Quote“বিগত ১০ বছরে দেশের সেবায় আমাদের সরকারের উদ্যোগকে সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করেছেন ভারতের মানুষ”
Quote“বাবা সাহেব আম্বেদকরের দেওয়া সংবিধানের সুবাদে রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য না হয়েও আমার মতো মানুষের রাজনীতিতে প্রবেশ এবং এই পর্যায়ে পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে”
Quote“আমাদের সংবিধান আমাদের দিশা দেখায় আলোকবর্তিকার মতো”
Quote“মানুষ তৃতীয়বার আমাদের ক্ষমতায় এনেছেন এই বিশ্বাস থেকে যে আমরা ভারতের অর্থনীতিকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি করে তুলবো”
Quote“দেশের পক্ষে আগামী ৫ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ”
Quote“সুপ্রশাসনের আদর্শে এগিয়ে মানুষের ন্যূনতম প্রয়োজন পূরণের প্রশ্নে সম্পৃক্তির অধ্যায় করে তোলা হবে এই পর্বকে”
Quote“এখানেই আমরা থামবো না। আগামী ৫ বছরে নতুন নানা ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে কাজ করবো আমরা”
Quote“প্রতিটি পর্যায়ে অনুপরিকল্পনার মাধ্যমে বীজ থেকে বাজার পর্যন্ত কৃষকদের জন্য একটি শক্তিশালী ও বিস্তৃত প্রণালী গড়ে তোলায় আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি”
Quote“শুধু শ্লোগান নয়, নারী নেতৃত্বাধীন বিকাশের লক্ষ্যে ভারত দায়বদ্ধতার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে”
Quote“জরুরি অবস্থার পর্ব শুধু রাজনৈতিক নয়, ভারতের গণতন্ত্র, সংবিধান এবং মানবতার প্রশ্ন
Quoteসংসদে রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের ওপর ধন্যবাদজ্ঞাপক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় আজ রাজ্যসভাতে প্রধানমন্ত্রী জবাবি ভাষণ দিলেন।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমি এই আলোচনায় যোগদান করে রাষ্ট্রপতির অনুপ্রেরণামূলক এবং উৎসাহব্যাঞ্জক ভাষণের জন্য তাঁকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। মাননীয়া রাষ্ট্রপতির কথাগুলি দেশবাসীর জন্য শুধু অনুপ্রেরণার কারণই নয়, সেগুলি প্রকৃত সত্যের এক নিদর্শনও বটে।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

গত আড়াই দিনেরও বেশি সময় ধরে এই আলোচনায় প্রায় ৭০ জন মাননীয় সাংসদ তাঁদের বক্তব্য পেশ করেছেন। যাঁরা তাঁদের মূল্যবান মতামত জানিয়েছেন, তাঁদের আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের ওপর একটি সমৃদ্ধশালী আলোচনা নিশ্চিত হল। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এবং আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রের যাত্রায় এ দেশের জনগণ বেশ কয়েক দশক পরই একটি সরকারকে পরপর তিনবার দেশ শাসনের সুযোগ দিয়েছেন। গত সাত বছরে এই প্রথম ১০ বছর দায়িত্ব পালনের পরও একটি সরকার আবারও ক্ষমতায় ফিরে এল। ভারতের ৬০ বছরের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এটি অভূতপূর্ব। তবে, কেউ কেউ ইচ্ছে করে এই বিষয়টিকে এড়িয়ে যাচ্ছেন, কেউ আবার বুঝতে পারছেন না, আর যাঁরা বুঝতে পারছেন তাঁরা এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না, জনসাধারণের গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্তকে হৈ-হট্টগোলের মাধ্যমে খাটো করে দেখছেন। গত দু’দিন ধরে আমি দেখেছি তাঁরা একরাশ দুঃখ নিয়ে তাঁদের পরাজয়কে স্বীকার করে নিয়েছেন এবং আমাদের জয়কেও বাধ্য হয়েই স্বীকৃতি দিয়েছেন।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমি কংগ্রেস দলে আমাদের কয়েকজন বন্ধুকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। যখন নির্বাচনের ফলাফল আসা শুরু হয়, আমি দেখি জনসমর্থন না থাকা সত্ত্বেও আমাদের এক বন্ধু দৃঢ়ভাবে তাঁর দলীয় পতাকাটি নিয়ে একাকী দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আমি মনে করি, প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও তাঁর এই সিদ্ধান্ত আসলে হতাশারই এক চিত্র। কেন একথা বললাম? কারণ, তিনি বারবার ‘এক-তৃতীয়াংশ সরকার’-এর ধারণাটি সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা ১০ বছর ক্ষমতায় রয়েছি। আরও ২০ বছর ক্ষমতায় থাকব। এর থেকে চরম সত্যি আর কি হতে পারে? আমাদের ১০ বছরের শাসনকালে আমরা নির্ধারিত লক্ষ্যের এক-তৃতীয়াংশ অর্জন করতে পেরেছি। আরও দুই-তৃতীয়াংশ অর্জন করা বাকি রয়েছে। আমি সত্যি সত্যিই ঐ ব্যক্তির পূর্বাভাস দেওয়ার মানসিকতাকে সাধুবাদ জানাই। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

গত ১০ বছরে এ দেশে নিষ্ঠার সঙ্গে যে নিরন্তর কাজ করা হয়েছে, জনগণ আন্তরিকভাবে তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁরা আমাদের আশীর্বাদ করেছেন। এই নির্বাচনে দেশবাসীর প্রজ্ঞার জন্য আমরা গর্বিত। তাঁরা অপপ্রচারের উদ্যোগকে পরাজিত করেছেন। ভ্রান্ত রাজনীতিকে বর্জন করে আস্থার রাজনীতিতে বিশ্বাস রেখেছেন।  

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমাদের সংবিধান কার্যকর হওয়ার ৭৫তম বর্ষে আমরা প্রবেশ করেছি। এই সভারও ৭৫তম বার্ষিকী এ বছরই। এ এক অপূর্ব সমাপতন। যা এক মাইলফলক। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,
এ দেশে আমার মত অনেকেই আছেন, যাদের পরিবারের কেউ কখন-ও রাজনীতিতে যোগ দেন নি , এমন কি গ্রামের পঞ্চায়েতের প্রধানও হন নি, অথচ জনসেবায় যুক্ত হয়েছেন।আমাদের পারিবারিক ভাবে রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগ না থাকা সত্ত্বেও আমরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছি।আমরা বাবা সাহেব আম্বেদকরের জন্যই এই সূযোগ পেয়েছি, এই সংবিধানের জন্যই আমার মত অনেকেই আজ এই জায়গায় পৌঁছোতে পেরেছেন। জনগণ আমাদের তৃতীয়বার সরকার গড়ার সুযোগ দিয়েছেন। 
মাননীয় চেয়ারম্যান,
আমাদের কাছে সংবিধান কেবলমাত্র কতগুলি অধ্যায় সম্বলিত বই-ই নয়, এর শব্দগুলি এবং ভাবনা আমাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। আমরা মনে করি, এই সংবিধান অনেকটা বাতিঘরের মতো যা প্রতিটি সরকারকে নীতি প্রণয়নে এবং কাজকর্ম করতে পথ দেখায়। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমার এখনও মনে আছে সেদিনের কথা, যেদিন আমাদের সরকার লোকসভায় ঘোষণা করেছিল ২৯ নভেম্বরকে ‘সংবিধান দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। আজ যাঁরা সংবিধানের বইটিকে হাতে নিয়ে ওপরে তুলে দেখাচ্ছেন, তাঁরাই কেন আমরা এই দিনটি সংবিধান দিবস হিসেবে পালন করব, সেই সিদ্ধান্তের বিষয়ে সেদিন প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, আমাদের তো ২৬ জানুয়ারি রয়েছেই। তাঁদের এই আচরণ আমাকে বিস্মিত করে। সংবিধান দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে দেশে স্কুল-কলেজগুলির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সংবিধানের ভাবনাকে জাড়িত করাই আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা চাই ছাত্রছাত্রীরা সংবিধান প্রণয়নের সময় দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের ভূমিকার কথা জানুক, যে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, সেগুলি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হোক। এই দিনটি উদযাপনের জন্য রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনা এবং অন্যান্য নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। আগামীদিনেও যাতে এই সংবিধান আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা ভারতের সংবিধানের ৭৫তম বার্ষিকীতে প্রবেশ করেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দেশজুড়ে এটিকে উদযাপিত করব যার মাধ্যমে সংবিধানের ভাবনা এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলা যাবে। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

