
মেট্রো রেল সম্পর্কিত একটি নতুন নীতি আজ এখানে অনুমোদিত হল কেন্দ্রীয়মন্ত্রিসভার বৈঠকে। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকেদেশের বেশ কয়েকটি শহরে মেট্রো রেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় যথোচিত দায়িত্বশীলতারসঙ্গে তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।
নতুন নীতিটিতে মেট্রো রেল প্রকল্প রূপায়ণে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বেরওপর জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে নতুন নতুন মেট্রো প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সহায়তার সুযোগলাভের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বাধ্যতামূলক করে তোলা হবে। উচ্চগতিরমেট্রো রেল চালু করার লক্ষ্যে মূলধন সম্পদের ব্যাপক চাহিদার যোগান দিতেসরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব যে একান্ত জরুরি একথার উল্লেখ করা হয় সংশ্লিষ্টনীতিতে।
বিভিন্ন রাজ্যে দূর-দূরান্তের অঞ্চলগুলিকে মেট্রো রেলের সাহায্যে যুক্তকরা সম্ভব না হলে মেট্রো স্টেশনগুলির পাঁচ কিলোমিটারব্যাপী এলাকায় ফিডার সার্ভিসচালু করারও প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রয়োজনে, মেট্রো স্টেশনে পৌঁছনোর সুবিধার জন্যসাইকেল চালানো এবং পায়ে হেটে স্টেশনে পৌঁছনোর জন্য সড়ক সংযোগের সুবিধা প্রসারেরওপরও বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে নতুন মেট্রো রেল নীতিতে।
নতুন নতুন মেট্রো রেল প্রকল্পের প্রস্তাবগুলি সম্পর্কে যথোপযুক্ত সমীক্ষানিরপেক্ষ কোন তৃতীয় সংস্থাকে দিয়ে চালানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে। মেট্রোপ্রকল্পগুলি থেকে আর্থ-সামাজিক তথা পরিবেশ সংক্রান্ত সুফল লাভের সম্ভাবনায় মেট্রোরেল প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে ৮ শতাংশ রাজস্ব অর্জনের পরিবর্তে ১৪ শতাংশ রাজস্বঅর্জনের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।
এই নীতির আওতায় মেট্রো রেল প্রকল্পে রাজ্যগুলির পক্ষ থেকে বিনিয়োগ ও সম্পদেরযোগান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উদ্ভাবনমূলক পন্থা-পদ্ধতি অবলম্বন করার প্রস্তাব করাহয়েছে। প্রয়োজনে মেট্রো রেল প্রকল্পের জন্য কর্পোরেট বন্ড ইস্যু করার মাধ্যমেপ্রয়োজনীয় মূলধনী সম্পদ রাজ্যগুলি সংগ্রহ করতে পারবে।
মেট্রো রেল প্রকল্পগুলির আর্থিক সম্ভাবনার দিকটি নিশ্চিত করতে বিভিন্নস্টেশনের বাণিজ্যিক ব্যবহার তথা অতিরিক্ত সহায়-সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে কোন্ কোন্ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে তা সুস্পষ্টভাবে জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে।মেট্রো রেল প্রকল্পের কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে চালানো সম্ভব হয়, সেজন্য প্রয়োজনে সমস্তরকমঅনুমতি এবং অনুমোদনদানের জন্যও রাজ্যগুলিকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত নীতিতে রাজ্যগুলিকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যাত্রীভাড়া সংশোধনের ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি স্থির করার জন্য। এজন্য স্থায়ীভাবে একটি ভাড়ানির্ধারক সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ গঠন করা যেতে পারে বলে এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের আটটি শহরে মোট ৩৭০ কিলোমিটার পথেমেট্রো প্রকল্পেরকাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে দিল্লিতে ২১৭ কিলোমিটার, বেঙ্গালুরুতে৪২.৩০ কিলোমিটার, কলকাতায় ২৭.৩৯ কিলোমিটার, চেন্নাইতে ২৭.৩৬ কিলোমিটার, কোচিতে১৩.৩০ কিলোমিটার, মুম্বাইতে মেট্রো লাইন বরাবর ১-১১.৪০ কিলোমিটার তথা মনোরেলপর্যায়ে ১-৯.০ কিলোমিটার, জয়পুরে ৯ কিলোমিটার এবং গুরুগ্রামে ১.৬ কিলোমিটার দীর্ঘরেল প্রকল্পের সূচনা হয়েছে। ঐ আটটি শহর ছাড়াও দেশের মোট ১৩টি শহরে বর্তমানে মোট৫৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্প রূপায়ণের কাজ এগিয়ে চলেছে। যে নতুন শহরগুলি মেট্রোপ্রকল্পের সুবিধা পেতে চলেছে তার মধ্যে রয়েছে – হায়দরাবাদ (৭১ কিলোমিটার), নাগপুর(৩৮ কিলোমিটার), আমেদাবাদ (৩৬ কিলোমিটার), পুণে (৩১.২৫ কিলোমিটার) এবং লক্ষ্ণৌ (২৩কিলোমিটার)।
১০টি নতুন শহর সহ দেশের মোট ১৩টি শহরে ৫৯৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যব্যাপীমেট্রো রেল প্রকল্প গড়ে তোলার কাজ বর্তমানে সমীক্ষা ও পরিকল্পনার বিভিন্ন পর্যায়েরয়েছে। যে যে শহরগুলিতে এই প্রকল্প রূপায়ণের প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে –দিল্লি মেট্রো রেলের চতুর্থ পর্যায়, দিল্লি ও জাতীয় রাজধানী অঞ্চল, বিজওয়াড়া,বিশাখাপত্তনম, ভোপাল, ইন্দোর, কোচি মেট্রোর দ্বিতীয় পর্যায়, বৃহত্তর চণ্ডীগড়অঞ্চলের মেট্রো প্রকল্প, পাটনা, গুয়াহাটি, বারাণসী, তিরুবনন্তপুরম, কোজিকোড় এবংচেন্নাই।