“আমাদের সরকারের লক্ষ্য নাগরিকদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান দেওয়া এবং তাদের ক্ষমতায়ন করা”
“আধুনিক ভারত গড়ার জন্য পরিকাঠামো মাত্রা এবং গতির গুরুত্ব আমরা বুঝি”
“আমাদের ভাবনা টুকরো টুকরো নয়, আমরা লোক দেখানো কাজে বিশ্বাস করি না”
“আমরা সাফল্য লাভ করেছি এবং আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করছি সাধারণ মানুষের জন্য”
“ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সাফল্য সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে”
“আমরা জোর দিয়েছি জাতীয় অগ্রগতির ওপর এবং আঞ্চলিক প্রত্যাশার প্রতিও মনোযোগ দিয়েছি”
“এটা আমাদের সংকল্প ভারতকে ২০৪৭এর মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’ করে গড়ে তোলা”

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

রাষ্ট্রপতিজীর অভিভাষণের প্রত্যুত্তরে ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে যে আলোচনা চলছে, সেই আলোচনায় অংশগ্রহণ করে আমি মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়াজীকে তাঁর অভিভাষণের জন্য ধন্যবাদ জানাই। মাননীয় রাষ্ট্রপতিজীকে অভিনন্দনও জানাতে চাই। মাননীয় সভাপতি মহোদয়, মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়াজী সংসদের উভয় সভাকে সম্বোধিত করে তাঁর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ভাষণের মাধ্যমে বিকশিত ভারতের একটি খসড়া আর  উন্নত ও বিকশিত ভারতের সংকল্পের জন্য একটি পথচিত্র তুলে ধরেছেন।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমি এই আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সকল মাননীয় সদস্যদের আমি হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁরা নিজের নিজের কল্পনা অনুসারে আলোচনাকে বিস্তারিত করার চেষ্টাও করেছেন। সেজন্য, এই আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সকল মাননীয় সদস্যদের আমি ধন্যবাদ জানাই।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

এই সভা, রাজ্যগুলির প্রতিনিধিদের সভা। বিগত দশকগুলিতে অনেক বুদ্ধিজীবীরা এই সভাকক্ষ থেকে দেশকে আলোকবর্তিকা দেখিয়েছেন। নতুন নতুন পথ দেখিয়েছেন। এই সভায় অনেক বন্ধু এমন রয়েছেন, যাঁরা তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনেও অনেক সাফল্য পেয়েছেন, অনেক বড় বড় কাজ করেছেন। আর সেজন্য এই সভায় যে আলোচনাই হোক না কেন, সেই কথাগুলি সারা দেশের মানুষ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে শোনেন। 

মাননীয় সদস্যদের আমি বলবো, কাদা তাঁদের হাতে ছিল আর আমার হাতে আবির। যাঁর হাতে যা ছিল, তাই তিনি ছিটিয়েছেন। খুব ভালো কথা, যত কাদা ছিটাবেন, তত বেশি পদ্ম ফুটবে। আর সেজন্য, পদ্ম ফোটানোর ক্ষেত্রে তাঁদের এই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদানের জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

গতকাল আমাদের বিরোধী পক্ষের অগ্রজ সঙ্গী মাননীয় খাড়গেজী বলেছেন যে, আমরা ৬০ বছর ধরে ভিত্তি তৈরি করেছি আর ক্রেডিট নিচ্ছে মোদী। কিন্তু, মাননীয় সভাপতিজী, ২০১৪ সালে দায়িত্ব পেয়ে আমি যখন অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও গভীরভাবে প্রতিটি জিনিসকে দেখার চেষ্টা করি, ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করি, তখন আমি দেখতে পাই যে গত ৬০ বছর ধরে কংগ্রেস পরিবারের হয়তো শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপনের ইচ্ছা ছিল। কিন্তু, তাঁরা কতটা শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করেছেন, তা নিয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু, ২০১৪ সালে দায়িত্ব পাওয়ার পর আমি দেখলাম যে, তাঁরা সর্বত্র গর্ত রেখে গেছেন। তাঁদের ইচ্ছে ছিল সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপনের কিন্তু তাঁরা খুঁড়ে দিলেন সুগভীর সব গর্ত। মাননীয় সভাপতিজী, তাঁরা যখন এই গর্তগুলি খুঁড়ে ছ’টি দশক নষ্ট করেছেন, সেই সময়ে বিশ্বের অনেক ছোট ছোট দেশও সাফল্যের শিখর স্পর্শ করছিল, দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

সেই সময় তাঁদের জন্য এত ভালো আবহ ছিল যে, পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে সংসদ পর্যন্ত সর্বত্র তাঁদেরই হুকুম চলতো। দেশবাসীও তাঁদের আশা-আকাঙ্খা নিয়ে চোখ বন্ধ করে তাঁদেরই সমর্থন করতেন। কিন্তু তাঁরা এমন কর্মশৈলী বিকশিত করেন, এমন কর্মসংস্কৃতি গড়ে তোলেন যে তাঁরা কোনও সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কথা ভাবেননি। সেজন্য তাঁদের মাথায় কোনও ভাবনা আসেনি, তাঁরা চেষ্টাও করেননি। কোনও বিষয় নিয়ে যদিই খুব চিৎকার-চেঁচামেচি হ’ত, তা হলে তাঁরা সেটাকে কোনও না কোনোভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করতেন। তারপর সামনে এগিয়ে যেতেন। অথচ, দেশের জনগণ অনেক সমস্যার মোকাবিলা করছিলেন, সেগুলি সমাধানের দায়িত্ব সরকারের উপর বর্তায়। জনগণ দেখতে পাচ্ছিল যে, এই সমস্যাগুলি সমাধান করলে দেশের কত বড় লাভ হতে পারে। কিন্তু, ক্ষমতাসীন দলের অগ্রাধিকার ভিন্ন ছিল, তাঁদের ইচ্ছাশক্তিও ভিন্ন ছিল। সেজন্য তাঁরা কোনও সমস্যার স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করেননি। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমাদের সরকার পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদের নতুন পরিচয় গড়ে তোলে। একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে আজ আমরা অনেক সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। আমরা কোনও একটি বিষয়কে ছুঁয়ে কোনও মতে ধামাচাপা দিয়ে পালিয়ে যাই না। দেশের মৌলিক প্রয়োজনগুলির কথা ভেবে স্থায়ী সমাধানের পথে এগিয়ে যাই। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

একটা সময় ছিল, যখন গ্রামে সরকারের পক্ষ থেকে একটা হ্যান্ড পাম্প বসিয়ে দিলে এক সপ্তাহ ধরে উৎসব পালন করা হ’ত। এরকম ছিটেফোটা সমাজ সেবার মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের বিজয় রথ এগিয়ে নিয়ে যেতেন। গতকাল এখানে গুজরাটের প্রসঙ্গ উঠেছিল। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, সবচেয়ে বেশি আসন নিয়ে জেতার জন্য গর্বিত এমনই একজন মুখ্যমন্ত্রী একটি শহরে জলের ট্যাঙ্ক উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন। আর তা খবরের কাগজে প্রথম পাতায় হেডলাইন হয়েছিল। অর্থাৎ, কোনও সমস্যার সমাধানে টোকেনিজম কাকে বলে, কিভাবে কোনও সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়া যায়, সেই সংস্কৃতি দেশবাসী দেখেছেন। আমরাও জলের সমস্যা সমাধানের নানা পথ খুঁজেছি। জল সংরক্ষণ, জল সেচের প্রতিটি সম্ভাব্য দিক নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছি। আমরা বৃষ্টির জল সংরক্ষণ অভিযানের সঙ্গে জনগণকে যুক্ত করেছি। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার আগে থেকে আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত সারা দেশে মাত্র ৩ কোটি বাড়িতে নলবাহিত জল সরবরাহ হ’ত। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

বিগত ৩-৪ বছরের চেষ্টায় আজ দেশের ১১ কোটি বাড়িতে নলবাহিত জল সরবরাহ করা হয়। জলের সমস্যা প্রতিটি পরিবারের সমস্যা হয়ে যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতি না করে দেয়, তা সুনিশ্চিত করতে আমরা এর সমাধানের অনেক পথ খুঁজি। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আরেকটি বিষয় নিয়ে আমি বলতে চাই, তা হ’ল সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়ন। এই উদ্দেশ্য নিয়েই তো ব্যাঙ্কগুলির জাতীয়করণ হয়েছিল। কিন্তু, এরপর অনেক দশক পেরিয়ে গেলেও এই দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ ব্যাঙ্কের দরজা পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। আমরা এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করি আর সারা দেশে জন ধন অ্যাকাউন্ট খোলা শুরু করি। এর ফলে, শুধু দেশের গ্রাম ও মফঃস্বল শহরগুলিতে ৩২ কোটি নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। অর্থাৎ, দেশের গ্রাম পর্যন্ত উন্নয়নের সুফলগুলিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে। গতকাল খাড়গেজী অভিযোগ করছিলেন যে, মোদীজী বারবার আমার সংসদীয় নির্বাচনী ক্ষেত্র কালবুর্গিতে আসেন। আমি খাড়গেজীকে বলতে চাই যে, আমি আপনার সংসদীয় নির্বাচনী ক্ষেত্রে যাই, এই অভিযোগ করার আগে এটা দেখুন যে, কর্ণাটকে ১ কোটি ৭০ লক্ষ জন ধন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। আর এর মধ্যে ৮ লক্ষেরও বেশি জন ধন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আপনার সংসদীয় নির্বাচনী ক্ষেত্র কালবুর্গিতে। 

