আমার প্রিয় দেশবাসী , আমার পরিবারের আপনজন…আজ সেই শুভ মুহূর্ত, যেখানে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী, দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজেদের জীবন সমর্পিত করা, … আজীবন লড়াই করা, ফাঁসির মঞ্চে উঠেও ভারত মায়ের জয় ধ্বনি দেওয়া অসংখ্য মুক্তিকামীকে প্রণাম জানানোর পবিত্র উপলক্ষ এটা ! তাঁদের স্মরণ করার পুণ্য পরব এটা ! মুক্তিকামী এই মানুষেরা আজ আমাদের এই পরবে স্বাধীনভাবে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সৌভাগ্য গড়ে দিয়েছেন | এই দেশ তাঁদের কাছে ঋণী , এমন প্রত্যেক মহান মানুষের প্রতি আমরা আমাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করছি ! 
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আজ যে মহান মানুষেরা দেশ রক্ষার জন্য এবং দেশ গঠনের জন্য নিষ্ঠা সহকারে, পরিপূর্ণ দায়বদ্ধতায় দেশ রক্ষা যেমন করছেন, দেশকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে প্রয়াসও চালিয়ে যাচ্ছেন!তা তিনি আমাদের কৃষক হন, আমাদের সেনা জওয়ান হন, আমাদের তারুণ্যের সাহস হোক, আমাদের মা-বোনদের যোগদানের বিষয় হোক, দলিত হন, পীড়িত হন, শোষিত হন, বঞ্চিত হন, অবহেলিত হওয়া সত্ত্বেও দেশের স্বাধীনতার প্রতি তাঁদের নিষ্ঠা, গণতন্ত্রের প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা, গোটা বিশ্বের কাছে অনুপ্রেরণাদায়ক ঘটনার মত! আমি আজ এরকম সবাইকে সাদর প্রণাম জানাই ! 
প্রিয় দেশবাসী,
এই বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে আমাদের সবার দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে ! প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অনেক মানুষ নিজেদের পরিবারের সদস্যকে হারিয়েছেন, সম্পত্তি হারিয়েছেন, দেশেরও বিপুল ক্ষতি হয়েছে! আমি আজ তাঁদের সবার প্রতি আমার  সমবেদনা ব্যক্ত করছি এবং আশ্বস্ত করছি যে, দেশ এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে সমস্ত বিপন্নদের পাশে আছে!

 

আমার প্রিয় দেশবাসী, 
আমরা একটু স্বাধীনতার আগেকার সেই দিনগুলি যদি স্মরণ করি, শত শত বছরের পরাধীনতার সেই প্রত্যেক কালখণ্ড সংঘর্ষে পরিপূর্ণ ! তরুণ হন , কৃষক হন , বৃদ্ধ হন , মহিলা হন, আদিবাসী হন, তাঁরা সবাই পরাধীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন, নিরন্তর যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন! ইতিহাস সাক্ষী আছে, ১৮৫৭-র প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম, যার কথা আমরা স্মরণ করে থাকি, এরও আগে আমাদের দেশের অনেক আদিবাসী অঞ্চলে স্বাধীনতার জন্য লড়াই হয়েছিল!
বন্ধুগণ, 
পরাধীনতার এত দীর্ঘ সময় জুড়ে অত্যাচারী শাসক অসহনীয় যন্ত্রণা দিয়েছে, সাধারণ মানুষের আত্মবিশ্বাস ভাঙ্গার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করেছে, তা সত্ত্বেও সেই সময়ের হিসেবে প্রায় ৪০ কোটি দেশবাসী, স্বাধীনতার আগে প্রায় ৪০ কোটি দেশবাসী সেই সাহস দেখিয়েছিলেন , সামর্থ্য দেখিয়ে ছিলেন এক স্বপ্ন নিয়ে চলার, সংকল্প নিয়ে চলতে থাকার, লড়াই চালিয়ে যাওয়ার , কন্ঠে একই ধ্বনি- বন্দে মাতরম ! একটাই স্বপ্ন ছিল- ভারতের স্বাধীনতা! আর চল্লিশ কোটি দেশবাসী … আর, আমরা এজন্য গর্বিত…যে আমাদের শিরায় ধমনীতে তাঁদেরই রক্ত প্রবাহিত! তাঁরা আমাদের পূর্বসূরী, মাত্র চল্লিশ কোটি, …চল্লিশ কোটি মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাবান শক্তিকে এদেশ থেকে শেকড়সুদ্ধ তুলে ফেলে দিয়েছিলেন! পরাধীনতার শেকল ছিঁড়ে ফেলেছিলেন!  আমাদের সেই পূর্বসূরীরা, যাঁদের রক্ত আমাদের শরীরে প্রবাহিত, তাঁদের তুলনায় আজ আমরা তো একশো চল্লিশ কোটি! যদি চল্লিশ কোটি মানুষ পরাধীনতার শেকল ভাঙ্গতে পারেন , চল্লিশ কোটি মানুষ যদি স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন, স্বাধীনতা অর্জন করে দেখাতে পারেন  তাহলে  তাহলে আমরা একশো চল্লিশ কোটি দেশের মানুষ , আমার পরিবারের ১৪০ কোটি আপনজন যদি সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যান, একটি লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে যান, পায়ে পা মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যান তাহলে সমস্যা যতই থাকুক, অভাব যতই তীব্র হোক, উপকরণের জন্য লড়াই যতই অবিরাম চলুক, আমরা প্রতিটি সমস্যা কাটিয়ে সমৃদ্ধ ভারত গড়ে তুলতে পারি!
আমরা ২০৪৭-এ বিকশিত ভারতের লক্ষ্য পূরণ করতে পারি, যদি চল্লিশ কোটি দেশবাসী নিজেদের পৌরুষ দিয়ে, নিজেদের সমর্পন দিয়ে, ত্যাগ ও বলিদানের মাধ্যমে স্বাধীনতা আনতে পারেন, স্বাধীন ভারত গড়তে পারেন, তাহলে ১৪০ কোটি দেশবাসী একইভাবে সমৃদ্ধ ভারতও তৈরী করতে পারেন | 
বন্ধুগণ, 
একটা সময় ছিল, যখন মানুষ দেশের জন্য আত্মবলিদানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, আর আমরা স্বাধীনতা পেয়েছেন! আজকের সময় হচ্ছে দেশের জন্য বাঁচার প্রতিজ্ঞা গ্রহণের! যদি দেশের জন্য আত্মবলিদানের প্রতিজ্ঞা স্বাধীনতা এনে দিতে পারে, তাহলে দেশের জন্য বাঁচার প্রতিজ্ঞাও সমৃদ্ধ ভারত গড়ে তুলতে পারবে ! 

বন্ধুগণ,
‘বিকশিত ভারত- ২০৪৭’(টোয়েন্টি ফরটি সেভেন) শুধুমাত্র ভাষণে ব্যবহৃত শব্দই নয়, এটি অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম চলছে! দেশের কোটি কোটি মানুষের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে ! আর আমরা দেশবাসীর কাছে পরামর্শ চেয়েছি | আর আমি খুশি যে, আমার দেশের কোটি কোটি মানুষ বিকশিত ভারত ২০৪৭ এর জন্য অসংখ্য পরামর্শ দিয়েছেন ! প্রত্যেক ভারতবাসীর স্বপ্ন এতে প্রতিফলিত হচ্ছে ! প্রত্যেক দেশবাসীর সংকল্প এতে ঝলকে উঠছে! তরুণ হন, বৃদ্ধ হন, গ্রামের মানুষ হন, শহরের মানুষ হন, কৃষক হন, শ্রমজীবী হন, গরিব হন, আদিবাসী হন, পাহাড় নিবাসী হন, জঙ্গল নিবাসী হন, শহরের বাসিন্দা … প্রত্যেকে টোয়েন্টি ফরটি সেভেনে .. যখন দেশ স্বাধীনতার একশো বছর উদযাপন করবে.. সেই সময়ের জন্য বিকশিত ভারত গড়ে তোলার ব্যাপারে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন! আর আমি যখন এই সমস্ত পরামর্শের দিকে তাকাই, আমার মন খুশিতে ভরে ওঠে! তাঁরা কি লিখেছেন? তাঁরা লিখেছেন, তাঁরা বিশ্বের দক্ষতা বিকাশের রাজধানী বানানোর পরামর্শ আমার সামনে রেখেছেন | টোয়েন্টি ফরটি সেভেন বিকশিত ভারতের জন্য কেউ কেউ ভারতকে উৎপাদনের গ্লোবাল হাব বানানোর পরামর্শ দিয়েছেন! কেউ কেউ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে গ্লোবাল করে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন |
কেউ কেউ তো এটাও বলেছেন, আমরা কি স্বাধীনতার এত বছর বাদেও আমাদের সংবাদ মাধ্যমকে গ্লোবাল করে তুলতে পারি না? কেউ এটাও বলেছেন, আমাদের দক্ষ তরুণরা বিশ্বের প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠা উচিত! কারো পরামর্শ হল, ভারতকে যত দ্রুত সম্ভব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে হবে! কেউ এমনও বলেছেন যে আমাদের কৃষকরা যারা মোটা দানার শস্য উৎপাদন করেন, যাকে আমরা শ্রী-অন্ন বলে থাকি, সেই সুপার ফুডকে পৃথিবীর সমস্ত খাবার টেবিলে পৌঁছে দিতে হবে! আমাদের বিশ্বের পুষ্টির ব্যাপারে যেমন জোর দিতে হবে, একইসঙ্গে ভারতের ছোট কৃষকদেরও বিত্তশালী করতে হবে | কেউ পরামর্শ দিয়েছেন, দেশে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিষ্ঠান সমূহ, এরকম অনেক ইউনিট, সেগুলির সবকটিতে প্রশাসনিক সংস্কারের খুবই প্রয়োজনীয়তা রয়েছে! কেউ লিখেছেন, ন্যায় বিচার প্রাপ্তির  ক্ষেত্রে যে দেরী হচ্ছে, সেটা খুবই চিন্তাজনক! আর তাঁরা এটাও বলেছেন, আমাদের ন্যায় বিচারের ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে! কেউ লিখেছেন, অনেক গ্রীন ফিল্ড সিটি গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি ! এত ব্যাপক মাত্রায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে আমাদের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সামর্থ্য গড়ে তুলতে একটি অভিযান চালানোর জন্যও পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ!
অনেক মানুষ এই স্বপ্নও  দেখেছেন যে, মহাকাশে ভারতের স্পেস স্টেশন যত দ্রুত সম্ভব গড়ে তোলা উচিৎ !
কেউ বলেছেন, ভারতের যে, পরম্পরাগত ঔষধ আছে, গোটা পৃথিবী যখন আজ সর্বাত্মক স্বাস্থ্য সেবা অভিমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সেই সময়ে আমাদের ভারতীয় পরম্পরাগত ঔষধ এবং ওয়েলনেস হাব হিসেবে ভারতকে বিকশিত করতে হবে! কেউ বলেছেন, আর দেরী নয়, ভারতের যত দ্রুত সম্ভব বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়ে ওঠা উচিৎ!

 