এ দেশের মানুষ তৃতীয়বার দেশকে সেবা করার সুযোগ আমাদের দিয়েছেন। এর মাধ্যমে উন্নত ও আত্মনির্ভর ভারত গড়ার পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এই সিদ্ধান্তকে কার্যকর করা জন্য হাজার হাজার মানুষ আমাদের আশীর্বাদ করেছেন। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

এই নির্বাচন শুধুমাত্র আমাদের গত ১০ বছরের সাফল্যকে স্বীকৃতিই দিচ্ছে না, পাশাপাশি উন্নত এবং স্বনির্ভর ভারত গড়ার সুযোগও এনে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলি কার্যকর করায়  কোটি কোটি মানুষ আমাদের আশীর্বাদ করেছেন। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

এই নির্বাচন শুধুমাত্র গত ১০ বছরে আমাদের কাজের সাফল্যকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না, এই নির্বাচন আমাদের ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে আস্থা যুগিয়েছে। এ দেশের জনগণের আমাদের প্রতি সেই আস্থা রয়েছে। তাঁরা তাঁদের স্বপ্ন পূরণের জন্য আমাদের সুযোগ দিয়েছেন। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

সারা দেশ জানে গত ১০ বছরে আমরা কি কি কাজ করেছি। আমরা সফলভাবে দশম স্থান থেকে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে উঠে আসতে পেরেছি। আমরা আরও চ্যালেঞ্জের সমাধান করব। করোনা অতিমারী, বিশ্বজুড়ে নানা সংঘাত এবং উত্তেজনা সত্ত্বেও আমরা আজ পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে উন্নীত হয়েছি। এবার দেশের জনগণ আমাদের অর্থনীতিকে পঞ্চম থেকে তৃতীয় স্থানে নিয়ে যাওয়ার রায় দিয়েছে এবং আমি নিশ্চিত যে দেশের জনগণ আমাদের যে রায় দিয়েছে তাতে আমরা ভারতের অর্থনীতিকে শীর্ষ তিনে নিয়ে যাব। আমি জানি মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয়, এখানে কিছু বিদ্বজন আছেন যারা বিশ্বাস করেন যে এর মধ্যে যা আছে তা নিজে থেকেই ঘটতে যাচ্ছে, ভারত আপনাআপনিই তৃতীয় অবস্থানে পৌঁছে যাচ্ছে। এরা আসলে অটো-পাইলট মোডে সরকার চালাতে বা রিমোট-পাইলটে সরকার চালাতে অভ্যস্ত, তাই তারা কিছু করতে বিশ্বাস করে না, তারা শুধু জানে কীভাবে অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। আগামীদিনে আমরা আমাদের উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করব যাতে গত ১০ বছরে যে সাফল্য আমরা অর্জন করেছি, তার উপর ভিত্তি করে আগামীদিনে আমাদের পরিকল্পনাগুলিকে বাস্তবায়িত করতে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে পারি।
মাননীয় চেয়ারম্যান,

সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে আমি প্রায়শই দেশবাসীকে বলেছি, গত ১০ বছরে আমরা যে কাজ করেছি, তা আসলে নিছক কলির সন্ধ্যা। আসল জিনিস তো শুরুই হয়নি। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আগামী পাঁচ বছরে মূল সুযোগ-সুবিধাগুলি যাতে প্রত্যেকের কাছে পৌঁছয় তা নিশ্চিত করা হবে। এই সময়কালে আমরা প্রত্যেক নাগরিকের কাছে প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেব যাতে তাঁরা মর্যাদাপূর্ণভাবে জীবনযাপন করতে পারেন। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আগামী পাঁচ বছরে লড়াইটা হবে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে। আমি বিশ্বাস করি, দরিদ্র মানুষেরা যখন ঐক্যবদ্ধ এবং একনিষ্ঠভাবে তাঁদের লড়াই চালাবেন, তখন সাফল্য অনিবার্য। আমি নিশ্চিত, আমার দেশ এই সংগ্রামে বিজয়ী হবে। গত ১০ বছরের অভিজ্ঞতা এবং সাফল্যের ওপর ভিত্তি করেই এই বিশ্বাস আমার হয়েছে। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

যখন ভারত তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে উন্নীত হবে, তখন তার সুফল সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌঁছবে। উন্নয়নের অফুরন্ত সুযোগ তৈরি হবে, আর এভাবেই আমরা তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক রাষ্ট্রে উন্নীত হব। ভারতের প্রতিটি স্তরে এর ইতিবাচক প্রভাব অনুভূত হবে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই প্রভাব হবে অভূতপূর্ব।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

অদূর ভবিষ্যতে স্টার্ট-আপ এবং নতুন সংস্থা আরও বেশি করে গড়ে উঠবে। দেশের উন্নয়নে আমাদের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সারির শহরগুলি চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে আমি মনে করি।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

এই শতাব্দী প্রযুক্তি-নির্ভর। নিশ্চিতভাবে আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্রে অনেক সাফল্য অর্জন করব। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আগামী পাঁচ বছরে গণ-পরিবহনে প্রভূত পরিবর্তন হবে। এই লক্ষ্যে কাজ করার জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ, যাতে কোটি কোটি দেশবাসী এর সুফল অনুভব করেন। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

ভারতের উন্নয়ন যাত্রায় আমাদের ছোট ছোট শহরগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। খেলাধূলা, শিক্ষা, উদ্ভাবন অথবা পেটেন্টের নিবন্ধীকরণ – প্রতিটি ক্ষেত্রে এই শহরগুলি নতুন ইতিহাস রচনা করবে বলে আমি মনে কর্ যা দেশের উন্নয়নে সহায়ক হবে। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

