শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

গোটা বিশ্ব বর্তমানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। কেউ ভাবতেই পারে নি যে, মানবজাতিকে এরকম কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। এরকম চ্যালেঞ্জের মধ্যেও এই দশকের শুরুতে আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংযুক্ত হাউসে তাঁর সম্বোধন করেছিলেন। এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে একটি নতুন আশা, নতুন উদ্যোগ এবং নতুন আত্মবিশ্বাসে ভরা রাষ্ট্রপতিজির ভাষণ ছিল। এক স্বনির্ভর ভারতের পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই দশকের পথপ্রদর্শনকারী ভাষণ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতিজি।

শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

রাষ্ট্রপতিজির প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাতে আমি আজ আপনাদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছি। রাজ্যসভায় ১৩-১৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে, ৫০জনেরও বেশি মাননীয় সদস্য তাঁদের মতামত, মূল্যবান ভাবনা, বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাই আমি এই আলোচনাকে সমৃদ্ধ করার জন্য সম্মানিত সকল সদস্যের প্রতিও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তবে সবাই যদি মাননীয় রাষ্ট্রপতির ভাষণ শুনতেন তাহলে ভালো হতো, গণতন্ত্রের মান আরও বেড়ে যেতো। আমাদের কারও মনে কোনও ক্ষোভ- অভিযোগ থাকতো না যে আমরা রাষ্ট্রপতিজির ভাষণ শুনিনি। তবে রাষ্ট্রপতিজির ভাষণের শক্তি এতটাই ছিল যে, না শুনলেও কথাগুলো কানে পৌঁছে যাবেই। এটা একরকমভাবে সেই ভাষণের শক্তি, সেই ভাবনার শক্তি, সেই আদর্শের শক্তি যা না শোনা সত্ত্বেও বক্তব্য সবার কাছেই পৌঁছে গিয়েছিল। সে কারণেই আমি মনে করি এই ভাষণ শুনলে তার মান বহুগুণ বেড়ে যেতো।

শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

আমি যেটা বলেছিলাম, বহু চ্যালেঞ্জের মধ্যে এটা এই দশকে রাষ্ট্রপতিজির প্রথম বক্তৃতা ছিল। তবে এটিও সত্যি যে আমরা যদি সারা বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখি, ভারতের তরুন মনকে দেখি তখন মনে হয় আজ ভারত প্রকৃত অর্থে সম্ভাবনার দেশ। অনেক সুযোগ আমাদের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে। তাই যে একটা তরুণ দেশ, উৎসাহে ভরপুর দেশ, এমন একটা দেশ যে অনেক স্বপ্ন দেখে দৃঢ় সংকল্প সিদ্ধির চেষ্টা করে, সেই দেশ কখনই এধরনের সুযোগ হাতছাড়া করে না। আমাদের জন্য এবছর একটা বিশেষ উপলক্ষ্য হল যে, আমরা স্বাধীনতার ৭৫ তম বছরে প্রবেশ করছি যা একরকমভাবে একটি অনুপ্রেরণামূলক সুযোগ। আমরা যেখানেই থাকি না কেন, যে কোনও রূপেই থাকি না কেন, আমাদের অনুপ্রেরণার এই উৎসব স্বাধীনতার ৭৫তম উৎসব, মাভারতীর সন্তানের হিসেবে পালন করা উচিত। দেশকে আগামী বছরের জন্য প্রস্তুত করতে আমাদের যা কিছু সম্ভব করতে হবে এবং ২০৪৭ সালে আমরা যখন স্বাধীনতার শতাব্দ বর্ষ উদযাপন করব তখন আমরা দেশকে কোন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি, সেই স্বপ্নই আমাদের বারবার দেখা উচিত। আজ সারা বিশ্ব ভারতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, ভারতের থেকে প্রত্যাশাও রয়েছে এবং মানুষের মধ্যে একটি বিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে ভারত যদি এটা করে তবে বিশ্বের অনেক সমস্যার সমাধান সেখান থেকেই হয়ে যাবে, বিশ্বজুড়ে ভারতের প্রতি এই বিশ্বাস বাড়ছে।

শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান,

আমি যখন সুযোগ নিয়ে আলোচনা করছি, আমি মহাকবি মৈথিলীশরণ গুপ্তজির কবিতার লাইন আবৃত্তি করতে চাই। গুপ্তজি বলেছিলেন-

"সুযোগ তোমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে, তবু তুমি চুপচাপ শুয়ে আছ?
তোমার কর্মক্ষেত্র বিশাল, প্রত্যেক মুহূর্ত মূল্যবান, ওরে ভারত ওঠ, চোখ খোল।"

এই লাইনগুলো লিখেছেন মৈথিলীশরণ গুপ্ত। তবে আমি ভাবছিলাম, যদি তাঁকে একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে লিখতে হতো তবে তিনি কী লিখতেন- আমি মনে করি তিনি লিখতেন-

"সুযোগ তোমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে, তুমি আত্মবিশ্বাসে পূর্ণ।
প্রতিযোগিতা, প্রতিবন্ধকতা ভাঙো, ওহে ভারত, স্বনির্ভরতার পথে এগোও।"

শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান,

করোনার সময়ে বিশ্বের পরিস্থিতি কী তৈরি হয়েছিল, কারও পক্ষে কাউকে সাহায্য করা অসম্ভব ছিল। এক দেশ অন্য দেশকে সাহায্য করতে পারেনি। একটি রাজ্য অন্য রাজ্যকে সাহায্য করতে পারে না, এমনকি পরিবারের এক সদস্য অন্য সদস্যদের সাহায্য করতে পারে নি; এমনই পরিবেশ তৈরি হয়েছিল করোনার জন্য। সারা বিশ্বে ভারতের জন্যে প্রচুর আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। সারা দুনিয়া খুব চিন্তিত ছিল যে করোনা অতিমারিতে ভারত যদি নিজেকে পরিচালনা করতে না পারে তবে আশঙ্কা করা হয়েছিল যে কেবল ভারতই নয়, সমগ্র মানবজাতি বড় সংকটের মুখোমুখি হবে। প্রচুর মানুষ আটকা পড়বে, লক্ষ লক্ষ লোক মারা যাবে, এখানেও আমাদের ভয় দেখানোর জন্য প্রচুর জিনিস ঘটেছিল। কেন এমন হয়েছিল তা আমাদের প্রশ্ন নয়, কারণ অজানা শত্রু কী করতে পারে, কারও ধারণা ছিল না। প্রত্যেকে নিজস্ব উপায়ে মূল্যায়ন করেছিল। কিন্তু আমাদের দেশের নাগরিকদের অজানা শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে, ভারতের কোনও ধারণা ছিল না এবং যার এমন কোনও পূর্ববর্তী পরম্পরা ছিল না যে এধরনের পরিস্থিতিতে এরকম করা উচিত, তার জন্য এই প্রোটোকল নেওয়া যেতে পারে, কিছু জানা ছিল না।
নতুন উপায়ে সবাইকে নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে চলতে হয়েছিল। হয়তো কিছু পণ্ডিত বা বিত্তবান মানুষদের অন্য কিছু ধারণা থাকতে পারে তবে সামনে ছিল অজানা শত্রু। এবং আমাদেরও উপায় খুঁজতে হয়েছিল। রাস্তা তৈরি করতেও হয়েছিল আবার মানুষের প্রাণও বাঁচাতে হয়েছিল। সেই সময়ে, ঈশ্বর যা কিছু প্রজ্ঞা, শক্তি এবং সামর্থ্য দিয়েছিলেন, এই দেশ তাই করে দেশকে বাঁচানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল। এখন বিশ্ব সত্যিই গর্ব অনুভব করে যে মানবজাতিকে বাঁচাতে ভারত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এই যুদ্ধে জয়ের কৃতিত্ব কোনও সরকার বা কোনও ব্যক্তির নয়, তবে ভারতের তো বটেই।
গর্ব করতে কি ক্ষতি? বিশ্বের সামনে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলতে কী ক্ষতি? দেশ করে দেখিয়েছে। গরিব থেকে গরিবতর মানুষ এটা করেছে। সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছেন হয়তো এক বুড়ি মা ফুটপাতে একটি ছোট্ট ঝুপড়ির মধ্যে বসে থাকতেন। তিনিও বাড়ির বাইরে, কুঁড়েঘরের বাইরে প্রদীপ জ্বালিয়ে ভারতের মঙ্গলকামনা করতেন। আমরা কি তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা করছি? তাঁর অনুভূতির উপহাস করছি? সময় হ'ল, যে কখনই স্কুলের চৌকাঠ পেরোয়নি, মনে মনে, যে কেউ দেশের জন্য প্রদীপ জ্বালিয়ে তার দেশের সেবা করতে পারে, তিনি এই অনুভূতি নিয়েই করেছিলেন। তিনি দেশে একটি সম্মিলিত শক্তি জাগ্রত করেছিলেন। নিজের শক্তির, সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর উপহাসও উপভোগ করছি আমরা। বিরোধিতা করার মতো প্রচুর বিষয় রয়েছে এবং তা করাও উচিত। তবে দেশের মনোবলকে ভেঙে দেয় এমন জিনিসে জড়িয়ে পড়া উচিত না, যেই জিনিস দেশের শক্তিকে ক্ষুণ্ন করে, তাতে কখনও লাভ হয় না।
আমাদের করোনা যোদ্ধা, আমাদের প্রথম সারির কর্মীরা, আপনি ভাবুন যে সময়ে সবাই ভয় পাচ্ছে যে, করোনার সংক্রমণ না হয়ে যায়, তখন কর্তব্যকরা, নিজের দায়িত্ব পালন করা কোনো ছোটো কাজ নয়। এতে গর্বিত হওয়া যায়, তাঁদের সম্মান করা উচিত। এই সমস্ত প্রচেষ্টার ফলেই দেশ আজ তা করে দেখিয়েছে। আসুন আমরা অতীতে ফিরে দেখি, এটি সমালোচনার জন্য নয়, আমরা সেই পরিস্থিতি আমরা কাটিয়ে এসেছি। কখনও গুটি বসন্তের কথা হলে, ভয় কতটা বেড়ে যেতো। পোলিও কত ভয়ঙ্কর ছিল, তার টিকা নেওয়ার জন্য কত প্রয়াস করতে হতো, কত কষ্ট করতে হতো। আমরা এই দিনগুলি কাটিয়েছি যখন আমরা পাব কিনা, আমরা কতটা পাব, কীভাবে তা পাব ভাবতে হতো। এমন পরিস্থিতিতে যদি আপনি সেই দিনগুলি মনে রাখেন তবে আপনি বুঝতে পারবেন যে সমস্ত দেশকে বিশ্বের তৃতীয় সারির দেশগুলির মধ্যে গোনা হয় তারা মানবজাতির কল্যাণে টিকা তৈরি করে নিয়ে এসেছে। আমাদের বিজ্ঞানীরাও খুব অল্প সময়ে মিশন মোডে নিযুক্ত হয়েছেন, এটা মানবজাতির ইতিহাসে ভারতের অবদানের গর্বগাথা। আমরা সকলেই এর গর্ব করি এবং এর থেকে নতুন আত্মবিশ্বাসের প্রেরণা জাগাই। আমাদের দেশে বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ অভিযান চলছে, যা নতুন আত্মবিশ্বাসের প্রেরণা জাগ্রত করার জন্য আজ দেশ এধরনের প্রয়াসের গর্ব করতে পারে। আজ যদি বিশ্বে কোথাও দ্রুত গতিতে টিকাকরণ কর্মসূচি চলছে, তা আমাদের ভারতমাতার কোলে এবং ভারতের এই সামর্থ্যের পরিচয় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।

