে য়স্য কর্মব্যাপারঃ সঃ বিশ্বকর্মা। অর্থাৎ যিনি সৃষ্টি আর নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত সব কাজ করেন তিনিই বিশ্বকর্মা। আমাদের শাস্ত্র মতে নির্মাণ আর সৃজনের সঙ্গে যুক্ত যত দক্ষ ও প্রতিভাবান লোকজন আছেন তারা ভগবান বিশ্বকর্মার উত্তরাধিকারী। ওদের ছাড়া আমরা আমাদের জীবন কল্পনাও করতে পারি না। আপনারা ভেবে দেখুন আপনার ঘরে বিদ্যুতের কোনো সমস্যা হল আপনি কোন ইলেকট্রিশিয়ান পেলেন না, তাহলে কি হবে? আপনার সামনে কত বড় সমস্যা আসবে? আমাদের জীবন এমনই সব স্কিলড লোকদের জন্যই চলছে। আপনি আপনার চারিদিকে দেখুন লোহার কাজ করছেন যারা, মাটির বাসন তৈরি করছেন যারা, কাঠের জিনিস নির্মাণ করছেন যারা, বিদ্যুতের কাজ করছেন যারা, ঘরে রং করছেন যারা, সাফাই কর্মী যারা , মোবাইল ল্যাপটপ সারাচ্ছেন যারা, সবাইই তাদের দক্ষতার জন্যই পরিচিত। আধুনিক রুপে এরাও বিশ্বকর্মা। কিন্তু বন্ধুরা এর আরেকটা দিকও আছে যা মাঝে মাঝে আমাদের চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে। যে দেশে, যার সংস্কৃতিতে, পরম্পরায় চিন্তায় কৌশলে দক্ষ মানব সম্পদকে ভগবান বিশ্বকর্মার সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানে পরিস্থিতি কিভাবে বদলে গেছে। একসময় আমাদের পারিবারিক জীবন। সামাজিক জীবন, রাষ্ট্র জীবনের ওপর দক্ষতার খুব বড় প্রভাব ছিল। কিন্তু দাসত্বের লম্বা কালখণ্ড পার করে এই ধরনের সম্মান দেওয়ার ভাবনা ধীরে ধীরে ভুলে গিয়েছি আমরা। আমাদের চিন্তা ভাবনাও এমন হয়েছে যে এই ধরনের কাজকে হীন চোখে দেখা হয়। আর আজ দেখুন গোটা পৃথিবী সবচেয়ে বেশি প্রতিভা ও দক্ষতার ওপরেই চলছে ।
ভগবান বিশ্বকর্মার পূজা শুধুমাত্র উপাচারের মাধ্যমেই সম্পন্ন হবেনা। আমাদের প্রতিভা কে সম্মান দিতে হবে, প্রতিভাবান হয়ে ওঠার জন্য পরিশ্রম করতে হবে। প্রতিভাবান হওয়ার জন্য গর্ব বোধ করতে হবে। যখন আমরা কিছু না কিছু নতুন করবো, কিছু উদ্ভাবন করবো, এমন কিছু সৃষ্টি করবো যাতে সমাজের উপকার হয় , মানুষের জীবন সহজ হয়, তখনই আমাদের বিশ্বকর্মা পূজা সার্থক হবে। আজ সারা দুনিয়াতে দক্ষ ব্যক্তি দের জন্যে সুযোগের অভাব নেই। দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েই প্রগতির একাধিক পথ খুলে যাচ্ছে আজ। তাহলে আসুন, এই বার আমরা ভগবান বিশ্বকর্মার পূজায় ভক্তির পাশাপাশি তাঁর দেওয়া বার্তাকেও নিজেদের সংকল্প হিসেবে গ্রহণ করি। আমাদের পূজার ধরণ এমনই হওয়া উচিত যে, আমরা দক্ষতার গুরুত্ব বুঝব। এবং দক্ষব্যক্তি দের, তাঁরা যে কাজই করুন না কেন, তাঁদের সম্পূর্ণভাবে সম্মান করবো।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর চলছে। এই বছরে আমাদের প্রতিদিন নতুন সংকল্প নিতে হবে, নতুন কিছু ভাবতে হবে, আর নতুন কিছু করার উদ্যম আরো বাড়াতে হবে। যখন আমাদের ভারত স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্ণ করবে, তখন আমাদের এই উদ্যমই তার সাফল্যের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে সবার নজর কাড়বে। এই কারণেই আমরা কিছুতেই এই সুযোগ হাতছাড়া করতে পারিনা। আমাদের যত বেশি সম্ভব এতে যোগদান করতে হবে। কিন্তু এই প্রচেষ্টাগুলির মাঝেই আমাদের একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে - দাওয়াই ভি, কড়াই ভি। অর্থাৎ, টিকাকরণ ও, সতর্কতাও। দেশে ৬২ কোটিরও বেশি টিকাকারণ সম্পন্ন হয়েছে। তা সত্ত্বেও আমাদের সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে। আর হ্যাঁ, প্রত্যেকবারের মত, যখনই আপনি নতুন কিছু করবেন, নতুন ভাববেন, তখন অবশ্যই তাতে আমাকে সামিল করবেন। আমি আপনাদের চিঠি এবং মেসেজের অপেক্ষায় থাকবো। এই কামনার সঙ্গেই আপনাদের সবাইকে জানাই আগামী উৎসবের অনেক অভিনন্দন। অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার।
দু' দিন আগের কিছু অদ্ভূত ছবি, কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত এখনও ভাসছে আমার চোখের সামনে। তাই এবারের 'মন কি বাত' সেইসব মুহূর্ত দিয়েই শুরু করব। টোকিও অলিম্পিক্সে ভারতের খেলোয়াড়দের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা নিয়ে চলতে দেখে শুধু আমিই নয়, গোটা দেশ রোমাঞ্চিত হয়ে উঠেছে। পুরো দেশ যেন এক হয়ে নিজেদের এই যোদ্ধাদের বলছে,
বিজয়ী ভব, বিজয়ী ভব!
যখন এই সব খেলোয়াড়রা ভারত থেকে রওনা হয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে গল্প করার, তাঁদের সম্পর্কে জানার আর দেশকে জানানোর সুযোগ পেয়েছিলাম আমি। এই সব খেলোয়াড়রা জীবনের অনেক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে এখানে পৌঁছেছেন। আজ তাঁদের সঙ্গে রয়েছে আপনাদের সমর্থন ও ভালোবাসার শক্তি। এই জন্য, আসুন সবাই একসঙ্গে মিলে আমাদের সব খেলোয়াড়দের শুভেচ্ছা জানাই, তাঁদের মনোবল বাড়াই। সোশ্যাল মিডিয়াতে অলিম্পিক্সের খেলোয়াড়দের সমর্থনের জন্য আমাদের ভিক্টরি পাঞ্চ ক্যাম্পেন এখন শুরু হয়ে গিয়েছে। আপনিও নিজের টিমের সঙ্গে নিজের ভিক্টরি পাঞ্চ শেয়ার করুন, ইণ্ডিয়ার জন্য চীয়ার করুন।
বন্ধুরা, যিনি দেশের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করেন, সেই পতাকার সম্মানে, আবেগে পূর্ণ হওয়া তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক। দেশপ্রেমের এই আবেগ আমাদের একত্রিত করে রাখে। আগামীকাল অর্থাৎ ২৬শে জুলাই 'কারগিল বিজয় দিবস'ও বটে। কারগিলের যুদ্ধ, ভারতের সৈনিকদের শৌর্য আর সংযমের এমন প্রতীক যা সারা বিশ্ব দেখেছে। এই বার এই গৌরবশালী দিবসও 'অমৃত মহোৎসবের' মধ্যে পালিত হবে। এই জন্য এটা আরও বিশিষ্ট হয়ে উঠছে। আমি চাইব যে আপনারা কারগিলের রোমাঞ্চকর কাহিনী অবশ্যই পড়ুন, কারগিলের বীরদের আমরা সবাই প্রণাম জানাই।
বন্ধুরা, এই বার ১৫ই আগস্ট দেশ তার স্বাধীনতার পঁচাত্তরতম বর্ষে প্রবেশ করছে। এটা আমাদের পরম সৌভাগ্য, যে স্বাধীনতার জন্য যুগ-যুগ ধরে দেশ অপেক্ষা করেছে তার পঁচাত্তর বর্ষের সাক্ষী হচ্ছি আমরা। আপনাদের মনে থাকবে, স্বাধীনতার পঁচাত্তরতম বর্ষ উদযাপনের জন্য, ১২ই মার্চ বাপুর সবরমতী আশ্রম থেকে ‘অমৃত মহোৎসবের’ সূচনা হয়েছিল। এই দিনেই বাপুর ডাণ্ডি যাত্রাকেও পুনরুর্জীবিত করা হয়েছিল। সেই সময় জম্মু-কাশ্মীর থেকে পুদুচ্চেরি অবধি, গুজরাত থেকে উত্তর - পূর্বাঞ্চল অবধি, দেশ জুড়ে অমৃত মহোৎসবের সঙ্গে যুক্ত কর্মসূচী পালিত হচ্ছে। অনেক এমন ঘটনা, এমন স্বাধীনতা সেনানী, যাঁদের অবদান তো বিরাট কিন্তু সেসবের চর্চা করা যায় নি – আজ মানুষ তাঁদের ব্যাপারেও জানতে পারছে। যেমন, মোইরাং ডে-র কথাই ধরুন। মণিপুরের ছোট একটা গ্রাম মোইরাং, কোনও এক সময় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ বাহিনী অর্থাৎ আই-এন-এর এক অন্যতম প্রধান ঠিকানা ছিল। এখানে, স্বাধীনতা লাভের আগেই, আইএনএর কর্নেল শৌকত মালিকজী পতাকা উত্তোলন করেন। অমৃত মহোৎসব চলাকালীন সেই মোইরাং-এ গত ১৪ই এপ্রিল আরেকবার ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। এমন কত স্বাধীনতা সেনানী আর মহাপুরুষ আছেন, অমৃত মহোৎসবে দেশ যাঁদের স্মরণ করছে। সরকার আর সামাজিক নানা সংগঠনের তরফেও এর সঙ্গে যুক্ত নানাধরণের কর্মসূচী আয়োজিত হচ্ছে। এমনই এক আয়োজন এবার ১৫ই আগস্টে হতে চলেছে, এটা জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত একটা প্রয়াস। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে সেদিন যাতে প্রচুর সংখ্যক ভারতবাসী এক হয়ে জাতীয় সঙ্গীত গান। এর জন্য একটা ওয়েবসাইটও বানানো হয়েছে – রাষ্ট্রগান-ডট-ইন। এই ওয়েবসাইটের সাহায্যে আপনি জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে সেটা রেকর্ড করতে পারবেন, এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন। আমি আশা করি, আপনারা এই অভিনব উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হবেন। এইভাবে অনেক অভিযান, অনেক প্রয়াস, আপনারা আগামী দিনে দেখতে পাবেন। ‘অমৃত মহোৎসব’ কোনও সরকারের কর্মসূচী নয়, কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী নয়, এটা কোটি-কোটি ভারতবাসীর কর্মসূচী। প্রত্যেক স্বাধীন আর কৃতজ্ঞ ভারতীয়র নিজেদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি প্রণাম নিবেদনে আর এই মহোৎসবের মূল ভাবনার বিস্তার তো বিশাল – এই ভাবনা হল, নিজেদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পথে চলার, তাঁদের স্বপ্নের দেশ নির্মাণের। যেমনভাবে দেশের স্বাধীনতার জন্য উদ্বেলিত সকলে স্বাধীনতার লক্ষ্যে একজোট হয়েছিলেন তেমনভাবেই আমাদেরও দেশের বিকাশের লক্ষ্যে একজোট হতে হবে। আমাদের দেশের জন্য বাঁচতে হবে, দেশের জন্য কাজ করতে হবে, আর এতে ছোট-ছোট উদ্যোগও বড় ফলাফল এনে দেয়। দৈনন্দিন কাজ করার মধ্যেও আমরা রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারি, যেমন ভোকাল ফর লোকাল। আমাদের দেশের স্থানীয় উদ্যোগপতি, সব ধরণের শিল্পী, তন্তুবায়দের সমর্থন করা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি হওয়া উচিত। আগামী ৭ই আগস্ট ‘ন্যাশনাল হ্যাণ্ডলুম ডে’ এমন এক সুযোগ যখন আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই কাজ করতে পারি। ‘ন্যাশনাল হ্যাণ্ডলুম ডে’-র সঙ্গে অনেক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট যুক্ত হয়ে আছে। ১৯০৫ সালের এই দিনে স্বদেশী আন্দোলন শুরু হয়েছিল।
বন্ধুরা, আমাদের দেশের গ্রামীণ আর আদিবাসী এলাকায় তাঁতশিল্প রোজগারের একটা বড় পথ। এটা এমন ক্ষেত্র যার সঙ্গে লক্ষ-লক্ষ মহিলা, লক্ষ-লক্ষ বুননশিল্পী, লক্ষ-লক্ষ শিল্পী যুক্ত আছেন। আপনাদের ছোট-ছোট প্রয়াস তাঁতশিল্পীদের মধ্যে এক নতুন উৎসাহের সঞ্চার করবে। আপনারা নিজেরা কিছু-না-কিছু কিনুন, আর নিজেদের কেনার ব্যাপারে অন্যদেরও জানান, আর যখন আমরা স্বাধীনতার পঁচাত্তরতম বর্ষ পালন করছি, তখন তো এইটুকু করা আমাদের দায়িত্ব ভাই! আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে ২০১৪ সালের পরেই ‘মন কি বাতে’ আমরা প্রায়ই খাদি নিয়ে কথা বলি। এটা আপনাদের প্রচেষ্টারই ফল যে আজ দেশে খাদির বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। কেউ কি ভাবতে পারতেন যে খাদির কোনও দোকান থেকে এক দিনে এক কোটি টাকারও বেশি বিক্রি হবে! কিন্তু আপনারা এটাও করে দেখিয়েছেন। আপনারা যখনই কোথাও খাদির তৈরি কিছু কেনেন তখন এর লাভ আমাদের গরীব তন্তুবায় ভাইবোনেদেরই হয়। এইজন্য, খাদি কেনা এক দিক থেকে জনসেবা এবং দেশসেবাও বটে। আমার আপনাদের কাছে অনুরোধ যে আমার প্রিয় ভাইবোন, আপনারা, গ্রামীণ এলাকায় তৈরি হওয়া তাঁত শিল্পের সামগ্রী অবশ্যই কিনুন এবং হ্যাশট্যাগ মাই-হ্যাণ্ডলুম-মাই-প্রাইডের সঙ্গে শেয়ার করুন।
বন্ধুরা, কথা যখন স্বাধীনতা আন্দোলন আর খাদি নিয়ে হচ্ছে তখন পূজনীয় বাপুকে স্মরণ করা স্বাভাবিক – যেমন বাপুর নেতৃত্বে ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলন’ চলেছিল তেমনই আজ প্রত্যেক ভারতবাসীকে ‘ভারত জোড়ো আন্দোলনের’ নেতৃত্ব দিতে হবে। এটা আমাদের কর্তব্য যে আমরা নিজেদের কাজ এমনভাবে করি যে তা বিবিধতার মাঝে আমাদের ভারতকে জোড়ার কাজে সহায়ক হয়। তাহলে আসুন, আমরা এই ‘অমৃত মহোৎসবে’, এই অমৃত সঙ্কল্প নিই, যে দেশই আমাদের সবথেকে বড় আস্থা, সবথেকে প্রধান অগ্রাধিকার হয়ে থাকবে। ‘নেশন ফার্স্ট, অলওয়েজ ফার্স্ট’ -এর মন্ত্র নিয়েই আমাদের এগিয়ে চলতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ আমি 'মন কি বাত' শুনছে, এ ধরণের যুব বন্ধুদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই কিছুদিন আগেই, মাই-গভের তরফ থেকে 'মন কি বাত' এর শ্রোতাদের নিয়ে একটা সমীক্ষা করা হয়েছিল। এই সমীক্ষাতে দেখা গিয়েছে যে 'মন কি বাত' এর জন্য বার্তা এবং পরামর্শ কারা প্রধানত পাঠাচ্ছে। সমীক্ষার পরে জানা গিয়েছে যে বার্তা এবং পরামর্শ প্রেরকদের প্রায় ৭৫% মানুষ, ৩৫ বছর বা তারো কম বয়সী, অর্থাৎ ভারতের যুবশক্তির পরামর্শ 'মন কি বাত' কে দিশা দেখাচ্ছে। আমি মনে করি এ খুবই ভালো লক্ষণ। 'মন কি বাত' এমন একটি মাধ্যম যেখানে ইতিবাচক দিক রয়েছে - সংবেদনশীলতা রয়েছে। 'মন কি বাত' এ আমরা ইতিবাচক কথা বলি, এর বৈশিষ্টটা সঙ্ঘবদ্ধ। ইতিবাচক চিন্তা এবং পরামর্শের জন্য ভারতের যুবদের এই সক্রিয়তা আমায় আনন্দিত করেছে। আমি এই জন্য খুশি যে 'মন কি বাত' এর মাধ্যমে আমি যুবদের মন কে জানবার সুযোগ পেয়েছি।
বন্ধুরা, আপনাদের থেকে পাওয়া পরামর্শ 'মন কি বাত' এর আসল শক্তি। আপনাদের পরামর্শই 'মন কি বাত' এর মাধ্যমে ভারতের বৈচিত্র প্রকাশ করে, ভারতবাসীদের সেবা আর ত্যাগের সুগন্ধ চতুর্দিকে ছড়িয়ে দেয়, আমাদের পরিশ্রমী তরুণদের উদ্ভাবন সবার মনে প্রেরণা যোগায়। 'মন কি বাত' এ আপনারা নানান ভাবনা পাঠান। আমি সব বিষয়ে আলোচনা করে উঠতে পারি না, তবে তারমধ্যে বহু ভাবনাকে নির্দিষ্ট বিভাগে অবশ্যই পাঠিয়ে দি যাতে তার ওপর আরও কাজ করা যায়।
বন্ধুরা, আমি আপনাদের সাই প্রনীথজীর প্রচেষ্টা সম্পর্কে জানাতে চাই। সাই প্রনীথজী একজন অন্ধ্রপ্রদেশের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার । গতবছর তিনি লক্ষ্য করেন আবহাওয়ার খামখেয়ালীপনার জন্য ওখানকার কৃষকরা খুব ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। বহু বছর ধরে আবহবিদ্যা সম্পর্কে ওনার আগ্রহ ছিল। তাই তিনি তাঁর আগ্রহ আর নিজের মেধাকে কৃষকদের উন্নতির জন্য ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এখন তিনি বিভিন্ন তথ্য সুত্র থেকে আবহাওয়ার তথ্য কেনেন, তার বিশ্লেষণ করেন আর স্থানীয় ভাষায় বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্যে কৃষকদের কাছে জরুরী তথ্য পৌঁছে দেন। আবহাওয়ার সর্বশেষ তথ্য ছাড়াও, প্রনীথজী ভিন্ন ভিন্ন জলবায়ুর পরিস্থিতিতে মানুষের কি করনীয় সেই পরামর্শও দেন। বিশেষত, বন্যা থেকে রক্ষা পাওয়া কিংবা ঝড় বা বজ্রপাতের সময় কিভাবে সুরক্ষিত থাকা যায় সেই বিষয়েও সবাইকে জানান।
বন্ধুরা, একদিকে এই তরুণ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর প্রচেষ্টা মন ছুঁয়ে যায়, অন্যদিকে আমাদের এক বন্ধুর প্রযুক্তির ব্যবহার আপনাকে অবাক করে দেবে। এই বন্ধু উড়িষ্যার সম্বলপুর জেলার এক গ্রামের বাসিন্দা শ্রীমান ইসাক মুন্ডাজি। ইসাকজি একসময় দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন কিন্তু এখন তিনি একজন ইন্টারনেট সেন্সেশন হয়ে গিয়েছেন। নিজের ইউ টিউব চ্যানেল থেকে তিনি অনেক টাকা রোজগার করছেন। তিনি নিজের ভিডিওতে স্থানীয় রান্নার পদ, প্রচলিত রন্ধন পদ্ধতি, নিজের গ্রাম, নিজেদের জীবনশৈলী, পরিবার ও খাদ্যাভ্যাসকেই প্রধানত দেখান। একজন ইউ টিউবার হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের মার্চ মাসে যখন তিনি উড়িষ্যার বিখ্যাত স্থানীয় পদ পখাল সম্পর্কিত একটা ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। সেই থেকে তিনি কয়েকশো ভিডিও পোস্ট করেছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টা বহু কারণে অন্যদের থেকে ভিন্ন। বিশেষত তিনি শহুরে নাগরিকদের সেই জীবনযাত্রা দর্শনের সুযোগ করে দিয়েছেন যে সম্পর্কে তাদের খুব বেশি জানা ছিল না। ইসাক মুন্ডাজি সংস্কৃতি ও রান্নাবান্না দুটিকে সমানভাবে মিলিয়ে দিয়ে তা উদযাপন করছেন ও আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিতও করছেন।
বন্ধুরা, যেহেতু আমরা প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করছি, তাই আমি একটা আকর্ষণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। আপনারা হয়তো সম্প্রতি পড়েছেন, দেখেছেন আইআইটি ম্যাড্রাসের এক প্রাক্তনীর নতুন উদ্যোগ সংস্থা একটি ত্রিমাত্রিক মুদ্রণে বাড়ি তৈরি করেছে। ত্রিমাত্রিক মুদ্রণের সাহায্যে বাড়ির নির্মাণ কিভাবে সম্ভব হলো? আসলে এই নতুন উদ্যোগ বা স্টার্ট আপে সবার প্রথমে ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্রে একটি থ্রি ডায়মেশনাল নকশা ঢোকান হয় এবং এক বিশেষ ধরনের কংক্রিটের সাহায্যে একটির উপর একটি স্তরে একটা ত্রিমাত্রিক কাঠামো তৈরি হয়ে যায়। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, দেশে এরকম অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। একটা সময় ছিল যখন ছোট ছোট নির্মাণের কাজে বহু বছর লেগে যেত। কিন্তু আজ প্রযুক্তির দরুন ভারতে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। কিছুকাল আগে আমরা বিশ্বের এইরকম উদ্ভাবন সংস্থাদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য গ্লোবাল হাউজিং টেকনোলজি চ্যালেঞ্জ শুরু করেছিলাম। এটি দেশের মধ্যে একটি অনন্য প্রচেষ্টা, তাই আমরা এটিকে লাইট হাউস প্রোজেক্ট নাম দিয়েছি। বর্তমানে দেশের ছয়টি ভিন্ন জায়গায় লাইট হাউস প্রোজেক্টএর উপর দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। এই লাইট হাউস প্রোজেক্ট এর মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এতে নির্মাণ কাজে সময় কম লাগে। সেইসঙ্গে যে বাড়িগুলি তৈরি হয় তা অনেক বেশি মজবুত, সাশ্রয়কর ও আরামদায়ক। আমি সম্প্রতি ড্রোনের মাধ্যমে এই প্রকল্পগুলির বিশ্লেষণ করলাম এবং কাজের অগ্রগতিও সরাসরি দেখলাম।
ইন্দোরের প্রকল্পে এ ইট ও চুন বালির দেওয়ালের পরিবর্তে প্রি-ফেব্রিকেটেড স্যান্ডউইচ প্যানেল সিস্টেমের ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজকোটে লাইট হাইস ফরাসি প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হচ্ছে, যার মধ্যে সুড়ঙ্গের সাহায্যে মোনোলিথিক কংক্রিট নির্মাণ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি বাড়ি বিপর্যয় মোকাবিলা করতে অনেক বেশি সক্ষম হবে। চেন্নাইতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফিনল্যান্ডের প্রযুক্তি , প্রিকাস্ট কংক্রিট সিস্টেমের ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বাড়ি দ্রুত তৈরি হবে, আর খরচাও কম হবে। রাঁচিতে তে জার্মানির ত্রিমাত্রিক নির্মাণ পদ্ধতিতে বাড়ি নির্মাণ করা হবে। এতে প্রতিটি ঘর আলাদা ভাবে তৈরি হবে, এরপর পুরো কাঠামোকে এমন ভাবে জোড়া লাগানো হবে যেমনভাবে ব্লক টয়কে জোড়া যায়। আগরতলায় নিউজিল্যান্ডের এর প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্টিলের কাঠামোর সঙ্গে বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে, যা বড় ভূমিকম্প সহ্য করতে পারবে। আবার লখনৌতে কানাডার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে প্লাস্টার ও রঙের প্রয়োজন পড়বে না এবং দ্রুত বাড়ি নির্মাণ করার জন্য আগের থেকে তৈরি দেওয়াল ব্যবহার করা হবে।
বন্ধুরা, দেশে এখন এই চেষ্টা করা হচ্ছে যে এটা প্রজেক্ট ইনকিউবেশন সেন্টার-এর মত কাজ করবে। এতে আমাদের প্ল্যানার্স, আর্কিটেক্টস, ইঞ্জিনিয়ার এবং ছাত্রছাত্রীরা নতুন প্রযুক্তি সম্বন্ধে জানতে পারবে এবং তার পরীক্ষানিরীক্ষাও করতে পারবে। আমি এই কথাগুলো বিশেষ করে আমাদের যুবক যুবতী বন্ধুদের উদ্দেশে বলছি যাতে আমাদের যুবক যুবতী বন্ধুরা রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধনের জন্য প্রযুক্তির নতুন নতুন ক্ষেত্রে আরও উৎসাহ অনুভব করে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা ইংরেজিতে একটা কথা শুনেছেন 'টু লার্ন ইজ টু গ্রো' অর্থাৎ শেখার মাধ্যমে এগিয়ে চলা। যখন আমরা নতুন কিছু শিখি, তখন উন্নতির নতুন নতুন পথ নিজে থেকেই আমাদের জন্য উন্মুক্ত হয়। যখন কোথাও প্রথাগত থেকে আলাদা নতুন কিছু করার চেষ্টা হয়েছে মানবতার জন্য নতুন দরজা খুলে গেছে, এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। আর আপনারা দেখেছেন যখনই কোথাও নতুন কিছু হয়েছে তার ফলাফল প্রত্যেককে অভিভূত করে দিয়েছে। এখন যেমন, যদি আমি আপনাদের জিজ্ঞেস করি যে, এমন কোন রাজ্য আছে যা আপেলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত? নিশ্চিতভাবেই আপনাদের মনে সর্বপ্রথম হিমাচল প্রদেশ জম্মু-কাশ্মীর এবং উত্তরাখণ্ডের নাম আসবে। কিন্তু আমি যদি বলি এই লিস্টে আপনি মনিপুরকেও যোগ করুন, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই অবাক হবেন। কিছু নতুন করার উদ্যমে উদ্বুদ্ধ যুবকবন্ধুরা মণিপুরে এই কাজটি করে দেখিয়েছেন। আজকাল মনিপুরের উখরুল জেলায় আপেলের চাষ জোর কদমে শুরু হয়েছে। এখানকার কৃষকরা নিজেদের বাগানে আপেল উৎপাদন করছেন। আপেল উৎপাদন করার জন্য এঁরা রীতিমতো হিমাচলে গিয়ে ট্রেনিংও নিয়েছেন। এঁদের মধ্যেই একজন টি.এস. রিংফামি ইয়োং। তিনি পেশায় একজন এরোনোটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি তাঁর স্ত্রী শ্রীমতি টি এস এঞ্জেল-এর সঙ্গে মিলে আপেলের উৎপাদন করেছেন। এভাবেই আভুংশী সিমরে অগাস্টিনাও নিজের বাগানে আপেলের চাষ করেছেন। আভুংশী দিল্লিতে চাকরি করতেন। চাকরি ছেড়ে নিজের গ্রামে ফিরে আপেলের চাষ শুরু করেছেন। মণিপুরে আজ এমন অনেক আপেল উৎপাদক আছেন যাঁরা আলাদা এবং নতুন কিছু করে দেখিয়েছেন।
বন্ধুরা, আমাদের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে কুল খুবই জনপ্রিয়। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ সবসময়ই কুলের চাষ করে এসেছেন। কিন্তু কোভিড নাইনটিন মহামারীর পরে এর চাষ বিশেষভাবে বেড়ে যাচ্ছে। ত্রিপুরার ঊনকোটির ৩২ বছর বয়সী আমার এমনই এক যুবকবন্ধু বিক্রমজিত চাকমা। তিনি কুলের চাষ করে অনেক মুনাফা অর্জন করেছেন এবং এখন তিনি লোকজনকে কুলের চাষ করার জন্য অনুপ্রেরণাও দিচ্ছেন। রাজ্য সরকারও এমন লোকের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে। সরকারী উদ্যোগে এর জন্য অনেক বিশেষ নার্সারি তৈরি করা হয়েছে যাতে কুলের চাষের সঙ্গে যুক্ত লোকের দাবি পূরণ করা যেতে পারে। চাষে উদ্ভাবন হচ্ছে, তাই চাষের ফলে উৎপন্ন বাইপ্রডাক্টস এর মধ্যেও সৃজনশীলতাও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
বন্ধুরা, আমি উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরিতে হওয়া একটি প্রচেষ্টার ব্যাপারে জানতে পেরেছি। কোভিডের সময়ে লখিমপুর খেরিতে এক অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে মহিলাদের, কলার পরিত্যক্ত কান্ড থেকে ফাইবার তৈরীর ট্রেনিং দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। বর্জ্য থেকে ভালো কিছু করার পথ। কলার কান্ড কেটে মেশিনের সাহায্যে ব্যানানা ফাইবার তৈরি করা হয় যা পাটের তন্তুর মত। এই ফাইবার থেকে হ্যান্ডব্যাগ, মাদুর, কার্পেটের মতো কতই না জিনিস তৈরি করা হচ্ছে। এতে প্রথমত ফসলের আবর্জনার ব্যবহার শুরু হয়েছে, দ্বিতীয়তঃ গ্রামে বাস করা আমাদের বোন-মেয়েদের আয়ের এক সুযোগ তৈরি হয়েছে। কলা তন্তুর এই কাজের মাধ্যমে একজন স্থানীয় মহিলার প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা মত রোজগার হয়। লখিমপুর খেরিতে কয়েকশো একর জমিতে কলার চাষ হয়। কলার ফসল উৎপাদনের পরে সাধারণত কৃষকদের এর কান্ডকে ফেলার জন্য আলাদা করে খরচ করতে হতো। এখন ওদের এই পয়সাও বেঁচে যায়, মানে আমের আম খাওয়াও হলো আবার আঁটিরও দাম পাওয়া গেল, এই প্রবাদ এখানে একেবারে সঠিক ভাবে প্রযোজ্য।
বন্ধুরা, একদিকে ব্যানানা ফাইবার থেকে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে। অপরদিকে কলার আটা থেকে ধোসা এবং গোলাপজাম এর মত সুস্বাদু খাবার তৈরি হচ্ছে। কর্নাটকের উত্তর কন্নড় এবং দক্ষিণ কন্নড় জেলায় মহিলারা এই অবিনব কাজ করছেন। এর শুরুও এই করোনাকালেই হয়েছে। এই মহিলারা তো শুধু কলার আটা থেকে ধোসা, গোলাপজাম-এর মত জিনিস তৈরি করেছেন তা নয়, এইসব জিনিসের ছবিও সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করেছেন। অনেক লোক যখন কলার আটার কথা জানতে পেরেছেন, এর চাহিদা বেড়েছে, আর এই মহিলাদের আমদানিও বেড়েছে। লখিমপুর খেরির মত এখানেও এই উদ্ভাবনমূলক উদ্যোগে মহিলারাই নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বন্ধুরা, এমন উদাহরণই জীবনে নতুন কিছু করার অনুপ্রেরণা। আপনাদের আশেপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন। যখন আপনার পরিবার তাদের মনের কথা বলেন তখন আপনি এঁদেরও সঙ্গে আড্ডায় যোগ করুন। কখনো সময় বের করে বাচ্চাদের সঙ্গে এমন প্রচেষ্টা দেখতেও যান এবং অবসর পেলে নিজেও এমন কিছু করে দেখান। আর হ্যাঁ এই সব আপনারা আমার সঙ্গে নামোঅ্যাপ অথবা মাই গভ-এ ভাগ করে নিন , তাহলে আমার আরো ভালো লাগবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের সংস্কৃত গ্রন্থে একটি শ্লোক আছে
"আত্মার্থম, জীব লোকে অস্মিন, কো ন জীবতি মানবঃ
পরম পরোপকার্থম, য়ো জীবতি স জীবতি"
অর্থাৎ এই পৃথিবীতে নিজের জন্য তো সকলেই বাঁচে। কিন্তু সেই ব্যক্তিই প্রকৃতভাবে বাঁচে, যে পরোপকারের জন্য বাঁচে। ভারত মাতার ছেলেমেয়েদের পরোপকারের প্রচেষ্টার কথা- এটাই তো 'মন কি বাত।' আজও আরো এমন কিছু বন্ধুদের ব্যাপারে আমরা কথা বলি। চন্ডিগড় শহরের এক বন্ধু। চন্ডীগড়ে আমিও কয়েক বছর থেকে এসেছি। এটি খুব সুন্দর এবং আনন্দময় শহর। এখানে বাস করা মানুষেরা উদার মনের এবং হ্যাঁ, যদি আপনি খাওয়ার ব্যাপারে শৌখিন হন তাহলে এখানে আপনার আরো ভালো লাগবে।
এই চণ্ডীগড়ের সেক্টর -২৯ এ সঞ্জয় রাণাজি একটি ফুড স্টল চালান, এবং সাইকেলে করে ছোলা বাটোরা বিক্রি করেন। তার মেয়ে ঋদ্ধিমা ও ভাইঝি রিয়া একদিন তাকে একটি আইডিয়া দেয়। তারা দুজনে ওঁকে বলেন, যারা কোভিড টিকা নিয়েছে তাদের বিনামূল্যে ছোলা বাটোরা খাওয়াতে। তিনিও সে কথায় খুশি মনে রাজি হয়ে যান, এবং শীঘ্রই তিনি সেই ভালো কাজ করা শুরুও করেন। সঞ্জয় রাণাজির সেই ছোলা বাটোরা বিনা পয়সায় খাওয়ার জন্য আপনাকে দেখাতে হবে যে সেই দিনই আপনি টিকা নিয়েছেন। টিকা নেওয়ার মেসেজ দেখানো মাত্রই তিনি আপনাকে সুস্বাদু ছোলা বাটোরা দিয়ে দেবেন। বলা হয় সমাজের মঙ্গলের জন্য টাকা-পয়সার থেকেও বেশি প্রয়োজন সেবার মানসিকতা ও কর্তব্যবোধ। সেই কথাটাকেই আমাদের সঞ্জয় ভাই সত্য প্রমাণ করে চলেছেন।
বন্ধুরা, আজ ঠিক এমনই আরেকটা কাজের বিষয়ে আপনাদের সঙ্গে আমি আলোচনা করতে চাই। এই ঘটনাটা হচ্ছে তামিলনাড়ুর নীলগিরির। সেখানে রাধিকা শাস্ত্রী জি এম্বুরেক্স প্রকল্প শুরু করেছেন। এই প্রকল্পর উদ্দেশ্য পাহাড়ি এলাকায় অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য সহজে পরিবহনের ব্যবস্থা করা। রাধিকা কুন্নুরে একটি ক্যাফে চালান। তিনি তার কাফের সঙ্গী সাথীদের কাছ থেকে এম্বুরেক্সর জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন। নীলগিরি পাহাড়ে বর্তমানে ছটি এম্বুরেক্স পরিষেবা চালু রয়েছে, এবং যে কোন জরুরী পরিস্থিতিতে দূরদূরান্তের অঞ্চলেও তা অসুস্থদের কাজে আসছে। এম্বুরেক্স এ স্ট্রেচার, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ফাস্ট এইড বক্সের এর মত অনেক কিছুরই সুবিধা রয়েছে। বন্ধুরা, আমরা নিজের কাজ, ব্যবসা বা চাকরি করেও যে মানুষের সেবা করতে পারি সঞ্জয়জি বা রাধিকাজি তারই উদাহরণ।
বন্ধুরা কিছুদিন আগে ভীষণ আকর্ষণীয় এবং খুবই আবেগময় একটা ঘটনা ঘটেছে যার ফলে ভারত এবং জর্জিয়ার সম্পর্ক নতুন করে আরো মজবুত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে, ভারত সেন্ট কুইন কেটেভানের পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন জর্জিয়ার সরকার ও তাদের জনতার হাতে তুলে দিয়েছে, সে জন্য আমাদের বিদেশমন্ত্রী স্বয়ং সেখানে গিয়েছিলেন। খুবই আবেগঘন অনুষ্ঠানে জর্জিয়ার রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, তাঁদের ধর্ম গুরু এবং বহু সংখ্যক জর্জিয়ার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।এই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রশংসায় যা কিছু বলা হয়েছে তা স্মরণ করে রাখার মত। এই অনুষ্ঠানটি দুটি দেশের পাশাপাশি, গোয়া এবং জর্জিয়ার মধ্যে যে সম্পর্ক তাকেও আরো প্রগাঢ় করেছে। তার কারণ ২০০৫ সালে সেন্ট কুইন কাটেভানের পবিত্র অবশেষ গোয়ার সেন্ট অগাস্টিন চার্চেই পাওয়া গিয়েছিল।
বন্ধুরা, আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে এ সমস্ত কি ?এগুলো কবে আর কীভাবেই বা হলো? প্রকৃতপক্ষে এটি আজ থেকে চার-পাঁচশ বছর আগের ঘটনা। কুইন কেটেভান ছিলেন জর্জিয়ার রাজপরিবারের কন্যা। ১০ বছর কারাবাসের পর ১৬২৪ সালে তিনি শহীদ হয়েছিলেন। এক প্রাচীন পর্তুগিজ দলিল অনুযায়ী জানা যায় সেন্ট কুইন কেটেভান এর অস্থি ওল্ড গোয়ার সেন্ট অগাস্টিন কনভেন্ট রাখা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে মনে করা হতো যে গোয়ায় সমাহিত তার দেহাবশেষ ১৯৩০ সালের ভূমিকম্পে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
ভারত সরকার ও জর্জিয়ার ঐতিহাসিক, গবেষক, পূরাতত্ত্ববিদ এবং জর্জিয়ার চার্চের কয়েক দশকের নিরলস প্রচেষ্টার পর ২০০৫ সালে সেই পবিত্র অবশেষগুলির অনুসন্ধানে সাফল্য মেলে। এটি জর্জিয়াবাসীর জন্য অত্যন্ত আবেগপ্রবণ একটি বিষয়। সেজন্য তাদের ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং আধ্যাত্বিক অনুভূতির কথা মাথায় রেখে ভারত সরকার এই অবশেষের একটা অংশ জর্জিয়ার মানুষকে উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ভারত ও জর্জিয়ার সম্মিলিত ইতিহাসের এই অনন্য নির্দশনকে সংরক্ষণের জন্য আমি গোয়ার জনগণকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। গোয়া মহান আধ্যাত্বিক ঐতিহ্যবাহী একটি স্থান। সেন্ট অগাস্টিন গির্জা, ইউনেস্কো'র ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট চার্চেস অ্যান্ড কনভেন্ট অফ গোয়ার একটি অংশ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, জর্জিয়া থেকে এবার আমি আপনাদের সরাসরি সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাচ্ছি, যেখানে এ মাসের শুরুতে আরো একটি গৌরবময় ঘটনা ঘটেছে। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী, আমার বন্ধু লি সেন লুঙ সম্প্রতি পুনর্নির্মিত সিলাট রোড গুরুদুয়ারার উদ্বোধন করেন। তিনি পরম্পরাগত শিখ পাগড়িও পড়ে ছিলেন। এই গুরুদুয়ারাটি প্রায় ১০০ বছর আগে তৈরি হয়েছিল এবং এটি ভাই মহারাজ সিংহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি স্মারক। ভাই মহারাজ সিংহ ভারতের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। ঠিক এই মুহূর্তে যখন আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করতে চলেছি তখন এটি অনেক বেশি অনুপ্রেরণার বিষয় হয়ে ওঠে। এরকমই কিছু ঘটনা এবং প্রচেষ্টা দুটি দেশের মধ্যে জনসাধারণের মধ্যে যোগাযোগের মত বিষয়কে আরো সুদৃঢ় করে। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে থাকার এবং পরস্পরের সংস্কৃতিকে জানার এবং বোঝার গুরুত্ব কতটাতা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমরা অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। আরেকটি বিষয় যেটা আমার হৃদয়গ্রাহী। সেটা হলো জল সংরক্ষণ। আমার শৈশব যেখানে কেটেছে, সেখানে জলের অভাব সবসময় থাকতো। আমরা বৃষ্টির জন্য তাকিয়ে থাকতাম, তাই জলের প্রত্যেক ফোঁটা বাঁচানো আমাদের সংস্কারের অংশ ছিল। বর্তমানের ‘সাধারণের সহযোগিতায় জল সংরক্ষণ’ এই মন্ত্র ওখানের চালচিত্র বদলে দিয়েছে। জলের এক এক ফোঁটা বাঁচানো, জলের যে কোনো রকমের অপচয়কে বন্ধ করা আমাদের জীবন শৈলীর এক অন্যতম অংশ হওয়া দরকার। আমাদের পরিবারের মধ্যেও এই রকম পরম্পরা শুরু হওয়া দরকার, যা নিয়ে পরিবারের প্রত্যেক সদস্য গর্ব অনুভব করবে।
বন্ধুরা, প্রকৃতি ও পরিবেশের রক্ষা ভারতের সাংস্কৃতিক জীবনে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেইসঙ্গে বৃষ্টি-বাদল আমাদের বিচার, আমাদের দর্শন আর আমাদের সভ্যতাকে আকার দিয়ে আসছে। ‘ঋতুসংহার’ এবং ‘মেঘদূতে’ মহাকবি কালিদাস বর্ষা নিয়ে খুব সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন।সাহিত্যপ্রেমীদের মধ্যে এইসব কবিতা আজও খুব জনপ্রিয়। ঋকবেদের ‘পর্জন্য সুক্তম’ -এও বর্ষাকালের সৌন্দর্য খুব সুন্দর করে বর্ণিত আছে। একি ভাবে, শ্রীমৎ ভাগবতেও কাব্যের মাধ্যমে পৃথিবী, সূর্য এবং বর্ষার মধ্যে সম্পর্ককে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা আছে।
অষ্টৌ মাসান নিপীতং যদ, ভুম্যাঃ চ, ঔদ-ময়ম বসু ।
স্বগোভিঃ মোক্তুম আরেভে, পর্জন্যঃ কাল আগতে।।
অর্থাৎ, সূর্য আট মাস পর্যন্ত জলের রূপে পৃথিবীর সম্পদকে শুষে নিচ্ছিল, এখন বর্ষাকালে সূর্য এই সঞ্চিত সম্পদকে পৃথিবীকে ফিরিয়ে দেয়। ঠিকই, বর্ষাকাল শুধু খুব সুন্দর আর মনোরম হয় না, এই ঋতু পুষ্টি দেয়, প্রাণ সঞ্চারও করে। বর্ষার যে জল আমরা পাচ্ছি সেটা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য, এটা আমাদের কখনো ভুললে চলবে না।
আজ আমার মনে হল যে এই মজার দৃষ্টান্তের মাধ্যমে আজকের পর্ব শেষ করি। আপনাদের সবাইকে আসন্ন উৎসবের অনেক অনেক শুভকামনা। পার্বণ-উৎসবের সময় এটা ঠিক মনে রাখবেন যে করোনা এখনো আমাদের মধ্য থেকে বিদায় নেয় নি। করোনা বিধি আপনাদের ভুললে চলবেন না। আপনি সুস্থ ও আনন্দে থাকুন । অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার! প্রায়শই ‘মন কি বাত’ এ আপনাদের প্রচুর প্রশ্ন থাকে। এই বার আমি ভাবলাম যে ভিন্ন কিছু করা যাক, আমি আপনাদের প্রশ্ন করব। অতএব মনযোগ দিয়ে শুনুন আমার প্রশ্ন।
…অলিম্পিকে ব্যক্তিগত স্বর্ণপদক জয়ী প্রথম ভারতীয় কে ছিলেন?