যেমনটা আমি আগেই বলেছিলাম, ভারতের উন্নয়ন যাত্রায় চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ রয়েছে।  বিভিন্ন ক্ষেত্রের ক্ষমতায়ন এবং নাগরিকদের জন্য নতুন নতুন সুযোগ করে দেওয়াই এদের কাজ। এর মাধ্যমে তাঁরা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবেন। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমরা কৃষক, দরিদ্র জনসাধারণ, যুব সম্প্রদায় এবং মহিলাদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ, আমাদের উন্নয়ন যাত্রায় এঁদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

কৃষক এবং কৃষিকাজের বিষয়ে অনেক বন্ধু তাঁদের পরিকল্পনার কথা আমাদেরকে জানিয়েছেন যার মধ্যে প্রচুর ইতিবাচক দিক রয়েছে। কৃষকদের প্রতি তাঁদের এই ভাবনাকে আমি সম্মান জানাই। গত ১০ বছরে আমরা কৃষিকাজকে লাভজনক করে তুলেছি। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকরা উপকৃত হয়েছেন। তাঁরা যাতে কৃষিকাজের জন্য সহজেই ঋণ পান, তা আমরা নিশ্চিত করেছি। অতীতের বিভিন্ন বাধাকে দূর করে শস্য বীমার আওতায় সকলের যাতে আসেন, আমরা তা নিশ্চিত করেছি। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে শস্য সংগ্রহের অতীতের সমস্ত রেকর্ড আমরা ভেঙেছি। কৃষকরা এর থেকে উপকৃত হয়েছেন। বীজ কেনা থেকে ফসল বাজারজাত করা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রকে আমরা শক্তিশালী করেছি। এক্ষেত্রে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিভিন্ন দিককে বিবেচনা করা হয়েছে যাতে সমগ্র ব্যবস্থাটি কৃষকের জন্য অনুকূল হয়।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

অতীতে ক্ষুদ্র চাষীদের কাছে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড অথবা ঋণ পাওয়ার বিষয়টি প্রায় অসম্ভব ছিল। অথচ এঁরাই সংখ্যায় বেশি। আজ আমাদের গৃহীত নীতির কারণে এই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। কিষাণ ক্রেডিট কার্ড বহু মানুষের কাছে পৌঁছেছে।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমরা কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুযোগ যাতে কৃষক থেকে মৎস্যজীবী পর্যন্ত সকলের কাছে পৌঁছায় তার জন্য এক সর্বাঙ্গীণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এর ফলে শুধু কৃষিক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও এই কার্ড পৌঁছে দেওয়া গেছে। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

কংগ্রেসের শাসনকালে অনেক সময়েই শোনা যেত কৃষকদের জন্য ঋণ মকুব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যে দাবিগুলি করা হত তা আসলে ভ্রান্ত ছিল। ৬০ হাজার কোটি টাকার ঋণ মকুব করা হয়। কিন্তু, আসলে তার সুফল পেয়েছিলেন মাত্র ৩ কোটি কৃষক। এই প্রকল্পের সুবিধা ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক চাষিদের কাছে পৌঁছয়নি।

কিন্তু মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমি আপনাদেরকে জানাব কিভাবে নীতি প্রণয়ন করতে হয়, এর সুফল অর্জন করতে হয় এবং কৃষকদের কাছে যাতে তার সুফল পৌঁছয় তা নিশ্চিত করতে হয়। কারণ, আমাদের সরকারের মূলমন্ত্রই হল কৃষককল্যাণ।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমরা ‘প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান যোজনা’র সূচনা করেছি। এর সুফল ১০ কোটি কৃষকের কাছে পৌঁছেছে। গত ছয় বছরে আমরা এই প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের ৩ লক্ষ কোটি টাকা প্রদান করেছি।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

যাঁরা মিথ্যা তথ্য প্রচার করে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করছেন, দেশ তাঁদের প্রত্যক্ষ করছে। সত্যকে ভয় পান এবং যে প্রশ্নগুলি তোলেন, তার জবাব শোনার মতো সাহস যাঁদের থাকে না, তাঁরা আসলে উচ্চকক্ষকে অসম্মান করেন, এর রীতিনীতিকে অবমাননা করেন।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

এ দেশের জনগণ তাঁদের পরাজিত করেছেন। তাঁদের মূলধন শুধুমাত্র রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে প্রচার করা, স্লোগান দেওয়া, কাজে বিঘ্ন ঘটানো এবং কোনো দায়িত্ব থেকে পালিয়ে যাওয়া। এটিই তাঁদের নিয়তি।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমি তাঁদের হতাশার কারণ উপলব্ধি করতে পারি, ১৪০ কোটি দেশবাসী যে রায় দিয়েছেন তাঁরা তা মেনে নিতে পারছেন না। গতকাল তাঁদের সমস্ত প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে। তাই আজ লড়াই করার মতো সাহসটুকুও তাঁদের নেই। এ কারনে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তাঁরা পালিয়ে গেছেন।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমি এখানে এসেছি দায়িত্ববোধ নিয়ে, কোনো বিতর্ক সভায় জয়লাভ করবার মানসিকতা নিয়ে আসিনি। দেশ সেবক হিসেবে এ দেশের মানুষের কাছে আমি দায়বদ্ধ। আমাদের দেশের নাগরিকদের কাছে প্রতিটি মুহূর্তের জবাবদিহি করতে হবে আমাকে। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে পৃথিবী জুড়ে সারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আমরা অঙ্গীকার করেছি আমাদের কৃষকরা যাতে এই সমস্যার সম্মুখীন না হন। তাই, কৃষিক্ষেত্রে ১২ লক্ষ কোটি টাকার ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হয়েছে যা এক রেকর্ড। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এর পরিমাণ সর্বোচ্চ। এর ফলে কৃষকরা উপকৃত হয়েছেন। তাঁদের ওপর কোনো বাড়তি আর্থিক বোঝা চাপেনি। সেই বোঝা সরকার নিজের কাঁধেই নিয়েছে। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমরা নতুন রেকর্ড করেছি। একইসঙ্গে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রেও আমরা নতুন আরেকটি রেকর্ড করেছি। অতীতে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ঘোষণা শুধু নিয়মের বেড়াজালেই আবদ্ধ ছিল। কৃষকরা তার সুফল পেতেন না। প্রকৃত অর্থে শস্য সংগ্রহ করা হত না। কিন্তু এখন আগের তুলনায় বিপুল পরিমাণে শস্য সংগ্রহ করা হয় কারণ, আমরা কৃষকদের ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

