

নমস্কার,
আজ সকাল থেকে ভারত মন্ডপম একটি প্রাণবন্ত মঞ্চে পরিণত হয়েছে। কিছুক্ষণ আগে আপনাদের সঙ্গে আমি দেখা করার সুযোগ পেয়েছি। এই শীর্ষ সম্মেলন বৈচিত্র্যে পূর্ণ। অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি এই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের অভিজ্ঞতা অবশ্যই খুব সমৃদ্ধ হয়েছে। এই শীর্ষ সম্মেলনে যুবক ও মহিলাদের উপস্থিতি একপ্রকার অনন্য বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। বিশেষত, আমাদের ড্রোন দিদি এবং লাখপতি দিদিরা অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন। যখন আমি তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, তখন তাদের মধ্যে উৎসাহ দেখতে পেয়েছি। এটি সত্যি অনুপ্রেরণামূলক।
বন্ধুগণ,
এটি পরিবর্তিত ভারতের প্রতিফলন। এই রূপান্তরিত ভারতের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হল – ২০৪৭ সালের মধ্যে একটি ‘বিকশিত ভারত’ (উন্নত ভারত) গড়ে তোলা। আমাদের দেশের এই লক্ষ্য অর্জনের ক্ষমতা, সম্পদ এবং ইচ্ছাশক্তি রয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন, ‘ওঠো, জাগো এবং লক্ষ্যে না পৌঁছনো পর্যন্ত থেমো না’। আজ আমি প্রতিটি ভারতীয়ের মধ্যে এই চেতনা দেখতে পাচ্ছি। এই ধরনের আলোচনা, বিশেষ করে তরুণদের অংশগ্রহণ ‘বিকশিত ভারত’-এর লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এত সুন্দর এই শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করার জন্য আমি আমার বন্ধু অতিদেব সরকার, আমার পুরনো সহকর্মী রজনীশ এবং পুরো এবিপি নেটওয়ার্ককে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
আজ ভারতের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। এখানে আসার কিছুক্ষণ আগে আমি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, ভারত - ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এখন চূড়ান্ত হয়েছে। বিশ্বের দুটি প্রধান এবং মুক্ত বাজার অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার এই চুক্তি উভয় দেশের উন্নয়নে একটি নতুন অধ্যায় যোগ করবে। এটি খুবই সুসংবাদ, বিশেষ করে আমাদের যুব সমাজের জন্য। ভারতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করবে এটি এবং ভারতীয় ব্যবসা ও এমএসএমই-দের জন্য নতুন দরজা খুলে দেবে। আপনারা জানেন, আমরা সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, অস্ট্রেলিয়া এবং মরিশাসের মতো দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এর থেকেই বোঝা যায়, ভারত শুধুমাত্র সংস্কার বাস্তবায়ন করছে না, ববং বিশ্বের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত হচ্ছে এবং ব্যবসা বাণিজ্যের একটি প্রাণবন্ত কেন্দ্রে রূপান্তরিত হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে এবং আমাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য দেশের স্বার্থকে প্রথমে রাখা ও দেশের ক্ষমতার উপর আস্থা রাখা অপরিহার্য। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের দেশে কয়েক দশক ধরে একটি বিপরিত মানসিকতা বিরাজ করছিল। একারণে দেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটা সময় ছিল, যখন কোনো বড় পদক্ষেপ বা সিদ্ধান্ত নেওয়া আগে নেতারা ভাবতেন : বিশ্ব কী ভাববে? এটি কী আমাদের ভোট বাড়াবে? আসন কী সুরক্ষিত থাকবে? ভোট ব্যাঙ্ক কী হারিয়ে যাবে? বিভিন্ন স্বার্থপরতার কারণে বড় সিদ্ধান্ত এবং বড় ধরনের সংস্কারসাধন থমকে থাকতো।
বন্ধুগণ,
কোনো দেশই এভাবে এগিয়ে যেতে পারে পারে না। একটি দেশ তখনই এগোবে যখন প্রতিটি সিদ্ধান্তের একমাত্র মানদণ্ড হল – দেশ প্রথম। গত এক দশক ধরে ভারত এই নীতি নিয়ে এগিয়েছে। আজ আমরা এর ফল প্রত্যক্ষ করছি।
বন্ধুগণ,