বন্ধুগণ,
আমি এগুলি এজন্য পড়ে শোনাচ্ছিলাম, কারণ, এই পরামর্শগুলি আমাদের দেশের মানুষ পাঠিয়েছেন! আমাদের দেশের সাধারণ নাগরিকরা এই পরামর্শগুলি আমাকে পাঠিয়েছেন! আমি মনে করি যখন দেশের মানুষের ভাবনার এত বিশাল চিন্তাভাবনার ভাণ্ডার রয়েছে, দেশের সঙ্গে  মানুষের এত বড় স্বপ্ন জুড়ে আছে, দেশবাসীর কথায় এত সংকল্প প্রতিফলিত হয়, তখন আমাদের মনেও একটি সংকল্প দৃঢ় হয়ে যায়!  আমাদের মনে আত্মবিশ্বাস নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায় ! 
আর বন্ধুরা, 
দেশবাসীর ভরসা শুধুমাত্র কোন মেধাভিত্তিক বিতর্ক নয়, এই ভরসা অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া যায় ! এই বিশ্বাস দীর্ঘ সময়জুড়ে টানা পরিশ্রমের ফসল! আর এজন্যই দেশের সাধারণ মানুষকে যখন লালকেল্লার প্রাকার থেকে বলা হয়, ভারতবর্ষের আঠার হাজার গ্রামে নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুৎ পৌঁছানো হবে, আর সেই কাজটা হয়ে যায়, ভরসাটা সেই তখনই মজবুত হয়ে যায়! যখন এটা স্থির করা হয়, স্বাধীনতার এত বছর বাদেও দেশের আড়াই কোটি পরিবার এমন আছে, যাঁদের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেনি, অন্ধকারে রাত কাটাতে হয়, সেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছে যায়, তখন সাধারণ মানুষের ভরসা বেড়ে যায় ! যখন পরিচ্ছন্ন ভারতের কথা বলা হয়, তখন দেশের সামনের সারিতে থাকা মানুষ হন, গ্রামের মানুষ হন, গরিব বস্তির বাসিন্দা, ছোট ছোট শিশু, প্রত্যেক পরিবারে পরিচ্ছন্নতার আবহ গড়ে ওঠে, পরিচ্ছন্নতা নিয়ে আলোচনা হয়, পরিচ্ছন্নতা নিয়ে একে অপরকে বাধা দেন, সতর্ক করেন , তখন আমি একে ভারতে জেগে অঠা পরিচ্ছন্নতাকে নিয়ে নতুন চেতনার প্রতিফলন বলে মনে করি! 
যখন দেশের মানুষকে লালকেল্লা থেকে বলা হয়, দেশের তিনকোটি পরিবার এমন আছে যাঁদের নলের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হয়! এটা জরুরী যে আমাদের  দেশের এই পরিবারগুলি যেন নলের মাধ্যমে পানের যোগ্য পরিশ্রুত জল পান! জল জীবন মিশনের আওতায় ….এত কম সময়ে নতুন বারো কোটি পরিবারকে জলজীবন মিশনের আওতায় নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে! আজ পনেরো কোটি পরিবার এর সুবিধাপ্রাপ্তির আওতাভুক্ত হয়েছেন! আমাদের মধ্যে কারা বঞ্চিত ছিলেন, কারা পিছিয়ে ছিলেন? সমাজের সামনের সারির মানুষ এরকম অভাবে থাকেন না , আমাদের দলিত, আমাদের পীড়িত মানুষ, আমাদের শোষিত, আমাদের আদিবাসী ভাই বোনেরা, আমাদের গরিব ভাই বোন , আমাদের ঘিঞ্জি বস্তিতে থাকা মানুষ, …তারাই তো এইসমস্ত জিনিসের অভাবে  দিন কাটান! আমরা এরকমই প্রাথমিক চাহিদার পূর্তিতে যে প্রয়াস চালিয়েছি , এর সুফল আমাদের সমাজের সেই সমস্ত বন্ধুদের কাছে সহজলভ্য হয়েছে ! 
আমরা ভোকাল ফর লোকালের মন্ত্র শুনিয়েছিলাম … আজ আমি খুশি …ভোকাল ফর লোকাল দেশের অর্থব্যবস্থার জন্য এক নতুন মন্ত্র হয়ে উঠেছে! প্রতিটি জেলা আজ নিজেদের স্থানীয় উৎপাদনের জন্য আজ গর্বিত ! ‘এক জেলা এক উৎপাদনে’র একটি আবহ গড়ে উঠেছে! এক জেলার এক উৎপাদনকে কিভাবে বাইরে রপ্তানি করা যায় সে ব্যাপারে প্রতিটি জেলা ভাবনা চিন্তা করতে শুরু করেছে! 
পুনর্নবীকরণ যোগ্য শক্তির ব্যাপারে সংকল্প গ্রহণ করা হয়েছিলো জি টোয়েন্টি ভূক্ত দেশগুলি একযোগে এক্ষেত্রে যতটা করেছে ভারত একাই ততটা করেছে ! ভারত শক্তি ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হওয়ার জন্য বিশ্ব উষ্ণায়নের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে আমরা কাজ করেছি! 
বন্ধুগণ, দেশ আজ গর্ব করে থাকে যখন গোটা বিশ্ব ফিনটেকের সাফল্য নিয়ে ভারতের কাছ থেকে শিখতে -বুঝতে চাইছে! .. আমাদের গর্ব কিন্তু আরও বেড়ে যায় …

বন্ধুগণ,
আমরা কিভাবে ভুলতে পারি করোনার সেই সংকট কাল ? গোটা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে কোটি কোটি লোককে টিকা দেওয়ার কাজ আমাদের এই দেশেই হয়েছিলো! এই দেশেই কখনো সন্ত্রাসবাদীরা আমাদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে আমাদের হত্যা করে চলে যেত! কিন্তু যখন দেশের সেনা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে, দেশের সেনা এয়ার স্ট্রাইক করে থাকে, দেশের তরুণদের বুক গর্বে ফুলে ওঠে , টান টান হয়ে ওঠে ! গর্বে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে ! আর এটাই কথা যে, আজ দেশের একশো চল্লিশ কোটি দেশবাসীর মন গর্বে পরিপূর্ণ,  আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ !

বন্ধুগণ,
আজ এই বিষয়গুলি নিয়েই দেশের মধ্যে সুচিন্তিত প্রচেষ্টা চলছে! সংস্কারের ঐতিহ্যকে শক্তি যোগানো হচ্ছে সুনির্দিষ্ট কৌশলে! আর যখন রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংকল্পের শক্তিতে, দৃঢ় বিশ্বাসে বলীয়ান হয়, আর যখন সরকারী কর্মশক্তি সমর্পণের ভাবনায় সেগুলি বাস্তবায়নে লেগে পড়ে, আর দেশের প্রত্যেক নাগরিক যখন দেশের স্বপ্নকে পূর্ণ করার জন্য গণ অংশীদারিত্বের আন্দোলনে পরিণত করার জন্য এগিয়ে আসেন, তখন আমাদের মনে অবশ্যই নিশ্চিত সুফল পাওয়া নিয়ে সংশয় থাকে না। 

আমার প্রিয় দেশবাসী, 
আমাদের এটা ভুললে চলবে না যে দেশ স্বাধীনতার পর থেকে নানারকম পরিস্থিতিতে সময় কাটিয়েছে! ভাবনা এমন ছিল,  আরে সবকিছু তো এমনি হয়ে যাচ্ছে, চলে যাচ্ছে, এমনটাই চলবে, তো আমরা পরিশ্রম করতে যাবো কেন? আরে সমস্যাটা তো পরবর্তী প্রজন্ম দেখবে! আমাদের আরাম করার সুযোগ এসেছে, আরাম করে নাও! আগামীদিনের কথা আগামীদিনের লোক বুঝবে,  আমাদের কী করার আছে? আমরা আমাদের সময় কাটিয়ে দেবো! আরে নতুন কিছু করতে যাব, কে জানে আবার কোন সমস্যা এসে সামনে দাঁড়াবে! কেন জানি, সারা দেশে এমন একটা ‘স্ট্যাটাস ক্যু’র পরিসর তৈরী হয়ে গিয়েছিলো! যা আছে তা নিয়েই কোনরকমে দিন কাটিয়ে দাও! লোকে বলত, আরে ছেড়ে দাও,  কিচ্ছুটি হবার নয়… এরকমই একটা মানসিকতা তৈরী হয়ে গিয়েছিলো ! 
আমাদের এই মানসিকতা ভাঙতে হবে, আত্মবিশ্বাসে ভরিয়ে দিতে হবে এবং সেই লক্ষ্যেই আমরা চেষ্টা করেছি। অনেকে বলতেন, আরে, এখন থেকে আমরা কেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কাজ করব, আমরা তো আজকেরটা দেখবো। কিন্তু দেশের সাধারণ নাগরিক এটা চাননি, তাঁরা পরিবর্তনের অপেক্ষায় ছিলেন, তাঁরা পরিবর্তন চাযন, তাঁদের তীব্র ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তাঁদের স্বপ্নকে কেউ গুরুত্ব দেয়নি, তাঁদের আশা-আকাঙ্খা- প্রত্যাশাকে কেউ কোনও গুরুত্ব দেয়নি। আর সেজন্যেই তাঁরা কষ্ট সহ্য করে জীবনযাপন করতে থাকেন। তিনি সংস্কারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং আমরা বড় বড় সংস্কার বাস্তবায়ন করেছি।
দরিদ্র, মধ্যবিত্ত, আমাদের বঞ্চিত মানুষ, আমাদের ক্রমবর্ধমান শহুরে জনসংখ্যা, আমাদের যুবকদের স্বপ্নগুলি, সংকল্প, আকাঙ্ক্ষাগুলি, তাঁদের জীবনে পরিবর্তন আনতে আমরা সংস্কারের পথ বেছে নিয়েছি। আর আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, সংস্কারের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার শুধু গোলাপি পত্রিকার (pink paper) সম্পাদকীয়তেই সীমাবদ্ধ নয়। এটা আমাদের সংস্কারের অঙ্গীকার আর এটা চারদিনের করতালির জন্য নয়। আমাদের এই সংস্কার প্রক্রিয়া কোনও বাধ্যবাধকতার জন্যে নয়, এটি দেশকে শক্তিশালী করার অভিপ্রায়ে। আর সেজন্যেই আমি আজ বলতে পারি যে আমাদের সংস্কারের পথ অর্থনৈতিক উন্নয়ণের নীলনকশা হিসেবে রয়ে গেছে। এই সংস্কার, এই বৃদ্ধি, এই পরিবর্তন শুধু ডিবেট ক্লাব বা বুদ্ধিজীবী সমাজের বিশেষজ্ঞদের আলোচনার বিষয় নয়।

