কানানাস্কিস-এ জি-৭ শিখর সম্মেলনের আউটরিচ সেশনে যোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। ‘জ্বালানি নিরাপত্তা : পরিবর্তনশীল বিশ্বে সুলভ্যতা ও সুগম্যতা নিশ্চিত করায় বৈচিত্র্য, প্রযুক্তি ও পরিকাঠামো’ শীর্ষক একটি অধিবেশনে ভাষণ দেন তিনি। জি-৭ শিখর সম্মেলনে আমন্ত্রণের জন্য কানাডার প্রধানমন্ত্রী মাননীয় মার্ক কার্নি-কে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। জি-৭-এর ৫০ বছর উপলক্ষে শুভেচ্ছাও জানান তিনি।
ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী প্রজন্মগুলির কাছে জ্বালানি সংক্রান্ত নিরাপত্তা একটি বড় বিষয় হয়ে উঠছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক বিকাশের ক্ষেত্রে ভারতের দায়বদ্ধতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি সংক্রান্ত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রাপ্যতা, সুগম্যতা, সুলভ্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতার দিকগুলিকে ভারত গুরুত্ব দেয়। দ্রুততম বিকাশশীল অর্থনীতির দেশ হওয়া সত্ত্বেও, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে সক্ষম হয়েছে এই দেশ। ধারাবাহিক বিকাশের ক্ষেত্রে ভারতের উদ্যোগের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সৌর জোট, বিপর্যয় মোকাবিলা পরিকাঠামো জোট, বিশ্ব জৈব-জ্বালানি জোট, মিশন লাইফ কিংবা এক সূর্য-এক বিশ্ব-এক গ্রিড কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সংঘাত ও অনিশ্চয়তা দক্ষিণী বিশ্বের দেশগুলির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং আন্তর্জাতিক আঙিনায় ঐ দেশগুলির কণ্ঠস্বর পৌঁছে দেওয়া ভারত নিজের দায়িত্ব বলে মনে করে – এমনটাই বলেন প্রধানমন্ত্রী। ধারাবাহিক বিকাশ ও সুস্থিত ভবিষ্যতের লক্ষ্যে দক্ষিণী বিশ্বের দেশগুলির স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতেই হবে বলে তিনি মনে করিয়ে দেন। নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যার মোকাবিলায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ওপর প্রধানমন্ত্রী জোর দেন। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ে পাশে থাকার জন্য আন্তর্জাতিক মহলকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পহেলগাঁও-এর জঙ্গি হামলা শুধুমাত্র ভারত নয়, মানবতার ওপর আঘাত। যেসব দেশ সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে এবং মদত দেয়, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার ডাক দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় দ্বিচারিতার কোনো জায়গা নেই এবং যারা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে, তাদের কখনই পুরস্কৃত করা উচিত নয়। সন্ত্রাসবাদ যেহেতু সমগ্র মানবসভ্যতার সামনে বিপদ, সেজন্য কয়েকটি প্রশ্ন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন :
-সন্ত্রাসবাদের শিকার হলে তবেই কি কোনো দেশ এর বিপদ বুঝতে পারবে?
-সন্ত্রাসবাদের শিকার এবং তার সংঘটকদের একই আসনে বসানো যায় কি?
-আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলি কি সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রে নীরব দর্শক হয়ে থাকবে?
প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং শক্তিক্ষেত্রের ঘনিষ্ঠ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দক্ষতা ও উদ্ভাবনার পালে হাওয়া লাগাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকৌশল। আবার প্রযুক্তি জ্বালানি-নিবিড় একটি বিষয়। তাই, ধারাবাহিক বিকাশ নিশ্চিত করায় পরিবেশ-বান্ধব শক্তির প্রসারে উদ্যোগী হতে হবে। প্রযুক্তির প্রসারের ক্ষেত্রে ভারতের মানব-কেন্দ্রিক উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোন প্রযুক্তিরই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত সাধারণ মানুষের জীবনকে অগ্রাধিকারের কেন্দ্রে রাখা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় শঙ্কার নিরসনে এবং এক্ষেত্রে উদ্ভাবনার প্রসারে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার পক্ষে সওয়াল করেন প্রধানমন্ত্রী। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক খনিজের নির্ভরযোগ্য সরবরাহ শৃঙ্খল নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করিয়ে দেন। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করার কাজে প্রয়োজনীয় মানবিক ও অন্য ধরনের সম্পদ ভারতে অপর্যাপ্ত বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তি-চালিত বিশ্ব বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে ধারাবাহিক বিকাশে সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎকে দেখতে চায়। সেই স্বপ্ন সফল করার উদ্যোগে মানুষ এবং আমাদের বাসগ্রহকে কেন্দ্রীয় অবস্থানে রাখতে হবে।


