Our aim is to reduce India's carbon footprint by 30-35% and increase the share of natural gas by 4 times : PM
Urges the youth of the 21st century to move forward with a Clean Slate
The one who accepts challenges, confronts them, defeats them, solves problems, only succeeds: PM Modi
The seed of success lies in a sense of responsibility: PM Modi
There is no such thing as ‘cannot happen’: PM Modi Sustained efforts bring results: PM Modi

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী, শ্রী বিজয় রুপানী, পন্ডিত দীনদয়াল পেট্রোলিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ড অব গভর্নেন্সের চেয়ারম্যান শ্রী মুকেশ আম্বানি, স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান শ্রী ডি রাজাগোপালন, মহাপরিচালক প্রফেসর এস সুন্দর মনোহরন জি, অধ্যাপক অধ্যাপিকাগণ, বাবা-মা এবং আমার সমস্ত তরুণ সহকর্মীরা!

 

পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় পেট্রোলিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ ম সমাবর্তন উপলক্ষে আপনাদের সকলকে অভিনন্দন! আজ স্নাতক হওয়া বন্ধুদের এবং তাদের পিতামাতাদের শুভেচ্ছা জানাই। আজ দেশ আপনাদের মতো শিল্পক্ষেত্রে সরাসরি যোগদানের উপযোগী স্নাতকদের পাচ্ছে। আপনাদের কঠোর পরিশ্রমের জন্য আপনাদেরকে অভিনন্দন, আপনারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যা শিখেছেন তার জন্য এবং নতুন যাত্রার জন্য শুভকামনা, আপনারা আজ এখান থেকে পা বাড়াচ্ছেন দেশ গড়ে তোলার দুর্দান্ত লক্ষ্যের জন্য, সেই নতুন যাত্রাপথের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

 

আমি নিশ্চিত যে আপনাদের দক্ষতা, আপনাদের প্রতিভা, আপনাদের পেশাদারিত্বের মাধ্যমে আপনারা আত্মনির্ভর ভারতের একটি বড় শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবেন। আজ পিডিপিইউ সম্পর্কিত ৫ টি বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। এই নতুন পরিষেবাগুলি পিডিপিইউকে কেবল দেশের জ্বালানী খাতে নয়, পেশাদার শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চলেছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আমি গোড়া থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পগুলির সাথে যুক্ত ছিলাম, আর সেজন্যেই এটা দেখে আমি খুব খুশি যে আজ পিডিপিইউ শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও নিজস্ব পরিচয় গড়ে তুলছে, নিজস্ব জায়গা করে নিচ্ছে। আমি আজ এখানে প্রধান অতিথি হিসাবে নয়, আপনাদের এই মহান সংকল্পের পরিবারের সদস্য হিসাবে এসেছি।

 

আজ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তার সময়ের নিরিখে এগিয়ে চলেছে দেখে আমার খুব গর্ব হচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন অনেকের মনে সন্দেহ ছিল, অনেকে প্রশ্ন তুলেছিল যে এই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কতটা এগিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু এখানকার শিক্ষার্থীরা, অধ্যাপক অধ্যাপিকারা,অন্যান্য পেশাদাররা এখান থেকে বেরিয়ে এসেছেন, তাঁদের কর্তব্য সম্পাদনের মাধ্যমে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছেন।

 

বিগত দেড় দশকে, পিডিপিইউ 'পেট্রোলিয়াম' খাতের পাশাপাশি সম্পূর্ণ ‘এনার্জি স্পেকট্রাম’ এবং অন্যান্য খাতেও বিস্তারিত হয়েছে। আর পিডিপিইউর এই অগ্রগতি দেখে আজ আমি গুজরাট সরকারকেও অনুরোধ জানাচ্ছি,… আসলে, আমি যখন শুরুতে এই কাজের কথা ভাবছিলাম, তখন আমার মনে ছিল শুধুই পেট্রোলিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়, কারণ, গুজরাট পেট্রোলিয়াম খাতে এগিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু এখন যেমন দেশ এবং বিশ্বের প্রয়োজনীয়তা, আর এই বিশ্ববিদ্যালয়টি যেভাবে রূপ নিয়েছে, আমি গুজরাট সরকারকে অনুরোধ করব, প্রয়োজন হলে আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে কেবল পেট্রোলিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে এর নাম পালটে এনার্জি বিশ্ববিদ্যালয়ে করে নিতে পারেন। কারণ, ক্রমে এর পরিধি আরও অনেক প্রসারিত হতে চলেছে। আর আপনারা এত অল্প সময়ে যা অর্জন করেছেন, আপনারা দেশকে যা দিয়েছেন, সম্ভবত এই রূপান্তরণের মাধ্যমে এনার্জি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের জন্য অত্যন্ত উপকারী ভূমিকা পালন করবে। এই পেট্রোলিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্পনা আমার নিজস্ব ছিল, এখন আমার সেই ভাবনাকে প্রসারিত করে আমি আপনাদের অনুরোধ করছি পেট্রোলিয়ামের পরিবর্তে সমগ্র শক্তি খাতকে এর সাথে সংযুক্ত করুন। এটি কিভাবে করা যায় তা নিয়ে ভাবুন, এবং যদি এটি সঠিক মনে হয়, তাহলে একে বাস্তবায়িত করুন।

 

