We will send you 4 digit OTP to confirm your number
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। ‘মন কি বাত’-এ আবার একবার আপনাদের অনেক অনেক স্বাগত জানাই। এবার ‘মন কি বাত’-এর এই পর্ব দ্বিতীয় শতকের শুরু। গত মাসে আমরা সবাই এর বিশেষ শতকপূর্তি উদযাপন করেছি। আপনাদের অংশগ্রহণই এই অনুষ্ঠানের সবথেকে বড় শক্তি। শততম পর্বের সম্প্রচারের সময় এক অর্থে গোটা দেশ এক সূত্রে বাঁধা পড়েছিল। আমাদের সাফাইকর্মী ভাইবোন হোন বা বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ, ‘মন কি বাত’ সবাইকে এক জায়গায় আনার কাজ করেছে। আপনারা সবাই যে আত্মীয়তা আর স্নেহ, মন কি বাতের জন্য দেখিয়েছেন, সেটা অভূতপূর্ব, আবেগে পূর্ণ করে দেওয়ার মত। যখন মন কি বাতের সম্প্রচার হয় তখন পৃথিবীর আলাদা-আলাদা দেশে, ভিন্ন-ভিন্ন টাইম জোনে, কোথাও সন্ধ্যা হচ্ছিল তো কোথাও গভীর রাত ছিল , তা সত্ত্বেও প্রচুর সংখ্যক মানুষ ‘মন কি বাত’-এর শততম পর্ব শোনার জন্য সময় বের করেছিলেন। হাজার-হাজার মাইল দূরে নিউজিল্যাণ্ডের ওই ভিডিও-ও দেখেছি, যেখানে একশো বছর বয়সী এক মা আমাকে তাঁর আশীর্বাদ দিচ্ছেন। ‘মন কি বাত’ নিয়ে দেশবিদেশের মানুষজন তাঁদের ভাবনা ব্যক্ত করেছেন। অনেকে গঠনমূলক বিশ্লেষণও করেছেন। মানুষজন এই ব্যাপারটার প্রশংসা করেছেন যে ‘মন কি বাত’-এ কেবলমাত্র দেশ আর দেশবাসীর উপলব্ধি নিয়ে আলোচনা হয়। আবার একবার এই আশীর্বাদের জন্য আমি সম্পূর্ণ সমাদরে আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, অতীতে আমি ‘মন কি বাতে’ কাশী-তামিল সঙ্গমমের কথা বলেছি, সৌরাষ্ট্র-তামিল সঙ্গমমের কথা উল্লেখ করেছি। কিছুদিন আগে বারাণসীতে, কাশী-তেলুগু সঙ্গমমও অনুষ্ঠিত হল। এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারতের ভাবনাকে শক্তিশালী করার এমনই আর এক অনন্য প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছে দেশে। এই প্রয়াস যুব সঙ্গমের। আমি ভাবলাম, এই ব্যাপারে বিস্তারে তাঁদের কাছ থেকেই জেনে নিই না কেন, যাঁরা এই অনন্য প্রয়াসের অংশীদার। এই জন্য এই মুহূর্তে আমার সঙ্গে ফোনে রয়েছেন দুই তরুণ – একজন অরুণাচল প্রদেশের গ্যামর নৌকুমজী আর দ্বিতীয় জন হল বিহারের কন্যা বিশাখা সিংজী।
আসুন প্রথমে আমরা গ্যামর নৌকুমের সঙ্গে কথা বলি।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ গ্যামরজী নমস্কার।
গ্যামর জীঃ নমস্কার মোদীজী।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আচ্ছা গ্যামরজী, সবার আগে আমি আপনার বিষয়ে একটু জানতে চাই।
গ্যামর জীঃ মোদীজী, সবার আগে তো আমি আপনার এবং ভারত সরকারের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই যে আপনি খুব মূল্যবান সময় বের করে আপনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন আমাকে। অরুণাচল প্রদেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে প্রথম বর্ষে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনীয়ারিং নিয়ে পড়ছি আমি।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আর পরিবারে পিতা এবং অন্যান্যরা কী করেন?
গ্যামর জীঃ আমার বাবা ছোটখাটো ব্যাবসা আর তার পরে কিছু চাষবাস সহ নানা কাজ করেন।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আপনি যুব সঙ্গমের খোঁজ পেলেন কিভাবে? যুব সঙ্গমে কোথায় গেলেন, কিভাবে গেলেন, কী হলো সেখানে?
গ্যামর জীঃ মোদীজি, যুব সঙ্গমের আমাদের যে ইনস্টিটিউশন আছে౼ NIT , ওরা আমায় জানিয়েছিল যে আপনি এটাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তো আমি তখন ইন্টারনেটে একটু খোঁজখবর করি এবং তখনই জানতে পারি যে এটা খুবই ভালো একটি কর্মসূচী যা কিনা “এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের” আমাদের যে পরিকল্পনা আছে সেখানে সংযোজন করতে পারে এবং আমাকে কিছু নতুন বিষয় শেখার সুযোগ করে দেবে। তখনই আমি ওয়েবসাইটে গিয়ে নাম নথিভুক্ত করি। আমার খুবই মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে, এটা খুবই ভালো ছিল।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আপনাকে কিভাবে বাছাই করতে হয়েছে?
গ্যামর জীঃ মোদীজি, যখন ওয়েবসাইট খুলে ছিলাম তখন অরুণাচল বাসীদের জন্য দুটো অপশন পেলাম। প্রথমটি, অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি আইআইটি । আর, দ্বিতীয়টি ছিল সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি, রাজস্থান। আমার প্রথম পছন্দ ছিল রাজস্থান আর দ্বিতীয় পছন্দে রেখেছিলাম তিরুপতি আইআইটিকে। আমি রাজস্থানের জন্য সিলেক্ট হয়েছিলাম। তারপর আমি রাজস্থান গিয়েছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আপনার রাজস্থান যাত্রা কেমন ছিল? আপনি এই প্রথমবার রাজস্থান গেলেন?
গ্যামর জীঃ হ্যাঁ আমি এই প্রথম অরুণাচল প্রদেশের বাইরে কোথাও গেলাম। রাজস্থানের সব দুর্গ আমি শুধুই সিনেমা আর ফোনে দেখেছিলাম, তো আমি যখন প্রথমবার রাজস্থানে গেলাম তো আমার অভিজ্ঞতা খুবই ভালো ছিল, ওখানকার মানুষ খুবই ভাল ছিলেন আর তারা আমাদের যেভাবে আপ্যায়ন করেছিলেন, তা খুবই ভালো ছিল। নতুন নতুন জিনিস শেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। রাজস্থানের বড় ঝিল এবং সেখানকার মানুষ যেভাবে বৃষ্টির জল সঞ্চয় করে, তা দেখে অনেক নতুন কিছু শিখলাম, যা এর আগে আমার একেবারেই জানা ছিল না, তো রাজস্থান ভ্রমণের এই আয়োজন খুবই ভালো ছিল।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ দেখুন, আপনার সব থেকে বড় লাভ হল যে, অরুণাচল বীরদের ভূমি, রাজস্থানও বীরদের ভূমি এবং রাজস্থান থেকে সেনাবাহিনীতেও প্রচুর পরিমাণে সেনা যোগদান করেন, আর অরুণাচলের সীমান্তে যে সৈনিকেরা আছেন, সেখানে রাজস্থানের মানুষের খোঁজ পাবেন তখন আপনি অবশ্যই তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন, দেখুন আমি রাজস্থানে গিয়েছিলাম, সেখানকার অভিজ্ঞতা ভাগ করলে আপনার সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হবে। আচ্ছা ওখানে আপনি নিশ্চয়ই কোন সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলেন যা দেখে আপনার মনে হয়েছে যে অরুনাচলেও এমনটা আছে?
গ্যামর জীঃ মোদীজি, আমি যে এক সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলাম সেটা ছিল দেশপ্রেম। এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের ভাবনা এবং অনুভূতি আমি দেখেছি। কারণ, অরুণাচলেও মানুষ নিজেদের নিয়ে খুবই গর্বিত যে তারা ভারতীয় আর রাজস্থানেও মানুষ তার মাতৃভূমির জন্য যথেষ্ট গর্বিত। এই বিষয়টা আমার খুবই নজরে এসেছে এবং বিশেষত যুব সম্প্রদায়, কারণ আমি ওখানে অনেক যুবকের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি এবং কথাবার্তা বলেছি, এসবের মধ্যে একটা মিল আমার নজরে এসেছে। ওরা চায় ভারতের জন্য কিছু করতে, ওদের মনে নিজের দেশের জন্য ভালোবাসা আছে, তো এই জিনিসটা দুই রাজ্যের ক্ষেত্রেই আমার এক বলে মনে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ ওখানে যাদের সাথে পরিচয় হল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেন না ফিরে এসে ভুলে গেলেন?
গ্যামর জীঃ না না, আমরা কথা বলেছি, যোগাযোগ রেখেছি।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আপনি স্যোশাল মিডিয়াতে আক্টিভ?
গ্যামর জীঃ হ্যাঁ মোদিজী, আমি স্যোশাল মিডিয়াতে আক্টিভ।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ তাহলেতো আপনার ব্লগ লেখা উচিৎ। আপনার এই যুব সংগমে কি অভিজ্ঞতা হল, আপনি এতে কিকরে নাম নথিভুক্ত করলেন, রাজস্থানে আপনার কিরকম লাগলো - এই সব কথা লিখুন, যাতে সারা দেশের যুবরা জানতে পারে 'এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত' যোজনাটি কি, এর মাহাত্ম্য কি এবং যুবসম্প্রদায় এর থেকে কিভাবে লাভবান হতে পারে - আপনার গোটা অভিজ্ঞতার ব্লগ লিখুন, যাতে লোকে পড়ে সব জানতে পারে।
গ্যামর জীঃ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি নিশ্চয়ই করব।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ গ্যামরজী খুব ভাল লাগলো আপনার সাথে কথা বলে। আপনি, আপনার মত যুবরা, দেশের জন্য, দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অন্ত্যত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই ২৫ বছর বয়সটাও খুব মূল্যবান, আপনাদের নিজেদের জীবনেও এবং দেশের জন্যও। আমার অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
গ্যামর জীঃ ধন্যবাদ মোদিজী আপনাকে।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ নমস্কার ভাই।
বন্ধুরা, অরুণাচলের মানুষজন এত অতিথিবৎসল হন, ওদের সাথে কথা বলতে আমার খুব ভাল লাগে। যুব সংগমে গ্যামরজির অভিজ্ঞতা তো খুব ভাল ছিল। আসুন, এবারে বিহারের কন্যা বিশাখা সিং-এর সঙ্গে কথা বলি।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ বিশাখা সিংজী নমস্কার।
বিশাখাজীঃ সর্বপ্রথম ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমার সাদর প্রণাম। আমার সাথে আসা সমস্ত প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকেও আপনাকে জানাই সাদর প্রণাম।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আচ্ছা বিশাখাজি, আগে আমাকে আপনার ব্যাপারে কিছু বলুন। তারপর আমি যুব সংগমের ব্যাপারেও জানতে চাই।
বিশাখাজীঃ আমি বিহারের সাসারাম শহরের বাসিন্দা। আমি যুব সংগমের ব্যাপারে সবার আগে জানতে পারি কলেজের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ থেকে। তারপর আমি এই ব্যাপারে আরও খোঁজ খবর নিই, বিস্তারিত তথ্য বের করি। তখন আমি জানতে পারি যে এটা প্রধানমন্ত্রীজির একটি কর্মসূচী – ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর অন্তর্ভুক্ত যুবসঙ্গম। আমি এতে আবেদন করি এবং আমি এটাতে যোগ দেবার জন্য আগ্রহী ছিলাম খুবই। কিন্তু এই যে তামিলনাড়ু থেকে আমি ঘুরে এলাম , অনেক কিছু জানতে পারলাম, এটা অমূল্য। এটা আমার কাছে খুবই গর্বের বিষয় যে আমি এই যুব সংগমের একজন অংশগ্রহণকারী ছিলাম। আমি খুবই আনন্দিত। আমি আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই, আপনি আমার মত যুবক-যুবতীদের জন্য এত ভাল একটা কর্মসূচী বানিয়েছেন যাতে আমরা ভারতের বিভিন্ন ভাগের সংস্কৃতিক বৈচিত্রর সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ বিশাখাজী আপনি কী পড়াশুনা করেন?
বিশাখাজীঃ আমি কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আচ্ছা বিশাখাজী, আপনাকে কোন রাজ্যে যেতে হবে, কোথায় যোগ দিতে হবে, সেটা কীভাবে ঠিক করলেন?
বিশাখাজীঃ আমি যখন গুগলে যুব সঙ্গম সম্পর্কে সার্চ করা শুরু করি, তখন আমি জানতে পারি যে বিহারের প্রতিনিধিদের তামিলনাড়ুর প্রতিনিধির সঙ্গে বিনিময় করা হচ্ছে। তামিলনাড়ু আমাদের দেশের একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক রাজ্য, তাই সেই সময়েও যখন আমি জানতে পারি যে বিহার থেকে প্রতিনিধিদের তামিলনাড়ুতে পাঠানো হচ্ছে, এটি আমাকে ফর্মটি পূরণ করা উচিত কিনা, সেখানে যাব কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নিতে অনেকটাই সাহায্য করেছিল। আমি আজ সত্যিই খুব গর্ববোধ করছি যে আমি এতে অংশগ্রহণ করেছি এবং আমি খুবই খুশি।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আপনি প্রথমবার তামিলনাড়ুতে গিয়েছিলেন?
বিশাখাজীঃ হ্যাঁ প্রথমবার গিয়েছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আচ্ছা, আপনি যদি কোনও স্মরণীয় ঘটনার কথা বলতে চান তাহলে কী বলবেন? দেশের যুবক-যুবতীরা আপনার কথা শুনছেন কিন্তু।
বিশাখাজীঃ পুরো যাত্রাটাই আমার জন্য খুবই ভাল ছিল। প্রতিটি ধাপেই আমরা অনেক কিছু শিখেছি। আমি তামিলনাড়ুতে ভাল বন্ধু পেয়েছি। সেখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। সেখানকার লোকদের সঙ্গে মেলামেশা করেছি। তবে সবচেয়ে ভাল জিনিস যেটি পেলাম, যা সবাই পায় না, তা হলো ইসরোতে যাওয়ার সুযোগ এবং আমরা প্রতিনিধি দলের থেকে গিয়েছিলাম বলেই আমরা ইসরোতে যাওয়ার এই সুযোগটা পেয়েছিলাম। দ্বিতীয় সেরা জিনিসটি ছিল যখন আমরা রাজভবনে যাই এবং তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করি। এই দুটি মুহূর্ত আমার কাছে খুব স্মরণীয় ছিল এবং আমি মনে করি যে আমরা এই বয়সে, যুবতী হিসেবে এমন সুযোগ পেতামনা, যা এই যুবসঙ্গমের মাধ্যমে পেলাম। তাই এটি বেশ সুন্দর এবং স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল আমার কাছে।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ বিহারে খাওয়ার ধরন আলাদা, তামিলনাড়ুতে খাওয়ার ধরন আলাদা।
বিশাখাজীঃ হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ সেটা কি পুরোপুরি মানানো গিয়েছিল?
বিশাখাজি : যখন আমরা তামিলনাড়ু গিয়েছিলাম, সেখানে তো দক্ষিণ ভারতীয় খাবার। সেখানে যেতেই সবাই আমাদের ধোসা, ইডলি, সাম্বর, উত্তপম, বড়া, উপমা এইসব পরিবেশন করছিল। যখন আমরা সেটা মুখে তুললাম, আমাদের দারুণ লেগেছিল! ওখানকার খাবার খুবই স্বাস্থ্যকর, আসলে দারুন স্বাদের খাবার আর আমাদের উত্তর ভারতের খাবারের থেকে একেবারেই আলাদা, তাই ওখানকার খাবার আমাদের খুব ভালো লেগেছে এবং ওখানকার লোকজনও খুব ভালো।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ তাহলে তামিলনাড়ুতে এখন বেশ কিছু বন্ধুও হয়েছে নিশ্চয়ই?
বিশাখাজীঃ হ্যাঁ। ওখানে আমরা ছিলাম এনআইটি ত্রিচিতে, তারপর ম্যাড্রাস আইআইটিএ। এই দুই জায়গার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়েছে। এছাড়াও, মাঝে একবার সিআইআই-এর অভ্যর্থনা কর্মসূচী ছিল, সেখানকার আশেপাশের কলেজ থেকেও অনেক ছাত্রছাত্রী এসেছিল। সেখানে আমরা সেই ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছিলাম আর আমার খুব ভালো লাগলো তাদের সঙ্গে দেখা করে, অনেকে তো এখন আমার বন্ধু। সেখানে বেশ কিছু প্রতিনিধি-দের সঙ্গেও দেখা হয়েছিল যারা তামিলনাড়ু্তে এসেছিল বিহারের প্রতিনিধি হিসেবে। আমরা তাদের সাথেও আলাপ করেছিলাম আর এখনো আমরা একে অপরের সম্পর্কে রয়েছি, তাই এটা আমার খুব ভালো লাগে।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ তাহলে বিশাখাজি, আপনি ব্লগ লিখুন আর স্যোস্যাল মিডিয়া-তে আপনার সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা জানান। প্রথমত, যুবা সঙ্গমের বিষয়ে, তারপর ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের’ বিষয়ে এবং তামিলনাড়ুতে আপনি যেরকম ভালোবাসা পেয়েছেন, আদর-আপ্যায়ন পেয়েছেন সেই বিষয়ে। তামিল মানুষদের ভালবাসা পেয়েছেন, সেই সব বিষয়ে দেশকে জানান। তাহলে লিখবেন আপনি?
বিশাখাজীঃ হ্যাঁ, অবশ্যই।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আমার তরফ থেকে আপনাকে জানাই অনেক শুভকামনা ও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বিশাখাজীঃ প্রধানমন্ত্রী জী অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
গ্যামর ও বিশাখা, আপনাদের দু’জনকেই অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। যুবা সঙ্গমের মাধ্যমে আপনারা যা শিখলেন, তা আজীবন আপনাদের সঙ্গে থাকবে। আপনাদের সকলকে আমার শুভকামনা জানাই।
বন্ধুরা, বৈচিত্রের মধ্যেই রয়েছে ভারতের শক্তি। আমাদের দেশে দেখার মত অনেক কিছু রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই শিক্ষা মন্ত্রক ‘যুবাসঙ্গম’ নামের এক অনন্য উদ্যোগ শুরু করেছে।
এই প্রচেষ্টার উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বাড়ানো। এছাড়াও যুবক-যুবতীদের মধ্যে মেলামেশার সুযোগ করে দেওয়া। বিভিন্ন রাজ্যের উচ্চশিক্ষা সংস্থাকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। 'যুবসঙ্গমে' যুবক-যুবতীরা অন্য রাজ্যের শহর ও গ্রামে যান, সেখানে তারা বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পান। যুব সঙ্গমের প্রথম পর্বে প্রায় ১২০০ যবে-যুবতী দেশের বাইশটি রাজ্যে ঘুরে এসেছেন। যে যুবকই এর অংশ হয়েছেন, তারা এমন কিছু স্মৃতি নিয়ে ফিরছেন যা সারাজীবন তাদের হৃদয়ে গেথে হয়ে থাকবে। আমরা দেখেছি অনেক কোম্পানির মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক , বিজনেস লিডারসরা ব্যাদ প্যাকারসদের মত ভারতে সময় কাটিয়েছেন। আমি যখন অন্য দেশের লিডারদের সঙ্গে দেখা করি, তখন তারা বলেন যে তারাও তাদের যুবাবস্থায় ভারত ঘুরতে এসেছিলেন। আমাদের ভারতে এত কিছু জানার এবং দেখার আছে যে প্রত্যেকবার আপনার ঔৎসুক্য বাড়তেই থাকবে। আমি আশা করি যে এই সমস্ত রোমাঞ্চকর তথ্য জানার পর আপনারাও দেশের বিভিন্ন স্থানে যাবার জন্য নিশ্চয়ই অনুপ্রানিত হবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী কিছুদিন আগে আমি জাপানের হিরোশিমায় গিয়েছিলাম। ওখানে আমার হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। এটা একটি আবেগঘন অনুভূতি ছিল। যখন আমরা ইতিহাসের স্মৃতিকে যত্ন করে সামলে রাখি তো সেটা আগামী প্রজন্মের অনেক ভাবে সাহায্য করে। অনেক সময় মিউজিয়াম-এ আমরা নতুন অভিজ্ঞতা হয়, তো কখনো কখনো অনেক কিছু শিখতে পারি। কিছু দিন আগে ভারতে আন্তর্জাতিক সংগ্রহশালার এক্সপোর আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে বিশ্বের ১২০০-এর ও বেশী মিউজিয়াম এর বিশেষত্ব প্রদর্শন করা হয়েছিল। আমাদের এখানে ভারতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের অনেক মিউজিয়াম আছে, যা আমাদের অতীত এর সঙ্গে জড়িত অনেক অজানা তথ্যকে প্রদর্শন করে, যেরকম গুরুগ্রামে একটি ক্যামেরার অনন্য সংগ্রহশালা আছে, এখানে ১৮৬০ সালের পর থেকে ৮০০০ এরও বেশি ক্যামেরার সংগ্রহ রয়েছে। তামিলনাড়ুর মিউজিয়াম অফ পসিবিলিটজে আমাদের ভিন্ন ভাবে সক্ষম বন্ধুদের কথা মাথায় রেখে নকশা করা হয়েছে। মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ বাস্তু সংগ্রহালয় একটি এমন মিউজিয়াম যেখানে ৭০ হাজারেরও বেশি সামগ্রী সংরক্ষিত করা হয়েছে। ২০১০ সালে স্থাপিত ইন্ডিয়ান মেমারি প্রজেক্ট এক ধরনের অনলাইন মিউজিয়াম। এটি পৃথিবীব্যাপী পাঠানো ছবি এবং গল্পের মাধ্যমে ভারতের গৌরবময় ইতিহাসের সংযোগ সূত্রকে জোড়ার কাজ করে চলেছে। বিভাজনের বিভীষিকার সঙ্গে জড়িত স্মৃতিকেও সামনে আনার প্রয়াস করা হচ্ছে। বিগত বছরেও আমরা ভারতে নতুন নতুন ধরনের মিউজিয়াম আর স্মারক তৈরি হতে দেখেছি। স্বাধীনতা সংগ্রামে আদিবাসী ভাই বোনেদের অংশগ্রহণের উপর সমর্পিত দশটি নতুন মিউজিয়াম তৈরি করা হচ্ছে। কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-এর বিপ্লবী ভারত গ্যালারিই হোক বা জালিয়ানওয়ালাবাগ মেমোরিয়ালকে পুনরুদ্ধার, দেশের সব পূর্ব প্রধানমন্ত্রীদেরকে সমর্পিত পি এম মিউজিয়ামও আজ দিল্লীর শোভা বর্ধন করছে। দিল্লির ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল এবং পুলিশ মেমোরিয়াল-এ প্রত্যেকদিন অনেক মানুষ শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। ঐতিহাসিক ডান্ডি যাত্রাকে সমর্পিত ডান্ডি মেমোরিয়াল হোক বা স্ট্যাচু অফ ইউনিটি মিউজিয়াম। যাই হোক, আমাদের এখানেই থেমে যাওয়া উচিত কারণ দেশ ব্যাপী সংগ্রহশালাগুলির তালিকা অনেক লম্বা আর প্রথমবার দেশে সমস্ত মিউজিয়ামের সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংকলন করা হচ্ছে। মিউজিয়াম কোন থিম এর উপর তৈরি করা হয়েছে, ওখানে কোন ধরনের কি বস্তু রাখা আছে, সংগ্রহশালার সঙ্গে কি ভাবে যোগাযোগ করা যাবে, এই সমস্ত কিছুই একটি অনলাইন ডিরেক্টারির মধ্যে একসঙ্গে রাখা হচ্ছে।
আমি আপনাদের অনুরোধ করছি আপনারা যখনই সুযোগ পাবেন, নিজের দেশের এই সংগ্রহশালাগুলো অবশ্যই দেখতে যাবেন। আপনারা সেখানে আকর্ষণীয় ছবিগুলি #(হ্যাশট্যাগ) Museum Memories এ সকলের সঙ্গে ভাগ করতে ভুলে যাবেন না যেন। এইভাবে আমাদের গৌরবময় সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের ভারতীয়দের সংযোগ আরও শক্তিশালী হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা সবাই নিশ্চয়ই একটি কথা বহুবার শুনেছি, বারবার শুনেছি- বিন পানি সব সুন। জল ছাড়া জীবন সংকট তো দেখা দেবেই, ব্যক্তি এবং দেশের উন্নয়নও থমকে যায়। ভবিষ্যতের এই চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে আজ দেশের প্রতিটি জেলায় ৭৫টি অমৃত সরোবর কাটা হচ্ছে। আমাদের অমৃত সরোবর এইজন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, এইগুলি স্বাধীনতার অমৃত কালের সময় নির্মিত হচ্ছে এবং এতে মানুষের অমৃত প্রচেষ্টা জড়িয়ে আছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে এখনও পর্যন্ত ৫০ হাজারেরও বেশি অমৃত সরোবর কাটা হয়েছে। জল সংরক্ষণের লক্ষ্যে এটি একটি বড় পদক্ষেপ।
বন্ধুরা, আমরা প্রতি গ্রীষ্মে এইভাবে, জল সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে কথা বলতে থাকি। এবারও আমরা এই বিষয়ে বলব, তবে এবার আমরা আলোচনা করব জল সংরক্ষণ সম্পর্কিত নতুন উদ্যোগ নিয়ে। একটি স্টার্ট-আপস আছে – ফ্লাক্সজেন। এই স্টার্ট- আপ, আইওটি এনাবেল্ড প্রযুক্তির মাধ্যমে জল সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার বিকল্প দেয়। এই প্রযুক্তি জল ব্যবহারের ধারাকে বদলে দেবে এবং নিত্য ব্যবহারে সাহায্য করবে৷ আরেকটি স্টার্ট আপ হল লিভ-এন-সেন্স। এটি কৃত্রিম মেধা এবং মেশিন লার্নিং- এর উপর ভিত্তি করে একটি প্ল্যাটফর্ম। এর সাহায্যে জল বন্টনের কার্যকরী তত্বাবধান করা যাবে। এর থেকে এটাও জানা যাবে কোথায় কতটুকু জল অপচয় হচ্ছে। আরেকটি স্টার্ট আপ হল 'কুম্ভী কাগজ' (Kumbhi Kagaz)। এই 'কুম্ভী কাগজ' এমন একটি বিষয়, আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস যে, আপনাদেরও খুব ভালো লাগবে। ‘কুম্ভী কাগজ’ নতুন উদ্যোগ সংস্থাটি একটি বিশেষ কাজ শুরু করেছে। এরা কচুরিপানা থেকে কাগজ তৈরির কাজ শুরু করেছে, অর্থাৎ, এক সময় যে কচুরিপানা, কখনো, জলস্রোতের সময় সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হতো, এখন কাগজ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বন্ধুরা, অনেক যুবকযুবতী যেরকম উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করছেন, আবার এমন অনেক যুবকযুবতী রয়েছেন যারা সমাজকে সচেতন করার মিশনে নিয়োজিত । যেমন ছত্তিশগড়ের বালোদ জেলার যুবসম্প্রদায়। এখানকার যুবক-যুবতীরা জল বাঁচাতে প্রচার শুরু করেছে। তারা বাড়ী-বাড়ী গিয়ে মানুষকে জল সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতন করে। যেখানেই বিবাহের মতো অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, সেখানে, তরুণদের এই দল-টি যায়, কীভাবে জলের অপব্যবহার বন্ধ করা যায়, সে সম্পর্কে তথ্য দেয়। ঝাড়খণ্ডের খুঁটি জেলাতেও জলের দক্ষ ব্যবহার সম্পর্কিত একটি প্রচারমূলক প্রচেষ্টা করা হচ্ছে৷ খুঁটির মানুষ জল সংকট মোকাবিলায় বস্তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণের পথ খুঁজে পেয়েছেন। বস্তা বাঁধের মাধ্যমে জল জমিয়ে এখানে শাক সবজিও ফলতে শুরু করেছে। এতে মানুষের আয়ও বাড়ছে, এলাকার চাহিদাও পূরণ হচ্ছে। সাধারণের যে কোনো উদ্যোগ, কীভাবে অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসে, তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠেছে খুঁটি। এই প্রচেষ্টার জন্য আমি এখানকার মানুষকে অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময় আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী জয় জওয়ান, জয় কিষান স্লোগান দিয়েছিলেন।
পরবর্তীকালে অটলজি তার সঙ্গে জয় বিজ্ঞান যোগ করেছিলেন। কয়েক বছর আগে দেশের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমি জয় অনুসন্ধানের কথা বলেছিলাম। মন কি বাতে আজ এমন এক ব্যক্তির কথা, এমন এক সংস্থার কথা বলব, যারা জয় জওয়ান, জয় কিষান, জয় বিজ্ঞান এবং জয় অনুসন্ধান এই চারটিরই প্রতিফলিত। এই ভদ্রলোক হলেন মহারাষ্ট্রের শ্রীমান শিবাজী শামরাও ডোলেজি। শিবাজী ডোলে নাসিক জেলার একটি ছোট্ট গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দরিদ্র জনজাতি কৃষক পরিবারের সন্তান এবং একজন প্রাক্তন সৈনিকও বটে। সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন তিনি দেশের সেবায় নিয়জিত ছিলেন । অবসর গ্রহণের পর তিনি নতুন কিছু শেখার সিদ্ধান্ত নেন এবং কৃষি বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা করেন। অর্থাৎ জয় জওয়ান থেকে জয় কিষানের দিকে অগ্রসর হন। এখন প্রতিমুহূর্তে তাঁর চেষ্টা এটাই থাকে, যে কী ভাবে কৃষি ক্ষেত্রে অধিকতর অবদান রাখা যায়। নিজের এই অভিযানে শিবাজী ডোলেজি কুড়ি জনের একটি ছোট টিম তৈরি করেছেন এবং কয়েকজন প্রাক্তন সৈনিককেও এতে যুক্ত করেছেন। এরপর তাঁর এই টিম ভেঙ্কটেশ্বর কো-অপারেটিভ পাওয়ার এন্ড অ্যাগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড নামের একটি সহকারী সংস্থার পরিচালনার দায়িত্ব নিজেদের হাতে নিয়েছেন। এই সহকারী সংস্থাটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পরে ছিল। তাকে পুনরুজ্জীবিত করার গুরুদায়িত্ব তারা নিয়েছেন। দেখতে দেখতে আজ ভেঙ্কটেশ্বর কো-অপারেটিভের প্রসার অনেক জেলাতে হয়ে গেছে। আজ এই দলটি মহারাষ্ট্র আর কর্নাটকে কাজ করছে। এতে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ যুক্ত হয়েছেন, যার মধ্যে যথেষ্ট সংখ্যক সেনাবাহিনীর প্রাক্তনীরাও রয়েছেন।
নাসিকের মালেগাঁওতে এই দলের সদস্যরা ৫০০ একরেরও বেশি জমিতে অ্যাগ্রো ফার্মিং করছে। এই দলটি জল সংরক্ষণের জন্য অনেক জলাশয় তৈরি করার কাজেও যুক্ত আছে। আরেকটা বিশেষ ব্যাপার হল এই যে তারা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে আর দোহ শিল্প অর্থাৎ ডেয়ারিও শুরু করেছেন। এখন তাদের ফলানো আঙ্গুর ইউরোপেও রপ্তানি করা হচ্ছে। এই দলের যে দুটি বড় বৈশিষ্ট্য আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে তা হল জয় বিজ্ঞান এবং জয় অনুসন্ধান। এর সদস্যরা প্রযুক্তি ও আধুনিক কৃষিকাজের নানা পন্থাপদ্ধতি যত বেশি সম্ভব ব্যবহার করছেন। দ্বিতীয়ত তারা রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় অনেক রকম সার্টিফিকেশনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। "সহকার থেকে সমৃদ্ধি" এই ভাবনার সঙ্গে কাজ করা এই দলটিকে আমি অভিনন্দন জানাই। এই প্রয়াসের মাধ্যমে শুধু বহু সংখ্যক মানুষের ক্ষমতায়ন হয়েছে তাই নয়, জীবিকারও অনেক সংস্থান হয়েছে। আমার বিশ্বাস এই প্রয়াস মান কি বাত এর প্রত্যেক শ্রোতাকে অনুপ্রাণিত করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ২৮ শে মে, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর সাভারকারের জন্মদিন। তাঁর ত্যাগ, সাহস ও সংকল্পশক্তির সঙ্গে যুক্ত কাহিনীগুলি আজও আমাদের সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে। আমি সেই দিনটা ভুলতে পারব না, যখন আমি আন্দামানে সেই কুঠুরিতে গিয়েছিলাম যেখানে বীর সাভারকর দ্বীপান্তরের সাজা ভোগ করছিলেন। বীর সাভারকারের ব্যক্তিত্ব দৃঢ়তা ও বিশালত্বের আধার ছিল। তার নির্ভীক ও আত্মাভিমানী স্বভাব দাসত্বের মানসিকতা একেবারেই বরদাস্ত করতে পারত না। শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামই নয়, সামাজিক সাম্য ও ন্যায়ের জন্য বীর সাভারকর যা কিছু করেছেন তার জন্য তাকে আজও স্মরণ করা হয়।
বন্ধুরা, কয়েকদিন পর চৌঠা জুন সন্ত কবীরদাসজিরও জন্মদিন। কবীরদাসজি আমাদের যে পথ দেখিয়েছেন তা আজও ততটাই প্রাসঙ্গিক। কবীরদাসজি বলতেন,
"কবীরা কুয়া এক হ্যায়, পানি ভরে অনেক
বর্তন মে হি ভেদ হ্যায়, পানি সব মে এক"।
অর্থাৎ কুয়ো থেকে যতই আলাদা আলাদা ধরনের মানুষ জল ভর্তি করতে আসুক না কেন কুয়ো কারোর মধ্যে কোন তফাৎ করে না। প্রত্যেকটা পাত্রে থাকা জল একই। সাধক কবীর সমাজকে যেকোনোভাবে ভাগ করার মত কু-প্রথার বিরোধিতা করেছেন, সমাজকে এই বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করেছিলেন। আজ যখন দেশ উন্নত হওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে এগোচ্ছে তখন আমরা সাধক কবীরের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করে সমাজের ক্ষমতায়নে নিজেদের উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে পারি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন আমি আপনাদের সঙ্গে দেশের এমন এক মহান ব্যক্তির কথা আলোচনা করব যিনি রাজনীতি এবং চলচ্চিত্র জগতে নিজের আশ্চর্য প্রতিভার জোরে বিশেষ নিদর্শন রেখেছেন। এই বিখ্যাত ব্যক্তির নাম এন টি রামারাও যাঁকে আমরা সকলে এন টি আর নামেও চিনি। আজ এন টি আরের শততম জন্মজয়ন্তী। নিজের বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে তিনি শুধু তেলেগু সিনেমার একজন মহানায়ক হিসেবেই উপস্থাপিত হননি; বরং তিনি কোটি কোটি মানুষের মন জয় করেছিলেন। আপনারা জানেন যে উনি ৩০০ থেকেও বেশি সিনেমায় কাজ করেছেন? উনি অনেক ঐতিহাসিক চরিত্রকে নিজের অভিনয়ের মাধ্যমে জীবন্ত করে তুলেছিলেন। ভগবান কৃষ্ণ, রাম এবং এমন অনেক ভূমিকায় এন টি আরের অভিনয় মানুষ এতটাই পছন্দ করেছেন যে মানুষ তাঁকে আজও মনে রেখেছেন। এন টি আর সিনেমা জগতের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতেও নিজের বিশেষ পরিচিতি তৈরি করেছিলেন। এখানেও তিনি মানুষের সম্পূর্ণ ভালবাসা এবং আশীর্বাদ পেয়েছেন। এই দেশ, এই পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষের মনে বিশেষ জায়গা তৈরি করে নেওয়া এন টি রামারাওজিকে আমি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ এবার এই পর্যন্তই। পরেরবার নতুন কিছু বিষয়ের সঙ্গে আপনাদের মাঝে আসবো, ততদিনে কিছু জায়গায় ভীষণ গরম পড়বে। কিছু জায়গায় হয়তো বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। আবহাওয়ার যে কোন পরিস্থিতিতেই আপনাদের নিজেদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে হবে। একুশে জুন আমরা আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন করব, এই বিষয়ে দেশে-বিদেশে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। আপনারা এই প্রস্তুতির বিষয়ে নিজেদের মনের কথা আমায় লিখতে থাকুন। কোন অন্য বিষয়েও কিছু যদি আপনারা জেনে থাকেন তা আমায়ও জানান। আমি চেষ্টা করি ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আপনাদের থেকে আসা অনেক পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করতে। আবারো আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। পরের মাসে আবার দেখা হবে, ততদিনের জন্য আমায় বিদায় দিন। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। ‘মন কি বাত’-এ আবার একবার আপনাদের অনেক অনেক স্বাগত জানাই। এবার ‘মন কি বাত’-এর এই পর্ব দ্বিতীয় শতকের শুরু। গত মাসে আমরা সবাই এর বিশেষ শতকপূর্তি উদযাপন করেছি। আপনাদের অংশগ্রহণই এই অনুষ্ঠানের সবথেকে বড় শক্তি। শততম পর্বের সম্প্রচারের সময় এক অর্থে গোটা দেশ এক সূত্রে বাঁধা পড়েছিল। আমাদের সাফাইকর্মী ভাইবোন হোন বা বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ, ‘মন কি বাত’ সবাইকে এক জায়গায় আনার কাজ করেছে। আপনারা সবাই যে আত্মীয়তা আর স্নেহ, মন কি বাতের জন্য দেখিয়েছেন, সেটা অভূতপূর্ব, আবেগে পূর্ণ করে দেওয়ার মত। যখন মন কি বাতের সম্প্রচার হয় তখন পৃথিবীর আলাদা-আলাদা দেশে, ভিন্ন-ভিন্ন টাইম জোনে, কোথাও সন্ধ্যা হচ্ছিল তো কোথাও গভীর রাত ছিল , তা সত্ত্বেও প্রচুর সংখ্যক মানুষ ‘মন কি বাত’-এর শততম পর্ব শোনার জন্য সময় বের করেছিলেন। হাজার-হাজার মাইল দূরে নিউজিল্যাণ্ডের ওই ভিডিও-ও দেখেছি, যেখানে একশো বছর বয়সী এক মা আমাকে তাঁর আশীর্বাদ দিচ্ছেন। ‘মন কি বাত’ নিয়ে দেশবিদেশের মানুষজন তাঁদের ভাবনা ব্যক্ত করেছেন। অনেকে গঠনমূলক বিশ্লেষণও করেছেন। মানুষজন এই ব্যাপারটার প্রশংসা করেছেন যে ‘মন কি বাত’-এ কেবলমাত্র দেশ আর দেশবাসীর উপলব্ধি নিয়ে আলোচনা হয়। আবার একবার এই আশীর্বাদের জন্য আমি সম্পূর্ণ সমাদরে আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, অতীতে আমি ‘মন কি বাতে’ কাশী-তামিল সঙ্গমমের কথা বলেছি, সৌরাষ্ট্র-তামিল সঙ্গমমের কথা উল্লেখ করেছি। কিছুদিন আগে বারাণসীতে, কাশী-তেলুগু সঙ্গমমও অনুষ্ঠিত হল। এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারতের ভাবনাকে শক্তিশালী করার এমনই আর এক অনন্য প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছে দেশে। এই প্রয়াস যুব সঙ্গমের। আমি ভাবলাম, এই ব্যাপারে বিস্তারে তাঁদের কাছ থেকেই জেনে নিই না কেন, যাঁরা এই অনন্য প্রয়াসের অংশীদার। এই জন্য এই মুহূর্তে আমার সঙ্গে ফোনে রয়েছেন দুই তরুণ – একজন অরুণাচল প্রদেশের গ্যামর নৌকুমজী আর দ্বিতীয় জন হল বিহারের কন্যা বিশাখা সিংজী।
আসুন প্রথমে আমরা গ্যামর নৌকুমের সঙ্গে কথা বলি।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ গ্যামরজী নমস্কার।
গ্যামর জীঃ নমস্কার মোদীজী।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আচ্ছা গ্যামরজী, সবার আগে আমি আপনার বিষয়ে একটু জানতে চাই।
গ্যামর জীঃ মোদীজী, সবার আগে তো আমি আপনার এবং ভারত সরকারের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই যে আপনি খুব মূল্যবান সময় বের করে আপনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন আমাকে। অরুণাচল প্রদেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে প্রথম বর্ষে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনীয়ারিং নিয়ে পড়ছি আমি।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আর পরিবারে পিতা এবং অন্যান্যরা কী করেন?
গ্যামর জীঃ আমার বাবা ছোটখাটো ব্যাবসা আর তার পরে কিছু চাষবাস সহ নানা কাজ করেন।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আপনি যুব সঙ্গমের খোঁজ পেলেন কিভাবে? যুব সঙ্গমে কোথায় গেলেন, কিভাবে গেলেন, কী হলো সেখানে?
গ্যামর জীঃ মোদীজি, যুব সঙ্গমের আমাদের যে ইনস্টিটিউশন আছে౼ NIT , ওরা আমায় জানিয়েছিল যে আপনি এটাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তো আমি তখন ইন্টারনেটে একটু খোঁজখবর করি এবং তখনই জানতে পারি যে এটা খুবই ভালো একটি কর্মসূচী যা কিনা “এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের” আমাদের যে পরিকল্পনা আছে সেখানে সংযোজন করতে পারে এবং আমাকে কিছু নতুন বিষয় শেখার সুযোগ করে দেবে। তখনই আমি ওয়েবসাইটে গিয়ে নাম নথিভুক্ত করি। আমার খুবই মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে, এটা খুবই ভালো ছিল।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আপনাকে কিভাবে বাছাই করতে হয়েছে?
গ্যামর জীঃ মোদীজি, যখন ওয়েবসাইট খুলে ছিলাম তখন অরুণাচল বাসীদের জন্য দুটো অপশন পেলাম। প্রথমটি, অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি আইআইটি । আর, দ্বিতীয়টি ছিল সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি, রাজস্থান। আমার প্রথম পছন্দ ছিল রাজস্থান আর দ্বিতীয় পছন্দে রেখেছিলাম তিরুপতি আইআইটিকে। আমি রাজস্থানের জন্য সিলেক্ট হয়েছিলাম। তারপর আমি রাজস্থান গিয়েছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আপনার রাজস্থান যাত্রা কেমন ছিল? আপনি এই প্রথমবার রাজস্থান গেলেন?
গ্যামর জীঃ হ্যাঁ আমি এই প্রথম অরুণাচল প্রদেশের বাইরে কোথাও গেলাম। রাজস্থানের সব দুর্গ আমি শুধুই সিনেমা আর ফোনে দেখেছিলাম, তো আমি যখন প্রথমবার রাজস্থানে গেলাম তো আমার অভিজ্ঞতা খুবই ভালো ছিল, ওখানকার মানুষ খুবই ভাল ছিলেন আর তারা আমাদের যেভাবে আপ্যায়ন করেছিলেন, তা খুবই ভালো ছিল। নতুন নতুন জিনিস শেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। রাজস্থানের বড় ঝিল এবং সেখানকার মানুষ যেভাবে বৃষ্টির জল সঞ্চয় করে, তা দেখে অনেক নতুন কিছু শিখলাম, যা এর আগে আমার একেবারেই জানা ছিল না, তো রাজস্থান ভ্রমণের এই আয়োজন খুবই ভালো ছিল।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ দেখুন, আপনার সব থেকে বড় লাভ হল যে, অরুণাচল বীরদের ভূমি, রাজস্থানও বীরদের ভূমি এবং রাজস্থান থেকে সেনাবাহিনীতেও প্রচুর পরিমাণে সেনা যোগদান করেন, আর অরুণাচলের সীমান্তে যে সৈনিকেরা আছেন, সেখানে রাজস্থানের মানুষের খোঁজ পাবেন তখন আপনি অবশ্যই তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন, দেখুন আমি রাজস্থানে গিয়েছিলাম, সেখানকার অভিজ্ঞতা ভাগ করলে আপনার সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হবে। আচ্ছা ওখানে আপনি নিশ্চয়ই কোন সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলেন যা দেখে আপনার মনে হয়েছে যে অরুনাচলেও এমনটা আছে?
গ্যামর জীঃ মোদীজি, আমি যে এক সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলাম সেটা ছিল দেশপ্রেম। এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের ভাবনা এবং অনুভূতি আমি দেখেছি। কারণ, অরুণাচলেও মানুষ নিজেদের নিয়ে খুবই গর্বিত যে তারা ভারতীয় আর রাজস্থানেও মানুষ তার মাতৃভূমির জন্য যথেষ্ট গর্বিত। এই বিষয়টা আমার খুবই নজরে এসেছে এবং বিশেষত যুব সম্প্রদায়, কারণ আমি ওখানে অনেক যুবকের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি এবং কথাবার্তা বলেছি, এসবের মধ্যে একটা মিল আমার নজরে এসেছে। ওরা চায় ভারতের জন্য কিছু করতে, ওদের মনে নিজের দেশের জন্য ভালোবাসা আছে, তো এই জিনিসটা দুই রাজ্যের ক্ষেত্রেই আমার এক বলে মনে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ ওখানে যাদের সাথে পরিচয় হল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেন না ফিরে এসে ভুলে গেলেন?
গ্যামর জীঃ না না, আমরা কথা বলেছি, যোগাযোগ রেখেছি।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আপনি স্যোশাল মিডিয়াতে আক্টিভ?
গ্যামর জীঃ হ্যাঁ মোদিজী, আমি স্যোশাল মিডিয়াতে আক্টিভ।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ তাহলেতো আপনার ব্লগ লেখা উচিৎ। আপনার এই যুব সংগমে কি অভিজ্ঞতা হল, আপনি এতে কিকরে নাম নথিভুক্ত করলেন, রাজস্থানে আপনার কিরকম লাগলো - এই সব কথা লিখুন, যাতে সারা দেশের যুবরা জানতে পারে 'এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত' যোজনাটি কি, এর মাহাত্ম্য কি এবং যুবসম্প্রদায় এর থেকে কিভাবে লাভবান হতে পারে - আপনার গোটা অভিজ্ঞতার ব্লগ লিখুন, যাতে লোকে পড়ে সব জানতে পারে।
গ্যামর জীঃ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি নিশ্চয়ই করব।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ গ্যামরজী খুব ভাল লাগলো আপনার সাথে কথা বলে। আপনি, আপনার মত যুবরা, দেশের জন্য, দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অন্ত্যত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই ২৫ বছর বয়সটাও খুব মূল্যবান, আপনাদের নিজেদের জীবনেও এবং দেশের জন্যও। আমার অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
গ্যামর জীঃ ধন্যবাদ মোদিজী আপনাকে।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ নমস্কার ভাই।
বন্ধুরা, অরুণাচলের মানুষজন এত অতিথিবৎসল হন, ওদের সাথে কথা বলতে আমার খুব ভাল লাগে। যুব সংগমে গ্যামরজির অভিজ্ঞতা তো খুব ভাল ছিল। আসুন, এবারে বিহারের কন্যা বিশাখা সিং-এর সঙ্গে কথা বলি।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ বিশাখা সিংজী নমস্কার।
বিশাখাজীঃ সর্বপ্রথম ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমার সাদর প্রণাম। আমার সাথে আসা সমস্ত প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকেও আপনাকে জানাই সাদর প্রণাম।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আচ্ছা বিশাখাজি, আগে আমাকে আপনার ব্যাপারে কিছু বলুন। তারপর আমি যুব সংগমের ব্যাপারেও জানতে চাই।
বিশাখাজীঃ আমি বিহারের সাসারাম শহরের বাসিন্দা। আমি যুব সংগমের ব্যাপারে সবার আগে জানতে পারি কলেজের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ থেকে। তারপর আমি এই ব্যাপারে আরও খোঁজ খবর নিই, বিস্তারিত তথ্য বের করি। তখন আমি জানতে পারি যে এটা প্রধানমন্ত্রীজির একটি কর্মসূচী – ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর অন্তর্ভুক্ত যুবসঙ্গম। আমি এতে আবেদন করি এবং আমি এটাতে যোগ দেবার জন্য আগ্রহী ছিলাম খুবই। কিন্তু এই যে তামিলনাড়ু থেকে আমি ঘুরে এলাম , অনেক কিছু জানতে পারলাম, এটা অমূল্য। এটা আমার কাছে খুবই গর্বের বিষয় যে আমি এই যুব সংগমের একজন অংশগ্রহণকারী ছিলাম। আমি খুবই আনন্দিত। আমি আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই, আপনি আমার মত যুবক-যুবতীদের জন্য এত ভাল একটা কর্মসূচী বানিয়েছেন যাতে আমরা ভারতের বিভিন্ন ভাগের সংস্কৃতিক বৈচিত্রর সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ বিশাখাজী আপনি কী পড়াশুনা করেন?
বিশাখাজীঃ আমি কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আচ্ছা বিশাখাজী, আপনাকে কোন রাজ্যে যেতে হবে, কোথায় যোগ দিতে হবে, সেটা কীভাবে ঠিক করলেন?
বিশাখাজীঃ আমি যখন গুগলে যুব সঙ্গম সম্পর্কে সার্চ করা শুরু করি, তখন আমি জানতে পারি যে বিহারের প্রতিনিধিদের তামিলনাড়ুর প্রতিনিধির সঙ্গে বিনিময় করা হচ্ছে। তামিলনাড়ু আমাদের দেশের একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক রাজ্য, তাই সেই সময়েও যখন আমি জানতে পারি যে বিহার থেকে প্রতিনিধিদের তামিলনাড়ুতে পাঠানো হচ্ছে, এটি আমাকে ফর্মটি পূরণ করা উচিত কিনা, সেখানে যাব কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নিতে অনেকটাই সাহায্য করেছিল। আমি আজ সত্যিই খুব গর্ববোধ করছি যে আমি এতে অংশগ্রহণ করেছি এবং আমি খুবই খুশি।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আপনি প্রথমবার তামিলনাড়ুতে গিয়েছিলেন?
বিশাখাজীঃ হ্যাঁ প্রথমবার গিয়েছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আচ্ছা, আপনি যদি কোনও স্মরণীয় ঘটনার কথা বলতে চান তাহলে কী বলবেন? দেশের যুবক-যুবতীরা আপনার কথা শুনছেন কিন্তু।
বিশাখাজীঃ পুরো যাত্রাটাই আমার জন্য খুবই ভাল ছিল। প্রতিটি ধাপেই আমরা অনেক কিছু শিখেছি। আমি তামিলনাড়ুতে ভাল বন্ধু পেয়েছি। সেখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। সেখানকার লোকদের সঙ্গে মেলামেশা করেছি। তবে সবচেয়ে ভাল জিনিস যেটি পেলাম, যা সবাই পায় না, তা হলো ইসরোতে যাওয়ার সুযোগ এবং আমরা প্রতিনিধি দলের থেকে গিয়েছিলাম বলেই আমরা ইসরোতে যাওয়ার এই সুযোগটা পেয়েছিলাম। দ্বিতীয় সেরা জিনিসটি ছিল যখন আমরা রাজভবনে যাই এবং তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করি। এই দুটি মুহূর্ত আমার কাছে খুব স্মরণীয় ছিল এবং আমি মনে করি যে আমরা এই বয়সে, যুবতী হিসেবে এমন সুযোগ পেতামনা, যা এই যুবসঙ্গমের মাধ্যমে পেলাম। তাই এটি বেশ সুন্দর এবং স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল আমার কাছে।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ বিহারে খাওয়ার ধরন আলাদা, তামিলনাড়ুতে খাওয়ার ধরন আলাদা।
বিশাখাজীঃ হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ সেটা কি পুরোপুরি মানানো গিয়েছিল?
বিশাখাজি : যখন আমরা তামিলনাড়ু গিয়েছিলাম, সেখানে তো দক্ষিণ ভারতীয় খাবার। সেখানে যেতেই সবাই আমাদের ধোসা, ইডলি, সাম্বর, উত্তপম, বড়া, উপমা এইসব পরিবেশন করছিল। যখন আমরা সেটা মুখে তুললাম, আমাদের দারুণ লেগেছিল! ওখানকার খাবার খুবই স্বাস্থ্যকর, আসলে দারুন স্বাদের খাবার আর আমাদের উত্তর ভারতের খাবারের থেকে একেবারেই আলাদা, তাই ওখানকার খাবার আমাদের খুব ভালো লেগেছে এবং ওখানকার লোকজনও খুব ভালো।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ তাহলে তামিলনাড়ুতে এখন বেশ কিছু বন্ধুও হয়েছে নিশ্চয়ই?
বিশাখাজীঃ হ্যাঁ। ওখানে আমরা ছিলাম এনআইটি ত্রিচিতে, তারপর ম্যাড্রাস আইআইটিএ। এই দুই জায়গার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়েছে। এছাড়াও, মাঝে একবার সিআইআই-এর অভ্যর্থনা কর্মসূচী ছিল, সেখানকার আশেপাশের কলেজ থেকেও অনেক ছাত্রছাত্রী এসেছিল। সেখানে আমরা সেই ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছিলাম আর আমার খুব ভালো লাগলো তাদের সঙ্গে দেখা করে, অনেকে তো এখন আমার বন্ধু। সেখানে বেশ কিছু প্রতিনিধি-দের সঙ্গেও দেখা হয়েছিল যারা তামিলনাড়ু্তে এসেছিল বিহারের প্রতিনিধি হিসেবে। আমরা তাদের সাথেও আলাপ করেছিলাম আর এখনো আমরা একে অপরের সম্পর্কে রয়েছি, তাই এটা আমার খুব ভালো লাগে।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ তাহলে বিশাখাজি, আপনি ব্লগ লিখুন আর স্যোস্যাল মিডিয়া-তে আপনার সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা জানান। প্রথমত, যুবা সঙ্গমের বিষয়ে, তারপর ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের’ বিষয়ে এবং তামিলনাড়ুতে আপনি যেরকম ভালোবাসা পেয়েছেন, আদর-আপ্যায়ন পেয়েছেন সেই বিষয়ে। তামিল মানুষদের ভালবাসা পেয়েছেন, সেই সব বিষয়ে দেশকে জানান। তাহলে লিখবেন আপনি?
বিশাখাজীঃ হ্যাঁ, অবশ্যই।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আমার তরফ থেকে আপনাকে জানাই অনেক শুভকামনা ও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বিশাখাজীঃ প্রধানমন্ত্রী জী অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
গ্যামর ও বিশাখা, আপনাদের দু’জনকেই অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। যুবা সঙ্গমের মাধ্যমে আপনারা যা শিখলেন, তা আজীবন আপনাদের সঙ্গে থাকবে। আপনাদের সকলকে আমার শুভকামনা জানাই।
বন্ধুরা, বৈচিত্রের মধ্যেই রয়েছে ভারতের শক্তি। আমাদের দেশে দেখার মত অনেক কিছু রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই শিক্ষা মন্ত্রক ‘যুবাসঙ্গম’ নামের এক অনন্য উদ্যোগ শুরু করেছে।
এই প্রচেষ্টার উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বাড়ানো। এছাড়াও যুবক-যুবতীদের মধ্যে মেলামেশার সুযোগ করে দেওয়া। বিভিন্ন রাজ্যের উচ্চশিক্ষা সংস্থাকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। 'যুবসঙ্গমে' যুবক-যুবতীরা অন্য রাজ্যের শহর ও গ্রামে যান, সেখানে তারা বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পান। যুব সঙ্গমের প্রথম পর্বে প্রায় ১২০০ যবে-যুবতী দেশের বাইশটি রাজ্যে ঘুরে এসেছেন। যে যুবকই এর অংশ হয়েছেন, তারা এমন কিছু স্মৃতি নিয়ে ফিরছেন যা সারাজীবন তাদের হৃদয়ে গেথে হয়ে থাকবে। আমরা দেখেছি অনেক কোম্পানির মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক , বিজনেস লিডারসরা ব্যাদ প্যাকারসদের মত ভারতে সময় কাটিয়েছেন। আমি যখন অন্য দেশের লিডারদের সঙ্গে দেখা করি, তখন তারা বলেন যে তারাও তাদের যুবাবস্থায় ভারত ঘুরতে এসেছিলেন। আমাদের ভারতে এত কিছু জানার এবং দেখার আছে যে প্রত্যেকবার আপনার ঔৎসুক্য বাড়তেই থাকবে। আমি আশা করি যে এই সমস্ত রোমাঞ্চকর তথ্য জানার পর আপনারাও দেশের বিভিন্ন স্থানে যাবার জন্য নিশ্চয়ই অনুপ্রানিত হবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী কিছুদিন আগে আমি জাপানের হিরোশিমায় গিয়েছিলাম। ওখানে আমার হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। এটা একটি আবেগঘন অনুভূতি ছিল। যখন আমরা ইতিহাসের স্মৃতিকে যত্ন করে সামলে রাখি তো সেটা আগামী প্রজন্মের অনেক ভাবে সাহায্য করে। অনেক সময় মিউজিয়াম-এ আমরা নতুন অভিজ্ঞতা হয়, তো কখনো কখনো অনেক কিছু শিখতে পারি। কিছু দিন আগে ভারতে আন্তর্জাতিক সংগ্রহশালার এক্সপোর আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে বিশ্বের ১২০০-এর ও বেশী মিউজিয়াম এর বিশেষত্ব প্রদর্শন করা হয়েছিল। আমাদের এখানে ভারতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের অনেক মিউজিয়াম আছে, যা আমাদের অতীত এর সঙ্গে জড়িত অনেক অজানা তথ্যকে প্রদর্শন করে, যেরকম গুরুগ্রামে একটি ক্যামেরার অনন্য সংগ্রহশালা আছে, এখানে ১৮৬০ সালের পর থেকে ৮০০০ এরও বেশি ক্যামেরার সংগ্রহ রয়েছে। তামিলনাড়ুর মিউজিয়াম অফ পসিবিলিটজে আমাদের ভিন্ন ভাবে সক্ষম বন্ধুদের কথা মাথায় রেখে নকশা করা হয়েছে। মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ বাস্তু সংগ্রহালয় একটি এমন মিউজিয়াম যেখানে ৭০ হাজারেরও বেশি সামগ্রী সংরক্ষিত করা হয়েছে। ২০১০ সালে স্থাপিত ইন্ডিয়ান মেমারি প্রজেক্ট এক ধরনের অনলাইন মিউজিয়াম। এটি পৃথিবীব্যাপী পাঠানো ছবি এবং গল্পের মাধ্যমে ভারতের গৌরবময় ইতিহাসের সংযোগ সূত্রকে জোড়ার কাজ করে চলেছে। বিভাজনের বিভীষিকার সঙ্গে জড়িত স্মৃতিকেও সামনে আনার প্রয়াস করা হচ্ছে। বিগত বছরেও আমরা ভারতে নতুন নতুন ধরনের মিউজিয়াম আর স্মারক তৈরি হতে দেখেছি। স্বাধীনতা সংগ্রামে আদিবাসী ভাই বোনেদের অংশগ্রহণের উপর সমর্পিত দশটি নতুন মিউজিয়াম তৈরি করা হচ্ছে। কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-এর বিপ্লবী ভারত গ্যালারিই হোক বা জালিয়ানওয়ালাবাগ মেমোরিয়ালকে পুনরুদ্ধার, দেশের সব পূর্ব প্রধানমন্ত্রীদেরকে সমর্পিত পি এম মিউজিয়ামও আজ দিল্লীর শোভা বর্ধন করছে। দিল্লির ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল এবং পুলিশ মেমোরিয়াল-এ প্রত্যেকদিন অনেক মানুষ শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। ঐতিহাসিক ডান্ডি যাত্রাকে সমর্পিত ডান্ডি মেমোরিয়াল হোক বা স্ট্যাচু অফ ইউনিটি মিউজিয়াম। যাই হোক, আমাদের এখানেই থেমে যাওয়া উচিত কারণ দেশ ব্যাপী সংগ্রহশালাগুলির তালিকা অনেক লম্বা আর প্রথমবার দেশে সমস্ত মিউজিয়ামের সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংকলন করা হচ্ছে। মিউজিয়াম কোন থিম এর উপর তৈরি করা হয়েছে, ওখানে কোন ধরনের কি বস্তু রাখা আছে, সংগ্রহশালার সঙ্গে কি ভাবে যোগাযোগ করা যাবে, এই সমস্ত কিছুই একটি অনলাইন ডিরেক্টারির মধ্যে একসঙ্গে রাখা হচ্ছে।
আমি আপনাদের অনুরোধ করছি আপনারা যখনই সুযোগ পাবেন, নিজের দেশের এই সংগ্রহশালাগুলো অবশ্যই দেখতে যাবেন। আপনারা সেখানে আকর্ষণীয় ছবিগুলি #(হ্যাশট্যাগ) Museum Memories এ সকলের সঙ্গে ভাগ করতে ভুলে যাবেন না যেন। এইভাবে আমাদের গৌরবময় সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের ভারতীয়দের সংযোগ আরও শক্তিশালী হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা সবাই নিশ্চয়ই একটি কথা বহুবার শুনেছি, বারবার শুনেছি- বিন পানি সব সুন। জল ছাড়া জীবন সংকট তো দেখা দেবেই, ব্যক্তি এবং দেশের উন্নয়নও থমকে যায়। ভবিষ্যতের এই চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে আজ দেশের প্রতিটি জেলায় ৭৫টি অমৃত সরোবর কাটা হচ্ছে। আমাদের অমৃত সরোবর এইজন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, এইগুলি স্বাধীনতার অমৃত কালের সময় নির্মিত হচ্ছে এবং এতে মানুষের অমৃত প্রচেষ্টা জড়িয়ে আছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে এখনও পর্যন্ত ৫০ হাজারেরও বেশি অমৃত সরোবর কাটা হয়েছে। জল সংরক্ষণের লক্ষ্যে এটি একটি বড় পদক্ষেপ।
বন্ধুরা, আমরা প্রতি গ্রীষ্মে এইভাবে, জল সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে কথা বলতে থাকি। এবারও আমরা এই বিষয়ে বলব, তবে এবার আমরা আলোচনা করব জল সংরক্ষণ সম্পর্কিত নতুন উদ্যোগ নিয়ে। একটি স্টার্ট-আপস আছে – ফ্লাক্সজেন। এই স্টার্ট- আপ, আইওটি এনাবেল্ড প্রযুক্তির মাধ্যমে জল সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার বিকল্প দেয়। এই প্রযুক্তি জল ব্যবহারের ধারাকে বদলে দেবে এবং নিত্য ব্যবহারে সাহায্য করবে৷ আরেকটি স্টার্ট আপ হল লিভ-এন-সেন্স। এটি কৃত্রিম মেধা এবং মেশিন লার্নিং- এর উপর ভিত্তি করে একটি প্ল্যাটফর্ম। এর সাহায্যে জল বন্টনের কার্যকরী তত্বাবধান করা যাবে। এর থেকে এটাও জানা যাবে কোথায় কতটুকু জল অপচয় হচ্ছে। আরেকটি স্টার্ট আপ হল 'কুম্ভী কাগজ' (Kumbhi Kagaz)। এই 'কুম্ভী কাগজ' এমন একটি বিষয়, আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস যে, আপনাদেরও খুব ভালো লাগবে। ‘কুম্ভী কাগজ’ নতুন উদ্যোগ সংস্থাটি একটি বিশেষ কাজ শুরু করেছে। এরা কচুরিপানা থেকে কাগজ তৈরির কাজ শুরু করেছে, অর্থাৎ, এক সময় যে কচুরিপানা, কখনো, জলস্রোতের সময় সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হতো, এখন কাগজ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বন্ধুরা, অনেক যুবকযুবতী যেরকম উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করছেন, আবার এমন অনেক যুবকযুবতী রয়েছেন যারা সমাজকে সচেতন করার মিশনে নিয়োজিত । যেমন ছত্তিশগড়ের বালোদ জেলার যুবসম্প্রদায়। এখানকার যুবক-যুবতীরা জল বাঁচাতে প্রচার শুরু করেছে। তারা বাড়ী-বাড়ী গিয়ে মানুষকে জল সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতন করে। যেখানেই বিবাহের মতো অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, সেখানে, তরুণদের এই দল-টি যায়, কীভাবে জলের অপব্যবহার বন্ধ করা যায়, সে সম্পর্কে তথ্য দেয়। ঝাড়খণ্ডের খুঁটি জেলাতেও জলের দক্ষ ব্যবহার সম্পর্কিত একটি প্রচারমূলক প্রচেষ্টা করা হচ্ছে৷ খুঁটির মানুষ জল সংকট মোকাবিলায় বস্তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণের পথ খুঁজে পেয়েছেন। বস্তা বাঁধের মাধ্যমে জল জমিয়ে এখানে শাক সবজিও ফলতে শুরু করেছে। এতে মানুষের আয়ও বাড়ছে, এলাকার চাহিদাও পূরণ হচ্ছে। সাধারণের যে কোনো উদ্যোগ, কীভাবে অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসে, তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠেছে খুঁটি। এই প্রচেষ্টার জন্য আমি এখানকার মানুষকে অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময় আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী জয় জওয়ান, জয় কিষান স্লোগান দিয়েছিলেন।
পরবর্তীকালে অটলজি তার সঙ্গে জয় বিজ্ঞান যোগ করেছিলেন। কয়েক বছর আগে দেশের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমি জয় অনুসন্ধানের কথা বলেছিলাম। মন কি বাতে আজ এমন এক ব্যক্তির কথা, এমন এক সংস্থার কথা বলব, যারা জয় জওয়ান, জয় কিষান, জয় বিজ্ঞান এবং জয় অনুসন্ধান এই চারটিরই প্রতিফলিত। এই ভদ্রলোক হলেন মহারাষ্ট্রের শ্রীমান শিবাজী শামরাও ডোলেজি। শিবাজী ডোলে নাসিক জেলার একটি ছোট্ট গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দরিদ্র জনজাতি কৃষক পরিবারের সন্তান এবং একজন প্রাক্তন সৈনিকও বটে। সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন তিনি দেশের সেবায় নিয়জিত ছিলেন । অবসর গ্রহণের পর তিনি নতুন কিছু শেখার সিদ্ধান্ত নেন এবং কৃষি বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা করেন। অর্থাৎ জয় জওয়ান থেকে জয় কিষানের দিকে অগ্রসর হন। এখন প্রতিমুহূর্তে তাঁর চেষ্টা এটাই থাকে, যে কী ভাবে কৃষি ক্ষেত্রে অধিকতর অবদান রাখা যায়। নিজের এই অভিযানে শিবাজী ডোলেজি কুড়ি জনের একটি ছোট টিম তৈরি করেছেন এবং কয়েকজন প্রাক্তন সৈনিককেও এতে যুক্ত করেছেন। এরপর তাঁর এই টিম ভেঙ্কটেশ্বর কো-অপারেটিভ পাওয়ার এন্ড অ্যাগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড নামের একটি সহকারী সংস্থার পরিচালনার দায়িত্ব নিজেদের হাতে নিয়েছেন। এই সহকারী সংস্থাটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পরে ছিল। তাকে পুনরুজ্জীবিত করার গুরুদায়িত্ব তারা নিয়েছেন। দেখতে দেখতে আজ ভেঙ্কটেশ্বর কো-অপারেটিভের প্রসার অনেক জেলাতে হয়ে গেছে। আজ এই দলটি মহারাষ্ট্র আর কর্নাটকে কাজ করছে। এতে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ যুক্ত হয়েছেন, যার মধ্যে যথেষ্ট সংখ্যক সেনাবাহিনীর প্রাক্তনীরাও রয়েছেন।
নাসিকের মালেগাঁওতে এই দলের সদস্যরা ৫০০ একরেরও বেশি জমিতে অ্যাগ্রো ফার্মিং করছে। এই দলটি জল সংরক্ষণের জন্য অনেক জলাশয় তৈরি করার কাজেও যুক্ত আছে। আরেকটা বিশেষ ব্যাপার হল এই যে তারা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে আর দোহ শিল্প অর্থাৎ ডেয়ারিও শুরু করেছেন। এখন তাদের ফলানো আঙ্গুর ইউরোপেও রপ্তানি করা হচ্ছে। এই দলের যে দুটি বড় বৈশিষ্ট্য আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে তা হল জয় বিজ্ঞান এবং জয় অনুসন্ধান। এর সদস্যরা প্রযুক্তি ও আধুনিক কৃষিকাজের নানা পন্থাপদ্ধতি যত বেশি সম্ভব ব্যবহার করছেন। দ্বিতীয়ত তারা রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় অনেক রকম সার্টিফিকেশনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। "সহকার থেকে সমৃদ্ধি" এই ভাবনার সঙ্গে কাজ করা এই দলটিকে আমি অভিনন্দন জানাই। এই প্রয়াসের মাধ্যমে শুধু বহু সংখ্যক মানুষের ক্ষমতায়ন হয়েছে তাই নয়, জীবিকারও অনেক সংস্থান হয়েছে। আমার বিশ্বাস এই প্রয়াস মান কি বাত এর প্রত্যেক শ্রোতাকে অনুপ্রাণিত করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ২৮ শে মে, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর সাভারকারের জন্মদিন। তাঁর ত্যাগ, সাহস ও সংকল্পশক্তির সঙ্গে যুক্ত কাহিনীগুলি আজও আমাদের সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে। আমি সেই দিনটা ভুলতে পারব না, যখন আমি আন্দামানে সেই কুঠুরিতে গিয়েছিলাম যেখানে বীর সাভারকর দ্বীপান্তরের সাজা ভোগ করছিলেন। বীর সাভারকারের ব্যক্তিত্ব দৃঢ়তা ও বিশালত্বের আধার ছিল। তার নির্ভীক ও আত্মাভিমানী স্বভাব দাসত্বের মানসিকতা একেবারেই বরদাস্ত করতে পারত না। শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামই নয়, সামাজিক সাম্য ও ন্যায়ের জন্য বীর সাভারকর যা কিছু করেছেন তার জন্য তাকে আজও স্মরণ করা হয়।
বন্ধুরা, কয়েকদিন পর চৌঠা জুন সন্ত কবীরদাসজিরও জন্মদিন। কবীরদাসজি আমাদের যে পথ দেখিয়েছেন তা আজও ততটাই প্রাসঙ্গিক। কবীরদাসজি বলতেন,
"কবীরা কুয়া এক হ্যায়, পানি ভরে অনেক
বর্তন মে হি ভেদ হ্যায়, পানি সব মে এক"।
অর্থাৎ কুয়ো থেকে যতই আলাদা আলাদা ধরনের মানুষ জল ভর্তি করতে আসুক না কেন কুয়ো কারোর মধ্যে কোন তফাৎ করে না। প্রত্যেকটা পাত্রে থাকা জল একই। সাধক কবীর সমাজকে যেকোনোভাবে ভাগ করার মত কু-প্রথার বিরোধিতা করেছেন, সমাজকে এই বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করেছিলেন। আজ যখন দেশ উন্নত হওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে এগোচ্ছে তখন আমরা সাধক কবীরের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করে সমাজের ক্ষমতায়নে নিজেদের উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে পারি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন আমি আপনাদের সঙ্গে দেশের এমন এক মহান ব্যক্তির কথা আলোচনা করব যিনি রাজনীতি এবং চলচ্চিত্র জগতে নিজের আশ্চর্য প্রতিভার জোরে বিশেষ নিদর্শন রেখেছেন। এই বিখ্যাত ব্যক্তির নাম এন টি রামারাও যাঁকে আমরা সকলে এন টি আর নামেও চিনি। আজ এন টি আরের শততম জন্মজয়ন্তী। নিজের বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে তিনি শুধু তেলেগু সিনেমার একজন মহানায়ক হিসেবেই উপস্থাপিত হননি; বরং তিনি কোটি কোটি মানুষের মন জয় করেছিলেন। আপনারা জানেন যে উনি ৩০০ থেকেও বেশি সিনেমায় কাজ করেছেন? উনি অনেক ঐতিহাসিক চরিত্রকে নিজের অভিনয়ের মাধ্যমে জীবন্ত করে তুলেছিলেন। ভগবান কৃষ্ণ, রাম এবং এমন অনেক ভূমিকায় এন টি আরের অভিনয় মানুষ এতটাই পছন্দ করেছেন যে মানুষ তাঁকে আজও মনে রেখেছেন। এন টি আর সিনেমা জগতের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতেও নিজের বিশেষ পরিচিতি তৈরি করেছিলেন। এখানেও তিনি মানুষের সম্পূর্ণ ভালবাসা এবং আশীর্বাদ পেয়েছেন। এই দেশ, এই পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষের মনে বিশেষ জায়গা তৈরি করে নেওয়া এন টি রামারাওজিকে আমি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ এবার এই পর্যন্তই। পরেরবার নতুন কিছু বিষয়ের সঙ্গে আপনাদের মাঝে আসবো, ততদিনে কিছু জায়গায় ভীষণ গরম পড়বে। কিছু জায়গায় হয়তো বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। আবহাওয়ার যে কোন পরিস্থিতিতেই আপনাদের নিজেদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে হবে। একুশে জুন আমরা আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন করব, এই বিষয়ে দেশে-বিদেশে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। আপনারা এই প্রস্তুতির বিষয়ে নিজেদের মনের কথা আমায় লিখতে থাকুন। কোন অন্য বিষয়েও কিছু যদি আপনারা জেনে থাকেন তা আমায়ও জানান। আমি চেষ্টা করি ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আপনাদের থেকে আসা অনেক পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করতে। আবারো আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। পরের মাসে আবার দেখা হবে, ততদিনের জন্য আমায় বিদায় দিন। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ “মান কি বাত”-এর শততম পর্ব। আপনাদের হাজার হাজার চিঠি পেয়েছি আমি, লক্ষ-লক্ষ বার্তা এসে পৌঁছেছে আর আমি চেষ্টা করেছি যাতে বেশি-বেশি চিঠি পড়ে উঠতে পারি, দেখতে পারি, বার্তার মর্মার্থ উদ্ধার করতে পারি। আপনাদের চিঠি পড়তে গিয়ে অনেক বার আমি আপ্লুত হয়েছি, আবেগে পূর্ণ হয়েছি, ভেসে গিয়েছি আবেগে এবং আবার নিজেকে সামলে নিয়েছি। আপনারা আমাকে ‘মন কি বাত’-এর শততম পর্ব উপলক্ষে অভিনন্দন জানিয়েছেন; কিন্তু আমি হৃদয়ের অন্তর থেকে বলছি, প্রকৃতপক্ষে অভিনন্দনের পাত্র তো আপনারা, মন কি বাতের শ্রোতারা, আমাদের দেশবাসী। ‘মন কি বাত’ কোটি কোটি ভারতীয়র মনের কথা, তাঁদের ভাবনার প্রকাশ।
বন্ধুরা, ২০১৪ সালের তেসরা অক্টোবর, বিজয়া দশমীর সেই উৎসব ছিল আর আমরা সবাই মিলে বিজয়া দশমীর দিনে ‘মন কি বাত’-এর যাত্রা শুরু করেছিলাম। বিজয়া দশমী অর্থাৎ অশুভের বিরুদ্ধে শুভর বিজয়ের উৎসব। ‘মন কি বাত’ও দেশবাসীর যা কিছু ভালো, যা সদর্থক তার এক অনন্য উৎসব হয়ে উঠেছে। এমন এক উৎসব যা প্রত্যেক মাসে আসে, যার প্রতীক্ষা আমাদের সবার থাকে। আমরা এখানে সদর্থক ভাবনার উদ্যাপন করি। আমরা এখানে জনগণের অংশগ্রহণের উদ্যাপনও করি। অনেক সময় বিশ্বাসই হয় না যে ‘মন কি বাত’ এত মাস আর এত বছর পেরিয়ে এল। নিজগুণে প্রত্যেকটি পর্বই বিশেষ। প্রত্যেক বার নতুন উদাহরণের নবীনত্ব, প্রত্যেক বার দেশবাসীর নতুন-নতুন সাফল্যের বর্ণনা। ‘মন কি বাত’-এ দেশের বিভিন্ন কোণ থেকে মানুষ যুক্ত হয়েছেন, সব বয়সের মানুষ যুক্ত হয়েছেন। বেটি বচাও-বেটি পড়াওয়ের আলোচনা হোক, স্বচ্ছ ভারত আন্দোলন হোক, খাদির প্রতি ভালোবাসা হোক অথবা প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা, আজাদী-কে-অমৃত মহোৎসব হোক অথবা অমৃত সরোবরের কথা হোক, ‘মন কি বাত’ যে বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, সেটা, জন-আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছে আর আপনারা সেটা তৈরি করেছেন। যখন আমি, তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার সঙ্গে ‘মন কি বাত’ করেছিলাম, তখন এর আলোচনা হয়েছিল গোটা বিশ্ব জুড়ে।
বন্ধুরা, আমার জন্য ‘মন কি বাত’ তো অন্যের গুণের পূজো করার মতই। আমার এক পথপ্রদর্শক ছিলেন – শ্রী লক্ষণরাও জী ইনামদার। আমি তাঁকে উকিল সাহেব বলে ডাকতাম। উনি সবসময় বলতেন যে অন্যের গুণাবলীর পূজো করা উচিত। সামনে যেই থাকুন, আপনার পক্ষের হোন, আপনার বিরোধী হোন, তাঁর ভালো গুণাবলীর কথা জানার, তাঁর থেকে শেখার প্রচেষ্টা করা উচিত আমাদের। তাঁর এই কথা সবসময় আমাকে প্রেরণা দিয়েছে। অন্যের গুণ থেকে শেখার খুব বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে মন কি বাত।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই অনুষ্ঠান আমাকে কখনোই আপনাদের থেকে দূরে যেতে দেয়নি। আমার মনে আছে, যখন আমি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন সাধারণ মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই মেলামেশা হয়ে যেত। মুখ্যমন্ত্রীর কাজকর্ম এবং কার্যকাল এমনই হয়ে থাকে যে মেলামেশার অনেক সুযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু ২০১৪ তে দিল্লিতে আসার পর আমি বুঝেছিলাম যে এখানকার জীবন অনেকটাই আলাদা। কাজের ধরন আলাদা, দায়িত্ব আলাদা, স্থিতি-পরিস্থিতির বন্ধন, সুরক্ষার আয়োজন, সময়ের সীমা। শুরুর দিকে একটু অন্যরকম অনুভূতি হত, ফাঁকা ফাঁকা মনে হতো। ৫০ বছর আগে আমি নিজের ঘর এই জন্য ছাড়েনি যে, একদিন নিজের দেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা মুশকিল হয়ে যাবে এটা ভেবে। যে দেশবাসী আমার সবকিছু, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আমার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব না। 'মন কি বাত' আমাকে এই চ্যালেঞ্জের সমাধান দিয়েছে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে জুড়ে থাকার পথ খুঁজে দিয়েছে। পদমর্যাদা এবং প্রোটোকল, একটা নির্দিষ্ট ব্যবস্থা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থেকেছে এবং কোটি কোটি জনমতের সঙ্গে আমার ভাবনা, বিশ্বের এক অটুট অঙ্গে পরিণত হয়েছে। প্রতিমাসে আমি দেশের মানুষের পাঠানো হাজার হাজার বার্তা পড়ি, প্রতিমাসে আমি দেশবাসীর একের পর এক অনন্য স্বরূপ দেখি। আমি দেশবাসীর তপস্যা ও ত্যাগের পরাকাষ্ঠা দেখি, অনুভব করি। আমার মনেই হয় না যে আমি আপনাদের থেকে একটুও দূরে আছি। আমার জন্য ‘মন কি বাত’ শুধুমাত্র একটি অনুষ্ঠান নয়, আমার জন্য এটা এক আস্থা, পূজা, ব্রত। যেমনভাবে মানুষ ঈশ্বরের পুজো করতে গেলে প্রসাদের থালা নিয়ে যায়, আমার জন্য ‘মন কি বাত’ ঈশ্বররূপী জনতা জনার্দনের চরণে প্রসাদের থালার মত। ‘মন কি বাত’ আমার মনের এক আধ্যাত্মিক যাত্রা।
'মন কি বাত' স্ব থেকে সমষ্টির যাত্রা।
'মন কি বাত' অহম থেকে বয়ম এর যাত্রা।
এ তো 'আমি' নয়, ' তুমি ' র মধ্যে দিয়েই এর সংস্কার সাধনা।
আপনি কল্পনা করুন, আমার কোন এক দেশবাসী ৪০-৪০ বছর ধরে নির্জন পাহাড়ি এবং বন্ধ্যা জমিতে গাছ লাগাচ্ছে, কত মানুষ ৩০-৩০ বছর ধরে জল সংরক্ষণের জন্য কুঁয়ো এবং পুকুর তৈরি করছে, সেটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখছে। কেউ আবার ২৫-৩০ বছর ধরে গরিব বাচ্চাদের পড়াচ্ছে, কেউ গরিব বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য সাহায্য করছে। কতবার ‘মন কি বাত’-এ তাদের নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমি ভাবুক হয়ে পড়েছি। আকাশবাণীর বন্ধুদের কতবার সেটা আবার নতুন করে রেকর্ড করতে হয়েছে। আজ, অতীতের কতকিছু আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। দেশবাসীর এই প্রয়াস আমাকে ক্রমাগত কাজ করে যাওয়ার প্রেরণা দেয়।
বন্ধুরা, ‘মন কি বাত’-এ যাদের কথা আমি উল্লেখ করেছি, তাঁরা আমাদের হিরো, তাঁদের জন্যই এই অনুষ্ঠান জীবন্ত হয়ে উঠেছে। আজ যখন আমরা শততম পর্বের দোরগোড়ায়, আমার ইচ্ছে আরও একবার, এই হিরোদের কাছে গিয়ে তাঁদের যাত্রাপথ সম্পর্কে জানি। আজ আমরা কিছু বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলারো চেষ্টা করব। দূরভাষে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, হরিয়ানা থেকে ভাই সুনিল জাগলানজি। আমার মনের ওপর সুনিল জাগলানজির কাজের গভীর প্রভাব পড়ে, কারণ হরিয়ানাতে gender ratio বিষয়টি খুবই চর্চায় থাকে। আমিও 'বেটি বাচাও - বেটি পড়াও' অভিযান হরিয়ানা থেকেই আরম্ভ করি। আর এর মধ্যে যখন সুনীলজির 'selfie with daughter' campaign, আমার দৃষ্টিগোচর হয়, আমি খুব আনন্দিত হই। আমিও ওনার থেকে শিক্ষালাভ করি, এবং ওনাকে ‘মন কি বাত’-এর অংশ করেনি। দেখতে দেখতে 'selfie with daughter' এক global campaign হয়ে উঠেছে। এই campaign এর মূখ্য বিষয় selfie ছিল না, technology ছিলোনা, কন্যাসন্তানকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের জীবনে মেয়েদের গুরুত্ব যে অসীম, এই অভিযানের ফলে এই কথাই স্পষ্ট হয়। আর আজ, তার এই অভিযানের ফল স্বরূপ, হরিয়ানাতে gender ratio উন্নত হয়েছে। আসুন, আজ সুনীল বাবুর সঙ্গে কিছুটা গল্প করি।
প্রধানমন্ত্রীজি - নমস্কার সুনীলজি।
সুনীল জি - নমস্কার স্যার। আপনার কন্ঠস্বর শুনে আমার আনন্দ আরও বেড়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীজি - সুনীলজি, selfie with daughter, অভিযান সবার মনে আছে। এখন এই বিষয়টি আবার চর্চায় এসেছে, আপনার কেমন লাগছে?