…অলিম্পিকের কোন খেলায় এখনও পর্যন্ত ভারত সবথেকে বেশি পদক জিতেছে?
…অলিম্পিকে কোন খেলোয়াড় সবথেকে বেশি পদক জিতেছেন?
বন্ধু, আপনি আমাকে উত্তর দিন বা না দিন, কিন্তু মাইগভে অলিম্পিকের উপর যে ক্যুইজ আছে সেখানে প্রশ্নের উত্তর যদি দেন তাহলে অনেক পুরস্কার পাবেন। মাইগভে ‘রোড টু টোকিও ক্যুইজে’ এমন অনেক প্রশ্ন আছে। আপনারা ‘রোড টু টোকিও ক্যুইজে’ অংশ নিন। ভারত আগে কেমন ফল করেছে? টোকিও অলিম্পিক্সের জন্য এখন আমাদের কেমন প্রস্তুতি রয়েছে? এইসব নিজে জানুন আর অন্যদেরও জানান। আমি আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ জানাতে চাই যে আপনারা এই ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় অবশ্যই অংশগ্রহণ করুন।
বন্ধু, যখন টোকিও অলিম্পিক্সের কথা হচ্ছে তখন মিলখা সিংয়ের মত কিংবদন্তী অ্যাথলীটকে কে ভুলে যেতে পারে! কিছু দিন আগেই করোনা তাঁকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। যখন তিনি হাসপাতালে ছিলেন তখন ওঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল আমার। কথা বলার সময় আমি ওঁর কাছে নিজের আগ্রহ প্রকাশ করলাম। আমি বলেছিলাম যে আপনি তো ১৯৬৪ সালে টোকিও অলিম্পিক্সে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তাই এই বার, যখন আমাদের খেলোয়াড়রা, অলিম্পিক্সের জন্য টোকিও যাচ্ছে, তখন আমাদের অ্যাথলীটদের মনোবল বাড়াতে হবে আপনাকে, নিজের বার্তা দিয়ে তাঁদের অনুপ্রাণিত করতে হবে। উনি খেলাধুলোর প্রতি এতটাই নিবেদিত এবং আবেগপ্রবণ যে অসুখের মধ্যেও উনি তৎক্ষণাৎ রাজিও হয়ে গেলেন। দুর্ভাগ্য যে নিয়তি অন্য কিছু স্থির করে রেখেছিল। আমার এখনও মনে আছে, ২০১৪ সালে তিনি সুরাতে এসেছিলেন। আমরা এক ‘নাইট ম্যারাথনে’র উদ্বোধন করেছিলাম। সেইসময় ওঁর সঙ্গে যে আলাপ-আলোচনা হয়েছিল, খেলাধুলোর ব্যাপারে যে কথা হয়েছিল তাতে আমিও অনেক প্রেরণা পেয়েছিলাম। আমরা সবাই জানি যে মিলখা সিংয়ের গোটা পরিবার খেলাধুলোর প্রতি উৎসর্গীকৃত, ভারতের গৌরব বাড়িয়েছেন।
বন্ধু, যখন মেধা, উৎসর্গ, দৃঢ়প্রতিজ্ঞা আর খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতা একসঙ্গে মেশে তখন কেউ চ্যাম্পিয়নে পরিণত হয়। আমাদের দেশে তো অধিকাংশ খেলোয়াড় ছোট-ছোট শহর, নগর, গ্রাম থেকে উঠে আসেন। আমাদের টোকিওগামী অলিম্পিক দলেও এমন অনেক খেলোয়াড় রয়েছেন, যাঁদের জীবন খুবই অনুপ্রাণিত করে। আমাদের প্রবীণ যাদবজী সম্পর্কে আপনারা শুনলে আপনাদেরও মনে হবে যে কত কঠিন সঙ্ঘর্ষের মধ্যে দিয়ে প্রবীণজী এখানে পৌঁছেছেন। প্রবীণ যাদবজী মহারাষ্ট্রের সতারা জেলার এক গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ধনুর্বিদ্যার অসাধারণ খেলোয়াড়। ওঁর মা-বাবা মজদুরি করে সংসার চালায়, আর এখন তাঁদের পুত্র নিজের প্রথম অলিম্পিক্সে অংশ নিতে টোকিও যাচ্ছেন। এটা শুধু ওঁর মা-বাবার জন্যই নয়, আমাদের সবার জন্য কত গৌরবের কথা। এমনই আর একজন খেলোয়াড় আছেন, আমাদের নেহা গোয়েলজী। নেহা টোকিওগামী মহিলা হকি দলের সদস্য। ওঁর মা আর বোন সাইকেলের কারখানায় কাজ করে সংসার চালানোর খরচা জোগাড় করেন। নেহার মতই দীপিকা কুমারীজীর জীবনের পথচলাও চড়াই-উৎরাইয়ে পূর্ণ। দীপিকার বাবা অটো রিকশা চালান আর ওঁর মা নার্স। আর এখন দেখুন, দীপিকা এবার টোকিও অলিম্পিক্সে ভারতের পক্ষ থেকে একমাত্র মহিলা তীরন্দাজ। এক সময় বিশ্বের প্রথম স্থানাধিকারী তীরন্দাজ দীপিকার সঙ্গে আমাদের সবার শুভকামনা রয়েছে।
বন্ধু, জীবনে আমরা যেখানেই পৌঁছই, যে উচ্চতাতেই উঠি না কেন, মাটির সঙ্গে এই বন্ধন, সবসময়, আমাদের নিজেদের শেকড়ের সঙ্গে বেঁধে রাখে। সঙ্ঘর্ষময় দিনগুলোর পরে পাওয়া সফলতার আনন্দ বেশ অন্যরকম হয়। টোকিওগামী খেলোয়াড়রা শৈশবে রসদ আর উপকরণের সব রকম অভাবের সম্মুখীন হয়েছে কিন্তু তাঁরা সাহস করে টিঁকে থেকেছেন, লেগে থেকেছেন। উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরের প্রিয়াঙ্কা গোস্বামীর জীবনও আমাদের অনেক কিছু শেখায়। প্রিয়াঙ্কার বাবা বাস কন্ডাক্টর। ছোটবেলায় প্রিয়াঙ্কার সেই ব্যাগটা খুব পছন্দ ছিল যা মেডেল পাওয়া খেলোয়াড়দের দেওয়া হয়। এই আকর্ষণেই প্রথম বার তিনি রেস-ওয়াকিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এখন সে এই ক্ষেত্রের বড় চ্যাম্পিয়ন। জ্যাভেলিন থ্রো-তে অংশ নেওয়া শিবপাল সিং জী বেনারসের বাসিন্দা। শিবপালজীর তো গোটা পরিবারই এই খেলার সঙ্গে যুক্ত। ওঁর বাবা, কাকা আর ভাই, সবাই বর্শা ছোঁড়ায় দক্ষ। পরিবারের এই পরম্পরাই টোকিও অলিম্পিক্সে ওঁর জন্য কাজে আসবে। টোকিও অলিম্পিকের জন্য যাচ্ছেন যে চিরাগ শেট্টি আর তাঁর সঙ্গী সাত্ত্বিক সাইরাজ, তাঁদের উদ্যমও অনুপ্রাণিত করার মত। সম্প্রতি চিরাগের দাদু করোনাতে মারা যান। সাত্ত্বিক নিজেও গত বছর করোনা পজিটিভ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এই সব সমস্যার পরেও এই দু’জন পুরুষদের ডাবলস শাট্ল প্রতিযোগিতায় নিজেদের সেরাটা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতিতে লেগে রয়েছেন। আর একজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে আমি আপনাদের পরিচয় করাতে চাইব, ইনি হলেন হরিয়ানার ভিওয়ানীর মণীশ কৌশিক জী। মণীশজী চাষ-আবাদ করা পরিবার থেকে এসেছেন। ছোটবেলায় চাষের ক্ষেতে কাজ করতে করতে মণীশজীকে বক্সিংয়ের শখ পেয়ে বসে। আজ এই শখ তাঁকে টোকিও নিয়ে যাচ্ছে। আর একজন খেলোয়াড় রয়েছেন, সি এ ভবানী দেবী জী। নাম ভবানী আর তলোয়ার চালানোতে সুদক্ষ। চেন্নাইয়ের বাসিন্দা ভবানী প্রথম ভারতীয় ফেন্সার যিনি অলিম্পিক্সসের জন্য কোয়ালিফাই করেছেন। আমি কোথাও একটা পড়ছিলাম যে যাতে ভবানীজীর ট্রেনিং বন্ধ না হয় তার জন্য তাঁর মা নিজের গয়নাও বন্ধক রেখেছিলেন।
বন্ধু, এমন তো অসংখ্য নাম রয়েছে কিন্তু মন কি বাতে আমি আজ অল্প কিছু নামেরই উল্লেখ করতে পারলাম। টোকিওগামী সব খেলোয়াড়েরই নিজের সংগ্রামের কাহিনী রয়েছে, বহু বছরের পরিশ্রম রয়েছে। তাঁরা শুধু নিজের জন্যই যাচ্ছেন না বরং দেশের জন্য যাচ্ছেন। এই খেলোয়াড়দের ভারতের গৌরবও বাড়াতে হবে আর মানুষের মনও জয় করতে হবে। আর এই জন্য, আমার দেশবাসী, আমি আপনাদেরও পরামর্শ দিতে চাই, সচেতন বা অচেতনভাবেও এই খেলোয়াড়দের উপর আমাদের চাপ সৃষ্টি করা উচিত নয়, বরং খোলা মনে এঁদের সঙ্গ দিতে হবে, প্রত্যেক খেলোয়াড়ের উৎসাহ বাড়াতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনারা হ্যাশট্যাগ-চিয়ার-ফর-ইণ্ডিয়া সহ আমাদের এই খেলোয়াড়োদের শুভকামনা জানাতে পারেন। আপনারা আর কিছু উদ্ভাবনী করতে চাইলে সেটাও অবশ্যই করুন। যদি আপনাদের এমন কোনও আইডিয়া আসে যেটা আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য গোটা দেশের একসঙ্গে মিলে প্রয়োগ করা উচিত, তাহলে আমাকে অবশ্যই পাঠাবেন। আমরা সবাই একসঙ্গে আমাদের টোকিওগামী খেলোয়াড়দের সমর্থন করব – চিয়ার-ফর-ইণ্ডিয়া!!! চিয়ার-ফর-ইণ্ডিয়া!!! চিয়ার-ফর-ইণ্ডিয়া!!!
আমার প্রিয় দেশবাসী, করোনার বিরুদ্ধে আমাদের দেশবাসীদের লড়াই অব্যাহত, কিন্তু এই লড়াইতে আমরা এক হয়ে অনেক অসাধারণ লক্ষ্যও পূরণ করছি। এই কিছু দিন আগেই আমাদের দেশ এক অভূতপূর্ব কাজ করেছে। ২১শে জুন টিকাকরণের পরবর্তী দফা শুরু হল আর সেদিনই দেশ ছিয়াশি লক্ষেরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার রেকর্ড বানিয়ে ফেলল, আর সেটাও মাত্র এক দিনে। ভারত সরকারের তরফ থেকে বিনামূল্যে এত বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়া আর সেটাও মাত্র এক দিনে। স্বাভাবিক যে এটা নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছে।
বন্ধু, এক বছর আগে সবার সামনে প্রশ্ন ছিল যে টিকা কবে আসবে? আজ আমরা এক দিনে লক্ষ লক্ষ মানুষকে মেড ইন ইণ্ডিয়া টিকা বিনামূল্যে দিচ্ছি আর এটাই তো নতুন ভারতের পরিচয়।
বন্ধু, টিকার সুরক্ষা যাতে দেশের প্রত্যেক নাগরিক পায় তার জন্য আমাদের নিরন্তর প্রয়াস করতে হবে। অনেক জায়গায় টিকা নিয়ে সংশয় দূর করতে অনেক সংগঠন, সুশীল সমাজের সদস্যরা এগিয়ে এসেছেন আর সবাই মিলে তাঁরা খুব ভালো কাজ করছেন। চলুন, আমরাও আজ এক গ্রামে যাই আর সেই সব মানুষদের সঙ্গে কথা বলি।
প্রধানমন্ত্রী : হ্যালো
রাজেশ : নমস্কার
প্রধানমন্ত্রী : নমস্কার
রাজেশ : আমার নাম রাজেশ হিরাবে, গ্রাম পঞ্চায়েত দুলারিয়া ব্লক ভীমপুর
প্রধানমন্ত্রী : রাজেশ জি আপনাকে ফোন করার কারণ আপনাদের গ্রামে করোনা পরিস্থিতি কি রকম?
রাজেশ : এখানে করোনা তেমন কিছু নয় স্যার
প্রধানমন্ত্রী : এখন কেউ অসুস্থ নয় তো?
রাজেশ : স্যার
প্রধানমন্ত্রী : গ্রামে কতো জন থাকেন? মানে গ্রামের জনসংখ্যা কতো?
রাজেশ : গ্রামে ৪৬২জন পুরুষ আর ৩৩২ জন মহিলা থাকেন স্যার
প্রধানমন্ত্রী : রাজেশ জি আপনি টিকা নিয়েছেন?
রাজেশ : এখনো নিই নি স্যার
প্রধানমন্ত্রী : এখনো নেন নি কেন?
রাজেশ : স্যার এখানে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে খুব ভয়ভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। লোকজন ভয় পেয়ে গেছে স্যার
প্রধানমন্ত্রী : আপনার মনেও কি ভয় আছে?
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার, সারা গ্রামেই এমন ভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল স্যার
প্রধানমন্ত্রী : আরে এ কেমন কথা হল?
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন রাজেশ জি
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আপনাকে আর গ্রামের ভাইবোনকে এটা বলতে চাই, যদি কোনো ভয় থাকে তো ভুলে যান।
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : সারা দেশে প্রায় ৩১ কোটিরও বেশি মানুষ ভ্যাক্সিন নিয়েছেন
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আপনি জানেন কি আমি নিজেও দু ডোজ ভ্যাক্সিন নিয়ে নিয়েছি।
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আমার মায়ের বয়স প্রায় একশ বছর। তিনিও দুটো ডোজ নিয়েছেন। কখনও কারো জ্বর জ্বালা হয়। তাও অল্প হয়, কয়েক ঘণ্টার জন্য। দেখুন ভ্যাক্সিন না নেওয়া তো অত্যন্ত ভয়াবহ ব্যাপার
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : এর ফলে আপনি নিজেকে বিপদে ফেলছেন আবার নিজের পরিবার গ্রামবাসী সবাইকেই বিপদে ফেলছেন।
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : রাজেশ জি যত তাড়াতাড়ি হয় ভ্যাক্সিন নিয়ে নিন এবং সমস্ত গ্রাম বাসীকে জানান ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ বছরের ওপর সবাইকে বিনামূল্যে ভ্যাক্সিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার,হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আপনিও গ্রামের লোকেদের বলুন, গ্রামে এরকম ভয়ের আবহাওয়ার তো কোনো কারণ নেই।
রাজেশ : কারণ সেটাই স্যার, কিছু লোক ভুল ভ্রান্তি ছড়িয়ে দিয়েছে আর লোকে খুব ভয় পেয়ে গেছে, যেমন, ভ্যাক্সিন নেওয়ার পর যে জ্বর আসছে, জ্বর থেকে রোগটা ছড়িয়ে যাওয়া, এমনকি মানুষের মৃত্যুর ভ্রান্তিও ছড়ানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী : ওহ ওহ, দেখুন এখন রেডিও টিভি আরও অনেক সংবাদমাধ্যমে লোককে বোঝানো সহজ হয়ে যাচ্ছে, আর দেখুন আমি আপনাকে বলি, ভারতের এমন অনেক গ্রাম আছে যেখানে গ্রামের ১০০% লোক টীকাকরণ করিয়ে নিয়েছে।
রাজেশ :হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আপনাকে একটা উদাহরণ দিই
রাজেশ :হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : কাশ্মীরের বান্দিপোরা জেলায় বেয়ান (Weyan) গ্রামের ১০০% মানুষ টিকা নিয়েছে। কাশ্মীরের এই গ্রামে ১৮ বছরের ওপরের সবাই টীকা নিয়ে নিয়েছে। নাগাল্যান্ডের তিনটে গ্রামের কথা শুনেছি সেখানকার ১০০% মানুষ ভ্যাক্সিন নিয়েছে।
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার,হ্যাঁ স্যার
প্রধানমন্ত্রী : রাজেশ জি, আপনাকে আপনার গ্রামের এবং আশেপাশের সব গ্রামে এই কথা পৌঁছে দিতে হবে, আপনি যেওরকম বলছে এটা ভ্রান্তি, আর সত্যি এটা একটা ভ্রান্তি।
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার
প্রধানমন্ত্রী : ভ্রান্তি কাটানোর একমাত্র উপায় আপনি নিজে টিকা নিয়ে অন্যের ভয় কাটান। আপনি তাই করবেন তো?
রাজেশ : অবশ্যই স্যার
প্রধানমন্ত্রী : ঠিক তো
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার, আপনার সঙ্গে কথা বলার পর মনে হচ্ছে, আমি তো নেবই বাকিদের কেও নিতে বলবো।
প্রধানমন্ত্রী : আচ্ছা গ্রামের আর কেউ আছেন যাঁর সঙ্গে আমি কথা বলতে পারি?
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী :কে কথা বলবেন?
কিশোরীলাল : হ্যালো স্যার নমস্কার
প্রধানমন্ত্রী : নমস্কার, কে কথা বলছেন?.
কিশোরীলাল : আমার নাম কিশোরীলাল দুর্বে
প্রধানমন্ত্রী : হ্যা কিশোরীলাল জি আমি রাজেশ জির সঙ্গে কথা বলছিলাম
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : তো রাজেশ তো খুব দুঃখের সঙ্গে বলছিলেন লোকজন টিকা নিয়ে নানা রকম কথা বলে।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী :আপনিও কি এমন সব কথা শুনেছেন?
কিশোরীলাল : স্যার আমি এমন শুনেছি..
প্রধানমন্ত্রী : কি শুনেছেন?
কিশোরীলাল : কারণ এটাই স্যার আমাদের পাশেই মহারাষ্ট্র। ওখানকার কিছু আত্মীয়-স্বজন গোচের মানুষ গুজব ছড়াচ্ছেন যে টিকা নিলে লোকজন সবাই নাকি মারা যাচ্ছে, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছে স্যার। মানুষের মনে অনেক ভ্রান্তি রয়েছ স্যার, তাই নিচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী : না... বলছে কি? এখন করোনা চলে গিয়েছে, এমন বলছে?
কিশোরীলাল : হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী : করোনা তে কিছুই হবে না এরকম বলছে কি?
কিশোরীলাল : না, করোনা চলে গিয়েছে তা বলছে না স্যার, বলছে করোনা তো রয়েছে কিন্তু টিকা যারা নিচ্ছে তারা মানে অসুস্থ হচ্ছে, সবাই মারা যাচ্ছে। তারা এরকম পরিস্থিতির কথা বলছেন স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আচ্ছা টিকা এর কারনে মারা যাচ্ছে?
কিশোরীলাল : আমার এলাকা আদিবাসীদের এলাকা স্যার, এমনিতেই লোকজন এসবে তাড়াতাড়ি ভয় পায়.... যা ভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়, সেই কারণেই লোকজন টিকা নিচ্ছে না স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন কিশোরীলালজি...
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার...
প্রধানমন্ত্রী : এই গুজব ছড়ানোর মানুষজন তো গুজব ছড়াতেই থাকবেন।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী : আমাদের তো জীবন বাঁচাতে হবে, আমাদের গ্রামের সবাই কে বাঁচাতে হবে, আমাদের দেশবাসীদের বাঁচাতে হবে। আর যদি কেউ বলে যে করোনা চলে গিয়েছে তাহলে সেই ভ্রান্তিতে থাকবেন না।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী : এই অসুখটা এমনই যে বহুরূপে রয়েছে।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : এটা রূপ বদলায়... নতুন নতুন রং-রূপে পৌঁছে যাচ্ছে।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী : আর এর থেকে বাঁচার জন্য আমাদের কাছে দুটো রাস্তা রয়েছে। এক তো করোনার জন্য যে নিয়ম তৈরি করা হয়েছে, যেমন মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রাখা আর দ্বিতীয় রাস্তা হল একই সঙ্গে টিকা লাগানো, এও এক ভালো সুরক্ষা কবচ তাই তার চিন্তাও করুন।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী : আচ্ছা কিশোরীলালজি বলুনতো,
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : যখন মানুষ আপনার সঙ্গে কথা বলে তখন আপনি তাদের কিভাবে বোঝান? আপনি বোঝানোর কাজটা করেন তো নাকি আপনিও গুজবে কান দেন?
কিশোরীলাল : বোঝাবো কি, ওরা সবাই সংখ্যায় বেশি হয়ে যায় স্যার, তখন আমিও ভয় পেয়ে যাই স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন কিশোরীলাল জি, আজ আপনার সঙ্গে আমার কথা হল, আপনি আমার বন্ধু।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আপনি ভয় পাবেন না আর মানুষেরও ভয় দূর করতে হবে। দূর করবেন তো?
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার। দূর করব স্যার, মানুষদের ভয় দূর করব স্যার। আমি নিজেও টিকা নেবো।
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন, গুজবে একদম কান দেবেন না।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ
প্রধানমন্ত্রী : আপনি কি জানেন, আমাদের বৈজ্ঞানিকেরা কত কষ্ট করে এই টিকা বানিয়েছে?
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : বছরভর, রাতদিন সব বড় বড় বৈজ্ঞানিকেরা কাজ করেছেন আর আমাদের বিজ্ঞানের উপর ভরসা রাখতে হবে, বৈজ্ঞানিকদের উপর ভরসা রাখতে হবে। আর যেসব লোকজন মিথ্যে প্রচার করছেন তাদের বারবার বোঝাতে হবে যে দেখুন ভাই এভাবে চলবে না, এত জন মানুষ টিকা নিয়েছেন তাদের কিছু হয়নি।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ
প্রধানমন্ত্রী : আর গুজব থেকে খুব বেঁচে থাকতে হবে, গ্রামকেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ
প্রধানমন্ত্রী : আর রাজেশজি, কিশোরীলালজি, আপনাদের মত বন্ধুদেরকে তো আমি বলব যে আপনি আপনাদের গ্রামেই শুধু নয়, অন্যান্য গ্রামেও এইসব গুজব থামানোর কাজ করুন আর মানুষকে বলুন আমার সঙ্গে আপনাদের কথা হয়েছে।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : বলে দেবেন, আমার নাম বলে দেবেন।
কিশোরীলাল : বলবো স্যার, আর লোকজনদের ও বোঝাবো এবং নিজেও টিকা নেব।
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন আপনার পুরো গ্রামকে আমার তরফ থেকে শুভকামনা জানাবেন।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আর সবাইকে বলবেন যখনই আপনার নম্বর আসবে...
কিশোরীলাল : হ্যাঁ...
প্রধানমন্ত্রী : তখনই টিকা অবশ্যই নেবে।
কিশোরীলাল : ঠিক আছে স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আমি চাই গ্রামের মহিলারা, আমার মায়েরা বোনেরা
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার
প্রধানমন্ত্রী : এই কাজের সঙ্গে আরো বেশি বেশি করে যুক্ত হন ও সক্রিয় রূপে ওঁদের সঙ্গে রাখুন।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ
প্রধানমন্ত্রী : কখনো কখনো মায়েরা বোনেরা যখন কোন কথা বলেন তখন মানুষ তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে যায়।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ
প্রধানমন্ত্রী : আপনার গ্রামে যখন টিকাকরণ শেষ হয়ে যাবে তখন আমাকে জানাবেন তো?
কিশোরীলাল : হ্যাঁ, জানাবো স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : পাক্কা জানাবেন?