এখানে যে ৪৫ মেগাওয়াট সোলার প্যানেল ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট স্থাপন করা হচ্ছে কিম্বা জল প্রযুক্তি উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, এসব দেশের জন্য পিডিপিইউর বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ আপনারা এমন সময়ে শিল্প জগতে পা রাখছেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে শিল্প জগতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, যখন বিশ্বব্যাপী মহামারীর ফলে গোটা বিশ্বে শক্তিক্ষেত্রেও অনেক বড় পরিবর্তন আসছে। এই প্রেক্ষিতে আজ ভারতে শক্তিখাতে উন্নয়নের ব্যবসা স্থাপনের মনোভাব, উদ্যোগ ও কর্মসংস্থানের অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ, আপনারা সবাই সঠিক সময়ে সঠিক ক্ষেত্রে পা রাখছেন। এই দশকে কেবল তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ হতে চলেছে। সেজন্য আপনাদের গবেষণা থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যন্ত অফুরন্ত সুযোগ সৃষ্টি হতে চলেছে।

বন্ধুগণ,

 

আজ দেশ তার কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ ৩০-৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কম করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আমি যখন বিশ্ববাসীর সামনে এই বিষয়টিকে তুলে ধরেছি, তখন সবাই আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করেছে, ভারত এটা করতে পারে? আমরা এমন চেষ্টা করছি যাতে বর্তমান দশকে আমাদের জ্বালানির প্রয়োজন মেটাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের অংশীদারিত্ব চারগুণ বাড়াতে পারি। দেশের তৈল শোধন ক্ষমতাকেও আগামী পাঁচ বছরে প্রায় দ্বিগুণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রেও আপনাদের সকলের জন্য অনেক অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে শক্তি নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেমকে মজবুত করার জন্যও লাগাতার ইতিবাচক কাজ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনাদের মতো ছাত্র ও পেশাদারদের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গড়ে তোলা হয়েছে। যদি আপনাদের কাছেও কোনও সৃষ্টিশীল ভাবনা থাকে, কোনও পণ্য সম্পর্কে কিংবা কোনও নতুন ভাবনা যা আপনারা ইনকিউবেট করতে চান, তাহলে এই তহবিল থেকে আপনাদের জন্য একটি দারুণ সুযোগ গড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। এটি হবে আপনাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি অতুলনীয় উপহার।

 

আমি জানি, আজ যখন আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, তখন আপনাদের মনে কিছুটা দুশ্চিন্তাও রয়েছে। আপনারা হয়তো ভাবছেন, এখন তো করোনার সময়, না জানি সবকিছু ঠিক হবে কিনা! এ ধরনের দুশ্চিন্তা আপনাদের মনে জেগে ওঠা অত্যন্ত স্বাভাবিক। এই কঠিন সময়ে স্নাতক হওয়া যখন গোটা বিশ্ব এতবড় সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়ছে, তখন বাস্তব কর্মজগতের সম্মুখীন হওয়া সহজ কথা নয়। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনাদের শক্তি, আপনাদের নানা ক্ষমতা এই চ্যালেঞ্জগুলির থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। এই বিশ্বাসকে কখনও হারাবেন না।

 

সমস্যাগুলি কী কী, এগুলি থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল আপনাদের উদ্দেশ্য কী, আপনাদের অগ্রাধিকার কী এবং আপনাদের পরিকল্পনা কী? আর সেজন্য এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, আপনাদের প্রতিটি উদ্যোগের পেছনে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে, সুচিন্তিত অগ্রাধিকার থাকতে হবে এবং তার জন্য যথাযথ পরিকল্পনাও থাকতে হবে। এমনটা না হলে আপনারা নিজেদের জীবনে প্রথমবার অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে পড়বেন। যদিও এমনটা নয় যে এই চ্যালেঞ্জই আপনার জীবনের শেষ চ্যালেঞ্জ। এটা ভাববেন না যে সফল ব্যক্তিদের কোনও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। কিন্তু যাঁরা চ্যালেঞ্জগুলিকে স্বীকার করে নিয়ে সেগুলির মোকাবিলা করেন, যাঁরা চ্যালেঞ্জগুলিকে হারিয়ে দিয়ে সমস্যাগুলি সমাধান করেন, তাঁরাই জীবনে সফল হন। যে কোনও সফল ব্যক্তিকে দেখুন, প্রত্যেকেই কোনও না কোনও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেই সাফল্য পেয়েছেন।

 

বন্ধুগণ,

 

আপনারা যদি ১০০ বছর আগের কথা মনে করেন, আমি চাই যে আজ আমার দেশের নবীন প্রজন্মের মানুষেরা ১০০ বছর আগে দেশের পরিস্থিতির কথা মনে করুন। আজ আমরা ২০২০ সালে রয়েছি। আপনারা ভাবুন যে ১৯২০ সালে আপনারা যদি আজকের বয়সী হতেন তাহলে আপনারা কেমন স্বপ্ন দেখতেন। সেই সময় আপনারা কী নিয়ে উৎসাহ পেতেন, কিসেই বা আপনাদের উদ্দীপনা হত। ১০০ বছর আগের ইতিহাসের দিকে তাকান। ১৯২০ সালটি ভারতের স্বাধীনতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বছর ছিল।

 

