Quoteযাঁরা নির্বাচনী রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন, তাঁদের দেশের কাজ এবং উন্নয়নের সঙ্গে সামিল করার সুযোগ করে দেয় রাজ্যসভা: প্রধানমন্ত্রী
Quoteদেশের ইতিহাসে রাজ্যসভা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এবং অনেক ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছে: প্রধানমন্ত্রী
Quoteআমাদের সংবিধান রচয়িতারা আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা হ’ল আমাদের কল্যাণকারী রাষ্ট্র গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী মোদী

মাননীয় সভাপতি মহোদয় এবং সম্মাননীয় সভাগৃহ, আপনাদের মাধ্যমে এই ২৫০তম অধিবেশনে উপস্থিত সমস্ত সাংসদদের আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। কিন্তু এই ২৫০টি অধিবেশন ধরে রাজ্যসভার দীর্ঘ যাত্রাপথে এখনও পর্যন্ত যাঁরাই অবদান রেখেছেন, তাঁরা সকলেই অভিনন্দনের অধিকারী, আমি তাঁদের সবাইকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।

সভাপতি মহোদয়, আপনি অত্যন্ত সুচারিতভাবে দুটি ভিন্ন ঘটনাকে যুক্ত করে নিজের বক্তব্য রাখছিলেন। আমার মনে হয়, দেশে যত কলমধারী মানুষ রয়েছেন, তাঁরা অবশ্যই এই ঘটনাটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে লক্ষ্য করেছেন এবং লিখবেন যে, ২৫০তম অধিবেশন এমনি এমনি পালন করা হয়নি; এটি একটি ভাবনার সফর হিসাবেও পরিগণিত হবে। আপনি যেমন বলেছেন, কখনও এমন বিল পেশ করা হয়েছিল, যা এই সভা থেকে অনুমোদন পাওয়ার সময়, তা অনেকটাই বদলে গেছে। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে থাকে আর এই সভাও পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে পরিবর্তিত করার চেষ্টা করতে থাকে। আমি মনে করি, এটা অনেক বড় ব্যাপার! আর সেজন্যই এই সভায় যত সদস্য প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই শুভেচ্ছার পাত্র। না হলে, কেউ ভাবতে পারেন যে, ২০ বছর আগে আমি এমন মত প্রকাশ করেছিলাম, এখন কিভাবে ভিন্ন মত প্রকাশ করতে পারি! কিন্তু আপনি যেমন সুচারুভাবে এই কথাকে তুলে ধরেছেন, তা আমাদের ভাবনা যাত্রার প্রতিবিম্ব, ভারতের উন্নয়ন যাত্রার প্রতিবিম্ব এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশে ভারত কিভাবে নতুন নতুন বিষয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার সামর্থ্য রাখে – এতে তারও প্রতিফলন ঘটেছে। এই প্রক্রিয়া এই সভায় সম্পাদিত হয়েছে বলে এই সভা নিজের জন্য গর্ব অনুভব করতে পারে।

আমার জন্য সৌভাগ্যের বিষয় হ’ল – আজ এই গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ অধিবেশনের শরিক হয়ে এই ঘটনার সাক্ষী হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এ কথা স্পষ্টভাবে বলতে পারি যে, সংবিধান রচয়িতাদের মধ্যে যে বিতর্ক হয়েছিল, সভা একটি থাকা উচিত কিংবা দুটি, আমার অভিজ্ঞতা বলে, দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর সংবিধান রচয়িতারা অবশেষে যে ব্যবস্থা অনুমোদন করেছেন, সেটি কত বড় অবদান! সংসদের নিম্ন কক্ষ যেমন মাটির সঙ্গে যুক্ত থাকে, সংসদের উচ্চ কক্ষ তেমন দূরদৃষ্টি-সম্পন্ন হয়। আর এভাবেই ভারতের উন্নয়ন যাত্রায় নিম্ন কক্ষ থেকে মাটির সঙ্গে যুক্ত তৎকালীন বিষয়গুলির প্রতিবিম্ব ব্যক্ত হলে এখানে বসে থাকা মহানুভবেরা উপর থেকে তাঁদের দূরদৃষ্টি-সম্পন্ন অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটিয়ে সিদ্ধান্ত নেন।

এই সভাকক্ষ অনেক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী। ইতিহাস সৃষ্টি করেছে আর নির্মীয়মান ইতিহাসের সাক্ষীও থেকেছে। প্রয়োজনে ইতিহাসের গতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও এই সভাকক্ষ অনেক বড় সাফল্য পেয়েছে। তেমনই, এদেশের অসংখ্য গণমান্য পণ্ডিত মহাপুরুষেরা এই সভাকক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই সভাকক্ষের আসন অলঙ্কৃত করেছেন, বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে দেশের উন্নয়ন যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বিগত ৫০ -৬০ বছরে অনেক কিছু নিজের আকার নিয়ে নিয়েছে কিন্তু সেই শুরুর দিনগুলোতে দেশের দেশের নেতৃবৃন্দকে অনেক অজানার ভয় তাড়া করতো। সেই সময় তাঁরা যে পরিপক্কতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, এই সভার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আর তার দুটি বিশেষ মাত্রা রয়েছে। প্রথমত, এর স্থায়িত্ব যাকে আত্মা বলা যেতে পারে এবং দ্বিতীয়টি হ’ল – বৈচিত্র্য। স্থায়ী এজন্য – লোকসভা ভঙ্গ করা গেলেও, রাজ্যসভা ভঙ্গ করা যায় না। জন্মের পর থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যসভা কখনও ভাঙেনি আর ভাঙবেও না। সাংসদরা আসবেন, যাবেন কিন্তু এই ব্যবস্থার আত্মা তেমনই থেকে যাবে। এটি এর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। আর দ্বিতীয়টি হ’ল – বৈচিত্র্য, কারণ এখানে রাজ্যগুলির প্রতিনিধিত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর আত্মা এখানে একভাবে আমাদের সকলকে প্রতি মুহূর্তে প্রেরণা যোগায়। ভারতের বিবিধতা ভারতের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের যে সূত্র, তার সবচেয়ে বড় শক্তি এই সভায় পরিলক্ষিত হয়। আর বিভিন্ন সময়ে তার প্রতিফলন অনুভূত হয়। তেমনই, সেই বৈচিত্র্য নিয়ে আমরা যখন এগিয়ে যাই, তখন এই সভা দেশের স্বার্থে একটি ভারসাম্য আনে। প্রত্যেকের জন্য নির্বাচনী যুদ্ধ পার করা সহজ কাজ নয়। কিন্তু দেশের স্বার্থে প্রত্যেকের ভূমিকাও কম নয়। তাঁদের অভিজ্ঞতা ও সামর্থ্য ততটাই মূল্যবান হয়। এটা এমন এক সভা, যেখানে এ ধরনের সমর্থ মহাপুরুষেরা ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ মহাপুরুষেরা আসন অলঙ্কৃত করেন বলে দেশের রাজনীতি সমৃদ্ধ হয়। নীতি-নির্ধারণে তাঁদের প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৈজ্ঞানিক থেকে শুরু করে ক্রীড়াবিদ, কলা ও সংস্কৃতি জগতের মানুষ ও লেখকদের নির্বাচনী যুদ্ধ অতিক্রম করে এখানে আসা কঠিন। কিন্তু এই ব্যবস্থার ফলে দেশবাসী এই প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার সম্পদে ধনী ব্যক্তিদের দ্বারা উপকৃত হয়।

রাজ্যসভার ২৫০তম অধিবেশনে আমি এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হিসাবে পাই স্বয়ং বাবাসাহেব আম্বেদকর-কে। কোনও না কোনও কারণে তাঁকেও লোকসভায় পৌঁছতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু এই রাজ্যসভার কারণেই দেশ বাবাসাহেব আম্বেদকর-কে পেয়েছে আর লাভবান হয়েছে। বাবাসাহেব আম্বেদকরের মতো এরকম অনেক মহাপুরুষ-কে এভাবে রাজ্যসভায় পাওয়ার জন্য আমরা গর্ব করতে পারি। একটি দীর্ঘ কালক্রম ছিল, যখন বিরোধী পক্ষ বলতে বিশেষ কিছু ছিল না। এমনকি, সংসদ সদস্যদের মনে বিরোধাভাব বলেও কিছু ছিল না। সেই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েও সরকার পক্ষকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এই সভার অভিজ্ঞ ও বিদ্বান সাংসদরা কখনও নিরঙ্কুশ হতে দেয়নি। শাসন ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের সঠিক পথে দেশকে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে প্রেরণা যোগানোর কঠিন কাজ এই সভাকক্ষেই সম্পাদিত হয়েছে। এটা যে কত বড় কাজ তার জন্য আমরা সবাই গর্ব করতে পারি। আর সেজন্য এই সভার প্রতিনিধিত্ব করা মহাপুরুষেরা আমাদের প্রত্যেকের জন্য চিরস্মরণীয়।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, আমাদের প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ মহোদয় এই সদন সম্পর্কে একটি কথা বলেছেন, যা আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। ডঃ রাধাকৃষ্ণণ বলেছিলেন, আপনার ঐ চেয়ারে বসেই বলেছিলেন। আজ আপনিও ঐ চেয়ারে বসে যখন মাননীয় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উক্তি উল্লেখ করেন বা নিজের দুঃখের কথা বলেন, এই সমস্ত কথা রাধাকৃষ্ণণ মহোদয় সেই সময় বলেছিলেন – “আমাদের ভাবনা, আমাদের ব্যবহার এবং আমাদের দর্শনই দুই কক্ষ-সম্পন্ন আমাদের সংসদীয় ব্যবস্থার ঔচিত্যকে প্রমাণিত করবে। সংবিধানের অংশ হয়ে ওঠা এই দুই কক্ষ ব্যবস্থার পরীক্ষা আমাদের কাজের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে। আমরা প্রথমবার নিজেদের সংসদীয় ব্যবস্থায় দুই সভার সূত্রপাত করছি। আমাদের চেষ্টা থাকা উচিত যে আমরা নিজেদের ভাবনা, সামর্থ্য এবং জ্ঞানের মাধ্যমে দেশকে এই ব্যবস্থার ঔচিত্য প্রমাণ করা”।

২৫০টি অধিবেশনের যাত্রাপথ পেরিয়ে, অভিজ্ঞতার এই বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়ে বর্তমানে আসার পর আগামী প্রজন্মের দায়িত্ব বর্তায় যে, ডঃ রাধাকৃষ্ণণজী যে প্রত্যাশা করেছিলেন, তাকে যেন আমরা কখনও অধঃপতিত হতে না দিই। আমরা কি তাঁর এই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবো! পরিবর্তিত সময়ে আমরা কি সেই প্রত্যাশাগুলির সঙ্গে আরও ভালো মূল্য সংযোজন করতে পারবো? এটা ভাবার সময় এসেছে। আর আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস যে, সংসদের বর্তমান প্রজন্ম এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মও ডঃ রাধাকৃষ্ণণের প্রত্যাশাগুলি পূরণ করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাবে। আর তাঁকে আগামী দিনেও দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রাসঙ্গিক করে রাখবে।

এখন যদি, মাননীয় সভাপতি মহোদয় একটু আগে যেমন বলেছেন, আমরা যদি, বিগত ২৫০টি অধিবেশনের কথা ভাবি, কত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক বিল এখানে পাশ হয়েছে, কত আইন অনুমোদিত হয়েছে, যা দেশের জীবনকে পরিচালনা করার ভিত্তি তৈরি করেছে। আমি যদি বিগত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান দেখি, আমার জন্য অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয় যে, এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী হওয়ার সুযোগও আমি পেয়েছি। প্রত্যেক সাংসদের প্রাজ্ঞ ভাবনা শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছে আর অনেক বিষয়কে এখানে এসে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগও পেয়েছি। এভাবে আমি নিজে লাভবান হয়েছি বলে আপনাদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা প্রত্যেকেই এখানে অনেক কিছু শেখা ও নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ পাই। মাঝে মধ্যেই এই সভাকক্ষে আপনাদের মাঝে এসে আপনাদের বক্তব্য শোনার সৌভাগ্য আমার হয়।

বিগত পাঁচ বছরের দিকে তাকালে এই সভাকক্ষে আমার প্রথমেই মনে পড়ে তিন তালাক আইন অনুমোদনের পূর্ববর্তী দীর্ঘ তর্ক-বিতর্কের কথা। কেউ নিশ্চিত ছিলেন না যে, এই আইন আদৌ অনুমোদিত হবে নাকি এখানেই থেমে যাবে। কিন্তু এই সভা নিজের পরিপক্কতা দিয়ে দেশে নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এই গুরুত্বপূর্ণ আইনটি অনুমোদন করেছেন। সেই প্রক্রিয়ায় উত্তেজনা সৃষ্টি করার ভরপুর প্রচেষ্টাও হয়েছে। আরেকটি গর্বের বিষয় হ’ল – এই সভাকক্ষ সাধারণ শ্রেণীর গরিব পরিবারগুলির জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবদিক বিবেচনা করে এত সুন্দর সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়েছে যে, দেশের কোথাও উত্তেজনা হয়নি, বিরোধিতা হয়নি – সকলেই এই আইনের সঙ্গে সহমত, তা এই সদনের ইতিবাচক ভূমিকার ফলেই সম্ভব হয়েছে।

এভাবে আমরা জানি যে, জিএসটি-র ক্ষেত্রে দীর্ঘকাল ধরে সরকার যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করেছে, প্রশাসন তার দায়িত্ব পালনের জন্য কঠিন পরিশ্রম করেছে, আইনের যে কোনও ত্রুটিকে শুধরানোর চেষ্টা করেছে, শোধরানো উচিত কি উচিত না – তা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। আর এই বিতর্ক সবচেয়ে জোরদার হয়েছে রাজ্যসভায়। আর তারপর, এই সভাই সর্বসম্মতিক্রমে জিএসটি-কে ‘এক জাতি, এক কর’ ব্যবস্থা রূপে প্রস্তুত করে দেশকে দিশা দেখিয়েছে। সেজন্য আজ আমরা বিশ্ববাসীর সামনে নতুন বিশ্বাস নিয়ে নিজেদের বক্তব্য রাখতে পারছি।

এবার আসি, দেশের ঐক্য ও অখন্ডতা প্রসঙ্গে। ১৯৬৪ সালে এই সভাকক্ষে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে, এক বছরের মধ্যে সংবিধানের ৩৭০ ধারা এবং ৩৫এ’র বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। এবার আগে রাজ্যসভাই সংবিধানের ৩৭০ ধারা এবং ৩৫এ ধারা বাতিলের ক্ষেত্রে আগে দিশা দেখিয়েছে। আর তারপর, লোকসভায় তা বাস্তবায়িত হয়েছে। দেশের একতা ও অখন্ডতার স্বার্থে এত বড় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দেশবাসী এই সভার সদস্যদের কাছে চির ঋণী থাকবেন। সংবিধানের এই ৩৭০ ধারা যিনি চালু করেছিলেন মিঃ এন গোপালাস্বামী এই সদনেরই প্রথম নেতা ছিলেন। এবার এই সদনই এটি বাতিলের ক্ষেত্রে গর্বের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ইতিহাস রচনা করেছে।

আমাদের সংবিধান রচয়িতারা আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা হ’ল – আমাদের কল্যাণকারী রাষ্ট্র গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাশাপাশি, আরেকটি দায়িত্ব রয়েছে, সেটি হ’ল – রাজ্যগুলির কল্যাণ। কল্যাণকারী রাষ্ট্র গঠন এবং রাজ্যগুলির কল্যাণের দায়িত্ব দেশের রাজ্য সরকারগুলি এবং কেন্দ্রীয় সরকার মিলেমিশে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এই কাজে সমন্বয়-সাধনের ক্ষেত্রে রাজ্যসভা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু, এই সভায় রাজ্যগুলির প্রতিনিধিত্ব অধিক মাত্রায় রয়েছে, এই সভা আমাদের সাংবিধানিক সংস্থাগুলিকে শক্তি যোগানোর কাজও করে। আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, আমাদের দেশের উন্নয়নের মূল শর্ত হ’ল – কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলি মিলেমিশে কাজ করবে। তবেই দেশের উন্নয়ন ও প্রগতি সম্ভব।

রাজ্যসভা এই সমন্বয়-সাধনকে সুনিশ্চিত করে। আর এটাও সুনিশ্চিত করে যে, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, আমরা পরস্পরের সহযোগী ও পরিপূরক হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করি। এখানে যে ভাবনাচিন্তার আদান-প্রদান ও তর্ক-বিতর্ক হয়, তা এখানকার জনপ্রতিনিধিরা রাজ্যে নিয়ে যান। রাজ্য সরকারকে জানান। পাশাপাশি, তাঁরা উভয় সরকারকে পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে রাখার প্রেরণা যোগান। এই প্রেরণার কাজও জ্ঞানে বা অজ্ঞানে আমাদের সতর্কভাবে করার প্রয়োজন রয়েছে।

দেশের উন্নয়ন ও রাজ্যগুলির উন্নয়ন – এই দুটো আলাদা জিনিস নয়। রাজ্যের উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর দেশের উন্নয়নের নক্‌শা রাজ্যগুলির উন্নয়নের বিপরীত হলে রাজ্যগুলি উন্নয়ন করতে পারবে না। আর এই বিষয়গুলি সবচেয়ে বেশি জীবন্তভাবে প্রতিবিম্বিত হয় রাজ্যসভায়। কেন্দ্রীয় সরকার অনেক নীতি প্রণয়ন করে, সেই নীতিগুলিতে রাজ্যগুলির প্রত্যাশা, স্থিতি, অভিজ্ঞতা এবং দৈনন্দিন সমস্যার কথা জেনেই সরকার নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে সঠিক পথ বেছে নিতে পারে। আর এই কাজে এই সভা এবং এই সভার সংসদ সদস্যরাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাঁদের এই ভূমিকাই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে শক্তিশালী করে। সব কাজ এক সঙ্গে হওয়া সম্ভব নয়, কিছু কাজ এই পাঁচ বছরে হবে আর কিছু কাজ আগামী পাঁচ বছরে। কিন্তু সঠিক লক্ষ্য নির্ধারিত হলেই এখানে এই কাজ নিজে থেকেই এগিয়ে যেতে পারে।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, ২০০৩ সালে যখন এই সভার ২০০তম অধিবেশন হয়েছিল, তখনও এনডিএ সরকার ক্ষমতায় ছিল আর অটল বিহারী বাজপেয়ীজী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সেই ২০০তম অধিবেশনের উদ্বোধন করে মাননীয় অটলজী যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা অতি চমকপ্রদ। তাঁর কথা বলার একটা আদালা ধরণ ছিল। তিনি বলেছিলেন যে, আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রের শক্তি বৃদ্ধির জন্য ‘সেকেন্ড চেম্বার’ রয়েছে। আর তিনি এটাও সতর্ক করেছিলেন যে, এই ‘সেকেন্ড হাউস’কে কেউ যেন ‘সেকেন্ডারি হাউস’ – এ রূপান্তরের চেষ্টা না করেন। এই সতর্কবার্তা অটলজী দিয়েছিলেন যে, ‘সেকেন্ড হাউস’কে কখনও যেন ‘সেকেন্ডারি হাউস’ – এ রূপান্তরের ভুল না করেন।

আমি যখন অটলজীর সেই উক্তি পড়ছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল, তাঁর বক্তব্যকে আজকের পরিপ্রেক্ষিতে যদি নতুনভাবে পরিবেশন করতে হয়, তা হলে আমি বলবো যে, রাজ্যসভা ‘সেকেন্ড হাউস’ হলেও কখনই ‘সেকেন্ডারি হাউস’ নয়, আর ভারতের উন্নয়নে একে ‘সাপোর্টিভ হাউস’ হয়ে থাকতে হবে।

যখন আমাদের সংসদীয় ব্যবস্থার ৫০ বছর পূর্তি হয়েছিল, তখনও অটলজী তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, সংসদীয় ব্যবস্থার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অটলজী তাঁর ভাষণে অত্যন্ত কাব্যিকভাবে বলেছিলেন, একটি নদীর প্রবাহ ততক্ষণ ভালো থাকে, যতক্ষণ তার দুটি পার শক্তিশালী থাকে। তারপর তিনি বলেছিলেন যে, ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থায় আমাদের সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি পার হ’ল – লোকসভা আর অন্য পারটি হ’ল – রাজ্যসভা। এই দুটি পার শক্তিশালী থাকলে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের প্রবাহ অত্যন্ত যথাযথভাবে এগিয়ে যেতে পারে – একথা সেই সময় মাননীয় অটলজী বলেছিলেন।

একথা নিশ্চিত যে, ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো রয়েছে, তা বিবিধতায় পরিপূর্ণ। কিন্তু অনিবার্য শর্ত যে, আমাদের কখনও রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সরে গেলে চলবে না। রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিকোণকে আমাদের সর্বদাই কেন্দ্রে রেখে কাজ করে যেতে হবে। পাশাপাশি, আমাদের রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিকোণের সঙ্গে আঞ্চলিক হিতের ভারসাম্য সঠিকভাবে বজায় রাখতে হবে। তখনই আমরা সেই ভাবকে সেই ভারসাম্য সহকারে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। আর এই কাজ সবচেয়ে ভালোভাবে এই রাজ্যসভায় হতে পারে। এখানকার মাননীয় সদস্যদের মাধ্যমে হতে পারে আর আমার পূর্ণ বিশ্বাস যে, তাঁরা সর্বদাই একাজে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

রাজ্যসভা একদিক দিয়ে ‘চেকস্‌ অ্যান্ড ব্যালান্স’ ভাবনার মূল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ‘চেকিং’ এবং ‘ক্লগিং’ – এর মধ্যে ব্যবধান বজায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ‘ব্যালান্স অ্যান্ড ব্লকিং’ – এর মধ্যেও ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত আবশ্যক। আমাদের অনেক সম্মানিত সদস্য একথা বারবার বলেছেন যে, আলোচনা, পারস্পরিক মতবিনিময় ও ভাবনাচিন্তার জন্য এই সদনকে ব্যবহার করা উচিত। তীব্র থেকে তীব্রতর স্বরে তর্ক-বিতর্ক হলেও কারও ক্ষতি হবে না। কিন্তু সভাকক্ষকে থামিয়ে না দিয়ে সবসময় আলাপ-আলোচনার পথ খুলে রাখা উচিত।

আমি আজ যাঁদের কথা উল্লেখ করছি, হতে পারে, তাঁরা ছাড়া অন্যরাও প্রাসঙ্গিক। কিন্তু আজ আমি এখানে দুটি দলের কথা উল্লেখ করতে চাই – একটি এনসিপি এবং দ্বিতীয়টি বিজেডি। কারও কথা বাদ গেলে আমাকে ক্ষমতা করবেন। কিন্তু আমি দুটি দলের কথা উল্লেখ করছি। এই দুই দলের বৈশিষ্ট্য দেখুন, তাঁরা নিজেরাই অনুশাসন তৈরি করেছে যে, আমরা সভার ওয়েলে গিয়ে হাঙ্গামা করবো না। আর আমরা দেখেছি যে, তারপর থেকে এই দুই দলের একজন সদস্যও এই নিয়ম ভাঙ্গেননি। তাঁদের কাছ থেকে আমার দল-সহ প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে শিখতে হবে। আমাদের সবাইকে শিখতে হবে যে, এই নিয়ম পালন করা সত্ত্বেও এনসিপি কিংবা বিজেডি-র রাজনৈতিক উন্নয়ন যাত্রায় কোনও বাধা আসেনি। এর মানে, ওয়েলে গিয়ে হাঙ্গামা না করেও জনগণের হৃদয় জয় করা যায়, মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা যায়। সেজন্য আমি মনে করি, সরকার পক্ষ-সহ আমাদের সবার উচিত, যাঁরা এহেন উন্নত ঐতিহ্য গড়ে তুলেছেন, তারপরও যাঁদের কোনও রাজনৈতিক লোকসান হয়নি, তাঁদের কাছ থেকে আমরা এই সংযম কেন শিখবো না! আমাদের সামনে তাঁদের দৃষ্টান্ত উপস্থিত। আর আমি চাইবো যে, আমরা প্রত্যেকেই যেন তাঁদের অনুসরণ করি। সেজন্য আমি এই সভার সমস্ত সদস্যদের অনুরোধ জানাবো যে, এনসিপি এবং বিজেডি-র মাননীয় সংসদ সদস্যরা এত সুন্দরভাবে যে অনুশাসন-প্রিয়তার পরিচয় দিয়েছেন, তা নিয়েও কখনও আলোচনা হওয়া উচিত এবং তাঁদেরকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। আজ যখন আমরা রাজ্যসভার ২৫০তম অধিবেশনের শুভসূচনা করছি তখন এই ধরণের সমস্ত ভাল নিদর্শনের কথা উল্লেখ করা উচিত, সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন করা উচিত।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, এই ভবনের মর্যাদা রক্ষার লক্ষ্যে যা যা প্রয়োজন, সেগুলি অনুসরণ করতে সকল সদস্যই অত্যন্ত আগ্রহী। এই সভায় আপনারা নিজেদের ব্যথা-যন্ত্রণার কথা প্রকাশ করেন। আমরা সবাই চেষ্টা করবো, এই ২৫০তম অধিবেশনে আমরা সবাই সংকল্প নেবো, যাতে প্রত্যেক সদস্যের ভাবনাকে সমাদর করি, কাউকে আঘাত না দিয়ে, অনুশাসনের মাধ্যমে আপনারা যেভাবে চান, সংসদের এই উচ্চ কক্ষকে সেভাবে পরিচালনা করতে আমরা পরস্পরের সাথী হয়ে ওঠার চেষ্টা করবো।

এই সংকল্প নিয়ে আমি আরেকবার এই গুরুত্বপূর্ণ পরতে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। যাঁরা এই সভাকে এত দূর পৌঁছে দিয়েছেন, তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Explore More
প্রত্যেক ভারতীয়ের রক্ত ফুটেছে: মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী

জনপ্রিয় ভাষণ

প্রত্যেক ভারতীয়ের রক্ত ফুটেছে: মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী
PM Modi’s August 15 charter isn’t about headlines — it’s for India of 2047

Media Coverage

PM Modi’s August 15 charter isn’t about headlines — it’s for India of 2047
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
IFS Officer Trainees of 2024 Batch call on PM
August 19, 2025
QuotePM discusses India’s role as a Vishwabandhu and cites instances of how India has emerged as a first responder for countries in need
QuotePM discusses the significance of Officer Trainees in their role as future diplomats as the country moves ahead towards the aim of becoming developed by 2047
QuotePM emphasises on the role of communication in a technology driven world
QuotePM urges the trainees to create curiosity about India among youngsters in various countries through quizzes and debates
QuoteDiscussing the emerging opportunities for private players globally, PM says India has the the potential to fill this space in the space sector

The Officer Trainees of the 2024 Batch of Indian Foreign Service (IFS) called on Prime Minister Shri Narendra Modi at his residence at 7, Lok Kalyan Marg earlier today. There are 33 IFS Officer Trainees in the 2024 batch from different States and UTs.

Prime Minister discussed the current multipolar world and India’s unique role as a Vishwabandhu, ensuring friendship with everyone. He cited instances of how India has emerged as a first responder for countries in need. He also underlined the capacity building efforts and other endeavours undertaken by India to lend a helping hand to the Global South. Prime Minister discussed the evolving sphere of foreign policy and it’s significance in the global fora. He spoke about the key role that the diplomats are playing in the evolution of the country as a Vishwabandhu on the global stage. He underscored the significance of the Officer Trainees in their role as future diplomats as the country moves ahead towards the aim of becoming developed by 2047.

Prime Minister engaged in a wide-ranging interaction with the Officer Trainees and asked them about their experience so far, after joining the government service. The officer trainees shared their experiences from their training and research tasks undertaken by them, which included topics such as Maritime diplomacy, AI & Semiconductor, Ayurveda, Cultural connect, Food and Soft Power, among others.

Prime Minister said that we must create curiosity amongst youngsters in various countries about India with Know Your Bharat quizzes and debates. He also said that questions of these quizzes should be regularly updated and include contemporary topics from India such as Mahakumbh, Celebration of completion of 1000 years of Gangaikonda Cholapuram Temple and so on.

Prime Minister emphasised on the important role of communication in a technology driven world. He urged the officer trainees to work on exploring all the websites of the Missions and try to find out what can be done to improve these websites for effective communication with the Indian diaspora.

Discussing the opening up of the space sector for private players, PM emphasized on exploring opportunities in other countries for expanding the scope of Indian startups coming up in this sector. PM said that India has the potential to fill this space in the space sector.