বন্ধুগণ, কেভাডিয়া-তে সর্দার সরোবর বাঁধের পাশে স্ট্যাচু অফ ইউনিটি-র সান্নিধ্যে আজ বিকেলের এই অভিজ্ঞতা অতুলনীয়। সারা জীবন মনে রাখার মতো। একটু আগেই আমরা সর্দার সাহেবের কন্ঠস্বর ও বার্তা আমরা শুনেছি, যা সরাসরি অন্তরস্পর্শী।

বন্ধুগণ, দেশের বিভিন্ন সিভিল সার্ভিসেসের এই কম্বাইন্ড ফাউন্ডেশন কোর্স একটি নতুন অধ্যায়ের সূত্রপাত। এতদিন পর্যন্ত অনেকে মুসৌরি’তে প্রশিক্ষণ নিতেন, অনেকে হায়দরাবাদে কিংবা অন্যান্য শহরে। আমি আগেও বলেছি – যে অসংহতির কথা আমি প্রায়ই বলি, তার সূত্রপাত ঐ প্রশিক্ষণ থেকেই শুরু হয়ে যেত। সিভিল সার্ভিসেস – এর সংহত রূপ প্রকৃত অর্থে আপনাদের দিয়েই শুরু হচ্ছে। এই সূত্রপাত নিজেই একটি সংস্কার-স্বরূপ। আমি এর সঙ্গে যুক্ত সমস্ত আধিকারিক ও বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাই।

বন্ধুগণ, এই সংস্কার শুধুই প্রশিক্ষণের সংহতির মাধ্যমে সীমাবদ্ধ নয়, একে ভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গীর ক্ষেত্রেও প্রসারিত করা হয়েছে। আপনাদের মতো যুবক-যুবতীরা যাতে নিজেদের যথাযথভাবে প্রকাশের সুযোগ পান, সেই চেষ্টা করা হয়েছে। সেজন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত বিশ্বনেতা ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আপনাদের কথোপকথনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বন্ধুগণ, স্ট্যাচু অফ ইউনিটির ছত্রছায়ায় অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচির একটি বিশেষ গুরুত্ব হ’ল – যেহেতু সমস্ত সিভিল সার্ভিসকে দেশ গঠনে এবং রাষ্ট্রীয় একতার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম করে তোলার ভাবনা ছিল স্বয়ং সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের এবং নিজের এই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে তিনি অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তখন অনেকের মনে হয়েছিল, যে আধিকারিকদের স্বাধীনতা আন্দোলন দমনে ব্যবহার করেছিল, তাঁরা স্বাধীন ভারত নির্মাণে কিভাবে সহায়ক হবে। আর এই প্রশ্ন ওঠা অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। এই ঘৃণার ভাবনাও স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সর্দার সাহেব এই সমস্ত সমালোচকদের মনে করান যে, এই আমলাতন্ত্রকে নির্ভর করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এই আমলাতন্ত্রই দেশীয় রাজন্যবর্গের শাসনাধীন রাজ্যগুলিকে ভারতে বিলীন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

বন্ধুগণ, সর্দার প্যাটেল দেখিয়েছিলেন যে, সাধারণ মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে সর্বদাই একটি প্রবল ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন। প্রায় শতাব্দীকাল আগে আমেদাবাদ পৌরসভায় সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে তিনি উন্নত পৌর পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছিলেন। আর এই দৃষ্টিভঙ্গী নিয়েই তিনি স্বাধীন ভারতে সিভিল সার্ভিসেস – এর কাঠামো পুনর্নিমাণ করেছিলেন।

বন্ধুগণ, নিরপেক্ষ ও নিঃস্বার্থভাবে নেওয়া প্রতিটি পদক্ষেপ নতুন ভারতের ভিত্তিকে মজবুত করেছে। নতুন ভারতের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে আমরা যে ব্যবস্থা গড়ে তুলছি, তা পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের আমলাতন্ত্রের একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী চিন্তাভাবনা ও স্বপ্ন থাকা প্রয়োজন। এমন আমলাতন্ত্র, যা সৃষ্টিশীল ও গঠনমূলক হবে, যা কল্পনা-নির্ভর ও উদ্ভাবক হবে, যা সক্রিয় ও বিনীত হবে, যা পেশাদার ও অগ্রগামী হবে, যা তেজময় ও সক্ষম হবে, যা দক্ষ ও কার্যকরী হবে, যা স্বচ্ছ ও প্রযুক্তি সক্ষম হবে।