এমনিতে দীর্ঘ পরাধীনতার সময়ে এমন কোনও বছর ছিল না যখন ভারতের কোথাও না কোথাও স্বাধীনতার লড়াই জারি ছিল না। ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম এই প্রক্রিয়ার একটি বড় টার্নিং পয়েন্ট হয়ে উঠেছিল। কিন্তু, ১৯২০ সাল থেকে শুরু করে ১৯৪৭-এর মধ্যবর্তী সময়টি সবদিক থেকে ভিন্ন ছিল। আমরা যদি সেই সময়ের দিকে তাকাই, তাহলে এত ঘটনার ঘনঘটা দেখি, দেশের প্রত্যেক প্রান্তে, প্রত্যেক এলাকায়, প্রত্যেক জনগোষ্ঠীতে দেশের প্রায় প্রতিটি শিশু জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গ্রাম, শহর, সাক্ষর, নিরক্ষর, ধনী-গরীব নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামের সিপাহী হয়ে উঠেছিলেন। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠেছিলেন। নিজের জীবনের ব্যক্তিগত স্বপ্নগুলিকে আহুতি দিয়ে স্বাধীনতার সঙ্কল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছিলেন। আর আমরা দেখেছি, ১৯২০ থেকে ১৯৪৭-এর মধ্যবর্তী সময়ে প্রতিটি নবীন প্রজন্মের মানুষ তাঁদের সবকিছু বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আজ কখনও ভাবলে আমাদের তখনকার নবীন প্রজন্মের মানুষদের জন্য ঈর্ষা হয়। কখনও মনে হয়, ইস! আমার জন্ম যদি ১৯২০ থেকে ১৯৪৭-এর মধ্যে হত, আমিও তাহলে দেশের জন্য একজন ভগত সিং হয়ে ওঠার চেষ্টা করতাম।  তাহলে ভাবুন কেমন হত? কিন্তু বন্ধুগণ, আমরা সেই সময় দেশের জন্য আত্মবলিদানের সুযোগ পাইনি। কিন্তু আজ আমরা দেশের জন্য বাঁচার সুযোগ পেয়েছি।

 

সেই সময়ের যুব প্রজন্ম তাঁদের সব কিছু দেশের জন্য অর্পণ করে শুধু একটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছিলেন। সেই লক্ষ্যটি কী ছিল? তাঁদের একটাই লক্ষ্য ছিল – ভারতের স্বাধীনতা। ভারতমাতাকে দাসত্ব শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করানো। আর এই আন্দোলনে অনেক ধারা ছিল। ভিন্ন ভিন্ন বিচারধারার মানুষ ছিলেন। কিন্তু প্রতিটি ধারাই একটি লক্ষ্যে যাচ্ছিল, আর সেই লক্ষ্যটি হল ভারতমাতাকে স্বাধীন করা। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন যে আন্দোলনের ধারা, কিংবা সুভাষবাবুর নেতৃত্বাধীন যে আন্দোলন, কিংবা ভগত সিং, রাজগুরুর নেতৃত্ব কিংবা বীর সাভারকারের নেতৃত্ব – প্রত্যেকেই; ভিন্ন ভিন্ন ধারা হলেও, ভিন্ন পথ হলেও, তাঁদের লক্ষ্য একটাই ছিল – ভারতমাতার স্বাধীনতা।

 

কাশ্মীর থেকে শুরু করে কালাপানি পর্যন্ত প্রত্যেক কালকুঠুরিতে, প্রত্যেক ফাঁসির দড়ি থেকে একটা আওয়াজ শোনা যেত, প্রতিটি দেওয়ালে একটাই আওয়াজ গুঞ্জরিত হত, প্রতিটি ফাঁসির দড়ি একটাই স্লোগানে সুশোভিত হত, সেই স্লোগান হল, তাঁদের জীবনের সঙ্কল্প এবং শ্রদ্ধায় সম্পৃক্ত ভারতমাতার স্বাধীনতার স্লোগান।

 

আমার নবীন বন্ধুগণ,

 

আজ আমরা সেই কঠিন সময়ে নেই। কিন্তু আজও মাতৃভূমিকে সেবা করার তেমনই সুযোগ রয়েছে। সেই সময়ের নবীন প্রজন্মের মানুষ যদি তাঁদের যৌবন ও জীবন স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গ করে থাকতে পারেন, আমরাও তেমনই আত্মনির্ভর ভারতের জন্য বেঁচে থাকার শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি, সাবলম্বী হয়ে দেখিয়ে দিতে পারি! আজ আমাদের আত্মনির্ভর ভারতের জন্য গড়ে ওঠা আন্দোলনে শরিক হতে হবে। এই আন্দোলনের সিপাহী হয়ে উঠতে হবে। এই আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিতে হবে। আজ আমাদের আত্মনির্ভর ভারতের জন্য প্রত্যেক ভারতবাসীকে বিশেষ করে, আমাদের নবীন বন্ধুদের কাছ থেকে, আপনাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা হল আপনারা নিজেদের আত্মনির্ভর ভারতের জন্য উৎসর্গ করে দিন।

 

আজকের ভারত পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি বড় রূপান্তরণের পথে এগিয়ে চলেছে। আপনাদের কাঁধে বর্তমানের পাশাপাশি ভবিষ্যতের ভারত নির্মাণের অনেক বড় দায়িত্ব রয়েছে।

 

আপনারা ভাবুন, আপনারা কেমন সোনালী সময়ের মধ্যে রয়েছে। হয়তো এটা ভাবেননি যে আগামী ২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্তি হচ্ছে। আর ভারতের স্বাধীনতার ১০০ বছর পূরণ হবে ২০৪৭ সালে। তার মানে মাঝখানের এই ২৫ বছর আপনাদের জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়। দেশের ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ বছর, আর আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ২৫ বছরকে একসঙ্গে সম্পৃক্ত করুন। আপনাদের সামনে যে সুযোগ এসেছে, সেই সৌভাগ্য খুব মানুষের জীবনেই এসেছে।

 