বন্ধুগণ ,
রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে আমরা এটা করিনি। আমরা যাই করছি, রাজনীতির অঙ্ক কষে কাজের কথা আমরা ভাবি নি, আমাদের একটাই সঙ্কল্প- দেশ সর্বাগ্রে, নেশন ফার্স্ট, দেশের স্বার্থ সবার ওপরে। এটা আমার ভারত যেন মহান হয় এই সংকল্প নিয়ে আমরা পদক্ষেপ নিই।
বন্ধুগণ,
যখন সংস্কারের কথা ওঠে, তার একটা দীর্ঘ প্রেক্ষিত থাকে, যদি আমি এর আলোচনায় যাই তাহলে হয়তো ঘণ্টাখানেক সময় লাগবে। তবে আমি একটি ছোট উদাহরণ দিতে চাই। ব্যাঙ্কিং খাতে যে সংস্কার হয়েছে। একটু ভাবুন, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের অবস্থা কেমন ছিল! উন্নয়ন ছিল না, সম্প্রসারণ হয়নি, আস্থা বাড়েনি। শুধু তাই নয়, যে ধরনের কুকীর্তি চলছিল, তাতে আমাদের ব্যাঙ্কগুলো সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করতে আমরা অনেক ধরণের সংস্কার করেছি। আর আজ সেজন্যেই, ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলি বিশ্বের কয়েকটি শক্তিশালী ব্যাঙ্কের মধ্যে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। আর যখন ব্যাঙ্কগুলো শক্তিশালী হয় তখন formal economy  (আনুষ্ঠানিক অর্থনীতি)র শক্তিও বৃদ্ধি পায়। যখন ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন সাধারণ দরিদ্র এবং বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারের চাহিদা পূরণে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের ক্ষমতাও বাড়ে। তাঁদের যদি গৃহ ঋণের প্রয়োজন হয়, তাঁদের যদি গাড়ির ঋণের প্রয়োজন হয়, আমার কৃষকদের যদি একটি ট্রাক্টর কেনার জন্য ঋণের প্রয়োজন হয়, আমার যুবকদের যদি স্টার্ট আপের জন্য ঋণের প্রয়োজন হয়, আমার যুবকদের পড়াশোনার জন্য, শিক্ষার জন্য যদি ঋণের প্রয়োজন হয়, যদি কেউ বিদেশে যেতে চান একটি ঋণ পেলেই এসব সম্ভব হয়।
আমি খুশি যে আমার গবাদি পশু পালনকারী এবং আমার মৎসচাষী ভাই-বোনেরাও আজ ব্যাঙ্ক থেকে সুবিধা নিচ্ছেন। আমি আনন্দিত যে আমার লক্ষ লক্ষ রাস্তার বিক্রেতা এবং ভাই ও বোনেরা আজ ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন উচ্চতা অর্জন করছেন এবং উন্নয়নের অংশীদার হচ্ছেন। ব্যাঙ্কগুলি আমাদের MSME এবং আমাদের ক্ষুদ্র শিল্পগুলির জন্য সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী৷ তাঁদের প্রতিদিনের উন্নতির জন্য প্রতিদিন অর্থের প্রয়োজন এবং সেই কাজটি আজ সম্ভব হয়েছে আমাদের শক্তিশালী ব্যাঙ্কের কারণে।
বন্ধুগণ,
দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের দেশে স্বাধীনতা পেলেও জনগণকে এক ধরনের কর্তাভজা সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সরকারের কাছে চাইতে থাকুন, সরকারের দিকে হাত বাড়াতে থাকুন, কাউকে সুপারিশ করার উপায় খুঁজতে থাকুন, এটাই ছিল সংস্কৃতি। আজ আমরা সেই শাসনের মডেল পাল্টে দিয়েছি। আজ সরকার নিজেই সুবিধাভোগীর কাছে যায়, আজ সরকার নিজেই তাঁদের বাড়িতে রান্নার গ্যাসের উনুন সরবরাহ করে, আজ সরকার নিজেই তাঁদের বাড়িতে জল সরবরাহ করে, আজ সরকার নিজেই তাঁদের বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, আজ সরকার নিজেই উন্নয়নের নতুন মাত্রা ঠিক করার জন্য প্রেরণা জোগায়। তাঁদেরকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আজ সরকার নিজেই তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বন্ধুগণ , আমাদের সরকার বড় ধরনের সংস্কারের জন্য অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এর মাধ্যমে আমরা দেশের অগ্রগতির পথ বেছে নিতে চাই।
বন্ধুগণ, দেশে নতুন নতুন ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে ধারাবাহিকভাবে অনেক আর্থিক নীতি প্রণয়ন করতে হবে এবং নতুন ব্যবস্থার প্রতি দেশের আস্থাও বাড়তে থাকবে। আজ যাঁরা ২০-২৫ বছর বয়সী যুবক, যাঁরা ১০ বছর আগে ১২-১৫ বছর বয়সী নবীন ছিল, তাঁরা এই পরিবর্তন তাঁদের চোখের সামনে দেখেছে। ১০ বছরের মধ্যে, তাঁদের স্বপ্নগুলি বাস্তব রূপ নিয়েছে, তীক্ষ্ণ হয়েছে এবং তাঁদের আত্মবিশ্বাসে একটি নতুন চেতনা জাগ্রত হয়েছে এবং এটাই দেশে একটি নতুন শক্তি রূপে আবির্ভূত হচ্ছে। আজ সারা বিশ্বে ভারতের সুনাম বেড়েছে, ভারতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে।
আজ বিশ্বের তরুণদের জন্য অনেক সম্ভাবনার দরজা খুলেছে। অগণিত নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ, যা স্বাধীনতার এত বছর পরেও আসেনি, আজ তাঁদের দরজায় কড়া নাড়ছে। সম্ভাবনাগুলি বেড়েছে। নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আমার দেশের তরুণদের এখন ধীর গতিতে চলার কোনো ইচ্ছা নেই। আমার দেশের নবীনরা ক্রমবর্ধমান অগ্রগতিতে বিশ্বাস করে না। আমার দেশের নবীনরা উল্লম্ফনের মেজাজে আছেন। তাঁরা উল্লম্ফন এবং নতুন সাফল্য অর্জনের মেজাজে রয়েছেন। আমি বলতে চাই যে এটি ভারতের জন্য একটি স্বর্ণযুগ। এমনকি বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করলেও, এটা স্বর্ণযুগ, এটাই আমাদের স্বর্ণযুগ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই সুযোগকে হাতছাড়া হতে দেবেন না, আমাদের এই সুযোগকে হাতছাড়া হতে দেওয়া উচিত নয় এবং আমরা যদি এই সুযোগ গ্রহণ করি এবং আমাদের স্বপ্ন ও সংকল্পগুলি নিয়ে এগিয়ে যাই, তবে আমরা আমাদের দেশের, সোনালি ভারতের প্রত্যাশা এবং ২০৪৭ সালে একটি উন্নত ভারতের লক্ষ্য অর্জন করবোই। আমরা অনেক শতাব্দীর শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে এসেছি।
আজ, পর্যটন ক্ষেত্র হোক, এমএসএমই ক্ষেত্র হোক, শিক্ষা হোক, স্বাস্থ্যক্ষেত্র হোক, পরিবহন ক্ষেত্র হোক, কৃষি এবং কৃষিক্ষেত্র হোক, প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি নতুন আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। আমরা বিশ্বের সেরা অনুশীলনগুলি মাথায় রেখে আমাদের দেশের পরিস্থিতি অনুসারে এগিয়ে যেতে চাই। প্রতিটি ক্ষেত্রে আধুনিকতা, নতুনত্বের প্রয়োজন রয়েছে। প্রযুক্তিকে যুক্ত করতে হবে। আর প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের নতুন নীতির কারণে এসব ক্ষেত্র নতুন সমর্থন ও নতুন শক্তি পাচ্ছে। আমাদের সকল বাধা দূর হোক, আমাদের বিষণ্নতা দূর হোক, আমরা যেন পূর্ণ শক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি, আমরা যেন প্রস্ফুটিত হই, আমরা যেন আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি, আমরা যেন সাফল্যকে আমাদের কাছাকাছি দেখতে পাই, আমরা যেন একে আত্মীকরণ করতে পারি, সেই লক্ষ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এখন আপনারা দেখুন, কত বড় পরিবর্তন আসছে।
আমি তৃণমূল স্তরের কথা বলছি, মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির কথা, আজ দশ বছরে আমাদের ১০ কোটি বোন মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছেন, ১০ কোটি নতুন বোন। আমরা গর্বিত যে আমাদের সাধারণ পরিবারের ১০ কোটি গ্রামীণ মহিলারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এবং মহিলারা যখন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হন তখন তাঁরা পরিবারের সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় অংশীদার হন, যা একটি বিশাল সামাজিক পরিবর্তনের নিশ্চয়তা নিয়ে আসছে।
আমি সেজন্য গর্বিত, তবে একই সঙ্গে আমি এই সত্যটি নিয়েও গর্বিত যে আমাদের C.E.O.রা, আজ তাঁরা গোটা বিশ্বে তাঁদের দক্ষতার প্রমাণ দিচ্ছেন। আমাদের ভারতের C.E.O রা সারা বিশ্বে নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ দিচ্ছেন। এটা আমাদের জন্য আনন্দের বিষয় যে একদিকে আমার C.E.O.রা সারা বিশ্বে সুনাম অর্জন করছেন এবং ভারতের সুনাম বাড়াচ্ছেন, অন্যদিকে নারী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে আমার সাধারণ পরিবারের এক কোটি মা-বোন লাখপতি দিদি হয়েছেন, এটাও আমার জন্য গর্বের বিষয়। এখন আমরা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ১০ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখনও অবধি, আমাদের মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি ব্যাঙ্কগুলির মাধ্যমে ৯ লক্ষ কোটি টাকা পেয়েছেন এবং এর সাহায্যে তাঁরা তাদের নানা ধরণের গতিবিধি সম্প্রসারণ করছেন।
আমার বন্ধুগণ,
আমার যুবকদের এই দিকে মনোযোগ দিন, মহাকাশ ক্ষেত্র একটি ভবিষ্যৎ যা আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, আমরা এর উপরও জোর দিচ্ছি। আমরা মহাকাশ ক্ষেত্রে অনেক সংস্কার করেছি। যে বন্ধনগুলো দিয়ে মহাকাশ ক্ষেত্রকে বেঁধে রাখা হয়েছিল, আমরা সেগুলো শিথিল করেছি। আজ শত শত স্টার্টআপ মহাকাশ ক্ষেত্রে উঠে আসছে। আমাদের মহাকাশ ক্ষেত্র প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে, ভারতকে একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হয়ে উঠছে। আর আমরা এটিকে দূরদর্শিতা দিয়ে শক্তিশালী করছি। আজ অনেক বেসরকারি স্যাটেলাইট ও প্রাইভেট রকেট উৎক্ষেপণ করা হচ্ছে, এটা গর্বের বিষয়। আজ আমি বলতে পারি যে যখন নীতি সঠিক হয়, উদ্দেশ্য যদি সঠিক হয়, আর পূর্ণনিষ্ঠার সঙ্গে জাতির কল্যাণে কাজ হয়, তাহলে আমরা নিশ্চিত সাফল্য পেতে থাকি।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আজ যদি দেশে নতুন সুযোগ তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে আমি বলতে পারি যে আরও দুটি জিনিস উন্নয়নকে গতি দিয়েছে, উন্নয়নকে একটি নতুন উল্লম্ফনে উদ্বুদ্ধ করেছে, আর সেগুলি হল - প্রথমটি হল আধুনিক পরিকাঠামো তৈরি করা। আমরা পরিকাঠামো আধুনিকীকরণে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছি। আর অন্যদিকে, আমরা সাধারণ মানুষের জীবনের বাধা এবং আমাদের জীবনযাত্রার স্বাচ্ছন্দ্যের স্বপ্নকে সমান গুরুত্ব দিয়েছি।
গত এক দশকে অভূতপূর্ব পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। রেল হোক, রাস্তা হোক, বিমানবন্দর হোক, সমুদ্রবন্দর হোক, ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি হোক, প্রতিটি গ্রামে নতুন স্কুল তৈরি করা হোক, বনাঞ্চলে স্কুল তৈরির কথা হোক, প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল তৈরির কথা হোক, আরোগ্য মন্দির তৈরির কথাই হোক, মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলার কাজ হোক, আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির তৈরির প্রক্রিয়া হোক, ৬০ হাজারের বেশি অমৃত সরোবর তৈরি হয়েছে, অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক পৌঁছে গেছে দুই লক্ষ পঞ্চায়েতে, সেচখালের বিশাল নেটওয়ার্ক পাতা হচ্ছে, চার কোটি পাকা বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে দরিদ্রদের একটি নতুন আশ্রয় প্রদান এবং তিন কোটি নতুন ঘর নির্মাণের সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আমাদের প্রচেষ্টা।
আমাদের পূর্ব ভারত- উত্তর পূর্বাঞ্চল আজ পরিকাঠামোর জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছে এবং আমরা যে রূপান্তর এনেছি তার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল আমরা সমাজের সেই অংশগুলিতে পৌঁছেছি, যখন সেখানে গ্রামীণ রাস্তা তৈরি করা হয়েছে, যেদিকে আগে কেউ ফিরেও তাকান নি। যে এলাকাগুলোর কথা আগে কেউ ভাবেনি, যে গ্রামগুলোর কথা দিকে কেউ তাকায়নি। তাঁরা দলিত হন, নির্যাতিত হন, শোষিত হন, বঞ্চিত হন, অনগ্রসর হন, উপজাতি হন, বনে-জঙ্গলে বসবাস করুন, দুর্গম পাহাড়ে থাকুন, সীমান্ত এলাকায় থাকুন, আমরা তাঁদের চাহিদা পূরণ করেছি।
আমাদের মৎস্যজীবী ভাই-বোনদের চাহিদা পূরণ করা, আমাদের গবাদি পশুপালকদের জীবনযাত্রা উন্নত করা, একপ্রকার সর্বাত্মক উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা করা আমাদের নীতিতে রয়েছে, আমাদের উদ্দেশ্যগুলিতে, আমাদের সংস্কারে, আমাদের কর্মপ্রণালীতে রয়েছে। আমাদের জেলে ভাই-বোনদের চাহিদা পূরণ করা, আমাদের গবাদি পশুপালকদের জীবন পরিবর্তন করা, সর্বাত্মক উন্নয়নের প্রচেষ্টা, আমাদের নীতিতে রয়েছে, আমাদের উদ্দেশ্যগুলিতে, আমাদের সংস্কারে রয়েছে, আমাদের কর্মসূচিতে রয়েছে, আমাদের কর্মশৈলীতে রয়েছে. আর সে সবের মধ্যে সবচেয়ে বড় লাভবান হয় আমার নবীন প্রজন্ম। তাঁরা নতুন সুযোগ পান, তাঁদের জন্য নতুন ক্ষেত্রগুলিতে পা রাখার সম্ভাবনা গড়ে ওঠে এবং তা সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান করছে আর তাঁরা এই সময়ে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে।
আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবার স্বাভাবিকভাবেই জীবনের মানোন্নয়ন প্রত্যাশা করেন। তাঁরা দেশকে অনেক কিছু দেন, তাই দেশের দায়িত্ব তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। তাঁদের জীবনের নানা সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের দিক থেকে তাঁদের যে প্রত্যাশা থাকে, সেগুলি পূরণের জন্য আমরা নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাই। আর আমি স্বপ্ন দেখেছি, ২০৪৭ সালের মধ্যে একটি উন্নত ভারতের স্বপ্ন, তখন এর একটি উপাদান হবে সাধারণ মানুষের জীবনে সরকারি হস্তক্ষেপ হ্রাস করা। যেখানে সরকারের প্রয়োজন, সেখানে যেন কোনও অভাব না থাকে, আর যেখানে সরকারের বিলম্বের কারণে কোনও প্রভাব পড়বে না, এ ধরনের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমরা দায়বদ্ধ।
আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবার স্বাভাবিকভাবেই জীবনের মানোন্নয়ন প্রত্যাশা করেন। তাঁরা দেশকে অনেক কিছু দেন, তাই দেশের দায়িত্ব তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। তাঁদের জীবনের নানা সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের দিক থেকে তাঁদের যে প্রত্যাশা থাকে, সেগুলি পূরণের জন্য আমরা নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাই। আর আমি স্বপ্ন দেখেছি, ২০৪৭ সালের মধ্যে একটি উন্নত ভারতের স্বপ্ন, তখন এর একটি উপাদান হবে সাধারণ মানুষের জীবনে সরকারি হস্তক্ষেপ হ্রাস করা। যেখানে সরকারের প্রয়োজন, সেখানে যেন কোনও অভাব না থাকে, আর যেখানে সরকারের বিলম্বের কারণে কোনও প্রভাব পড়বে না, এ ধরনের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমরা দায়বদ্ধ।
 