কিশোরীলাল : হ্যাঁ
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন, আমি আপনার চিঠির অপেক্ষা করবো।
কিশোরীলাল: হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী: ঠিক আছে রাজেশজি কিশোরজি, অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেলাম।
কিশোরীলাল: ধন্যবাদ স্যার। আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বন্ধুরা, এই করোনা কালে যেভাবে ভারতের গ্রামের মানুষজন, আমাদের বনবাসী ও আদিবাসী ভাইবোনেরা নিজেদের সক্ষমতা এবং বোধশক্তির পরিচয় দিয়েছেন তা সমগ্র বিশ্বের জন্য কখনো না কখনো কেস স্টাডির একটি বিষয় হবে। গ্রামের লোকেরা কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরি করেছে, স্থানীয় প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী কোভিড বিধি তৈরি করেছে। গ্রামের লোকেরা কাউকে খিদের জ্বালা বুঝতে দেয়নি, কৃষিকাজও বন্ধ হতে দেয়নি। নিকটবর্তী শহরে যাতে রোজ দুধ সব্জি এসব পৌঁছয় গ্রামের লোকেরা তাও সুনিশ্চিত করেছে অর্থাৎ নিজেদের সঙ্গে অন্যদেরও খেয়াল রেখেছে। ঠিক এভাবেই আমাদের টিকাকরণ অভিযানের সময় একই কাজ করে যেতে হবে। আমাদের সচেতন থাকতে হবে এবং অন্যদেরও সচেতন করতে হবে। প্রতিটা গ্রামে যাতে প্রত্যেকে টিকা পায় তা সমস্ত গ্রামের লক্ষ্য হওয়া উচিত। মনে রাখবেন, আর আমি এ কথাই আপনাদের বিশেষ ভাবে বলতে চাই। আপনারা নিজেদের মনকে একবার জিজ্ঞেস করুন- প্রত্যেকেই তো সফল হতে চায় কিন্তু প্রকৃত সাফল্যের মন্ত্র কি? প্রকৃত সাফল্য আসে ধারাবাহিকতা থেকে। এজন্য আমাদের থেমে গেলে চলবে না, কোন ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হলেও চলবে না। আমাদের সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, করোনার বিরুদ্ধে জিততেই হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশে এখন বর্ষাও এসে গেছে। বর্ষায় যখন বৃষ্টি হয় তখন তা কেবল আমাদের জন্যই হয় না, সেই বৃষ্টি থেকে আগামী প্রজন্মও উপকৃত হয়। বর্ষার জল ভূ-মধ্যে প্রবেশ করে শুধু সঞ্চিতই হয় না তা জলস্তর বৃদ্ধিও করে। তাই আমি জল-সংরক্ষণকে দেশ সেবার একটি রূপ বলেই মনে করি। আপনারাও হয়তো দেখেছেন, আমাদের মধ্যে অনেকেই এই পূণ্য কাজকে নিজেদের দায়িত্ব হিসেবে মেনে চলেন। ঠিক এমনই একজন মানুষ উত্তরাখণ্ডের পৌরী গারোয়ালের সচ্চিদানন্দ ভারতী জি। ভারতী জি একজন শিক্ষক এবং তিনি তার কাজের মধ্যে দিয়ে মানুষকে খুব সুন্দর শিক্ষা প্রদান করেছেন। আজ তার প্রচেষ্টাতেই পৌরি গারোয়ালের উফরৈখাল অঞ্চলে জল সংকট-এর কঠিন সময় কেটে গিয়েছে। যেখানে লোক জলের জন্য কষ্ট পেত, সেখানে আজ সারা বছর জল-সরবরাহ অব্যাহত থাকে।
বন্ধুরা, পাহাড়ে জল সংরক্ষণের একটি প্রচলিত প্রথা রয়েছে, যাকে "চাল-খাল"ও বলা হয়ে থাকে, অর্থাৎ জল জমানোর জন্য একটা বড় গর্ত খোঁড়া। ভারতী জি এই প্রচলিত প্রক্রিয়াটিতে কিছু নতুন কৌশল প্রয়োগ করেন, এভাবেই তিনি পরপর ছোট-বড় একাধিক পুকুর খনন করেন। এর ফলে উফরৈখলের পাহাড়ি অংশ কেবল সবুজই হয় নি, সেখানকার মানুষের পানীয় জলের সমস্যাও দূর হয়ে গেছে। আপনারা একথা জেনে আশ্চর্য হয়ে যাবেন যে ভারতী জি এরকমই ৩০০০০ এর বেশি জল কুন্ড তৈরি করেছেন। ৩০ হাজার! ভগীরথ এর মত তার এই কাজ আজও চলছে এবং অনেক লোক কে অনুপ্রাণিত করছে।
বন্ধুরা, এভাবেই UP র বাঁদা জেলার অন্ধাভ গ্রামের লোকেরাও একটা অন্যরকম কিছু করার প্রচেষ্টা করেছেন। তাঁরা তাঁদের এই অভিযানের একটা ভারী সুন্দর নাম দিয়েছেন-' ক্ষেতের জল ক্ষেতে, গ্রামের জল গ্রামে'। এই অভিযানের সময় গ্রামের কয়েকশো বিঘার ক্ষেতকে উঁচু উঁচু করে ঘিরে দেয়া হয়েছে যাতে বর্ষার জল খেতে এসে জমা হতে থাকে এবং মাটিতে প্রবেশ করতে থাকে। এখন এই সমস্ত লোকেরা সেই আলে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করছেন। অর্থাৎ এখন কৃষক বন্ধুরা জল বৃক্ষ ও অর্থ এই তিনই পাবে। ভালো কাজের জন্য তাদের গ্রামের পরিচিতি বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। বন্ধুরা, এ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের আশেপাশে যেভাবে আমরা জল সংরক্ষণ করতে পারি তা আমাদের করতে হবে। বর্ষার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়কে নষ্ট হতে দেওয়া চলবে না।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে- “নাস্তি মূলম্ অনৈষেধম”
অর্থাৎ পৃথিবীতে এমন কোন গাছ নেই যার কোন না কোন ঔষধি গুণ নেই। আমাদের চারপাশে এমন অনেক গাছপালা আছে যাদের অদ্ভুত কিছু ঔষধি গুণ আছে, কিন্তু অনেক সময় আমাদের সে সম্পর্কে কোন ধারণা থাকে না। আমায় নৈনিতাল থেকে এ বিষয়ে পরিতোষ ভাই একটি চিঠি লিখেছেন। তিনি লিখেছেন যে গুলঞ্চ এবং আরো অনেক গাছপালার অদ্ভুত ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে তিনি জানতে পেরেছেন করোনা আসার পর। পরিতোষ আমায় অনুরোধ করেছে যে ‘মন কি বাত’ এর সমস্ত শ্রোতাদের যেন আমি বলি- তারা যাতে তাদের আশেপাশের গাছপালা সম্পর্কে জানেন এবং অন্যদেরও জানান। আসলে এগুলি আমাদের শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য, যা আমাদেরই সংরক্ষণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বলি, মধ্যপ্রদেশের ছাতনা জেলার এক বন্ধু শ্রীমান রামলোটন কুসওয়াহা জি একটি প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। রামলোটন জি তার ক্ষেতে একটি দেশীয় মিউজিয়াম বানিয়েছেন। এই মিউজিয়ামে তিনি অসংখ্য ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন ভেষজ গাছ-পালা ও বীজ সংগ্রহ করে রেখেছেন। তিনি তা দূর দুরান্ত থেকে সংগ্রহ করে এখানে এনেছেন। তাছাড়া তিনি প্রতিবছর বহু ধরনের ভারতীয় শাকসবজিও চাষ করে থাকেন। রামলোটন জির এই বাগান ও দেশীয় মিউজিয়াম বহু লোক দেখতেও আসেন এবং সেখান থেকে অনেক কিছু শিখেও যান। সত্যিই এ এক অদ্ভুত সুন্দর উদ্যোগ যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ও বহু জায়গায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। আমি চাই, আপনাদের মধ্যে যারা এরকম কিছু করতে সক্ষম তারা যেন তা অবশ্যই করেন। এর ফলে আপনার উপার্জনের একটা নতুন সুযোগও তৈরি হতে পারে। আর অন্যদিকে, স্থানীয় গাছপালার জন্য আপনার অঞ্চলের পরিচিতিও তাতে বাড়বে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আর কিছুদিন বাদে পয়লা জুলাই আমরা ন্যাশানাল ডক্টরস ডে পালন করব। এই দিনটি দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ডক্টর বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে উদযাপিত হয়। করোনার সময় ডাক্তারদের ভূমিকায় আমরা সবাই যথার্থই কৃতজ্ঞ। আমাদের চিকিৎসকেরা নিজেদের প্রাণ এর পরোয়া না করে আমাদের সেবা করেছে। সেজন্যই এ বছর জাতীয় চিকিৎসক দিবস আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বন্ধুরা, চিকিৎসার দুনিয়ার সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন "Whenever the art of medicine is loved there is also a love of Humanity'' অর্থাৎ যেখানে ওষুধের গুনাগুনের এর জন্য ভালোবাসা থাকে সেখানে মানবতার জন্যেও ভালোবাসা থাকে। চিকিৎসকেরা এই ভালবাসার শক্তি দিয়েই আমাদের সেবা করে থাকেন। সেজন্য আমাদের দায়িত্ব ততটাই ভালোবাসার সঙ্গে তাদের ধন্যবাদ জানানো ও উৎসাহিত করা। যদিও আমাদের দেশে এমন বহু মানুষ রয়েছেন যারা ডাক্তারদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন এবং তাদের সহযোগিতা করেন। শ্রীনগর থেকে এরকমই এক উদ্যোগের বিষয়ে আমি জানতে পেরেছি, সেখানে ডাল লেকে একটি বোট আম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এই পরিষেবাটি শুরু করেছেন শ্রীনগরের একজন হাউসবোট মালিক তারিখ আহমেদ পাতলু। তিনি নিজেও একজন কোভিড যোদ্ধা, যা তাকে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করতে অনুপ্রাণিত করেছে। তার সেই অ্যাম্বুলেন্স থেকে সচেতনতা বৃদ্ধির অভিযানও চলছে, তিনি সেজন্য তার অ্যাম্বুলেন্স থেকে অনবরত এ বিষয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। প্রচেষ্টা এটাই যে- জনসাধারণ যেন মাস্ক পরা থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্ত প্রয়োজনীয় সতর্কতাঃ মেনে চলেন, তা নিশ্চিত করা।
বন্ধুরা, ডক্টরস ডে র সঙ্গে সঙ্গে পয়লা জুলাই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেটস ডেও পালন করা হয়। আমি কয়েক বছর আগে দেশের চার্টার্ড অ্যাকাউন্টটেন্টদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক স্তরের ভারতীয় অডিট ফার্ম উপহার চেয়েছিলাম। আজ আমি তাদের সেই কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। অর্থব্যবস্থায় পারদর্শিতা আনবার জন্য চার্টার্ড অ্যাকাউন্টটেন্টরা খুব ভাল এবং ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারেন। আমি প্রত্যেক চার্টার্ড অ্যাকাউন্টটেন্ট ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আমার শুভেচ্ছা জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, করোনার বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধের একটা বিশেষত্ব আছে। এই যুদ্ধে দেশের প্রতিটি ব্যক্তি নিজের ভূমিকা পালন করেছেন। আমি ‘মন কি বাত’ এ অনেকবার এটা বলেছি। কিন্তু কিছু মানুষের অভিযোগও থাকে যে তাদের ব্যাপারে অতোটা বলা হয় না। অনেক লোক, তা সে ব্যাংক স্টাফই হোক, টিচার হোক, ছোটো ব্যবসায়ী বা দোকানদার হোক , দোকানের কর্মী হোক, ফুটপাথের হকার ভাই বোনেরা হোক, নিরাপত্তা কর্মী হোক বা ডাক পিয়ন বা ডাকঘরের কর্মচারী- আসলে এই লিস্ট বিরাট লম্বা, আর প্রত্যেকে নিজের ভুমিকা পালন করেছেন। প্রশাসন ও শাসনব্যবস্থাতেও কতো মানুষ আলাদা আলাদা স্তরে কাজ করছেন।
বন্ধুরা, আপনারা সম্ভবত গুরুপ্রসাদ মহাপাত্রের নাম শুনেছেন যিনি ভারত সরকারের সচিব ছিলেন । আমি আজ ‘মন কি বাত’ এ তাঁর উল্লেখ করতে চাই। গুরুপ্রসাদ জীর করোনা হয়েছিল তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন আর নিজের কর্তব্য করে যাচ্ছিলেন । দেশে অক্সিজেনের উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায় ও দূর দুরান্তে অক্সিজেন পৌঁছয় এর জন্য তিনি দিন রাত কাজ করেছেন। এক দিকে কোর্ট কাছারীতে ঘোরাঘুরি, মিডিয়ার চাপ- এক সাথে উনি অনেক গুলি ব্যাপারে লড়ছিলেন, অসুখের সময়েও তিনি কাজ বন্ধ করেন নি । বারণ করা সত্বেও উনি জেদ করে অক্সিজেনের ব্যাপারে হওয়া ভিডিও কনফারেন্স গুলিতে থাকতেন । ওঁর কাছে দেশবাসীর চিন্তা ছিল। হাসপাতেলের বেডেও উনি নিজের চিন্তা ছেড়ে দেশের লোকের কাছে যাতে অক্সিজেন পৌঁছয় সেই ব্যবস্থা করায় ব্যস্ত ছিলেন। আমাদের প্রত্যেকের জন্য এটি দুঃখজনক যে এরকম একজন কর্ম যোগীকে দেশ হারিয়েছে । করোনা ওঁকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে । এরকম অগুন্তি মানুষ আছেন যাদের কথা কখোনো বলা হয় নি। এরকম মানুষদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি এটাই হবে যে প্রত্যেকে আমরা সম্পুর্ণ কোভিড প্রোটোকল মেনে চলি, ভ্যক্সিন অবশ্যই নিই।
আমার প্রিয় দেশবাসী ‘মন কি বাত’ এর সবথেকে ভাল দিক হল যে এতে আমার থেকে আপনাদের অংশ গ্রহন বেশি থাকে। এক্ষুনি আমি মাই গভ-এ চেন্নাই-এর থিরু আর গুরুপ্রসাদের একটী পোস্ট দেখলাম। উনি যা লিখেছেন সেটা জেনে আপনাদের ও ভাল লাগবে।উনি লিখেছেন যে উনি মন কি বাত অনুষ্ঠানের নিয়মিত শ্রোতা। গুরুপ্রসাদজীর পোস্ট থেকে আমি কিছু লাইন উদ্ধৃত করছি। উনি লিখেছেন “যখনই আপনি তামিলনাড়ু সম্বন্ধে বলেন তখন আমার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। আপনি তামিল ভাষা, তামিল সংস্কৃতির মহত্ব, তামিল উৎসবগুলি ও তামিলনাড়ুর বিশিষ্ট স্থানগুলির আলোচনা করেছেন । গুরুপ্রসাদজী আরো লিখেছেন যে মন কি বাত এ আমি তামিলনাড়ুর লোকেদের সাফল্য সম্বন্ধেও অনেকবার বলেছি। তিরুক্কুরল এর প্রতি আপনার ভালবাসা ও তিরুবল্লুবরজীর প্রতি আপনার শ্রদ্ধার সম্পর্কে আর কি ই বা বলা যায়। এইজন্য আমি ‘মন কি বাত’ এ আপনি তামিলনাড়ু সম্বন্ধে যা বলেছেন সব সংগ্রহ করে একটা ই –বুক তৈরি করেছি।আপনি কি এই ই- বুক সম্পর্কে কিছু বলবেন ? আর নমো অ্যাপের ও এটিকে প্রকাশ করবেন? ধন্যবাদ।
এটা গুরুপ্রসাদজীর লেখা চিঠি আমি আপনাদের সামনে পড়ছিলাম। গুরুপ্রসাদজী আপনার পোস্টটী পড়ে খুব আনন্দ পেলাম। এখন আপনি আপনার ই-বুকে আরও একটি পাতা জুড়ে দিন ।
...নান তমিলকলা চারাক্তিন পেরিয়ে অভিমানী
নান উলগতলয়ে পলমায়াং তমিল মোলিইয়ন পেরিয়ে অভিমানী।
উচ্চারণের ত্রুটি অবশ্যই হবে, কিন্তু আমার চেষ্টা আর ভালবাসা কখনো কমবে না। যারা তামিল ভাষী নন তাদের আমি বলতে চাই গুরুপ্রসাদজীকে আমি বললাম
আমি তামিল সংস্কৃতির বড় ভক্ত
আমি পৃথিবীর সব থেকে পুরোনো ভাষা তামিলের বড় ভক্ত।
বন্ধুরা, বিশ্বের সব থেকে পুরোনো ভাষা তামিল, আমাদের দেশের, প্রত্যেক ভারতবাসীর এর গুণগান করাই উচিৎ, এর প্রতি গর্ব অনুভব করা উচিৎ । আমিও তামিল নিয়ে খুব গর্ব বোধ করি। গুরুপ্রসাদজী আপনার এই প্র্য়াস আমায় নতুন দৃষ্টিদান করল। কারন আমি আমি যখন ‘মন কি বাত’ করি, সহজ সরল ভাবে নিজের বক্তব্য রাখি। আমি জানতামই না যে এও এটার একটা অঙ্গ। আপনি যখন সব পুরোনো কথা সংগ্রহ করলেন তখন আমিও সেটা একবার নয় দু-দুবার পড়লাম । গুরুপ্রসাদজী আপনার এই বইটি আমি নমো আপেও নিশ্চয় আপলোড করাব। ভবিষ্যতের চেষ্টার জন্য আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ আমরা করোনার অসুবিধে ও সাবধানতা সম্বন্ধে কথা বললাম , দেশের ও দেশবাসীর কিছু অভিজ্ঞতা নিয়েও আলোচনা করলাম। এখন একটা বড় সুযোগ আমাদের সামনে আছে. ১৫ ই অগাস্টও আসছে। স্বাধীনতার ৭৫ বছরের অমৃত মহোৎসব আমাদের জন্য খুব বড় প্রেরণা। আমরা দেশের জন্য বাঁচতে শিখি। স্বাধীনতার যুদ্ধ দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গের গাথা। স্বাধীনতার পরের এই সময় কে আমাদের দেশের জন্য বেঁচে থাকা মানুষদের জীবন গাথা করে তুলতে হবে, আমাদের মন্ত্র হওয়া উচিত – ভারতই হবে প্রথম, আমাদের সব সিদ্ধান্ত, সব নির্ণয় এর আধার হওয়া উচিত ইন্ডিয়া ফার্স্ট।
বন্ধুরা অমৃত মহোৎসব দেশের কিছু সামগ্রিক লক্ষ্যও স্থির করেছে। যেমন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতিচারণ করে তাঁদের ইতিহাস কে পুনরুজ্জীবিত করা প্রয়োজন । আপনাদের হয়তো মনে আছে যে আমি ‘মন কি বাত’ এ যুব সম্প্রদায় কে স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর ইতিহাস লিখতে ও গবেষণা করার অনুরোধ করেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল যে যুব সম্প্রদা্যের প্রতিভা এগিয়ে আসুক, যুব চিন্তা যুব ভাবনা সামনে আসুক, যাতে যুব লেখনী নতুন উৎসাহের সঙ্গে লেখে। আমার এটা দেখে খুব ভাল লাগল যে খুব কম সময়ের মধ্যে আড়াই হাজারের ও বেশি যুবক-যুবতী এই কাজ করার জন্য এগিয়ে এসেছেন । বন্ধুরা মজার কথা এই যে উনবিংশ আর বিংশ শতাব্দীর যুদ্ধের কথা তো প্রায়শই হয়, একবিংশ শতাব্দীতে যারা জন্মেছেন এরকম তরুন বন্ধুরাও উনবিংশ আর বিংশ শতাব্দীর স্বাধীনতার যুদ্ধের ব্যাপারে মানুষকে জানাবার জন্য কাজ করেছেন । এরা সবাই মাই গভের সম্পুর্ণ বিবরণ পাঠিয়েছেন। এরা হিন্দি, ইংলিশ, তমিল , কন্নড় , বাংলা , তেলেগু, মারাঠী, মালয়ালম, গুজরাতী দেশের এইরকম, আলাদা আলাদা ভাষায় স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর লিখবেন। কেউ স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে যুক্ত আশেপাশের অঞ্চলের তথ্য জোগাড় করছেন আবার কেউ আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ওপর বই লিখছে্ন । একটা ভাল আরম্ভ। আপনাদের সবাইকে অনুরোধ যে যেভাবে পারেন অমৃত মহোৎসবের সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত হোন। এটা আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা স্বাধীনতার ৭৫ তম অধ্যায়ের সাক্ষী থাকতে পারছি। তাই এর পরের বার যখন মন কি বাত করব তখন অমৃত মহোৎসবের প্রস্তুতি নিয়েও কথা বলব। আপনারা সবাই সুস্থ থাকুন। করোনা সম্পর্কিত সব নিয়মগুলি মেনে এগিয়ে চলুন। নিজেদের নতুন নতুন প্রয়াসের দ্বারা দেশকে এরকমই গতিময় করে রাখুন। এই শুভেচ্ছার সঙ্গে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আমরা দেখছি যে দেশ পুরো শক্তি নিয়ে কিভাবে কোভিড নাইনটিনের বিরুদ্ধে লড়ছে। গত একশো বছরের মধ্যে এটা সবথেকে বড় মহামারী আর এই মহামারীর মধ্যে ভারত অনেক প্রাকৃতিক বিপর্যয়েরও মোকাবিলা করেছে সাহসের সঙ্গে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এসেছে, ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ এসেছে, অনেক রাজ্যে বন্যা হয়েছে, ছোট বড় অনেক ভূমিকম্প হয়েছে, ভূ-স্খলন হয়েছে। এই সম্প্রতি গত দশ দিনের মধ্যে আবার দুটো বড় ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হয়েছে আমাদের দেশ। পশ্চিম ঊপকূলে ঘূর্ণিঝড় তাউতে আর পূর্ব উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এই দুটো ঘূর্ণিঝড় বেশ কয়েকটি রাজ্যকে প্রভাবিত করেছে। দেশ আর দেশের জনতা এই দূয়ের সঙ্গে পূর্ণ শক্তি নিয়ে লড়েছে আর যতটা সম্ভব কম প্রাণহানি সুনিশ্চিত করেছে। আমরা এখন এটা অনুভব করছি যে আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে। বিপর্যয়ের এই কঠিন ও অ-সাধারণ পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড় প্রভাবিত সব রাজ্যের মানুষ যেরকম সাহসের পরিচয় দিয়েছেন, এই সঙ্কটের সময় অনেক ধৈর্য নিয়ে, অনুশাসন মেনে মোকাবিলা করেছেন তাতে আমি সমাদরে, হৃদয় থেকে সব নাগরিকের প্রশংসা করতে চাই। যে সব মানুষ এগিয়ে এসে ত্রাণ আর উদ্ধারের কাজে অংশ নিয়েছেন, এমন সব মানুষের যতই প্রশংসা করা যাক, তা কম হবে। আমি এদের সবাইকে স্যালুট জানাই। কেন্দ্র, রাজ্য সরকার, স্থানীয় প্রশাসন সবাই এক হয়ে এই বিপর্যয়ের মোকাবিলা করছে। আমি সেই সব মানুষের প্রতি আমার সমবেদনা জানাই যাঁরা নিজেদের আপনজনদের হারিয়েছেন। আমরা সবাই এই কঠিন সময়ে দৃঢ়তা নিয়ে তাঁদের সঙ্গে রয়েছি যাঁরা এই বিপর্যয়ের ক্ষয়ক্ষতি সহ্য করেছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, চ্যালেঞ্জ যতই বড় হোক, ভারতের জয়ের সঙ্কল্পও সবসময় ততই বড় থেকেছে। দেশের সমষ্টিগত শক্তি আর আমাদের সেবার মনোভাব, দেশকে সব ঝঞ্ঝা থেকে মুক্ত করেছে। সাম্প্রতিককালে আমরা দেখেছি যে কেমনভাবে আমাদের ডাক্তার, নার্স এবং সামনের সারির যোদ্ধারা - তাঁরা নিজেদের চিন্তা ছেড়ে দিনরাত কাজ করেছেন এবং আজও করছেন। এই সবের মাঝে কিছু মানুষ এমনও আছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষেত্রে যাঁদের বড় ভূমিকা আছে। ‘মন কি বাত’-এর অনেক শ্রোতা নমো অ্যাপে চিঠি পাঠিয়ে এইসব যোদ্ধাদের সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য আমাকে অনুরোধ করেছেন।
বন্ধুরা, যখন দ্বিতীয় ঢেউ এল, অক্সিজেনের চাহিদা হঠাৎ কয়েক গুণ বেড়ে গেল যা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। দেশের দূর দূর অংশে মেডিকেল অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া এমনিতেই ছিল বড় একটা চ্যালেঞ্জ। অক্সিজেন ট্যাঙ্কার অনেক বেশি গতিতে চলেছিল। ছোট একটা ভুল হলেও তাতে অনেক বড় বিস্ফোরণের ঝুঁকি ছিল। শিল্পের জন্য অক্সিজেন উৎপাদনের অনেক প্লান্ট দেশের পূর্ব অংশে রয়েছে, ওখান থেকে অন্যান্য রাজ্যে অক্সিজেন পৌঁছতে বেশ কয়েক দিন সময় লাগে। দেশের সামনে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে দেশকে সাহায্য করে ক্রায়োজেনিক ট্যাঙ্কারের চালকরা, অক্সিজেন এক্সপ্রেস এবং বিমান বাহিনীর পাইলটরা। এইভাবে তাঁরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করে লক্ষ-লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। আজ ‘মন কি বাতে’ আমাদের সঙ্গে এমনই এক বন্ধু যুক্ত হচ্ছেন – উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরের নিবাসী শ্রীমান দীনেশ উপাধ্যায় মহোদয়।
মোদী জি – দীনেশ জি, নমস্কার।
দীনেশ উপাধ্যায় জি – স্যার জি, প্রণাম।
মোদী জি – সবার আগে তো আমি চাইব যে আপনি নিজের ব্যাপারে অবশ্যই কিছু বলুন।
দীনেশ উপাধ্যায় জি – স্যার আমার নাম দীনেশ বাবুলনাথ উপাধ্যায়। আমি হসনপুর গ্রাম, ডাকঘর জমুয়া, জেলা জৌনপুরের নিবাসী স্যার।
মোদী জি – উত্তর প্রদেশে থাকেন আপনি?
দীনেশ উপাধ্যায় জি – হ্যাঁ হ্যাঁ স্যার।
মোদী জি – আচ্ছা
দীনেশ উপাধ্যায় জি – আর স্যার আমার এক ছেলে, দুই মেয়ে, স্ত্রী আর মা-বাবা আছেন।
মোদী জি – আর, আপনি কী করেন?
দীনেশ উপাধ্যায় জি – স্যার আমি অক্সিজেনের ট্যাঙ্কার চালাই…তরল অক্সিজেনের।
মোদী জি – ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ঠিক মত হচ্ছে?
দীনেশ উপাধ্যায় জি – হ্যাঁ স্যার, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া হচ্ছে। দুই মেয়েও পড়ছে আর আমার ছেলেও পড়ছে।
মোদী জি – ওদের এই অনলাইন লেখাপড়াও ঠিকমত চলছে তো?
দীনেশ উপাধ্যায় জি – হ্যাঁ স্যার, ভালোভাবে করছে, এখন আমার মেয়েরা পড়ছে। অনলাইনেও পড়ছে স্যার। স্যার, ১৫ থেকে ১৭ বছর হয়ে গেল স্যার, আমি অক্সিজেনের ট্যাঙ্কার চালাই স্যার।
মোদী জি – আচ্ছা! আপনি এই ১৫-১৭ বছর ধরে শুধু অক্সিজেন নিয়ে যাচ্ছেন, মানে আপনি কেবল ট্রাক ড্রাইভার নন। আপনি এক অর্থে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজে যুক্ত আছেন।
দীনেশ - স্যার, আমাদের কাজই এরকম স্যার। আইনক্স নামে অক্সিজেন ট্যাঙ্কার-এর যে কোম্পানি আছে, সেটিও আমাদের লোকেদের খেয়াল রাখে। এবং আমরা প্রয়োজনে যে কোনো জায়গায় গিয়ে অক্সিজেন ট্যাঙ্কার খালি করতে পারলে খুশি হই স্যার।
মোদীজি - তবে করোনার সময়ে আপনাদের দায়িত্ব অনেকটাই বেড়েছে।
দীনেশ - হ্যাঁ স্যার, অনেকটাই বেড়েছে।
মোদীজী - আপনি যখন ট্রাকের ড্রাইভিং সিটে থাকেন তখন আপনার মনে ঠিক কি চলে? আগের চেয়ে কতটা আলাদা সেই অনুভূতি? অনেকটা চাপে থাকতে হয় নিশ্চয়ই? মানসিক চাপ ও থাকে। পরিবারের চিন্তা, করোনার এরকম পরিস্থিতি, মানুষের থেকে আসা চাপ, তাদের বিভিন্ন চাহিদা। কত কিছুই চলে নিশ্চয়ই।
দীনেশ - স্যার আমরা এসব নিয়ে চিন্তিত হইনা। আমরা শুধু এটাই ভাবি যে আমরা আমাদের কর্তব্য করছি এবং যদি সময়মতো আমরা অক্সিজেন পৌঁছে দিতে পারি, আর তাতে যদি কারো প্রাণ বাঁচে, সেটাই আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।
মোদী জী - আপনি খুব সুন্দর করে আপনার অনুভূতি প্রকাশ করলেন। আচ্ছা,বলুন তো, আজ যখন লোকেরা এই মহামারী চলাকালীন আপনার কাজের গুরুত্ব বুঝছেন, আগে হয়তো তারা এতটা বুঝতে পারেন নি, কিন্তু এখন বুঝতে পারছেন, তখন আপনার প্রতি এবং আপনার কাজের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে কি কোনো বদল লক্ষ্য করেছেন?
দীনেশ - হ্যাঁ স্যার! আগে বহুবার আমরা, মানে অক্সিজেন ট্যাঙ্কার চালকরা, জ্যামে আটকে থাকতাম। কিন্তু আজকের তারিখে, প্রশাসন আমাদের খুব সাহায্য করে। এবং আমরাও যখনি কাজে বেরোই আমাদের মনেও এটাই কাজ করে যে কত তাড়াতাড়ি পৌঁছে আমরা মানুষের জীবন বাঁচাতে পারি, স্যার। আমরা খাবার খাই বা না খাই, বা অন্যান্য যে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হই না কেন,যখন সময়মতো অক্সিজেন ট্যাঙ্কার নিয়ে আমরা হাসপাতালে পৌঁছোই আর ওখানে উপস্থিত লোকজন, বিশেষ করে রোগীর পরিজনেরা আমাদের ‘ভি’ সাইন দেখায়।
মোদীজি – ‘ভি’ সাইন মানে ভিকট্রি সাইনের কথা বলছেন?
দীনেশ - হ্যাঁ স্যার! কেউ ‘ভি’ সাইন দেখায় কেউ আবার বুড়ো আঙুল দেখায়। এটাই ভেবে ভালো লাগে যে হয়তো আমরা এই জীবনে কিছু ভাল কাজ করেছি যে এমন মানব সেবার সুযোগ মিলেছে।
মোদীজি- এটা ভেবেই সব ক্লান্তি কেটে যায় নিশ্চয়ই?
দীনেশ - হ্যাঁ স্যার! হ্যাঁ স্যার!
মোদীজি- আপনি বাড়ি ফিরে বাচ্চাদের এসব বলেন?
দীনেশ - না স্যার। আমার বাচ্চারা গ্রামে থাকে । আমি তো এখানে আইএনওএক্স এয়ার প্রোডাক্টে, ড্রাইভার হিসাবে কাজ করছি। ৮-৯ মাস পর বাড়িতে যাই।
মোদীজি- আপনি ফোনে বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলেন?
দীনেশ - হ্যাঁ স্যার! প্রায়ই কথা হয়।
মোদীজি- তারাও নিশ্চয়ই বলে যে এরকম সময়ে সাবধানে থেকো বাবা ?
দীনেশ - স্যার, ওরা বলে, বাবা কাজ করো তবে নিজের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে। আমরাও স্যার সাবধানতার সঙ্গেই কাজ করি, আমাদের মানগাঁও-তেও আমাদের প্ল্যান্ট আছে, আর আমাদের অফিস আইনক্স আমাদের খুব সাহায্য করে।
মোদীজি - দীনেশবাবু, আমার খুব ভাল লাগল আপনার কথা শুনে এবং দেশও অনুভব করবে যে এই করোনার লড়াইয়ে - কীভাবে, কত কত মানুষ কাজ করে চলেছেন। আপনি ৯ মাস ধরে আপনার সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। শুধুমাত্র মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য আপনি আপনার পরিবারের সঙ্গেও দেখা করছেন না। যখন এই দেশ শুনবে তারা তখন গর্ব করবে যে দীনেশ উপাধ্যায়ের মত লক্ষ লক্ষ মানুষ নিরলস কাজ করে গেছেন বলেই আমরা যুদ্ধটা জিততে পারবো।
দীনেশ – স্যার জি! আমরা কোনও না কোনো দিন করোনাকে পরাজিত করবই, স্যার জি।
মোদীজী - দীনেশবাবু, আপনার চেতনাই দেশের শক্তি। অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই আপনাকে দীনেশবাবু। আপনার সন্তানদের জন্য আমার আশীর্বাদ রইলো।
দীনেশ - ঠিক আছে স্যার, প্রণাম ।
মোদীজি – ধন্যবাদ ।
বন্ধুরা, দীনেশবাবু যেমন বলছিলেন, সত্যি একজন ট্যাঙ্কার চালক যখন
অক্সিজেন নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছান, মনে হয় যেন ঈশ্বরের প্রেরিত দুত । আমরা সবাই জানি কতটা দায়িত্বপূর্ণ এই কাজ এবং কাজটা করতে গিয়ে কতটা মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। বন্ধুরা, এরকম সংকটপূর্ণ সময়ে অক্সিজেনের পরিবহনকে সহজ করতে ভারতীয় রেল এগিয়ে এসেছে। অক্সিজেন এক্সপ্রেস এবং অক্সিজেন রেল, অক্সিজেন ট্যাঙ্কার-এর চেয়েও দ্রুত সময়ে এবং অনেক বেশি পরিমাণে অক্সিজেন দেশের কোনায় কোনায় পৌঁছে দিয়েছে। মা-বোনেদের এটা শুনে গর্ব হবে যে একটি অক্সিজেন এক্সপ্রেস তো শুধুমাত্র মহিলারাই চালাচ্ছেন। দেশের প্রত্যেকটি নারীর এটা শুনে গর্ব হবার কথা। শুধুমাত্র নারীরাই নন প্রত্যেক ভারতবাসীর এটা শুনে গর্ব হবে। আমি অক্সিজেন এক্সপ্রেসের লোকো পাইলট শিরিষা গজনি জীকে ‘মন কি বাত’ এ আমন্ত্রন জানিয়েছিলাম।
মোদী জি - নমস্কার শিরিষা জি।
শিরিষা জি - নমস্কার স্যার, কেমন আছেন স্যার?
মোদী জি - আমি ভালই আছি। শিরিষা জি, আমি শুনেছি আপনি রেলওয়ে পাইলট হিসেবে কাজ করছেন এবং আমাকে জানানো হয়েছে যে, আপনার পুরো মহিলাদের দ্বারা গঠিত একটি দল আছে যাঁরা এই অক্সিজেন এক্সপ্রেস চালায়। শিরিষা জি আপনি অসাধারণ কাজ করছেন। করোনা কালে আপনার মত বহু মহিলা এগিয়ে এসে করোনার সঙ্গে যুঝতে দেশকে শক্তি দিয়েছে। আপনি নারী শক্তির একটি বিশাল নিদর্শন। আমি জানতে চাই আপনি কোথা থেকে এই অনুপ্রেরণা পান?
শিরিষা জি - স্যার আমার অনুপ্রেরণা আমার বাবা-মা’র থেকে আসে স্যার। আমার বাবা সরকারী কর্মচারী স্যার। আসলে আমার দুই বড় দিদি আছে। আমরা তিন মেয়ে, কিন্তু বাবা আমাদের কাজে খুব উৎসাহ দেন, আমার বড় দিদি ব্যাংকে সরকারি কর্মী আর আমি রেলে কাজ করি। আমার বাবা-মা ই আমার অনুপ্রেরণা।
মোদী জি - আচ্ছা শিরিষা জি আপনি সাধারণ সময়েও রেলওয়ের সেবা করেছেন। ট্রেনকে স্বাভাবিকভাবে চালিয়েছেন। কিন্তু যখন একদিকে অক্সিজেনের এত চাহিদা এবং যখন আপনি অক্সিজেন নিয়ে আসছেন তখন কাজটা আরও কিছুটা দায়িত্বের হয়ে যায়, তখন আপনার দায়িত্বও কিছুটা বেড়ে যায়। সাধারণ পণ্য নিয়ে যাওয়া এক রকম ব্যাপার, অক্সিজেন খুব স্পর্শকাতর জিনিষ, আপনার অভিজ্ঞতা কীরকম শুনতে চাই।
শিরিষাঃ আমার খুব ভালো লাগে এই কাজ করার সময়। অক্সিজেন স্পেশাল ট্রেনের সময় সব কিছু দেখভাল করেছি, সুরক্ষার ক্ষেত্রে, ফরমেশনের ক্ষেত্রে, লিকেজ আছে কি না? এ ছাড়াও ভারতীয় রেল খুব সাহায্য করে স্যার। এই অক্সিজেন এক্সপ্রেস চালানোর জন্য আমায় গ্রিনপাথ দেওয়া হয়। এই গাড়ি নিয়ে ১২৫ কিমি. আমি দেড় ঘন্টায় অতিক্রম করি। এতটা দায়িত্ব রেলওয়েও নিয়েছে, আমিও নিয়েছি।
মোদী জি - বাহ। শিরিষা জি আপনাকে অনেক অভিনন্দন এবং আপনার বাবা ও মাকে আলাদা ভাবে প্রনাম জানাচ্ছি, যাঁরা তিন মেয়েকে এতটা অনুপ্রেরণা দিয়েছেন এবং এত আগে নিয়ে গেছেন এবং এরকম সাহস জুগিয়েছেন। আমি এরকম মা-বাবা কে প্রণাম জানাই এবং আপনাদের তিন বোনকেও প্রণাম যারা এভাবে দেশের সেবা করেছেন এবং এরকম উৎসাহ দেখিয়েছেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ শিরিষা জি।
শিরিষা জি - ধন্যবাদ স্যার, থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। আপনার আশীর্বাদ চাই।
মোদী জি - আপনার উপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ সবসময় থাকুক, আপনার বাবা-মার আশীর্বাদ সর্বক্ষণ থাকুক, ধন্যবাদ।
শিরিষা জি - ধন্যবাদ স্যার।
বন্ধুরা, আমরা শিরিষা জি’র কথা শুনলাম, ওঁর অভিজ্ঞতা আমাদের প্রেরণা জোগায়, আমাদের ভাবতে বাধ্য করে। বাস্তবে এই লড়াই এত বড়, এতে রেলওয়ের মতই আমাদের দেশ জল, স্থল, আকাশ তিন জায়গাতেই কাজ করছে। এক দিকে খালি ট্যাংকারগুলিকে বিমান বাহিনীর বিমানগুলি অক্সিজেন প্লান্টস অব্দি পৌঁছে দিচ্ছে, অন্য দিকে নতুন অক্সিজেন প্লান্ট তৈরির কাজ-ও চলছে। এর পাশাপাশি বিদেশ থেকে অক্সিজেন, অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর এবং ক্রায়োজনিক ট্যাঙ্কারও দেশে আনা হচ্ছে। এই জন্য এই কাজে নৌ, বিমান ও সেনা বাহিনী এবং ডিআরডিও-র মত আমাদের সংস্থাগুলি যুক্ত রয়েছে। আমাদের বহু বৈজ্ঞানিক, শিল্প সংস্থার বিশেষজ্ঞ এবং প্রযুক্তিবিদরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে।
এদের সবার কাজ জানার, সমর্থন করার ইচ্ছে প্রত্যেক দেশবাসীর মনে রয়েছে। এই কারণে আমাদের সঙ্গে আমাদের বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন পটনায়ক জি যুক্ত হচ্ছেন।
মোদী জি - পটনায়ক জি জয় হিন্দ।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন - স্যার জয় হিন্দ। স্যার আমি গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে পটনায়ক। বায়ুসেনা স্টেশন হিন্ডন থেকে কথা বলছি।
মোদী জি - পটনায়ক জি, করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের সময় আপনি বিশাল বড় দায়িত্ব পালন করছেন। সারা পৃথিবী ঘুরে ট্যাংকার আনা, ট্যাংকার এখানে পৌছনো। আমি জানতে চাইব একজন সৈনিক হিসেবে আপনি একটি ভিন্ন প্রকৃতির কাজ করেছেন। মরতে বা জীবন দিতে আপনি দৌড়দৌড়ি করেন। আজ আপনি জীবন বাঁচানোর জন্য দৌড়চ্ছেন। আপনার অভিজ্ঞতা কেমন জানতে চাই।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন - স্যার, এই সঙ্কট কালে আমাদের দেশবাসী কে সাহায্য করতে পারা আমাদের জন্য ভীষণ সৌভাগ্যের কাজ, স্যার। এবং যা যা মিশন আমরা পেয়েছি তা আমরা সফল ভাবে সম্পূর্ণ করছি। আমাদের প্রশিক্ষণ এবং সহায়ক ব্যবস্থা, আমাদের সম্পূর্ণ সাহায্য করছে। এবং সবচেয়ে বড় ব্যাপার স্যার এতে আমরা কাজ করে যে আনন্দ পাচ্ছি তা খুবই উচ্চ স্তরের এবং এই কারণেই আমরা নিরলসভাবে কাজ করতে পারছি।
মোদী জি- ক্যাপ্টেন, আপনারা এই কয়েকদিনে যে বিশেষ প্রচেষ্টা করেছেন, খুব কম সময়ের মধ্যে সবকিছু করতে হয়েছে। কেমন ছিল সেই দিনগুলো?
গ্রুপ ক্যাপ্টেন- স্যার, গত এক মাসে আমরা ক্রমাগত অক্সিজেন ট্যাংকার এবং তরল অক্সিজেন কন্টেনার দেশের এবং বিদেশের গন্তব্য౼ দু জায়গা থেকে তুলে আনছি। প্রায় ১৬০০ সরটিস থেকেও বেশি বিমান পরিবহণ করে এবং প্রায় তিন হাজারেরও বেশি ঘন্টা ধরে উড়েছি এবং ১৬০ টি আন্তর্জাতিক মিশন সম্পন্ন করেছি। এই কারণে আমরা দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে যেখানে অক্সিজেন ট্যাঙ্কারগুলো পৌঁছে দিতে দুই থেকে তিন দিন লাগতো, স্যার আমরা সেখানে দুই থেকে তিন ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে দিতে পেরেছি। আন্তর্জাতিক মিশনের ক্ষেত্রেও ২৪ ঘন্টা অনবরত এই কাজ করেছি। সকল বায়ু সেনার সদস্যরা এই কাজে যুক্ত থেকেছেন যাতে অত্যন্ত দ্রুত আমরা অনেক ট্যাংকার আনতে পারি এবং দেশকে সাহায্য করতে পারি স্যার।
মোদি জি- ক্যাপ্টেন আপনাকে দেশের বাইরে কোন কোন জায়গায় যেতে হয়েছে?
গ্রুপ ক্যাপ্টেন- স্যার, কম সময়ের মধ্যে আমরা সিঙ্গাপুর, দুবাই, বেলজিয়াম, জার্মানি এবং বৃটেনের মত জায়গায় পৌঁছেছি। এই সব জায়গায় বিমান বাহিনীর বিভিন্ন বিমান যেমন IL-76, C-17 ছাড়াও অন্যান্য বিমান পৌঁছেছিল। এছাড়াও C-130ও খুবই কম সময়ের মধ্যে এই মিশনে অংশ নিয়েছে। আমাদের প্রশিক্ষণ এবং উদ্যমের জন্য আমরা সময়মতো এই মিশন সম্পন্ন করতে পেরেছি স্যার।
মোদি জি- দেখুন, এবারে দেশ গর্ব অনুভব করছে যে জলে, স্থলে, আকাশে আমাদের সেনারা এই করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গেছে। ক্যাপ্টেন আপনিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন যার জন্য আপনাকে আমি অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন- স্যার অনেক ধন্যবাদ। আমরা মনপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছি আর আমার সঙ্গে আমার মেয়েও আছে, অদিতি।
মোদি জি- আরে বাহ!
অদিতি- নমস্কার মোদীজি।
মোদি জি- নমস্কার বেটি, নমস্কার। অদিতি আপনার বয়স কত?
অদিতি- আমার বয়স ১২ বছর আর আমি ক্লাস এইটে পড়ি।
মোদীজি- তা বাবা যখন বাইরে যান, ইউনিফর্ম পরেন।
অদিতি- হ্যাঁ, ওঁর জন্য আমি খুব গর্বিত। খুব গর্ব অনুভব করি যে উনি এতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন। সকল করোনা-আক্রান্ত মানুষদের এমন সাহায্য করছেন, এতগুলো দেশ থেকে অক্সিজেন ট্যাংকার্স নিয়ে আসছেন, কন্টেনার্স নিয়ে আসছেন।
মোদি জি- কিন্তু মেয়ে তো বাবাকে খুব মিস করে নিশ্চয়ই?
অদিতি- হ্যাঁ আমি ওঁকে খুব মিস করি। উনি আজকাল বাড়িতে থাকতেই পারেন না, কারণ আন্তর্জাতিক বিমানে করে অনেক দেশে কন্টেইনার এবং ট্যাংকার তাদের উৎপাদন কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছেন, যাতে করোনা-আক্রান্ত মানুষরা সময়মত অক্সিজেন পায় এবং তাদের প্রাণ বাঁচে।
মোদি জি- তাহলে বেটি, অক্সিজেনের মাধ্যমে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর এই কাজ এখন প্রত্যেক বাড়িতে সকলেই জানতে পেরেছে।
অদিতি- হ্যাঁ,
মোদি জি- যখন তোমার পরিচিত বন্ধু মহলে, তোমার সমবয়সী ছাত্র-ছাত্রীরা জানতে পারে যে তোমার বাবা অক্সিজেন পরিবহনের মাধ্যমে এমন সেবামূলক কাজে যুক্ত আছেন তখন তোমার প্রতিও তারা সম্ভ্রমসুলভ ব্যবহার করে, তাই না?