আপনারা দেখবেন, জীবনে তাঁরাই সফল হন যাঁরা কিছু করে দেখান, যাঁদের জীবনে দায়িত্ববোধ থাকে, সাফল্যের সবথেকে বড় সূত্রপাত এবং পুঁজি হলে এই দায়িত্ববোধ। আরও সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্মভাবে যদি দেখেন, যাঁরা জীবনে সফল হন না, তাঁদের জীবনের দিকে যদি তাকান তাহলে দেখবেন এই বিফলতার পেছনে মূল কারণ হল তাঁরা এই দায়িত্ববোধের পরিবর্তে সর্বদাই দায়িত্বকে একটি বোঝা হিসেবে ভেবেছেন। আর এই ভাবনার বোঝার নিচেই তাঁরা চাপা পড়েছেন।

 

বন্ধুগণ, আপনারা দেখবেন, এই দায়িত্ববোধ নিয়ে ব্যক্তি জীবনে সুযোগ অন্বেষণের বোধের জন্ম দেয়। তাঁদের পথে যত বাধা-বিপত্তি আসুক না কেন, সেগুলিকেই তাঁরা সুযোগ হিসেবে দেখে। দায়িত্ববোধ যখন ব্যক্তির জীবনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়, তখন এই দুইয়ের মধ্যে কোনও বিরোধাভাস তৈরি হওয়া উচিত নয়। এই দুইয়ের মধ্যে কোনও সংঘর্ষ হওয়া উচিত নয়। দায়িত্ববোধ এবং জীবনের লক্ষ্য  – এই দুটি পাশাপাশি চলা রেললাইনের মতো যার ওপর দিয়ে আপনার সঙ্কল্পের রেলগাড়ি দ্রুতগতিতে ছুটে যেতে পারে।

 

আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, নিজের মনে একটি দায়িত্ববোধকে অবশ্যই গড়ে তুলুন। এই দায়িত্ববোধ দেশের জন্য, দেশের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণের জন্য। আজ দেশ অনেক ক্ষেত্রে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।

বন্ধুগণ,

 

অসংখ্য ইচ্ছার মেঘের সমুদ্রে সঙ্কল্পের শক্তি অসীম। অনেক কিছু করার আছে। দেশের জন্য অনেক কিছু অর্জন করা যেতে পারে। কিন্তু আপনাদের সঙ্কল্প, আপনাদের লক্ষ্য যেন কোনভাবে কলুষিত ও ভারাক্রান্ত না হয়ে পড়ে। বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ভাবনা নিয়ে কাজ করলে চলবে না। আপনারা যদি দায়বদ্ধতা নিয়ে এগিয়ে যান, তাহলেই নিজের মধ্যে একটি প্রাণশক্তির বিশাল ভাণ্ডার অনুভব করবেন। সেই প্রাণশক্তির ভাণ্ডারই আপনাকে ছোটাবে। নতুন নতুন ভাবনার জন্ম দেবে। নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। আরেকটা বিষয় আপনাদের মাথায় রাখতে হবে। আজ আমরা যাই হই না কেন, যেখানে পৌঁছে থাকি না কেন, নিজের মনকে জিজ্ঞাসা করবেন, পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়েছেন বলেই কি এখানে পৌঁছেছেন? বাবা-মা অনেক টাকা-পয়সা খরচ করেছে বলেই কি এখানে পৌঁছেছেন, নাকি আপনাদের অনেক প্রতিভা ছিল বলে এখানে পৌঁছেছেন। অনেকে হয়তো ভাবছেন যে এসব কিছুর সমন্বয়েই এখানে পৌঁছেছেন। কিন্তু আমি বলব, তারপরেও এই উত্তর অসম্পূর্ণ। আজ আপনারা যেখানে আছেন তাতে আপনাদের চারপাশের সমস্ত মানুষের অবদান রয়েছে। সমাজের অবদান রয়েছে, দেশের অবদান রয়েছে, দেশের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম ব্যক্তির অবদান রয়েছে, তবেই গিয়ে আজ আপনি এখানে পৌঁছেছেন। অনেকে এই প্রকৃত সত্যটা অনুভব করেন না। আজও যে বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছেন, সেটি গড়ে তুলতে অসংখ্য মুটে-মজুর ভাই-বোন তাঁদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছেন, দেশের অসংখ্য মধ্যবিত্ত পরিবার তাঁদের পরিশ্রমের উপার্জন থেকে দেশকে কর দিয়েছেন, সেই টাকা দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। তার মানে আপনারা এরকম অনেকের নামও জানেন না যাঁরা আপনাদের জীবনে অবদান রেখে গেছেন। আর যাঁরা আমাদের জীবনে অবদান রেখেছেন, তাঁদের প্রতি আমাদের ঋণী থাকা উচিত। আমাদের এই সমাজ, এই দেশের অসংখ্য মানুষের শ্রমের অবদানে আপনারা যেহেতু এখানে পৌঁছেছেন, আপনাদেরও সঙ্কল্প নেওয়া উচিত যে এই ঋণ কিভাবে পরিশোধ করবেন।

 

বন্ধুগণ,

 

মানবজীবনের জন্য গতি এবং উন্নয়ন অনিবার্য। পাশাপাশি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য প্রকৃতি এবং পরিবেশকে সংরক্ষণ করাও ততটাই প্রয়োজন। পরিচ্ছন্ন শক্তি উৎপাদনই মানবসভ্যতার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা। তেমনই জীবনে দুটি কথা মনে রাখবেন – একটি হল, ‘ক্লিন শ্লেট’ এবং দ্বিতীয়টি হল ‘ক্লিন হার্ট’। আমরা প্রায়ই শুনি, আপনারাও হয়তো বলেন, অনেকেই বলেন, ছাড়ুন তো, এমনটিই চলবে, কিছুই হবে না। অ্যাডজাস্ট করে নিতে হবে। কারণ আমাদের দেশে এই বিষয়টা চলে আসছে, এই চলছে- চলবে মনোভাব। আর এটাই যেহেতু দেশের পরম্পরা তাহলে আমরাও এভাবেই চলতে পারি!