এখন মাননীয় সভাপতি মহোদয় আপনি বলুন, যাঁর সংসদীয় নির্বাচনী এলাকায় এত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, এত মানুষের ক্ষমতায়ন হয়, এত মানুষ সচেতন হয়ে ওঠেন, এতে তাঁর কষ্ট হচ্ছে কেন? আমি বুঝি কেন হচ্ছে। এতে তাঁদের অনেক বছরের জনপ্রিয়তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাঁর কথায় এরকম অনেক কষ্ট ফুটে ওঠে, আমি অবাক হই যখন তিনি কখনও বলেন যে, একজন দলিতকে হারিয়ে দিলেন। আরে ভাই, ঐ এলাকার জনগণেশ যদি একজন দলিতের বদলে অন্য দলিতকে জয়ী করেন, আমরা কী করতে পারি? এখন আপনাদের জনগণ নস্যাৎ করছেন। আপনাদের জনপ্রিয়তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হচ্ছে আর আপনারা এখানে এসে কান্নাকাটি করছেন!

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

জন ধন, আধার, মোবাইল – এই ত্রিশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর প্রকল্পের মাধ্যমে বিগত কয়েক বছরে দেশের সাধারণ নাগরিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২৭ লক্ষ কোটি টাকা জমা করিয়েছি। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের মাধ্যমে এই পরিমাণ টাকা জমা করানোর ফলে ২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি কোনও দুর্নীতিগ্রস্ত চক্রের হাতে যাওয়া থেকে বাঁচানো গেছে। এভাবে দেশবাসী উপকৃত হওয়ায় যাদের চামচারা ২ লক্ষ টাকা হাতাতে পারেনি তারা যে চেঁচাবেন – এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

দেশের জন্য কিছু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই সকলেই ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু, শুধু ইচ্ছে থাকলেই কাজ হয় না। যতই বলুন না কেন, এটা করতে চাই ওটা করতে চাই – চার দশক ধরে দারিদ্র্য দূরীকরণের কথা বলে গেলেন, কিন্তু কিছুই হ’ল না। সেজন্য উন্নয়নের গতি কেমন, উন্নয়নের পেছনে কী ধরনের ইচ্ছা শক্তি কাজ করছে, উন্নয়নের লক্ষ্য কী, পরিণাম কী – এই সমস্ত কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু আপনাদের মুখের কথায় আমরা মেনে নেবো না যে, আপনারাও দেশের স্বার্থে কিছু করেছেন!

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

অথচ, যখন আমরা জনগণের প্রয়োজন অনুভব করে তাঁদের অগ্রাধিকারের কথা ভেবে পরিশ্রম করি, তখন আমাদের পরিশ্রম বেশি করতে হয় ঠিকই, কিন্তু সাফল্যও আসে। মহাত্মা গান্ধী যেমন বলতেন, শ্রেয় আর প্রিয়। আমরা শ্রেয়’র পথ বেছে নিয়েছি। প্রিয়’র পথ যতই আরামের হোক – আমরা সেই পথ বেছে নিই নি। পরিশ্রম করতে হলে আমরা করবো। দিনরাত এক করে পরিশ্রম করবো। কিন্তু জনগণের আশা-আকাঙ্খাকে কখনই আহত করবো না। তাঁদের প্রত্যাশাকে বাস্তবায়িত করার মাধ্যমেই দেশের উন্নয়নের কথা ভাববো। আর সেজন্য যত কাজ করতে হয়, সেটা আমরা করে যাবো। আমরা যে এই ধরনের স্বপ্ন নিয়ে চলতে ভালোবাসি, তা আমরা নিজেদের কাজের মাধ্যমে করে দেখিয়েছি।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

এখন আপনি দেখুন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশে ১৪ কোটি এলপিজি সংযোগ ছিল এবং জনগণের চাহিদা ছিল। এলপিজি সংযোগ নিতে মানুষ সাংসদের কাছে যেত, তখন ১৪ কোটি পরিবারে রান্নার গ্যাস ছিল, চাহিদা কম ছিল, চাপও কম ছিল, আপনাদের গ্যাস পাওয়ার জন্য টাকা দিতে হতো না, গ্যাস পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আপনাদের গাড়ি মজাতেই চলতো, তেমন কাজ করতে হতো না। অথচ মানুষ অপেক্ষা করে যেত। কিন্তু আমরা এগিয়ে এসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা দেশের প্রত্যেক বাড়িতে এলপিজি সংযোগ দেব। আমরা জানতাম যে আমরা এটা করছি, তাই আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমরা জানতাম যে, আমাদের টাকা খরচ করতে হবে। আমরা জানতাম যে, সারা বিশ্ব থেকে আমাদের গ্যাস আনাতে হবে। এই বহুমুখী চাপের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানা থাকা সত্ত্বেও আমাদের অগ্রাধিকার ছিল আমাদের দেশের নাগরিকদের প্রয়োজন। আমাদের অগ্রাধিকার ছিল আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এবং সেজন্যেই আমরা ৩২ কোটিরও বেশি পরিবারে গ্যাস সংযোগ পৌঁছে দিয়েছি। নতুন পরিকাঠামো তৈরি করতে হয়েছে, টাকা খরচ করতে হয়েছে।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

এই একটি উদাহরণ থেকে আপনি বুঝতে পারবেন যে আমরা কতটা কঠোর পরিশ্রম করেছি। কিন্তু আমরা এই পরিশ্রম আনন্দের সঙ্গে, সন্তুষ্টির সঙ্গে, গর্বের সঙ্গে করেছি এবং আমরা খুশি যে সাধারণ মানুষ এ থেকে সন্তুষ্টি পেয়েছে। একটি সরকারের জন্য এর চেয়ে বড় তৃপ্তি আর কী হতে পারে! 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক দশক পেরিয়ে গেলেও, এই দেশে ১৮,০০০-এরও বেশি গ্রাম ছিল যেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছেনি এবং এই গ্রামগুলি বেশিরভাগই ছিল আমাদের নানা জনজাতি সম্প্রদায়ের গ্রাম, আমাদের দেশের পাহাড়ি অঞ্চলগুলিতে বসবাসকারী মানুষের গ্রাম,  নানা জনজাতি সম্প্রদায়ের গ্রাম। উত্তর-পূর্ব ভারতের নানা রাজ্যে অবস্থিত নানা জনজাতি সম্প্রদায়ের গ্রাম, কিন্তু তাঁদের নির্বাচনের হিসাব-নিকাশের সঙ্গে খাপ খায়নি বলেই তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি। আমরা জানতাম যে তাঁরা এই কঠিন কাজটি ছেড়ে দিয়েছেন। আমরা বলেছিলাম যে আমরা মাখনের উপর দাগ কাটি না, আমরাই পাথরের গায়েই দাগ কাটি। আমরাই এই কঠিন দ্বায়িত্ব পালনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করব। আমরা এই চ্যালেঞ্জটিও স্বীকার করি এবং দেশের প্রত্যেক গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাই। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এই ১৮,০০০টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ পৌঁছে দিই এবং এই সমস্যাসঙ্কুল কাজের পেছনে গ্রামে গ্রামে একটি নতুন জীবনের স্পন্দন অনুভব করি। তাঁদের উন্নয়ন তো হয়েছেই, কিন্তু সবচেয়ে বড় ঘটনা হলো দেশের ব্যবস্থার প্রতি তাঁদের বিশ্বাস বেড়ে গেছে। আর এই বিশ্বাস হল একটি বড় শক্তি। দেশের নাগরিকদের মনে যখন বিশ্বাস গড়ে ওঠে, তখন তা কোটি কোটি গুণ শক্তিতে পরিণত হয়। আমরা সেই বিশ্বাস জিতেছি এবং আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি, আমাদের করতে হয়েছে, কিন্তু আমি খুশি যে স্বাধীনতার এত বছর পরে, সেই প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে একটি নতুন আশার কিরণ দেখা গেছে, একটি তৃপ্তির অনুভূতি দেখা দিয়েছে এবং আমরা আজ সেই আশীর্বাদ পাচ্ছি।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