গত ১০-১১ বছরে আমাদের সরকার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির অভাবে কয়েক বছর ধরে আটকে ছিল। উদাহরণ স্বরূপ আমাদের ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের কথাই ধরুন – যা অর্থনীতির মেরুদণ্ড। আগে ব্যাঙ্কগুলির ক্ষতি নিয়ে আলোচনা না করে কোনো শীর্ষ সম্মেলন সম্পূর্ণ হতো না। ২০১৪ সালের আগে আমাদের দেশের ব্যাঙ্কগুলি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। কিন্তু আজ পরিস্থিতি কী? আজ ভারতের ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যবস্থাগুলির মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। আমাদের ব্যাঙ্কগুলি রেকর্ড মুনাফা লাভ করেছে এবং আমানতকারীরা এর সুবিধা পাচ্ছেন। এটি সম্ভব হয়েছে, কারণ আমাদের সরকার এই ক্ষেত্রে নিরন্তর সংস্কার চালিয়েছে। জনগণনের স্বার্থে ছোট ব্যাঙ্কগুলিকে একত্রিত করা হয়েছে এবং তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আপনারা হয় তো এয়ার ইন্ডিয়ার পূর্ববর্তী অবস্থার কথা মনে করতে পারেন। এয়ার ইন্ডিয়া লোকসানে ডুবে যাচ্ছিল। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান হচ্ছিল। তবুও আগের সরকার সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পেয়েছিল। কিন্তু আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দেশকে ক্রমাগত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেছি। কেন? কারণ দেশের স্বার্থ আমাদের কাছে সবার আগে।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশের একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী একবার স্বীকার করেছিলেন যে, সরকার যখন দরিদ্র মানুষের কাছে এক টাকা পাঠায়, তখন ৮৫ পয়সা পথের মধ্যেই হারিয়ে যায়। সরকার পরিবর্তন হয়েছে, বছর কেটে গেছে, কিন্তু দরিদ্রদের প্রাপ্য পুরো টাকা তাদের কাছে পৌঁছনোর জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমাদের লক্ষ্য ছিল, যদি দিল্লি থেকে এক টাকা পাঠানো হয়, তাহলে তার পুরো টাকাই যেন সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছয়। এর জন্য আমরা সরাসরি নগদ হস্তান্তর ব্যবস্থা চালু করেছি। এর ফলে, সরকারি প্রকল্পগুলিতে দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে এবং এর সুবিধা সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে সুবিধাভোগীদের কাছে। সরকারি ফাইলগুলিতে ১০ কোটি ভুয়ো সুবিধাভোগী ছিল। হ্যাঁ, ১০ কোটি! যারা জন্মগ্রহণই করেননি, তারাও সরকারি সুবিধা পাচ্ছিল। আগের সরকার এই ব্যবস্থা তৈরি করেছিল। আমাদের সরকার ১০ কোটি ভুয়ো সুবিধাভোগীর নাম বাদ দিয়েছে এবং সরাসরি নগদ হস্তান্তরের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের কাছে তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অর্থ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এর ফলস্বরূপ, ৩.৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ভুল হাতে পড়া থেকে রক্ষা পেয়েছে। আমরা আপনাদের টাকা রক্ষা করেছি। আপনাদের টাকা রক্ষা পেলো, কিন্তু মোদীকে তিরস্কার করা হল।
বন্ধুগণ,
এক পদ এক পেনশন (ওআরওপি)-এর সিদ্ধান্তের কথাই ধরুন। বহু দশক ধরে এটি আটকে ছিল। সরকারি কোষাগারের উপর বাড়তি বোঝা চেপে যাবে, এই অজুহাতে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেনি আগের সরকার। কিন্তু আমাদের সরকার যারা দেশের প্রতিরক্ষায় তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের স্বার্থকে সর্বাগ্রে স্থান দিয়েছে। আজ লক্ষ লক্ষ সেনার পরিবার OROP থেকে উপকৃত হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত আমাদের সরকার এই প্রকল্পের আওতায় প্রাক্তন সেনাদের জন্য ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি অর্থ প্রদান করেছে।
বন্ধুগণ,
