


মাননীয় ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিনিধিগণ, নমস্কার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সমাবেশের ৭৮তম অধিবেশনে প্রত্যেককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ,
এ বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সমাবেশের বিষয় হ’ল – ‘স্বাস্থ্যের জন্য এক পৃথিবী’। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য নিয়ে ভারতের ভাবধারাই ধ্বনিত হয়েছে। ২০২৩ সালে এই সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে আমি বলেছিলাম, ‘এক পৃথিবী, এক স্বাস্থ্য’। স্বাস্থ্যকর বিশ্বের ভবিষ্যৎ নিহিত রয়েছে অন্তর্ভুক্তি, সম্মিলিত দৃষ্টি ও সহযোগিতার উপর।
বন্ধুগণ,
ভারতের স্বাস্থ্য সংস্কারের মূলে রয়েছে অন্তর্ভুক্তি। আমরা আয়ুষ্মান ভারত চালু করেছি, যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প। এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ৫৮ কোটি ভারতবাসী, যাঁরা নিখরচায় চিকিৎসা পান। এই কর্মসূচিতে সব ভারতবাসীকে যুক্ত করতে সম্প্রতি ৭০ বছর বেশি মানুষদেরও এর আওতায় আনা হয়েছে। এই পরিষেবা প্রদানে আমাদের হাজার হাজার স্বাস্থ্য ও কল্যাণ কেন্দ্রের নেটওয়ার্ক রয়েছে। তারা ক্যান্সার, মধুমেহ, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি রোগ নির্ণয় করে। হাজার হাজার জন-ঔষধি কেন্দ্র থেকে উচ্চ গুণমানসম্পন্ন ওষুধ বাজার মূল্যের থেকে অনেক কম দামে পাওয়া যায়।
বন্ধুগণ,
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের উন্নতিতে প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের টিকাকরণের উপর নজর রাখতে আমাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। সহস্র মানুষের অভিন্ন ডিজিটাল স্বাস্থ্য পরিচয়পত্র রয়েছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধা প্রদান, বীমা, তথ্য সামগ্রী সংগ্রহের সংস্থান রয়েছে। টেলিমেডিসিনের ফলে চিকিৎসকের থেকে কেউ আর নেই দূরে নেই। আমাদের নিখরচায় টেলিমেডিসিন পরিষেবায় ৩৪ কোটিরও বেশি পরামর্শ প্রদান সম্ভব হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আমাদের এই উদ্যোগের মাধ্যমে অত্যন্ত আনন্দদায়ক উন্নতি সাধন সম্ভব হয়েছে। সামগ্রিক স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে জনসাধারণের হিসেব বহির্ভূত খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। ঠিক একইভাবে, স্বাস্থ্য খাতে সরকারি খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বন্ধুগণ,
বিশ্বের স্বাস্থ্য নির্ভর করে সর্বাপেক্ষা অসহায়ের প্রতি আমরা কতটা যত্নশীল হচ্ছি তার উপর। স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে গ্লোবাল সাউথ বিশেষভাবে প্রভাবিত। ভারতের এই অভিমুখ অনুকরণযোগ্য, পরিমাপযোগ্য এবং সুস্থায়ী মডেল হিসেবে স্বীকৃত। আমাদের জ্ঞানকে বিশ্বের প্রকৃষ্ট ব্যবস্থার সঙ্গে, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথ – এর সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারলে খুশি হব।
বন্ধুগণ,
জুন মাসে একাদশ আন্তর্জাতিক যোগ দিবস আসন্ন। এ বছরের বিষয় হ’ল – ‘এক পৃথিবী, এক বিশ্বের জন্য যোগ’। বিশ্বকে যে দেশ যোগের পথ দেখিয়েছে, সেই দেশের তরফ থেকে আমি সারা বিশ্বকে এতে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
আমি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে আইএনবি চুক্তি সফল সম্পাদনের জন্য অভিনন্দন জানাই। ভবিষ্যৎ মহামারী মোকাবিলায় বৃহত্তর সহযোগ গড়ে তুলতে এটা এক সম্মিলিত দায়বদ্ধতা। স্বাস্থ্যকর পৃথিবী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে কেউ যেন পিছিয়ে না থাকেন। বেদের চিরন্তন প্রার্থনার মাধ্যে দিয়েই আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি এই বলে - सर्वे भवन्तु सुखिनः सर्वे सन्तु निरामयाः। सर्वे भद्राणि पश्यन्तु मा कश्चिद् दुःखभाग्भवेत्॥ হাজার হাজার বছর পূর্বে আমাদের ঋষিরা প্রার্থনা করে গেছেন, সকলে যাতে সুস্থ, সুখী ও রোগমুক্ত থাকেন। এই দৃষ্টিভঙ্গী বিশ্বকে একসূত্রে বাঁধুক।
ধন্যবাদ!