আমার প্রিয় দেশবাসী,
ছোটখাটো প্রয়োজনেও আমরা মনোযোগ দিই। আমরা ছোট ছোট চাহিদার প্রতি মনোযোগ দিই এবং সেগুলি নিয়ে এগিয়ে যাই। যাতে আমাদের গরীবের ঘরে উনুন জ্বলতে থাকে তার ব্যবস্থা, যাতে গরীব মাকে কখনই শারীরিক কষ্টে চোখের জল ফেলতে না হয়, সেজন্য আমরা বিনামূল্যে চিকিৎসার একটি প্রকল্প চালাচ্ছি। বিদ্যুৎ, জল, গ্যাস, এখন স্যাচুরেশন মোডে রয়েছে এবং যখন আমরা সম্পৃক্ততার কথা বলি তা হয় ১০০ শতাংশ। যখন সম্পৃক্ততা আসে, তখন উন্নয়নে জাতপাতের রং লাগেনা। যখন সম্পৃক্ততার আসে তখন এতে বামপন্থার রঙ লাগে না। যখন সম্পৃক্ততার মন্ত্র নিয়ে কাজ হয়, তখন প্রকৃত অর্থে ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর মন্ত্রটি বাস্তবায়িত হয়।
আমরা জনগণের জীবনে সরকারের হস্তক্ষেপ কমানোর চেষ্টা করছি। ছোটখাটো ভুলের কারণে সরকার সাধারণ মানুষের কাঁধে নানা বোঝা চাপাতো। আমরা দেশবাসীর জন্য দেড় হাজারেরও বাশি আইন বাতিল করেছি, যাতে অহেতুক আইনের জালে দেশবাসীর জীবন বিপর্যস্ত না হয়।    যেসব আইনে ছোটখাটো কারণে কারাগারে পাঠানোর প্রথা ছিল আমরা সেই আইনগুলিকে বাতিল করে দিয়েছি এবং সামান্য কারণে মানুষকে কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা থেকে মুক্ত করেছি। আজ আমরা স্বাধীনতার ঐতিহ্যের গৌরবের কথা বলছি, যে ফৌজদারি আইনগুলি আমাদের জীবনে কয়েক শতাব্দী ধরে ছিল, আজ আমরা সেগুলিকে সংস্কার করে নতুন ফৌজদারি আইন প্রণয়ন করেছি, একটি ন্যায়বিচারের কোড প্রণয়ন করেছি, যার মূলে রয়েছে ন্যায়বিচার, শাস্তি নয়, আমরা নাগরিকদের মনে ন্যায়ের ভাবনাকে শক্তিশালী করেছি।
আমরা Ease of Living বাড়াতে একটি দেশব্যাপী মিশন নিয়ে কাজ করছি। আমি সরকারের কাছে এসবের জন্য সর্বস্তরে আবেদন জানাচ্ছি। আমি সকল জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ করছি, তাঁরা যে দলেরই হন বা যে রাজ্যেরই হন না কেন, আমরা যেন মিশন মোডে Ease of Living  বাড়াতে পদক্ষেপ গ্রহণ করি। আমি আমাদের Professionals দের, সবাইকে বলতে চাই, যেখানেই আপনাদের ছোটখাটো সমস্যা আছে, আপনারা সমাধানসহ সরকারকে চিঠি লিখতে থাকুন। সরকারকে বলুন বিনা কারণে অসুবিধা এলে সেগুলি দূর করতে ক্ষতি নেই, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সরকার আজ সংবেদনশীল। প্রত্যেক সরকার, তা স্থানীয় স্ব-সরকার হোক, রাজ্য সরকার হোক বা কেন্দ্রীয় সরকার, একে গুরুত্ব দেবে।
শাসন ব্যবস্থায় সংস্কার, একটি উন্নত ভারত@ ২০৪৭-এর স্বপ্ন বাস্তবায়ণের জন্য আমাদের এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে যাতে সাধারণ মানুষের জীবনে শুধুমাত্র সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং বাধাগুলি দূর হয়। নাগরিকদের মর্যাদা সুনিশ্চিত করতে, নাগরিকদের জীবনে মর্যাদা বাড়াতে, পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে, কাউকে কখনও বলতে হবে না যে এটি আমার অধিকার ছিল কিন্তু আমি তা পাইনি, তাঁদের যেন খুঁজতে না হয়, সরকারের শাসন ব্যবস্থায় পরিষেবা প্রদানে উন্নতি করতে হবে। 
আপনি দেখুন, আজ আমরা যখন দেশে সংস্কারের কথা বলি, বর্তমানে দেশে প্রায় তিন লক্ষ প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। পঞ্চায়েত, নগর পঞ্চায়েত, পৌরসভা, মেট্রোপলিটন পৌরসভা, UT, রাজ্য, জেলা, কেন্দ্র, প্রায় তিন লক্ষ ছোট ইউনিট রয়েছে। আজ আমাদের তিন লক্ষ ইউনিটের প্রতি আমাদের আহ্বান, সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় চাহিদাপূরণের জন্য আপনারা যদি নিজেদের স্তরে বছরে দুটি সংস্কার করেন, আমি বেশি কিছু চাই না বন্ধুরা,  পঞ্চায়েত হোক, রাজ্য সরকার হোক, যে কোনও দপ্তর হোক, এক বছরে দুটি সংস্কার করুন এবং তা বাস্তবায়িত করুন। আপনারা দেখবেন, আমরা এক বছরে প্রায় ২৫-৩০ লক্ষ সংস্কার করতে পারবো। বছরে ২৫-৩০ লক্ষ সংস্কার হলে সাধারণ মানুষের আস্থা কতটা বাড়বে। জাতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সংস্কারের শক্তি কতটা কার্যকর হবে আর সেজন্য আমরা যদি নিজেদের স্তরে কাজ করি, জড়তা থেকে মুক্তি পেয়ে পরিবর্তনের জন্য এগিয়ে আসি, সাহস নিয়ে এগিয়ে আসি এবং প্রত্যেক সাধারণ মানুষের প্রয়োজনগুলি মেটাই, শুধু ছোটো ছোটো প্রয়োজন, এমনকি পঞ্চায়েত পর্যায়েও তাঁরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, আমরা যদি সেই সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণ পাই তাহলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমরা আমাদের স্বপ্নকে অতিক্রম করতে পারব।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
দেশ আজ আশা-আকাঙ্খায় ভরপুর। আমাদের দেশের তরুণরা নতুন নতুন সাফল্যকে চুম্বন করতে চান। তাঁরা নতুন নতুন উচ্চতায় পা রাখতে চান। আর তাই আমাদের প্রচেষ্টা হল প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজের গতি বাড়ানো, দ্রুততা আনা এবং এর মাধ্যমে আমরা প্রথমে প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি করি। দ্বিতীয়ত, এই পরিবর্তনশীল ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়ক পরিকাঠামো তৈরি করি। আসুন, আমরা সেই পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করি। আর তৃতীয় বিষয় হলো নাগরিকদের মৌলিক সুযোগ-সুবিধাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং গুরুত্ব দিতে হবে। এই তিনটি বিষয় ভারতে একটি উচ্চাকাঙ্খী সমাজ গড়ে তুলেছে এবং এর ফলস্বরূপ আজ সমাজ আত্মবিশ্বাসে ভরে উঠেছে। আমাদের তরুণদের প্রাণশক্তি এবং আমাদের দেশের সম্ভাবনার সঙ্গে আমাদের দেশবাসীর আশা-আকাঙ্খার সমন্বয় ঘটিয়ে আমরা এগিয়ে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।
আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমরা কর্মসংস্থান এবং স্ব-নির্ভরতার জন্য রেকর্ড পরিমাণ সুযোগ তৈরি করেছি। আজ আমরা মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ করতে সফল হয়েছি। Global growth –এ  ভারতের অবদান বেড়েছে। ভারতের রপ্তানি ক্রমাগত বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, আগের থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। ভারতের প্রতি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলির আস্থা বেড়েছে। আমি বিশ্বাস করি যে ভারতের লক্ষ্য সঠিক, ভারতের গতি দ্রুত এবং ভারতের স্বপ্নগুলি সম্ভাবনাময়। কিন্তু এসবের পাশাপাশি, আমাদের সংবেদনশীলতার পথ আমাদের প্রাণশক্তিতে একটি নতুন চেতনা নিয়ে আসে। আপন করে নেওয়া আমাদের কর্মশৈলী। সাম্যও চাই আর আপনত্বও চাই, এই মনোভাব নিয়েই আমরা এগিয়ে চলেছি।
বন্ধুগণ,
আমি যখন করোনার সমযয়ের কথা ভাবি, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর মধ্যে যে দেশ তার অর্থনীতিকে সবচাইতে দ্রুত উন্নত করছে, সেই দেশটি হল ভারত। তখন বুঝতে পারি আমাদের নীতি ঠিক। জাতি-ধর্ম-বর্ণের উর্ধ্বে উঠে যখন ঘরে ঘরে তেরঙ্গা উত্তোলন করা হয়, তখন মনে হয় দেশের পথচলা ঠিক। আজ গোটা দেশ ত্রিবর্ণরঞ্জিত, প্রত্যেক বাড়িতে তেরঙা, সবরকম জাতপাতের ঊর্ধ্বে, কেউ উঁচু নয়, কেউ নিচু নয়, সবাই ভারতীয়। এটাই আমাদের নীতির শক্তি। যখন আমরা ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ঊর্ধ্বে তুলে এনেছি, তখন আমাদের আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হয়েছে যে আমরা গতি বজায় রেখেছি এবং আমাদের স্বপ্ন বাস্তব হতে আর বেশি দেরী নেই।
যখন ১০০টিরও বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা তাদের নিজ নিজ রাজ্যের ভাল জেলাগুলির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, তখন আমরা অনুভব করি যে আমাদের দিশা এবং গতি উভয়ই শক্তিশালী। আমাদের নানা জনজাতীর বন্ধুরা যখন প্রয়োজনীয় সাহায্য এবং প্রকল্পগুলি পান যা তাদের প্রধানমন্ত্রী জন-মনের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের জনসংখ্যা খুবই কম। কিন্তু তাঁরা অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে, ছোট ছোট, বিচ্ছিন্ন পরিবারে বসবাস করেন, আমরা তাদের সন্ধান করেছি এবং তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছি। আপনারা বুঝতে পারবেন যে কেউ যখন সংবেদনশীলতার সঙ্গে কাজ করেন তখন টিনি কতটা তৃপ্তি পান। কর্মজীবী মহিলাদের জন্য বেতনের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২ সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে ২৬ সপ্তাহ করা হয়েছে। তাহলে শুধু যে আমরা নারীদের সম্মান করি তা নয়, নারীর প্রতি সংবেদনশীলতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু মায়ের কোলে থাকা সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সেজন্য সংবেদনশীল অনুভূতি নিয়ে আমরা সেসব সিদ্ধান্ত নিই।
আমার দিব্যাংগ ভাই ও বোনেদের জন্য ভারতীয় সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ চালু করা বা ‘সুগম্য ভারত’ অভিযানের কথা যদি বলি, তখন তাঁরা মনে করেন যে এখন আমারও মর্যাদা আছে, দেশের নাগরিক হিসেবে সবাই আমাকে সম্মানের চোখে দেখে। ফলে প্যারালিম্পিকে আমাদের খেলোয়াড়রা নতুন শক্তি দেখাতে শুরু করেছেন। তখন আমাদের আপনত্বের শক্তি, আমাদের সকলের সাম্যের অনুভূতি আমি অনুভব করি। আমরা আমাদের ট্রান্সজেন্ডার সমাজের প্রতি সংবেদনশীলতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, আমরা নতুন আইন প্রণয়ন করছি, আমরা তাঁদের মর্যাদার জীবন দেওয়ার চেষ্টা করছি। ফলে আমাদের পরিবর্তনের দিশা সঠিক বলে মনে হচ্ছে। সেবার মনোভাব নিয়ে করা এসব কাজের প্রত্যক্ষ সুফল আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, যার ফলশ্রুতিতে আমরা ত্রিবিধ পথ অনুসরণ করেছি।