পূর্ববর্তী সরকারগুলির শাসনকালে দেশের বৃহৎ অংশে দিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ আসত। নামেই বিদ্যুৎ; গ্রামের মাঝখানে একটি খুঁটি স্থাপন করা হতো এবং প্রতিবছর এটি স্থাপনের বার্ষিকী পালন করা  হতো। স্তম্ভটি অমুক তারিখে স্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু দিনে কয়েক ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকতো না। আজ দেশের সমস্ত গ্রামে শুধু বিদ্যুৎই পৌঁছেনি, আমরা সর্বত্র গড়ে ২২ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রচেষ্টায় সফল হয়েছি। এই কাজের জন্য আমাদের নতুন সঞ্চালন লাইন বসাতে হয়েছে। নতুন করে শক্তি উৎপাদনের উৎস তৈরির জন্য কাজ করতে হয়েছে। আমাদের সৌরশক্তি উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে যেতে হয়েছে। আমাদের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির অনেক ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে হয়েছে। আমরা মানুষকে তাঁদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেইনি। রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির কথা ভাবিনি। দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার পথ বেছে নিয়েছি। আমরা নিজেদের ওপর চাপ বাড়িয়েছি। মানুষের চাহিদা  যতই বাড়তে থাকে, চাপও ততই বাড়তে থাকে। সেই চাপ নিতে আমরা কঠোর পরিশ্রমের পথ বেছে নিই এবং আজ তার ফল দেখছে দেশ। জ্বালানি খাতে দেশ উন্নতির নতুন নতুন উচ্চতা স্পর্শ করছে।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

স্বাধীনতার অমৃতকালে আমরা এমন একটি অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। আমি জানি এটা সহজ নয়, আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হবে। কিন্তু আমরা সেই স্যাচুরেশনের পৌছুনোর পথ বেছে নিয়েছি। প্রতিটি প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা কিভাবে ১০০শতাংশ পরিষেবা পাবেন, ১০০ শতাংশ সুবিধাভোগীরা যাতে পরিষেবা পান, কোনও বাধা ছাড়াই যাতে সকলের কাছে পরিষেবা পৌঁছে যায় এবং আমি বলি, যদি সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষতা থাকে তবে এটিই সেই পথ। আমাদের সরকার প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতার পথই বেছে নিয়েছে। আর আমরা অত্যন্ত সততার সঙ্গে সেই পথে এগিয়ে চলেছি। আমরা অমৃত কালে উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্যাচুরেশনের সংকল্প নিয়েছি, তা হল বিজেপি এনডিএ সরকারের ১০০ শতাংশ সুবিধাভোগীদের কাছে মৌলিক পরিষেবাগুলি পৌঁছে দেওয়ার সংকল্প।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

এই একশো শতাংশ উন্নয়নের ভাবনা, এই স্যাচুরেশনের সংকল্পেই নিহিত রয়েছে দেশের অনেক সমস্যার সমাধান। তা শুধু সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের সমস্যার সমাধান নয়, এটি দেশের নানা সমস্যার সমাধান। আমরা এমন একটি নতুন কর্মসংস্কৃতি নিয়ে আসছি, যা দেশে এই সমস্ত পার্থক্যের অবসানের উপায়, স্যাচুরেশনের সংকল্প। 

স্যাচুরেশনে পৌঁছানো মানে বৈষম্যের সমস্ত পথ বন্ধ করা। যখন বৈষম্য থাকে, তখন দুর্নীতিও সুযোগ পায়। কেউ বলবেন, আমাকে তাড়াতাড়ি দাও! জবাব আসে, তুমি এটা দিলে আমি তাড়াতাড়ি এতটা দেবো! কিন্তু যখন ১০০ শতাংশে পৌঁছনোর চেষ্টা হয়, তখন সকলের মনে বিশ্বাস জাগে যে, এই মাসে আমার কাছে এই পরিষেবা না পৌঁছালেও তিন মাস পরে পৌঁছে যাবে, কিন্তু তা পৌঁছাবেই, বিশ্বাস বাড়ে। এই পথ তুষ্টিকরণের আশঙ্কার অবসান ঘটায়। অমুক জাতি পাবে, অমুক পরিবার পাবে, অমুক গ্রাম পাবে, অমুক সম্প্রদায় পাবে, অমুক ধর্মের মানুষ পাবে; এই সমস্ত তুষ্টিকরণের আশঙ্কার অবসান ঘটায়। এই পথ স্বার্থের ভিত্তিতে লাভবান হওয়ার প্রবণতাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে এবং সমাজের শেষ সিঁড়িতে ব্যক্তির অধিকারের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করে। মহাত্মা গান্ধী সর্বদা সমাজের প্রান্তিকতম অবস্থানে থাকা ব্যক্তির উন্নয়নের উদ্যোগকে সমর্থন করতেন, তাঁদের অধিকার রক্ষা সুনিশ্চিত করার কথা বলে গেছেন। আমরা সেটাই সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। আমাদের সংকল্প হল, সবকা সাথ-সবকা বিকাশ, এর অর্থ হল তাঁদের অধিকার ১০০ শতাংশ সুনিশ্চিত করা।

সরকারি ব্যবস্থার লক্ষ্য যখন প্রতিটি যোগ্য ব্যক্তির কাছে পরিষেবা পৌঁছানো হয়, তখন বৈষম্য ও পক্ষপাতিত্ব টিকতে পারে না। তাই আমাদের এই ১০০ শতাংশ পরিষেবা প্রদানের উদ্যোগ হল সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য একটি অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যম। এটাই সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রকৃত গ্যারান্টি। এটাই প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা। এটাই প্রকৃত সেক্যুলারিজম।

আমরা দেশকে উন্নয়নের এই মডেল দিইয়েছি, যাতে দেশের সকল অংশের নাগরিক তাঁদের অধিকার পান। দেশ আমাদের সঙ্গে আছে, দেশ বারবার কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করছে, কিন্তু কংগ্রেস এবং তার সহযোগীরা তাঁদের ষড়যন্ত্র থেকে বিরত হচ্ছে না, জনগণ তা দেখছে এবং  সুযোগ পেলেই তাঁদের শাস্তি দিচ্ছে।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

১৮৫৭ সাল থেকে শুরু করে আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের যে কোনও দশক ধরুন, ভারতের যে কোনো অঞ্চল ধরুন, আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশের জনজাতি ভাই ও বোনেদের অবদান অবিস্মরণীয়। দেশ গর্বিত যে আমাদের জনজাতি ভাই ও বোনেরা যথাসময়ে স্বাধীনতার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে। কিন্তু কয়েক দশক ধরে আমাদের জনজাতি ভাই ও বোনেরা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ছিলেন আর তাঁদের মনে আস্থার সেতু কখনও নির্মিত হয়নি, আশঙ্কায় ভরা একটি ব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল। ফলে সেই যুবক-যুবতিদের মনে বারবার সরকারের প্রতি প্রশ্ন উঠতে থাকে। কিন্তু সরকার যদি সঠিক ইচ্ছাশক্তি নিয়ে কাজ করতো, যদি সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতো, যদি বিভিন্ন জনজাতির মানুষদের কল্যাণে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতো, তাহলে আজ একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে আমাদের এত পরিশ্রম করতে হতো না, কিন্তু তাঁরা তা করেননি। শুধু ব্যতিক্রম ছিল অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন সরকার। সেই আমলেই এদেশে প্রথমবারের মতো জনজাতিদের উন্নয়নে একটি পৃথক মন্ত্রক গঠন করা হয়, প্রথমবারের মতো জনজাতিদের কল্যাণে, তাঁদের উন্নয়নের জন্য আলাদা বাজেটের ব্যবস্থা করা হয়।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমরা সরকারের দ্বায়িত্ব পেয়ে দেশের ১১০টি জেলাকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা হিসাবে চিহ্নিত করেছি, যেগুলি উন্নয়নের নিরিখে পিছিয়ে ছিল। সামাজিক ন্যায়বিচারের নিরিখে এবং ভৌগলিকভাবে যারা পিছিয়ে আছে তাঁদের সমান গুরুত্ব দিয়ে ন্যায়প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে আমরা এই ১১০টি উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাকে বাছি, এগুলির মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি এলাকায় জনসংখ্যার অধিকাংশই বিভিন্ন জনজাতির। এতে প্রত্যক্ষ সুবিধা পেয়েছেন তিন কোটিরও বেশি জনজাতি ভাই ও বোনেরা। তাঁদের জীবনে আজ পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো - এসব ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে; কারণ, আমরা এই ১১০টি জেলাকে গুরুত্ব দিয়েছি এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিয়মিত তদারকি করছি।

এখানে আমাদের কয়েকজন সম্মানিত সদস্য জনজাতি সংক্রান্ত উপ-পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছেন। আমি এই বন্ধুদের অনুরোধ করছি, একটু সময় বের করে একজন শিক্ষিত ব্যক্তির সাহায্য নিন যিনি বাজেট অধ্যয়ন করতে পারেন এবং একটু ব্যাখ্যা করতে পারেন। তাহলেই  আপনারা দেখবেন যে এবারের বাজেটে সিডিউল্ড ট্রাইব কম্পোনেন্ট ফান্ড বা তফসিলি উপজাতি উপাদান তহবিল ২০১৪ সালের আগের তুলনায় পাঁচগুণ বরাদ্দ বেড়েছে।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