কয়েক দশক ধরে দেশের দরিদ্র পরিবারগুলিকে সংরক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে কেবলমাত্র আলোচনা করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমাদের সরকার এটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের সবাই দেখেছে যে, লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ নিয়ে বছরের পর বছর কি ঘটেছে। এটি বিলম্বিত করার পেছনে কিছু স্বার্থ ছিল। কিন্তু দেশের স্বার্থে এর প্রয়োজন ছিল। এই কারণেই আমাদের সরকার লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলির জন্য মহিলা আসন সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করেছে, যা নারী শক্তিকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।
বন্ধুগণ,
অতীতে এমন অনেক বিষয় ছিল, যা নিয়ে কেউ আলোচনা করতেও রাজি ছিলেন না – শুধুমাত্র ভোটব্যাঙ্ক হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে। তিন তালাকের কথাই ধরা যাক। এটি অসংখ্য মুসলিম মহিলাদের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছিল। কিন্তু সেই সময়ে ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা এ বিষয়ে উদাসীন ছিলেন। আমাদের সরকার নারীদের স্বার্থে এবং মুসলিম পরিবারের কল্যাণের জন্য তিন তালাকের বিরুদ্ধে একটি আইন প্রণয়ন করেছে। একইভাবে ওয়াকফ আইনের সংস্কারের প্রয়োজন কয়েক দশক ধরে অনুভূত হয়েছিল। কিন্তু ভোট ব্যাঙ্ককে সন্তুষ্ট রাখার জন্য এই মহৎ উদ্দেশ্যকে উপেক্ষা করা হয়। অবশেষে ওয়াকফ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী নিয়ে আসা হয়েছে – এমন সংস্কার যা প্রকৃত অর্থেই মুসলিম সম্প্রদায়ের মা-বোনেদের পাশাপাশি দরিদ্র ও প্রান্তিক (পসমান্দা) মুসলিমদের উপকারে আসবে।
বন্ধুগণ,
আরও কয়েকটি উদ্যোগ রয়েছে যা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না, তা হল নদীর সংযোগ। কিছুক্ষণ আগে অতিদেব জি জল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন – ‘কী করা হবে’? আমাদের সরকার রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে নদীগুলিকে সংযুক্ত করার জন্য ব্যাপক প্রচারাভিযান শুরু করেছে। কেন-বেতওয়া সংযোগ প্রকল্প, পার্বতী-কালিসিন্ধ-চম্বল সংযোগ প্রকল্প লক্ষ লক্ষ কৃষককে উপকৃত করবে। আজকাল জল নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। আপনারা সকলেই খুব দ্রুত বুঝতে পারবেন এর অর্থ কী। আগে ভারতের অধিকারভুক্ত জলও আমাদের সীমানার বাইরে প্রবাহিত হতো। এখন ভারতের জল ভারতের উপকারের জন্যই প্রবাহিত হবে, ভারতেই থাকবে।
বন্ধুগণ,
সাধারণ মানুষ প্রায়শই বলে থাকেন যে, এত দশক পর অবশেষে একটি নতুন সংসদ ভবন নির্মিত হয়েছে। কিন্তু যা আলোচনা করা হয় না তা হল কয়েক দশক অপেক্ষার পর আমাদের সরকার দিল্লিতে ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর জাতীয় স্মৃতিসৌধ তৈরি করেছে। অটলজির সরকারের সময়ে এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পটি এক দশক ধরে আটকে ছিল। আমাদের সরকার কেবল এটি সম্পন্নই করেনি, বরং পঞ্চতীর্থ উদ্যোগের অঙ্গ হিসেবে ভারত ও বিশ্বজুড়ে বাবাসাহেবের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিও উন্নত করেছে।
বন্ধুগণ,
২০১৪ সালে আমাদের সরকার এমন এক সময়ে গঠিত হয়েছিল, যখন জনগণের আস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছিল। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন যে আমাদের দেশে গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন একসঙ্গে চলতে পারে কি না। কিন্তু আজ যখন কেউ ভারতের দিকে তাকায়, তখন তারা গর্বের সঙ্গে বলতে পারেন “গণতন্ত্রই পারে সাফল্য আনতে”। গত দশকে ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র থেকে বেরিয়ে এসেছেন, যা বিশ্বকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে গণতন্ত্র সাহায্য করতে পারে। মুদ্রা যোজনার আওতায় ঋণ নেওয়া লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এটি অনুভব করতে পারেন, গণতন্ত্র