ভারতের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শ্রী অন্ন হয়ে উঠতে চলেছে এক বিশেষ মাধ্যম
‘গ্রাম’ ও ‘গরিব’ – এই শব্দ দুটির ব্যঞ্জনা মিশে রয়েছে বাজরা আন্দোলনের সঙ্গে
আজ বিশ্ব বাজরা (শ্রী অন্ন) সম্মেলনের উদ্বোধনকালে মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর
ভারতের আড়াই কোটি ক্ষুদ্র কৃষক বর্তমানে সরাসরি বাজরা শস্য উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত।
তাঁদের জমির পরিমাণ খুবই অল্প এবং জলবায়ুজনিত সমস্যা তাঁরাও ভোগ করে থাকেন
কিন্তু, ভারতের ‘বাজরা মিশন’ কর্মসূচি এই আড়াই কোটি কৃষকের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়াবে
শ্রী অন্ন-এর বিপণন ব্যবস্থা যখন আরও প্রসার লাভ করবে, তখন এই আড়াই কোটি ক্ষুদ্র কৃষকের আয় ও উপার্জনও অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে
বাজরা একদিকে যেমন মানব শরীরে পুষ্টির যোগান দেয়, অন্যদিকে তেমনই এর উৎপাদনের মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্যরক্ষাও সম্ভব।
শুধু তাই নয়, অন্যান্য শস্য উৎপাদনের তুলনায় খুব দ্রুত এর উৎপাদন সম্ভব।
একইসঙ্গে তৈরি করা হচ্ছে এমন একটি যোগান শৃঙ্খল যার আওতায় ছোট ছোট গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা বাজরা জাতীয় শস্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের পর তা পৌঁছে দিতে পারছেন বিভিন্ন মল ও সুপার মার্কেটে।
বাজরা আন্দোলন হল এমনই একটি বিষয় যার মধ্যে ভারতের এই লক্ষ্য ও আদর্শের প্রতিফলন ঘটতে চলেছে।

আজকের এই সম্মেলনে উপস্থিত রয়েছেন আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহকর্মী শ্রী নরেন্দ্র সিং তোমর জি, মনসুখ মান্ডভিয়া জি, পীযূষ গোয়েল জি, শ্রী কৈলাশ চৌধুরী জি! বিভিন্ন দেশ থেকে আগত কয়েকজন মাননীয় মন্ত্রী,  গায়ানা, মালদ্বীপ, মরিশাস, শ্রীলঙ্কা, সুদান, সুরিনাম এবং গাম্বিয়া থেকে আগত মাননীয় মন্ত্রীগণ, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৃষি, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উদ্ভাবন ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মরত মাননীয় বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞগণ, বিভিন্ন  খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা এবং স্টার্ট- আপস এর প্রতিনিধি দেশের নবীন প্রজন্মের বন্ধুরা, দেশের প্রত্যক প্রান্ত থেকে আগত লক্ষ লক্ষ কৃষক, এখানে উপস্থিত অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,

এই 'গ্লোবাল মিলেটস কনফারেন্স' বা আন্তর্জাতিক মোটা দানার শস্য (শ্রী অন্ন) সম্মেলনের আয়োজন করার জন্য আপনাদের সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলি শুধুমাত্র ‘গ্লোবাল গুড’ বা বিশ্বমানবতার কল্যাণের স্বার্থেই প্রয়োজনীয় নয়, ‘গ্লোবাল গুড’-এর ক্ষেত্রে ভারতের ক্রমবর্ধমান দায়িত্বের প্রতীকও।