২০১৪ সালের আগে যখন তাঁদের সরকার ক্ষমতায় ছিল, তখন বরাদ্দ ছিল প্রায় ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা, এটা খুব পুরনো কথা নয়, মাত্র ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা। আজ এখানে এসে তাঁরা গান গাইছেন। আমরা এসে এ বছর ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি। আমরা গত ৯ বছরে আমাদের জনজাতিদের, আমাদের জনজাতি ভাই-বোনদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য, সেই শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য ৫০০টি নতুন একলব্য মডেল স্কুল অনুমোদন করেছি, এটি আগের তুলনায় চারগুণ বৃদ্ধি। শুধু তাই নয়, এবারের বাজেটে স্কুল, শিক্ষক-কর্মচারীসহ ৩৮ হাজার নতুন লোক নিয়োগের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমাদের সরকার জনজাতিদের কল্যাণে নিবেদিত, আমি আপনাদের অরণ্যের অধিকার আইন নিয়ে কিছু বলতে চাই।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এবং আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের আগে, ২০১৪ সালের আগে, জনজাতি পরিবারগুলিকে ১৪ লক্ষ জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছিল। আর আমরা গত ৭-৮ বছরে ৬০ লক্ষ নতুন জমির পাট্টা দিয়েছি। এটি একটি নজিরবিহীন কাজ। আমাদের আসার আগে ২৩ হাজার কমিউনিটি পাট্টা দেওয়া হয়েছিল, আমাদের আসার পর ৮০ হাজারের বেশি কমিউনিটি পাট্টা দেওয়া হয়েছে। আপনারা যদি গভীর সহানুভূতির কথা বলে জনজাতিদের অনুভূতি নিয়ে খেলা না করে সত্যি সত্যি কিছু করতেন, তাহলে আজ আমাদেরকে এত পরিশ্রম করতে হতো না এবং এই কাজ আরও অনেক আগেই সহজে হয়ে যেত। কিন্তু এই বিষয়টা তাঁদের অগ্রাধিকার তালিকায় ছিল না।

রাস্তার দু’পাশে ফুটপাথের হকাররা, ঠেলাওয়ালা, রেললাইনের দু’পাশে পসরা সাজিয়ে বসা মানুষদের, তাঁদের অর্থনৈতিক নীতি, তাঁদের সামাজিক নীতি, তাঁদের রাজনীতি ভোটব্যাংকের ভিত্তিতে চলতে থাকে। আর সেজন্যেই যা সমাজের মৌলিক শক্তি, স্ব-রোজগারের কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির ক্ষমতাকে তাঁরা সবসময়ই উপেক্ষা করেছেন। ছোট ছোট কাজে জড়িত জনজাতির মানুষদের তাঁদের কাছে এত ছোট, এতই বিক্ষিপ্ত মনে হয়েছিল যে তাঁদের কাছে জনজাতির মানুষদের কোনও মূল্য ছিল না। ছোট ছোট কাজে নিয়োজিত এই কোটি কোটি মানুষ যে স্ব-রোজগারের মাধ্যমে সমাজের বোঝা না হয়ে সমাজে কিছু না কিছু মূল্য সংযোজন করে, সেটা তাঁরা  ভুলে গিয়েছিলেন। আমি গর্বিত যে রাস্তার দু’পাশে ফুটপাথের হকাররা, ঠেলাওয়ালা, রেললাইনের দু’পাশে পসরা সাজিয়ে বসা মানুষদের সুবিধার কথা আমাদের সরকার ভেবেছে। পুর্ববর্তী সরকারের স্বার্থের তাড়নায় যাদের জীবন ধ্বংস হয়েছিল। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে যথাসময়ে ফিরিয়ে দিতে না পারলে মহাজনদের বাড়িতে গিয়ে যাদের নিয়মিত সারাদিনের ঘাম ঝরাতে হয়েছে, আমরা সেইসব  গরীব মানুষদের দেখাশোনা করেছি, আমরা সেই রাস্তার দু’পাশে ফুটপাথের হকাররা, ঠেলাওয়ালা, রেললাইনের দু’পাশে পসরা সাজিয়ে বসা মানুষদের দেখাশোনা করেছি। আর শ্রদ্ধেয় সভাপতি মহোদয়, শুধু তাই নয়, আমাদের বিশ্বকর্মা সম্প্রদায়; যারা সমাজ গঠনে যে কোনও নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন, যাঁরা তাঁদের হাতের যন্ত্রের সাহায্যে প্রতিনিয়তঃ কিছু না কিছু তৈরি করে চলেছেন, সমাজের চাহিদাগুলি ব্যাপকভাবে পূরণ করে চলেছেন। আমাদের বানজারা সম্প্রদায় থেকে শুরু করে আমাদের নানা ‘ঘুমন্তু জাতি’র মানুষদের যত্ন নেওয়ার জন্য কাজ করেছি। পিএমস্বনিধি প্রকল্প থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা, এগুলির মাধ্যমে আমরা সমাজের এই মানুষদের শক্তির জন্য কাজ করেছি, তাদের সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য কাজ করেছি।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আপনি তো নিজেও একজন কৃষকের ছেলে, এদেশের কৃষকের সঙ্গে কী হয়েছে? কিছু উচ্চবিত্ত কৃষককে সুবিধা পাইয়ে তাঁদের নিয়ে নিজেদের রাজনীতি চালানো, এই প্রক্রিয়া চলে আসছে। অথচ, এদেশে কৃষির প্রকৃত শক্তি ক্ষুদ্র কৃষকদের উৎপাদনে নিহিত। এদেশের প্রায় ৮০-৮৫ শতাংশই এই শ্রেণীর, যাঁরা এক একর বা দুই একর জমিতে ফসল উৎপাদন করেন। এই ক্ষুদ্র কৃষকরা অবহেলিত, কেউ তাঁদের কথা শোনার নেই। আমাদের সরকার ক্ষুদ্র কৃষকদের দিকে নজর দিয়েছে। আনুষ্ঠানিক ব্যাঙ্কিংয়ের সঙ্গে ক্ষুদ্র কৃষকদের যুক্ত করেছে। আজ, পিএম কিষাণ সম্মান নিধির টাকা বছরে ৩ বার ছোট কৃষকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি জমা হয়। শুধু তাই নয়, আমরা পশুপালকদের ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত করেছি, জেলে ও মৎস্যজীবীদের ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত করেছি এবং তাঁদের নেওয়া ঋণের সুদে ছাড় দিয়ে তাঁদের আর্থিক সামর্থ বাড়িয়েছি, যাতে তাঁরা তাঁদের ব্যবসায় উন্নতি করতে পারেন, তাঁদের ফসল ফলানোর ধরণ পরিবর্তন করতে পারেন, যাতে তাঁরা নিজেদের উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ করতে পারেন, এবং ন্যায্য মূল্য পেলে তবেই বাজারে নিয়ে যেতে পারেন - আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছি।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমরা জানি আমাদের দেশে অনেক কৃষক আছেন যাঁদেরকে বৃষ্টির জলের উপর নির্ভর করতে হয়। পূর্ববর্তী সরকারগুলো যথাযথ সেচের ব্যবস্থা করে যাননি। আমরা আরও দেখেছি, বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভরশীল এই ক্ষুদ্র কৃষকরা মোটা দানার শস্য চাষ করেন, সেখানে যথেষ্ট জলের যোগান থাকে না। যাঁরা এই মোটা দানার শস্য চাষ করেন, তাঁদের আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা রাষ্ট্রসংঘকে চিঠি দিয়ে আন্তর্জাতিক ‘মিলেটস ইয়ার’  উদযাপনের অনুরোধ করেছি। এখন কিভাবে বিশ্বে ভারতের মোটা দানার শস্যের ব্র্যান্ডিং হবে, বিপণন হবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা উচিত। এখন দেশে মোটা দানার শস্যকে শ্রী অন্নের গৌরব প্রদান করা উচিত, যাতে উৎপাদনকারী ক্ষুদ্র কৃষকরা শ্রীফলের যেমন গুরুত্ব, তেমনি যুক্তিসঙ্গত দাম পান, বিশ্ববাজারে বিপণনের সুযোগ পান, দেশে ক্রপ প্যাটার্ন বা ফসলের উৎপাদনের ধরণে পরিবর্তন আসে। শুধু তাই নয়, এটা মনে রাখতে হবে যে মোটা দানার শস্যগুলি আসলে সুপারফুড, এগুলি পুষ্টির জন্য অত্যন্ত সহায়ক শক্তি জোগাবে। এগুলো আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মের পুষ্টির সমস্যা সমাধানেও কাজে লাগবে, পাশাপাশি আমাদের ক্ষুদ্র কৃষকদেরকেও আর্থিকভাবে শক্তিশালী করবে। আমরা সারের অনেক নতুন বিকল্পও তৈরি করেছি এবং সেগুলি প্রয়োগে সুফলও পেয়েছি।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমি দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে বিশ্বাস করি যে যখন সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় মা ও বোনদের অংশগ্রহণ বাড়ে, তখন ফলাফল ভাল হয়, নির্ধারিত লক্ষ্যগুলি দ্রুত অর্জনযোগ্য হয়ে ওঠে। আর তাই সব ক্ষেত্রে মা-বোনদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাঁদের যোগদান সুনিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সরকার নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে নারী নেতৃত্বের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। সংসদে আমাদের একজন সম্মানিত সদস্য বলেন, মহিলাদের শৌচাগার দিয়ে নারীর উন্নয়ন হবে কি? এটা হতে পারে যে তাঁর মনোযোগ শুধুমাত্র শৌচাগারের দিকে, এটি তাঁর সমস্যা, কিন্তু আমি একথা বলে গর্ব অনুভব করি, কারণ আমি রাজ্যে কাজ করার পর এখানে এসেছি, গ্রামে কাজ করে এসেছি। আমি গর্বিত যে দেশে ১১ কোটি শৌচাগার তৈরি করে আমরা আমাদের মা-বোনদের সম্মান দিয়েছি। এতে আমি গর্বিত। আমাদের মা, বোন এবং আমাদের কন্যাদের জীবনচক্রের দিকে একটু নজর দিন, মা ও বোনদের ক্ষমতায়নের জন্য আমাদের সরকার কতটা সংবেদনশীল সেদিকে আমি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আর শৌচাগারকে গুরুত্ব দেওয়া নিয়ে যাদের আপত্তি ছিল, তাঁরা একটু কান খুলে শুনুন, গর্ভাবস্থায় শিশু যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তা সুনিশ্চিত করতে আমরা মাতৃবন্দনা যোজনা শুরু করেছি এবং এই অর্থ যাতে সরাসরি গর্ভবতী মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যায়, যাতে তাঁদের গর্ভে থাকা শিশুর পুষ্টিবৃদ্ধির জন্য খরচ করতে পারেন। আমাদের দেশে মাতৃমৃত্যুর হার এবং শিশুমৃত্যুর হারের এই গুরুতর সমস্যা থেকে পরিত্রাণের একটি উপায় হল প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বা হাসপাতালে সন্তানপ্রসব। আমরা দরিদ্র মায়েদের হাসপাতালে সন্তানপ্রসবের জন্য অর্থ ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিশুর জন্ম যাতে হাসপাতালে হয় তা সুনিশ্চিত করতে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি ব্যাপক প্রচার করছে, এবং এর সুফলও আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমরা জানি, সমাজে নানারকম মানসিক বিকৃতির কারণে মাতৃগর্ভেই কন্যাসন্তানকে মেরে ফেলার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল। এটা ছিল সমাজের জন্য কলঙ্ক। আমরা ‘বেটি বাঁচাও অভিযান’ শুরু করেছি এবং আজ আমি আনন্দিত যে দেশে ছেলের জন্মের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে। এটা আমাদের জন্য সন্তুষ্টির বিষয়। এভাবে আমরা কন্যাদের রক্ষার কাজ করেছি। আমরা দেখেছি, মেয়েরা যখন বড় হয়ে স্কুলে যেত কিন্তু শৌচাগারের অভাবে পঞ্চম, ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়তে পড়তে স্কুল ছেড়ে দিত! আমরা দেশের সব স্কুলে মেয়েদের জন্য আলাদা শৌচাগার তৈরি করে সেই উদ্বেগ নিরসন করেছি, যাতে আমাদের মেয়েদের স্কুল ছাড়তে না হয়! কন্যার শিক্ষা অব্যাহত রাখতে আমরা সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার মাধ্যমে আরও বেশি সুদ প্রদান করে কন্যাদের নিরাপদ শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি, যাতে পরিবারও তাঁদের উত্সাহিত করে। মেয়ে যখন তার কাজ করার জন্য বড় হয়, তখন সে যাতে কোনরকম গ্যারান্টি ছাড়াই মুদ্রা যোজনা থেকে ঋণ নিতে পারে এবং নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। আমি খুশি যে মুদ্রা যোজনার ৭০শতাংশ সুবিধাভোগীরাই হলেন আমাদের মা ও মেয়েরা। আমরা এই কাজটি করেছি।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আপনি স্বয়ং সৈনিক স্কুলের ছাত্র ছিলেন। আপনি জানেন যে, সৈনিক স্কুলগুলিতে আগে মেয়েদের ভর্তি করা হতো না। শুধু তাই নয়, তাঁদের সেনাবাহিনীতে যোগদানেরও কোনও সুযোগ ছিল না। কিন্তু, আজ আমাদের মেয়েরা আর অবলা নেই, তাঁরা সবলা হয়ে উঠেছেন। তাঁরাও সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে চান, সেনা আধিকারিক হতে চান। আমাদের সরকার মেয়েদের জন্য সেনাবাহিনীর দরজা খুলে দিয়েছে। আজ এমনকি সিয়াচেন ফ্রন্টিয়ারেও আমার দেশের কোনও কন্যা ভারতমাতাকে রক্ষা করার জন্য বীরঙ্গণার মতো মোতায়েন হতে পারেন। 