বন্ধুগণ, আপনাদের সামনে যতবড় সুযোগ, তত বড় দায়িত্বও রয়েছে। একটা সময় ছিল, যখন আপনাদের অগ্রজদের অনেক অভাবের মধ্যে সবকিছু সামলাতে হ’ত। অপ্রতুল সড়ক ব্যবস্থা, রেলপথ, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, স্কুল-কলেজ এমনকি টেলিফোনেরও অভাব ছিল। আজ পরিস্থিতি এমন নেই। ভারত দ্রুতগতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। যাঁরা কখনো অভাব নিয়ে চলতেন, আজ তাঁরা বিপুলতার দিকে এগোচ্ছেন। আজ দেশে বিপুল যুবশক্তি, বিপুল অন্নভান্ডার রয়েছে। আজ দেশে আধুনিক প্রযুক্তির শক্তি রয়েছে। আপনাদের এই বিপুলতার সুযোগ নিতে হবে। আপনাদের দেশের সামর্থ্য বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি, স্থায়িত্ব মজবুত করতে হবে।

বন্ধুগণ,  আপনারা এই পথে নিছক একটি ক্যারিয়ারের জন্যে আসেন নি, সেবাভাব নিয়ে দেশের সেবা করতে এসেছেন, – সেবা পরমো ধর্ম – এই মন্ত্র নিয়ে এসেছেন। আপনাদের প্রত্যেক সিদ্ধান্ত, প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি স্বাক্ষর লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করবে। আর বন্ধুগণ, আপনারা যে সিদ্ধান্তগুলি নেবেন, তার ক্ষেত্র স্থানীয় হলেও তার প্রভাব হবে জাতীয় স্তরে। অর্থাৎ, আপনার সিদ্ধান্ত শুধুই আপনার জেলা, ব্লক কিংবা বিভাগের প্রয়োজন কিংবা সমস্যাগুলির সমাধানে নেবেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কিভাবে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে, সে কথা সবসময় আপনাদের মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বন্ধুগণ, আপনাদের প্রতিটি সিদ্ধান্তকে অবশ্যই দুটি কষ্ঠিপাথরে বিচার করবেন। প্রথমত, মহাত্মা গান্ধী যে পথ দেখিয়েছেন – আপনার সিদ্ধান্ত সমাজের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটির আশা-আকাঙ্খা পূরণ করছে কি করছে না। দ্বিতীয়ত, আপনার সিদ্ধান্ত দেশের একতা, অখন্ডতা এবং প্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কিনা, মজবুত করছে কিনা।

বন্ধুগণ, এখানে উচ্চাকাঙ্খী জেলাগুলি সম্পর্কে অনেক আলোচনা হয়েছে। দেশের ১০০টিরও বেশি জেলা উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেন পেছনে রয়ে গেছে? এর পেছনে ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গীও একটা বড় কারণ। এই জেলাগুলি ভৌগোলিকভাবে এবং সামাজিকভাবে অত্যন্ত সমস্যাসঙ্কুল। ফলত, প্রত্যেক স্তরে এরা উপেক্ষিত, এদের নিজের মতো ছেড়ে রাখা হয়েছিল। সেই উপেক্ষার কারণে সমাজে অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হয়। দেশ বিরোধী শক্তি সেই পুঞ্জীভূত অসন্তোষকে ভুলভাবে ব্যবহার করতে শুরু করে। ফলে, এই জেলাগুলির উন্নয়ন আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। সেজন্য আমরা এই জেলাগুলিকে পিছিয়ে থাকার বদলে এদের উচ্চাকাঙ্খাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচককে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সমস্ত ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করি। আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করে কর্মসূচিগুলিকে অত্যধিক কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত করি। আজ আমরা অভূতপূর্ব পরিণাম দেখতে পাচ্ছি। আর এখন আপনারা সবাই এই কাজকে আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করতে চলেছেন।