৬০ বছর পর টানা তৃতীয়বারের মতো আপনারা আমাদের দেশ সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমার ১৪০ কোটি দেশবাসী, আপনারা আমাকে যে আশীর্বাদ দিয়েছেন, তাতে আমার একটাই বার্তা- প্রত্যেক মানুষের সেবা, প্রতিটি পরিবারের সেবা, প্রতিটি ক্ষেত্রে সেবা এবং সেবার চেতনা নিয়ে সমাজের শক্তিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছানো। ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারতের স্বপ্ন বাস্তবায়ণের লক্ষ্য  নিয়ে, লালকেল্লার প্রাকার থেকে আমাদের আশীর্বাদ প্রদানের জন্য আমি আমার মাথা নত করছি এবং লক্ষ লক্ষ দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং আমি তাঁদেরকে আশ্বস্ত করছি যে আমাদের নতুন উচ্চতায় এবং নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা এমন মানুষ নই যারা আমাদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট হয়ে বসে থাকবো, এটা আমাদের সংস্কৃতিতে নেই। আমরা আরও কিছু করতে, আরও এগিয়ে যেতে এবং নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা উন্নয়ন করতে চাই, সমৃদ্ধি করতে চাই, স্বপ্নকে সত্যি করতে চাই, সংকল্পের জন্য জীবন ব্যয় করা আমাদের প্রকৃতি, আমরা এটিকে আমাদের দেশবাসীর স্বভাবে পরিণত করতে চাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আজ, অনেক রাজ্য নতুন শিক্ষানীতি প্রয়োগে ভাল উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ, আমরা একবিংশ শতাব্দীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে চাই এবং আমরা উন্নত ভারতের স্বপ্ন বাস্তবায়ণের জন্য যেরকম মানব গোষ্ঠীকে প্রস্তুত করতে চাই, তাতে নতুন শিক্ষানীতির বিরাট ভূমিকা রয়েছে। আমি চাই না আমার দেশের তরুণরা বিদেশে পড়তে বাধ্য হোক। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের বিদেশে পড়তে পাঠাতে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হয় তাদের। আমরা দেশেই এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই যাতে আমার দেশের তরুণদের বিদেশে যেতে না হয়। তাহলে আমার মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিকে লক্ষ-কোটি টাকা খরচ করতে হবে না। শুধু তাই নয়, এমন প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে চাই যাতে তাঁরা বিদেশ থেকে ভারতের দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
আমাদের বিহারের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। সম্প্রতি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। আবারও নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় কাজ শুরু করেছে, কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের আবারও সেই নালন্দা চেতনাকে জাগ্রত করতে হবে, সেই নালন্দা চেতনাকে আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, সেই নালন্দার চেতনা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। বিশ্বের জ্ঞান ঐতিহ্যে নতুন চেতনা প্রদানের কাজ আমাদের করতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে নতুন শিক্ষানীতিতে মাতৃভাষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আমি রাজ্য সরকারগুলিকে বলব, দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে বলব, ভাষার কারণে আমাদের দেশের মেধা যেন বাধা না পায়।  মাতৃভাষার সামর্থ্য  আমাদের দেশের দরিদ্রতম মায়ের সবচেয়ে গরীব ছেলেকেও তার স্বপ্ন পূরণের শক্তি দেয়। তাই আমাদের মাতৃভাষায় পড়াশোনা করতে হবে, জীবনে মাতৃভাষার স্থান, পরিবারে মাতৃভাষার স্থান অপরিসীম। আমাদের সেদিকে জোর দিতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী!
বর্তমানে বিশ্বে যেরকম পরিবর্তন দেখছি, দক্ষতার গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। আর আমরা দক্ষতাকে নতুন শক্তি দিতে চাই। আমরা শিল্প 4.O কে মাথায় রেখে দক্ষতা উন্নয়ন চাই। আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, এমনকি কৃষি ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দক্ষতা উন্নয়ন চাই। আমরা আমাদের পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রেও নতুন দক্ষতা উন্নয়নের উপর জোর দিতে চাই। আর এবার আমরা অত্যন্ত ব্যাপকভাবে স্কিল ইন্ডিয়া প্রোগ্রামকে নিয়ে এসেছি। বাজেটেও এটাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছি, এই বাজেটে আমরা ইন্টার্নশিপের ওপরও জোর দিয়েছি, যাতে আমাদের তরুণরা অভিজ্ঞতা পায়, তাদের সক্ষমতা তৈরি হয় এবং তাদের শক্তি বাজারে দৃশ্যমান হয়, সেভাবেই আমরা যুবকদের দক্ষতা গড়ে তুলতে চাই। বন্ধুগণ, আজ আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে ভারতের দক্ষ জনশক্তি, আমাদের দক্ষ যুবকদের বিশ্বব্যাপী চাকরির বাজারে তাদের ছাপ ফেলতে সক্ষম, সেই স্বপ্ন নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
যে দ্রুত গতিতে পৃথিবী বদলে যাচ্ছে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গুরুত্ব বাড়ছে। আমাদের বিজ্ঞানের উপর অনেক জোর দিতে হবে। আমরা দেখেছি, চন্দ্রযানের সাফল্যের পর আমাদের স্কুল-কলেজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহের নতুন পরিবেশ তৈরি হয়েছে, নতুন করে আগ্রহ বেড়েছে। তাহলে এই মানসিকতা লালন করতে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। ভারত সরকারও গবেষণায় সহায়তা বাড়িয়েছে। আমরা আরও বেশি করে আসন বাড়িয়েছি। ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন তৈরি করে আমরা এটিকে আইনি পরিবেশে এনে একটি স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি, যাতে গবেষণার ওপর নিরন্তর জোর দেওয়া হয় এবং এই গবেষণা ফাউন্ডেশন সেই কাজটি করে। এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে বাজেটে আমরা গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য এক লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে আমরা আমাদের দেশের তরুণদের ধারণা বাস্তবায়ন করতে পারি।
বন্ধুগণ,
আজও আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা চিকিৎসা শিক্ষার জন্য বাইরে যাচ্ছে। তারা বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত পরিবারের। এর পেছনে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হয়। গত ১০ বছরে আমরা মেডিকেলের আসন সংখ্যা প্রায় এক লক্ষে উন্নীত করেছি। প্রতি বছর আনুমানিক ২৫ হাজার তরুণ চিকিৎসা শিক্ষার জন্য বিদেশে যায়। আর যখন আমাদের এমন সব দেশে যেতে হয়, মাঝে মাঝে আমি তা শুনে অবাক হয়ে যাই। সেজন্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আগামী ৫ বছরের মধ্যে চিকিৎসা শিক্ষায় ৭৫ হাজার নতুন আসন তৈরি করা হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের কৃষি ব্যবস্থার রূপান্তর করা খুবই জরুরি, এটা সময়ের দাবি। আমরা যেখানে কয়েক শতাব্দী ধরে যেখানে আটকে রয়েছি সেই ঐতিহ্য থেকে মুক্ত হতে আমরা আমাদের কৃষকদেরও সেই জন্য সাহায্য করছি। আমরা এটিকে রূপান্তরের লক্ষ্যে ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছি। আজ  কৃষকরা সহজে ঋণ পাচ্ছেন এবং প্রযুক্তির সাহায্যে তাঁরা তা দ্রুত পাচ্ছেন। কৃষক যা উৎপাদন করে তার মূল্য সংযোজনের জন্য আমরা কাজ করছি। আমরা বাজারজাতকরণের সম্পূর্ণ ব্যবস্থা গড়ে তুলছি যাতে শেষ পর্যন্ত সমাজের প্রান্তিক মানুষটির পাশে দাঁড়াতে পারি, আমরা সেই কাজ করছি।
আজ যখন সারা পৃথিবী ধরিত্রীমাতার স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত, রাসায়নিক সারের প্রয়োগের ফলে যেভাবে প্রতিদিন আমাদের পৃথিবী মায়ের স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে, আমাদের পৃথিবী মায়ের উৎপাদন ক্ষমতা শেষ হয়ে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে আমি আমার দেশের লক্ষ লক্ষ কৃষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, যাঁরা প্রাকৃতিক চাষের পথ বেছে নিয়েছেন এবং আমাদের মাতৃভূমির সেবা করার দায়িত্বও নিয়েছেন। এবারের বাজেটেও আমরা প্রাকৃতিক চাষকে গতি দিতে বড় বড় প্রকল্পের জন্য বিশাল বরাদ্দ রেখেছি।
আজ যখন সারা পৃথিবী ধরিত্রীমাতার স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত, রাসায়নিক সারের প্রয়োগের ফলে যেভাবে প্রতিদিন আমাদের পৃথিবী মায়ের স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে, আমাদের পৃথিবী মায়ের উৎপাদন ক্ষমতা শেষ হয়ে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে আমি আমার দেশের লক্ষ লক্ষ কৃষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, যাঁরা প্রাকৃতিক চাষের পথ বেছে নিয়েছেন এবং আমাদের মাতৃভূমির সেবা করার দায়িত্বও নিয়েছেন। এবারের বাজেটেও আমরা প্রাকৃতিক চাষকে গতি দিতে বড় বড় প্রকল্পের জন্য বিশাল বরাদ্দ রেখেছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আজ আমি পৃথিবীর যে অবস্থা দেখছি, গোটা বিশ্ব হলিস্টিক হেলথ কেয়ারের দিকে ঝুঁকছে এবং তারপরে জৈব খাদ্য তাদের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠেছে, যদি কেউ আজ বিশ্বের জন্য জৈব খাবারের খাবারের ঝুড়ি হয়ে উঠতে পারে, তা আমার দেশের কৃষকদের পরিশ্রমে আমাদের দেশ হতে পারে, আর সেজন্যই আমরা আগামী দিনে সেই স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই যাতে বিশ্বব্যাপী জৈব খাদ্যের চাহিদা থাকে এবং আমাদের দেশ জৈব খাদ্যের ঝুড়িতে পরিণত হয়।
কৃষকদের জীবনকে সহজ করে তুলতে গ্রামে গ্রামে উচ্চমানের ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে, কৃষকদের স্বাস্থ্য পরিষেবা সুনিশ্চিত করতে হবে, কৃষকদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য স্মার্ট স্কুলের ব্যবস্থা করতে হবে, কৃষকদের ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। আজ, যখন ছোট ছোট কৃষিজমির উৎপাদনের আয়ে গোটা পরিবারের বেঁচে থাকা খুব কঠিন হয়ে উঠছে, তখন আমরা তাঁদের পরিবারের যুবকদের সেসব দক্ষতা উন্নয়নের জন্য একটি ব্যাপক উদ্যোগ নিচ্ছি যাতে তারা নতুন কর্মসংস্থান পেতে পারে এবং আয়ের নতুন উত্স হতে পারে।
বিগত বছরগুলোতে আমরা নারী নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন মডেল নিয়ে কাজ করেছি। উদ্ভাবন হোক, কর্মসংস্থান হোক, উদ্যোক্তা হোক, সব ক্ষেত্রেই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। নারীরা যে শুধু অংশীদারীত্ব বাড়াচ্ছে তা নয়, নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছে। আজ অনেক ক্ষেত্রে, আজ আমাদের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে, আমাদের বিমান বাহিনী, আমাদের সেনাবাহিনী, আমাদের নৌবাহিনী, আমাদের মহাকাশ ক্ষেত্র –সর্বত্র আমরা দেশের জন্য আমাদের নারীশক্তির অবদান পাচ্ছি। কিন্তু অন্যদিকে, কিছু উদ্বেগের বিষয় রয়েছে আর আজ আমি লালকেল্লা থেকে আবারও আমার যন্ত্রণার কথা প্রকাশ করতে চাই। সমাজে আমাদের মা-বোন ও কন্যাদের ওপর যে অত্যাচার হচ্ছে, তাতে দেশের ক্ষোভের কথা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ রয়েছে। আমি এই ক্ষোভ  অনুভব করছি। দেশ, সমাজ, আমাদের রাজ্য সরকারগুলিকে এটি গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব নারী নির্যাতনের তদন্ত হওয়া উচিত। যারা জঘন্য কাজ করে তাদের যত দ্রুত সম্ভব কঠোর শাস্তি দিতে হবে, সমাজে আস্থা তৈরি করতে হবে।
আমি এটাও বলতে চাই যে যখন নারীর উপর ধর্ষণ ও নৃশংসতার ঘটনা ঘটে, তখন তা অনেক আলোচিত হয়, তা অনেক প্রচার পায় এবং সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু এমন পৈশাচিক মানসিকতার ব্যক্তিকে যখন শাস্তি দেওয়া হয়, তখন তাকে কোথাও দেখা যায় না খবরে, কোথাও এক কোণে পড়ে থাকে। এখন সময়ের দাবি হল, যারা শাস্তি পাবে তাদের নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়া উচিত যাতে যারা এ ধরনের পাপ করে তারাও ভয় পায় যে এই পাপ করলে তাঁদের ফাঁসি হবে এবং আমি মনে করি এটা খুবই জরুরি; এই ভয় তৈরি করা !