অদিতি- হ্যাঁ আমার সব বন্ধুরা এটাই বলে যে তোমার বাবা এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন আর তার জন্য আমিও খুব গর্বিত, তখন আমারও ভীষণ গর্ব অনুভব হয়। আর আমার পুরো পরিবার, আমার দাদু-দিদা, ঠাকুমা সকলেই আমার বাবার জন্য গর্বিত। আমার মা এবং বাড়ির বাকি সকলেই ডাক্তার, তাঁরাও দিনরাত কাজ করে চলেছেন, আর পুরো বিমান বাহিনী, আমার বাবার স্কোয়াড্রনের সব কাকুরা , এছাড়াও আরো যে সেনারা রয়েছেন সকলেই অনেক কাজ করছেন আর আমার বিশ্বাস সকলের প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ অবশ্যই জিতবো।
মোদীজি- আমাদের এখানে বলা হয় মেয়ে যখন কিছু বলে, তার সেই শব্দে স্বয়ং সরস্বতী বাস করেন, এখন অদিতি যখন বলছে যে আমরা অবশ্যই জিতবো, তাহলে এটা এক রকম ঈশ্বরেরই বাণী। আচ্ছা অদিতি, এখন নিশ্চয়ই অনলাইন পড়াশোনা করছ?
অদিতি - হ্যাঁ, এখন আমাদের সব পড়াশোনা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে হচ্ছে। আমরা ঘরেও সম্পূর্ণ সুরক্ষা নিচ্ছি। যদি কোথাও বাইরে যেতে হয়, তখন দুটো মাস্ক পরে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য সব সর্তক বিধি মানছি।
মোদীজি- আচ্ছা, তোমার হবি কি? কি করতে ভাল লাগে তোমার?
অদিতি - আমার হবি হল সাঁতার কাটা আর বাস্কেটবল খেলা। কিন্তু সেসব ত এখন লকডাউনের জন্য বন্ধ। আমার রান্না করা আর বেকিং এর খুব শখ ছিল। এখন আমি অনেক রান্নাবান্না করি, বেকিং করি। বাবা যখন অনেক কাজ করে বাড়ি আসে তখন আমি বাবার জন্য কেক আর কুকিজ বানিয়ে দিই।
মোদীজি- বাহ, বাহ, খুব চমৎকার। অনেক দিন পর বাবার সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছ। খুব ভাল লাগলো। ক্যাপ্টেন আপনাকেও অনেক শুভেচ্ছা। যখন আমি ক্যাপ্টেনকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, তখন আমি শুধু একজন ব্যক্তিবিশেষকে নয়, আমাদের সমস্ত বাহিনী, নৌ, স্থল, বায়ু - সব বাহিনী যে ভাবে একজোট হয়ে কাজ করছে, তার জন্য সকলকে স্যালুট জানাচ্ছি। ধন্যবাদ ভাই।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন - ধন্যবাদ স্যর.
বন্ধুরা, আমাদের এই জওয়ানরা, এই যোদ্ধারা যে কাজ করেছে তার জন্য দেশ এঁদের স্যালুট জানায়। এভাবেই লাখো মানুষ কাজে ব্যস্ত, যা তাদের রুটিন কাজের অংশ নয়। এত বড় বিপর্যয় একশো বছর পর এসেছে, এক শতাব্দী পর এসেছে এমন সংকট। এই জন্য কারও কাছে এই ধরনের কাজের কোন অভিজ্ঞতা নেই। এর পেছনে আছে দেশসেবার আবেগ ও অমোঘ সংকল্পশক্তি। এর দ্বারাই দেশ সেই কাজ করতে পেরেছে যা আগে কখনো হয়নি। আপনারা আন্দাজ করতে পারবেন - স্বাভাবিক সময়ে আমাদের এখানে এক দিনে ৯00 মেট্রিক টন চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত তরল অক্সিজেন উৎপাদন হত। এখন সেটা প্রায় দশগুনের চেয়েও বেশী বেড়ে প্রায় ৯৫00 metric টন প্রতিদিন উৎপাদিত হয়। আর এই অক্সিজেন আমাদের যোদ্ধা-রা দেশের প্রত্যন্ত জায়গায় পৌঁছে দেয়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার কাজে এত মানুষ এগিয়ে আসেন, এত রকমের চেষ্টা হয়, একজন নাগরিক হিসেবে তা খুবই প্রেরণাদায়ক। একটা টিম হয়ে সকলে নিজের কর্তব্যপালন করেছেন। ব্যাঙ্গালোর থেকে উর্মিলাজি আমাকে জানিয়েছেন তাঁর স্বামী ল্যাব টেকনিশিয়ান এবং কিভাবে প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি নমুনা পরীক্ষার কাজ করে চলেছেন।
বন্ধুরা, করোনা শুরুর সময়ে দেশে কেবল একটি পরীক্ষাগার ছিল। কিন্তু আজ, আড়াই হাজার পরীক্ষাগার কাজ করছে। গোড়ার দিকে দিনে একশোটার মত নমুনা পরীক্ষা হত, এখন কুড়ি লাখেরও বেশী পরীক্ষা একদিনে হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত দেশে তেত্রিশ কোটির বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়ে গেছে। এত বড় কাজ আমাদের এই বন্ধুদের জন্যই সম্ভব হচ্ছে। কতই না সামনের সারির কর্মী আছেন যাঁরা নমুনা সংগ্রহের কাজে যুক্ত আছেন। আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসা, তাদের নমুনা নেওয়া এটা অনেক বড় সেবার কাজ। নিজেদের সুরক্ষার্থে এঁদের এত গরমেও সারাক্ষন পিপিই কিট পরে থাকতে হচ্ছে। তার পরই এই নমুনা পরীক্ষাগারে পৌঁছায়। এই জন্য যখন আমি আপনাদের প্রশ্ন, মতামত পড়ছিলাম, তখনই মনে হয় এই বন্ধুদেরও চর্চাও অবশ্যই হওয়া উচিৎ। এঁদের অভিজ্ঞতা থেকে আমরাও অনেক কিছু জানতে পারবো। আসুন, দিল্লিতে একজন ল্যাব টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত, আমাদের বন্ধু প্রকাশ কান্ডপালের সঙ্গে কথা বলি।
মোদীজি- প্রকাশজি নমস্কার।
প্রকাশ- নমস্কার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জি।
মোদি জি - প্রকাশজি, সবার আগে আপনি আমাদের ‘মন কি বাত’ এর সমস্ত শ্রোতাদের নিজের ব্যাপারে বলুন। আপনি কতদিন ধরে এই কাজ করছেন এবং করোনার সময়ে আপনার কিরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে? দেশের মানুষজন আপনাদের না টিভি তে দেখতে পান না খবরের কাগজে। তবু, এক ঋষির মতো পরীক্ষাগারে নিজের কাজে মগ্ন থেকেছেন। আমি চাই, আপনার মাধ্যমে দেশ জানুক যে দেশে কাজ কিভাবে হচ্ছে।
প্রকাশজি - আমি দিল্লি সরকারের স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা ইন্সটিটিউট অফ লিভার অ্যান্ড বাইলিয়ারি সায়েন্সেস নামে হাসপাতালে বিগত দশ বছর ধরে ল্যাব টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত। স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতা দীর্ঘ বাইশ বছরের। ইন্সটিটিউট অফ লিভার অ্যান্ড বাইলিয়ারি সায়েন্সেস-এর আগে আমি দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতাল, রাজীব গান্ধী ক্যান্সার হাসপাতাল, রোটারি ব্লাড ব্যাঙ্কের মত প্রতিষ্ঠিত সংস্থায় কাজ করে এসেছি। স্যার, সব জায়গায় আমি রক্তকোষ বিভাগে আমার সেবা দিয়েছি কিন্ত গত বছর, পয়লা এপ্রিল ২০২০ থেকে আমি ইন্সটিটিউট অফ লিভার অ্যান্ড বাইলিয়ারি সায়েন্সেস-এর ভাইরোরোলোজি বিভাগের কোভিড টেস্টিং ল্যাবে কাজ করছি। নিঃসন্দেহে কোভিড মহামারীর ফলে স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে অত্যধিক চাপ পড়েছে কিন্তু এই যুদ্ধের সময়টাকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে নিজের জন্য এমন সুযোগ ভাবি যখন রাষ্ট্র, মানবজাতি ও সমাজ আমাদের কাছ থেকে অনেক বেশি দায়িত্ব, অনেক বেশি সহযোগিতা, অনেক বেশি সামর্থ্য আর আমাদের কাছ থেকে অনেকটা বেশি ক্ষমতা প্রদর্শন আশা করে। আর স্যার যখন আমরা ব্যক্তিগত স্তরে রাষ্ট্রের, মানবিকতার, সমাজের আশানুরূপ কাজ করতে পারি, যা কিনা শুধু মাত্র একটা বিন্দুরই মতো, সেটা যখন ঠিক করে করতে পারি, সেই পরীক্ষাটায় যখন উত্তীর্ণ হই তখন একরকম গর্ব হয়। কখনো যখন আমাদের পরিবারের লোকেরাও আশংকিত হয়, বা একটু ভয় পায় সেই সময়ে তাঁদের মনে করিয়ে দিই যে আমাদের দেশের সৈনিকরা যারা কিনা সবসময়েই পরিবার থেকে দূরে সীমান্তে ভীষণ এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দেশ রক্ষার কাজ করছে, তাদের তুলনায় তো আমাদের ঝুঁকি অনেক টাই কম। তখন ওরাও ব্যাপারটা বোঝে আর আমার সঙ্গে সহযোগিতা করে, ওরাও তখন এই বিপদে, সমান ভাবে যেটুকু ওদের পক্ষে সম্ভব , সাহায্য করে।
মোদীজী –প্রকাশ জী একদিকে তো সরকার সবাইকে বলছে , দূরত্ব বজায় রাখুন, দূরত্ব বজায় রাখুন, করোনায় একে অপরের থেকে দূরে থাকো, কিন্তু আপনাকে তো একেবারে সামনা-সামনি, করোনার জীবাণুদের মধ্যেই থাকতে হয়,তার সামনে দিয়েই যেতে হয়, তো এটা তো জীবনকে সংকটে ফেলবার মতোই একটা কাজ তাই পরিবারের চিন্তা হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এই ল্যাব টেকনিশিয়ান এর কাজ স্বাভাবিক সময়ে একরকম আর এই মহামারীর পরিস্থিতিতে আলাদা, সেটাই আপনি করছেন। তাহলে কাজের সময়ও তো বেড়ে গেছে? অনেক রাতে পরীক্ষাগারেই থাকতে হচ্ছে হয়তো? কারণ এতো কোটি কোটি লোকের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে তার চাপও বাড়ছে, কিন্তু এরা আপনার সুরক্ষার ব্যবস্থা করে তো? নাকি? করে না?
প্রকাশজী – নিশ্চয় করে স্যর। আমাদের ইন্সটিটিউট অফ লিভার অ্যান্ড বাইলিয়ারি সায়েন্সেস যে ল্যাবটা সেটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃত । তাই এখানকার সমস্ত বিধি নিয়ম আন্তর্জাতিক মানের। আমাদের ত্রিস্তরিয় পোষাক আছে সেই পরেই আমরা ল্যাবে যাই আর কাজ করি। সম্পূর্ণ নমুনা সংগ্রহ, লেবেল লাগানো এবং এটার নমুনা পরীক্ষার পুরো একটা নিয়ম আছে , আমরা সেই নিয়ম মেনেই কাজ করি। স্যার এটাও ঈশ্বরের কৃপাই যে এখনো আমার পরিবার আর আমার পরিচিত অনেকেই এই সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত আছেন। এখানে একটা বিষয়, যদি আপনি সতর্ক ও সংযমী থাকেন তবে এর থেকে কিছুটা বেঁচে যাবেন।
মোদীজী- প্রকাশ জী আপনার মতো হাজার হাজার মানুষ এক বছর ধরে পরীক্ষাগারে বসে আছেন আর এত পরিশ্রম করছেন, এত মানুষকে বাঁচাবার কাজ করছেন, যা আজ দেশ জানতে পারছে। কিন্তু প্রকাশ জী আপনার মাধ্যমে আমি আপনার কর্মজগতের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, দেশবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই আপনি সুস্থ থাকুন। আপনার পরিবার সুস্থ থাকুক। আমার অনেক শুভেচ্ছা রইল।
প্রকাশ জী- ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী জী আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ যে আপনি আমায় এই সুযোগ দিয়েছেন ।
মোদীজী- ধন্যবাদ ভাই ।
বন্ধুরা, কথা তো আমি শুধু ভাই প্রকাশ জী’র সঙ্গেই বলেছি কিন্তু তাঁর কথায় হাজার হাজার ল্যাব টেকনিশিয়ানের সেবার সৌরভ আমাদের কাছে এসে পৌঁছল। এই কথাগুলোতে লক্ষ-লক্ষ মানুষের সেবার মনোভাব তো দেখা যায়ই এছাড়াও আমাদের সবার দায়িত্বের বোধও বাড়ে। যতটা পরিশ্রম ও নিষ্ঠা দিয়ে ভাই প্রকাশ জী আর আমাদের আরো সব বন্ধুরা কাজ করছেন, ততটাই নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের সহযোগিতা করোনাকে হারাতে সাহায্য করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এতক্ষণ আমরা করোনা যোদ্ধাদের নিয়ে আলোচনা করছিলাম, গত দেড় বছরে আমরা তাদের প্রচুর আত্মোৎসর্গ আর পরিশ্রম দেখেছি। কিন্তু এই যুদ্ধে দেশের আরো অনেক ক্ষেত্রের অনেক যোদ্ধাদেরও বড় ভূমিকা আছে। ভাবুন আপনারা আমাদের দেশে এত বড় একটা সংকট এলো, এর প্রভাব দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রের ওপর পড়ল। কৃষি নিজেকে এর থেকে অনেকটা সুরক্ষিত রেখেছে। শুধু সুরক্ষিতই রাখেনি প্রগতিও করেছে এগিয়েছেও। আপনারা কি জানেন যে এই মহামারীতেও আমাদের কৃষকেরা রেকর্ড উৎপাদন করেছে। কৃষকেরা রেকর্ড উৎপাদন করেছে তাই দেশও এবারে রেকর্ড ফসল কিনেছে। এবারে তো কোন কোন জায়গায় সরষের জন্য কৃষকরা ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের থেকেও বেশি দাম পেয়েছে। রেকর্ড খাদ্যশস্য উৎপাদনের কারণেই আমাদের দেশ প্রত্যেক দেশবাসীকে সাহায্য করতে পারছে। আজ এই সংকটের সময়ে আশি কোটি গরীব মানুষ কে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হচ্ছে যাতে এমন কোন দিন না আসে যে গরীবের বাড়িতে উনুন না জ্বলে।
বন্ধুরা, আজ আমাদের দেশের কৃষকেরা বেশ কিছু ক্ষেত্রে নতুন ব্যবস্থার সুবিধে নিয়ে দারুণ কাজ করছেন। যেমন আগরতলার কৃষকদের কথাই ধরুন, এঁরা খুব ভাল কাঁঠালের চাষ করেন। এর চাহিদা দেশে- বিদেশে সর্বত্র হতে পারে। তাই এবার আগরতলার কৃষকদের কাঁঠাল ট্রেনে করে গুয়াহাটী আনা হয়েছে। গুয়াহাটী থেকে এই কাঁঠাল লন্ডনে পাঠানো হবে। ঠিক তেমনই আপনারা বিহারের শাহী লিচুর কথাও শুনে থাকবেন । ২০১৮ সালে সরকার শাহী লিচুকে জিআই ট্যাগও দিয়েছিল যাতে এর পরিচয় ও মজবুত হয় আর কৃষকদেরও বেশি লাভ হয়। এবারে বিহারের শাহী লিচুও বিমানে লন্ডনে পাঠানো হয়েছে। পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ আমাদের দেশ এরকমই অনন্য স্বাদ আর পণ্যে ভর্তি। দক্ষিন ভারতের বিজয়নগরমের আমের কথা আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন, এখন এই আম কে না খেতে চাইবে? তাই এখন কিসান – রেল লক্ষ টন বিজয়নগরম আম দিল্লী পৌঁছে দিচ্ছে। দিল্লী আর উত্তর প্রদেশের লোকেরা বিজয়নগরমের আম খেতে পাবে আর বিজয়নগরমের কৃষকদের ভালো উপার্জন হবে। কিসান-রেল আজ অবধি প্রায় 2 লাখ টনের মতো পণ্যের পরিবহন করেছে। এখন কৃষকেরা খুব কম খরচে ফল সব্জী, তরি্তরকারি দেশের সুদুর প্রান্তে পাঠাতে পারছে ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ৩০শে মে আমরা ‘মন কি বাত’ করছি আর ঘটনা ক্রমে এটা এই সরকারের ৭ বছর পূর্ণ হওয়ারও সময়। এই সময়ে দেশ ‘সব কা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’ এই মন্ত্রে চলেছে । দেশের সেবায় প্রতিটা মুহুর্ত সমর্পিত এই ভাবনায় আমরা সবাই কাজ করেছি। আমাকে অনেক বন্ধুরা চিঠি লিখেছেন আর বলেছেন যে ‘মন কি বাত’ এ আমি এই ৭ বছরে আমার আপনার এই সহযাত্রার কথাও যেন বলি। বন্ধুরা এই ৭ বছরে যা কিছু উপলব্ধি তা দেশের দেশবাসীর। এই বছরগুলোয় এক সঙ্গে মিলে আমরা কতো জাতীয় গৌরবময় মুহুর্ত কাটিয়েছি। যখন আমরা দেখি যে এখন ভারত অন্য দেশের কথায় আর তাদের চাপে নয়, নিজের সংকল্পে চলে তখন আমাদের গর্ব হয়। যখন আমরা দেখি যে ভারত তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখের ওপর জবাব দেয় তখন আমাদের আত্মবিশ্বাস আরো বাড়ে। যখন ভারত জাতীয় সুরক্ষার ব্যাপারে কোন আপোষ করেনা, তখন আমাদের সেনাদের শক্তি বাড়ে, তখন আমাদের মনে হয় যে হ্যাঁ আমরা সঠিক পথে আছি।
বন্ধুরা, দেশের প্রতিটি জায়গা থেকে আমি কতো দেশবাসীদের বার্তা, চিঠি পাই, কতো লোক দেশকে ধন্যবাদ দেয় যে ৭০ বছর পরে তাদের গ্রামে প্রথম বার বিদ্যুতের আলো পৌঁছেছে, তাদের ছেলে মেয়েরা আলোয় বসে পাখার তলায় বসে পড়ছে। কতো লোক জানায় যে আমাদের গ্রামও এখন পাকা সড়ক পথে শহরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। আমার মনে আছে একটি আদিবাসী এলাকা থেকে কিছু বন্ধু আমায় বার্তা পাঠিয়েছিল যে রাস্তা হওয়ার পর প্রথম বার ওদের মনে হয়েছিল যে ওরাও বাকী পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এরকমই কেউ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার আনন্দ ভাগ করে নেয় তো কেউ আলাদা আলাদা পরিকল্পনার সাহায্যে যখন নতুন রোজগার শুরু করেন তো সেই আনন্দে আমাকেও আমন্ত্রন জানান। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অন্তর্গত ঘর পাবার পরে গৃহপ্রবেশের আয়োজনে দেশবাসীদের কাছ থেকে কতো যে নিমন্ত্রণ আমার দেশবাসীর কাছ থেকে ক্রমাগত পাই। এই ৭ বছরে সবার এরকম অনেক আনন্দে আমি সামিল হয়েছি। এই কিছু দিন আগেই গ্রামের একটা পরিবার আমায় জল জীবন মিশন এর অন্তর্গত ঘরে লাগানো জলের কলের একটা ছবি পাঠিয়েছে । ওঁরা সেই ছবিতে ক্যাপশন লিখেছেন – আমাদের গ্রামের জীবন ধারা। এরকম কতো পরিবার আছে। স্বাধীনতার পরে ৭ দশক ধরে আমাদের দেশে মাত্র ৩ কোটি গ্রামীণ ঘরেই জলের ব্যাবস্থা ছিল।। কিন্তু গত ২১ মাসেই সাড়ে চার লক্ষ ঘরে পরিশ্রুত জলের কানেকশন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ মাস তো করোনারই সময় ছিল। এরকমই এক নতুন বিশ্বাস দেশে আয়ুষ্মান ভারত যোজনা মাধ্যমেও এসেছে । যখন কোন গরীব মানুষ বিনামূল্যের চিকিৎসাতে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে তখন তার মনে হয় যেন সে পুনর্জীবন লাভ করেছে। তার ভরসা হয় যে দেশ তার সঙ্গে আছে। এরকম কতো লোকের আশীর্বচন্, কতো মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে আমাদের দেশ দৃঢ়ভাবে উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
বন্ধুরা, এই ৭ বছরে ডিজিটাল আদান প্রদানের ক্ষেত্রে ভারত দুনিয়া কে নতুন পথ দেখানোর কাজ করেছে। আজ যেকোনো জায়গায় আপনি যত সহজে এক মুহুর্তে ডিজ্যিট্যাল মাধ্যমে জিনিসের দাম দেন , তা এই করোনার সময়ে খুবই উপকারী প্রমাণিত হয়েছে। আজ পরিচ্ছন্নতার প্রতি দেশবাসীর সতর্কতাও বেড়েছে । আমরা রেকর্ড সংখ্যক কৃত্রিম উপগ্রহ উতক্ষেপন করেছি ও রেকর্ড সংখ্যক রাস্তাও বানিয়েছি। এই ৭ বছরে দেশের অনেক পুরোনো বিবাদের ও সম্পূর্ণ শান্তি ও সৌহার্দ্য দিয়ে সমাধান করা গেছে। উত্তর পূর্ব থেকে থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত শান্তি এবং উন্নতির এক নতুন আস্থা দেখা দিয়েছে। বন্ধুরা আপনারা কি কখনও ভেবেছেন যে কাজ দশক দশক ধরে হয়ে ওঠেনি তা এই ৭ বছরে কিভাবে হলো? সেটা সম্ভব হয়েছে কারণ এই ৭ বছরে আমরা সরকার এবং জনতা হিসেবে নয়, সারা দেশে এক হয়ে কাজ করেছি, একটা টিম এর মতো কাজ করেছি, টিম ইন্ডিয়ার মতো কাজ করেছি । প্রত্যেক নাগরিকই দেশের অগ্রগতির জন্য এক পা এক পা করে বাড়ানোর চেষ্টা করেছে । হ্যাঁ, যেখানে সাফল্য থাকে সেখানে পরীক্ষাও থাকে। এই ৭ বছরে আমরা এক সঙ্গে অনেক কঠিন পরীক্ষাও দিয়েছি আর প্রতিবার সবাই আরো শক্তিশালী হয়ে বেরিয়েছি । করোনা মহামারী নামের এত বড়ো একটা পরীক্ষা তো একনাগাড়ে চলছে। এতো এমন একটা সংকট যা পুরো পৃথিবীকে সমস্যায় ফেলেছে, যাতে কতো লোক তাদের আপনজনকে হারিয়েছে । বড় বড় দেশ ও এর ধ্বংসলীলা থেকে বাঁচতে পারেনি। এই বিশ্ব মহামারীর মধ্যেও ভারত সেবা ও সহযোগিতার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে । আমরা প্রথম ঢেউও পুরো বিশ্বাসের সঙ্গে লড়াই করেছিলাম। এবারেও ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে ভারতই বিজয়ী হবে। দু’গজের দুরত্ব হোক বা মাস্ক পরবার নিয়ম বা টিকা, আমাদের নিয়ম ভাঙলে চলবে না । এটাই আমাদের জেতার পথ । পরের বার ‘মন কি বাত’ এ যখন আবার আসব তখন দেশবাসীর সঙ্গে আরো কিছু প্রেরণাদায়ক উদাহরণের ব্যাপারে কথা বলব আর নতুন বিষয়ে আলোচনা করব । আপনারা এভাবেই আপনাদের পরামর্শ আমায় পাঠাতে থাকুন । নিজেও সুস্থ থাকুন দেশকেও এভাবেই এগিয়ে নিয়ে চলুন। অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার, আজ আপনাদের সঙ্গে ‘মন কি বাত’ এমন এক সময় করছি যখন করোনা আমাদের সবার ধৈর্য ও আমাদের সবার দুঃখ সহ্য করার সীমার পরীক্ষা নিচ্ছে। আমাদের অনেক নিজেদের লোক অসময়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন । করোনার প্রথম ঢেউ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করার পরে দেশ আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে উঠেছিল, কিন্তু এই তুফান দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বন্ধুরা, বিগত দিনে এই সংকটের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আমরা বিভিন্ন দপ্তরের বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। আমাদের ওষুধ প্রস্তুতকারক শিল্পের লোকেরা হোক, টিকা উৎপাদকরা হোক, অক্সিজেনের উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত লোকেরাই হোক বা চিকিৎসা জগতের অভিজ্ঞরা, নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ সরকারকে দিয়েছেন। এই সময় আমাদের এই লড়াই জেতার জন্য বিশেষজ্ঞ আর বৈজ্ঞানিক পরামর্শকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য ভারত সরকার সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। রাজ্য সরকারগুলিও নিজেদের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বন্ধুরা, করোনার বিরুদ্ধে এই সময় দেশের ডাক্তার আর স্বাস্থ্যকর্মীরা অনেক বড় লড়াই করে যাচ্ছেন। বিগত এক বছরে ওঁদের এই অসুখ নিয়ে সব রকমের অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই সময় মুম্বাইয়ের বিখ্যাত ডাক্তার শশাঙ্ক যোশী জি আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। ডাক্তার শশাঙ্ক জির করোনার চিকিৎসা আর এর সঙ্গে যুক্ত গবেষণার তৃণমূলস্তরে অভিজ্ঞতা আছে। তিনি ইন্ডিয়ান কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস এর ডিন ছিলেন। আসুন কথা বলি ডাক্তার শশাঙ্কের জি সঙ্গে:-
মোদিজী - নমস্কার ডাক্তার শশাঙ্ক জি
ডাক্তার - নমস্কার স্যার।
মোদিজী - কিছুদিন আগেই আপনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। আপনার মতামতের স্পষ্টতা আমার খুব ভালো লেগে ছিল। আমার মনে হয়েছে দেশের সমস্ত নাগরিকের আপনার মতামত জানা প্রয়োজন। যেসব কথা শুনতে পাই, সেগুলোই একটি প্রশ্নের আকারে আপনার সামনে তুলে ধরছি। ডাক্তার শশাঙ্ক আপনারা এই সময় দিন রাত জীবন রক্ষার কাজে নিযুক্ত আছেন। সবার আগে আমি চাইবো যে আপনি দ্বিতীয় ঢেউএর বিষয়ে সবাইকে বলুন। চিকিৎসার দিক থেকে এটা কিভাবে আলাদা। আর কি কি সাবধানতা জরুরি।
ডাক্তার শশাঙ্ক - ধন্যবাদ স্যার, এই যে দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে, এটা দ্রুততার সঙ্গে এসেছে। যতটা প্রথম ঢেউ ছিল তার থেকে এই ভাইরাস বেশি দ্রুততার সঙ্গে বেড়ে চলেছে। কিন্তু ভালো কথা এই যে তার থেকেও দ্রুত গতিতে সুস্থও হচ্ছে আর মৃত্যু হার অনেক কম। এর মধ্যে দু'তিনটে তফাৎ আছে। প্রথমত, এটা যুবক যুবতীদের আর বাচ্চাদের মধ্যেও অল্প দেখা দিচ্ছে, । প্রথমে যেমন লক্ষণ ছিল শ্বাসকষ্ট, শুকনো কাশি, জ্বর সেগুলো তো সব আছেই । তার সঙ্গে গন্ধ পাওয়া, স্বাদ না থাকাও আছে। আর লোকেরা একটু ভয়ে আছেন। ভীতসন্ত্রস্ত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই ৮0 থেকে ৯0 শতাংশ লোকের মধ্যে এগুলির কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই মিউটেশন - মিউটেশন যা বলা হচ্ছে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এই মিউটেশন হতেই থাকে যেভাবে আমরা জামা কাপড় বদলাই সেই ভাবেই ভাইরাস নিজের রং বদলাচ্ছে। আর সেই জন্যেই একেবারেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা এই ঢেউটাও পার হয়ে যাব। ওয়েভ আসে যায়, আর এই ভাইরাস আসা যাওয়া করতে থাকে। তো এটাই আলাদা আলাদা লক্ষণ। আর চিকিৎসার দিক থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ১৪ থেকে ২১ দিনের এইযে কোভিডের টাইম টেবিল আছে। এই সময়ের মধ্যেই ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
মোদিজী- ডাক্তার শশাঙ্ক, আমার জন্য আপনি যে বিশ্লেষণ করে বলেছিলেন তা খুবই উৎসাহজনক। আমি অনেক চিঠি পেয়েছি। যার মধ্যে চিকিৎসার বিষয়েও মানুষের মধ্যে অনেক আশঙ্কা আছে। কিছু ওষুধের চাহিদা খুব বেশি। এজন্য আমি চাই যে কোভিডের চিকিৎসার ব্যাপারেও আপনি অবশ্যই লোকেদের বলুন।
ডাক্তার শশাঙ্ক - হ্যাঁ স্যার, ক্লিনিক্যাল ট্রিটমেন্ট লোকেরা অনেক দেরিতে শুরু করেন। মনে করেন নিজে থেকেই রোগ সেরে যাবে। এই ভরসাতেই থাকেন। আর মোবাইলে আসা বার্তা উপর ভরসা রাখেন। অথচ যদি সরকারি নির্দেশ পালন করেন তাহলে এই কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় না। কোভিডে ক্লিনিক ট্রিটমেন্ট প্রটোকল আছে, যার মধ্যে তিন রকমের তীব্রতা আছে। হালকা বা মাইল্ড কোভিড, মধ্যম বা মডারেট কোভিড, আর তীব্র বা Severe কোভিড। যেটা হালকা কোভিড, সেটার জন্য আমরা অক্সিজেনের মনিটরিং করে থাকি। পালসের মনিটরিং করে থাকি, জ্বরের মনিটরিং করে থাকি, জ্বর বেড়ে গেলে কখনো কখনো প্যারাসিটামল এর মত ওষুধের ব্যবহার করে থাকি। আর নিজেদের ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। যদি মডারেট কোভিড হয়ে থাকে, মধ্যম কোভিড হোক বা তীব্র গভীর হোক, সেক্ষেত্রে ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরী। সঠিক এবং সস্তা ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যে স্টেরয়েড আছে সেটা প্রাণ বাঁচাতে পারে, যেটা ইনহেলার দিতে পারে। ট্যাবলেটও দেওয়া যেতে পারে। আর এর সঙ্গেই প্রাণবায়ু ౼ অক্সিজেন সেটাও দিতে হয়। আর এই জন্য ছোট ছোট চিকিৎসা আছে। কিন্তু সচরাচর যেটা হচ্ছে, একটা নতুন পরীক্ষামূলক ওষুধ আছে, যার নাম রেমডেসিভির। এই ওষুধে অবশ্যই একটা জিনিস হয়, সেটা হল হাসপাতালে দু-তিনদিন কম থাকতে হয়। আর সুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে অল্পবিস্তর সাহায্য পাওয়া যায়। আর এই ওষুধ কখন কাজ করে, যখন প্রথমে ৯ থেকে ১0 দিনে দেওয়া হয়ে থাকে। আর এটা পাঁচদিনই দিতে হয়। এই যে লোকেরা রেমডিসিভিরের পেছনে দৌড়চ্ছে, এর কোনো দরকার নেই। এই ওষুধটার কাজ অল্পই। যাঁদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, যারা হাসপাতালে ভর্তি হন, আর ডাক্তার যখন বলেন তখন নিতে হয়। তাই এটা সবাইকে বোঝানো খুবই জরুরী। আমরা প্রাণায়াম করব, আমাদের শরীরে যে Lungs আছে সেটাকে একটু এক্সপ্যান্ড করব, আর আমাদের রক্ত পাতলা করার যে ইনজেকশন আছে যেটাকে আমরা হেপারিন বলে থাকি। এইসব ছোট ছোট ওষুধ দিলে ৯৮% লোক ঠিক হয়ে যান। তাই পজিটিভ থাকা অত্যন্ত জরুরী। ট্রিটমেন্ট প্রোটোকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরী। আর যেসব দামি দামি ওষুধ আছে, সেগুলির পিছনে দৌড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই। স্যার, আমাদের কাছে ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। প্রাণবায়ু অক্সিজেন আছে। ভেন্টিলেটরেরও সুবিধা আছে। সবকিছুই আছে স্যার। আর কখনো কখনো যদি এই ওষুধ পাওয়া যায় তাহলে চাহিদাসম্পন্ন লোকেদেরই দেওয়া উচিত। তাই এই বিষয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে। আর এর জন্য স্পষ্ট করে বলতে চাই স্যার যে আমাদের কাছে বিশ্বের সবথেকে ভাল চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। আপনি দেখবেন সুস্থতার হার ভারতে সবথেকে ভালো আপনি যদি ইউরোপের সঙ্গে তুলনা করেন। আমেরিকাতে রোগী সেরে উঠছেন আমাদের ট্রিটমেন্ট প্রটোকলে স্যার।
মোদিজী - ডাক্তার শশাঙ্ক আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ডাক্তার শশাঙ্ক আমাদের যা জানালেন তা অত্যন্ত জরুরী এবং আমাদের সব কাজে লাগবে। বন্ধুরা আমি আপনাদের সকলের কাছে অনুরোধ করছি, আপনাদের যদি যেকোনো তথ্য জানার থাকে, আর কোনো আশংকা থাকে তাহলে সঠিক সুত্র থেকে জেনে নেবেন। আপনাদের যে পারিবারিক চিকিৎসক আছেন, আশেপাশের যে ডাক্তার আছেন আপনারা তাদের ফোন করে যোগাযোগ করুন। এবং সঠিক পরামর্শ নিন। আমি দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের অনেক ডাক্তারই নিজেরাই এই দায়িত্ব নিচ্ছেন। অনেক ডাক্তার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে লোকেদের সচেতন করছেন। ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপেও কাউন্সেলিং করছেন। অনেক হাসপাতালের ওয়েবসাইট আছে সেখানে এই সংক্রান্ত বিষয়ে জানার ব্যবস্থা আছে। আর সেখানে আপনারা ডাক্তারের পরামর্শও নিতে পারবেন। এটা খুবই প্রশংসনীয়। আমার সঙ্গে শ্রীনগর থেকে ডাক্তার নাবিদ নাজির শাহ্ রয়েছেন। ডাক্তার নাবিদ শ্রীনগরের এক সরকারী মেডিকেল কলেজের প্রফেসর। নবীদ জি নিজের তত্ত্বাবধানে অনেক করোনা পেশেন্টকে সারিয়ে তুলেছেন। আর রমজানের এই পবিত্র মাসে ডাক্তার নাবিদ নিজের কর্তব্য পালন করছেন। তিনি আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় বের করেছেন। আসুন ওঁর সঙ্গে কথা বলি।
মোদিজী - নাবিদ জি নমস্কার।
নাবিদ - নমস্কার স্যার।
মোদিজী - ডাক্তার নাবিদ ‘’মন কি বাত’’ এর আমাদের শ্রোতারা এই কঠিন সময়ে প্যানিক ম্যানেজমেন্টের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আপনি আপনার অভিজ্ঞতা থেকে তাঁদের কি পরামর্শ দেবেন ?
