মাননীয়া ম্যাডাম স্পিকার,
সম্মানীয় প্রধানমন্ত্রী,
সম্মানীয় উপ-প্রধানমন্ত্রী,
মাননীয় সাংসদগণ,
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
শুভ দ্বিপ্রহর!
গণতন্ত্রের মন্দির – এই বিশেষ সভায় আমি বক্তব্য পেশের সুযোগ পেয়েছি। এই সম্মানের জন্য আপনাদের সকলকে আমার ধন্যবাদ।
গণতন্ত্রের ধাত্রীভূমির একজন প্রতিনিধি হিসেবে আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি এবং আমি সঙ্গে নিয়ে এসেছি ১৪০ কোটি ভারতবাসীর উষ্ণ শুভেচ্ছা।
আপনাদের সকলকে অভিনন্দন জানাই। এই মহান দেশকে সেবা করার জন্য মানুষ আপনাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আপনারা মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সফল হবেন, এই কামনা করি।
বন্ধুগণ,
কয়েক মাস আগে আপনারা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত উদযাপন করেছেন। নামিবিয়া তার প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করেছে। আমরা আপনাদের গৌরব এবং আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছি, কারণ আমরাও গর্বের সঙ্গে বলি – ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট।
এটি আমাদের সংবিধানের শক্তি যে, দরিদ্র আদিবাসী পরিবারের একজন কন্যা আজ ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। আমাদের সংবিধান আমার মতো একজনকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। একবার নয়, দু’বার নয়, তিন-তিনবার। যখন আপনাদের কিছুই ছিল না, তখন সংবিধান আপনাদের সবকিছুই দিয়েছে।
বিশিষ্ট সদস্যবৃন্দ,
এই সভায় আমি নামিবিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট সাম নুয়োমার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। এ বছরের গোড়ার দিকে তিনি প্রয়াত হয়েছেন। তিনি একবার বলেছিলেন -

“আমাদের স্বাধীনতার সাফল্য আমাদের ওপর বড় দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে, শুধুমাত্র আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষা করা নয়, সেইসঙ্গে জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে ন্যায়, সমতা এবং সকলের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধার উচ্চমান তৈরি করে দিয়েছে।”
তাঁর ভাবনা আমাদের প্রেরণা যুগিয়ে চলেছে। ভারতের মানুষ নামিবিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় গর্বের সঙ্গে পাশে দাঁড়িয়েছিল। এমনকি, আমাদের নিজেদের স্বাধীনতার আগেও রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভারত দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল। নামিবিয়া তাদের প্রথম কূটনৈতিক কার্যালয় চালু করেছিল নতুন দিল্লিতে। নামিবিয়ায় রাষ্ট্রসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন একজন ভারতীয়, লেফটেন্যান্ট জেনারেল, দিওয়ান প্রেমচাঁদ।
শুধু কথায় নয়, ভারত কাজেও আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পেরে গর্বিত। এই সংসদ, এই মুক্ত ও গর্বিত নামিবিয়া, সবকিছুই আজ জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
বিশিষ্ট সদস্যগণ,
ভারত এবং নামিবিয়ার মধ্যে অনেককিছুর মিল রয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আমরা দুই দেশই লড়াই করেছি। আমাদের সংবিধান সাম্য, স্বাধীনতা ও ন্যায়কে উচ্চে তুলে ধরেছে। আমরা গ্লোবাল সাউথের অংশীদার এবং আমাদের দেশবাসীর মধ্যে একই ধরনের আশা এবং স্বপ্ন রয়েছে।
আজ আমি নামিবিয়ার সর্বোচ্চ নাগরিক খেতাব পেয়ে গভীরভাবে সম্মানিত বোধ করছি। এটি হল আমাদের বন্ধুত্বের প্রতীক। আমাদের বন্ধুত্ব সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। আপনাদের জাতীয় উদ্ভিদ ওয়েলউইটসচিয়া মিরাবিলিস-এর মতোই সময়ের সঙ্গে এই বন্ধুত্বকে আরও মজবুত করেছে। ১৪০ কোটি ভারতবাসীর হয়ে আমি আবার প্রেসিডেন্ট, সরকার এবং নামিবিয়ার মানুষকে এই সম্মানের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
নামিবিয়ার সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্কের এক বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। নামিবিয়ার ‘ভিশন ২০৩০’ এবং ‘হারাম্বি প্রসপারিটি প্ল্যান’ নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। ভারতে আসা ১,৭০০-র বেশি নামিবিয়ার পড়ুয়া বৃত্তির মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। নামিবিয়ার পরবর্তী প্রজন্মের বিজ্ঞানী, চিকিৎসক এবং নেতাদের সহায়তা করতে পেরে আমরা উৎসাহিত। নামিবিয়া হল প্রথম দেশ, যারা ভারতের ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস, ইউপিআই গ্রহণ করেছে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৮০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে। নতুন শিল্পোদ্যোগ বিকাশ কেন্দ্রের মাধ্যমে নামিবিয়ার তরুণদের সাহায্য করতে পেরে আমরা সম্মানিত বোধ করছি।