কিভাবে সাহায্য করতে পারে। আমাদের দেশে এক সময়ে কয়েক ডজন জেলাকে অনগ্রসর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং তাদের ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আজ সেই জেলাগুলি উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলায় রূপান্তরিত হয়েছে, এবিষয়ে খুব কম লোকই জানেন। প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষ আজ প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা-র সুবিধা পাচ্ছেন। তারাও বিশ্বাস করতে পেরেছেন, গণতন্ত্র সাহায্য করতে পারে। প্রকৃত গণতন্ত্রের অর্থ হল জনগণের উন্নয়ন এবং এর সুফল বৈষম্য ছাড়াই শেষ প্রান্তে থাকা মানুষের কাছে পৌঁছনো নিশ্চিত করা। আমাদের সরকার ঠিক সেই কাজই করছে।
বন্ধুগণ,
আজ আমরা একটি নতুন ভারত গড়ে তুলছি – যেখানে উন্নয়নের গতি দ্রুত এবং যেখানে আমাদের উন্নয়ন কেবলমাত্র চিন্তাভাবনা ও সংকল্পের মধ্যেই আবদ্ধ নয় বরং সহানুভূতির দ্বারও সমৃদ্ধ। আমরা মানব কেন্দ্রিক বিশ্বায়নের পথ বেছে নিয়েছি। সেখানে উন্নয়ন কেবল বাজারকেই বোঝায় না। আমাদের কাছে মানুষকে মর্যাদার জীবন দেওয়া এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়তা করাই অগ্রগতির প্রকৃত মাপকাঠি। আমরা সম্পূর্ণরূপে জিডিপি কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে এসে জিইপি কেন্দ্রিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যেখানে জিইপি-র অর্থ হল মানুষের সামগ্রিক ক্ষমতায়ন। যখন একজন দরিদ্র ব্যক্তি একটি স্থায়ী বাড়ি পান, তখন তাদের ক্ষমতায়নের একটি বৃত্ত সম্পন্ন হয় এবং আত্মসম্মান বৃদ্ধি পায়। যখন একজন দরিদ্র ব্যক্তির বাড়িতে শৌচালয় নির্মিত হয়, তখন তারা উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্মের অপমান এবং যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পান। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে যখন তারা ৫ লক্ষ টাকার বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পান তখন তাদের জীবন থেকে একটি বড় উদ্বেগ দূর হয়। এরকম অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে, যা সহানুভূতিপূর্ণ উন্নয়নের পথকে শক্তিশালী করে এবং প্রকৃত অর্থেই দেশের জনগণের ক্ষমতায়নের বৃত্ত সম্পূর্ণ করে।
বন্ধুগণ,
কিছুদিন আগে সিভিল সার্ভিসেস দিবসে আমি ‘নাগরিক দেব ভব’ মন্ত্রটি নিয়ে কথা বলেছিলাম। এটি আমাদের সরকারের মূল নীতি। আমরা জনতাকে জনার্দন হিসেবে দেখি। অতীতে ‘মাই বাপ’ (শাসক-প্রজা) সংস্কৃতি সরকারি কর্মকাণ্ডে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। আজ আমাদের সরকার জনগণের সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করে। সরকার এখন সক্রিয়ভাবে নাগরিকদের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেয়। এখানে অনেক তরুণ রয়েছেন, যারা বেশিরভাগ ফর্ম অনলাইনে পূরণ করেন। কিন্তু একটা সময় ছিল, যখন আপনাকে কেবলমাত্র আপনার নিজস্ব নথিপত্র প্রত্যয়িত করার জন্যে সরকারি দপ্তরে যেতে হতো। এখন একই কাজ স্ব-প্রত্যয়িত করার মাধ্যমে করা যেতে পারে।
বন্ধুগণ,
প্রবীণ নাগরিকদের জন্য এই একই ব্যবস্থা ছিল। পেনশন পাওয়ার জন্য ব্যাঙ্কে লাইফ সার্টিফিকেট জমা দেবার জন্যে ঘুরতে হতো। এখন প্রবীণ নাগরিকরা যে কোনো জায়গা থেকে ডিজিটালভাবে লাইফ সার্টিফিকেট জমা করতে পারেন। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করা, গ্যাস সিলিন্ডার বুক করা থেকে শুরু করে নানা পরিষেবার কাজে আগে সাধারণ মানুষকে বার বার দপ্তরে ছুটে যেতে হতো। কিন্তু আজ সেই ব্যবস্থা বদলে গেছে, এই ধরনের অনেক কাজই এখন অনলাইনে করা হয়। এটিই হলো ‘নাগরিক দেব ভব’-র প্রকৃত অর্থ। এই চিন্তাভাবনার সঙ্গে আমরা ২০৪৭ সালের মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’-এর জন্য একটি শক্তিশালী ভিত স্থাপন করছি।
বন্ধুগণ,