 

বন্ধুগণ,

 

এই সমস্ত কথা হল পরাজিত মনের কথা। ভাঙা মনের কথা। যাঁদের মাথায় মরচে ধরেছে, তাঁরাই এরকম বলতে পারেন। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম একবিংশ শতাব্দীর নবীন প্রজন্মকে ‘ক্লিন শ্লেট’ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। কিছু মানুষের মনে যে বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে কিছু বদলাবে না, সেই ভাবনাকে মুছে দিতে হবে। ঠিক তেমনভাবেই ‘ক্লিন হার্ট’-এর অর্থ আমাকে বুঝিয়ে দিতে হবে না। এর মানে হল স্পষ্ট ইচ্ছাশক্তি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।

 

বন্ধুগণ,

 

আপনারা যখন পূর্ব নির্ধারিত কোনও ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যান তখন যে কোনও নতুন জিনিসের জন্য নিজেরাই নিজেদের দরজার আগল বন্ধ করে দেন।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ থেকে ২০ বছর আগে যখন আমি প্রথমবার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলাম, আমার সামনে অনেক সমস্যা ছিল। তার আগে আমি দিল্লিতে থাকতাম, হঠাৎই গুজরাট যাওয়ার নির্দেশ এসেছিল। আমার কোনও থাকার জায়গাও ছিল না। গান্ধীনগর সার্কিট হাউজে একটি কামরা বুক করেছি। তখনও শপথ নিইনি। কিন্তু এটা জেনে গিয়েছিলাম যে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই তখন অনেকে ফুলের তোড়া নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে চলে আসতেন। অনেকেই এসেছেন। কিন্তু প্রত্যেকে নানা রকম কথা বলেছেন। কিন্তু প্রত্যেকেই একটি কথা আমাকে অবশ্যই বলেছেন, প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ মানুষ বলেছেন। কী বলেছেন? আপনারা শুনলে অবাক হবেন। তাঁরা বলেছেন, যে কোনও ভাবেই এটা সুনিশ্চিত করুন যে রাতে খাওয়ার সময় যেন বিদ্যুৎ থাকে। তার মানে বুঝতে পারছেন যে তখন বিদ্যুতের কী অবস্থা ছিল?

 

আর আমি যে ধরনের পরিবার থেকে উঠে এসেছি, খুব ভালোভাবেই জানতাম যে বিদ্যুৎ থাকা আর না থাকার মধ্যে কতটা গুরুত্ব রয়েছে। আমি এর স্থায়ী সমাধান কিভাবে হবে তা নিয়ে ভাবতে থাকি। ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলি। আলোচনা করতে থাকি। কিন্তু তাঁরাও বলেন, আরে এমনটাই চলে আসছে, এমনটাই চলবে। আমাদের কাছে যতটা বিদ্যুৎ আছে তা দিয়ে আমরা এভাবেই চালাতে পারব। যখন এর থেকে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারব তখন আরও বেশি সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে। কিন্তু সেই পরিস্থিতি থেকে ঈশ্বরের ইচ্ছায় আমার মনে একটি সমাধানের ভাবনা উঁকি দেয়। আমি সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের জিজ্ঞাসা করি,  আমরা কি বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে  এগ্রিকালচার ফিডার এবং ডোমেস্টিক ফিডারকে আলাদা করে দিতে পারি? কারণ আমি সংশ্লিষ্ট সবার কাছ থেকেই শুনছিলাম যে চাষের খেতে খুব বিদ্যুৎ চুরি হয়। আমি নিজেও অনভিজ্ঞতার কারণে বড় বড় বাবুদের ঠিকমতো বোঝাতে পারছিলাম না। তাঁরা আমার সঙ্গে সহমত হননি। তাঁদের মনে পূর্ব নির্ধারিত ভাবনা ছিল যে এমনটি হতে পারে না। সেজন্য তাঁরা প্রত্যেকেই জোর দিয়ে বলেন, এটা অসম্ভব! কেউ বলে আমাদের সেই আর্থিক ক্ষমতা নেই। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে এ বিষয়ে যত ফাইল চালাচালি হয়েছে সেগুলির ওজন ৫, ৭, ১০ কিলো পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমি সবার কাছ থেকে নেতিবাচক জবাবই পাচ্ছিলাম।

 

তখন আমি একটি দ্বিতীয় বিকল্প নিয়ে কাজ করতে শুরু করি। উত্তর গুজরাটের একটি সোসাইটির সঙ্গে ৪৫টি গ্রাম যুক্ত রয়েছে। আমি তাদেরকে ডাকি। আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করি, আপনারা কি আমার একটি স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন? তাঁরা বলেন, আমাদের ভাবার সময় দিন। আমি বলি, ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কথা বলে দেখুন। আমি চাই আপনাদের গ্রামগুলিতে ডোমেস্টিক এবং এগ্রিকালচার ফিডার যেন আলাদাভাবে কাজ করে। তাঁরা পরেরবার এসে বলেন যে সাহেব আমাদের কোনও সাহায্যের প্রয়োজন নেই। গুজরাট সরকার যদি আমাদের ১০ কোটি টাকা এক্ষেত্রে খরচ করার অনুমতি দেয়, তাহলে এটা সম্ভব হতে পারে। আমি বলি এটা আমার দায়িত্ব। আমার মন্ত্রিসভা অনুমতি দেয়।