বন্ধুগণ, আগামী দিনে আপনাদের মধ্যে অনেক বন্ধুর ব্লক কিংবা জেলাস্তরে পোস্টিং হবে। প্রতিদিন সেখানে আপনাদের অনেক সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে। আপনাদের প্রতি আমার পরামর্শ হ’ল – আপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত অঞ্চলে যে কোনও একটি বড় সমস্যাকে হাতে নিয়ে একবারে সেটির সম্পূর্ণ সমাধান করার চেষ্টা করি। অর্থাৎ ‘এক জেলা, এক সমস্যা এবং সম্পূর্ণ সমাধান’। প্রায়ই আমরা অতি উৎসাহে সবদিকে হাত বাড়াতে শুরু করি, ফলে আমাদের প্রচেষ্টা ও সম্পদ উভয়ই বিভাজিত হয়ে পড়ে। একটি সমস্যাকে সমাধান করুন – এ থেকে আপনাদের প্রত্যয় বাড়বে। আপনার প্রতি জনগণের ভরসাও বাড়বে। সেই মুহূর্তে আপনি জনগণের ভরসা জয় করেন, আপনার সঙ্গে প্রতিটি কাজে তাঁদের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে।

বন্ধুগণ, আপনাদের সামনে আমলাতন্ত্র এবং ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রবহমান নেতিবাচক আবহের সমস্যা রয়েছে। আমলাতন্ত্র এবং ব্যবস্থা – এই দুটি এমন শব্দ হয়ে উঠেছে, যাকে বাজে আমলাতন্ত্র এবং বাজে ব্যবস্থা লেখার প্রয়োজন পড়ে না। এই দুটি শব্দের অর্থই যেন নেতিবাচক হয়ে উঠেছে। এমনটি কেন হয়েছে? আমাদের অধিকাংশ আধিকারিক পরিশ্রমী এবং সক্ষম। কিন্তু সমগ্র ব্যবস্থা এবং আমলাতন্ত্রের বদনাম হয়ে গেছে।

বন্ধুগণ, সিভিল সার্ভিস নিয়ে প্রত্যেক ক্ষমতার, অফিসারশাহীর অহমিকার বদ্ধমূল ধারনা তৈরি হয়েছে – এই ছবি নিশ্চিতভাবেই কলোনিয়াল লিগাসি, অনেকে যা ত্যাগ করতে সম্পূর্ণভাবে সফল হননি। আপনাদের ওপর দায়িত্ব হ’ল সিভিল সার্ভিসেস-কে এই বদনাম থেকে মুক্তি দেওয়া। ক্ষমতার অহমিকা দেখানো যেন আপনাদের পরিচয় না ওঠে। আপনাদের পরিচয় যেন হয় – ‘সফট পাওয়ার’ – এর। ‘হার্ড পাওয়ার’ আক্রোশের কারণ হয়ে ওঠে। আর ‘সফট পাওয়ার’ সদ্ভাব বিকাশের ক্ষেত্রে একটি বড় মাধ্যম হয়ে ওঠে। নিয়োগ থেকে শুরু করে শুনানি পর্যন্ত একটি সরল ব্যবস্থায় পরিণত করতে হবে। জনগণের মনে যেন এমন ভাবনার উদয় না হয় যে, আপনাদের কাছে পৌঁছতে সাতটি দরজা অতিক্রম করতে হবে। আপনাদের কাছে যে প্রত্যেক সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান থাকবে, তা সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষও তা ভালোভাবেই বোঝেন। তাঁরা চান যে, তাঁদের কথা কেউ শুনুক, সম্মানের সঙ্গে তাঁদের সমস্যার সমাধান করুক। তাঁর বক্তব্য সঠিক জায়গায় পৌঁছলেই কখনো আমাদের দেশের সাধারণ নাগরিক সন্তুষ্ট হয়ে যান। আপনাদের চেষ্টা থাকা উচিৎ যে, যাতে প্রতিদিন এই সম্মান এবং সন্তুষ্টির ভাব নিয়ে দপ্তর থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।