আজ, করোনার ফলে বিশ্বের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন শক্তি দিয়েছে। প্রথমদিকে কখন কোন ওষুধ কাজ করবে, কোনও টিকা ছিল না, তখন পুরো বিশ্বের মনোযোগ ভারতীয় ওষুধের ওপর ছিল। ভারত বিশ্বের ফার্মাসির হাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই দেশই সেই কঠিন সময়ে ১৫০টি দেশে ওষুধ সরবরাহের কাজও করেছে। মানবজাতির সুরক্ষার জন্য আমরা পিছপা হইনি। শুধু তাই নয়, এই সময় টিকার ক্ষেত্রেও বিশ্ব গর্বের সঙ্গে বলে যে আমাদের কাছে ভারতের টিকা এসে গেছে। আমরা সবাই জানি যে বিশ্বের বড় বড় হাসপাতালে তাবড়-তাবড় মানুষেরা যখন অপারেশন করাতে যান, অথবা কোনও বড় অপারেশন হয়, এবং অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার পরে, প্রক্রিয়া শুরুর আগে, তাঁদের চোখ খোঁজে দলে কোনও ভারতীয় চিকিৎসক আছেন কি না। আর দলে যদি একজন ভারতীয় চিকিৎসককে দেখা যায়, তখনই রোগী আশাবাদী হয়ে ওঠে যে এখন অপারেশন ভালো হবে। এটাই আমাদের দেশের অর্জন বলা চলে। আমাদের এরজন্য গর্ব করা উচিত। এবং এই গর্ব নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
এই করোনায়, ভারত যেমন বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি অনন্য পরিচয় তৈরি করেছে, একইভাবে আমাদের ফেডারেল কাঠামো বুঝিয়ে দিয়েছে যে এই করোনার সময়কালে আমাদের নিজস্ব শক্তি কী, সঙ্কটের সময়ে আমরা কীভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারি, কীভাবে আমরা সমস্ত ক্ষমতা এক দিকে প্রয়োগ করতে পারি; এটা কেন্দ্র এবং রাজ্য যৌথভাবে করে দেখিয়েছে। আমি রাজ্যগুলিকেও, কারণ সংসদে রাজ্যের নিজস্ব ভূমিকা থাকে এবং তাই এই সভায় আমি বিশেষত রাজ্যগুলিকে এবং সমবায় ফেডারেলিজমকে শক্তিশালী করার জন্য, এই করোনার সংকটকে সুযোগে পরিণত আমরা সবাই মিলে করেছি। এরজন্য সবাইকে অভিনন্দন জানাই। এখানে গণতন্ত্র সম্পর্কে প্রচুর উপদেশ দেওয়া হয়েছে। অনেক কিছু বলা হয়েছে। তবে যা বলা হয়েছে তা আমি বিশ্বাস করি না যে দেশের যে কোনও নাগরিক এটা বিশ্বাস করবে। ভারতের গণতন্ত্র এমন নয় যে আমরা এইভাবে তার চামড়া ছিঁড়ে ফেলতে পারি। আমাদের এমন ভুল করা উচিত নয় এবং আমি শ্রী ডেরেকজির কথা শুনছিলাম। তিনি দারুণ দারুণ শব্দের প্রয়োগ করছিলেন, বাক-স্বাধীনতা, আতঙ্ক, জোর-জুলুম, এই সব শব্দ শুনে মনে হচ্ছিল উনি বাংলার কথা বলছেন না দেশের কথা বলছেন? এটি স্বাভাবিক যে, আপনি ওই একই জিনিস ২৪ ঘন্টা দেখতে পান, একই জিনিস ২৪ ঘন্টা শুনতে থাকেন তবে আপনি সম্ভবত ভুল করে এখানে তা বলে ফেলেছেন। কংগ্রেসের আমাদের বাজওয়া সাহেবও এবার খুব ভাল বলছিলেন এবং এতক্ষণ ধরে বলছিলেন যে আমার মনে হচ্ছিল যে তিনি কিছুক্ষণের মধ্যে জরুরি অবস্থার সময়ে পৌঁছে যাবেন। আমার মনে হচ্ছিল যে কিছুক্ষণের মধ্যে, আর এক ধাপ বাকি আছে, তিনি ৮৪ এ পৌঁছে যাবেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। ঠিক আছে, কংগ্রেস দেশকে অনেক হতাশ করেছে, আপনিও হতাশ করে দিলেন।

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

আমি একটি উদ্ধৃতি এই সদনের সামনে রাখতে চাই এবং বিশেষত যাঁরা গণতন্ত্র সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন, যাঁরা ভারতের মৌলিক শক্তির উপর সন্দেহ পোষণ করেন, আমি তাঁদের এটা বোঝার জন্য বিশেষ অনুরোধ করব। "আমাদের গণতন্ত্র কোনওভাবেই পশ্চিমী প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি মানবিক প্রতিষ্ঠান। ভারতের ইতিহাস গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ দিয়ে পরিপূর্ণ। আমরা প্রাচীন ভারতে ৮১ টি প্রজাতন্ত্রের বিবরণ পাই। আজকে ভারতের জাতীয়তাবাদের ওপর হামলা থেকে দেশবাসীকে সতর্ক করা দরকার। ভারতের জাতীয়তাবাদ সংকীর্ণ, স্বার্থপর বা আক্রমণাত্মক নয়। এটি 'সত্যম শিবম সুন্দরম' এর মূল্যবোধ দ্বারা অনুপ্রাণিত।"

শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

এই উদ্ধৃতি আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর। এবং কাকতালীয়ভাবে, আমরা আজ তাঁর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী পালন করছি। তবে এটা দুর্ভাগ্যজনক যে আমরা নেতাজীর এই অনুভূতি, নেতাজীর এই চিন্তাভাবনা, নেতাজীর এই আদর্শকে আমরা অজান্তেই ভুলে গেছি। তার ফলে আজ আমরা নিজেদেরকে দোষারোপ করছি। আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই, যে বিশ্বের যে কেউ আমাদের একটা শব্দ ধরিয়ে দেয়, এবং আমরা তা ধরি এবং চলি। আমরা বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র শুনতে ভালোবাসি, হ্যাঁ ভাই, ভারতবর্ষ বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র। তবে আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে এটা শেখাইনি যে ভারত গণতন্ত্রের জন্মদাত্রী। গণতন্ত্রের জননী। আমরা শুধু বড় গণতন্ত্রই নই, এই দেশ গণতন্ত্রের জননী। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে এটা শেখাতে হবে এবং আমাদের এটি অবশ্যই গর্বের সঙ্গে বলতে হবে কারণ এটা আমরা পূর্বপুরুষদের থেকে উত্তরাধিকারে পেয়েছি। ভারতের শাসন ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক, শুধু সেকারণেই আমরা গণতান্ত্রিক দেশ নই। ভারতের সংস্কৃতি, ভারতের সংস্কার, ভারতের ঐতিহ্য, ভারতের মন গণতান্ত্রিক এবং তাই আমাদের ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক। এরকম হয় তাই এটা এরকম, তা নয়। মূলত আমরা প্রজাতন্ত্র তাই। এবং সেই পরীক্ষাও দেশকে দিতে হয়েছে।
জরুরি অবস্থার সেই দিনগুলি স্মরণ করুন, ন্যায়পালিকার কী হাল ছিল, মিডিয়ার কী অবস্থা ছিল, প্রশাসনের অবস্থা কী ছিল। সবকিছুই কারাগারে রূপান্তরিত হয়েছিল, কিন্তু এই দেশের সংস্কৃতি, দেশের মানুষ, যা গণতান্ত্রিক রঙে রাঙানো, তাকে কেউ নড়াতে পারেনি। সুযোগ পেয়েই তা গণতন্ত্রকে প্রভাবিত করেছিল। এটাই জনগণের শক্তি, আমাদের সংস্কৃতির শক্তি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের শক্তি, বিষয় এটা নয় যে কোন সরকার, কোন সরকার এটা করেছে, সেই আলোচনা করছি না আমি, আমাকে সেজন্য এখানে বসাননি আপনারা। আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে। স্বনির্ভর ভারত নিয়েও আলোচনা হয়েছিল। আমাদের সহকর্মী ধর্মেন্দ্র প্রধানজি একটি বিস্তৃত, সুপরিচিত বিবৃতি দিয়েছেন যে স্বনির্ভর ভারতের জন্য আমাদের দিশা কী। তবে একটি বিষয় ঠিক যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ভারতের একটা পরিচিতি তৈরি হচ্ছে। সারা বিশ্বের মানুষ করোনার যুগে বিনিয়োগের জন্য মুখিয়ে আছে। এখন আর কোনো লুকোচুরি নেই। কিন্তু ভারতে রেকর্ড বিনিয়োগ হচ্ছে। সমস্ত রেকর্ড বলছে যে অনেক দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিপর্যয়কর। সেখানে বিশ্ব ভারতে দ্বিগুণ ডিজিটাল বৃদ্ধির প্রত্যাশা করছে। একদিকে হতাশার পরিবেশ, অন্যদিকে বিশ্ব বলছে, ভারত থেকে আশার রশ্মি তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ রেকর্ড পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে ভারতে খাদ্য উৎপাদন রেকর্ড পর্যায়ে রয়েছে। ভারত আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। ভারতে আজ ইউপিআইয়ের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৪ লক্ষ কোটি টাকার ডিজিটাল লেনদেন করা হচ্ছে। মনে করুন, আমি এই সদনের ভাষণেই শুনছিলাম ... দু'বছর, তিন বছর আগে ... মানুষের কাছে মোবাইল কোথায়, ঠিকানা কোথায়, মানুষ কীভাবে ডিজিটাল করবে, এই দেশের শক্তি দেখুন ... প্রতি মাসে ৪ লক্ষ কোটি টাকা, মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক হিসেবে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশে পরিণত হয়েছে। ভারতে রেকর্ড সংখ্যক স্টার্টআপস, ইউনিকর্ন এবং বিশ্বজুড়ে এর জয়জয়কার হচ্ছে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম এই পৃথিবীতে কাজ করছে। পূনর্নবীকরণ জ্বালানির ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দেশে আমরা আমাদের জায়গা করে নিয়েছি এবং আগামী দিনে আমরা আরও উচ্চতা স্পর্শ করব। জল হোক, ভূমি হোক, আকাশ হোক, মহাকাশ হোক... ভারত প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেকে রক্ষার জন্য পূর্ণ শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হোক বা বিমান হামলা, বিশ্ব ভারতের ক্ষমতা দেখেছে।

শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

২০১৪ সালে আমি যখন এই সংসদে প্রথম আসি এবং যখন আমাকে নেতা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল আমার প্রথম বক্তৃতায় আমি বলেছিলাম যে আমার সরকার দরিদ্রদের প্রতি নিবেদিত। আমি আজ ফিরে আসার পরে একই জিনিস পুনরাবৃত্তি করছি এবং আমরা আমাদের দিক পরিবর্তন করিনি, আমরা নিস্তেজ হইনি বা সরেও যাইনি। আমরা একই মেজাজে কাজ করছি কারণ এই দেশে এগিয়ে যেতে হলে আমাদের দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হতে হবে। আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। যদি আগে থেকেই কাজ চলছে, তবে আমাদের তা আরও বিস্তৃত করতে হবে, আমরা থামতে পারি না। অনেক কিছু করা হয়েছে ... থামা সম্ভব নয়, আমাদের আরও কিছু করতে হবে। আজ আমি আনন্দিত যে, দৈনন্দিন প্রয়োজন, জীবনযাপনের স্বাচ্ছন্দ্য এবং যা থেকে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় এবং একবার দরিদ্রদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়ে গেলে, দরিদ্ররা নিজেরাই দারিদ্র্যের চ্যালেঞ্জ নিয়ে উঠে দাঁড়াবে, তখন তাঁদের কোনও সাহায্যের প্রয়োজন পড়বে না। এটা আমার মনে হয়। আমি খুশি যে ১০ কোটিরও বেশি শৌচাগার তৈরি হয়েছে, ৪১ কোটিরও বেশি মানুষের অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ২ কোটিরও বেশি দরিদ্রদের জন্য বাসস্থান তৈরি করা হয়েছে। ৮ কোটিরও বেশি বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা দরিদ্রদের জীবনে বড় শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। এ জাতীয় অনেক প্রকল্প যা দরিদ্রদের জীবনে পরিবর্তন আনছে। নতুন বিশ্বাস তৈরি করছে।

শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

চ্যালেঞ্জ রয়েছে, এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে চ্যালেঞ্জ থাকে না, বিশ্বের সবথেকে সমৃদ্ধ দেশেও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, ওদের চ্যালেঞ্জও অন্য ধরনের, আমাদের অন্য ধরণের রয়েছে। তবে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমরা সমস্যার অংশ হতে চাই না আমরা সমাধানের অংশ হতে চাই। এটা কেবল একটা সরু লাইন, যদি আমরা সমস্যার অংশ হয়ে যাই তাহলে রাজনীতি চলবে, তবে যদি আমরা সমাধানের মাধ্যম হয়ে যাই তাহলে দেশের উন্নতি হবে। আমাদের বর্তমান প্রজন্মের প্রতি দায়িত্ব রয়েছে, আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্যও ভাবতে হবে। সমস্যা রয়েছে, তবে আমি নিশ্চিত যে আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করি, তবে আমরা পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে পারব এবং আমরা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে সক্ষম হব... এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

এই সংসদে কৃষক আন্দোলন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। বেশীরভাগ সময়েই আন্দোলনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কী নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে সে বিষয়ে সবাই নীরব। আন্দোলন কেমন চলছে, আন্দোলনের বিষয়ে কী করা হচ্ছে। এই সমস্ত বিষয়ে অনেক কিছু বলা হয়েছে, এবং তা গুরুত্বপূর্ণও, তবে মূল বিষয় কী ... সেই বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা করলে ভালো হতো। আমাদের মাননীয় কৃষিমন্ত্রী খুব ভালভাবে যে প্রশ্নগুলো করেছেন, আমি জানি সেসব প্রশ্নের উত্তর পাব না তবে আমি জানি তবে তিনি এই বিষয়ে খুব ভাল আলোচনা করেছেন। আমি মাননীয় দেবেগৌড়াজির প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ, তিনি এই পুরো আলোচনা গুরুত্ব সহকারে শুনেছেন এবং সরকারের ভালো প্রচেষ্টার প্রশংসাও করেছেন কারন তিনি সারাজীবন কৃষকদের জন্যই কাজ করেছেন। তিনি সরকারের কাজের প্রশংসাও করেছেন এবং তিনি ভালো পরামর্শও দিয়েছেন। আমি মাননীয় দেবগৌড়াজিকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।

শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

কৃষিকাজের মূল সমস্যা কী? তার শিকড় কোথায়? আমি আজ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিংজি বিস্তারিতভাবে যা বলেছিলেন তার উল্লেখ করতে চাই… অনেক মানুষ আছেন যাঁরা চৌধুরী চরণ সিংয়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে গর্ববোধ করেন, তাঁরা সম্ভবত এটা বোঝার চেষ্টা করবেন। তিনি প্রায়শই ১৯৭১ সালে কৃষি ক্ষেত্রে যে জনগণনা হয়েছিল, তাঁর ভাষ্যে তা বারবার উঠে আসত। চৌধুরী চরণ সিংজি কী বলেছিলেন ... তাঁর বক্তব্য হ'ল কৃষকদের জনগণনায় জানা গেছে ৩৩ শতাংশ কৃষক এমন যাঁদের কাছে জমি ২বিঘার থেকেও কম, ২ বিঘাও নেই, ২ বিঘা পর্যন্ত, ২ বিঘার থেকেও কম। ১৮ শতাংশ কৃষক রয়েছেন যাদের কাছে ২ বিঘা থেকে ৪ বিঘা জমি রয়েছে, অর্থাৎ অর্ধেক হেক্টর থেকে এক হেক্টর জমি ... এই ৫১ শতাংশ কৃষক, তারা যতই পরিশ্রম করুক না কেন ... নিজেদের এই সামান্য জমিতে এরা সৎভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন না। এটা চৌধুরী চরণ সিংজির উক্তি। ক্ষুদ্র কৃষকদের করুণ অবস্থা সবসময় চৌধুরী চরণ সিংজিকে কষ্ট দিত। তিনি সবসময় তাদের সম্পর্কে ভাবতেন। এবার আমরা আরও দেখব ...সেই কৃষক যাদের কাছে এক হেক্টরের থেকেও কম জমি আছে। ১৯৭১ সালে তাদের সংখ্যা ছিল ৫১ শতাংশ, আজ তাদের সংখ্যা ৬৮ শতাংশে পৌঁছে গেছে। অর্থাৎ, দেশে এমন কৃষকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে যাদের কাছে খুব কম জমি আছে এবং আমরা যদি আজ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদেরকে এর সঙ্গে যোগ করি তবে ৮৬ শতাংশেরও বেশি কৃষকের কাছে ২ হেক্টরের থেকেও কম জমি রয়েছে। এবং এই কৃষকদের সংখ্যা ১২ কোটি। এই ১২ কোটি কৃষকদের প্রতি কী আমাদের কোনও দায়বদ্ধতা নেই, দেশের কি কোনও দায়বদ্ধতা নেই? আমরা কি কখনও এই ১২ কোটি কৃষকদের আমাদের প্রকল্পের কেন্দ্রে রাখব না? এই প্রশ্নের উত্তর চৌধুরী চরণ সিংজি আমাদের কাছে রেখে গিয়েছেন ... এর উত্তর আমাদের খুঁজে পেতে হবে। এই কাজের জন্য আমাদের চৌধুরী চরণ সিংজিকে সত্যিকারের শ্রদ্ধা জানাতে, যে যতটুকু করতে পারে , যে যেমন সুযোগ পায়, প্রত্যেককে তা করতে হবে তবেই আমরা সফল হব।