বন্ধুগণ,

আপনারা এটাও জানেন যে ভারতের প্রস্তাব এবং প্রচেষ্টার ফলেই রাষ্ট্রসংঘ এই ২০২৩ সালকে ‘ইন্টারন্যাশনাল মিলেট ইয়ার’ বা 'আন্তর্জাতিক মোটা দানার শস্য বর্ষ' হিসেবে ঘোষণা করেছে। আমরা যখন একটি সংকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাই, তখন সেটিকে পরিপূর্ণতায় নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমি আনন্দিত যে আজ, যখন বিশ্ব ‘ইন্টারন্যাশনাল মিলেট ইয়ার’ উদযাপন করছে, তখন ভারত এই অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছে। 'গ্লোবাল মিলেটস কনফারেন্স' এই দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এতে জোয়ার, বাজরা ইত্যাদি মোটা দানার শস্য চাষের সঙ্গে সম্পর্কিত অর্থনীতি, স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব, কৃষকদের আয়, এমন অনেক বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞরা আলোচনা করতে যাচ্ছেন। এতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন অসংখ্য গ্রাম পঞ্চায়েত, কৃষি কেন্দ্র, স্কুল-কলেজ এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও। ভারতীয় দূতাবাস থেকে শুরু করে অনেক দেশের প্রতিনিধিরাও আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আজ আমাদের সঙ্গে এই অনুষ্ঠানে কার্যতঃ ভারতের ৭৫ লক্ষেরও বেশি কৃষক উপস্থিত রয়েছেন। এই আগ্রহও এই কর্মসূচির গুরুত্ব প্রকাশ করে। আমি আবারও আপনাদের সবাইকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই, অভিনন্দন জানাই। সম্প্রতি স্মারক ডাকটিকিট এবং মোটা দানার শস্য-র একটি মুদ্রাও এখানে প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া একটি মিলেট স্ট্যান্ডার্ডের বইও এখানে উদ্বোধন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, আজ এখানে আই সি এ আর-এর শাখা সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ মিলেটস রিসার্চ’-কে ‘গ্লোবাল সেন্টার অফ এক্সিলেন্স’ হিসাবে ঘোষণা  করা হয়েছে। আজ এখানে এই মঞ্চে আসার আগে, আমি যে প্রদর্শনী দেখতে গিয়েছিলাম, আমি আপনাদের সবাইকে এবং যারা আজ দিল্লিতে আছেন বা দিল্লিতে আসছেন তাঁদেরও অনুরোধ করবো যে, এক জায়গায় মোটাদানা শস্যের সমস্ত দিকগুলিকে এবং তার উপযোগিতাকে বোঝা পরিবেশ ও প্রকৃতির স্বার্থে আমাদের সুস্বাস্থ্যের স্বার্থে কৃষকের আয় বৃদ্ধির সমস্ত দিকগুলিকে ভালোভাবে বুঝতে এই প্রদর্শনী দেখা অত্যন্ত প্রয়োজন। সেজন্য আমি আপনাদের সকলকে অনুরোধ জানাই যে, আসুন, এই অভিনব প্রদর্শনী ঘুরে দেখুন। আমাদের নবীন বন্ধুরা কিভাবে নতুন নতুন স্টার্টআপ – এর মাধ্যমে এক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছেন, তা আপনাদের সকলকে অবশ্যই প্রভাবিত করবে। এরা সকলে এক্ষেত্রে ভারতের দায়বদ্ধতাকে তুলে ধরছেন।

