গীতা আমাদের ভাবতে শেখায়, প্রশ্ন করতে অনুপ্রাণিত করে, বিতর্কের অংশ নিতে উৎসাহ যোগায় এবং মনকে উন্মুক্ত করে : প্রধানমন্ত্রী

সুধী অভ্যাগত বৃন্দ,

বন্ধুগণ !

ভানাক্কাম !

এটি একটি অভূতপূর্ব এক মুহূর্ত। স্বামী চিদ্ভাবানন্দজির টীকা সম্বলিত গীতার বৈদ্যুতিন পুস্তক আজ প্রকাশ হচ্ছে। যাঁরা এই প্রকাশনা নিয়ে কাজ করেছেন আমি তাদের সকলকে অভিনন্দন জানাই। এই উদ্যোগের প্রশংসা করি। ঐতিহ্য ও প্রযুক্তির এখানে মেলবন্ধন ঘটেছে। ই-বুক (বৈদ্যুতিন পুস্তক) বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়ের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাই এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে গীতার মহান ভাবনার সঙ্গে আরও বেশি যুব সম্প্রদায়কে যুক্ত করা যাবে।

বন্ধুগণ !

শাশ্বত গীতার সঙ্গে গৌবরময় তামিল সংস্কৃতির যোগসূত্রকে এই ই-বুক আরো নিবিড় করে তুলবে। প্রাণবন্ত তামিল সম্প্রদায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে। তাঁরা সহজেই এই বইটি পড়তে পারবেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তামিল সম্প্রদায় সাফল্যের নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছছেন। কিন্তু তাঁরা নিজেদের সংস্কৃতির শেকড়ের সম্পর্কে গর্বিত। তাঁরা যেখানেই যান, মহান তামিল সংস্কৃতিকেও সঙ্গে নিয়ে যান।

বন্ধুগণ,

আমি স্বামী চিদ্ভাবানন্দজির উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তিনি মননে, চিন্তনে শারীরিকভাব, আত্মিকভাবে ভারতের পুনরুত্থানের জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি বিদেশে পড়াশোনা করার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু ভাগ্য তাঁর জন্য অন্য পরিকল্পনা করেছিল। একবার রাস্তার ধারে এক বই বিক্রেতার কাছ থেকে যখন তিনি ‘স্বামী বিবেকানন্দস ম্যাড্রাস লেকচার্স’ বইটি কিনেছিলেন, তারপরই তাঁর জীবন বদলে যায়। এই বই তাঁকে সবকিছুর ওপর দেশকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে এবং মানুষের জন্য কাজ করার আগ্রহ তৈরি করেছে। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন :

যদ্য যদ্য আচরতি শ্রেষ্ঠঃ তত্ত তত্ত এব ইতরে জনঃ।

সযৎ প্রমাণম কুরুতে লোকঃ তদ অনু বর্ততে।।

অর্থাৎ মহান মানুষ যা কিছুই করুন না কেন অনেকেই তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সেই পথ অনুসরণ করেন। একদিকে স্বামী চিদ্ভাবানন্দজি, স্বামী বিবেকানন্দের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন অন্যদিকে তিনি সারা বিশ্বকে তাঁর মহৎ কাজের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। শ্রী রামকৃষ্ণ তপোবনম আশ্রম স্বামী চিদ্ভাবানন্দজির মহান কাজকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাঁরা মানুষের সেবা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ওপর প্রশংসনীয় কাজ করছে। আমি রামকৃষ্ণ তপোবনম আশ্রমের এইসব কাজের প্রশংসা করি এবং আশা করব ভবিষ্যতেও তাঁরা এভাবে আরও ভালো কাজ করে যাবেন।

বন্ধুগণ,

গীতার মাহাত্ম্য তার গভীরতা, বৈচিত্র্য ও নমনীয়তার মধ্যে নিহিত। আচার্য বিনোবা ভাবে গীতাকে বর্ণনা করেছিলেন সেই মায়ের সঙ্গে যিনি তাঁর সন্তান যদি হোঁচট খেয়ে পরে যায় তাহলে তৎক্ষণাৎ সন্তানকে বুকে তুলে নেন। মহাত্মা গান্ধী, লোকমান্য তিলক, মহাকবি সুব্রহ্মনিয়া ভারতী গীতার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। গীতা আমাদের ভাবতে শিখিয়েছে, প্রশ্ন করতে শিখিয়েছে, বিতর্কে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করেছে, আমাদের মনের দরজা খুলে দিয়েছে। যিনি গীতার দ্বারা অনুপ্রাণিত হবেন তিনি প্রকৃতির প্রতি আস্থাশীল ও গণতন্ত্র মনস্ক হবেন।