মেয়েদের যেন গ্রামের মধ্যেই কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়, তা সুনিশ্চিত করতে আমরা মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে নতুন শক্তি জুগিয়েছি। ব্যাঙ্ক থেকে তাঁরা যে ঋণ পান, তাতে অনেক বেশি সুদ ছাড়ের ব্যবস্থা করেছি। আমরা দেশের মা-বোনেদের রান্নাঘরের ধোঁয়া থেকে মুক্তি দিতে উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে রান্নার গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের মা ও বোনেদের যাতে পানীয় জল সংগ্রহের জন্য আগের মতো  আর ২-৪ কিলোমিটার হেঁটে না যেতে হয়, তা সুনিশ্চিত করতে আমরা বাড়ি বাড়ি নলবাহিত জল সরবরাহের ব্যবস্থা করছি। রাতে মা ও বোনেদের যাতে বাড়িতে অন্ধকারে কাজ করতে না হয়, আর ছেলেমেয়েরা যাতে ভালোভাবে পড়াশুনা করতে পারে, তা সুনিশ্চিত করতে সৌভাগ্য যোজনার মাধ্যমে প্রত্যেক গরীব পরিবারে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। আমাদের মা-বোনেরা সাধারণত নিজেদের রোগ-ব্যাধিগুলিকে লুকিয়ে রাখেন, যাতে তাঁদের জন্য কোনও টাকা না খরচ হয়, পরিবারে কোনও ঋণ না হয়। আমরা আয়ুষ্মান কার্ড সরবরাহের মাধ্যমে প্রত্যেক দরিদ্র পরিবারের জন্য বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা বিমার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার সুনিশ্চিত করতে আমরা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়িগুলির মালিকানা মেয়েদের নামে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা নারী ক্ষমতায়ন সুনিশ্চিত করতে প্রত্যেকের জন্য ব্যাঙ্কে জন ধন অ্যাকাউন্টের ব্যবস্থা করেছি। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমরা আজ গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে, এবারের বাজেট অধিবেশনের উদ্বোধন করেছেন একজন মহিলা রাষ্ট্রপতি আর দেশের সাধারণ বাজেটও পেশ করেছেন একজন মহিলা অর্থমন্ত্রী। এমন সুখকর সংযোগ দেশে আগে আর কখনও আসেনি। আমরা চাই যে, এই শুভ সংযোগ ভবিষ্যতেও যেন আরও দেখতে পাই।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