নাবিদ - দেখুন যখন করোনা শুরু হয়েছিল, তখন কাশ্মীরে যে প্রথম কোভিড হসপিটাল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল সেটা ছিল আমাদের সিটি হসপিটাল। যেটা আসলে মেডিকেল কলেজের অধীনে। সে সময়টা এক ভয়ের পরিবেশ ছিল। কোভিডের সংক্রমণ হলেই লোকেরা মনে করতেন তাঁদের মৃত্যদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর এর ফলে আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক মহল এবং প্যারা মেডিকেল কর্মীদের মধ্যেও ভয়ের সঞ্চার হয়েছিল যে তাঁরা এই রোগীদের কিভাবে চিকিৎসা করবে? সংক্রমণ হওয়ার মত বিপদ নেই তো! কিন্তু যেমন যেমন সময় এগিয়েছে, আমরাও দেখলাম যে, যদি সম্পূর্ণভাবে আমরা সুরক্ষা সংক্রান্ত পোষাক পরি এবং সুরক্ষা বিধি মেনে চলি তাহলে আমরাও সুরক্ষিত থাকতে পারবো। আর আমাদের যে বাকি কর্মীরা আছেন তারাও সুরক্ষিত থাকতে পারেন। আর এর পরে আমরা দেখতে পেলাম রোগী বা কিছু লোক অসুস্থ ছিলেন যাঁরা উপসর্গ হীন, যাদের মধ্যে রোগের কোনো লক্ষণ ছিল না। আমরা দেখলাম ৯0 থেকে ৯৫ শতাংশের বেশি সমস্ত রোগী কোনো ওষুধ ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষের মধ্যে করোনার যে ভয় ছিল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা অনেক কমে গিয়েছে। আজ যখন করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে তখনও আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। এই সময়েও যে সুরক্ষা বিধি আছে আর মান্য বিধি আছে, যদি সেগুলো ওপর আমরা গুরুত্ব দিই, যেমন মাস্ক পরা, হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, এ ছাড়াও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা বা জমায়েত এড়িয়ে যেতে পারি তাহলে আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজকার্মও খুব ভালোভাবে করে যেতে পারব। তাহলে এই রোগের হাত থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারবো।
মোদিজী - ডাক্তার নাবিদ, টিকার ব্যাপারেও মানুষের মধ্যে নানা রকম প্রশ্ন আছে যেমন টিকার মাধ্যমে কতটা সুরক্ষা পাওয়া যাবে ? টিকা নেওয়ার পর কতটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারবো? আপনি এ প্রসঙ্গে কিছু বলুন যাতে শ্রোতাদের উপকার হয়।
ডাক্তার নাবিদ - যখন করোনার সংক্রমণের সন্মুখিন হলাম, তখন থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের কাছে কোভিড-19 এর সঠিক কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। ফলে আমরা দুটো জিনিস দিয়ে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি। একটা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, আর আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি যে যদি কোন যথাযথ টিকা আমাদের কাছে আসে তাহলে সেটা আমাদের এই রোগের হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে। আর এখন আমাদের দেশে দুটো টিকা এইসময় আছে, কোভ্যাকসিন এবং কোভিশিল্ড। যেগুলো এখানেই তৈরি হওয়া ভ্যাকসিন। কোম্পানিগুলো যখন পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে, তখন দেখা গেছে যে সেগুলির কার্যকারিতা ৬০% এর বেশি। আর যদি আমরা জম্মু- কাশ্মীরের কথা বলি তাহলে আমাদের এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এখনো পর্যন্ত ১৫ থেকে ১৬ লক্ষ মানুষ এই টিকা নিয়েছেন। হ্যাঁ সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক ভ্রান্ত ধারণা বা গুজব ছড়ান হয়েছে যে এগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমাদের এখানে যে সমস্ত টিকা প্রয়োগ হয়েছে সেখানে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সাধারণত টিকা নেওয়ার পর কারও জ্বর আসা, সারা শরীর ব্যথা বা লোকাল সাইড অর্থাৎ ইনজেকশনের জায়গায় ব্যথা হওয়া এমনই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আমরা প্রত্যেকের মধ্যে দেখেছি। তেমন কোনো বিরূপ প্রতিক্রয়া আমরা দেখি নি। আর হ্যাঁ, দ্বিতীয় কথা মানুষের মধ্যে এই আশঙ্কাও ছিল যে কিছু লোক টিকাকরণের পরে পজিটিভ হয়েছেন। সেখানে কোম্পানী থেকেই বলা ছিল টিকাকরণের পরেও সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকতে পারে এবং পজেটিভ হতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে রোগের ভয়াবহতা কম থাকবে। অর্থাৎ তিনি পজেটিভ হতে পারেন কিন্তু জীবনহানির আশংকা কম। তাই টিকাকরণ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলা উচিত। পয়লা মে থেকে আমাদের সমগ্র দেশে যাদের ১৮ বছরের বেশি বয়স তাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কর্মসূচি শুরু হবে। তাই সবার কাছে এটাই আবেদন করব যার যখন সময় আসবে, আপনারা আসুন টিকা নিন এবং নিজেকেও রক্ষা করুন। আর সামগ্রিকভাবে আমাদের সমাজ ও আমাদের এলাকা এর ফলে কোভিড ১৯ র সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত হয়ে উঠবে।
মোদিজী - ডাক্তার নাবিদ আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। এবং আপনাকে রমজানের পবিত্র মাসে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
ডাক্তার নাবিদ - অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মোদিজী - বন্ধুগণ করোনার এই সংকটকালে ভ্যাকসিনের গুরুত্ব সকলেই উপলব্ধি করতে পারছেন। এর জন্য আমি চাই যে ভ্যাকসিন নিয়ে কোনরকম অপপ্রচারে কান দেবেন না। আপনারা সকলেই জানেন যে ভারত সরকারের তরফ থেকে সমস্ত রাজ্য সরকারকে ফ্রি ভ্যাক্সিন পাঠানো হয়েছে যার সুফল ৪৫ বছর বয়সের ঊর্ধ্বের লোকেরা পেতে পারবেন। এখন তো পয়লা মে থেকে দেশে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকল ব্যক্তির টিকা পাবেন। এবার দেশের কর্পোরেট সেক্টর কোম্পানিগুলোও নিজেদের কর্মচারীদের টিকা দেওয়ার অভিযানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। আমি এটাও বলতে চাই যে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে টিকার যে কর্মসূচি এখন চলছে সেটা আগামী দিনেও চলবে। আমি রাজ্যগুলোকেও বলতে চাইছি যে তারা ভারত সরকারের এই বিনামূল্যে টিকা অভিযানের সুবিধা নিজের নিজের রাজ্যের যত বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দিক। বন্ধুগণ, আমরা সবাই জানি এই রোগের প্রকোপের ফলে আমাদের পক্ষে নিজেকে, নিজের পরিবারকে দেখাশোনা করা মানসিকভাবে কতটা দুরূহ হয়ে ওঠে। কিন্তু আমাদের হাসপাতালের নার্সিং কর্মীদের তো সেই কাজটাই একনাগাড়ে অসংখ্য রোগীদের জন্য একসঙ্গে করতে হয়। এই সেবাভাবই আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় শক্তি। নার্সিং সেবাদান আর পরিশ্রমের ব্যাপারে সবথেকে ভালো বলতে পারবেন কোন নার্স। এইজন্য আমি রায়পুরের ডাক্তার বি আর আম্বেদকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবারত সিস্টার ভাবনা ধুপ জি কে ‘’মন কি বাত’’এ আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি অসংখ্য করোনা রোগীদের দেখাশোনা করেছেন। আসুন ওঁর সঙ্গে কথা বলি।
মোদি - নমস্কার ভাবনা জি।
ভাবনা - মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জি নমস্কার।
মোদি - ভাবনা জি ?
ভাবনা - ইয়েস স্যার।
মোদি - ‘’মন কি বাত’’ এর শ্রোতাদের আপনি অবশ্যই এটা বলুন যে আপনার পরিবারে এতগুলো দায়িত্ব পালন, এতগুলো অর্থাৎ মাল্টি টাস্ক, আর তার পরেও আপনি করোনা রোগীদের সেবা করছেন, করোনা রোগীদের সঙ্গে কাজ করে আপনার যে অভিজ্ঞতা দেশবাসী অবশ্যই শুনতে চাইবেন। কারণ যারা সিস্টার হন , যারা নার্স হন তারা রোগীদের সবথেকে কাছের হয়ে থাকেন, আর সব থেকে দীর্ঘ সময় তাঁরা রোগীদের সঙ্গে থাকেন। তাই তাঁরা সমস্ত জিনিস খুব সূক্ষ্ম ভাবে বুঝতে পারেন। আপনি বলুন।
ভাবনা - জি স্যার। আমার টোটাল কোভিড অভিজ্ঞতা দু মাসের স্যার। আমরা ১৪ দিন ডিউটি করি আর ১৪ দিন পরে আমাদের রেস্ট দেওয়া হয়, তারপর দুই মাস পরে আমাদের এই কোভিড ডিউটি রিপিট হয় স্যার। যখন আমার প্রথম কোভিড ডিউটি পড়ল তখন আমি সবার প্রথমে আমার পরিবারের সদস্যদের এই কোভিড ডিউটির কথা জানাই। সেটা মে মাসের কথা, আমি যখনি এটা জানালাম সবাই ভয় পেয়ে গেল, বললেন ঠিক করে কাজ করতে, একটা আবেগঘন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল। মাঝে যখন আমার মেয়ে জিজ্ঞেস করেছিল যে মা তুমি কোভিড ডিউটিতে যাচ্ছ সেইসময়টা আমার জন্য খুব আবেগের ছিল। কিন্তু যখন আমি কোভিড রোগীদের পাশে গেলাম, দেখলাম তাঁরা আরো বেশি ভীতিগ্রস্ত। কোভিডের নামে সবাই এত ভয় পেয়েছিল, যে ওঁরা বুঝতেই পারছিল না যে ওঁদের সঙ্গে কি হতে চলছে? আর আমরা এরপর কি করবো। আমরা ওঁদের ভয় দূর করার জন্য ওঁদের খুব ভালো স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দিয়েছি, স্যার। কোভিড ডিউটির প্রথমেই আমাদের পিপিই কিট পরতে বলা হয়েছিল, পিপিই কিট পরে ডিউটি করা খুব কঠিন কাজ। স্যার, আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক ছিল। আমি দু মাসের ডিউটিতে সব জায়গায় ১৪ দিন করে ডিউটি করেছি ওয়ার্ডে আইসিইউ তে, আইসোলেশনে এ স্যার।
মোদি জি – অর্থাৎ সব মিলিয়ে আপনি প্রায় একবছর এই কাজটা করছেন।
ভাবনা – ইয়েস স্যার, ওখানে যাওয়ার আগে আমি জানতাম না আমার সহকর্মী কারা, আমরা দলগতভাবে কাজ করেছি। রোগীদের যে সব সমস্যা ছিল আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিতাম। আমরা রোগীদের সম্বন্ধে জানলাম, ওঁদের লজ্জা দূর করলাম। অনেক লোক এমন ছিল যাঁরা কোভিডের নামে ভয় পেত। যখন আমরা তাঁদের ইতিহাস লিখতাম, কোভিডের সমস্ত উপসর্গ তাঁদের মধ্যে পাওয়া যেত কিন্তু ওঁরা ভয়ের জন্য নমুনা পরীক্ষা করাতে চাইতেন না। তখন আমরা ওঁদের বোঝাতাম, স্যার যখন তীব্রতা বেড়ে যেত , ততক্ষনে ওঁদের ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে থাকতো এবং আইসিইউ এর প্রয়োজন হতো। তখন সঙ্গে তাঁদের পুরো পরিবার আসতো। এরকম এক দুটো কেস আমি দেখেছি স্যার। আর শুধু এটাই করিনি। সমস্ত বয়সের সঙ্গেই কাজ করেছি স্যার আমি। যার মধ্যে ছোট বাচ্চাও ছিল। মহিলা, পুরুষ, প্রবীণ সব রকম রোগী ছিল স্যার। ওদের সবার সঙ্গেই আমি কথা বলেছি। তো সবাই বলে যে আমি ভয়ের কারণে আসতে পারিনি। সবার কাছ থেকেই আমরা এই উত্তর পেয়েছি স্যার। তাই আমরা ওঁদের বুঝিয়েছি স্যার। যে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন। আমরাও আপনাদের সহযোগিতা করব। আপনার যে নিয়মগুলি আছে সেটা মেনে চলুন। আমরা এইটুকুই ওঁদের জন্য করতে পেরেছি স্যার।
মোদিজী - ভাবনা জি, আপনার সঙ্গে কথা বলে আমার খুব ভালো লেগেছে, আপনি অনেক কথা জানালেন। আপনার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বললেন তাই অবশ্যই দেশবাসীর কাছে এর একটা ইতিবাচক বার্তা পৌঁছবে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাবনা জি।
ভাবনা - থ্যাংক ইউ সো মাচ স্যার থ্যাংক ইউ সো মাচ। জয় হিন্দ।
মোদিজী - জয় হিন্দ।
ভাবনা জী এবং আপনাদের মত হাজার হাজার নার্স ভাই বোনেরা নিজেদের দায়িত্ব খুব ভালোভাবে পালন করছেন। এটা আমাদের সবার জন্যই প্রেরণাদায়ক।আপনারা আপনাদের নিজেদের স্বাস্থের দিকেও ভাল করে নজর দিন। নিজেদের পরিবারের দিকেও মনোযোগ দিন।
বন্ধুরা, বেঙ্গালুরু থেকে সিস্টার সুরেখা জী এখন আমাদের সঙ্গে আছেন।সুরেখা জী কে সি জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়ার নার্সিং অফিসার .আসুন তাঁর অভিজ্ঞতাও শুনি-
মোদী জী- নমস্কার সুরেখা জী,
সুরেখা- আমি আমাদের দেশের প্রধান মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পেরে সত্যি গর্বিত ও সম্মানিত বোধ করছি।
মোদীজী- সুরেখা জী আপনি ও আপনার সহকর্মী নার্স এবং হাসপাতালের কর্মীরা অসাধারণ কাজ করছেন। ভারতবর্ষ আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে যারা লড়াই করছেন সেই সব নাগরিকদের আপনি কি বলতে চান?
সুরেখা জী- হ্যাঁ স্যার, একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হওয়ার সুবাদে আমি সবাইকে বলতে চাই যে নিজের প্রতিবেশিদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করুন। প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষা ও সঠিক ট্র্যাকিং মৃত্যুহার কমাতে সাহায্য করবে, এবং আরো বলতে চাই যে যদি কোন লক্ষণ দেখেন তবে সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আলাদা রাখুন ও নিকটবর্তী কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অবিলম্বে চিকিৎসা শুরু করুন।সমাজে এই রোগ সম্বন্ধে সচেতনতা জরুরী, আমাদের আশাবাদী হওয়া উচিত,ভয় পাবেন না ও দুশিন্তা করবেন না। এতে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়।আমরা আমাদের সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ ও একটা টিকার জন্য গর্বিতও। আমি টিকা নিয়েছি। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে ভারতের নাগরিকদের একটা কথা বলতে চাইব যে কোন টিকাই সঙ্গে সঙ্গে ১০০ ভাগ নিরাপত্তা দিতে পারেনা । প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে ও সময় লাগে। টিকা নিতে ভয় পাবেন না। নিজেরা টিকা নিন, এর সামান্য কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। আমি বলতে চাই সবাই বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন, অসুস্থ মানুষদের থেকে দূরে থাকুন, বার বার নাকে মুখে চোখে অকারণে হাত দেবেন না। শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখুন, সঠিক ভাবে মাস্ক পরুন, বারবার হাত ধুয়ে নিন এবং ঘরোয়া শুশ্রুষাগুলি যতটা সম্ভব পালন করুন। আয়ূর্বেদিক কোয়াত পান করুন,গরম জলের ভাপ নিন গার্গল করুন ও নিশ্বাস প্রশ্বাসের কিছু ব্যায়াম করতে পারেন, সবশেষ কিন্তু শেষ কথা নয়, সামনের সারিতে থাকা কোভিড যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখুন। আমরা আপনাদের সমর্থন ও সহযোগিতা চাই। আমরা এক সঙ্গে লড়াই করব, এভাবেই আমরা অতিমারীকে হারাতে পারব। মানুষের জন্য এটাই আমার বার্তা স্যার।
মোদীজী- ধন্যবাদ সুরেখা জী ।
সুরেখা জী--ধন্যবাদ স্যার ।
সুরেখা জী, সত্যিই আপনি খুব কঠিন সময়ে হাল ধরে আছেন। আপনি নিজের যত্ন নিন। আপনার পরিবারের প্রতিও আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল। আমি দেশবাসীকেও বলতে চাই যে যেমনটা ভাবনা জী ও সুরেখা জী নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে বললেন, করোনার সঙ্গে লড়বার জন্য ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখা খুব জরুরী, দেশবাসীকে এটা বজায় রাখতে হবে।
বন্ধুরা, ডাক্তার এবং নার্সিং স্টাফেরদের সঙ্গে সঙ্গে ল্যাব টেকনিশিয়ান ও অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারদের মতো ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কাররাও ঈশ্বরের মতো কাজ করছেন । যখন কোনো আম্বুল্যান্স কোনো রোগীর কাছে পৌঁছয় তখন তাকে দেবদূত বলে মনে হয়। এঁদের সবার কাজের ব্যাপারে এঁদের অভিজ্ঞতার ব্যাপারে দেশের সবার জানা উচিত।আমার সঙ্গে এখন এমনই এক ভদ্রলোক আছেন শ্রী প্রেম বর্মা , যিনি একজন অ্যাম্বুল্যান্স ড্রাইভার, এঁর নাম শুনেই তা বোঝা যায়। প্রেম বর্মা জী নিজের কাজ, নিজের কর্তব্য সম্পুর্ণ প্রেম ও নিষ্ঠা র সঙ্গে করেন। আসুন ওঁর সাথে কথা বলি-
মোদী জী- নমস্কার প্রেম জী,
প্রেম জী- নমস্কার মোদীজি,
মোদীজী- ভাই প্রেম ,
প্রেম জী- হ্যাঁ স্যার ,
মোদীজী- আপনি আপনার কাজের ব্যাপারে
প্রেম জী- হ্যাঁ স্যার ,
মোদী জী- একটু বিস্তারিত ভাবে জানান, আপনার যা অভিজ্ঞতা সেটাও জানান,
প্রেম জী-আমি ক্যাটের অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার, যখনই কন্ট্রোল আমাদের ট্যাবে কল করে, ১০২ থেকে যখন কল গুলো আসে আমরা রোগীদের কাছে চলে যাই। এইভাবে আমি দু বছর ধরে ক্রমাগত এই কাজটিই করে আসছি। নিজের কিট পরে নিজের গ্লাভস মাস্ক পরে, রোগী যেখানে ড্রপ করতে বলেন, যেকোনো হসপিটালে, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে সেখানে পৌঁছে করি।
মোদীজী- আপনি টিকার দুটো ডোজই পেয়ে গেছেন নিশ্চয়।
প্রেম জী- হ্যাঁ স্যার
মোদীজী- তাহলে অন্যরা টিকা নিক। এইব্যাপারে আপনি কি বলতে চান?
প্রেম জী- নিশ্চয় স্যার। সবারই এই ডোজ নেওয়া উচিত আর এটা পরিবারের জন্যেও ভালো। এখন আমার মা বলেন এই চাকরী ছেড়ে দাও। আমি বলেছি, মা, যদি আমি চাকরি ছেড়ে বসে থাকি তবে রোগীদের কে কিভাবে পৌঁছে দেবে? কারন এই করোনার সময়ে সবাই পালাচ্ছে।সবাই চাকরি ছেড়েছুড়ে চলে যাচ্ছে। মা ও আমায় বলেন এই চাকরি ছেড়ে দিতে। আমি বলেছি না মা আমি চাকরি ছাড়ব না।
মোদীজী- মাকে কষ্ট দেবেন না, মাকে বুঝিয়ে বলবেন,
প্রেম জী- হ্যাঁ ,
মোদী জি- কিন্তু এই যে আপনি মায়ের কথা বললেন,
প্রেম জী- হ্যাঁ,
মোদী জী- এটা খুবই মর্মস্পর্শী,
প্রেম জী- হ্যাঁ
মোদীজী-আপনার মাকেও,
প্রেম জী- হ্যাঁ
মোদীজী- আমার প্রণাম জানাবেন,
প্রেম জী- নিশ্চয়,
মোদীজী- হ্যাঁ
প্রেম জী- হ্যাঁ
মোদীজি-প্রেম জী আমি আপনার মাধ্যমে ,
প্রেম জী- হ্যাঁ
মোদীজী- এই যারা অ্যাম্বুল্যান্স চালায় আমাদের সেই ড্রাইভাররাও
প্রেম জী- হ্যাঁ
মোদীজী - বড় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন,
প্রেম জী- হ্যাঁ,
মোদীজী- আর সবার মায়েরা কি ভাবেন,
প্রেম জী- নিশ্চয় স্যার,
মোদীজী- এই কথা যখন শ্রোতা দের কাছে পৌঁছবে।
প্রেম জী- হ্যাঁ,
মোদীজি- আমি নিশ্চিত জানি যে তাদের ও হৃদয় স্পর্শ করবে।
প্রেম জী- হ্যাঁ,
মোদীজি- প্রেম জি অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনি তো প্রায় প্রেমের গঙ্গা বইয়ে দিচ্ছেন।
প্রেম জী- ধন্যবাদ স্যার,
মোদীজী- ধন্যবাদ ভাই,
প্রেম জী- ধন্যবাদ,
বন্ধুরা, প্রেমজী এবং আরো এরকম হাজার হাজার মানুষ,আজ নিজের জীবন বাজি রেখে মানুষের সেবা করে চলেছেন।করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে যতো জীবন বাঁচছে তাতে অ্যম্বুলেন্স ড্রাইভারদের ও বিশাল বড় অবদান আছে। প্রেম জী আপনাকে ও সারাদেশে আপনার সব সঙ্গীকে আমি অনেক অনেক সাধুবাদ জানাই। আপনি সময়ে পৌঁছোন, জীবন বাঁচান।
আমার প্রিয় দেশবাসী,এটা ঠিক যে করোনায় বহু মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন , কিন্তু করোনায় সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের সংখ্যাও কিন্তু ততোটাই।গুরুগ্রামের প্রীতি চতুর্বেদী ও সম্প্রতি করোনা কে হারিয়ে দিয়েছেন। প্রীতি জী “মন কি বাত” এ আমাদের সাথে যুক্ত হচ্ছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা আমাদের সবার খুব কাজে লাগবে।
মোদীজী- প্রীতি জি নমস্কার
প্রীতি জি- নমস্কার স্যার আপনি কেমন আছেন?
মোদীজী- আমি ভাল আছি, সবথেকে আগে আমি আপনাকে কোভিড-১৯ এ
প্রীতি জি – হ্যাঁ
মোদীজী- সাফল্যের সঙ্গে লড়বার জন্যে
প্রীতি জি –হ্যাঁ
মোদীজী-প্রশংসা জানাই
প্রীতি জি – অনেক ধন্যবাদ স্যার
মোদীজী- আপনার স্বাস্থ্য আরো দ্রুত ভালো হয়ে উঠুক এই কামনা করি
প্রীতি জি –ধন্যবাদ স্যার
মোদীজী- প্রীতি জি
প্রীতি জি –হ্যাঁ স্যার
মোদীজী- এতে কি শুধু আপনিই অসুস্থ হয়েছিলেন নাকি আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও সংক্রমিত হয়েছিলেন?
প্রীতি – না না স্যার আমারি শুধু হয়েছিল।
মোদিজি- যাক ঈশ্বরের অসীম কৃপা। আচ্ছা আমি চাই
প্রীতি –হ্যাঁ স্যার।
মোদিজি- যে আপনি যদি আপনার কষ্টের সময়ের অভিজ্ঞতার কথা সবাইকে জানান তবে হয়তো শ্রোতারাও এই রকম সময়ে কিভাবে নিজেদের সামলাবেন তার একটা পথনির্দেশ পাবেন।
প্রীতি ---হ্যাঁ স্যার নিশ্চয়।স্যার গোড়ার দিকে আমার খুব কুঁড়েমি , খুব আলস্য আলস্য লাগত আর তার পরে না আমার গলা একটু একটু খুশ খুশ করতে লাগল, এরপর আমার মনে হল যে এগুলো লক্ষণ , তাই আমি টেস্ট করাবার জন্যই টেস্ট করালাম , পরের দিন রিপোর্ট আসা মাত্রই যেই দেহলাম আমি পজিটিভ, আমি নিজেকে কোয়ারান্টিন করে ফেললাম।একটা ঘরে আইসোলেট করে আমি ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করলাম ।ওদের বলে দেওয়া ওষুধও শুরু করে দিলাম।
মোদীজি- তাহলে আপনার এই পদক্ষেপ নেবার কারণে আপনার পরিবার রক্ষা পেল।
প্রীতি- হ্যাঁ স্যার, সবারই টেষ্ট পরে করানো হয়ে ছিল। সবাই নেগেটিভ ছিল। আমিই পজিটিভ ছিলাম। আগেই আমি নিজেকে একটা ঘরে আইসোলেট করে নিয়ে ছিলাম। নিজের প্রয়োজনের সব জিনিসপত্র নিয়ে আমি নিজেই ঘরে বন্ধ ছিলাম। তার সঙ্গে সঙ্গে আমি ডাক্তারদের দেওয়া ওষুধ ও শুরু করে দিয়ে ছিলাম।স্যার আমি না ওষুধের সঙ্গে যোগ ব্যায়াম, আয়ূর্বেদিক ও শুরু করে দিয়ে ছিলাম, আর আমি কোয়াত খাওয়াও শুরু করেছিলাম। আর স্যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবার জন্য আমি যখনই খেতাম হেলদি ফুড, মানে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতাম। আমি প্রচুর ফ্লুইড খেয়েছি, স্টিম নিয়েছি গার্গল করেছি আর গরম জল খেয়েছি। আমি সারাদিন ধরে এই সব করেছি রোজ। আর স্যার সব থেকে বড় কথা আমি বলতে চাই যে একদম ঘাবড়াবেন না। মানসিক ভাবে খুব স্ট্রং থাকতে হবে, যার জন্য আমি যোগ ব্যায়াম , ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতাম, ওটা করলে আমার খুব ভাল লাগতো।
মোদীজী- হ্যাঁ আচ্ছা প্রীতি জী যখন আপনার এই প্রক্রিয়া সম্পুর্ণ হয়ে গেল। আপনি সংকট মুক্ত হলেন
প্রীতি- হ্যাঁ
মোদীজি- এখন আপনার রিপোর্টও নেগেটিভ
প্রীতি- হ্যাঁ স্যার
মোদীজী- তাহলে আপনি আপনার স্বাস্থের জন্য, এখন কি করছেন?
প্রীতি- স্যার প্রথমত আমি যোগ ব্যায়াম বন্ধ করিনি
মোদীজি- হ্যাঁ
প্রীতি-ঠিক আছে, আমি এখোনো কোয়াত খাচ্ছি আর নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল রাখবার জন্য আমি সুষম স্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছি এখনো।
মোদীজি-হ্যাঁ
প্রীতি- আমি যেমন আগে নিজেকে খুব অবহেলা করতাম সেদিকে এখন খুব মনোযোগ দিচ্ছি ।
মোদিজি- ধন্যবাদ প্রীতি জি
প্রীতি- অনেক ধন্যবাদ স্যার
মোদীজি-আপনি আমাদের যা জানালেন আমার মনে হয় এটা বহু মানুষের কাজে লাগবে , আপনি সুস্থ থাকুন আপনার পরিবারের লোকেরা সুস্থ থাকুক, আপনাকে আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ যেমন আমাদের চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত লোকেরা, সামনের সারিতে থাকা কর্মীরা দিন রাত সেবার কাজ করে যাচ্ছেন ।তেমনই সমাজের অন্য লোকেরাও এই সময়ে পিছিয়ে নেই। দেশ আবার একবার একজোট হয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে । এই সময়ে আমি দেখতে পাচ্ছি কেউ কোয়ারান্টিনে থাকা পরিবারের জন্য ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে , কেউ সব্জী দুধ ফল ইত্যাদি পৌঁছে দিচ্ছে । কেউ বিনা মূল্যে রোগীদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা দিচ্ছে। এই কঠিন সময়েও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি এগিয়ে এসে অন্যের সাহায্যের জন্য যেটুকু করা সম্ভব করার চেষ্টা করছে। এবার গ্রামেও নতুনভাবে সচেতনতা দেখা যাচ্ছে । কঠোর ভাবে কোভিড নিয়মের পালন করে মানুষ নিজের গ্রামকে করোনা থেকে বাঁচাচ্ছেন, যারা বাইরে থেকে আসছেন তাদের জন্যেও সঠিক ব্যাবস্থা করা হচ্ছে। শহরেও তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে এসেছেন। নিজেদের এলাকায় যাতে করোনা কেস না বাড়ে তার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।অর্থাৎ এক দিকে দেশ দিনরাত হাসপাতাল, ভেন্টিলেটর আর ওষুধ নিয়ে কাজ করছে তো অন্য দিকে দেশের মানুষ ও জানপ্রাণ দিয়ে করোনার চ্যালেঞ্জের সঙ্গে যুদ্ধ করছে।এই চিন্তাটা আমাদের অনেক শক্তি দেয়, অনেক বিশ্বাস দেয়। যা যা চেষ্টা হচ্ছে তা বিরাট বড় সমাজ সেবা। এতে সমাজের শক্তি বাড়ে।
আমার প্রিয় দেশবাসী আজ মন কি বাত এর পুরো আলোচনাটাই আমি করোনা মহামারীর ওপরেই রেখেছিলাম কারণ এই রোগকে হারানোই এখন আমাদের প্রাথমিকতা। আজ ভগবান মহাবীর জয়ন্তীও। এর জন্য আমি প্রত্যেক দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানাই।ভগবান মহাবীরের বার্তা আমাদের তপস্যা ও আত্মসংযমের প্রেরনা দেয়। এখন রমজানের পবিত্র মাসও চলছে, সামনে বুদ্ধপূর্ণিমা। গুরু তেগবাহাদুরের চারশোতম প্রকাশ পর্বও আছে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন পঁচিশে বৈশাখ –রবীন্দ্রজয়ন্তীও আছে, এগুলো সবই আমাদের নিজেদের কর্তব্য করে যাওয়ার প্রেরণা দেয়। একজন নাগরিক হওয়ার সুবাদে আমরা আমাদের নিজেদের জীবনে যতটা কুশলতার সঙ্গে নিজেদের কর্তব্য পালন করব, ততই দ্রুতগতিতে সংকট মুক্ত হয়ে আমরা ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাব। এই কামনার সঙ্গে আমি আপনাদের সবাইকে আবার একবার বলতে চাই যে টিকা সবাইকে নিতে হবে এবং সাবধান ও থাকতে হবে। ‘দবাই ভী- কড়াই ভী’। এই মন্ত্র কখোনোই ভুললে চলবেনা। আমরা একসঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি এই বিপদ থেকে বেরিয়ে আসব। এই বিশ্বাস সহ আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার! এবারের ‘মন কি বাত’ এর জন্য যেসব চিঠিপত্র এসেছে, মন্তব্য এসেছে, যেসব ইনপুট আসে, সেগুলিতে যখন আমি চোখ বোলাচ্ছিলাম তখন দেখলাম বহু মানুষ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা স্মরণ করেছেন। মাই গভে এরিয়ান শ্রী, বেঙ্গালুরু থেকে অনুপ রাও, নয়ডা থেকে দেবেশ, ঠানে থেকে সুজিত এঁরা সবাই বলেছেন, মোদিজী, এবার "মন কি বাত" এর ৭৫ তম এপিসোড। এর জন্য আপনাকে অভিনন্দন। আপনারা যে এত ভালোভাবে ‘মন কি বাত’ শুনে আসছেন এবং এর সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন তার জন্য আমি আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। এটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়, আনন্দের বিষয়। আমার তরফ থেকেও আপনাদের তো ধন্যবাদ জানাচ্ছিই, সেইসঙ্গে ‘মন কি বাত’ -এর সকল শ্রোতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি কারণ আপনাদের সাহায্য ছাড়া এই যাত্রা সম্ভবই হত না। মনে হয় যেন এই গতকালেরই কথা, যেদিন আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে এই মতাদর্শগত যাত্রা শুরু করেছিলাম। সেদিন তেসরা অক্টোবর ২০১৪, বিজয়া দশমীর পবিত্র উৎসব ছিল। আর কি যোগাযোগ দেখুন, আজ হোলিকা দহন! "একটি প্রদীপ থেকে অন্যটি জ্বলুক এবং আমাদের দেশ আলোকিত হোক" – এই ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা এই পথে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা দেশের প্রতিটি প্রান্তের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাঁদের অসাধারণ কাজের সম্পর্কে জেনেছি। আপনাদেরও নিশ্চয়ই অভিজ্ঞতা হয়েছে যে আমাদের দেশের দূর-দূরান্তে, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কত অভূতপূর্ব ক্ষমতা রয়েছে। ভারত মাতার কোলে কেমন সব রত্ন লালিত পালিত হচ্ছে। এটা আমাদের নিজেদের কাছেও সমাজকে দেখার, জানার, সমাজের সামর্থ্যকে চেনার একটা সুযোগ। আমার জন্য তো এটা এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা। এই ৭৫ পর্বের সময় কালে কত কত বিষয়ের কথা উঠে এসেছে। কখনও নদীর কথা, কখনো হিমালয়ের শৃঙ্গের কথা, কখনো মরুভূমির কথা, কখনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা, আবার কখনো মানবসেবার অগণিত কাহিনীর অনুভূতি, কখনো প্রযুক্তির আবিষ্কার আবার কখনো কোন অজানা, প্রত্যন্ত অঞ্চলের নতুন কিছু করে দেখানো কোন ব্যক্তির অভিজ্ঞতার কথা। আবার দেখুন, স্বচ্ছতার কথা হোক কিংবা আমাদের ঐতিহ্য রক্ষা করার আলোচনা হোক, বা শুধু এটুকুই নয়, খেলনা বানানোর কথা হোক, কি ছিল না সেখানে! কতগুলো বিষয় আমরা ছুঁয়ে গেছি তা সম্ভবত গুনে শেষ করা যাবে না। এই সময়ের মধ্যে মাঝে মাঝে আমরা মহান ব্যক্তিদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছি, তাঁদের সম্বন্ধে জেনেছি, যাঁরা ভারতের নির্মাণে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন। আমরা বহু বিশ্বজনীন প্রসঙ্গ নিয়েও কথা বলেছি। সেগুলি থেকে অনুপ্রাণিত হওয়ার চেষ্টা করেছি। অনেক কথা আপনারা আমাকে বলেছেন, বহু ধারণা দিয়েছেন। এক দিক থেকে এই মতাদর্শগত যাত্রায় আপনারাও সঙ্গে সঙ্গে চলেছেন, যুক্ত থেকেছেন এবং নতুন কিছু না কিছু যোগও করেছেন। আমি আজ এই ৭৫ তম পর্বের সময় সবার আগে ‘মন কি বাত’-কে সফল করার জন্য, সমৃদ্ধ করার জন্য এবং এর সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য প্রত্যেক শ্রোতাকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার প্রিয় দেশবাসী, দেখুন কত বড় শুভ যোগাযোগ! আজ আমার ৭৫তম "মন কি বাত" করার দিন, আর এই মাস স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে "অমৃত মহোৎসব" শুরু হওয়ার মাস। "অমৃত মহোৎসব" ডান্ডি যাত্রার দিন থেকে শুরু হয়েছিল এবং ১৫ই অগাস্ট ২০২৩ পর্যন্ত চলবে। "অমৃত মহোৎসব" এর অনুষ্ঠান সারাদেশে নিয়মিতভাবে হচ্ছে। আলাদা আলাদা স্থানে এই অনুষ্ঠানের ছবি, তথ্য মানুষ শেয়ার করছেন। নমো অ্যাপে এমনই কিছু ছবির সঙ্গে সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের নবীন আমায় একটা বার্তা পাঠিয়েছেন। উনি লিখেছেন যে উনি 'অমৃত মহোৎসবের' কার্যকলাপ দেখেছেন এবং ঠিক করেছেন যে নিজেও স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত এরকম কমপক্ষে ১০টি জায়গায় যাবেন। ওঁর তালিকায় প্রথম নামটি ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্মস্থান। নবীন লিখেছেন যে, ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী স্বতন্ত্র সৈনিকদের কাহিনী তিনি দেশের অন্য প্রান্তে পৌঁছে দেবেন। ভাই নবীন, আপনার এই চিন্তা-ভাবনার জন্য আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুরা, কোন স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াইয়ের গল্প হোক, কোন জায়গার ইতিহাস হোক, দেশের কোন সাংস্কৃতিক কাহিনী হোক, ‘অমৃত মহোৎসব’ এর সময়ে আপনি সেটিকে সমগ্র দেশের সামনে তুলে ধরতে পারেন, সকল দেশবাসীর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মাধ্যম হতে পারেন। আপনারা দেখবেন, দেখতে দেখতে 'অমৃত মহোৎসব' এমন অনেক অনুপ্রেরণামূলক অমৃত বিন্দুতে পূর্ণ হবে, আর তারপর এমন অমৃত ধারা বইতে থাকবে, যে আমাদের ভারতের স্বাধীনতার একশ বছর পরেও তা প্রেরণা যোগাবে। দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে, কিছু করার উদ্যমের জন্ম দেবে। স্বাধীনতার জন্য লড়াইতে আমাদের সৈনিকরা কতই না কষ্ট শুধু এইজন্য সহ্য করেছেন, কারণ, তাঁরা দেশের জন্য ত্যাগ এবং বলিদানকে নিজেদের কর্তব্য মনে করতেন। ওঁদের ত্যাগ এবং বলিদানের অমর কাহিনী এখন যেন আমাদের কর্তব্যের পথে প্রেরণা দান করে যেমন গীতায় ভগবান কৃষ্ণ বলেছিলেন