সুনীল জি - আসলে আপনি আমাদের প্রদেশ হরিয়ানাতে, মেয়েদের মুখে হাসি ফোটানোর ক্ষেত্রে পানিপথের যে চতুর্থ লড়াই শুরু করেছেন, এবং আপনার নেতৃত্বে সারা দেশের মানুষ যে যুদ্ধ জেতার চেষ্টা করেছেন, এটা আমি, আমার মত সব মেয়েদের বাবা ও মেয়েদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে খুব বড় ব্যাপার।
প্রধানমন্ত্রীজি - সুনীল জি, আপনার মেয়ে এখন কেমন আছে, আজকাল কী করছে?
সুনীল জি - হ্যাঁ, আমার মেয়েরা নন্দনী আর ইয়াচিকা, একজন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছে, একজন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ছে এবং তারা আপনার অনেক বড় ভক্ত এবং তারা তাদের সহপাঠীদের আপনাকে, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি লিখতে উৎসাহিতও করেছিল।
প্রধানমন্ত্রীজি - বাহ্ বাহ্! সোনা মেয়েদের আপনি আমার এবং ‘মন কি বাত’-এর শ্রোতাদের তরফ থেকে অনেক আশীর্বাদ দেবেন।
সুনীল জি - আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, আপনার কারণে দেশের মেয়েদের মুখের হাসি ক্রমাগত বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রীজি - আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুনীলজি।
সুনীল জি - ধন্যবাদ।
বন্ধুরা, আমি খুবই সন্তুষ্ট যে 'মন কি বাত'-এ আমরা দেশের নারীশক্তির শত শত অনুপ্রেরণামূলক গল্পের উল্লেখ করেছি। সে আমাদের সেনাবাহিনীই হোক বা ক্রীড়া জগৎ, আমি যখনই নারীদের সাফল্যের কথা বলেছি, তা বেশ প্রশংসিত হয়েছে। যেমন আমরা ছত্তিশগড়ের দেউর গ্রামের মহিলাদের নিয়ে আলোচনা করেছি। এই মহিলারা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে গ্রামের চত্বর, রাস্তা এবং মন্দির পরিষ্কার করার অভিযান চালান। একইভাবে, এই দেশ তামিলনাড়ুর আদিবাসী মহিলাদের থেকেও ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছে, যারা হাজার হাজার ইকো-ফ্রেন্ডলি টেরাকোটা কাপ রপ্তানি করেছিলেন। খোদ তামিলনাড়ুতে, ভেলোরে নাগ নদীকে পুনরুজ্জীবিত করতে ২০ হাজার মহিলা একত্রিত হয়েছিল। এই ধরনের অনেক অভিযান আমাদের নারী শক্তির নেতৃত্বে হয়েছে এবং 'মন কি বাত' তাদের প্রচেষ্টাকে সামনে আনার একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে।
বন্ধুরা, এখন আমাদের ফোন লাইনে আরও একজন ভদ্রলোক আছেন। তাঁর নাম মনজুর আহমেদ। 'মন কি বাত'-এ, জম্মু ও কাশ্মীরের পেন্সিল স্লেট সম্পর্কে কথা বলার সময় মনজুর আহমেদজির উল্লেখ করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীজি - মনজুর সাহেব, কেমন আছেন?
মনজুর জি - ধন্যবাদ স্যার...খুব ভালো আছি স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি - ‘মন কি বাত’-এর এই শততম পর্বে আপনার সঙ্গে কথা বলতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
মনজুর জি - ধন্যবাদ স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি - আচ্ছা এই পেন্সিল slate এর কাজ কিরকম চলছে?
মনজুর জি - খুব ভালো ভাবে চলছে স্যার, যেদিন থেকে আপনি আমাদের কথা ‘মন কি বাত’-এ বলেছেন তখন থেকে আমাদের কাজ আরো বেড়ে গেছে আর অন্যদেরও রোজগার বেড়ে গেছে এই কাজের মাধ্যমে।
প্রধানমন্ত্রীজি - কতজন লোক এখন রোজগার করেন এর থেকে?
মনজুর জি - এখন আমার কাছে ২০০-এরও বেশী লোক আছে।
প্রধানমন্ত্রীজি - আরে বাহ! আমি শুনে খুব খুশি হলাম।
মনজুর জি - হ্যাঁ স্যার, আর এক-দু’মাসে আমি এটাকে এক্সপ্যান্ড করছি, এতে আরো ২০০ জনের রোজগার বেড়ে যাবে স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি – বাহ্ বাহ্ দেখুন মঞ্জুর জি...
মনজুর জি - হ্যাঁ স্যার..
প্রধানমন্ত্রীজি - আমার খুব মনে আছে আপনি ওইদিন বলেছিলেন যে এটা এমন একটা কাজ যার কোনো পরিচিতি নেই, আপনার নিজস্ব কোনো পরিচিতি নেই, যার জন্য আপনার অনেক কষ্ট হতো, অনেক কঠিন পরিস্থিতিতে আপনাকে কাজ করতে হয়েছে আপনি বলেছিলেন, কিন্তু এখন তো আপনি প্রসিদ্ধও হয়ে গেছেন আর আপনার জন্য ২০০-রও বেশি মানুষ রোজগার করছেন।
মনজুর জি - হ্যাঁ স্যার.. হ্যাঁ স্যার..
প্রধানমন্ত্রীজি - আর এই নতুন এক্সপ্যানশন এর মাধ্যমে আরো ২০০ জনের রোজগারের সংস্থান হবে,এটা আরো খুশির খবর।
মনজুর জি - এমনকি স্যার এর ফলে এখানকার কৃষক বন্ধুরাও অনেক উপকৃত হয়েছেন। ২০০০ টাকার গাছ এখন ৫০০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এত ডিমান্ড বেড়ে গেছে তারপর থেকে, আর এই ক্ষেত্রে আমাদের পরিচিতিও বেড়ে গেছে, তাই অনেক অর্ডারও আসছে, আর সামনের এক-দু’মাসে এক্সপ্যান্ড করার পর আরো আশেপাশের বেশ কিছু গ্রামের যত যুবক-যুবতীদের এই কাজে নিয়োজিত করা যায় ততই তাদের কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা হতে পারবে স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি - দেখুন মঞ্জুর জি ভোকাল ফর লোকাল এর শক্তি কতটা অভূতপূর্ব হতে পারে তা আপনি পৃথিবীর মাটিতে করে দেখিয়ে দিয়েছেন।
মনজুর জি - হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি - আমার পক্ষ থেকে আপনাকে, গ্রামের সকল কৃষক বন্ধুদের এবং আপনার সঙ্গে কাজ করছেন এমন সমস্ত বন্ধুদের অনেক অনেক শুভকামনা। ধন্যবাদ ভাই।
মনজুর জি - ধন্যবাদ স্যার।
বন্ধুরা, আমাদের দেশে এমন অনেক প্রতিভাবান মানুষ রয়েছেন, যারা কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন। আমার মনে আছে বিশাখাপত্তনমের বেঙ্কট মুরলী প্রসাদ জি একটা 'আত্মনির্ভর ভারত chart' share করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন কিভাবে তিনি আরো বেশি পরিমাণে ভারতীয় products ব্যবহার করবেন। যখন বেতিয়ার প্রমোদ জি LED বাল্ব বানানোর ছোট একটা ইউনিট শুরু করেন বা গড়-মুক্তেশ্বর'এর সন্তোষ জি Mats তৈরি করার কাজ শুরু করেন তখন 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানই তাদের সেই উৎপাদিত পণ্যকে সবার সামনে তুলে ধরার মাধ্যম হয়ে ওঠে। আমরা Make in India'র অনেক দৃষ্টান্ত থেকে শুরু করে Space start-ups পর্যন্ত বহু আলোচনা 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে করেছি।
বন্ধুরা, আপনাদের হয়তো মনে আছে বেশ কিছু এপিসোড আগে আমি আমাদের মণিপুরের বোন বিজয়শান্তি দেবীর কথা বলেছিলাম। বিজয়শান্তি জি পদ্ম-ফুলের আঁশ থেকে জামাকাপড় তৈরী করেন। 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে তার এই অনন্য eco-friendly idea নিয়ে কথা হয়, আর সেজন্য তার এই কাজ আরো popular হয়ে গেছে। আজ বিজয়শান্তি জি আমাদের সঙ্গে টেলিফোন লাইনে রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীজি - নমস্কার বিজয় শান্তি জি। কেমন আছেন?
বিজয়শান্তি জি - Sir, আমি ভালো আছি।
প্রধানমন্ত্রীজি - আপনার কাজকর্ম কেমন চলছে?
বিজয়শান্তি জি - Sir, এখন আমি ৩০ জন মহিলাকে নিয়ে কাজ করছি।
প্রধানমন্ত্রীজি - এত অল্প সময়ের মধ্যে আপনি তাহলে ৩০ জনের দল তৈরি করে ফেলেছেন!
বিজয়শান্তি জি - হ্যাঁ স্যার, এ বছর আরো বাড়তে পারে, ১০০ জনকে দলে পেতে পারি, আমার এলাকা থেকে।
প্রধানমন্ত্রীজি - অর্থাৎ আপনার লক্ষ্য ১০০ জন মহিলা।
বিজয়শান্তি জি - হ্যাঁ! ১০০ জন মহিলা।
প্রধানমন্ত্রীজি - আর এখন মানুষ lotus stem fiber-এর (পদ্ম ডাটার আঁশের) সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন।
বিজয়শান্তি জি - হ্যাঁ প্রধানমন্ত্রীর 'মন কি বাত'-এর মাধ্যমে সারা দেশের মানুষ এর কথা জানেন।
প্রধানমন্ত্রীজি - তাহলে এটা এখন ভীষণ জনপ্রিয়।
বিজয়শান্তি জি - হ্যাঁ স্যার , এখন সবাই প্রধানমন্ত্রীর 'মন কি বাত'-এর মাধ্যমে লোটাস ফাইবারের কথা জানেন।
প্রধানমন্ত্রীজি - তাহলে আপনারা বাজারেও পৌঁছতে পেরেছেন?
বিজয়শান্তি জি - হ্যাঁ আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা বাজারে পৌঁছতে পেরেছি, এবং তাঁরা বৃহৎ পরিমাণে এই সামগ্রী কিনতে চান, এবং আমি এ বছর থেকে আমেরিকাতে আমার জিনিস রপ্তানি করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রীজি - তাহলে আপনি এখন রপ্তানি ব্যবসাদার হয়ে গেছেন?
বিজয়শান্তি জি - হ্যাঁ, এ বছর থেকে আমরা ভারতীয় lotus fiber-এর তৈরি সামগ্রী বিদেশে রপ্তানি করব।
প্রধানমন্ত্রীজি - মানে আমার বলা ভোকাল ফর লোকাল এখন লোকাল ফর গ্লোবাল হয়ে গেছে?
বিজয়শান্তি জি - হ্যাঁ, স্যার, আমি এখন আমার সামগ্রী সারা পৃথিবীতে রপ্তানি করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রীজি - আপনাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।
বিজয়শান্তি জি - ধন্যবাদ, স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি - ধন্যবাদ বিজয়শান্তি জী।
বিজয়শান্তি জি - ধন্যবাদ, স্যার।
বন্ধুরা, 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানের আরেকটা বিশেষত্ব আছে। 'মন কি বাত'-এর মাধ্যমে বহু জন আন্দোলন জন্মেছে এবং গতি নিয়েছে। যেমন আমাদের খেলনা, আমাদের toy industry-কে আবার প্রতিষ্ঠিত করার মিশন 'মন কি বাত'-এই শুরু হয়েছিল। আমাদের দেশীয় প্রজাতির কুকুর, দেশি ডগস নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজও শুরু হয়েছিল 'মন কি বাত'-এই। আমরা আরেকটি কাজও শুরু করেছিলাম, যে গরীব, ক্ষুদ্র দোকানদারদের সঙ্গে দরদাম করব না, ঝগড়া করব না। প্রতি ঘরে তেরঙ্গার মত কঠিন প্রকল্পে নামার সময় দেশবাসীকে এই ব্রতে ব্রতী করার ভূমিকাও 'মন কি বাত' বিরাট রূপে পালন করে।
এইরূপ প্রতিটি দৃষ্টান্ত সমাজে পরিবর্তন এনেছে। সমাজকে প্রেরণা জোগানোর এরকম প্রতিজ্ঞা প্রদীপ সাংওয়ান মহাশয়ও নিয়েছেন। 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে আমরা প্রদীপ সাংওয়ানের healing Himalayas অভিযানের কথা আলোচনা করেছিলাম। উনি এখন ফোনলাইনে রয়েছেন আমাদের সঙ্গে।
প্রধানমন্ত্রীজি - প্রদীপ জি, নমস্কার!
প্রদীপজি - স্যার, জয় হিন্দ!
প্রধানমন্ত্রীজি - জয় হিন্দ, জয় হিন্দ ভাই! কেমন আছেন আপনি?
প্রদীপজি - স্যার, খুব ভালো। আপনার কণ্ঠস্বর শুনে আরো ভালো লাগছে।
প্রধানমন্ত্রীজি - আপনি হিমালয়কে হিল (heal) করার কথা ভেবেছেন।
প্রদীপজি - হ্যাঁ, স্যার ।
প্রধানমন্ত্রীজি - এ বিষয়ে কর্মসূচিও চালিয়েছেন। আজকাল আপনার ক্যাম্পেন কেমন চলছে?
প্রদীপজি - স্যার, খুব ভালো চলছে। আগে যতটা কাজ আমরা পাঁচ বছরে করতাম, ২০২০ সাল থেকে সেটা মোটামুটি এক বছরে হয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীজি - আরে বাঃ!
প্রদীপজি - হ্যাঁ, স্যার। শুরুতে খুব নার্ভাস ছিলাম। খুব ভয় করত এ কথা ভেবে যে, জীবনভর এই কাজ করতে পারব কিনা। কিন্তু তারপর কিছুটা সাপোর্ট পেলাম। সত্যি কথা বলতে, ২০২০ পর্যন্ত আমরা খুব ওনেস্টলি স্ট্রাগল করেছি। খুব অল্প সংখ্যক মানুষ আমাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছিলেন। এমন অনেক মানুষ ছিলেন যারা সাপোর্ট করতে পারছিলেন না। আমাদের অভিযানের দিকে সেভাবে গুরুত্ব সহকারে মনোনিবেশও করছিলেন না। কিন্তু ২০২০ এর পরে, অর্থাৎ 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে আপনি উল্লেখ করার পর থেকে অনেক কিছু বদলে গেল। আগে আমরা বছরে ছয় - সাতটা, বড়জোর দশটা ক্লিনিং ড্রাইভ করতে পারতাম। আর আজকের তারিখে দাঁড়িয়ে আমরা ডেইলি বেসিসে পাঁচ টন জঞ্জাল একত্র করি। আলাদা আলাদা লোকেশনে।
প্রধানমন্ত্রীজি - আরে বাঃ!
প্রদীপজি - স্যার, আপনি আমার কথা বিশ্বাস করুন, আমি একটা সময় প্রায় হাল ছেড়ে দেওয়ার পর্যায়ে ছিলাম। কিন্তু 'মন কি বাত'-এ আপনি উল্লেখ করার পর থেকে আমার জীবনে অনেক কিছু বদলে গেল, আর বিষয়গুলো এত স্পিড আপ হয়ে গেল যা আমরা কখনো ভাবতেই পারিনি। সো আই অ্যাম রিয়েলি থ্যাঙ্কফুল। জানি না কী ভাবে আমাদের মত মানুষদের আপনি খুঁজে নেন। হিমালয়ের কোন সুদূর প্রত্যন্ত অঞ্চলে, এত অল্টিচুডে গিয়ে আমরা কাজ করছি। সেখান থেকেও আপনি আমাদের খুঁজে নিয়েছেন। আমাদের কাজকে সারা পৃথিবীর সামনে নিয়ে এসেছেন। তাই আমার কাছে সেদিনও খুব ইমোশনাল মোমেন্ট ছিল, আজও তাই। কারণ আমাদের দেশের যিনি প্রথম সেবক তাঁর সঙ্গে আমি কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি। আমার জন্য এর থেকে বড় সৌভাগ্যের কথা আর কিছু হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রীজি - প্রদীপ জি আপনি হিমালয়ের চূড়ায় প্রকৃত অর্থেই সাধনা করছেন আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে এখন আপনার নাম শুনলেই সকলের এটা মনে পড়বে যে আপনি কিভাবে পাহাড়ের স্বচ্ছতা অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন।
প্রদীপজি - হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি - আর যেমন আপনি বললেন যে এখন একটি বিরাট টিম তৈরি হতে চলেছে আর আপনি প্রতিদিন এত বড় মাপের কাজ করে চলেছেন।
প্রদীপজি - হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি - আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস যে এই প্রচেষ্টার ফলে, এই বিষয়ের আলোচনার ফলে অনেক পর্বতারোহী স্বচ্ছতা অভিযানের ফটো পোস্ট করছেন।
প্রদীপজি - হ্যাঁ স্যার। অনেকেই।
প্রধানমন্ত্রীজি - এটা ভালো বিষয় যে আপনাদের মত বন্ধুদের কারণে ওয়েস্ট ইজ অলসো অ্যা ওয়েলথ এই কথাটা মানুষের মনের মধ্যে গেঁথে যাচ্ছে। আর পরিবেশেরও সুরক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে, আর হিমালয় যা আমাদের অহংকার তার সুরক্ষা, সৌন্দর্য রক্ষা এবং সাধারণ মানুষরা এর সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। প্রদীপ জি খুব ভালো লাগছে আমার। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।
প্রদীপজি - ধন্যবাদ স্যার। অনেক ধন্যবাদ। জয় হিন্দ।
বন্ধুরা, আজ দেশে ট্যুরিজম খুব তাড়াতাড়ি গ্রো করছে। আমাদের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদী, পাহাড়, জলাশয় অথবা আমাদের তীর্থস্থান এই সব কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত জরুরী। এটা ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রিকে অনেক সাহায্য করবে। পর্যটনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া মুভমেন্টের কথাও অনেকবার বলেছি। এই মুভমেন্টে মানুষ প্রথমবার এমন অনেক স্থানের বিষয়ে জানতে পেরেছে যা হয়তো তাদের খুব কাছাকাছি ছিল। আমি সবসময়ই বলি যে আমাদের বিদেশে ট্যুরিজমের ব্যাপারে যাওয়ার আগে আমাদের দেশে কমপক্ষে ১৫টি টুরিস্ট ডেস্টিনেশনে যাওয়া উচিত এবং সেই ডেস্টিনেশন গুলো যে রাজ্যে আপনি থাকেন, অবশ্যই সেই রাজ্যের হওয়া উচিত নয়। অর্থাৎ আপনার রাজ্যের বাইরে অন্য রাজ্যে যাওয়া উচিত।
এইভাবে আমরা স্বচ্ছ সিয়াচিন, single use plastic এবং e-waste এর মত গুরুতর বিষয়েও ক্রমাগত বলেছি। আজ সারা বিশ্ব পরিবেশের যে issue নিয়ে বিশেষভাবে নাজেহাল, সেই সমস্যা সমাধানে 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানের এই প্রয়াস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বন্ধুরা, এবার আমি 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানটি নিয়ে ইউনেস্কোর ডিজি অড্রে আজুলের আরেকটি বিশেষ বার্তা পেয়েছি। তিনি শততম পর্বের এই অবিস্মরণীয় যাত্রার জন্য সমস্ত দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এছাড়াও, তিনি কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন। আসুন প্রথমে ইউনেস্কোর ডিজির মনের কথা শোনা যাক।
#অডিও UNESCO DG
ডিজি ইউনেস্কো: নমস্কার মহামান্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী; ‘মন কি বাত’ রেডিও সম্প্রচারের শততম পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। ইউনেস্কো এবং ভারতের একটি দীর্ঘ সাদুর্যপূর্ণ ইতিহাস রয়েছে। বিভিন্নক্ষেত্রে আমাদের যৌথভাবে খুবই শক্তিশালী অংশীদারিত্ব রয়েছে - শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, তথ্য এবং আমি আজ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলতে চাই। UNESCO, তার সদস্য রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে কাজ করছে যাতে 2030 সালের মধ্যে বিশ্বের প্রত্যেকে উচ্চমানের শিক্ষার সুযোগ পায়। বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হওয়ার সুবাদে, এই লক্ষ্য অর্জনের ভারতীয় পন্থা আপনি অনুগ্রহ করে বিশ্লেষণ করুন৷ UNESCO সংস্কৃতিকে সমর্থন এবং ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্যও কাজ করে এবং ভারত এই বছর G-20-এর সভাপতিত্ব করছে। এই অনুষ্ঠানে বিশ্ব নেতারা আসতে চলেছে দিল্লিতে। মহামান্য, ভারত কিভাবে সংস্কৃতি ও শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক এজেন্ডার শীর্ষে রাখতে চায়? আমি আবারও এই সুযোগের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই এবং ভারতের জনগণকে আপনার মাধ্যমে আমার অনেক শুভকামনা জানাই.... শীঘ্রই দেখা হবে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ.
প্রধানমন্ত্রী মোদি: আপনাকে ধন্যবাদ, মহামান্য। শততম 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরে আমি অভিভূত। আমি আরও খুশি যে আপনি শিক্ষা ও সংস্কৃতির মতন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।
বন্ধুরা, ইউনেস্কোর DG Education ও Cultural Preservation, অর্থাৎ শিক্ষা ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ ক্ষেত্রে ভারতের প্রচেষ্টার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। এ দুটি ‘মন কি বাত' অনুষ্ঠানের খুব পছন্দসই বিষয়।
শিক্ষা হোক বা সংস্কৃতি, তার সংরক্ষণ বা উন্নয়ন যে বিষয়েই কথা হোক না কেন, ভারতের এ এক প্রাচীন পরম্পরা। এই বিষয়ে আমাদের দেশে যা কাজ চলছে, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। National Education Policy হোক বা স্থানীয় ভাষায় পড়াশোনার বিকল্প ব্যবস্থা হোক বা Education-এ Technology Integration হোক, আপনি এরকম অনেক প্রচেষ্টার নিদর্শন অনেক দেখতে পাবেন। অনেক বছর আগে গুজরাটে উন্নততর শিক্ষা প্রদান ও ‘Dropout Rates’ কম করার লক্ষ্যে ‘গুণোৎসব ও শালা প্রবেশোৎসব’-এর মতো অনুষ্ঠানে জনগণের যোগদানের মাধ্যমে এক অনন্য উদাহরণ তৈরি হয়েছিল। ‘মন কি বাত'-এ আমরা এরকম কত জনের প্রচেষ্টাকে Highlight করি, যারা নিঃস্বার্থভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে কাজ করে চলেছেন। আপনাদের হয়তো মনে আছে, একবার আমরা উড়িষ্যায় ঠেলার উপর চা বিক্রেতা স্বর্গীয় ডি. প্রকাশ রাউজি সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম, যিনি গরিব বাচ্চাদের শিক্ষিত করে তোলার মিশনে কাজ করছিলেন। ঝাড়খণ্ডের গ্রামে Digital Library চালানো সঞ্জয় কাশ্যপ জি হোন, বা Covid-এর সময় E-learning-এর মাধ্যমে বাচ্চাদের সাহায্যকারী হেমলতা এন কে জি হোন, এমন অসংখ্য শিক্ষকদের উদাহরণ আমরা ‘মন কি বাত'-এ নিয়ে এসেছি। আমরা Cultural Preservation সম্পর্কিত প্রচেষ্টাকেও ‘মন কি বাত' অনুষ্ঠানে ক্রমাগত স্থান দিয়েছি।
লাক্ষাদ্বীপের Kummel Brothers Challengers Club হোক, বা কর্ণাটকের কোয়েমশ্রী জির ‘কলা চেতনার’ মতো মঞ্চ হোক, দেশের প্রতিটি কোন থেকে মানুষ এরকম বহু উদাহরণ আমায় চিঠি লিখে জানিয়েছেন। আমরা সেই তিন Competition- এর বিষয়েও কথা বলেছি যা দেশভক্তির উপর ‘গীত’, ‘লোরি’(ঘুমপাড়ানি গান) ও ‘রঙ্গলি’র সঙ্গে যুক্ত। আপনাদের মনে থাকবে একবার আমরা সমগ্র দেশে Story Tellers-এর দ্বারা Story Telling-এর মাধ্যমে শিক্ষায় ভারতীয় বিধান নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আমার অটুট বিশ্বাস এই সামগ্রিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বড় থেকে বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। এই বছর আমরা যখন আজাদীর অমৃতকালে এগিয়ে চলেছি, তখন G-20র সভাপতিত্বও করছি। এটাও আরেকটা কারণ যে Education-এর সঙ্গে Diverse Global Cultures কে সমৃদ্ধ করার জন্য আমাদের সংকল্প আরো মজবুত হয়েছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের উপনিষদের এক মন্ত্র শত শত বছর ধরে আমাদের প্রেরণা দিয়ে এসেছে।
চরৈবতি চরৈবতি চরৈবতি।
চলতে থাকো - চলতে থাকো - চলতে থাকো।
আজ আমরা এই এগিয়ে চলার চরৈবতি মন্ত্র নিয়েই "মন কী বাত"-এর শততম পর্বে এসে পৌঁছেছি। ‘মন কি বাত’ মালার সুতোর মত। যে কিনা ভারতের সামাজিক বিভিন্ন খন্ড খন্ড বিষয়কে দৃঢ়বন্ধ করে রেখেছে এবং যা সকলের মনকে এক এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে। প্রত্যেক পর্বেই দেশবাসী তাদের সেবা ও সামর্থ্য দিয়ে অন্যকে প্রেরণা যুগিয়েছেন। এই অনুষ্ঠানে প্রত্যেক দেশবাসী ওপর দেশবাসীর প্রেরণা উৎস হয়ে উঠেছেন। সেভাবে দেখতে গেলে, ‘মন কি বাত’-এর প্রতি পর্ব তার পরবর্তী পর্বের জমি তৈরি করে রাখে। মন কি বাত সর্বদাই সদিচ্ছা, সেবা ও কর্তব্যকে সঙ্গী করেই এগিয়ে চলেছে। স্বাধীনতার অমৃতকালে এই পসিটিভিটিই দেশকে সামনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে, নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে, এবং আমার আনন্দ হচ্ছে ভেবে, যে, মন কি বাতের হাত ধরে যে নতুন এক দিগন্তের শুরু হল, তা দেশের এক নতুন পরম্পরাও তৈরি করতে চলেছে। এ এমন এক পরম্পরা, যার মধ্যে সবার সবরকম প্রয়াস একত্রে প্রতিভাত হয়।
বন্ধুগণ, আজ আমি আকাশবাণীর বন্ধুদেরও ধন্যবাদ দিতে চাই, যাঁরা প্রভূত ধৈর্যের সঙ্গে এই সম্পূর্ন অনুষ্ঠানটি রেকর্ড করেন। সেসকল অনুবাদকেরা, যাঁরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে, অতি দ্রুত ভারতের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করেন, আমি তাঁদের প্রতিও কৃতজ্ঞ। আমি দূরদর্শন এবং My Gov এর বন্ধুদেরও ধন্যবাদ দিতে চাই। সারা দেশের টিভি চ্যানেল এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মানুষেরা, যাঁরা মন কি বাতের এই সম্প্রচার কোনরকম বিজ্ঞাপন বিরতি ছাড়াই প্রচার করে থাকেন, তাঁদের সকলের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা রইল। এবং সবশেষে, ভারতবাসী এবং ভারতের ওপর আস্থা রেখেছেন এমন সকল মানুষ, যাঁরা ‘মন কী বাত’-এর রাশ ধরে রেখেছেন, আমি তাঁদের প্রতিও জানাই আমার কৃতজ্ঞতা। এই সবকিছু, আপনাদের প্রেরণা এবং আপনাদের ক্ষমতার জন্যেই সম্ভবপর হলো।
বন্ধুরা, বস্তুতই আজ এতো কিছু আমার বলতে ইচ্ছে করছে, যে তার জন্যে সময় এবং শব্দ দুইই কম মনে হচ্ছে। কিন্তু, আমার বিশ্বাস আছে যে, আপনারা নিশ্চয়ই আমার মনের সেই ভাব, সেই সকল ভাবনার কথা বুঝতে পারছেন। মন কি বাতের মাধ্যমে আপনাদের পরিবারের একজন সদস্য হয়ে আপনাদের মাঝে থেকেছি। আপনাদের মাঝেই থাকবো আগামীতেও। সামনের মাসে আমরা আবার একবার মিলিত হবো। আবারও কিছু নতুন বিষয়, কিছু নতুন তথ্যের সঙ্গে দেশবাসীর সাফল্যের উদ্যাপন করবো। ততক্ষণের জন্যে আমায় বিদায় জানাবেন এবং নিজের ও আপনার জনদের খুবই খেয়াল রাখবেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাতে আবার এক বার আপনাদের অনেক-অনেক স্বাগত জানাই। আজ এই চর্চা শুরু করতে গিয়ে মন-মস্তিষ্কের মধ্যে কতই না ভাব উঠে আসছে। আমার এবং আপনাদের মন কি বাতের এই জুটি, নিরানব্বইতম পর্বে এসে পৌঁছেছে। সাধারণভাবে আমরা শুনে থাকি যে নিরানব্বইয়ের বাধা খুব কঠিন হয়। ক্রিকেটে তো নার্ভাস নাইনটিজ-কে খুব কঠিন একটা পর্যায় ধরা হয়। কিন্তু যেখানে ভারতের প্রতিটি মানুষের ‘মন কি বাত’ রয়েছে সেখানকার প্রেরণা থেকে অন্যতর কিছু হয়। আমি এটা নিয়েও খুশি যে মন কি বাতের শততম পর্ব নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে প্রচুর উৎসাহ রয়েছে। আমি অনেক বার্তা পাচ্ছি, ফোন আসছে। আজ যখন আমরা আজাদি কা অমৃতকাল উদযাপন করছি, নতুন সঙ্কল্প নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি, তখন শততম মন কি বাত নিয়ে আপনাদের পরামর্শ আর সিদ্ধান্ত জানার জন্য আমিও খুব উৎসুক হয়ে আছি। এরকম পরামর্শের জন্য অধীর অপেক্ষা রয়েছে আমার। এমনিতে তো অপেক্ষা প্রতি বারই থাকে তবে এবার সেটা একটু বেশি। আপনাদের এই পরামর্শ আর সিদ্ধান্তই তিরিশে এপ্রিল সম্প্রচার হতে চলা শততম মন কি বাতকে আরও স্মরণীয় করে তুলবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাতে আমরা এমন হাজার-হাজার মানুষের কথা বলেছি যাঁরা অন্যের সেবায় নিজেদের জীবন সমর্পণ করেন। কিছু মানুষ এমন থাকেন যাঁরা নিজের কন্যার শিক্ষার জন্য পুরো পেনশন খরচ করে ফেলেন, কেউ কেউ পরিবেশ আর জীবসেবার জন্য নিজের গোটা জীবনের আয় সমর্পণ করে দেন। আমাদের দেশে পরমার্থকে এত উপরে স্থান দেওয়া হয়েছে যে অন্যের সুখের জন্য মানুষ নিজের সর্বস্ব দান করে দিতেও সঙ্কোচ করে না। এই জন্য তো শৈশব থেকেই আমাদের শিবি আর দধীচির মতো দেহ দানকারীদের কাহিনী শোনানো হয়।
বন্ধুরা, আধুনিক মেডিকেল সায়েন্সের এই পর্যায়ে অর্গান ডোনেশন যে কোনো মানুষকে জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার অত্যন্ত বড় একটা মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বলা হয়, যখন একজন মানুষ মৃত্যুর পরে নিজের শরীর দান করে, তখন সেটা থেকে আট থেকে ন’জন মানুষের নতুন জীবন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তৃপ্তির কথা যে আজ দেশে অর্গান ডোনেশনের ব্যাপারে সচেতনতা বেড়েছে। ২০১৩ সালে আমাদের দেশে অর্গান ডোনেশনের ঘটনা পাঁচ হাজারেরও কম ছিল, কিন্তু ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে পনেরো হাজারেরও বেশি হয়ে গিয়েছে। অর্গান ডোনেশন করা ব্যক্তি, তাঁদের পরিবার সত্যিই বড় পুণ্যের কাজ করেছেন।
বন্ধুরা, বহুদিন ধরে আমার ইচ্ছে ছিল যে আমি এমনই পুণ্যবান মানুষদের 'মন কী বাত' জানব এবং দেশবাসীর সঙ্গে তা ভাগ করে নেব। তাই আজ 'মন কি বাত'-এ আমাদের সঙ্গে একজন মিষ্টি মেয়ে, সুন্দর মেয়ের বাবা এবং তার মা যুক্ত হতে চলেছেন। বাবার নাম সুখবীর সিং সন্ধু জী আর মায়ের নাম সুপ্রীত কৌর জী, তাঁরা থাকেন পাঞ্জাবের অমৃতসরে। অনেক প্রার্থনা করে তাঁদের একটি খুব সুন্দর কন্যা সন্তান হয়েছিল। পরিবারের সবাই খুব আদর করে তার নাম রেখেছিল অবাবত কৌর। অবাবতের অর্থ অন্যদের যে সেবাকার্য করে, অন্যদের কষ্ট দূর করে। অবাবতের বয়স যখন মাত্র ৩৯ দিন, তখন সে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু সুখবীর সিং সন্ধুজী, তাঁর স্ত্রী সুপ্রীত কৌরজী এবং তাঁদের পরিবার একটি অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা ঠিক করেন যে ৩৯ দিন বয়সী তাঁদের কন্যাসন্তানের অঙ্গদান করবেন, Organ Donation করবেন। আমাদের সঙ্গে ফোন লাইনে সুখবীর সিং সন্ধুজী এবং তাঁর শ্রীমতি উপস্থিত আছেন। আসুন, ওঁদের সঙ্গে কথা বলি।
প্রধানমন্ত্রী জী - সুখবীর জী নমস্কার।
সুখবীর জী - নমস্কার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী। সৎ শ্রী অকাল।
প্রধানমন্ত্রী জী - সৎ শ্রী অকালজী, সৎ শ্রী অকালজী। সুখবীর জী, আজ আমি 'মন কি বাত ' সম্বন্ধে ভাবছিলাম তো আমার মনে হলো যে অবাবতের কাহিনী এতটাই প্রেরণা দেয় যে সেটা আপনার মুখ থেকেই শুনি, কারণ পরিবারে যখন কন্যাসন্তানের জন্ম হয়, তখন তা অনেক স্বপ্ন, অনেক আনন্দ নিয়ে আসে, কিন্তু মেয়ে যখন এত কম বয়সে ছেড়ে চলে যায় সেই কষ্ট কতটা ভয়ংকর, তা আমি কল্পনা করতে পারি। কীভাবে আপনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন; সেই সবটাই আমি জানতে চাই।
সুখবীর জী - স্যার ভগবান আমাদের একটি ফুটফুটে সন্তান দিয়েছিলেন, আমাদের বাড়িতে একটি খুব সুন্দর পুতুল এসেছিল। তার জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই আমরা জানতে পারি যে তার মস্তিষ্কে স্নায়ুর এক এমন গঠন রয়েছে, যার কারণে তার হৃৎপিণ্ডের আকার বড় হচ্ছে। আমরা আশ্চর্য হয়েছিলাম যে শিশুটির স্বাস্থ্য এত ভাল, এত সুন্দর একটি শিশু কিন্তু সে এত বড় সমস্যার সঙ্গে জন্ম নিয়েছে। তারপর প্রথম ২৪ দিন সে খুব ভাল ছিল, শিশুটি একেবারে স্বাভাবিক ছিল। হঠাৎ তার হৃদপিন্ড পুরোপুরি কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন আমরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ডাক্তাররা তাকে revive করলেও, সময় লেগে যায় এটা বুঝতে যে তার কী এমন বড় সমস্যা আছে যে একটি ছোট শিশুর হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হয়। তাই তাকে চিকিৎসার জন্য পিজিআই চণ্ডীগড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিশুটি বীরত্বের সঙ্গে আরোগ্যের জন্য লড়াই করে। কিন্তু অসুখটা এমন যে তার চিকিৎসা এত অল্প বয়সে সম্ভব নয়। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেন তাকে রিভাইভ করতে। যদি বাচ্চা ছয় মাস বয়সের কাছাকাছি যায় তাহলে অপারেশন করার কথা ভাবা যেতে পারে। কিন্তু ভগবানের অন্য ইচ্ছে ছিল। মাত্র ৩৯ দিনেই সে আবার হার্ট আট্যাকের শিকার হয় এবং এবার ডাক্তারেরা জানান তার বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। আমরা স্বামী-স্ত্রী শোক সন্তপ্ত অবস্থায় ভেবে দেখলাম, এই শিশু বারবার অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে আবার ফিরে আসছে, মানে এর জন্ম নেওয়ার নিশ্চয়ই কোনো মহৎ উদ্দেশ্য আছে। এর পর ডাক্তারেরা যখন একেবারেই জবাব দিয়ে দেয়, তখন আমরা ওর organ donate করার সিদ্ধান্ত নিই। অন্য কারো জীবন উদ্ধার হোক। আমরা তারপর PGI.এর administrative বিভাগে যোগাযোগ করি। তারা আমাদের জানায় এত ছোটো বাচ্চার কেবল কিডনি নেওয়া সম্ভব। পরমাত্মার কাছে শক্তি প্রার্থনা করে, গুরু নানকজী কে স্মরণ করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই।
প্রধানমন্ত্রীজি - আমাদের গুরুরা যে শিক্ষা দেন, আপনারা তা পালন করে দেখালেন। সুপ্রিতজি আছেন কি? ওনার সঙ্গে কথা বলা যাবে?
সুপ্রিতজি – হ্যালো।
প্রধানমন্ত্রী জি- সুপ্রিতজি; আমি আপনাকে প্রণাম জানাই।
সুপ্রিতজি - নমস্কার স্যার, নমস্কার। আমাদের কাছে এ পরম গর্বের বিষয় যে আপনি আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
প্রধানমন্ত্রী জি - আপনারা এত বড় একটা কাজ করেছেন, আমার বিশ্বাস দেশের মানুষ যখন একথা জানতে পারবে তখন কারো জীবন বাঁচানোর জন্য আরো অনেকে এগিয়ে আসবেন। অবাবত এর এই অব্দান অনেক বড়।
সুপ্রিতজি - স্যার, এটাও হয়তো গুরু নানক জির আশীর্বাদ ছিল, উনিই এই সিদ্ধান্ত নেবার শক্তি দেন।
প্রধানমন্ত্রী জি - গুরুর কৃপা ছাড়া তো কিছুই সম্ভব নয়।
সুপ্রিতজি - একদম স্যার, একদম।
প্রধানমন্ত্রী জি - সুখবীরজি, আপনি যখন হাসপাতালে ছিলেন এবং ডাক্তার যখন আপনাকে এই মর্মান্তিক খবর দিয়েছিলেন, তার পরেও আপনি এবং আপনার স্ত্রী সুস্থ মন নিয়ে এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা গুরুদেরই শিক্ষা যে আপনারা এত উদার মনের অধিকারী এবং সত্যি কথা বলতে কী, অবাবত শব্দের অর্থ সহজ ভাষায় হল উপকারী ব্যক্তি। আমি সেই মুহূর্তের কথা শুনতে চাই যখন আপনারা এই কাজটা করলেন।
সুখবীরজি - স্যার, আসলে আমাদের এক পারিবারিক বন্ধু আছেন, প্রিয়াজি, তিনি তাঁর অঙ্গ দান করেছিলেন। আমরা তাঁর কাছ থেকেও অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তাই সেই সময় আমরা অনুভব করেছি যে আমাদের এই দেহ পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যাবে। কেউ যখন আমাদের কাছ থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নেয়, বা চলে যায়, তখন তার দেহকে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বা কবর দেওয়া হয়। কিন্তু তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যদি অন্য কারো কাজে লাগে, তাহলে তো তা মহৎ কাজ। এবং সেই সময় আমরা আরও গর্ব বোধ করি যখন ডাক্তারবাবুরা আমাদের বলেছিলেন যে আপনার মেয়ে ভারতের সর্বকনিষ্ঠ অর্গান ডোনার, যার অঙ্গ সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তখন আমরা গর্বিত হই এই ভেবে যে আমরা এত বয়স পর্যন্ত আমাদের বাবা-মায়ের নাম উজ্জ্বল করতে পারিনি। সেখানে একটি ছোট্ট শিশু এসে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে এবং এছাড়াও বড়ো কথা হল, আজ আমি আপনার সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলছি। আমরা গর্ববোধ করছি।
প্রধানমন্ত্রী জি - সুখবীরজি, আজ আপনার মেয়ের একটা অঙ্গই বেঁচে আছে, তা নয়। আপনার মেয়ে হয়ে উঠেছে মানবতার অমর গাথার অমর পথিক। শরীরের একটি অঙ্গের মাধ্যমে সে আজও বর্তমান। এই মহৎ কাজের জন্য আমি আপনার, আপনার স্ত্রী এবং আপনার পরিবারের প্রশংসা করি।
সুখবীরজি - আপনাকে ধন্যবাদ স্যার।
বন্ধুরা, অঙ্গদানের জন্য সবচেয়ে বড়ো যে আবেগ কাজ করে তা হল, চলে যেতে যেতে শেষ সময়ে কারো উপকার করা, কারো জীবন রক্ষা করা। যাঁরা দান করা অঙ্গ পাবার জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁরা জানেন অপেক্ষার প্রতিটি মুহূর্ত পার করা কতটা কঠিন। আর এমন পরিস্থিতিতে যখন কোনো অঙ্গদাতা বা দেহদানকারী পাওয়া যায়, তখন তাঁর মধ্যে ঈশ্বরেরই রূপ দেখা যায়। ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা স্নেহলতা চৌধুরীও এমনই ছিলেন, যিনি ঈশ্বর হয়ে অন্যদের জীবন দিয়েছেন। ৬৩ বছরের স্নেহলতা চৌধুরী নিজের তাঁর হার্ট, কিডনি ও লিভার দান করেগিয়েছেন। আজ ‘মন কি বাতে’, তাঁর ছেলে অভিজিৎ চৌধুরী আমাদের সঙ্গে আছেন। আসুন তাঁর কথা শুনি।
প্রধানমন্ত্রী জি - অভিজিৎজি নমস্কার।
অভিজিৎ জি - প্রণাম স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জি - অভিজিৎ জি, আপনি এমন এক মায়ের সন্তান তিনি আপনাকে তো জন্ম দিয়েছেনই, এমনকি নিজের মৃত্যুর পরেও অনেকের জীবন বাঁচিয়েছেন। একজন ছেলে হিসেবে আপনার তো নিশ্চয়ই ভীষণ গর্ববোধ হচ্ছে।
অভিজিৎ জি - অবশ্যই স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জি - আপনি আপনার মায়ের বিষয়ে কিছু বলুন, ঠিক কি পরিস্থিতিতে Organ donation-এর সিদ্ধান্ত নিলেন?
অভিজিৎ জি - ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা নামের এক ছোট্ট গ্রামে আমার বাবা-মা থাকতেন। বিগত ২৫ বছর ধরে তারা নিয়মিত morning walk করতেন ও নিজেদের habit অনুসারে সকাল চারটে morning walk-এর জন্য বেরিয়ে পড়তেন। একদিন এক motor cycle-ওয়ালা হঠাৎ পেছনে ধাক্কা মারায় মা পড়ে যান ও মাথায় অনেক বেশি চোট পান। তৎক্ষণাৎ আমরা তাঁকে সরাইকেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই যেখানে ডাক্তারবাবু মায়ের চিকিৎসা করেন কিন্তু তবুও প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। আর মায়ের কোন sense ছিল না। সঙ্গে সঙ্গে আমরা মাকে Tata main hospital-এ নিয়ে চলে আসি। সেখানেই তার সার্জারি হয়, 48 ঘন্টা observation-এর পর ডাক্তারবাবুরা জানালেন, এখানে বাঁচার সম্ভবনা খুবই কম। আবার আমরা তাঁকে airlift করে AIIMS Delhi-তে নিয়ে যাই। ওখানে তাঁর treatment চলে প্রায় সাত-আট দিন ধরে। এরপর মায়ের position ভালো ছিল, হঠাৎই তাঁর blood pressure ভীষণ কমে যায় ও পরে জানা যায় তাঁর brain death হয়েছে। এরপর ডাক্তারবাবুরা আমাদের প্রোটোকল সমেত brief করলেন organ donation সম্পর্কে। আমরা আমাদের বাবাকে হয়তো কখনো বোঝাতে পারতাম না organ donation type-এর মতো কোন জিনিস হয়, কারণ আমাদের মনে হয়েছিল উনি হয়তো এই বিষয়টা ঠিক মেনে নিতে পারবেন না, তাই এই বিষয়ে আলাপ আলোচনা সম্পর্কে বাবাকে প্রথমে জানাইনি। যখনই বাবাকে বললাম যে মায়ের organ donation-এর বিষয়ে কথা হচ্ছে তখন উনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন যে তোমাদের মায়ের ভীষণ ইচ্ছে ছিল এই কাজ করার, তাই আমাদের এটা করতেই হবে। আমরা অনেক নিরাশ ছিলাম সেই সময় পর্যন্ত যখন আমরা জানতে পেরেছিলাম যে মা আর বাঁচবেন না, কিন্তু যখন এই অর্গান ডোনেশন সম্বন্ধীয় ডিসকাশন শুরু হলো তখন সেই নিরাশা একটি অত্যন্ত পজিটিভ দিকে চলে গেল আর আমরা এক অত্যন্ত পজিটিভ পরিবেশে অবতীর্ণ হলাম। এটা করতে করতে রাত আটটার সময় আমাদের কাউন্সিলিং হল। পরের দিন আমরা অর্গান ডোনেশন করলাম। এই ব্যাপারে মায়ের একটা বড় ভাবনা ছিল যে প্রথমে, উনি চক্ষুদান ও এইরকম সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটিসে অনেক বেশি অ্যাক্টিভ ছিলেন। হয়তো এই ভাবনার জন্যই আমরা এত বড় একটা কাজ করতে পেরেছি আর আমার বাবার যে ডিসিশন মেকিং ছিল এই সম্বন্ধে, সেই কারণেও এই ব্যাপারটা সম্ভব হল।
প্রধানমন্ত্রী জি: এই অঙ্গ কতজনের কাজে লাগলো?
অভিজিৎ জি: ওনার হার্ট দুটো কিডনি লিভার আর দুটো চোখ দান করা হয়েছিল, তাই চারজন জীবন পেয়েছিলেন এবং দু’জন চোখ পেয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী জি: অভিজিৎ জি আপনার বাবা ও মা দুজনেই প্রনম্য। আমি ওদের প্রণাম জানাই আর আপনার বাবা যিনি এত বড় সিদ্ধান্তে আপনার পরিবারকে নেতৃত্ব দিয়েছেন যা সত্যি অনেক প্রেরণাদায়ক। আর আমি মানি যে মা তো মাই হন। মা নিজেই এক প্রেরণার উৎস হন। কিন্তু মা যে পরম্পরা রেখে যান তা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের শক্তির উৎস হয়ে ওঠে। অঙ্গদানের জন্য আপনার মায়ের এই প্রেরণা আজ সমগ্র দেশের কাছে পৌঁছাচ্ছে। আমি আপনাদের এই পবিত্র এবং মহান কাজের জন্য আপনার পুরো পরিবারকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। অভিজিৎ জি ধন্যবাদ আর আপনার বাবাকে আমাদের প্রণাম অবশ্যই জানাবেন।
অভিজিৎ জি: নিশ্চয়ই, ধন্যবাদ।
বন্ধুরা, ৩৯ দিনের অবাবত কৌর হোক বা ৬৩ বছরের স্নেহলতা চৌধুরী, এঁদের মতো দাতা আমাদের জীবনের মহত্ত্ব উপলব্ধি করিয়ে দিয়ে যান। আমাদের দেশে আজ বহু সংখ্যক এরকম অভাবগ্রস্ত মানুষ আছেন যাঁরা সুস্থ জীবনের আশায় কোনো অংদানকারী মানুষের অপেক্ষায় আছেন। আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে অঙ্গদানকে সহজ বানানোর জন্য এবং এই ব্যাপারে উৎসাহ দানের জন্য পুরো দেশে একই রকম পলিসির উপর কাজ করা হচ্ছে। সেই উপলক্ষে রাজ্যগুলোর domicile বিষয়ক শর্ত তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, অর্থাৎ চিকিৎসাধীন মানুষ এখন থেকে দেশের যেকোনো রাজ্যে গিয়ে organ পাওয়ার জন্যে নাম register করতে পারবেন। Organ donation-এর জন্য ৬৫ বছরের কম যে বয়সসীমা ছিল সরকার সেটাকেও তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যোগ সত্ত্বেও আমার দেশবাসীর কাছে অনুরোধ- আরো বেশি করে যেন organ donor'রা এগিয়ে আসেন। আপনার একটা সিদ্ধান্ত বহু মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে এবং জীবন গড়ে দিতে পারে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন নবরাত্রির সময়, শক্তির উপাসনার সময়। আজ ভারতের যে সামর্থ্য নতুন করে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে তাতে আমাদের দেশের নারীশক্তির একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। সম্প্রতি এমন অনেক উদাহরণ আমাদের সামনে উঠে এসেছে। এশিয়ার প্রথম মহিলা লোকো পাইলট সুরেখা যাদব'কে আপনারা social media-তে নিশ্চয়ই দেখেছেন। আরো একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করে সুরেখাজী 'বন্দে ভারত express-এর'ও প্রথম মহিলা লোকো পাইলট হওয়ার নজির গড়েছেন। এ মাসেই producer গুনীত মোংগা এবং director কার্তিকী গঞ্জালভেস, তাঁদের Documentary 'Elephant whisperers' এর Oscar বিজয়ের মাধ্যমে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। দেশের জন্য আরও বড় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন Bhabha Atomic Research Centre-এর Scientist জ্যোতির্ময়ী মোহন্তী জী। জ্যোতির্ময়ী জী, Chemistry এবং Chemical engineering-এর field এ IUPAC'র বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন। এই বছরের শুরুতেই ভারতের under-19 মহিলা ক্রিকেট টিম T-20 ওয়ার্ল্ড কাপ জিতে নতুন ইতিহাস গড়েছেন। আপনারা যদি রাজনীতির দিকে দৃষ্টিপাত করেন, তাহলে নাগাল্যান্ডে একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা লক্ষ্য করবেন। নাগাল্যান্ডে ৭৫ বছরে প্রথমবার দুজন মহিলা বিধায়ক ভোটে জিতে বিধানসভায় স্থান করে নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনকে নাগাল্যান্ড সরকার মন্ত্রিত্ব'ও দিয়েছে, অর্থাৎ সেই রাজ্যের রাজ্যবাসী প্রথমবার কোনো মহিলাকে মন্ত্রীরূপে পেলেন।
বন্ধুরা, কিছুদিন আগে আমি সেই সকল নির্ভীক মেয়েদের সঙ্গেও দেখা করি টার্কিতে হওয়া বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর যাঁরা সেখানকার মানুষদের সাহায্য করতে সে দেশে গিয়েছিলেন। এঁরা সবাই NDRF-এর দলে ছিলেন। এঁদের সাহস ও কর্মদক্ষতার প্রশংসা হচ্ছে সারা বিশ্বে। ভারতবর্ষ UN mission-এর অন্তর্ভুক্ত শান্তিসেনাতে women-only platoonও নিযুক্ত করেছে। আজ মহিলারা দেশের সৈন্যদলের তিনটি বিভাগেই নিজেদের শৌর্যের পতাকা গর্বের সঙ্গে মেলে ধরছেন। Group Captain শলিজা ধামী বায়ুসেনার combat unit-এর command appointment পাওয়া প্রথম মহিলা আধিকারিক। তাঁর প্রায় ৩ হাজার ঘন্টার flying experience রয়েছে। একই ভাবে, ভারতীয় সেনার সাহসিনী ক্যাপ্টেন শিবা চৌহান সিয়াচেনে কাজ করা প্রথম মহিলা আধিকারিক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। সিয়াচেনে, যেখানে পারদ -৬০ ডিগ্রী অব্দি নেমে যায়, সেখানে তিনি তিন মাস নিযুক্ত থাকবেন।
বন্ধুরা, এই তালিকা এতটাই লম্বা যে এখানে সবার কথা বলা মুশকিল। এভাবেই সব মেয়ে, আমাদের মেয়েরা, ভারত ও ভারতের স্বপ্নগুলিকে শক্তি জোগাচ্ছে। নারীশক্তির এই ক্ষমতাই উন্নত ভারতের প্রাণবায়ু। আমার প্রিয় দেশবাসী, আজকাল পুনর্ণবীকরণ শক্তি বা renewable energyর খুব চর্চা হচ্ছে সারা বিশ্বে। আমি যখন পৃথিবীর অন্য প্রান্তের মানুষদের সঙ্গে দেখা করি তখন এই ক্ষেত্রে ভারতের অভূতপূর্ব সাফল্য নিয়ে তাঁরা কথা বলবেনই। বিশেষ করে solar energy ক্ষেত্রে যে গতিতে ভারত এগোচ্ছে তা স্বতন্ত্র রুপে একটা বিশাল সাফল্য।
ভারতীয়রা বহু যুগ আগে থেকেই সূর্যের সঙ্গে একটি বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। আমাদের দেশে সূর্যের শক্তি নিয়ে যে ধরণের বৈজ্ঞানিক বিশ্বাস রয়েছে, সূর্যের উপাসনা করা নিয়ে যে রকম আচার-ব্যবহার রয়েছে, তা অন্য কোথাও খুব কমই দেখা যায়। আমি ভীষণ খুশি যে আজকাল প্রতিটি দেশবাসী সৌর শক্তির মাহাত্ম্য বুঝছেন এবং clean energy-র ক্ষেত্রে অংশগ্রহণও করতে চাইছেন। ‘সবার চেষ্টায় এই spirit আজ ভারতের solar mission-কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মহারাষ্ট্রের পুনেতে এরকমই একটি অসাধারণ প্রচেষ্টা আমার মনযোগ আকর্ষণ করেছে। তার দিকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। ওখানকার MSR-Olive Housing Society সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে নিজেদের সোসাইটিতে পানীয় জল, লিফট ও লাইটের মতন সাধারণ পরিষেবা এখন সোলার এনার্জি দিয়ে চলবে। এরপর এই সোসাইটিতে সবাই মিলে অনেকগুলি সোলার প্যানেল লাগান। আর আজ এই সোলার প্যানেলগুলি থেকে বছরে প্রায় ৯০ হাজার কিলোওয়াট hour বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। এর ফলে মাসে প্রায় ৪০,০০০ টাকার সাশ্রয় হচ্ছে। এই সঞ্চয়ের লাভ সোসাইটির সমস্ত মানুষ পাচ্ছেন।
বন্ধুরা, ঠিক পুনের মতনই Daman - Diu এর মধ্যে Diu বলে জায়গাটি একটি আলাদা জেলা। এবং এখানকার মানুষেরা একটি আশ্চর্যজনক কাজ করে দেখিয়েছেন। আপনারা জানেন যে Diu সোমনাথ এর কাছে। এটি ভারতবর্ষের প্রথম এমন জেলা হয়ে উঠেছে, যেটি দিনের বেলায় তার সমস্ত প্রয়োজনের জন্য একশো শতাংশ clean energy ব্যবহার করছে।
দিউ-এর এই সফলতার মন্ত্র হল সকলের আন্তরিক প্রয়াস। এক সময় এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সম্পদের অভাব ছিল। স্থানীয় মানুষেরা এই সমস্যার সমাধানের জন্য সোলার এনার্জিকে মনোনীত করে নিয়েছে। এখানে অনুর্বর জমি ও কিছু বিল্ডিং-এ সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। এই প্যানেলগুলি থেকে দিউয়ে, দিনের বেলায়, যতটা বিদ্যুতের প্রয়োজন তার থেকেও বেশি বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে। এই সোলার প্রজেক্ট এর মাধ্যমে, বিদ্যুৎ কেনার জন্য, প্রায় ৫২ কোটি টাকার খরচ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। এই কারণে পরিবেশেরও ব্যাপক সুরক্ষা হয়েছে। বন্ধুরা, পুনে ও Diu যা সফল করে দেখিয়েছে, সারাদেশে আরও অনেক জায়গায় এমন ধরনেরই প্রচেষ্টা চলছে। এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে আমরা ভারতীয়রা পরিবেশ এবং প্রকৃতি সম্পর্কে কতটা সংবেদনশীল এবং আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কতটা সতর্ক। আমি এই ধরনের সমস্ত প্রচেষ্টাকে আন্তরিকভাবে প্রশংসা করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশে, সময়ের সঙ্গে, পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী, অনেক ঐতিহ্য গড়ে ওঠে। এই ঐতিহ্যগুলি আমাদের সংস্কৃতির সম্প্রীতি বৃদ্ধি করে এবং এটিকে একটি নতুন মর্যাদা দেয়। কয়েক মাস আগে কাশীতে এমনই এক প্রথা শুরু হয়েছিল। কাশী-তামিল সঙ্গমমের সময়, কাশী এবং তামিল অঞ্চলের মধ্যে, শত বছরের চেয়ে প্রাচীন, ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক উদযাপিত হয়েছিল। 'এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত'-এর চেতনা আমাদের দেশকে শক্তি যোগায় । যখন আমরা একে অপরের সম্পর্কে জানি এবং শিখি, তখন এই একত্বের অনুভূতি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে!
ইউনিটির এমন স্পিরিট এর সঙ্গেই আগামী মাসে গুজরাটের বিভিন্ন অংশে "সৌরাষ্ট্র তামিল সঙ্গমম" আয়োজিত হতে চলেছে। "সৌরাষ্ট্র তামিল সঙ্গমম" ১৭ থেকে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। মন কি বাতের কিছু শ্রোতা নিশ্চয়ই ভাবছেন গুজরাটের সৌরাষ্ট্রের তামিলনাড়ুর সঙ্গে কী সম্বন্ধ? আসলে অনেক যুগ আগে সৌরাষ্ট্রের বহু মানুষ তামিলনাড়ুর আলাদা আলাদা অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁরা আজও সৌরাষ্ট্রী তামিল নামে পরিচিত। তাদের খাওয়া দাওয়া, রীতিনীতি, সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে আজও সৌরাষ্ট্রের কিছু কিছু ঝলক পাওয়া যায়। এই অনুষ্ঠানের বিষয়ে তামিলনাড়ুর বহু মানুষ আমাকে প্রশংসাসূচক চিঠি পাঠিয়েছেন। মাদুরাইয়ের বাসিন্দা, জয়চন্দ্রনজী একটি অত্যন্ত সুচিন্তিত কথা লিখেছেন। তিনি বলেছেন, হাজার বছরের পর প্রথমবার কেউ সৌরাষ্ট্র-তামিলের এই সম্পর্কের বিষয়ে ভেবেছেন। সৌরাষ্ট্র থেকে তামিলনাড়ুতে আগত ও বসবাসরত মানুষদের কথা জানতে চেয়েছেন। জয়চন্দ্রনজীর কথা হাজার হাজার তামিল ভাইবোনের মনের কথা।
বন্ধুরা, মন কি বাত এর শ্রোতাদের আমি অসমের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি খবর জানতে চাই। এটিও "এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত"-এর ভাবনাকে শক্তিশালী করে। আপনারা সবাই জানেন আমরা বীর লাসিত বরফুকনজির ৪০০তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন করছি। বীর লাসিত বরফুকন অত্যাচারী মুঘল সাম্রাজ্যের কবল থেকে গুয়াহাটিকে মুক্ত করেছিলেন। আজ দেশ এই মহান যোদ্ধার অদম্য সাহসের কথা জানছে। কিছুদিন আগে লাসিত বরফুকন-এর জীবনের ওপর আধারিত নিবন্ধ লেখার একটি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন যে তার জন্য প্রায় ৪৫ লক্ষ মানুষ নিবন্ধ পাঠিয়েছিলেন। আপনারা এ কথা জেনেও অত্যন্ত আনন্দিত হবেন যে এটি এখন একটি গিনেস রেকর্ডে পরিণত হয়েছে। আর সব থেকে বড় কথা এবং সবচেয়ে খুশির কথা, বীর লাসিত বরফুকন এর ওপর প্রায় ২৩টি পৃথক পৃথক ভাষায় আপনারা নিবন্ধ লিখে পাঠিয়েছেন। তার মধ্যে অসমীয়া ভাষা ছাড়াও হিন্দি, ইংরেজি, বাংলা, বোড়ো, নেপালি, সংস্কৃত, সাঁওতালির মতো ভাষায় মানুষ তাঁদের লেখা পাঠিয়েছেন। আমি এই প্রয়াসের অংশীদার সকলকে আন্তরিক প্রশংসা জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যখন কাশ্মীর বা শ্রীনগরের কথা হয়, তখন সবার প্রথমে আমাদের সামনে এর উপত্যকা এবং ডাল লেকের ছবি ফুটে ওঠে। আমরা সবাই ডাল লেকের অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে চাই। কিন্তু ডাল লেকের আরও একটি বিশেষ ব্যাপার রয়েছে। এই লেক তার অত্যন্ত স্বাদু লোটাস স্টেম অর্থাৎ পদ্মফুলের ডাঁটির জন্য প্রসিদ্ধ। পদ্মের ডাটি দেশের আলাদা আলাদা জায়গায় আলাদা আলাদা নামে পরিচিত। কাশ্মীরে একে নাদরু বলে। কাশ্মীরের নাদরুর চাহিদা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এই চাহিদা দেখে ডাল লেকে নাদরু ফলনকারী কৃষকরা একটি FPO তৈরি করেছেন। এই FPO তে প্রায় ২৫০ জন কৃষক শামিল হয়েছেন। আজ এই কৃষকরা নিজেদের নাদরু বিদেশে পর্যন্ত পাঠাচ্ছেন। কিছুদিন আগেই এই কৃষকরা দুটি খেপে UAE-তেও নাদরু পাঠিয়েছেন। এই সাফল্য কাশ্মীরের নাম তো উজ্জ্বল করছেই, পাশাপাশি এতে শত শত কৃষকের উপার্জনও বাড়ছে।
বন্ধুরা, কৃষি সম্পর্কিত কাশ্মীরের মানুষের এমনই একটি প্রচেষ্টা আজকাল তাঁদের সাফল্যের সুরভি ছড়াচ্ছে। আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন যে আমি কেন সাফল্যের সুরভির কথা বলছি- এটা সুগন্ধের বিষয়, সুরভির বিষয়! আসলে জম্মু ও কাশ্মীরের ডোডা জেলায় একটি জনপদ আছে ‘ভদরওয়াহ’! এখানকার কৃষকরা যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্যবাহী ভুট্টা চাষ করে আসছেন, তবে কিছু কৃষক অন্যরকম কিছু করার প্রয়াস করেছেন। তাঁরা floriculture শুরু করেন, অর্থাৎ ফুলের চাষ। বর্তমানে প্রায় ২৫০০ কৃষক এখানে ল্যাভেন্ডার চাষ করছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের aroma mission-এর সহায়তাও পেয়েছেন তাঁরা। এই নতুন চাষ কৃষকদের আয় অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে এবং আজ ল্যাভেন্ডারের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সাফল্যের সুরভিও ছড়িয়ে পড়ছে বহুদূর।
বন্ধুরা, যখন কাশ্মীরের কথা হচ্ছে, পদ্মের কথা হচ্ছে, ফুলের কথা হচ্ছে , সুরভির কথা হচ্ছে, তখন পদ্মফুলে বিরাজমান মা শারদার কথা স্মরণে আসবে, খুবই স্বাভাবিক। কয়েকদিন আগে কুপওয়ারায় মা শারদার বিশাল মন্দির উদ্বোধন করা হয়েছে। যে পথ দিয়ে একসময় শারদা পীঠ দর্শনের জন্য যেতেন, সেই পথেই এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই মন্দির নির্মাণে স্থানীয় মানুষ অনেক সহযোগিতা করেছেন। আমি জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণকে এই শুভ কাজের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এবার ‘মন কি বাত’-এ এতটুকুই। ‘মন কি বাত’-এর শততম পর্বে (১০০তম) পর্বে পরের বার দেখা হবে। আপনারা সবাই, আপনাদের পরামর্শ পাঠান। এই মার্চ মাসে, আমরা হোলি থেকে নবরাত্রি পর্যন্ত অনেক উৎসব এবং পুজো-পার্বণে ব্যস্ত ছিলাম। পবিত্র রমজান মাসও শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শ্রী রাম নবমীর মহা উৎসবও আসতে চলেছে। এর পর মহাবীর জয়ন্তী, Good Friday এবং Easter-ও আসবে। এপ্রিল মাসে, আমরা ভারতের দুই মহান ব্যক্তিত্বের জন্মবার্ষিকীও উদযাপন করি। এই দুই মহাপুরুষ হলেন – মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলে এবং বাবাসাহেব আম্বেদকর। এই দুই মহাপুরুষই সমাজের বৈষম্য দূর করতে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছিলেন। আজ স্বাধীনতার অমৃতকালে আমাদের এমন মহান ব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে শেখার এবং নিরন্তর অনুপ্রেরণা নেওয়া দরকার। আমাদের কর্তব্যকে সর্বাগ্রে রাখতে হবে। বন্ধুরা, এই সময়ে কিছু জায়গায় করোনাও বাড়ছে। সেজন্য আপনাদের সবাইকে আরও সাবধান হতে হবে, স্বচ্ছতার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। আগামী মাসে, 'মন কি বাত'-এর শততম (১০০তম) পর্বে, আমরা আবার মিলিত হব, ততদিনের জন্য আমাকে বিদায় দিন। ধন্যবাদ । নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। মন কি বাতের এই ৯৮তম পর্বে আপনাদের সবার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমার খুব ভালো লাগছে। শতপূর্তির দিকে এই যাত্রায়, মন কি বাত-কে, আপনারা সবাই, জনসাধারণের অংশগ্রহণের যে অভিব্যক্তি তার অনন্য মঞ্চ করে তুলেছেন। প্রত্যেক মাসে লক্ষ লক্ষ বার্তায় কত মানুষের মন কি বাত আমার কাছে এসে পৌঁছয়। আপনারা নিজেদের মনের শক্তি সম্পর্কে তো জানেনই, এভাবেই সমাজের শক্তিতে কীভাবে দেশের শক্তি বাড়ে, এটা আমরা মন কি বাতের ভিন্ন ভিন্ন পর্বে দেখেছি, বুঝেছি, আর আমি অনুভব করেছি - স্বীকারও করেছি। আমার সেই দিনটির কথা মনে আছে যদিন আমরা মন কি বাতে ভারতের চিরাচরিত খেলাধুলোকে উৎসাহ দেওয়ার কথা আলোচনা করেছিলাম। তৎক্ষণাৎ ভারতে একটা ঢেউ উঠল চিরাচরিত খেলাধুলোকে যুক্ত করার, তার চর্চার, সেগুলো শেখার। মন কি বাতে যখন ভারতের খেলনার আলোচনা হল তখন দেশের মানুষ সক্রিয়ভাবে একে উৎসাহ দিল। এখন তো ভারতের খেলনার এমন ক্রেস তৈরি হয়ে গিয়েছে যে বিদেশেও এর চাহিদা খুব বাড়ছে। যখন মন কি বাতে আমরা স্টোরি টেলিং-এর ভারতীয় ধারা সম্পর্কে চর্চা করলাম তখন এর সুনাম দূরদূরান্তে পৌঁছে গেল। বেশি-বেশি মানুষ স্টোরি টেলিং-এর ভারতীয় ধারা প্রতি আকৃষ্ট হতে লাগল।
বন্ধুগণ, আপনাদের মনে আছে যে সর্দার প্যাটেলের জন্মজয়ন্তী অর্থাৎ একতা দিবসে মন কি বাতে আমরা তিনটে প্রতিযোগিতার কথা বলেছিলাম। এই সব প্রতিযোগিতা দেশভক্তির উপর আধারিত গীত, লোরি আর রঙ্গোলি নিয়ে ছিল। আমার বলতে ভালো লাগছে যে গোটা দেশের সাতশোরও বেশি জেলার পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ প্রবল উৎসাহে এতে অংশ নেয়। শিশুরা, বড়রা, প্রবীণরা সবাই এতে হৈ হৈ করে অংশ নেয় আর কুড়িটিরও বেশি ভাষায় নিজেদের এন্ট্রি পাঠায়। এই সব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সব প্রতিযোগীকে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক অভিনন্দন। আপনারা প্রত্যেকে, নিজেই, এক একজন চ্যাম্পিয়ন, শিল্প সাধক। আপনারা সবাই এটা দেখিয়েছেন যে নিজের দেশের বৈচিত্র্য এবং সংস্কৃতির প্রতি আপনাদের হৃদয় কতটা প্রেম রয়েছে।
বন্ধুগণ, আজ এই প্রসঙ্গে আমার লতা মঙ্গেশকর জী, অর্থাৎ লতা দিদির কথা মনে পড়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। কারণ যখন এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল তখন লতা দিদি ট্যুইট করে দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করেন যাতে তাঁরা অবশ্যই এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন।
বন্ধুগণ, লোরি লিখন প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার জেতেন কর্ণাটকের চামরাজনগর জেলার বি এম মঞ্জুনাথ’জী। তিনি এই পুরস্কার পান কন্নড় ভাষায় লেখা তাঁর লোরি 'মালগু কন্দা'র জন্য। এটা লেখার প্রেরণা তিনি পান নিজের মা আর ঠাকুমার গাওয়া লোরি-গীত থেকে। এটা শুনলে আপনাদেরও ভালো লাগবে।
ঘুমিয়ে পড়ো, ঘুমিয়ে পড়ো আমার বেবি
আমার বুদ্ধিমান সোনা, ঘুমিয়ে পড়ো
দিন শেষ হয়ে নেমেছে অন্ধকার
ঘুমের দেবী চলে আসবেন
তারাদের বাগান থেকে
স্বপ্ন নিয়ে আসবেন
ঘুমিয়ে পড়ো, ঘুমিয়ে পড়ো
জোজো জো জো
জোজো জো জো
অসমের কামরূপ জেলার বাসিন্দা দিনেশ গোয়ালা জী এই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় পুরস্কার জিতেছেন। ইনি যে লোরি লিখেছেন তাতে মাটি আর ধাতু দিয়ে তৈরি স্থানীয় বাসন তৈরীর কারিগরের Propular Craft-এর ছাপ রয়েছে।
কুমোর দাদা বস্তা নিয়ে এসেছেন
আচ্ছা, কী আছে কুমোরের এই বস্তার মধ্যে?