দেশকে আধুনিক করে তুলতে আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সামর্থকে নস্যাৎ করলে চলবে না। আমাদের সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সামর্থকে খুব ভালোভাবে বোঝে। কিন্তু, আমরা বিচ্ছিন্নভাবে ভাবি না। আমরা সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি উদ্যোগ নিই। ছোটবেলাতেই পড়ুয়াদের মধ্যে যেন বৈজ্ঞানিক মনোভাব গড়ে ওঠে, তা সুনিশ্চিত করতে আমরা বিদ্যালয় স্তরে অটল টিঙ্কারিং ল্যাব চালু করেছি। আর ছেলেমেয়েদের উদ্ভাবনকে উৎসাহ যোগাতে শুরু করেছি অটল ইনক্যুবেশন সেন্টার; যাতে তারা বিদ্যালয় থেকেই এমন আবহ পায় যে, এই প্রযুক্তি ভাবনা তাদের উদ্ভাবক হয়ে উঠতে সাহায্য করে। সেজন্য আমরা নীতিক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছি। মহাকাশ ক্ষেত্রে বেসরকারি অংশীদারিত্বের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেছি। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আজ দেশের নবীন প্রজন্ম বেসরকারি মহাকাশযান অন্তরীক্ষে পাঠানোর ক্ষমতা রাখে। আজ স্টার্টআপ বিশ্বে যারা মূলত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত, সেরকম ইউনিকর্নের সংখ্যায় আজ আমরা বিশ্বের তৃতীয় স্থানে পৌঁছে গেছি।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আজ আমরা সর্বাধিক পেটেন্ট উদ্ভাবন এবং বিশ্ব বাজারে টেকসই সর্বাধিক পেটেন্ট নথিভুক্ত  করার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। সেজন্য দেশ গর্বিত। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আধার – এর শক্তি কতটা, তা আমাদের সরকার ক্ষমতায় এসে দেখিয়ে দিয়েছে। প্রযুক্তির গুরুত্বও ২০১৪ সালের পরই দেশবাসী ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। করোনার কঠিন দিনগুলিতে আমরা দেখেছি, কো-উইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ২০০ কোটি টিকাকরণের শংসাপত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে প্রত্যেক গ্রহীতার মোবাইল ফোনে চলে এসেছে। অনেক উন্নত দেশ এত দ্রুত এই কাজ করতে পারেনি। এজন্য তাঁদের সরকারগুলিকে অনেক সেমিনারে, টিভি ইন্টারভিউতে এবং খবরের কাগজে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সেই সময় আমাদের বৈজ্ঞানিকদের বদনাম করার জন্য অনেক চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু, আমাদের দেশের বৈজ্ঞানিকরা সেদিকে কর্ণপাত না করে কঠিন পরিশ্রম করেছেন আর আমাদের তৈরি টিকা ও ওষুধ শুধুমাত্র দেশবাসী নয়, বিশ্বের অনেক দেশের মানুষের প্রয়োজন মিটিয়েছে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিরোধী মানুষেরা আমাদের বৈজ্ঞানিকদের যতই বদনাম করার চেষ্টা করুক না কেন, ওষুধ প্রস্তুতের ক্ষেত্রে আমাদের দেশ আজ একটি বড় শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ভারত ক্রমে বিশ্বের ফার্মেসি হাব – এ পরিণত হচ্ছে। আমাদের নবীন প্রজন্মের বৈজ্ঞানিকরা নতুন নতুন উদ্ভাবন করছেন। আপনারা তাঁদের উৎসাহ না দিয়ে রাজনীতি করছেন!

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আজ আমি বালীতে জি-২০ গোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলনে ডিজিটাল ইন্ডিয়া নিয়ে প্রবল আগ্রহ দেখেছি। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সাফল্য আজ গোটা বিশ্বকে প্রভাবিত করেছে। ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে ভারত এখন বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আজ আমার দেশবাসীর হাতে ১০০ কোটিরও বেশি মোবাইল ফোন রয়েছে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

একটা সময় ছিল যখন আমরা মোবাইল ফোন আমদানি করতাম। আর আজ আমরা  তা রপ্তানি করি। সেজন্য আমি অত্যন্ত গর্বিত। ৫-জি থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিংবা ‘আইওটি’ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আজ দেশ অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। 

সাধারণ মানুষ যেন তাঁদের জীবনে ড্রোনকে ব্যবহার করতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করতে আমরা ড্রোন নীতিতে পরিবর্তন এনেছি। ফলে, এখন ড্রোনের মাধ্যমে দূরদূরান্ত এলাকায় জীবনদায়ী ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম দ্রুত পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। দেশের কৃষকরা ড্রোনের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুফলকে তাঁদের কৃষি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারছেন। আমরা জিও স্পেশাল সেক্টর উন্মুক্ত করেছি। এভাবে ড্রোনের জন্য একটি সম্পূর্ণ নতুন উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করেছি। রাষ্ট্রসংঘ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে মানুষের বাড়ির মালিকানার অধিকার নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা শোনা যায়। ভারত আজ স্বামিত্ব যোজনার মাধ্যমে ড্রোন দিয়ে গ্রামে গ্রামে জমির মানচিত্রায়ন করে জনসাধারণকে মালিকানার অধিকার প্রদানের কাজ করছে। ফলে, অনেক সম্পত্তির বিবাদ, মামলা-মোকদ্দমার ঝামেলা থেকে মানুষ মুক্ত থাকবেন। আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করে তোলার ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছি। 

আজ দেশ আধুনিক উন্নত ভারত গড়ে তুলতে প্রযুক্তির গুরুত্বকে উপলব্ধি করে। আর সেজন্যই মানবসম্পদ উন্নয়ন ও উদ্ভাবনের পথ খুলতে বিশ্বের একমাত্র ফরেন্সিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটি চালু করেছে। এভাবেই আমরা পরিকাঠামো ক্ষেত্রে নতুন প্রাণশক্তি জোগাতে গতিশক্তি ইউনিভার্সিটি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। ভারত যাতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রে নতুন উল্লম্ফনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে পারে, তা সুনিশ্চিত করতে আমাদের নবীন প্রজন্মকে তার জন্য প্রশিক্ষিত করে তুলতে আমরা এনার্জি ইউনিভার্সিটি চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি। কংগ্রেসের শাসনকালে দেশের প্রযুক্তিবিদ, প্রকৌশলি ও বৈজ্ঞানিকদের যেভাবে ছোট করে দেখা হ’ত, আমরা সেই আবহকে বদলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে সবরকম  উদ্যোগ নিয়েছি। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

এখানে কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি অবাক! আপনারা নিজেদের দেশে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় সার্বজনিক জীবনে থাকার দাবি করেন, কিন্তু আপনারা জানেন না যে, চাকরি আর রোজগারের মধ্যে পার্থক্য কী? যারা চাকরি ও রোজগারের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না, তাঁরাই আজ আমাদের উপদেশ দিচ্ছেন!

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

নতুন নতুন ন্যারেটিভ সৃষ্টি করতে অসম্পূর্ণ বিষয়গুলিকে ধরে নানারকম গুজব ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। বিগত ৯ বছরে ভারতে অর্থ ব্যবস্থা যতটা সম্প্রসারিত হয়েছে, তা আগে হয়নি। নতুন নতুন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা বেড়েছে, পরিবেশ-বান্ধব অর্থনীতির ক্ষেত্রে দেশ যেভাবে এগিয়ে চলেছে, তা দেশে পরিবেশ-বান্ধব কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা বাড়িয়েছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সম্প্রসারণের ফলে ডিজিটাল অর্থনীতির নতুন ক্ষেত্র বিকশিত হচ্ছে। পরিষেবা ক্ষেত্রেও ডিজিটাল ইন্ডিয়া একটি নতুন শীর্ষে পৌঁছে গেছে। সারা দেশে ৫ লক্ষ কমনসার্ভিস সেন্টার আর সেই গ্রামের কমনসার্ভিস সেন্টারগুলির মাধ্যমে ২-৫ জনের কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত হয়েছে। দূরদূরান্তের আরণ্যক এলাকায় ছোট ছোট গ্রামেও এই কমনসার্ভিস সেন্টারগুলি দেশের সাধারণ মানুষকে একটি বোতাম টিপে দেশের সমস্ত প্রয়োজনীয় পরিষেবা গ্রহণের সুযোগ দিচ্ছে। এভাবেই ডিজিটাল অর্থনীতি অনেক নতুন রোজগারের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আজ ৯০ হাজার নথিভুক্ত স্টার্টআপও দেশে কর্মসংস্থানের নতুন দরজা খুলেছে। ২০২২ সালের এপ্রিল – নভেম্বরের মধ্যেই ইপিএফও পে-রোল – এ ১ কোটিরও বেশি মানুষের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আত্মনির্ভর ভারত রোজগার যোজনার মাধ্যমে দেশের ৬০ লক্ষেরও বেশি কর্মচারী উপকৃত হয়েছেন। এই অভিযানের মাধ্যমে আমরা আমাদের শিল্পোদ্যোগীদের জন্য মহাকাশ, প্রতিরক্ষা, ড্রোন, খনি, কয়লা ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্র উন্মুক্ত করেছি। ফলে, কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা নতুন গতি পেয়েছে। আর লক্ষ্য করবেন, সারা দেশে আমাদের নবীন প্রজন্মের যুবক-যুবতীরা এগিয়ে এসে এই সুযোগগুলিকে কাজে লাগিয়েছেন। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দেশকে আত্মনির্ভর করে তুলতেও আমরা আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের মাধ্যমে ৩৫০টিরও বেশি বেসরকারি কোম্পানিকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে ছাড়পত্র দিয়েছি। এখন আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলি প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি করছে। আর অভূতপূর্ব কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি করেছে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আজ দেশে পাইকারি ব্যবসা থেকে শুরু করে পর্যটন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রই সম্প্রসারিত হয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে দেশে খাদি ও গ্রামোদ্যোগ গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু, স্বাধীনতার পর এত বছরে এই খাদি ও গ্রামোদ্যোগ ক্রমে হতাশা আর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল। আমরা সেই পরিস্থিতি বদলেছি। স্বাধীনতার পর আমাদের আমলেই খাদি ও গ্রামোদ্যোগ সর্বাধিক উন্নতির মাধ্যমে আগের সমস্ত রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। সড়ক থেকে শুরু করে নতুন নতুন রেলপথ, নতুন নতুন সমুদ্র বন্দর ও নতুন নতুন বিমানবন্দর এবং প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় গুরুত্ব দিয়ে আমরা যে পরিকাঠামো গড়ে তুলছি, এই পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজে যত কাঁচামাল প্রয়োজন, সেই কাঁচামালগুলি সরবরাহ করতে গড়ে ওঠা নতুন নতুন শিল্পোদ্যোগ দেশে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাকে বাড়িয়েছে। শ্রমিক থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রের মিস্ত্রী, আর প্রকৌশলী থেকে শুরু করে আধিকারিক – এই সমস্ত পদে নতুন নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

এখানে সরকারি নানা প্রকল্পের নামকরণ নিয়েও আপত্তি জানানো হয়েছে। নামগুলিতে কেন সংস্কৃত ভাষার ছোঁয়া রয়েছে, তা নিয়েও অনেকের সমস্যা রয়েছে বলে জানিয়েছেন। এখন বলুন, এ ধরনের সমস্যার কী সমাধান করতে পারি!