“নিয়তং কুরু কর্ম ত্বং কর্ম জ্যায়ো হ্যকর্মণঃ”
এই ভাবনার সঙ্গে আমরা সকলে নিজেদের প্রতিদিনের কর্তব্যকে সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব এবং স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের মানে এই যে আমরা নতুন সংকল্প গ্রহণ করব। সেই সংকল্প পূর্ণ করার জন্য মনপ্রাণ এক করে চেষ্টা করব আর সংকল্প তেমনি হবে যা সমাজের ভালোর জন্য হবে, দেশের ভালোর জন্য হবে, ভারতবর্ষের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য হবে, আর সংকল্প তেমন হবে যাতে আমার, নিজের, নিজস্ব কিছু দায়িত্ব থাকবে, আমাদের নিজেদের কর্তব্য যুক্ত থাকবে। আমার বিশ্বাস গীতার মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকার এই সুবর্ণ সুযোগ আমাদের কাছে আছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, গতবছর এই মার্চ মাসই ছিল, দেশ প্রথমবার জনতা কারফিউ শব্দটি শুনেছিল। কিন্তু এই মহান দেশের মহান দেশবাসীর মহাশক্তির অনুভব দেখুন, জনতা কারফিউ পুরো বিশ্বের জন্য এক আশ্চর্য ঘটনার নিদর্শন রাখল। অনুশাসনের এক অভূতপূর্ব উদাহরণ ছিল এটা, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই একটা বিষয়ে অবশ্যই অহংকার করবে। একইভাবে উল্লেখ্য আমাদের করোনা যোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানানো, আদর প্রকাশ, থালা বাজানো, তালি দেওয়া, প্রদীপ জ্বালানো। আপনাদের কোনো ধারনাই নেই এটা করোনা যোদ্ধাদের মনকে কিভাবে স্পর্শ করেছিল, আর এটাই তো কারণ, যে সারা বছর ওঁরা ক্লান্ত না হয়ে, একটুও না থেমে লড়ে গেছেন। দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জীবন বাঁচানোর জন্য মন প্রাণ এক করে পরিশ্রম করেছেন। গতবছর এই সময়ে প্রশ্ন ছিল যে করোনার টীকা কবে আসবে। বন্ধুরা, আমাদের সকলের জন্য এটা গর্বের বিষয় যে আজ ভারত পৃথিবীর সবথেকে বড় টিকাকরণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। টিকাকরণ কর্মসূচির বিষয়ে আমায় ভুবনেশ্বরের পুষ্পা শুক্লাজি লিখেছেন। ওঁর বক্তব্য, বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের মধ্যে টিকা নিয়ে যে আগ্রহ দেখা গেছে, আমি যেন 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে সেই বিষয়ে কথা বলি। বন্ধুরা এটা সঠিক যে, দেশের প্রত্যেক প্রান্ত থেকে আমরা এমন সব খবর শুনতে পাচ্ছি, এমন ছবি দেখতে পাচ্ছি, যে আমাদের মনকে তা স্পর্শ করছে। উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরের ১০৯ বছরের বৃদ্ধা মা রাম দুলেয়াজি টিকা নিয়েছেন, এমনি দিল্লিতেও ১০৭ বছরের কেবল কৃষ্ণ জি টিকার ডোজ নিয়েছেন। হায়দ্রাবাদের ১০০ বছরের জয় চৌধুরী জিও টিকা নিয়েছেন এবং সকলের কাছে টিকা নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। আমি ফেসবুক- টুইটারেও দেখছি, যে লোকজন নিজেদের বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠদের টিকা নেওয়ার পরে তাঁদের ছবি আপলোড করছেন। কেরলের একজন যুবক আনন্দন নায়ার তো এই বিষয়টির একটি নতুন নাম দিয়েছেন, ‘ভ্যাকসিন সেবা’। এই একইধরনের বার্তা দিল্লি থেকে শিবানী, হিমাচল থেকে হিমাংশু, এবং অন্য অনেক যুবক-যুবতীরাও পাঠিয়েছেন। আমি সকল শ্রোতা বন্ধুদের এইধরনের চিন্তা ভাবনার জন্য প্রশংসা করছি। এই সব কিছুর মধ্যেও করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের মন্ত্রটাও অবশ্যই মনে রাখতে হবে 'ওষুধও খাবো, নিয়মও মেনে চলবো’। আর শুধু আমিই বলে যাবো তা কিন্তু নয়। আমাদের বাঁচতেও হবে, বলতেও হবে, জানাতেও হবে বাকি লোকেদের, যে 'ওষুধও খাবো, নিয়মও মেনে চলবো’। এরজন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি আজ ইন্দোরবাসী সৌম্যাজিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে চাই, তিনি একটি বিষয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং এই বিষয়টা সম্পর্কে 'মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে বলতে বলেছেন। বিষয়টা হল, ভারতবর্ষের ক্রিকেটার মিতালী রাজজির নতুন রেকর্ড। মিতালীজি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি দশ হাজার রান করেছেন। ওঁর এই সাফল্যে অনেক অনেক অভিনন্দন। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে উনিই একমাত্র মহিলা খেলোয়াড় যিনি সাত হাজার রান করেছেন। মহিলা ক্রিকেট খেলায় ওঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। দুই দশকেরও বেশি কেরিয়ারে, মিতালী রাজজি হাজারো-লক্ষ মানুষকে প্রেরণা দিয়েছেন। ওঁর কঠোর পরিশ্রম এবং সাফল্যের কাহিনী শুধুমাত্র মহিলা ক্রিকেটারদের নয় পুরুষ ক্রিকেটারদের জন্যও অনুপ্রেরণা।
বন্ধুগণ, এটা বেশ মজার বিষয়, এই মার্চ মাসেই যখন আমরা আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস পালন করছিলাম, সেইসময়ই অনেক মহিলা খেলোয়াড়, মেডেল পেয়েছেন এবং রেকর্ডস গড়েছেন। দিল্লিতে আয়োজিত আইএসএসএফ ওয়ার্ল্ড কাপে, শুটিং এ ভারত শীর্ষ স্থানে ছিল। স্বর্ণপদক প্রাপ্তি সংখ্যাতেও, ভারত নজির স্থাপন করেছে। এটা ভারতের মহিলা এবং পুরুষ শুটার্সদের উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনের জন্যই সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যেই, পি বি সিন্ধু জি, বিডব্লুএফ সুইস ওপেন সুপার ৩০০ টুর্নামেন্টে রৌপ্য পদক জিতেছেন। এখন, শিক্ষা থেকে শুরু করে শিল্পোদ্যো্গ, সশস্ত্র বাহিনী থেকে শুরু করে বিজ্ঞান- প্রযুক্তিতেও, সব জায়গায় দেশের মেয়েরা নিজেদের আলাদা পরিচয় তৈরি করছে। আমি বিশেষভাবে খুশি এই কথা ভেবে যে মেয়েরা খেলাধুলাতেও নিজেদের স্থান তৈরি করছে। পেশাগত জীবিকা হিসাবে খেলাধুলাও একটি পছন্দের বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন আগেই হয়ে যাওয়া ম্যারিটাইম ইন্ডিয়া সামিটের কথা আপনাদের সবার মনে আছে তো? এই শীর্ষ সম্মেলনে আমি কি বলেছিলাম, আপনাদের কি মনে আছে? স্বাভাবিক, যে এতো অনুষ্ঠান হতে থাকে, এত কথা হতে থাকে, সব কথা কি করে মনে থাকবে? আর এত মনোযোগ দেওয়া কি করে সম্ভব? খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু, আমার খুব ভালো লেগেছে, যে আমার একটি অনুরোধকে গুরু প্রসাদজি খুব উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আমি এই শীর্ষ সম্মেলনে , দেশের লাইট হাউস কমপ্লেক্সের আশেপাশে পর্যটনের সুবিধা উন্নত করার কথা বলেছিলাম। গুরু প্রসাদজি ২০১৯ সালে তামিলনাড়ুর দুটি লাইট হাউস- চেন্নাই লাইট হাউস এবং মহবালিপুরম লাইট হাউস ঘোরার অনুভূতি ভাগ করে নিয়েছেন। উনি বেশ মজার ঘটনা বলেছেন যা শুনলে, মন কি বাত অনুষ্ঠানের শ্রোতা বন্ধুরাও অবাক হয়ে যাবেন। যেমন চেন্নাই লাইট হাউস, এটা বিশ্বের অন্যতম লাইট হাউস, যেখানে এলিভেটর আছে। শুধু তাই নয়, এটা একমাত্র লাইট হাউস যা শহরের সীমার মধ্যেই অবস্হিত। এর মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সোলার প্যানেলও রয়েছে। গুরুপ্রসাদজি লাইট হাউসের হেরিটেজ মিউজিয়াম সম্পর্কেও বলেছেন যা স্মুদ্র যাত্রার ইতিহাসকে তুলে ধরে। মিউজিয়ামে তেলে জ্বালানো বড় বড় বাতি, কেরোসিনের বাতি, পেট্রোলিয়াম ভেপার এবং পুরনো দিনের ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক বাতি প্রদর্শিত হয়। ভারতের সবচেয়ে পুরনো লাইট হাউস – মহাবালিপুরাম লাইট হাউস সম্পর্কেও গুরুপ্রসাদজি বিস্তারিত বিবরণ লিখেছেন। ওঁর মতে এই লাইটহাউসের ঠিক পাশেই কয়েকশো বছর আগে পল্লব রাজা মহেন্দ্র বর্মন-প্রথম "উল্কনেস্বরা" মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।
বন্ধুরা, "মন কি বাত"-এর সময়, আমি পর্যটনের বিভিন্ন দিক গুলি নিয়ে বহুবার কথা বলেছি, কিন্তু এই লাইটহাউস, ট্যুরিজমের প্রেক্ষাপটে অবশ্যই অনন্য। সুন্দর গঠনের জন্য লাইট হাউস বরাবরই মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। পর্যটন কে উৎসাহ দিতে ভারতেও ৭১ টি লাইট হাউস চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সমস্ত লাইট হাউজ এর মধ্যে তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী যাদুঘর, অ্যাম্পফি থিয়েটার, মুক্তমঞ্চ, ক্যাফেটেরিয়া , শিশু উদ্যান,পরিবেশ বান্ধব কটেজ এবং মনোরম পরিবেশ তৈরি করা হবে। অবশ্য, লাইট হাউসের প্রসঙ্গ যখন উঠলোই তখন আমি এক অনন্য লাইট হাউসের সম্পর্কে আপনাদের জানাতে চাই। এই লাইটহাউস গুজরাটের সুরেন্দ্রনগর জেলায় জিনঝুয়াড়ায় রয়েছে। জানেন এই লাইট হাউসের বিশেষত্ব কি? বিশেষত্বের কারণ, যেখানে এই লাইট হাউস রয়েছে, সেখান থেকে সমুদ্রতীর প্রায় ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে। আপনি এই গ্রামের মধ্যে বেশ কিছু প্রস্তরখণ্ড পাবেন, যা জানায় যে এই স্থানে একসময় একটি ব্যস্ত বন্দর ছিল। অর্থাৎ বহুকাল আগে সমুদ্র সৈকত জিনঝুয়াড়া পর্যন্ত ছিল। সমুদ্রের ঢেউএর পতন, উত্থান, পশ্চাদপসরণ, পুনরাগমন, এতদূর পর্যন্ত চলে যাওয়া, এও তার এক রূপ। ১০ বছর আগে এই মাসেই জাপানে এসেছিল এক ভয়ংকর সুনামি। এই সুনামিতে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। এমনই এক সুনামি ভারতে ২০০৪ সালে এসেছিল। সুনামির সময় আমরা লাইট হাউসে কর্মরত, আমাদের ১৪ জন কর্মচারীকে হারিয়েছি, যাঁরা আন্দামান নিকোবার আর তামিলনাডুর লাইট হাউসে ডিউটি করছিলেন। অত্যন্ত পরিশ্রমী আমাদের এই লাইট হাউজের কর্মীদের আমার গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই এবং তাদের কাজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করি।
প্রিয় দেশবাসী, জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে নতুনত্ব, আধুনিকতা আবশ্যক, অন্যথায় সেসব কখনও কখনও আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ভারতের কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিকতা এই সময়ের প্রয়োজন। অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমাদের অনেক সময় চলে গেছে। কৃষি ক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে, কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করতে, প্রচলিত কৃষির পাশাপাশি নতুন বিকল্পগুলিকে, নতুন নতুন উদ্ভাবনকে গ্রহণ করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। শ্বেত বিপ্লবের সময় দেশ এই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এখন মৌমাছি পালন-ও এমনই একটি বিকল্প হিসেবে উঠে হয়েছে। মৌমাছি পালন দেশে মধু বিপ্লব বা সুইট রিভলিউশনের ভিত্তি হয়ে উঠছে। বহুসংখ্যক কৃষক এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, উদ্ভাবন করছেন। যেমন পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের একটি গ্রাম গুরদুম। এত উঁচু পাহাড়ে, নানান ভৌগলিক সমস্যা সত্বেও এখানকার মানুষ মৌচাষের কাজ শুরু করেছেন, আর এখন, এই জায়গায় তৈরি মধুর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এতে কৃষকদেরও আয় বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন এলাকার প্রাকৃতিক জৈব মধু সারা দেশে ও বিদেশে পছন্দ করা হয়। এমনই একটি ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা আমার গুজরাতেও আছে। গুজরাতের বনাসকান্থায় ২০১৬ সালে একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে আমি লোকেদের বললাম এখানে এত সম্ভাবনা রয়েছে, কেন বনসকান্থা আর আমাদের এখানকার কৃষকরা মিলে স্যুইট রিভোলিউশনের একটি নতুন অধ্যায় তৈরি করবে না। আপনারা জেনে খুশী হবেন যে, এই কম সময়ে বনসকান্থা মধু উৎপাদনের একটি প্রধান কেন্দ্র তৈরি হয়ে উঠেছে। আজ বনসকান্থার কৃষকেরা মধু থেকে বার্ষিক লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করেন। হরিয়ানার যমুনা নগরেও এরকমই একটি উদাহরণ রয়েছে। যমুনা নগরে কৃষকেরা মৌচাষ করে বছরে কয়েক শো টন মধু উৎপাদন করে নিজেদের আয় বৃদ্ধি করছেন। কৃষকদের এই পরিশ্রমের ফলস্বরূপ দেশে মধু উৎপাদন ক্রমশঃ বাড়ছে,যা বছরে প্রায় সোয়া লাখ টনে গিয়ে পৌঁছেছে। এর মধ্যে থেকে প্রচুর মাত্রায় মধু বিদেশে রপ্তানিও করা হচ্ছে। বন্ধুরা, মৌমাছি প্রতিপালনে শুধু মধু থেকেই আয় হয় তা নয়, এমন কি মৌচাকের মোমও আয়ের এক প্রধান মাধ্যম। ওষুধ তৈরি শিল্প, খাদ্য শিল্প, বস্ত্র ও প্রসাধন সামগ্রী শিল্প౼ সর্বত্র মৌচাকের মোমের চাহিদা রয়েছে। আপাতত আমাদের দেশে মৌচাকের মোম আমদানি করা হয়। কিন্তু আমাদের কৃষকেরা পরিস্থিতি দ্রুত বদলে ফেলছেন, যা একদিক দিয়ে আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে সাহায্য করছে। আজ তো সারা বিশ্ব আয়ূর্বেদ ও প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যসম্মত পণ্যের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এর জন্য মধুর চাহিদা তীব্র গতিতে বাড়ছে। আমি চাই দেশের বেশির ভাগ কৃষকেরা চাষের পাশাপাশি মৌচাকের মোমের সঙ্গেও যুক্ত হোন। এতে কৃষকদের আয় ও বাড়বে আর জীবনের মাধুর্যও বৃদ্ধি পাবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছু দিন আগেই ওয়ার্ল্ড স্প্যারো ডে পালন করা হোল।স্প্যারো অর্থাৎ চড়ুই পাখি। কোথাও একে চকলী বলে, কোথাও চিমনী, কোথাও ঘান চিরিকা বলা হয়। আগে আমাদের ঘরের পাঁচিলে আশেপাশের গাছে চড়ুইয়ের কিচির মিচির শোনা যেত, কিন্তু এখন লোকে চড়ুইকে এই বলে মনে করে যে, শেষ বহু বছর আগে চড়ুই পাখি দেখেছিলাম। আজ আমাদের একে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হচ্ছে। আমার বেনারসের এক বন্ধু ইন্দ্রপাল সিং বত্রা জী এমন একটি কাজ করেছেন যা আমি ‘মন কি বাত’ র শ্রোতাদের অবশ্যই বলতে চাই। বত্রা জী নিজের বাড়িটাকেই চড়ুইপাখির থাকবার জায়গা বানিয়ে দিয়েছেন। ইনি নিজের ঘরে কাঠ দিয়ে এমন বাসা বানিয়ে দিয়েছেন যাতে চড়ুই সহজেই থাকতে পারে। আজ বেনারসের অনেক বাড়িই এই অভিযানে যুক্ত হচ্ছে। এতে বাড়িতে একটা অদ্ভুত প্রাকৃতিক পরিবেশও তৈরি হচ্ছে। আমি চাই যে যেভাবে পারে প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রাণী, পাখি যার জন্যই হোক, কম বেশি চেষ্টা সবাই করুক। যেমন এক বন্ধু বিজয় কুমার কাবী জী। বিজয় জী ওড়িশার কেন্দ্রাপাড়ায় থাকেন। কেন্দ্রাপাড়া সমুদ্রতটে অবস্থিত, এই জন্য এই জেলার কিছু গ্রাম এমন আছে যেখানে সমুদ্রের উঁচু ঢেউ আর ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ থাকে। এতে বহুবার অনেক ক্ষতিও হয়েছে। বিজয়জী অনুভব করলেন যে প্রাকৃতিক দুর্যোগকে যদি কেউ রুখতে পারে তাহলে সেটা প্রকৃতিই পারে। তারপর আর কি- বিজয় জী বড়াকোট গ্রাম থেকে নিজের মিশন শুরু করলেন। উনি ১২ বছর! বন্ধুরা ১২ বছর পরিশ্রম করে গ্রামের বাইরে সমুদ্রের দিকে ২৫ একরের ম্যানগ্রোভ জঙ্গল দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। আজ এই জঙ্গল এই গ্রামকে রক্ষা করছে। এরকম কাজ ওড়িশার পারাদীপ জেলার একজন ইঞ্জিনিয়র অমরেশ সামন্তও করেছেন। অমরেশ জী ছোটো ছোটো জঙ্গল লাগিয়েছেন যাতে আজ অনেক গ্রাম রক্ষা পাচ্ছে। বন্ধুরা, এই ধরণের কাজে যদি আমরা সমাজকেও সঙ্গে নিই তাহলে বৃহৎ ফল পাওয়া যায়। যেমন তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুরে বাসের কনডাক্টার মরিমুথু যোগনাথন জী। যোগনাথন জী নিজের বাসে যাত্রীদের যখন টিকিট দেন, তার সঙ্গে বিনামূল্যে একটা গাছের চারাও দেন। এভাবেই যোগনাথন জী অজস্র বৃক্ষরোপণে সাহায্য করেছেন। যোগনাথন জী নিজের বেতনের একটা বড় অংশ এই কাজে ব্যয় করেন। এখন এটা শোনার পর এমন কে আছেন যে মরিমুথু যোগনাথন জীর প্রশংসা করবেন না। প্রেরনামূলক কাজের জন্য ওঁর এই চেষ্টা কে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ওয়েস্ট থেকে ওয়েলথ অর্থাৎ জঞ্জাল থেকে সম্পদ তৈরির ব্যাপারে আমরা সবাই দেখেওছি, শুনেওছি, আর আমরা সবাইকে বলিও। সেরকমই কিছু জঞ্জালকে মূল্যবান পণ্যে পরিবর্তনের কাজও শুরু হয়েছে। এরকমই একটি উদাহরণ কেরেলার কোচির সেন্ট টেরেসা কলেজের। আমার মনে আছে ২০১৭ তে আমি একবার এই কলেজ ক্যাম্পাসে বুক রিডিং সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। এই কলেজের ছাত্রছাত্রীরা পূনর্ব্যবহারযোগ্য খেলনা তৈরি করছেন, তাও আবার খুবই সৃজনশীল ভাবে। এই ছাত্রছাত্রীরা পুরোনো কাপড়, ফেলে দেওয়া কাঠের টুকরো, ব্যাগ ও বাক্স ব্যবহার করে খেলনা বানানোর কাজ করছেন। কেউ পাজল বানাচ্ছেন, তো কেউ গাড়ি আর ট্রেন বানাচ্ছেন। এখানে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখা হয় যাতে খেলনা সুরক্ষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুবান্ধবও হয়। আর এই পুরো প্রয়াসের আরো একটা ভাল দিক হলো এই খেলনাগুলো অঙ্গনওয়ারী শিশুদের খেলার জন্য দেওয়া হয়, আজ যখন ভারতবর্ষ খেলনার উৎপাদনে অনেক অগ্রগতি ঘটাচ্ছে তখন বর্জ বা নষ্ট জিনিসকে ব্যবহার্য বস্তুতে রূপান্তর করার এই অভিযান নিশ্চিতভাবেই একটি অভিনব প্রয়াস। অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়ায় এক প্রফেসর শ্রীনিবাস পদকান্ডালা। তিনি প্রচুর আকর্ষণীয় কাজ করে চলেছেন। অটোমোবাইলের মেটাল স্ক্র্যাপ দিয়ে ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন, তার তৈরি বিশাল ভাস্কর্য সার্বজনীন পার্কে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে সেই ভাস্কর্য শিল্প দর্শন করছেন। ইলেকট্রনিকন্স এবং অটোমোবাইলের পরিত্যাজ্য ধাতব বস্তু দিয়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য এই সৃষ্টির মধ্যে অভিনবত্ব আছে। তাই আমি আরো একবার কোচি এবং বিজয়ওয়াড়ার সৃষ্টিশীল এই মানুষদের প্রশংসা করছি। সেই সঙ্গে আমি এও প্রত্যাশা করি যে আগামী দিনে আরো বেশি সংখ্যক মানুষ এগিয়ে এসে এমন প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যখন কোন ভারতবাসী পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে যান তখন তিনি গর্ব করে বলতে পারেন যে তিনি একজন ভারতীয়। আমাদের যোগসাধনা, আয়ুর্বেদ, দর্শন, থেকে শুরু করে কি নেই ? সব আছে আমাদের কাছে। যা নিয়ে আমরা গর্বিত হই, গর্বের কথা বলি, সেই সঙ্গে আমাদের স্থানীয় বা আঞ্চলিক ভাষা, পরিচয়, পোশাক, খাদ্য, পানীয়, এসব নিয়েও আমরা গর্ব করি, আমরা নতুনের প্রত্যাশী আর এটাই তো জীবন। কিন্তু সেইসঙ্গে আমরা পুরনোকেও হারাতে চাইনা। প্রচুর পরিশ্রমের সঙ্গে আমাদের নিজেদের চারপাশে বিদ্যমান অপার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং তা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আজ এই কাজ আসামবাসী শিকারি টিসসো জী নিষ্ঠার সঙ্গে করে চলেছেন। কার্বি আঙ্গলং জেলার শিকারি টিসসো জী বিগত কুড়ি বছর ধরে কার্বি ভাষার ডকুমেন্টেশন এর কাজ করে চলেছেন। কোন এক সময় কোন এক যুগে কার্বি ছিল আদিবাসী ভাই-বোনেদের ভাষা। আজ তা মূল ধারা থেকে অদৃশ্য হতে চলেছে। শ্রীমান শিকারি টিসসো জী মনস্থির করেছিলেন তাদের ভাষার নিজস্বতাকে বাঁচাবেন। তাই আজ তার এই উদ্যোগের ফলেই কার্বি ভাষার তথ্যাদি যথেষ্ট পরিমাণে নথিভূক্ত হয়েছে। তার এই প্রচেষ্টার ফলেই তিনি নানা স্থানে প্রশংসা পেয়েছেন এবং পুরস্কৃত হয়েছেন। ‘মন কি বাত অনুষ্ঠান’ এর মাধ্যমে শ্রীমান শিকারি টিসসো জী কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, কোণায় কোণায় হয়তো এই ধরনের আরো অনেক সাধক আছেন, যাঁরা কোন একটি কাজ নিয়ে নিমগ্ন আছেন। আমি তাঁদের সবাইকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যেকোনো নতুন সূচনা অর্থাৎ নিউ বিগিনিং সব সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। নূতন সূচনা কথাটির অর্থ হলো নতুন সম্ভাবনা বা নতুন প্রচেষ্টা। আর নতুন প্রচেষ্টার অর্থ নতুন শক্তি, নতুন উদ্যমতা। এই কারণে আলাদা আলাদা রাজ্য এবং ক্ষেত্রে বিভিন্নতায় পরিপূর্ণ আমাদের সংস্কৃতির যেকোনো সূচনাকে উৎসবের অঙ্গ হিসেবে পালন করার পরম্পরা লক্ষ্য করা যায়। আর বিশেষ করে এই সময়টা নতুন সূচনা আর নতুন উৎসবের আগমনের সময়। হোলিও তো বসন্তের উৎসব হিসেবে মেনে চলার এক পরম্পরা। যে সময়ে আমরা রং নিয়ে হোলি পালন করি, সেই সময় বসন্ত আমাদের চারপাশে নতুন রং ছড়াতে থাকে। এই সময়কালে ফুল ফোটা শুরু হয় এবং প্রকৃতি সজীব হয়ে ওঠে। আমাদের দেশের আলাদা আলাদা স্থানে খুব শীঘ্রই নতুন বছর উদযাপন করা হবে। তা সে উগাদি হোক বা পুথুন্ডি, গুড়ি পড়বা, কিম্বা বিহু, নবরেহ হোক বা পয়লা বৈশাখ বা বৈশাখী। সমগ্রদেশ উৎসাহ, উদ্দীপনা আর নতুন প্রত্যাশার রঙে স্নাত হয়ে উঠবে। এই সময়ে কেরালাও খুব সুন্দর উৎসব ‘বিশু’ উদযাপন করে থাকে। এর পরে দ্রুত চৈত্র নবরাত্রি পার্বণও চলে আসবে। চৈত্র মাসের নবম দিনে আমাদের এখানে রামনবমী পর্ব উদযাপিত হয়। এই পরবকে ভগবান রামের জন্মোৎসবের সঙ্গেই ন্যায় আর পরাক্রমের এক নতুন যুগের সূচনা রূপে মান্যতা দেওয়া হয়। এই সময়ে চতুর্দিকে ধুমধামের সঙ্গেই ভক্তিভাবে পরিপূর্ণ এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যা মানুষকে আরো কাছে টেনে নেয়। সবাইকে পরিবার এবং সমাজের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ করে তোলে। নিজেদের সম্পর্কগুলোকে মজবুত করে। তাই এই পর্ব উপলক্ষে আমি দেশবাসীকে শুভকামনা জানাচ্ছি। বন্ধুরা, চৌঠা এপ্রিল দেশ ইস্টার উদযাপন করবে। যিশুখ্রিস্টের পুনর্জীবনের উৎসব রূপে ইস্টার পালন করা হয়ে থাকে। প্রতীকী হিসেবে ইস্টার জীবনের নতুন সূচনার সঙ্গেই জড়িত। ইস্টার আশার পুনর্জীবনের প্রতীক। এই পবিত্র ও পুণ্য তিথিতে আমি শুধুমাত্র ভারতেরই নয়, সাড়া বিশ্বের খ্রীশ্চান ভাই বোনেদের শুভেচ্ছা জানাই। আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ‘মন কি বাত’ এ আমরা অমৃত মহোৎসব আর দেশের জন্য আমাদের কর্তব্যের কথা বললাম। আমরা অন্যান্য পরব এবং উৎসবের বিষয় নিয়ে চর্চা করলাম। এরই মাঝে আরো একটি পর্ব আসতে চলেছে যা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার আর কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেয়। তা হল ১৪ই এপ্রিল ডক্টর বাবাসাহেব আম্বেদকর এর জন্মজয়ন্তী। এইবার ‘অমৃত মহোৎসব’এ তো এই উপলক্ষটি আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমি বিশ্বাস করি বাবা সাহেবের এই জন্মজয়ন্তীকে আমরা নিশ্চিত ভাবেই স্মরণীয় করে তুলবো। আমাদের কর্তব্যের সংকল্প নিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাবো। এই বিশ্বাসের সঙ্গেই আপনাদের সবাইকে আরো একবার পরব ও উৎসবের শুভকামনা জানাচ্ছি। আপনারা সবাই খুশি থাকুন, সুস্থ থাকুন, আর খুব উৎসাহ উদ্দীপনায় মেতে উঠুন। এই কামনা করে আরো একবার মনে করিয়ে দিচ্ছি ‘দাবাই ভি কড়াই ভি’ । অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
নমস্কার| কাল ছিল মাঘ পূর্ণিমার পরব| মাঘ মাস বিশেষভাবে নদী, সরোবর এবং জলস্রোতের সঙ্গে জুড়ে থাকে বলে মানা হয়| আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে:-
‘মাঘে নিমগ্নাঃ সলিলে সুশীতে, বিমুক্তপাপাঃ ত্রিদিবম প্রয়ান্তি||’
অর্থাৎ, মাঘ মাসে যে কোন পবিত্র জলাশয়ে স্নান করা শুদ্ধ মনে করা হয়| বিশ্বের প্রত্যেক সমাজেই নদীর সঙ্গে জুড়ে থাকা কোন না কোন ঐতিহ্য অবশ্যই থাকে| নদীতটেই অনেক সভ্যতার বিকাশ হয়েছে| আমাদের সংস্কৃতিও যেহেতু হাজার হাজার বছর প্রাচীন, তাই আমাদের এখানে এর বিস্তৃতি অনেক বেশি মাত্রায় দেখতে পাওয়া যায়| ভারতে এমন কোন দিনই হয়তো পাওয়া যাবে না, যেদিন দেশের কোন না কোন প্রান্তে জলের সঙ্গে জুড়ে থাকা কোন না কোন উৎসবের আয়োজন নেই| মাঘের দিনগুলিতে তো অনেক মানুষ নিজের ঘর-পরিবার, সুখ-সুবিধে ছেড়ে গোটা মাস নদীর পারে কল্পবাসে যান| এবার হরিদ্বারে কুম্ভও হতে চলেছে| জল আমাদের জন্য জীবন, আস্থার অপর নাম, আবার বিকাশের ধারাও| জল একদিক থেকে পরশমণি থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ| বলা হয় পরশমনির ছোঁয়ায় লোহা সোনায় পরিবর্তিত হয়| একইভাবে জলের স্পর্শ জীবনের জন্য জরুরি, উন্নয়নের জন্য জরুরি|
বন্ধুগণ, মাঘ মাসকে জলের সঙ্গে যুক্ত করার সম্ভবতঃ আরও এক কারণ আছে, এর পর থেকেই শীত কমে যায়| গরমের পদধ্বনি শোনা যায়| সেজন্যই জল সংরক্ষণের লক্ষ্যে আমাদের এখন থেকেই চেষ্টা শুরু করা উচিৎ| কিছু দিন বাদেই মার্চ মাসের ২২ তারিখে ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াটার ডে’ বা বিশ্ব জল দিবসও আছে|
আমাকে ইউ.পি.-র আরাধ্যাজি লিখেছেন, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ নিজেদের জীবনের অনেক বড় ভাগ জলের অভাব পূরণ করার কাজেই খরচ করেন| ‘জল ছাড়া সবই শূণ্য’ কথাটা এমনি বলা হয়নি| জল সংকট সমাধানের জন্য পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের সুজিতজি আমাকে খুবই ভালো বার্তা পাঠিয়েছেন| তিনি লিখেছেন, প্রকৃতি জল রূপে আমাদের একটি সর্বজনীন উপহার দিয়েছে, তাই তাকে রক্ষা করার দায়িত্বও সর্বজনীন| এটা একদম ঠিক কথা, যেমন সর্বজনীন উপহার, তেমনি সর্বজনীন দায়বদ্ধতাও আছে| সুজিতজির কথা একদম ঠিক! নদী, সরোবর, হ্রদ, বর্ষা বা মাটির নীচের জল প্রত্যেকের জন্য|
বন্ধুগণ, একটা সময় ছিল যখন গ্রামের কুয়ো, পুকুরগুলির যত্ন, সবাই মিলে নিতেন, এখন এরকমই এক প্রচেষ্টা তামিলনাডুর তিরুবন্নামালাইয়ে হচ্ছে| সেখানে স্থানীয় মানুষ নিজেদের কুয়ো সংরক্ষণের জন্য অভিযান চালিয়েছেন| তাঁরা নিজেদের এলাকায় বছরের পর বছর পরিত্যক্ত হয়ে থাকা বারোয়ারি কুয়োকে ফের ব্যবহারের উপযোগী করে তুলছেন|
মধ্যপ্রদেশের অগরোথা গ্রামের ববিতা রাজপুতজিও যা করছেন, তাতে আপনারা সবাই অনুপ্রাণিত হবেন| ববিতাজির গ্রাম বুন্দেলখণ্ডে| তাঁর গ্রামের পাশে কোন এক সময় একটি বড়সড় হ্রদ ছিল, যা এখন শুকিয়ে গেছে| তিনি গ্রামেরই অন্য মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে এই শুকনো হ্রদ পর্যন্ত জল নিয়ে আসার জন্য এক নালা তৈরি করে ফেলেছেন| এই নালার মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গার বৃষ্টির জল সোজা হ্রদে চলে আসতে থাকে| এখন এই হ্রদ জলে ভরে থাকে|
বন্ধুগণ, উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বরে থাকেন জগদীশ কুনিয়াল| তাঁর কর্মকাণ্ডও আমাদের অনেক কিছু শেখায়| জগদীশজির গ্রাম এবং আশেপাশের এলাকাগুলির জলের প্রয়োজন মিটত এক প্রাকৃতিক জলের উৎস থেকে| কিন্তু বেশ কয়েক বছর আগে তা শুকিয়ে যায়| এতে গোটা এলাকাতেই জলের সংকট ক্রমশ গভীর হতে থাকে| জগদীশজি বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে এই সংকট সমাধানের উপায় বের করার কথা ভাবেন| তিনি সেই সমস্ত এলাকার গ্রামের মানুষের সঙ্গে মিলে হাজার হাজার গাছ লাগিয়ে ফেলেন| আজ সেখানকার সেই শুকিয়ে যাওয়া জলের উৎস ফের জলে ভরে উঠেছে|
বন্ধুগণ, এভাবেই জল নিয়ে আমাদের সর্বজনীন দায়বদ্ধতার বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে| ভারতের বেশিরভাগ অংশে মে-জুন মাসে বর্ষা শুরু হয়| আমরা কি আমাদের আশেপাশের জলের উৎসগুলি পরিষ্কার করার জন্য, বর্ষার জল সংরক্ষণের জন্য ১০০ দিনের কোন অভিযান শুরু করতে পারি না? এই ভাবনা থেকেই এখন থেকে কয়েকদিন বাদেই জলশক্তিমন্ত্রক থেকেও জলশক্তি অভিযান ‘ক্যাচ দ্য রেইন’ শুরু হতে যাচ্ছে| এই অভিযানের মূলমন্ত্র হচ্ছে:-ক্যাচ দ্য রেইন হোয়ার ইট ফলস, হোয়েন ইট ফলস! বৃষ্টিকে লুফে নাও, যেখানেই পড়ুক যখনই পড়ুক! আমরা এখন থেকে এই কাজে লেগে পড়লে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের যে পদ্ধতি আছে তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবো, গ্রামের জলাশয়ে, পুকুরে, পরিষ্কার করিয়ে নেবো জলের উৎস পর্যন্ত জল আসার সমস্ত বাধা| তাহলে সেগুলিতে যত বেশি সম্ভব বর্ষার জল সঞ্চয় করতে পারবো|
আমার প্রিয় দেশবাসী, যখনই মাঘ মাস এবং এর আধ্যাত্মিক সামাজিক মহিমার কথা আলোচনায় উঠে আসে, তখন সেখানে একটা নাম উচ্চারিত না হলে অসম্পূর্ণতা থেকে যায়| আর সেই নাম হচ্ছে সন্ত রবিদাসজির| মাঘ পূর্ণিমার দিনই সন্ত রবিদাসজির জন্মজয়ন্তী| আজও সন্ত রবিদাসজির শব্দমালা, জ্ঞান আমাদের পথ দেখায়| তিনি বলেছিলেন,
“একৈ মাতি কে সভ ভান্ডে, সভ কা একৌ সিরজনহার|
রবিদাস ব্যাপৈ একৈ ঘট ভিতর, সভ কৌ একৈ ঘড়েই কুমহার|”
অর্থাৎ, আমরা সবাই একই মাটির পাত্র, আমাদের সবাইকে একজনই তৈরি করেছেন| সন্ত রবিদাসজি সমাজে ব্যাপ্ত বিকৃতিগুলি নিয়ে সর্বদা মন খুলে নিজের কথা বলেছেন| তিনি এই সমস্ত বিকৃতিগুলোকে সমাজের সামনে তুলে ধরেছেন, সেগুলি শুধরে নেওয়ার পথ দেখিয়েছেন| আর সেজন্যই মীরাজি বলেছিলেন– গুরু মিলিয়া রৈদাস, দীনহীন জ্ঞান কি গুটকি|
এটা আমার সৌভাগ্য যে, আমি সন্ত রবিদাসজির জন্মস্থান বারাণসীর সঙ্গে যুক্ত| সন্ত রবিদাসজির জীবনের আধ্যাত্মিক উচ্চতা এবং তার প্রাণশক্তিকে আমি সেই তীর্থস্থানে উপলব্ধি করেছি|
বন্ধুগণ, রবিদাসজি বলতেন––
“করম বন্ধন মে বন্ধ রহিও, ফল কি না তজ্জীও আস|
কর্ম মানুষ কা ধর্ম হ্যায়, সত ভাখৈ রবিদাস||”
অর্থাৎ, আমাদের নিরন্তর নিজেদের কাজ করে যেতে হবে| তাহলে ফল তো অবশ্যই পাবো| মানে, কাজ করলে সিদ্ধিলাভ অবশ্যই হয়ে থাকে| আমাদের যুববন্ধুদের সন্ত রবিদাসজির কাছ থেকে আরও একটা কথা অবশ্যই শিখতে হবে, নবীন প্রজন্মকে যে কোন কাজ করার জন্য নিজেদের পুরনো পন্থা-পদ্ধতির মধ্যে বেঁধে রাখলে চলবে না| আপনারা, আপনাদের নিজেদের জীবন ধারা নিজেরাই ঠিক করুন| নিজেদের পন্থা-পদ্ধতি নিজেরাই তৈরি করুন এবং নিজেদের লক্ষ্যমাত্রাও নিজেরাই ঠিক করুন| যদি আপনার বিবেক ও আত্মবিশ্বাস মজবুত হয় তাহলে পৃথিবীর কোনকিছু নিয়েই ভয় পাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই| আমি এমন কথা এজন্য বলছি, কেন না, অনেক বার আমাদের নবীন প্রজন্ম এক চলতি ভাবনার চাপে নিজেদের সেই কাজগুলিই করতে পারেন না, যেগুলি তাঁদের খুবই পছন্দের| এজন্য আপনাদের কখনই নতুন ভাবনা, নতুন কাজ নিয়ে কোনরকম দ্বিধা রাখা উচিৎ নয়| এভাবেই সন্ত রবিদাসজিও আরেক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন| আর সেই বার্তা হচ্ছে, নিজের পায়ে দাঁড়ানো| আমরা নিজেদের স্বপ্নপূরণের জন্য অন্য কারো ওপর নির্ভর করব সেটা ঠিক নয়| যা যেরকম আছে সেরকম চলতে থাকুক, রবিদাসজি কখনই এর পক্ষে ছিলেন না| আর আজ আমরা দেখছি, দেশের নবীন প্রজন্মও এরকম ভাবনার পক্ষে একদম নেই| আজ যখন আমি দেশের নবীন প্রজন্মের মধ্যে উদ্ভাবনী আবেগ দেখতে পাই তাতে আমার মনে হয়, আমাদের নবীন প্রজন্মের জন্য সন্ত রবিদাসজিও অবশ্যই গর্বিত হতেন|