কুমোরের বস্তা খুলে দেখতে পেলাম
বস্তার মধ্যে রয়েছে মিষ্টি একটা বাটি
আমাদের পুচকিটা কুমোরকে জিজ্ঞাসা করল
কেমন এই ছোট্ট বাটি!
গীত আর লোরির মতোই রঙ্গোলি প্রতিযোগিতাও খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। এতে অংশ নেওয়া প্রতিযোগীরা দারুণ দারুণ রঙ্গোলি বানিয়ে পাঠিয়েছেন। এতে বিজয়ী এন্ট্রি ছিল পঞ্জাবের কমল কুমার জী-র। ইনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং অমর শহীদ বীর ভগৎ সিংহের খুব সুন্দর রঙ্গোলি বানিয়েছেন। মহারাষ্ট্রের সাংলির শচীন নরেন্দ্র অওসারি’জী নিজের রঙ্গোলিতে জালিয়ানওয়ালাবাগ, সেখানকার নরসংহার আর শহীদ উধম সিংহের বীরত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন।
গোয়ার বাসিন্দা গুরুদত্ত ওয়ান্তেকার গান্ধীজির রঙ্গোলি তৈরি করেছিলেন, অন্যদিকে পুদুচেরির মালাতিসেলভম জি’ও অনেক মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উপর মনোনিবেশ করেছিলেন। দেশাত্মবোধক গানের প্রতিযোগিতার বিজয়ী, টি. বিজয় দুর্গা’জী অন্ধ্র প্রদেশের মানুষ। তিনি তেলুগু ভাষায় নিজের এন্ট্রি পাঠিয়েছিলেন। তিনি নিজের অঞ্চলের প্রসিদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রামী নরসিংহ রেড্ডি গারুজী দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। আপনারাও বিজয় দুর্গা’জী সেই এন্ট্রির কিছুটা অংশ শুনুন
(Telugu Sound Clip (27 seconds) HINDI Translation)
রেনাড়ু প্রদেশের সূর্য,
হে বীর নরসিংহ!
ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের অংকুর তুমি, অঙ্কুশ তুমি!
ব্রিটিশদের অন্যায় ও স্বৈরাচারী দমন-পীড়নের ঘটনা দেখে।
তোমার রক্ত গরম হয়েছিল এবং আগুন জ্বলেছিল!
রেনাড়ু প্রদেশের সূর্য,
হে বীর নরসিংহ!
তেলেগুর পরে, এখন আমি আপনাকে মৈথিলীতে একটি ক্লিপ শোনাব। এটি পাঠিয়েছেন দীপক বৎস’জী। এই প্রতিযোগিতায় তিনি পুরস্কারও জিতেছেন।
(Maithili Sound Clip (30 seconds) HINDI Translation)
ভারত বিশ্বের গর্ব ভাই,
আমাদের দেশ মহান
তিন দিক সাগরে ঘেরা,
উত্তরে কৈলাস বলবান,
গঙ্গা, যমুনা, কৃষ্ণা, কাবেরী,
কোশি, কমলা, বলান
আমাদের দেশ মহান ভাই।
তেরঙা অন্ত প্রাণ
বন্ধুরা, আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন এমন এন্ট্রির তালিকা অনেক দীর্ঘ। আপনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে, আপনার পরিবারের সাথে তাঁদের দেখুন এবং শুনুন - আপনি অনেক অনুপ্রেরণা পাবেন। আমার প্রিয় দেশবাসী, বেনারসের কথাই হোক, সানাইয়ের কথাই হোক, ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান জীর কথাই হোক, আমার মনোযোগ সেদিকে যাবেই। কয়েকদিন আগে 'ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান যুব পুরস্কার' দেওয়া হয়েছে। সঙ্গীত ও পারফর্মিং আর্ট এর ক্ষেত্রে উদীয়মান, প্রতিভাবান শিল্পীদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এই পুরস্কার শিল্প, কলা ও সঙ্গীত জগতের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি, সমৃদ্ধিতেও অবদান রাখছে। এর মধ্যে এমন শিল্পীরাও অন্তর্ভুক্ত যাঁরা সেই সকল বাদ্যযন্ত্রগুলির নবজাগরণ ঘটিয়েছেন, যাদের জনপ্রিয়তা সময়ের সাথে কমে যাচ্ছিল। এখন, আপনারা সবাই এই টিউনটি মন দিয়ে শুনুন...
(Sound Clip (21 seconds) Instrument- ‘ সুরসিঙ্গার’, Artist - জয়দীপ মুখার্জী)
আপনি কি জানেন এটি কোন বাদ্যযন্ত্র? আপনি হয়তো জানেন না! এই বাদ্যযন্ত্রের নাম 'সুরসিঙ্গার' এবং এই সুরটি রচনা করেছেন জয়দীপ মুখার্জি।
ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান পুরস্কারে সম্মানিত যুবকদের মধ্যে জয়দীপ জি একজন । ৫০ ও ৬০-এর দশকে থেকেই এই বাদ্যযন্ত্রের সুর শুনতে পাওয়া দুর্লভ হয়ে পড়লেও জয়দীপ সুরসিঙ্গারকে আবার জনপ্রিয় করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একইভাবে, বোন উপ্পলপু নাগমণি জি’র প্রচেষ্টাও অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক, যাঁকে ম্যান্ডোলিনে কর্নাটকী ইন্সট্রুমেন্টালের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আবার সংগ্রাম সিং সুহাস ভান্ডারে জি বারকরি কীর্তনের জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন। এই তালিকায় শুধু সঙ্গীত শিল্পীই আছেন এমন নয় - ভি দুর্গা দেবী’জি 'করকাট্টম', একটি প্রাচীন নৃত্যশৈলীর জন্য এই পুরস্কার জিতেছেন। এই পুরস্কারের আরেকজন বিজয়ী, রাজ কুমার নায়ক জী, তেলেঙ্গানার ৩১টি জেলায় ১০১ দিন ধরে চলা পেরিনি ওডিসির আয়োজন করেছিলেন। আজ সকলে তাঁকে পেরিনি রাজকুমার নামেই চেনে। পেরিনি নাট্যম, ভগবান শিবকে উৎস্বর্গীকৃতএকটি নৃত্য, কাকাতিয়া রাজবংশের সময় খুব জনপ্রিয় ছিল। এই রাজবংশের শিকড় আজকের তেলেঙ্গানার সাথে সম্পর্কিত। আর একজন পুরস্কার বিজয়ী হলেন সাইখোম সুরচন্দ্রা সিং।
ইনি মাইতেই পুং যন্ত্রটি তৈরিতে তার দক্ষতার জন্য প্রসিদ্ধ. এই বাদ্যযন্ত্রটির মনিপুরের সঙ্গে যোগ আছে। পুরন সিংহ, যিনি একজন দিব্যাংগ শিল্পী, যিনি রাজুলা মালুশাহী,নিউলি, হুড়কা বল, জাগারের মতো সংগীতের বিভিন্ন ধারাকে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এই সংক্রান্ত বেশ কিছু অডিও রেকর্ডিংও করেছেন। উত্তরাখন্ড এর লোকসঙ্গীতে নিজের উৎকর্ষের নিদর্শন রেখে তিনি বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছেন। সময়ের অপ্রতুলতার কারণে আমি এখানে সব পুরস্কার প্রাপকদের নাম না নিতে পারলেও, আমি আশাবাদী যে আপনারা ওঁদের সম্পর্কে নিশ্চই খোঁজ রাখবেন। আমি এও আশা রাখি যে এই সব শিল্পীরা তাদের Performing Arts কে আরো জনপ্রিয় করে তোলার জন্য তৃণমূল স্তরে গিয়ে সকলকে অনুপ্রাণিত করবেন। আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশ এখন দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। দেশের বিভিন্ন কোণায় আমরা ডিজিটাল ইন্ডিয়ার শক্তি উপলব্ধি করতে পারছি। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার শক্তিকে ঘরে ঘরে পৌঁছনোর পেছনে অনেকগুলো apps এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এমনি একটি app হলো ই-সঞ্জীবনী। এই app এর সাহায্যে টেলি -কন্সালটেশন অর্থাৎ দূরে বসেই ভিডিও কনফারেন্সিঙের মাধ্যমে ডক্টরের কাছ থেকে আপনার রোগ ব্যাধি নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব। এই app ব্যবহার করে এখনো পর্যন্ত ১০ কোটিরও বেশি মানুষ টেলি কন্সালটেশন করেছেন। আপনারা ভাবতে পারেন ! ১০ কোটি লোক ভিডিও কন্সালটেশন করেছেন! রুগী ও চিকিৎসকের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরী হলো, এটা একটা বিরাট প্রাপ্তি। আর এই প্রাপ্তির জন্য আমি সকল চিকিৎসক এবং এই সুবিধাপ্রাপ্ত সকল রুগীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। ভারতবাসীরা, কিভাবে এই প্রযুক্তিকে নিজেদের জীবনের অঙ্গ করেছেন এটি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা দেখেছি কোরোনাকালে কিভাবে এই ই-সঞ্জীবনী app এর মাধ্যমে হওয়া টেলিকনসালটেশন কত মানুষের কাছে একটা আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমার মনে হলো যে এই নিয়ে “মন কি বাতে” একজন চিকিৎসক ও রুগীর সঙ্গে আলোচনা করা যাক, তাদের কথা শোনা যাক এবং আপনাদের কাছে সেটা পৌঁছানো যাক। আমরা জানতে চাইবো যে এই টেলি কন্সালটেশন মানুষের জন্য কতটা উপকারী। আমাদের সঙ্গে আছেন সিক্কিমের এক চিকিৎসক, ডাক্তার মদন মণি’জী ।ডাক্তার মদন মণি’জী, সিক্কিমের বাসিন্দা ঠিকই কিন্তু তিনি তার MBBS ধানবাদ থেকে করেছেন এবং তারপর বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি থেকে MD করেছেন। উনি বিভিন্ন গ্রামীণ অঞ্চলের বহু মানুষদের টেলি কন্সালটেশন দ্বারা চিকিৎসা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী – নমস্কার.. নমস্কার… মদন মণি’জী।
ডা: মদন মণি – নমস্কার স্যার।
প্রধানমন্ত্রী – আমি নরেন্দ্র মোদী বলছি।
ডা: মদন মণি– হ্যাঁ.. হ্যাঁ.. বলুন স্যার।
প্রধানমন্ত্রী – আপনি তো বেনারসে পড়াশোনা করেছেন?
ডা: মদন মণি– হ্যাঁ.. স্যার আমি বেনারসে পড়াশোনা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী – আপনার medical education ওখানেই হয়েছে?
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ.. হ্যাঁ..
প্রধানমন্ত্রী – তাহলে আপনি যেসময় বেনারসে ছিলেন, সেই তখনকার বেনারস আর এখনকার বদলে যাওয়া বেনারস কখনও দেখতে গেছেন নাকি যাওয়া হয়নি?
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ প্রধানমন্ত্রী’জী আমি যেতে পারিনি, যবে থেকে সিকিমে চলে এসেছি, কিন্তু আমি শুনেছি যে বেশ পরিবর্তন ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রী – তো কত বছর হয়ে গেল আপনি বেনারস ছেড়েছেন?
ডা: মদন মণি – বেনারস 2006 সালে ছেড়ে এসেছি, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী – ওহ আচ্ছা.. তাহলে আপনার নিশ্চয় একবার যাওয়া উচিৎ।
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ.. হ্যাঁ.. স্যার।
প্রধানমন্ত্রী – আচ্ছা, আমি ফোন করেছি, এই কারণে যে আপনি সিকিমের ভেতরে প্রত্যন্ত পাহাড়ে থেকে বসবাসকারী জনগণকে টেলিকনসালটেশনের দুর্দান্ত পরিষেবা প্রদান করছেন।
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ..
প্রধানমন্ত্রী – আমি মন কি বাতের শ্রোতা বন্ধুদের আপনার অভিজ্ঞতাশোনাতে চাই।
ডা: মদন মণি – আচ্ছা..
প্রধানমন্ত্রী – একটু বলুন আমাকে, কেমন অভিজ্ঞতা ছিল?
ডা: মদন মণি – অভিজ্ঞতা খুব ভালো ছিল প্রধানমন্ত্রী জি। ব্যাপারটা হল, সিকিমে, খুব কাছাকাছিও যে PHC রয়েছে, সেখানে যেতেও লোকজনেদের গাড়িতে চেপে কমপক্ষে এক-দুশো টাকা নিয়ে যেতে হতো। আর ডাক্তার পাওয়া যায়, কি না পাওয়া যায়, সেটাও একটা problem। তাই Tele Consultation-এর মাধ্যমে মানুষ আমাদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে পারেন, এমনকি দূর দূরান্তের মানুষও। Health & Wellness Centre-এর যারা CHOs রয়েছেন, তারাও আমাদের, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। আর আমরা, যদি তাদের কোন পুরনো অসুখ থাকে তার reports, তার এখনকার present condition, ইত্যাদি সবকিছুই তাদের জানিয়ে দি।
প্রধানমন্ত্রী – মানে document transfer করেন।
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ.. হ্যাঁ। Document transferও করি এবং যদি transfer করতে না পারি, তাহলে আমরা তা মানুষদের পড়ে শোনাই।
প্রধানমন্ত্রী – ওখানের Wellness Centre-এর doctor বলে দেন।
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ, Wellness Centre-এর যে CHO থাকেন তিনি, Community Health Officer।
প্রধানমন্ত্রী – আর যারা patient, তারা নিজেদের অসুবিধার বিষয়ে আপনাদের সরাসরি বলেন।
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ, patientও নিজের অসুবিধা আমাদের জানান। তারপর পুরনো records দেখে, আবার যদি নতুন কিছু পাওয়া যায় তা জানানো হয়। ধরুন, যদি কারোর Chest Auscultate করাতে হয়, তাহলে জানা দরকার তার পা ফোলা নেই তো! যদি CHO তা না দেখে থাকেন, তাহলে আমরা সেই ব্যক্তিকে বলি যে সে যেন পরীক্ষা করায় তার ফোলা রয়েছে কি নেই, চোখ দেখাতে বলা হয়, anaemia রয়েছে কিনা, যদি তার কাশি হয়ে থাকে তাহলে Chest-এর Auscultate করিয়ে জানা দরকার সেখানে sounds রয়েছে কিনা।
প্রধানমন্ত্রী – আপনি Voice Call-এ কথা বলেন না Video Call-এরও ব্যবহার করেন?
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ, Video Call-এরও ব্যবহার করি।
প্রধানমন্ত্রী – তাহলে patient-কে, আপনিও দেখতে পান?
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ, patient-কেও দেখতে পাই।
প্রধানমন্ত্রী – Patient-এর কি রকম feeling হয়?
ডা: মদন মণি – Patient-এর ভালই লাগে কারণ ডাক্তারকে তারা এত কাছে দেখতে পায়। তাদের confusion থাকে যে তাদের ওষুধ বাড়ানো হবে না কমানো হবে, কারণ সিকিমে বেশিরভাগ patient diabetes, Hypertension ইত্যাদিতে ভোগে, একটা diabetes ও hypertension-এর ওষুধ change করানোর জন্য তাঁকে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করতে অনেক দূর যেতে হয়। কিন্তু Tele Consultation-এর মাধ্যমে ওখানেই পরামর্শ পাওয়া যায় আর ওষুধও health & Wellness Centre-এ Free Drugs initiative-এর দরুন পাওয়া যায়। তাই একই জায়গা থেকেই ওষুধও নিয়ে যেতে পারে সবাই।
প্রধানমন্ত্রী – আচ্ছা মদনমণি জি, আপনি তো জানেন যে patient-দের একটা স্বভাব রয়েছে যে যতক্ষণ না ডাক্তার আসছেন, এবং দেখছেন, ততক্ষণ সে সন্তুষ্ট হয় না, আর ডাক্তারেরও মনে হয় রোগীকে দেখতে হবে, তাহলে এখানে যে পুরো ব্যাপারটাই Telecom-এর Consultation-এর মাধ্যমে হচ্ছে, তখন সেখানে ডাক্তার কি feel করছে, patient-টি বা কি feel হচ্ছে?
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ, আমাদেরও মনে হয় যদি patient মনে করেন যে ডাক্তারের দেখা উচিত, তাহলে যা যা দেখা প্রয়োজন, তা আমরা CHO-কে বলে video-তেই দেখাবার কথা বলি। আর কখনো কখনো তো patient-কে video-তেই কাছে এসে তার যা সমস্যা রয়েছে, ধরুন কারুর যদি চামড়ার কোন problem হয়েছে, skin-এর problem হয়েছে, তখন আমরা তার সমস্যা video-তেই দেখিয়ে দি। তাই তাঁরাও সন্তুষ্টি হন।
প্রধানমন্ত্রী – আর তারপর রোগীকে পরিষেবা দেবার পর তিনি যখন খুশি হন তখন কি রকম অনুভব হয়? রোগী কি সুস্থ হচ্ছেন?
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ খুব ভালো লাগে। আমাদেরও ভালো লাগে স্যার। কারন আমি এখন স্বাস্থ্য বিভাগে আছি আর এর সঙ্গে আমি টেলি কনসাল্টেশন ও করি, তাই ফাইলের সঙ্গে সঙ্গে পেশেন্টদের দেখাশোনা করাও আমায় অনেক আনন্দের অনুভূতি দেয়।
প্রধানমন্ত্রী – গড়ে কতজন রোগীর টেলিকনসাল্টেশন কেস আপনার কাছে আসে?
ডা: মদন মণি – এখন অবধি আমি ৫৩৬ জন রোগী দেখেছি।
প্রধানমন্ত্রী – ওহ অর্থাৎ আপনার এই বিষয়ে অনেকটা দক্ষতা এসে গেছে।
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ ভালো লাগে দেখতে।
প্রধানমন্ত্রী – আমি আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই টেকনোলজির মাধ্যমে আপনি সিকিমের দূর দূরান্তের জঙ্গলে, পাহাড়ের বাসিন্দাদের এত বড় পরিষেবা দিচ্ছেন। আর খুশির কথা এটাই যে আমাদের দেশের প্র্রান্তিক ক্ষেত্রেও এই টেকনোলজির এত সুন্দর ব্যবহার হচ্ছে। আমার তরফ থেকে আপনাকে অনেক অনেক অভিনন্দন।
ডা: মদন মণি – ধন্যবাদ।
বন্ধুরা ডঃ মদন মনির কথা থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে এই ই-সঞ্জীবনী অ্যাপ কিভাবে ওনার সাহায্য করছে। ডক্টর মদন জি’র পরে আমরা আরো এক মদনজির সঙ্গে কথা বলব। ইনি হলেন উত্তরপ্রদেশের চন্দৌলি জেলার অধিবাসী মদন মোহন লাল জি। এখন এটাও একটা অদ্ভুত বিষয় যে চন্দৌলিও বেনারসের পাশেই অবস্থিত। আসুন মদনমোহন জি’র কাছ থেকে জানি যে ই-সঞ্জীবনী কে নিয়ে একজন রোগী হিসেবে ওনার অনুভূতি কি রকম?
প্রধানমন্ত্রী – মদন মোহন জি প্রণাম।
মদন মোহন জি – নমস্কার, নমস্কার সাহেব।
প্রধানমন্ত্রী – নমস্কার। আচ্ছা আমাকে এটা বলা হয়েছে যে আপনি ডায়াবেটিসের রোগী।
মদন মোহন জি – হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী – আর আপনি টেকনোলজির সাহায্যে টেলিকনসালটেশন করে আপনার রোগের সম্বন্ধে সাহায্য নেন।
মদন মোহন জি – হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী – একজন পেশেন্ট হয়ে আমি আপনার অনুভূতি শুনতে চাই, যাতে আমি দেশবাসীর কাছে এই কথাটা পৌঁছে দিতে পারি যে আজ টেকনোলজির মাধ্যমে আমাদের গ্রামের মানুষেরাও কিভাবে এর সাহায্য নিতে পারেন। একটু বলুন কিভাবে ব্যবহার করেন?
মদন মোহন জি – আসলে স্যার হসপিটাল অনেক দূরে আর আমার যখন ডায়াবেটিস হলো তখন আমাকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হতো, ডাক্তার দেখাতে হতো। যখন থেকে আপনার দ্বারা এই ব্যবস্থা করা হয়েছে তখন থেকে আমি যাই, আমার পরীক্ষা করা হয়, আমাদের বাইরের ডাক্তারদের সঙ্গে কথাও বলিয়ে দেওয়া হয় আর ওষুধও দিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে আমার ও আমার মতো অনেক মানুষের লাভ হল।
প্রধানমন্ত্রী – তাহলে প্রতিবার কী একই ডাক্তারবাবু দেখেন; না কী ডাক্তার বদলে যায়?
মদন মোহন জি – যখন সে বুঝতে পারেন না, তখন ডাক্তারবাবুকে দেখায়। তারপর তিনিই কথা বলে অন্য ডাক্তারের সঙ্গে আমার কথা বলিয়ে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী – আর ডাক্তার আপনাকে যে গাইডেন্স (guidance) দেয় তাতে কি আপনার সম্পূর্ণ লাভ হয়?
মদন মোহন জি – হ্যাঁ লাভ তো হয়েই, এতে আমার অনেক সুবিধা হয়। আর গ্রামের লোকজনেরো সুবিধা হয়। সবাই ওখানেই বলেন যে দাদা আমাদের BP আছে বা সুগার আছে, Test করুন বা পরীক্ষা নিরীক্ষা করুন, ওষুধ দিন। আর আগে তো ৫-৬ কিলোমিটার দূরে যেতে হতো। লম্বা লম্বা লাইন পড়তো। Pathology-তেও লাইন পড়তো, একটা গোটা দিন নষ্ট হয়ে যেতো।
প্রধানমন্ত্রী – মানে আপনার সময়-ও বেঁচে যাচ্ছে!
মদন মোহন জি – তাছাড়া পয়সা'ও খরচ হতো, আর এখানে বিনামূল্যে সব পরিষেবা পাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী – আচ্ছা, যখন আপনি সামনাসামনি ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করেন তখন একটা ভরসা তৈরি হয়। মনে হয় অন্তত ডাক্তারবাবু আছেন, আমার পালস দেখে নিয়েছেন, চোখ পরীক্ষা করেছেন, আমার জিভ চেক করেছেন; মানে একটা অন্যরকম feeling কাজ করে, কিন্তু যখন এই tele consultation এর সাহায্য নিতে হয় তখন কী সেই একই রকম ভরসা তৈরি হয়?
মদন মোহন জি – হ্যাঁ, অবশ্যই ভরসা তৈরি হয়! উনি আমার নাড়ি পরীক্ষা করছেন, স্টেথোস্কোপে শ্বাস পরীক্ষা করছেন- এরকমই একটা অনুভূতি আমার হয়, আর আমার শরীরটাও বেশ ভালো লাগে। এতো সুন্দর একটা ব্যবস্থা আপনার জন্য আমরা পেয়েছি যে তার ফলে আমাদের কষ্ট করে যেখানে যেতে হতো, গাড়ির ভাড়া দিতে হতো, লাইন দিতে হতো, সেখানে সব পরিষেবা আমরা ঘরে বসে বসেই পেয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী – আচ্ছা মদন মোহন জি, আপনাকে অনেক অনেক অভিনন্দন। এই বয়সে এসেও আপনি technology সম্পর্কে জেনেছেন, এর ব্যবহার-ও করছেন। অন্যদেরও বলুন যাতে তাদের সময় বেঁচে যায়, খরচও বেঁচে যায়, আর তাঁদের যে উপায় বাতলে দেওয়া হয় সেইমতো ওষুধ পেতেও কোন অসুবিধা হয় না।
মদন মোহন জি – হ্যাঁ, সেই আর কি!
প্রধানমন্ত্রী – আচ্ছা আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা মদন মোহন জি।
মদন মোহন জি – সাহেব, আপনি বেনারসকে কাশি বিশ্বনাথ স্টেশন করেছেন। আপনার জন্যে Devlopment হয়েছে । তাই আপনাকে আমাদের তরফ থেকে অভিনন্দন।
প্রধানমন্ত্রী – আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ, তবে আমি নয়, বেনারসের মানুষই বেনারসকে গড়ে তুলেছেন, আমি তো শুধুই মা গঙ্গার সেবার জন্যে এখানে, মা গঙ্গা'ই আমাকে ডেকেছেন, ব্যাস এটুকুই। আচ্ছা ঠিক আছে, আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। প্রনাম।
মদন মোহন জি – নমস্কার স্যার।
প্রধানমন্ত্রী – হ্যাঁ নমস্কার!
বন্ধুগণ, দেশের সাধারণ মানুষের জন্য, মধ্যবিত্তদের জন্য, পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের জন্য E- Sanjivani., নামে জীবন রক্ষার অ্যাপ তৈরি হয়েছে। এটি হলো ভারতবর্ষের ডিজিটাল বিপ্লবের শক্তি। আর তার প্রভাব আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখতে পাচ্ছি। আপনারা তো জানেনই ভারতের ইউপিআই এর ক্ষমতা। বিশ্বের বহু দেশ এর প্রতি আকৃষ্ট। কিছুদিন পূর্বেই ভারত আর সিঙ্গাপুরের মধ্যে upi pay now link লঞ্চ করা হয়েছে। এখন ভারত আর সিঙ্গাপুর বাসীরা নিজেদের মোবাইল ফোন থেকে ঠিক সেই ভাবেই পয়সার লেনদেন করছেন যেভাবে তারা নিজেদের দেশে করে থাকেন। আমি খুবই আনন্দিত যে জনগণ এর সুযোগ নেওয়া শুরু করে দিয়েছে। ভারতের ই সঞ্জীবনী app বলুন বা UPI, এগুলি Ease of Living কে আরো উন্নত করতে সাহায্য করেছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী। যখন কোন দেশে, বিলুপ্তপ্রায় কোন বিশেষ পাখির প্রজাতিকে, বা কোন জীবকে বাঁচানো হয়, তখন সারা বিশ্বে সেটার চর্চা হয়। আমাদের দেশে এমন অনেক মহান পরম্পরা আছে যেগুলি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, জনমানস থেকে মুছে গিয়েছিল, কিন্তু এখন জনগণের অংশগ্রহণের ফলে ফের পুনর্জীবিত হয়ে উঠেছে আর তার চর্চার জন্য মন কি বাতের মঞ্চের চেয়ে ভালো কি কিছু হতে পারে?
এখন আমি আপনাদের যা বলতে চলেছি, সেটা জেনে আপনাদের সত্যিই খুব ভালো লাগবে এবং ঐতিহ্যের প্রতি গর্ববোধ করবেন। আমেরিকার নিবাসী শ্রীমান কাঞ্চন ব্যানার্জি ঐতিহ্যের সংরক্ষণের কাজের যুক্ত একটি অভিযানের দিকে আমার নজর আকৃষ্ট করেছেন। আমি ওনাকে অভিনন্দন জানাই। বন্ধুগণ, পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় বাঁশবেড়িয়াতে এই মাসে ত্রিবেণী কুম্ভ মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এতে ৮ লাখেরও বেশি ভক্তের সমাগম ঘটেছে। কিন্তু আপনারা কি জানেন এই মেলা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? এই জন্য গুরুত্ব পূর্ণ কারণ বিশেষ এই জন্য কারণ এই মেলাটিকে ৭০০ বছরের পর আবার পুনর্জীবিত করে তোলা হয়েছে। এমনিতেই এই পরম্পরা হাজার বছরেরও বেশি পুরনো, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ৭০০ বছর আগে বাংলার ত্রিবেণী তে এই মহোৎসবটি বন্ধ গিয়েছিল। স্বাধীনতার পর এটিকে আবার শুরু করা উচিত ছিল কিন্তু সেটাও হয়ে ওঠেনি। দু'বছর আগে স্থানীয় বাসিন্দারা এবং ত্রিবেণী কুম্ভ পরিচালনা সমিতির উদ্যোগে এই মহোৎসবটি আবার আরম্ভ করা হয়েছে। এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত সব্বাইকে সাধুবাদ জানাই। আপনারা কেবলমাত্র একটি প্রথাকে জীবিত করে তুলছেন তা না; বরং ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষাও করছেন।
বন্ধুগণ , পশ্চিমবঙ্গের ত্রিবেণীকে যুগ যুগ ধরে একটি পবিত্র স্থান বলে মনে করা হয়। এটার উল্লেখ বিভিন্ন মঙ্গল কাব্যে, বৈষ্ণব সাহিত্যে, শাক্ত সাহিত্যে ও অন্যান্য বাংলা সাহিত্যের ধারায় লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল থেকে এইটা জানা যায় যে এই ঐতিহাসিক স্থানটি কোন এক সময় সংস্কৃত, শিক্ষা, ও ভারতীয় সংস্কৃতির কেন্দ্র ছিল। অনেক সাধুরাই এই স্থানটিকে মাঘ সংক্রান্তির কুম্ভ স্নানের জন্য পবিত্র মনে করেন। ত্রিবেণীতে আপনারা অনেক গঙ্গার ঘাট, শিব মন্দির ও টেরাকোটার কারুকার্য খচিত প্রাচীন ঘর-বাড়ি ইত্যাদি দেখতে পাবেন। ত্রিবেনীর ঐতিহ্যকে পুনঃস্থাপন করার জন্য ও কুম্ভ মেলার গৌরবকে পুনর্জীবিত করার জন্য এখানে গতবছর কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। সাতশো বছর পর এই তিন দিন ব্যাপী কুম্ভ মহাস্নান ও মেলা এই ক্ষেত্রে। এক নতুন প্রাণশক্তির সঞ্চার ঘটিয়েছে। তিন দিন ধরে প্রত্যেক দিনের গঙ্গা আরতি, রুদ্রাভিষেক ও যজ্ঞে বহু মানুষ দলে দলে যোগ দিয়েছেন। এইবারের মহোৎসবে বিভিন্ন আশ্রম মঠ ও আখড়া থেকেও অনেকেই যোগদান করেছেন। বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ধারা যেমন কীর্তন, বাউল , গৌড়ীয়ন নৃত্য, শ্রীখোল, পটের গান, ছৌ নাচ, সান্ধ্য অনুষ্ঠানের আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। আমাদের দেশের তরুণদের তাদের সোনালী অতীতের সঙ্গে যুক্ত করার এটি একটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় প্রয়াস। ভারতবর্ষে এমন বহু প্রথা আছে যেগুলিকে রিভাইভ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমি আশা করি যে এই সমস্ত বিষয়ের উপর আলোচনা এইদিকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, স্বচ্ছ ভারত অভিযান আমাদের দেশে জন-অংশীদারিত্বের অর্থই বদলে দিয়েছে। দেশের যে কোন স্থানে যদি স্বচ্ছতা সম্পর্কিত কোন কর্মসূচি চলে, তাহলে মানুষ তার খবর আমাকে অতি অবশ্যই পৌঁছে দেন। এভাবেই আমার মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে, হরিয়ানার যুবাদের এক স্বচ্ছতা অভিযানের প্রতি। হরিয়ানাতে একটি গ্রাম আছে - দুলহেরী। সেখানকার যুবারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে ভিওয়ানী শহরকে স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে এক দৃষ্টান্ত রূপে গড়ে তুলতে হবে। তাঁরা "যুবা স্বচ্ছতা এবং জনসেবা সমিতি" নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। এই সংগঠনের সদস্যরা ভোর চারটের সময় ভিওয়ানী পৌঁছে যান। শহরের আলাদা আলাদা জায়গায় তারা একযোগে সাফাই অভিযান চালান। এঁরা এখনো পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু টন জঞ্জাল পরিষ্কার করেছেন।
বন্ধুরা, স্বচ্ছ ভারত অভিযানের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় "ওয়েস্ট টু ওয়েলথ" ও বটে। ওড়িশার কেন্দ্রপাড়া জেলার এক বোন কমলা মোহরানা একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী চালান। সেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা দুধের প্যাকেট ও অন্যান্য প্লাস্টিক প্যাকিং থেকে ঝুড়ি, মোবাইল স্ট্যান্ড এর মত অনেক দ্রব্য প্রস্তুত করেন। এটা তাদের জন্য স্বচ্ছতার পাশাপাশি উপার্জনেরও একটা প্রশস্ত উপায় হয়ে উঠছে। আমরা যদি মনস্থির করি তাহলে স্বচ্ছ ভারত অভিযানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারি। অন্ততপক্ষে প্লাস্টিক ব্যাগের বদলে কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করার সংকল্প তো আমাদের সবারই করা উচিত। আপনি দেখবেন আপনার এই সংকল্প আপনাকে কতটা তৃপ্তি দেবে, এবং পাশাপাশি অন্যদেরও অবশ্যই অনুপ্রাণিত করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ আমরা ও আপনারা আরো একবার অনেক প্রেরণাদায়ক বিষয় নিয়ে কথা বললাম। পরিবারের সঙ্গে বসে সেগুলি আপনারা শুনলেন এবং সারাদিন তার গুঞ্জরণ আপনাদের মধ্যে থাকবে। দেশের কর্মক্ষমতা বিষয়ে আমরা যত আলোচনা করব ততই উদ্বুদ্ধ হব। সেই উদ্দীপনা-প্রবাহের সঙ্গে চলতে চলতে আজ আমরা "মন কি বাত" এর ৯৮ তম পর্বের গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছে গেছি। কিছুদিন পরই হোলির উৎসব। আপনাদের সবাইকে হোলির শুভকামনা জানাই। আমাদের উৎসবগুলি "ভোকাল ফর লোকাল" এই সংকল্পের সঙ্গেই আমাদের উদযাপন করতে হবে। আপনাদের অনুভূতির কথাও আমার সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে বিদায় দিন। পরের বার আরো নতুন নতুন বিষয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। ২০২৩-এর এটা প্রথম 'মন কি বাত' আর সেই সঙ্গে সঙ্গে এই কার্যক্রমের সাতানব্বইতম পর্বও বটে। আপনাদের সঙ্গে আবার একবার আলোচনা করে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। প্রত্যেক বছর জানুয়ারি মাসে ঘটনার ঘনঘটা থাকে। এই মাসে চোদ্দ জানুয়ারির আশেপাশে উত্তর থেকে দক্ষিণে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে, গোটা দেশে পরবের চমক দেখা যায়। এর পরে দেশ নিজের গণতন্ত্রের উৎসবও পালন করে। এবারও সাধারণতন্ত্র দিবসের সমারোহের অনেক বিষয়ের প্রভূত প্রশংসা হয়েছে। জয়সলমীর থেকে পুল্কিত আমাকে লিখেছেন যে ২৬শে জানুয়ারি প্যারেডের সময় কর্তব্যপথ নির্মাণকারী শ্রমিকদের দেখে খুব ভালো লেগেছে। কানপুর থেকে জয়া লিখেছেন যে প্যারেডে অন্তর্ভুক্ত নানা ট্যাবলোর মধ্যে ভারতীয় সংস্কৃতির নানা দিক প্রত্যক্ষ করে আনন্দ পেয়েছেন। এই প্যারেডে প্রথম বার অংশ নেওয়া উটে আরোহী মহিলাদের এবং সিআরপিএফের মহিলা বিভাগেরও অনেক প্রশংসা হয়েছে।
বন্ধুরা, দেরাদুনের বৎসল জী আমাকে লিখেছেন, সবসময়ই ২৫শে জানুয়ারির জন্য অপেক্ষা করি কারণ ওই দিন পদ্ম পুরস্কার ঘোষণা হয়, আর এক অর্থে ২৫শে জানুয়ারির সন্ধ্যাই আমার ২৬শে জানুয়ারির প্রত্যাশাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। তৃনমূলস্তরে নিজের আত্মনিবেদন আর সেবার মনোভাবের সফল নিদর্শন রাখা ব্যক্তিদের জন্য পিপলস্ পদ্ম নিয়েও অনেক মানুষ নিজের ভাবনা ভাগ করে নিয়েছেন। এবার পদ্ম পুরস্কারে সম্মানিতদের মধ্যে জনজাতীয় গোষ্ঠী এবং জনজাতীয় জীবনের সঙ্গে জুড়ে থাকা মানুষের ভালো রকম প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। জনজাতীয় জীবন শহরের বিপুল ব্যস্ততা থেকে ভিন্ন। সেখানকার সমস্যাগুলোও আলাদা। এ সত্ত্বেও জনজাতীয় সমাজ নিজের পরম্পরা তুলে ধরতে সর্বদা তৎপর থাকে। জনজাতীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে জুড়ে থাকা বস্তুর সংরক্ষণ আর সেগুলো নিয়ে গবেষণার প্রচেষ্টাও হয়। এভাবেই টোটো, হো, কুই, কুবী এবং মাণ্ডার মত জনজাতির ভাষার উপর কাজ করা বেশ কয়েকজন মহানুভবী পদ্ম পুরস্কার পেয়েছেন। এটা আমাদের সবার জন্য গর্বের বিষয়। ধনীরাম টোটো, জানুম সিং সোয় এবং বি রামকৃষ্ণ রেড্ডিজীর নামের সঙ্গে তো এখন গোটা দেশের পরিচয় ঘটে গিয়েছে। সিদ্ধি, জারোয়া আর ওঙ্গে জনজাতির সঙ্গে কাজ করা মানুষদেরও এবার সম্মানিত করা হয়েছে। যেমন হীরাবাঈ লোবী, রতন চন্দ্র কর এবং ঈশ্বর চন্দ্র বর্মাজী। জনজাতীয় গোষ্ঠী আমাদের পৃথিবী, আমাদের ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থেকেছে। দেশ ও সমাজের বিকাশে তাঁদের অবদান খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের জন্য কাজ করা মানুষদের সম্মান নতুন প্রজন্মকেও উদ্বুদ্ধ করবে। এ বছর পদ্ম পুরস্কারের গুঞ্জন সেই সব জায়গাতেও শোনা যাচ্ছে যেগুলো এক সময় নকশাল অধ্যুষিত ছিল। নিজেদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে নকশাল অধ্যুষিত এলাকার বিপথগামী যুবকদের সঠিক পথ দেখানো ব্যক্তিদের পদ্ম পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে। এর জন্য কাঙ্কেরে কাঠের উপর কারুকাজ করা অজয় কুমার মণ্ডাবী আর গড়চিরৌলির প্রসিদ্ধ ঝাডীপট্টী রঙ্গভূমির সঙ্গে যুক্ত পরশুরাম খোমাজী খুণেও এই সম্মান পেয়েছেন। এভাবেই উত্তর-পূর্ব ভারতে আমাদের সংস্কৃতির সংরক্ষণে যুক্ত রামকুইবাঙবে নিউমে, বিক্রম বাহাদুর জমাতিয়া এবং করমা ওয়াংচুক-কেও সম্মানিত করা হয়েছে।
বন্ধুরা, এবছর পদ্ম পুরস্কারে সম্মানিত ব্যক্তিদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁরা সংগীত জগতকে সমৃদ্ধ করেছেন। এমন কেউ নেই যার সংগীত পছন্দ নয়। এক-একজনের সংগীতের পছন্দ আলাদা আলাদা হতে পারে কিন্তু সংগীত প্রত্যেকের জীবনের একটি অংশ। এই বার পদ্ম পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে এমন ব্যক্তিত্ব আছেন, যাঁরা সন্তুর, বমহুম, দোতারার মত আমাদের পারম্পরিক বাদ্যযন্ত্রের সুর ছড়িয়ে দিতে পারদর্শিতা রাখেন। গোলাম মোহাম্মদ জাজ, মোয়া সু - পোঙ্গ, রি সিংবোর কুরকা লাঙ্গ, মুনি - বেংকটপ্পা, এবং মঙ্গল কান্তি রায় এমন অনেক নাম আছে যাঁদের নিয়ে চারিদিকে আলোচনা হচ্ছে।
বন্ধুরা, পদ্ম পুরস্কার বিজয়ী অনেকেই, আমাদের মধ্যে থাকা সেই বন্ধু, যাঁরা, আমাদের দেশকে সবার উপরে রেখেছেন, রাষ্ট্রই প্রথম - এই বিচারধারায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁরা সেবাপরায়ণ হয়ে নিজেদের কাজ করে চলেছেন এবং তার জন্য কখনও কোনো পুরস্কারের প্রত্যাশা করেন নি। ওঁরা যাদের জন্য কাজ করছেন তাদের সন্তুষ্টিই ওঁদের কাছে সবচেয়ে বড় award। এমন ব্যক্তিত্ব দের সম্মানিত করে আমাদের দেশবাসীর গৌরব বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি প্রত্যেক পদ্ম পুরস্কার বিজয়ীর নাম এখানে নিতে না পারলেও, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ যে, আপনারা পদ্ম পুরস্কার প্রাপ্ত এই মহানুভব ব্যক্তিত্বদের প্রেরণাদায়ী জীবনের বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানুন এবং বাকিদেরও জানান।
বন্ধুরা, আজ যখন আমরা আজাদী কে অমৃত মহোৎসবের সময়ে গণতন্ত্র দিবসের আলোচনা করছি, সেখানে আমি একটা মনোগ্রাহী বইয়ের কথা বলব। কয়েক সপ্তাহ আগে পাওয়া এই বইতে একটি বেশ ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট নিয়ে চর্চা করা হয়েছে। এই বইটির নাম – India The Mother of Democracy এবং এতে অনেক দুর্দান্ত প্রবন্ধ রয়েছে। ভারত পৃথিবীর সব থেকে বড় গণতন্ত্র এবং ভারতীয় হিসেবে আমাদের কাছে এটা গর্বের বিষয় যে আমাদের দেশ Mother of Democracy-ও। গণতন্ত্র আমাদের শিরা-উপশিরায় আছে, আমাদের সংস্কৃতিতে আছে - এটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আমাদের কর্মকান্ডের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকৃতিগতভাবে, আমরা একটি গণতান্ত্রিক সমাজ । ডঃ আম্বেদকর বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘকে ভারতীয় সংসদের সাথে তুলনা করেছিলেন। তিনি এটিকে এমন একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে বর্ণনা করেন যেখানে Motions, Resolutions, Quorum, ভোটদান এবং ভোট গণনার অনেক নিয়ম ছিল। বাবাসাহেব বিশ্বাস করতেন যে ভগবান বুদ্ধ অবশ্যই সেই সময়ের রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।
তামিলনাড়ুতে একটি ছোট কিন্তু বিখ্যাত গ্রাম আছে – উতিরমেরুর। এখানে পাওয়া ১১০০ থেকে ১২০০ বছর আগের একটি শিলালিপি সারা বিশ্বের কাছে অবাক করার মত। এই শিলালিপিটি যেন একটি mini-constitution। গ্রামসভা কীভাবে পরিচালনা করা উচিত এবং এর সদস্য নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী হওয়া উচিত তা বিশদভাবে এখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমাদের দেশের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের আরেকটি উদাহরণ – দ্বাদশ শতাব্দীর প্রভু বাসবেশ্বরের অনুভব মন্ডপম। এখানে free debate ও আলোচনাকে উৎসাহিত করা হতো। আপনি জানলে অবাক হবেন যে এটা ম্যাগনা কার্টা' রও পূর্বের। ওয়ারাঙ্গলের কাকতিয় বংশের রাজাদের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যও প্রসিদ্ধ ছিল। ভক্তি আন্দোলন পশ্চিম ভারতে গণতন্ত্রের সংস্কৃতিকে উন্নীত করেছিল। বইতে শিখ ধর্মের গণতান্ত্রিক চেতনার উপরেও একটি নিবন্ধকে অন্তর্গত করা হয়েছে যা গুরু নানক দেব জির সর্বসম্মত ভাবে নেওয়া সিদ্ধান্তের উপর আলোকপাত করে।
মধ্য ভারতের ওড়াঁও ও মুন্ডা উপজাতির মধ্যে community driven ও consensus driven decision-এর বিষয়েও ভালো তথ্য রয়েছে এই বইয়ে। আপনি এই বইটি পড়ার পর অনুভব করবেন যে কিভাবে এই দেশের প্রতি অঞ্চলে কয়েক শতাব্দি ধরে গণতন্ত্রের ভাবনা প্রবাহিত হয়েছে। আমাদের প্রতিনিয়ত Mother of democracy-র রূপের বিষয়ে গভীর চিন্তাও করা উচিত, চর্চাও করা উচিত এবং দুনিয়াকে জানানোও উচিত। এতে দেশের মধ্যে গণতন্ত্রের ভাবনা আরো গভীর হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যদি আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করি যে যোগ দিবস ও আমাদের বিভিন্ন ধরনের মোটা শস্য - Millets-এর মধ্যে common কি, তাহলে আপনারা ভাববেন যে এ কি রকম তুলনা? যদি আমি বলি যে এই দুই বিষয়ে কিছু common রয়েছে তাহলে আপনি আশ্চর্য হয়ে যাবেন। আসলে রাষ্ট্রসংঘ International Yoga Day ও International Year of Millets, এই দুই বিষয়ে নির্ণয় ভারতের পাঠানো প্রস্তাবের পর নিয়েছে। দ্বিতীয়তঃ যোগও স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত এবং millets স্বাস্থ্যক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তৃতীয়ত: এবং গুরুত্বপূর্ণ হল যে উভয় প্রচারের ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণের কারণেই বিপ্লব আসছে। যেভাবে মানুষ ব্যাপক স্তরে সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে যোগ ও fitness-কে জীবনের অংশ করে নিয়েছে সেই ভাবেই millets কেও মানুষ ব্যাপকভাবে গ্রহণ করছে। এখন মানুষ millets-কে নিজের খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে। এই পরিবর্তনের অনেক বড় প্রভাবও নজরে পড়ছে। এর ফলে একদিকে ক্ষুদ্র কৃষকরা খুব উৎসাহিত হচ্ছেন যারা বংশপরম্পরায় millets-এর উৎপাদন করতেন। তারা এই জোনে খুব খুশি হবেন যে বিশ্ব এখন millets-এর গুরুত্ব বুঝতে শুরু করেছে। অন্যদিকে FPO ও entrepreneur-রা millets-কে বাজারজাত করা ও তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু করে দিয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের নানদয়াল জেলার বাসিন্দা কে বি রামা সুব্বা রেড্ডিজি millets-এর জন্য ভাল রকমের salaryওয়ালা চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। মায়ের হাতের তৈরি millets-এর খাবারের স্বাদ তার এমনভাবে লেগে রয়েছে যে তিনি তার গ্রামেই বাজরার processing unit শুরু করে দিয়েছেন। সুব্বা রেড্ডিজি সবাইকে বাজারার উপকারিতা জানাচ্ছেন ও তা সুলভে পাওয়ার ব্যবস্থাও করে দিচ্ছেন। মহারাষ্ট্রের আলীবাগের কাছে কেনাড গ্রামের বাসিন্দা শর্মিলা ওসওয়ালজি গত কুড়ি বছর ধরে millets-এর ফলনে unique উপায়ে নিজের অবদান রেখেছেন। তিনি কৃষকদেরকে smart agriculture-এর training দিচ্ছেন। তার চেষ্টার ফলে শুধু millets-এর ফলনই বৃদ্ধি হয়নি, উপরন্তু কৃষকদের আয়ও বৃদ্ধি হয়েছে।
যদি আপনি ছত্রিশগড়ের রায়গর যাওয়ার সুযোগ পান তাহলে সেখানে Millets Cafe অবশ্যই যাবেন। কয়েক মাস শুরু হওয়া এই Millets Cafeতে চিলা, ধোসা, মোমো, পিজা ও মাঞ্চুরিয়ানের মত item খুব popular হচ্ছে।
আমি আপনাদের আর একটা বিষয়ে জিজ্ঞাসা করব? আপনারা হয়তো entrepreneur শব্দটা শুনেছেন, কিন্তু আপনারা Milletpreneurs শুনেছেন কি? উড়িষ্যার Milletpreneurs আজকাল খবরের শিরোনামে রয়েছে। আদিবাসী জেলা সুন্দরগড়ে প্রায় দেড় হাজার মহিলা Self Help Group, Odisha Millets Mission-এর সঙ্গে যুক্ত। এখানে মহিলারা millets দিয়ে cookies, রসগোল্লা গোলাপজাম ও কেক তৈরি করছেন। বাজারে এর খুব demand হওয়ার ফলে মহিলাদের আয়ও অনেক বেড়ে যাচ্ছে। কর্নাটকে কালবুর্গিতে অলন্দ ভূতাঈ-এর Millets Farmers Producer Company গত বছর Indian institute of Millets Research-এর তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু করেছে।
এখানকার খাকরা, বিস্কুট আর লাড্ডু লোকের ভালো লাগছে। কর্নাটকেরই বিদর জেলায় Hulsoor Millets Producer Company'র সঙ্গে যুক্ত মহিলারা মিলেট চাষের পাশাপাশি তার আটাও তৈরি করছে। এতে তাদের উপার্জনও বেশ বেড়ে গেছে। ছত্তিশগড়ের সন্দীপ শর্মাজি প্রাকৃতিক চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত, এখন তার FPO-র সঙ্গে বারোটি রাজ্যের কৃষকরা যুক্ত। বিলাসপুরের এই FPO মিলেটের আট-রকম আটা এবং তা থেকে নানান পদ তৈরি করছে।
বন্ধুরা, এখন ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রমাগত G-20 Summit চলছে, আর আমি অত্যন্ত খুশী যে G-20 Summit দেশের যেখানেই হোক না কেন সেখানে মিলেটস থেকে তৈরী সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবারের কিছু পদ অবশ্যই রাখা হচ্ছে। সেখানে বাজারার খিচুড়ি, পোহা, ক্ষীর এবং রুটির সঙ্গে রাগীর পায়েস, পুরী এবং ধোসার মত বেশ কিছু পদ পরিবেশন করা হচ্ছে। G20'র সমস্ত venue'র Millets Exhibition-এ মিলেটস থেকে তৈরি health drinks, cereals আর noodles-এর showcase করা হয়েছিল। সারা বিশ্বজুড়ে Indian Missions'ও এর জনপ্রিয়তা বাড়ানোর প্রচুর চেষ্টা করছে। আপনারা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন যে আমাদের দেশের এই প্রচেষ্টা আর বিশ্বব্যাপী বেড়ে চলা মিলেটের demand আমাদের ক্ষুদ্রচাষীদের কতটা পরিমাণ শক্তি জোগাবে। আমার এটা দেখেও ভালো লাগে যে, এখন যত ধরনের নতুন নতুন জিনিস মিলেটস থেকে তৈরি হচ্ছে যুব সমাজেরও তা ততটাই পছন্দ হচ্ছে। International Year of Millets-এর এত সুন্দর সূচনা করার জন্য এবং তাকে ক্রমাগত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি “মন কি বাত”-এর সকল শ্রোতাদেরও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যখন কেউ আপনাকে গোয়া'র Tourist Hub-এর ব্যাপারে প্রশ্ন করে তখন আপনার কি মনে হয়? স্বাভাবিকভাবেই গোয়ার কথা উঠলেই সবার আগেই সেখানকার সুন্দর coastline, beaches এবং সুস্বাদু খাবার দাবার ও পানীয়'র কথা মাথায় আসে; কিন্তু গোয়ায় এ মাসে এমন কিছু হয়েছে যা এখন শিরোনামে রয়েছে! আজ মন কি বাত অনুষ্ঠানে সে কথাই আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। ৬ থেকে ৮ই জানুয়ারি, গোয়ার এই event- purple fest, গোয়ার পণজি'তে আয়োজিত হয়েছিল। দিব্যাঙ্গদের কল্যাণার্থে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান ছিল এক স্তন্ত্র প্রয়াস। Purple Festএর জন্য কত বড় সুযোগ তৈরি হয়েছিল তার একটা ধারণা এটা থেকেই পাওয়া যায় যে এখানে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি ভাই-বোনেরা যোগ দিয়েছিল। যারা এখানে এসেছিল তারা মীরামর বীচ ঘোরার আনন্দ উপভোগ করতে পারবে সেকথা ভেবেই অত্যন্ত রোমাঞ্চিত ছিল। আসলে, মীরামর বীচ দিব্যাঙ্গ ভাই-বোনেদের জন্য গোয়ার Accessible বীচগুলোর মধ্যে একটা হয়ে উঠেছে। এখানে Cricket tournament, Table tennis Tournament, Marathon Competition এর সঙ্গে সঙ্গেই এক Deaf-Blind Convention-এরও আয়োজন করা হয়েছিল। এখানে Unique Bird watching program এর সঙ্গে সঙ্গে একটা Film'ও দেখানো হয়েছিল। এর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল যাতে সমস্ত দিব্যাঙ্গ ভাই-বোন এবং বাচ্চারা তার পুরো আনন্দ নিতে পারে। Purple Fest-এর আরো একটা বিশেষত্ব হল যে এখানে আমাদের দেশের Private Sector'ও অংশ নিয়েছিল। তাদের পক্ষ থেকে সেই সব পণ্যের প্রদর্শণ হয়েছিল যা Divyang-friendly। এই Fest-এ তাদের দিক থেকে দিব্যাঙ্গদের উপকারের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির একটা প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। Purple Fest-কে সফল করার জন্য আমি এতে অংশগ্রহণকারী সমস্ত মানুষকে অভিনন্দন জানাই। তার সঙ্গে সেই সমস্ত volunteers'কে অভিনন্দন জানাই যারা এটা organise করার জন্য রাত দিন এক করে দিয়েছিল।
আমার পুরো বিশ্বাস আছে যে , Accessible India-তে আমাদের উদ্দেশ্যকে সফল করতে এই ধরনের অভিযান খুবই কার্যকরী হয়ে উঠবে ।
আমার প্রিয় দেশবাসী , এখন "মন কী বাত"-এ আমি এমন এক বিষয়ে কথা বলবো যাতে আপনাদের আনন্দও হবে , গর্বও হবে আর মন বলে উঠবে -- বাঃ ! ভাই , বাঃ ! মন ভালো হয়ে উঠলো ! দেশের সবথেকে পুরোনো Science Institution-গুলির মধ্যে অন্যতম বেঙ্গালুরুর Indian Institute of Science , অর্থাৎ IISc এক মহৎ দৃষ্টান্ত পেশ করছে । "মন কী বাত"-এ আমি আগে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি যে, এই সংস্থা স্থাপনের নেপথ্যে ভারতের দুই মহান ব্যক্তিত্ব জামশেদজী টাটা ও স্বামী বিবেকানন্দের কতখানি প্রেরণা রয়েছে , এখন আপনাদের আর আমাকে আনন্দিত ও গর্বিত করার মতো কথা হলো যে ২০২২ সালে এই সংস্থার নামে ১৪৫ টি পেটেন্ট (patents) রয়েছে। এর অর্থ প্রতি পাঁচ দিনে দুটি পেটেন্ট। এই রেকর্ড আশ্চর্য! এই সফলতার জন্য আমি IISc-র টীম কে শুভেচ্ছা জানাতে চাই । বন্ধুরা , আজ পেটেন্ট ফিলিং-এ ভারতের স্থান সপ্তম আর ট্রেডমার্কে পঞ্চম । শুধুমাত্র পেটেণ্টের কথা বললে গত পাঁচ বছরে এখানে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে । Global Innovation Index-এও ভারতের ranking-এ উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে এবং ভারত চল্লিশতম স্থানে এসে পৌঁছেছে , যেখানে ২০১৫-তে Global Innovation Index-এ আশিতম স্থানেরও পিছনে ছিলো । আমি আরো একটি খুশির কথা আপনাদের বলতে চাইছি । ভারতে গত এগারো বছরে প্রথমবার Domestic Patent Filling-এর সংখ্যা Foreign Filling-এর থেকে বেশি দেখা গেছে । এটি ভারতের বর্ধিষ্ণু বৈজ্ঞানিক সামর্থ্যেরই পরিচয় বহন করে ।
বন্ধুরা, আমরা সকলেই জানি যে, একবিংশ শতকের Global Economy-তে জ্ঞান বা Knowledge-ই সবার উপরে। আমার বিশ্বাস আছে যে আমাদের Innovator আর তাঁদের পেটেণ্টের শক্তির দ্বারাই ভারতের Techade-এর স্বপ্ন অবশ্যই পূরণ হবে । এর ফলে আমরা সকলে নিজের দেশে তৈরি World Class Technology আর Product-এর পুরোপুরি সুবিধা নিতে পারবো।
আমার প্রিয় দেশবাসী , NaMo App-এ আমি তেলেঙ্গানার ইঞ্জিনিয়ার বিজয় জীর একটি post দেখেছি । এতে বিজয়জী E-Waste বিষয়ে লিখেছেন । বিজয়জীর ইচ্ছে "মন কী বাত"-এ আমি এ বিষয়ে আলোচনা করি । এই কার্যক্রমে আমি আগেও "Waste to Wealth" অর্থাৎ "আবর্জনা থেকে সোনা"-র ("কচড়ে সে কাঞ্চন") বিষয়ে বলেছিলাম , কিন্তু আজ তার সঙ্গে যুক্ত E-Waste । বন্ধুরা , আজ প্রত্যেক ঘরে মোবাইল ফোন , ল্যাপটপ , ট্যাবলেটের মতো যন্ত্র থাকাটা খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে । দেশ জুড়ে এর সংখ্যা হবে বিলিয়নে । আজকের নতুনতম যন্ত্রপাতিই ভবিষ্যতের E-Waste হয়ে ওঠে । যখনই কোনো নতুন যন্ত্র কিনি বা নিজেদের পুরোনো যন্ত্র বদলাই, তখন এটা খেয়াল রাখা জরুরি যে সেগুলি ঠিক ভাবে বাতিল করা হয়েছে , না হয়নি। যদি E-Waste-কে ঠিকভাবে নিষ্পত্তি না করা হয়, তবে তা আমাদের পরিবেশেরও ক্ষতি করে পারে। কিন্তু যদি সাবধানতার সঙ্গে তা করা যায় , তবে এগুলি Recycle, Reuse, ও Circular Economy খুব বড়ো শক্তি হয়ে উঠতে পারে । রাষ্ট্র সঙ্ঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো যে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন টন E-Waste ফেলা হচ্ছে। আপনারা ভাবতে পারছেন যে এটা কত হতে পারে ? মানব ইতিহাসে যত Commercial Plane তৈরি হয়েছে , তার সবগুলির ওজন মেলালেও যত E-Waste বেরোচ্ছে , তার সমান হবে না । এটি এমন , যেন প্রতি সেকেন্ডে আটশো ল্যাপটপ ফেলে দেওয়া হচ্ছে । আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন যে ভিন্ন ভিন্ন process এর মাধ্যমে উৎপন্ন এই e-waste থেকে প্রায় ১৭ রকম প্রেশাস মেটাল নিষ্কাশিত করা যায়। তার মধ্যে গোল্ড, সিলভার, কপার ও নিকেল রয়েছে। তাই e-waste এর সদ্ব্যবহার, "কাচরে কো কাঞ্চন" অর্থাৎ জঞ্জালকে সোনা বানানোর থেকে কম কিছু নয়। এই লক্ষ্যে ইনোভেটিভ কাজ করছে এমন স্টার্টআপের সংখ্যা আজ কম নয়। আজ প্রায় ৫০০ e-waste recycler এই সেক্টরে সংযুক্ত আছে এবং আরো অনেক নতুন উদ্যোগীদেরও এতে শামিল করা হচ্ছে। এই সেক্টর হাজার হাজার মানুষকে সরাসরি রোজগারও দিয়েছে। বেঙ্গালুরুর E-Parisaraa এমনই এক প্রয়াস নিয়েছে। এরা প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ডের মূল্যবান ধাতুকে পৃথক করে স্বদেশী টেকনোলজির বিকাশ ঘটিয়েছে। অনুরূপভাবে মুম্বইয়ের ইকোরিকো (Ecoreco) মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে e-waste সংগ্রহ করার সিস্টেম তৈরি করেছে। উত্তরাখণ্ডের রুরকির এটেরো রিসাইক্লিং (Attero Recycling) তো এই প্রযুক্তিতে দুনিয়া জুড়ে অনেক পেটেন্ট পেয়েছে। তারাও নিজেদের ই-ওয়েস্ট রিসাইক্লিং টেকনোলজি তৈরি করে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছে। ভোপালে মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইট "কবাড়ীওয়ালা"র মাধ্যমে টন টন e-waste একত্রিত করা হচ্ছে। এমন অনেক উদাহরণ আছে। এরা সবাই ভারতকে গ্লোবাল রিসাইক্লিং হাব হিসেবে প্রস্তুত করতে সাহায্য করছেন; কিন্তু এমন ইনিশিয়েটিভগুলির সাফল্যের জন্য একটা জরুরী শর্তও রয়েছে। তা হল, e-waste ডিসপোজাল এর সুরক্ষিত, উপযোগী পদ্ধতিগুলির সম্বন্ধে জনসাধারণকে সচেতন করে যেতে হবে। e-waste নিয়ে কাজ করা মানুষরা বলেন, বর্তমানে প্রতি বছর কেবলমাত্র পনেরো থেকে সতেরো শতাংশ e-waste কেই রিসাইকেল করা হচ্ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ সারা বিশ্বে ক্লাইমেট চেঞ্জ ও বায়োডাইভারসিটির সংরক্ষণ প্রসঙ্গে বহু আলোচনা হয়। এই লক্ষ্যে ভারতের উল্লেখযোগ্য প্রয়াসের বিষয়ে আমরা ক্রমাগত কথা বলে এসেছি। ভারত নিজের wetlands এর জন্য যে কাজ করেছে তা জেনে আপনাদেরও খুব ভালো লাগবে। কিছু শ্রোতা হয়তো ভাবছেন wetlands টা আসলে কী। wetland sites হল সেই সব স্থান যেখানে নরম তুলতুলে মাটির মত জমিতে বছরভর জল জমে থাকে। কিছুদিন পরেই আগামী দোসরা ফেব্রুয়ারি World Wetlands Day। আমাদের পৃথিবীর অস্তিত্বের জন্য Wetlands অত্যন্ত জরুরি কারণ এর ওপর বহু পাখি, জীবজন্তু নির্ভর করে। এটি বায়োডাইভারসিটিকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি ফ্লাড কন্ট্রোল ও গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জও সুনিশ্চিত করে। আপনাদের মধ্যে অনেকেই নিশ্চয়ই জানেন রামসার সাইটস (Ramsar sites) এমনই Wetlands যার ইন্টারন্যাশনাল ইম্পর্টেন্স আছে। ওয়েট ল্যান্ডস যে দেশেই হোক না কেন তাকে অনেক মানদন্ড পূরণ করতে হয়, তারপর তাকে রামসার সাইটস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। রামসার সাইটসে কুড়ি হাজার বা তার বেশি ওয়াটার বার্ডস এর উপস্থিতি আবশ্যিক। বিপুল সংখ্যায় স্থানীয় প্রজাতির মাছ থাকতে হবে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর, অমৃত মহোৎসবের সময়কালে, রামসার সাইটস সম্বন্ধীয় একটা ভালো খবরও আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। আমাদের দেশে এখন রামসার সাইটসের সংখ্যা ৭৫ হয়ে গেছে, যেখানে ২০১৪-র আগে দেশে মাত্র ২৬ টি রামসার সাইটস ছিল। এর জন্য স্থানীয় মানুষেরা প্রশংসার পাত্র, যারা এই বায়োডাইভারসিটি কে সযত্নে লালন করেছেন। প্রকৃতির সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে বাস করার যে শতাব্দী প্রাচীন সংস্কৃতি ও পরম্পরা আমাদের দেশে রয়েছে, এই পরিসংখ্যান তার প্রতিও এক সম্মান জ্ঞাপন। ভারতের এই Wetlands আমাদের প্রাকৃতিক শক্তিরও উদাহরণ। ওড়িশার চিলকা সরোবর ৪০ টিরও বেশি ওয়াটার বার্ড স্পিসিসের আশ্রয়স্থল হিসেবে সুবিদিত। কাইবুল লামজাও (Keibul Lamjao), লোকটাকের (Loktak) swamp deer এর একমাত্র natural habitat রূপে পরিচিত।
তামিলনাড়ুর বেড়ান্থাঙ্গল-কে ২০২২ সালে Ramsar site ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে Bird population সংরক্ষণের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আশেপাশের এলাকার কৃষকদের। কাশ্মীরের পাঞ্জাথ নাগ সম্প্রদায় Annual Fruit blossom Festival এর সময় একদিন বিশেষ করে গ্রামের ঝর্ণাগুলির পরিষ্কারের কাজে লাগে। World Ramsar site এ বেশীরভাগ unique culture heritage আছে। মণিপুরের লোকটাক এবং পবিত্র জলাশয় রেণুকার সঙ্গে সেখানকার সংস্কৃতির একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই রকমের sambhar-এর সম্পর্ক মা দূর্গার অবতার দেবী শাকম্ভরির সঙ্গেও রয়েছে। ভারতে wetlands-এর সম্প্রসারণ সেই মানুষগুলোর জন্যই সম্ভব হচ্ছে, যাঁরা এই Ramsar Site এর আশেপাশে থাকেন। আমি এই ধরনের সব মানুষদের খুবই কদর করে থাকি। “মন কি বাত’-এর সব শ্রোতাদের পক্ষ থেকে ওঁদের জন্য রইল শুভ কামনা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এবার আমাদের দেশে বিশেষ করে উত্তর ভারতে প্রচণ্ড শীত পড়েছে। এই শীতে লোকেরা পাহাড়ে বরফ পড়াও খুব উপভোগ করেছেন। জম্মু ও কাশ্মীরের এমনই কিছু ছবি সারা দেশের মন জয় করে নিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সারা বিশ্বের মানুষ এই ছবিগুলো পছন্দ করছে। প্রতি বছরের মত এবারও আমাদের কাশ্মীর ঘাটি তুষারপাতের ফলে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। বনিহাল থাকে বদগাম যাওয়ার ট্রেনের ভিডিওটি বিশেষ করে সবাই খুব পছন্দ করছে। সুন্দর তুষারপাতে চারদিক বরফের চাদরে ঢেকে গেছে। যাঁরাই দেখছেন বলছেন এই দৃশ্য কোনো রূপকথার দেশের। আবার কেউ বলছেন এই জায়গাটা কোনো বিদেশের নয়, আমাদেরই দেশের কাশ্মীরের ছবি।
একজন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী লিখেছেন- 'এর থেকে স্বর্গ আর কত সুন্দর হবে?’