গত এক দশকে আমরা কংগ্রেস সরকারের নিরিখে ধান ও গম চাষিদের আড়াইগুণ বেশি আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি। আগামী পাঁচ বছরে এই ধারা শুধু যে বজায় থাকবে তাই নয়, তা নিয়মিতভাবে বৃদ্ধি পাবে। আমরা বিশ্বের বৃহত্তম খাদ্যশস্য মজুত করার প্রকল্প বাস্তবায়িত করছি। এই প্রকল্পের বিকেন্দ্রিকরণ করা হয়েছে। দেশজুড়ে লক্ষ লক্ষ শস্য মজুত রাখার গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলমূল এবং শাকসব্জিও মজুত রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে একটি সর্বাঙ্গীণ পরিকাঠামো গড়ে তুলতে আমরা ব্রতী হয়েছি। আমরা চাই কৃষকরা এই লক্ষ্যে উদ্যোগী হন। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর ভাবনায় দেশের সেবা করার জন্য আমরা সচেষ্ট হয়েছি। প্রত্যেক নাগরিক যাতে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারেন তা নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার। যাঁরা স্বাধীনতার পর দশকের পর দশক ধরে অবহেলিত হয়ে এসেছেন, এখন সময় এসেছে তাঁদের কথা ভাববার। আমরা আমাদের ভিন্নভাবে সক্ষম ভাই-বোনেদের বিভিন্ন সমস্যার কথা বিবেচনা করে সেগুলির সমাধানে উদ্যোগী হয়েছি। তৃণমূল স্তরে এমন কিছু ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে যার ফলে তাঁদের অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। তাঁরা নিজেরাই মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবেন। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমাদের সমাজে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা ঐতিহাসিকভাবেই অবহেলিত, নিপীড়িত। তাঁদের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে আমাদের সরকার যে আইন প্রণয়ন করেছে, পশ্চিমী বিশ্বও তার প্রশংসা করেছে। এই প্রগতিশীল ভাবনার জন্য ভারত গর্বিত। সমাজের মূলস্রোতে যুক্ত করতে আমরা উদ্যোগী হয়েছি। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরও পদ্ম সম্মানে ভূষিত করা হচ্ছে।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

যাযাবর সম্প্রদায়ের মতো যেসব আদিবাসীরা রয়েছেন, তাঁদের জন্য আমরা পৃথক কল্যাণ পর্ষদ গঠন করেছি। এর মাধ্যমে তাঁদের চাহিদাগুলি পূরণ করা সম্ভব হবে। তাঁরা যাতে স্থায়ী, সুরক্ষিত জীবনযাপন করতে পারেন, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমরা প্রায়শই শুনে থাকি, ‘পার্টিকুলার্লি ভালনারেবল ট্রাইবাল গ্রুপ – পিভিটিজি’র কথা। আমাদের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যেও যাঁরা প্রান্তিক মানুষ, তাঁদের বোঝাতেই এই শব্দগুলি ব্যবহার করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার এতগুলি বছর পরেও তাঁদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটেনি, তাঁরা অবহেলিতই থেকে গেছেন। আমরা পিএম জনমান যোজনার আওতায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি। এর ফলে এই পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা উপকৃত হবেন। সাধারণত রাজনৈতিক লাভের কথা বিবেচনা করেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু, আমাদের সরকার উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। রাজনৈতিক লাভের কথা ভাবি না কারণ, আমরা ভোট রাজনীতিতে উৎসাহী নই, আমরা উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাসী।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

ভারতের উন্নয়ন যাত্রায় প্রথাগত পারিবারিক দক্ষতা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বিশ্বকর্মা সম্প্রদায়ের দক্ষতা রয়েছে, কিন্তু ঐতিহাসিকভাবেই তাঁদের দক্ষতাগুলিকে নিয়ে কখনই ভাবনাচিন্তা করা হয়নি। আমরা বিশ্বকর্মা সম্প্রদায়ের আধুনিকীকরণ এবং পেশাদারিত্ব বাড়ানোর জন্য ১৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের সূচনা করেছি। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

ব্যাঙ্কগুলির জাতীয়করণ করার সময় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল দরিদ্র মানুষ, রাস্তার হকারদের মতো আর্থ-সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষদের সহায়তা করা হবে। কিন্তু, তাঁদের কাছে পৌঁছনোর সাহস কেউই দেখাননি। প্রথমবার রাস্তার হকারদের জন্য ‘পিএম স্বনিধি যোজনা’র সূচনা করা হয়। এর ফলে, এই হকাররা চড়া সুদে ঋণ নেওয়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেলেন। আজ তাঁরা মর্যাদার সঙ্গে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাচ্ছেন। এই পরিবর্তন ঋণদাতা এবং ঋণগ্রহীতা – দু’পক্ষের জন্যই আনন্দের। আগে হকাররা ঠেলাগাড়ি করে ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে বসতেন। এখন তাঁরা ছোট ছোট দোকান বানাচ্ছেন। আগে যাঁরা শ্রমিকের কাজ করতেন, তাঁরা এখন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন, অন্যের জন্য কাজের সুযোগ করে দিচ্ছেন। এর ফলে সমাজের দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়, দলিত, আদিবাসী এবং মহিলারা উপকৃত হচ্ছেন।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমরা যখন মহিলাদের নেতৃত্বে উন্নয়নের কথা নিয়ে আলোচনা করি, তখন আন্তর্জাতিক স্তরে একে প্রগতিশীল ভাবনা বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু, মহিলাদের নেতৃত্বে উন্নয়ন নিয়ে ভাবনাচিন্তাতেও ফাঁক থেকে যায়। এই পরিস্থিতিতে ভারতে আমরা মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য বাস্তবিকই উদ্যোগী হয়েছি। শুধুমাত্র স্লোগানের ঘেরাটোপে নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে যাতে এই ক্ষমতায়নের সুফল পৌঁছয়, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আমি মাননীয় সাংসদ সুধা মূর্তিজির কাছে আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। গতকালের আলোচনায় তিনি মহিলাদের স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেন। এই বিষয়টির গুরুত্ব তিনি তুলে ধরেন। তাঁর আবেগতাড়িত বক্তব্যে মা-কে হারানোর ক্ষতি যে অপূরণীয়, তা ফুটে উঠেছে। গত দশকে আমরা মহিলাদের স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা এবং তাঁদের কল্যাণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছি।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমরা শৌচাগার, স্যানিটারি প্যাড, রান্নার গ্যাসের সংযোগ এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য টিকাকরণের ব্যবস্থা করেছি, যার সুফল অগণিত মা ও বোনের কাছে পৌঁছেছে।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

স্বাস্থ্য পরিষেবার পাশাপাশি আমরা মহিলাদের স্বনির্ভর করার ক্ষেত্রেও ব্রতী হয়েছি। সম্প্রতি ৪ কোটি গৃহ নির্মাণ হয়েছে। এই বাড়িগুলির সিংহভাগের মালিকই মহিলারা। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা, ‘মুদ্রা’ এবং ‘সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা’র মতো বিভিন্ন প্রকল্পে মহিলাদের আর্থিকভাবে ক্ষমতাশালী করা হয়েছে। এর ফলে, তাঁদের পরিবারে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মহিলারা আরও বেশি অংশগ্রহণ করতে পারছেন। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিতে ১০ কোটি বোন আজ যুক্ত হয়েছেন। এর ফলে তাঁদের যেমন আস্থা বেড়েছে, পাশাপাশি আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পর্যন্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ১ কোটি মহিলা সফল শিল্পোদ্যোগী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। আগে গ্রামাঞ্চলেও তাঁদের অবহেলার চোখে দেখা হত। কিন্তু আজ আমি সগৌরবে ঘোষণা করছি যে এই ১ কোটি মহিলা ‘লাখপতি দিদি’ হয়ে উঠেছেন। আমরা এই সংখ্যাটিকে ৩ কোটিতে পৌঁছনোর পরিকল্পনা করেছি। এর মাধ্যমে দেশজুড়ে মহিলাদের ক্ষমতায়নের প্রশ্নে আমাদের অঙ্গীকার প্রতিফলিত।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