বন্ধুগণ,

'গ্লোবাল মিলেটস কনফারেন্স' বা আন্তর্জাতিক মোটা দানার শস্য (শ্রী অন্ন) সম্মেলনের সঙ্গে যুক্ত আমাদের মাননীয় বিদেশি অতিথিদের আজ আমি আমাদের লক্ষ লক্ষ কৃষকের সামনেই একটি তথ্য সম্পর্কে অবহিত করতে চাই। মোটাদানার শস্যের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং, কমন ব্র্যান্ডিং – এর দিকে তাকিয়ে ভারতে মিলেটস্ বা মোটাদানার শস্যকে এখন ‘শ্রী অন্ন’ পরিচয় প্রদান করা হয়েছে। এই ‘শ্রী অন্ন’ – র ভাবনাটি শুধুই চাষবাস বা খাদ্য উৎপাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যাঁরা ভারতের পরম্পরার সঙ্গে পরিচিত তাঁরা জানেন যে, আমাদের দেশে কোনও নামের আগে ‘শ্রী’ যুক্ত করার গুরুত্ব কতটা। যেখানে ‘শ্রী’ থাকে, সেখানে সমৃদ্ধিও থাকে। আর সমগ্রতাও থাকে। ‘শ্রী অন্ন’ ক্রমে ভারতে সামগ্রিক বিকাশের একটি মাধ্যম হয়ে উঠছে। এর সঙ্গে ক্রমে ভারতের গ্রামগুলি যুক্ত হচ্ছে, গরীব মানুষরাও যুক্ত হচ্ছেন। এই ‘শ্রী অন্ন’ দেশের ক্ষুদ্র কৃষকদের সমৃদ্ধির দ্বার খুলে দিচ্ছে। এই ‘শ্রী অন্ন’ দেশের কোটি কোটি মানুষের পুষ্টির আধার হয়ে উঠছে। এই ‘শ্রী অন্ন’ দেশের জনজাতি সমাজের শিষ্টাচার, কম জলে বেশি ফসল উৎপাদন, রাসায়নিক সার মুক্ত কৃষির বড় আধার। এই ‘শ্রী অন্ন’ জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

বন্ধুগণ,

আমরা ক্রমাগত এই ‘শ্রী অন্ন’কে একটি আন্তর্জাতিক অভিযানে পরিণত করার কাজ করে চলেছি। ২০১৮ সালে আমরা মোটাদানার শস্যকে নিউট্রিসেরেলস্ বা পুষ্টিবর্ধক শস্য হিসাবে ঘোষণা করেছি। এই মোটাদানার শস্য উৎপাদনে কৃষকদের সচেতন করে তোলা থেকে শুরু করে এ সম্পর্কে বাজারে আগ্রহ গড়ে তোলা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে কাজ করা হয়েছে। আমাদের দেশে ১২-১৩টি রাজ্যে এই মোটাদানার শস্যের চাষকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু, এর ফলে মাথাপিছু অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রতি মাসে ২-৩ কিলোগ্রামের বেশি ছিল না। আপনারা শুনলে খুশি হবেন যে, ইতিমধ্যেই এই চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি মাসে ১৪ কিলোগ্রাম হয়েছে। মোটাদানার শস্য থেকে উৎপাদিত খাদ্য সামগ্রীর বিক্রিও প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘মিলেট ক্যাফে’ দেখা যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে মিলেট সংক্রান্ত নানা রেসিপি শেখানোর চ্যানেল গড়ে উঠেছে। দেশের ১৯টি জেলায় মিলেট-কে ‘এক জেলা, এক পণ্য’ প্রকল্প হিসাবেও বেছে নেওয়া হয়েছে।

বন্ধুগণ,

আমরা জানি যে, ‘শ্রী অন্ন’ উৎপাদনকারী কৃষকদের অধিকাংশই ক্ষুদ্র চাষী। অনেকেই একথা জেনে চমকে উঠবেন যে, এখন ভারতে প্রায় ২.৫ কোটি ক্ষুদ্র কৃষক মোটাদানার শস্য উৎপাদন করেন। তাঁরা খুব কম জমির মালিক। আর তাঁদেরকেই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নানা ধরনের প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। ভারতের ‘মিলেট মিশন’, ‘শ্রী অন্ন’ উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে গড়ে তোলা এই অভিযান দেশের ২.৫ কোটি ক্ষুদ্র কৃষকের জন্য আশীর্বাদে পরিণত হতে চলেছে। স্বাধীনতার পর মোটাদানার শস্য উৎপাদনকারী ২.৫ কোটি কৃষক এই প্রথমবার সরকারি সুবিধা পাচ্ছেন। যখন ‘শ্রী অন্ন’ – র বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে, তখন এই ২.৫ কোটি ক্ষুদ্র কৃষকের আয়ও বৃদ্ধি পাবে। এর মাধ্যমে আমাদের গ্রামীণ অর্থ ব্যবস্থা অনেক বেশি পল্লবিত ও পুষ্পিত হবে।