সত্যিই তো একদম ঠিকই বলেছেন। তাই তো কাশ্মীর কে এই পৃথিবীর ভূ-স্বর্গ বলে।
আপনিও এই ছবিগুলো দেখে কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন নিশ্চয়ই। আমি চাই আপনি নিজে এবং আপনার বন্ধুদেরও নিয়ে যান। কাশ্মীরের বরফে ঢাকা পাহাড়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি দেখার ও জানার মতো আরও অনেক কিছু রয়েছে। যেমন কাশ্মীরের সায়েদাবাদে Winter Games এর আয়োজন করা হয়েছিল। এই গেমসের থিম ছিল- স্নো ক্রিকেট! আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন যে স্নো ক্রিকেট তো বেশ রোমাঞ্চকর খেলা হবে। আপনি একদম ঠিক ভাবছেন। তরুণ কাশ্মিরী যুবকরা বরফের মধ্যে ক্রিকেটকে আরও অদ্ভুত সুন্দর করে তোলে। এর মধ্যে দিয়েই কাশ্মীরে এমন তরুণ খেলোয়াড়দের খোঁজ করা হচ্ছে, যারা পরবর্তী সময়ে টিম ইন্ডিয়াতে জায়গা করে নিতে পারে। এটাও একধরনের খেলো ইন্ডিয়া মুভমেন্টের সম্প্রসারিত অংশ। কাশ্মীরে, যুবকদের মধ্যে, খেলাধুলা নিয়ে, ব্যাপক উৎসাহ বেড়েই চলেছে। আগামী দিনে এই যুবকদের মধ্যে, অনেকেই দেশের জন্য পদক জিতবে, জাতীয় পতাকা ওড়াবে। আমি আপনাদের এই পরামর্শই দেবো, এরপর আপনি যখন কাশ্মীর ভ্রমণের প্ল্যান করবেন, অবশ্যই তখন এই ধরনের আয়োজন দেখার জন্যও সময় বার করবেন। এই অভিজ্ঞতা আপনার ভ্রমণকে আরও বেশি স্মরণীয় করে তুলবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, গণতন্ত্রকে মজবুত করে তোলার প্রয়াস আমাদের নিরন্তর চালিয়ে যেতে হবে। গণতন্ত্র মজবুত হয় জনগণের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে, সবার চেষ্টায়, দেশের প্রতি নিজ নিজ কর্তব্য পালনের মধ্যে দিয়ে, আর আমার সন্তুষ্টি এটাই যে আমাদের 'মন কি বাত' এইরকম কর্তব্যনিষ্ঠ সৈন্যদের শক্তিশালী আওয়াজ। পরেরবার আবার দেখা হবে এইরকম কর্তব্যনিষ্ঠ মানুষদের হৃদয়স্পর্শী এবং প্রেরণামূলক কাহিনী সঙ্গে নিয়ে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ আমরা “মন কি বাতের” ছিয়ানব্বইতম পর্বে একসঙ্গে মিলিত হচ্ছি। “মন কি বাতের” আগামী পর্ব ২০২৩ সালের প্রথম পর্ব হবে। আপনারা যে সব বার্তা পাঠিয়েছেন তাতে বিদায়ী ২০২২ সাল সম্পর্কে আলোচনা করার কথাও আগ্রহ নিয়ে বলেছেন। অতীতের অবলোকন চিরকাল আমাদের বর্তমান আর ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতির প্রেরণা দেয়। ২০২২ সালে দেশের মানুষের সামর্থ্য, তাদের সহযোগিতা, তাদের সঙ্কল্প, তাদের সাফল্যের বিস্তার এতটাই বেশি ছিল যে “মন কি বাত”-এ সবকিছুর বর্ণনা করা কঠিন হবে। সত্যিই ২০২২ অনেক দিক থেকে প্রেরণাদায়ী ছিল, অদ্ভূত ছিল। এই বছর ভারত নিজের স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্ণ করেছে আর এই বছরই অমৃতকালের প্রারম্ভ হয়েছে। এই বছর দেশ নতুন গতি পেয়েছে, প্রত্যেক দেশবাসী একটার পর একটা বড় কাজ করেছেন। ২০২২ সালের বিভিন্ন সফলতা আজ গোটা বিশ্বে ভারতের জন্য এক বিশেষ স্থান নির্মাণ করেছে। ২০২২ অর্থাৎ ভারতের বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থব্যবস্থার মর্যাদা অর্জন করা, ২০২২ অর্থাৎ ভারতের ২২০ কোটি ভ্যাকসিনের অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যান পার করে যাওয়ার রেকর্ড, ২০২২ অর্থাৎ রপ্তানিতে ভারতের চার’শো বিলিয়ন ডলারের আশ্চর্য পরিসংখ্যান অতিক্রম করে যাওয়া, ২০২২ অর্থাৎ দেশে জনে-জনে 'আত্মনির্ভর ভারত'এর সঙ্কল্প গ্রহণ করা, প্রয়োগ করে দেখানো, ২০২২ অর্থাৎ ভারতের প্রথম স্বদেশী এয়ারক্র্যাফ্ট কোরিয়ার আই-এন-এস বিক্রান্তকে স্বাগত জানানো, ২০২২ অর্থাৎ স্পেস, ড্রোন আর ডিফেন্স সেক্টরে ভারতের সমূহ অগ্রগতি, ২০২২ অর্থাৎ সব ক্ষেত্রে ভারতের দাপট। খেলাধুলোর ময়দানেও, সেটা কমনওয়েলথ গেমসেই হোক অথবা আমাদের মহিলা হকি টিমের জয়, আমাদের তরুণরা জবরদস্ত সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছে।
বন্ধুরা, এই সব কিছুর সঙ্গে আরও একটা কারণে ২০২২ সালকে মনে করা হবে। সেটা হল 'এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত' ভাবনার বিস্তার। দেশের মানুষ একতা আর সংহতির উদযাপনের জন্য অনেক অদ্ভূত আয়োজন করেছিলেন। গুজরাতের মাধবপুর মেলা হোক যেখানে রুক্মিণী বিবাহ আর ভগবান কৃষ্ণের উত্তর-পূর্বের নানা সম্পর্ক উদযাপন করা হয় বা কাশী-তমিল সঙ্গমম হোক, এই সব পর্বের মধ্যেও একতার নানা বর্ণ ধরা পড়েছে। ২০২২ সালে দেশবাসীরা আর এক অমর ইতিহাস রচনা করেছেন। অগাস্ট মাসে চলা 'হর ঘর তিরঙ্গা' অভিযান কেই বা ভুলতে পারবে? এ এমন এক মুহূর্ত যা সব দেশবাসীর পক্ষে রোমহর্ষক ছিল। স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছরের এই অভিযানে গোটা দেশ তিরঙ্গাময় হয়ে গিয়েছিল। ছ'কোটিরও বেশি মানুষ তো তিরঙ্গার সঙ্গে সেল্ফি তুলে পাঠিয়েছেন। আজাদীর এই অমৃত মহোৎসব আগামী বছরও একইভাবে চলবে - অমৃতকালের ভীতকে আরও মজবুত করবে।
বন্ধুরা, এই বছর ভারত জি টোয়েন্টি গোষ্ঠীর অধ্যক্ষতা করার দায়িত্ব পেয়েছিল। আমি গতবার এ ব্যাপারে বিস্তারিত চর্চা করেছি। ২০২৩ সালে জি টোয়েন্টির উৎসাহকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে আমাদের, এক জনআন্দোলনের রূপ দিতে হবে এই আয়োজনকে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ সারা বিশ্বে বড়দিনের উৎসবও আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হচ্ছে। এটি যিশু খ্রিস্টের জীবন এবং শিক্ষাকে স্মরণ করার একটি দিন। আমি আপনাদের সকলকে বড়দিনের অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুরা, আজ আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় অটল বিহারী বাজপেয়ী জিরও জন্মদিন। তিনি একজন মহান রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন যিনি দেশকে অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রত্যেক ভারতীয়ের হৃদয়ে তাঁর একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। আমি কলকাতা থেকে আস্থাজির একটি চিঠি পেয়েছি। এই চিঠিতে তিনি তার সাম্প্রতিক দিল্লি সফরের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন যে সেই সময় তিনি PM Museum পরিদর্শন করেছিলেন। এই মিউজিয়ামে অটলজির গ্যালারি তাঁর খুব পছন্দ হয়েছিল। সেখানে অটলজির সঙ্গে ক্লিক করা ছবি তাঁর কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। অটলজির গ্যালারিতে, আমরা দেশের জন্য তাঁর মূল্যবান অবদানের ঝলক দেখতে পাই। পরিকাঠামো হোক, শিক্ষা হোক বা বিদেশনীতি, প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি ভারতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কাজ করেছেন। আমি আরও একবার অটলজিকে অন্তর থেকে প্রণাম জানাই।
বন্ধুরা, আগামীকাল ২৬-এ ডিসেম্বর 'বীর বাল দিবস' এবং এই উপলক্ষে আমি দিল্লিতে সাহেবজাদা জোরাবার সিং জি এবং সাহেবজাদা ফতেহ সিং জি-এর বলিদানকে উৎসর্গিকৃত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সৌভাগ্য লাভ করব। দেশ সাহেবজাদে ও মাতা গুজরির বলিদানকে চিরকাল মনে রাখবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের এখানে বলা হয় –
‘সত্যম্ কিম প্রমানম্, প্রত্যক্ষম কিম প্রমানম
অর্থাৎ সত্যের প্রমাণের প্রয়োজন হয় না, যা প্রত্যক্ষ তারও প্রমাণের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যখন আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কথা আসে, তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল – প্রমাণ, Evidance । বহু শতাব্দী ধরে ভারতীয় জীবনের একটি অংশ - যোগ এবং আয়ুর্বেদ। আমাদের শাস্ত্রে Evidence Based Research-এর অভাব, যা সবসময়ই একটি চ্যালেঞ্জ ! ফলাফল দৃশ্যমান, কিন্তু প্রমাণ নেই । কিন্তু, আমি খুশি যে Evidence Based Medicine এর যুগে, যোগ এবং আয়ুর্বেদ এখন আধুনিক যুগের পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হচ্ছে । আপনারা সবাই মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের কথা শুনে থাকবেন। এই প্রতিষ্ঠানটি Recharch, Inovation এবং ক্যান্সার কেয়ার-এ অনেক সুনাম অর্জন করেছে। এই কেন্দ্রের একটি Intensive Research-এ জানা গিয়েছে যে যোগব্যায়াম স্তন ক্যান্সার রোগীদের জন্য খুব কার্যকর। টাটা মেমোরিয়াল সেন্টার আমেরিকায় অনুষ্ঠিত অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এক স্তন ক্যান্সার সম্মেলনে তাদের গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেছে। এই ফলাফল বিশ্বের বড় বড় বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কারণ, টাটা মেমোরিয়াল সেন্টার প্রমান সহকারে জানিয়েছে কীভাবে রোগীরা যোগব্যায়াম থেকে উপকৃত হয়েছেন। এই কেন্দ্রের গবেষণা অনুসারে, নিয়মিত যোগব্যায়াম অভ্যাসে স্তন ক্যান্সারের রোগীদের, রোগের পুনরাবৃত্তি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি ১৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।
ভারতীয় পারম্পরিক চিকিৎসার এটি প্রথম উদাহরণ যার পশ্চিমী কড়া মাপদন্ডে পরখ হয়েছে। এর পাশাপাশি, এটি প্রথম study, যাতে Brest Cancer আক্রান্ত মহিলাদের যোগ এর কারণে quality of life এর উন্নতি হওয়ার কথা জানা গেছে। শুধু তাই নয়, long term benefits এর ব্যাপারেও জানা গেছে। Tata Memorial Centre নিজেদের পরীক্ষার এই ফলাফল প্যারিসের European Society of Medical Oncology র সম্মেলনে উপস্থাপিত করেছে।
বন্ধুরা, আজকের সময়ে ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি যত evidence based হবে, তত বেশী গোটা দুনিয়ায় তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। এই ভাবনাকে মাথায় রেখে দিল্লীর AIIMSএ এক প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। এখানে আমাদের পারম্পরিক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলিকে validate করার জন্য, ছয় বছর আগে Centre for integrative medicine and research গঠন করা হয়। এখানে latest modern techniques এবং research methods ব্যবহার করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যেই স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক পত্রিকায় ২০টি পেপার প্রকাশিত করে ফেলেছে। American College of Cardiology র জার্নালে প্রকাশিত পেপারে syncope (সিঙ্কপী) তে পীড়িত রুগীদের যোগ এর দ্বারা সুফল লাভের কথা বলা হয়েছে। ঠিক এইভাবে, যোগ কিভাবে মাইগ্রেনে রুগীদের আরাম দিয়েছে সেই কথা বলা হয়েছে Neurology Journal এর পেপারে। এছাড়াও, আরও অন্যান্য অসুখে যোগ কিভাবে উপকারী সেই নিয়ে study চলছে, যেমন heart diseases, depression, sleep disorder, pregnancy র সময়ে মহিলাদের নানা শারীরিক সমস্যা ইত্যাদি।
বন্ধুরা, কিছুদিন আগেই আমি গোয়াতে ছিলাম, World Ayurvedic Congress-এর জন্য। এখানে ৪০ টি দেশের ডেলিগেটরা অংশগ্রহণ করেন এবং এখানে ৫৫০ এরও বেশী Scientific Paper Present করা হয়। ভারত সহ গোটা দুনিয়ার ২১৫ টি কোম্পানি এখানকার Exhibition এ তাদের Product Display করে। চারদিন ব্যাপী এই expo তে এক লাখেরও বেশী মানুষ আয়ুর্বেদের সংশ্লিষ্ট তাদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন, enjoy করেন। এই Ayurveda Congress-এও আমি সারা বিশ্ব থেকে আসা আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞদের সামনে evidence based research বিষয়টির ওপর জোর দিই। যেভাবে এই বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর সময়ে আমরা যোগ ও আয়ুর্বেদের শক্তি সকলে দেখছি, এই ক্ষেত্রে Evidence Based Research আগামীতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হবে। আমার আপনাদের কাছে অনুরোধ, যোগ, আয়ুর্বেদ তথা আমাদের পারম্পরিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে যদি আপনাদের কাছে কোনো তথ্য থাকে তাহলে তা অবশ্যই স্যোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বিগত কিছু বছরে আমরা স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জকে পরাজিত করতে পেরেছি। এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমাদের Medical Experts, Scientists ও দেশবাসীর ইচ্ছাশক্তি। আমরা ভারত থেকে Smallpox, Polio ও ‘Guinea Worm'-এর মত রোগকে শেষ করে দেখিয়েছি।
আজ ‘মন কি বাত'-এর শ্রোতাদের আমি আরো এক চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জানাতে চাই, যা এখন শেষের কাছাকাছি চলে এসেছে। এই সমস্যা, এই রোগ হলো কালা জ্বর। এই রোগের সংক্রমণ Sand Fly অর্থাৎ বেলে মাছির কামড়ানোর ফলে ছড়ায়। যখন কেউ কালাজ্বরে আক্রান্ত হন তখন তার কয়েক মাস যাবত জ্বর হয়, রক্তাল্পতা, শারীরিক দুর্বলতা ও ওজন কমে যায়। এই রোগে আবালবৃদ্ধবণিতা, যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু সকলের প্রচেষ্টায়, কালা জ্বর নামক এই রোগ, এবার দ্রুতগতিতে শেষের পথে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত কালা জ্বরের প্রকোপ চার রাজ্যের ৫০ টিরও বেশি জেলায় ছড়িয়েছিল। কিন্তু এখন তা বিহার ও ঝাড়খন্ডের চারটি জেলায় সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। আমার বিশ্বাস, বিহার ঝাড়খণ্ডের মানুষের চেষ্টা ও তাদের সচেতনতা এই চার জেলা থেকেও কালা জ্বরকে নির্মূল করতে সরকারের এই প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করবে। কালা জ্বর আক্রান্ত জায়গার বাসিন্দাদের কাছে আমার অনুরোধ যে তারা দু’টি বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন। প্রথমত, Sand Fly বা বেলে মাছির নিয়ন্ত্রণ, ও দ্বিতীয়তঃ দ্রুততার সঙ্গে রোগের সনাক্তকরণ ও তার সম্পূর্ণ চিকিৎসা। কালা জ্বরের চিকিৎসা খুবই সহজ, চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধ খুবই কার্যকর। শুধু আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। জ্বর হলে অবহেলা করবেন না ও বেলে মাছি মারার জন্য দরকারি কীটনাশক ব্যবহার করতে থাকুন। ভাবুন, যখন আমাদের দেশ কালা জ্বর মুক্ত হয়ে যাবে, তখন তা আমাদের সকলের জন্য কতটা খুশির বিষয় হয়ে উঠবে। এই ভাবনা থেকেই আমাদের প্রচেষ্টা যে আমরা ভারতকে ২০২৫ এর মধ্যে টি. বি. মুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি। আপনারা জানেন, বিগত দিনে যখন টি. বি. মুক্ত ভারত অভিযান শুরু হয়েছিল তখন হাজারো মানুষ টি. বি. রোগীদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। তারা নিক্ষয় মিত্র হয়ে টি. বি. রোগীদের দেখাশোনা করছেন, তাদের আর্থিক সাহায্য করছেন। জনসেবা ও জনগণের অংশগ্রহণের এই শক্তি, প্রতিটি কঠিন লক্ষ্য অর্জন করে দেখায়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের পরম্পরা ও সংস্কৃতি মা গঙ্গার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। গঙ্গাজল আমাদের জীবনধারার অভিন্ন অংশ এবং আমাদের শাস্ত্রেও বলা হয়েছে:
নমামি গঙ্গে তব্ পাদ্ পঙ্কজং,
সুর অসুরৈঃ বন্দিত দিব্য রুপম্।
ভুক্তিম্ চ মুক্তিম্ চ দদাসি নিত্যম্,
ভাব অনুসারেণ সদা নরাণাম্।।
অর্থাৎ, হে মা গঙ্গা আপনি আপনার ভক্তদের তাদের ভাবনার অনুরূপ সাংসারিক সুখ, আনন্দ, আর মোক্ষ প্রদান করুন। সবাই আপনার পবিত্র চরণের বন্দনা করেন। আমিও আপনার পবিত্র চরণে আমার প্রণাম অর্পণ করছি। শতাব্দীর পর শতাব্দী কলকল করে বহমান মা গঙ্গাকে স্বচ্ছ রাখা আমাদের সবারই অনেক বড় দায়িত্ব। এই উদ্দেশ্য নিয়ে আট বছর আগে আমরা “নমামি গঙ্গে” অভিযান শুরু করেছিলাম। আমাদের সবার জন্য এটি অত্যন্ত গৌরবজনক যে ভারতের এই প্রচেষ্টা পৃথিবীব্যাপী প্রশংসা পাচ্ছে। ইউনাইটেড নেশনস “নমামি গঙ্গে” মিশনকে ইকোসিস্টেম রিস্টোর করতে পারার টপ টেন ইনিশিয়েটিভ এর মধ্যে সামিল করেছে। এটি আরও খুশির কথা যে সমগ্র বিশ্বে ১৬০ টি এরকম initiative-এর মধ্যে “নমামি গঙ্গে” এই সম্মান পেয়েছে।
বন্ধুরা, “নমামি গঙ্গে” অভিযানের সবথেকে বড় চালিকা শক্তি হলো মানুষজনের অক্লান্ত সহযোগিতা। “নমামি গঙ্গে” অভিযানে গঙ্গা প্রহরী এবং গঙ্গা দূত এর ভূমিকা খুব গুরুত্ব পূর্ণ। তারা গাছ লাগানো, ঘাট পরিষ্কার, গঙ্গা আরতি, পথ নাটিকা, পেইন্টিং, আর কবিতার মাধ্যমে সচেতনতা প্রচার করে চলেছেন। এই অভিযান থেকে bio-diversity তেও অনেক বদল দেখা যাচ্ছে। ইলিশ মাছ, গঙ্গা ডলফিন এবং কচ্ছপের বিভিন্ন প্রজাতির সংখ্যায় অনেক বৃদ্ধি হয়েছে। গঙ্গার ইকোসিস্টেম পরিষ্কার হওয়ার জন্য জীবন ধারণের অন্যান্য সুযোগও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে "জলজ আজিবিকা মডেল"-এর ব্যাপারে আমি আলোচনা করতে চাই, যেটা বায়োডাইভার্সিটি-কে মাথায় রেখে বানানো হয়েছে। এই tourism based boat safari ২৬টি লোকেশনে শুরু করা হয়েছে। স্বভাবতই “নমামি গঙ্গে” মিশনের বিস্তার, এর সীমানা, নদীর পরিচ্ছন্নতার থেকেও অনেক বড়। এটি একদিকে যেমন আমাদের ইচ্ছা শক্তি ও নিরলস প্রচেষ্টার একটি প্রত্যক্ষ প্রমাণ তেমনি পরিবেশ সংরক্ষণের দিকে বিশ্বকেও এক নতুন পথ দেখাতে চলেছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যখন আমাদের সঙ্কল্প ও শক্তি মজবুত হয়, তখন বড় থেকে বড় চ্যালেঞ্জও সহজ হয়ে যায়। এর উদাহরণ স্থাপন করেছেন সিকিম এর থেগু গ্রামের সাঙ্গে শেরপাজি। ইনি বিগত ১৪ বছর থেকে ১২,০০০ ফুট এরও বেশি উচ্চতায় পরিবেশ সংরক্ষণ এর কাজ করে যাচ্ছেন। সাঙ্গে জি সাংস্কৃতিক ও পৌরাণিক মাহাত্ম্য যুক্ত Tsomgo (সোমগো) lake-কে পরিষ্কার রাখার সংকল্প গ্রহণ করেছেন। নিজের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় উনি এই গ্লেসিয়ার লেক এর রং রূপই বদলে দিয়েছেন। ২০০৮ সালে সাঙ্গে শেরপা জি যখন স্বছতার এই অভিযান শুরু করেছিলেন তখন উনি অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন।
কিন্তু দেখতে দেখতে তাঁর এই মহৎ কাজে যুবসমাজ এবং গ্রামবাসীদের পাশাপাশি পঞ্চায়েতের তরফ থেকেও প্রচুর সহযোগিতা মেলা শুরু হয়। এখন যদি আপনি Tsomgo (সোমগো) Lake দেখতে যান, তাহলে দেখতে পাবেন ওখানে চারপাশে বড় বড় Garbage Bins রয়েছে। এখন এখানে জমা হওয়া আবর্জনা recycling-এর জন্য পাঠানো হয়। এখানে যে সব পর্যটকেরা আসেন, তাদেরকে কাপড়ের তৈরী Garbage bags-ও দেওয়া হয়ে থাকে যাতে তারা যেখানে সেখানে আবর্জনা না ফেলেন। এখন অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এই হ্রদটিকে দেখার জন্য প্রতিবছর প্রায় ৫ লক্ষ পর্যটক এখানে আসেন। Tsomgo (সোমগো) lake সংরক্ষণের এই বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সাঙ্গে শেরপা-জি'কে বহু সংস্থা সম্মান-প্রদান'ও করেছে। এই সমস্ত প্রয়াসের কারণেই সিকিমকে বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন রাজ্যগুলির মধ্যে গণ্য করা হয়। আমি সাঙ্গে শেরপা-জি এবং তাঁর সহযোগীদের পাশাপাশি সারাদেশ জুড়ে যাঁরা পরিবেশ সংরক্ষণের মত ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত, সেই সমস্ত মানুষদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
বন্ধুরা, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে স্বচ্ছ-ভারত মিশন আজ প্রত্যেক ভারতবাসীর মনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। ২০১৪ সালে এই জনবিপ্লব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একে এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিতে আমাদের দেশের মানুষ বহু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। আর এই উদ্যোগ কেবলমাত্র সমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, তা সরকারি দপ্তরের অভ্যন্তরেও সমানভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ক্রমাগত এই প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ-- জঞ্জাল-আবর্জনা পরিষ্কার হওয়ার ফলে, অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরানোর ফলে দপ্তরে অনেক জায়গা বেরিয়ে আসে, নতুন space পাওয়া যায়। আগে, জায়গার অভাবে অনেক দূর-দূরান্ত পর্যন্ত ভাড়া নিয়ে অফিস চালাতে হতো। বর্তমানে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য এত জায়গা বেরিয়ে আসছে, যে এখন একই স্থানে সমস্ত দফতরকে জায়গা করে দেওয়া যাচ্ছে। কিছুদিন আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক-- মুম্বাই, আমেদাবাদ, কলকাতা ও শিলং সহ বহু শহরে এমনই উদ্যোগ নিয়েছে এবং আর তার ফলে আজ তাদের দুই-তিন তলা বিল্ডিং-এর সমান বহু জায়গা যা নতুন করে কাজে লাগানো যায়, তা মিলে গিয়েছে। সম্পদের optimum utilization-এর যে উত্তম অনুভূতি আমরা আপনা আপনিই পাচ্ছি তা এই স্বচ্ছতার কারণে। সমাজে, প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটা শহরে, একইভাবে বিভিন্ন দপ্তরে এই উদ্যোগ সমস্ত দিক থেকে সমগ্র দেশের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী প্রমাণিত হচ্ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী। আমাদের দেশে নিজেদের শিল্প ও সংস্কৃতিকে ঘিরে আমরা নতুন ভাবে সজাগ হয়েছি। একটি নতুন চেতনা জেগে উঠেছে। “মন কি বাতে” আমরা এই ধরনের চর্চা প্রায়শই করে থাকি। যেমন শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য, সমাজের সমষ্টিগত সম্পদ, এইরকমই এটা কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সমাজের ওপরেই। এইরকমই একটি সফল প্রয়াস লাক্ষাদ্বীপে হচ্ছে। এখানে কল্পেনি দ্বীপে একটি ক্লাব আছে যার নাম কুমেল ব্রাদার্স চ্যালেঞ্জার্স ক্লাব। এই ক্লাব যুবকদের স্থানীয় ঐতিহ্যপূর্ণ কলা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য উৎসাহ প্রদান করে। এখানে যুবকদের স্থানীয় লোকশিল্প কোলকলি, পরীচাকলি, কিলিপ্পট্ট্ আর পারম্পরিক গানের ট্রেনিং দেওয়া হয়। অর্থাৎ পুরনো ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের হাতে সুরক্ষিত থাকছে, আগে এগিয়ে চলেছে, এবং বন্ধুরা, আমি খুবই খুশি যে এই ধরনের প্রয়াস শুধু দেশে নয় বিদেশেও হচ্ছে। সম্প্রতি জানা গেছে যে দুবাইয়ের কালারি ক্লাব গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখিয়েছে। কেউ ভাবতেই পারে দুবাইয়ের ক্লাব রেকর্ড করেছে তো তাতে ভারতের কি? আসলে এই রেকর্ড ভারতের প্রাচীন মার্শাল আর্ট কলারীপট্টু-র সঙ্গে জড়িত। এই রেকর্ড একসঙ্গে করা সর্বাধিক মানুষের কলারীর প্রদর্শন। দুবাইতে কলারী ক্লাব, দুবাই পুলিশের সহযোগে এই প্ল্যানটি করে এবং UAE-র রাষ্ট্রীয় দিবসে প্রদর্শন করে। এই অনুষ্ঠানে চার বছরের শিশু থেকে শুরু করে ষাট বছরের মানুষেরা কলারীর দক্ষতার সর্বোত্তম ভাবে প্রদর্শন করে। ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্ম কিভাবে একটি প্রাচীন পরম্পরাকে গভীর মনোযোগের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে চলেছে, এটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
বন্ধুরা, “মন কি বাতের” শ্রোতাদের আমি কর্নাটকের গডক জেলার বাসিন্দা কেমোশ্রী জি-এর সম্বন্ধে জানাতে চাই। কেমশ্রী জি দক্ষিণে কর্নাটকের কলা-সংস্কৃতিকে পুণর্জীবিত করার লক্ষ্যে বিগত ২৫ বছর ধরে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। আপনি কল্পনা করতে পারেন কত দীর্ঘ ওঁর তপস্যা। আগে তো উনি হোটেল ম্যানেজমেন্ট এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু নিজের সংস্কৃতি ও পরম্পরা নিয়ে ওঁর টান এত গভীর ছিল যে এটাকেই তিনি জীবনের মিশন বানিয়ে নিয়েছেন। উনি “কলা চেতনা” নামক একটি মঞ্চ বানিয়েছেন। এই মঞ্চ আজ কর্নাটকের এবং দেশ-বিদেশের কলাকুশলীদের নিয়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজিত করে। এখানে লোকাল আর্ট এবং কালচারকে প্রমোট করার জন্য নানা ধরনের উদ্ভাবনী কাজকর্ম হয়।
বন্ধুগণ, কলা সংস্কৃতির প্রতি দেশবাসীর এই উৎসাহ নিজেদের ঐতিহ্যের প্রতি গর্বের ভাবনারই প্রকাশ। আমাদের দেশের নানা কোনায়, এরকম কতইনা রঙ ছড়িয়ে আছে। আমাদের উচিত সেগুলোকে সাজিয়ে গুছিয়ে যত্নে সংরক্ষণের জন্য নিরন্তর চেষ্টা করে যাওয়া।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দেশের বহু জায়গায় বাঁশ দিয়ে অনেক সুন্দর ও উপযোগী দ্রব্য তৈরি করা হয়। বিশেষ করে জনজাতি অঞ্চলে বাঁশের দক্ষ কারিগর ও শিল্পীরা রয়েছেন। যখন থেকে দেশে বাঁশের সঙ্গে সম্পর্কিত অতীতের আইন কানুন বদলানো হয়েছে তখন থেকে এর একটা বড় বাজার গড়ে উঠেছে। মহারাষ্ট্রের পালঘরের মতো স্থানেও জনজাতি সমাজের মানুষেরা বাঁশ দিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর প্রোডাক্ট তৈরি করছেন। বাঁশ দিয়ে তৈরি বাক্স, চেয়ার, চায়ের পাত্র, ঝুড়ি, ট্রে ইত্যাদি জিনিস খুব জনপ্রিয় হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই শিল্পীরা bamboo ঘাস দিয়ে খুব সুন্দর পোশাক ও সাজগোজের জিনিসও তৈরি করছেন। এতে জনজাতি মহিলাদের উপার্জনও হচ্ছে, আবার তাঁদের দক্ষতার পরিচয়ও সবাই পাচ্ছেন।
বন্ধুরা, কর্নাটকের এক দম্পতির সুপারির তন্তুর সাহায্যে তৈরি বহু ইউনিক প্রোডাক্টস ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট পর্যন্ত পৌঁছেছে। কর্নাটকের শিবমোগার এই দম্পতি হলেন শ্রীমান সুরেশ আর ওঁর স্ত্রী শ্রীমতি মৈথিলী। এঁরা সুপারির তন্তু দিয়ে ট্রে, প্লেট, হ্যান্ডব্যাগ থেকে শুরু করে বহু ডেকোরেটিভ জিনিস বানাচ্ছেন। এমন তন্তু দিয়ে বানানো চপ্পলও আজকাল মানুষ খুব পছন্দ করছেন। তাঁদের প্রোডাক্টস আজ লন্ডন ও ইউরোপের বাজারেও বিক্রি হচ্ছে। এটাই তো আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ আর পরম্পরাগত দক্ষতার গুণ যা সবাই পছন্দ করছেন, ভারতের এই পরম্পরাগত দক্ষতায় সারা দুনিয়া সাসটেনেবল ফিউচার এর দিশা খুঁজে পাচ্ছে। আমাদের নিজেদেরও এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আরো বেশি সচেতন থাকতে হবে। আমরা নিজেরাও যেন এমন স্বদেশী ও লোকাল প্রোডাক্ট বেশি করে ব্যবহার করি ও অন্যদেরও উপহার দিই। এতে আমাদের পরিচয়ও দৃঢ় হবে, স্থানীয় অর্থ ব্যবস্থাও মজবুত হবে এবং অধিক সংখ্যায় মানুষের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন আমরা ধীরে ধীরে “মন কি বাত” এর ১০০তম পর্বের অভূতপূর্ব মুহূর্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। আমি অনেক দেশবাসীর চিঠি পেয়েছি যাতে তাঁরা ১০০তম পর্বের বিষয়ে উৎসাহ ভরে জানতে চেয়েছেন। ১০০ তম পর্বে আমরা কী কথা বলব, সেই পর্বকে কীভাবে বিশেষ করে তুলব সে ব্যাপারে আপনারা আমাকে পরামর্শ দিলে আমার খুব ভালো লাগবে। আগামী পর্বে আমরা ২০২৩ সালে মিলিত হব। আমি আপনাদের সবাইকে ২০২৩ এর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই বছরটাও দেশের জন্য স্মরণীয় হোক, দেশ নতুন নতুন শিখর স্পর্শ করুক - আমাদের সবাই মিলে এই সংকল্প করতে হবে ও তাকে বাস্তব রূপও দিতে হবে। এ সময় বহু মানুষই ছুটির মেজাজে আছেন। আপনারা এই উৎসবের, অবসরের আনন্দ খুব ভালোভাবে উপভোগ করুন, কিন্তু একটু সতর্কও থাকুন।
আপনারাও দেখছেন পৃথিবীর অনেক দেশে করোনা বাড়ছে। তাই আমাদের মাস্ক আর হাত ধোয়ার মতো সাবধানতার প্রতি আরো বেশি করে মনোযোগী হতে হবে। আমরা সাবধান থাকলে সুরক্ষিতও থাকব আর আমাদের আনন্দে কোন বাধাও পড়বে না। এ কথার সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের সবাইকে আরো একবার শুভকামনা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। ‘মন কি বাত’-এ আবার একবার আপনাদের সবাইকে অনেক-অনেক স্বাগত। এই অনুষ্ঠান পঁচানব্বইতম পর্ব। আমরা খুব দ্রুততার সঙ্গে “মন কি বাত”-এর শততম পর্বের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। এই অনুষ্ঠান আমার জন্য দেশের একশো তিরিশ কোটি দেশবাসীর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আর এক মাধ্যম। প্রত্যেক পর্বের আগে, গ্রাম ও শহর থেকে আসা বহু চিঠি পড়া, বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রবীণদের অডিও মেসেজ শোনা, এটা আমার জন্য এক আধ্যাত্মিক অনুভবের মত।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানের আরম্ভ আমি এক অনুপম উপহারের আলোচনা দিয়ে করতে চাই। তেলেঙ্গানার রাজন্না সির্সিল্লা জেলার এক তন্তুবায় ভাই হলেন ইয়েলধী হরিপ্রসাদ গারু। উনি নিজের হাতে বুনে আমাকে জি-টুয়েন্টির এই লোগো পাঠিয়েছেন। এই দুর্দান্ত উপহার দেখে তো আমি হতচকিত হয়ে গিয়েছি। হরিপ্রসাদজী নিজের শিল্পে এতটাই নৈপুণ্য অর্জন করেছেন যে উনি সবার নজর কেড়ে নেন। হাতে বোনা জি-টুয়েন্টির এই লোগোর সঙ্গে হরিপ্রসাদজী আমাকে একটা চিঠিও পাঠিয়েছেন। এতে উনি লিখেছেন যে আগামী বছর জি-টুয়েন্টির শিখর সম্মেলনের আয়োজক হওয়া ভারতের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। দেশের এই মর্যাদা পাওয়ার আনন্দে উনি জি-টুয়েন্টির এই লোগো নিজের হাতে তৈরি করেছেন। বয়নের এই অসামান্য প্রতিভা উনি বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার হিসাবে পেয়েছেন আর আজ উনি পুরো প্যাশনের সঙ্গে এই কাজে যুক্ত।
বন্ধুরা, কিছু দিন আগেই জি-টুয়েন্টির লোগো আর ভারতের প্রেসিডেন্সি সংক্রান্ত ওয়াবসাইট উদ্বোধনের সুযোগ হয়েছে আমার। এই লোগোর নির্বাচন এক পাবলিক কনটেস্টের মাধ্যমে হয়েছিল। যখন আমার কাছে হরিপ্রসাদ গারুর পাঠানো এই উপহার পৌঁছল, তখন আমার মনে আর একটা ভাবনা এল। তেলেঙ্গানার কোনও জেলায় বসে থাকা ব্যক্তিও জি-টুয়েন্টির মত সম্মেলনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত বলে বোধ করতে পারেন, এটা দেখে আমার খুব ভালো লাগল। আজ হরিপ্রসাদ গারুর মত অনেক মানুষ আমাকে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছেন যে দেশ এত বড় সামিট আয়োজনের সুযোগ পাওয়ায় ওঁদের বুক গর্বে ফুলে গিয়েছে। আমি আপনাদের পুণের বাসিন্দা সুব্বা রাও চিল্লারা জী আর কলকাতার তুষার জগমোহনের বার্তার উল্লেখও করব। ওঁরা জি-টুয়েন্টি নিয়ে ভারতের প্রো-অ্যাকটিভ উদ্যোগের খুব প্রশংসা করেছেন।
বন্ধুরা, জি-টুয়েন্টির বিশ্ব জনসংখ্যায় দুই-তৃতীয়াংশ, বিশ্ব বাণিজ্যে তিন-চতুর্থাংশ আর বিশ্ব জিডিপি-তে পঁচাশি শতাংশ ভাগীদারী রয়েছে। আপনারা ভাবুন – ভারত আজ থেকে তিন দিন পরে অর্থাৎ পয়লা ডিসেম্বর থেকে এত বড় গোষ্ঠীর, এত সামর্থ্যবান গোষ্ঠীর অধ্যক্ষতা করতে যাচ্ছে। ভারতের জন্য, প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য, এটা কত বড় সুযোগ! এটা এই কারণেও আরও বিশিষ্ট যে এই দায়িত্ব ভারত পেয়েছে আজাদীর অমৃতকালে।
বন্ধুরা, G-20 র সভাপতিত্ব আমাদের জন্য এক বড় Opportunity নিয়ে এসেছে। আমাদের এই সুযোগের সম্পূর্ণ রূপে সদ্ব্যবহার করে গ্লোবাল গুড, অর্থাৎ বিশ্ব কল্যাণের প্রতি ফোকাস রাখতে হবে। শান্তি হোক বা ঐক্য, পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতা অথবা সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট, ভারতের কাছে এই সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জের সমাধান আছে।
আমরা One Earth, One Family, One Future - এর যে থিম দিয়েছি, তাতে বসুধৈব কুটুম্বাকাম-এর প্রতি আমাদের অঙ্গীকার প্রকাশ পায়। আমরা সব সময় বলি,
ওম সর্বেষাং স্বস্তির্ভবতু।
সর্বেষাং শান্তির্ভবতু।
সর্বেষাং পূর্ণম্ভবতু।
সর্বেষাং মঙ্গলম্ভবতু।
ওম শান্তি: শান্তি: শান্তি:।।
অর্থাৎ সবার কল্যাণ হোক, সবাই শান্তি পাক, সবাই পূর্ণতা পাক এবং সবার মঙ্গল হোক। আগামী দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় G-20 সম্পর্কিত অনেক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। সেই উপলক্ষে পৃথিবীর আলাদা আলাদা জায়গা থেকে আপনাদের রাজ্যে মানুষের আসার সুযোগ মিলবে। আমার বিশ্বাস আছে, যে আপনারা নিজেদের সংস্কৃতির বিবিধ এবং বিশিষ্ট রূপ পৃথিবীর সামনে নিয়ে আসবেন এবং আপনাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে G-20-তে যারা আসবেন, তারা এখন ডেলিগেট হিসেবে এলেও তারাই কিন্তু ভবিষ্যতের টুরিস্ট। আপনাদের সবার প্রতি, বিশেষ করে আমার যুব বন্ধুদের প্রতি আমার আরো একটি আবেদন যে, হরিপ্রসাদ গারুর মত আপনারাও কোন না কোন ভাবে G-20 র সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত হোন। কাপড়ের ওপর G-20র ভারতীয় লোগো, বেশ cool ভাবে, স্টাইলিশ ভাবে বানানো যেতে পারে, ছাপানো যেতে পারে। আমি স্কুল কলেজ, ইউনিভারসিটির প্রতিও আবেদন করব যে আপনারা এখানে G-20 সম্পর্কিত চর্চা, আলোচনা, কম্পিটিশন করানোর সময় বের করুন। আপনারা G20.in ওয়েবসাইটে গেলে আপনাদের রুচি অনুযায়ী অনেক ধরনের জিনিস খুঁজে পাবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ১৮ই নভেম্বর সমগ্র দেশ Space Sector-এ নতুন ইতিহাস তৈরি হতে দেখলো। ঐদিন ভারত নিজের প্রথম এমন একটি রকেট মহাকাশে পাঠিয়েছে যেটা ভারতের প্রাইভেট সেক্টর ডিজাইন এবং নির্মাণ করেছে। এই রকেটের নাম ''বিক্রম - S' । শ্রীহরিকোটাতে স্বদেশী Space Start-Up এর এই প্রথম রকেট, যে মুহূর্তে ঐতিহাসিক উড়ান নেয়, প্রত্যেক ভারতীয়র মাথা গৌরবে উচুঁ হয়ে গিয়েছিল।
বন্ধুরা, বিক্রম-এস, এই রকেটটি বহুগুণান্বিত। অন্যান্য রকেটের তুলনায় এটি হালকা এবং সস্তা। এর Development Cost মহাকাশ অভিযানের সঙ্গে যুক্ত দেশগুলির লগ্নির তুলনায়ও অনেকটাই কম। Space Technology-র ক্ষেত্রে কম খরচায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা এখন ভারতের অন্যতম পরিচয় হয়ে উঠেছে। এই রকেটটি তৈরি করতে আরও একটি আধুনিক Technology ব্যবহার করা হয়েছে। আপনারা জেনে অবাক হবেন, এই রকেটের কিছু জরুরি অংশ 3D Printing এর সাহায্যে তৈরি হয়েছে। সত্যি, বিক্রম- এস রকেটের লঞ্চ মিশনের একেবারে যথাযথ নাম দেওয়া হয়েছে- 'প্রারম্ভ'। ভারতে প্রাইভেট স্পেস সেক্টরের এক নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত হল। এই দেশে আত্মবিশ্বাসী এক নতুন যুগের সূচনা হল। আপনারা ভাবুন, যে বাচ্চারা হাতে কাগজের উড়োজাহাজ বানিয়ে ঘুরত, তারা আজকে ভারতে সত্যিকারের উড়োজাহাজ বানানোর সুযোগ পাচ্ছে। যে বাচ্চারা আকাশের চাঁদ তারা দেখে শূন্যে ছবি আকত, তারা আজ দেশের মাটিতে রকেট তৈরির সুযোগ পাচ্ছে। স্পেস প্রাইভেট সেক্টরের জন্য খুলে যাওয়ার ফলে বহু যুবদের স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব হচ্ছে। রকেট বানাতে ব্যস্ত এই যুবরা যেন বলছে - ' sky is not the limit'.
বন্ধুরা, ভারত স্পেস সেক্টরের এই সাফল্য তার প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গেও ভাগ করে নিচ্ছে। কালই ভারত এক Satellite Launch করেছে যা ভারত ভুটানের সাথে তৈরি করেছে। এই উপগ্রহ খুবই উচ্চমানের রেসলিউসনের ছবি তুলে পাঠাবে যা ভুটানকে তার প্রাকৃতিক সম্পদ আরো ভাল ভাবে সামলাতে সাহায্য করবে। এই Satellite Launch ভারত ভুটান সুসম্পর্কের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
বন্ধুরা, আপনারা খেয়াল করে থাকবেন, বিগত কয়েকটি ' মন কি বাত' এ আমরা space, tech, innovation নিয়ে অনেক আলোচনা করেছি। এর দুটি কারণ আছে। এক হল আমাদের যুবরা এই ক্ষেত্রে চমতকার কাজ করছে। They are thinking big and achieving big. এখন তারা আর অল্পে সন্তুষ্ট থাকবে না। দ্বিতীয় কারণ হল, innovation এবং value creation, এর এই রোমাঞ্চকর যাত্রায় যুবরা তাদের বাকি বন্ধু ও start upsদেরও encourage করছে।
বন্ধুরা, আমরা যখন প্রযুক্তি সম্পর্কিত উদ্ভাবনের কথা বলছি, তখন আমরা ড্রোনের কথা কীভাবে ভুলতে পারি? ভারত ড্রোনের ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। কিছুদিন আগে, আমরা দেখেছিলাম যে হিমাচল প্রদেশের কিন্নৌরে কীভাবে ড্রোনের মাধ্যমে আপেল পরিবহন করা হয়েছিল। কিন্নৌর হল হিমাচলের দূরবর্তী জেলা এবং এই মরসুমে সেখানে প্রচন্ড তুষারপাত হয়। এইরকম তুষারপাতের মধ্যে, রাজ্যের বাকি অংশের সঙ্গে কিন্নৌরের যোগাযোগ কয়েক সপ্তাহ ধরে কঠিন হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় সেখান থেকে আপেল পরিবহন ততধিক কঠিন হয়ে যায়। ড্রোন প্রযুক্তির ফলে হিমাচলের সুস্বাদু কিন্নৌরি আপেল মানুষের কাছে আরও অনেক তাড়াতাড়ি পৌঁছবে। এতে আমাদের কৃষক ভাই-বোনদের খরচ কমবে, আপেল সময়মতো বাজারে পৌঁছাবে, এবং আপেল নষ্টও কম হবে।
বন্ধুরা, আজকে আমাদের দেশবাসী তাদের উদ্ভাবনের মাধ্যমে সেই সব জিনিসও সম্ভব করছে, যা আগে কল্পনাও করা যেত না। এটা দেখে কে না খুশি হবে? সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, আমাদের দেশ সাফল্যের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে আমরা ভারতীয়রা এবং বিশেষ করে আমাদের তরুণ প্রজন্ম এখন অপ্রতিরোধ্য। প্রিয় দেশবাসী, আমি আপনাদের জন্য একটি ছোট ক্লিপ প্লে করতে যাচ্ছি।
আপনারা সবাই এই গানটি কখনো না কখনো শুনে থাকবেন। এটি বাপুর প্রিয় গান বলে কথা। কিন্তু আমি যদি আপনাদের বলি যে এই সুরমূর্ছনার গায়ক গ্রিস দেশের নাগরিক, তাহলে আপনি অবশ্যই অবাক হবেন এবং এই তথ্যটি আপনাকে গর্বিতও করবে। এই গানটি গ্রীক গায়ক Konstantinos Kalaitzis গেয়েছেন। তিনি গান্ধীজির সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপন সমারোহে এটি গেয়েছিলেন। কিন্তু আজ আমি তাঁর কথা অন্য একটি কারণে আলোচনা করছি। ভারত এবং ভারতীয় সঙ্গীত সম্পর্কে তাঁর মনে অমোঘ আকর্ষণ রয়েছে। ভারতের প্রতি তাঁর ভালবাসা এতটাই যে গত ৪২ বছর ধরে তিনি প্রায় প্রতি বছর ভারতে এসেছেন। তিনি ভারতীয় সঙ্গীতের উৎস, বিভিন্ন ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতি, বিভিন্ন ধরণের রাগ, তাল এবং রাসের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ঘরানার সম্পর্কে পড়াশোনা করেছেন। ভারতীয় সঙ্গীতের অনেক মহান ব্যক্তিত্বের অবদান সম্পর্কেও অধ্যয়ন করেছেন। তিনি ভারতের শাস্ত্রীয় নৃত্যের বিভিন্ন দিকও খুব কাছ থেকে জেনেছেন। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত এই সব অভিজ্ঞতাগুলিকে তিনি খুব সুন্দরভাবে একটি বইতে তুলে ধরেছেন। তাঁর ইন্ডিয়ান মিউজিক নামক বইটিতে প্রায় ৭৬০টি ছবি রয়েছে।
এরমধ্যে বেশিরভাগ ছবি নিজেই তুলেছেন। অন্য দেশেও ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে এমন উৎসাহ আর আকর্ষণ প্রকৃতপক্ষেই আনন্দদায়ক।
বন্ধুরা, কয়েক সপ্তাহ আগেই এমন একটি খবর পাওয়া গেছে যা আমাদের গর্বিত করে। আপনাদের জেনে ভালো লাগবে যে গত ৮ বছরে ভারত থেকে মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্টসের এক্সপোর্ট সাড়ে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইলেকট্রিক্যাল মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টস-এর ক্ষেত্রে জানা গেছে যে, এদের এক্সপোর্ট ষাট গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর থেকে বোঝা যায় যে ভারতীয় সংস্কৃতি এবং সংগীতের craze সারা বিশ্ব জুড়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইন্ডিয়ান মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্টস-এর সবচেয়ে বড় ক্রেতা USA, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান এবং ইউকের মত উন্নত দেশ। আমাদের সকলের কাছেই এটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের যে আমাদের দেশে মিউজিক, ডান্স এবং আর্টের এত সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে।
বন্ধুরা, মহান মনীষী কবি ভর্তৃহরিকে আমরা সকলেই তাঁর রচিত ‘নীতিশতকের’ জন্য চিনি। একটি শ্লোকে তিনি বলেছেন যে শিল্প, সঙ্গীত এবং সাহিত্যর প্রতি আমাদের ভালোবাসাই আমাদের মানবতার আসল পরিচয়, যেটিকে বাস্তবে আমাদের সংস্কৃতি, Humanity র চেয়েও উর্ধে Divinity তে নিয়ে যায়। বেদের মধ্যে সামবেদকে আমাদের বিভিন্ন সংগীতের স্তোত্র বলা হয়। মা সরস্বতীর বীণা হোক, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি হোক, বা ভোলানাথের ডমরু, আমাদের দেব দেবীরাও সংগীতের থেকে পৃথক নয়। আমরা ভারতীয়রা প্রত্যেক বিষয়েই সংগীত খুঁজে নিই। তা সেটা নদীর কূলকুল করে বয়ে যাওয়া হোক, বৃষ্টির ফোঁটা হোক, পাখিদের কলরব হোক অথবা বাতাসের গুঞ্জন। আমাদের সভ্যতায় সংগীত সবদিক থেকে অন্তর্নিহিত রয়েছে। সংগীত শুধু আমাদের শরীরকেই শান্তি প্রদান করে না, আমাদের মনকেও আনন্দ দেয়। সংগীত আমাদের সমাজকেও বেঁধে রাখে। যদি ভাংড়া আর লাবনীতে উত্তেজনা আর আনন্দের ভাবনা থাকে তাহলে রবীন্দ্র সংগীত আমাদের আত্মাকে আপ্লুত করে। সারা দেশের আদিবাসীদের ও নানা ধরনের সংগীতের পরম্পরা রয়েছে। এটা আমাদের নিজেদের মধ্যে মিলেমিশে থাকা ও প্রকৃতির সঙ্গে জুড়ে থাকার অনুপ্রেরণা দেয়।
বন্ধুরা, আমাদের সংগীতের এই ধারা শুধুমাত্র আমাদের সংস্কৃতিকেই সমৃদ্ধ করেনি বরং সারা বিশ্বের সংগীতে তার নিজস্ব চিরস্থায়ী ছাপ ফেলেছে। ভারতীয় সংগীতের খ্যাতি বিশ্বের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি আপনাদের আরেকটি অডিও ক্লিপ শোনাচ্ছি।
আপনি হয়তো ভাবছেন যে ঘরের পাশে কোন মন্দিরে ভজন কীর্তন চলছে। কিন্তু এই আওয়াজ ও আপনার কাছে ভারত থেকে হাজার মাইল দূরে অবস্থিত সাউথ আমেরিকান দেশ গুয়ানা থেকে আসছে। উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে আমাদের দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ গুয়ানা গিয়েছিলেন। ওঁরা এখান থেকে ভারতের অনেক রীতিনীতি নিজেদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ যে রকম আমরা ভারতে হোলি উদযাপন করি, গুয়ানাতেও হোলির উদ্দীপনা প্রবল ভাবে অনুভূত হয়। যেখানে হোলির রং থাকে, সেখানে ফাগওয়া অর্থাৎ ফাগুয়া সঙ্গীতও পাওয়া যায়। গুয়ানার ফাগুয়াতে ভগবান রাম এবং ভগবান কৃষ্ণের সঙ্গে জড়িত বিবাহ সঙ্গীত গাওয়ার বিশেষ পরম্পরা আছে। এই গানগুলোকে চওতাল বলা হয়ে থাকে। এগুলিকে ওই রকমই সুর আর হাই পিচ এই গাওয়া হয়, যে রকম আমাদের এখানে গাওয়া হয়ে থাকে। শুধুমাত্র এতোটাই নয় গুয়ানাতে চওতাল কম্পিটিশনও হয়ে থাকে। এইরকমই বহু সংখ্যক ভারতীয় বিশেষ করে পূর্ব উত্তর প্রদেশ এবং বিহার থেকে ফিজিতেও গিয়েছিলেন। তাঁরা পারম্পরিক ভজন কীর্তন গাইতেন যার মধ্যে মুখ্য রূপে রামচরিত মানস-এর দোহা গাওয়া হত। তাঁরা ফিজিতেও ভজন কীর্তন সঙ্গে জড়িত অনেক দলও বানিয়ে ফেলেছেন। ফিজিতে রামায়ণ মন্ডলী নামে আজও ২০০০ এরও বেশি ভজন কীর্তন দল আছে। এদের আজ প্রত্যেক গ্রামেগঞ্জে দেখতে পাওয়া যায়। আমি তো এখানে কয়েকটা মাত্র উদাহরণই দিয়েছি। যদি আপনি সমগ্র দুনিয়াতে দেখেন তাহলে দেখতে পাবেন ভারতীয় সংগীতকে ভালোবাসার মানুষের লিস্ট অনেক লম্বা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা সবাই সব সময় এই ব্যাপারে গর্ব করি যে আমাদের দেশ সমগ্র পৃথিবীতে সবথেকে প্রাচীন ঐতিহ্যের পিঠস্থান। এইজন্য এটা আমাদের দায়িত্ব যে আমরা আমাদের ঐতিহ্য আর পারম্পরিক জ্ঞানকে সংরক্ষিত করি, তার লালন পালন করি, আর সম্ভব হলে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। এরকমই প্রশংসনীয় একটি প্রচেষ্টা আমাদের পূর্বত্তর রাজ্য নাগাল্যান্ড এর কিছু বন্ধুরা করছেন। আমার এই প্রচেষ্টা অত্যন্ত ভালো লেগেছে, তাই আমি ভাবলাম “মন কি বাত”-এর শ্রোতাদের সঙ্গে এটা ভাগ করে নিই।
বন্ধুরা, নাগাল্যান্ড-এ নাগা সমাজ এর জীবনশৈলী তাদের কলা-সংস্কৃতি আর সংগীত আমাদের সবাইকে আকর্ষিত করে। এটা আমাদের দেশের গৌরবময় ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নাগাল্যান্ডের মানুষদের জীবন আর ওঁদের স্কিলস, সাসটেইনেবল লাইফ স্টাইলের জন্যও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই পরম্পরা আর স্কিলসকে বাঁচিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পর্যন্ত পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে ওখানকার মানুষেরা একটি সংস্থা বানিয়েছেন যার নাম “লিডি ক্রো ইউ”। নাগা সংস্কৃতির যে সুন্দর আবহ হারাতে বসেছিল “লিডি ক্রো ইউ” সংস্থা সেটাকে পুনর্জীবিত করার কাজ করছে। উদাহরণ স্বরূপ নাগা লোকসংগীত নিজেই অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই সংস্থাটি নাগা সংগীতের অ্যালবাম লঞ্চ করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। এখনো পর্যন্ত তিনটি অ্যালবাম লঞ্চ করা হয়ে গিয়েছে। এই মানুষেরা লোকসংগীত, লোকনৃত্যর সঙ্গে জড়িত ওয়ার্কশপও আয়োজন করে থাকেন।
এই সবকিছুর জন্য তরুণদের training-ও দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, নাগাল্যান্ডের পারম্পরিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কাপড় তৈরী, সেলাই-বোনাই করার মত যা যা কাজ আছে তারও ট্রেনিং তরুণদের দেয়া হয়। উত্তর-পূর্বে, বাঁশ থেকেও অনেক ধরনের product তৈরি করা হয়। নতুন প্রজন্মের যুব-সমাজকে Bamboo product তৈরি করাও শেখানো হয়। এর ফলে নিজস্ব সংস্কৃতির সঙ্গে যুব-সমাজের শুধু একটা সুনিবিড় যোগাযোগই তৈরি হয় না, তার সঙ্গে রোজগারেরও নতুন নতুন রাস্তা তৈরি হয়। নাগা লোকসংস্কৃতি সম্পর্কে যাতে আরো বেশি করে মানুষ জানতে পারে সেজন্য লিডি-ক্রো-ইউ'র লোকেরা উদ্যোগ নিয়েছেন।
বন্ধুরা, আপনারা যে অঞ্চলে থাকেন সেখানেও নিশ্চয়ই এরকম কিছু সাংস্কৃতিক রীতিনীতি ও পরম্পরা রয়েছে। আপনারাও নিজেদের অঞ্চলে তাই এ ধরনের উদ্যোগ নিতেই পারেন। আর এরকম কোন বিরল উদ্যোগ সম্পর্কে আপনার জানা থাকলে সেই তথ্য'ও আমার সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন।
প্রিয় দেশবাসী, আমাদের এখানে বলা হয়ে থাকে-
"বিদ্যাধনং সর্বধনপ্রধানম্"
অর্থাৎ, কেউ যদি বিদ্যাদান করে থাকেন তাহলে তিনি সমাজের মঙ্গলার্থে সবথেকে বড় কাজ করছেন। শিক্ষার অঙ্গনে প্রজ্জ্বলিত ছোট্ট একটি প্রদীপ'ও সমগ্র সমাজকে আলোকিত করতে পারে। আমি এদেখে অনেক অনন্দিত যে জেশজুরে এমন অনেক প্রচেষ্টা চলছে। উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনৌ থেকে ৭০-৮০ কিলোমিটার দূরে হরদইয়ে, বাংশা বলে একটা বাঁসা গ্রাম আছে! এই গ্রামের যতীন ললিত সিং-জি সম্পর্কে সম্প্রতি আমি জানতে পেরেছি, তিনি শিক্ষার জাগরণে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। যতীন-জি দু’বছর আগে এখানে 'Community Library and Resource Centre' চালানো শুরু করেন। তাঁর সেই centre-এ হিন্দি ও ইংরেজি সাহিত্য, কম্পিউটার, law এবং বহু সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ৩০০০-এরও বেশী পুস্তক রয়েছে। এই লাইব্রেরীতে শিশুদের পছন্দের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এখানে মজুত comics-এর বই হোক বা educational toys, শিশুরা সেগুলো খুবই পছন্দ করেছে। ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা খেলার মধ্যে দিয়ে নতুন নতুন বিষয় শেখার জন্য এখানে আসে। পড়াশোনা offline-এই হোক বা online-এ, অন্ততপক্ষে ৪০ জন volunteers এই centre-এ student'দের guide করার কাজে যুক্ত থাকে। প্রতিদিন গ্রামের অন্ততপক্ষে ৮০ জন শিক্ষার্থী এই Library-তে পড়াশোনা করতে আসে।
বন্ধুরা, ঝাড়খণ্ডের সঞ্জয় কশ্যপজীও দরিদ্র শিশুদের স্বপ্নকে নতুন করে ডানা মেলার সুযোগ করে দিচ্ছেন। ছাত্রজীবনে সঞ্জয়জীকে ভালো বইয়ের অভাব জনিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এজন্য তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর অঞ্চলের শিশুদের ভবিষ্যৎ বইয়ের অভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে তিনি দেবেন না। নিজের এই মিশনের ফলে আজ ঝাড়খণ্ডের অনেক জেলায় বাচ্চাদের জন্য তিনি "লাইব্রেরি ম্যান" হয়ে উঠেছেন। সঞ্জয়জী নিজের চাকরি জীবন শুরু করার সময় প্রথম গ্রন্থাগার নিজের পৈতৃক ভিটেতে তৈরি করেছিলেন। তারপর চাকরির কারণে তাঁর যেখানেই ট্রান্সফার হত সেখানকার দরিদ্র ও জনজাতি শিশুদের পড়াশোনার জন্য লাইব্রেরি খোলার মিশনে তিনি মগ্ন থাকতেন। এভাবে ঝাড়খণ্ডের বহু জেলায় তিনি বাচ্চাদের জন্য লাইব্রেরী খুলেছেন। তাঁর লাইব্রেরি খোলার এই মিশন আজ এক সামাজিক আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে। সঞ্জয়জী, যতীনজীর মত এমন প্রয়াস অনেকেই করছেন। তাঁদের আমি বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মেডিকেল সাইন্সের দুনিয়ায় রিসার্চ আর ইনোভেশনের পাশাপাশি অত্যাধুনিক টেকনোলজি ও উপকরণের সাহায্যে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু তবুও কিছু রোগ আজও আমাদের জন্য খুব বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে রয়ে গেছে। এমনই একটি রোগ হল মাসকুলার ডিস্ট্রফি। এটি প্রধানত একটি বংশগত রোগ যা যে কোন বয়সেই হতে পারে। এতে দেহের মাংসপেশীগুলি দুর্বল হতে থাকে। রোগীর পক্ষে প্রতিদিনের নিজস্ব ছোট ছোট কাজগুলি করাও দুরূহ হয়ে ওঠে। এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসা ও দেখাশোনার জন্য আন্তরিকভাবে সেবাপরায়ণ হওয়া প্রয়োজন। আমাদের দেশে হিমাচল প্রদেশের সোলানে এমন একটি সেন্টার আছে যারা মাসকুলার ডিস্ট্রফির রোগীদের কাছে এক নতুন আশার আলো হয়ে উঠেছে। এই সেন্টারের নাম "মানব মন্দির"। এটি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ মাসকুলার ডিস্ট্রফি দ্বারা পরিচালিত। নিজের নামের প্রতি সুবিচার করে "মানব মন্দির" মানব সেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। এখানে রোগীদের জন্য ওপিডি এবং অ্যাডমিশনের সুবিধা তিন - চার বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে। মানব মন্দিরে প্রায় ৫০ জন রোগীর জন্য বেডের ব্যবস্থা আছে। ফিজিওথেরাপি, ইলেকট্রোথেরাপি ও হাইড্রো থেরাপির পাশাপাশি যোগ-প্রাণায়ামের সাহায্যেও এখানে রোগের চিকিৎসা করা হয়।
বন্ধুরা, সব রকমের hi-tech সুবিধার মাধ্যমে এই কেন্দ্রে রোগীদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রচেষ্টা রয়েছে। Muscular Dystrophy-র সঙ্গে যুক্ত এই চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতনতার অভাবও রয়েছে। তাই, এই কেন্দ্র হিমাচল প্রদেশেরই নয়, পুরো দেশের রোগীদের জন্য সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করে। সবচেয়ে বেশি সাহস আমরা এই জেনে পাই যে এই সংস্থার মুখ্য ব্যবস্থাপকরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরাই, যেমন সামাজিক কর্মী, উর্মিলা বালদিজি, Indian Association of Muscular Dystrophy-র অধ্যক্ষ আমাদের বোন সঞ্জনা গোয়েল জি, আর এই Association-এর বড় ভূমিকায় ছিলেন শ্রীমান বিপুল গোয়েল জি, এই সংস্থার গঠনে অত্যন্ত বড় ভূমিকা পালন করেছেন। মানব মন্দির কে hospital ও Research centre হিসেবে বিকশিত করার প্রচেষ্টায় রয়েছেন। এর ফলে এখানে রোগীদের আরো উন্নত পরিষেবা পাওয়ার সুযোগ হবে। আমি এই বিষয়ে প্রচেষ্টারত সবাইকে আমার হৃদয় থেকে প্রশংসা করছি, সঙ্গে Muscular Dystrophy-র সঙ্গে যারা যুদ্ধ করছে সেইসব রোগীদের সুস্থতা কামনা করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ “মন কি বাত”-এ আমরা দেশবাসীর গঠনমূলক ও সামাজিক কর্মের আলোচনা করলাম, তা দেশের শক্তি ও উৎসাহের উদাহরণ। আজ সব দেশবাসী কোন না কোন ক্ষেত্রে, প্রতি পর্যায়ে, দেশের জন্য আলাদা কিছু করার কাজে প্রচেষ্ট। আজকের আলোচনায় আমরা দেখলাম, G-20র মত আন্তর্জাতিক পরিসরে আমাদের এক তন্তুবায় বন্ধু নিজের দায়িত্ব বুঝে, তা পূরণ করতে এগিয়ে এলেন। তেমনই, কেউ পরিবেশের জন্য প্রচেষ্ট, কেউ জলের জন্য কাজ করছেন, কেউ কেউ শিক্ষা, চিকিৎসা ও Science Technology থেকে সংস্কৃতি ঐতিহ্য পর্যন্ত, অসাধারণ কাজ করে চলেছেন। এই কারণ আজ আমাদের প্রতিটি নাগরিক নিজের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন, যখন এরূপ কর্তব্য ভাবনা কোন রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়, তখন তার স্বর্ণালী ভবিষ্যৎ অবধারিতরূপে নির্ধারিত হয়ে যায় ও দেশের স্বর্ণালী ভবিষ্যতেই রয়েছে আমাদের সকলের স্বর্ণালী ভবিষ্যৎ।
আমি, আরো একবার দেশবাসীদের তাদের প্রচেষ্টার জন্য প্রণাম জানাই। পরের মাসে আবার দেখা হবে ও এই ভাবেই আরো অনেক উৎসাহব্যঞ্জক বিষয়ে আমরা অবশ্যই কথা বলব। আপনাদের পরামর্শ ও ভাবনা আমাকে অবশ্যই পাঠাবেন। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ দেশের বহু অংশে সূর্য উপাসনার মহাপর্ব ‘ছট’ পালন করা হচ্ছে। ‘ছট’ পর্বে অংশ নেওয়ার জন্য লক্ষ-লক্ষ পুণ্যার্থী নিজেদের গ্রাম, নিজেদের বাড়ি, নিজেদের পরিবারের মাঝে পৌঁছে গিয়েছেন। আমার প্রার্থনা ছট মা সবার সমৃদ্ধি, সবার কল্যাণের আশীর্বাদ দিন।
বন্ধুরা, সূর্য উপাসনার পরম্পরা এই ব্যাপারের প্রমাণ যে আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের আস্থার, প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক কত গভীর। এই পূজার মাধ্যমে আমাদের জীবনে সূর্যের আলোর গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে। একইসঙ্গে এই বার্তাও দেওয়া হয়েছে যে উত্থানপতন জীবনের অভিন্ন অংশ। এই জন্য সব পরিস্থিতিতে আমাদের সমান একটা মনোভাব রাখতে হবে। ছট মায়ের পুজোতে নানা রকমের ফল আর ঠেকুয়া প্রসাদ হিসাবে রাখা হয়। এর ব্রতও কোনও কঠিন সাধনার থেকে কম নয়। ছট পূজার আর এক বিশেষ দিক হল যে এই পূজায় যে সব সামগ্রীর ব্যবহার হয় তা সমাজের বিভিন্ন লোক মিলে তৈরি করেন। এতে বাঁশের তৈরি ছোট ঝুড়ির ব্যবহার হয়। মাটির প্রদীপের নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। এর মাধ্যমে ছোলা ফলানো কৃষক আর বাতাসা বানানো ছোট ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এঁদের সহায়তা ছাড়া ছটের পূজা কখনই সম্পূর্ণ হতে পারে না। ছটের পর্ব আমাদের জীবনে স্বচ্ছতার গুরুত্বের উপরও জোর দেয়। এই পর্ব এলে সর্বজনীন ক্ষেত্রে রাস্তা, নদী, ঘাট, জলের বিভিন্ন স্রোত, সব কিছু পরিষ্কার করা হয়। ছটের পর্ব ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এরও উদাহরণ। আজ বিহার এবং পূর্বাঞ্চলের মানুষ দেশের যে কোণেই থাকুন না কেন, সেখানে ধুমধাম করে ছটের আয়োজন করা হচ্ছে। দিল্লী, মুম্বাই সহ মহারাষ্ট্রের আলাদা-আলাদা জেলা এবং গুজরাতের অনেক অংশে বড় আকারে ছটের আয়োজন হচ্ছে। আমার তো মনে আছে, আগে গুজরাতে ছট পূজা অতটা হত না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে আজ গুজরাতের প্রায় সর্বত্র ছট পূজার রং দেখা যাচ্ছে। এটা দেখে আমারও খুব আনন্দ হয়। আজকাল আমরা দেখি, বিদেশেও ছট পূজার কত নান্দনিক দৃশ্য দেখা যায়। অর্থাৎ ভারতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য, আমাদের আস্থা, বিশ্বের কোণায়-কোণায় নিজের পরিচয়ের বিস্তার ঘটাচ্ছে। এই মহাপর্বে সামিল হওয়া প্রত্যেক আস্থাবানকে আমার তরফ থেকে অনেক-অনেক শুভেচ্ছা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এইমাত্র আমরা পবিত্র ছট পূজার কথা বললাম, ভগবান সূর্যের উপাসনার কথা বললাম। আচ্ছা, তাহলে সূর্য উপাসনার সঙ্গে সঙ্গে ওঁর বরদান নিয়েও আলোচনা করি? সূর্য দেবতার বরদান হল সৌরশক্তি। সোলার এনার্জি আজ এমন একটি বিষয় যার মধ্যে সারা পৃথিবী ভবিষ্যতের সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছে এবং ভারতের ক্ষেত্রে তো বহু যুগ ধরে সূর্যদেবতার শুধু উপাসনাই হচ্ছে তাই নয়, জীবন পদ্ধতির কেন্দ্রবিন্দুতেও রয়েছে। ভারত, আজ তার পারম্পরিক অভিজ্ঞতাকে আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে যুক্ত করছে, এই কারণেই, আজ আমরা, সৌর বিদ্যুৎ নির্মাণে শ্রেষ্ঠ বড় দেশগুলির মধ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। সৌর শক্তি কীভাবে আমাদের দেশের গরিব এবং মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনছে, সেটিও অধ্যয়নের একটি বিষয়। তামিলনাড়ুতে, কাঞ্চিপুরামের মেয়ে একজন কৃষক আছেন, থিরু. কে. এঝিলান। তিনি 'পি. এম. কুসুম যোজনা' থেকে লাভবান হয়েছেন এবং নিজের ক্ষেতে দশ হর্সপাওয়ারের সোলার পাম্প সেট লাগিয়েছেন। এখন ওকে ওর ক্ষেতের বিদ্যুতের জন্য কোন খরচা করতে হয়না। ক্ষেতে জলসিঞ্চনের জন্য এখন সরকারের বিদ্যুৎ সাপ্লাই-এর উপর নির্ভরও করতে হয় না। একইভাবে রাজস্থানের ভরতপুরে 'পি.এম. কুসুম যোজনা'র আরো একজন লাভবান কৃষক কমলজী মীণা। কমলজী ক্ষেতে সোলার পাম্প লাগিয়েছিলেন যাতে ওঁর খরচ কমে গেছে। খরচা কমে যাওয়ায় আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কমলজী সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহার করে অন্য অনেক ছোট উদ্যোগকেও যুক্ত করছেন। ওঁর এলাকায় কাঠের কাজ আছে, গরুর গোবর থেকে বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদন করা আছে, তাতেও সৌর বিদ্যুৎ-এর ব্যবহার হচ্ছে, তিনি, ১০-১২ জনকে রোজগারের পথ দেখাচ্ছেন, কুসুম যোজনা থেকে কমলজী যে সূত্রপাত করেছিলেন, তার সৌরভ আরো কত মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে।
বন্ধুরা, আপনারা কি কল্পনা পারেন যে আপনি গোটা মাস বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন এবং আপনার বিদ্যুতের বিল আসার পরিবর্তে, আপনি বিদ্যুতের জন্য টাকা পাবেন? সৌরশক্তি এই কাজটাও করে দেখিয়েছে। কিছুদিন আগে, আপনি নিশ্চয়ই দেশের প্রথম সূর্য গ্রাম - গুজরাটের মোঢেরা সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছেন। মোঢেরা সূর্য গ্রামের বেশিরভাগ বাড়ি, সৌরবিদ্যুৎ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে শুরু করেছে। এখন অনেক বাড়িতে মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল আসে না, তার বদলে আসছে বিদ্যুৎ থেকে উপার্জিত চেক। এই ঘটনা দেখে এখন দেশের অনেক গ্রামের মানুষ আমাকে চিঠি লিখছেন, যাতে তাদের গ্রামকেও সূর্যগ্রামে রূপান্তরিত করা হয়, অর্থাৎ সেই দিন বেশি দূরে নয়, যেদিন ভারতে সূর্যগ্রাম নির্মাণ, একটি বড় গণআন্দোলনে পরিণত হবে এবং মোঢেরা গ্রামের মানুষ তা ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছে।
আসুন মন কি বাত এর শ্রোতাদেরও সঙ্গে মোঢেরার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করাই। আমাদের সঙ্গে এই মূহুর্তে ফোন লাইনে আছেন শ্রীমান বিপিন ভাই পাটেল।
প্রধানমন্ত্রী জী : বিপিন ভাই নমস্কার। দেখুন এখন তো মোঢেরা গোটা দেশের জন্য এক মডেল হিসেবে আলোচনায় আছে। কিন্তু যখন আপনাকে আপনার আত্মীয়, পরিচিতরা জিজ্ঞেস করেন, তাদেরকে আপনি কি বলেন? কি কি লাভ হয়েছে জানান তাদের?
বিপিন জী : স্যার, লোকে জিজ্ঞেস করলে আমি তাদের এটাই বলি যে আগে আমাদের বিদ্যুৎ বিল আসত, এখন তা শূন্য আসে। কখনো কখনো কিছু বিল আসে - এই ৭০টাকা। কিন্তু, গোটা গ্রামের আর্থিক পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে অনেক ভাল।
প্রধানমন্ত্রী জী : তার মানে, বিদ্যুৎ এর বিলের যে চিন্তা ছিল সেটা এক প্রকার নির্মূল হয়ে গেছে।
বিপিন জী : হ্যাঁ স্যার, এই কথাটা একদম ঠিক। এখন পুরো গ্রামে কোনো চিন্তা নেই। সবার মনে হচ্ছে স্যার যেটা করেছেন খুবই ভালো কাজ হয়েছে তাতে। সবাই খুব খুশি ও আনন্দিত।
প্রধানমন্ত্রী জি : আপনি তো নিজেই নিজের বাড়িতেই বিদ্যুৎ কারখানা বানিয়ে তার মালিক হয়ে গেছেন। নিজের বাড়ির ছাদেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
বিপিন জী : হ্যাঁ স্যার, একদম ঠিক বলেছেন স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জী : এই পরিবর্তনে গ্রামের মানুষের উপর কি প্রভাব পরেছে?
বিপিন জী : স্যার আমাদের গ্রামের লোকেরা চাষবাস করে। এই কাজে বিদ্যুৎ-এর চাহিদা নিয়ে যে চিন্তা, ঝঞ্জাট ছিল, সেটা একদম চলে গেছে। কোনো বিল দিতে হবে না, আমরা সবাই নিশ্চিন্ত।
প্রধানমন্ত্রী জী : মানে বিদ্যুৎ-এর বিল ও নেই, উপরন্তু বাড়তি সুবিধাও পাওয়া যাচ্ছে।
বিপিন জী : স্যার সব রকম ঝঞ্জাট তো চলে গেছেই। স্যার আপনি যখন মোঢেরা গ্রামে এসেছিলেন, সেই 3D Show-এর উদবোধন করেছিলেন, তারপর তো স্যার এখানকার পুরো ভোলই পালটে গেছে। আপনার সাথে যে সেক্রেটারি এসেছিলেন...
প্রধানমন্ত্রী জী : হ্যাঁ হ্যাঁ
বিপিন জী : আমাদের গ্রাম বিখ্যাত হয়ে গেছে স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জী : হ্যাঁ উনি UN এর Secretary General। উনি নিজে আসার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিলেন। উনি আমাকে বলেছিলেন এত বড় একটা কাজ যখন হয়েছে, আমি নিজে গিয়ে দেখতে চাই। অনেক ধন্যবাদ বিপিন ভাই। আপনাকে এবং আপনার গ্রামের সকলকে আমার অনেক অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানাই। দুনিয়া আপনাদের থেকে অনুপ্রেরণা পাক এবং সোলার এনের্জির এই অভিযান প্রত্যেক ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক।
বিপিন জী : ঠিক আছে স্যার, আমরা সবাইকে বলবো, স্যার, যে ভাই সোলার ইন্সটল করে নিন, নিজের টাকা দিয়েও ইন্সটল করে নিলে অনেক লাভ হবে।
প্রধানমন্ত্রী জী : হ্যাঁ, জনগণকে বুঝিয়ে বলুন, অনেক শুভকামনা ও ধন্যবাদ ভাই।
বিপিন জী : আপনাকে ধন্যবাদ স্যার, আপনাকে ধন্যবাদ, আমার জীবন ধন্য হয়ে গেছে আপনার সঙ্গে কথা বলে।
প্রধানমন্ত্রী জী : বিপিন ভাই, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
এবার আসুন আমরা মোঢেরা গ্রামের বর্ষাবেনের সঙ্গে কথা বলি।
বর্ষা বেন : হ্যালো নমস্কার স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জী : নমস্কার, নমস্কার বর্ষা বেন, কেমন আছেন?
বর্ষা বেন : আমরা খুব ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন?
প্রধানমন্ত্রী জী : আমিও খুব ভাল আছি।
বর্ষা বেন : আমরা ধন্য হয়ে গেছি আপনার সঙ্গে কথা বলতে পেরে।
প্রধানমন্ত্রী জী : আচ্ছা বর্ষা বেন
বর্ষা বেন : হ্যাঁ…
প্রধানমন্ত্রী জী : মোধেরাতে থেকে আপনি কথা বলছেন, আপনি তো একটি সৈনিক পরিবারের সদস্য তাই না?
বর্ষা বেন : হ্যা, আমি সৈনিক পরিবারের থেকেই, আমার স্বামী প্রাক্তন সেনাকর্মী ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী জী : তো ভারতের কোন কোন জায়গায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন?
বর্ষা বেন : রাজস্থানে গেছি, গান্ধীনগরে গিয়েছি, কচরা কান্ঝোর জম্মুতে যাওয়ার ও থাকার সুযোগ মিলেছে। ওখানে অনেক সুবিধেই পেয়েছি স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জী : হ্যাঁ সেনাবাহিনীতে থাকার ফলে আপনি বেশ ভাল হিন্দী বলতে শিখেছেন।
বর্ষা বেন : হ্যাঁ… হ্যাঁ স্যার তা তো শিখেছি, হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী জী : আমায় বলুন তো মোঢেরায় এত বড় পরিবর্তন কিভাবে এলো, যে আপনারা এই সোলার রুফটপ প্ল্যান্ট বসিয়েছেন? মানুষ নিশ্চয়ই শুরুতে যখন বলেছেন, তখন নিশ্চয়ই আপনার মাথায় এসেছে যে এসবের মানে কী, কী করতে হবে, কিভাবে বিদ্যুৎ আসবে, এইসব আপনার মনে নিশ্চয়ই এসেছে। এখন কী অভিজ্ঞতা হল, এতে লাভ হয়েছে কিছু?
বর্ষা বেন : লাভ বলতে লাভ! অনেক লাভ হয়েছে স্যার। আপনার কারণে আমাদের গ্রামে প্রতিদিনই দীপাবলি উদযাপন হয়। ২৪ ঘন্টা আমরা বিদ্যুৎ পাচ্ছি। বিল তো আসেই না একেবারে। আমরা আমাদের বাড়িতে সব ইলেকট্রিক জিনিস এনে রেখেছি স্যার, সব জিনিস ব্যবহার করছি, আপনার জন্যেই স্যার। বিল তো আসেই না, তা আমরা ফ্রি মাইন্ডে সব ইউজ করতে পারি যেঁ।
প্রধানমন্ত্রী জী : এটা ঠিক কথা, আপনারা বিদ্যুতের সর্বোচ্চ ব্যবহার করার জন্যে মনস্থির করে ফেলেছেন?
বর্ষা বেন : করে ফেলেছি স্যার, করে ফেলেছি। একেবারে মনস্থির করেছি। এখন আমাদের কোন অসুবিধাই নেই। আমরা ফ্রি মাইন্ডে ওয়াশিং মেশিন, এসি সব চালাতে পারি স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জী : আর গ্রামের বাকি লোকও এর জন্যে খুশি তো?