আগের সরকারগুলির চিন্তাভাবনায় ক্ষুদ্র কৃষকেরা ছিল? যদি আমরা চিন্তা করি তো মনে পড়বে, আমি আলোচনা চাইছি না তবে আমরা সত্যিই .... আমাদের সবার ভাবা উচিত। নির্বাচন আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা যখন কোনও কর্মসূচি করি, ঋণ মকুব হচ্ছে কৃষকের কর্মসূচি ... এটা ভোটের কর্মসূচি যা সবাই ভাল করেই জানে। তবে ঋণ মকুব করার সময়… ক্ষুদ্র কৃষকেরা এর থেকে বঞ্চিত হয়। তার ভাগ্যে কিছুই আসে না। কারণ ঋণ মকুব যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় তার জন্য ... ক্ষুদ্র কৃষক বেচারার ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট নেই ... ঋণ নেবে কী করে? আমরা ছোট কৃষকের জন্য কিছু করিনি ... যদিও রাজনীতি করেছি। এক-দুই একর জমির কৃষকেরা, যাদের একাউন্টও নেই এবং ঋও নেন না বা ঋণ মকুবের সুবিধাও পান না। একইভাবে আগের ফসল বীমা যোজনায় কী ছিল ... একভাবে সেই বীমা যা ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে কাজ করে। এবং তাও ছোট কৃষকদের কপালে ছিল না। এটাও সেই কৃষকদের জন্যও ছিল যাদের ব্যাংক থেকে ঋণ ছিল, তাদের বীমাও ছিল; ব্যাংকের বিশ্বাসও হয়ে যেতযেত, কাজ হয়ে যেতো।

আজ, এমন অনেক কৃষক রয়েছেন, যাঁদের ২ হেক্টর থেকেও কম জমি এবং তাঁরা ব্যাংক থেকে ঋণ নেবেন...ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য সেচের সুবিধাও নেই, বড় কৃষকরা বড় বড় পাম্প বসিয়ে নিতেন, টিউবওয়েল লাগিয়ে নিতেন, বিদ্যুতও পেতেন, এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিনামূল্যে পাওয়া যায়, তাদের কাজ হয়ে যেতো। ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য, সেচেরও সমস্যা ছিল। তাঁরা তো টিউবওয়েলও বসাতে পারতেন না, উল্টে কখনও তাঁকে বড় কৃষকের কাছ থেকে জল কিনতে হতো এবং যা দাম চাইত, তাই দিতে হতো। ইউরিয়া .... বড় কৃষকদের ইউরিয়া পেতে কোনও সমস্যা হতো না। ছোট কৃষককে সারারাত লাইনে দাঁড়াতে হতো। তাতে মারামারি হতো এবং কখনও কখনও বেচারা ইউরিয়া ছাড়াই বাড়ি ফিরে আসত। আমরা ক্ষুদ্র কৃষকদের অবস্থা জানি ... ২০১৪ সালের পরে আমরা কিছু পরিবর্তন করেছি, আমরা ফসল বীমা প্রকল্পের ক্ষেত্র প্রসারিত করেছি যাতে কৃষকরা ... ক্ষুদ্র কৃষকরাও এর সুবিধা নিতে পারেন এবং খুব সামান্য অর্থ দিয়ে এই কাজ শুরু হয়েছিল এবং গত ৪-৫ বছরে, ফসল বীমা প্রকল্পের আওতায় ৯০ হাজার কোটি টাকার ক্লেম কৃষকরা পেয়েছেন। ঋণ মকুবের চেয়েও এই সংখ্যা অনেক বেশি।

তারপরে কিসান ক্রেডিট কার্ড দেখুন। আমাদের এখানে কিসান ক্রেডিট কার্ড তো হল কিন্তু তা বড় কৃষকদের হাতেই গেল এবং তাঁরা ব্যাংক থেকে খুব কম সুদে, কিছু রাজ্যে তো শূন্য শতাংশ সুদে তাঁরা অর্থ পেতেন এবং তাঁদের যে কোনও ব্যবসায় সেই টাকা ব্যবহৃত হত। এটা ক্ষুদ্র কৃষকদের ভাগ্যে ছিল না, আমরা ঠিক করেছিলাম যে আমরা ভারতের প্রত্যেক কৃষককে ক্রেডিট কার্ড দেব। শুধু তাই নয়, আমরা এর বিস্তার করে মৎস্যজীবীদেরও যোগ করেছি যাতে তাঁরাও এর সুবিধা নিতে পারেন। এবং ১.৭৫ কোটির বেশি কৃষকদের কাছে কিষান ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা পৌঁছে গেছে এবং অন্যরাও রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছেন যাতে তা লাগু করা হয় যাতে আরও বেশি কৃষকরা এর থেকে উপকৃত হতে পারেন। এবং রাজ্যগুলি যত বেশি সাহায্য করবে, তত বেশি কাজ হবে। একইভাবে, আমরা একটি প্রকল্প নিয়ে এসেছি… প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি যোজনা। এর মাধ্যমে, টাকা সরাসরি কৃষকের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যায়। সে যাচ্ছে এবং তা দরিদ্র কৃষকদের কাছে, যাঁরা কখনও এই ধরণের সাহায্য পান নি। এরকম দশ কোটি পরিবার রয়েছে যারা এতে উপকৃত হয়েছেন।

আর পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতি মাঝখানে না এলে, বাংলার কৃষকরাও এরসঙ্গে যুক্ত হলে, এই সংখ্যা আরও বেশি হত এবং এখনও পর্যন্ত এই কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা চলে যেত। এই টাকা দরিদ্র ছোট কৃষকদের কাছে গেছে। আমাদের সমস্ত প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দু হ'ল সয়েল হেল্থ কার্ড। আমরা ১০০ শতাংশ সয়েল হেল্থ কার্ডের বিষয়ে কথা বলেছি, যাতে আমাদের ক্ষুদ্র কৃষকেরা জানতে পারে তাঁদের জমি কীরকম, কোন ফসল উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। আমরা ১০০ শতাংশ সয়েল হেল্থ কার্ডের জন্য কাজ করেছি, একইভাবে আমরা ইউরিয়ার ১০০ শতাংশ নিম লেপযুক্ত ইউরিয়া করে দিয়েছি। ১০০ শতাংশের পিছনে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল যে গরিব থেকে গরিব কৃষকদের কাছে ইউরিয়া পৌঁছতে কোনও অসুবিধা না হয়। ইউরিয়া ডাইভার্ট হওয়া বন্ধ হোক। এবং আমরা প্রথমবারের জন্য ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য পেনশন সুবিধা প্রকল্প নিয়ে এসেছি এবং আমি দেখছি যে আমাদের ক্ষুদ্র কৃষকরাও ধীরে ধীরে যোগ দিচ্ছেন। একইভাবে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা ....এই প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা, এটা কেবল একটা রাস্তা নয়, কৃষকদের জীবন পরিবর্তনের জন্য এটি একটি বিশাল সুযোগ। আমরা প্রথমবার কিষান রেলের পরিকল্পনা করেছিলাম। ছোট কৃষকদের পণ্য বিক্রি হয় না। আজ, কিষান রেলের মাধ্যমে, গ্রামের কৃষকরা মুম্বাইয়ের বাজারে তাঁদের পণ্য বিক্রি করতে শুরু করেছেন, ফল এবং শাকসবজি বিক্রি করতে শুরু করেছেন। এতে উপকার হচ্ছে, ক্ষুদ্র কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। কিষান উড়ান প্রকল্প .... কিষান উড়ান প্রকল্পের আওতায় বিমানের মাধ্যমে, যেমন আমাদের পূর্বোত্তোর অঞ্চলের এতো দারুণ সব জিনিস, তবে পরিবহন ব্যবস্থার অভাবে সেখানকার কৃষক আমাদের সুবিধা নিতে পারেন না। আজ তাঁরা কিষান উড়ান প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। প্রত্যেকে ক্ষুদ্র কৃষকদের সমস্যার সঙ্গে পরিচিত ... সময়ে সময়ে তাঁদের ক্ষমতায়নের দাবিও উঠেছে।
আমাদের শ্রদ্ধেয় শরদ পাওয়ারজি এবং কংগ্রেসের সকলে ... প্রত্যেক সরকার কৃষিক্ষেত্রে সংশোধনের পক্ষে কথা বলেছে। কেউ পিছিয়ে নেই কারণ প্রত্যেকে মনে করেন এটা করতে না পারা আলাদা জিনিস, তবে হওয়া উচিত, এটা সবাই বলেছেন এবং এটা আজকে নয়, যখন যে যেখানে ছিল সবাই বলেছে। আর শরদ পাওয়ারজি তো এটাও বলেছিলেন যে আমি সংশোধনের পক্ষে আছি। ঠিক আছে, পদ্ধতি নিয়ে তাঁর মনে একটা প্রশ্ন রয়েছে তবে উনি সংশোধনের বিরোধিতা করেননি। আর এ কারণেই আমি মনে করি আমাদের সহকর্মী শ্রীমান সিন্ধিয়াজি এখানে খুব ভালো করে, এই আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে…… গত দু'দশক ধরে এই সমস্ত জিনিস ধারাবাহিকভাবে চলছে, এমন কি নয় যে আমরা পৌঁছানোর পরেই শুরু হয়েছে। সবাই বলেছে এবং প্রত্যেকে বলেছে যে এখন সময় এসেছে, এবার হয়ে যাবে। এটা হতেই পারে যে কমা ফুলস্টপ আলাদা হতে পারে, তবে কেউ দাবি করতেই পারে না যে ভাই আমাদের সময়ে খুব ভাল ছিল, আমিও দাবি করতে পারি না যে আমাদের সময় খুব ভালো ছিল দশ বছর পরে কোনও পরিবর্তন আসতে পারে না। তা নয়, এই সমাজ জীবন পরিবর্তনশীল।