 

তাঁরা কাজ করতে শুরু করেন এবং ওই ৪৫টি গ্রামে ডোমেস্টিক এবং এগ্রিকালচার ফিডারকে তাঁরা আলাদা করে দেন। ফলস্বরূপ, চাষের খেতে যতটা বিদ্যুৎ প্রয়োজন ছিল, সেটা যেমন পর্যাপ্ত পরিমাণে পেতে থাকেন, তেমনই বাড়িতে বাড়িতে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ হতে শুরু করে। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সাহায্যে নবীন প্রজন্মের যুবক-যুবতীদের পাঠিয়ে থার্ড পার্টি অ্যাসেসমেন্ট করাই। আপনারা শুনলে অবাক হবেন, যে গুজরাটে রাতে খাওয়ার সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ আকাশকুসুম কল্পনা ছিল, সেখানকার গ্রামগুলিতে তখন ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ একটি নতুন অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূত্রপাত করে। দর্জিরাও এবার তাঁদের সেলাই মেশিন পায়ের বদলে ইলেক্ট্রিক মেশিন দিয়ে চালাতে শুরু করেন। ধোপারাও ইলেক্ট্রিক ইস্ত্রি দিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। গ্রামের প্রত্যেক রান্নাঘরে একের পর এক ইলেক্ট্রিকের সরঞ্জাম আসা শুরু হয়। গ্রামের মানুষ এসি কেনেন, পাখা কেনেন, টিভি কেনেন। তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক পরিবর্তন আসতে শুরু করে। ফলে, সরকারের আয়ও বাড়ে।

 

 

সেই সময় আমার এই প্রয়োগ আধিকারিকদের ভাবনাকে বদলে দেয়। তাঁরা মেনে নেন যে এটাই সঠিক পথ। আর গোটা গুজরাটে ১,০০০ দিনের কর্মসূচি চালু করা হয়। ১,০০০ দিনের মধ্যে সমস্ত গুজরাটে এগ্রিকালচার ফিডার এবং ডোমেস্টিক ফিডারকে আলাদা করে দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করা হয়। আর ১,০০০ দিনের মধ্যেই তাঁরা সফল হন। এরপর থেকে গুজরাটের বাড়িতে বাড়িতে ২৪ ঘন্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হয়েছে। আমি যদি তাঁদের সেই পূর্ব নির্ধারিত ভাবনাকে মেনে নিতাম, তাহলে সেটা সম্ভব হত না। আমি 'ক্লিন শ্লেট' এগিয়ে গিয়েছি, নতুনভাবে ভেবেছি বলেই এই সাফল্য পেয়েছি।

 

বন্ধুগণ, একটা কথা মেনে চলবেন, বাধা-নিষেধ কোনও ব্যাপারই নয়। আপনার ইচ্ছাশক্তি এবং কর্মতৎপরতাই আসল। আমি আপনাদের আরেকটি উদাহরণ দিতে চাই। গুজরাটই দেশের প্রথম রাজ্য যেখানে নিজের মতো করে সৌরনীতি গড়ে তোলা হয়েছিল। তখন এটা মনে করা হয়েছিল যে সৌরবিদ্যুতের মূল্য হবে ১২ থেকে ১৩ টাকা প্রতি ইউনিট। এই মূল্য সেই সময়ের নিরিখে খুব বেশি ছিল কারণ, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে ২, ২.৫০ কিংবা ৩ টাকা প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। সেই বিদ্যুতই যদি ১৩ টাকা মূল্যে কিনতে হয়, তাহলে আমার ওপর দিয়ে কত সমালোচনার ঝড় বয়ে যাবে। আজকালে এই ধরনের সমালোচনা তো ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমস্ত বিষয় থেকে খুঁত খোঁজার ফ্যাশন। আর সেই সময় আমার জন্য এই সমালোচনার ঝড় অনেক কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তোলে।

 

কিন্তু বন্ধুগণ, আমার সামনে এমন একটা মুহূর্ত আসে যখন একদিকে আমার নিজস্ব উন্নতির স্বার্থ আর অন্যদিকে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ভাবনার মধ্যে একটাকে বেছে নিতে হত। আমি জানতাম যে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে সংবাদমাধ্যমে অনেক সমালোচনা হবে। নানারকম দুর্নীতির অভিযোগ উঠবে। কিন্তু আমি 'ক্লিন হার্ট' নিয়ে পরিবর্তনের কথা ভেবেছি এবং সৎভাবে ভেবেছি যে মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হলে আমাদের কিছু না কিছু করতে হবে। সেজন্য আমি সৌরশক্তির দিকেই এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আর সততার সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত নিই। একটি স্পষ্ট দূরদৃষ্টি নিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সিদ্ধান্ত নিই।

 