বর্ষা বেন : খুব খুব খুশি স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জী : আচ্ছা আপনার স্বামী তো এখানে সূর্য মন্দিরে কাজ করেন? তো ওখানে যে লাইট শো হয়েছে, এত বড় ইভেন্ট হয়েছে, এখন ওখানে সারা পৃথিবী থেকে অতিথিরাও আসছেন।
বর্ষা বেন : সারা পৃথিবীর ফরেনাররা আসতে পারেন , আপনি আমাদের গ্রামকে এতটাই বিখ্যাত করে দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী জী : তাহলে আপনার স্বামীর কাজ অনেক বেড়ে গেছে, এত অতিথিরা আসছেন মন্দিরে দেখতে আসছেন।
বর্ষা বেন : আরে কোন ব্যাপার নয়, কাজ যতই বাড়ুক, স্যার কোন ব্যাপার নয়, এতে আমার বা আমার স্বামীর কোন অসুবিধা নেই, আপনি শুধু আমাদের গ্রামের উন্নতি করতে থাকুন।
প্রধানমন্ত্রী জী : এখন এই গ্রামের উন্নতি তো আমাদের সকলকে একসঙ্গে মিলেমিশে করতে হবে
বর্ষা বেন : হ্যাঁ হ্যাঁ স্যার আমরা আপনার সঙ্গে আছি।
প্রধানমন্ত্রী জী : আমি মোঢেরা বাসীদের অভিনন্দন জানাবো, কারণ গ্রামবাসীরা এই যোজনাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ওঁরা বিশ্বাস করেন যে হ্যাঁ, আমরা নিজেদের বাড়িতেই বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারি।
বর্ষা বেন : ২৪ ঘন্টা স্যার! আমাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ রয়েছে এবং আমরা অত্যন্ত খুশি।
প্রধানমন্ত্রী জী : বেশ! আপনাকে জানাই অনেক শুভকামনা। যে অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে তা বাচ্চাদের স্বার্থে ব্যবহার করুন। ওই অর্থের সদ্ব্যবহার করুন যাতে আপনিও জীবনে লাভবান হন। আমি সবাইকে অনেক শুভকামনা জানাই। আর সমস্ত মোঢেরা বাসীদের জানাই নমস্কার।
বন্ধুরা, বর্ষা বেন ও বিপিন ভাই যা বললেন তা পুরো দেশের জন্য, গ্রাম আর শহরের জন্য এক প্রেরণা। মোঢেরার এই অভিজ্ঞতা পুরো দেশে পুনরায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। সৌর শক্তির দ্বারা এবার অর্থেরও সাশ্রয় হবে আবার আয়েরও বৃদ্ধি হবে। জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরের এক বন্ধু - মঞ্জুর আহমাদ লরহওয়াল। শীতের জন্য কাশ্মীরে বিদ্যুতের খরচা অনেক বেশি। তাই মঞ্জুর জির বিদ্যুতের বিল ৪০০০ টাকারও বেশি হত। কিন্তু যেদিন থেকে মঞ্জুর জি নিজের বাড়িতে Solar Rooftop Plant লাগিয়েছেন, তাঁর খরচা অর্ধেকেরও কম হয়ে গেছে। এইভাবে উড়িষ্যার এক মেয়ে কুন্নী দেউরি, সৌর শক্তির মাধ্যমে নিজের ও অন্যান্য মহিলাদের রোজকারের উপায় বার করেছেন। কুন্নী, উড়িষ্যার কেন্দুঝর জেলার কর্দাপাল গ্রামে থাকে। সে আদিবাসী মহিলাদের solar চালিত রিলিং মেশিনে silk বুননের training দেয়। Solar Machine-এর জন্য এই আদিবাসী মহিলাদের উপর বিদ্যুৎ বিলের ভার পড়ে না, আর ওদের আয়ও বেড়েছে। এটাই তো সূর্য দেবের ও সৌর শক্তির আশীর্বাদ। আশীর্বাদ ও অনুগ্রহ যত প্রসারিত হবে ততই মঙ্গল। তাই আমি আপনাদের সবার কাছে প্রার্থনা করি, আপনিও এর সঙ্গে যুক্ত হন ও অন্যদেরও সংযুক্ত করুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, একটু আগেই আমি আপনাদের সঙ্গে সূর্য নিয়ে আলোচনা করছিলাম। এখন আমার মনযোগ স্পেসের দিকে যাচ্ছে। সেটা এইজন্য যে আমাদের দেশ সোলার সেক্টরের সঙ্গে স্পেস সেক্টরেও দারুণ সাফল্য দেখাচ্ছে। গোটা বিশ্ব আজ ভারতের সাফল্য দেখে হতচকিত। এই জন্য আমি ভাবলাম, মন কি বাতের শ্রোতাদের এটা বলে আমি তাঁদেরও আনন্দ বাড়িয়ে দিই।
বন্ধুরা, আজ থেকে কিছু দিন আগে আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন যে ভারত এক সঙ্গে ছত্রিশটা স্যাটেলাইট অন্তরীক্ষে স্থাপন করেছে। দীপাবলীর ঠিক এক দিন আগে পাওয়া এই সাফল্য এক অর্থে আমাদের তরুণদের পক্ষ থেকে দেশের জন্য এক স্পেশাল দীওয়ালি গিফট। এই লঞ্চঙ্গিয়ের ফলে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা, আর কচ্ছ থেকে কোহিমা অবধি, পুরো দেশে, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি আরও শক্তিশালী হবে। এর সাহায্যে নিতান্ত দূর-দূরান্তের এলাকাও দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সহজে যুক্ত হয়ে যাবে। দেশ যখন আত্মনির্ভর হয়, তখন কেমনভাবে সফলতার নতুন শিখরে পৌঁছে যায় – তারও এক উদাহরণ এটা। আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে-বলতে আমার সেই পুরনো সময়ও মনে পড়ে যাচ্ছে যখন ভারতকে ক্রায়োজেনিক রকেট টেকনোলজি দেওয়া হয়নি। কিন্তু, ভারতের বৈজ্ঞানিকরা কেবল স্বদেশী প্রযুক্তিরই বিকাশ ঘটান নি বরং আজ এর সাহায্যে ডজন-ডজন স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাচ্ছেন। এই লঞ্চিংয়ের ফলে ভারত গ্লোবাল কমার্শিয়াল মার্কেটে এক শোক্তিশালী প্লেয়ার হয়ে দেখা দিয়েছে। এর ফলে অন্তরীক্ষের ক্ষেত্রে ভারতের জন্য নতুন সুযোগের দ্বারও উন্মুক্ত হয়েছে।
বন্ধুরা, বিকশিত ভারতের সঙ্কল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে আমাদের দেশ, সবার প্রয়াসেই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে। ভারতে প্রথমে স্পেস সেক্টর, সরকারী ব্যবস্থার গণ্ডীতে সীমাবদ্ধ ছিল। যখন এই স্পেস সেক্টর, ভারতের তরুণদের জন্য, ভারতের প্রাইভেট সেক্টরের জন্য খুলে দেওয়া হল তখন থেকে এতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। ভারতীয় ইণ্ডাস্ট্রি আর স্টার্ট-আপ এই ক্ষেত্রে নতুন-নতুন ইনোভেশন আর নতুন-নতুন টেকনোলজি আনতে উদ্যোগী হয়ে রয়েছে। বিশেষ করে, ইন-স্পেসের সহযোগিতায় এই ক্ষেত্রে বড়ো পরিবর্তন আসতে চলেছে। ইন-স্পেসের মাধ্যমে বেসরকারী কোম্পানিদেরও নিজের-নিজের পে-লোড আর স্যাটেলাইট লঞ্চ করার সুযোগ মিলছে। আমি আরও বেশি-বেশি স্টার্ট-আপ আর ইনোভেটরদের কাছে অনুরোধ করব যে তারা স্পেস সেক্টরে ভারতে তৈরি হওয়া এই সব বড় সুযোগের পুর্ণ লাভ নিন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যখন স্টুডেন্ট দের প্রসঙ্গ আসে, যুবশক্তির প্রসঙ্গ আসে, নেতৃত্ব শক্তির কথা আসে, তখন আমাদের মনের মধ্যে সেই বহু পুরোনো ধ্যান ধারণা বাসা বেঁধে আছে। অনেক সময় আমরা দেখি স্টুডেন্টস পাওয়ারের কথা উঠলে সেটাকে ছাত্রসংঘের নির্বাচনের সঙ্গে জুড়ে, এর পরিধি সীমিত করে দেওয়া হয়। কিন্ত স্টুডেন্টস পাওয়ারের পরিধির ব্যাপ্তি অনেক বৃহৎ এবং বিশাল। স্টুডেন্টস পাওয়ার ভারতকে powerful গড়ে তোলার মূল ভিত্তি। সর্বোপরি, আজ যারা তরুণ তারাই তো ভারতকে ২০৪৭ সাল পর্যন্ত নিয়ে যাবে। ভারত যখন শতবর্ষ উদযাপন করবে, তখন তারুণ্যের এই শক্তি, তাদের কঠোর পরিশ্রম, তাদের ঘাম, তাদের প্রতিভা, ভারতকে সেই উচ্চতায় নিয়ে যাবে, যার জন্য দেশ আজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমাদের আজকের তরুণরা যেভাবে দেশের জন্য কাজ করছে, Nation Building এ যোগ দিয়েছে, তা দেখে আমি খুবই আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। আমাদের তরুণরা যেভাবে হ্যাকাথনে সমস্যার সমাধান করে, রাতের পর রাত জেগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করে, তা খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক। গত বছর অনুষ্ঠিত একটি হ্যাকাথন, দেশের লক্ষাধিক তরুণ-তরুণীর সঙ্গে একযোগে, অনেক চ্যালেঞ্জের সমাধান করেছে, দেশকে নতুন solution দিয়েছে।
বন্ধুরা, আপনাদের মনে থাকবে আমি লাল কেল্লা থেকে 'জয় অনুসন্ধান' ডাক দিয়েছিলাম। আমি এই দশকে ভারতকে Techade বানানোর কথাও বলেছিলাম। আমি এটা দেখে খুবই খুশি যে আমাদের IIT-এর স্টুডেন্টসরা এই বিষয়ে খুবই আগ্রহী হয়ে এগিয়ে এসেছে। এই মাসে ১৪-১৫ অক্টোবর, ২৩টি IIT তাদের innovation এবং research project প্রদর্শন করার জন্য প্রথমবারের মতো একটি মঞ্চে এসেছিল৷ এই প্রদর্শনীতে সারা দেশের বাছাই করে আনা স্টুডেন্টস এবং Researchers-রা ৭৫টিরও বেশি অসাধারণ প্রজেক্ট প্রদর্শন করেন। হেলথ কেয়ার, এগ্রিকালচার, রোবোটিক্স, সেমিকন্ডাক্টরস, 5G কমিউনিকেশন, এই রকম অনেক থিমের উপর এই প্রোজেক্টগুলি তৈরি করা হয়েছিল। যদিও এই সমস্ত প্রোজেক্ট ছিল একাধিক, কিন্তু, আমি কিছু প্রোজেক্ট সম্পর্কে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। যেমন IIT ভুবনেশ্বরের একটি দল নবজাতক শিশুর জন্য পোর্টেবল ভেন্টিলেটর তৈরি করেছে । এটি ব্যাটারিতে চলে এবং সহজেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যবহার করা যায়। নিদিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের জীবন বাঁচাতে এটি খুবই উপযোগী প্রমাণিত হতে পারে। Electric mobility হোক, দ্রোণ Technology হোক, 5G হোক আমাদের অনেক শিক্ষার্থী এগুলির সঙ্গে যুক্ত নতুন টেকনোলজির বিকাশে উদ্যত। অনেকগুলো IIT, একটি বহুভাষিক প্রজেক্টে একসঙ্গে কাজ করছে যা স্থানীয় ভাষা শেখাকে সহজ করে তোলে। এই প্রজেক্টটি নতুন রাষ্ট্রীয় শিক্ষা নীতিকে, তার লক্ষ্যগুলি অর্জনেও অনেক সাহায্য করবে। আপনাদের এটা জেনেও হয়তো ভালো লাগবে যে IIT মাদ্রাজ এবং IIT কানপুর ভারতের স্বদেশী 5G Test Bed তৈরিতে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি দুর্দান্ত সূচনা। আমি আশা করি আগামী দিনে এরকম আরও অনেক উদ্যোগ দেখতে পাব। আমি আরও আশা করি যে IIT থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে অন্যান্য ইনস্টিটিউশনগুলিও তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতা আমাদের সমাজের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জায়গায় সমাহিত আর এটাকে আমরা আমাদের চারপাশে অনুভব করতে পারি। দেশে এমন মানুষের অভাব নেই যারা পরিবেশ রক্ষার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেন।
কর্নাটকের বেঙ্গালুরুর অধিবাসী সুরেশ কুমারজির কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি, ওনার মধ্যে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার জন্য এক আলাদাই উন্মাদনা বর্তমান। কুড়ি বছর আগে উনি শহরের সহকার নগরের এক জঙ্গলকে পুনরায় সজীব করার সংকল্প গ্রহণ করেছিলেন । এই কাজ অনেক কঠোর ছিল, কিন্তু, কুড়ি বছর আগে লাগানো সেই সব চারা আজ চল্লিশ ফিট লম্বা বিশালায়তন মহীরুহে পরিণত হয়েছে। এখন এদের সৌন্দর্য্য সবার মন কেড়ে নেয়। এতে ওখানের বাসিন্দাদেরও অনেক গর্ব অনুভব হয়। সুরেশ কুমারজি আরও একটি অদ্ভুত কাজ করেন। উনি কন্নড় ভাষা এবং সংস্কৃতিকে বাড়তি উৎসাহ প্রদানের জন্য সহকার নগরে একটি বাস শেল্টার বানিয়েছেন। কয়েকশো মানুষকে কন্নড় ভাষায় লেখা পেতলের প্লেট প্রদান করেছেন । ইকোলজি ও কালচার দুটোই একসঙ্গে এগিয়ে চলুক ও প্রস্ফুটিত হোক, ভাবুন, এটা কত বড় ব্যাপার।
বন্ধুরা, আজ ইকো ফ্রেন্ডলী লিভিং আর ইকো ফ্রেন্ডলী প্রোডাক্টস এর ব্যাপারে মানুষের মধ্যে আগের থেকে অনেক বেশি সচেতনতা দেখা যাচ্ছে। আমার তামিলনাড়ুর এরকমই একটি প্রচেষ্টা সম্বন্ধে জানার অবকাশ হয়েছে। এই চমৎকার প্রচেষ্টা Coimbatore এর Anaikatti র বাসিন্দা কিছু আদিবাসী মহিলাদের একটি টিমের। এই মহিলারা রপ্তানির জন্য দশ হাজার ইকোফ্রেন্ডলির টেরাকোটার চায়ের কাপ বানিয়েছেন। আশর্যের বিষয় এটা যে টেরাকোটা চায়ের কাপ বানানোর সমগ্র দায়িত্ব এই মহিলারা নিজেরাই নিয়েছিলেন। Clay mixing থেকে final প্যাকেজিং পর্যন্ত সব কাজ এনারা নিজেরাই করেছেন। এই কাজের জন্য এনারা প্রশিক্ষণ ও নিয়েছিলেন। এই অদ্ভুত প্রচেষ্টার যতই প্রশংসা করা হোক না কেনো তা কম।
বন্ধুরা, ত্রিপুরার কিছু গ্রাম ও অনেক সুন্দর শিক্ষা দিয়েছে আমাদের। আপনারা Bio ভিলেজের কথা তো অবশ্যই শুনেছেন, কিন্তু ত্রিপুরার কিছু গ্রাম তো Bio Village 2 এর ধাপেও উঠে গেছে। Bio Village 2 তে এই ব্যাপারে জোর দেওয়া হয় যে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে হওয়া ক্ষয় ক্ষতি কি করে কমানো যায়। এতে বিভিন্ন উপায়ে মানুষের জীবন স্তরকে আরও ভালো বানানোর প্রতি নজর দেওয়া হয়। Solar Energy, Biogas, Bee Keeping ও Bio Fertilizers এই সব বিষয়ে সমগ্র ফোকাস থাকে।
সব মিলিয়ে যদি দেখা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এই সচেতনতা অভিযান কে Bio-Village-2 অনেক শক্তিশালী করে তুলবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত কারণ আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে মানুষের উৎসাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছুদিন আগেই, ভারতে পরিবেশ-রক্ষার উদ্দেশ্যে 'Mission Life' launch করা হয়েছে। Mission Life'এর মূল কথা হলো- এমন জীবনশৈলী ও এমন lifestyle'এর বিষয়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করা, যা পরিবেশের জন্য একেবারেই ক্ষতিকর নয়। আমার অনুরোধ, আপনারাও Mission Life'এর ব্যাপারে জানুন এবং তা আয়ত্ত করার চেষ্টা করুন।
বন্ধুরা, আগামীকাল অর্থাৎ ৩১শে অক্টোবর রাষ্ট্রীয় ঐক্য দিবস, যা সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেলের জন্মজয়ন্তীর পুণ্যতিথিও। এই দিন দেশের কোনে কোনে Run for Unity'র আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই দৌড় দেশে ঐক্যের বন্ধন কে আরো সুদৃঢ় করে, আমাদের যুব-সমাজকে অনুপ্রাণিত করে। কিছুদিন আগে, এই চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন আমরা জাতীয় ন্যাশেনাল গেমস চলাকালীন দেখেছি। 'জুড়েগা ইন্ডিয়া তো জিতেগা ইন্ডিয়া' এই থিম নিয়ে জাতীয় ন্যাশেনাল গেমস যেমন ঐক্যের একটা সুদৃঢ় বার্তা দিয়েছে, তেমনি ভারতের ক্রীড়া সংস্কৃতিকেও বিস্তৃত করেছে। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে এটি এখনো পর্যন্ত ভারতে আয়োজীত সর্ব বৃহৎ থেকে বড় ন্যাশেনাল গেমস ছিল। এতে ৩৬টি খেলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যার মধ্যে সাতটি নতুন এবং যোগাসন ও মল্লখম্ব সহ দুটি স্বদেশী খেলাও ছিল। স্বর্ণপদক পাওয়ার দৌড়ে সর্বাগ্রে যে তিনটি টিম ছিল তারা হলো- সার্ভিসেস, মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার টিম। এই প্রতিযোগিতায় ছটি Natinal Record এবং অন্ততপক্ষে ৬০টি National Games Record তৈরী হয়েছে। যারা পদক জিতেছেন, নতুন Record গড়েছেন, এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন, সেই সমস্ত ক্রীড়া প্রতিযোগীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। এই খেলোয়ারদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি ।
বন্ধুরা, গুজরাটে আয়োজিত এই ন্যাশেনাল গেমসকে সফল করে তুলতে যাদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের সকলকে আমি আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই।
আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, গুজরাটে, নব-রাত্রির সময় এই ন্যাশেনাল গেমসের আয়োজন হয়েছিল। এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের আগে, একবার তো আমারও মনে হয়েছিল, যে এই সময় সারা গুজরাট উৎসবে ব্যস্ত থাকে, তাহলে মানুষ প্রতিযোগিতার আনন্দ কী করে উপভোগ করবে? একদিকে এত বড় ব্যবস্থাপনা আর অন্যদিকে নবরাত্রির গর্বার মতো উৎসবের আয়োজন। এই সমস্ত কাজ গুজরাট একসঙ্গে কিভাবে করবে? কিন্তু গুজরাটের মানুষ তাদের আতিথেয়তার মধ্যে দিয়ে সকল অতিথির মন জয় করে নিয়েছেন।
আমেদাবাদের National Games চলাকালীন যেভাবে শিল্পকলা, খেলাধুলা ও সংস্কৃতির সমন্বয় হয়েছিল তা খুবই উৎসাহপূর্ণ ছিল। দিনের বেলায় খেলোয়াড়রা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন আবার সন্ধ্যেবেলায় তারা গারবা ও ডান্ডিয়ার উৎসবে মেতে উঠতেন। তারা গুজরাটি খাবার ও নবরাত্রির প্রচুর ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করেছেন। এইটা দেখা আমাদের প্রত্যেকের জন্য খুবই আনন্দময় ছিল। সর্বোপরি, এই খেলাগুলির মাধ্যমে, ভারতবর্ষের বৈচিত্রময় সংস্কৃতির একটি আভাস পাওয়া যায়। এটি "এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের" ভাবনাকে আরো মজবুত করে তোলে।
আমার প্রিয় দেশবাসী। নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখে আমাদের দেশে উদযাপিত হবে জনজাতি গৌরব দিবস। মনে আছে নিশ্চয়ই, গত বছর এটা শুরু করা হয়েছিল, ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্মজয়ন্তীর দিনে আদিবাসীর ঐতিহ্য ও গৌরবকে সম্মান জানানোর জন্য। ভগবান বিরসা মুন্ডা নিজের ছোট্ট জীবন কালেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষকে একজোট করতে পেরেছিলেন। উনি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ও আদিবাসীদের সংস্কৃতির রক্ষার জন্য নিজের জীবন বলিদান করে দিয়েছিলেন। এরকম কত কি আছে যা আমরা ধারতি আবা বীরসা মুন্ডার কাছ থেকে শিখতে পারি।
বন্ধুরা, যখনই ধরতি আবা বিরসা মুন্ডার কথা ওঠে, ওঁর ছোট্ট জীবনের দিকে ফিরে তাকাই, আজও আমরা তার থেকে অনেক কিছুই শিখতে পারি, আর ধরতি আবা বলেছেন এই মাটি আমার, আর আমরাই এর রক্ষক। ওঁর এই একটি বাক্যের মধ্যে মাতৃভূমির প্রতি কর্তব্যের ভাবনাও যেমন আছে, তেমনি রয়েছে পরিবেশ সম্পর্কে আমাদের কর্তব্যের সচেতনতা। উনি সবসময়ই এই কথার উপর জোর দিয়েছেন যে আমরা আমাদের আদিবাসী সংস্কৃতিকে কখনোই ভুলবো না ও তার থেকে এক বিন্দুও দূরে সরে যাব না। আজও আমরা আমাদের দেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের থেকে প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখতে পারি।
বন্ধুরা, গত বছর ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে রাঁচিতে ভগবান বিরসা মুন্ডার নামে একটি মিউজিয়াম উদঘাটন করার আমার পরম সৌভাগ্য হয়েছিল। আমি দেশের যুবা বন্ধুদের অনুরোধ করবো যে তারা যখনই সময় পাবেন যেন এই মিউজিয়ামটি দেখতে অবশ্যই যান। আমি আপনাদের এটাও জানাতে চাই যে পয়লা নভেম্বর মানে, পরশুদিন আমি গুজরাট ও রাজস্থানের বর্ডারের একটি জায়গা, মানগঢ়-এ থাকবো। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ও আমাদের সমৃদ্ধ আদিবাসীদের ঐতিহ্যে মানগঢ়-এর এক বিশিষ্ট স্থান রয়েছে। এখানে ১৯১৩-র নভেম্বর মাসে একটি ভয়ংকর হত্যাকাণ্ডে ইংরেজরা স্থানীয় আদিবাসীদের নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিল। কথিত আছে যে এই হত্যাকাণ্ডে এক হাজারেরও বেশি আদিবাসীকে প্রাণ হারাতে হয়েছিল।
এই জনজাতি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গোবিন্দ গুরুজী, যার জীবন প্রতিটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। আজ আমি সেই সকল জনজাতি শহীদ ও গোবিন্দ গুরুজীর অদম্য সাহস আর শৌর্যকে প্রণাম জানাচ্ছি। এই অমৃতকালে ভগবান বিরসা মুন্ডা, গোবিন্দ গুরুজী ও অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আদর্শ আমরা যত নিষ্ঠা ভরে পালন করব আমাদের দেশ ততই উন্নতির শিখর স্পর্শ করতে পারবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আগামী ৮ই নভেম্বর গুরুপুরব। গুরু নানকজীর প্রকাশপর্ব আমাদের বিশ্বাসের জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই আমাদের কাছে শিক্ষণীয়। গুরু নানক দেবজী নিজের সারা জীবন মানবতার আলোকবর্তিকা হয়ে ছিলেন। গুরুদের আলোকময় পথ নির্দেশ প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে অনেক প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। গুরু নানক দেবজীর ৫৫০তম প্রকাশ পর্ব দেশে ও বিদেশে ব্যাপকভাবে উদযাপন করার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল। অনেক দশকের প্রতীক্ষার পর কর্তারপুর সাহিব করিডোর নির্মাণ করতে পারাও ততটাই আনন্দদায়ক। কিছুদিন আগেই হেমকুন্ড সাহিবের জন্য রোপওয়ের শিলান্যাস করার সৌভাগ্যও আমার হয়েছে। আমাদের গুরুদের ভাবনা থেকে ক্রমাগত শিক্ষা নিতে হবে, তাদের প্রতি সমর্পিত থাকতে হবে।
সেই দিন কার্তিক পূর্ণিমাও রয়েছে। এদিন আমরা তীর্থে, নদীতে স্নান করি, সেবা ও দান করি। আমি আপনাদের সকলকে এই উৎসব উপলক্ষ্যে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আগামী কিছুদিনের মধ্যে অনেক রাজ্য নিজেদের রাজ্য দিবসও উদযাপন করবে। অন্ধ্রপ্রদেশ নিজেদের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন করবে, কেরালা পিরাভি পালন করবে, কর্ণাটক রাজ্যোৎসব উদযাপন করবে। অনুরূপভাবে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও হরিয়ানাও নিজেদের রাজ্য দিবস উদযাপন করবে। আমি এই সব রাজ্যের মানুষদের শুভেচ্ছা জানাই। আমাদের সব রাজ্যে একে অন্যের থেকে শেখার, সহযোগিতা করার এবং মিলেমিশে কাজ করার স্পিরিট যত মজবুত হবে দেশ ততই উন্নতি করবে। আমি বিশ্বাস করি আমরা এই ভাবনা নিয়েই অগ্রসর হব। আপনারা সকলে নিজেদের খেয়াল রাখুন, সুস্থ থাকুন। মন কি বাতের পরবর্তী সাক্ষাৎ পর্যন্ত আমাকে বিদায় নেওয়ার অনুমতি দিন।
নমস্কার, ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। বিগত দিনগুলোতে যে বিষয় আমাদের মনযোগ আকর্ষণ করেছে - তা হল চিতা। চিতা নিয়ে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে অনেক বার্তা এসেছে, সেটা উত্তরপ্রদেশের অরুণ কুমার গুপ্তাজী হোন অথবা তেলেঙ্গানার এন. রামচন্দ্রন রঘুরামজীর; গুজরাতের রাজনজী হোন বা দিল্লীর সুব্রতজী। দেশের প্রত্যেকটা কোণ থেকে মানুষজন দেশে চিতার প্রত্যাবর্তন নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। একশো তিরিশ কোটি ভারতবাসী খুশী, গর্বিত – এই হল ভারতের প্রকৃতিপ্রেম। এই ব্যাপারে লোকজনের একটা সাধারণ প্রশ্ন এই যে মোদীজী আমরা চিতা দেখার সুযোগ কবে পাব?
বন্ধুগণ, একটা টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হয়েছে। এই টাস্ক ফোর্স চিতার নজরদারি করবে আর দেখবে যে এখানকার পরিবেশে তারা কতটা খাপ খাইয়ে নিয়েছে। এর ভিত্তিতে কয়েক মাস পর কোনও একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, আর তখন আপনারা চিতাদের দেখতে পাবেন। কিন্তু ততদিন অবধি আমি আপনাদের সবাইকে কিছু-কিছু কাজ দিচ্ছি। এর জন্য মাই গভ-এর প্ল্যাটফর্মে, একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন হবে, যেখানে আপনাদের কাছে কিছু শেয়ার করার অনুরোধ আমি জানাচ্ছি। চিতাদের নিয়ে আমরা যে অভিযান চালাচ্ছি, সেটার নাম কী হওয়া উচিত! আমরা কি এই সব চিতাদের নামকরণের ব্যাপারেও ভাবতে পারি, যে এর মধ্যে প্রত্যেককে কোন নামে ডাকা হবে! এমনিতে এই নামকরণ যদি চিরাচরিত পদ্ধতিতে হয় তবে খুব ভালো হবে, কারণ আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতি, পরম্পরা আর ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত যে কোনও বিষয়, সহজেই তার দিকে আমাদের আকর্ষণ করে। এটাই শুধু নয়, আপনারা এও বলুন, যে পশুর সঙ্গে মানুষের কেমন ব্যবহার করা উচিত! আমাদের মৌলিক কর্তব্যেও তো পশুদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। আপনাদের সবার কাছে আমার আবেদন যে আপনারা এই কম্পিটিশনে অবশ্যই অংশগ্রহণ করুন – কে বলতে পারে, পুরস্কার হিসাবে চিতা দেখার প্রথম সুযোগও আপনিই পেতে পারেন!
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ২৫শে সেপ্টেম্বর দেশের প্রখর মানবতাবাদী, চিন্তাবিদ এবং মহান সুপুত্র দীনদয়াল উপাধ্যায়জীর জন্মদিন পালন করা হয়। যে কোনও দেশে তরুণরা যত নিজের পরিচয় আর গৌরব নিয়ে গর্ব করে, তাকে নিজেদের মৌলিক বিচার আর দর্শন ততই আকর্ষণ করে। দীনদয়ালজীর মতধারার সবথেকে বড় বিশেষত্বের দিক এটাই যে উনি নিজের জীবনে বিশ্বের বড়-বড় উত্থান-পতন দেখেছেন। উনি নানা মতের সঙ্ঘাতের সাক্ষী ছিলেন। এই জন্য উনি ‘একাত্ম মানবদর্শন’ আর ‘অন্ত্যোদয়ের’ এক ভাবনা দেশের সামনে উপস্থিত করেছিলেন যা পুরোপুরি ভারতীয় ছিল। দীনদয়ালজীর ‘একাত্ম মানবদর্শন’ এমন এক ভাবনা যা মতবাদের নামে দ্বন্দ্ব আর একগুঁয়েমি থেকে মুক্তি দেয়। উনি মানুষমাত্রকে সমান বলে গণ্য করা ভারতীয় দর্শনকে আবার পৃথিবীর সামনে উপস্থিত করলেন। আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে ‘আত্মবৎ সর্বভূতেষু’ অর্থাৎ আমরা জীবমাত্রকে নিজেদের সমান বলে গণ্য করব, আপন ভেবে আচরণ করব। আধুনিক, সামাজিক আর রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতেও ভারতীয় দর্শন কেমনভাবে দুনিয়াকে পথ দেখাতে পারে এটা দীনদয়ালজী আমাদের শিখিয়েছেন। এক অর্থে, স্বাধীনতার পর দেশের মধ্যে যে হীনভাবনা ছিল, তার থেকে মুক্তি দিয়ে তিনি আমাদের নিজেদের বৌদ্ধিক চেতনাকে জাগ্রত করেন।
উনি বলতেনও, - 'আমাদের স্বাধীনতা তখনই সার্থক হবে যখন ওরা আমাদের সংস্কৃতি ও পরিচয়ের উপলব্ধি করবে। ' এই বিচারের উপর ভিত্তি করেই উনি দেশের বিকাশের vision নির্মাণ করেছিলেন। দীনদয়াল উপাধ্যায় মহাশয় বলতেন যে, দেশের উন্নতির মাপকাঠি হল শেষ পদে থাকা ব্যক্তি। আজাদীর অমৃত মহোৎসবে আমরা দীনদয়াল উপাধ্যায় মহাশয় কে যত বেশি জানব, যত বেশি ওঁর থেকে শিখবো, ততই আমরা সবাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পাব।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ থেকে তিন দিন পর, অর্থাৎ, ২৮শে সেপ্টেম্বর অমৃত মহোৎসবের এক বিশেষ দিন আসতে চলেছে। ঐদিন আমরা ভারত মাতার বীরপুত্র ভগৎ সিং জীর জন্ম জয়ন্তী পালন করব। ভগৎ সিং জীর জন্মদিনের ঠিক আগে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি স্বরূপ এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে যে, এবার থেকে চন্ডীগড় এয়ারপোর্ট এর নাম শহীদ ভগৎ সিং জীর এর নামে রাখা হবে। দীর্ঘ সময় ধরে এর প্রতীক্ষা ছিল। আমি চন্ডীগড়, পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং দেশের প্রত্যেকটি মানুষকে এই সিদ্ধান্তের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
বন্ধুরা, আমরা আমাদের স্বাধীনতার সৈনিকদের থেকে প্রেরণা নেব, তাঁদের আদর্শ অনুসরণ করে তাঁদের স্বপ্নের ভারত বানাব, এটাই তাঁদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। শহীদদের স্মারক, তাঁদের নামে নামাঙ্কিত স্থান এবং প্রতিষ্ঠানের নাম আমাদের কর্তব্য পালনের অনুপ্রেরণা দেয়। এই কিছুদিন আগেই দেশ কর্তব্যপথে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি স্থাপনার মাধ্যমে এমনই এক প্রচেষ্টা করেছে এবং এখন শহীদ ভগৎ সিং-এর নামে চন্ডিগড় এয়ারপোর্ট-এর নাম, এই দিকে আরো একধাপ এগোনো হবে। আমি চাইব, অমৃত মহোৎসবে আমরা যেভাবে স্বাধীনতার সৈনিকদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিশেষ অনুষ্ঠানগুলি সেলিব্রেট করছি সেইভাবেই ২৮শে সেপ্টেম্বরেও প্রত্যেক যুবক-যুবতী কিছু নতুন প্রচেষ্টা অবশ্যই করুক।
আমার প্রিয় দেশবাসী, তবে আপনাদের সবার কাছে ২৮শে সেপ্টেম্বর সেলিব্রেট করার আরো একটি উপলক্ষ্য আছে। জানেন কি সেটা? আমি শুধু দুটো শব্দ বলব কিন্তু আমি জানি আপনাদের জোশ চারগুণ বেড়ে যাবে। এই দুটো শব্দ হলো - সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। জোশ বৃদ্ধি হলো তো!! আমাদের দেশে অমৃত মহোৎসবের যে অভিযান চলছে তা আমাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে সেলিব্রেট করতে হবে, নিজের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বলা হয়, জীবন সংগ্রামের ঘাত-প্রতিঘাতে জর্জরিত ব্যক্তির সামনে কোনোকিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, আমরা এমন কিছু সঙ্গীকেও দেখি যাঁরা কিছু শারীরিক সমস্যার মোকাবিলা করছেন। অনেক মানুষ আছেন যাঁরা হয় শুনতে পান না বা কথা বলে তাঁদের বক্তব্য প্রকাশ করতে পারেন না। এই ধরনের সঙ্গীদের জন্য সবচেয়ে বড় সম্বল হল sign language বা ইশারায় কথা বলা। কিন্তু বহু বছর ধরে ভারতে এই বিষয়ে একটি বড় সমস্যা দেখা গেছে, তা হল যে sign language-এর জন্য কোনও স্পষ্ট নির্দিষ্ট ভঙ্গিমা ছিলনা, কোন standards ছিলনা। এই অসুবিধাগুলি কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যেই, ২০১৫ সালে, Indian Sign Language Research And Training Centre প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আমি আনন্দিত যে এই প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত ১০,০০০ শব্দ এবং অভিব্যক্তির একটি ডিকশনারি তৈরি করেফেলেছে। দুই দিন আগে অর্থাৎ ২৩শে সেপ্টেম্বর, সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ডে-তে, অনেক স্কুলের পাঠ্যক্রমও সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে শুরু করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতেও sign language-এর মান বজায় রাখার ওপর ব্যাপক জোর দেওয়া হয়েছে। sign language এ যে ডিকশনারি তৈরি হয়েছে তারও ভিডিও তৈরি করে প্রচার করা হচ্ছে অবিরাম। Youtube-এ অনেক লোক, অনেক সংস্থানও Indian sign language-এর নিজেদের চ্যানেল পর্যন্ত শুরু করে দিয়েছে। অর্থাৎ সাত-আট বছর আগে sign language নিয়ে দেশে যে অভিযান শুরু হয়েছিল তার লাভ এখন আমার লক্ষ লক্ষ দিব্যাংগ ভাই-বোনরা পাচ্ছেন। হরিয়ানার বাসিন্দা পূজাজি তো Indian sign language নিয়ে খুব খুশি। আগে তিনি তার ছেলের সঙ্গেই কথা বলতে পারতেন না, কিন্তু ২০১৮ সালে sign language-এর Tranning নেওয়ার পরে, মা ও ছেলে, উভয়ের জীবন সহজ হয়ে গেছে। পূজাজির ছেলেও sign language শিখেছিল এবং তার স্কুলে গল্প বলার ক্ষেত্রে পুরস্কার জিতেও দেখিয়েছিল। একইভাবে টিংকাজির একটি ৬ বছর বয়সী কন্যা রয়েছে যে শুনতে অক্ষম। টিংকাজি তাঁর মেয়েকে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের একটি কোর্স করিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজে sign language জানতেন না, যার কারণে তিনি তার সন্তানের সঙ্গে কথোপকথন করতে পারতেন না। এখন টিঙ্কাজিও sign language –এর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং মা ও মেয়ে দু’জনেই এখন নিজেদের মধ্যে অনেক কথা বলেন। কেরালার মঞ্জুজিও এই প্রচেষ্টায় ভীষণ উপকৃত হয়েছেন। মঞ্জুজি জন্ম থেকেই শুনতে পান না। শুধু তাই নয়, তার বাবা-মায়ের জীবনেও একই রকম পরিস্থিতি ছিল। এমন পরিস্থিতিতে, sign language পুরো পরিবারের কাছে যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এখন মঞ্জুজি নিজেও sign language -এর শিক্ষক হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বন্ধুরা আমি এই বিষয়ে “মন কি বাত” অনুষ্ঠানে এই কারণেও আলোচনা করছি যাতে ইন্ডিয়ান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে সচেতনতা বাড়ে। এতে আমরা নিজেদের দিব্যাংগ বন্ধুদের অনেকখানি সাহায্য করতে পারব। ভাই ও বোনেরা, কিছুদিন আগে আমি ব্রেল পদ্ধতিতে লেখা হেমকোষ-এর একটি কপি পেয়েছি। হেমকোষ অসমীয়া ভাষায় লেখা সবচেয়ে পুরনো ডিকশনারিগুলির মধ্যে একটি। এটি উনবিংশ শতাব্দীতে তৈরি করা হয়েছিল। এর সম্পাদনা করেছিলেন প্রখ্যাত ভাষাবিদ হেমচন্দ্র বড়ুয়া। হেমকোষের ব্রেল এডিশনটি প্রায় ১০ হাজার পাতার আর ১৫ টিরও বেশি খন্ডে প্রকাশিত হতে চলেছে এটি। প্রায় এক লক্ষেরও বেশি শব্দের অনুবাদ করা হবে এতে। আমি এই সংবেদনশীল প্রচেষ্টার খুবই প্রশংসা করছি। এই ধরনের সকল প্রচেষ্টাই দিব্যাংগ বন্ধুদের দক্ষতা ও সামর্থ্য বাড়াতে সাহায্য করে। বর্তমানে ভারত প্যারা স্পোর্টসেও নিজের সাফল্যের পতাকা ওড়াচ্ছে। আমরা সকলেই বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টে এর সাক্ষী হয়েছি।
এখন এরকম অনেক মানুষ রয়েছেন যারা দিব্যাংগ মানুষদের মধ্যে ফিটনেস কালচার বিষয়টিকে একেবারে নিচের স্তর থেকে উৎসাহ দেওয়ার কাজ করে চলেছেন। এতে দিব্যাংগ মানুষদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন আগে আমি সুরাটের একটি মেয়ে অন্বির সঙ্গে দেখা করেছি। অন্বি আর অন্বির যোগ অভ্যাসের সঙ্গে আমার এমন স্মরণীয় সাক্ষাৎ হয়েছে যে আমি মন কি বাত অনুষ্ঠানের সকল শ্রোতাদের এই বিষয়ে কিছু বলতে চাই। বন্ধুরা অন্বি জন্ম থেকেই ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত এবং ছোটবেলা থেকেই হার্টের জটিল সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে। যখন ওর বয়স মাত্র তিন মাস, সেই সময়ই ওকে ওপেন হার্ট সার্জারির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। এই সব সমস্যার পরেও অন্বি বা ওর বাবা-মা কখনোই হার স্বীকার করেননি। অন্বির বাবা-মাও ডাউন সিনড্রোম-এর বিষয়ে সমস্ত তথ্য যোগাড় করেছেন এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে অন্বিকে অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। ওরা অন্বিকে জলের গ্লাস তোলা, জুতোর ফিতে বাঁধা, জামাকাপড়ের বোতাম লাগানোর মতো ছোট ছোট জিনিস শেখানো শুরু করেন । কোন জিনিসের স্থান কোথায়, কোনটা ভালো অভ্যাস এই সমস্ত কিছুই অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে অন্বিকে শেখানোর চেষ্টা করেছিলেন। ছোট্ট অন্বি এইসব জিনিস শেখার যেভাবে আগ্রহ দেখিয়েছিল, ইচ্ছা-শক্তির পরিচয় দিয়েছিল, নিজের প্রতিভা প্রদর্শন করেছিল, এতে ওর মা-বাবাও উৎসাহিত হয়। ওরা তখন অন্বিকে যোগ শেখার জন্য উৎসাহ দেয়। সমস্যা এতটাই জটিল ছিল যে অন্বি নিজের দুই পায়ের সাহায্যে দাঁড়াতে পারতো না। এমন পরিস্থিতিতে অন্বির বাবা-মা ওকে যোগ শেখার জন্য উৎসাহ দেয়। প্রথমবার যখন ও যোগ প্রশিক্ষকের কাছে যায়, তিনিও অনিশ্চিত ছিলেন যে, এই ছোট্ট নিষ্পাপ মেয়েটা কি আদৌ যোগ শিখতে পারবে? কিন্তু সেই প্রশিক্ষক বোধ হয় জানতেন না অন্বির কি ধাতু দিয়ে তৈরী। ও নিজের মায়ের সঙ্গে যোগ অভ্যাস করতে শুরু করে আর এখন তো ও যোগের বিষয়ে এক্সপার্ট হয়ে গেছে।
আজ অন্বি সারা দেশের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ও পদক জিতে নেয়। যোগ অন্বিকে নতুন জীবন দিয়েছে। যোগ কে আত্মস্থ করে জীবনকেও আত্মস্থ করেছে অন্বি। অন্বির বাবা-মা আমাকে বলছিলেন যে যোগ অন্বির জীবনে আশ্চর্যজনক পরিবর্তন এনেছে, এখন তার আত্মবিশ্বাস অবিশ্বাস্য হয়ে উঠেছে। যোগব্যায়াম অন্বির শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করেছে এবং ওষুধের প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ কমিয়ে দিচ্ছে। আমি চাই দেশে-বিদেশে উপস্থিত ‘মন কি বাত’-এর শ্রোতারা অন্বির যোগব্যায়াম থেকে উপকারিতা সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করুক। আমি মনে করি অন্বি একটি দুর্দান্ত কেস স্টাডি। যারা যোগের উপকারিতা সম্পর্কে গবেষণা করতে চান, সেই সব বিজ্ঞানীরা এগিয়ে এসে অন্বির এই সাফল্যের উপর অধ্যয়ন করে বিশ্বকে যোগের শক্তির সঙ্গে পরিচয় করান। এই ধরনের যেকোনো গবেষণা বিশ্বজুড়ে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের জন্য দারুন সহায়ক হতে পারে। এখন বিশ্ব স্বীকার করেছে যে যোগব্যায়াম শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য খুবই কার্যকর। বিশেষ করে ডায়াবেটিস এবং রক্তচাপ সংক্রান্ত সমস্যায় যোগ ব্যায়াম বিশেষ রূপে সাহায্য করে। যোগ ব্যায়ামের এমনি শক্তিতে প্রভাবিত হয়ে জাতিসংঘ ২১শে জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন ভারতের আরেকটি প্রচেষ্টাকে ইউনাইটেড নেশনস বা জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে, সম্মানিত করেছে। এই প্রচেষ্টাটি ২০১৭ সালে শুরু হয়েছে - ইন্ডিয়া হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইনিশিয়েটিভ। এর আওতায় রক্তচাপজনিত সমস্যায় আক্রান্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন সরকারি সেবা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে পারবেন। এই উদ্যোগ যেভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, তা নজিরবিহীন। আমরা সবাই উৎসাহিত হই, জেনে যে যাদের চিকিৎসা করা হয়েছে তাদের প্রায় অর্ধেকের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যারা এই উদ্যোগের জন্য কাজ করেছেন, যারা তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এটিকে সফল করেছেন, তাঁদের আমি অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুরা, মানব জীবনের বিকাশ সর্বদাই জলের সঙ্গে যুক্ত - তা সে সমুদ্র, নদী বা পুকুর হোক। ভারতবর্ষেরও সৌভাগ্য যে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটারের কোস্টলাইন হওয়ার জন্য সমুদ্রের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট। এই তটরেখা বেশ কয়েকটি রাজ্য ও দ্বীপসমূহ জুড়ে বিস্তৃত। ভারতবর্ষের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি এই অঞ্চলে বিকশিত হতে দেখা গিয়েছে। শুধু তাই নয় এই উপকূলবর্তী এলাকার খাওয়া-দাওয়া, সকলকে খুব আকৃষ্ট করে। কিন্তু এই খুশির বিষয়ের সঙ্গে একটি খারাপ দিকও রয়েছে। আমাদের এই উপকূলবর্তী অঞ্চল পরিবেশ জনিত নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ক্লাইমেট চেঞ্জ, মেরিন ইকোসিস্টেমের জন্য বড় এক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে আমাদের Beach-এ ছড়ানো আবর্জনা অসুবিধা সৃষ্টি করে। আমাদের দায়িত্ব এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য আমাদের সমস্ত রকমের জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। এখানে আমি দেশের উপকূলবর্তী এলাকায় Coastal Cleaning এর একটি প্রচেষ্টা 'স্বচ্ছ সাগর - সুরক্ষিত সাগর' - বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাই। ৫ই জুলাই যে অভিযান শুরু হয়েছিল তার সমাপন গত ১৭ই সেপ্টেম্বর অর্থাৎ বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে হয়েছে। এই দিনটি কোস্টাল Cleanup-Day-ও ছিল। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি পঁচাত্তর দিন চলল। এতে জনগণের অংশগ্রহণ দেখার মত ছিল। এই প্রয়াস এর দরুন পুরো আড়াই মাস ধরে স্বচ্ছতার উপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখা গেছে। Goa তে একটি দীর্ঘ মানব শৃংখল গঠন করা হয়েছিল। Kakinada তে গণপতি বিসর্জন এর সময় জনগণকে প্লাস্টিকের অপকারিতা সম্পর্কে জানানো হয়েছিল। NSS এর প্রায় ৫০০০ যুবক-যুবতীরা ৩০ ton-এর ও বেশি প্লাস্টিক জড়ো করেছে। ওড়িষ্যাতে তিনদিনের মধ্যে কুড়ি হাজারেরও বেশি স্কুলের ছাত্ররা প্রতিজ্ঞা করেছে যে তারা নিজের সঙ্গে, নিজের পরিবার ও আশেপাশের মানুষজনদেরও ‘স্বচ্ছ সাগর সুরক্ষিত সাগরের’ জন্য অনুপ্রাণিত করবে। আমি সেই সকল মানুষকে অভিনন্দন জানাতে চাই যারা এই অভিযানে অংশগ্রহণ করেছেন।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বিশেষ করে শহরের Mayor বা গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধানদের সঙ্গে যখন কথা বলি, তাদের এই অনুরোধটি আমি অবশ্যই করি যে স্বচ্ছতার মতন প্রচেষ্টাতে লোকাল কমিউনিটি আর লোকাল অরগানাইজেশন গুলিকে যুক্ত করুক, innovative পদ্ধতি প্রয়োগ করুক।
বেঙ্গালুরুতে একটি টিম আছে - "ইউথ ফর পরিবর্তন"। গত আট বছর ধরে এই টিম স্বচ্ছতা ও অন্যান্য বিভিন্ন Community ভিত্তিক বিষয় নিয়ে কাজ করছে। তাদের উদ্দেশ্য অত্যন্ত স্পষ্ট - "স্টপ কমপ্লেনিং, স্টার্ট অ্যাক্টিং"। এই টিম এখনো পর্যন্ত শহরের ৩৭০ টিরও বেশি স্থানের সৌন্দর্যায়ন করেছে। প্রতিটি স্থানেই ইউথ ফর পরিবর্তন তাদের অভিযানে ১০০ থেকে ১৫০ জন নাগরিককে যুক্ত করেছে। এই কর্মসূচি প্রতি রবিবার সকালে শুরু হয় এবং দুপুর পর্যন্ত চলে। এই কাজের মাধ্যমে জঞ্জাল তো দূর করা হয়ই, দেওয়ালে পেইন্টিং এবং আর্টিস্টিক স্কেচেসও করা হয়। অনেক জায়গায় আপনি বিখ্যাত ব্যক্তিদের স্কেচেস এবং তাদের ইনস্পিরেশনাল কোটসও দেখতে পাবেন। বেঙ্গালুরুর ইয়ুথ ফর পরিবর্তনের প্রচেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের মিরাটের "কওয়াড় সে জুগাড়" অভিযানের প্রসঙ্গেও বলতে চাই। এই অভিযান পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি শহরের সৌন্দর্যায়নের সঙ্গেও যুক্ত। এই কর্মসূচির একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো এখানে লোহার স্ক্র্যাপ প্লাস্টিক ওয়েস্ট, পুরানো টায়ার বা ড্রামের মত বাতিল হওয়া জিনিস ব্যবহৃত হয়। স্বল্প খরচে সর্বজনিক স্থানেও সৌন্দর্যায়ন কীভাবে সম্ভব এই অভিযান তারও এক আদর্শ উদাহরণ। এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত সকলকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন দেশের চতুর্দিকে উৎসবের রোশনাই। আগামীকাল নবরাত্রির প্রথম দিন। এদিন আমরা দেবীর প্রথম রূপ "মা শৈলপুত্রী"র উপাসনা করব। একটানা ন’দিনের নিয়ম, সংযম ও উপবাস পালনের পর বিজয়া দশমীর উৎসবও আসবে। অর্থাৎ এদিক থেকে দেখলে আমরা বুঝতে পারব আমাদের উৎসবগুলির মধ্যে আস্থা ও আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি কত গভীর বার্তাও লুকিয়ে আছে! অনুশাসন ও সংযমের মাধ্যমে সিদ্ধিপ্রাপ্তি আর তারপর বিজয় উৎসব - এই তো জীবনে যে কোন লক্ষ্য পূরণের পথ! দশেরার পর ধনতেরাস ও দীপাবলীর উৎসবও আসতে চলেছে।
বন্ধুরা, বিগত বছর থেকে আমাদের উৎসবগুলির সঙ্গে একটি নতুন সংকল্প জুড়েছে। আপনারা সবাই জানেন, এই সংকল্প হলো 'vocal for local' এর। এখন আমরা উৎসবের আনন্দে আমাদের Local কারিগর, শিল্পী, আর ব্যবসায়ীদেরও যুক্ত করছি। আসন্ন ২রা অক্টোবর বাপুজীর জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে আমাদের এই অভিযান কে আরও ত্বরান্বিত করার সংকল্প নিতে হবে। খাদি, হ্যান্ডলুম, হ্যান্ডিক্রাফট এই সমস্ত জিনিসের সঙ্গে লোকাল দ্রব্যও অবশ্যই কিনুন।
আসলে এই উৎসবের সত্যিকারের আনন্দও তখন হবে যখন প্রত্যেকে এই উৎসবের অংশীদার হবে। এই জন্য স্থানীয় প্রোডাক্টের কাজের সঙ্গে যুক্ত লোকেদের আমাদের Suportও করতে হবে। একটা ভালো উপায় এটাও হতে পারে, উৎসবের সময় আমরা যা উপহার দিই, আমরা এই ধরনের প্রডাক্টকেও সংমিলিত করি। এই সময় এই অভিযান এইজন্যও বিশেষ গুরুতপূর্ণ, কারণ আজাদীর অমৃত মহোৎসব-এর সময় আত্মনির্ভর ভারতেরও লক্ষ্য নিয়ে আমরা চলছি। যা প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা প্রেমীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে। সেইজন্য আমার আপনাদের কাছে এই নিবেদন যে এই বার খাদি, হ্যান্ডলুম বা হ্যান্ডিক্রাফট - এই সব জিনিস কেনার সমস্ত রেকর্ড আপনারা ভেঙে দিন। আমরা দেখেছি যে উৎসবের দিনে packing আর packaging এর জন্য পলিথিন ব্যাগের অনেক ব্যবহারও হয়ে থাকে। স্বচ্ছতার পর্বে পলিথিনের ক্ষতিকারক আবর্জনা, আমাদের উৎসবের ভাবনার বিরুদ্ধে। এইজন্য আমরা যেনো স্থানীয় স্তরে প্রস্তুত non-plastic ব্যাগেই ব্যবহার করি। আমাদের এখানে পাটের, সুতোর, কলা দিয়ে তৈরী, এরকম হরেক রকম ঐতিহ্যগত ব্যাগের চলন পুনরায় বাড়ছে। এটা আমাদের দায়িত্ব যে উৎসবের দিনগুলিতে এইগুলির ব্যবহারে আমরা উৎসাহ প্রদান করি। আর স্বচ্ছতার সঙ্গে নিজেদের আর পরিবেশের স্বাস্থ্যেরও খেয়াল রাখি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের শাস্ত্রে বলা আছে,
'পরহিত সরিস ধরম্ নেহি ভাই'
অর্থাৎ পরের ভালো করা, অপরের সেবা ও উপকার করার মতো অন্য কোনো ধর্ম হয়না। বিগত দিনে দেশে সমাজ সেবার এই ভাবনারই প্রতিফলন দেখতে পেয়েছিলাম। আপনারাও দেখেছেন হয়তো, মানুষ এগিয়ে এসে কোনো না কোনো টি বি রুগীদের দত্তক নিচ্ছেন, তার জন্য পুষ্টিকর আহারের ব্যবস্থা করছেন।
আসলে, এটি টিবি মুক্ত ভারত অভিযানের একটি অংশ, যার মূল ভিত্তি হল জনগণের অংশগ্রহণ, কর্তব্য অনুভূতি। সঠিক পুষ্টি, সঠিক সময়ে ওষুধ দিয়ে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা সম্ভব। আমি নিশ্চিত যে জনগণের স্বতস্ফূর্ত এই শক্তি দ্বারা, ২০২৫ সালের মধ্যে ভারত টিবি মুক্ত হবে। বন্ধুরা, কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল দাদরা-নগর হাভেলী এবং দমন-দিউ থেকে এমনই একটি উদাহরণ জানতে পেরেছি, যা মন ছুঁয়ে যায়। এখানকার আদিবাসী অঞ্চলে বসবাসকারী জিনু রাবতিয়াজী লিখেছেন যে সেখানে গ্রাম দত্তক কার্যক্রমের অধীনে মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ৫০ টি গ্রাম দত্তক নিয়েছে। এর মধ্যে জিনুজীর গ্রামও রয়েছে। এই মেডিকেলের ছাত্ররা অসুখ থেকে বাঁচাতে গ্রামের লোকেদের সচেতন করে, অসুস্থদের সাহায্য করে এবং সরকারী প্রকল্পগুলি সম্পর্কেও তথ্য দেয়। পরোপকারের এই চেতনা গ্রামে বসবাসকারী মানুষের জীবনে এনেছে খুশির আমেজ। এজন্য আমি মেডিকেল কলেজের সকল শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুরা, 'মন কি বাত'-এ নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। অনেক সময়, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, আমরা কিছু পুরানো বিষয়ের গভীরে যাওয়ারও সুযোগ পাই। গত মাসে 'মন কি বাত'-এ, আমি মোটা দানা শস্যর কথা বলেছিলাম, এবং ২০২৩ সালকে 'আন্তর্জাতিক মিলেট ইয়ার' হিসেবে উদ্যাপন করার বিষয়ে কথা বলেছিলাম। মানুষ এই বিষয় সম্পর্কে খুব কৌতূহলী। আমি অনেক চিঠি পেয়েছি যেখানে অনেকেই বলছেন তারা কিভাবে মিলেটস্-কে দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। মিলেট দিয়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী রান্নার কথাও বলেছেন কেউ কেউ। এগুলো বড় পরিবর্তনের লক্ষণ। মানুষের এই উৎসাহ দেখে, আমি মনে করি আমাদের এক সঙ্গে একটি ই-বুক তৈরি করা উচিত, যাতে লোকেরা মিলেট থেকে তৈরি রান্নার পদ্ধতি এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে পারেন, যাতে আন্তর্জাতিক মিলেট ইয়ার শুরু হওয়ার আগে, আমাদের কাছে মিলেট সম্পর্কিত একটি পাবলিক এনসাইক্লোপিডিয়া তৈরী হবে। তারপর আপনি এটিকে MyGov পোর্টালে প্রকাশ করতে পারেন।
বন্ধুরা, এইবারের 'মন কি বাত'-এ এইটুকুই, কিন্তু যেতে-যেতে, আমি আপনাকে National Games সম্পর্কেও বলতে চাই। ২৯শে সেপ্টেম্বর থেকে গুজরাটে National Games আয়োজিত হচ্ছে। এটি একটি বিশেষ উপলক্ষ, কারণ বহু বছর পর জাতীয় গেমসের আয়োজন করা হচ্ছে। গতবার কোভিড অতিমারীর কারণে অনুষ্ঠানটি বাতিল করতে হয়েছিল। এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক খেলোয়াড়কে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল। এই দিনে আমি খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতে তাঁদের মাঝে থাকব। আপনারা সকলে অবশ্যই National Games Follow করুন এবং আপনার খেলোয়াড়দের মনবল প্রদান করুন। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। আগামী মাসে আবার দেখা হবে 'মন কি বাত'-এ একটি নতুন বিষয় নিয়ে। ধন্যবাদ , নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। অগাস্টের এই মাসে, আপনাদের সবার চিঠি, বার্তা আর কার্ড, আমার দপ্তরকে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত করে দিয়েছে। আমি এমন কোনও চিঠিই প্রায় পাই নি, যার উপরে তেরঙ্গা ছিল না, অথবা তেরঙ্গা আর স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত কথা ছিল না। বাচ্চারা, তরুণ সাথীরা তো অমৃত মহোৎসবে খুব সুন্দর-সুন্দর ছবি, আর নকশা বানিয়েও পাঠিয়েছে। স্বাধীনতার এই মাসে আমাদের গোটা দেশে, প্রত্যেক শহরে, প্রত্যেক গ্রামে, অমৃত মহোৎসবের অমৃতধারা বইছে। অমৃত মহোৎসব আর স্বাধীনতা দিবসের এই বিশেষ সময়ে দেশের সামগ্রিক শক্তির দর্শন করেছি আমরা। এক চেতনার অনুভব হয়েছে। এত বড় দেশ, এত বিবিধতা, কিন্তু যখন তেরঙ্গা উত্তোলনের প্রসঙ্গ এল, তখন প্রত্যেকে, একটাই ভাবনায় সামিল দেখা গেল। তেরঙ্গার গৌরবের প্রথম প্রহরী হয়ে, মানুষ, নিজেরা এগিয়ে এল। আমরা স্বচ্ছতা অভিযান আর টিকাকরণ অভিযানেও দেশের স্পিরিট দেখেছি। অমৃত মহোৎসবে আবার দেশভক্তির এমনই প্লাবন দেখতে পাচ্ছি আমরা। আমাদের সৈনিকরা উঁচু-উঁচু পাহাড়ের শিখরে, দেশের সীমানায়, আর সমুদ্রের মাঝখানে তেরঙ্গা উত্তোলন করেছে। মানুষজন তেরঙ্গা অভিযানের জন্য আলাদা-আলাদা উদ্ভাবনী আইডিয়াও বের করেছে। যেমন তরুণ সাথী, কৃশনীল অনিল জী। অনিল জী একজন পাজ্ল আর্টিস্ট আর উনি রেকর্ড সময়ে অত্যন্ত সুন্দর মোজাইক আর্ট তৈরি করেছেন। কর্ণাটকের কোলারে, মানুষজন ছ’শো তিরিশ ফিট লম্বা আর দু’শো পাঁচ ফিট চওড়া তেরঙ্গা হাতে ধরে অভূতপূর্ব দৃশ্য তৈরি করেছে। অসমে সরকারি কর্মীরা দিঘালীপুখুরী War Memorial-এ তেরঙ্গা উত্তোলনের জন্য নিজেদের হাতে কুড়ি ফিটের তেরঙ্গা বানিয়েছে। এইভাবে, ইন্দোরের মানুষ মানব-শৃঙ্খলের মাধ্যমে ভারতের নকশা বানিয়েছে। চণ্ডীগড়ে, তরুণরা, বিশাল মানব তেরঙ্গা নির্মাণ করে। এই দুটো প্রয়াসই গিনেস রেকর্ডে নথিবদ্ধ করা হয়েছে। এই সবকিছুর মাঝখানে, হিমাচল প্রদেশের গঙ্গোট পঞ্চায়েত থেকে এক বড় প্রেরণাদায়ী উদাহরণও দেখতে পাওয়া গেল। এখানে পঞ্চায়েতে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচীতে প্রবাসী শ্রমিকদের সন্তানদের প্রধান অতিথি হিসাবে সামিল করা হয়।
বন্ধু, অমৃত মহোৎসবের এই রঙ, শুধু ভারতেই নয়, বরং, দুনিয়ার অন্যান্য দেশেও দেখতে পাওয়া গেল। বোটসোয়ানা-তে বসবাসকারী স্থানীয় সঙ্গীতশিল্পীরা ভারতের স্বাধীনতার পঁচাত্তর বর্ষপূর্তি উদযাপনের জন্য দেশভক্তির পঁচাত্তরটা গান গেয়েছেন। এর মধ্যে আরও বিশেষ ব্যাপার যেটা তা হল পঁচাত্তরটা গান হিন্দী, পাঞ্জাবি, গুজরাতী, বাংলা, অসমিয়া, তামিল, তেলুগু, কন্নড় আর সংস্কৃতের মত ভাষায় গাওয়া হয়েছে। এইভাবে, নামিবিয়াতে ভারত-নামিবিয়ার সাংস্কৃতিক-পারম্পরিক সম্বন্ধ নিয়ে বিশেষ স্ট্যাম্প প্রকাশিত হয়েছে। বন্ধু, আমি আর একটা আনন্দের কথা বলতে চাই। এই কিছু দিন আগে, আমার সুযোগ হয়েছিল ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগের অনুষ্ঠানে যাওয়ার। সেখানে ওঁরা দূরদর্শনের ‘স্বরাজ’ সিরিয়ালের স্ক্রীনিংয়ের ব্যবস্থা রেখেছিলেন। এর প্রিমিয়ারে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেওয়া অজানা নায়ক-নায়িকাদের প্রচেষ্টার সঙ্গে দেশের তরুণ প্রজন্মকে পরিচিত করতে এটি একটি দারুণ উদ্যোগ। দূরদর্শনে, প্রতি রবিবার রাত ৯'টায় এটি সম্প্রচারিত হয়। এবং আমাকে জানানো হয়েছে যে, এটি ৭৫ সপ্তাহ ধরে চলবে। আমার আবেদন যে, আপনারা সময় করে নিজেরা দেখুন এবং বাড়ির বাচ্চাদেরও অবশ্যই দেখান এবং স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরাতো এটি রেকর্ডিং করে যখন সোমবার স্কুল খুলবে তখন বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজনও করতে পারে, যাতে আমাদের স্বাধীনতার জন্মের এই সকল মহানায়কদের প্রতি, আমাদের দেশে, নতুন করে সচেতনতা তৈরি হয়। আজাদীর অমৃত মহোৎসব পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সাল এর অগাস্ট মাস পর্যন্ত চলবে। দেশের জন্য, স্বাধীনতার সৈনিকদের জন্য, আমরা যে লেখালেখির আয়োজন করছিলাম তা আমাদের আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, আমাদের পূর্বপুরুষদের জ্ঞান, আমাদের পূর্বপুরুষদের বহুধাবিস্তৃত দৃষ্টি এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের একাত্মচিন্তন , আজও কত গুরুত্বপূর্ণ তার গভীরে গেলে আমরা আশ্চর্য হয়ে যাই। হাজার হাজার বছরের পুরনো আমাদের ঋগ্বেদ। ঋকবেদে বলা হয়েছে:-
ओमान-मापो मानुषी: अमृक्तम् धात तोकाय तनयाय शं यो: |
यूयं हिष्ठा भिषजो मातृतमा विश्वस्य स्थातु: जगतो जनित्री: ||
ওমান-মাপো মানুষী: অমৃক্তমধাত তোকায় তনয়ায় শং য়ো: ।
য়ূয়ং হিষ্ঠা ভিষজো মাতৃতমা বিশ্বস্য স্থাতুঃ জগতো জনিত্রীঃ ।।
অর্থাৎ, হে জল, আপনি মানবতার পরম মিত্র। আপনি জীবনদায়িনী, আপনার থেকেই অন্ন উৎপত্তি হয় এবং আপনার মাধ্যমেই আমাদের সন্তানদের মঙ্গল হয়। আপনি, আমাদের সুরক্ষা প্রদান করেন এবং আপনিই আমাদের অমঙ্গল থেকে দূরে রাখেন, আপনি হলেন সর্বোত্তম ঔষুধি, আপনিই এই ব্রহ্মাণ্ডের পালনকর্তা। ভাবুন, হাজার হাজার বছর আগেই আমাদের সংস্কৃতিতে, জল ও জল সংরক্ষণের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আজকের প্রেক্ষাপটে এই জ্ঞান সম্মন্ধে জানলে আমরা শিহরিত হই, কিন্তু দেশ যখন এই জ্ঞানকে তার শক্তি হিসেবে গ্রহণ করে, তখন তাদের শক্তি বহুগুণ বেড়ে যায়। আপনার নিশ্চই মনে আছে, 'মন কি বাত'-এ, আমি চার মাস আগে, অমৃত সরোবরের কথা বলেছিলাম। এরপর বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, স্থানীয় মানুষ একত্রিত হয়, এবং দেখতে দেখতেই অমৃত সরোবর নির্মাণ এক গণআন্দোলনে পরিণত হয়। যখন দেশের জন্য কিছু করার অনুভূতি জন্মায়, নিজের কর্তব্যের উপলব্ধিও হয়, আগামী প্রজন্মের জন্য ভাবনা মনে আসে, তখন শক্তিও যোগ হয়, সংকল্প মহৎ রূপ নেয়। আমি তেলেঙ্গানার ওয়ারঙ্গল থেকে একটি দুর্দান্ত প্রচেষ্টা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এখানে একটি নতুন গ্রাম পঞ্চায়েত গঠিত হয়েছে, যার নাম 'মঙ্গত্যা- বাল্যা- থান্ডা'। এই গ্রামটি বনাঞ্চলের কাছাকাছি। গ্রামের কাছে একটি জায়গা ছিল যেখানে বর্ষাকালে প্রচুর জল জমা হত। গ্রামবাসীদের উদ্যোগে, এখন এই জায়গাটি অমৃত সরোবর অভিযানের অধীনে উন্নত করা হচ্ছে। এবার বর্ষার সময় বৃষ্টিতে সরোবরটি জলে টইটুম্বুর হয়ে গেছে।
আমি মধ্য প্রদেশের মন্ডলার মোচা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৈরি করা অমৃত সরোবরের কথা আপনাদের বলতে চাই। কানহা জাতীয় উদ্যানের নিকটবর্তী এই সরোবর এলাকার অনেকখানি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। উত্তরপ্রদেশের ললিতপুরে নবনির্মিত শহীদ ভগত সিং অমৃত সরোবরও মানুষের খুব পছন্দ হয়েছে। এখানের নিওয়ারি গ্রাম পঞ্চায়েতে তৈরি এই সরোবর চার একর জমি জুড়ে বিস্তৃত। সরোবরের চারদিকের লাগানো গাছগাছালি জায়গাটিকে আরো মনোরম করে তুলেছে। সরোবরের কাছে ৩৫ ফুট উচুঁ তেরঙ্গা দেখতে দূর দূর থেকে লোকজন আসেন। অমৃত সরোবরের এই অভিযান কর্নাটকেও জোর কদমে চলছে। এখানের বাগলকোট জেলার বিল্কেরুর গ্রামেও খুব সুন্দর অমৃত সরোবর তৈরি হয়েছে। আসলে এই সব অঞ্চলে পাহাড় থেকে আসা জলে থেকে কৃষক ও ফসলের খুব ক্ষতি হত, মানুষজনের খুব অসুবিধা হত। অমৃত সরোবর বানানোর জন্য গ্রামের লোকেরা এই পাহাড় নিঃসৃত জলকে channelize করে একদিকে নিয়ে আসে। এর ফলে, এই এলাকায় বন্যার সমস্যাও চলে গেছে। অমৃত সরোবর আমাদের উপস্থিত অনেক সমস্যার সমাধান ত করছেই, উপরন্তু আগামী প্রজন্মের জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই অভিযানে আরও অনেক পুরনো জলাশয়েরও ভোলবদল করা হচ্ছে। পশুপাখির তেষ্টা নিবারণ থেকে চাষবাস, অমৃত সরোবর নানা ভাবে সকলের উপকারে আসছে। এই জলাশয়গুলির জন্য আশেপাশের অঞ্চলের ground water table বাড়ছে। পাশাপাশি সবুজায়ন হচ্ছে। অনেক জায়গায় এই সরোবরে লোকজন মাছচাষ করবারও প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমার আপনাদের সকলের কাছে, বিশেষ করে আমার যুববন্ধুদের কাছে অনুরোধ আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন ও এই অমৃত সরোবর অভিযানে যোগদান করুন। জল সঞ্চয় ও জলসংরক্ষণের এই প্রচেষ্টাগুলিকে সাফল্যমন্ডিত করে তুলুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আসামের বঁগাইগাঁও একটি খুব মনোগ্রাহী প্রকল্প চালু আছে- নাম তার প্রজেক্ট সম্পূর্ণা। এই প্রজেক্টের উদ্দেশ্য হল অপুষ্টির বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং এই প্রক্রিয়াও খুব Unique। এই যোজনায় কোনো অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে সুস্থ সবল বাচ্চার মা অপুষ্টিতে ভোগা বাচ্চার মায়ের সঙ্গে প্রত্যেক সপ্তাহে দেখা করেন এবং পুষ্টির সম্পর্কে সমস্ত তথ্যাদি আলোচনা করেন। এইভাবে একজন মা অন্য মায়ের বন্ধু হয়ে তার সাহায্য করেন, তাকে শেখান। এই প্রজেক্টের সাহায্যে এই এলাকায়, মাত্র এক বছরে ৯০ শতাংশের বেশি বাচ্চারা অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আপনারা কি ভাবতে পারেন অপুষ্টি দূর করতে গান বাজনা তথা ভজনের ব্যবহার হতে পারে! এমনটাই হয়েছে মধ্য প্রদেশের দতিয়া জেলার "মেরা বচ্চা" অভিযানে। এই অভিযানে ভজন কীর্তনের আয়োজন করা হয় এবং সেখানে ডাকা হয় পুষ্টি ও এই সম্বন্ধিত বিশেষজ্ঞদের। একটি 'মটকা' অনুষ্ঠানও হয়। মহিলারা অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে এক মুষ্টি শস্য নিয়ে আসেন এবং সেই শস্য দিয়েই শনিবারে 'বালভোজ' এর আয়োজন করা হয়। এতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুদের উপস্থিতি যেমন বাড়বে তেমনি অপুষ্টিও কমবে। অপুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ঝাড়খণ্ডে একটি অনন্য অভিযান চলছে। ঝাড়খণ্ডের গিরিডিতে তৈরি হয়েছে সাপ-সিঁড়ির মতো একটি খেলা। শিশুরা খেলার মাধ্যমে ভালো আর খারাপ অভ্যাস সম্পর্কে শেখে।
বন্ধুরা, আমি আপনাদের অপুষ্টি সংক্রান্ত অনেক উদ্ভাবনী পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলছি কারণ আগামী মাসে আমাদের সকলকেও এই অভিযানে যোগ দিতে হবে। সেপ্টেম্বর মাসটি উৎসবের পাশাপাশি পুষ্টি সম্পর্কিত একটি বড় প্রচারাভিযানের জন্যও উত্সর্গীকৃত। আমরা প্রতি বছর ১লা থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর, পুষ্টির মাস হিসেবে উদযাপন করি। অপুষ্টির বিরুদ্ধে সারা দেশে অনেক Creative এবং Diverse effort করা হচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নত ব্যবহার এবং জনগণের অংশগ্রহণ পুষ্টি অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। দেশের লক্ষাধিক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মোবাইল ডিভাইস সরবরাহ করা থেকে শুরু করে অঙ্গনওয়াড়ি পরিষেবাগুলির ঠিকমতো পৌঁছছে কিনা তা Monitor করার জন্য, পুষ্টি ট্র্যাকারও চালু করা হয়েছে। সমস্ত Aspirational Districts এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে বসবাসকারী 14 থেকে18 বছর বয়সী কন্যাদের এই পুষ্টি অভিযানের আওতায় আনা হয়েছে। অপুষ্টির সমস্যার সমাধান শুধু এই কয়েকটি পদক্ষেপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, আরও অনেক উদ্যোগেরও এই লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ জল জীবন মিশনের কথাই ধরুন, এই মিশনটি ভারতকে অপুষ্টি মুক্ত করার ক্ষেত্রেও বিশাল প্রভাব ফেলতে চলেছে। অপুষ্টির মোকাবিলা করতে সামাজিক সচেতনতামূলক প্রচেষ্টাগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি আপনাদের সকলকে আগামী মাসে, অপুষ্টি দূর করার প্রচেষ্টায় অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাই। আমার প্রিয় দেশবাসী চেন্নাই থেকে শ্রীদেবী বর্ধরাজন জি আমাকে একটি Reminder পাঠিয়েছেন। তিনি mygov-এ তাঁর কথাগুলি এইভাবে লিখেছেন-
নতুন বছর আসতে এখন ৫ মাসেরও কম সময় বাকি এবং আমরা সবাই জানি যে আগামী বছরটি, International Year of Millets হিসেবে পালন করা হবে। তিনি আমাকে দেশের একটি মিলেট ম্যাপও পাঠিয়েছেন এবং জিজ্ঞাসা করেছেন যে আপনি ‘মন কি বাত’ এর আসন্ন পর্বে এটি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন কিনা। আমার দেশবাসীর মধ্যে এই ধরনের আবেগ দেখে আমি খুব আনন্দিত হই। আপনার মনে থাকবে যে জাতিসংঘ একটি প্রস্তাব পাস করেছিল এবং ২০২৩ সালকে আন্তর্জাতিক শস্য বর্ষ হিসাবে ঘোষণা করেছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে ভারতের এই প্রস্তাবটি ৭০টিরও বেশি দেশ থেকে সমর্থন পেয়ে তবেই গৃহীত হয়েছে। আজ সারা বিশ্বে এই মোটা শস্যের চাহিদা ও কদর বাড়ছে। বন্ধুরা, যখন আমি মোটা শস্যের কথা বলি, তখন আমি আজকে আমার একটি প্রচেষ্টা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। বিগত কিছু সময়ে যখনই কোনও বিদেশী অতিথি ভারতে আসেন, বা কোনও রাষ্ট্রপ্রধান ভারতে আসেন, আমার চেষ্টা থাকে ভারতের মোটা শস্য থেকে তৈরি বিশেষ খাবার তাঁদের সামনে উপস্থাপন করি। আমার অভিজ্ঞতা বলে যে, এই গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এই খাবারগুলি খুবই পছন্দ করেন এবং আমাদের মোটা শস্য সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য জোগাড় করতেও তাঁরা তৎপর হন। মোটা শস্য প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের কৃষি, সংস্কৃতি ও সভ্যতার একটি অংশ।
আমাদের বেদে মিলেটস অর্থাৎ শস্যদানার ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়, আর এভাবেই পুরাণ- নুরু এবং তোল্কাপ্পিয়মেও এই বিষয়ে বলা হয়েছে। আপনি এই দেশের যে কোনো অঞ্চলেই যান, সেখানকার খাদ্যাভ্যাসে নানা ধরনের মিলেটস অবশ্যই দেখতে পাবেন। আমাদের সংস্কৃতির মতোই মিলেটসও বিভিন্ন ধরনের হয়। জোয়ার, বাজরা, রাগি, সাবু, কাওনদানা, বাদাম, কোদো, কুটকি, কুট্টু এইসবই নানা ধরনের মিলেটস। ভারত বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মিলেটস উৎপাদনকারী দেশ, তাই এই কার্যক্রমকে সফল করার দায়িত্ব আমাদের ভারতবাসীদের কাঁধেই থাকে। আমরা সকলে মিলে এ বিষয়ে একটা জনআন্দোলন গড়ে তুলতে পারি আর দেশের মানুষের মধ্যে মিলেটসের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে পারি। বন্ধুরা আপনারা তো ভালোভাবেই জানেন মিলটস কৃষক বন্ধুদের জন্যও লাভজনক, বিশেষ করে ছোট পরিসরের চাষীদের জন্য। আসলে অনেকটা কম সময়ে এর ফসল তৈরি হয়। আর এতে খুব বেশি জলের প্রয়োজনও হয় না। আমাদের ক্ষূদ্র চাষিদের জন্য মিলেটস বিশেষভাবে লাভজনক। মিলেটসের খোসা অত্যন্ত উন্নত মানের পশুখাদ্য। বর্তমানের যুবক-যুবতীরা হেলদি লিভিং আর ইটিং এই বিষয়ে ভীষণ ফোকাস্ড। এই দিক থেকে দেখলে মিলেটসে প্রচুর প্রোটিন, ফাইবার আর মিনারেলস রয়েছে। কেউ কেউ একে super foodও বলে। মিলেটসের একটা নয় একাধিক গুণ রয়েছে। ওবেসিটি কমানোর সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন এবং হার্টের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায় মিলেটস। এর সঙ্গে পেট এবং লিভারজনিত অসুখ থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। কিছুক্ষণ আগেই আমরা অপুষ্টি নিয়ে কথা বলছিলাম। অপুষ্টির সঙ্গে লড়ার জন্যও মিলেটস খুব উপকারী কারণ প্রোটিনের সঙ্গে সঙ্গে এতে রয়েছে এনার্জি। দেশে মিলেটসের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য অনেক কিছু করা হচ্ছে। এই বিষয়ে নানা গবেষণা ও inovation এর ব্যাপারেও ফোকাস করা হচ্ছে, FPOকে উৎসাহিত করা হচ্ছে যাতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। আমাদের নিজেদের কৃষক ভাই-বোনেদের কাছে এটাই বলার যে মোটাদানার শস্যকে আপনারা বেশি করে আপন করে নিন আর এর থেকে লাভ করুন। এটা দেখে আমার খুব ভালো লাগছে যে এখন অনেক স্টার্ট আপ কোম্পানি এগিয়ে আসছে যারা মিলেটস এর ওপর কাজ করছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ মিলেট কুকি তৈরি করছে, কেউ আবার মিলেট প্যানকেক এবং মিলেটসের ধোসাও তৈরি করছে। কেউ আবার মিলেট এনার্জি বার এবং মিলেট ব্রেকফাস্ট তৈরি করছে। আমি এই ক্ষেত্রে কাজ করা সমস্ত মানুষকে অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি। উৎসবের এই সময়ে আমরা নানান রান্নায় মিলেটসের ব্যবহার করতে পারি। আপনারা আপনাদের বাড়িতে তৈরি এমন খাবারের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় অবশ্যই শেয়ার করবেন যাতে লোকজনের মধ্যে মিলেটস এর বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য হয়।