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের দেশে এমন অভ্যাস স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। আমি জানি না কেন দেশকে অবমূল্যায়ন করা এবং দেশের প্রতি গর্ববোধের অভাব আমাদের মনে শেকড় গেড়েছিল। আর মাঝে মাঝে দেরি হলে বলতাম ইন্ডিয়ান সাইন, বলতাম লজ্জায়। এসব থেকে দেশকে বের করে আনতে আমরা সফল হয়েছি। একটা সময় ছিল যখন বিদেশ থেকে খেলনাও আসত, সেই দিনগুলো আমরা দেখেছি। আজ আমি গর্ব করে বলতে পারি আমার দেশের খেলনাগুলো তাদের সক্ষমতা দিয়ে বিশ্ববাজারে পৌঁছে যাচ্ছে। আমাদের খেলনা রপ্তানি হতে শুরু করেছে। একটা সময় ছিল যখন আমরা মোবাইল ফোন আমদানি করতাম, আজ মোবাইল ফোন উৎপাদনের একটি ইকোসিস্টেম তৈরি হয়েছে, একটি বিশাল হাব তৈরি হয়েছে এবং আজ আমরা বিশ্বে মোবাইল ফোন রপ্তানি শুরু করেছি। এটাই ভারতের শক্তি।
বন্ধুগণ,
আমাদের ভবিষ্যতের সঙ্গে সেমিকন্ডাক্টর জুড়েছে, আধুনিক প্রযুক্তি জুড়েছে, এআই জুড়েছে। আমরা সেমিকন্ডাক্টর মিশন নিয়ে কাজ শুরু করেছি এবং এক্ষেত্রে শস্তায় মেড ইন ইন্ডিয়া সরঞ্জাম উৎপাদনের চেষ্টা করছি। কেন আমার দেশের যুবকরা এই স্বপ্ন দেখবে না, প্রতিভা এখানে রয়েছে। এই ধরনের সমস্ত গবেষণার কাজ ভারতে হয়, তাই এখন উৎপাদন ভারতেই হবে। সেমিকন্ডাক্টরের কাজ ভারতেও করা হবে এবং এক্ষেত্রে বিশ্বকে ‘শুরু থেকে শেষ’ সমাধান প্রদানের ক্ষমতা আমাদের আছে।
বন্ধুগণ,
আমরা এক সময় দেখেছি, কিভাবে আমরা 2G এর জন্য লড়াই করতাম। আজ আমরা প্রতিটি ডিভাইসে এটি দেখতে পাচ্ছি, আমরা দ্রুত এগিয়েছি এবং যে গতিতে 5G সারা দেশে চালু হয়েছে। 5G ভারতের প্রায় সব এলাকায় পৌঁছেছে। ভারত আজ বিশ্বে দ্রুতগতিতে 5G চালু ক্রার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে, আমি তাদের বলেছি যে আমরা থামবো না, 5G তেই থেমে থাকা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা ইতিমধ্যেই মিশন মোডে 6G নিয়ে কাজ করছি এবং আমরা এক্ষেত্রেও বিশ্বে আমাদের সাফল্য সুনিশ্চিত করব। আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে একথা বলছি।
আমার প্রিয় বন্ধুগণ,
প্রতিরক্ষা খাতে এটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে যে প্রতিরক্ষা বাজেট যতই হোক, কেউ একবারও ভাবে না যে প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো হলে সেই টাকা কোথায় যায়? প্রতিরক্ষা বাজেট বিদেশ থেকে সরঞ্জাম কেনার জন্য ব্যয় করা হতো। এখন আমরা আত্মনির্ভরশীল হতে চাই এবং আমি আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই, তারা হাজার হাজার সরঞ্জামের তালিকা  তৈরি করেছে, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আমরা বিদেশ থেকে সেগুলি আনব না। জাতির জন্য বেঁচে থাকা মানে কী তা আমাদের সেনাসদস্যরা দেখিয়েছেন। এখন এর সুবাদে আমরা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হচ্ছি। আজ, প্রতিরক্ষা উত্পাদনে ভারতের পরিচয় তৈরি হয়েছে এবং আজ আমি আনন্দের সাথে বলতে পারি, যে দেশ একসময় প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিটি ছোট-বড় জিনিস বাইরে থেকে নিয়ে আসত, সেই দেশ আজ ধীরে ধীরে বিশ্বের অনেক দেশের জন্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি করছি। আমরা সেগুলো রপ্তানি শুরু করেছি। আমরা ধীরে ধীরে বিশ্বে ডিফেন্স হাব ম্যানুফ্যাকচারিং এর ক্ষেত্রে পরিচয় তৈরি করছি। আমরা এই উৎপাদন ক্ষেত্রকে উন্নত করতে চাই কারণ এটি কর্মসংস্থানের জন্য সবচাইতে বেশি প্রয়োজন। আজ PLI স্কিম ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। এফডিআই সংস্কার আমাদের অনেক শক্তি দিয়েছে। এমএসএমই একটি বিশাল উত্সাহ পেয়েছে। একটি নতুন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে এবং সেজন্যে আমরা বিশ্বের অন্যতম  উত্পাদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছি। যে দেশে এত যুবশক্তি আছে, যে দেশে এই সম্ভাবনা রয়েছে, আমরা ইন্ডাস্ট্রি 4.O-তে এমনকি উত্পাদন  জগতেও বড়ো শক্তি হিসেবে এগিয়ে যেতে চাই। আর এর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নের ওপরও আমরা জোর দিয়েছি। আর আমরা দক্ষতা উন্নয়নে নতুন মডেল স্থাপন করেছি। আমরা জনগণের অংশীদারীত্ব সুনিশ্চিত করেছি যাতে আমরা তাত্ক্ষণিক প্রয়োজন অনুযায়ী দক্ষতা উন্নয়ন করতে পারি। এবং আমি বিশ্বাস করি, তাই আমি লাল কেল্লার প্রাচীর থেকে বলছি যে, সেই দিন দূরে নয়, যেদিন ভারত শিল্প উত্পাদনের কেন্দ্র হইয়ে উঠবে, বিশ্ব সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে।
আজ বিশ্বের অনেক বড় কোম্পানি ভারতে বিনিয়োগ করতে চায়। আমি নির্বাচনের পর দেখেছি, আমার তৃতীয় মেয়াদে যারা আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই বিনিয়োগকারী। সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারী রয়েছেন, তাঁরা ভারতে এসে বিনিয়োগ করতে চান। এটি একটি বিশাল সুবর্ণ সুযোগ। আমি রাজ্য সরকারগুলিকে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য একটি স্পষ্ট নীতি নির্ধারণ করার আহ্বান জানাই। সুশাসনের নিশ্চয়তা দিন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে তাঁদের আশ্বাস দিন। প্রতিটি রাজ্যকে সুস্থ প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আসুন। বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য রাজ্যগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা হোক, যাতে বিনিয়োগকারীরা তাঁদের রাজ্যে আসেন এবং তাঁদের রাজ্যের যুবকরা স্থানীয়ভাবে সুযোগ পান, তাঁরা কর্মসংস্থানের সুযোগ পান।
যদি নীতিতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হয় তাহলে রাজ্যগুলিকে আন্তর্জাতিক প্রয়োজন অনুসারে নীতিগুলি পরিবর্তন করতে হবে। যদি জমির প্রয়োজন হয়, রাজ্যগুলির একটি ল্যান্ড ব্যাঙ্ক তৈরি করতে হবে। রাজ্যগুলি গুড গভর্নেন্স সিংগল পয়েন্ট –এ কাজ করার জন্য যত বেশি সক্রিয় হবে, তারা যত বেশি চেষ্টা করবে, যে বিনিয়োগকারীরা আসছেন তাঁরা কখনই ফিরে যাবেন না। এই কাজ ভারত সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। রাজ্য সরকারগুলির বড় ভূমিকা রয়েছে। কারণ যত প্রকল্প হবে, সব রাজ্যেই করতে হবে। তাদের প্রতিদিন প্রতিটি রাজ্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। এবং তাই আমি রাজ্যগুলিকে অনুরোধ করব যে যখন বিশ্ব পুরোপুরি ভারতের দিকে আকৃষ্ট হবে, সমগ্র বিশ্ব ভারতে বিনিয়োগ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে, তখন আমাদের দায়িত্ব হবে আমাদের পুরানো অভ্যাসগুলি ত্যাগ করা এবং একটি স্পষ্ট নীতি নিয়ে এগিয়ে আসা। দেখুন, আপনি আপনার রাজ্যে সুফল দেখতে পাবেন এবং আপনার রাজ্যও উজ্জ্বল হবে, আমি আপনাকে এই আশ্বাস দিচ্ছি।
বন্ধুগণ,
ভারতকে তা শ্রেষ্ঠ উৎকর্ষের জন্য যাতে চেনা যায়, তা অবশ্যই সুনিশ্চিত করতে হবে। এখন বিশ্বে ডিজাইনের ক্ষেত্রে  ‘ডিজাইন ইন ইন্ডিয়া’-  এই বিষয়ে আমাদের জোর দিতে হবে। ইন্ডিয়ান স্টান্ডার্ডকে আমাদের ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড-এ  পরিণত করতে হবে। ইন্ডিয়ান স্টান্ডার্ডকে আমাদের ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড-এ  পরিণত করতে পারলে আমাদের প্রত্যেকটা জিনিসে সহজেই  বিশ্বমানের ছাপ লেগে যাবে। আর সেটা আমাদের উৎপাদনের উৎকর্ষের ওপর নির্ভর করবে। আমাদের পরিষেবার উৎকর্ষের ওপর নির্ভর করবে। আমাদের অ্যাপ্রোচের উৎকর্ষের ওপর নির্ভর করবে। আর সেজন্য আগে  উৎকর্ষের ওপর জোর দিয়ে এগোতে হবে। আমাদের কাছে মেধা আছে। ডিজাইনের ক্ষেত্রে আমরা পৃথিবীকে অনেক কিছু নতুন দিতে পারি। ‘ডিজাইন ইন ইন্ডিয়া’-  এই আহ্বানকে নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ‘ডিজাইন ইন ইন্ডিয়া  অ্যান্ড ডিজাইন ফর ওয়ার্ল্ড’- এই স্বপ্নকে নিয়ে চলতে হবে। 
আমি দেখতে পাচ্ছি খেলনার জগতে বিরাট বড় বাজার অপেক্ষায় আছে। কিন্তু আজও বিশ্বে খেলনার প্রভাব, বিশেষত সেই খেলনাগুলি বানানোর লোকেরা একচেটিয়া ব্যবসা  করছেন,  যার অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ভারতের কাছে খেলনার বিরাট বড় ঐতিহ্য আছে। আমরা খেলনার জগতে অনেক নতুন মেধা  নিয়ে আসতে পারি। বিশ্বের সব শিশুদের আমরা আমাদের দেশে তৈরি খেলনার প্রতি আকর্ষিত করতে পারি। আমি চাই ভারতের বাচ্চারা, ভারতের নওজোয়ান, ভারতের আইটি প্রফেশনালরা  ভারতের এ আই প্রফেসনালরা উদ্ভাবনী খেলনার জগতে নেতৃত্ব দিন। খেলায় নয়, খেলনার জগতে আমাদের পণ্য গোটা পৃথিবীতে পৌঁছে দিতে হবে। আজ গোটা বিশ্বে আমাদের অ্যানিমেটররা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। অ্যানিমেশনের দুনিয়ায় আমরা যাতে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে পারি, আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। 
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ পৃথিবীতে বিশ্ব উষ্ণায়ণ, আবহাওয়া পরিবর্তন ইত্যাদি প্রত্যেক ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা বাড়ছে, আলোচনার বিষয় হয়ে আছে। ভারত এই বিষয়ে অনেকগুলি পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা বিশ্বকে আশ্বস্ত করে চলেছি, কথা দিয়ে নয়, কাজ দিয়ে, তার থেকে প্রাপ্ত পরিণাম দিয়ে আমরা পৃথিবীকে আশ্বস্ত করেছি আর পৃথিবীকে চমকে দিয়েছি। আমরাই সিংগল ইউজ প্লাস্টিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি, আমরা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি  ক্ষেত্রের বিস্তার করেছি, আমরা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি  ক্ষেত্রকে নতুন প্রাণশক্তি দিয়েছি। আগামী কয়েক বছরে আমরা ‘নেট জিরো’ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাব। আমার মনে আছে প্যারিস চুক্তিতে যে দেশগুলি নিজেদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত করেছিল। আজ লাল কেল্লার প্রাচীর থেকে বিশ্বকে আমার দেশবাসীর শক্তি বলতে চাই। জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত অন্য দেশগুলি যা করতে পারেনি, আমার দেশের নাগরিক তা করে দেখিয়েছে, আমার দেশবাসী করে দেখিয়েছে, ভারত করে দেখিয়েছে। প্যারিস চুক্তিতে আমরা যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম, সেই লক্ষ্যমাত্রা সময়ের আগে অর্জন করার ক্ষেত্রে জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে একমাত্র আমার ভারত এগিয়ে। আর, এজন্য গর্ব হয় বন্ধুগণ, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি  ক্ষেত্রের লক্ষ্যমাত্রা আমরা পূর্ণ করেছি। আমরা ২০৩০ পর্যন্ত পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি  ক্ষেত্রকে ৫০০ গিগাওয়াট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। আপনারা কল্পনা করতে পারেন, কত বড় লক্ষ্যমাত্রা এটা! বিশ্বের মানুষ কেবল ৫০০ গিগাওয়াট শব্দটা শোনে, আমাদের দিকে এমন ভাবে দেখে না। কিন্তু আজ বিশ্বাসের সঙ্গে দেশবাসীকে বলছি, এই লক্ষ্য আমরা সম্পূর্ণ করবই। আর এই সাফল্য মানবজাতির সেবা করবে, আমাদের ভবিষ্যতের সেবা করবে, আমাদের শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের গ্যারান্টি দেবে। আমরা ২০৩০ পর্যন্ত আমাদের রেলওয়ের ক্ষেত্রে নেট জিরো এমিশনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে চলেছি।