বন্ধুগণ,

কেউ হয়তো ভাবতে পারেন গীতার মতো একটি গ্রন্থ শান্তিপূর্ণ ও মনোরম পরিবেশে তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমরা সকলেই জানি দ্বন্দ্বের মধ্যে এর সৃষ্টি౼ ভাগবত গীতার থেকে জীবনের সুক্ষতম জিনিস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

গীতা হল জ্ঞানের মহান উৎস, আমরা যা কিছুই আশা করি তার সবকিছুই গীতায় পাওয়া যায়। কিন্তু আপনারা কি কখনও ভেবেছেন শ্রীকৃষ্ণের বাণী থেকে আমরা কি পাই ? ভাগবত গীতা ভাবনার রসদ যোগায় যার মধ্যে দিয়ে বিষাদ থেকে বিজয়ের দিকে এগোন যায়। যখন ভাগবত গীতার সৃষ্টি হয়েছিল তখন সংঘাত ছিল, বিষাদ ছিল। অনেকেই মনে করেন আজ মানবজাতি সেই একই সংঘাত, একই সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সারা পৃথিবী বিপজ্জনক মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এর আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব সুদুরপ্রসারী। এইসময়ে শ্রীমদ ভাগবত গীতা যে পথ দেখায় তা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। মানবজাতি যে সংকটের সম্মুখীন তার থেকে বিজয় লাভ করার শক্তি ও পথ প্রদর্শন করে গীতা। ভারতে আমরা এর অনেক উদাহরণ দেখেছি। কোভিড-১৯এর বিরুদ্ধে আমাদের জনশক্তির লড়াই, মানুষের অনবদ্য উৎসাহ, আমাদের নাগরিকদের সাহস দেখে যে কোন মানুষ বলতে পারেন গীতায় যা উল্লিখিত আছে, এই মানসিকতা তারই প্রতিফলন । এটি হল নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার মানসিকতা। যখন আমাদের জনসাধারণ অন্যকে সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয় তখনই আমরা সেটি উপলব্ধি করতে পারি।

বন্ধুগণ,

গত বছর ইউরোপীয়ান হার্ট জার্নালে একটি চমৎকার নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশিত কার্ডিওলজির এই সাময়িক পত্রে অন্য অনেক নিবন্ধের মধ্যে একটি নিবন্ধে কোভিড সময়কালে গীতার প্রাসঙ্গিকতার উল্লেখ ছিল। ভাগবত গীতা জীবনে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে প্রয়োজনী নীতি-নির্দেশিকা যথাযথভাবে বর্ণনা করেছে। এই নিবন্ধে অর্জুনকে স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে এবং হাসপাতালগুলিকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ক্ষেত্র হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ভয় এবং সংকটকে উপেক্ষা করে যেভাবে স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের কর্তব্য পালন করেছেন এই নিবন্ধে তার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশংসা করা হয়েছে।

বন্ধুগণ,

ভাগবত গীতার মূল বাণী হল কর্ম। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন :

নিয়তং কুরু কর্ম ত্বং

কর্ম জ্যায়ো হ্যকর্মণঃ।

শরীর যাত্রাপি চ তে

না প্রসিদ্ধে দকর্মণঃ।।

তিনি বলেছেন, নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকার থেকে সক্রিয় হয়ে থাকা অনেক ভাল। আমরা আমাদের দেহকে কোনও কাজ ছাড়া ভালো রাখতে পারিনা। আজ ১৩০ কোটি ভারতবাসী তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছেন। তাঁরা ভারতকে আত্মনির্ভর করে তুলবেন। দীর্ঘমেয়াদী এই উদ্যোগে আত্মনির্ভর ভারতের প্রতি সকলের উৎসাহ। আত্মনির্ভর ভারত যে সম্পদ সৃষ্টি করবে তার থেকে শুধু আমরাই লাভবান হবনা সারা মানবজাতি লাভবান হবে। আমরা বিশ্বাস করি সারা বিশ্বের জন্য আত্মনির্ভর ভারত সুফল বয়ে আনবে। সম্প্রতি যখন সারা বিশ্বের ওষুধের প্রয়োজন ছিল, তখন ভারতের পক্ষে যতটা সম্ভব ততটাই সে দিয়েছে। আমাদের বিজ্ঞানীরা টীকা উদ্ভাবনের জন্য দ্রুত কাজ করেছেন। আজ ভারত বিনম্র চিত্তে দেশে তৈরি টীকা সারা বিশ্বে সরবরাহ করছে। আমরা মানব জাতির রোগ উপশম করার পাশাপাশি তাকে সাহায্যও করতে চাই- আর গীতায় এই কথারই উল্লেখ রয়েছে।