প্রক্রিয়াজাত এবং প্যাকেজিং খাদ্য সামগ্রীর মাধ্যমে ‘শ্রী অন্ন’ এখন দেশ তথা বিশ্বের বড় বড় দোকান এবং বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরের মধ্যেই দেশে ‘শ্রী অন্ন’ প্রক্রিয়াকরণের উদ্দেশ্যে ৫০০টিরও বেশি স্টার্টআপ গড়ে উঠেছে। বৃহৎ সংখ্যক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংগঠনগুলিও এই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আমাদের দেশের অনেক মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীও মোটাদানার শস্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে নানা মুখরোচক খাদ্য তৈরি করছেন। গ্রাম থেকে বেরিয়ে এই খাদ্য পণ্য এখন শহরের ঝা চকচকে শপিং মল ও সুপার মার্কেটগুলিতে পৌঁছে যাচ্ছে। অর্থাৎ, দেশে ক্রমে মোটাদানার শস্যের একটি পূর্ণাঙ্গ সরবরাহ-শৃঙ্খল বিকশিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে যুবসম্প্রদায়ের কর্মসংস্থান বাড়ছে আর ক্ষুদ্র চাষীদের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ও সমৃদ্ধি আসছে।

বন্ধুগণ,

ভারত এই সময় জি-২০ গোষ্ঠী ভুক্ত দেশগুলির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে। ভারতের উদ্দেশ্য হ’ল – ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’।  গোটা বিশ্বকে একটি পরিবার বলে ভাবার এই দর্শন 'গ্লোবাল মিলেটস কনফারেন্স' বা আন্তর্জাতিক মোটা দানার শস্য (শ্রী অন্ন) বর্ষের ভাবনাতেও প্রতিফলিত হচ্ছে। বিশ্বের প্রতি কর্তব্য ভাবনা এবং মানবতার সেবার সংকল্পই ভারতের সবচেয়ে বড় প্রেরণা। আপনারা লক্ষ্য করবেন যে, আমরা যখন যোগের প্রচার ও প্রসারে বিশ্বব্যাপী অভিযান শুরু করি, এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালনের মাধ্যমে গোটা বিশ্ব যাতে লাভবান হয়, তা সুনিশ্চিত করা। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আজ বিশ্বে ১০০টিরও বেশি দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যোগের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। আজ বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশে আয়ুর্বেদকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স বা আন্তর্জাতিক সৌর সংঘ প্রতিষ্ঠার ফলে ভারত আজ বিশ্বকে মানবতার অনুকূল সুদূরপ্রসারী ও টেকসই গ্রহ হিসাবে গড়ে তোলার অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, ইতিমধ্যেই এই আন্তর্জাতিক সৌর সংঘে ১০০টিরও বেশি দেশ যুক্ত হয়েছে। আজ আমাদের ‘লাইফ’ মিশনে নেতৃত্ব প্রদান থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিহত করার লক্ষ্যগুলিকে নির্ধারিত সময়ের আগেই সম্পন্ন করা, আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য থেকে প্রেরণা নিয়ে সমাজে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের সূত্রপাত আর এই সবকিছুকে বিশ্ব কল্যাণের ভাবনায় সম্পৃক্ত করাই আমাদের সাফল্যের পথনির্দেশ করছে। আর আজ এখানে ভারতের ‘মিলেট মুভমেন্ট’ বা মোটাদানার শস্য অভিযানও যে ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের ‘শ্রী অন্ন’ অনেক শতাব্দীকাল ধরে ভারতের জীবনশৈলীর অংশ। আমাদের দেশের ভিন্ন  ভিন্ন এলাকায় জোয়ার, বাজরা, রাগী, সামা, কাঙনী, চীনা, কদোঁ, কুটকি ও কুট্টুর মতো কতই না ‘শ্রী অন্ন’  উৎপাদিত হয়। এই ‘শ্রী অন্ন’গুলি উৎপাদন সংক্রান্ত আমাদের কৃষি পদ্ধতিগুলি এবং আমাদের যে অভিজ্ঞতা, তা আমরা বিশ্বকে জানাতে চাই। আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের যত বিশেষ শস্য আছে, সেগুলির উৎপাদন প্রক্রিয়া শিখতে চাই। সেজন্য আজ এই অনুষ্ঠান মঞ্চে যে মিত্র দেশগুলির কৃষি মন্ত্রীরা উপস্থিত রয়েছেন, তাঁদের কাছে আমার বিশেষ আবেদন যে, চলুন, আমরা এক্ষেত্রে একটি টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তুলি। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে কৃষি ক্ষেত্র থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ, এক দেশ থেকে অন্য দেশে বাজারে পৌঁছে দেওয়ার একটি নতুন সরবরাহ-শৃঙ্খল কিভাবে গড়ে তুলতে পারি – তা দেখুন। এটা আমাদের সকলেরই মিলিত দায়িত্ব।