বন্ধুগণ,
‘পিএম সূর্যঘর মুফত বিজলি যোজনা’ একটি নতুন শক্তি জোগাচ্ছে আর এই পরিবর্তনের ফল আমার দেশের সধারণ পরিবারগুলি পাচ্ছে, বিশেষ করে মধ্যবিত্তরা পাবেন, যখন তাদের বিদ্যুতের বিল বিনামূল্যে হয়ে যাবে। বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের চাহিদা বাড়ছে। যখন ‘পিএম সূর্যঘর মুফত বিজলি যোজনা’র মাধ্যমে কেউ বিদ্যুৎ উতপাদন করেন, তখন তার গাড়ি নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার খরচও তো কমাতে পারেন।
বন্ধুরা, আমরা ‘গ্রিন হাইড্রোজেন মিশন’ নিয়ে একটি ‘গ্লোবাল হাব’ বানাতে চাই। খুব দ্রুত নীতিমালা তৈরি হয়েছে, খুব দ্রুত তার বাস্তবায়নের কাজ করা হচ্ছে, আর ভারত চলছে ‘গ্রিন হাইড্রোজেন’ এক নতুন শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে। আর এই সব প্রয়াস চলছে আবহাওয়া পরিবর্তন রুখতে, বিশ্ব উষ্ণায়ণকে ঠেকানোর চিন্তা মাথায় রেখে। কিন্তু এর মধ্যে গ্রিন জবস বা পরিবেশবান্ধব কর্মসংস্থানের খুব বড় সম্ভাবনা আছে। আর সেই কারণে আগামী দিনে পরিবেশবান্ধব কর্মসংস্থানের গুরুত্ব বাড়বে আর সবার আগে তাকে রপ্ত করার জন্য, আমার দেশের তরুণদের সুযোগ দেওয়ার জন্য, আর পরিবেশবান্ধব কর্মসংস্থানের জন্য, একটি খুব বড় ক্ষেত্রকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।    
আমার প্রিয় দেশবাসী, 
আজ আমাদের সঙ্গে এই ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকার নিচে সে যুবক-যুবতীরা বসে আছেন, যাঁরা অলিম্পিকের জগতে ভারতের পতাকা উড়িয়েছেন। আজ আমার দেশের সব অ্যাথলেটকে, দেশের সব খেলোয়াড়দের ১৪০ কোটি দেশবাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আর আমরা নতুন স্বপ্ন, নতুন শপথকে অত্যাধিক পৌরুষের সঙ্গে লক্ষ্যপ্রাপ্তির জন্য এগোবো, এই বিশ্বাস এর সঙ্গে আমি শুভকামনা জানাচ্ছি। আগামী দিনে ভারতের আরও বড় প্রতিনিধি দল প্যারালিম্পিকের জন্য প্যারিস যাবে বলে রওনা হবে। আমি সব প্যারালিম্পিক খেলোয়াড়দের হৃদয় থেকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি।
বন্ধুগণ , ভারত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করেছে, ভারতের অনেক শহরে আয়োজন করা হয়েছে। ২০০-র বেশি অনুষ্ঠান করেছে। গোটা পৃথিবীতে এত ব্যাপক, এত বড় কর্মসূচি কখনও হয়নি, এবার হয়েছে। এটা এক অর্থে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, ভারত বিরাট বড় কর্মসূচির আয়োজন করতে পারে। ভারতের, যে কোনও কাউকে আতিথেয়তা দেওয়ার ক্ষমতা সবথেকে বেশি। এটা যদি প্রমাণ হয়ে থাকে, তো বন্ধুরা, ভারতের স্বপ্ন হল ২০৩৬-এ যে অলিম্পিক হবে, সেটা আমাদের ভারতের মাটিতে হবে। এর জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি, এই লক্ষ্যে আমাদের আগে এগোতে হবে।
বন্ধুরা, 
সমাজের প্রান্তিক অংশে যত মানুষ আছেন, এটা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব, কেউ যদি পিছনে থেকে যান, তাহলে আমাদের সবার এগিয়ে যাওয়ার গতি কমে যায়। আর সেজন্য আমরা এগোতে চাইলেও সাফল্য তখনই আসে, যখন পিছিয়ে থাকা মানুষদের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে আনা হয়। আর সেজন্য আমাদের সবার দায়িত্ব হল, আমাদের সমাজে আজও যে সব ক্ষেত্র পিছনে পড়ে আছে, যে সমাজ পিছিয়ে রয়ে গেছে, যে লোকেরা পিছনে রয়ে গেছে, আমাদের ছোট ছোট কৃষক হোক, আমাদের জঙ্গলে বসবাসকারী আদিবাসী ভাই-বোন হোক, আমাদের মা বোনেরা হোক, আমাদের শ্রমিকরা হোক, আমাদের মজদুর সাথী হোক, আমাদের মেহনতি মানুষ হোক, সবাইকে এগিয়ে আনার জন্য, আমাদের সমকক্ষ করার জন্য, সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যদিও এই প্রক্রিয়া এখন এখন গতি পেয়ে গিয়েছে, কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের এটা করে যেতে হবে। তবেই খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা আমাদের কাছে পৌঁছে যাবেন, আমাদের সমানে সমানে চলে আসবেন। আমাদের শক্তি বেড়ে যাবে। আর, খুব সংবেদনশীল হয়ে আমাদের এই কাজ করতে হবে। আর, তার জন্য খুব বড় একটা সুযোগ আসছে।   
আমি মনে করি, সংবেদনশীলতার দৃষ্টি থেকে এর থেকে বড় সুযোগ আর কী হতে পারে। আমরা জানি ১৮৫৭-র স্বাধীনতা সংগ্রামের আগেও ইংরেজের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিল আমাদের দেশের এক আদিবাসী যুবক। মাত্র ২০ - ২২ বছর বয়সে ইংরেজের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিল, যাকে আজ ভগবান বিরসা মুণ্ডা রূপে মানুষ পুজো করে। ভগবান বিরসা মুণ্ডার ১৫০ তম জন্মজয়ন্তী আসছে। এটা আমাদের সবার জন্য প্রেরণার কারণ হবে। সমাজের প্রত্যেক ছোট ব্যাক্তিও দেশের জন্য এই আবেগ রাখেন যে, তার জন্য ভগবান বিরসা মুণ্ডার থেকে বেশি প্রেরণাদায়ক আর কে হবেন! আসুন, আমরা যখন বিরসা মুণ্ডার ১৫০ তম জন্মজয়ন্তী পালন করব, তখন আমাদের সহনশীলতার ব্যাপকতা বাড়ুক। সমাজের প্রতি আমাদের মনোভাব বাড়ুক। আমাদের সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে, গরিবদের, দলিতদের, পশ্চাদপদদের, আদিবাসীদের, প্রত্যেককে আমরা আমাদের সঙ্গে নিয়ে চলি। এই সংকল্প নিয়ে আমাদের চলতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, 
আমরা সংকল্প নিয়ে তো এগোচ্ছি, খুব আগে এগোচ্ছি, কিন্তু এটাও সত্য যে, কিছু মানুষ আছেন, যারা প্রগতিকে দেখতে পারেন না। কিছু মানুষ আছেন, যারা ভারতের ভালো ভাবতেও পারেন না। এমন বিকৃত মানসিকতার মানুষের কখনও অভাব হয় না। এমন লোকেদের থেকে দেশকে বাঁচতে হবে। এরা নিরাশার গর্তে ডুবে যাওয়া মানুষজন। এরা একমুঠো নিরাশার গর্তে ডুবে থাকা লোক। যখন এদের কোলে বিকৃতি প্রতিপালিত হয়, তখন এরা বিনাশের কারণ হয়ে পড়েন। সর্বনাশের কারণ হয়ে যান, বিশৃঙ্খলার পথ বেছে নেন, আর তখন দেশের বড় ক্ষতি হয়, যা পূরণ করার জন্য আমাদের নতুন করে পরিশ্রম করতে হয়। সেজন্য বিচ্ছিন্ন ভাবে নিরাশাবাদী শক্তি আছে, তারা যে শুধুই নিরাশ তা নয়, তাদের কোলে বিকৃতি পালিত হচ্ছে। এই বিকৃতি বিনাশের, সর্বনাশের স্বপ্ন দেখছে। দেশকে অস্থিরতার দিকে টানা- পোড়েন সৃষ্টির চেষ্টায় আছে। দেশকে এটা বুঝতে হবে। কিন্তু আমি দেশবাসীদের বলব, আমরা আমাদের শুভ চিন্তা নিয়ে, আমাদের সততার সঙ্গে, রাষ্ট্রের প্রতি সমর্পণভাব নিয়ে, আমরা যাবতীয় প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও বিপরীত দিকে চলমান ব্যক্তিদেরও হৃদয় জয় করে,  দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সংকল্প থেকে কখনও পিছনে হটে যাব না। এই বিশ্বাসও আপনাদের দিতে চাই।     
সাথীরা,
চালেঞ্জ আছে। অগুন্তি চ্যালেঞ্জ আছে। চ্যালেঞ্জ ভিতরেও আছে, চ্যালেঞ্জ বাইরেও আছে। আর যেমন যেমন ভাবে আমরা শক্তিধর হব, যেমন যেমন আমাদের মনোবল বাড়বে, চ্যালেঞ্জও বাড়তে থাকবে। বাইরের থেকে চ্যালেঞ্জ বাড়তে চলেছে, আর সেটা আমাদের ভালো মতই আন্দাজ আছে। আমি এসব শক্তিকে বলতে চাই, ভারতের উন্নয়ন কারও জন্য সঙ্কট নিয়ে আসছে না। আমরা যখন বিশ্বে সমৃদ্ধ ছিলাম, তখনও আমরা কখনও যুদ্ধের দিকে ঝুঁকিনি। আমরা বুদ্ধের দেশ, যুদ্ধ আমাদের পথ নয়। আর সেজন্য বিশ্বের চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই। ভারতের অগ্রগতিতে আমি বিশ্বের জনসাধারণকে এই আশ্বাস দিচ্ছি, আপনারা ভারতের সরকারকে বুঝুন, ভারতের হাজার বছরের ইতিহাসকে বুঝুন। আপনারা আমাদেরকে সঙ্কট বলে ভাববেন না। আপনারা সেই কৌশলের সঙ্গে জুড়বেন না, যার কারণে গোটা মানবজাতির কল্যাণ সাধনের ক্ষমতা আছে যে ভূমির, সেই ভূমিকে বেশি মেহনত করতে হয়।  কিন্তু আমি আবার দেশবাসীকে বলতে চাই যে, চ্যালেঞ্জ যত বড়ই হোক, চ্যালেঞ্জকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা ভারতের প্রকৃতিতে আছে। আমরা নড়ে যাব না, আমরা ক্লান্তও হব না, আমরা থামবোও না, ঝুঁকবোও না। আমাদের সংকল্প সাধনের জন্য, ১৪০ কোটি দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য, সৌভাগ্য নিশ্চিত করার জন্য, রাষ্ট্রের স্বপ্ন সার্থক করার জন্য, আমরা কোনও কিছুই বাদ দেব না। প্রত্যেক কুদৃষ্টির বিরুদ্ধে আমাদের শুভচিন্তার মাধ্যমে জয়ী হব, এটা আমার পূর্ণ বিশ্বাস। 
আমার প্রিয় দেশবাসী, 
সমাজের মানসিকতায় পরিবর্তনও কখনও কখনও অনেক বড় চ্যালেঞ্জের কারণ হয়ে যায়। আমাদের প্রত্যেক দেশবাসী দুর্নীতির ঘূণপোকার কারণে ব্যতিব্যস্ত। প্রত্যেক স্তরে দুর্নীতি সাধারণ মানবিক ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাসকে ভেঙে দিয়েছে। তার নিজের যোগ্যতা, ক্ষমতার প্রতি যে অন্যায়ের জন্য রাগ হয়, তা দেশের প্রগতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। আর, এই কারণে আমি ব্যাপক ভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। আমি জানি, এর জন্য আমায় মূল্য দিতে হচ্ছে, আমার ভাবমূর্তির ক্ষতি হচ্ছে, কিন্তু দেশের থেকে আমার ভাবমূর্তি বড় হতে পারে না। দেশের স্বপ্নের চেয়ে আমার স্বপ্ন বড় হতে পারে না। আর সেজন্যই সততার সঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার লড়াই চলতে থাকবে। তীব্র গতিতে চালু থাকবে আর দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ অবশ্যই নেওয়া হবে। আমি দুর্নীতিগ্রস্তদের জন্য ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে চাই। দেশের সাধারণ নাগরিকদের লুটের যে পরম্পরা রয়েছে, সেই পরম্পরা আমাকে রুখতেই হবে।
কিন্তু সবথেকে বড় নতুন চ্যালেঞ্জ এসেছে। দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে লড়তে তো হবেই, কিন্তু সমাজ জীবনে উচ্চস্তরে যে পরিবর্তন এসেছে, সেটা সব থেকে বড় চ্যলেঞ্জও আবার সমাজের জন্য সব থেকে বেশি চিন্তারও। কেউ কল্পনা করতে পারবেন আমারই দেশে, এত মহান একটি সংবিধান আমাদের কাছে থাকা সত্ত্বেও, কিছু এমন লোক আছেন, যারা দুর্নীতিকে মহিমান্বিত করছেন। প্রকাশ্যে দুর্নীতির গুণগান করছেন। সমাজে এই রকম বীজ বপনের যে প্রচেষ্টা চলছে, দুর্নীতিকে মহিমান্বিত করা হচ্ছে, দুর্নীতিগ্রস্তদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর যে নিরন্তর প্রয়াস চলছে, তা সুস্থ সমাজের জন্য খুব বড় চিন্তার বিষয় হয়ে গিয়েছে। বিরাট বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্তদের প্রতি সমাজে দূরত্ব বজায় রাখলেই কোনও দুর্নীতিগ্রস্ত সেই রাস্তায় যাওয়ার প্রশ্নে ভয় পাবে। যদি তার সমালোচনা হতো, তাহলে আজ সে দুর্নীতি করতো না। তারও মনে ভয় থাকত, এভাবে সমাজে ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার পথ রঙিন হয়ে উঠত। এই রাস্তায় যাওয়া খারাপ হতো না।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