গুজরাটে সোলার প্ল্যান্ট চালু হয়। অনেক বড় করেই চালু হয়। কিন্তু সেই সময় গুজরাটে এই নীতি প্রণয়নের পর কেন্দ্রীয় সরকারও অনেক ফুলস্টপ এবং কমা সহকারে সৌরনীতি প্রণয়ন করে। কিন্তু তারা কী করে? সৌরবিদ্যুতের ইউনিট প্রতি দাম রাখে ১৮-১৯ টাকা। রাজ্য সরকারের আধিকারিকরা তখন এসে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যদি ১৮-১৯ টাকায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আর আমরা ১২-১৩ টাকায় প্রতি ইউনিট সরবরাহ করি তাহলে কেমন করে চলবে? কিন্তু আমি বলি, আমরা ১২-১৩ টাকাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করব। কিন্তু উন্নয়নের জন্য একটি এমন ইকো-সিস্টেম গড়ে তুলব, স্বচ্ছ ব্যবস্থা গড়ে তুলব, আর সেই ব্যবস্থাকে গতিশীল করে তুলব যাতে সবাই আমাদের কাছে আসবে এবং সেই সুশাসনের মডেলটিকে দেখে সেটিকে অনুসরণ করবে। আজ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, গুজরাট যে উদ্যোগ নিয়েছিল তা রাজ্যটিকে সৌরশক্তি উৎপাদনে কোথায় পৌঁছে দিয়েছে। আপনারা সকলেই সাক্ষী। আর আজ একটি বিশ্ববিদ্যালয় এই কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছে।

 

আমরা ১২-১৩ টাকা প্রতি ইউনিটে যে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করি, তা গোটা দেশে সৌর আন্দোলন গড়ে তোলে। আর দেশের প্রধান সেবকের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আমি আন্তর্জাতিক সৌরসঙ্ঘের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। বিশ্বের প্রায় ৮০-৮৫টি দেশ এর সদস্য হয়েছে এবং গোটা বিশ্বে একটি নতুন আন্দোলন গড়ে উঠেছে। পূর্ব নির্ধারিত ভাবনা থেকে বেরিয়ে 'ক্লিন হার্ট' নিয়ে কাজ করার এই পরিণাম আজ আপনারা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। আজ ভারত সৌরশক্তির ক্ষেত্রে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আজ সৌরবিদ্যুতের মূল্য ১২-১৩ টাকা প্রতি ইউনিট থেকে হ্রাস পেয়ে ২ টাকার থেকেও মূল্যে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

 

দেশের মধ্যে সৌরশক্তি একটি মুখ্য অগ্রাধিকারে পরিণত হয়েছে। আর আমরা দেশ হিসেবে২০২২ সালের মধ্যে ১৭৫ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের সঙ্কল্প গ্রহণ করেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা ২০২২ সালের আগেই এই সঙ্কল্প পূরণে সক্ষম হব। আর ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের অনেক বড় লক্ষ্য রেখেছি – ৪৫০ গিগাওয়াট। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই লক্ষ্যও সময়ের আগেই পূরণ হবে।

 

বিশ্বে এমন কিছু নেই যেটা হতে পারে না। আমি করতে পারব আর আমি করতে পারব নার মধ্যেই পার্থক্য গড়ে ওঠে।। এই কথাগুলি সারা জীবন আপনাদের কাজে লাগবে। এই বিশ্বাস আপনাদের শক্তি জোগাবে।

বন্ধুগণ,

 

নিজের জন্য পরিবর্তন হোক কিংবা বিশ্বের জন্য। একদিন, এক সপ্তাহ বা এক বছরেই পরিবর্তন আসে না। সামান্য পরে হলেও নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলে তবেই আমরা সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আনতে পারি। নিয়মিত ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে অনেক বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়। যেমন আপনারা প্রতিদিন ২০ মিনিট নতুন কিছু করা বা লেখার অভ্যাস চালু করতে পারেন। তেমনই, এটাও ভাবতে পারেন যে প্রতিদিন ২০ মিনিট নতুন কিছু শেখার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবেন।

 

একদিনে মাত্র ২০ মিনিটের কথা বলছি। কিন্তু এই ২০ মিনিট এক বছরে ১২০ ঘন্টার প্রচেষ্টা হয়ে উঠবে। আর এই ১২০ ঘন্টার প্রচেষ্টা আপনার মধ্যে কত বড় পরিবর্তন এনে দেবে তা অনুভব করে আপনি নিজেই অবাক হয়ে যাবেন।

 

বন্ধুগণ,

 

আপনারা হয়তো ক্রিকেট দেখেন। যখন কোনও টিম অনেক বড় টার্গেট চেজ করে, তখন তাদের এটা ভাবলে চলে না যে মোট কত রান বানাতে হবে। ব্যাটসম্যানকে এটাই ভাবতে হয় যে প্রত্যেক ওভাবে কত রান করে বানাতে হবে।

 

এই মন্ত্র অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও অনেক ফলপ্রসূ হয়। প্রতি মাসে যদি ৫ হাজার টাকা জমা করতে পারেন, তাহলে দু'বছরে ১ লক্ষ টাকারও বেশি জমা করতে পারবেন। এভাবে নিয়মিত  সুদূরপ্রসারী প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজের মধ্যে সেই সামর্থ্য গড়ে উঠবে যার প্রভাব একটি ক্ষুদ্র সময়খণ্ডের মধ্যে দেখা যায় না কিন্তু, জীবনের ক্ষেত্রে সেটি আপনার পুঁজি হয়ে ওঠে। অনেক বড় শক্তি হয়ে ওঠে।

 