আজ ভারত তার ঐতিহ্য ও অগ্রগতি উভয়কে নিয়েই এগিয়ে চলেছে। উন্নয়ন এবং ঐতিহ্য এটাই আমাদের মন্ত্র। আমরা লক্ষ্য করেছি যে, ভারতের ঐতিহ্য ও প্রযুক্তি কিভাবে একসঙ্গে সমৃদ্ধ হতে পারে। আজ আমরা ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশ্বে শীর্ষ দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। একই সঙ্গে আমরা আমাদের ঐতিহ্যের সম্পদ যোগ ও আয়ুর্বেদকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিচ্ছি। আজ বিশ্ব ভারতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। গত কয়েক দশকে ভারতে রেকর্ড পরিমাণ প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ হয়েছে। এর পাশাপাশি দেশ থেকে চুরি হয়ে যাওয়া শিল্পকর্ম ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক জিনিসপত্র ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আজ ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল উৎপাদক দেশ। সূর্য মন্দিরের ভারত এখন ১০০ গিগাওয়াট সৌর শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা অর্জন করেছে।
বন্ধুগণ,
উন্নতির জন্য আমাদের সংস্কৃতি বা আমাদের শিকড় ত্যাগ করার প্রয়োজন নেই। শিকড়ের সঙ্গে আমাদের সংযোগ যত গভীর হবে, আধুনিকতার সঙ্গে আমাদের বন্ধন ততই দৃঢ় হবে। আমরা আমাদের হাজার হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যকে আগামী হাজার হাজার বছরের জন্য ভারতের শক্তির উৎসে রূপান্তরিত করছি।
বন্ধুগণ,
২০৪৭-এর মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’-এর দিকে এই যাত্রার প্রতিটি পদক্ষেপের নিজস্ব তাৎপর্য রয়েছে। প্রায়শই মানুষ বুঝতে পারেন না যে আজকের সরকারের সিদ্ধান্তের বহুমুখী প্রভাব কতটা সুদূর প্রসারী হতে পারে। আমি আপনাদের কেবলমাত্র একটি ক্ষেত্র থেকেই উদাহরণ তুলে ধরছি – মিডিয়া ও কনটেন্ট তৈরি। ১০ বছর আগের কথা ভাবুন, যখন আমি ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কথা বলতাম। অনেকেই তখন সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু আজ ডিজিটাল ইন্ডিয়া আমাদের জীবনে একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। সাশ্রয়ী মূল্যের ডেটা এবং মেড ইন ইন্ডিয়া-য় তৈরি সস্তা স্মার্ট ফোন একটি নতুন বিপ্লবের সূচনা করেছে। আমরা সকলেই দেখতে পারছি যে ডিজিটাল ইন্ডিয়া কিভাবে জীবনযাত্রাকে সহজ করে তুলতে সাহায্য করেছে। কিন্তু যে বিষয়ে কম আলোচনা করা হয় তা হল ডিজিটাল ইন্ডিয়া কিভাবে কনটেন্ট এবং সৃজনশীলতার মধ্যে একটি সম্পূর্ণ নতুন বিশ্ব তৈরি করেছে।
আজ গ্রামের একজন মহিলা যিনি ভালো রান্না করেন তিনি মিলিয়ন-সাবস্ক্রাইবার ক্লাবের অংশ। উপজাতি এলাকার একজন যুবক তার ঐতিহ্যবাহী শিল্পের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে দর্শকদের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তুলছেন। সম্প্রতি মুম্বাইতে প্রথম ওয়েভস শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি সারা বিশ্বের গণমাধ্যম, বিনোদন এবং সৃজনশীল শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষদের একত্রিত করেছিল। আমরও এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। কেউ একজন আমাকে বলেছিলেন যে গত ৩ বছরে শুধুমাত্র ইউটিউব-ই ভারতীয় কনটেন্ট নির্মাতাদের ২১ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। এর থেকে বোঝা যায়, আজ আমাদের ফোনগুলি কেবলমাত্র যোগাযোগের হাতিয়ার নয়, বরং সৃজনশীলতা এবং আয়ের জন্যেও শক্তিশালী হাতিয়ার।
বন্ধুগণ,