আমাদের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হল স্বাস্থ্য। ভারতে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য বিমার আওতায় এসেছেন। কিন্তু, ভারত স্বাস্থ্যকে শুধুমাত্র ভারতীয়দের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না। ভারতের মিশন হল – ‘এক বিশ্ব এক স্বাস্থ্য’, অর্থাৎ স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও পারস্পরিক দায়িত্ব পালন। অতিমারীর সময় আমরা আফ্রিকার পাশে দাঁড়িয়েছি, টিকা ও ওষুধ প্রদান করেছি। আমাদের “আরোগ্য মৈত্রী” উদ্যোগের মাধ্যমে আফ্রিকার হাসপাতালগুলিকে সরঞ্জাম, ওষুধপত্র এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ক্যান্সারের চিকিৎসায় নামিবিয়াকে যন্ত্র প্রদানেও প্রস্তুত ভারত। বর্তমানে ১৫টি দেশে এই যন্ত্র পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ এর মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন।
আমাদের জন ঔষধি কর্মসূচিতেও নামিবিয়াকে যোগদানের আহ্বান জানাচ্ছি। এই প্রকল্পে ওষুধে ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। প্রতিদিন ১০ লক্ষের বেশি ভারতীয় এর মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন। এর মাধ্যমে রোগীরা স্বাস্থ্যখাতে প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয় করতে পেরেছেন।
বন্ধুগণ,
আন্তর্জাতিক সৌর জোট এবং কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচারের মতো ক্ষেত্রে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। নামিবিয়া এখন বিশ্ব জৈব-জ্বালানি জোট এবং আন্তর্জাতিক বিগ ক্যাট জোটেও যোগ দিয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হল, একসঙ্গে গড়ে তোলা। আফ্রিকায় আমাদের উন্নয়ন অংশীদারিত্ব ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে। আমরা স্থানীয়ভাবে দক্ষতা উন্নয়ন, চাকরির সংস্থান এবং উদ্ভাবনে সহায়তা অব্যাহত রাখব।

প্রতিরক্ষা এবং সুরক্ষার ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বাড়াতে আমরা তৈরি। বিশ্বে আফ্রিকার ভূমিকাকে ভারত বিশেষ গুরুত্ব দেয়। আমাদের জি-২০ সভাপতিত্বকালে আফ্রিকার পক্ষে আমরা সরব হয়েছি। জি-২০-তে স্থায়ী সদস্য হিসেবে আমরা আফ্রিকান ইউনিয়নকে গর্বের সঙ্গে যুক্ত করেছি।
আসুন, আমরা একসঙ্গে পথ চলি। আসুন, আমরা এখন স্বপ্ন দেখি এবং সাম্য, মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার ভবিষ্যৎ নির্মাণ করি। শুধু আমাদের দুই দেশের মানুষের জন্য নয়, সব মানুষের জন্য।

আসুন, শান্তি, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির জন্য আমাদের বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাই। আমি এখানে পূর্ণ আশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আগামীদিনে ভারত-নামিবিয়ার সম্পর্কের সেরা দিনগুলি আসছে।

বন্ধুগণ,
২০২৭-এ নামিবিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজনের সাফল্য কামনা করে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।
এই সম্মানের জন্য আপনাদের আবার ধন্যবাদ জানাই।