আমার প্রিয় দেশবাসী। কিছুদিন পূর্বেই আমি অরুণাচল প্রদেশের সিয়াং জেলার জোরসিং গ্রামের একটি খবর দেখলাম। এই খবরটি এমন একটি পরিবর্তনের সম্বন্ধে ছিল যার অপেক্ষা এই গ্রামের মানুষ অনেক বছর ধরেই করছিলো। উল্লেখ্য, জোরসিং গ্রামে, এই মাস থেকেই স্বাধীনতা দিবসের দিনে, 4g ইন্টারনেট - এর পরিষেবা শুরু হয়ে গেছে। যেমন আগে কখনও গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছলে গ্রামবাসী আনন্দিত হত, এখন নতুন ভারতে ঠিক সেই রকমই আনন্দ হয় যখন 4g পৌঁছে যায় । অরুণাচল ও নর্থ ইস্ট এর দূরদূরান্তে এলাকায় 4G রূপে এক নতুন সূর্যোদয় হয়েছে, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি একটি নতুন ভোরের সূচনা করেছে। যে সমস্ত সুবিধাগুলি কেবলমাত্র বড় শহরে পাওয়া যেত সেগুলো ডিজিটাল ইন্ডিয়া গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দিয়েছে। এই কারণেই দেশে নতুন Digital Enterpreneur এর জন্ম হচ্ছে। রাজস্থানের আজমির জেলার Setha Singh Rawat জি 'দর্জি অনলাইন' নামে একটি ই-স্টোর চালান। আপনারা ভাবছেন, এ আবার কি কাজ দর্জি অনলাইন? আসলে, Setha Singh Rawat, Covid এর আগে দর্জির কাজ করতেন। কোভিদ যখন এলো তখন রাওয়াত জি এটাকে সমস্যা হিসেবে না দেখে একটি সুযোগ হিসেবে দেখলেন। উনি Common সার্ভিস সেন্টার অর্থাৎ সিএসসি ই-স্টোর join করলেন, আর অনলাইন কাজকর্ম শুরু করলেন। উনি দেখলেন যে গ্রাহক বড় সংখ্যায় মাস্ক এর অর্ডার দিচ্ছে। উনি কিছু মহিলাদের কাজে নিযুক্ত করলেন ও mask বানাতে লাগলেন। এর পরেই উনি 'দর্জি অনলাইন' নামে নিজের অনলাইন স্টোর শুরু করে দিলেন, যার মাধ্যমে উনি আরো অনেক বিভিন্ন ধরনের কাপড় বানিয়ে বিক্রি করতে লাগলেন। আজ ডিজিটাল ইন্ডিয়ার দৌলতে সেঠা সিং জি -র কাজ এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে এখন উনি সারা দেশ থেকেই অর্ডার পান। উনি শয়ে শয়ে মহিলাদের রোজগারের ব্যবস্থা করেছেন। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার UPতে উন্নাও এর বাসিন্দা ওম প্রকাশ সিং জি কে ও ডিজিটাল Enterpreneur বানিয়ে দিয়েছে। উনি নিজের গ্রামে হাজারেরও বেশি ব্রডব্যান্ড কানেকশানের স্থাপন করেছেন। ওম প্রকাশ জি কমন সার্ভিস সেন্টারের আশেপাশে বিনা মূল্যে WiFi জোনেরও ব্যবস্থা করেছেন যাতে আগ্রহি মানুষের অনেক উপকার হচ্ছে । ওম প্রকাশ জির কাজ এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে উনি ২০জনেরও বেশি লোকেদের চাকরি দিয়েছেন। এই লোকেরা গ্রামের স্কুল, হসপিটাল, মহকুমা অফিস ও অঙ্গনবাড়ি কেন্দ্রগুলিতে ব্রডব্যান্ড কানেকশন পৌঁছে দিচ্ছে ও এর থেকে রোজগারও করছেন। কমন সার্ভিস সেন্টার এর মতই, Government E - Market Place অর্থাৎ GEM পোর্টাল-এ এরকম অনেক success stories এর কথা জানা যাচ্ছে। বন্ধুরা, গ্রামে ইন্টারনেটের জন্য যেসব পরিবর্তন হয়েছে সে সম্পর্কে আমি অনেক খবর পাই। Internet আমাদের যুববন্ধুদের পড়াশোনা এবং শেখার পদ্ধতিই বদলে দিয়েছে। যখন উত্তর প্রদেশের গুড়িয়া সিং উন্নাওতে আমোইয়া গ্রামে তাঁর শ্বশুর বাড়িতে আসেন, তখন তিনি তাঁর পড়াশোনা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। কিন্তু, ভারতনেট তার উদ্বেগের সমাধান করেছে। গুড়িয়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাঁর পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে গেছে, এবং তাঁর স্নাতক পর্বও শেষ করেছে। গ্রামে-গঞ্জে এমন কত জীবন ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযান থেকে নতুন শক্তি পাচ্ছে। আপনারা আমাকে গ্রামের ডিজিটাল Enterpreneurদের সম্পর্কে আরও বেশি করে লিখুন এবং তাদের সাফল্যের গল্পও সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুক্ষণ আগে, আমি হিমাচল প্রদেশ থেকে 'মন কি বাত'-এর শ্রোতা রমেশ বাবুর চিঠি পেয়েছি। রমেশ বাবু তাঁর চিঠিতে পাহাড়ের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেছেন, উনি লিখেছেন যদিও পাহাড়ে জনবসতি বেশ দূরে দূরে, কিন্তু মানুষের মন একে অপরের খুব কাছাকাছি। প্রকৃতই আমরা পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষদের থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। পাহাড়ের জীবনধারা ও সংস্কৃতি থেকে আমরা প্রথম যে শিক্ষা পাই তা হলো, পরিস্থিতির চাপে না এসে আমরা সহজেই সেগুলোকে জয় করতে পারি এবং দ্বিতীয়ত, কীভাবে আমরা স্থানীয় সম্পদের ওপর আত্মনির্ভর হতে পারি। আমি প্রথম যে শিক্ষনীয় বিষয়ের কথা বলছি তার একটি সুন্দর চিত্র আজকাল স্পিতি অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে। স্পিতি একটি উপজাতীয় অঞ্চল। এখানে, বর্তমানে, মটর তোলার কাজ চলছে। পাহাড়ি ক্ষেতে এটি শ্রমসাধ্য এবং কঠিন কাজ। কিন্তু এখানে, গ্রামের মহিলারা একত্রিত হয়, একসঙ্গে একে অপরের ক্ষেত থেকে মটর তোলে। এই কাজের পাশাপাশি মহিলারা স্থানীয় গান 'ছপড়া মাঝি ছপড়া'ও গেয়ে থাকেন। অর্থাৎ এখানে পারস্পরিক সহযোগিতাও লোক-ঐতিহ্যের একটি অংশ। স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারের সর্বোত্তম উদাহরণও পাওয়া যায় স্পিতিতে। স্পিতিতে, কৃষকরা যারা গরু পালন করেন । গরুর গোবর শুকিয়ে বস্তায় ভরে রাখেন। শীতকাল এলেই এসব বস্তা গরুর থাকার জায়গায়়, যাকে খুড় বলে, সেখানে পেতে দেওয়া হয়। তুষারপাতের সময়, এই বস্তাগুলি গরুকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে। শীত যাওয়ার পর এই গোবর জমিতে সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ পশুর বর্জ্য থেকে তাদের সুরক্ষা, এবং খামারের জন্য সারও পাওয়া যায়। চাষের খরচও কম, জমিতে ফলনও বেশি। এই কারণেই এই অঞ্চলটি, আজকাল, প্রাকৃতিক চাষের প্রেরণা হয়ে উঠছে।
বন্ধুরা, এরকমই অনেক প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা, আমাদের আরও একটি পাহাড়ী রাজ্য, উত্তরাখণ্ডেও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। উত্তরাখণ্ডে অনেক ধরনের ওষধি আর বনস্পতি পাওয়া যায়। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এদের মধ্যেই একটি ফল হলো বেডু। এটি হিমালয়ান ফিগ নামেও পরিচিত। এই ফলে, খনিজ আর ভিটামিন ভরপুর মাত্রায় পাওয়া যায়। মানুষ ফল হিসেবে তো এটি খায়ই, এরই সঙ্গে অনেক রোগ উপসম করতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। এই ফলের এইসব গুণের কথা মাথায় রেখে বেডুর জুস, এর জ্যাম, চাটনী, আচার, আর একে শুকিয়ে তৈরি করা ড্রাই ফ্রুটস বাজারে আনা হয়েছে। পিথরাগড় প্রশাসন এর চেষ্টা আর স্থানীয় মানুষের সহযোগিতার মাধ্যমে বেডুকে বাজারে আলাদা আলাদা রুপে নিয়ে আসা সম্ভবপর হয়েছে। বেডুকে পাহাড়ী অঞ্জীর নামে ব্র্যান্ডিং করে অনলাইন মার্কেটেও নিয়ে আসা হয়েছে। এতে কৃষক বন্ধুদের আয়ের নতুন পথ তো খুলেছেই, এর সঙ্গে এর ওষধিগুণ দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’এ আজ প্রথমে আমরা আজাদীর অমৃত মহোৎসব সম্বন্ধে কথা বলেছি। স্বাধীনতা দিবসের মহান পর্বের সঙ্গে সঙ্গে আগামী দিনে আরো অনেক পর্ব আসতে চলেছে। এখন কিছুদিন বাদেই ভগবান গণেশজীর আরাধনা পর্ব গণেশ চতুর্থী শুরু হতে চলেছে। গণেশ চতুর্থী অর্থাৎ গণপতি বাপ্পার আশীর্বাদ পর্ব। গণেশ চতুর্থীর আগে ওনাম পর্বও শুরু হবে। কেরালায় বিশেষ রুপে ওনাম শান্তি আর সমৃদ্ধির ভাবনার সঙ্গে পালন করা হয়। ৩০শে আগষ্ট হর্তালিকা তিজ ও আছে। ওড়িশায় ১লা সেপটেম্বর নুয়াখাই পর্ব ও পালন করা হবে। নুয়াখাই মানে নতুন খাবার, অর্থাৎ এটিও অন্যান্য পর্বের মতোই আমাদের কৃষি পরম্পরার সঙ্গে যুক্ত উৎসব। এরই মধ্যে জৈন সমাজের সম্বৎসরি পর্বও হবে। আমাদের এই সমস্ত পর্ব আমাদের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি আর জীবনের প্রতীক। আমি আপনাদের সবাইকে এই উৎসব এবং বিশেষ পার্বণগুলির জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই পার্বণগুলির সঙ্গে সঙ্গে কাল ২৯শে আগষ্ট মেজর ধ্যানচাঁদ জীর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় ক্রীড়া দিবসও পালন করা হবে। আমাদের তরুণ খেলোয়াড়রা বিশ্ব মঞ্চে আমাদের পতাকার মর্যাদা বৃদ্ধি করতে থাকুক, এটাই আমাদের ধ্যানচাঁদজির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে। দেশের জন্য আমরা সবাই মিলে এরকমই কাজ করতে থাকি, দেশের মান বাড়াতে থাকি, এই কামনার সঙ্গে আমি আজকের কথা সমাপ্ত করছি। আগামী মাসে, পুনরায় আপনাদের সঙ্গে ‘মন কি বাত’ হবে। অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। মন কি বাতের এটা একানব্বইতম পর্ব। আমরা এর আগে কত কথা বলেছি, বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের কথা ভাগ করে নিয়েছি, কিন্তু এবার মন কি বাতের অন্য এক বিশেষত্ব আছে। এর কারণ হল এবারের স্বাধীনতা দিবসে ভারত নিজের স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্ণ করবে। আমরা সবাই এক অভূতপূর্ব আর ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে চলেছি। এ এক বড় সৌভাগ্য ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন। আপনারাও ভাবুন, যদি আমরা দাসত্বের পর্বে জন্ম নিতাম, তাহলে এই দিনের কল্পনা আমাদের জন্য কেমন হত? দাসত্ব থেকে মুক্তির সেই আকুলতা, পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে স্বাধীনতা লাভের জন্য সেই আকুলতা - কতটা ব্যাপ্ত ছিল। সেই দিন, যখন আমরা, লক্ষ লক্ষ দেশবাসীকে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে, সংগ্রাম করতে, আত্মবলিদান দিতে দেখতাম। যখন আমরা, প্রত্যেক দিন সকালে এই স্বপ্ন নিয়ে জেগে উঠতাম, যে আমার হিন্দুস্থান কবে স্বাধীন হবে আর হতেও পারে যে আমাদের জীবনে সেই দিনও আসত যখন বন্দেমাতরম আর ‘ভারত মা কি জয়’ ধ্বনি দিয়ে, আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য নিজেদের জীবন সমর্পণ করতাম, যৌবন বিলিয়ে দিতাম।
বন্ধুরা, ৩১শে জুলাই অর্থাৎ আজকের দিনে, আমরা সকল দেশবাসী উধম সিংয়ের শহীদ হওয়ার ঘটনাকে প্রণাম জানাই। এমন অন্যান্য সংগ্রামীদের আমি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই যাঁরা দেশের জন্য নিজেদের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছেন। বন্ধুরা, এটা দেখে আমার খুব আনন্দ হয় যে, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব এক জন-আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে। সব ক্ষেত্র আর সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ এটার সঙ্গে যুক্ত ভিন্ন ভিন্ন কাজে অংশ নিচ্ছে। এমনই এক অনুষ্ঠান এই মাসের শুরুতে মেঘালয়ে হল। মেঘালয়ের বীর যোদ্ধা ইউ টিরোত সিংয়ের পুণ্যতিথিতে মানুষজন তাঁকে শ্রদ্ধা জানালেন। খাসি পাহাড়ের উপর নিয়ন্ত্রণ আর সেখানকার সংস্কৃতির উপর আক্রমণ নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ইংরেজদের চেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করেন টিরোত সিংজী। এই অনুষ্ঠানে বহু শিল্পী সুন্দর উপস্থাপনা করেন।
এঁরা ইতিহাস কে জীবন্ত করে তুলেছে। এখানে একটা কার্নিভালের আয়োজনও করা হয়, যেখানে, মেঘালয়ের মহান সংস্কৃতিকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে। আজ থেকে কিছু সপ্তাহ আগে, কর্ণাটকে, অমৃতা ভারতী কন্নডার্থী নামের একটি অভিনব অভিযান চালানো হয়েছিল। সেখানে রাজ্যের ৭৫টি জায়গায় স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যার মধ্যে কর্নাটকের মহান প্রজাতান্ত্রিক সেনাবাহিনীকে স্মরণ করার পাশাপাশি স্থানীয় সাহিত্যি উপলব্ধিকেও সামনে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল।
বন্ধুরা, এই জুলাই মাসে একটি অত্যন্ত আনন্দদায়ক প্রচেষ্টা হয়েছে যার নাম স্বাধীনতার রেলগাড়ি আর রেলওয়ে স্টেশন। এই প্রয়াসের লক্ষ্য হলো যে, সাধারণ মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতীয় রেলের ভূমিকা সম্পর্কে জানুন। আমাদের দেশে এমন অনেক রেলস্টেশন আছে যা স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। আপনিও, এইসব রেলস্টেশনের সম্পর্কে জানলে অবাক হবেন। ঝাড়খণ্ডের গোমো জংশনকে, বর্তমানে, সরকারি ভাবে, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস জংশন গোমো হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। জানেন কেন? আসলে, এই স্টেশন থেকেই কালকা মেলে চেপে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে পালাতে সফল হয়েছিলেন। আপনারা সবাই লখনৌর কাছে কাকোরি রেলস্টেশনের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন। এই স্টেশনের সঙ্গে রামপ্রসাদ বিসমিল এবং আশফাক উল্লাহ খানের মতো অকুতোভয় সংগ্রামীদের নাম জড়িয়ে আছে। এখানে চলন্ত ট্রেন থেকে ইংরেজদের ধন-সম্পত্তি লুট করে বীর সংগ্রামীরা ইংরেজদের কাছে নিজেদের ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছিলেন। আপনি যখনই তামিলনাড়ুর মানুষদের সঙ্গে কথা বলবেন তখন আপনি থুথুকুড়ি জেলার বাঞ্চি মনিয়াচ্চি জংশন সম্পর্কে জানতে পারবেন। এই স্টেশন তামিল স্বাধীনতা আন্দোলনের সৈনিক বাঞ্চিনাথন জীর নামানুসারে রাখা হয়েছে। এই স্থানেই ২৫ বছরের যুবক বাঞ্চি ব্রিটিশ কালেক্টরকে তার কৃতকর্মের শাস্তি দিয়েছিলেন।
বন্ধুরা, এই তালিকা বেশ দীর্ঘ। সারা দেশে ২৪টি রাজ্যে ৭৫টি রেল স্টেশনের চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ৭৫টি রেল স্টেশনকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হচ্ছে। আপনারাও সময় বের করে আপনার আশেপাশের এমন ঐতিহাসিক স্টেশনে যাওয়া উচিত। আপনি, স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সেইসব ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন যে বিষয়ে আপনি অজ্ঞ ছিলেন। আমি আশেপাশের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের আবেদন করব, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আবেদন করব যে নিজের স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এই সব স্টেশনে অবশ্যই যাবেন এবং পুরো ঘটনাক্রম সেই বাচ্চাদের বলবেন, বোঝাবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে ১৩ থেকে ১৫ আগস্ট একটি বিশেষ আন্দোলন হিসেবে- 'হর ঘর তিরঙ্গা-হর ঘর তিরঙ্গা' সংগঠিত হচ্ছে। এই আন্দোলনের অংশ হয়ে, ১৩ থেকে ১৫ আগস্ট, আপনারা অবশ্যই আপনার বাড়িতে তেরঙ্গা উত্তোলন করুন, বা আপনার বাড়িতে তেরঙ্গা লাগিয়ে রাখুন। তেরঙা আমাদের সংযুক্ত করে, দেশের জন্য কিছু করতে অনুপ্রাণিত করে। আমার একটি পরামর্শও আছে যে ২রা আগস্ট থেকে ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত, আমরা সবাই আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল ছবিতে তিরঙ্গা লাগাতে পারি। যাইহোক, আপনি কি জানেন, আমাদের তেরঙ্গার সঙ্গেও ২রা আগস্টের একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। এই দিনটি পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া জির জন্মবার্ষিকী যিনি আমাদের জাতীয় পতাকার নকশা করেছিলেন। আমি ওঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের জাতীয় পতাকার কথা বলতে গেলে মহান বিপ্লবী মাদাম কামাকেও স্মরণ করব। তেরঙ্গা রূপদানে তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বন্ধুগণ, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে আয়োজিত এই সমস্ত অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বড় বার্তা হল আমরা সকল দেশবাসী যেন আমাদের কর্তব্যকে পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করি। তবেই আমরা সেই অগণিত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারব। তাঁদের স্বপ্নের ভারত গড়তে পারবো। তাই আমাদের আগামী ২৫ বছরের এই অমৃত কাল প্রতিটি দেশবাসীর জন্য একটি কর্তব্যকাল। দেশকে স্বাধীন করার জন্য আমাদের বীর যোদ্ধারা আমাদের এই দায়িত্ব দিয়েছেন, আমাদের তা পুরোপুরি পালন করতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই আমাদের এখনো জারি আছে। গোটা বিশ্ব এখনো এর সঙ্গে মোকাবিলা করছে। Holistic Healthcare-এ মানুষজনের রুচি বাড়ছে যা সকলের জন্য মঙ্গলজনক। আমরা সবাই জানি এক্ষেত্রে ভারতীয় পারম্পরিক পদ্ধতি কতখানি উপযোগি। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আয়ুষ, বিশ্বস্তরে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গোটা বিশ্বে আয়ুর্বেদ ও ভারতীয় ঔষধের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এই কারণে Ayush Exports রেকর্ড মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, আরও আনন্দের বিষয় হল, এই ক্ষেত্রে বেশ কয়েকাটি Start upও চোখে পড়ছে। কিছুদিন আগেই একটি Global Ayush Investment ও Innovation Summit অনুষ্ঠিত হয়। আপনারা জেনে অবাক হবেন, এখানে দশ হাজার কোটি টাকার লগ্নির Proposals এসেছে। করোনাকালে আরো একটি ঘটনা ঘটেছে – ঔষধী (oushadhi) নিয়ে গবেষণা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিষয়ে অনেক Research Study প্রকাশিত হচ্ছে। নিশ্চিত ভাবে এটাকে একটা ভাল সূচনা বলা যায়।
বন্ধুরা, দেশে বিভিন্ন ধরনের ঔষধী ও জড়িবুটি নিয়ে এক প্রশংসনীয় কাজ হয়েছে। সম্প্রতি, জুলাই মাসেই Indian virtual herbarium-এর উদবোধণ করা হয়। আমরা কিভাবে ডিজিটাল মাধ্যমের সাহায্যে আমাদের শিকড়ের সঙ্গে যোগস্থাপন করতে পারি, এ তার উদাহরণ। Indian virtual herbarium, Preserved Plants অথবা Plant Parts-এর ডিজিটাল ছবির এক আকর্ষনীয় সংগ্রহ, যা web-এ বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। এই Virtual Herbarium-এ এখন লক্ষাধিক specimenও তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা উপলদ্ধ। Virtual Herbarium-এ, ভারতের সমৃদ্ধ Botanical Diversity-র ছবি আমরা দেখতে পাই। আমার বিশ্বাস, Indian Virtual Herbarium, ভারতীয় বনস্পতি সংক্রান্ত গবেষণায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাতে আমরা দেশবাসীর এমন কিছু সাফল্যের কাহিনি সামনে নিয়ে আসি যা আমাদের মুখে হাসি ফোটায়। এরকম কোনো গল্প, যা আমাদের মুখে হাসি ফোটায় আবার স্বাদেও মিষ্টি হয়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। আমাদের কৃষক বন্ধুরা, মধু উৎপাদনে এরকমই অসাধারণ কাজ করছেন। মধুর মিষ্টত্ব তাদের জীবনও বদলাচ্ছে, পাশাপাশি তাদের আয়ও বৃদ্ধি করছে।
হরিয়ানার যমুনানগরে, সুভাষ কম্বোজজী নামে এক মৌমাছি পালক বন্ধু থাকেন। উনি বৈজ্ঞানিক ভাবে মৌমাছি পালনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপরে উনি কেবল ছয়টি বাক্স নিয়ে কাজ শুরু করেন। আজ উনি প্রায় দু’হাজার বাক্সে মৌমাছি পালন করেন। ওনার তৈরি এই মধু বহু রাজ্যে চালান হয়। জম্মুর 'পল্লি' গ্রামে বিনোদ কুমারজীও দেড় হাজারের বেশী কলোনিতে মৌমাছি পালন করছেন। উনি গত বছরে, রানি মৌমাছি পালনের প্রশিক্ষণ নেন। এই কাজে উনি বছরে পনেরো থেকে কুড়ি লক্ষ টাকা আয় করছেন। কর্নাটকের আর একজন কৃষক বন্ধু আছেন-মধুকেশ্বর হেগড়েজী। উনি জানান, উনি ভারত সরকার থেকে পঞ্চাশটি মৌমাছির কলোনির জন্য subsidy নেন। আজ ওনার কাছে আটশোর বেশি কলোনি আছে এবং উনি কয়েক টন মধু বিক্রি করেন। উনি নিজের কাজে innovation নিয়ে এসেছেন। এখন উনি আমলকি মধু, জামের মধু, তুলসি মধুর মত বনস্পতি মধুও তৈরি করছেন। মধুকেশ্বজি, মধু উৎপাদনে আপনার innovation ও সাফল্য আপনাকে একজন স্বার্থকনামা ব্যক্তি করে তুলেছে।
বন্ধুরা, আপনারা জানেন, মধুকে আমাদের পারম্পরিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে কতখানি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আয়ুর্বেদ গ্রন্থে তো মধুকে অমৃত বলা হয়েছে। মধু শুধু স্বাদের জন্য নয়, রোগ নিরাময়ের জন্যও জরুরি। মধু উৎপাদন ক্ষেত্রে আজ এত বিপুল সম্ভাবনা যে যারা প্রোফেসনাল বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছেন, তারাও এটিকে তাদের স্বনির্ভর রোজগারের উপায় হিসেবে দেখছেন। এমনই একজন যুবক হলেন উত্তর প্রদেশের গোরখপুরের নিমিত সিংহ। নিমিতজী বি.টেক করেছেন। ওর বাবা ডাক্তার। কিন্তু, পড়াশোনা শেষ করার পর, নিমিতজী চাকরি করার বদলে স্বনির্ভর হয়ে কিছু কিরার সিদ্ধান্ত নেন। উনি মধু উৎপাদনের কাজ আরম্ভ করেন। quality check. এর জন্য উনি লখনউ তে একটা ল্যাবরেটরিও তৈরি করেন। নিমিতজী এখন মধু ও bee wax থেকে ভাল উপার্জন করছেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণও দেন।
আজ দেশ এমন যুবকদের কঠোর পরিশ্রমের জন্যই মধুর বড় উৎপাদক হয়ে উঠেছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন আমাদের দেশে মধুর রপ্তানিও বেড়েছে। দেশে National Beekeeping and Honey মিশনের মতো প্রচার চালানো হয়েছে, কৃষকরা কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং আমাদের মধুর মিষ্টত্ব বিশ্বে পৌঁছাতে শুরু করেছে। এখনো এই ক্ষেত্রে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। আমি চাই আমাদের তরুণেরা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন, এতে যোগ দিয়ে লাভান্বিত হোন ও নতুন সম্ভাবনাগুলি পূর্ণ করুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি হিমাচল প্রদেশ থেকে 'মন কি বাত'-এর জন্য একজন শ্রোতা, শ্রীমান আশিস বহলজির কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। তিনি তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন চম্বা’র 'মিঞ্জর মেলার’। আসলে, ভুট্টার ফুল কে ‘মিঞ্জর’ বলা হয়। যখন ভুট্টা গাছে ফুল ফোটে, তখন মিঞ্জর মেলা পালিত হয় এবং এই মেলায় দেশের দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা অংশগ্রহণ করেন। প্রসঙ্গত, এই সময়ে মিঞ্জার মেলা চলছে। আপনি যদি হিমাচলে গিয়ে থাকেন, তাহলে এই মেলা দেখতে চাম্বা যেতে পারেন। চাম্বা এতোটাই সুন্দর যে এখানের লোকসঙ্গীতে বার বার বলা হয় -
"চাম্বে এক দিন ওণা কনে মহীনা রয়না" |
অর্থাৎ যারা একদিনের জন্য চাম্বায় আসেন, তারা এঁর সৌন্দর্য দেখে মাসখানেক এখানেই থেকে যান।
বন্ধুরা, আমাদের দেশে মেলারও অনেক সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে। মানুষ ও মনকে সংযুক্ত করে মেলা। যখন বর্ষার পর হিমাচলে খরিফ ফসল পেকে ওঠে, তখন সেপ্টেম্বর মাসে সিমলা, মান্ডি, কুল্লু এবং সোলানের সবাই সইরি বা আনন্দভ্রমণে মেতে ওঠেন।
সেপ্টেম্বরে 'জাগরা মেলা'ও আসতে চলেছে। জাগরা মেলায় মহাসু দেবতার আহ্বানে বিসু গান গাওয়া হয়। হিমাচলের সিমলা, কিন্নর, সিরমৌর সহ উত্তরাখণ্ডের অনেক জায়গায় মহাসু দেবতার এই জাগর উৎসব পালিত হয়।
বন্ধুরা, আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজ্যে, জনজাতি সমাজের মধ্যেও অনেক ঐতিহ্যবাহী মেলা রয়েছে। তার মধ্যে কিছু মেলা জনজাতিগুলির সংস্কৃতি সম্পর্কিত, আর কিছু মেলা রয়েছে জনজাতিগুলির ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর সঙ্গে সম্পর্কিত; যেমন আপনার যদি কখনো সুযোগ হয় তাহলে তেলেঙ্গানার 'মেডারম'এ চারদিনের 'সমক্কা-সরলম্মা যাত্রা' মেলাতে একবার অবশ্যই যাবেন। এই মেলাকে তেলেঙ্গানার মহাকুম্ভ'ও বলা হয়ে থাকে। 'সরলাম্মা যাত্রা' মেলার এই উৎসব জনজাতিগোষ্ঠীর দু’জন বীরাঙ্গনা 'সমক্কা' এবং সরলম্মা'কে সম্মান জানাতে পালিত হয়। শুধু তেলেঙ্গানা'ই নয়, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র এবং অন্ধ্রপ্রদেশের কোয়া জনজাতির মানুষের ভাবাবেগের দিক থেকেও এই মেলাটি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। অন্ধ্রপ্রদেশের 'মারীদম্মার মেলা'ও জনজাতি-গোষ্ঠী মানুষের বিশ্বাস সঙ্গে যুক্ত একটা বড় মেলা। মারীদম্মার মেলা জ্যৈষ্ঠের অমাবস্যা থেকে আষাঢ়ের অমাবস্যা পর্যন্ত চলে; এবং সেই সময় সেখানকার জনজাতি-গোষ্ঠীর মানুষ, এই উৎসব উপলক্ষে শক্তির উপাসনা করেন। সেখানে পূর্ব-গোদাবরীর পেদ্দাপুরমে, মারীদম্মা মন্দির'ও রয়েছে। একই ভাবে রাজস্থানে, গরাসিয়া উপজাতির লোকেরা বৈশাখের শুক্লা চতুর্দশীতে 'সিয়াওয়া কা মেলা' বা 'মানখাং-রো মেলা' নামে এক উৎসবের আয়োজন করেন।
ছত্তিশগড়ে, বাস্তারের নারায়নপুরে 'মাওলি মেলা' নামে খুবই উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশের 'ভগোরিয়া মেলা'ও অত্যন্ত বিখ্যাত। কথিত আছে, রাজা ভোজের সময় 'ভগোরিয়া মেলা' শুরু হয়েছিল। সেই সময়ের ভীল রাজা কাসুমরা এবং বালুন তাদের নিজ নিজ রাজধানীতে প্রথমবার এই মেলার আয়োজন করেছিলেন।
সেই দিন থেকে আজও, এই মেলা, একই উৎসাহের সঙ্গে আয়োজন করা হয়। একইভাবে, গুজরাটের তর্নেটার এবং মাধোপুরের মতন অনেক মেলা বিখ্যাত। 'মেলা' নিজেই, আমাদের সমাজ, জীবনের শক্তির একটি বড় উৎস। আপনার আশেপাশেও এমন অনেক মেলার আয়োজন হয়তো করা হয়ে থাকে। আধুনিক সময়ে, 'এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত'-এর চেতনাকে শক্তিশালী করার জন্য সমাজের এই পুরনো যোগসূত্রগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের যুবসমাজকে অবশ্যই এই চেতনার সঙ্গে যোগ দিতে হবে এবং যখনই আপনি এই ধরনের মেলায় যাবেন, সেখানকার ছবিগুলি সোশ্যাল মিডিয়াতেও শেয়ার করুন। আপনি চাইলে একটি নির্দিষ্ট হ্যাশট্যাগও ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে অন্যান্য মানুষও সেইসব মেলা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আপনি সংস্কৃতি মন্ত্রকের ওয়েবসাইটেও ছবিগুলি আপলোড করতে পারেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রক একটি প্রতিযোগিতাও শুরু করতে চলেছে। যাঁরা মেলার সেরা ছবি পাঠাবেন তাঁদেরও পুরস্কৃত করা হবে, তাই দেরি না করে মেলা ঘুরে দেখুন, মুহূর্তগুলির ছবি share করুন, হয়ত আপনিও পুরস্কার পেয়ে যেতে পারেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, 'মন কি বাত'-এর একটি পর্বে আমি বলেছিলাম যে খেলনা রপ্তানিতে ভারতের একটি পাওয়ার হাউসে পরিণত হওয়ার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। খেলাধুলা ও খেলায় ভারতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য নিয়ে আমি বিশেষভাবে আলোচনা করেছি। ভারতের স্থানীয় খেলনা ঐতিহ্য এবং প্রকৃতি উভয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, পরিবেশ বান্ধব। আজ আমি আপনাদের সঙ্গে ভারতীয় খেলনা শিল্পের সাফল্য শেয়ার করতে চাই। আমাদের তরুণ, স্টার্ট আপ এবং উদ্যোক্তাদের কারণে, আমাদের খেলনা শিল্প যা করেছে, আমরা যে সাফল্য অর্জন করেছি তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।
আজ যখন ভারতীয় খেলনার কথা হয় তখন সব দিকে ভোকাল ফর লোকাল এর প্রতিধ্বনিই শোনা যায়। আপনাদের এটা জেনেও ভাল লাগবে যে ভারতে এখন বিদেশ থেকে আসা খেলনার সংখ্যা ক্রমাগত কম হতে শুরু করেছে। প্রথমে যেখানে ৩০০০ কোটি টাকার বেশি খেলনা আমদানি করা হতো, সেখানে বর্তমানে এই সংখ্যা ৭০% পর্যন্ত কমানো গেছে আর খুশির কথা এই যে, এই সময়ে ভারত ২৬০০ কোটি টাকারও বেশি খেলনা বিদেশে রপ্তানি করেছে, অথচ প্রথম দিকে মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার খেলনা ভারত থেকে বাইরে যেত, আর আপনারা তো জানেনই যে এইসব করোনা কালেই হয়েছে। ভারতের টয় সেক্টর নিজেকে ট্রান্সফর্ম করে দেখিয়ে দিয়েছে। ভারতীয় উৎপাদকরা এখন ভারতীয় পুরাণ, ইতিহাস আর সংস্কৃতি ভিত্তিক খেলনা বানাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় খেলনার যে ক্লাসটার আছে, খেলনা প্রস্তুতকারক যে ছোট ছোট উদ্যমী আছে, তারা এই জন্য অনেক লাভবান হচ্ছেন। এই ছোট ছোট উদ্যমীদের বানানো খেলনা এখন পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। ভারতের খেলনা নির্মাতারা বিশ্বের বিখ্যাত গ্লোবাল টয় ব্র্যান্ডস এর সাথে মিলে কাজ করছেন। আমার এটাও ভারী ভালো লাগছে, যে আমাদের স্টার্টআপ সেক্টরও খেলনার জগতের উপর সম্পূর্ণ মনোযোগ দিচ্ছে। তারা এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন মজাদার উদ্ভাবনও করছেন। ব্যাঙ্গালোরে 'সুমি টয়েজ' নামের একটি স্টার্টআপ ইকো ফ্রেন্ডলি খেলনার উপর ফোকাস করছে। গুজরাটের 'আর্কিডজু ' কম্পানি এ.আর বেসড্ ফ্ল্যাশ কার্ড আর এ.আর বেসড্ স্টোরি বুকস বানাচ্ছে। Pune-র কম্পানি 'ফানভেনশন লার্নিং', খেলনা আর Activity Puzzle এর মাধ্যমে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি আর অংকে বাচ্চাদের আগ্রহ বাড়াতে সচেষ্ট। খেলনার দুনিয়ায় এরকম অসাধারণ কাজে যুক্ত সকল ম্যানুফ্যাকচারার আর স্টার্টআপ দের আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
আসুন, আমরা সবাই মিলে ভারতীয় খেলনাকে বিশ্বজুড়ে আরো বেশি জনপ্রিয় করে তুলি। এরই সঙ্গে আমি অভিভাবকদের কাছেও অনুরোধ করতে চাই, তারা যেন বেশি করে দেশীয় খেলনা, puzzles এবং games কেনেন।
বন্ধুরা, ক্লাসরুম হোক বা খেলার মাঠ, আমাদের যুব সম্প্রদায় আজ প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেশকে গৌরবান্বিত করছেন। এ মাসেই পি. ভি. সিন্ধু সিঙ্গাপুর ওপেনে নিজের প্রথম খেতাব জয় করেছেন। নীরজ চোপড়াও নিজের অসাধারণ প্রদর্শন বজায় রেখে ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের জন্য রৌপ্য পদক জিতেছেন। আয়ারল্যান্ড প্যারা ব্যাডমিন্টন ইন্টারন্যাশনালেও আমাদের ক্রীড়াবিদরা এগারোটি পদক জিতে দেশের গৌরব বাড়িয়েছেন। রোমে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ক্যাডেট রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপেও ভারতীয় ক্রীড়াবিদরা দুর্দান্ত প্রদর্শন করেছেন। আমাদের অ্যাথলিট সুরজ তো গ্রেকো-রোমান ইভেন্টে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। তিনি দীর্ঘ ৩২ বছর পর রেসলিং এর এই ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতেছেন। ক্রীড়াবিদদের জন্য তো এই গোটা মাসটাই অ্যাকশনে ভরপুর ছিল। চেন্নাইতে ৪৪ তম চেস অলিম্পিয়াডের আয়োজন করাও ভারতের জন্য অত্যন্ত সম্মানের বিষয়। ২৮শে জুলাই এই টুর্নামেন্টের শুভ সূচনা হয় এবং তার ওপেনিং সেরিমনিতে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। একই দিনে UK তে কমনওয়েলথ গেমসও শুরু হয়েছে। তারুণ্যের শক্তিতে ভরপুর ভারতীয় দল সেখানে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। আমি সব ক্রীড়াবিদ ও অ্যাথলিটদের সকল দেশবাসীর পক্ষ থেকে শুভকামনা জানাচ্ছি। এটাও আমার কাছে খুব আনন্দের বিষয় যে ভারত Fifa Under 17 Women's World Cup-এরও আয়োজন করতে চলেছে।
এই টুর্নামেন্টটি অক্টোবরের কাছাকাছি হবে, যা খেলার প্রতি দেশের মেয়েদের উৎসাহ বৃদ্ধি করবে। বন্ধুরা, কিছুদিন আগেই সমগ্র দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। আমি ওই সকল ছাত্র-ছাত্রীদের অভিনন্দন জানাই যারা কঠিন পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের দ্বারা সাফল্য অর্জন করেছে। মহামারী চলাকালীন বিগত দু’বছর অত্যন্ত উদ্বেগজনক ছিল। এই পরিস্থিতিতেও যেভাবে আমাদের দেশের তরুণেরা, যে সাহস এবং সংযমের পরিচয় দিয়েছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমি সকলের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ আমরা দেশের ৭৫ তম স্বাধীনতা জয়ন্তীতে দেশের যাত্রার সঙ্গে আমাদের আলাপচারিতা শুরু করেছি। পরের বার যখন আমাদের কথা হবে তখন আমাদের আগামী ২৫ বছরের যাত্রা শুরু হয়ে যাবে। নিজের ঘরে ও আপনজনদের ঘরে যাতে আমাদের প্রিয় ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা ওড়ে সেই জন্য সকলকে একত্রিত হতে হবে। আপনারা এইবার স্বাধীনতা দিবস কি ভাবে উদযাপন করলেন, উল্লেখযোগ্য কি কি করলেন সেগুলো আমাকে নিশ্চয়ই জানাবেন। পরের বার আমরা আমাদের অমৃতকালের নানান রঙ্গিন অধ্যায় বিভিন্ন দিক নিয়ে আবার কথা বলব। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে অনুমতি দিন অনেক-অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। ‘মন কি বাত’–এর জন্য আমি আপনাদের কাছ থেকে অনেক চিঠি পেয়েছি, সোশ্যাল মিডিয়া আর নমো অ্যাপেও অনেক বার্তা পেয়েছি, এর জন্য আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ আমরা। এই অনুষ্ঠানে আমাদের সবার চেষ্টা থাকে যে একে অন্যের প্রেরণাদায়ক কীর্তির আলোচনা করা, জনআন্দোলন থেকে শুরু করে পরিবর্তনের কাহিনী, গোটা দেশকে জানানো। এই পর্বে আমি আজ আপনাদের সঙ্গে দেশের এমন এক জনআন্দোলনের আলোচনা করতে চাই যার প্রভূত গুরুত্ব রয়েছে দেশের প্রত্যেকটা নাগরিকের জীবনে। কিন্তু তার আগে আমি আজকের প্রজন্মের নবযুবাদের, চব্বিশ-পঁচিশ বছর বয়সী তরুণদের কাছে একটা প্রশ্ন রাখতে চাই, এই প্রশ্ন খুব গুরুত্বপূর্ণ, আর আমার প্রশ্ন নিয়ে অবশ্যই ভাববেন। আপনারা কি জানেন যে আপনাদের মা-বাবা যখন আপনাদের মত বয়সে ছিলেন তখন একবার তাঁদের কাছ থেকে এমনকি জীবিত থাকার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল? আপনারা হয়ত ভাবছেন যে এটা কীভাবে সম্ভব? এটা তো অসম্ভব। কিন্তু আমার তরুণ বন্ধু, আমাদের দেশে এমন একবার হয়েছিল। এটা অনেক বছর আগে, ১৯৭৫ সালের কথা। জুন মাসের এমন সময়েই এমার্জেন্সী কার্যকর করা হয়েছিল। তাতে দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে সব অধিকার হরণ করা হয়েছিল। তার মধ্যে একটা অধিকার, সংবিধানের ধারা একুশ অনুযায়ী সব ভারতীয়র পাওয়া ‘রাইট টু লাইফ অ্যাণ্ড পারসোনাল লিবার্টি’ও ছিল। সেই সময় ভারতের গণতন্ত্রকে পদদলিত করার প্রচেষ্টা হয়েছিল। দেশের নানা আদালত, প্রত্যেকটা সাংবিধানিক সংস্থা, প্রেস, সবকিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছিল। সেন্সরশিপ এমন কঠোর ছিল যে বিনা অনুমতিতে কিছুই ছাপা যেত না। আমার মনে আছে, তখন বিখ্যাত গায়ক কিশোর কুমারজী সরকারের গুণগান করতে অস্বীকার করায় ওঁর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। রেডিওতে ওঁর প্রবেশই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বহুও চেষ্টা, হাজার গ্রেপ্তার, লক্ষ লক্ষ মানুষের উপর অত্যাচারের পরও, ভারতের মানুষদের মন থেকে গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস টলে নি, এতটুকু টলে নি। ভারতের মানুষের মধ্যে, সেই প্রাচীন কাল থেকে, গণতন্ত্রের যে সংস্কার চলে আসছে, আমাদের শিরায়-শিরায় যে গণতান্ত্রিক ভাবনা প্রবাহিত অবশেষে তারই জয় হল। ভারতের মানুষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই এমার্জেন্সীকে হটিয়ে দিয়ে, আবার, গণতন্ত্রের স্থাপন করলেন। অত্যাচারী জোটের মানসিকতা, অত্যাচারী শাসকের প্রবৃত্তিকে এইভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরাজিত করার এমন উদাহরণ পৃথিবীতে পাওয়া মুশকিল।
জরুরি অবস্থার সময়, আমিও, গণতন্ত্রের এক সৈনিক রূপে, দেশবাসীর সংগ্রামের সাক্ষী হওয়ার, অংশীদার হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আজ, যখন দেশ তার স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করছে, অমৃত মহোৎসব পালন করছে, তখন জরুরি অবস্থার সেই ভয়ঙ্কর সময়টিকে আমাদের কখনই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। আগামী প্রজন্মেরও ভুলে যাওয়া উচিত না। অমৃত মহোৎসব শুধু শত-শত বছরের দাসত্ব থেকে মুক্তির বিজয় গাথাই নয়, স্বাধীনতার পরের ৭৫ বছরের যাত্রাও জুড়ে রয়েছে। ইতিহাসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের মধ্যে কেউ এমন নেই যে কিনা নিজের জীবনে মহাকাশ নিয়ে কল্পনা করেননি। ছোটবেলায় প্রত্যেককে আকাশের চাঁদ তারা আর তার গল্প আকর্ষণ করতো। তরুণদের জন্য মহাকাশকে ছোঁয়া মানে নিজের স্বপ্নপূরণ করার সমান। আজ আমাদের ভারতবর্ষ যখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহাকাশ ছোঁয়া সাফল্য অর্জন করছে তখন মহাকাশ অর্থাৎ অন্তরীক্ষ কী করেই বা বাদ থাকে! বিগত কিছু দিনে আমাদের দেশে স্পেস সেক্টরের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক বড় বড় কাজ হয়েছে। দেশের এই উপলব্ধির অন্যতম হল In-space নামক এজেন্সির নির্মাণ। এটি এমন একটি এজেন্সি যেটি স্পেস সেক্টরে ভারতের প্রাইভেট সেক্টরের জন্য নতুন সম্ভাবনাকে প্রমোট করছে। এই সূত্রপাত আমাদের দেশের যুবকদের নতুন করে আকর্ষণ করেছে। এর সঙ্গে সম্পর্কিত তরুণদের অনেক খবর আমার কাছে এসেছে। কিছুদিন আগে যখন আমি ইন-স্পেস এর হেডকোয়ার্টার-এর উদ্বোধনে গিয়েছিলাম তখন আমি যুবকদের মধ্যে নতুন start-up নিয়ে আইডিয়া এবং উৎসাহ দেখেছি। আমি তাদের সঙ্গে অনেকক্ষণ আলোচনা করেছি। আপনিও যখন তাঁদের সম্পর্কে জানবেন, তখন অবাক না হয়ে থাকতে পারবেন না, যেমন, স্পেস start-up-এর সংখ্যা এবং ক্রমশ বেড়ে চলার স্পিডটাই ধরুন। আজ থেকে কিছু বছর আগে পর্যন্ত আমাদের দেশে স্পেস সেক্টরে স্টার্টআপ নিয়ে কেউ ভাবত পর্যন্ত না। আজ সেই সংখ্যা শতাধিক। এইসব start-up এমন এমন আইডিয়ার ওপর কাজ করছে যার ব্যাপারে হয় আগে ভাবা হয়নি অথবা প্রাইভেট সেক্টরের জন্য তা অসম্ভব মনে করা হত।
উদাহরণ স্বরুপ চেন্নাই ও হায়দেরাবাদের দুটি start-up আছে - অগ্নিকুল ও স্কাইরুট। এই start up দুটি এমন launch vehicle তৈরী করছে যেগুলি মহাকাশে ছোটো payload নিয়ে যেতে সক্ষম। অনুমান করা হচ্ছে এর ফলে Space Launching-এর খরচ অনেক কমে যাবে। Dhruva Space নামের এরকমই হায়দেরাবাদের একটি start-up, Satellite Deployer ও Satellite এর জন্য high technology solar panel এর উপর কাজ করছে। আমি আর এক স্পেস start up দিগন্তরা আর তানবীর আহমেদের সঙ্গে দেখা করে ছিলাম, যিনি মহাকাশের আবর্জনার ম্যাপিং-এর চেষ্টা করেছেন। আমি ওঁকে একটা Challenge ও দিয়েছি। ওরা এমন প্রযুক্তির ওপর কাজ করুক যার ফলে মহাকাশে আবর্জনার সমস্যার সমাধান হয়। দিগন্তরা আর ধ্রুব স্পেস, দুটো start-upই ৩০শে জুন ইসরোর Launch Vehicle থেকে প্রথম Launch করতে চলেছে। এরকমই, ব্যাঙ্গালোরের Space start-up Astrome-এর প্রতিষ্ঠাতা নেহা এক দারুন idea-র উপর কাজ করছে। এই start-up এমন Flat Antenna বানাচ্ছে যা শুধু ছোটোই হবে না, দামেও কম হবে। গোটা দুনিয়ায় এই technology-র চাহিদা তৈরি হতে পারে।
বন্ধুরা, in space কার্যক্রমে, আমি মেহসানার স্কুল ছাত্রী তন্বী প্যাটেলের সাথে দেখা করি। সে খুবই ছোট্ট একটি Satellite নিয়ে কাজ করছে যা আগামী কয়েক মাসে Space-এ Launch হতে চলেছে। তন্বী গুজরাতি ভাষায় খুব সহজ ভাবে আমাকে তার কাজ সম্পর্কে জানায়। তন্বীর মতনই দেশে স্কুলের প্রায় সাড়ে সাতশো ছাত্র ছাত্রীরা, অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে এমন ৭৫টি Satellite-এর উপর কাজ করছে। আরো আনন্দের কথা এই যে এদের মধ্যে বেশীরভাগ ছাত্রছাত্রী ছোটো শহরের।
বন্ধুরা, এরা সেই যুবারাই, কয়েক বছর আগে পর্যন্ত যাদের মনে Space Sector সম্পর্কে ধারণা ছিল যে এগুলো Secret Mission এর মতন কিছু। কিন্তু দেশ Space Reforms নিয়ে এসেছে এবং এখন সেই যুবক যুবতীরা নিজেদের Satellite Launch করছে। যখন আমাদের দেশের যুবরা আকাশ ছুতে তৈরি তখন আমাদের দেশ কি করে পিছিয়ে থাকতে পারে!
আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাত-এ এবার আমি এমন একটি বিষয় নিয়ে বলব যা শুনলে আপনারা খুশিও হবেন এবং অনুপ্রেরণাও পাবেন। কয়েকদিন আগে আমাদের অলিম্পিকের স্বর্ণপদক বিজেতা নীরজ চোপড়া আবার খবরের শিরোনামে ছিলেন। অলিম্পিকের পরেও উনি সাফল্যের নিত্যনতুন নজির সৃষ্টি করেছেন।
ফিনল্যান্ডে নীরজ পাভো নুরমি গেমসে শুধু রৌপ্যই জিতেননি, তিনি নিজের জ্যাভলিন থ্রো-এর রেকর্ডও ভেঙেছেন। কূয়োরটানে গেমস-এ নীরজ আরও একবার সোনা জিতে দেশকে গর্বিত করেছেন। এই সোনা তিনি এমন একটি পরিস্থিতিতে জিতেছেন যখন সেখানকার আবহাওয়া বেশ প্রতিকূল ছিল। এই সাহসই আজকের যুবাদের বৈশিষ্ট্য। স্টার্টআপ থেকে শুরু করে ক্রীড়া জগতেও, ভারতের যুবকরা নতুন রেকর্ড গড়েছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত খেলো ইন্ডিয়া ইয়ুথ গেমসে, আমাদের খেলোয়াড়রা অনেক রেকর্ড গড়েছেন। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে এই গেমসএ মোট ১২টি রেকর্ড ভাঙা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মহিলা খেলোয়াড়দের নামেও ১১টি রেকর্ড নথিভুক্ত হয়েছে। মণিপুরের এম মার্টিনা দেবী ভারোত্তোলনে ৮টি রেকর্ড গড়েছেন। একইভাবে সঞ্জনা, সোনাক্ষী এবং ভাবনাও বিভিন্ন রেকর্ড গড়েছেন। এই খেলোয়াড়রা তাদের কঠোর পরিশ্রম দিয়ে বুঝিয়েছেন কীভাবে আগামী দিনে ভারত আন্তর্জাতিক খেলার আঙিনায় কতটা বড়ো হতে চলেছে। আমি এই সমস্ত খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানাই এবং ভবিষ্যতের জন্য তাদের মঙ্গল কামনা করি।
বন্ধুরা, খেলো ইন্ডিয়া ইয়ুথ গেমস-এর আরও একটি বৈশিষ্ট রয়েছে। এমন এমন অনেক প্রতিভা সেখানে উঠে এসেছে যারা খুব সাধারণ পরিবার থেকে এসেছেন। এই খেলোয়াড়রা তাদের জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছেন এবং সাফল্যের এই পর্যায়ে পৌঁছেছেন। এই সাফল্যে তাদের পরিবার এবং বাবা-মায়েরও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। ৭০ কিলোমিটার সাইক্লিং-এ সোনা জয় করা, শ্রীনগরের আদিল আলতাফের বাবা সেলাইয়ের কাজ করেন। কিন্তু তিনি তার ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে সব রকম চেষ্টা করেছেন। আজ আদিল গোটা জম্মু ও কাশ্মীর এবং তার বাবার মুখ উজ্জ্বল করেছেন। ভারোত্তোলনে সোনা জয়ী চেন্নাইয়ের এল. ধনুশের বাবাও একজন সাধারণ কাঠমিস্ত্রি । সাংলির মেয়ে কাজল সরগার। তার বাবা একজন চা বিক্রেতা। কাজল তার বাবার কাজে তাকে সাহায্যও করেন এবং একইসঙ্গে তিনি ভারোত্তোলন অনুশীলনও করতেন। তার পরিবারের কঠোর পরিশ্রমে ফলে কাজল ভারোত্তোলনে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে। একইরকম উৎকর্ষ রোহতকের তনুও দেখিয়েছেন। তনুর বাবা রাজবীর সিং রোহতকের একটি স্কুল-এ বাস ড্রাইভার। কুস্তিতে স্বর্ণপদক জিতে তনু, তার পরিবার ও তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন।
বন্ধুরা, ক্রীড়া জগতে এখন ভারতীয় খেলোয়াড়দের গুরুত্ব তো বাড়ছেই, সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন খেলারও নতুন পরিচিতি তৈরি হচ্ছে। যেমন এবার 'খেলো ইন্ডিয়া ইউথ গেমস'-এ অলিম্পিকে থাকা খেলাগুলি ছাড়াও পাঁচটি ভারতীয় খেলা যোগ হয়েছে। এই পাঁচটি খেলা হল – গতকা, থাংগতা, যোগাসন, কলারিপায়াত্তু আর মল্লখম্ব।
বন্ধুরা, ভারতে এমন একটি খেলার আন্তর্রাষ্ট্রীয় টুর্নামেন্ট হতে চলেছে, বহু যুগ আগে আমাদের দেশেই যে খেলার জন্ম হয়েছিল। আমাদের ভারতেই এই খেলা প্রথম শুরু হয়েছিল। ২৮শে জুলাই থেকে দাবা অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়েছে। এইবার দাবা অলিম্পিয়াডে ১৮০টিরও বেশি দেশ অংশগ্রহণ করছে। খেলা এবং ফিটনেস নিয়ে আমাদের আজকের এই আলোচনা একটা নাম ছাড়া সম্পূর্ণ হবে না। এই নাম হল তেলেঙ্গানার পর্বতারোহী পূর্ণা মালাবধ। পূর্ণা সেভেন সামিট চ্যালেঞ্জ শেষ করে সাফল্যের শিখর ছুঁয়েছে। সেভেন সামিট চ্যালেঞ্জ অর্থাৎ পৃথিবীর সাতটা সবথেকে কঠিন আর উঁচু পাহাড়ে চড়ার স্পর্ধা দেখিয়েছে পূর্ণা। পূর্ণা নিজের সাহসের সঙ্গে নর্থ আমেরিকার সবচেয়ে উঁচু এবং ছোট মাউন্ট দেনালি পর্বত আরোহণ করে দেশকে গর্বিত করেছে। পূর্ণা ভারতের সেই মেয়ে, যে ১৩ বছর বয়সে মাউন্ট এভারেস্টে চড়ার অবিশ্বাস্য কাজ সম্পন্ন করেছিল।
বন্ধুরা, খেলার বিষয় যখন কথা হচ্ছে তাহলে আমি আজ ভারতের সবচেয়ে প্রতিভাশালী ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন মিতালি রাজ এর কথা বলতে চাই। উনি এই মাসেই ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। অনেক ক্রীড়াপ্রেমীরাই এতে কষ্ট পেয়েছেন। মিতালী শুধু এক অসাধারণ খেলোয়াড়ই নয়, উনি অনেক খেলোয়াড়ের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। আমি মিতালীকে ওঁর ভবিষ্যতের জন্য অনেক শুভকামনা জানাতে চাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা “মন কি বাত”-এ waste to wealth এই বিষয়ে সফল প্রচেষ্টার কথা আলোচনা করি। মিজোরামের রাজধানী আইজলের এমনই এক উদাহরণ দেওয়া যাক। আইজলে একটি সুন্দর নদী আছে। 'চিটে লুই', বহু বছরের অবহেলার জন্যে এই নদী নোংরা ও আবর্জনায় পূর্ন ছিল। গত কয়েক বছর ধরে এই নদী বাঁচানোর চেষ্টা শুরু হয়েছিল। এর জন্য স্থানীয় এজেন্সি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও স্থানীয় মানুষ সকলে মিলে ‘সেভ চিটে লুই’ অ্যাকশন প্ল্যান শুরু করেছিল। নদীটির এই সাফাই অভিযান waste থেকে wealth ক্রিয়েশনের এক অনন্য সুযোগ গড়ে দেয়।
প্রকৃতপক্ষে, এই নদী ও তার তীরে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য জমেছিল। যেসব সংস্থাগুলি নদীর বাঁচানোর এই প্রয়াসে শামিল ছিল তারা পলিথিন থেকে রাস্তা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়, অর্থাৎ নদী থেকে যে আবর্জনা বেরিয়েছে তা দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হল মিজোরামের একটি গ্রামে। তৈরি হল রাজ্যের প্রথম প্লাস্টিকের রাস্তা, অর্থাৎ একইসঙ্গে পরিচ্ছন্নতা ও উন্নয়ন।
বন্ধুরা, এমনই এক প্রচেষ্টা পুদুচেরির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরুণদের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ সেখানে Beach ও সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখতে আসেন। কিন্তু পুদুচেরির সমুদ্র সৈকতেও প্লাস্টিকের দূষণ বাড়ছিল, তাই সেখানকার মানুষ সমুদ্র, Beach ও Ecology বাঁচাতে Recycling for life প্রকল্প শুরু করেছে। আজ পুদুচেরির করাইকালে প্রতিদিন হাজার হাজার কিলো আবর্জনা collect করা হয় ও পরে Segregate করা হয়। এর মধ্যে জৈব বর্জ্য দিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করা হয়, বাকি অন্যান্য জিনিসগুলি আলাদা করে পুনর্ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের প্রচেষ্টা শুধুমাত্র অনুপ্রেরণাদায়ী নয়, single use plastic-এর বিরুদ্ধে ভারতের এই প্রচেষ্টাকেও ত্বরান্বিত করে।
বন্ধুরা, এই সময়ে যখন আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, তখন হিমাচল প্রদেশে একটি অভিনব Cycling Rally চলছে। আমি আপনাদের এই সম্পর্কে জানাতে চাই। পরিচ্ছন্নতার বার্তা নিয়ে সিমলা থেকে মান্ডিতে বেরিয়েছে একদল সাইকেল সওয়ার। এই সাইকেল আরোহীরা প্রায় পৌনে দু’শো কিলোমিটার দূরত্বের পাহাড়ি রাস্তা শুধু সাইকেল চালিয়েই শেষ করবে। এই দলে নাবালক ও বৃদ্ধ উভয়েই রয়েছে। যদি আমাদের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন থাকে, আমাদের পাহাড়-পর্বত, নদী-সাগর পরিচ্ছন্ন থাকে, তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। আপনি আমাকে এই ধরনের প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবশ্যই লিখে জানাবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশে মনসুন ক্রমশ ছড়িয়ে যাচ্ছে। বহু রাজ্যে বৃষ্টি বাড়ছে। এই সময়টা জল ও জল সংরক্ষণের দিকে নজর দেওয়ার ও বিশেষ প্রচেষ্টা করার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে তো বহু শতাব্দী ধরেই সমাজ মিলিত রুপে এই দায়িত্ব পালন করে এসেছে। আপনাদের হয়ত মনে আছে, মন কি বাতে একবার আমরা স্টেপ ওয়েল অর্থাৎ ধাপ-ওলা কুয়ার অথবা বাওড়ির ঐতিহাসিক তাৎপর্যের কথা আলোচনা করেছিলাম। বাওড়ি সেই সব কুয়াকে বলে যেখানে পৌঁছানোর জন্য সিঁড়ি ব্যবহার করতে হয়।
রাজস্থানের উদয়পুরে এরকমই বহু বছরের পুরনো একটি বাওড়ি আছে, যার নাম সুলতান কি বাওড়ি। এটি রাও সুলতান সিং নির্মাণ করেন। কিন্তু বহু বছরের অবহেলার কারণে জায়গাটি আসতে-আসতে পরিত্যক্ত হতে শুরু করে এবং আবর্জনার স্তুপে পরিনত হয়।
একদিন একদল যুবা ঘুরতে-ঘুরতে ওই জায়গায় পৌঁছন এবং কুয়াটির ওরকম অবস্থা দেখে খুব কষ্ট পান। ওই যুবার দল সেদিনই সুলতান কি বাওড়ির রুপ ও ভাগ্য দুটিই বদল করার প্রতিজ্ঞা নেন। তাঁরা তাঁদের এই মিশনের নাম দেন – ‘সুলতান থেকে সুর-তান’। আপনারা হয়ত ভাবছেন, এই সুর-তান টা কী? আসলে এই যুবারা শুধু বাওড়িটিকে পুনরুজ্জীবিত করেননি, একে সঙ্গীতের সুর ও তানের সঙ্গেও যুক্ত করে দিয়েছেন। সুলতান কি বাওড়ি পরিষ্কার করার পর, একে সাজানোর পর, ওখানে সঙ্গীতের অনুষ্ঠান হয়। এই সংস্কারের কাজটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে বিদেশ থেকেও বহু মানুষ এটা দেখতে আসেন।
এই সফল প্রচেষ্টার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল যে এই কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন যে যুবকেরা তারা চার্টার্ড একাউন্টেন্ট। কাকতালীয়ভাবে, কিছুদিন পরেই পয়লা জুলাই Chartered Accountants Day। সেই উপলক্ষে দেশের সকল চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের আমার অগ্রিম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
জলাশয়গুলোকে নিয়ে আমরা সঙ্গীত ও অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে বিশেষ সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারি। জল সংরক্ষণ তো বাস্তবে জীবন রক্ষা। আপনারা নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন আজকাল কত নদী-মহোৎসব উদযাপিত হচ্ছে। আপনাদের শহরেও এ ধরনের যে জলাশয় রয়েছে সেখানেও এরকম কিছু না কিছু আয়োজন অবশ্যই করবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের উপনিষদে একটা বীজ-মন্ত্র রয়েছে, সেটা হল- চরৈবেতি-চরৈবেতি-চরৈবেতি। আপনারা এই মন্ত্রটি নিশ্চয়ই শুনেছেন। এর অর্থ হলো এগিয়ে চলো, অগ্রসর হও! এই মন্ত্রটি আমাদের দেশে এত জনপ্রিয় তার কারণ সর্বদা এগিয়ে চলা এবং গতিশীল থাকা আমাদের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। একটা দেশ হিসেবে হাজার বছরের উন্নয়নের মধ্যে দিয়ে আমারা এখানে এসে পৌঁছেছি। একই সমাজের মানুষ হিসেবে, আমরা সর্বদা নতুন চিন্তা ভাবনা, নতুন নতুন পরিবর্তনগুলোকে মেনে নিয়ে অগ্রসর হয়েছি। এর জন্য আমাদের সাংস্কৃতিক প্রবাহমানতা, এবং এই পথ চলার একটা বড় ভূমিকা আছে। সেজন্যই তো আমাদের দেশের মুনি-ঋষিরা তীর্থযাত্রার মত ধর্মীয়-দায়িত্ব আমাদের দিয়ে গেছেন। বিভিন্ন তীর্থযাত্রায় আমরা তো গিয়েই থাকি। আপনারা দেখে থাকবেন, এবছর চারধাম যাত্রায় কী বিপুল সংখ্যক ভক্তের সমাগম হয়েছিল। আমাদের দেশে নানান সময়ে বিভিন্ন দেবযাত্রা বা পরিক্রমা আয়োজিত হয়ে থাকে। দেবযাত্রা অর্থাৎ যেখানে শুধু ভক্তরাই নন, স্বয়ং ভগবানও যাত্রায় অংশ নেন। কয়েকদিন পরেই পয়লা জুলাই থেকে জগন্নাথ দেবের প্রসিদ্ধ রথযাত্রা শুরু হতে চলেছে।
উড়িষ্যার পুরী যাত্রা সম্বন্ধে তো সমস্ত দেশবাসী অবগত। মানুষের প্রচেষ্টা থাকে যে এই সুযোগে যেনো তাদের পুরী যাবার সৌভাগ্য প্রাপ্তি হয়। অন্যান্য রাজ্যেও জগন্নাথ যাত্রা খুব আড়ম্বরের সঙ্গে পালন করা হয়। ভগবান জগন্নাথ যাত্রা আষাঢ় মাসের দ্বিতীয়াতে শুরু হয়। আমাদের গ্রন্থে 'আষাঢ়স্য দ্বিতীয় দিবসে..রথ যাত্রা' এইরকম সংস্কৃত শ্লোক এর বর্ণনা পাওয়া যায়। গুজরাটের আমদাবাদে প্রতিবছর আষাঢ়ের দ্বিতীয়া থেকে রথযাত্রা শুরু হয়। আমি যখন গুজরাতে ছিলাম তখন আমারও এই যাত্রায় সেবা করার সৌভাগ্যপ্রাপ্তি হত। আষাঢ়ের দ্বিতীয় দিন যাকে আষাঢ়ে বিজও বলা হয় হয়ে থাকে, এই দিন থেকেই কচ্ছ-এর নববর্ষও শুরু হয়। আমি আমার সমস্ত কাচ্ছি ভাই-বোনেদের নববর্ষের শুভ কামনা জানাই। আমার জন্য এই দিনটা আরও একটা বিশেষ কারণে গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে আছে আষাঢ় দ্বিতীয়ার একদিন আগে অর্থাৎ প্রথম আষাঢ়ে আমরা গুজরাতে একটি সংস্কৃত উৎসবের সূচনা করেছিলাম যেখানে সংস্কৃত ভাষায় গীত-সংগীত এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম হত। এই আয়োজনের নাম ছিল 'আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে'। এই উৎসবের এমন নাম দেবার পেছনেও একটি কারণ আছে। আসলে সংস্কৃতের মহান কবি কালিদাস এই আষাঢ় মাসেই বর্ষার আগমনে মেঘদূতম্ লিখেছিলেন। মেঘদূতমে একটি শ্লোক আছে, "আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে মেঘম আশ্লীষ্ট সানুম" অর্থাৎ আষাঢ়ের প্রথম দিনে পর্বত চূড়ায় লেপ্টে থাকা মেঘ, এই শ্লোকই ছিল এই আয়োজনের আধার।
বন্ধুরা, আহমেদাবাদ হোক কিংবা পুরী, ভগবান জগন্নাথ তাঁর এই যাত্রার মাধ্যমে আমাদের বেশ কিছু গভীর মানবিক বার্তা দিয়েছেন। ভগবান জগন্নাথ সমগ্র জগতের স্বামী তো বটেই, কিন্তু তাঁর যাত্রায় দরিদ্ররা, বঞ্চিতরা বিশেষভাবে অংশগ্রহণ করেন। ভগবানও সমাজের প্রতিটি শ্রেণি ও ব্যক্তির সঙ্গে চলেন। অনুরূপভাবে আমাদের দেশে যতগুলি যাত্রা হয়, কোনোটিতেই ধনী-দরিদ্র, উচ্চ-নীচ ইত্যাদি কোন বিভেদ নজরে আসে না। সমস্ত বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে সেই যাত্রাটিই স্বয়ং সর্বোচ্চ স্থানে আসীন হয়। যেমন মহারাষ্ট্রের পনঢরপুরের (pandharpur) যাত্রা সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন। পনঢরপুরের যাত্রায় কেউ বড় নয়, কেউ ছোট নয়। প্রত্যেকেই বারকারি (Varkari), ভগবান বিঠঠলের সেবক। চার দিন পরেই ৩০শে জুন থেকে অমরনাথ যাত্রা শুরু হতে চলেছে। সারা দেশ থেকে ভক্তরা অমরনাথ যাত্রার জন্য জম্মু-কাশ্মীরে পৌঁছচ্ছেন। জম্মু-কাশ্মীরের স্থানীয় মানুষরাও ততটাই শ্রদ্ধার সঙ্গে এই যাত্রার দায়িত্বভার পালন করেন, তীর্থযাত্রীদের সহায়তা করেন।
বন্ধুরা, দক্ষিণে অনুরূপ মাহাত্ম্য শবরীমালা যাত্রারও রয়েছে। শবরীমালার পাহাড়ে ভগবান আয়াপ্পার দর্শনের জন্য এই যাত্রা তখন থেকে চলে আসছে, যখন পথ পুরোপুরি জঙ্গলে ঘেরা ছিল। আজও মানুষ যখন এ ধরনের যাত্রায় যান, তখন ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে তাদের বিশ্রাম বা থাকার ব্যবস্থা পর্যন্ত দরিদ্র মানুষদের জন্য কাজের কত সুযোগ তৈরি হয়! অর্থাৎ এই যাত্রাগুলি প্রত্যক্ষভাবে আমাদের কাছে দরিদ্রদের সেবা করার সুযোগ এনে দেয় এবং দরিদ্র মানুষদের জন্যও ততটাই মঙ্গলকারী হয়। তাই তো এখন দেশে আধ্যাত্মিক যাত্রায় ভক্তদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য কত রকম প্রচেষ্টা করা হচ্ছে! আপনারাও যদি এরকম কোন যাত্রায় যান তাহলে আপনাদের আধ্যাত্মিক দর্শনের পাশাপাশি "এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত" এই দর্শনও হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রতিবারের মতো এবারও ‘মন কি বাত’ এর মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা খুব সুখকর হল। এতক্ষণ আমরা দেশবাসীর সাফল্য এবং উপলব্ধি নিয়ে আলোচনা করলাম। এসবের মধ্যেও আমাদের করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাবধানতা মাথায় রাখতে হবে। যদিও স্বস্তির কথা এই যে দেশের কাছে এই মুহূর্তে যথেষ্ট পরিমাণে ভ্যাকসিনের সুরক্ষা কবচ মজুত আছে। আমরা ২০০ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ-এর দোরগোড়ায় পৌছে গেছি। দেশে খুব দ্রুত গতিতে Precaution Dose লাগানো হচ্ছে। যদি আপনার Second Dose-এর পর Precaution dose-এর সময় হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে আপনি এই তৃতীয় Dose-টি অবশ্যই নিন। আপনার পরিবারের সবাইকে, বিশেষ করে বয়স্কদের এই Precaution Dose অবশ্যই লাগান। আমাদের হাত ধোয়া এবং মাস্ক এর ব্যবহারের মতো সতর্কতা মেনে চলা উচিত। আমাদের বর্ষার সময় আশেপাশে ময়লা থেকে সংক্রমিত যাবতীয় রোগ সম্বন্ধে সতর্ক থাকা উচিত। আপনারা সবাই সজাগ থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং এরকমই উদ্দীপনার সঙ্গে এগিয়ে চলুন। সামনের মাসে আবার আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত অসংখ্য ধন্যবাদ, নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ আবার ‘মন কি বাতের’ মাধ্যমে আপনাদের অর্থাৎ পরিবারের কোটি-কোটি সদস্যের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছি। ‘মন কি বাতে’ আপনারা সবাই স্বাগত। কিছু দিন আগে দেশ এমন এক সাফল্য অর্জন করেছে যা আমাদের সবাইকে প্রেরণা দেয়। ভারতের সামর্থ্যের প্রতি এক নতুন বিশ্বাস জাগায়। আপনারা ক্রিকেটের ময়দানে টীম ইণ্ডিয়ার কোনও ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি করা শুনে খুশি হন নিশ্চয়ই। কিন্তু, ভারত আরও এক ময়দানে সেঞ্চুরি করেছে এবং সেই ক্ষেত্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসের পাঁচ তারিখে দেশে ইউনিকর্নের সংখ্যা একশোতে পৌঁছে গিয়েছে আর আপনারা তো জানেনই একটি ইউনিকর্ন মানে হল কম করে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার স্টার্ট-আপ। এইসব ইউনিকর্নের মোট নির্ধারিত মূল্য তিনশো তিরিশ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ পঁচিশ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। নিশ্চিতভাবে এই বিষয়টা একজন ভারতীয়ের কাছে গর্ব করার মত ব্যাপার। আপনারা এটা জেনেও আশ্চর্য হবেন যে আমাদের মোট ইউনিকর্নের মধ্যে চুয়াল্লিশটি গত বছরে তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই বছরের তিন-চার মাসের মধ্যেই আরও চোদ্দটা ইউনিকর্ন তৈরি হয়ে গেছে। এর মানে হল বিশ্বজুড়ে মহামারীর এই আবহেও আমাদের স্টার্ট-আপগুলো সম্পদ আর ভ্যালু তৈরি করে গিয়েছে। ভারতের ইউনিকর্নগুলোর বার্ষিক বৃদ্ধির গড় হার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন এবং অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় বেশি। যারা মূল্যায়ন করেন, তাঁরা তো এও বলছেন যে আগামী বছরগুলোতে এই সংখ্যায় দ্রুত বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হবে। একটা ভালো কথা এটাও যে আমাদের ইউনিকর্নগুলো বৈচিত্র্যমুখী। এগুলো ই-কমার্স, ফিন-টেক, এডু-টেক, বায়োটেকের মত অনেক ক্ষেত্রে কাজ করছে। আরও একটা বিষয় যেটা আমি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি সেটা হল, স্টার্ট-আপের জগৎ নতুন ভারতের মনোভাবকে তুলে ধরছে।
বর্তমানে ভারতের স্টার্টআপ ব্যবস্থাপনা শুধু বড় শহরগুলোর মধ্যে সীমিত নেই, ছোট ছোট শহরাঞ্চল থেকেও শিল্পোদ্যোগীরা এগিয়ে আসছেন। এর থেকে বোঝা যায়, যার কাছে উদ্ভাবনী শক্তি আছে, তিনিই সম্পদ তৈরি করতে পারেন।
বন্ধুরা, দেশের এই সাফল্যের পিছনে, দেশের যুবশক্তি, দেশের প্রতিভা, আর সরকার, সবাই মিলেই এই প্রচেষ্টায় যুক্ত আছেন, সবার অংশীদারিত্ব আছে। কিন্তু এখানে আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আছে, আর তাহলো স্টার্টআপের জগতে সঠিক পথপ্রদর্শন। একজন ভালো মেন্টর স্টার্টআপকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। তারা নতুন শিল্পোদ্যোগীদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সব দিক দিয়ে সাহায্য করবেন। আমি এই ব্যাপারে গর্বিত যে ভারতে এরকম অনেক মেন্টর আছেন যাঁরা স্টার্টআপকে আগে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেদের সমর্পণ করেছেন।
শ্রীধর বেম্বু জি সম্প্রতি পদ্ম সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। উনি নিজে একজন সফল শিল্পোদ্যোগী, কিন্তু এখন উনি অন্যান্য শিল্পোদ্যোগীদেরও গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। শ্রীধর জি নিজের কাজ গ্রাম্য এলাকা থেকে শুরু করেছিলেন। উনি গ্রামীণ যুবকদের গ্রামে থেকেই কিছু করার জন্য উৎসাহিত করছেন। আমাদের এখানে মদন পডাকির মত মানুষও আছেন যিনি গ্রামাঞ্চলে শিল্পোদ্যোগীদের উৎসাহিত করার জন্য ২০১৪ সালে ওয়ান-ব্রিজ নামের একটি প্লাটফর্ম বানান। আজ ওয়ান-ব্রিজ দক্ষিণ আর পূর্ব ভারতের ৭৫টিরও বেশী জেলায় সক্রিয়। এর সঙ্গে যুক্ত ৯,০০০-এরও বেশী গ্রামাঞ্চলের শিল্পোদ্যোগীরা গ্রামীণ উপভোক্তাদের নিজেদের পরিষেবা প্রদান করছেন। মীরা সেনয়জিও এরকমই এক উদাহরণ।
তিনি গ্রামাঞ্চলে, আদিবাসী এবং যুবসম্প্রদায়ের জন্য বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতার প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজ করছেন। আমি এখানে মাত্র কয়েকজনেরই নাম উল্লেখ করলাম। কিন্তু আজ আমাদের এমন অনেক মেন্টর আছেন। আমাদের জন্য খুবই আনন্দের বিষয় যে স্টার্ট আপের জন্য আমাদের দেশে একটা গোটা সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি হচ্ছে। আমার বিশ্বাস আগামী সময়ে ভারতের স্টার্ট আপ জগত প্রগতির ডানা মেলবে।