বন্ধুগণ, যে কোনও সরকারি কর্মচারীর ক্ষেত্রে কার্যকরি পরিষেবা প্রদানের জন্য নীতিগুলির কার্যকরি বাস্তবায়নের জন্য নিরপেক্ষ ও সৎ ফিডব্যাক অত্যন্ত জরুরি। আপনার নিজস্ব সৎ ফিডব্যাক পাবার পদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে। আগের আমলে কালেক্টরদের জন্য নাইট হল্টের একটা নিয়ম ছিল। একটি ‘মার্চ টু হল্ট রেশিও’ ছিল। এ থেকে বোঝা যেত যে, আধিকারিক কতটা সময় ‘ফিল্ড’ – এ কাটিয়েছেন। এখন সেই পরম্পরায় অনেক ঢিলেমি এসে গেছে। কোথাও কোথাও তো এর অস্তিত্বই টের পাওয়া যায় না। ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ারদেরও এমনটি একটি পরম্পরা ছিল, যা এখন প্রায় লুপ্ত হয়ে গেছে। ‘হ্যান্ডিং ওভার নোট’ – এরও একটি ব্যবস্থা ছিল, যার মাধ্যমে প্রত্যেক বিদায়ী আধিকারিক, দায়িত্ব গ্রহণকারী আধিকারিককে একটি ‘নোট’ ছেড়ে যেতেন। এই ‘নোট’ – এর মাধ্যমে নতুন আধিকারিক ঐ পদ কিংবা ঐ অফিসের সমস্ত প্রতিকূলতা, সমস্যা এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে বুঝতে সাহায্য করতো। প্রশাসনে একটা নিরন্তরতা থাকতো। এমনই অনেক ভালো অভ্যাস আমাদের পুরনো ব্যবস্থায় ছিল, যেগুলি পুনর্জীবিত করার প্রয়োজন রয়েছে। পুরনো ভালো পরম্পরাগুলিকে আজকের যুগে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে জুড়ে, সেগুলিকে আরও সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। প্রযুক্তিকে আমাদের বিকল্প হিসাবে নয়, গুণীতক রূপে ব্যবহার করতে হবে। যেমন – ফিডব্যাক ব্যবস্থা, দেখা-সাক্ষাতের পুরনো পদ্ধতির পাশাপাশি, আমরা সোশ্যাল মিডিয়াকেও ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারি। যদিও সোশ্যাল মিডিয়াকে সবসময় বিশ্বাসযোগ্য উৎস বলে গ্রহণ করা যায় না। কিন্তু এগুলি এক একটি ‘টুল’ অবশ্যই। আর হ্যাঁ, আমাদের সিদ্ধান্ত ও নীতিগুলি সম্পর্কে যত ইনপুট ও ফিডব্যাক আসে, তার সত্যনিষ্ঠ সংগ্রহ ততটাই জরুরি। এমন নয় যে, যা আমাদের চোখে দেখতে ও কানে শুনতে ভালো লাগে – সবসময় তাই দেখবো আর শুনবো। আমাদের ফিডব্যাক পাবার পরিধিকে বিস্তার করে নিজেদের বিরোধীদের রায়’কে পড়তে ও শুনতে হবে। এর মাধ্যমে আমাদের ভাবনার গভীরতা বৃদ্ধি পাবে।

বন্ধুগণ, সরকারি ব্যবস্থায় থেকে কখনও আমরা কোথাও ভুল করে ফেলি। প্রায়ই এরকম কামরায় বসে আমাদের সবকিছুই ঠিকঠাক মনে হয়। আমাদের একটি সীমিত সামাজিক পরিধি থাকে। সেখানে আমাদের মতো ব্যক্তিরাই থাকেন। ফলে, অনেক সময় সামান্য সমস্যাগুলি সম্পর্কেও আমরা জানতে পারি না। সেজন্য আমরা যে পরিষেবাতেই নিয়োজিত হই না কেন, নিজেদের ‘কমফোর্ট জোন’ থেকে বেরিয়ে এসে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। সঠিক নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত কার্যকর সিদ্ধান্ত হবে।

বন্ধুগণ, আমাদের এটাও বুঝতে হবে যে, মন্ত্রিসভা হোক কিংবা পৌরসভা কিংবা অন্যান্য সরকারি বিভাগ আমরা কিন্তু একজন পরিষেবা প্রদানকারী। পরিষেবা প্রদানের জন্য গ্রাহকদেরই সর্বোপরি মনে করা উচিৎ। একথা মাথায় ঢুকলে আমরা ‘সাপ্লাই চেন ম্যানেজমেন্ট’ – এ মানবসম্পদের ‘ইনভেন্ট্রি’তে প্রযুক্তির প্রতিটি স্তরে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আসতে থাকবে। যখন পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আসবে, তখন সাধারণ মানুষের জীবনযাপন নিজে থেকে সহজ হয়ে উঠবে।