বন্ধুগণ,

আমি যুব সম্প্রদায়কে গীতার প্রতি উৎসাহিত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। গীতা থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই তা বাস্তব সম্মত ও প্রাসঙ্গিক। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে গীতা শান্তির বার্তা দেয়। জীবনের বহু মাত্রার সম্পর্কে ধারণা আমরা গীতা থেকে পাই। কর্মণ্যে- বাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন। গীতা আমাদের মনকে ব্যর্থতার আশঙ্কা থেকে মুক্ত করে কাজে অংশগ্রহণে উসাহ যোগায়। প্রকৃত জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা আমরা জ্ঞান যোগ অধ্যায় থেকে পাই। নিষ্ঠার গুরুত্ব সম্পর্কে ভক্তিযোগ থেকে আমরা ধারণা পাই। প্রতিটি অধ্যায় আমাদের মন ছুঁয়ে যায়। আমরা নতুন কিছু প্রতিটি অধ্যায় থেকে পাই। ইতিবাচক ভাবনা-চিন্তার ধারণা গীতা থেকে পাওয়া যায়। সর্বোপরি এই পবিত্র গ্রন্থ আমাদের মহা শক্তিশালী ঈশ্বরের সম্পর্কে ধারণা দেয়।

স্বামী বিবেকানন্দও এ বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। আমার তরুণ বন্ধুরা অনেক কঠিন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। এরকম কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে প্রশ্ন করুন আজ আমি যদি অর্জুনে জায়গায় থাকতাম তাহলে শ্রীকৃষ্ণ আমাকে কি করতে বলতেন? আপনি এর সুফল দারুণভাবে পাবেন। কারণ সেই পরিস্থিতি থেকে সম্পূর্ণ মোহমুক্ত হয়ে আপনি কাজ শুরু করতে পারবেন। শাশ্বত গীতার নীতি থেকে আপনি ধারণা পাবেন।

আর গীতা আপনাকে সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেবে। আপনি যে কোন কঠিন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। আরও একবার স্বামী চিদ্ভাবানন্দজির টীকা সম্বলিত ই-বুক প্রকাশ করার জন্য আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই।

ধন্যবাদ।

ভানাক্কাম।

Explore More
শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দিরের ধ্বজারোহণ উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ

জনপ্রিয় ভাষণ

শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দিরের ধ্বজারোহণ উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ
India leads globally in renewable energy; records highest-ever 31.25 GW non-fossil addition in FY 25-26: Pralhad Joshi.

Media Coverage

India leads globally in renewable energy; records highest-ever 31.25 GW non-fossil addition in FY 25-26: Pralhad Joshi.
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
PM Modi hails the commencement of 20th Session of UNESCO’s Committee on Intangible Cultural Heritage in India
December 08, 2025

The Prime Minister has expressed immense joy on the commencement of the 20th Session of the Committee on Intangible Cultural Heritage of UNESCO in India. He said that the forum has brought together delegates from over 150 nations with a shared vision to protect and popularise living traditions across the world.

The Prime Minister stated that India is glad to host this important gathering, especially at the historic Red Fort. He added that the occasion reflects India’s commitment to harnessing the power of culture to connect societies and generations.

The Prime Minister wrote on X;

“It is a matter of immense joy that the 20th Session of UNESCO’s Committee on Intangible Cultural Heritage has commenced in India. This forum has brought together delegates from over 150 nations with a vision to protect and popularise our shared living traditions. India is glad to host this gathering, and that too at the Red Fort. It also reflects our commitment to harnessing the power of culture to connect societies and generations.

@UNESCO”