বন্ধুরা, কয়েকদিন আগে আমি এমন একটি আকর্ষণীয় আর উৎসাহব্যাঞ্জক জিনিস পাই যা আমাদের দেশবাসীর সৃজনশীলতা ও শিল্পী সত্ত্বার রঙে রঙিন। এটি একটি উপহার যা তামিলনাড়ুর তাঞ্জাভুর জেলা থেকে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী আমাকে পাঠায়। এতে ভারতীয়ত্বের সুবাস, মাতৃ শক্তির আশির্বাদ তথা আমার প্রতি তাদের স্নেহ দীপ্যমান। এটি জিআই ট্যাগপ্রাপ্ত একটি বিশেষ তাঞ্জাভুর পুতুল। আমি তাঞ্জাভুর স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই, তাদের স্থানীয় সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ এই উপহার আমায় পাঠানোর জন্য। বন্ধুরা, এই তাঞ্জাভুর পুতুল অতি সুন্দর তো বটেই, পাশাপাশি এটি নিপুনভাবে নারী ক্ষমতায়নের গাথা লিখছে। তাঞ্জাভুরে মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বহু দোকান, কিয়স্ক খোলা হচ্ছে যার ফলে বহু দরিদ্র পরিবারের জীবন বদলে যাচ্ছে। এই দোকান ও কিয়স্কের সাহায্যে মহিলারা তাদের পণ্য গ্রাহকদের সরাসরি বেচতে পারছেন। এই উদ্যোগকে থারগাইগাল কায়ভিনাই পোরুত্তকল বিরপ্পনই আঁগাড়ী নাম দেওয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার, এই উদ্যোগের সঙ্গে ২২টা স্বনির্ভর গোষ্ঠী যুক্ত আছে। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন, মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের এই দোকানগুলি তাঞ্জাভুরে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। এর তত্ত্বাবধানের সম্পূর্ণ দ্বায়িত্বও মহিলাদের। এই মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী জিআই ট্যাগ প্রাপ্ত থাঞ্জাভুরের পুতুল ও ব্রোঞ্জের প্রদীপ ছাড়াও চাটাই, খেলনা ও গয়না প্রস্তুত করেন। এই দোকানের জন্য জি আই ট্যাগ এর পাশাপাশি হস্তশিল্পের সামগ্রীর বিক্রিও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উদ্যোগে কারিগররা উৎসাহ পেয়েছেন, উপরন্তু মহিলাদের আয় বাড়ায় নারী ক্ষমতায়নের পক্ষে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়ে উঠেছে। আমার ‘মন কি বাত’-এর শ্রোতাদের কাছেও একটি অনুরোধ আছে। আপনারা একটু খোঁজ নিন আপনাদের এলাকায় কোন মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী কাজ করছে। তাদের পণ্যবস্তু সম্পর্কে খোঁজ খবর হন, ও সেগুলি ব্যবহার করে দেখুন। এর মাধ্যমে আপনি স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের আয় বাড়াতে তো সাহায্য করবেনই, উপরন্তু আত্মনির্ভর ভারত অভিযানকেও সাহায্য করবেন।
বন্ধুরা, আমাদের দেশে অনেক ভাষা, লিপি ও উপভাষার সমৃদ্ধ ভান্ডার রয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন পোশাক, খাদ্য ও সংস্কৃতি, এটাই আমাদের পরিচয়। এই ডাইভারসিটি, এই বৈচিত্র্য, একটি রাষ্ট্রের মতো, আমাদের শক্তিশালী করে এবং ঐক্যবদ্ধ রাখে। এর সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিশেষ অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণ হল কল্পনা নামের এক কন্যা, যার বিষয়ে আমি আপনাদের জানাতে চাই। তার নাম কল্পনা, কিন্তু তার প্রচেষ্টা 'এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত'-এর প্রকৃত চেতনায় পরিপূর্ণ। আসলে, কল্পনা সম্প্রতি কর্ণাটকে তার দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, কিন্তু; তার সাফল্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই যে, কল্পনা কিছুদিন আগে পর্যন্ত কন্নড় ভাষা জানত না। ও তিন মাসে শুধু কন্নড় ভাষাই শেখেনি, ৯২ নম্বরও পেয়েছে। আপনি নিশ্চই অবাক হচ্ছেন, কিন্তু এটাই সত্যি। তার সম্পর্কে আরও অনেক কিছু রয়েছে যা আপনাকে অবাক করবে এবং অনুপ্রাণিতও করবে। কল্পনা প্রকৃতপক্ষে উত্তরাখণ্ডের যোশী মঠের অধিবাসী। সে আগে যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়েছিল এবং তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াকালীন সে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিল, কিন্তু কথায় বলে না যে, 'ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়'। পরবর্তীকালে কল্পনা, মাইসোর এর অধিবাসী প্রফেসর তারামূর্তির সান্নিধ্যে আসেন, যিনি শুধুমাত্র ওকে যে উৎসাহিত করেছিলেন তাই নয়, সব রকম ভাবে সাহায্যও করেছিলেন। আজ, সে নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের সবার কাছে একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে। আমি কল্পনাকে ওর উদ্যমের জন্য অভিবাদন জানাচ্ছি। এইভাবেই আমাদের দেশে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা দেশের ভাষাগত বৈচিত্র্যকে আরো মজবুত করার কাজ করে চলেছেন। এমনই একজন বন্ধু হলেন পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার, শ্রীপতি টুডু মহাশয়। টুডু মহাশয় পুরুলিয়ার সিধু-কানু-বিরসা ইউনিভার্সিটিতে সাঁওতালি ভাষার অধ্যাপক। উনি সাঁওতালি সমাজের জন্য ওদের নিজস্ব অলচিকি লিপিতে দেশের সংবিধানের একটি অনুলিপি তৈরি করেছেন। শ্রীপতি টুডু মহাশয় বলেন যে, আমাদের সংবিধান আমাদের দেশের প্রত্যেক নাগরিককে তার অধিকার এবং কর্তব্যবোধের সঙ্গে পরিচয় করায়। এই কারণে প্রত্যেক নাগরিকের এর সাথে পরিচিত হওয়া জরুরী। তাই তিনি সাঁওতালি সমাজের জন্য তাঁদের লিপিতে সংবিধানের একটি অনুলিপি প্রস্তুত করে উপহার দেন। আমি শ্রীপতি মহাশয়ের এই চিন্তাভাবনা এবং তাঁর প্রচেষ্টার প্রশংসা করি। এটি 'এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত'-এর চেতনার প্রাণবন্ত উদাহরণ। এই ভাবনাচিন্তাকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেইরকম বিভিন্ন প্রচেষ্টার বিষয়ে আপনি 'এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত'-এর ওয়েবসাইটে জানতে পারবেন । এখানে আপনি খাদ্য, শিল্প, সংস্কৃতি, পর্যটন সহ এই ধরনের অনেক কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে পারবেন। আপনিও এই কর্মকাণ্ডে অংশও নিতে পারেন। এর ফলে আপনি আপনার দেশ সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারবেন এবং আপনি দেশের বৈচিত্র্যও অনুভব করতে পারবেন ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বর্তমানে আমাদের দেশে উত্তরাখণ্ডের চার ধামের পবিত্র তীর্থযাত্রা চলছে। চার ধামে এবং বিশেষ করে কেদারনাথে, প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত পৌঁছাচ্ছেন। লোকেরা তাদের চারধাম যাত্রার আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন, কিন্তু আমি এটাও দেখেছি যে ভক্তরা কেদারনাথে কিছু তীর্থযাত্রীর আবর্জনা ছড়ানোর কারণে বেশ হতাশ। সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেকে তাদের মতামত দিয়েছেন। আমরা পবিত্র তীর্থস্থানে যাবো আর সেখানে ময়লার স্তূপ থাকবে, এটা ভাল বিষয় নয়। তবে বন্ধুরা, এসব অভিযোগের মধ্যেও অনেক ভালো ছবিও দেখা যাচ্ছে। যেখানে শ্রদ্ধা আছে, সেখানে সৃষ্টি ও ইতিবাচক উদ্যোগও আসে। এমনও অনেক ভক্ত আছেন যারা বাবা কেদারের ধামে দর্শন এবং পুজো করার পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অনুশীলনও করছেন, কেউ তাদের থাকার জায়গার আশেপাশে পরিষ্কার করছেন এবং কেউ ভ্রমণ পথে পড়ে থাকা সমস্ত আবর্জনা পরিষ্কার করছেন। স্বচ্ছ ভারত অভিযান দল-এর সঙ্গে অনেক সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠণও সেখানে কাজ করছে। বন্ধুরা, আমাদের যেমন তীর্থযাত্রার গুরুত্ব আছে, তেমনি তীর্থসেবারও গুরুত্বও রয়েছে। আমি তো বলব তীর্থসেবা ছাড়া তীর্থযাত্রা অসম্পূর্ণ। দেবভূমি উত্তরাখণ্ডের অনেকে আছেন যারা পরিচ্ছন্নতা এবং সেবার অনুশীলনে নিযুক্ত। আপনি রুদ্রপ্রয়াগের বাসিন্দা মনোজ বেঞ্জওয়ালজির কাছ থেকেও অনেক অনুপ্রেরণা পাবেন। মনোজজি বিগত ২৫ বছর ধরে পরিবেশের যত্ন নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন, তিনি স্বচ্ছতার প্রচার চালানোর পাশাপাশি পবিত্র স্থানগুলিকে প্লাস্টিক মুক্ত করতেও নিযুক্ত রয়েছেন। অন্যদিকে, গুপ্তকাশীর বাসিন্দা সুরেন্দ্র বাগওয়ানিজিও স্বচ্ছতাকে নিজের জীবনের মন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি গুপ্তকাশীতে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতার কর্মসূচি চালান এবং আমি জানতে পেরেছি যে তিনি এই অভিযানের নাম দিয়েছেন ‘মন কি বাত’। একইভাবে দেওয়ার গ্রামের চম্পাদেবী বিগত ৩ বছরধরে, তার গ্রামের মহিলাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট শেখাচ্ছেন। চম্পাজি শত শত গাছও রোপণ করেছেন এবং তার কঠোর পরিশ্রমে তিনি একটি সবুজ বন তৈরি করেছেন। বন্ধুরা, এই সব মানুষের প্রয়াস-এর কারণেই আমরা দেবভূমি আর তীর্থভূমির দৈবিক অনুভূতি উপলব্ধি করে থাকি। যেটা অনুভব করার জন্যই আমরা ওখানে যাই, এই দেবত্ব এবং আধ্যাত্মিককতা বজায় রাখার আমাদেরও দায়িত্ব।
এখন আমাদের দেশে চারধাম যাত্রার পাশাপাশি আগামী দিনে অমরনাথ যাত্রা, পন্ধরপুর যাত্রা এবং জগন্নাথ যাত্রার মতো অনেক যাত্রা হবে। শ্রাবন মাসে, প্রতিটি গ্রামেই বোধহয় কোনো না কোনো মেলা হয়। বন্ধুরা, আমরা যেখানেই যাই না কেন, এই তীর্থস্থানগুলোর গৌরব বজায় রাখতে হবে।
পরিচ্ছন্নতা, একটি পবিত্র পরিবেশ বজায় রাখা, এটা আমাদের কখনই ভুলে যাওয়া উচিত নয় এবং তাই আমাদের পরিচ্ছন্নতার সংকল্প নেয়া উচিত। কিছুদিন পর ৫ই জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালিত হবে। পরিবেশ নিয়ে আমাদের চারপাশে ইতিবাচক প্রচার চালানো উচিত এবং এটি একটি ধারাবাহিক কাজ। আপনারা এবার সবাইকে সঙ্গে নিয়ে স্বচ্ছতা ও বৃক্ষরোপনের কিছু উদ্যোগে অবশ্যই সামিল হবেন। আপনারা নিজেরাও গাছ লাগান এবং অন্যকেও অনুপ্রাণিত করুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আগামী মাসে ২১শে জুন, আমরা অষ্টম 'আন্তর্জাতিক যোগ দিবস' পালন করবো। এই বছর যোগ দিবসের থিম হল – যোগা ফর হিউম্যানিটি, আমি আপনাদের সবাইকে যোগ দিবস খুবই উৎসাহের সঙ্গে পালন করবার জন্য অনুরোধ করছি। হ্যাঁ! করোনা থেকে বাঁচতে যথোপযুক্ত সাবধানতাও অবলম্বন করুন, তবে, এখন তো সারা বিশ্বে করোনার সামগ্রিক পরিস্থিতি আগের থাকে কিছুটা ভালো, যথেষ্ট টিকাকরণের কারণে এখন লোকজন আগের থেকে অনেক বেশি বাইরে বেরোচ্ছেন, এইজন্য বিশ্বব্যাপী "যোগ দিবস" উপলক্ষে অনেক প্রস্তুতি চোখে পড়ছে। করোনা অতিমারি আমাদের সবাইকে অনুভব করিয়েছে যে, আমাদের জীবনে, সুস্বাস্থ্যের কতটা প্রয়োজনীয়তা আছে। আর যোগ, এক্ষেত্রে কত বড় মাধ্যম! মানুষ এটা বুঝতে পেরেছে - যে যোগ থেকে শারীরিক, আধ্যাত্মিক ও বৌদ্ধিক ౼ তিনটি ক্ষেত্রেই বিকাশ ঘটে । বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় বাণিজ্য জগতের ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, ছাত্রছাত্রী থেকে সামান্য মানুষও, সবাই যোগকে নিজের জীবনের অভিন্ন অঙ্গ করে ফেলছেন। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে, যে সমগ্র বিশ্বে যোগের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা দেখে আপনাদের সবার নিশ্চয় খুব ভালো লাগছে। বন্ধুরা, এইবার দেশ বিদেশে "যোগ দিবস" উপলক্ষে আয়োজিত হতে চলা বেশ কিছু দারুণ উদ্ভাবনমূলক উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এর মধ্যে একটি হলো গার্ডিয়ান রিং, যা একটি বড়ো অনন্য কর্মসূচী হতে চলেছে। এই অনুষ্ঠানে সূর্যর গতিপ্রকৃতিকে উদযাপন করা হবে, অর্থাৎ সূর্য যেরকম যেরকম যাত্রা করবে, পৃথিবীর আলাদা আলাদা প্রান্তে, আমরা যোগের মধ্য দিয়ে তাকে স্বাগত জানাবো। ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভারতীয় মিশন সেখানকার স্থানীয় সময় অনুযায়ী সূর্যোদয়ের সময় যোগ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
একটি দেশের পরে আর একটি দেশে কার্য্যক্রম শুরু হবে। পূর্ব থেকে পশ্চিমে এক নিরন্তর যাত্রাপথ চলতে থাকবে, সেই একইভাবে, এগিয়ে যেতে থাকবে। এই অনুষ্ঠানের স্ট্রিমিংও এইভাবে একের পর এক জুড়তে থাকবে, অর্থাৎ এটা একরকম রিলে যোগ স্ট্রিমিং অনুষ্ঠান হবে। আপনারাও অবশ্যই এটা দেখবেন।
বন্ধুরা, আমাদের দেশে এবার 'অমৃত মহোৎসবের' কথা মাথায় রেখে দেশের ৭৫ টি বিভিন্ন জায়গায়ও 'আন্তজাতিক যোগ দিবসের' আয়োজন করা হবে। এই উপলক্ষে বেশ কয়েকটি সংগঠন এবং দেশের মানুষও নিজের নিজের ক্ষেত্রের বিশেষ স্থানে কিছু সৃজনশীল কাজ করার চেষ্টা করছেন। আমি আপনাদের কাছেও অনুরোধ করব এবার যোগ দিবস পালন করার জন্য আপনারা নিজেদের শহর বা গ্রামের এমন কোন জায়গা বাছুন যা সবথেকে আলাদা ও অনন্য। এই জায়গা কোন প্রাচীন মন্দির অথবা কোন পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে, বা কোন বিখ্যাত নদী, হ্রদ বা পুকুরের পার হতে পারে। এতে যোগের সঙ্গে আপনাদের সেই জায়গার পরিচিতিও বাড়বে ফলে পর্যটনের প্রসার ঘটবে। এই সময়ে যোগ দিবস নিয়ে ১০০ দিনের কাউন্টডাউনও চলছে, অথবা এটাও বলতে পারেন যে নিজেদের এবং সামাজিক প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত থাকা নানা কার্যক্রম তিন মাস আগেই শুরু হয়েছে। এই যেমন দিল্লিতে শততম এবং ৭৫ তম দিনের কাউন্টডাউন অনুষ্ঠান হয়েছে। তেমনি আসামের শিবসাগরে ৫০তম এবং হায়দ্রাবাদে ২৫তম কাউন্টডাউন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। আমি চাই যে আপনিও আপনার পরিসরে যোগ দিবসের প্রস্তুতি শুরু করুন। বেশি করে মানুষের সঙ্গে দেখা করুন, প্রত্যেককে যোগ দিবসের অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকার আহ্বান জানান, তাদের অনুপ্রাণিত করুন। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস যে আপনারা সকলেই যোগ দিবসের কর্মসূচীতে উৎসাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করবেন আর এতে আপনারা প্রাত্যহিক জীবনেও যোগকে আপন করে নেবেন।
বন্ধুরা কয়েকদিন আগে আমি জাপান গিয়েছিলাম। নিজের অনেক কাজের মাঝে মাঝেই কিছু সুন্দর মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমি ‘মন কি বাতে’ আপনাদের তাঁদের কথা শোনাতে চাই। এঁরা জাপানের অধিবাসী কিন্তু ভারতের প্রতি এঁদের আশ্চর্য রকমের টান রয়েছে। এঁদের মধ্যে একজন হিরোশি কোইকেজি রয়েছেন, যিনি একজন বিখ্যাত আর্ট ডিরেক্টর। আপনারা এটা জেনে খুশি হবেন যে উনি মহাভারত প্রকল্পকে পরিচালনা করেছেন। এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল কম্বোডিয়ায়। গত ৯ বছর ধরে এটা অনবরত চলছে। হিরোশি কোইকেজি প্রত্যেকটা কাজ অন্যরকম ভাবে সম্পন্ন করেন। উনি প্রতিবছর এশিয়ার কোন একটি দেশে যাত্রা করেন এবং সেখানকার স্থানীয় শিল্পী এবং সুরকারদের সঙ্গে মহাভারতের কিছু অংশ প্রযোজনা করেন।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ওঁরা ভারত, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সমেত ৯টি দেশে প্রোডাকশন ও স্টেজ পারফর্মেন্সও করেছেন। হিরোশি কোইকে এমন সমস্ত শিল্পীদের একত্রে আনেন যাঁদের ধ্রুপদী ও চিরায়ত এশিয়ান পারফর্মিং আর্টে ডাইভার্স ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। এই কারণেই তাঁর পারফর্মেন্সগুলিতে ভিন্ন-ভিন্ন আঙ্গিক দেখা যায়। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও জাপানের শিল্পীরা জাভা নৃত্য, বালী নৃত্য, থাই নৃত্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানগুলি আরও আকর্ষণীয় করে তোলেন। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে এখানে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলেন এবং নৃত্যশৈলীগুলি খুব সুন্দর ভাবে এই বৈচিত্র ফুটিয়ে তোলে আর সঙ্গীতের বৈচিত্র এই প্রোডাকশনগুলিকে আরও প্রাণবন্ত করে দেয়। এঁদের উদ্দেশ্য আমাদের সমাজে বৈচিত্র ও সহাবস্থানের গুরুত্বটি সামনে আনা এবং শান্তির প্রকৃত রুপ কী - সেটা তুলে ধরা। এঁদের ছাড়া আমি জাপানে আর যে দু’জন ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেছিলাম তাঁরা হলেন আতসুশি মাতসুও ও কেঞ্জি ইয়োশি। এঁরা দু’জনেই টিইএম প্রোডাকশন কোম্পানীর সঙ্গে যুক্ত। এই কোম্পানির সঙ্গে যোগ রয়েছে রামায়ণের সেই জাপানিজ অ্যানিমেশন ফিল্মটির, যেটি ১৯৯৩ সালে রিলিজ হয়। এই প্রজেক্টটির জাপানের বিখ্যাত ফিল্ম ডিরেক্টর য়ুগো সাকোর সঙ্গেও যোগ ছিল। প্রায় ৪০ বছর আগে, ১৯৮৩-তে উনি রামায়ণের ব্যাপারে প্রথমবার শোনেন। রামায়ণ ওঁর হৃদয় স্পর্শ করে, যার পর তিনি এই বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে গবেষণা করতে শুরু করেন। এটুকুই নয়, উনি নিজের ভাষায় রামায়ণের ১০টি সংস্করণ পড়ে ফেলেন এবং তিনি এখানেই থামেন নি, উনি এই মহাকাব্যটিকে অ্যানিমেশনেও নিয়ে আসতে চান।
এ কাজে ভারতীয় অ্যানিমেটররাও তাদের যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত ভারতীয় রীতিনীতি ও পরম্পরা সম্বন্ধে তাদের নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাদের জানানো হয়েছে ভারতীয়রা ধুতি কিভাবে পরেন, শাড়ি কিভাবে পরেন, কেশসজ্জা কিভাবে করেন, বাচ্চারা পরিবারের অন্যান্যদের ও একে অপরকে কিভাবে সম্মান প্রদর্শন করেন, আশীর্বাদের পরম্পরাটি কি। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির বয়ো: জ্যেষ্ঠদের প্রণাম করা, তাদের আশীর্বাদ নেওয়া, এই সমস্ত কিছু আজ ৩০ বছর পর এই অ্যানিমেশন ফিল্মের মাধ্যমে আবারো 4K তে রিমাস্টার করা হচ্ছে। এই প্রোজেক্টটি শীঘ্রই সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের জাপানের মানুষেরা, যারা আমাদের ভাষা জানেন না, আমাদের রীতিনীতি, পরম্পরা সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেই, তাদের ভারতীয় সংস্কৃতির জন্য এই আত্মনিবেদন, এই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কোন ভারতীয় এতে গর্ববোধ করবেন না বলুন তো?
আমার প্রিয় দেশবাসী, আত্মচিন্তার ঊর্ধ্বে উঠে সমাজের সেবা করার মন্ত্র, সেল্ফ ফর সোসাইটির মন্ত্র আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ। আমাদের দেশে অগণিত মানুষ এই মন্ত্রকে নিজেদের জীবনের ধ্যান জ্ঞান করেছেন। আমি অন্ধ্রপ্রদেশের মরকাপুরমের বাসিন্দা এক বন্ধু, রামভূপাল রেড্ডিজির সম্বন্ধে জানতে পেরেছি। আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন, রামভূপাল রেড্ডিজি অবসরগ্রহণের পর প্রাপ্য তাঁর সমস্ত উপার্জন মেয়েদের শিক্ষার জন্য দান করেছেন। তিনি প্রায় ১০০ জন মেয়ের জন্য সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছেন, আর তাতে নিজের ২৫ লক্ষেরও বেশি টাকা জমা করেছেন। সেবার এমনই আরেকটি উদাহরণ ইউ.পি তে আগ্রার কচৌরা গ্রামে রয়েছে। অনেক বছর ধরেই এই গ্রামে মিষ্টি জলের অভাব ছিল। ইতোমধ্যে গ্রামের এক কৃষক কুঁয়ার সিং গ্রাম থেকে ছয়-সাত কিলোমিটার দূরে নিজের ক্ষেতে মিষ্টি জলের সন্ধান পান। এটা তার কাছে খুবই আনন্দের বিষয় ছিল। তিনি ভাবলেন, এই জল দিয়ে বাকি সব গ্রামবাসীদেরও সেবা করা যাক!
কিন্তু ক্ষেত থেকে গ্রাম পর্যন্ত জল পৌঁছাতে ৩০ থেকে ৩২ লক্ষ টাকার প্রয়োজন ছিল। কিছুদিন পর, কুঁওয়ার সিংয়ের ছোট ভাই শ্যাম সিং সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে হওয়ার পর গ্রামে আসেন, তখন তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি অবসরগ্রহণের পর পাওয়া তাঁর সমস্ত অর্থ এই কাজের জন্য তুলে দেন এবং ক্ষেত থেকে গ্রামে পাইপলাইনের এর মাধ্যমে গ্রামবাসীদের মিষ্টি জল সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। যদি আন্তরিকতা থাকে ও আপনি আপনার কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠাবান হন, তাহলে একজন ব্যক্তিও কীভাবে পুরো সমাজের ভবিষ্যত পরিবর্তন করতে পারে, এই প্রচেষ্টা তার একটি বড় প্রেরণাদায়ক উদাহরণ। এই কর্তব্য-পথে চলেই আমরা শক্তিশালী সমাজ গড়তে পারি, দেশকে ক্ষমতাশালী করে তুলতে পারি। স্বাধীনতার এই অমৃত মহোৎসবে এই হওয়া উচিত আমাদের সংকল্প এবং এই হওয়া উচিত আমাদের সাধনা - যার একমাত্র পথ কর্তব্য, কর্তব্য ও কর্তব্য।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ "মন কি বাত"-এ আমরা সমাজ সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। আপনারা সবাই বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত আপনাদের মূল্যবান পরামর্শ আমায় পাঠান এবং তার ভিত্তিতে আমাদের আলোচনা এগোয়। "মন কি বাত"-এর পরবর্তী সংস্করণের জন্য আপনারা আপনাদের পরামর্শ পাঠাতে ভুলবেন না। বর্তমানে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব সংক্রান্ত যেসব অনুষ্ঠান চলছে, আপনি যেগুলিতে অংশ নিচ্ছেন, সেগুলি সম্পর্কে আমায় অবশ্যই জানাবেন। আমি নমো অ্যাপ এবং মাই গভ সম্পর্কিত আপনাদের পরামর্শের অপেক্ষায় রয়েছি। পরের বার আমাদের আবার দেখা হবে, আবার দেশবাসীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে এরকমই অনেক বিষয়ের উপর কথা হবে। আপনি নিজের যত্ন নিন এবং আপনার চারপাশের সমস্ত প্রাণীর যত্ন নিন। এই গ্রীষ্মে, পশু-পাখিদের জন্য খাদ্য এবং জল সরবরাহ করার আপনার মানবিক দায়িত্ব পালন করুন, ততদিন পর্যন্ত আপনাদের জানাই অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার।
নতুন বিষয় সঙ্গে নিয়ে, অনুপ্রেরণা জাগানো নতুন উদাহরণের সঙ্গে, নতুন-নতুন খবর সংগ্রহ করে, আরো এক বার আমি আপনাদের সঙ্গে ‘মন কি বাত’ করতে এসেছি। জানেন এবার আমি সবথেকে বেশি চিঠি আর বার্তা কোন বিষয়ে পেয়েছি? এই বিষয়টা এমন যা বর্তমান, অতীত আর ভবিষ্যৎ তিনটেরই সঙ্গে জুড়ে আছে। দেশ যে নতুন প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় পেয়েছে আমি সেই ব্যাপারে কথা বলছি। গত ১৪ই এপ্রিল বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্মজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় দেশবাসীর উদ্দেশে সমর্পিত হল। দেশের নাগরিকদের জন্য এর দ্বার উন্মুক্ত করা হয়েছে। এক জন শ্রোতা আছেন শ্রীমান সার্থক জী− সার্থক জী গুরুগ্রামে থাকেন আর প্রথম সুযোগেই তিনি প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় দেখে এসেছেন। সার্থক জী নমো অ্যাপে যে বার্তা পাঠিয়েছেন আমাকে, তা বেশ ইন্টারেস্টিং। তিনি লিখেছেন যে বহু বছর ধরে উনি নিউজ চ্যানেল দেখছেন, খবরের কাগজ পড়ছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গেও যুক্ত উনি, তাই ওনার মনে হয়েছিল যে ওনার সাধারণ জ্ঞান খুব ভালো রয়েছে, কিন্তু যখন পি এম সংগ্রহালয়ে গেলেন তখন উনি বেশ অবাক হলেন, উনি বুঝলেন যে নিজের দেশ আর দেশের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের ব্যাপারে উনি অনেক কিছু জানেনই না। উনি পি এম সংগ্রহালয়ের এমন কিছু কিছু বিষয় নিয়ে লিখেছেন যা ওনার জিজ্ঞাসা আরও বাড়িয়ে তুলেছে, যেমন উনি লালবাহাদুর শাস্ত্রীর সেই চরকা দেখে খুব খুশী হয়েছেন যা তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন। উনি শাস্ত্রীজীর পাসবুকও দেখেছেন আর এটাও দেখেছেন যে তাঁর সঞ্চয় কত কম ছিল। সার্থকজী লিখেছেন যে ওনার এটাও জানা ছিল না, যে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেওয়ার আগে মোরারজী ভাই দেশাই গুজরাতে ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন। প্রশাসনিক পরিষেবায় ওনার দীর্ঘ একটা কেরিয়ার ছিল। সার্থকজী চৌধুরী চরণ সিংয়ের ব্যাপারে সেই বিষয়টা নিয়ে লিখছেন যা তাঁর জানা ছিল না যে জমিদারি উচ্ছেদের ক্ষেত্রে চৌধুরী চরণ সিংয়ের অনেক বড় অবদান ছিল। এটুকুই নয়, এরপর তিনি লিখছেন যে ভূমি সংস্কারের ব্যাপারে ওখানে আমি দেখলাম যে শ্রী পি ভি নরসিম্হা রাওজি ভূমি সংস্কারের কাজে গভীর আগ্রহ দেখাতেন। সার্থকজীরও এই মিউজিয়ামে এসেই জানা হল যে চন্দ্রশেখরজি চার হাজার কিলোমিটারের বেশি পায়ে হেঁটে ঐতিহাসিক ভারত যাত্রা সম্পন্ন করেন। উনি যখন সংগ্রহালয়ে সেই সব জিনিস দেখেন যা অটলজী ব্যবহার করতেন, তাঁর ভাষণ শোনেন, তখন গর্বে তাঁর বুক ভরে উঠেছিল। সার্থকজী এও বলেছেন যে এই সংগ্রহালয়ে মহাত্মা গান্ধী, সর্দার প্যাটেল, ডক্টর আম্বেদকর, জয়প্রকাশ নারায়ণ আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জহরলাল নেহরু সম্পর্কেও অনেক আকর্ষণীয় তথ্য রয়েছে।
বন্ধুগণ, দেশের প্রধানমন্ত্রীর অবদানকে স্মরণ করতে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের চেয়ে ভাল সময় কি-ই বা হতে পারে। দেশের জন্য এটা গর্বের বিষয় যে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব একটি গণআন্দোলনের রূপ নিচ্ছে। ইতিহাসের প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক বেড়েছে এবং পি.এম. সংগ্রহশালা তরুণদের আকর্ষণের উৎস হয়ে উঠেছে, যা তাদের দেশের অমূল্য ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত করছে। যাইহোক, যখন জাদুঘর সম্পর্কে এত কথাই হচ্ছে আপনাদের সঙ্গে, তখন আমার মনে হচ্ছে যে আমারও আপনাদের কিছু প্রশ্ন করা উচিত। দেখা যাক আপনাদের সাধারণ জ্ঞানের পরিধি কেমন - আপনাদের কতটুকু জ্ঞান আছে। আমার তরুণ বন্ধুরা আপনারা তৈরী তো? কাগজ কলম হাতে নিয়ে নিয়েছেন তো? এই মুহূর্তে আমি আপনাদের যা জিজ্ঞাসা করতে চলেছি, তার উত্তর আপনারা নমো অ্যাপ বা স্যোসাল মিডিয়াতে #MuseumQuiz লিখে শেয়ার করতে পারেন। অবশ্যই করবেন। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি যে আপনারা অবশ্যই এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেবেন। এর মাধ্যমে এই দেশের মানুষ জাদুঘরের প্রতি আরও আগ্রহী হবেন। আপনারা কি জানেন দেশের কোন শহরে একটি বিখ্যাত রেল মিউজিয়াম আছে, যেখানে বিগত ৪৫ বছর ধরে, মানুষ ভারতীয় রেলের ঐতিহ্য উপলব্ধি করার সুযোগ পাচ্ছেন? আমি আপনাদের একটি ক্লু দিচ্ছি । আপনারা এখানে ফেয়ারি কুইন থেকে শুরু করে সেলুন অফ প্রিন্স অফ ওয়েলসের এবং ফায়ারলেস স্টিম লোকোমোটিভও দেখতে পাবেন। আপনারা কি জানেন মুম্বাইয়ে এমন কোন জাদুঘর আছে যেখানে খুবই আকর্ষণীয় উপায়ে মুদ্রার বিবর্তন দেখতে পাওয়া যায়? এখানে এক দিকে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর মুদ্রা যেমন বিদ্যমান, তেমনি ই-মানিও রয়েছে। তৃতীয় প্রশ্ন 'বিরাসত -এ -খালসা' এই জাদুঘর-এর সঙ্গে সম্পর্কিত। আপনারা বলতে পারবেন, এই জাদুঘরটি পাঞ্জাবের কোন শহরে অবস্থিত? ঘুড়ি ওড়ানো আপনারা সবাই নিশ্চয়ই বেশ উপভোগ করেন, পরের প্রশ্নটি এর সঙ্গেই সংযুক্ত। দেশের একমাত্র ঘুড়ি জাদুঘর কোথায় অবস্থিত? আসুন আমি আপনাদের একটা ক্লু দিচ্ছি, যে এখানে রাখা সবচেয়ে বড় ঘুড়িটির আকার ২২ বাই ১৬ ফুট। কিছু মনে এলো? না হলে এখানে- আর একটা কথা বলবো- এই শহরের সঙ্গে বাপুর বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। শৈশবে ডাকটিকিট সংগ্রহ করার শখ অনেকেরই থাকে? কিন্তু, আপনারা কি জানেন যে ভারতে ডাকটিকিটের সঙ্গে সংযুক্ত জাতীয় জাদুঘরটি কোথায় অবস্থিত? আমি আপনাদের জন্য আরো একটি প্রশ্ন রাখছি। গুলশান মহল নামের ভবনে কোন জাদুঘর রয়েছে? আপনাদের জন্য একটা ক্লু হলো, যে এই মিউজিয়ামে গিয়ে আপনারা একজন চিত্র পরিচালকও হতে পারেন, এছাড়াও এখানে আপনারা ক্যামেরা ও সম্পাদনার খুঁটিনাটিও শিখতে পারেন। আচ্ছা, আপনারা এমন কোনো জাদুঘর সম্পর্কে জানেন যা ভারতের বস্ত্রশিল্প সম্পর্কিত এবং যা বস্ত্রশিল্পর ঐতিহ্য তুলে করে। এই মিউজিয়ামে মিনিয়েচার পেইন্টিং, জৈন পাণ্ডুলিপি, ভাস্কর্য- অনেক কিছু আছে। এটি তার অনন্য প্রদর্শন শৈলীর জন্যও পরিচিত।
বন্ধুরা, প্রযুক্তির এই সময়ে সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা খুবই সহজ। এই প্রশ্নগুলি আমি এই জন্য করলাম যাতে আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে কৌতুহল বাড়ে, তারা এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আরও পড়াশোনা করে, চাক্ষুষ করতে যায়। আজকাল তা মিউজিয়ামের মাহাত্ম্য বুঝে অনেকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এগিয়ে এসে মিউজিয়ামে অনেক দানও করেন। এরকম অনেকে আছেন যারা তাদের পুরনো সংগ্রহ, বহু ঐতিহাসিক জিনিস জাদুঘরকে দিয়ে দিচ্ছেন। আপনি যখন এরকম করেন তখন আপনি এক সাংস্কৃতিক সম্ভারকে গোটা সমাজের সাথে ভাগ করে নেন। ভারতে এখন অনেক মানুষ এর জন্য এগিয়ে আসছেন। আমি এরকম সকল নিজস্ব উদ্যোগকে সাহায্য করি। আজ এই বদলে যাওয়া সময় ও কোভিড প্রোটোকলের কারণে সংগ্রহশালাগুলিতে নিত্যনতুন পদ্ধতি অবলম্বনের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। মিউজিয়ামগুলোয় ডিজিটাইজেশনের উপর গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে। আপনারা জানেন ১৮ই মে গোটা বিশ্বে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস পালিত হবে। এই প্রসঙ্গে আমার যুবক-যুবতী বন্ধুদের জন্য আমার একটা প্রস্তাব আছে। সামনে যে ছুটির দিন আসছে, তাতে বন্ধু বান্ধবদের দল বল নিয়ে কোনো স্থানীয় মিউজিয়াম দেখতে যান। আপনারা নিজেদের অভিজ্ঞতা #museummemories-এ সকলের সাথে অবশ্যই ভাগ করে নিন। এর মাধ্যমে অন্যদের মনেও সংগ্রহশালা সম্পর্কে আগ্রহ জন্মাবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা নিজেদের জীবনে অনেক সংকল্প নিয়ে থাকবেন এবং সেগুলি পূরণ করার জন্য অনেক পরিশ্রমও করে থাকবেন। কিন্তু বন্ধুরা, হালফিলএ আমি এক অভিনব সংকল্পর কথা জানতে পেরেছি। তাই ভাবলাম, এটা ‘মান কি বাত’ এর শ্রোতাদের সাথে নিশ্চয়ই ভাগ করি।
বন্ধুরা, আপনারা ভাবতে পারেন কেউ নিজের ঘর থেকে এই সংকল্প নিয়ে বেরচ্ছেন যে সারাদিন শহরে ঘুরবেন কিন্তু কোনো কিছু নগদ টাকা দিয়ে করবেন না! একটিও লেনদেন নগদে হবেনা। সত্যি অভিনব সংকল্প বৈকি। দিল্লির দুই মেয়ে, সাগরিকা ও প্রেক্ষা, এরকমই একটি নগদবিহীন দিন কাটালেন। সাগরিকা ও প্রেক্ষা দিল্লিতে যেখানেই যান, তারা নগদবিহীন পদ্ধতিতে আর্থিক লেনদেন করার সুবিধা পেয়েও যান। ইউপিআই কিউআর কোড থাকায় তাদের নগদ টাকা বের করার কোন প্রয়োজনই পড়েনি। এমনকি স্ট্রীট ফুড ও রাস্তার দোকানে কেনাকাটার সময়েও বেশীরভাগ জায়গায় তারা অনলাইনে আর্থিক লেনদেনের সুবিধা পান।
বন্ধুরা, কেউ ভাববেন যেহেতু দিল্লি মেট্রো শহর, তাই এখানে এটা সহজেই সম্ভব। কিন্তু এখন এরকম নয় যে ইউপিআই এর পরিষেবা শুধু দিল্লির মত বড় শহরেই সীমাবদ্ধ। গাজিয়াবাদের আনন্দিতা ত্রিপাঠীর এক বার্তাও পেয়েছি। গত সপ্তাহে আনন্দিতা তার স্বামীর সঙ্গে উত্তরপূর্ব বেড়াতে গিয়েছিলেন। তিনি অসম থেকে মেঘালয়, এমনকি অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও আমাকে জানিয়েছেন। আপনারাও চমৎকৃত হবেন জেনে যে বেশ কয়েকদিন এই ভ্রমণ চলাকালীন তাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কখনো নগদ টাকা ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়েনি। কিছু বছর আগেও যেসব এলাকায় ভালো ইন্টারনেট এর পরিষেবা পাওয়া যেত না, সেখানেও এখন ইউপিআই এর মাধ্যমে লেনদেনের সুবিধা পাওয়া সম্ভব। সাগরিকা, প্রেক্ষা ও আনন্দিতার অভিজ্ঞতা জেনে আমিও আপনাদের অনুরোধ করব নগদবিহীন একটি লেনদেনের দিন কাটান, এ ধরণের একটি অভিজ্ঞতা ভেবে দেখুন।
বন্ধুরা, বিগত কিছু বছরে ভিম ইউপিআই আমাদের অর্থনীতি এবং অভ্যাসের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এখন ছোট ছোট শহরে এমনকি বেশিরভাগ গ্রামেও মানুষ ইউপিআই দিয়ে লেন-দেনের কারবার করছেন। ডিজিট্যাল অর্থনীতির মাধ্যমে আমাদের দেশে এক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। অলি গলির মধ্যে ছোটখাটো দোকানেও ডিজিট্যাল অর্থনীতির দরুন অনেক বেশি সংখ্যক গ্রাহককে সহজেই পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এখন ওদের খুচরো পয়সা নিয়েও সমস্যা হয় না। আপনিও হয়তো দৈনন্দিন জীবনে ইউপিআই-এর সহজলভ্য পরিষেবা উপভোগ করছেন। যেখানেই যান, নগদ টাকা নিয়ে যাওয়ার, ব্যাংকে যাওয়ার, বা এটিএম খোঁজার ঝঞ্ঝাটই শেষ। মোবাইল দিয়েই সমস্ত আর্থিক লেনদেন হয়ে যায়, কিন্তু, আপনি কি কখনো ভেবেছেন আপনার এই ছোট ছোট অনলাইন লেনদেন দিয়ে দেশের কত বড় ডিজিট্যাল অর্থনীতি তৈরি হয়েছে। এখন আমাদের দেশে প্রায় কুড়ি হাজার কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন রোজ হয়ে থাকে। গত মার্চ মাসে ইউপিআই এর মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন প্রায় দশ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছে গিয়েছিল। এইভাবে দেশে সুবিধাও বেড়েছে, সঙ্গে সততার পরিবেশও সৃষ্টি হয়েছে। এবার দেশে ফিন-টেকের সঙ্গে যুক্ত অনেক নতুন স্টার্ট আপ্সের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি চাইবো যদি আপনার কাছেও ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন ও স্টার্ট আপ্সের ব্যবস্থাপনার শক্তি সম্পর্কিত কোন অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে আমাদের তা জানান। আপনার অভিজ্ঞতা অন্যদের ও দেশবাসীকে অনুপ্রেরণা দিতে পারে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রযুক্তি'র শক্তি কিভাবে সাধারণ মানুষের জীবন বদলে দিচ্ছে তা আমরা আমাদের চারপাশে ক্রমাগত দেখতে পাচ্ছি। প্রযুক্তি আরও একটা দুর্দান্ত কাজ করেছে, ভিন্নভাবে সক্ষম বন্ধুদের অসাধারণ ক্ষমতার পরিচয় দেশ ও দুনিয়ার সামনে তুলে ধরেছে। আমাদের দিব্যাঙ্গ ভাই-বোনেরা কি কি করতে পারেন তা আমরা টোকিও প্যারা-অলিম্পিকে দেখেছি! খেলাধুলোর মতই, আর্টস, একাডেমিকস এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে তারা অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিচ্ছেন। কিন্তু যখন এই বন্ধুরা প্রযুক্তির সাহায্য পায় তখন তারা আরো বড় লক্ষ্য অর্জন করে দেখায়। এইজন্য এখন আমাদের দেশ ভিন্নভাবে সক্ষম বন্ধুদের জন্য সরঞ্জাম ও পরিকাঠামো সহজলভ্য করে তোলার ক্রমাগত চেষ্টা করছে। আমাদের দেশে এমন বহু স্টার্ট-আপ এবং সংস্থা আছে যারা এই উদ্দেশ্যে উৎসাহব্যাঞ্জক কাজ করে চলেছে। এমনই একটি সংস্থা ভয়েস অফ স্পেশালি-এবলড পিওপ্ল; এই সংস্থাটি সহায়ক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করছে। বিশেষভাবে সক্ষম শিল্পী বন্ধুদের কাজকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য-ও একটা উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। ভয়েস অফ স্পেশালি-এবলড পিওপলের এই শিল্পীদের আঁকা ছবি নিয়ে একটি ডিজিটাল আর্ট গ্যালারি'ও তৈরি করা হয়েছে। দিব্যাঙ্গ বন্ধুরা কতটা অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী হয় এবং তাদের কত অসাধারণ ক্ষমতা থাকে তার উদাহরণ এই আর্ট গ্যালারি। ভিন্নভাবে সক্ষম বন্ধুদের জীবনে কত প্রতিকূলতা থাকে, সেই প্রতিকূলতা কাটিয়ে তারা কতদূর অগ্রসর হতে পারে... এমন বহু বিষয় এই ছবিগুলির মাধ্যমে অনুভব করতে পারবেন। যদি এমনি কোন দিব্যাঙ্গ বন্ধুকে চেনেন, এবং তার প্রতিভার বিষয়ে জানেন, তাহলে আপনিও ডিজিট্যাল প্রযুক্তির সাহায্যে তাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পারেন। যাদের ভিন্নভাবে সক্ষম বন্ধু আছেন, তারাও যেন এই ধরনের উদ্যোগের সঙ্গে নিজেদের অবশ্যই যুক্ত করেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দেশের অধিকাংশ জায়গায় গ্রীষ্মের দাবদাহ খুব দ্রুত বেড়ে চলেছে। বাড়তে চলা এই গরমে, জল বাঁচানোর প্রয়োজনটাকেও একইরকম প্রাধান্য দেয়। হতে পারে আপনি এখন যেখানে আছেন, সেখানে জল পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় । কিন্তু, আপনাকে সেই কোটি কোটি মানুষদেরও সবসময় মনে রাখতে হবে, যাঁরা জলসঙ্কট হয় সেইরকম জায়গায় থাকেন, যাঁদের কাছে জলের এক একটি বিন্দু অমৃত সমান হয়।
বন্ধুগণ, এই সময় স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে, দেশ যে সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে, তাতে জল সংরক্ষণও আছে। অমৃত মহোৎসব চলাকালীন দেশের প্রতিটি জেলায় ৭৫টি অমৃত সরোবর বানানো হবে। আপনি কল্পনা করতে পারেন যে এই অভিযানটি কতো বড়ো আকারের হতে চলেছে। সেই দিন আর দূরে নেই, যখন আপনার জেলায় ৭৫টি অমৃত সরোবর থাকবে। আমি, আপনাদের সবাইকে, এবং বিশেষকরে যুবাদের বলব যে তারা যেন এই অভিযানের বিষয়ে জানে এবং এর দায়িত্ব পালন করে। যদি আপনার অঞ্চলে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত কোনো ইতিহাস থাকে, কোনো বিপ্লবীর স্মৃতি থাকে, তাহলে সেই ইতিহাসও অমৃত সরোবরের সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন। যদিও আমার এটা জেনে ভালো লেগেছে যে অমৃত সরোবরের সংকল্প নেওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় এই বিষয়ে কাজ দ্রুততার সঙ্গে শুরু হয়ে গেছে। আমি উত্তর প্রদেশের রামপুরের গ্রাম পঞ্চায়েত পটবইয়ের সম্বন্ধে জানতে পেরেছি। সেখানে গ্রাম সভার মাঠে একটি পুকুর ছিল; কিন্তু সেটি, ময়লা এবং আবর্জনার স্তুপে ভর্তি ছিল। গত কয়েক সপ্তাহে অনেক পরিশ্রম করে স্থানীয় লোকদের সাহায্যে, স্থানীয় স্কুলের বাচ্চাদের সহায়তায়, ঐ নোংরা পুকুরটি পুনরুদ্ধার হয়েছে। এখন, ঐ পুকুরটিতে পার বাধানো হয়েছে, সুন্দর প্রাচীর, ফুড কোর্ট, ফোয়ারা এবং আলোকসজ্জা− এরকম আরও কত ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি রামপুরের পটবাই গ্রাম পঞ্চায়েতকে, গ্রামের লোকেদের, সেখানের বাচ্চাদের এই প্রয়াসের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুরা, জলের অভাব এবং জলের উপস্থিতি প্রতিটি দেশের প্রগতি এবং গতি প্রভাবিত করে। আপনারাও নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠানে আমি পরিচ্ছন্নতার মত বিষয়ের পাশাপাশি জল সংরক্ষণের বিষয়েও বারবার কথা বলেছি নিশ্চিতরূপে । আমাদের প্রাচীন গ্রন্থে তো স্পষ্ট লেখা রয়েছেঃ
পানিয়ম্ পরমম্ লোকে, জীবানাম্ জীবনম সম্রিতম্।
অর্থাৎ, জগৎ সংসারে জলই প্রত্যেক জীবের জীবনের সহায় এবং সবচেয়ে বড় সম্পদ, সেই জন্যই আমাদের পূর্বপুরুষরা জল সংরক্ষণের উপর এত জোর দিয়েছিলেন। বেদ থেকে পুরাণ পর্যন্ত প্রতিটি জায়গায় জল বাঁচানো, পুকুর, ঝিল, ইত্যাদি বানানো মানুষের সামাজিক ও আধ্যাত্মিক কাজের অঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাল্মীকি রামায়ণে জলের উৎসগুলিকে যুক্ত করা, জল সংরক্ষণ করার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।
ঠিক একই ভাবে, ইতিহাসের ছাত্রছাত্রীরা জানবেন, সিন্ধু- সরস্বতী ও হারাপ্পা সভ্যতার সময়ে আমাদের দেশে কী রকম অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছিল।
প্রাচীন কালে, বহু শহরে জলের উৎসগুলির মধ্যে আন্তঃ-সংযোগ ব্যবস্থাপনা তৈরি করা হয়েছিল, একে-অপরের সঙ্গে তাদের যুক্ত করা হয়েছিল। সে সময় জনসংখ্যা এত ছিল না, প্রাকৃতিক সম্পদের অপ্রতুলতা ছিল না, বরং প্রাচুর্য ছিল, তবুও জল সংরক্ষণের বিষয়ে জন সচেতনতা ছিল বিপুল মাত্রায়।
কিন্তু আজ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। আমি আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ করছি, আপনারা আপনাদের এলাকার এই ধরণের সমস্ত প্রাচীন পুকুর, কুয়ো, ঝিলের ব্যাপারে জানুন। অমৃত সরোবর অভিযানের হেতু জল সংরক্ষণের পাশাপাশি আপনাদের নিজেদের এলাকার পরিচিতিও তৈরি হবে। এর ফলে শহরগুলিতে, অঞ্চলগুলিতে অবস্থিত স্থানীয় পর্যটনস্থলগুলিও বিকশিত হবে। সাধারণ মানুষের ঘোরাঘুরির জন্যও নতুন জায়গা মিলবে।
বন্ধুরা, জলের সঙ্গে জড়িত সমস্ত প্রচেষ্টাই আমাদের ভবিষ্যতের সঙ্গে যুক্ত। এতে পুরো সমাজেরই দায়িত্ব থাকে। এরজন্য বছরের-পর-বছর বিভিন্ন সমাজ নিয়মিতভাবে বিভিন্ন উপায়ে প্রচেষ্টা করে গেছে। যেমন 'কচ্ছের রান' এর এক জনজাতি 'মালধারী' জল সংরক্ষণের জন্য 'বৃদাস' নামের একটি উপায় ব্যবহার করে থাকে। এর জন্য ছোট কুয়ো বানানো হয় আর তাকে বাঁচানোর জন্য তার আশেপাশে গাছপালা লাগানো হয়ে থাকে। এই ভাবেই মধ্যপ্রদেশের ভিল জনজাতি নিজস্ব একটি ঐতিহাসিক পরম্পরা 'হলমা'-কে জল সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত করে থাকে। এই পরম্পরায় এই জনজাতির মানুষ জলের সঙ্গে যুক্ত সমস্যার সমাধানের জন্য এক জায়গায় একত্রিত হন। হলমা পরম্পরার মাধ্যমে পাওয়া পরামর্শের জন্যই এই এলাকায় জলের সংকট কম হয়েছে আর মাটির নীচের জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে।
বন্ধুরা, এ রকমই কর্তব্যের ভাব যদি সবার মনে সঞ্চারিত হয় তাহলে জল সংকটের সঙ্গে যুক্ত বড় বড় সমস্যার সমাধান হতে পারে। আসুন, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে আমরা জল সংরক্ষণ আর জীবন সংরক্ষণের সংকল্প গ্রহণ করি। আমরা বিন্দু বিন্দু জল বাঁচাবো আর তার সঙ্গে প্রত্যেকটি জীবনও।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা দেখেছেন যে কিছুদিন আগে আমি আমাদের তরুণ বন্ধু আর ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে পরীক্ষা-পে-চর্চা করেছিলাম। এই চর্চার সময় কিছু ছাত্রছাত্রী বলেছিলেন যে তাদের অঙ্ক পরীক্ষার প্রতি ভীতি আছে। এরকম কথা অনেক বিদ্যার্থীই নিজেদের বার্তায় আমায় পাঠিয়েছিলেন। ওই সময়ই আমি স্থির করেছিলাম যে গণিতের উপর আমি মন কি বাতে নিশ্চয়ই চর্চা করব। বন্ধুরা, গনিত তো এমন একটি বিষয় যেটা আমাদের ভারতীয়দের কাছে সবচেয়ে বেশি সহজ হওয়া উচিত। কারণ গণিত নিয়ে সমগ্র বিশ্বের মধ্যে সবথেকে বেশি অবদান ও যোগদান ভারতীয়রাই করেছেন। শূণ্য অর্থাৎ জিরোর আবিষ্কার আর তার মাহাত্ম্য সম্বন্ধে আপনারা সবাই অনেক শুনেছেন। আপনারা এটাও অনেকবার শুনেছেন যে যদি শূন্য আবিষ্কার না হতো তাহলে হয়তো আমরা এত বৈজ্ঞানিক প্রগতি দেখতে পেতাম না। ক্যালকুলাস থেকে কম্পিউটার পর্যন্ত সব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার জিরোর উপরেই তো আধারিত। ভারতের গণিতজ্ঞ এবং পণ্ডিতেরা এটাও উল্লেখ করেছেন
''যৎ কিঞ্চিৎ বস্তু তত্ সর্বং, গণিতেন বিনা নাহি।''
অর্থাৎ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু রয়েছে তার সবটাই অংক দিয়ে নির্মিত। আপনারা বিজ্ঞানের পড়াশোনার কথা মনে করুন তাহলে এই কথার অর্থ আপনারা বুঝতে পারবেন। বিজ্ঞানের সকল নীতি একটা গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে ব্যক্ত করা হয়। নিউটনের ল, আইনস্টাইনের ফেমাস ইকুয়েশন, বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানের সকল বিষয় আসলে অঙ্ক। এখনতো বৈজ্ঞানিকরাও থিওরি অফ এভরিথিং-এর কথা ও আলোচনা করেন। অর্থাৎ এমন একটা সিঙ্গেল ফর্মুলা যেটা এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকল বিষয়কে একসঙ্গে যুক্তিপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করে। আমাদের মুনি-ঋষিরা অঙ্কের সাহায্যে বিজ্ঞানের বিস্তার নিয়ে এমন কল্পনা সব সময় এভাবেই ব্যক্ত করেছেন। আমরা যেমন শূন্যের আবিষ্কার করেছি তেমনি অসীম অর্থাৎ ইনফিনিটিকেও প্রকাশ করেছি। আমরা কথা বলার সময় যখন যোগ বা সংখ্যার কথা বলি, তখন মিলিয়ন, বিলিয়ন এবং ট্রিলিয়ন পর্যন্ত বলি আর ভাবি। কিন্তু বেদে আর ভারতীয় গণিতে গণনা এইসব উচ্চসীমা অতিক্রম করে। আমাদের এখানে একটা পুরনো শ্লোক প্রচলিত আছে.
''একং দশং শতং চৈব, সহস্রম, অযুতং, তথা।
লক্ষ্যং, নিযুতং, চ্, কোটিঃ, অর্বুদম এব চ।।
বৃন্দং, খর্ব, নিখর্বঃ চ, শঙ্খঃ পদমঃ চ সাগরঃ
অন্ত্যং মধ্যং পরার্ধঃ চ, দশ বৃদ্ধয়া তথা ক্রমম।।
এই শ্লোকে সংখ্যার একটা অর্ডার বলা রয়েছে।
যেমন এক, দশ, একশ, হাজার আর অযুত। লাখ নিযুত আর কোটি অর্থাৎ ক্রোড়।
এভাবেই এই সংখ্যা এগোয়। সংখ, পদম্ এবং সাগর পর্যন্ত। এক সাগর-এর মানে ১০ এর গুণিতক ৫৭ পর্যন্ত। শুধু এটাই নয়, এরপরেও ঔধ, মহোধের মত সংখ্যাও রয়েছে। এক মহোঘ অর্থাৎ ১০-এর পাওয়ার ৬২ পর্যন্ত। মানে একের পর ৬২টা শূন্য। সিক্সটিটু জিরো। আমরা এত বড় সংখ্যা মাথায় চিন্তা করলেও আমাদের সমস্যা হয়, কিন্তু ভারতীয় গণিতশাস্ত্রে এর ব্যবহার হাজার হাজার বছর ধরে হয়ে এসেছে। এই কিছুদিন আগে আমার ইন্টেল কোম্পানির সি.ই.ও-র সঙ্গে দেখা হয়েছিল। উনি আমায় একটি পেন্টিং দিয়েছিলেন যেখানে বামন অবতার এর মাধ্যমে গণনা বা পরিমাপের ভারতীয় পদ্ধতি চিত্রের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে। ইন্টেলের নাম এলেই কম্পিউটারের কথা আপনার মাথায় নিশ্চয় এসেছে। কম্পিউটারের ভাষায় বাইনারী সিস্টেমের ব্যাপারে আপনারা অবশ্যই শুনেছেন, কিন্তু আপনারা কি জানেন যে আমাদের দেশে আচার্য পিঙ্গলার মত ঋষিরা ছিলেন যিনি বাইনারি কল্পনা করেছিলেন। এভাবেই আর্যভট্ট থেকে শুরু করে রামানুজন পর্যন্ত এমন বিশিষ্ট গণিতজ্ঞরা এরকম কত বিষয়ে এখানে কাজ করেছেন।
বন্ধুগণ, আমাদের ভারতীয়দের জন্য গণিত কখনই কঠিন বিষয় ছিল না। এর একটি বড় কারণ হল আমাদের বৈদিক গণিত। আধুনিক কালে বৈদিক গণিতের কৃতিত্ব দেওয়া হয় শ্রী ভারতী কৃষ্ণ তীর্থজী মহারাজকে। উনি গণনার প্রাচীন পদ্ধতি পুনর্জীবিত করেছেন এবং তাকে বৈদিক গণিতের নাম দিয়েছেন। বৈদিক গণিতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত্ব হলো যে আপনি এর মাধ্যমে কঠিন থেকে কঠিনতর গণনা চোখের পলকে মনে মনে করে ফেলতে পারবেন। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায়, যুব সম্প্রদায়ের তৈরী বৈদিক গণিত শেখার এবং শেখানোর এমন অনেক ভিডিও আপনি নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন।
বন্ধুগণ, আজ 'মন কি বাতে' বৈদিক গণিত শেখায় এমন এক জন আমাদের সাথে যোগ দেবেন। সেই সাথী হচ্ছেন কলকাতার গৌরব টেকরীওয়াল জী। উনি বিগত দুই থেকে আড়াই দশক ধরে বৈদিক গণিতের আন্দোলনকে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আসুন, তাঁর সাথে কিছু কথা বলি।
মোদি জি- গৌরব জি নমস্কার!
গৌরব- নমস্কার স্যার।
মোদি জি- আমি শুনেছি যে আপনি বৈদিক গণিতের বিষয়ে খুব উৎসাহী । অনেক কিছু করেছেন। প্রথমে আমি আপনার বিষয়ে কিছু জানতে চাইব এবং তারপরে আপনার এই আগ্রহের বিষয়ে আমাকে জানাবেন।
গৌরব- স্যার কুড়ি বছর আগে আমি যখন বিজনেস স্কুলের জন্য আবেদন করছিলাম, তখন তার একটা প্রতিযোগিতামূলক ছিল, যার নাম হচ্ছে ক্যাট। তাতে গণিতের অনেক প্রশ্ন থাকত। যেগুলি কম সময়ের মধ্যে সমাধান করতে হত। তো আমার মা আমাকে একটা বই এনে দেয়, যার নাম ছিল বৈদিক গণিত। স্বামী শ্রী ভারতী কৃষ্ণ তীর্থ জি মহারাজ সে বইটি লিখেছিলেন। সে বইতে উনি ১৬টি সূত্র দিয়েছিলেন। যার মাধ্যমে গণিতের সমাধান খুব সহজ এবং দ্রুত করা যেত। যখন আমি বইটি পড়ি তখন আমি খুব অনুপ্রাণিত হই এবং তারপরে গণিতের প্রতি আমার আগ্রহ জন্ম নেয়। আমি বুঝতে পারি এই বিষয়, যেটি কিনা ভারতেরই উপহার, যা আমাদের ঐতিহ্য, তাকে বিশ্বের প্রতিটি কোণে কোণে পৌঁছে দিতে হবে। তখন থেকেই আমি বৈদিক গণিতকে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। কারণ গণিতের আতঙ্ক সবার মনেই আছে। আর বৈদিক গণিতের থেকে সরল আর কি বা হতে পারে !
মোদি জি- গৌরব জি কত বছর ধরে আপনি এই বিষয়ে কাজ করছেন?
গৌরব- আজ প্রায় কুড়ি বছর হয়ে গেল। আমি এই বিষয়ে চেষ্টা করে চলেছি।
মোদি জি- আর সচেতনতার জন্য কি করেছেন? কোন কোন উপায় ব্যবহার করছেন? কিভাবে পৌঁছাচ্ছেন মানুষের কাছে?
গৌরব - আমরা স্কুলে যাই, আমরা অনলাইন শিক্ষা দি। আমাদের সংস্থার নাম হল ভেদিক ম্যাক্স ফোরাম ইন্ডিয়া। এই সংস্থার পক্ষ থেকে আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা বৈদিক অঙ্ক করাই স্যার।
মোদি জি- গৌরব জি, আপনি তো জানেন আমি নিয়মিত বাচ্চাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পছন্দ করি এবং তার জন্য অবসর খুঁজি। আর "এক্সাম ওয়ারিয়রস" এর মাধ্যমে আমি তো তাদের বলতে গেলে এক রকম ইনস্টিটিউশনালাইজড করে দিয়েছি! আর আমার অভিজ্ঞতা হল, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যখন বাচ্চাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলি তখন অংকের নাম শুনলেই তারা পালিয়ে যায়! আর তাই আমার চেষ্টা এটাই, অকারণে একটা যে আতঙ্কের আবহ তৈরি হয়েছে তাকে দূর করা, এই ভয় দূর করা। আর ছোট ছোট টেকনিক যেগুলি পরম্পরায় চলে আসছে তা ভারতের গণিত শাস্ত্রের ক্ষেত্রে কোন নতুন বিষয় নয়। সম্ভবত পৃথিবীতে প্রাচীন ভারতীয় পরম্পরা যেগুলি রয়েছে, তার মধ্যে গণিতের পরম্পরাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে এক্সাম ওয়ারিয়রসদের ভয় দূর করার জন্য আপনি কী করবেন?
গৌরব- স্যার, এটা তো সবচেয়ে বেশি উপযোগী বাচ্চাদের জন্য। কারণ পরীক্ষার এই ভয় প্রত্যেক বাড়িতেই রয়েছে। পরীক্ষার জন্য বাচ্চারা টিউশন নেয়। বাবা মা-রা নাজেহাল হন। টিচাররাও জেরবার হয়ে পড়েন। বৈদিক গণিতের মাধ্যমে এসব ছুমন্তর হয়ে যায়। সাধারণ গণিত এর থেকে বৈদিক গণিত পনেরশো শতাংশ দ্রুত, আর এর মাধ্যমে বাচ্চাদের মধ্যে প্রচুর আত্মবিশ্বাস আসে এবং মস্তিষ্কও দ্রুত কাজ করে। আমরা বৈদিক গণিতের পাশাপাশি যোগও শুরু করেছি, যাতে বাচ্চারা যদি চায় তাহলে চোখ বন্ধ করেও হিসেব কষতে পারে বৈদিক গণিতের মাধ্যমে।
মোদি জি- ধ্যানের যে পরম্পরা আছে তাতেও এভাবে অংক করা বিষয়ে একটি প্রাইমারি কোর্স রয়েছে।
গৌরব- রাইট স্যার।
মোদি জি- আচ্ছা গৌরব জি। আমার খুব ভালো লাগলো। আপনি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই কাজের দায়িত্বভার নিয়েছেন আর বিশেষ করে আপনার মা এক উত্তম গুরুর উদাহরণস্বরূপ আপনাকে এই পথে নিয়ে এসেছেন। আর আজ আপনি লক্ষ লক্ষ বাচ্চাদের সেই রাস্তায় নিয়ে চলেছেন। আমার তরফ থেকে আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
গৌরব- ধন্যবাদ স্যার। আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ স্যার কারণ আপনি বৈদিক গণিতের মাহাত্ম্যকে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং আমাকে বেছে নিয়েছেন। আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
মোদি জি- অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
গৌরব- নমস্কার স্যার।
বন্ধুরা গৌরব জি খুব সুন্দর ভাবে বললেন বৈদিক গণিত কিভাবে গণিতের সমস্যাকে মজাদার করে তুলতে পারে। শুধু তাই নয়, বৈদিক গণিতের মাধ্যমে আপনারা বিজ্ঞানের বড় বড় সমস্যার সমাধান করতে পারেন। আমি চাইব সব বাবা মা-রা নিজেদের সন্তানদের বৈদিক গণিত অবশ্যই শেখাবেন। তাতে ওদের আস্থা তো বাড়বেই, ব্রেনের অ্যানালিটিক্যাল পাওয়ারও বাড়বে। আর হ্যাঁ, গণিত নিয়ে কিছু বাচ্চার মধ্যে যেটুকু ভয় আছে সেই ভয়টুকুও পুরোপুরি কেটে যাবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ "মন কি বাতে" মিউজিয়াম থেকে শুরু করে গণিত পর্যন্ত অনেক জ্ঞানবর্ধক বিষয় নিয়ে আলোচনা হল। এইসব বিষয় আপনাদের পরামর্শ অনুসারেই ‘মন কি বাত’ এর অংশ হয়ে ওঠে। আমাকে আপনারা ভবিষ্যতেও এভাবেই আপনাদের পরামর্শ নমো অ্যাপ এবং মাই গভ এর মাধ্যমে পাঠাতে থাকবেন।
আগামী দিনে দেশে ঈদের উৎসব আসতে চলেছে। তেসরা মে অক্ষয় তৃতীয়া এবং ভগবান পরশুরাম এর জন্মতিথি উদযাপিত হবে। কিছুদিন পরেই বৈশাখ বুদ্ধ পূর্ণিমার উৎসব আসবে। এ সকল উৎসবই সংযম, পবিত্রতা, দান এবং সৌহার্দ্যের উৎসব। আপনাদের সবাইকে এই উৎসবগুলির অগ্রিম শুভকামনা জানাই। আপনারা এই উৎসবগুলি খুব আনন্দ ও সৌহার্দ্যের সঙ্গে উদযাপন করুন। এসবের মধ্যে আপনাদের করোনা থেকেও সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক পরা, নিয়মিত ব্যবধানে হাত ধোয়া, সুরক্ষার জন্য যা কিছু জরুরী সব কিছু আপনারা পালন করুন। আগামী "মন কি বাত" এ আমরা আবার মিলিত হব এবং আপনাদের পাঠানো আরও কিছু নতুন বিষয় সম্বন্ধে আলোচনা করব। ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাদের থেকে বিদায় নিচ্ছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। গত সপ্তাহে আমরা এমন এক সাফল্য অর্জন করলাম যা আমাদের সবাইকে গর্বিত করেছে। আপনারা হয়ত শুনেছেন যে ভারত গত সপ্তাহে চারশো বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৩০ লক্ষ কোটি টাকার রপ্তানীর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। প্রাথমিক ভাবে শুনে মনে হয় যে আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত একটা ব্যাপার, কিন্তু এটা আর্থিক ব্যবস্থার থেকেও বেশি, ভারতের সামর্থ্য, ভারতের সম্ভাবনার সঙ্গে যুক্ত বিষয়। এক সময় ভারত থেকে রপ্তানীর পরিমাণ কখনও একশো বিলিয়ন, কখনও দেড়শো বিলিয়ন, কখনও দু’শো বিলিয়ন হত, আর আজ, ভারত চারশো বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছে। এর একটা অর্থ হল যে ভারতে তৈরি জিনিসের চাহিদা বাড়ছে বিশ্বজুড়ে, দ্বিতীয় অর্থ হল যে ভারতের সরবরাহ শৃঙ্খল দিনে-দিনে শক্তিশালী হয়ে উঠছে আর এর একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও রয়েছে। দেশ, বড় পদক্ষেপ তখনই নেয় যখন স্বপ্নের থেকেও বড় হয়ে ওঠে সঙ্কল্প। যখন রাতদিন নিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্কল্পের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন সেই সঙ্কল্প বাস্তবায়িতও হয়, আর আপনারা দেখুন, কোনও ব্যক্তির জীবনেও তো এমনটাই হয়। যখন কারও সঙ্কল্প, তাঁর চেষ্টা , তাঁর স্বপ্নের থেকেও বড় হয়ে যায় তখন সফলতা নিজে পায়ে হেঁটে তাঁর কাছে আসে।
বন্ধুগণ, দেশের নানা কোণ থেকে নতুন-নতুন পণ্য এখন বিদেশে যাচ্ছে। অসমের হাইলাকান্দির চামড়ার তৈরি পণ্য হোক বা উসমানাবাদের তাঁতের পণ্য, বীজাপুরের ফল-সব্জি হোক বা চন্দৌলির ব্ল্যাক রাইস, সবকিছুর রপ্তানী বাড়ছে। এখন লাদাখের বিশ্বখ্যাত অ্যাপ্রিকট আপনি দুবাইতেও পাবেন আর সৌদি আরবে তামিলনাড়ুর থেকে পাঠানো কলা পাওয়া যাবে। এখন সবথেকে বড় কথা হল যে নতুন-নতুন পণ্য, নতুন-নতুন দেশে পাঠানো হচ্ছে। যেমন হিমাচল, উত্তরাখণ্ডে উৎপন্ন বাজরা জাতীয় মোটা দানার শস্যের প্রথম কিস্তি ডেনমার্কে রপ্তানী করা হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা আর চিত্তুর জেলার বঙ্গনপল্লী আর সুবর্ণরেখা আম দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানী করা হয়েছে। ত্রিপুরা থেকে তাজা কাঁঠাল আকাশপথে লণ্ডনে রপ্তানী করা হয়েছে, আরও কী, প্রথম বার নাগাল্যাণ্ডের রাজালঙ্কা লণ্ডনে পাঠানো হয়েছে। এইভাবেই ভালিয়া গমের প্রথম কিস্তি গুজরাত থেকে কেনিয়া আর শ্রীলঙ্কায় রপ্তানী করা হয়েছে। অর্থাৎ, এখন আপনি অন্য দেশে গেলে, আগের থেকে অনেক বেশি মেড ইন ইণ্ডিয়া পণ্য আপনার চোখে পড়বে।
বন্ধুগণ, এই তালিকা অনেক লম্বা আর যত লম্বা এই তালিকা, ততটাই বড়ো মেক ইন ইণ্ডিয়ার শক্তি, ততটাই বিরাট ভারতের সামর্থ্য, আর সামর্থ্যের ভিত্তি – আমাদের কৃষক, আমাদের কারিগর, আমাদের তন্তুবায় শিল্পী, আমাদের ইঞ্জিনীয়ার, আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, আমাদের অতি ক্ষুদ্র , ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পোদ্যোগ, বিভিন্ন পেশার অনেক মানুষ, এঁরা সব এর সত্যিকারের শক্তি। এঁদের পরিশ্রমেই চারশো বিলিয়ন ডলারের রপ্তানীর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে আর আমি খুশী যে ভারতের মানুষের এই সামর্থ্য বিশ্বের কোণায়-কোণায়, নতুন বাজারে পৌঁছচ্ছে। যখন এক-একজন ভারতবাসী লোকালের জন্য ভোকাল হন তখন লোকালের গ্লোবাল হতে দেরি হয় না। আসুন, আমরা স্থানীয় পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে নিয়ে যাই আর আমাদের উৎপাদিত বস্তুর খ্যাতি আরও বাড়াই।
বন্ধুরা, 'মন কি বাত'-এর শ্রোতাদের এটা জেনে ভালো লাগবে যে দেশীয় পর্যায়েও আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সাফল্য আমাদের গর্বিত করে। আজ আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সরকারি স্তরে ক্রয়-এর জন্য গভর্নমেন্ট ই-মার্কেট প্লেস অর্থাৎ জিইএম- এর বড় অংশীদার। প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। গত এক বছরে জিইএম পোর্টাল-এর মাধ্যমে সরকার, এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি কেনাকাটা করেছে। দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, ছোটো দোকানদার তাদের পণ্য সরাসরি সরকারের কাছে বিক্রি করেছে। একটা সময় ছিল যখন শুধুমাত্র বড় কোম্পানিগুলিই সরকারের কাছে পণ্য বিক্রি করতে সক্ষম হতো। কিন্তু এখন দেশ বদলাচ্ছে, পুরনো ব্যবস্থাও বদলাচ্ছে। এখন ছোটোর চেয়ে ছোট দোকানদাররাও তাদের পণ্য জিইএম পোর্টালের মাধ্যমে সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারে। এটাই নতুন ভারত। সে শুধু বড় স্বপ্নই দেখে না, সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর সাহসও দেখায়, যেখানে আগে কেউ আসেনি। এই সাহসের জোরেই আমরা ভারতীয়রা আত্ম নির্ভর ভারতের স্বপ্ন পূরণ করব।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সাম্প্রতিক পদ্ম পুরস্কার অনুষ্ঠানে আপনারা নিশ্চয়ই বাবা শিবানন্দজিকে দেখেছেন। ১২৬ বছর বয়সী প্রবীনের উচ্ছ্বাস দেখে আমার মতো সবাই নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন, আর আমি দেখলাম, কিভাবে এক নিমেষে তিনি নন্দী মুদ্রায় প্রণাম করতে লাগলেন। আমিও বাবা শিবানন্দজিকে নত হয়ে বারবার প্রণাম করলাম। ১২৬ বছর বয়সী বাবা শিবানন্দের বয়স এবং ফিটনেস, দুটোই, আজ দেশে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকের মন্তব্য দেখলাম, যে বাবা শিবানন্দ তাঁর বয়সের চেয়ে চার গুণ কম বয়সীদের চেয়েও ফিট। সত্যিই, বাবা শিবানন্দের জীবন আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে। আমি তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করছি। ওঁর মধ্যে যোগব্যায়ামের প্রতি একটা আলাদা আবেগ আছে এবং তিনি খুব স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন।
জীবেম শরদহ্ শতম্।
আমাদের সংস্কৃতিতে সকলকে সুস্থ জীবনসহ শতায়ু হওয়ার শুভকামনা প্রদান করা হয়। আমরা ৭ই এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করব। আজ সমগ্র বিশ্বে স্বাস্থ্য নিয়ে ভারতীয় চিন্তাধারা, সেটা যোগ হোক অথবা আয়ুর্বেদ, সব কিছুর প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে। আপনারা দেখেছেন যে গত সপ্তাহে কাতারে একটি যোগ অনুশীলনের কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছিল। এতে ১১৪টি দেশের নাগরিকরা অংশগ্রহণ করে নতুন ওয়ার্ল্ড রেকর্ড তৈরি করেছেন। এভাবেই আয়ুস শিল্পের বিপণন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ৬বছর আগে আয়ুর্বেদের সঙ্গে যুক্ত ওষুধের বাজার ২২,০০০ কোটি টাকার কাছাকাছি ছিল। এখন আয়ুষ উৎপাদন শিল্প প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে সম্ভাবনা অনবরত বেড়েই চলেছে। স্টার্ট আপসের দুনিয়াতেও আয়ুষ আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে।
বন্ধুরা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের অন্য স্টার্ট আপসের সম্বন্ধে তো আমি আগেও অনেকবার কথা বলেছি, কিন্তু এইবার আয়ুস স্টার্ট আপস নিয়ে আপনাদের সঙ্গে বিশেষভাবে কথা বলব। একটা স্টার্ট আপ রয়েছে যার নাম কপিভা। এই নামের মধ্যেই এর অর্থ লুকিয়ে রয়েছে - ক এর অর্থ কফ, পি এর অর্থ পিত্ত, এবং বা এর অর্থ বাত। এই স্টার্টআপ আমাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য গড়ে উঠেছে। আরেকটি স্টার্টআপ নিরোগ-স্ট্রীট রয়েছে, আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ব্যবস্থার এক আশ্চর্য ধারণা। এখানে প্রযুক্তি ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা সারা পৃথিবীর আয়ুর্বেদ ডাক্তারদের সরাসরি সাধারন মানুষদের সঙ্গে যুক্ত করে। ৫০ হাজারেরও বেশি চিকিৎসক এর সঙ্গে যুক্ত। এমনই আত্রেয় ইনোভেশন একটি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের প্রযুক্তি সংক্রান্ত স্টার্ট আপ যা সর্বাঙ্গীণ সুস্থতার জন্য কাজ করছে। ইক্সোরিয়েল কেবলমাত্র অশ্বগন্ধা প্রয়োগ নিয়েই সচেতনতা বৃদ্ধি করেনি বরং উন্নত গুণমানের পণ্যসামগ্রীর বিষয়েও বড় মাত্রা যোগ করেছে। কিওরভেদাও শেকড়-বাকড় এর আধুনিক প্রয়োগ এবং এ বিষয়ের ঐতিহ্য ও জ্ঞানের সমন্বয়ে সর্বাঙ্গীণ জীবনযাত্রা নিয়ে ডায়েটরি সাপ্লিমেন্টসের তৈরি করেছে।
বন্ধুরা, আমি মাত্র কয়েকটা নাম বললাম, এই লিস্ট আসলে অনেক লম্বা। এটি ভারতের তরুণ উদ্যম এবং ভারতে তৈরি নতুন সম্ভাবনার প্রতীক। আমার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নতুন শিল্পোদ্যোগ বা স্টার্ট-আপ্সের বিশেষতঃ আয়ুষ স্টার্ট-আপ্সের কাছে একটা অনুরোধ রয়েছে। আপনারা অনলাইনে যে কোনও পোর্টাল তৈরি করুন, যা কিছু বিষয়বস্তু রচনা করুন করুন, তা রাষ্ট্রসঙ্ঘের মান্যতা প্রাপ্ত সবকটি ভাষায় তৈরি করার চেষ্টা করুন। বিশ্বে এমন বহু দেশ রয়েছে যেখানে ইংরাজি না বিশেষ বলা হয়, না কেউ বিশেষ বোঝে। সেই সব দেশের কথা মাথায় রেখে আপনারা তথ্যের প্রচার-প্রসার করুন। আমার বিশ্বাস, ভারতের আয়ুষ স্টার্ট-আপ্সের উন্নত গুণমানের পণ্য খুব শীঘ্রই বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।
বন্ধুরা, স্বাস্থ্যের সঙ্গে স্বচ্ছতার সোজাসুজি সম্পর্ক রয়েছে। "মন কি বাত"-এ আমরা সবসময় স্বচ্ছতায় আগ্রহীদের বিভিন্ন প্রচেষ্টা সম্পর্কে বলি। এমনি একজন স্বচ্ছতাগ্রহী হলেন চন্দ্রকিশোর পাতিলজি। উনি মহারাষ্ট্রের নাসিকে থাকেন। চন্দ্রকিশোরজি স্বচ্ছতা সম্পর্কে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তিনি গোদাবরী নদীর তীরে দাঁড়িয়ে জনসাধারণকে নদীতে আবর্জনা না ফেলতে উদ্বুদ্ধ করেন। যদি কাউকে আবর্জনা ফেলতে দেখেন, তৎক্ষণাৎ তাকে বারণ করেন। এই কাজে চন্দ্রকিশোরজি নিজের অনেক সময় ব্যয় করেন। বিকেল অব্দি তাঁর কাছে স্তুপাকৃত আবর্জনার জমা হয়ে যায়, যা সবাই নদীর জলে ফেলার জন্য এনেছিল। চন্দ্রকিশোরজির এই প্রচেষ্টা, সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং অনুপ্রেরণাও যোগায়। এই রকম আরো একজন স্বচ্ছতাগ্রহী - উড়িষ্যার পুরীর রাহুল মহারাণা। রাহুল প্রতি রবিবার সকাল-সকাল পুরীতে তীর্থ ক্ষেত্র ঘুরে ঘুরে প্লাস্টিকের আবর্জনা পরিষ্কার করেন। উনি এখনো পর্যন্ত কয়েকশো কিলো প্লাস্টিকের আবর্জনা ও জঞ্জাল পরিষ্কার করেছেন। পুরীর রাহুল হোক বা নাসিকের চন্দ্রকিশোর, এঁরা সবাই আমাদের অনেক কিছু শেখান। নাগরিক হওয়ার দরুন আমরা আমাদের কর্তব্য পালন করি, তা সে স্বচ্ছতা হোক, পুষ্টি হোক, বা টিকাকরণ, এই সকল প্রয়াস আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এবারে বলবো কেরালার মুপত্তাম শ্রী নারায়ণনজী কথা। তিনি এক প্রকল্প শুরু করেছেন যার নাম - ‘পটস ফর ওয়াটার অফ লাইফ’. আপনি যখন এই প্রকল্প সম্পর্কে জানবেন তখন ভাববেন কি অসাধারণ এই কাজ।
বন্ধুরা, গ্রীষ্মকালে পশুপাখিরা যাতে পানীয় জলের অভাবে কষ্ট না পায় সেজন্য মূপট্টম শ্রী নারায়ণনজী মাটির পাত্র বিলি করার কাজ করে চলেছেন। গরমে তিনি পশুপাখিদের এই কষ্ট দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতেন। তখন তিনি ভাবলেন, কেমন হয় যদি নিজেই মাটির পাত্র বিলি করা শুরু করেন... তাহলে অন্তত অন্যদের জন্য শুধু সেই পাত্র গুলোয় কেবল জল ভরার কাজটিই পড়ে থাকে! আপনারা শুনলে অবাক হয়ে যাবেন, নারায়ণনজী যত মাটির পাত্র বন্টন করেছেন, তার সংখ্যা এক লক্ষের গন্ডী পার করতে চলেছে। তার এই অভিযানে, এক লক্ষ-তম পাত্রটি তিনি গান্ধীজী স্থাপিত সবরমতী আশ্রমে প্রদান করবেন। ঠিক এই সময়, যখন গ্রীষ্মের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে, তখন নারায়ণনজী'র এই কাজ আমাদের সকলকে নিশ্চয়ই অনুপ্রাণিত করবে, এবং আমরাও এই গ্রীষ্মে পশুপাখি বন্ধুদের জন্য জলের ব্যবস্থা করব!