বন্ধুগণ, এতক্ষণ আমি আপনাদের সঙ্গে ম্যানেজমেন্টের প্রচলিত ভাষা প্রয়োগ করেছি। কারণ, কোনও কথা বোঝাতে জানা থেকে অজানার দিকে যাওয়া সহজ হয়। কিন্তু এই সবকিছুর উপরে ও গভীরে থাকে – আমাদের অন্তরের ভাবনা, মনের ব্যথা ও অন্তরের অনুভূতি। প্রতি মুহূর্তে একটি ভাবনা প্রত্যেক শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে, আপনাদের অস্তিত্বের সঙ্গে সংলগ্ন হওয়া উচিৎ। সেই ভাবনাটি কী?

বন্ধুগণ, আপনাদের মন ও মস্তিষ্কে একটি কথাকে স্থায়ী জায়গা দিতে হবে, তা হ’ল – আজ আমি যা হয়েছি, তা আমার দেশ আমাকে বানিয়েছে, আমার সমাজ আমাকে দিয়েছে, এদেশের কোটি কোটি মানুষ দিয়েছেন, এই দেশ আমার, এই দেশের জনগণ আমার, এই পরিষেবায় যোগদানের পর যত সুযোগ-সুবিধা আমি পেয়েছি, তাতে কোনও না কোনও গরিব মানুষের ঘামের গন্ধ রয়েছে।

বন্ধুগণ, আমরা প্রত্যেকেই দেশের গরিব মানুষদের কাছে ঋণী। আর তাঁদের ঋণ পরিশোধ করার একটাই পদ্ধতি আমাদের কাছে রয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা দেশবাসীর জীবনযাত্রা সহজ করে তুলবো, যা তাঁদের অধিকার আর সেজন্য সততার সঙ্গে চেষ্টা করবো, যথাসম্ভব পরিশ্রম করবো।

বন্ধুগণ, আজকের নতুন ভারতের অনেক বেশি আকাঙ্খা, উন্নয়নের জন্য এর অভিলাষা আগের চেয়ে অনেক বেশি। আজ সারা ভারতে আমরা দেখছি, জনগণ আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন, তটস্থ, অনেক বেশি সক্রিয় এবং অনেক সংবেদনশীল। সরকারের একটি আহ্বানে, যে কোনও সাহায্যের ডাক দলে গোটা দেশবাসী মহানন্দে এতে সামিল হয়ে যান। এক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব বেড়ে যায় যে, আমরা যেন সাধারণ মানুষের ‘ইজ অফ লিভিং’কে বৃদ্ধি করতে পারি। সেজন্য আমাদের সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। এটা সুনিশ্চিত করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষকে দৈনন্দিন জীবনে সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত না হতে হয়। আমাদের এটা মাথায় রাখতে হবে যে, সাধারণ মানুষের জীবন যেন সরকারের প্রভাবে চাপা না পড়ে এবং গরিবের জীবন যেন সরকারের অভাবে শ্বাসরুদ্ধ না হয়।

বন্ধুগণ, ‘ইজ অফ লিভিং’ সুনিশ্চিত করতে আরেকটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের অর্থ-ব্যবস্থা, আমাদের ‘পার ক্যাপিটা ইনকাম’; আমাদের অর্থ ব্যবস্থাকে ৫ লক্ষ কোটি ডলার অর্থ ব্যবস্থায় রূপান্তরণের লক্ষ্য এই ভাবনাকে মাথায় রেখেই। এই লক্ষ্যে পৌঁছনোর বড় দায়িত্ব আপনাদের কাঁধে ন্যস্ত। আপনারা যেখানেই নিয়োজিত হবেন, সেখানকার ব্যবস্থাকে বাণিজ্য-বান্ধব করে তুলতে সেখানে একটি উন্নততর বাস্তু-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রশাসনের সকল অঙ্গকে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করতে হবে।