প্রতিটি ক্ষেত্রে যাতে মহিলাদের নেতৃত্বে উন্নয়ন হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুযোগ মহিলারা যাতে প্রথমে পান, সেই বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ‘নমো ড্রোন দিদি’ প্রকল্প এরকমই একটি সফল উদ্যোগ। এর মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের মহিলারা প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকদের সহায়তা করতে পারেন। এই মহিলাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তাঁরা আমাকে জানান, “স্যার, কিভাবে বাইসাইকেল চড়তে হয় আমরা কখনই তা জানতাম না। আর এখন আপনি আমাদের পাইলট বানিয়ে দিলেন। পুরো গ্রাম আমাদের ‘পাইলট দিদি’ নামে চেনে।” এঁদের এই নতুন সম্মান ব্যক্তি জীবনে চালিকাশক্তির কাজ করবে।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

এটি দুর্ভাগ্যজনক যে এই ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়েও রাজনীতি প্রায়শই জায়গা করে নেয়। এর ফলে নাগরিকরা ক্ষতির সম্মুখীন হন, বিশেষত মহিলারা। মহিলাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের প্রশ্নে বিরোধীরা যে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেন তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আপনার মাধ্যমে আমি কোনো নির্দিষ্ট একটি রাজ্যকে লক্ষ্য করে নয়, সারা দেশকে উদ্দেশ্য করেই কিছু কথা বলতে চাই। এক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক স্বার্থের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে না। সম্প্রতি আমি বাংলা থেকে আসা কিছু ছবি ও ভিডিও ক্লিপ দেখেছি, যেগুলি ভয়াবহ। এই ভিডিওটিতে দেখানো হচ্ছে এক মহিলা প্রকাশ্য রাস্তার নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আশেপাশের লোকেরা সেটি প্রতিরোধ না করে ভিডিও রেকর্ডিং করছেন। সন্দেশখালির এই ঘটনা ভয়াবহ। কয়েকজন বিশিষ্ট নেতার কাছে এই বিষয় সম্পর্কে আমি শুনেছি। কিন্তু, এটি এতটাই হৃদয় বিদারক যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তথাকথিত প্রগতিশীল মহিলা নেত্রীরাও এ বিষয়ে নীরবতা পালন করেছেন। হয়তো কোনো বিশেষ দল বা রাজ্যের প্রতি তাঁদের আনুগত্যের কারণেই এহেন আচরণ। মহিলাদের ওপর নির্যাতনের এই ঘটনা সত্ত্বেও যাঁরা নীরব থেকেছেন, সেই নেতৃবৃন্দের এহেন আচরণ লজ্জাজনক।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

বিশিষ্টজনদের এই ধরনের ঘটনাকে এড়িয়ে চলার প্রবণতাও আমাদের মা ও বোনেদের জন্য ক্ষতিকারক।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

রাজনীতি ক্রমশই বিষয় নির্ভর হয়ে উঠছে। যখন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থী কোন কিছু হয়, তখন তাঁরা ক্ষেপে ওঠেন, অন্য সময়ে চুপচাপ থাকেন। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

একটি নিরঙ্কুশ, সংখ্যাগরিষ্ঠ স্থায়ী সরকারকে তৃতীয়বার নির্বাচিত করার মাধ্যমে ভারতের জনগণ দেশের স্থিতিশীল অবস্থাকেই নিশ্চিত করেননি, এই নির্বাচনী ফলাফলের মাধ্যমে সারা বিশ্বের কাছে একটি বার্তাও পৌঁছে দিয়েছেন। ভারত এখন বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, অনিশ্চয়তার সময়কাল দূর হয়েছে। ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের ফলে যুব সম্প্রদায়ের জন্য নতুন নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাঁরা আন্তর্জাতিক স্তরে তাঁদের প্রতিভা প্রদর্শন করতে পারছেন। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভারসাম্য বজায় রাখতে যাঁরা সওয়াল করেন, তাঁদের কাছে ভারতের নির্বাচনী ফলাফল আরও আশার সঞ্চার করেছে। আজ বিশ্বজুড়ে ভারতের স্বচ্ছতা প্রশংসিত। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পরেই মূলধনী বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে আমি বলতে পারি, আমাদের কংগ্রেস দলের সদস্যরাও এটি উদযাপন করেছেন। তবে, তাঁরা কেন খুশি হয়েছেন তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। অনেকগুলি প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। পরাজয়ের হ্যাট্রিকের কারণেই কি এই আনন্দ? এটি কি ‘নার্ভাস ৯০’-এর কারণে মৃত্যুর জন্য? নাকি এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানের কারণে?

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমি দেখলাম, খাড়গেজি দৃশ্যতঃ খুশি। হয়তো তাঁর দলে যাঁরা পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছেন, তাঁদের রক্ষা করতে তিনি খুব ভালো কাজ করেছেন বলে তাঁর এই আনন্দ। এক্ষেত্রে কংগ্রেসের মনোভাব ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। দলিত এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর নেতৃত্বের ওপর দায় চাপানো হয়। লোকসভায় স্পিকার নির্বাচনেও তার অন্যথা হয়নি। তাঁরা জানেন, পরাজয় অবধারিত। তা সত্ত্বেও কৌশলগতভাবে একজন দলিত প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল তাঁরা। ২০২২ সালে রাষ্ট্রপতি এবং উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও তাঁরা একই কাজ করেছিলেন। দলিত নেতা সুশীল কুমার শিন্ডেকে উপ-রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছিল। ২০১৭ সালে মীরা কুমারকেও প্রার্থী করা হয় এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রেই পরাজয় অবধারিত ছিল। কংগ্রেসের তপশিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী বিরোধী নীতির কারণে তারা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোবিন্দকে অসম্মান করেছেন। এই মানসিকতার জন্যই দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতির নির্বাচনে তারা বিরোধিতা করে এবং অবমাননাকর মন্তব্য করা থেকেও পিছপা হয়নি।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

সংসদের উচ্চকক্ষ ফলপ্রসূ বিতর্ক ও জ্ঞানগর্ভ আলোচনার জায়গা। এখানের আলোচ্য বিষয়গুলি থেকে দেশবাসী উপকৃত হয়। কিন্তু, গত দু’দিন ধরে বিভিন্ন বরিষ্ঠ নেতা-নেত্রী যে ভাষা ব্যবহার করছেন, তাতে শুধু আমি নই, গোটা দেশ হতাশ। বলা হচ্ছে, দেশের ইতিহাসে এটিই প্রথম নির্বাচন যা আসলে সংবিধানকে রক্ষা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি তাঁদেরকে কয়েকটি জিনিস মনে করিয়ে দিতে চাই। তাঁরা কেন এই মিথ্যাচারণ করছেন? তাঁরা কি ১৯৭৭-এর নির্বাচন ভুলে গেলেন যখন সংবাদপত্রের মুদ্রণে বাধা দেওয়া হত, বেতারের কন্ঠ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল, এমনকি, মানুষের মত প্রকাশের অধিকারও হরণ করা হয়। সেই সময় জনগণ একটি বিষয়ের কারণে ভোট দিয়েছিলেন – গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা। ১৯৭৭-এর নির্বাচন দেখিয়েছিল ভারতীয় জনজীবনে গণতন্ত্রের প্রভাব কতটা গভীর। আমরা কি এই মিথ্যা প্রচার চলতে দেব? আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ১৯৭৭-এর নির্বাচন ছিল সংবিধান রক্ষার নির্বাচন যেখানে আমাদের দেশের মানুষ জোটবদ্ধভাবে, যারা সংবিধানের পবিত্রতাকে হরণ করেছিল, সেই শক্তিকে অপসারিত করে। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন যদি সংবিধান রক্ষার জন্য হয়, তাহলে বলতে হবে মানুষ সেই সংবিধান রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের কাঁধে ন্যস্ত করেছে। তাঁরা বিশ্বাস করেন, সংবিধানকে আমরাই কেবল রক্ষা করতে পারি।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