বর্তমানে, আমাদের যেটা ঠিক মনে হল, চল আমরা এখানেও সংশোধন করি ... নতুন জিনিস যুক্ত করলে তবেই তো অগ্রগতির পথ প্রশস্ত হবে... বাধা দিলে অগ্রগতি হবে কী করে। এবং তাই আমি অবাক হয়ে গেলাম যে হঠাৎ ইউটার্ন নিয়ে নিলো কেন? ঠিক আছে, এখন আমরা আন্দোলনের অজুহাতে এই সরকারের বিরোধিতা করে নিই, তবে একইসঙ্গে কৃষকদের বোঝাই, ভাই পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন, অনেক বছর হয়ে গেছে, নতুন জিনিস যুক্ত করতে হবে। তবেই দেশ এগিয়ে যাবে। তবে এখন আমার মনে হয় যে রাজনীতি এতটাই প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে যে আমাদের নিজস্ব মূল্যবোধ ভুলে গেছি। তবে যাঁরা এটা করছে ভালো। শ্রদ্ধেয় ডঃ মনমোহন সিংজি এখানে উপস্থিত আছেন, আমি আজ তাঁর একটি উদ্ধৃতি পড়তে চাই। এটা হতে পারে যে যাঁরা ইউটার্ন করেছেন, আমার কথা না মানুন, মনমোহন সিংজির কথা নিশ্চয় শুনবেন। তারা প্রয়োজনটি মেনে নেবেন,
"১৯৩০ এর সময়ের অনমনীয় বিপণন ব্যবস্থার জন্য আমাদের কৃষকরা তাঁদের পণ্য সেখানে বিক্রি করতে পারেন না যেখানে তাঁরা সর্বোচ্চ দাম পাবেন। আমাদের উদ্দেশ্য এর অপসারণ.... আমাদের উদ্দেশ্যে সেই সমস্ত প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেলা যা ভারতের কমন মার্কেট হয়ে ওঠার সম্ভাবনায় বাধার সৃষ্টি করে। "
এটা শ্রদ্ধেয় মনমোহন সিংজির উক্তি। শ্রদ্ধেয় মনমোহন সিংজি কৃষককে পণ্য বিক্রির স্বাধীনতা, ভারতকে একটি সম্মিলিত কৃষি বাজার দেওয়ার ভাবনা ব্যক্ত করেছিলেন। এবং আমরা সেই কাজ করছি। এবং আপনাদের গর্বিত হওয়া উচিত ... দেখুন ... শ্রদ্ধেয় মনমোহন সিংজি বলেছিলেন ,মোদীকে সেটা করতেই হল। আরে, গর্বিত হোন। এবং মজার বিষয় হ'ল যাঁরা রাজনৈতিক বাকবিতন্ডা করেন তাঁরাও তাদের রাজ্যে সুযোগ বুঝে এর মধ্যে কিছু অন্ততঃ করেছেন। এখানে প্রত্যেকে, যাঁরা বিরোধী দলে রয়েছেন, তাঁদের সরকার যে রাজ্যে রয়েছে, তাঁরাও এরমধ্যে কিছু সংশোধন করেছেন। তাঁরাও জানে যে এটাই উপায়। এবং আমি দেখেছি যে এই আলোচনায় আইনের কর্মশক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়নি, অভিযোগটি একই তবে তার পদ্ধতি ঠিক ছিল না। তাড়াহুড়ো করে লাগু করা হল, সে তো পরিবারেও বিয়ে ঠিক হলে পিসি রাগ দেখায় যে আমায় কেন বললে না, সে তো হয়েই থাকে। বড় পরিবারে এরকম হবেই।

আসুন আমরা আরও কয়েকটি বিষয়ে কথা বলি, দেখুন… দুধ উৎপাদন… কোনও বাঁধনের মধ্যে নেই। না পশুপালকের আওতায় বাঁধা না দুধের আওতায় বাঁধা, তবে মজা দেখুন .. দুধের ক্ষেত্রে, বেসরকারি বা সমবায় দুই মিলে এমন দৃঢ় চেইন গঠন করেছে, দুজনে মিলেই এই কাজ করছে এবং আমাদের দেশে একটি দুর্দান্ত সাপ্লাই চেইন তৈরি করেছে। আমরা এটা করেছি এবং যা ভাল সেটা আমরা...এটা আমার সময়ে তৈরি হয় নি। আপনারা এটা নিয়ে গর্ব করতে পারেন যে আমার আসার আগে এটা হয়েছে। আমাদের গর্ব করা উচিত। বেশিরভাগ বাজারে ফল-সবজি ব্যবসায়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকে, বাজার থেকে হস্তক্ষেপ সরে গেছে, তার সুবিধাও পাওয়া যাচ্ছে। দুধ ব্যবসায়ী, সফল শাকসব্জী বিক্রেতা, পশুপালক বা কোনও কৃষকের জমি দখল হয়ে যায়, তাদের পশু দখল হয়ে যায়? না, হয় না। দুধ বিক্রি হয়, গবাদি পশু বিক্রি হয় না। দুগ্ধ শিল্পের আমাদের দেশে কৃষি অর্থনীতির মোট মূল্যের ২৮ শতাংশেরও বেশি। অর্থাৎ, আমরা কৃষিকাজের এত আলোচনা করি, এই দিকটা ভুলেই যাই। ২৮ শতাংশ অবদান রয়েছে। আর প্রায় আট লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা। যত দামের দুধ হয় তার দাম শস্য ও ডাল দুইয়ের চেয়েও বেশি। আমরা এই বিষয়টি কখনো দেখি না। গবাদিপশু পালকেরা সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েছেন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক যাঁরা শস্য ও ডাল উৎপাদন করেন, কেন তারা স্বাধীনতা পাবেন না? এখন, যদি আমরা এই প্রশ্নের উত্তরগুলি খুঁজে পাই তবেই আমরা সঠিক পথে চলব।

শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

এটি সত্য যে আমাদের স্বভাবই এরকম, যে আমাদের বাড়িতেও যদি কিছুটা পরিবর্তন করতে হয় তবে ঘরে উত্তেজনা তৈরি হয়। এখানে চেয়ার কেন রাখা হয়েছে, এখানে টেবিল কেন… এটা বাড়িতেও হয়। এত বড় একটা দেশ এবং আমরা যে ধরণের পরম্পরায় বড় হয়েছি, এটা স্বাভাবিক আমি বিশ্বাস করি যে যখনই কোনও নতুন কিছু আসে তখন সবসময় কিছুটা বিভ্রান্তি হয়। তবে সেই দিনগুলোর কথা মনে করুন যখন সবুজ বিপ্লবের কথা বলা হতো। এমনকি সবুজ বিপ্লবের সময় কৃষিক্ষেত্রে যে সংশোধন হয়েছিল, আশঙ্কা, ছিল, আন্দোলন হয়েছিল সেগুলিও নথিবদ্ধ রয়েছে, এবং তা দেখার মতো। কৃষি সংস্কারের জন্য কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে শাস্ত্রীজির এমন অবস্থা ছিল তাঁর সহকর্মীদের কেউই কৃষিমন্ত্রী হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। কারণ মনে হতো যে যদি হাত পুড়ে যায় এবং কৃষকরা ক্ষুব্ধ হন, তবে রাজনীতি পুরো শেষ হয়ে যাবে। এগুলো শাস্ত্রীজির সময়ের ঘটনা, এবং অবশেষে শাস্ত্রীজি, শ্রী সুব্রমনিয়ামজিকে কৃষিমন্ত্রী বানান এবং তিনি সংশোধনের কথা বলেন, যোজনা কমিশনও এর বিরোধিতা করেছিল, মজা দেখুন .... যোজনা কমিশনও এর বিরোধিতা করেছিল, অর্থ মন্ত্রকসহ পুরো মন্ত্রিসভায় বিরোধিতার আওয়াজ ছিল। তবে দেশের উন্নতির জন্য শাস্ত্রীজি এগিয়ে গিয়েছিলেন এবং বাম দলগুলি আজ যে ভাষায় কথা বলে, সে সময়ও একই কথা বলত। তারা বলত যে আমেরিকার নির্দেশে শাস্ত্রীজি এটা করছেন। কংগ্রেস আমেরিকার নির্দেশে এটা করছে। সারা দিন… আজ আমি আমার অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে, আগে আপনার অ্যাকাউন্টে ছিল। আমাদের কংগ্রেস নেতাদের সবাইকে আমেরিকার এজেন্ট বলা হয়েছিল। এই সমস্ত বিষয়ে বামপন্থীরা যে ভাষায় আজ কথা বলেন, সেই সময়েও একই ভাষা বলতেন। কৃষি সংশোধনকে ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য ধ্বংসাত্মক বলা হয়েছিল। সারাদেশে হাজার হাজার বিক্ষোভ হয়েছিল। বড় আন্দোলন হয়েছিল। সেই পরিবেশেই লাল বাহাদুর শাস্ত্রীজি এবং এর পরে যে সরকার যা করেছিল, তার ফল হল আমরা একসময় পিএল -৪৮০ বাইরে থেকে আনাতাম, আজ আমাদের দেশের কৃষকরা তাদের জমি থেকে উৎপাদন করে তা খান। রেকর্ড উৎপাদন সত্ত্বেও, আমাদের কৃষিক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে, কেউ অস্বীকার করতে পারে না যে সমস্যা নেই, তবে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে সমস্যার সমাধান করতে হবে। এবং আমি বিশ্বাস করি যে এখন সময় আর খুব বেশি অপেক্ষা করবে না।