বাংলাদেশে যা কিছু হয়েছে, সেজন্য প্রতিবেশি দেশ হিসেবে চিন্তা হয়। আমি সেটা বুঝতে পারি। আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বিশেষত ১৪০ কোটি দেশবাসীর চিন্তা হল, সেখানে হিন্দু, সে দেশের সংখ্যালঘু, সেই সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হোক। ভারত সর্বদা চায়, প্রতিবেশি দেশ সুখ শান্তির পথে চলুক। শান্তির প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে, আমাদের সরকারের আছে। আগামী দিনেও বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় সর্বদা আমাদের শুভেচ্ছা থাকবে, কারণ মানবজাতিই শুভ চিন্তক হয়ে থাকে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, 
আমাদের সংবিধানের ৭৫ বছর হতে চলেছে। ভারতের সংবিধানের ৭৫ বছরের যাত্রা, দেশকে একসঙ্গে রাখায়, দেশকে শ্রেষ্ঠ করে তোলায় খুব বড় ভূমিকা রেখেছে। ভারতের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করায় আমাদের দেশের সংবিধানের বিরাট বড় ভূমিকা থেকেছে। আমাদের দেশে দলিত, পীড়িত, শোষিত, বঞ্চিতদের সুরক্ষা দেওয়ায় বড় কাজ আমাদের সংবিধান করেছে। এখন যখন সংবিধানের ৭৫ বছর আমরা পালন করতে চলেছি, তখন আমাদের দেশবাসীদের সংবিধানে নির্দিষ্ট কর্তব্যের ভাবনাকে শক্তি দেওয়া খুব জরুরি। আর যখন আমি কর্তব্যের কথা বলি, তখন শুধু নাগরিকদের উপর বোঝা চাপাতে চাই না। কর্তব্য কেন্দ্রের সরকারেরও আছে। কর্তব্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যেক কর্মচারীর আছে। কর্তব্য প্রত্যেক রাজ্য ও স্থানীয় সংস্থার আছে – তা সে পঞ্চায়েত হোক, পুরসভা হোক, নগর নিগম হোক, ব্লক স্তর হোক, জেলা হোক, প্রত্যেকের কর্তব্য। কিন্তু সেই সঙ্গে সঙ্গে ১৪০ কোটি দেশবাসীরও কর্তব্য। আমরা যদি সবাই মিলে নিজের কর্তব্য পালন করি, তাহলে আমরা নিজেরাই অপরের অধিকারের রক্ষা করার কারণ হতে পারি। আর যখন কর্তব্য পালন করা হবে, তখন অধিকারের সুরক্ষাও নিশ্চিত হয়ে যাবে। তার জন্য আলাদা উদ্যোগ নেওয়ার দরকারই পড়বে না। আমি চাই, আমাদের এই ভাবনা নিয়েই আমরা চলি। আমাদের গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। আমাদের ক্ষমতা আরও বাড়বে, আমরা এক নতুন শক্তির সঙ্গে এগিয়ে চলব।
আমার প্রিয় দেশবাসী, 
আমাদের দেশের সুপ্রিম কোর্টে এ বার বার ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনেক বার প্রাসঙ্গিক আদেশ দিয়েছে। কারণ, দেশের একটা খুব বড় অংশ মনে করেন, আর তাতে সত্যতাও আছে যে, যে অসামরিক আইন নিয়ে আমরা বেঁচে আছি, সেই সিভিল কোড বাস্তবে এক ধরণের সাম্প্রদায়িক সিভিল কোড, বিভাজন করার অসামরিক আইন। এই সাম্প্রদায়িক সিভিল কোড, যখন দেশে সংবিধানের ৭৫ তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে আর সংবিধানের ভাবনা আমাদের যা করার কথা বলে, দেশের সুপ্রিম কোর্টও আমাদেরকে তা করার কথা বলছে, আর এক্ষেত্রে সংবিধান রচয়িতাদের যে স্বপ্ন ছিল, তাকে সার্থক করার জন্য, আমাদের সবার দায়িত্ব আছে। আর আমি মনে করি, এই বিষয়ে দেশজুড়ে আলোচনা হোক, প্রচুর আলোচনা হোক। প্রত্যেকে নিজেদের ভাবনা নিয়ে আসুন। আর যে আইনগুলি ধর্মের ভিত্তিতে দেশকে বিভক্ত করে, যা উঁচু নিচুর কারণ হয়, এমন আইনগুলির আধুনিক সমাজে কোনও স্থান থাকতে পারে না। সেজন্যে আমি বলব, এখন দেশের দাবি, দেশে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সিভিল কোড চালু হোক। আমরা সাম্প্রদায়িক সিভিল কোড নিয়ে ৭৫ বছর কাটিয়েছি। এখন ধর্মনিরপেক্ষ সিভিল কোড -এর দিকে যেতে হবে। তবেই গিয়ে দেশে ধর্মের ভিত্তিতে যে বৈষম্য আছে, সাধারণ নাগরিক পরস্পরের থেকে যে দূরত্ব অনুভব করেন, তার থেকে আমরা মুক্তি পাব। 
আমার প্রিয় দেশবাসী,
যখন দেশের একটা বিষয় নিয়ে খুব চিন্তা হয়, পরিবারবাদ, জাতিবাদ, ভারতের গণতন্ত্রের খুব ক্ষতি করছে। দেশকে, রাজনীতিকে আমাদের পরিবারবাদ এবং জাতিবাদ থেকে মুক্ত করতে হবে। আজ আমি, আমি দেখছি আমার সামনে যে সব যুবকরা আছেন, তাদের গায়ে লেখা ‘মাই ভারত’। এটি যে সংগঠনের নাম, তার বিষয়ে লেখা আছে। খুব ভাল করে লেখা আছে। ‘মাই ভারত’-এর অনেক মিশন আছে। একটা মিশন হল যাতে দ্রুত দেশের রাজনৈতিক জীবনে জনপ্রতিনিধি হিসেবে এক লক্ষ এমন যুবককে সামনে আনা, শুরুতে এমন এক লক্ষ যুবককে সামনে আনা, যাদের পরিবারের কারও কোনও রাজনৈতিক প্রেক্ষিত নেই। যাদের মা-বাবা, ভাই-বোন, কাকা, মামা-মামী কখনই রাজনীতিতে ছিলেন না। কোনও প্রজন্মেই ছিলেন না, এমন প্রতিশ্রুতিবান এক লক্ষ তরুণদের ‘ফ্রেশ ব্লাড’, সে তারা পঞ্চায়েতে হোক, পুরসভায় হোক, জেলা পরিষদে হোক, বিধানসভা বা লোকসভায় জনপ্রতিনিধি হওয়ার উপযুক্ত করে তোলা। এক লক্ষ নতুন তরুণ, যাদের আগের পরিবারের কোনও প্রকার রাজনৈতিক ইতিহাস  নেই, এমন পরিবারের ছেলেমেয়েরা রাজনীতিতে আসুক, যাতে জাতিবাদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, পরিবারবাদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, গণতন্ত্র সমৃদ্ধ হয়। জরুরি নয় যে, তাঁরা একই দলে যাবেন। তাঁদের যেমন পছন্দ, তেমন দলে যান। সেই দল থেকে জনপ্রতিনিধি হয়ে আসুন।
দেশ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে চলুক যে, আগামী দিনে এমন এক লক্ষ যুবক, যাদের পরিবারের সঙ্গে রাজনীতির দূরদূরান্তের কোনও সম্পর্ক নেই, এমন ‘ফ্রেশ ব্লাড’ এলে, নতুন চিন্তাধারা আসবে, নতুন ক্ষমতাও আসবে। গণতন্ত্র সমৃদ্ধ হবে এবং সেজন্য আমাদের এই পথে এগোতে হবে। আমরা জানি, দেশে বার বার নির্বাচন দেশের অগ্রগতিতে বাধার সৃষ্টি করছে, গতি রোধ করছে। এখন যে কোনও পরিকল্পনাকেই নির্বাচনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া সহজ হয়ে গেছে। কারণ, প্রত্যেক তিন মাসে, ছয় মাসে কোথাও না কোথাও নির্বাচন হচ্ছেই। যে কোনও প্রকল্প আপনি প্রকাশ করলেই মিডিয়াতে দেখবেন ভোট এসেছে তো এটা হয়েছে, সেটা হয়েছে। সব কাজকেই ভোটের রঙে রাঙিয়ে দেওয়া হয়। আর এই জন্যই দেশে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। সব রাজনৈতিক দলই নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছে। একটা কমিটি খুব ভাল একটা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ এর জন্য দেশকে এগিয়ে আসতে হবে। আমি লাল কেল্লা থেকে ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকাকে সাক্ষী রেখে দেশের রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুরোধ করছি, দেশের সংবিধান যারা বোঝেন তাঁদেরকে অনুরোধ করছি, ভারতের প্রগতির জন্য, ভারতের সম্পদের সর্বাধিক ব্যবহার যাতে সাধারণের জন্য হয় তার জন্য ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ এর স্বপ্নকে সার্থক করতে সবাই এগিয়ে আসুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
ভারতের সোনালি ভবিষ্যৎ ২০৪৭, বিকশিত ভারত আমাদের প্রতীক্ষা করছে। বাধা, বিঘ্ন, চ্যালেঞ্জগুলি পরাস্ত করে একটি দৃঢ়সংকল্পের সঙ্গে এই দেশ চালাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর বন্ধুরা, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, আমার ভাবনায় কোনও দ্বিধা নেই। আমার স্বপ্নের সামনে কোনও পর্দা নেই। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, দেশ ১৪০ কোটি দেশবাসীর পরিশ্রমের মাধ্যমে এটা সম্ভব। আমাদের পূর্বজদের রক্ত আমাদের শরীরে রয়েছে। যদি সেই ৪০ কোটি মানুষ ভারতের স্বাধীনতার স্বপ্নকে পূর্ণ করতে পারেন, তাহলে ১৪০ কোটি দেশবাসীর সমৃদ্ধ ভারতের স্বপ্ন সার্থক করতে পারবো। আর আমি আগেও বলেছি যে, আমার তৃতীয় শাসন কালেই দেশ বিশ্বে তৃতীয় সমৃদ্ধতম অর্থনীতির দেশে পরিণত তো হবে, আর আমি তিনগুণ কাজ করব, তিনগুণ দ্রুততায় কাজ করব, তিনগুণ ব্যপকতার সঙ্গে কাজ করব, যাতে দেশের জন্য যে স্বপ্ন আছে, যার বাস্তবায়ণ খুব কাছেই আছে, তা পূর্ণ হোক। আমার প্রতিটা মুহূর্ত দেশের জন্য, আমার প্রতিটা ক্ষণ দেশের জন্য। আমার শরীরের প্রত্যেক অনু ভারত মাতার জন্য। আর সেজন্য, ২৪x৭ আর ২০৪৭ - এই শপথের সঙ্গে আমি দেশবাসীকে আহ্বান করছি যে, আসুন, আমাদের পূর্বজরা যে স্বপ্নগুলিকে দেখেছেন, সেই স্বপ্নগুলি আমরা সংকল্প বানাই, নিজেদের স্বপ্নের সঙ্গে জুড়ি, নিজের পৌরুষের সঙ্গে জুড়ি আর ২১ শতক, যা ভারতের শতক, সেই শতকেই সোনালি ভারত বানিয়েই থামি। 
এই শতককেই বিকশিত ভারত করে গড়ে তুলি, সেই স্বপ্নগুলি পুরো করতে এগিয়ে যাই। স্বাধীন ভারত তাঁর ৭৫ বছরের যাত্রার পর এক নতুন গন্তব্যে এগিয়ে চলেছে। আমরা যেন কোনও সুযোগ না ছাড়ি। আমি আপনাদের বিশ্বাস দিতে চাই, আপনারা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি কোনও সুযোগ ছাড়ব না। পরিশ্রম করায় আমি পিছনে থাকব না। সাহসের প্রশ্নে আমি কখনও কাতর হই না, চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় কখনও ভয় পাই না। কেন? কারণ আমি আপনাদের জন্য বাঁচি। আপনাদের ভবিষ্যতের জন্য বাঁচি। আমি ভারতমাতার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য বেঁচে আছি। আর, এই স্বপ্নগুলি পূর্ণ করার জন্য আজ জাতীয় পতাকার ছায়ায়, ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকার ছায়ায়, দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে আমরা এগিয়ে যাব। 
আপনারা সবাই আমার সঙ্গে গলা মেলান
ভারত মাতার জয়
ভারত মাতার জয়
ভারত মাতার জয়
বন্দে মাতরম
বন্দে মাতরম
বন্দে মাতরম
বন্দে মাতরম
জয় হিন্দ
জয় হিন্দ
জয় হিন্দ

 

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
Indian professionals flagbearers in global technological adaptation: Report

Media Coverage

Indian professionals flagbearers in global technological adaptation: Report
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
PM congratulates Indian contingent for their historic performance at the 10th Asia Pacific Deaf Games 2024
December 10, 2024

The Prime Minister Shri Narendra Modi today congratulated the Indian contingent for a historic performance at the 10th Asia Pacific Deaf Games 2024 held in Kuala Lumpur.

He wrote in a post on X:

“Congratulations to our Indian contingent for a historic performance at the 10th Asia Pacific Deaf Games 2024 held in Kuala Lumpur! Our talented athletes have brought immense pride to our nation by winning an extraordinary 55 medals, making it India's best ever performance at the games. This remarkable feat has motivated the entire nation, especially those passionate about sports.”