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমি একটি খবরের কাগজে পড়েছিলাম, তথ্যটি যাচাই করতে পারিনি। কিন্ত, সেই প্রতিবেদন অনুসারে দেশে ৬০০টির মতো সরকারি প্রকল্প শুধু গান্ধী-নেহরু পরিবারের নামে রয়েছে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

কোনও কর্মসূচিতে  বক্তৃতা দেওয়ার সময় নেহরুজীর নাম উল্লেখ না করলে অনেকেরই রক্ত গরম হয়ে যায়। আমি অবাক হই, যখন এ ধরনের আপত্তি ওঠে। ঠিক আছে, নেহরুজী আমাদের দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারি না যে, তাঁর বংশের কেউ নেহরু উপাধি ব্যবহার করতে কেন ভয় পান। নেহরু উপাধির মধ্যে কী কোনও লজ্জা লুকিয়ে রয়েছে? কিসের লজ্জা?  এত বড় মনীষী আপনাদের পূর্বপুরুষ, আর তাঁর উপাধিটাও ব্যবহার করতে চান না আপনারা? আর এখন  আমাদের কাছে হিসাব চাইছেন?

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

তাঁদের বুঝতে হবে যে, অনেক শতাব্দী প্রাচীন এই দেশটি অসংখ্য সাধারণ মানুষের পরিশ্রম দিয়ে গড়ে উঠেছে। তাঁদের এই পরিশ্রমের ঐতিহ্য জনগণ বংশ পরম্পরায় বহন করে দেশটিকে গড়ে তুলেছে। এই দেশ কোনও নির্দিষ্ট পরিবারের সম্পত্তি নয়। আমরা খেলরত্ন পুরস্কারের নাম বদলে মেজর ধ্যানচাঁদজীর নামে নামকরণ করেছি। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর নামে করেছি, স্বরাজের নামে  করেছি, দেশের পরমবীর চক্রপ্রাপ্ত সেনা বীরদের নামে দ্বীপগুলির নামকরণ করেছি। সেজন্য আমরা গর্বিত। দেশ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর অবদানের জন্য গর্বিত। বিগত দিনগুলিতে আপনারা আমাদের সেনাবাহিনীর বীরত্বকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু, আমরা জানি যে, অনেক শতাব্দীকাল ধরে এভাবেইআমাদের দেশের মানুষদের কৃতিত্বকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। এভারেস্ট নামক এক আধিকারিকের নামে এভারেস্ট শৃঙ্গের নামকরণ হয়েছে। আমরা তার বিপরীতে হেঁটে পরমবীর চক্র বিজেতাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে দ্বীপগুলির নামকরণ করেছি। এতে আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে, এই সমস্যার কথা আপনারা ব্যক্ত করেছেন। প্রত্যেকের সমস্যা জানানোর পথ আলাদা। কিন্তু, আমাদের পথ অত্যন্ত ইতিবাচক। আমরা জানি যে, এই সভায় রাজ্যগুলির গুরুত্ব কত অপরিসীম। আমাদের উপর রাজ্যগুলিকে অবহেলার দোষারোপ করা হয়। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমি দীর্ঘকাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীত্ব করে তারপর এখানে এসেছি। যুক্তরাজ্য কাঠামোর গুরুত্ব কতটা তা আমি খুব ভালোভাবেই বুঝি। সেজন্য আমরা প্রতিযোগিতামূলক ও সহযোগিতামূলক যুক্তরাজ্য ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দিই। আর আসুন, আমরা পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাই। আমরা আমাদের নীতিতে জাতীয় উন্নতিকে গুরুত্ব দিয়েছি। আর পাশাপাশি ক্ষেত্রীয় উচ্চাকাঙ্খাকেও গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের নীতিতে জাতীয় উন্নতি এবং ক্ষেত্রীয় প্রত্যাশার যথাযথ সম্মিলন দেখা যায়। কারণ, আমরা যে সবাই মিলে ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে চলেছি। 

কিন্তু, আজ যাঁরা বিরোধী পক্ষে বসে আছেন, তাঁরা তো বিভিন্ন সময়ে রাজ্যের অধিকারকে খর্ব করেছিলেন। আমি তার প্রমাণ-স্বরূপ কিছু কথা বলতে চাই। ইতিহাসের দিকে তাকান। কোন দল ক্ষমতায় থাকার সময় প্রথম সংবিধানের ৩৫৬ ধারা অপপ্রয়োগ করেছিল?  কারা ৯০ বার বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দিয়েছে? তারা কারা? তারা কারা? তারা কারা? 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

শুধু একজন প্রধানমন্ত্রীই ৫০ বার ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করেছেন। তাঁর নাম শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী। তিনি ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। আজ তাঁদের সঙ্গে কেরলের যে বন্ধুরা সহযোগীর ভূমিকা পালন করছেন, তাঁরা কি মনে করতে পারছেন? একটু ওদিকে মাইকটা লাগিয়ে দিন। কেরলে যখন প্রথম বামপন্থী সরকার নির্বাচিত হয়, তা পণ্ডিত নেহরুর একদমই পছন্দ হয়নি। কিছুদিন পরই তিনি সেই নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দিয়েছিলেন। আর আজ আপনারা ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন। আপনাদের সঙ্গে কী হয়েছিল, সেটা মনে করুন।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

এবার আমি ডিএমকে –র বন্ধুদের বলতে চাই যে, তামিলনাডুতে এমজিআর এবং করুণানিধির মতো নামী মুখ্যমন্ত্রীদের নেতৃত্বাধীন সরকারকে এই কংগ্রেসীরাই ফেলে দিয়েছিল। আজ এমজিআর – এর আত্মা দেখছে, আপনারা কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন। আজ এই সভাকক্ষের সবচেয়ে অগ্রজ সদস্য শ্রী শরদ পাওয়ারজী পেছন দিকে বসে আছেন। তাঁকে আমি সর্বদাই শ্রদ্ধা করি। ১৯৮০ সালে তাঁর বয়স যখন ৩৫-৪০ বছর ছিল, একজন তেজস্বী নবীন মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যের সেবার জন্য সবে কাজ শুরু করেছেন, আর তখনই তাঁর সরকারকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। আর তিনি আজ ওখানেই বসে আছেন। 

প্রত্যেক আঞ্চলিক নেতাকে তাঁরা এইভাবেই সমস্যায় ফেলেছেন। এনকেআর – এর সঙ্গে কী হয়েছিল? এখানে কিছু মানুষ আজ পোশাক বদলেছেন, নাম বদলেছেন, জ্যোতিষীদের নির্দেশ অনুসারেই হয়তো নাম বদলেছেন। কিন্তু, কখনও তাঁরাও ওদের সঙ্গে ছিলেন। তখন এন টি রামারাওজী চিকিৎসার জন্য আমেরিকাতে গিয়েছিলেন। সেই সুযোগে তাঁর সরকারকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হয়। এমনটাই ছিল কংগ্রেসের রাজনীতির স্তর।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

তাঁরা তখনকার খবরের কাগজ বের করে দেখে নিতে পারেন। প্রত্যেক খবরের কাগজেই লেখা হয়েছিল যে, তখন প্রতিটি রাজভবনকেই কংগ্রেসের হেড কোয়াটার বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২০০৫ – এ ঝাড়খন্ডে এনডিএ-র বেশি আসন ছিল, কিন্তু রাজ্যপাল মহোদয় ইউপিএ-কে শপথের জন্য ডেকেছিলেন। ১৯৮২ সালে হরিয়ানায় ভারতীয় জনতা পার্টি এবং দেবীলালের মধ্যে নির্বাচন পূর্ববর্তী চুক্তি ছিল, তা সত্ত্বেও রাজ্যপাল মহোদয় কংগ্রেসকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এটাই কংগ্রেসের অতীত। আর আজ তাঁরা দেশকে এভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