আমাদের রাম গোপালজি খুব ভাল বলেছেন ... তিনি বলেছিলেন যে আমাদের কৃষকরা করোনার লকডাউনে রেকর্ড উৎপাদন করেছে। করোনার যুগেও সরকার বীজ, সার, সমস্ত কিছুর সরবরাহের ঘাটতি ঘটাতে দেয়নি, কোনও সংকট আসতে দেয়নি এবং এর ফলস্বরূপ দেশে খাদ্য ভাণ্ডার মজুদ রয়েছে। এই করোনার সময়েই পণ্যের রেকর্ড ক্রয়ও হয়েছিল। সুতরাং আমি বুঝতে পারি যে আমাদের নতুন পদক্ষেপের খোঁজে এগিয়ে যেতে হবে এবং আমি যেমন বলেছি যে এখানে প্রচুর আইন রয়েছে, প্রতিটি আইন দুই বছর পরে, পাঁচ বছর পরে, দুই মাস, তিন মাস পরে, সংশোধন করাই হয়। আমরা স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বাস করি না, যখন ভাল পরামর্শ আসে, ভাল সংশোধন হয়। সরকার ভাল পরামর্শ গ্রহণও করেছে এবং শুধু আমাদের নয়, প্রতিটি সরকারই ভাল পরামর্শ গ্রহণ করেছে, এটিই গণতান্ত্রিক রীতি। এবং তাই আমাদের সবার উচিত ভাল করার জন্য ভাল পরামর্শ সহ ভাল পরামর্শের প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। আমি আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আসুন আমরা আন্দোলনকারীদের বোঝাই, আমাদেরকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, কৃষিক্ষেত্রে সমস্যা সমাধান করতে হবে। আজ যদি না হয় তবে আগামীকাল যে এখানে থাকবে, এই কাজটা কাউকে করতেই হবে। আজ আমি করেছি, গালাগালি আমার অ্যাকাউন্টে যেতে দিন ... তবে আজ এই ভাল কাজে আমার সঙ্গে যোগ দিন। আমার অ্যাকাউন্টে খারাপ থাকুক, আপনার অ্যাকাউন্টে ভাল থাকুক ... আসুন একসঙ্গে চলি। এবং আমি, আমাদের কৃষিমন্ত্রী ক্রমাগত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলছি। বারবার বৈঠক হচ্ছে। এবং এখনও পর্যন্ত কোনও উত্তেজনা দেখা দেয়নি। একে অপরকে বোঝার এবং ব্যাখ্যা করার চেষ্টা চলছে। এবং আমরা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের কাছে ক্রমাগত আবেদন করছি যে আন্দোলন করা আপনার অধিকার। তবে এইভাবে, বয়স্করা ওখানে বসে রয়েছেন, তা ঠিক নয়। আপনি তাঁদের ফেরত পাঠান। আপনারা আন্দোলন শেষ করুন, একসঙ্গে বসে সামনের পথ নিয়ে আলোচনা করা যাবে। আমরা এই সব বলেছি এবং আমি এখনও তাদেরকে সদনের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান,

এটা নিশ্চিত যে আমাদের কৃষিকে সমৃদ্ধ করার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার এটাই সময়, আমাদের এই সময় হারালে হবে না। আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত .. দেশকে পিছনে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়। সমর্থক হোন, বিরোধী হোন, আন্দোলনকারী হোন, আমাদের এই সংশোধনগুলোকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত। এবং একবার দেখা উচিত যে আমরা এই পরিবর্তন থেকে উপকৃত হব কি না। যদি কোনও ঘাটতি থাকে তবে সেটা ঠিক করা হবে এবং কোনও দুর্বলতা থাকলে তা কঠোর করা হবে। এরকম নয় যে সমস্ত দরজা বন্ধ হয়ে গেছে ... তাই আমি বলছি ... আমি আশ্বাস দিচ্ছি যে মান্ডিগুলো আরও আধুনিক হবে, আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে, এবার আমরা বাজেটেও এর জন্য ব্যবস্থা রেখেছি। শুধু এটাই নয় এমএসপি আছে, এমএসপি ছিল, এমএসপি থাকবে। আমরা এই সদনের পবিত্রতা বুঝি… ৮০ কোটিরও বেশি মানুষ, যাঁদের কম দামে রেশন দেওয়া হয়। তাদেরও চালিয়ে যাওয়া হবে। সুতরাং, দয়া করে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে যোগ দেবেন না। কারণ দেশ আমাদের একটা নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়েছে। কৃষকদের আয় বাড়ানোর জন্য অন্যান্য পদক্ষেপের ওপরেও আমাদের জোর দেওয়া উচিত। জনসংখ্যা বাড়ছে।পরিবারের মধ্যে সদস্যের সংখ্যা বাড়ছে। জমির টুকরো হয়ে ভাগ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কৃষকদের ওপর বোঝা কমাতে কিছু করতে হবে এবং আমরা আমাদের কৃষকের পরিবারও যাতে উপার্জন করতে পারে, আমরা আরও বেশি সুযোগ যাতে দিতে পারি। এঁদের সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে আমাদের কাজ করতে হবে এবং আমি বিশ্বাস করি যে আমরা যদি দেরি করি তবে। আমরা যদি আমাদের নিজস্ব রাজনৈতিক সমীকরণের মধ্যে আটকে থাকি তবে আমরা কৃষকদের অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেব। দয়া করে উজ্জ্বল কৃষকদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আমাদের এগুলো এড়ানো উচিত। আমি সবার কাছে আবেদন করছি। আমাদের এই সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে।

শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

আমাদের কৃষিক্ষেত্র যাতে পরিণত হয় সেজন্য আমাদের কৃষি খাতের পাশাপাশি দুগ্ধ ও পশুপালনকেও প্রসারিত করতে হবে, একইভাবে আমরা 'ফুট ও মাউথ' রোগের জন্য একটি বিশাল অভিযান করেছি যা গবাদী কৃষক, কৃষকের সঙ্গে যুক্ত সকলেই উপকৃত হবেন। আমরা মৎস্যপালনকেও আলাদা গুরুত্ব দিয়েছি, পৃথক মন্ত্রক গঠন করেছি এবং মৎস্য প্রকল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। যাতে এই পুরো ক্ষেত্র একটা নতুন শক্তি পায়। মিষ্টি বিপ্লবের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে এবং তাই ভারতে এর জন্য খুব বেশি জমিরও দরকার নেই, তারা নিজের জমির এক কোণায় এটা করলেও তারা বছরে ৪০-৫০ হাজার, লক্ষ টাকা, ২ লক্ষ টাকা উপার্জন করতে পারে।সেরকমই আমাদের কাছে মিষ্টি মধুর জন্য, মৌমাছির মোমের জন্য, বিশ্বে মৌমাছির মোমের চাহিদা রয়েছে। ভারত মৌমাছি মোম রপ্তানি করতে পারে। আমরা তার জন্য পরিবেশ তৈরি করেছি এবং যদি কৃষকের জমিতেই, ছোট কৃষক হলে তবে সে নতুন আয়ও করতে পারে, আমাদের এটা যোগ করতে হবে। এবং মৌমাছি পালন করতে কয়েকশ একর জমির প্রয়োজন হয় না। কৃষক নিজের জমিতেই আরামে এটা করতে পারেন। সৌর পাম্প ... আমরা বলছি যে অন্নদাতা শক্তিদাতা হয়ে উঠুক। নিজের ক্ষেতে সৌর ব্যবস্থার ব্যবহার করে সৌর উর্জা তৈরি করে, সোলার পাম্প চালিয়ে জলের প্রয়োজন মেটাতে পারে। নিজের ব্যয়, নিজের বোঝা কম করতে পারে। এবং যদি একটা শস্য নেয়, তো তা দুটি করে নিক, দুটি নিলে তা তিন করে নিক, আপনি যদি একটা সামান্য প্যাটার্নে পরিবর্তন করতে চান তবে আপনি পরিবর্তন করতে পারেন। আমরা এই পথে যেতে পারি। এবং একটা বিষয় হ'ল, ভারতের শক্তি এধরনের সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা এবং নতুন উপায় সন্ধান করার ক্ষেত্রে ছিল এবং তা আরও বিস্তারিত করা হবে। তবে কিছু মানুষ আছেন যাঁরা ভারতকে অস্থিতিশীল, অস্থির রাখতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের এই মানুষদের চেনা প্রয়োজন।