জাতীয় স্তরে যখন দেশ এই ধরনের সুদূরপ্রসারী প্রচেষ্টা নিয়ে এগিয়ে চলে, তখন সে দেশের ক্ষেত্রেও এই ধরনের পরিণাম পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনারা স্বচ্ছ ভারত অভিযানের কথা ভাবতে পারেন। আমরা আজ শুধুই গান্ধী জয়ন্তীতে, শুধুই অক্টোবর মাসে পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ভাবি না। আমরা এখন প্রত্যেক দিন নিজেদেরকে পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করি। আমিও ২০১৪ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে প্রায় প্রত্যেক 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে এই পরিচ্ছন্নতা নিয়ে নিয়মিতভাবে দেশবাসীর সঙ্গে বার্তালাপ করেছি, আলোচনা করেছি। তাঁদের কাছে অনেক নতুন নতুন অনুরোধও রেখেছি। প্রত্যেকবার ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে একটু একটু করে কথা হয়েছে। কিন্তু লক্ষ-কোটি মানুষের ছোট ছোট প্রচেষ্টার মাধ্যমে স্বচ্ছ ভারত একটি গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। সুদূরপ্রসারী প্রচেষ্টার প্রভাব এমনই হয়, ঐকান্তিকতার এমনই পরিণাম পরিলক্ষিত হয়।

 

বন্ধুগণ,

 

একবিংশ শতাব্দীতে গোটা বিশ্ব ভারতের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করে, অনেক প্রত্যাশাও করে। আর ভারতের সেই আশা এবং প্রত্যাশা আপনাদের নিয়ে। আমাদের দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে হবে, আর এগোতেই হবে। পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়জি আমাদের যে অন্ত্যোদয়ের দর্শন দিয়ে গেছেন, 'দেশ আগে'র যে সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে তিনি এগিয়ে গেছেন, সেগুলিকে আমাদের সবাইকে মিলেমিশে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। আমাদের প্রতিটি কাজ যেন দেশের কথা ভেবে হয়, দেশের কাজে লাগে এই ভাবনা নিয়ে প্রত্যেককে এগিয়ে যেতে হবে।

 

আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
Govt disburses ₹1,596 cr in six PLI schemes during Apr-Sep this fiscal

Media Coverage

Govt disburses ₹1,596 cr in six PLI schemes during Apr-Sep this fiscal
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
দ্য ওয়ার্ল্ড দিজ উইক অন ইন্ডিয়া
January 22, 2025

India has once again captured global attention this week with significant advancements across technology, defence, and cultural milestones. From space exploration to AI-driven safety innovations in the world's largest religious gathering, India's influence continues to grow on the international stage.

Adding to this growing global stature is Russian political scientist Alexander Dugin's argument that India, a power that acts as a balancing element, would be the ideal platform for talks between the US & Russia as the country is a power that acts as a balancing element, where both delegations will be welcomed.

Growing Indo-US Collaboration and Technological Innovations

This week, Elon Musk, who met with key Indian business leaders to discuss future ventures, has expressed his support for lowering trade barriers to enhance commerce between the two nations. His remarks reflect a trend of increasing collaboration between the two countries, particularly in the tech and space sectors.

India's growing technological footprint is also visible in its space achievements. The Indian Space Research Organisation (ISRO) successfully conducted its first-ever space docking test, marking a major milestone for the country's space program. Prime Minister Narendra Modi was present during the test with scientists at the ISRO office in Bangalore.

In the defence and space sector, Indian startups are taking bold steps in collaboration with the United States. Seven private Indian companies have been selected for a pioneering Indo-U.S. space and defence initiative, signalling a deepening of the strategic partnership between the two nations.

AI Innovations and Crowd Safety at the Kumbh Mela

India is also harnessing the power of artificial intelligence to enhance safety at large-scale events. As preparations for the Maha Kumbh Mela ramp up, AI is being deployed to prevent stampedes at what is set to be the world's largest human gathering, with up to 400 million pilgrims expected. The AI system, developed to estimate crowd sizes and analyse real-time data from railways and buses, is a remarkable fusion of technology and tradition, ensuring safety at this massive event.

India Leads Asia in IPOs

India's capital markets have also seen significant developments. For the first time, India has surpassed China to lead Asia in initial public offerings (IPOs), driven by a surge in domestic investment. With Indian households increasingly investing in local equity markets, India's financial markets are experiencing a transformation, underscoring the nation's economic resilience and growing confidence of investors.

Defence Diplomacy and Growing Exports

India's defence diplomacy is gaining traction, with the Philippines moving forward with discussions to purchase more BrahMos missiles from India. Already an operator of the missile, the Philippines is looking to bolster its military capabilities with a larger order, reaffirming the strength of the BrahMos system. This deal is part of India's broader efforts to expand its defence exports, positioning itself as a key player in global defence markets.

Cultural Milestones: Global Artists Choosing India

India's cultural influence is also growing as international artists increasingly perform in the country. World-renowned musicians like Coldplay and Ed Sheeran are now choosing India as a destination for their tours, signalling a shift in the global entertainment landscape. India's growing demand for live music reflects the country's vibrant and evolving cultural scene.

Climate-Friendly Innovations in Rural India

In a remarkable step toward sustainability, climate-friendly waterwheels are making a comeback in rural Kashmir. Installed as part of a renewable energy initiative, these waterwheels offer energy independence to local villagers. This initiative is part of India's ongoing efforts to embrace green technologies while preserving traditional practices, contributing to both local development and environmental sustainability.

India, the Next Growth Frontier

Vietnamese electric vehicle manufacturer VinFast announced its entry into the Indian market this week with its premium electric SUV. VinFast's arrival highlights India's importance as a key destination for global automotive innovation. With a rapidly expanding market for sustainable transport solutions, India is cementing its role as the next frontier for EV growth.

From technological advancements and AI innovations to significant defence deals and cultural milestones, India's role on the world stage continues to strengthen. India's ability to combine modern progress with deep-rooted traditions while expanding its influence positions it as a global leader in making.