বন্ধুগণ,

আজ এই মঞ্চ থেকে আমি মোটাদানার শস্যের আরেকটি শক্তিকে তুলে ধরতে চাই। মোটাদানার শস্যের এই শক্তি হ’ল – এর পরিবেশ স্থিতিস্থাপক হওয়া। অত্যন্ত প্রতিকূল আবহাওয়া থাকা সত্ত্বেও এই মোটাদানার শস্যগুলি সহজেই উৎপাদন করা যায়। খুব কম জলে এগুলির ফলন হওয়ায় খরাপ্রবণ এলাকাগুলিতেও এগুলির চাষ যেন আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। আপনারা সকলেই জানেন যে, এই মোটাদানার শস্যগুলি কোনও রকম রাসায়নিক সার ছাড়াই প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ফলন সম্ভব। অর্থাৎ, এই মোটাদানার শস্যগুলি মানুষ ও মাটি উভয়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষার গ্যারান্টি দেয়।

বন্ধুগণ,

যখন আমরা খাদ্য সুরক্ষার কথা বলি, তখন আমরা সবাই ভালোভাবেই জানি যে, বিশ্ববাসী এক্ষেত্রে দু’ধরনের সমস্যার মোকাবিলা করছে। একদিকে রয়েছে ‘গ্লোবাল সাউথ’, যারা নিজেদের দরিদ্র মানুষদের জন্য খাদ্য সুরক্ষা কিভাবে সুনিশ্চিত করবে, তা নিয়ে চিন্তিত। অন্যদিকে রয়েছে ‘গ্লোবাল নর্থ’, যেখানে নানা খাদ্যাভাসজাত রোগ একটি বড় সমস্যায় পরিণত হচ্ছে। এখানে কুপুষ্টি একটি বড় সমস্যা। অর্থাৎ, একদিকে খাদ্য সমস্যার ফলে অপুষ্টির সমস্যা আর অন্যদিকে খাদ্যাভাসজাত কুপুষ্টির সমস্যা। আর উভয় ক্ষেত্রেই খাদ্য উৎপাদনে বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। আমাদের ‘শ্রী অন্ন’ এরকম সমস্ত সমস্যার সমাধান সুনিশ্চিত করে। বেশি করে মোটাদানার শস্য উৎপাদন এই উভয় সমস্যার সমাধানকে আরও সহজ করে তোলে। এতে অন্যান্য ফসল উৎপাদনের তুলনায় খরচ যেমন অনেক কম আবার ফলনও অনেক দ্রুত হয়। এগুলিতে পুষ্টিগুণ যেমন বেশি, স্বাদও তেমনই অনন্য। বিশ্ব খাদ্য সুরক্ষার জন্য সংঘর্ষরত মানুষদের জন্য ‘শ্রী অন্ন’ একটি অনেক বড় উপহার-স্বরূপ। তেমনই ‘শ্রী অন্ন’ – র মাধ্যমে খাদ্যাভাসজনিত সমস্যাগুলিও দূর হতে পারে। হাই ফাইবারসম্পন্ন এই খাদ্যশস্যগুলি শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপাদায়ী। এগুলি  জীবনশৈলী সম্পর্কিত নানা রোগ প্রতিরোধে সক্ষম। অর্থাৎ, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে বিশ্বজনীন স্বাস্থ্য সমস্ত ক্ষেত্রে আমরা ‘শ্রী অন্ন’ – এর মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারি।