আমাদের ভোলা উচিত নয় পাঞ্জাবের সঙ্গে কী হয়েছিল। দেশ ভাগের সময়, পাঞ্জাব সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। ৮৪-এর দাঙ্গার সময়, বেশিরভাগ অশ্রু পাঞ্জাব থেকেই বয়েছিল, পাঞ্জাব সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনার শিকার হয়েছিল। জম্মু-কাশ্মীরে যা ঘটেছিল, নিরীহদের হত্যা করা হয়েছিল। বোমা-বন্দুক এবং গুলি চালানোর ব্যবসা যা পূর্বোত্তর অঞ্চলে অব্যাহত ছিল। এই সমস্ত জিনিসই বিভিন্নভাবে দেশের ক্ষতি করেছে। এর পিছনে কারা ছিল, সর্বদা, প্রতিটি সরকার তা দেখেছে, জানার চেষ্টা করেছে। আর তাই আমরা ওই আবেগের সঙ্গে এই সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত এগিয়ে গিয়েছি এবং আমাদের ভুলে গেলে হবে না যে কিছু মানুষ, বিশেষত পাঞ্জাবের, বিশেষত শিখ ভাইদের মনে ভুল জিনিস ঢোকানোর চেষ্টা করছে। এই দেশ প্রত্যেক শিখের জন্য গর্বিত। তাঁরা দেশের জন্য কী করেননি আমরা তাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। গুরুদের মহান ঐতিহ্যের মধ্যে… .আমার পাঞ্জাবের রুটি খাওয়ার সুযোগ হয়েছে। আমি আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বছরগুলি পাঞ্জাবে কাটিয়েছি, তাই আমি জানি। এবং তাই কিছু মানুষ তাঁদের জন্য যে ভাষায় কথা বলে, যারা তাঁদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে, তা কখনই দেশের উপকারে আসবে না। তাই আমাদের এই বিষয়ে চিন্তা করা দরকার।

শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

আমরা কয়েকটি শব্দের সঙ্গে খুব পরিচিত - শ্রমজীবী, বুদ্ধিজীবী, এই সমস্ত শব্দের সঙ্গে পরিচিত। তবে আমি তা দেখতে পাচ্ছি গত কয়েক দিন ধরে দেশে একটি নতুন সম্প্রদায়ের জন্ম হয়েছে, একটি নতুন সংগঠনের উত্থান হয়েছে এবং তা হল আন্দোলনজীবী। আপনি এই গোষ্ঠীকে দেখতে পাবেন - আইনজীবীদের আন্দোলন হচ্ছে, তাঁদের সেখানেও দেখা যাবে; ছাত্র আন্দোলন হচ্ছে, তাঁদের সেখানেও দেখা যাবে; শ্রমিকদের আন্দোলন হচ্ছে, তাঁদের সেখানেও দেখা যাবে, কখনও পর্দার আড়ালে, কখনও পর্দার সামনে। একটা পুরো দল আছে যাঁরা আন্দোলনজীবী। তাঁরা আন্দোলন ছাড়া বাঁচতে পারেন না এবং আন্দোলনের মাধ্যমেই বেঁচে থাকার উপায় খুঁজে নেন। আমাদের এমন মানুষদের শনাক্ত করতে হবে, যাঁরা সর্বত্র পৌঁছে আদর্শগত অবস্থান প্রকাশ করেন , বিভ্রান্ত করেন, নতুন উপায় বলে দেন। দেশকে আন্দোলনজীবীদের হাত থেকে বাঁচাতে হবে, এর জন্য আমরা সবাই… এবং এটাই তাঁদের শক্তি… তাদের কী, নিজেরা কিছু করতে পারেন না, কোনো আন্দোলন চললে গিয়ে বসে যান। যতক্ষণ আন্দোলন চলে, তাঁদেরও চলে যায়। এই ধরণের মানুষদের চিহ্নিত করার খুব প্রয়োজন। এই সমস্ত আন্দোলনজীবী পরজীবী। এবং এখানে প্রত্যেকেই আমার কথা উপভোগ করবেন কারণ আপনারা যেখানেই সরকার পরিচালনা করেন সেখানে আপনাদেরও এই ধরনের পরজীবী আন্দোলনজীবীর অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। এবং আমিও একইভাবে একটা নতুন জিনিস দেখছি। দেশ অগ্রগতি করছে, আমরা এফবিআইয়ের কথা বলছি, বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের কথা বলছি। তবে আমি দেখতে পাচ্ছি যে আজকাল একটা নতুন এফডিআই ময়দানে এসেছে। এই নতুন এফবিআইয়ের থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন, এফডিআই প্রয়োজন। তবে যে নতুন এফডিআই দেখা হচ্ছে, তার থেকে অবশ্যই এড়িয়ে চলা উচিত এবং এই নতুন এফডিআই হ'ল বিদেশী ধ্বংসাত্মক আদর্শবাদ, এবং তাই এই এফডিআই থেকে দেশকে বাঁচাতে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ অর্থনীতির নিজস্ব মূল্য রয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি আমাদের স্বনির্ভর ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। স্বনির্ভর ভারত, এটা কোনও সরকারি কর্মসূচী হতে পারে না এবং হওয়াও উচিত নয়। এটা ১৩০ কোটি দেশবাসীর দৃঢ় সংকল্প হওয়া উচিত। আমাদের গর্ব করা উচিত এবং এরমধ্যে কোনও দ্বিধা না থাকা উচিত। আর মহাত্মা গান্ধীর মতো মহাপুরুষরা আমাদের এই পথ দেখিয়েছিলেন। আমরা যদি সেখান থেকে কিছুটা সরে গিয়ে থাকি, তবে সেই পথে ফিরে আসার প্রয়োজন রয়েছে এবং আমাদের স্বনির্ভর ভারতের পথে এগোতে হবে। যদি গ্রাম এবং শহরের মধ্যে ব্যবধান দূর করতে হয় তবে তার জন্যেও আমাদের স্বনির্ভর ভারতের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা যখন এই জিনিসগুলি নিয়ে এগিয়ে যাবো, তখন আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস আরও বাড়বে। যেমন প্রশ্নোত্তর পর্বে জল-জীবন মিশন নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল - এত অল্প সময়ে তিন কোটি পরিবারকে পানীয় জল সরবরাহ এবং নলের সংযোগ দেওয়ার কাজ করা হয়েছে। স্বনির্ভরতা তখনই সম্ভব যখন প্রত্যেকে অর্থনীতিতে অংশ নেয়। আমাদের সোনেল বোন তাঁর বক্তৃতায় মেয়ে-বোনদের অংশগ্রহণের ওপর ফোকাসের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলেন।

করোনার যুগে রেশন হোক, আর্থিক সহায়তা বা বিনামূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার হোক - সরকার আমাদের মা-বোনদের যাতে কোনও অসুবিধে না হয় সেজন্য পুরোপুরি চেষ্টা করেছে এবং তারা একজোট হয়ে এই সব বিষয় সামলাতে সাহায্য করেছে। ঠিক যেমন এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের নারী শক্তি পরিবারকে অত্যন্ত ধৈর্য ধরে পরিচালনা করেছেন, পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন; করোনার এই যুদ্ধে প্রতিটি পরিবারের মাতৃশক্তি একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে। এবং তাঁদের কোনও প্রসংশাই যথেষ্ট নয়। মা ও বোনদের আত্মবিশ্বাস এবং আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের মা ও বোনেরা স্বনির্ভর ভারতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, আমি নিশ্চিত। আজ যুদ্ধক্ষেত্রেও আমাদের মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। যে নতুন শ্রম আদালত তৈরি করা হয়েছে, সেখানে মেয়েদের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। মুদ্রা যোজনা থেকে নেওয়া ৭০ শতাংশ ঋণ, তা আমাদের বোনেরা নিয়েছেন, এটা একধরনের সংযোজন। প্রায় ৭কোটি মহিলার অংশগ্রহণে ৬০ লক্ষেরও বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠী আজ স্বনির্ভর ভারতের প্রচেষ্টাকে নতুন শক্তি দিচ্ছে।

আমরা ভারতের যুবশক্তিকে যত বেশি গুরুত্ব দেবো, তত বেশি সুযোগ আমরা তাঁদের দিতে পারব, আমি মনে করি তাঁরা আমাদের দেশের, ভবিষ্যতের জন্য, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের এক শক্ত ভিত তৈরি করবে। যে নতুন কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি এসেছে, তাতেও আমাদের তরুণ প্রজন্মকে নতুন সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এবং আমি খুশি যে দীর্ঘমেয়াদী আলোচনার পর শিক্ষানীতি দেশে যেভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছে তা একটা নতুন বিশ্বাস তৈরি করেছে। এবং আমি বিশ্বাস করি যে এই নতুন শিক্ষানীতি, নতুন কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি আমাদের দেশে একটি নতুন উপায়ে পড়াশোনার একটি নতুন পদ্ধতির উদ্ভব।

আমাদের এমএসএমই খাত - এমএসএমই সর্বাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে। এবং যখন করোনার সময়ে 'স্টিমুলাস' নিয়ে কথা হয়েছিল, তখনও এমএসএমইদেরই পুরো মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল এবং তার ফলাফল হ'ল আমাদের এমএসএমইগুলি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে এবং আমরা তা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

আমরা 'সবকা সাথ - সবকা বিকাশ - সবকা বিশ্বাস' মন্ত্রটি অনুসরণ করে চলেছি। এবং এর ফলাফল হ'ল পূর্ব-উত্তর অঞ্চল বা নকশাল প্রভাবিত অঞ্চল, ওই অঞ্চলে ধীরে ধীরে আমাদের সমস্যা কম হচ্ছে এবং কম সমস্যার কারণে সুখ এবং শান্তির সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার ফলে আমাদের এই সমস্ত বন্ধুদের উন্নয়নের মূলধারায় ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হচ্ছে এবং ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতে পূর্ব ভারত খুব বড় ভূমিকা পালন করবে। তা আমি স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাচ্ছি। আর আমরা তা করবোও।