বন্ধুরা, আমি মন-কী-বাত অনুষ্ঠানের শ্রোতাদেরও অনুরোধ করবো, আমরা যেন সেই প্রতিজ্ঞা অবশ্যই পালন করি। পানীয় জলের প্রতিটি বিন্দু সংরক্ষণের জন্য আমরা যা কিছু করতে পারি তা যেন অবশ্যই করি। তাছাড়া, জলের পুনর্ব্যবহারের বিষয়েও আমাদের সমান গুরুত্ব দিতে হবে। গৃহস্থালির ব্যবহার করা জল ধোয়ার কাজে এবং বাগানে জল দেবার কাজে পুনরায় ব্যবহার করা উচিত। সামান্য চেষ্টা করলেই আপনি আপনার বাড়িতেই এমন ব্যবস্থা করে নিতে পারবেন। রহীম দাসজী বহু যুগ আগে হয়তো সেই উদ্দেশ্যেই বলে গিয়েছিলেন - "রহিমান পানি রাখিয়ে, বিন পানি সব শূন" অর্থাৎ এই বলে রহিম জী জলের মাহাত্য বোঝাতে চেয়েছিলেন। কারণ জল ছাড়া সবকিছুই বৃথা। জল সংরক্ষণের এই কাজে আমি ছোট্ট বন্ধুদের কাছে অনেক বেশি প্রত্যাশা করি। স্বচ্ছতাকে যেভাবে আমাদের ছোট্ট ছোট্ট বন্ধুরা জন-আন্দোলনে পরিণত করেছে, ঠিক সেভাবেই ওয়াটার ওয়ারিয়র হয়ে তারা জল সংরক্ষণেও সহায়তা করতে পারে।
বন্ধুরা, চিরকালই আমাদের দেশে পানীয় জলের সংরক্ষণ ও জলের উৎস গুলির সুরক্ষা করা আমাদের সামাজিক উদ্যোগের একটা অংশ। আমি আনন্দিত যে আমাদের দেশে অনেকেই জল সংরক্ষণকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে গ্রহণ করেছেন করে। যেমন চেন্নাইয়ের এক বন্ধু অরুণ কৃষ্ণমূর্তি জী। অরুন জী, তার এলাকায় পুকুর ও দীঘিগুলি পরিষ্কার রাখার কাজ করে চলেছেন। উনি দেড়শোর-ও বেশী দিঘি ও পুকুর পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, এবং তা সাফল্যের সঙ্গে পূর্ণও করেছেন। ঠিক সেরকমই মহারাষ্ট্রের এক বন্ধু রোহন কালে। রোহন পেশাগতভাবে একজন এইচআর প্রোফেশনাল। তিনি মহারাষ্ট্রের শত শত স্টেপওয়েলস অর্থাৎ সিঁড়ি যুক্ত পুরনো জলুকুপগুলির সংরক্ষণের প্রচার চালাচ্ছেন। এগুলোর মধ্যে অনেক কুয়োই বহু প্রাচীন, এবং আমাদের পরম্পরার একটা অংশ।
সিকান্দ্রাবাদের বংশী লাল পেট কুঁয়ো এরকমই একটি step well। বহু বছর উপেক্ষিত থাকার ফলে এই স্টেপ ওয়েল মাটি আর আবর্জনায় ভরে গেছিল। কিন্তু এখন এই স্টেপ ওয়েল-কে পুনরুজ্জীবিত করার অভিযান জন অংশীদারির মাধ্যমে শুরু হয়েছে।
বন্ধুরা, আমি তো সেই রাজ্য থেকে এসেছি, যেখানে সবসময়ই জলের ঘাটতি থাকে। গুজরাতে এই স্টেপ ওয়েল-কে ভাভ বলা হয়। গুজরাতের মতো রাজ্যে ভাভের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কুঁয়ো বা বাউড়ি সংরক্ষণে 'জল মন্দির যোজনা' একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। পুরো গুজরাটে অনেক বাউড়িকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। এর ফলে এই এলাকায় জলস্তর বৃদ্ধিতেও সাহায্য হয়েছে। এরকমই অভিযান আপনারা স্থানীয় স্তরেও চালাতে পারেন। চেক ড্যাম বানানো হোক বা বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই সমষ্টিগত প্রচেষ্টারও প্রয়োজন আছে। যেরকম স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে আমাদের দেশের প্রত্যেক জেলায় অন্তত ৭৫টি অমৃত সরোবর বানানো যেতে পারে। কিছু পুরানো সরোবরকে সংস্কার করা যেতে পারে আর কিছু নতুন সরোবরও বানানো যেতে পারে। আমার বিশ্বাস আপনারা এই লক্ষ্যে কিছু না কিছু উদ্যোগ নিশ্চয়ই নেবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী 'মন কি বাত'-এর একটা সৌন্দর্য এটাও যে এখানে আমি আপনাদের বার্তা বিভিন্ন ভাষায় ও বিভিন্ন উপভাষায় পাই। অনেকে মাইগভে অডিও মেসেজও পাঠান। ভারতের সংস্কৃতি, আমাদের ভাষা, আমাদের উপভাষা, আমাদের থাকা-খাওয়ার অভ্যাস, এইসব বিবিধতা আমাদের অনেক বড় শক্তি। পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত ভারতের এই বিবিধতা ভারতকে এক করে রেখেছে, 'এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত' বানিয়েছে। আর এতেও আমাদের ঐতিহাসিক স্থান আর পৌরাণিক কাহিনী উভয়েরই ভূমিকা আছে। আপনি ভাবছেন এই কথাগুলো আমি এখন আপনাদের কেন বলছি। এর কারণ হলো মাধবপুর মেলা। মাধবপুর মেলা কোথায় বসে, কেন বসে, কিভাবে এটি ভারতের বিবিধতার সঙ্গে জড়িত এটা জানতে শ্রোতাদের খুব আকর্ষণীয় লাগবে।
বন্ধুরা, মাধবপুর মেলা গুজরাটের পোরবন্দরে সমুদ্রতটে অবস্থিত মাধবপুর গ্রামে হয়। কিন্তু এই মেলার সঙ্গে ভারতের পূর্বভাগেরও সম্পর্ক রয়েছে। আপনারা ভাবছেন এও কী করে সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তরও পুরাণের এক আখ্যানে পাওয়া যায় কথিত আছে হাজার-হাজার বছর আগে, ভগবান শ্রী কৃষ্ণের বিবাহ উত্তরপূর্বের রাজকুমারী রুক্মিণীর সঙ্গে হয়েছিল। এই বিবাহ পোরবন্দরের মাধবপুর গ্রামে সম্পন্ন হয়েছিল আর সেই বিবাহের প্রতীক হিসেবে আজও ওই জায়গায় মাধবপুর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব আর পশ্চিমের এই গভীর সম্পর্ক আমাদের ঐতিহ্য। সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে এবং মানুষের প্রয়াসে এখন মাধবপুরের মেলায় নতুন-নতুন জিনিস যুক্ত হচ্ছে।
আমাদের এখানে কন্যা পক্ষকে ঘরাতি বলে এবং আজকাল এই মেলার সময় উত্তরপূর্ব থেকে বহু ঘরাতি আসছেন। এক সপ্তাহ ধরে চলা এই মেলায় এখন উত্তরপূর্ব অঞ্চলের সব রাজ্য থেকে শিল্পী আসেন, হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত বহু শিল্পী আসেন এবং এই মেলাকে আরও উজ্জ্বল করে তোলেন।
এক সপ্তাহ ধরে চলা এই মাধবপুর মেলায় পশ্চিম ও পূর্বের সংস্কৃতির অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটে এবং এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের এক অপরুপ নিদর্শন হয়ে ওঠে এই মেলা। আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি এই মেলার সম্বন্ধে পড়ুন ও জানুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দেশে চলা আজাদী কী অমৃত মহোৎসব জনসাধারণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুন্দর নিদর্শন হয়ে উঠছে। কিছুদিন আগে ২৩শে মার্চ শহীদ দিবসের দিন দেশের ভিন্ন-ভিন্ন অংশে বহু অনুষ্ঠান হয়। আমাদের দেশ স্বাধীনতার নায়ক-নায়িকাদের শ্রদ্ধাপূর্বক স্মরণ করে ওই দিন। ওই দিনই কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বিপ্লবী ভারত গ্যালারি জনসাধারণের জন্য উৎসর্গ করার সুযোগ হয় আমার।
ভারতের বীর বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা অর্পণের জন্য সৃষ্ট এটি একটি বিশেষ গ্যালারি। সময় পেলে অবশ্যই এই গ্যালারিটি দেখতে যাবেন আপনারা। বন্ধুরা এপ্রিল মাসে আমরা দু’জন বিখ্যাত মানুষের জন্মবার্ষিকী পালন করব। এঁরা দুজনেই ভারতীয় সমাজের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিলেন। এই দু’জন মহতি হলেন মহাত্মা ফুলে এবং বাবাসাহেব আম্বেদকর। মহাত্মা ফুলের জন্ম জয়ন্তী ১১ই এপ্রিল এবং বাবাসাহেবের জন্মজয়ন্তী আমরা ১৪ই এপ্রিল পালন করব। এই দুই মহাপুরুষ ভেদাভেদ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিশাল সংগ্রাম করেন। মহাত্মা ফুলে ওই সময়ে মেয়েদের জন্য স্কুল খোলেন, কন্যা শিশু হত্যার বিরুদ্ধাচরণ করেন। তিনি জলসঙ্কট থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যও বড় অভিযান চালান।
বন্ধুগণ, মহাত্মা ফুলের বিষয়ে আলোচনার সময় সাবিত্রী বাই ফুলের উল্লেখ করাও জরুরী। সাবিত্রী বাই ফুলে বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার নির্মাণে বড়ো ভূমিকা পালন করেছিলেন। একজন শিক্ষিকা এবং একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবে উনি সমাজে চেতনা সৃষ্টি করেছিলেন এবং সাহসও জুগিয়েছিলেন। দুজনে মিলে সত্যশোধক সমাজের প্রতিষ্ঠা করেন। মানুষের ক্ষমতায়নের চেষ্টা করেন। আমরা বাবা সাহেব আম্বেদকরের কাজেও মহাত্মা ফুলের প্রভাব পরিষ্কার দেখতে পাই। উনি বলতেন কোনো সমাজের বিকাশের মূল্যায়ন সেই সমাজের মহিলাদের অবস্থা দেখে বোঝা যায়। মহাত্মা ফুলে, সাবিত্রী বাই ফুলে, বাবা সাহেব আম্বেদকরের জীবন থেকে প্রেরণা নিয়ে আমি প্রত্যেক মা-বাবা, অভিভাবকদের অনুরোধ করছি যে তাঁরা যেন মেয়েদের অবশ্যই শিক্ষিত করেন। মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করানোর সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য কিছুদিন আগেই কন্যা শিক্ষা প্রবেশ উৎসব শুরু করা হয়েছে, যে মেয়ের পড়াশোনা কোনো কারণে মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের দ্বিতীয়বার স্কুলে ভর্তি করানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বন্ধুরা, এটা আমাদের সকলের জন্য সৌভাগ্যের কথা যে বাবা সাহেবের সঙ্গে জুড়ে থাকা পাঁচটি তীর্থস্থানের জন্য কাজ করার সুযোগ পাওয়া গেছে। ওঁর জন্মস্থান মহু হোক, মুম্বাইতে চৈত্যভূমি হোক, লন্ডনে ওঁর বাড়ী হোক, নাগপুরে দীক্ষাভূমি হোক বা দিল্লিতে মহাপরিনির্বান স্থল, আমার সব স্থানগুলিতে, সব তীর্থস্থানগুলিতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। আমি মন কি বাতের শ্রোতাদের কাছে অনুরোধ করবো যে তাঁরা যেন মহাত্মা ফুলে, সাবিত্রী বাই ফুলে, বাবা সাহেব আম্বেদকরের সঙ্গে জুড়ে থাকা সবকটি জায়গা দর্শন করেন। আপনার সেখানে অনেক কিছু শেখার বিষয় পাবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাত অনুষ্ঠানে এইবারেও অনেক বিষয়ে কথা বললাম। আগামী মাসে অনেক উৎসব আসছে। কিছুদিন বাদেই নবরাত্রি আসছে। নবরাত্রিতে আমরা ব্রত-উপবাস, শক্তির আরাধনা করি, শক্তির পূজা করি, অর্থাৎ আমাদের সংস্কার আমাদের আনন্দ করতে শেখায় আবার নিয়ন্ত্রণ করতেও শেখায়। দৃঢ়তা এবং তপস্যা আমাদের কাছে উৎসবই, সেইজন্য নবরাত্রি আমাদের সবার কাছে খুবই বিশেষ পার্বণ। নবরাত্রির প্রথম দিনই গুড়িপাড়োয়া উৎসব আছে। এপ্রিল মাসেই ইস্টারও আছে আবার রমজানের পবিত্র দিনও শুরু হচ্ছে। আমরা সকলকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের উৎসব পালন করবো, ভারতের বৈচিত্রকে আরও শক্তিশালী করবো। সবার এটাই কামনা। এইবারে মন কি বাতে এইটুকুই। আগামী মাসে আপনাদের সঙ্গে নতুন বিষয়ে কথা বলবো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, নমস্কার। 'মন কি বাত'- এ আপনাদের সকলকে আরও একবার স্বাগত জানাই। আজ আমরা 'মন কি বাত' শুরু করব ভারতের সাফল্যের বিষয় উল্লেখ করে। এই মাসের শুরুতে, ভারত ইটালি থেকে নিজের এক বহুমূল্য ঐতিহ্য ফেরত আনতে সফল হয়েছে। এই ঐতিহ্য হলো অবলোকিতেশ্বর পদ্মপাণির হাজার বছরের থেকেও বেশি পুরনো এক মূর্তি। কয়েক বছর আগে এই মূর্তিটি বিহারের গয়াজী দেবীর স্থান কুন্ডলপুর মন্দির থেকে চুরি হয়েছিল। কিন্তু অনেক চেষ্টার পর ভারত এই মূর্তিটি ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। একইভাবে কয়েক বছর আগে তামিলনাড়ুর ভেলোর থেকে ভগবান অঞ্জনেয়ার হনুমানজীর মূর্তি চুরি হয়েছিল। হনুমানজীর এই মূর্তিটিও ৬০০-৭০০ বছরের পুরনো ছিল। এই মাসের শুরুতে অস্ট্রেলিয়াতে আমরা এটি পেয়েছি। আমাদের মিশন এটি পেয়েছে।
বন্ধুরা, হাজার হাজার বছরের আমাদের ইতিহাসে, দেশের কোণে কোণে, একের পর এক মূর্তি সর্বদাই তৈরি হতো, তাতে শ্রদ্ধা ছিল, শক্তি ছিল, দক্ষতা ছিল এবং তা ছিল বৈচিত্র্যে ভরপুর । আমাদের প্রতিটি মূর্তির ইতিহাসে তৎকালীন সময়ের প্রভাব স্পষ্ট ছিল। এগুলি ভারতীয় ভাস্কর্যের এক অপূর্ব নিদর্শন তো ছিলই, তাদের প্রতি আমাদের বিশ্বাসও যুক্ত ছিল। কিন্তু অতীতে অনেক মূর্তি চুরি করে ভারতের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কখনও এদেশে, কখনো ওদেশে এসব মূর্তি বিক্রি হতো এবং তাদের কাছে সেগুলো ছিল শুধুই শিল্পকর্ম। বিশ্বাস বা ইতিহাসের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক ছিল না। ভারতমাতার প্রতি আমাদের দায়িত্ব হল এই মূর্তি গুলো ফিরিয়ে আনা। এই মূর্তিগুলিতে ভারতের আত্মা আছে, বিশ্বাসের অংশ আছে। তাদের সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে। এই দায়িত্বের কথা উপলব্ধি করে ভারত নিজের উদ্যোগ বৃদ্ধি করে। এর ফলে , চুরি করার প্রবৃত্তি যাদের মধ্যে ছিল, তাদের মধ্যে এক ভয় জন্ম নেয়। যেসব দেশে এই মূর্তিগুলি চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তারাও এখন মনে করতে শুরু করেছে যে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোমল শক্তির যে কূটনৈতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে, সেখানেও মূর্তিগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ, এর সঙ্গে ভারতের অনুভূতি জড়িত, ভারতের শ্রদ্ধা যুক্ত। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে। এই কিছুদিন আগেও আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন, কাশি থেকে চুরি হয়ে যাওয়া মা অন্নপূর্ণা দেবীর মূর্তিও ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এটি ভারতের প্রতি বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের একটি উদাহরণ। ২০১৩ সাল পর্যন্ত মোটামুটি ১৩টি প্রতিমা ভারতে ফিরে এসেছিল। কিন্তু গত সাত বছরে ভারত সাফল্যের সাথে ২০০টিরও বেশি মূল্যবান মূর্তি ফিরিয়ে এনেছে। আমেরিকা, বৃটেন হল্যান্ড, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, এরকম অনেক দেশ ভারতের এই আবেগ বুঝতে পেরেছে এবং মূর্তিগুলোকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে যখন আমি আমেরিকায় গিয়েছিলাম, তখন সেখানে অনেক পুরোনো মূর্তি এবং সাংস্কৃতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস পেয়েছিলাম। দেশের কোনো মূল্যবান ঐতিহ্য যখন দেশে ফেরত আসে, তখন ইতিহাসের প্রতি যারা শ্রদ্ধাশীল, প্রত্নতত্ত্বের প্রতি যাঁদের আস্থা রয়েছে, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা এবং সর্বোপরি একজন ভারতীয় হিসেবে আমাদের সকলের সন্তুষ্টি খুবই স্বাভাবিক।
বন্ধুরা, ভারতীয় সংস্কৃতি এবং আমাদের ঐতিহ্যের কথা বলতে গিয়ে আমি আজ আপনাদের মন কি বাত অনুষ্ঠানে দু’জন লোকের কথা শোনাতে চাই। কয়েকদিন ধরে ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামে তানজানিয়ার দুই ভাই-বোন কিলি পল এবং তার বোন নীমাকে নিয়ে নানান কথাবার্তা হচ্ছে, আর আমার বিশ্বাস আপনারাও ওঁদের কথা অবশ্যই শুনেছেন। ওঁদের মধ্যে ভারতীয় সঙ্গীত নিয়ে বিশেষ উন্মাদনা রয়েছে, ভালোবাসা রয়েছে আর তাই ওঁরা ভীষণভাবেই জনপ্রিয়। ওঁদের যথাযথভাবে ঠোঁট নাড়ানো দেখে বোঝা যায় যে ওঁরা এই বিষয়টার জন্য কতটা পরিশ্রম করেন। কিছুদিন আগেই সাধারণতন্ত্র দিবসে আমাদের জাতীয় সংগীত 'জণ গণ মন' গাওয়ার সময় ওদের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। কয়েকদিন আগেই ওঁরা লতা দিদির একটি গান গেয়ে তাঁকে আবেগপ্রবণ শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছেন, আমি এই অদ্ভুত সৃজনশীলতার জন্য এই দু’জন ভাই-বোন কিলি আর নীমা - দু'জনকেই ভীষণভাবে প্রশংসাসূচক দৃষ্টিতে দেখি। কয়েকদিন আগে তানজানিয়ায় ভারতীয় দূতাবাসে এঁদের বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। ভারতীয় সংগীতের জাদু এমনই যে সবাইকে তা আকৃষ্ট করে। আমার মনে আছে কয়েক বছর আগে দেড়শোর থেকেও বেশি দেশে গায়ক-গায়িকা এবং সঙ্গীতজ্ঞরা নিজেদের দেশে নিজেদের পোশাকে পরম পূজনীয় বাপুর প্রিয় অর্থাৎ মহাত্মা গান্ধীর প্রিয় ভজন 'বৈষ্ণব জন' গাওয়ার সফল চেষ্টা করেছেন।
আজ যখন ভারত নিজের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকীর মতো গুরুত্বপূর্ণ উৎসব উদযাপন করছে, তখন দেশভক্তির গান নিয়েও এমন উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এখন বিদেশি নাগরিকরা সেখানকার বিখ্যাত গায়কদের ভারতের দেশভক্তির গান গাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। শুধু এটাই নয়, যদি তানজানিয়ায় কিলি আর নীমা ভারতের গান এভাবে লিপ-সিংক করে গাইতে পারে তাহলে আমার দেশে আমাদের দেশের অনেক ভাষায় এমন অনেক গান আছে, যা নিয়ে আমরাও এমন চেষ্টা করতে পারি। কোন গুজরাতি শিশু তামিল সংগীতের উপর করতে পারে, কোন কেরলের শিশু আসামের সংগীতের উপর করতে পারে, আবার কোন কন্নড় শিশু জম্মু-কাশ্মীরের গানের উপর করতে পারে। একটা এমন পরিবেশ আমরা তৈরি করতে পারি আমরা যেখানে ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-কে অনুভব করতে পারব। শুধু তাই নয় আমরা ‘আজাদী কা অমৃত মহোৎসবকে’ এরকম নতুন ভাবে পালন করতে পারি। আমি দেশের যুবক-যুবতীদের আহ্বান জানাচ্ছি যে আসুন ভারতীয় ভাষায় যেসব জনপ্রিয় গান রয়েছে আপনারা নিজেদের মতন করে তার ভিডিও বানান, আপনারাও জনপ্রিয় হবেন। আর দেশের বৈচিত্র্যের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের পরিচয়ও হবে ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই কয়েকদিন আগেই আমরা মাতৃভাষা দিবস পালন করেছি। বিদ্বান মানুষেরা মাতৃভাষা শব্দ কোথা থেকে এসেছে, কেমনভাবে এই শব্দের উৎপত্তি হয়েছে তা নিয়ে অনেক একাডেমিক শিক্ষামূলক তথ্য দিতে পারেন। আমি তো মাতৃভাষার জন্য এটাই বলতে পারি যেভাবে আমাদের জীবনকে যেভাবে আমাদের মা গড়ে দেয়, মাতৃভাষাও সেভাবেই আমাদের জীবনকে তৈরি করে। মা আর মাতৃভাষা দুইয়ে মিলেই জীবনের ভিত্তি মজবুত করে, তাকে চিরন্তন রাখে। যেমন আমরা আমাদের মাকে কখনোই ছাড়তে পারি না তেমন ভাবেই নিজের মাতৃভাষাকেও ছাড়তে পারিনা। আমার অনেক বছর আগের এক কথা মনে পড়ছে, আমি যখন আমেরিকা যাচ্ছিলাম, আলাদা আলাদা পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলাম, একবার এক তেলুগু পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম আমি, সেখানে খুব খুশির এক দৃশ্য দেখেছিলাম। সেই পরিবারের একজন আমায় বলেছিল যে তাঁরা তাঁদের পরিবারের মধ্যে একটি নিয়ম তৈরি করেছেন যে যতই কাজ থাকুক, তারা যদি শহরের বাইরে না থাকেন তাহলে পরিবারের সকল সদস্য ডিনার টেবিলে বসে একসঙ্গে রাতের খাবার খাবেন আর ডিনার টেবিলে অবশ্যই সকলে তেলুগু ভাষায় কথা বলবেন।
যে বাচ্চারা ওখানে জন্মেছিল, তাদের জন্যও এই নিয়ম বাধ্যতামূলক ছিল। নিজের মাতৃভাষার প্রতি এই পরিবারের প্রেম দেখে আমি খুবই প্রভাবিত হয়েছি।
বন্ধুরা, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও কিছু মানুষ এক মানসিক দ্বন্দ্বে ভোগেন, যার কারণে তারা নিজেদের ভাষা, পোশাক-আসাক, খাদ্যাভ্যাস নিয়ে সংকোচ বোধ করেন। এমনটা বিশ্বে আর কোথাও নেই। আমাদের গর্বের সঙ্গে নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলা উচিৎ। আর ভাষার ব্যাপারে ভারত এত সমৃদ্ধ যে পৃথিবীতে এর তুলনাই নেই আর। আমাদের ভাষা গুলির সৌন্দর্য হল- কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত, কচ্ছ থেকে কোহিমা পর্যন্ত, শত ভাষা, হাজার বুলি একে অন্যের থেকে একদম আলাদা হয়েও কোথাও গিয়ে ভাবাদর্শে এক। ভাষা অনেক, ভাব এক। বহু বছর ধরে আমাদের ভাষাগুলি একে অন্যের থেকে শিখে আসছে, একে অপরকে সমৃদ্ধ করেছে, একে অপরের বিকাশে সহায়ক হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ভাষা - তামিল আর ভারতীয় হিসেবে আমাদের গর্ব হওয়া উচিৎ যে আমাদের কাছে এরকম এক ঐতিহ্য আছে। এভাবেই যত পুরানো ধর্মশাস্ত্রগুলি আছে, তার অভিব্যক্তিও আমাদের সংস্কৃত ভাষায় আছে। ভারতবাসী প্রায় ১২১ কোটি। অর্থাৎ এটা গর্বের বিষয় যে ১২১ রকমের মাতৃভাষা এই দেশে রয়েছে। আর এর মধ্যে ১৪টি এমন ভাষা আছে, যাতে অন্তত এক কোটি মানুষ রোজ কথা বলেন, ব্যবহার করেন; অর্থাৎ, অনেক ইউরোপীয় দেশের জনসংখ্যা এক কোটিরও কম, তার চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ এই ১৪টি ভাষার সাথে যুক্ত। ২০১৯-এ হিন্দি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষাগুলির মধ্যে তৃতীয় স্থানে ছিল। ভারতীয়দের এই বিষয়ে গর্ব হওয়া উচিৎ। ভাষা কেবল অভিব্যক্তি প্রকাশের এক মাধ্যম নয়, ভাষা সমাজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বাচিঁয়ে রাখে। নিজের ভাষার ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছেন সুরিনামের সুরজন পরোহিজি। এই মাসের ২ তারিখে ওঁর ৮৪ বছর বয়স হল। ওঁর পূর্ব পুরুষরা বহু বছর আগে, রুজিরোজগারের খোঁজে হাজারো শ্রমিকদের সাথে সুরিনাম গিয়েছিলেন। সুরজন পরোহিজি হিন্দিতে চমৎকার কবিতা লেখেন। ওঁকে ওখানকার জাতীয় কবিদের মধ্যে গন্য করা হয়। আজও ওঁর ভারতের প্রতি ভালবাসা অটুট, মাটির টান বিদ্যমান। সুরিনামের লোকেরা সুরজন পরোহিজির নামে একটি সংগ্রহশালাও বানিয়েছেন। আমার জন্য একটি খুবই আনন্দের মূহুর্ত ছিল যখন আমি ২০১৫-তে ওঁকে সম্মানিত করার সুযোগ পাই।
বন্ধুরা, আজকে, অর্থাৎ ২৭শে ফেব্রুয়ারী মারাঠি ভাষা গৌরব দিবস।
সর্ব মারাঠী বন্ধু, ভগিনিনা মারাঠি ভাষা, দিনাচ্চা হার্দিক শুভেচ্ছা।
"সব মারাঠি বন্ধু, বোনেদের মারাঠি ভাষা দিবসের শুভেচ্ছা।"
মারাঠি কবিরাজ, বিষ্ণু বামন শীরওয়াডাকার জি, শ্রীমান কুসুমাগ্রজজি কে আজ শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।
আজ কুসুমাগ্রজজির জন্ম দিন। কুসুমাগ্রজজি মারাঠি ভাষায় কবিতা লিখেছেন, অনেক নাটক লিখেছেন, মারাঠি সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন।
বন্ধুরা, আমাদের ভাষার নিজস্ব গুণ রয়েছে, মাতৃভাষার নিজস্ব বিজ্ঞান রয়েছে। সেই বিজ্ঞানকে বুঝেই জাতীয় শিক্ষানীতিতে স্থানীয় ভাষায় পড়াশোনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রফেশনাল কোর্সগুলোও যেন স্থানীয় ভাষায় পড়ানো হয়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার অমৃতকালে আমাদের সকলের এক সঙ্গে এই উদ্যোগকে আরও ত্বরান্বিত করা উচিত, এ কাজ আমাদের আত্মমর্যাদার। আমি চাই, আপনার মাতৃভাষা যাই হোক না কেন, তার গুণাবলী সম্পর্কে অবশ্যই কিছু জানুন এবং কিছু অন্তত লিখুন।
বন্ধুরা, কয়েকদিন আগে আমার বন্ধু এবং কেনিয়ার পূর্ব প্রধানমন্ত্রী রাইলা ওডিঙ্গাজির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। এই বৈঠক চিত্তাকর্ষক কিন্তু বেশ আবেগপূর্ণ ছিল। আমরা যেহেতু খুব ভালো বন্ধু, তাই একে অপরকে মনের কথাও খোলাখুলিভাবে বলতে পারি। যখন আমরা কথা বলছিলাম, ওডিঙ্গাজি তাঁর মেয়ের কথা বললেন। তাঁর মেয়ে রোজমেরির ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে এবং সেই জন্য উনি তাঁর মেয়ের অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন। কিন্তু, এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় রোজমেরির দৃষ্টিশক্তি প্রায় চলে গিয়েছিল, তিনি প্রায় কিছুই দেখতে পেতেন না। এবার আপনি কল্পনা করতে পারেন যে মেয়েটির কী দুরবস্থা হয়েছিল এবং আমরাও অনুমান করতে পারি একজন বাবার জন্যে তা কতটা কষ্টকর পরিস্থিতি, তা আমরা অনুভব করতে পারি। তিনি তাঁর মেয়ের চিকিৎসার জন্য বিশ্বের সমস্ত হাসপাতালে চেষ্টা করেছেন, বিশ্বের এমন কোন বড় দেশ নেই, যেখানে তিনি তাঁর মেয়ের চিকিৎসার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেননি। বিশ্বের বড় বড় দেশে খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সাফল্য না পেয়ে একপ্রকার তিনি সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন, তাঁর বাড়িতে তখন হতাশার পরিবেশ। এই সময় কেউ তাঁকে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার জন্য ভারতে আসার পরামর্শ দিয়েছিলেন। যদিও তিনি মেয়ের জন্য অনেক কিছু করেছেন, ক্লান্ত ছিলেন, তবুও তিনি ভাবলেন দেখাই যাক একবার চেষ্টা করে, কি হয়? তিনি ভারতে আসেন, কেরালার একটি আয়ুর্বেদিক হাসপাতালে তাঁর মেয়ের চিকিৎসা করাতে শুরু করেন। তাঁর মেয়ে এখানে অনেকদিন থেকেছে। আয়ুর্বেদের এই চিকিৎসার প্রভাবে রোজমেরির দৃষ্টিশক্তি অনেকাংশে ফিরে আসে। আপনি কল্পনা করতে পারেন, যেন আবার নতুনকরে প্রাণের সঞ্চার হল, রোজমেরির জীবনে আলো ফিরে এলো। সম্পূর্ন পরিবারও যেন নতুন আলো নতুন জীবন ফিরে পেল। ওডিঙ্গাজি আমাকে আবেগপূর্ণ হয়ে বলেছিলেন তাঁর ইচ্ছা ভারতের আয়ুর্বেদের জ্ঞান, এই মহার্ঘ্য বিজ্ঞান, তিনি কেনিয়াতে নিয়ে যেতে চান। এতে যে ধরনের গাছপালা ব্যবহার করা হয় উনি সেইসব গাছের চাষ করবেন এবং আরও বেশি মানুষ যেন এর থেকে উপকৃত হয় তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।
এটা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয় আমাদের দেশ ও ঐতিহ্য একজনের জীবনে সীমাহীন এক কষ্ট দূর করতে সাহায্য করেছে। এটা শুনে আপনিও খুশি হবেন। এমন কোন ভারতীয় আছেন যে গর্বিত হবে না? আমরা সবাই জানি যে শুধু ওডিঙ্গাজিই নয়, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ আয়ুর্বেদ থেকে অনুরূপ উপকৃত হচ্ছেন। আয়ুর্বেদের অতি বড় প্রশংসাকারীর মধ্যে ব্রিটেনের প্রিন্স চার্লস'ও একজন! আমার সঙ্গে যখনই তাঁর দেখা হয়, তখনই তিনি আয়ুর্বেদ প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি ভারতের বহু আয়ুর্বেদিক সংস্থার খবর-ও রাখেন!
বন্ধুরা, গত সাত বছরে, আমাদের দেশে আয়ুর্বেদের প্রচার এবং সম্প্রসারণের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আমাদের ঐতিহ্যবাহী চিরাচরিত স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থাকে জনপ্রিয় করার যে সংকল্প, তা আরো সুদৃঢ় হয়েছে আয়ুষ মন্ত্রালয় গঠন হওয়ায়। আমি অত্যন্ত আনন্দিত কারণ সাম্প্রতিক অতীতে আয়ুর্বেদিক ক্ষেত্রেও বেশ কিছু নতুন স্টার্টআপ সামনে এসেছে। এ মাসের শুরুতে, আয়ুস স্টার্টআপ চ্যালেঞ্জ শুরু হয়েছিল। এই চ্যালেঞ্জের উদ্দেশ্য ছিল এই ক্ষেত্রে কর্মরত স্টার্টআপ গুলোকে চিহ্নিত করে, তাদের সাহায্য দেওয়া। যে সমস্ত যুবক-যুবতী বন্ধুরা এ বিষয়ে কাজ করছেন তাদের কাছে আমার আবেদন, তারা যেন এই চ্যালেঞ্জে অবশ্যই অংশগ্রহণ করেন।
বন্ধুরা, একবার যখন সকলে মিলে কিছু করার সংকল্প নেয় তখন অসাধ্য সাধন-ও সম্ভব হয়। সমাজে এমন অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে, যেখানে জনসাধারনের অংশগ্রহণ ও সমষ্টিগত প্রচেষ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। কাশ্মীরের শ্রীনগরে, "মিশন জল থল" নামে এমনই এক জন-আন্দোলন চলছে। এটি শ্রীনগরের হ্রদ ও জলাশয় গুলিকে পরিষ্কার করা ও পুরনো আকর্ষণ ফিরিয়ে আনার এক অনন্য প্রচেষ্টা। মিশন জল থল"-এ "কুশল সার" এবং " গিল সার"-কে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এখানে জনসাধারণের অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রযুক্তিরও অনেক সাহায্য নে য়া হচ্ছে। কোথায় কোথায় বেদখল হয়েছে, কোথায় অবৈধ নির্মাণ হয়েছে তা খুঁজে বার করতে এই এলাকার সমীক্ষাও করা হয়েছে। তার সঙ্গেই আবর্জনা পরিষ্কার ও প্লাস্টিক বর্জ্য সরানোর অভিযানও চালানো হয়েছে। মিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ে জলের পুরনো উৎস এবং জলাশয়ে জলের যোগান দেয় এমন উনিশটি ঝরনাকে পুনরুজ্জীবিত করার পূর্ণ চেষ্টা করা হয়েছে। এই পুনরুজ্জীবন প্রকল্পের গুরুত্ব নিয়ে জনসচেতনতা যাতে আরো বেশী বৃদ্ধি পায় সেজন্য স্থানীয় মানুষ এবং যুব বন্ধুদের ওয়াটার আম্বাস্যাডারও করা হয়েছে। এখন ওখানকার স্থানীয় মানুষেরা 'গিল সার লেকে' পরিযায়ী পাখি ও মাছের সংখ্যা যাতে আরো বাড়ে সেই উদ্যোগ নিয়েছেন, এবং তা দেখে আনন্দিতও হচ্ছেন। আমি এই সুন্দর প্রচেষ্টার জন্য শ্রীনগরের মানুষকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুরা, আট বছর আগে দেশে যে 'স্বচ্ছ ভারত মিশন' শুরু হয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পরিধি-ও বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন নতুন উদ্ভাবন সংযোজন হয়েছে। ভারতে আপনি যেখানেই যান, স্বচ্ছতার জন্যে কোনো না কোনো উদ্যোগ আপনি সর্বত্রই দেখতে পাবেন। আসামের কোকরাঝারের এমনই একটি প্রয়াস সম্পর্কে আমি জানতে পেরেছি। সেখানে প্রাতঃভ্রমণকারীদের একটি দল 'স্বচ্ছ ও সবুজ কোকরাঝাড় মিশনের' জন্য প্রশংসনীয় কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাঁরা নতুন ফ্লাইওভার এলাকায় তিন কিলোমিটার লম্বা রাস্তা পরিষ্কার করে, স্বচ্ছতা সম্পর্কে উৎসাহিত হওয়ার মতো বার্তা দিয়েছেন। ঠিক একইভাবে বিশাখাপত্তনমেও স্বচ্ছ ভারত অভিযানের জন্য পলিথিন-এর বদলে কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এখানকার লোক পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক উৎপাদনের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। এর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা বাড়িতেই জঞ্জালকে আলাদা করার সুফলের বিষয়ে সচেতনতাও প্রচার করছে। মুম্বাইয়ের সোমাইয়া কলেজের ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের স্বচ্ছতা অভিযানে সৌন্দর্যকেও অন্তর্ভূক্ত করে নিয়েছে। এঁরা কল্যাণ রেলওয়ে স্টেশনের দেয়ালগুলোকে সুন্দর পেইন্টিং দিয়ে সাজিয়েছে। রাজস্থানের সাওয়াই মাধোপুর-এর আরেকটি অনুপ্রেরণাদায়ক উদ্যোগের কথা আমি জানতে পেরেছি। এখানকার যুবকরা রনথম্বরে মিশন বিট প্লাস্টিক নামে একটি অভিযান চালাচ্ছে। এর আওতায় রনথম্বরের জঙ্গলের ভেতর থেকে সমস্ত প্লাস্টিক পলিথিন সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সবার প্রয়াসের মাধ্যমে এইরকমই ভাবনা জনসাধারণের যোগদানকে আরও মজবুত করে আর জনসাধারণের অংশগ্রহণ থাকলে বড়ো থেকে বড়ো লক্ষ্য অবশ্যই পূরণ হয়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ থেকে কিছুদিন বাদেই, ৮ই মার্চ সমগ্র বিশ্ব জুড়ে 'আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস' পালন করা হবে। মহিলাদের সাহস, দক্ষতা, প্রতিভার সঙ্গে জুড়ে থাকা কত উদাহরণ আমি মন কি বাত অনুষ্ঠানে নানা সময়ে ভাগ করে থাকি। আজ স্কিল ইন্ডিয়া হোক, স্বনির্ভর গোষ্ঠিই হোক, বা ছোট বড় উদ্যোগ হোক, মহিলারা সব জায়গায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আপনারা যে কোন ক্ষেত্রেই দেখুন, পুরোনো ধারণাগুলো ভেঙে যাচ্ছে। আজ, আমাদের দেশে সংসদ থেকে পঞ্চায়েত পর্যন্ত আলাদা আলাদা কার্যক্ষেত্রে, মহিলারা নতুন উচ্চতায় পৌছোতে পারছেন। সেনাবাহিনীতেও মেয়েরা এখন নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাতে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছে, দেশকে রক্ষা করছে। গত মাসে সাধারণতন্ত্র দিবসে আমরা দেখেছি আধুনিক যুদ্ধবিমানও মেয়েরা ওড়াচ্ছে । দেশও সৈনিক স্কুলগুলোতে মেয়েদের ভর্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে, আর সারা দেশে এখন সৈনিক স্কুলে মেয়েরা ভর্তি হচ্ছে। একইভাবে, আপনার স্টার্ট-আপ জগৎ-কে দেখুন, গত বছর দেশে হাজার রকমের স্টার্ট-আপ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক স্টার্ট-আপে মহিলারা পরিচালকের ভূমিকায় আছে। মহিলাদের মাতৃত্বকালীন অবকাশ বাড়ানোর মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ছেলে এবং মেয়েদের সমান অধিকার দেওয়ার জন্য বিয়ের বয়স সমান সমান করার জন্য দেশ চেষ্টা করছে। এইভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে আরও একটি বড়ো পরিবর্তনও হয়ত আপনারা দেখতে পাচ্ছেন! এই পরিবর্তন হলো আমাদের দেশের সামাজিক অভিযানগুলির সফলতা। ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’র সাফল্যকেই দেখুন, দেশে লিঙ্গ অনুপাত এখন অনেক ভালো হয়েছে। স্কুলে যাওয়া মেয়েদের সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের মেয়েরা যাতে মাঝপথে স্কুলছুট না হয় সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের। এইভাবেই, 'স্বচ্ছ ভারত অভিযানের' মধ্যে দিয়ে দেশের মহিলাদের এখন আর খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করতে হয় না । তিন তালাকের মতন সামাজিক কুপ্রথাও শেষও হতে চলেছে। যবে থেকে তিন তালাকের বিরুদ্ধে আইন এসেছে, তবে থেকে তিন তালাকের মামলা ৮০ শতাংশ কমে গেছে। এই এত কিছু পরিবর্তন এত কম সময়ের মধ্যে কি করে হচ্ছে? এটা পরিবর্তন এই জন্য সম্ভব হচ্ছে কারণ আমাদের দেশে পরিবর্তন এবং প্রগতিশীল প্রয়াসের নেতৃত্ব মহিলারা নিজেরাই দিচ্ছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আগামীকাল ২৮শে ফেব্রুয়ারি হল জাতীয় বিজ্ঞান দিবস। এই দিনটি রমন এফেক্ট-এর আবিষ্কারের জন্যও পরিচিত। আমি সি ভি রমন জির সঙ্গে সঙ্গে, সেই সমস্ত বৈজ্ঞানিকদের প্রতি সম্মানের সঙ্গে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করতে চাই, যাঁরা আমাদের বিজ্ঞান নিয়ে নানা গবেষোণাকে মসৃণ বানাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বন্ধুরা, আমাদের সহজ সরল জীবনযাত্রায় প্রযুক্তি একটা বিরাট স্থান তৈরি করেছে। কোন প্রযুক্তি ভালো বা কোনো প্রযুক্তির আরো ভালো ব্যবহার কিভাবে করা যায় - এইসব বিষয়ের ধারণা আমরা ভালোভাবে পেয়ে থাকি। কিন্তু এটাও সত্যি যে আমাদের পরিবারের বাচ্চাদের আমরা এটা বোঝাই না, যে ওই প্রযুক্তির ভিত্তি কি? তার পিছনের বিজ্ঞান কি? এইদিকে আমাদের মনোযোগ কখনোই যায়না। এই বিজ্ঞান দিবসে তে, আমার সমস্ত পরিবারের কাছে অনুরোধ আপনাদের বাচ্চাদের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই ছোট ছোট প্রয়াস গ্রহণ করুন। যেমন ধরুন যারা অস্পষ্ট দেখে, কিন্তু চশমা লাগানোর পরে তারা স্পষ্ট দেখতে পায়, এর পেছনের বিজ্ঞানটা কি তা বাচ্চাদের আমরা সহজেই বোঝাতে পারি । শুধুই চশমা দেখে আনন্দ পাবেন এমনটা নয়। এখন সহজেই আপনারা একটি ছোট কাগজের সাহায্যে ওকে বোঝাতে পারবেন। এখন ওরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, কিন্তু ক্যালকুলেটর কিভাবে কাজ করে? রিমোট কন্ট্রোল কি করে কাজ করে? সেন্সর কি জিনিস? এইরকম বিজ্ঞানের নানা কথাবার্তা ওদের সঙ্গে ঘরে আলোচনা করা হয় কি? হতে পারে খুব সহজেই। আমরা ঘরের রোজনামচায় দরকারি জিনিসের পিছনে কি বিজ্ঞান আছে এটা ওদের বোঝাতে পারি। সেই ভাবেই আমরা কি কখনো বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে আকাশ পর্যবেক্ষণ করেছি? রাতে তারাদের সম্পর্কে নিশ্চিত কথা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের নক্ষত্রপুঞ্জ দেখা যায়, তাদের সম্বন্ধে বলুন। এরকমভাবে আপনারা বাচ্চাদের মধ্যে পদার্থবিদ্যা আর জ্যোতির্বিদ্যার প্রতি নতুন আগ্রহ তৈরি করতে পারেন। আজকাল তো অনেক অ্যাপ-ও আছে যার মাধ্যমে আপনারা গ্রহ-নক্ষত্রকে চিহ্নিত করতে পারেন বা যে নক্ষত্র আকাশে দেখা যাচ্ছে তাকে চিনে নিতে পারেন, জানতে পারেন তার সম্বন্ধে। আমি আমাদের নতুন শিল্পোদ্যোগীদের- ও বলবো, আপনারা আপনাদের কৌশল আর সায়ন্টিফিক ক্যারেক্টার রাষ্ট্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কাজেও লাগান। এটা দেশের প্রতি আমাদের বিজ্ঞানের জন্য যৌথ দায়বদ্ধতাও বটে। যেরকম আজকাল আমি দেখছি আমাদের স্টার্টআপ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জগতে অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। ভার্চুয়াল ক্লাসের এই যুগে, এরকমই একটি ভার্চুয়াল ল্যাব, বাচ্চাদের কথা মাথায় রেখে বানানো যায়। আমরা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে বাচ্চাদের ঘরে বসেই রসায়নের গবেষণার অভিজ্ঞতা দিতে পারি। আমাদের শিক্ষক ও অভিভাবকদের কাছে আমার অনুরোধ যে আপনারা সবাই, ছাত্রছাত্রী ও বাচ্চাদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবার জন্য উৎসাহ দিন। ওদের সঙ্গে মিলে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন। আজ, আমি করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতীয় বৈজ্ঞানিকদের ভূমিকার প্রশংসা করতে চাই। তাঁদের কঠিন পরিশ্রমের জন্যই মেড ইন ইন্ডিয়া টিকা তৈরি সম্ভব হয়েছে যার ফলে সমগ্র বিশ্বের মানুষ বড় সাহায্য পেয়েছে। মানবতার জন্য বিজ্ঞানের এটাই তো উপহার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এ বারেও আমি বহু বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। আসন্ন মার্চ মাসে বহু উৎসব-পার্বণ রয়েছে, শিবরাত্রি রয়েছে এবং কিছুদিন পরেই আপনারা হোলি উৎসবের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। হোলি এমন একটি উৎসব যা আমাদের সবাইকে এক সূত্রে বেঁধে ফেলে। এখানে আপন-পর, শত্রুতা, বৈরি, ছোট-বড় সব বিভেদ মুছে যায়। এই জন্যই বলা হয়, হোলির রঙের থেকেও বেশি গাঢ় এই উৎসবের প্রেম ও সৌহার্দের রঙ। হোলিতে গুজিয়ার মিষ্টত্বের সঙ্গে থাকে সম্পর্কের অনন্য মিষ্টত্বও। এই সম্পর্কগুলি আমাদের আরও মজবুত করতে হবে। এবং সম্পর্ক বলতে আমি শুধু আপন পরিবারের কথা বলছি না, বলছি সেই সব সম্পর্কের কথা যেগুলি আপনার বৃহৎত্তর পরিবার সৃষ্টি করে। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিটিকেও আপনাদের মনে রাখতে হবে। এই পদ্ধতিটি হল - ভোকাল ফর লোকাল। একে সঙ্গে নিয়ে আমাদের উৎসব পালন করতে হবে। আপনারা উৎসবের সময় স্থানীয় জিনিস ক্রয় করুন যাতে আপনার চারপাশে থাকা মানুষজনের জীবন রঙ্গিন হয়ে ওঠে, রঙ্গিন থাকে, উদ্দীপনায় ভরা থাকে।
আমাদের দেশ যে সাফল্যের সঙ্গে করোনার মোকাবিলা করছে ও অগ্রসর হচ্ছে, তাতে উৎসব পালনের ক্ষেত্রেও উৎসাহ অনেক গুণ বেড়ে গেছে।
এই উৎসাহের সঙ্গেই আমাদের উৎসব পালন করতে হবে এবং তার পাশাপাশি সবাইকে সাবধানতাও অবলম্বন করতে হবে। আসন্ন উৎসবগুলি যাতে আপনাদের খুব ভাল কাটে এই কামনা করছি।
আমি সব সময়ই আপনাদের বার্তার, আপনাদের চিঠির, আপনাদের কথার অপেক্ষা করব। অনেক, অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ মন কি বাতের আরও এক পর্বের মাধ্যমে আমরা একত্রিত হচ্ছি। এটা ২০২২-এর প্রথম ‘মন কি বাত’। আজ আমরা এমন বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাব যা আমাদের দেশ আর দেশবাসীর সদর্থক প্রেরণা আর সামগ্রিক প্রয়াসের সঙ্গে জড়িত। আজ আমাদের পূজনীয় বাপু মহাত্মা গান্ধীজীর পুণ্যতিথিও বটে। ৩০শে জানুয়ারির এই দিন, আমাদের বাপুর শিক্ষাকে স্মরণ করায়। এই কিছুদিন আগেই আমরা সাধারণতন্ত্র দিবসও পালন করেছি। দিল্লীর রাজপথে আমরা দেশের শৌর্য আর সামর্থ্যের যে ঝলক দেখেছি তাতে সবার মন গর্ব আর উৎসাহে ভরে উঠেছে। একটা পরিবর্তন যা আপনারা লক্ষ্য করেছেন - তা হল এখন থেকে সাধারণতন্ত্র দিবসের সমারোহ ২৩শে জানুয়ারি অর্থাৎ নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী থেকে শুরু হয়েছে আর ৩০শে জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ গান্ধীজির পুণ্যতিথি অবধি চলবে। ইণ্ডিয়া গেটে নেতাজির ডিজিটাল মূর্তিও স্থাপন করা হয়েছে। এই বিষয়টিকে পুরো দেশ যেভাবে স্বাগত জানিয়েছে, দেশের প্রত্যেক কোণে যেমন আনন্দের ঢেউ উঠেছে, প্রত্যেক দেশবাসী যেভাবে নিজের অনুভব ব্যক্ত করেছে তা আমরা কখনই ভুলতে পারি না।
বন্ধুরা, আজাদির অমৃত মহোৎসবে দেশ এইসব প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজের রাষ্ট্রীয় প্রতীক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করছে। আমরা দেখলাম যে ইণ্ডিয়া গেটের কাছে অমর জওয়ান জ্যোতি আর পাশেই ন্যশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখাকে এক করে দেওয়া হল। এই মর্মস্পর্শী অনুষ্ঠান উপলক্ষে কত না দেশবাসী আর শহীদের পরিবারের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়েছে। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে শহীদ হওয়া দেশের প্রত্যেক বীরের নাম খোদিত হয়েছে ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে। সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কিছু সমরকর্মী আমাকে চিঠি লিখে বলেছেন যে – ‘শহীদদের স্মৃতির সামনে প্রজ্জ্বলিত অমর জওয়ান জ্যোতি শহীদদের অমরত্বের প্রতীক’। সত্যিই, অমর জওয়ান জ্যোতির মতই অমর আমাদের শহীদরা, ওঁদের প্রেরণা আর ওঁদের অবদানও অমর। আমি আপনাদের সবাইকে বলব, যখনই সুযোগ পাবেন তখনই ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে অবশ্যই যাবেন। নিজের পরিবার আর সন্তানদেরও অবশ্যই নিয়ে যাবেন। এখানে আপনি এক ভিন্ন শক্তি আর প্রেরণার অনুভব লাভ করবেন।
বন্ধুরা, অমৃত মহোৎসবের এই সব অনুষ্ঠানের মাঝে দেশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও প্রদান করা হয়েছে। একটি হল, ‘প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় বাল পুরস্কার’। এই পুরস্কার সেই সব শিশুরা পেল, যারা অল্প বয়সেই সাহসী আর প্রেরণাদায়ক কাজ করেছে। এই সব শিশুদের ব্যাপারে আমাদের সবার নিজেদের বাড়িতে জানানো উচিত। এতে আমাদের সন্তানরাও প্রেরণা পাবে আর তাদের ভেতরে দেশের নাম উজ্জ্বল করার উৎসাহ তৈরি হবে। দেশে সম্প্রতি পদ্ম সম্মানও ঘোষণা করা হয়েছে। পদ্ম পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে এমন অনেক নাম আছে যাঁদের সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানেন। এঁরা আমাদের দেশের আনসাঙ হিরোজ তথা অনামী বীর , যাঁরা সাধারণ পরিস্থিতির মধ্যেও অসাধারণ কাজ করেছেন। যেমন উত্তরাখণ্ডের বাসন্তী দেবীজী-কে পদ্মশ্রী দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে। বাসন্তী দেবী নিজের গোটা জীবন সংগ্রামের মধ্যে কাটিয়েছেন। অল্প বয়সেই তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়, আর তিনি একটি আশ্রমে থাকতে শুরু করেন। এখানে থেকে তিনি নদী বাঁচানোর জন্য লড়াই করেন আর পরিবেশ বাঁচাতে অসাধারণ অবদান রাখেন। তিনি মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্যও অনেক কাজ করেছেন। এভাবেই মণিপুরের সাতাত্তর বর্ষীয় লৌরেম্বম বীণো দেবী বহু দশক ধরে মণিপুরের লিবা টেক্সটাইল আর্টের সংরক্ষণ করছেন। তাঁকেও পদ্মশ্রী দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের অর্জুন সিং পদ্ম সম্মান পেয়েছেন বৈগা আদিবাসী নৃত্যকলাকে পরিচিত করানোর জন্য। পদ্ম সম্মান প্রাপক আর এক ব্যক্তি হলেন শ্রীমান অমাই মহালিঙ্গা নাইক। ইনি একজন কৃষক এবং কর্ণাটকের অধিবাসী। তাঁকে কেউ কেউ টানেল ম্যানও বলেন। ইনি চাষের ক্ষেত্রে এমন সব উদ্ভাবন করেছেন যা দেখে যে কেউ বিস্মিত হবেন। তাঁর প্রচেষ্টার অনেক বড় সুবিধা ছোট কৃষকরা পেয়েছেন। এমন আরও অনেক আনসাঙ হিরোজ রয়েছেন, দেশের জন্য অবদানের কারণে যাঁদের সম্মানিত করা হয়েছে। আপনারা অবশ্যই এঁদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। জীবনে অনেক কিছু শেখার রয়েছে এঁদের কাছ থেকে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে আপনারা সবাই আমাকে প্রচুর চিঠি আর বার্তা পাঠান, অনেক সুপারিশও পাঠান। এই ধারাবাহিকতার মধ্যেই এমন কিছু ঘটেছে যা আমার জন্য অবিস্মরণীয়। এক কোটিরও বেশি শিশু নিজের ‘মন কি বাত’ পোস্ট কার্ডের মাধ্যমে আমাকে লিখে পাঠিয়েছে। এই এক কোটি পোস্ট কার্ড দেশের আলাদা-আলাদা অংশ থেকে এসেছে, বিদেশ থেকেও এসেছে। সময় বার করে এরই মধ্য থেকে আমি অনেক পোস্টকার্ড পড়ার চেষ্টা করেছি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মের চিন্তাভাবনা যে কত ব্যাপক এবং বিস্তৃত, তা এই পোস্টকার্ডের মধ্যে ধরা পড়ে। আমি 'মন কি বাত' এর শ্রোতাদের জন্য বেশ কিছু পোস্ট কার্ড বাছাই করে রেখেছি যা আমি আপনাদের জানাতে চাই। যেমন এটি আসামের গুয়াহাটির ঋদ্ধিমা স্বর্গিয়ারির পোস্টকার্ড। ঋদ্ধিমা সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। সে লিখেছে যে সে স্বাধীনতার শতবর্ষে এমন এক ভারত দেখতে চায় যা বিশ্বের মধ্যে স্বচ্ছতম, সন্ত্রাসবাদ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত, ১০০% শিক্ষিত দেশ, দুর্ঘটনামুক্ত দেশ, এবং স্থিতিশীল প্রযুক্তির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা দিতে সক্ষম। ঋদ্ধিমা, আমাদের মেয়েরা যা ভাবে, দেশের জন্য যে স্বপ্ন দেখে তা পূর্ণ হবেই। যখন সকলের প্রচেষ্টা যুক্ত হবে, আপনাদের মত তরুণ প্রজন্ম সেই লক্ষ্যে কাজ করবে, তখন আপনার ভারত সেরকম ভাবেই গড়ে উঠবে, ঠিক যেমন আপনি চান। একটি পোস্ট কার্ড আমি উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের নব্যা ভার্মার কাছ থেকে পেয়েছি। নব্যা লিখেছেন -তার স্বপ্ন ২০৪৭ সালে এমন এক ভারত যেখানে প্রত্যেকে সসম্মানে জীবন ধারণ করতে পারেন, যেখানে কৃষকরা সমৃদ্ধ এবং কোন দুর্নীতি নেই। নব্যা দেশের জন্য আপনার স্বপ্ন খুবই প্রশংসনীয়। দেশও সেই দিকে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। আপনি দুর্নীতিমুক্ত ভারতের কথা বলেছেন। দুর্নীতি দেশকে ঘুণের মত ফাঁপা করে দেয়। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ২০৪৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করব কেন? আমাদের সকল দেশবাসীকে, আজকের তরুণ প্রজন্মকে একযোগে এই কাজ করতে হবে, দ্রুত করতে হবে এবং এর জন্য আমাদের কর্তব্যকে প্রাধান্য দেওয়া খুবই জরুরি; এটাই কর্তব্যবোধ। যেখানে কর্তব্য সর্বাগ্রে, সেখানে দুর্নীতির কোনো স্থান নেই।
বন্ধুরা, আমার সামনে আরো একটি পোস্ট কার্ড রয়েছে চেন্নাইয়ের মোহাম্মদ ইব্রাহিমের। ইব্রাহিম ২০৪৭ সালে ভারতকে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একটি বড় শক্তি হিসেবে দেখতে চান। তিনি চান চাঁদে ভারতের নিজস্ব গবেষণা কেন্দ্র তৈরি হোক এবং ভারত মঙ্গলে মানুষের বসতি স্থাপনের কাজ শুরু করুক। একই সঙ্গে, পৃথিবীকে দূষণমুক্ত করতে ভারতকেও বড় ভূমিকায় দেখতে চান ইব্রাহিম। ইব্রাহিম, আপনাদের মতো তরুণ যে দেশে রয়েছে, সেই দেশের পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়।
বন্ধুরা, আমার সামনে আরো একটি চিঠি রয়েছে। পাঠিয়েছে মধ্যপ্রদেশের রায়সেন থেকে সরস্বতী বিদ্যামন্দিরের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ভাবনা। প্রথমেই আমি ভাবনাকে বলব যে আপনি যেভাবে ভারতের পতাকা এঁকে পোস্ট কার্ড সাজিয়েছেন তা আমার খুব ভালো লেগেছে। বিপ্লবী শিরীষ কুমার সম্পর্কে লিখেছেন ভাবনা।
বন্ধুরা, আমি গোয়ার লরেন্সিয়া পেরেরার পোস্টকার্ডও পেয়েছি। তিনি দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। তার চিঠিরও বিষয় - স্বাধীনতার না জানা নায়ক। আমি তর্জমা করে আপনাদের বলছি। তিনি লিখেছেন - "ভিকাজি কামা ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত সাহসী নারীদের মধ্যে অন্যতম। মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য তিনি দেশে-বিদেশে বহু প্রচার অভিযান চালিয়েছেন। অনেক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। অবশ্যই ভিকাজি কামা ছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বীরাঙ্গনা। ১৯৬০ সালে, তিনি জার্মানিতে ভারতের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। এই পতাকা ডিজাইনে যে ব্যক্তি তাকে সাহায্য করেছিলেন, তিনি শ্রী শ্যামজি কৃষ্ণ বর্মা। শ্রী শ্যামজি কৃষ্ণ বর্মাজি ১৯৩০ সালে জেনেভায় দেহত্যাগ করেন। তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল, ভারতের স্বাধীনতার পর তাঁর অস্থি ভারতে আনা হোক। যদিও ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পরপরই তাঁর অস্থি ভারতে ফিরিয়ে আনা উচিত ছিল, কিন্তু সে কাজ হয়নি। হয়তো পরমাত্মা চেয়েছিলেন এই কাজ আমি করি এবং আমিও সেই কাজ করার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আমি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, ২০০৩ সালে তাঁর অস্থি ভারতে আনা হয়েছিল। শ্যামজি কৃষ্ণ বর্মাজির জন্মস্থান, কচ্ছের মান্ডভিতে, তাঁর স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধও তৈরি করা হয়েছে।
বন্ধুরা, ভারতের স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের উৎসাহ শুধু আমাদের দেশেই সীমাবদ্ধ নেই। আমি ভারতের মিত্র-দেশ ক্রোয়েশিয়া থেকেও ৭৫টি পোস্টকার্ড পেয়েছি। ক্রোয়েশিয়ার জাগ্রেবের স্কুল অফ অ্যাপ্লাইড আর্টস অ্যান্ড ডিজাইনের শিক্ষার্থীরা এই ৭৫টি কার্ড ভারতের জনসাধারণের উদ্দেশে পাঠিয়েছেন এবং অমৃত মহোৎসবের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। সকল দেশবাসীর পক্ষ থেকে আমি ক্রোয়েশিয়া এবং তার জনসাধারণকে ধন্যবাদ জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, চিরকালই ভারত জ্ঞান ও শিক্ষার তপভূমি। 'শিক্ষা'কে আমরা বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখিনি; বরং তাকে জীবনের সামগ্রিক অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখেছি। আমাদের দেশের প্রণম্য ও মহান ব্যক্তিদের সঙ্গেও শিক্ষার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। পন্ডিত মদনমোহন মালব্যজি যেমন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক তেমনই মহাত্মা গান্ধী "গুজরাট বিদ্যাপীঠ" প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। গুজরাটের 'আনন্দ'-এ 'বল্লভ বিদ্যানগর' বলে একটা ভারী সুন্দর জায়গা আছে। সর্দার প্যাটেলের ইচ্ছায়, 'ভাই কাকা' ও 'ভিকা ভাই' নামে তার দুই সহযোগী সেখানে তরুণদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছিলেন। একইভাবে পশ্চিমবঙ্গে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শান্তিনিকেতনের প্রতিষ্ঠা করেন। মহারাজা গায়কোয়াড়-ও প্রবল শিক্ষানুরাগীদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছিলেন এবং ডক্টর অম্বেদকর ও শ্রী অরবিন্দ সহ বহু প্রণম্য ব্যক্তিকে উচ্চশিক্ষার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন। এই মহান ব্যক্তিদের তালিকায় আরও একটি নাম হলো রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ সিং জী । রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ সিং জি, একটা কারিগরি স্কুল তৈরীর জন্য নিজের বাড়ি দান করেছিলেন। তিনি আলীগড় এবং মথুরায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরীর জন্য অনেক আর্থিক সাহায্যও করেছিলেন। কিছুদিন আগে, তাঁর নামে আলীগড়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। আমি আনন্দিত কারণ শিক্ষার আলো প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সেই প্রাণবন্ত ভাবনা ভারতে আজও রয়ে গেছে। আপনারা কি জানেন এই চিন্তাধারার সবচেয়ে সুন্দর দিকটি কী? তা হলো, শিক্ষার বিষয়ে এই সচেতনতা সমাজের প্রতিটি স্তরেই দেখা যাচ্ছে। তামিলনাড়ুর, তিরুপ্পুর জেলার উদুমলপেট ব্লকের বাসিন্দা তায়ম্মল-জী'র উদাহরণ ভীষণ-ই উৎসাহিত করার মত। তায়ম্মল-জী'র নিজের কোন জমিজমা নেই। বহু বছর ধরে তার পরিবার ডাবের জল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। আর্থিক অবস্থা ভালো না হলেও, তায়ম্মল-জী' তার ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার জন্য কোন প্রচেষ্টার ত্রুটি রাখেনি। তাঁর সন্তানেরা চিন্নবীরমপট্টী পঞ্চায়েত ইউনিয়ন মিডিল স্কুলে পড়তো। এমনই একদিন স্কুলে অভিভাবকদের সঙ্গে মিটিং-এর সময় কথা ওঠে, স্কুলের অবস্থা ও শ্রেণীকক্ষগুলোর সংশোধন প্রয়োজন, স্কুলের পরিকাঠামো ঠিক করা প্রয়োজন। তায়ম্মল-জী'ও সেই মিটিং-এ ছিলেন। তিনি সবকিছু শোনেন। সেই বৈঠকের আলোচনা একটা সময় অর্থাভাবের কারণে আটকে যায়। তারপর তায়ম্মলজী যা করেন তা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। যে তায়ম্মলজী ডাবের জল বিক্রি করে সামান্য পুঁজি জমা করেছিলেন, সেই মানুষটিই 'এক লক্ষ' টাকা স্কুলের জন্য দান করেন। সত্যিই, এমন কাজ করার জন্য অনেক বড় হৃদয়ের প্রয়োজন, সেবা করার মতো মানসিকতার প্রয়োজন। তায়ম্মলজীর কথায় এখন স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়, কিন্তু পরিকাঠামো ভালো হলে উচ্চমাধ্যমিক (Higher Secondary) পর্যন্ত পড়ানো শুরু হবে। শিক্ষাকে নিয়ে আমাদের দেশের ঠিক এই চিন্তাধারার বিষয়টিই আমি আলোচনা করছিলাম। আইআইটি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তনীর ঠিক এরকমই একটি দান সম্পর্কে আমি জানতে পেরেছি। আইআইটি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র জয় চৌধুরী আইআইটি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাউন্ডেশনকে এক মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা দান করেছেন।
বন্ধুরা, আমাদের দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বহু মানুষ আছেন, যারা অন্যের সহায়তা করে সমাজের প্রতি তাদের কর্তব্য পালন করছেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে এই ধরনের প্রচেষ্টা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে আমাদের বিভিন্ন আইআইটি'তে প্রায়শই -ই দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও এই ধরনের অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণের কমতি নেই। এই ধরনের প্রচেষ্টা যাতে আরো বাড়ে সেজন্য গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে আমাদের দেশে বিদ্যাঞ্জলি অভিযানও শুরু হয়েছে। এর উদ্দেশ্য আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং নিজস্ব অঞ্চলের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দেশজুড়ে স্কুল শিক্ষার গুণগত মান ভালো করা। বিদ্যাঞ্জলি সমষ্টিগত অংশীদারিত্ব এবং মালিকানার মনস্তত্ত্বকে প্রসারিত করছে। নিজের স্কুল কলেজের সঙ্গে সব সময় যুক্ত থাকা, নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী সেখানে কিছু অবদান রাখা ইত্যাদি, এ হল এমন একটি বিষয় যার আনন্দ এবং পরিতৃপ্তি একমাত্র অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েই লাভ করা যায়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রকৃতি প্রেম ও জীবের প্রতি সহানুভূতি আমাদের সংস্কৃতি এবং সহজাত অভ্যেস। আমাদের সেই সংস্কারেরই এক ঝলক সম্প্রতি দেখা গিয়েছিল, যখন মধ্যপ্রদেশের পাঞ্চ ব্যাঘ্র প্রকল্পে এক বাঘিনী পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেয়। এই বাঘিনীটিকে লোকে কলার ওয়ালি বাঘিনী বলতো। বন বিভাগ এর নাম দিয়েছিল T-15। এই বাঘিনীর মৃত্যু মানুষকে এতটা আবেগপ্রবণ করেছিল যেন তাদের কোন স্বজন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তারা প্রথামাফিক বাঘিনীর শেষকৃত্য করেছেন, তাকে পূর্ণ সম্মান ও ভালোবাসার সঙ্গে চিরবিদায় জানিয়েছেন। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনারাও নিশ্চয়ই দেখেছেন। প্রকৃতি ও জীবজন্তুর প্রতি আমাদের, ভারতবাসীর এই ভালোবাসা সারা দুনিয়ায় অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে। কলারওয়ালি বাঘিনী জীবদ্দশায় ২৯টি শাবকের জন্ম দিয়েছিল ও ২৫টিকে লালন পালন করে বড়ও করেছিল। আমরা এই T-15 এর জীবনকেও উদযাপিত করেছি, আবার দুনিয়া ছেড়ে যাওয়ার সময়ও তাকে আবেগপূর্ণ শেষ বিদায় জানিয়েছি। এটাই তো ভারতবাসীর মহৎ বৈশিষ্ট্য। আমরা সকল জীবজন্তুর সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করে নিই। এমনই একটি দৃশ্য এবছর সাধ