
মাননীয় প্রতিনিধিবর্গ, সমবেত বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, মহাকাশচারী এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বন্ধুগণ।
নমস্কার!
বিশ্ব মহাকাশ অভিযান সম্মেলন ২০২৫ – এ আপনাদের মুখোমুখী হতে পেরে আনন্দিত। মহাকাশ শুধুমাত্র একটি গন্তব্য নয়। ঔৎসুক্য, সাহসিকতা এবং সম্মিলিত অগ্রগতির এক অভিন্ন পরিসর এই ক্ষেত্রটি। ভারতের মহাকাশ যাত্রায় এই আদর্শই প্রতিফলিত। ১৯৬৩ সালে একটি ছোট্ট রকেট উৎক্ষেপণের পর ক্রমে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছনোর কৃতিত্ব অর্জনকারী প্রথম দেশ হয়ে উঠেছে ভারত। আমাদের রকেট নিছক কিছু সরঞ্জামই নয়, ১৪০ কোটি ভারতবাসীর স্বপ্নকেও বহন করে নিয়ে যায়। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নানা মাইলফলক স্পর্শ করায় ভারতের সাফল্য সুবিদিত। এরই সঙ্গে এই দক্ষতা মানবাত্মার অদম্য স্পৃহাকেও তুলে ধরে। ২০১৪’য় প্রথমবারের চেষ্টাতেই মঙ্গলগ্রহে পৌঁছনোর গৌরব অর্জন করেছে ভারত। চন্দ্রযান-১ চাঁদের মাটিতে জলের সন্ধান পেতে সহায়ক হয়েছে। চন্দ্রযান-২ চাঁদের স্পষ্টতম ছবি পৌঁছে দিয়েছে আমাদের কাছে। চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরু সম্পর্কে আমাদের আরও ভালোভাবে অবহিত করেছে। রেকর্ড সময়ে ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন তৈরি করেছি আমরা। একটি মাত্র উৎক্ষেপণে ১০০টি উপগ্রহকে আমরা বহির্বিশ্বে পাঠিয়েছি। আমাদের উৎক্ষেপণ যানে সওয়ার হয়ে ৩৪টি দেশের ৪০০টিরও বেশি উপগ্রহ মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে। এই বছর আমরা মহাকাশে ২টি উপগ্রহকে সংযুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি, যা এক বিরাট সাফল্য।
বন্ধুগণ,
ভারতের মহাকাশ যাত্রা কেবলমাত্র অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়, তা উচ্চ থেকে উচ্চতর গন্তব্যে পৌঁছনোর লক্ষ্যে উৎসর্গীকৃত। আজ মানব সভ্যতার কল্যাণের অভিন্ন আদর্শে আমরা ব্রতী। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির হয়ে আমরা একটি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছি। জি-২০’র সভাপতিত্বের সময় আমরা জি-২০ উপগ্রহ অভিযানের যে ঘোষণা করেছি, তা হয়ে উঠবে দক্ষিণী বিশ্বের জন্য এক অনন্য উপহার। আমরা এগিয়ে চলেছি নতুন প্রত্যয়ের সঙ্গে, অতিক্রম করে চলেছি বৈজ্ঞানিক অভিযানের একের পর এক মাইলফলক। এই দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে আরও তুলে ধরবে আমাদের প্রথম মানববাহী উপগ্রহ ‘গগনযান’। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ভারতের একজন মহাকাশচারী ইসরো – নাসা কর্মসূচির আওতায় আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে পৌঁছে যাবেন। ২০৩৫ সাল নাগাদ চালু হয়ে যাবে ভারতীয় অন্তরীক্ষ কেন্দ্র, যা গবেষণা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন এক দিগন্ত খুলে দেবে। ২০৪০ সাল নাগাদ ভারতীয় নাগরিকের পদচিহ্ন আঁকা হয়ে যাবে চাঁদের বুকে। মঙ্গল ও শুক্র গ্রহ নিয়েও বিশেষভাবে চিন্তাভাবনা করছি আমরা।
বন্ধুগণ,
ভারতের কাছে মহাকাশ ক্ষেত্রটি একইসঙ্গে অভিযানের ও ক্ষমতায়নের। এ সংক্রান্ত কর্মসূচি প্রশাসনকে শক্তিশালী করে, জীবিকার সুযোগ বাড়ায় এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মকে প্রেরণা দেয়। মৎস্যজীবীদের জন্য সতর্কতা থেকে গতিশক্তি মঞ্চ, রেল নিরাপত্তা থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস – সবক্ষেত্রেই আমাদের উপগ্রহগুলি প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের কল্যাণে কাজ করে চলেছে। মহাকাশ ক্ষেত্রকে আমরা স্টার্টআপ এবং তরুণ উদ্যোগপতিদের সামনে খুলে দিয়েছি। আজ ভারতে মহাকাশ ক্ষেত্রে কাজ করছে ২৫০টিরও বেশি স্টার্টআপ। উপগ্রহ প্রযুক্তি, ইমেজিং সহ নানা বিষয়ে অত্যাধুনিক প্রণালীর সন্ধান দিচ্ছে এইসব সংস্থা। আরও আনন্দের কথা হ’ল যে, আমাদের বহু কর্মসূচিরই নেতৃত্বে রয়েছেন মহিলারা।
বন্ধুগণ,
মহাকাশ অভিযানের বিষয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গী ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্’ অর্থাৎ সারা বিশ্ব একই পরিবার – এই মন্ত্রের উপর আধারিত। আমরা কেবলমাত্র নিজের উন্নতিতেই ক্ষান্ত নয়, উন্নত করতে চাই সারা বিশ্বের জ্ঞান ভান্ডারকে। সকলের সামনে থাকা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা এবং পরবর্তী প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। একইসঙ্গে স্বপ্ন দেখা, নির্মাণ করা এবং দূর নক্ষত্র মণ্ডলীতে পৌঁছে যাওয়ার কথা বলি আমরা। বিজ্ঞানের পথে এগিয়ে উন্নতর ভবিষ্যৎ গঠনে অভিন্ন স্বপ্নকে পাথেয় করে নতুন এক অধ্যায়ের রচনায় কাজ শুরু করা যাক। ভারতে সফল ও মনোরম সফরের জন্য আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানাই।
ধন্যবাদ।