যখন খাড়গেজি এ ধরনের মন্তব্য করেন, তখন খুবই খারাপ লাগে। কারণ, জরুরি অবস্থার সময় যে নির্যাতন হয়েছে তিনি নিজে তার সাক্ষী। সেই সময় সংবিধানের সম্মানহানি হয়েছে, গণতন্ত্রের মর্যাদাহানি হয়েছে, সংবিধানের ওপর বুলডোজার চালানো হয়েছে। সেই দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়েও তিনি সদনকে ভুল পথে চালিত করেছেন। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমি নিজে জরুরি অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছি। কোটি কোটি মানুষ অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। তাঁদের বেঁচে থাকাই ছিল কষ্টকর। সেই সময়ের কথা সংসদে যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করা আছে। আজ যাঁরা ভারতের সংবিধান নিয়ে কথা বলেন তাঁদের উদ্দেশে বলি, যদিও লোকসভার সময়কাল পাঁচ বছরের, কিন্তু আপনারা তো সাত বছরের সময়কালে ছিলেন। সংবিধানের কোন শক্তিবলে আপনারা সেই সময়ে মানুষকে অত্যাচার করেছেন, আর আজ আপনারা সাংবিধানিক রীতিনীতি নিয়ে আজ আমাদের ভাষণ দিচ্ছেন? 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

সংবিধানের মূল ভাবনাকে অগণিত সংশোধনীর মাধ্যমে এরা ধ্বংস করেছে – ৩৮তম, ৩৯তম এবং ৪২তম সংশোধনী। এগুলিকে তো প্রায়ই সংবিধানের ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা হয়। তাহলে আজ কিভাবে এঁরা বলেন সংবিধানকে রক্ষা করা হচ্ছে, যখন তাঁরা নিজেরাই সংবিধানে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছেন? পূর্ববর্তী সরকারের মন্ত্রিসভায় খাড়গেজি ১০ বছর ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর পদ একটি সাংবিধানিক পদ। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কাজকর্ম দেখার জন্য জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছিল। সংবিধানের কোন ধারায় এই ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়? এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদের তো অবমাননা করা হয়েছে। দূরসঞ্চার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই পদকে পরিচালনা করা হয়েছে। এর থেকে মাথায় একটি প্রশ্নই আসে, কোন সংবিধান এহেন হস্তক্ষেপকে আইনি বৈধতা দেয়?

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আপনি কি একটু বুঝিয়ে বলবেন, কোন সংবিধান একজন সাংসদকে মন্ত্রিসভার একটি সিদ্ধান্তের কাগজ ছিঁড়ে ফেলার অধিকার দেয়। কোন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এই কাজ হয়?

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমাদের দেশ একটি সুন্দর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালিত হয় যেখানে রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং অধ্যক্ষের দায়িত্ব সুন্দরভাবে বন্টিত আছে। এই নিয়ম ভেঙে শুধুমাত্র একটি পরিবারের স্বার্থ রক্ষার জন্য সমস্ত সাংবিধানিক দপ্তরের কাজ করার কারণটা কি? কোন সংবিধান এ ধরনের কাজের অনুমতি দিয়েছে? শুধুমাত্র একটি পরিবারকে সংবিধানের মাথায় বসিয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার নীতি অনুসরণ করায় এর মর্যাদা কি ক্ষুণ্ণ হয়নি? আজ আপনারা সংবিধানের পক্ষে সওয়াল করছেন, জয় সংবিধান বলে স্লোগান তুলছেন, কিন্তু ইতিহাস বলে ইন্ডিয়াই ইন্দিরা, ইন্দিরাই ইন্ডিয়া – এই স্লোগানও তোলা হয়েছিল। সেখানে সংবিধানের সম্মানের কথা কেউ বিবেচনা করেননি।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমি গুরুত্ব সহকারে বলছি, আমাদের দেশের সংবিধানের সবথেকে বড় বিরোধী হল কংগ্রেস দল।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

তাঁরা এতটাই ধৃষ্ট যে, এই আলোচনা চলার সময় তাঁরা ২০০ থেকে ৫০০ বছর আগের ঘটনা উল্লেখ করেন অথচ, জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গে তাঁরা বলেন এটি ‘পুরনো একটি ঘটনা’।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

এই সদনে সংবিধান নিয়ে আলোচনা করার উদ্যোগকে প্রায়শই বাধা দেওয়া হয়েছে বিশেষ করে, যখন জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গে উত্থাপিত হয়েছে। আজ যাঁরা এখানে বসে আছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই সেই অন্ধকার যুগের শিকার। কিন্তু সেই অপশক্তির দিকে সমর্থন যোগানো আসলে তাঁদের সুযোগ সন্ধানী মানসিকতারই প্রতিফলন। যদি সংবিধানের প্রতি তাঁরা দায়বদ্ধ থাকতেন, তাহলে তাঁরা কখনই এই কাজ করতেন না।  

মাননীয় চেয়ারম্যান,

জরুরি অবস্থা শুধু যে রাজনৈতিক সঙ্কটেরই সৃষ্টি করেছিল তা নয়, এর মাধ্যমে মানবিকতারও সঙ্কট দেখা দেয়, যার প্রভাব গণতন্ত্র ও সংবিধানের ওপর পড়ে। অনেকেই সেই সময় নির্যাতিত হয়েছেন, কারাগারে কেউ কেউ প্রাণ হারিয়েছেন। সেই সময় কারাগারে বসবাসের কারণে জয়প্রকাশ নারায়ণজির স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। শুধুমাত্র রাজনীতিবিদরাই নন, সাধারণ মানুষও সেই নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি। এমনকি, নিজের দলের নেতারাও ছাড় পাননি। তাঁরাও অত্যাচারিত হয়েছেন। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

সেই অন্ধকারময় দিনগুলিতে এমন উদাহরণও আছে যেখানে অনেকেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন কিন্তু আর ফেরেননি। তাঁরা কোথায় গেছেন আজও তা অজানা। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

অনেক রাজনৈতিক দল প্রায়শই বলে থাকেন তারা সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় সক্রিয় এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে তারা সোচ্চার হন। মুজফফরনগরের অথবা তুর্কমান গেটে জরুরি অবস্থার সময় সংখ্যালঘুদের দুর্দশার কারণ আলোচনা করার সাহস কি তাদের কারোর রয়েছে?