বন্ধুগণ,

মোটাদানার শস্য নিয়ে যাঁরাই কাজ করবেন, তাঁদের সামনে আজ অনন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। আজ ভারতে ন্যাশনাল ফুড বাস্কেটেও ‘শ্রী অন্ন’ – র অবদান মাত্র ৫-৬ শতাংশ। ভারতের বৈজ্ঞানিক ও কৃষি বিশেষজ্ঞদের প্রতি আমার অনুরোধ যে, এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ আমাদের দ্রুত করতে হবে। আমাদের প্রত্যেক বছরের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্য স্থির করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্রটিকে আরও উৎসাহ যোগাতে পিএলআই স্কিমও চালু করেছে। মোটাদানার শস্য যেন এই প্রকল্পের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়, অধিকাংশ কোম্পানি যেন ‘শ্রী অন্ন’ প্রক্রিয়াজাত খাদ্য সামগ্রী উৎপাদনে এগিয়ে আসে – সেই লক্ষ্যে এই স্বপ্নগুলিকে বাস্তবায়িত করাকে সুনিশ্চিত করতে হবে। অনেক রাজ্য নিজেদের গণসরবরাহ ব্যবস্থায় ‘শ্রী অন্ন’কে সামিল করেছে। অন্যান্য রাজ্যও এ ধরনের প্রচেষ্টা চালু করতে পারে। মিড ডে মিল – এও আমরা ‘শ্রী অন্ন’ – র ব্যবস্থা করতে পারলে আমাদের শিশুদের পুষ্টি হবে। খাদ্যের নতুন স্বাদ এবং বৈচিত্র্যও যুক্ত হবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, এই সকল বিষয় নিয়ে এই সম্মেলনে বিস্তারিত আলোচনা হবে। আর এগুলিকে বাস্তবায়িত করার পথচিত্রও তৈরি করা হবে। আমাদের অন্নদাতাদের আর আমাদের সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় ‘শ্রী অন্ন’ ভারতের সমৃদ্ধির প্রতি বিশ্বভাবনায় নতুন আলো আনবে। এই প্রার্থনার সঙ্গে আপনাদের সকলকে আমি হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। আর আমাদের উভয় রাষ্ট্রের অধ্যক্ষকেও সময় বের করে আমাদের যে বার্তা পাঠিয়েছেন, সেজন্য হৃদয় থেকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Explore More
শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দিরের ধ্বজারোহণ উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ

জনপ্রিয় ভাষণ

শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দিরের ধ্বজারোহণ উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ
BrahMos and beyond: How UP is becoming India’s defence capital

Media Coverage

BrahMos and beyond: How UP is becoming India’s defence capital
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
PM Modi shares Sanskrit Subhashitam emphasising the importance of Farmers
December 23, 2025

The Prime Minister, Shri Narendra Modi, shared a Sanskrit Subhashitam-

“सुवर्ण-रौप्य-माणिक्य-वसनैरपि पूरिताः।

तथापि प्रार्थयन्त्येव कृषकान् भक्ततृष्णया।।”

The Subhashitam conveys that even when possessing gold, silver, rubies, and fine clothes, people still have to depend on farmers for food.

The Prime Minister wrote on X;

“सुवर्ण-रौप्य-माणिक्य-वसनैरपि पूरिताः।

तथापि प्रार्थयन्त्येव कृषकान् भक्ततृष्णया।।"