বন্ধুগণ, আজকের সময়ের চাহিদা হ’ল – দেশের জেলাগুলিও যাতে নিজেদের আর্থিক উন্নয়নের জন্য পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামে। কোনও জেলা যতটা এগোবে, সেই রাজ্যও ততটা এগোবে। আর এর প্রভাব সরাসরি সারা দেশে জিডিপি-তে প্রতিফলিত হবে। সেজন্য ভবিষ্যতে আপনারা যে জেলায় নিযুক্ত হবেন, সেখানকার আর্থিক গতিবিধি ত্বরান্বিত করতে সমস্ত রকম চেষ্টা করবেন। যেমন – রপ্তানি, আপনারা জেলা থেকে কি আদৌ কিছু রপ্তানি হয়? সেখানকার কোনও উৎপাদিত পণ্য কি ভিন দেশে যায়? রপ্তানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আপনার পরিকল্পনা কি? আপনারা লক্ষ্য স্থির করুন, রপ্তানিকারকদের সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টা করুন। নির্মাণ ও কৃষি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে সাহায্য করার জন্য পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করুন। আমার আশা যে, আপনাদের মিলিত শক্তির মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের প্রতিটি লক্ষ্য আমরা অর্জন করবো।

বন্ধুগণ, বড় লক্ষ্য পূরণের জন্য আমাদের সিদ্ধান্ত স্পষ্ট এবং সময়ানুগ হতে হবে। কিন্তু অনেক সময় আমরা দেখি যে আমাদের অনেক বন্ধু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে ব্যক্তিগত স্তরে লাভ-ক্ষতি যাই হোক না কেন, দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। আপনাদের সকলের কাছ থেকে দেশ সমাধান প্রত্যাশা করে, ‘স্ট্যাটাস কো’ প্রত্যাশা করে না।

বন্ধুগণ, আপনারা যাতে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পারেন, সেদিকে লক্ষ্য রেখে সমস্ত প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সংস্কার করা হচ্ছে। আমাদের প্রচেষ্টা যে, ‘বদলি রাজ’ – এর অবসান হোক। আমলাতন্ত্র একটি স্থায়ী সময়সীমায় কাজ করার সুযোগ পাক। পোস্টিং – এর ক্ষেত্রে লবিং নয়, কর্মক্ষমতা নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করুক। প্রশিক্ষণের চালু ব্যবস্থাকে সংস্কার করার প্রচেষ্টা যে করা হচ্ছে, তার সাক্ষী আপনারা নিজেরাই। আমরা একটি সংহত ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যা প্রতিনিয়ত ‘কাস্টমাইজড্‌ ডেলিভারি’ নির্ভর হবে।

বন্ধুগণ, আপনাদের সামনে একটি দীর্ঘ কর্মজীবন রয়েছে। আজ প্রায় সারা দিন আমি আপনাদের সবার মাঝে থাকার সুযোগ পেয়েছি। মুখোমুখী কথাবার্তার সূত্রপাত হয়েছে। আপনাদের মধ্যে অনেক বন্ধুর সঙ্গে ভবিষ্যতেও দেখা-সাক্ষাৎ হতে থাকবে। প্রশিক্ষণের সময় আপনারা প্রতিদিন অনেক নতুন কিছু শিখেছেন। সেগুলো দেশের কাজে লাগাবেন। নিজের অন্তরের শিক্ষার্থীকে কখনও মরে যেতে দেবেন না। জীবনে যত উঁচুতেই উঠুন না কেন, অন্তরের শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত অনেক কিছু শেখাতে থাকে, আরও কিছু শেখার প্রেরণা যোগাতে থাকে।