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আর আজ তাঁরা কংগ্রেসকে ক্লিনচিট দিচ্ছেন। দেশ কিভাবে তাঁদের ক্ষমা করবে? যাঁরা এই ধরনের একনায়কতন্ত্রের পক্ষে সওয়াল করছেন, তাঁদের এই আচরণ অত্যন্ত লজ্জাজনক। তাঁদের সেই অপকর্মকে দূর করতেই বোধহয় তাঁরা সংবিধানকে হাতে নিয়ে হৈ-হট্টগোল করছেন।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

সেই সময়কালে অনেক ছোট ছোট রাজনৈতিক দল জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল। পরবর্তীতে তারা নিজেদের জনসমর্থন বৃদ্ধি করে। কিন্তু আজ তারা কংগ্রেসকে সমর্থন করছে। গতকাল আমি লোকসভায় বলেছিলাম, কংগ্রেসের সময়কালে যে সব দলের সাহায্য নেওয়া হত , কংগ্রেস সেই দলকেই ধ্বংস করত। কংগ্রেস হল একটি পরজীবী দল। যখন এই দল এককভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, তখন তাদের সাফল্যের হার খুবই খারাপ হয়। আর যখন তারা কাউকে সঙ্গে পায়, তখনই জয়লাভ করে। কংগ্রেস তার জোটসঙ্গীদের ভোট কেটে নেয়। তারা মানুষের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ। ভুল তথ্য প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে তারা। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

উচ্চকক্ষে উন্নয়নমূলক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। কিন্তু, কংগ্রেস সদস্যরা নির্লজ্জভাবে সেইসব ব্যক্তিকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ রয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গেও তাঁরা ছবি তোলেন। আগে তাঁরা অভিযোগ করতেন আমরা কেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছি না। এখন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের জেলে পাঠানো হলে এই দল তাদের সমর্থনে প্রতিবাদ জানায় এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

এই আলোচনা চলার সময় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করা হয়েছে। বলা হয়েছে সরকার এই সংস্থাগুলিকে অপব্যবহার করছে। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আপনাকে কিছু তথ্য জানাই : আপ-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আবগারি কেলেঙ্কারি, ক্লাসরুম নির্মাণ কেলেঙ্কারি যেখানে শিশুদের ভবিষ্যৎ জড়িত এবং জল কেলেঙ্কারির মতো অভিযোগও রয়েছে। কংগ্রেস আপ-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে, আপ-কে আদালতে নিয়ে গেছে, আর এখন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গেলে তারা মোদীর ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। এখন এই দলগুলি পরস্পর পরস্পরের অংশীদার হয়ে উঠেছে। এদের যদি সাহস থাকে তাহলে কংগ্রেসের কাছ থেকে উত্তর দাবি করুক। আমি এই প্রসঙ্গটি আপ সদস্যদের কাছে রাখলাম। কংগ্রেস বিভিন্ন সাংবাদিক সম্মেলনে আপ-এর বিরুদ্ধে যে নথিগুলি দেখিয়েছে, সেগুলি কি সঠিক না ভুল ছিল। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমার সন্দেহ আছে, এই অভিযোগের তাঁরা জবাব দেবেন কিনা। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

এঁরা দু’মুখো নীতি নিয়ে চলে। আমি দেশবাসীর কাছে এই বিষয়ে আরও কিছু জানাতে চাই। এঁরা দিল্লিতে বসে ধর্না দেন, তদন্তকারী সংস্থাগুলির সমালোচনা করেন, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বাঁচাতে পদযাত্রা করেন, আবার কেরালায় এঁদের নেতারাই সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে জেলবন্দী করার দাবি জানান। তাঁরা দিল্লিতে ইডি এবং সিবিআই-এর কাজের বিরোধিতা করেন, অন্যদিকে কেরালার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য এই সংস্থাগুলিকেই দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি আবগারি কেলেঙ্কারির তথ্য সামনে এসেছে। আপ সদস্যরা ইডি এবং সিবিআই-এর তদন্ত দাবি করেছেন। তাঁরা প্রকাশ্যে ইডি-কে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। ঐ সংস্থার পক্ষে তাঁরা সওয়াল করেন। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

যাঁরা তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে সমালোচনা করছেন এবং আজ এখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন, আমি তাঁদেরকে অতীতের ঘটনাবলী স্মরণ করতে বলি। এই সংস্থাগুলিকে আগে কিভাবে অপব্যবহার করা হত। ২০১৩ সালে মুলায়েম সিংজি বলেছিলেন, “কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করাটা সোজা নয়, তারা আপনাকে কারাবন্দী করবে, সিবিআই-কে কাজে লাগাবে। কংগ্রেস সিবিআই এবং আয়কর দপ্তরের মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে আমাদের সমর্থন চাইবে।” সংসদের সম্মানীয় সদস্য রামগোপালজিকে জিজ্ঞাসা করছি, মুলায়েম সিংজি কি কখনও মিথ্যা বলতেন? তিনি তো সত্য কথাই বলতেন। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমি রামগোপালজিকে অনুরোধ করব তিনি তাঁর ভাইপোকে এই বিষয়টি একটু মনে করিয়ে দিন। তাঁর দিক থেকে এটুকুই যথেষ্ট।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমি ২০১৩ সালের আরেকটি বক্তব্যের কথা উল্লেখ করি। কমরেড শ্রী প্রকাশ কারাত বলেছিলেন, “কংগ্রেস সিবিআই-কে ব্যবহার করে বিভিন্ন দলের সঙ্গে রাজনৈতিক দরাদরি করেছিল।” ২০১৩ সালে এই সংস্থাগুলিকে অপব্যবহারের প্রসঙ্গেই তিনি একথা বলেন। এছাড়াও, সুপ্রিম কোর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই। সর্বোচ্চ আদালত ইউপিআই সরকারের আমলে সিবিআই-কে খাঁচাবন্দী তোতা বলে অভিহিত করেছিল। আজ আমাদের কাছে প্রমাণ আছে কারা এই এজেন্সিগুলিকে অপব্যবহার করেছিলেন। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমার কাছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইটি নির্বাচনে জয়লাভ অথবা পরাজয়ের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দুর্নীতিকে নির্মূল করাই আমার মূল উদ্দেশ্য কারণ, এই দুর্নীতিই আমাদের দেশকে দুর্বল করেছে। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি আমার পবিত্রতম কাজ। ২০১৪ সালে আমাদের সরকার যখন নির্বাচিত হয়, তখন আমরা দুটি বিষয়ে শপথ নিয়েছিলাম। আমরা দরিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করব এবং দুর্নীতি ও কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই করব। ২০১৪ সালে আমি জনসমক্ষে এই ঘোষণা করেছি। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা বিশ্বের বৃহত্তম কল্যাণ প্রকল্প ‘গরীব কল্যাণ যোজনা’র সূচনা করেছি। একইসঙ্গে আমরা নতুন আইনের প্রবর্তন করি যার মাধ্যমে দুর্নীতির সমস্যাকে সমাধান করা যাবে। আমরা ১৯৮৮ সালের দুর্নীতি বিরোধী আইনের সংশোধন করি, কালো টাকার বিরুদ্ধে নতুন আইন নিয়ে আসি, বেনামি সম্পত্তি প্রতিরোধে নতুন আইন বলবৎ করি। এর ফলে, দুর্নীতিগ্রস্ত আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। আমরা প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা আরও নিখুঁতভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিই। এক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলস্বরূপ, আজ প্রত্যেক সুবিধাভোগীর কাছে সরাসরি তাঁর অর্থ পৌঁছে যাচ্ছে। যখন নাগরিকরা উন্নত পরিষেবা পান, তখন গণতন্ত্রের প্রতি তাঁদের আস্থা বৃদ্ধি পায়। সরকার তাঁদের আরও কাছের হয়ে ওঠে।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমি কোনরকমের গোপনীয়তা না রেখে স্পষ্ট কথা বলতে চাই। আমি দেশকে আশ্বস্ত করছি এই বলে যে সংস্থাগুলিকে আমরা দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি। সরকার তাদের কাজকর্মে কোনো ব্যাঘাত ঘটাবে না। তারা যাতে সততার সঙ্গে কাজ করে, আমি সেই নির্দেশই দিচ্ছি।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমি আবারও দেশবাসীকে জানাচ্ছি, কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এটি মোদীর গ্যারান্টি। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