২০৪৭ সালের মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’-এর লক্ষ্যের পাশাপাশি আরও একটি বিষয় গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে তা হল আত্মনির্ভর ভারতের বিষয়ে প্রচার। আত্মনির্ভরতা সবসময়ে আমাদের অর্থনৈতিক ডিএনএ-এর একটি অঙ্গ। তবুও আমাদের প্রায় বলা হতো ভারত কোনো নির্মাতা নয়, কেবল একটি বাজার মাত্র। কিন্তু এখন সেই তকমাটি সরিয়ে ফেলা গেছে। আজ ভারত বিশ্বের একটি প্রধান প্রতিরক্ষা প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা সামগ্রী ১০০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। আমাদের প্রতিরক্ষা রপ্তানির পরিসংখ্যানও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশে এখন আইএনএস বিক্রান্ত, আইএসএস সুরত এবং আইএনএস নীলগিরির মতো অনেক দেশীয় যুদ্ধ জাহাজ রয়েছে, এগুলি ভারতেই নির্মিত। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত একটি প্রধান ইলেক্ট্রনিক্স রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে উঠে এসেছে। আমাদের স্থানীয় পণ্য বিশ্বে রপ্তানি হচ্ছে। গত বছর ভারতের রপ্তানি প্রায় ৮২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এর অর্থ হল ভারত মাত্র এক দশকের মধ্যে তার রপ্তানির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ করেছে। আমরা এবছরের বাজেটে ‘মিশন ম্যানুফ্যাকচারিং’-এর ঘোষণা করেছি। এই উৎপাদন শক্তি বিশ্বে ভারতীয়দের স্রষ্টা, উদ্ভাবক হিসেবে পরিচয় তৈরি করেছে।
বন্ধুগণ,
আগামী শতাব্দীতে ভারত কোন দিকে যাবে তা নির্ধারণ করে এই দশক। এই সময়ে দেশের নতুন ভাগ্য লেখা হচ্ছে। আমি দেশের প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে এই চেতনা দেখতে পাচ্ছি। এমনকি এই শীর্ষ সম্মেলনে আমাদের আলোচনা সেই শক্তি এবং আশাকে প্রতিফলিত করে। আবারও আমি এই শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের জন্য এবিপি নেটওয়ার্ককে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আমি আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।
বন্ধুগণ,
২০৪৭ সালের মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’-এর লক্ষ্যের পাশাপাশি আরও একটি বিষয় গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে তা হল আত্মনির্ভর ভারতের বিষয়ে প্রচার। আত্মনির্ভরতা সবসময়ে আমাদের অর্থনৈতিক ডিএনএ-এর একটি অঙ্গ। তবুও আমাদের প্রায় বলা হতো ভারত কোনো নির্মাতা নয়, কেবল একটি বাজার মাত্র। কিন্তু এখন সেই তকমাটি সরিয়ে ফেলা গেছে। আজ ভারত বিশ্বের একটি প্রধান প্রতিরক্ষা প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা সামগ্রী ১০০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। আমাদের প্রতিরক্ষা রপ্তানির পরিসংখ্যানও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশে এখন আইএনএস বিক্রান্ত, আইএসএস সুরত এবং আইএনএস নীলগিরির মতো অনেক দেশীয় যুদ্ধ জাহাজ রয়েছে, এগুলি ভারতেই নির্মিত। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত একটি প্রধান ইলেক্ট্রনিক্স রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে উঠে এসেছে। আমাদের স্থানীয় পণ্য বিশ্বে রপ্তানি হচ্ছে। গত বছর ভারতের রপ্তানি প্রায় ৮২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এর অর্থ হল ভারত মাত্র এক দশকের মধ্যে তার রপ্তানির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ করেছে। আমরা এবছরের বাজেটে ‘মিশন ম্যানুফ্যাকচারিং’-এর ঘোষণা করেছি। এই উৎপাদন শক্তি বিশ্বে ভারতীয়দের স্রষ্টা, উদ্ভাবক হিসেবে পরিচয় তৈরি করেছে।
বন্ধুগণ,
আগামী শতাব্দীতে ভারত কোন দিকে যাবে তা নির্ধারণ করে এই দশক। এই সময়ে দেশের নতুন ভাগ্য লেখা হচ্ছে। আমি দেশের প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে এই চেতনা দেখতে পাচ্ছি। এমনকি এই শীর্ষ সম্মেলনে আমাদের আলোচনা সেই শক্তি এবং আশাকে প্রতিফলিত করে। আবারও আমি এই শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের জন্য এবিপি নেটওয়ার্ককে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আমি আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।
নমস্কার!