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ জাতীয় বিজ্ঞান দিবসও বটে| আজকের দিনটি ভারতের মহান বিজ্ঞানী ড. সি.ভি. রমণজি’র আবিষ্কৃত ‘রমণ এফেক্ট’-এর প্রতি সমর্পিত| কেরল থেকে যোগেশ্বরণজি নমোঅ্যাপে লিখেছেন, রমণ এফেক্টের আবিষ্কার গোটা বিজ্ঞান জগতের গতিপথ বদলে দিয়েছিলো| এই প্রসঙ্গে নাসিকের স্নেহিলজি আমাকে একটি সুন্দর বার্তা পাঠিয়েছেন | তিনি লিখেছেন, আমাদের দেশে অসংখ্য বিজ্ঞানী আছেন, যাঁদের অবদান ছাড়া বিজ্ঞান এতদূর অগ্রগতি করতে পারত না| আমরা যেভাবে পৃথিবীর অন্য দেশের বিজ্ঞানীদের বিষয়ে জানি, সেভাবে আমাদের ভারতের বিজ্ঞানীদের বিষয়েও জানতে হবে| আমিও ‘মন কি বাতে’–র এই সমস্ত শ্রোতাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করছি| আমি অবশ্যই চাইবো, আমাদের নবীন প্রজন্মও ভারতীয় বিজ্ঞানের ইতিহাস, আমাদের বিজ্ঞানীদের জানুক, বুঝুক এবং অনেক পড়াশুনো করুক|
বন্ধুগণ, আমরা যখন বিজ্ঞানের কথা বলি, তখন তাকে অনেকবারই মানুষ পদার্থবিদ্যা-রসায়নের মধ্যে অথবা গবেষণাগার পর্যন্তই সীমিত করে ফেলেন| কিন্তু বিজ্ঞানের বিস্তৃতি তো এর থেকে অনেক বেশি| আর ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’-এ বিজ্ঞানের শক্তিরও অনেক অবদান আছে| আমাদের বিজ্ঞানকে ‘ল্যাব টু ল্যান্ড’ এর মন্ত্রে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে|
উদাহরণ হিসেবে হায়দ্রাবাদের চিন্তলা বেঙ্কট রেড্ডিজির কথা বলতে হয়| রেড্ডিজি’র এক চিকিৎসক বন্ধু তাঁকে একবার ভিটামিন ডি-র অভাবে বিভিন্ন রোগের বিপদ সম্পর্কে বলেছিলেন| তিনি একজন কৃষক| তিনি ভাবেন, এই সমস্যার সমাধানে কী করা যায়! এর পর তিনি পরিশ্রম করে গম আর চালের এমন সব প্রজাতি তৈরি করেন, যেগুলি বিশেষভাবে ভিটামিন ডি যুক্ত| এই মাসেই তিনি জেনেভার বিশ্ব মেধাস্বত্ত্ব সংগঠন থেকে সেগুলির প্যাটেন্ট পেয়ে গেছেন| এটা আমাদের সরকারের সৌভাগ্য যে, আমরা গতবছর রেড্ডিজিকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেছিলাম|
এমনি অনেক উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে লাদাখের উর্গেন ফুতসৌগও কাজ করে যাচ্ছেন| ফুতসৌগজি এত উচ্চতায় জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে প্রায় ২০ ধরনের ফসল উৎপাদন করছেন| তা-ও আবার সাইক্লিক পদ্ধতিতে| মানে তিনি এক ফসলের বর্জ্যকে আরেক ফসলের সার হিসেবে প্রয়োগ করে ফেলেন| দারুণ ব্যাপার, তাই না! এভাবেই গুজরাটে পাটন জেলার কামরাজ ভাই চৌধুরী ঘরের মধ্যেই সজনের উন্নত প্রজাতির বীজ উৎপন্ন করেছেন| একে অনেকে সর্গওয়া বলেন| একে মৌরিঙ্গা বা ড্রামস্টিকও বলা হয়| উন্নত প্রজাতির বীজ থেকে যে সজনে হয় তার গুণমানও খুব ভালো| নিজের উৎপাদনকে তিনি তামিলনাডু এবং পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়ে নিজের আয়ও বাড়াচ্ছেন|
বন্ধুগণ, আজকাল ‘চিয়া সিডস’ এর নাম আপনারা খুব শুনছেন| স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ একে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন| আর বিশ্বে এর খুব চাহিদাও রয়েছে| ভারতে এর চাহিদা মেটাতে বেশিরভাগই বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়| কিন্তু এখন দেশে অনেকে চিয়া সিডস চাষের মাধ্যমে আত্মনির্ভরতা অর্জনের সংকল্পও নিয়ে ফেলেছেন| এরকমই একজন হলেন ইউ পি-র বারাবাঁকির হরিশ্চন্দ্রজি। তিনি চিয়া সিডস এর চাষ শুরু করেছেন| চিয়া সিডস এর চাষ তাঁর আয়ও বাড়াবে এবং আত্মনির্ভর ভারত অভিযানেও সহায়তা পাওয়া যাবে|
বন্ধুগণ, কৃষির বর্জ্য থেকে সম্পদ সৃষ্টি করারও কিছু পদ্ধতি দেশজুড়ে সফলতার সঙ্গে চলছে| যেমন, মাদুরাইয়ের মুরুগেসন’জি কলা’র বর্জ্য থেকে দড়ি বানানোর একটা মেশিন তৈরি করেছেন| মুরুগেসন’জির এই উদ্ভাবন থেকে পরিবেশ আর বর্জ্য ব্যবস্থাপনারও সমাধান আসবে| আর কৃষকদের জন্য অতিরিক্ত আয়ের একটা পথও তৈরি হবে|
বন্ধুগণ, ‘মন কি বাত’-এর শ্রোতাদের এসব মানুষদের সম্পর্কে জানানোর পেছনে আমার উদ্দেশ্য হল, আমরা যেন তাঁদের থেকে প্রেরণা পেতে পারি| যখন দেশের সমস্ত নাগরিক নিজেদের জীবনে বিজ্ঞানের প্রসার ঘটাবে, প্রতিটি ক্ষেত্রে করবে, তখন অগ্রগতির পথও খুলে যাবে এবং দেশ আত্মনির্ভর হবে| আর আমার বিশ্বাস, এটা দেশের প্রত্যেক নাগরিক করতে পারবেন|
আমার প্রিয় দেশবাসী, কলকাতার রঞ্জনজি তাঁর চিঠিতে অনেক আকর্ষণীয় ও বুনিয়াদী প্রশ্ন করেছেন| আর সেই সঙ্গে অসাধারণ পদ্ধতিতে এর উত্তরও দেওয়ার চেষ্টা করেছেন| তিনি লিখেছেন, আমরা যখন আত্মনির্ভর হওয়ার কথা বলি, তখন আমাদের জন্য তার অর্থ কী হতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি নিজেই লিখেছেন, ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’ শুধুমাত্র একটা সরকারি নীতিই নয়, বরং এটা একটা জাতীয় আবেগ| তিনি মনে করেন, আত্মনির্ভর হওয়ার অর্থ হচ্ছে, নিজের ভাগ্যের সিদ্ধান্ত নিজেই নেওয়া অর্থাৎ স্বয়ং নিজের ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হওয়া| রঞ্জনবাবুর কথা একশ শতাংশ সঠিক| তাঁর এই বক্তব্যকে তুলে ধরে আমি এটাও বলব যে, আত্মনির্ভরতার প্রথম শর্ত হচ্ছে, নিজের দেশের জিনিসপত্র নিয়ে গর্বিত হওয়া| নিজের দেশের মানুষের তৈরি জিনিস নিয়ে গর্বিত হওয়া| যখন প্রত্যেক দেশবাসী এভাবে গর্ব করবেন, প্রত্যেক দেশবাসী অংশগ্রহণ করবেন, তখন আত্মনির্ভর ভারত শুধুমাত্র একটা আর্থিক অভিযান না হয়ে একটা জাতীয় আবেগে পরিণত হবে| আমরা যখন আমাদের দেশের তৈরি ফাইটার প্লেন তেজস-কে আকাশে দক্ষতা প্রদর্শন করতে দেখি, যখন ভারতে তৈরি ট্যাঙ্ক, ভারতে তৈরি মিসাইল আমাদের গৌরব বৃদ্ধি করে, যখন সমৃদ্ধ দেশগুলোতে আমরা মেট্রো রেলপথে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া কোচ’ দেখতে পাই, যখন ডজন-খানেক দেশে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ করোনা ভ্যাকসিন পৌঁছাতে দেখি, তখন আমাদের মাথা আরও উঁচু হয়ে যায়| আর এটাই নয় যে, শুধুমাত্র বড় বড় জিনিসই ভারতকে আত্মনির্ভর করবে| ভারতে তৈরি হওয়া কাপড়, ভারতের মেধাবী কারিগরদের তৈরি হস্তশিল্পের পণ্য, ভারতের বৈদ্যুতিন উপকরণ, ভারতের মোবাইল, প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদেরকে এই গৌরবকে বৃদ্ধি করতে হবে| আমরা যখন এই চিন্তা নিয়ে এগিয়ে যাবো, তখনই সত্যিকার অর্থে আত্মনির্ভর হতে পারবো| আর বন্ধুরা, আমি আনন্দিত যে, আত্মনির্ভর ভারতের এই মন্ত্র এখন দেশের গ্রামে গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে| বিহারের বেতিয়ায় এটাই হয়েছে, যা নিয়ে আমি সংবাদ মাধ্যমে পড়েছি|
বেতিয়ার বাসিন্দা প্রমোদজি, দিল্লিতে একজন টেকনিশিয়ান হিসেবে এলইডি বাল্ব তৈরির একটা কারখানায় কাজ করতেন| তিনি এই কারখানায় কাজ করার সময় সম্পূর্ণ পদ্ধতিটি ভালো ভাবে জেনেছেন, বুঝেছেন| কিন্তু করোনার সময় প্রমোদজিকে নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে হয়েছে| আপনারা জানেন, ফিরে আসার পরে প্রমোদজি কী করেছেন? তিনি স্বয়ং এলইডি বাল্ব তৈরি করার একটা ছোট ইউনিট শুরু করে দেন| তিনি নিজের এলাকার কিছু যুবকদের সঙ্গে নেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই কারখানার কর্মী থেকে মালিক হওয়ার পথ অতিক্রম করেন| তাও সেটা নিজের বাড়িতে থেকেই|
আরও একটি উদাহরণ হচ্ছে—ইউ.পি.’র গড়মুক্তেশ্বরের| গড়মুক্তেশ্বর থেকে শ্রীযুক্ত সন্তোষজি লিখেছেন, কীভাবে তিনি করোনা সময়ের বিপর্যয়কে সুযোগে পরিবর্তিত করেছেন| সন্তোষজির পূর্বপুরুষরা অসাধারণ কারিগর ছিলেন, তারা মাদুর তৈরির কাজ করতেন| করোনার সময়ে যখন অন্য সমস্ত কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন তাঁরা বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে মাদুর তৈরির কাজ শুরু করেন| কিছুদিনের মধ্যেই তাদের কাছে শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশ নয়, অন্য রাজ্য থেকেও মাদুরের বরাত আসা শুরু হয়| সন্তোষজি এটাও জানিয়েছেন যে, এর ফলে এই অঞ্চলের অনেক পুরনো অসাধারণ শিল্পটিও নতুন প্রাণ পেয়েছে|
বন্ধুগণ, দেশজুড়ে এধরনের অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেখানে মানুষ ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে’ এরকম অবদান রাখছেন| আজ এটা একটা মেজাজে পরিণত হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের মনে সঞ্চারিত হচ্ছে|
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি নমো-অ্যাপে গুরগাঁও’র বাসিন্দা ময়ূরের একটা আকর্ষণীয় পোস্ট দেখেছি| তিনি একজন উৎসাহী পক্ষী-পর্যবেক্ষক আর প্রকৃতি প্রেমী| ময়ূরজি লিখেছেন, আমি তো হরিয়ানায় থাকি, কিন্তু আমি চাই, আপনি আসামের মানুষদের নিয়ে, বিশেষ করে কাজিরাঙ্গার মানুষদের নিয়ে কথা বলুন| আমার মনে হচ্ছিল ময়ূরজি গণ্ডার সম্পর্কে বলবেন, যে গণ্ডারকে সেখানকার গৌরব বলা হয়ে থাকে| কিন্তু ময়ূরজি কাজিরাঙ্গার ওয়াটারফাউল বা জলকুক্কুট নামের পাখির সংখ্যা-বৃদ্ধির জন্য আসামের মানুষদের প্রশংসা করার জন্য এটা বলেছেন| আমি ভাবছিলাম, আমরা ওয়াটারফাউলকে সাধারণ শব্দে কী বলতে পারি| তখন একটা শব্দ পেলাম জলপাখি| এটা এমন পাখি যারা গাছে থাকে না, জলে থাকে, যেমন হাঁস ইত্যাদির মত| কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক এন্ড টাইগার রিজার্ভ অথরিটি কিছুকাল ধরেই বার্ষিক জলকুক্কুট গণনা করে আসছে| এই পক্ষীসুমারিতে এই জলপাখির সংখ্যা জানা যায় এবং তাদের পছন্দসই বাসস্থান সম্পর্কেও জানা যায়| এখন মাত্র দুই-তিন সপ্তাহ আগেই একবার সার্ভে হয়েছে| আপনারাও এটা জেনে খুশি হবেন যে, এবার জলকুক্কুটের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় একশ পঁচাত্তর শতাংশ বেশি হয়েছে| এই সেন্সাসের সময় কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্কে পাখির প্রায় একশ বারোটি প্রজাতি দেখা গেছে| এর মধ্যে ৫৮টি প্রজাতি ইউরোপ, মধ্য এশিয়া আর পূর্ব এশিয়া সহ দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শীতের পরিযায়ী পাখি| এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, এখানে ভালো জল সংরক্ষণের পাশাপাশি এখানে হিউম্যান ইন্টারফেস বা মানুষের হস্তক্ষেপ অনেক কম| যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক হিউম্যান ইন্টারফেস অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে|
আসামের শ্রী যাদব পায়েং-এর বিষয়টাই দেখুন| আপনাদের মধ্যে অনেকেই তাঁর সম্পর্কে অবশ্যই জানবেন| নিজের কাজের জন্য তিনি পদ্ম পুরস্কারও পেয়েছেন| শ্রী যাদব পায়েং সেই ব্যক্তি যিনি আসামের মাজুলি দ্বীপে প্রায় ৩০০ হেক্টর বৃক্ষরোপণে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন| তিনি বন সংরক্ষণের কাজ করেন এবং মানুষকে বৃক্ষরোপণ আর জৈব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে অনুপ্রাণিত করার জন্যও যুক্ত আছেন|
বন্ধুগণ, আসামে আমাদের মন্দিরগুলিও পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে নিজেদের পৃথক ভূমিকা পালন করে চলেছে| যদি আপনারা আমাদের মন্দিরগুলো দেখেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে, প্রতিটি মন্দিরের পাশে পুকুর আছে| হাজোতে হয়াগ্রীব মাধেব মন্দির, শোনিতপুরের নাগশংকর মন্দির আর গুয়াহাটির উগ্রতারা মন্দিরের কাছে এই ধরনের অনেকগুলো পুকুর আছে| এগুলোতে বেশ কিছু বিলুপ্তপ্রায় কচ্ছপের প্রজাতি সংরক্ষিত আছে| আসামে কচ্ছপের সবচেয়ে বেশি প্রজাতি পাওয়া যায়| মন্দিরের এই পুকুরগুলি কচ্ছপের সংরক্ষণ, প্রজনন আর তাদের নিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য এক অসাধারণ স্থান হতে পারে|
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছু মানুষ মনে করেন যে, উদ্ভাবনের জন্য বৈজ্ঞানিক হওয়া প্রয়োজন, কেউ কেউ ভাবেন যে, অন্যকে কিছু শেখানোর জন্য শিক্ষক হওয়া চাই| এই ধরনের ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো মানুষ সবসময় প্রশংসার যোগ্য হন| যেমন কেউ যদি কাউকে সৈনিক হওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত করে থাকেন, তাহলে কি তাকেও সৈনিক হতে হবে? আপনারা হয়ত ভাবছেন, হ্যাঁ, সেটা জরুরি| কিন্তু এখানে সামান্য ট্যুইস্ট আছে|
মাইগভ-এ কমলকান্তজি সংবাদ মাধ্যমের একটা রিপোর্ট শেয়ার করেছেন, যা কিছুটা অন্যরকম কথা বলে| ওড়িশার অরাখুড়ায় এক ভদ্রলোক আছেন—নায়ক স্যার| তাঁর নাম আসলে সিলু নায়ক, কিন্তু সবাই তাঁকে নায়ক স্যার বলে থাকেন| আসলে তিনি একজন ‘ম্যান অন অ্যা মিশন’| যাঁরা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চান, তিনি সেই যুবকদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেন| নায়ক স্যারের সংস্থার নাম ‘মহাগুরু ব্যাটালিয়ন’| যেখানে ফিজিক্যাল ফিটনেস থেকে শুরু করে ইন্টারভিউ পর্যন্ত, আর লেখা- পরীক্ষা থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ পর্যন্ত, সমস্ত দিক নিয়ে বলা হয়ে থাকে| আপনারা এটা জেনে আশ্চর্য হবেন যে, তিনি যেসব মানুষকে প্রশিক্ষিত করেছেন, তাঁরা স্থলসেনা, নৌসেনা, বায়ুসেনা, সিআরপিএফ, বিএসএফ-এর মতো ইউনিফর্ম ফোর্সগুলোতে নিজেদের স্থান করে নিতে পেরেছেন| আপনারা এটা জেনেও অবাক হবেন যে, সিলু নায়কজি স্বয়ং ওড়িশা পুলিশে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন| কিন্তু তিনি সফল হতে পারেন নি| তা সত্বেও তিনি নিজের প্রশিক্ষণ ক্ষমতা দিয়ে অনেক যুবককে দেশসেবার যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন| আসুন, আমরা সবাই মিলে নায়ক স্যারকে শুভেচ্ছা জানাই, যাতে তিনি আমাদের দেশের জন্য আরও অনেক বেশি নায়ক তৈরি করেন|
বন্ধুগণ, কখনও কখনও অনেক ছোট আর সাধারণ প্রশ্নও মনকে নাড়িয়ে যায়| এইসব প্রশ্ন দীর্ঘ হয়না, খুব সরল হয়, তার পরেও সেগুলো আমাদেরকে চিন্তা করতে বাধ্য করে| কিছুদিন আগে হায়দ্রাবাদের অপর্ণা রেড্ডিজি এরকমই একটা প্রশ্ন আমাকে করেছেন| তিনি বলেছেন, আপনি এত বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী, এত বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, আপনার কি মনে হয় যে, কোনো কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে| অপর্ণাজি’র প্রশ্ন অনেক সহজ, কিন্তু ততটাই কঠিন| আমি এই প্রশ্ন নিয়ে অনেক ভেবেছি, তারপর নিজেকে বলেছি যে, আমার একটা বিষয়ের অভাব রয়েছে, আমি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ভাষা তামিল শেখার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করতে পারিনি, আমি তামিল শিখতে পারিনি| এটা এমন এক সুন্দর ভাষা, যা বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়| অনেকেই আমাকে তামিল সাহিত্যের গুণ আর সেই ভাষায় লেখা কবিতার গভীরতা নিয়ে অনেক কিছু বলেছেন| ভারত এমন অনেক ভাষার স্থান, যা আমাদের সংস্কৃতি আর গৌরবের প্রতীক| ভাষার সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে আমি একটা ছোট মজার ক্লিপ আপনাদের সংগে শেয়ার করতে চাই|
## (স্ট্যাচু অফ ইউনিটির সাউন্ড ক্লিপ—কপি করার প্রয়োজন নেই)
আসলে এইমাত্র আপনারা যা শুনছিলেন, এতে স্ট্যাচু অফ ইউনিটি নিয়ে একজন গাইড সংস্কৃত ভাষায় বলছেন, পর্যটকদের বিশ্বের সর্বোচ্চ সর্দার প্যাটেলের মূর্তি সম্পর্কে বলছেন| আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, কেভড়িয়াতে ১৫জনেরও বেশি গাইড, সংস্কৃত ধারাভাষ্যে মানুষকে গাইড করে| এখন আমি আপনাদের আরও একটা কন্ঠস্বর শোনাচ্ছি|
##(ক্রিকেটের ধারাভাষ্যের সাউন্ড ক্লিপ—কপি করার প্রয়োজন নেই)
আপনারাও এটা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেছেন হয়ত| আসলে এটা সংস্কৃতে করা ক্রিকেটের ধারাভাষ্য| বারাণসীতে সংস্কৃত মহাবিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হয়েছিল| এই মহাবিদ্যালয়গুলি ছিল—শাস্ত্রার্থ মহাবিদ্যালয়, স্বামী বেদান্তি বেদ বিদ্যাপীঠ, শ্রী ব্রহ্ম বেদ বিদ্যালয় আর ইন্টারন্যাশনাল চন্দ্রমৌলি চেরিটেবল ট্রাস্ট| এই টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলোর সময় ধারাভাষ্য সংস্কৃতেও করা হয়| এখন আমি এই ধারাভাষ্যের একটা ছোট অংশ আপনাদের শুনিয়েছি| শুধু তাই নয়, এই টুর্নামেন্টে খেলোয়াড় আর ভাষ্যকারদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে দেখা যায়| যদি আপনারা উৎসাহ, উদ্দীপনা, রোমাঞ্চ একসঙ্গে পেতে চান, তাহলে খেলার ধারাভাষ্য শোনা দরকার| টিভি আসার অনেক আগে, খেলার ধারাভাষ্যই শুধু এমন মাধ্যম ছিল, যার মাধ্যমে ক্রিকেট আর হকির মতো খেলার রোমাঞ্চ গোটা দেশের মানুষ অনুভব করতেন| টেনিস আর ফুটবল ম্যাচের ধারাভাষ্যও অনেক ভালো ভাবে উপস্থাপনা করা হত| আমরা দেখেছি, যেসব খেলার ধারাভাষ্য সমৃদ্ধ, সেই খেলার প্রচার-প্রসার অনেক দ্রুত হয়ে থাকে| আমাদের এখানে অনেক ভারতীয় খেলা আছে, যেগুলোর ক্ষেত্রে কমেন্টারি কালচার না আসার ফলে এইসব লুপ্ত হয়ে যাওয়ার মত অবস্থায়| আমার মনে একটা ভাবনা আছে—আলাদা আলাদা খেলা, বিশেষ করে ভারতীয় খেলার ভালো ধারাভাষ্য আরও বেশি ভাষাতে কেন হবে না| আমাদেরকে এই বিষয়টিকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে অব্যশ্যই চিন্তা করা উচিত| আমি ক্রীড়ামন্ত্রক আর বেসরকারি সংস্থানের সহযোগীদের এই বিষয়ে চিন্তা করার জন্য অনুরোধ জানাবো|
আমার প্রিয় নবীন বন্ধুরা, আগামী কয়েকটি মাস আপনাদের জীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ নবীন বন্ধুর পরীক্ষা থাকবে। আপনাদের সবার মনে আছে তো—ওয়ারির (warrior) হতে হবে, ওরিয়র (worrier) নয়| হাসতে হাসতে exam দিতে যাবেন, হাসিমুখে ফিরবেন, আর কারও সঙ্গে নয়, নিজের সঙ্গেই প্রতিযোগিতা করতে হবে। যথেষ্ট ঘুমাতে হবে টাইম ম্যানেজমেন্টও করতে হবে| খেলা ছাড়বেন না, কারণ যে খেলে, সে প্রস্ফুটিত হয়। রিভিশন আর মনে রাখার স্মার্ট পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে| অর্থাৎ সব মিলিয়ে এই পরীক্ষায়, নিজের সেরাটাকে বের করে আনতে হবে। আপনারা হয়তো ভাবছেন, এসব হবে কেমন করে। আমরা সবাই মিলে এটা করতে চলেছি। প্রতি বছরের মতো এবছরও আমরা সবাই করবো – পরীক্ষা পে চর্চা। কিন্তু মার্চে আয়োজিত ‘পরীক্ষা পে চর্চা’-র আগে আমার সমস্ত একজাম ওয়ারিয়র, মা-বাবা, শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ হচ্ছে, আপনাদের অভিজ্ঞতা, আপনাদের টিপস অবশ্যই শেয়ার করবেন| আপনারা মাইগভ-এ সেটা শেয়ার করতে পারেন| নরেন্দ্রমোদি অ্যাপ-এ শেয়ার করতে পারেন| এবারের ‘পরীক্ষা পে চর্চা’-তে নবীনদের পাশাপাশি মা-বাবা আর শিক্ষক-শিক্ষিকারাও আমন্ত্রিত| কীভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে, কীভাবে প্রাইজ জেতা যায়, কীভাবে আমার সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পাওয়া যাবে, সেইসব তথ্য আপনারা মাইগভ-এ পেয়ে যাবেন| এখন পর্যন্ত এতে এক লক্ষের বেশি শিক্ষার্থী, প্রায় ৪০ হাজার মা-বাবা, আর প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা অংশগ্রহণ করেছেন| আপনারাও আজই এতে অংশগ্রহণ করুন| এই করোনার সময়ে আমি কিছুটা সময় বের করে ‘একজাম ওয়ারিয়র বুক’-এর মধ্যেও কিছু নতুন মন্ত্র সংযুক্ত করে দিয়েছি| এখন এর মধ্যে মা-বাবাদের জন্যও কিছু মন্ত্র যুক্ত করা হয়েছে| এই মন্ত্রগুলোর সঙ্গে যুক্ত অনেকগুলো আকর্ষণীয় বিষয় নরেন্দ্রমোদি অ্যাপে দেওয়া হয়েছে, যেগুলো আপনাদের মধ্যে পরীক্ষা যোদ্ধাকে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করবে| আপনারা এগুলি অবশ্যই চেষ্টা করে দেখুন। সমস্ত নবীন বন্ধুদের আগামী পরীক্ষাগুলির জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, মার্চ মাসটি আমাদের অর্থবর্ষের সর্বশেষ মাসও হয়, সেজন্যে আপনাদের মধ্যে অনেকের জন্য ভীষণ ব্যস্ততার সময়। এখন যেভাবে দেশে অর্থনৈতিক গতিবিধি বাড়ছে, তাতে আমাদের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোগী বন্ধুদের ব্যস্ততাও অনেক বাড়ছে। এসব কাজের মাঝে আমাদের করোনা থেকে সতর্কতা কম করলে চলবে না। আপনারা সবাই সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন, কর্তব্য পথে অটল থাকুন, তাহলেই দেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে।
আপনাদের সবাইকে উৎসবের দিনগুলির অগ্রিম শুভকামনা, পাশাপাশি করোনা প্রতিরোধে যেসব নিয়ম পালন করতে হবে, সেগুলিকে অবহেলা করলে চলবে না।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। যখন আমি ‘মন কি বাত’ বলি তখন এমন মনে হয়, যেন আপনাদের মাঝে, আপনাদের পরিবারের একজন সদস্য হয়ে উপস্থিত রয়েছি। আমাদের ছোট-ছোট কথা, যা একে-অন্যকে কিছু শিখিয়ে যায়, জীবনের টক-মিষ্টি অভিজ্ঞতা যা প্রাণ ভরে জীবন যাপনের প্রেরণা হয়ে ওঠে – এটাই তো ‘মন কি বাত’। আজ, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ দিন। আপনারাও কি আমার মতই এটা ভাবছেন যে কিছু দিন আগেই তো ২০২১ সাল শুরু হল। মনেই হয় না যে পুরো জানুয়ারি মাস কেটে গেল – একেই তো বলে সময়ের গতি। কয়েকটা দিন আগের কথাই তো মনে হয় যখন আমরা একে অপরকে শুভকামনা জানাচ্ছিলাম, আবার আমরা ‘লোহরী’ পালন করলাম, মকর সংক্রান্তি পালন করলাম, পোঙ্গল, বিহু পালন করলাম। দেশের ভিন্ন ভিন্ন অংশে উৎসবের ধুম পড়ে গিয়েছিল। ২৩শে জানুয়ারি আমরা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন ‘পরাক্রম দিবস’ হিসাবে পালন করলাম, আর ২৬শে জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র দিবসের’ চমকপ্রদ প্যারেডও দেখেছি। সংসদের সংযুক্ত অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের ভাষণের পর ‘বাজেট অধিবেশনও’ শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সব কিছুর মধ্যে আরও একটা কাজ হল যার জন্য আমরা সবাই অপেক্ষা করে থাকি – এটা হল পদ্ম সম্মানের ঘোষণা। অসাধারণ কর্মের নিদর্শন রাখা ব্যক্তিদের রাষ্ট্র সম্মানিত করেছে তাঁদের কীর্তি আর মানবতার জন্য অবদানের কারণে। এই বছরও সম্মান প্রাপকদের মধ্যে সেই সব মানুষ রয়েছেন, যাঁরা, ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্যসাধারণ কাজ করেছেন, নিজেদের কর্মের মাধ্যমে কারও জীবন বদলে দিয়েছেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। অর্থাৎ মাটির কাছে থেকে কাজ করা নীরবে লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যারা কাজ করেন, তাঁদের পদ্ম সম্মান দেওয়ার যে পরম্পরা দেশ শুরু করেছিল কয়েক বছর আগে, সেটা, এই বছরও বজায় রাখা হয়েছে। আপনাদের সবার কাছে আমার অনুরোধ, যে, এই সব মানুষদের সম্পর্কে, তাঁদের অবদান সম্পর্কে অবশ্যই জানুন, পরিবারের মধ্যে তাঁদের সম্পর্কে আলোচনা করুন। দেখবেন, সবাই কীভাবে এতে প্রেরণা পান।
এই মাসে, ক্রিকেট পিচ থেকেও খুব ভালো খবর এসেছে। আমাদের ক্রিকেট টিম প্রারম্ভিক সমস্যার পর, চমকপ্রaদ প্রত্যাবর্তন করে অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জিতেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের কঠিন পরিশ্রম আর দলগত সংহতি প্রেরণা দেওয়ার মত। এই সবকিছুর মধ্যে, দিল্লিতে, ২৬শে জানুয়ারি তেরঙ্গার অপমান দেখে, দেশ খুব দুঃখও পেয়েছে। আগামী সময়কে আমাদের নতুন আশা আর নতুনত্বের ছোঁয়ায় ভরিয়ে তুলতে হবে। আমরা গত বছর অসাধারণ সংযম আর সাহসের পরিচয় দিয়েছি। এই বছরও আমাদের কঠিন পরিশ্রম করে নিজেদের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে হবে। নিজেদের দেশকে, আরও দ্রুত গতিতে, এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই বছর শুরুর সঙ্গে সঙ্গে করোনার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের প্রায় এক বছর পূর্ণ হয়ে গেল। যেমনভাবে করোনার বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই এক দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে, তেমনই, আমাদের টিকাকরণ কর্মসূচীও পৃথিবীতে এক দৃষ্টান্তে পরিণত হচ্ছে। আজ ভারত পৃথিবীর সবথেকে বড় কোভিড টিকাকরণ কর্মসূচী চালাচ্ছে। জানেন কি আপনারা, আরও গর্বের বিষয় কী? আমরা সবথেকে বড় টিকাকরণ কর্মসূচীর সঙ্গে পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে দ্রুত গতিতে নিজেদের নাগরিকদের টিকাও দিচ্ছি। কেবল পনেরো দিনে, ভারত, নিজের তিরিশ লক্ষেরও বেশি করোনা যোদ্ধার টিকাকরণ করেছে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত সমৃদ্ধ দেশেরও এই কাজে আঠেরো দিন লেগেছিল আর ব্রিটেনের লেগেছিল ছত্রিশ দিন।
বন্ধুরা, মেড ইন ইণ্ডিয়া টিকা আজ ভারতের আত্মনির্ভরতার প্রতীক তো বটেই, ভারতের আত্মগৌরবের প্রতীকও বটে। ‘নমো অ্যাপে’ ইউ পি থেকে হিমাংশু যাদব লিখেছেন ‘মেড ইন ইণ্ডিয়া’ টিকা দেখে মনে এক নতুন আত্মবিশ্বাস এসে গিয়েছে। মাদুরাই থেকে কীর্তি জি লিখছেন যে ওঁর অনেক বিদেশি বন্ধু মেসেজ পাঠিয়ে ভারতের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। কীর্তি জির বন্ধুরা ওঁকে লিখেছেন যে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত যেভাবে দুনিয়াকে সাহায্য করেছে তাতে তাদের মনে ভারতের প্রতি সম্মান আরও বেড়ে গিয়েছে। কীর্তি জি, দেশের এই গৌরবগাঁথা শুনে, ‘মন কি বাতের’ শ্রোতাদেরও গর্ব হচ্ছে। আজকাল আমিও ভিন্ন ভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি আর প্রধানমন্ত্রীদের কাছে থেকে ভারতের জন্য এমন বার্তা পাচ্ছি। আপনারাও দেখেছেন যে, সম্প্রতি, ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি ট্যুইট করে যেভাবে ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, সেটা দেখে প্রত্যেক ভারতবাসীর কতটা ভালো লেগেছে। হাজার-হাজার কিলোমিটার দূরে, দুনিয়ার দূর-সুদূর প্রান্তের অধিবাসীদের রামায়ণের সেই প্রসঙ্গ সম্পর্কে এতটা জ্ঞান রয়েছে, তাদের মনে এত গভীর ছাপ রয়েছে – এটা আমাদের সংস্কৃতির বিশিষ্টতা।
বন্ধুরা, এই টিকাকরণ কর্মসূচীতে আরও একটা বিষয়ের প্রতি আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন। সঙ্কটের সময় ভারত দুনিয়ার সেবা এই কারণে করতে পারছে কারণ ভারত আজ ওষুধ এবং টিকার ক্ষেত্রে সক্ষম, আত্মনির্ভর। এই ভাবনা আত্মনির্ভর ভারত অভিযানেরও অন্তর্ভুক্ত। ভারত যত সক্ষম হবে ততই বেশি মানবতার সেবা করবে, ততই বেশি লাভ হবে দুনিয়ার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রত্যেকবার আপনাদের কাছ থেকে অনেক চিঠি পাই। নমো অ্যাপ এবং মাই গভ-এ মেসেজ, ফোন কলের মাধ্যমে আপনাদের কথা জানার সুযোগ পাই। এই এতো বার্তার মধ্যে একটি আমার বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। এই বার্তাটি হল প্রিয়াঙ্কা পাণ্ডের। তেইশ বছরের প্রিয়াঙ্কা হিন্দী সাহিত্যের ছাত্রী এবং বিহারের সিওয়ানের বাসিন্দা। প্রিয়াঙ্কা নমো অ্যাপ এ লিখেছেন যে দেশের পনেরোটি পর্যটনস্থলে যাওয়ার ব্যাপারে আমার পরামর্শে উনি খুব অনুপ্রাণিত হয়েছেন, তাই উনি পয়লা জানুয়ারী একটি বিশেষ জায়গার জন্য রওনা দেন। সেই জায়গাটা হল ওঁর ঘর থেকে পনেরো কিলোমিটার দূরে, দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদের পৈত্রিক নিবাস। প্রিয়াঙ্কাজী খুব সুন্দর কথা লিখেছেন যে নিজের দেশের মহান ব্যক্তিত্বদের জানার লক্ষ্যে এটি ওঁর প্রথম পদক্ষেপ। প্রিয়াঙ্কাজী ওখানে ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদের লেখা বই, অনেক ঐতিহাসিক ছবির সন্ধান পান। প্রিয়াঙ্কাজী, আপনার এই অভিজ্ঞতা অন্যদেরকেও উৎসাহিত করবে।
বন্ধুরা, এই বছর থেকে ভারত স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছরের সমারোহ – অমৃত মহোৎসব আরম্ভ করবে। যে সব মহানায়কদের জন্য দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে, তাঁদের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় জায়গাগুলির সন্ধান করা, সেগুলি সম্পর্কে জানার এই উপযুক্ত সময়।