বন্ধুগণ, আমাদের মিলিত দায়িত্ব হ’ল – সর্দার প্যাটেলের স্বপ্নগুলিকে বাস্তবায়িত করা। এই কামনা নিয়ে আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করার আগে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আজ সকালে আমি যেমন বলেছিলাম, আপনারা যে সেবার কাজে যুক্ত হয়েছেন, তা সর্দার সাহেবের স্বপ্নের অংশ। আর সেজন্য স্বাধীনতার অব্যহিত পরেই সর্দার সাহেব যে শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, যা বিগত ৭০ বছর ধরে ক্রমশ বিকশিত হয়ে এসেছে, তার সময়ানুগ বিবর্তনকে মেনে নিতে হবে। সময় ও শতাব্দী বদলে গেছে, স্বপ্ন বদলেছে, ইচ্ছা বদলেছে, আকাঙ্খা বদলেছে, প্রয়োজনীয়তাও বদলেছে। এই সময়ে আমরাও বিগত শতাব্দীর ভাবনা নিয়ে একবিংশ শতাব্দীর নতুন ভারত গড়ে তুলতে পারবো না। আমাদের ভাবনাও একবিংশ শতাব্দীর হতে হবে, আমাদের স্বপ্নও একবিংশ শতাব্দীর হতে হবে – তবেই আমরা সর্দার সাহেবের আশীর্বাদে এগুলি বাস্তবায়নের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে পারবো, সমর্পিত করতে পারবো, নিজেদের প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে পারবো। নতুন ভারত গড়ে তোলার স্বপ্ন, প্রত্যেক ভারতবাসীর স্বপ্ন। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব একটু বেশি। আমরা যেন নিজেদের সেই দায়িত্ব পালনের যোগ্য করে তুলি।

সর্দার সাহেবের বিশাল মূর্তিটিকে বিশ্ববাসী সর্বোচ্চ মূর্তি রূপে জানেন। কিন্তু আমাদের জন্য এটি কেবলই উঁচু নয়, আগামী শতাব্দীগুলির জন্য একটি প্রেরণাদায়ক মূর্তি। এ থেকে প্রেরণা নিয়ে, নিজেদের মাথা নত করে তাঁর আদর্শ অনুসারে চলার সংকল্প নিয়ে এই নর্মদা মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে, মা নর্মদার পবিত্র ধারার এই পবিত্র স্পর্শে সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করে আমরা এখান থেক প্রস্থান করবো। এই আশা নিয়ে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Explore More
শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দিরের ধ্বজারোহণ উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ

জনপ্রিয় ভাষণ

শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দিরের ধ্বজারোহণ উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ
India’s years? Amazon to pour Rs 3 lakh cr into India…and there’s more

Media Coverage

India’s years? Amazon to pour Rs 3 lakh cr into India…and there’s more
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
Prime Minister Condoles the Demise of Shri Shivraj Patil
December 12, 2025

Prime Minister Shri Narendra Modi today condoled the passing of Shri Shivraj Patil, describing him as an experienced leader who devoted his life to public service.

In his message, the Prime Minister said he was saddened by the demise of Shri Patil, who served the nation in various capacities—including as MLA, MP, Union Minister, Speaker of the Maharashtra Legislative Assembly, and Speaker of the Lok Sabha—during his long and distinguished public life. Shri Patil was known for his commitment to societal welfare and his steadfast dedication to democratic values.

The Prime Minister recalled his many interactions with Shri Patil over the years, noting that their most recent meeting took place a few months ago when Shri Patil visited his residence.

In separate posts on X, Shri Modi wrote:

“Saddened by the passing of Shri Shivraj Patil Ji. He was an experienced leader, having served as MLA, MP, Union Minister, Speaker of the Maharashtra Assembly as well as the Lok Sabha during his long years in public life. He was passionate about contributing to the welfare of society. I have had many interactions with him over the years, the most recent one being when he came to my residence a few months ago. My thoughts are with his family in this sad hour. Om Shanti.”

“श्री शिवराज पाटील जी यांच्या निधनाने दुःख झाले आहे. ते एक अनुभवी नेते होते. सार्वजनिक जीवनातील आपल्या प्रदीर्घ कारकिर्दीत त्यांनी आमदार, खासदार, केंद्रीय मंत्री, महाराष्ट्र विधानसभेचे तसेच लोकसभेचे अध्यक्ष म्हणून काम केले. समाजाच्या कल्याणासाठी योगदान देण्याच्या ध्येयाने ते झपाटले होते. ​गेल्या काही वर्षांत त्यांच्यासोबत माझे अनेक वेळा संवाद झाले, त्यापैकी सर्वात अलीकडील भेट काही महिन्यांपूर्वीच जेव्हा ते माझ्या निवासस्थानी आले होते तेव्हा झाली होती. या दुःखद प्रसंगी माझ्या संवेदना त्यांच्या कुटुंबीयांसोबत आहेत. ओम शांती.”