এখন আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। যাঁরা অর্থনীতি বোঝেন না, ২৪ ঘন্টা রাজনীতি ছাড়া আর কিছু ভাবেন না, ক্ষমতা দখলই যাঁদের একমাত্র ধ্যানজ্ঞান, তাঁরাই আজ দেশের অর্থনীতিকে অনর্থনীতিতে বদলে দিয়েছেন। আমি তাঁদের সতর্ক করতে চাই যে, আপনারা নির্দিষ্ট রাজ্যগুলিকে বোঝান, যাতে তারা ভুল পথে না যায়। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলির অবস্থা আপনারা দেখছেন, তারা ভুলভাল ঋণ নিয়ে দেশকে কেমন দেউলিয়া করে ফেলছে। আজ আমাদের দেশও যদি তাৎক্ষণিক লাভের জন্য এই পথ অনুসরণ করে, তা হলে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিরাট ক্ষতি করে যাব। কিছু রাজ্যকে আমি এই পথ অনুসরণ করতে দেখছি। তারা নিজেরও ক্ষতি যেমন করবে, তেমন দেশেরও ক্ষতি করবে। এখন দেশ ঋণগ্রস্ত। তাই, বিশ্বের কোনও দেশ থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত নই। আমি দলমত নির্বিশেষে সমস্ত রাজনীতিবিদদের নিবেদন করছি যে, আমাদের পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে, কিন্তু আপনারা ভুল করেও দেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য নিয়ে ছেলেখেলা করবেন না, তা হলে আমরা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে দ্রুত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সর্বনাশ ডেকে আনব। আমি শুনেছি, একজন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, আমি আজ যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, তাতে সমস্যা আসবে কিন্তু সেটা ২০৩০-৩২ সালের পর আসবে। তখন যিনি ক্ষমতায় থাকবেন, তিনি ভুগবেন। আপনি রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায় রয়েছেন বলে, এমনটা ভাবতে পারেন না। তাঁর এই যুক্তি আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

দেশের আর্থিক স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে রাজ্যগুলিকেও অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে, কিছু অনুশাসন মেনে চলতে হবে। তবেই রাজ্যগুলি দেশের উন্নয়ন যাত্রার সুফল ভোগ করতে পারবে। তবেই, সেইসব রাজ্যের নাগরিকদের উন্নয়নে আমরা সঠিকভাবে কাজ করতে পারবো।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

২০৪৭ সালের মধ্যে এই দেশকে উন্নত ভারতে রূপান্তরিত করার এই সংকল্প এখন ১৪০ কোটি দেশবাসীর সংকল্পে পরিণত হয়েছে। এখন এই দেশ আর পেছনে ফিরে তাকাতে রাজি নয়। এই দেশ এখন  দীর্ঘ উল্লম্ফনের জন্য প্রস্তুত। আপনারা  নিজেদের শাসনকালে দেশের মানুষের যে দু’বেলা দুটি রুটি খেতে পারার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সফল হননি, কিন্তু, আমরা সফল হয়েছি। সাধারণ মানুষ যে সামাজিক ন্যয় প্রত্যাশা করতেন, তাও আপনারা দিতে পারেননি, আমরা সেটা করেছি। সাধারণ মানুষের মনে যেসব সুযোগ সুবিধার আকাঙ্খা ছিল, সেই সুযোগগুলিকে বাস্তবায়িত করতেও আমরা অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। স্বাধীন ভারতের স্বপ্নকে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করতে আমরা সংকল্পবদ্ধ হয়ে এগিয়ে চলেছি।

আর মাননীয় সভাপতিজী,

আজ দেশ দেখছে যে, একজন একাই কতজনের মোকাবিলা করছে। এখন শ্লোগান দেওয়ার জন্য শব্দচয়নের সময়ও তাঁদের অনেক ভাবতে হচ্ছে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমার দৃঢ় বিশ্বাসের কারণেই আমি এগিয়ে চলেছি। দেশের জন্য বাঁচি। দেশের জন্য কিছু করে যেতে চাই। যাঁরা শুধুই রাজনীতি করতে এসেছেন, তাঁদের মনে সেই সাহস নেই, সেজন্যই তাঁরা বাঁচার পথ খুঁজছেন।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

মাননীয় রাষ্ট্রপতিজীর এই অসাধারণ ভাষণ, দেশবাসীকে মাননীয় রাষ্ট্রপতিজীর এই আলোকবর্তিকা প্রদর্শনের জন্য একটি অসাধারণ প্রেরণাদায়ী ভাষণের জন্য,  মাননীয় রাষ্ট্রপতিজীকে এই সভায় অভিনন্দন জানিয়ে, ধন্যবাদ জানিয়ে, আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি। 

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
LIC outperforms private peers in new premium mop-up in August

Media Coverage

LIC outperforms private peers in new premium mop-up in August
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
PM chairs First meeting of Governing Body of Anusandhan National Research Foundation
September 10, 2024
The scientific community of the country should have faith that there will be no dearth of resources for their endeavours: PM
PM stresses on the need to identify and remove obstacles in the research ecosystem
Focus on Localised solution to Global problems: PM
PM suggests development of a dashboard for easier tracking of information related to research and development
PM stresses on the need for Scientific monitoring of utilisation of resources for Research and Innovation
A programme in hub and spoke mode by pairing universities where research is at nascent stage with top tier established institutions in mentorship mode to be launched
Researchers to be empowered with flexible and transparent funding mechanism towards achieving Ease of Doing Research
ANRF to launch programmes on solution-focussed research in mission mode in select priority areas
ANRF strategies to align with the goals of Viksit Bharat 2047 and follow global best practices adopted by R&D agencies
Centres of Excellence to be set up to support interdisciplinary research in humanities and social sciences

Prime Minister Shri Narendra Modi chaired the first meeting of the Governing Board of Anusandhan National Research Foundation at his residence at 7, Lok Kalyan Marg earlier today. The meeting focussed on discussion about India’s Science and Technology landscape and redesigning of research and development programmes.

During the meeting, Prime Minister said that today a new beginning has been made with the first meeting of the Governing Body of Anusandhan National Research Foundation. Prime Minister stressed on the need to identify and remove obstacles in the research ecosystem of the country. He talked about setting big targets, focusing on attaining them and doing path breaking research. He said that research should focus on finding new solutions to existing problems. He emphasised that problems might be global in nature but their solutions must be localised in accordance with Indian needs.

Prime Minister discussed the need for upgradation and standardisation of institutions. He suggested preparing a list of domain experts on the basis of their expertise. He also talked about developing a dashboard where information related to research and development happening in the country can be easily tracked.

Prime Minister stressed upon the need for Scientific monitoring of utilisation of resources for research and innovation. Saying that this is an ambitious beginning, he said the scientific community of the country should have faith that there will be no dearth of resources for their endeavours. Discussing the positive impacts of Atal Tinkering Labs, Prime Minister suggested that grading of these labs can be done. He also discussed research in various areas like looking for new solutions to the environment change, battery ingredients for EVs, lab grown diamonds, among others.

During the meeting, the Governing Body decided to launch a programme in hub and spoke mode by pairing universities where research is at nascent stage with top tier established institutions in mentorship mode.

Governing Body also discussed several areas of strategic interventions of ANRF which include global positioning of India in key sectors, aligning R&D with national priorities, promoting inclusive growth, capacity building, driving scientific advances and innovation ecosystem, as well as bridging the gap between academic research and industrial applications through industry-aligned translational research.

The ANRF will launch programmes on solution-focussed research in mission mode in select priority areas like Electric Vehicle (EV) mobility, Advanced Materials, Solar Cells, Smart Infrastructure, Health & Medical Technology, Sustainable Agriculture and Photonics. The Governing Body observed that these efforts would impactfuly supplement our march towards Aatmanirbhar Bharat.

While underscoring the translational research with active participation from the industry, the Governing Body also emphasized on promoting fundamental research for advancement of knowledge. It was decided to set up Centers of Excellence to support interdisciplinary research in humanities and social sciences. It was also agreed that there was a need to empower our researchers with flexible and transparent funding mechanism towards achieving ease of doing research.

The Governing Body also directed that the ANRF strategies should align with the goals of Viksit Bharat 2047 and implementation should follow global best practices adopted by research and development agencies across the world.

The meeting was attended by Shri Dharmendra Pradhan, Union Minister of Education as the Vice-President of Governing Body, Principal Scientific Adviser to the Government of India as Member Secretary, Member (Science), NITI Aayog and Secretary, Department of Science & Technology, Department of Biotechnology, Department of Scientific & Industrial Research and Department of Higher Education as its ex-officio members. Other prominent participants included Prof. Manjul Bhargava (Princeton University, USA), Dr. Romesh T Wadhwani (Symphony Technology Group, USA), Prof. Subra Suresh (Brown University, USA), Dr. Raghuvendra Tanwar (Indian Council of Historical Research), Prof. Jayaram N. Chengalur (Tata Institute of Fundamental Research) and Prof. G Rangarajan (Indian Institute of Science).

About Anusandhan National Research Foundation

Anusandhan National Research Foundation (ANRF) has been established to promote research and development and foster a culture of research and innovation throughout India’s Universities, Colleges, Research Institutions, and R&D laboratories. ANRF acts as an apex body to provide high-level strategic direction of scientific research in the country as per recommendations of the National Education Policy. ANRF forges collaborations among the industry, academia, and government departments and research institutions.