বন্ধুরা, আমরা স্বাধীনতার আন্দোলন এবং বিহারের কথা বলছিলাম এবং এই প্রসঙ্গে আমি নমো অ্যাপে চর্চিত আর একটি বিষয়ের উল্লেখ করতে চাই। মুঙ্গেরবাসী জয়রাম বিপ্লব আমাকে তারাপুর শহীদ দিবস সম্পর্কে লিখে পাঠিয়েছেন। পনেরোই ফেব্রুয়ারী, ১৯৩২ তে, দেশভক্তদের একটি দলের বহু বীর নবযুবককে ইংরেজরা অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করে। ওঁদের একমাত্র অপরাধ ছিল তাঁরা “বন্দে মাতরম” এবং “ভারত মাতার জয়” স্লোগান দিচ্ছিলেন। আমি সেই বীর শহীদদের প্রণাম জানাচ্ছি এবং তাদের সাহসকে শ্রদ্ধাপূর্বক স্মরণ করছি। এই বিষয়টি সকলের সামনে নিয়ে আসার জন্য আমি জয়রাম বিপ্লব জীকে ধন্যবাদ জানাই। এটি এমন একটি বিষয় যার সম্পর্কে কখনও যথাযথ আলোচনা হয়নি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ভারতের সব জায়গায়, সব মফস্বল এবং গ্রামে স্বাধীনতার লড়াই সমস্ত শক্তি দিয়ে লড়া হয়েছিল। ভারতের প্রত্যেক অঞ্চলে এমন মহান পুত্র ও বীরাঙ্গনাদের জন্ম হয়েছে যাঁরা রাষ্ট্রের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমাদের উচিৎ তাঁদের সংগ্রাম এবং তার সঙ্গে সম্পৃক্ত স্মৃতিগুলি যথাযথ সম্মানের সঙ্গে বাঁচিয়ে রাখা, এই বিষয়গুলি আগামী প্রজন্মের জন্য লিপিবদ্ধ করে রাখা, যাতে তাঁদের স্মৃতি অমলিন থাকে। আমি সমস্ত দেশবাসীকে, বিশেষ করে আমার যুব বন্ধুদের আহ্বান জানাই যে তাঁরা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্পর্কে, স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত ঘটনাগুলি সম্পর্কে লিখুন। নিজেদের অঞ্চলে স্বাধীনতার সময়ের শৌর্য, বীর্যের গাথা নিয়ে বই লিখুক। ভারত যখন স্বাধীনতার পঁচাত্তরতম বর্ষপূর্তি উদযাপন করবে তখন আপনাদের লেখাগুলি সেই সব বীর নায়কদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে। ‘ইন্ডিয়া ৭৫’ উপলক্ষে তরুণ লেখকদের জন্য একটি বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে সমস্ত রাজ্যের এবং সব ভাষার যুব লেখকরা উৎসাহ পাবেন। দেশে এমন বহু লেখক তৈরি হবে যাঁদের ভারতীয় ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর পড়াশোনা থাকবে, জ্ঞান থাকবে। আমাদের এরকম উঠতি প্রতিভাদের সম্পুর্ন সহযোগিতা করা উচিৎ। এর ফলে ভবিষ্যৎ এর দিকনির্ধারন করার জন্য ‘থট লিডার’দের একটি দল তৈরি হবে। আমি আমাদের যুব বন্ধুদের এই উদ্যগের অংশীদার হওয়ার এবং নিজেদের সাহিত্যিক প্রতিভার প্রয়োগ করার আমন্ত্রন জানাই। এই সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন শিক্ষা মন্ত্রকের ওয়েব সাইট থেকে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠানে, শ্রোতাদের কী ভাল লাগে তা আপনারাই ভাল জানেন। কিন্তু আমার ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠানে সব চেয়ে ভাল লাগে যে আমি অনেক কিছু জানতে পারি, শিখতে পারি, পড়তে পারি। পরোক্ষভাবে আপনাদের সকলের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ মেলে। কারো কোনও বিশেষ উদ্যোগ, কারো দেশের জন্য করা কোন বিশেষ কাজ, তাদের প্রাণশক্তি – এই সব আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করে, উজ্জীবিত করে।
হায়দ্রাবাদের বইনপল্লীতে এক স্থানীয় সব্জি বাজার কিভাবে তাদের দ্বায়িত্বপালন করছে সেটা পড়ে আমার খুব ভাল লেগেছে। আমরা দেখেছি, নানা কারণে সব্জি বাজারে অনেক সব্জি নষ্ট হয়। এই সব পচা সব্জি এদিক ওদিক পড়ে থাকে, ময়লা ছড়ায়। কিন্তু বইনপল্লীতে সব্জি বাজারের সকলে সিদ্ধান্ত নেয় যে রোজ যে সব্জিগুলি বেঁচে যাবে সেগুলি এভাবে শুধু শুধু ফেলা হবে না। সমস্ত বাজারের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। নষ্ট হয়ে যাওয়া সবজি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে আপনারা হয়তো কখনো শুনে থাকতে পারেন। এটাই তো উদ্ভাবনের শক্তি। বইনপল্লীর বাজারে আগে যা নষ্ট হত তা থেকেই আজ সম্পদ সৃষ্টি হচ্ছে। এটাই তো আবর্জনা থেকে সোনা তৈরীর যাত্রা। ওখানে প্রতিদিন প্রায় ১০ টন বর্জ্য পদার্থ সংগৃহীত হয়। তাকে একটি প্ল্যান্টে একত্রিত করা হয়। প্ল্যান্টের ভেতরে প্রতিদিন এই বর্জ্য থেকে ৫০০ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, আর প্রায় ৩০ কিলো জৈব জ্বালানীও তৈরী হয়। এই বিদ্যুতেই সবজি বাজার আলোকিত হয়়, আর যে জৈব জ্বালানী তৈরী হয় তা দিয়ে বাজারের ক্যান্টিনে খাবার প্রস্তুত করা হয়। বলুন তো, এ এক আশ্চর্য প্রয়াস না! এমনই আরেকটি অভাবনীয় কাজ হরিয়ানার পঞ্চকুলার বড়োত গ্রাম পঞ্চায়েতও করে দেখিয়েছে। এই পঞ্চায়েতের জমিতে জল নিকাশির সমস্যা ছিল। তার ফলে নোংরা জল এখানে সেখানে জমে থাকত, রোগ ছড়াত। কিন্তু বড়োতের অধিবাসীরা ঠিক করলেন এই বর্জ্য জল থেকেই সম্পদ সৃষ্টি করবেন। গ্রাম পঞ্চায়েত পুরো গ্রাম থেকে আসা নোংরা জলকে এক জায়গায় একত্রিত করে ফিল্টার করতে শুরু করলেন, এবং ফিল্টার করা এই জল এখন গ্রামের কৃষকরা ক্ষেতে সেচের জন্য ব্যবহার করছেন। অর্থাৎ দূষণ, আবর্জনা এবং রোগ থেকে মুক্তিও হচ্ছে, আবার ক্ষেতের জলসেচও।
বন্ধুরা, পরিবেশ রক্ষার মাধ্যমে কিভাবে উপার্জনের রাস্তা খুলে যায় তার একটি উদাহরণ অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়েও দেখার সুযোগ হয়েছে। অরুণাচল প্রদেশের এই পাহাড়ি এলাকায় বহু শতাব্দী ধরেই "মন শুগু" নামের একটি কাগজ তৈরি করা হয়। এই কাগজ এখানকার স্থানীয় শুগু শেং নামের একটি গাছের ছাল থেকে বানানো হয়, তাই এই কাগজ তৈরি করার জন্য গাছ কাটতে হয় না। এছাড়া এটি বানাতে কোন কেমিক্যালও ব্যবহৃত হয় না। অর্থাৎ এই কাগজ পরিবেশ ও স্বাস্থ্য উভয়ের জন্যই নিরাপদ। এমনও একটা সময় ছিল যখন এই কাগজ রফতানি হতো, কিন্তু যখন আধুনিক প্রযুক্তিতে বহুল পরিমাণে কাগজের উৎপাদন শুরু হল তখন এই স্থানীয় শিল্প অবলুপ্তির দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল। এখন এক স্থানীয় সামাজিক উদ্যোক্তা গোম্বু এই শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়াস করেছেন। এর ফলে এখানকার আদিবাসী ভাই-বোনেদের উপার্জনও হচ্ছে। আমি কেরলেরও একটি খবর দেখেছি যা আমাদের সবার নিজস্ব দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে। কেরলের কোট্টায়ামের এক ভিন্ন ভাবে সক্ষম প্রবীণ – এন এস রাজাপ্পান সাহেব। রাজাপ্পানজি প্যারালাইসিস এর জন্যে চলাফেরায় অসমর্থ। কিন্তু এতে স্বচ্ছতার প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার কোন খামতি হয়নি। তিনি বিগত কয়েক বছর ধরে নৌকা করে ভেম্বানাদ ঝিলে যান এবং ঝিলে ফেলা প্লাস্টিকের বোতল বার করে আনেন। ভাবুন রাজাপ্পানজির চিন্তাভাবনা কতটা মহৎ। আমাদেরও রাজাপ্পানজির থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে স্বচ্ছতার জন্যে যেখানে যেখানে সম্ভব, সেই সব জায়গায় অংশগ্রহণ করা উচিত।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন আগে আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো থেকে বেঙ্গালুরুর জন্য একটি নন স্টপ ফ্লাইটের কমান্ড ভারতের চার মহিলা পাইলট সামলেছেন। দশ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ সফর অতিক্রম করে এই ফ্লাইট সোয়া দু'শোর বেশি যাত্রীদের ভারতে নিয়ে এসেছে। আপনারা এবার ২৬ শে জানুয়ারির প্যারেডেও নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, যেখানে ভারতীয় বায়ুসেনার দুই মহিলা অফিসার নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন। ক্ষেত্র যাই হোক দেশের নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে, কিন্তু প্রায়শই আমরা দেখে থাকি, দেশের গ্রামে গ্রামে ঘটে চলা এই ধরনের পরিবর্তনের বিষয়ে তেমন চর্চা হয় না। তাই যখন আমি মধ্যপ্রদেশের জবলপুরের একটি খবর দেখলাম তখন আমার মনে হল যে এর উল্লেখ তো ‘মন কি বাতে’ আমার অবশ্যই করা উচিত। এই খবর অনেকের মধ্যে অনুপ্রেরণা যোগাবে। জবলপুরের চিচগাঁওতে কিছু আদিবাসী মহিলা একটি রাইস মিলে দৈনিক মজুরিতে কাজ করতেন। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারী যেভাবে পৃথিবীর সব মানুষকে প্রভাবিত করেছে সেই ভাবেই এই মহিলারাও প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাদের চাল কলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এটা স্বাভাবিক যে তার ফলে উপার্জনের সমস্যা শুরু হয়েছিল। কিন্তু তারা নিরাশ হননি। তারা হার মানেননি। তাঁরা ঠিক করলেন একসঙ্গে মিলে তাঁরা নিজেদের জন্য একটি চাল কল চালু করবেন। যে মিলে তাঁরা কাজ করতেন তারা তাদের মেশিনও বিক্রি করতে চাইছিল। এদের মধ্যে মিনা রাহংগডালে জি সব মহিলাদের একত্রিত করে "স্বয়ং সহায়তা সমূহ" প্রতিষ্ঠা করলেন এবং সবাই নিজেদের সঞ্চিত পুঁজি দিয়ে পয়সা যোগাড় করলেন।
|
|
যে টুকু অর্থের অভাব হয়েছিল "আজীবিকা মিশন" এর মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেললেন, আর এখন দেখুন এই জনজাতি বোনেরা আজ সেই চাল কল কিনে ফেললেন। যেখানে তাঁরা একসময়ে কিছু কাজ করতেন। আজ তাঁরা নিজেদের চাল কল চালাচ্ছেন। এতোদিনে এই মিল প্রায় তিন লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। এই মুনাফা দিয়ে মিনা জী ও তাঁর সহযোগিরা প্রথমে ব্যাংকের ঋণ শোধ করেছেন এবং নিজেদের ব্যবসা বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। করোনা যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল তাকে মোকাবিলা করতে দেশের আনাচে-কানাচে এধরনের কর্মকান্ড ঘটেছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি যদি আপনাদের বুন্দেলখন্ডের কথা বলি কোন কথা আপনাদের আপনাদের মনে পড়বে? ইতিহাসের চর্চা যাঁরা করেন এ ক্ষেত্রে ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাই এর কথা বলবেন। আবার অনেকে সুন্দর ও শান্ত ওর্ছার কথা ভাববেন। অনেকের এই অঞ্চলের অত্যধিক গরমের কথাও মনে পড়বে, কিন্তু এখন এখানে এমন কিছু অভিনব ঘটছে যা খুবই উৎসাহ ব্যঞ্জক এবং যার সম্বন্ধে আমাদের অবশ্যই জানা উচিৎ। কিছু দিন আগে ঝাঁসিতে মাসব্যাপী স্ট্রবেরী উৎসব শুরু হয়েছিল। যে কেউ অবাক হয়ে ভাববেন স্ট্রবেরী আর বুন্দেলখণ্ড! কিন্তু এটাই সত্যি। এখন বুন্দেলখণ্ডে স্ট্রবেরী খামার নিয়ে উৎসাহ বাড়ছে, আর এই উদ্যোগে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছেন ঝাঁসির এক কন্যা গুরলিন চাওলা। আইনের ছাত্রী গুরলিন প্রথমে নিজের বাড়িতে এবং ক্ষেতে সফলভাবে স্ট্রবেরী -র চাষ করে ঝাঁসিতেও যে স্ট্রবেরী চাষ হতে পারে এই বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করেছেন। ঝাঁসির স্ট্রবেরী উৎসব, বাড়ি থেকে কাজ করার ওপর জোর দেয়।এই মহোৎসবের মাধ্যমে কৃষক ও যুবদের নিজেদের বাড়ির পেছনে কি ছাদে টেরেস গার্ডেনে বাগান করার ও সেখানে স্ট্রবেরী চাষের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যে স্ট্রবেরী এক সময় পাহাড়ের ফল হিসেবে পরিচিত ছিল আজ কচ্ছ- এর মতো রুক্ষ জমিতেও তার চাষ হচ্ছে এবং কৃষকদের আয় বাড়ছে।
বন্ধুরা, স্ট্রবেরী উৎসব মতো চিন্তাভাবনা উদ্ভাবনের এর মানসিকতা প্রদর্শন তো করছে, আবার আমাদের কৃষি ক্ষেত্রে যে নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ হচ্ছে তারও জানান দিচ্ছে। বন্ধুরা, চাষবাস আধুনিক করার জন্য সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং অনেক পদক্ষেপও নিচ্ছে। সরকারের এই প্রয়াস আগামী দিনেও চালু থাকবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী! কিছুদিন আগে আমি একটা ভিডিও দেখেছি। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা গ্রামের এক চিত্রকর সরমুদ্দিনের ভিডিও ছিল। তিনি আনন্দের সঙ্গে বলছিলেন রামায়ণ নির্ভর ওঁর পেইন্টিং দুলাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এতে তাঁর গ্রামবাসীদেরও আনন্দ হয়েছে। এই ভিডিও দেখার পর এই বিষয়ে আমার জানার আগ্রহ হয়েছে। এই ভাবে পশ্চিমবঙ্গের একটি অত্যন্ত ভালো উদ্যোগের বিষয়ে জানতে পারি যা আমি আপনাদেরকে অবশ্যই জানাতে চাই। পর্যটন মন্ত্রকের আঞ্চলিক দপ্তর মাসের শুরুতে বাংলার গ্রামে একটি অতুল্য ভারত, সপ্তাহান্ত গেটওয়ে-র শুরু করেছে। এখানে পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূ্ম, পুরুলিয়া, পূর্ব বর্ধমানের হস্তশিল্পীরা বেড়াতে আসা মানুষদের জন্য হ্যান্ডিক্র্যাফট ওয়ার্কশপ আয়োজন করেছিলেন। আমি এও জেনেছি অতুল্য ভারত, সপ্তাহান্ত গেটওয়ের সময় হস্তশিল্পের যে সব সামগ্রী যে বিক্রি হয়েছে, তাতে হস্তশিল্পীরা যথেষ্ট উৎসাহিত হয়েছেন। সারা দেশের মানুষেরা নতুন নতুন পদ্ধতিতে আমাদের শিল্পকলা জনপ্রিয় করে তুলছেন। ওড়িষার রাউরকেল্লার ভাগ্যশ্রী সাহু কে দেখুন। এমনিতে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং- এর ছাত্রী ছিলেন কিন্তু কিছুদিন তিনি পটচিত্র আঁকা শিখতে শুরু করেন এবং সাফল্য লাভ করেন। কিন্তু আপনারা কি জানেন, তিনি তাঁর পেইন্টিং কোথায় এঁকেছেন ౼সফট স্টোন্সে! সফট স্টোন্স এর ওপর। কলেজ যাতায়াতের পথে ভাগ্যশ্রীর যে সফট স্টোন্স পেয়েছিলেন সেগুলো যোগাড় করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করেছিলেন। তারপর দিনে দু’ ঘন্টা এই পাথরের ওপর পটচিত্র স্টাইলে পেইন্টিং করেছেন। উনি এই পাথরে পেইন্ট করে বন্ধুদের গিফট দিতে শুরু করেন। লকডাউনের সময় তিনি বোতলের ওপরেও পেইন্টিং করতে থাকলেন। এখন তো তিনি এই স্কিল্পের কর্মশালাও আয়োজন করছেন। কিছুদিন আগে সুভাষবাবুর জন্মদিনে ভাগ্যশ্রী পাথরের ওপর এঁকে তাঁকে ব্যতিক্রমী শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছেন। তাঁর আগামী সাফল্যের জন্য তাঁকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আর্ট এন্ড কালার্স এর মাধ্যমে অনেক নতুন কিছু শেখা যায়, করা যায়। ঝাড়খন্ডের দুমকায় এই ধরনের এক সুন্দর প্রয়াসের কথা আমাকে বলা হয়েছে। সেখানে মিডল স্কুলের এক প্রিন্সিপ্যাল বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য ও শেখানোর জন্য গ্রামের দেওয়ালে ইংরেজি এবং হিন্দি অক্ষর এঁকে দিয়েছেন, তারসঙ্গে আলাদা আলাদা ছবিও এঁকে দিয়েছেন। এর ফলে গ্রামের বাচ্চাদের অত্যন্ত সুবিধা হয়েছে। আমি এমন সব মানুষদের অভিনন্দন জানাচ্ছি, যাঁরা এই ধরনের চেষ্টায় যুক্ত আছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ভারত থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে, অনেক মহাসাগরের পারে একটি দেশ আছে, যার নাম চিলি, ভারত থেকে চিলি পৌঁছতে অনেক বেশি সময় লাগে। কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতির সুগন্ধ, ওখানে অনেক আগের থেকেই ছড়িয়ে আছে। আরেকটি বিশেষ কথা হল, ওখানে যোগ অনেক জনপ্রিয়। আপনাদের এটা জেনে ভালো লাগবে যে চিলির এ রাজধানী স্যান্টিয়াগোতে ৩০ এর থেকেও বেশি যোগ বিদ্যালয় আছে। চিলিতে আন্তর্জাতিক যোগ দিবসও খুব উৎসাহের সঙ্গে পালন করা হয়। আমাকে বলা হয়েছে যে, হাউজ অফ ডেপুটিসে যোগ দিবস নিয়ে অনেক উৎসাহ ভরা পরিবেশের সৃষ্টি হয়। করোনার এই সময়ে রোগ প্রতিরোধের উপর জোর দিতে এবং রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে যোগের উপযোগিতা দেখে, এখন তাঁরাও যোগকে আগের থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। চিলির কংগ্রেস, অর্থাৎ ওখানকার সংসদও এক প্রস্তাব পাস করেছেন। ওখানে চৌঠা নভেম্বর জাতীয় যোগ দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। এখন আপনারা এটা ভাবতে পারেন যে চৌঠা নভেম্বরে এমন কি আছে? চৌঠা নভেম্বর ১৯৬২ তে চিলির "হোজে রাফাল এস্ট্রাডা" সেই দেশে প্রথম যোগ সংস্থা স্থা্পন করেন। এই দিনেই জাতীয় যোগ দিবস ঘোষণা করে এস্ট্রাডা জিকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে। চিলির সংসদের পক্ষ একটা বিশেষ সম্মান, যার জন্য প্রত্যেক ভারতীয় গর্ববোধ করেন। আসলে চিলির সংসদের সঙ্গে যুক্ত একটা আরো কথা আপনার ভালো লাগবে। চিলির সেনেটের ভাইস প্রেসিডেন্ট এর নাম রবীন্দ্রনাথ কুইয়েন্টেরাস। ওঁর এই নাম বিশ্বকবি গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামের প্রেরণায় রাখা হয়েছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মাই গভ- এর উপর মহারাষ্ট্রের জালনার ডাক্তার স্বপ্নীল মন্ত্রী, আর কেরালার পলক্কড়ে প্রহ্লাদ রাজগোপালনও অনুরোধ করেছেন যে আমি 'মন কি বাত' এ পথসুরক্ষা নিয়েও আপনাদের সঙ্গে কথা বলি। এই মাসে ১৮ ই জানুয়ারি থেকে ১৭ ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমাদের দেশ 'পথ নিরাপত্তা মাস' অর্থাৎ রোড সেফটি মান্থ হিসেবে পালন করছে। পথ দুর্ঘটনা আজ শুধু আমাদের দেশেই নয় পুরো বিশ্বেই এক দুশ্চিন্তার বিষয়। আজ ভারতে রোড সেফটি বা পথ সুরক্ষার জন্য সরকারের সঙ্গে ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত স্তরে অনেক রকমের চেষ্টা করা হচ্ছে। জীবন বাঁচানোর এই চেষ্টায় আমাদের আমাদের সকলেরই সক্রিয় অংশ নেওয়া উচিত। বন্ধুরা, আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন, বর্ডার রোড অরগানাইজেশন, যে রাস্তা তৈরি করে, সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় আপনি অনেক নতুন ধরণের স্লোগান দেখতে পাবেন। 'দিস ইজ হাইওয়ে নট রানওয়ে ' অথবা ' বি মিস্টার লেট দ্যান লেট মিস্টার '। এই শ্লোগানগুলো পথ সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে যথেষ্ট প্রভাবশালী। এখন আপনারাও এমনই আকর্ষণীয় স্লোগান অথবা ক্যাচ ফ্রেজ, মাই গভে পাঠাতে পারেন, আপনার ভালো স্লোগানগুলো এই অভিযানে ব্যবহার করা হবে। পথ নিরাপত্তা নিয়ে আমি নমো অ্যাপে কলকাতার অপর্না দাসের একটা পোস্টের আলোচনা করতে চাই। অপর্ণা জীও আমাকে 'ফাস্ট্যাগ’ কর্মসূচী নিয়ে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন। ওঁর বক্তব্য হলো 'ফাস্ট্যাগ’ এ যাত্রার অভিজ্ঞতাই বদলে গেছে। এতে সময়ও বেঁচে যায়, টোল প্লাজায় দাঁড়ানো, ক্যাশ পেমেন্ট করার ঝামেলা মিটে যায়। অপর্ণা জীর কথাই ঠিক। আগে আমাদের এখানে টোল প্লাজায় এক একটি গাড়িতে ৭ থেকে ৮ মিনিট লেগে যেত, কিন্তু 'ফাস্ট্যাগ' আসার পর এখন এই সময় মাত্র দেড় দুই মিনিটে দাঁড়িয়েছে। টোল প্লাজাতে অপেক্ষার সময় কম হওয়ার জন্যে গাড়ির জ্বালানীরও সাশ্রয় হচ্ছে। এতে দেশবাসীর প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা বেঁচে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ পয়সার সাশ্রয় আর সময়েরও সাশ্রয়। আপনাদের সবার কাছে আমার আবেদন, সবাই দিকনির্দেশগুলি পালন করুন, নিজেদের খেয়াল রাখুন, আর অন্যদেরও জীবন বাঁচান।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের এখানে বলা হয়- 'জলবিন্দু নিপাতেন ক্রমশ পূর্যতে ঘটঃ'। অর্থাৎ এক এক বিন্দুতেই কলসি ভরে ওঠে। আমাদের প্রতিনিয়ত চেষ্টাতেই সংকল্প সিদ্ধ হয়। এই কারণে, ২০২১ এর শুরু যে লক্ষ্যের সাথে আমরা করেছি, সেটা সবাই মিলেই পূর্ণ করতে হবে। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই বছর কে সার্থক করার জন্য নিজের নিজের পা বাড়াই। আপনারা আপনাদের বার্তা, নিজের আইডিয়াগুলিও পাঠাতে থাকুন। সামনের মাসে আমাদের আবার দেখা হবে। ইতি- বিদা পুনর্মিলনায়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ, সাতাশে ডিসেম্বর। আর মাত্র চারদিন বাদেই ২০২১ আরম্ভ হতে চলেছে। আজকের ‘মন কী বাত’, এক অর্থে ২০২০ র শেষ ‘মন কী বাত’। এর পরের ‘মন কী বাত’, ২০২১-এ হবে। বন্ধুরা, আমার সামনে আপনাদের পাঠানো অসংখ্য চিঠি রয়েছে। মাই গভ এ আপনারা যে সমস্ত প্রস্তাব পাঠান, সেগুলোও আমার সামনে রয়েছে। বহু মানুষ ফোন করে তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। বেশীরভাগ বক্তব্যেই এই বছরের অভিজ্ঞতা, তাঁদের উপলব্ধি এবং ২০২১ এ তাঁদের সঙ্কল্পের কথা রয়েছে। কোলহাপুর থেকে অঞ্জলীজি লিখেছেন নতুন বছরে আমরা একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাই, অভিনন্দন জানাই। এবার আমরা একটা নতুন কাজ করি আমাদের দেশকেও শুভেচ্ছা জানাই, অভিনন্দন জানাই। অঞ্জলীজি, সত্যি খুব ভাল ভাবনা। আমাদের দেশ ২০২১শে সাফল্যের নতুন শিখর স্পর্শ করুক, দুনিয়ায় ভারতের পরিচিতি আরও গৌরবমণ্ডিত হোক, এর চেয়ে বেশী আমরা আর কী চাইতে পারি।
বন্ধুরা, নমো অ্যাপে মুম্বাই এর অভিষেকজি একটি মেশেজ পোস্ট করেছেন, লিখেছেন ২০২০ যা যা আমাদের দেখালো, যা যা শেখালো, তা কোনোদিন কেউ ভাবেনি। করোনা সংক্রান্ত আরও অনেক কথা উনি লিখেছেন। এই সমস্ত চিঠি ও বার্তাগুলীতে একটা ‘কমন’ বিষয় আমার নজরে এসেছে যেটা আপনাদের সঙ্গে আমি ভাগ করে নিতে চাই। অধিকাংশ চিঠিপত্রে লোকে দেশের সামর্থ্য, দেশবাসীর সামগ্রিক শক্তির প্রশংসা করেছেন। যেভাবে জনতা কারফিউর মত অভিনব প্রয়াস গোটা বিশ্বের জন্য প্রেরণাদায়ক হয়ে ছিল, যেভাবে থালা-হাত-তালি বাজিয়ে আমাদের দেশবাসী করোনা যোদ্ধাদের সম্মান জানিয়েছিল, ঐক্যবদ্ধতা দেখিয়েছিল, অনেকেই এই বিষয়গুলিকে মনে রেখেছেন।
বন্ধুরা, দেশের আপামর জনসাধারণ এই পরিবর্তনকে অনুভব করেছেন। আমি দেশে আশার এক অদ্ভুত প্রবাহ অনুভব করেছি। অনেক বাধা বিপত্তি এসেছে, বহু বিপদ এসেছে। করোনার কারণে দুনিয়ায় সরবরাহ শৃঙ্খল নিয়ে অনেক সমস্যা তৈরি হয় কিন্তু আমরা এই সব বাধা থেকে নতুন শিক্ষা লাভ করেছি। দেশ এক নতুন ক্ষমতার উদ্ভব হয়েছে। তাকে এককথায় বলা যেতে পারে ‘আত্মনির্ভরতা’।
বন্ধুরা, দিল্লীবাসী অভিনব ব্যানার্জী আমাকে নিজের যে অভিজ্ঞতার কথা লিখে পাঠিয়েছেন, তা আমার খুবই চমকপ্রদ লেগেছে। অভিনবজিকে নিজের আত্মীয় পরিজনের বাচ্চাদের উপহার দেওয়ার জন্য কিছু খেলনা কিনতে হত, তাই তিনি দিল্লীর ঝন্ডেবালান বাজারে গিয়েছিলেন।আপনারা অনেকে হয়ত জানেন, দিল্লীর এই বাজার সাইকেল এবং খেলনার জন্য বিখ্যাত। আগে ওখানে দামী খেলনা মানেই ছিল আমদানী করা খেলনা। এমনকী সস্তা খেলনাও বাইরে থেকে আসত। কিন্তু, অভিনবজি আমাকে চিঠিতে জানিয়েছেন যে এখন ওখানকার অনেক দোকানদার ক্রেতাদের এই বলে খেলনা বিক্রি করছেন যে ভাল খেলনা মানে ভারতে তৈরি, ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ খেলনা। ক্রেতাদের মধ্যেও ইন্ডিয়া মেড খেলনারই চাহিদা দেখা যাচ্ছে। মানুষের চিন্তা ভাবনার যে আমূল পরিবর্তন হয়েছে এ হল তার জাজ্বল্যমান উদাহরণ। দেশবাসীর চিন্তাধারায় বিরাট পরিবর্তন এসেছে, তাও মাত্র এক বছরে। এই পরিবর্তনের হিসেব কষা সহজ নয়। অর্থনীতিবিদরাও নিজেদের মাপদন্ডে এর ওজন করতে পারবেন না।
বন্ধুরা, আমাকে বিশাখাপত্তনম থেকে ভেঙ্কট মুরলীপ্রসাদ যা লিখে পাঠিয়েছেন, তাতে এক সম্পূর্ণ অন্য ধারণা পেলাম। ভেঙ্কটজি লিখেছেন, আমি আপনাকে টোয়েণ্টী, টোয়েণ্টীওয়ান এর জন্য, দু হাজার একুশের জন্য আমার আমার এবিসি অ্যাটাচ করে পাঠালাম। আমি বুঝতে পারিনি, এবিসি মানে উনি কি বলতে চাইছেন। আমি দেখি ভেঙ্কটজি তার চিঠির সাথে একটি চার্টও অ্যাটাচ করে পাঠিয়েছেন। আমি চার্টটা দেখে বুঝতে পারি এবিসি মানে আত্মনির্ভর ভারত চার্ট। এটি খুবই চমকপ্রদ ব্যাপার। ভেঙ্কটজী সেই সমস্ত জিনিসের লিস্ট তৈরি করেছেন যা উনি প্রতিদিন ব্যবহার করেন। এর মধ্যে ইলেকট্রনিকস, স্টেশনারী, সেলফ কেয়ার আইটেম ইত্যাদি আরও অনেক জিনিস আছে। ভেঙ্কটজী বলেছেন আমরা নিজেদের অজান্তেই বহু বিদেশী দ্রব্য ব্যবহার করি যার ভারতীয় বিকল্প খুব সহজেই পাওয়া যায়। এখন উনি অঙ্গীকার করেছেন যে উনি শুধুমাত্র সেই পণ্যই ব্যবহার করবেন যার সঙ্গে আমাদের দেশবাসীর পরিশ্রম এবং ঘাম জড়িয়ে আছে।
বন্ধুরা, এর পাশাপাশি উনি আরও একটি বিষয় উল্লেখ করেছেন যা আমার ভীষণ চমকপ্রদ মনে হয়েছে। উনি লিখেছেন যে আমরা আত্মনির্ভর ভারতের সমর্থন করছি কিন্তু আমাদের উৎপাদকদের জন্যও স্পষ্ট নির্দেশ থাকা উচিৎ যে পণ্যের গুণমান নিয়ে কোন রকম আপোষ যেন না করা হয়। কথাটা একদম ঠিক। জিরো এফেক্ট, জিরো ডীফেক্ট এই ভাবনা নিয়ে কাজ করার সময় এসে গেছে। আমি দেশের উৎপাদক ও প্রথম সারির শিল্প সংস্থাগুলিকে অনুরোধ জানাই এই কথা মাথায় রাখতে। দেশের মানুষ এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছেন। ভোকাল ফর লোকাল এই ভাবনা আজ ঘরে ঘরে গুঞ্জরিত হচ্ছে। এই সময়, আমাদের সুনিশ্চিত করার সময় যে আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্বমানের হোক। যেটা বিশ্বে সবথেকে ভাল, সেটাই আমরা ভারতে তৈরি করতে পারি। এর জন্য আমাদের উদ্যমী সাথীদের এগিয়ে আসতে হবে। স্টার্টআপদেরও এগিয়ে আসতে হবে। আবারও একবার আমি ভেঙ্কটজিকে ওঁর অসাধারণ প্রয়াসের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।
বন্ধুরা, আমাদের এই ভাবনাকে জারি রাখতে হবে, বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং এর প্রসার ঘটাতে হবে। আমি আগেও বলেছি আরো একবার দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করছি আপনারাও একটি সূচি তৈরি করুন। সারাদিন আমরা যে যে দ্রব্য কাজের জন্য ব্যবহার করি সেই সব জিনিস বিবেচনা করুন এবং দেখুন অজান্তে কোন কোন বিদেশে তৈরি হওয়া দ্রব্য আমাদের জীবনে প্রবেশ করেছে। এক হিসেবে আমরা এর দাস হয়ে পড়েছি। তাদের ভারতে তৈরি হওয়া বিকল্পের সন্ধান করুন এবং এই সিদ্ধান্ত নিন যে ভবিষ্যতে ভারতে তৈরি ভারতবাসীর পরিশ্রমে, ঘামে তৈরি দ্রব্যই আমরা ব্যবহার করব। আপনারা প্রতিবছর নতুন বছরের রেসোলিউশনস নিয়ে থাকেন। এবার একটি রেজলিউশন নিজের দেশের জন্যও অবশ্যই নিতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশে, আততায়ীদের থেকে, অত্যাচারীদের থেকে দেশের হাজার হাজার বছরের প্রাচীন সংস্কৃতি, সভ্যতা, আমাদের রীতি-রেওয়াজকে রক্ষা করতে যাঁরা বিরাট আত্মবলিদান দিয়েছেন আজ তাঁদেরও স্মরণ করার দিন। আজকের দিনে গুরু গোবিন্দজীর পুত্রদ্বয় সাহিবজাদে জোরাবর সিং এবং ফতেহ সিংকে প্রাচীরে জীবন্ত সমাধি দেওয়া হয়েছিল। অত্যাচারী চেয়েছিল যে সাহিবজাদারা যেন নিজেদের বিশ্বাস ছেড়ে দেয়, মহান গুরু পরম্পরা শিক্ষা ছেড়ে দেয়। কিন্তু আমাদের সাহিবজাদারা এত কম বয়সেও আশ্চর্য সাহস দেখিয়েছিলেন, ইচ্ছাশক্তি দেখিয়েছিলেন। প্রাচীরে সমাধিস্থ করার সময় পাথর গায়ে লাগছিল, প্রাচীর উঁচু হচ্ছিল, মৃত্যু এগিয়ে আসছিল কিন্তু তবুও তাঁরা নিজেদের অবস্থানে অটল ছিলেন। আজকের দিনেই গুরু গোবিন্দ সিং এর মা – মাতা গুজরীও শহীদ হয়েছিলেন। প্রায় এক সপ্তাহ আগে শ্রী গুরু তেগবাহাদুরজীর শহীদত্ব বরণের দিনও ছিল। এখানে দিল্লিতে গুরুদ্বার রকাবগঞ্জ গিয়ে গুরু তেগ বাহাদুরকে শ্রদ্ধা নিবেদন করার, সেখানে মাথা ঠেকানোর সুযোগ আমার হয়েছে। এই মাসেই শ্রীগুরু গোবিন্দ সিং এর দ্বারা অনুপ্রাণিত বহু মানুষ মাটিতে শুয়ে থাকেন। মানুষ শ্রী গুরু গোবিন্দ সিং এর পরিবারের সদস্যদের বরণ করা শহীদ হওয়াকে অত্যন্ত আবেগঘন ভাবে স্মরণ করেন।
এই শহীদত্ব সম্পূর্ণ মানবতাকে, দেশকে নতুন শিক্ষা দিয়েছে। এই আত্মত্যাগ আমাদের সভ্যতা কে সুরক্ষিত রাখার মহান দায়িত্ব পালন করেছেন আমরা সবাই এর কাছে ঋণী। একবার আবারও শ্রীগুরু তেগ বাহাদুরজি, মাতা গুজরীজি, গুরু গোবিন্দ সিংহজি এবং চার সাহিবজাদাদের আত্মোতসর্গকে আমি প্রণাম জানাই। এভাবেই বহু আত্মত্যাগ ভারতের আজকের স্বরূপকে বাঁচিয়ে রেখেছে, সচল রেখেছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এবার আমি এমন একটি কথা বলতে চলেছি যাতে আপনাদের আনন্দও হবে এবং গর্বও হবে। ভারতে লেপার্ডের সংখ্যা ২০১৪ থেকে ২০১৮ এর মধ্যে ৬০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ তে দেশে লেপার্ড এর সংখ্যা প্রায় ৭৯০০ ছিল। ২০১৯ এ তাদের সংখ্যা বেড়ে ১২৮৫২ হয়েছে। এটা সেই লেপার্ড যাদের সম্বন্ধে জিম করবেট বলেছিলেন "যেসব মানুষ লেপার্ডকে প্রকৃতিতে স্বচ্ছন্দ রূপে চলাফেরা করতে দেখেননি তাঁরা তাদের সৌন্দর্য কল্পনাও করতে পারবেন না। তাদের রংয়ের আকর্ষণীয়তা এবং চলনের মোহময়তা সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন না।" দেশের অধিকাংশ রাজ্যে বিশেষ করে মধ্যভরতে লেপার্ডদের সংখ্যা বেড়েছে। লেপার্ডদের সর্বাধিক বসতিপূর্ণ রাজ্যের মধ্যে মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক এবং মহারাষ্ট্র সবার ওপরে রয়েছে। এটি একটি বড় প্রাপ্তি। লেপার্ড সারা দুনিয়ায় বহু বছর ধরেই বিপদের মোকাবিলা করে আসছে। পৃথিবীজুড়ে ওদের থাকার জায়গা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এমন সময় ভারত লেপার্ডের সংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধি করে সারা বিশ্বকে পথ দেখিয়েছে। আপনারা নিশ্চয়ই এও জানেন যে গত কয়েক বছরে ভারতে সিংহের সংখ্যা বেড়েছে বাঘেদের সংখ্যাও বৃদ্ধি হয়েছে তার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের বনাঞ্চলও বৃদ্ধি পেয়েছে। তার কারণ এই যে শুধু সরকারই নয় বরং বহু মানুষ, সুশীল সমাজ, অনেক সংস্থা আমাদের গাছপালা ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে যুক্ত হয়েছে। তারা সবাই অভিনন্দনের দাবিদার।
বন্ধুরা, আমি তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুরে এক হৃদয়স্পর্শী প্রয়াসের কথা পড়েছি। আপনারাও সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ছবি দেখে থাকবেন। আমরা সবাই মানুষদের জন্য হুইলচেয়ার দেখেছি কিন্তু কোয়েম্বাটুরের একটি মেয়ে গায়ত্রী নিজের বাবার সঙ্গে একটি অসুস্থ কুকুরের জন্য হুইল চেয়ার তৈরি করে দিয়েছে। এই সংবেদনশীলতা অনুপ্রেরণা যোগাবে, আর এটা তখনই হওয়া সম্ভব যখন মানুষের মন প্রতিটি জীবের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে।
জাতীয় রাজধানী অঞ্চল দিল্লী ও অন্যান্য কিছু শহরে ভয়ংকর ঠান্ডায় বেওয়ারিশ পশুদের দেখাশোনার জন্য কিছু মানুষ নানান ব্যবস্থা করছেন। তাঁরা এই পশুদের খাওয়াদাওয়া, এমনকি সোয়েটার আর বিছানার ব্যবস্থাও রাখছেন। এমনও কিছু মানুষ আছেন যাঁরা আবার প্রত্যেকদিন কয়েক শো বেওয়ারিশ পশুর খাওয়ার আয়োজন করে চলেছেন। এ ধরনের প্রয়াস অবশ্যই প্রশংসনীয়। এমনই আরেক রকম মহৎ প্রচেষ্টা চলছে উত্তর প্রদেশের কোশাম্বীতে। জেল বন্দীরা গরুদের ঠান্ডা থেকে বাঁচানোর জন্য পুরনো, ছেঁড়া কম্বল দিয়ে কভার তৈরি করছেন। কোশাম্বী ও আশেপাশের জেলার জেলবন্দীদের তৈরি কম্বল জড়ো করে এক সঙ্গে সেলাই করে গোশালায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কোশাম্বীর জেলবন্দীরা প্রতি সপ্তাহে অনেক কভার তৈরি করছেন। আসুন অন্যদের দেখাশোনা করার এই দরদী প্রচেষ্টাকে আমরাও উৎসাহিত করি। বাস্তবে এটা এমন একটা সৎকাজ যা সমাজের সংবেদনশীলতা জোরদার করে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন আমার সামনে যে চিঠিটা রয়েছে তাতে দুটো বড়ো ফটো রয়েছে। একটা মন্দিরের ফটো, একটা আগের আরেকটা বর্তমানের। এই ফটো দুটোর সঙ্গে যে চিঠি রয়েছে তাতে এমন একটা যুবগোষ্ঠীর কথা বলা হয়েছে যারা নিজেদের যুব ব্রিগেড বলে। আসলে এই যুব ব্রিগেড কর্ণাটকের শ্রীরঙ্গপট্টনের কাছে বীরভদ্র স্বামী নামের একটা প্রাচীন শিব মন্দিরের ভোল পাল্টে দিয়েছেন। মন্দিরের চারপাশ ঘাস আগাছার ঝোপঝাড় হয়ে গিয়েছিল পথচারীরা বাইরে থেকে মন্দির আছে বলে বুঝতেও পারতেন না। একদিন কয়েকজন পর্যটক এই ভুলে যাওয়া মন্দিরের ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। যুব ব্রিগেড সেই ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় দেখে চুপচাপ না থেকে মন্দিরটির পুনরুদ্ধারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ওঁরা মন্দিরের চারপাশের বাড়তে থাকা ঘাস আগাছা ঝোপঝাড় কেটে সাফ করে দিলেন। যেখানে যতোটা মেরামত করার প্রয়োজন ছিল তাও করলেন। ভালো উদ্যোগ দেখে স্থানীয় লোকজন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে