প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে ১৭-তম ব্রিকস শিখর সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। ৬ ও ৭ জুলাই ২০২৫ এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সংস্কার, গ্লোবাল সাউথের কন্ঠস্বর জোরদার করা, শান্তি ও নিরাপত্তা, বহুপাক্ষিকতাকে শক্তিশালী করা, উন্নয়নমূলক বিষয় এবং কৃত্রিম মেধা সহ ব্রিকসের আলোচ্যসূচীর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করেছেন নেতারা। প্রধানমন্ত্রী ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আন্তরিক আতিথেয়তা এবং সফলভাবে শিখর সম্মেলন আয়োজন করার জন্য।

“বিশ্ব ব্যবস্থাপনার সংস্কার এবং শান্তি ও নিরাপত্তা” শীর্ষক উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রী “বহুপাক্ষিককতা, অর্থনৈতিক-আর্থিক বিষয় এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বাকে জোরদার করা” শীর্ষক একটি অধিবেশনেও ভাষণ দেন। এই অধিবেশনে ব্রিকসের সদস্য দেশগুলি ছাড়াও আমন্ত্রিত দেশগুলিও যোগ দেয়।
আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক অধিবেশনে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল সাউথের কন্ঠস্বর আরও জোরদার করতে ভারতের দায়বদ্ধতার কথা পুনরায় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সুস্থায়ী উন্নয়নের জন্য বিকাশশীল দেশগুলির আরও সাহায্য প্রয়োজন, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে। বিংশ শতাব্দীর আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলি একবিংশ শতাব্দীর সমস্যার মোকাবিলায় যথেষ্ট সক্ষম নয় জানিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানগুলির সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি জোর দেন। বহুমুখী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব ব্যবস্থাপনার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডার, বিশ্বব্যাঙ্ক এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলির উচিত বাস্তব পরিস্থিতির প্রতিফলন ঘটাতে অবিলম্বে সংস্কার ঘটানো। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দ্রুত সংস্কারের প্রসঙ্গ উত্থাপন এবং শিখর সম্মেলনের ঘোষণাপত্র বিষয়ে কড়া ভাষা গ্রহণ করার জন্য নেতাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ মানবতার পক্ষে এক ভয়ঙ্কর বিপদ। এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ২০২৫-এর পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলা শুধুমাত্র ভারতের ওপর আক্রমণ নয়, বরং এটি সমগ্র মানব সমাজের ওপর আক্রমণ। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সন্ত্রাসবাদীদের অর্থ দিয়ে, আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কড়া ভাষায় পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করায় ব্রিকস নেতাদের ধন্যবাদ জানান তিনি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক লড়াইকে জোরদার করতে ব্রিকস দেশগুলিকে আহ্বান জানিয়ে তিনি এই সমস্যার মোকাবিলায় জিরো টলারেন্স নীতির ওপর জোর দেন।
এই বিষয়ে বিস্তারিত বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পশ্চিম এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত সংঘর্ষ গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, ভারত সবসময় এই ধরনের সংঘর্ষের সমাধানে আলোচনা এবং কূটনীতির কথা বলে এসেছে এবং এমন প্রয়াসে সবসময় যুক্ত হতে প্রস্তুত।
বহুপাক্ষিকতা, অর্থনৈতিক-আর্থিক বিষয় এবং কৃত্রিম মেধাকে জোরদার করার বিষয়ে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈচিত্র্য এবং বহুমুখীনতা ব্রিকসের মূল্যবান শক্তি। তিনি বলেন, এমন একটা সময় ছিল যখন বিশ্ব ব্যবস্থা চাপে থাকতো এবং আন্তর্জাতিক সমাজ অনিশ্চয়তা এবং সমস্যার সম্মুখীন হতো। তখন ব্রিকসের প্রাসঙ্গিকতা প্রত্যক্ষ করা গিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, বহুমেরু বিশ্ব গঠনে ব্রিকস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। এই প্রসঙ্গে তিনি চারটি প্রস্তাব দেন:
এক, ব্রিকস নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ককে চাহিদানির্ভর নীতি এবং প্রকল্প বরাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সুস্থায়িত্ব অনুসরণ করা উচিত;
দুই, এই গোষ্ঠী যেন গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির উপকারে লাগে তেমন একটি সায়ন্স অ্যান্ড রিসার্চ রিপোজিটারি স্থাপনের চিন্তা-ভাবনা করে;

তিন, দুর্লভ খনিজ সরবরাহ শৃঙ্খলকে সুরক্ষিত এবং দৃঢ়বদ্ধ করার ওপর নজর দিতে হবে এবং
চার, গোষ্ঠীকে কাজ করতে হবে দায়িত্বশীল এআই-র জন্য – পাশাপাশি এআই গভর্নেন্স-এর উদ্বেগগুলির দিকে নজর দিয়ে সমান গুরুত্ব দিতে হবে যাতে এইক্ষেত্রে উদ্ভাবনের প্রসার হয়।
Click here to read full text speech of Reform of Global Governance