শ্রদ্ধেয় গুলাম নবীজির কথা শুনছিলাম। এমনিতেই ভীষণ নরম, মৃদুতা এবং কখনও কঠোর শব্দ ব্যবহার না করা এগুলো গুলাম নবীজির একটি বিশেষত্ব। এবং আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের সকল সাংসদদের তাঁর কাছ থেকে শেখা উচিত এবং আমি সেজন্য তাঁকে শ্রদ্ধাও করি। এবং তিনি জম্মু-কাশ্মীরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের প্রশংসাও করেছেন। তিনি বলেছিলেন যে দীর্ঘদিন ধরে এবং তিনি এও বলেছিলেন যে জম্মু-কাশ্মীর আমার হৃদয়ে একটি বিশেষ জায়গা রয়েছে এবং তা স্বাভাবিক, তাঁর হৃদয়ে জম্মু ও কাশ্মীর যেরকম, পুরো ভারতের হৃদয়েও একই রকম অনুভূতিতে ভরা।

জম্মু-কাশ্মীর স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে, সেই লক্ষ্যে - সেখানে আমাদের পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে, বিডিসি নির্বাচন, ডিডিসি নির্বাচন এবং গুলাম নবীজি এগুলোর প্রশংসাও করেছেন। এই প্রশংসা জন্য আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে আমার ভয় লাগছে, আপনি প্রশংসা করেছেন। আমি নিশ্চিত যে আপনার দলের সদস্যরা এটা যথাযথ চেতনায় নেবেন, ভুল করে জি -২৩ এর মতামত গ্রহণ করে তা পাল্টে দেবে না।

শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

করোনার কঠিন সময়ে সীমান্তেও চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা হয়েছিল। আমাদের বীর সৈনাদের সাহস এবং দক্ষতা এর সঠিক উত্তর দিয়েছে। প্রত্যেক ভারতীয় এ নিয়ে গর্বিত। আমাদের সেনারা কঠিন পরিস্থিতিতেও দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। সমস্ত বন্ধুরাও আমাদের সৈন্যদের বীরত্বের প্রশংসা করেছে, আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এলএসি সম্পর্কে ভারতের অবস্থান খুব স্পষ্ট রয়েছে এবং দেশ তা দেখেছে এবং গর্বিতও। সীমান্ত পরিকাঠামো এবং সীমান্ত সুরক্ষার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিতে কোনও শিথিলতার প্রশ্নই আসে না। যারা আমাদের চিন্তাভাবনা, আমাদের উদ্দেশ্য জানে তারা কখনই এই বিষয়ে আমাদের প্রশ্ন করবে না, তারা জানে যে আমরা এরজন্য দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো। আর তাই আমরা এবিষয়ে পিছিয়ে নেই।

শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

আমি এই সদনে সর্বোত্তম আলোচনার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানাই এবং শেষে একটি মন্ত্রের উল্লেখ করে আমার বক্তব্য শেষ করব। আমাদের এখানে বেদে একটা মহান ভাবনা পাওয়া যায়। এই মন্ত্রটি আমাদের সকলের জন্য ৩৬ কোটি দেশবাসীর জন্য এই মন্ত্র অনেক বড় অনুপ্রেরণা। বেদের এই মন্ত্রটি বলে-

"অযুত অহং অযুত মে আত্মা অযুতং মে, অযুতং চক্ষু, অযুতং শ্রোত্রম।"

অর্থাৎ আমি একজন নই, আমি একা নই, আমি লক্ষ লক্ষ মানুষকে আমার সঙ্গে দেখতে পাই এবং অনুভব করি। সেজন্য আমার আধ্যাত্মিক শক্তি কোটি কোটির। আমার কাছে কয়েক কোটির দৃষ্টি রয়েছে, কয়েক কোটির শ্রবণ শক্তি এবং কর্ম শক্তি রয়েছে।

শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

বেদের এই চেতনা নিয়ে, এই চেতনা ১৩০ কোটিরও বেশি দেশবাসী নিয়ে ভারত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ১৩০ কোটি দেশবাসীর স্বপ্ন আজ ভারতের স্বপ্ন। আজ, ১৩০ কোটি দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষা এই দেশের আকাঙ্ক্ষা। আজ, ১৩০ কোটি দেশবাসীর ভবিষ্যত ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের গ্যারান্টি। এবং তাই আজ, যখন দেশ নীতি তৈরি করছে, প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তা কেবলমাত্র তৎকালীন লাভ ক্ষতির জন্য নয়, দীর্ঘমেয়াদী এবং ২০৪৭ এর জন্য যখন দেশ স্বাধীনতার শতাব্দী উদযাপন করবে, তখন দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের প্রস্তুতি করছে। এটা করে, ভিত্তি স্থাপন করা হচ্ছে। এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা অবশ্যই এই কাজটি সম্পন্ন করতে সফল হব।

মাননীয় রাষ্ট্রপতিজির সম্বোধনের জন্য আমি তাঁকে আবারও ধন্যবাদ জানাই এবং তাঁকে অভ্যর্থনা জানালাম এবং যেভাবে সভায় আলোচনা হয়েছে এবং আমি আপনাকে সত্যি বলছি, আলোচনার মান ভাল ছিল, পরিবেশও ভাল ছিল। এটা ঠিক যে কত লোকের কী লাভ হলো, আমার ওপরও কত আক্রমণ করা হয়েছিল, যা কিছু বলা সম্ভব বলা হয়েছে, তবে আমি খুব খুশি যে কমপক্ষে আমি আপনার কাজে তো লাগলাম, করোনার কারণে আপনাদের মনে তেমন কিছুই ঘটে না, আপনারা আটকে থাকেন নিশ্চয়, এবং ঘরেও টুকটাক লেগেই থাকে। এখন সেই রাগ বেরিয়ে গেল, তখন আপনাদের মনও হালকা হয়ে গেছে। আপনারা অবশ্যই বাড়ির ভিতরে সুখে সময় কাটাচ্ছেন। সুতরাং আপনারা যে আনন্দ পেয়েছেন, আমি তার জন্য কাজ করতে পেরে, আমি এটাকে আমার সৌভাগ্য মনে করি এবং আমি চাইব আপনারা এই আনন্দ উপভোগ করা চালিয়ে যান। আলোচনা চালিয়ে যান, ধারাবাহিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যান। সদনে প্রাণসঞ্চার করুন, মোদী আছে, সুযোগ নিন।

অনেক ধন্যবাদ

 

Explore More
শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দিরের ধ্বজারোহণ উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ

জনপ্রিয় ভাষণ

শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দিরের ধ্বজারোহণ উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ
Regional languages take precedence in Lok Sabha addresses

Media Coverage

Regional languages take precedence in Lok Sabha addresses
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
Cabinet approves three new corridors as part of Delhi Metro’s Phase V (A) Project
December 24, 2025

The Union Cabinet chaired by the Prime Minister, Shri Narendra Modi has approved three new corridors - 1. R.K Ashram Marg to Indraprastha (9.913 Kms), 2. Aerocity to IGD Airport T-1 (2.263 kms) 3. Tughlakabad to Kalindi Kunj (3.9 kms) as part of Delhi Metro’s Phase – V(A) project consisting of 16.076 kms which will further enhance connectivity within the national capital. Total project cost of Delhi Metro’s Phase – V(A) project is Rs.12014.91 crore, which will be sourced from Government of India, Government of Delhi, and international funding agencies.

The Central Vista corridor will provide connectivity to all the Kartavya Bhawans thereby providing door step connectivity to the office goers and visitors in this area. With this connectivity around 60,000 office goers and 2 lakh visitors will get benefitted on daily basis. These corridors will further reduce pollution and usage of fossil fuels enhancing ease of living.

Details:

The RK Ashram Marg – Indraprastha section will be an extension of the Botanical Garden-R.K. Ashram Marg corridor. It will provide Metro connectivity to the Central Vista area, which is currently under redevelopment. The Aerocity – IGD Airport Terminal 1 and Tughlakabad – Kalindi Kunj sections will be an extension of the Aerocity-Tughlakabad corridor and will boost connectivity of the airport with the southern parts of the national capital in areas such as Tughlakabad, Saket, Kalindi Kunj etc. These extensions will comprise of 13 stations. Out of these 10 stations will be underground and 03 stations will be elevated.

After completion, the corridor-1 namely R.K Ashram Marg to Indraprastha (9.913 Kms), will improve the connectivity of West, North and old Delhi with Central Delhi and the other two corridors namely Aerocity to IGD Airport T-1 (2.263 kms) and Tughlakabad to Kalindi Kunj (3.9 kms) corridors will connect south Delhi with the domestic Airport Terminal-1 via Saket, Chattarpur etc which will tremendously boost connectivity within National Capital.

These metro extensions of the Phase – V (A) project will expand the reach of Delhi Metro network in Central Delhi and Domestic Airport thereby further boosting the economy. These extensions of the Magenta Line and Golden Line will reduce congestion on the roads; thus, will help in reducing the pollution caused by motor vehicles.

The stations, which shall come up on the RK Ashram Marg - Indraprastha section are: R.K Ashram Marg, Shivaji Stadium, Central Secretariat, Kartavya Bhawan, India Gate, War Memorial - High Court, Baroda House, Bharat Mandapam, and Indraprastha.

The stations on the Tughlakabad – Kalindi Kunj section will be Sarita Vihar Depot, Madanpur Khadar, and Kalindi Kunj, while the Aerocity station will be connected further with the IGD T-1 station.

Construction of Phase-IV consisting of 111 km and 83 stations are underway, and as of today, about 80.43% of civil construction of Phase-IV (3 Priority) corridors has been completed. The Phase-IV (3 Priority) corridors are likely to be completed in stages by December 2026.

Today, the Delhi Metro caters to an average of 65 lakh passenger journeys per day. The maximum passenger journey recorded so far is 81.87 lakh on August 08, 2025. Delhi Metro has become the lifeline of the city by setting the epitome of excellence in the core parameters of MRTS, i.e. punctuality, reliability, and safety.

A total of 12 metro lines of about 395 km with 289 stations are being operated by DMRC in Delhi and NCR at present. Today, Delhi Metro has the largest Metro network in India and is also one of the largest Metros in the world.