তাঁর অভিভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি বড় সমস্যা। আমি আশা করেছিলাম দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দল এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর বিষয় যার সঙ্গে আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ যুক্ত। কিন্তু, এই বিষয়টিও রাজনীতির শিকার হল। এর থেকে দুর্ভাগ্যজনক আর কি হতে পারে? আমি আমার দেশের যুবক-যুবতীদের আশ্বস্ত করছি, যারা আপনাদের প্রতারিত করেছে তারা কেউ রেহাই পাবে না। আমাদের যুবক-যুবতীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা খেলা করতে চেয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সংসদে আমরা কঠোর আইন নিয়ে এসেছি। যুবক-যুবতীদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা যাতে পূরণ হয় তা নিশ্চিত করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি যাতে তাঁরা দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে তাঁদের দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারেন এবং নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারেন। এটি আমাদের অঙ্গীকার, আর আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

অভিযোগ জানানো যেতেই পারে, কিন্তু কেউ কেউ অভিযোগ জানিয়ে দূরে সরে যান। কারণ, এক্ষেত্রে কোনো প্রমাণের প্রয়োজন হয় না। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে জম্মু-কাশ্মীরে যে পরিমাণ ভোট পড়েছে, গত চার দশকের হিসেবে তা সবথেকে বেশি। এর জন্য কোনো প্রামাণ্য নথির প্রয়োজন হয় না। তাঁরা ভারতের সংবিধান, গণতন্ত্র এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা রেখেছেন। দেশ এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করেছিল। মাননীয় চেয়ারম্যান, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে হরতাল, জঙ্গী হানা এবং বোমা হামলার মধ্যেও এই অঞ্চলে পেছনের সারিতে গণতন্ত্র ছিল। আজ যখন মানুষ সেই সুযোগ পেয়েছেন তখন তাঁরা আবারও সংবিধানের প্রতি তাঁদের আস্থা রেখেছেন। আমি জম্মু-কাশ্মীরের ভোটদাতাদের আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জম্মু-কাশ্মীরে আমাদের লড়াই এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। জঙ্গীবাদকে ধ্বংস করতে আমরা সর্বাঙ্গীণ উদ্যোগ নিয়েছি। পূর্ববর্তী বছরগুলির তুলনায় গত এক দশকে জঙ্গী হানা যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। পাথর ছোড়ার ঘটনা এখন দু-এক জায়গায় মাঝে-মধ্যে ঘটে। সন্ত্রাসবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদ জম্মু-কাশ্মীর থেকে বিদায় নিচ্ছে। সেখানকার মানুষ সক্রিয়ভাবে আমাদের উদ্যোগে সঙ্গ দিচ্ছেন। আজ এই অঞ্চলে পর্যটন শিল্প নতুন রেকর্ড গড়ছে। এখানে বিনিয়োগ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

যাঁরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাঁরা রাজনৈতিক লাভের জন্য ঐ অঞ্চলকে দীর্ঘদিন অবহেলা করে এসেছেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে লোকসভার সদস্য সংখ্যা খুবই কম। রাজনৈতিক দিক থেকে যা তাৎপর্যপূর্ণ নয়। তাই, এই অঞ্চল অবহেলিত থেকে গেছে। আজ উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে আমরা দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে উদ্যোগী হয়েছি। রেল, পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচির মাধ্যমে এই অঞ্চল পূর্ব এশিয়ার প্রবেশ দ্বার হয়ে উঠেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ বলছেন, একবিংশ শতাব্দী ভারতের। আর তাঁদের ভূমিকা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। 

মাননীয় চেয়ারম্যান
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গত পাচ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা কংগ্রেসের দু’দশকের শাসনকালের থেকেও বেশি; হয়তো এক প্রজন্মের থেকেও বেশি। আমরা অভূতপূর্ব গতিতে এই অঞ্চলে উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। আজ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটেছে। আমরা পরিকাঠামো ক্ষেত্রের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

গত এক দশকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নিরন্তর প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের আস্থা অর্জন করা হয়েছে। সীমিত সুযোগের মধ্যেও আমরা অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছি। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে যে সংঘাত ছিল, যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। এর জন্য যে চুক্তি হয়েছে তা যথাযথভাবে নথিবদ্ধ করে রাখা হয়। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি সংঘর্ষে লিপ্ত থাকত, বিরোধী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে মারামারি করত। ফলস্বরূপ, রক্তপাত অনিবার্য ছিল। আজ এই গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে আমরা বিভিন্ন চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। তারা অস্ত্র আত্মসমর্পণ করেছে। যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ ছিল, তাদের সেই অপরাধের  যথাযথ তদন্ত হয়েছে। আজ তারা আদালতের সম্মুখীন। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই অঞ্চলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের সংবিধান, গণতন্ত্র এবং প্রশাসনের প্রতিও বিশ্বাস বেড়েছে।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

গত অধিবেশনে আমি মণিপুর নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আজ সেই প্রসঙ্গটি আরও একবার তুলছি। মণিপুরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সরকার সবরকমের প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। সেখানে ১১ হাজার এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। মণিপুর খুব ছোট্ট একটি রাজ্য। ইতোমধ্যেই ৫০০-র বেশি গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, মণিপুরে সহিংস ঘটনা ক্রমশ নিম্নমুখী। এর মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের শান্তি এবং উন্নয়নের প্রতি আস্থা প্রকাশিত। আজ রাজ্যের বেশিরভাগ অঞ্চলের স্কুল, কলেজ, অফিস সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে মণিপুরেও পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা এই উন্নয়ন যাত্রার শরিক।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই অঞ্চলে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সমাজের ছোট ছোট প্রতিটি অংশের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে বিপুল এই কর্মযজ্ঞ সাধিত হচ্ছে। এই ধরনের উদ্যোগ অতীতের সরকারগুলি কখনই গ্রহণ করেনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নিজে বহুদিন সেখানে থেকেছেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সেখানে সপ্তাহের পর সপ্তাহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

এই অঞ্চলে একটি রাজনৈতিক নেতৃত্ব রয়েছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকরা সংশ্লিষ্ট অঞ্চল নিয়মিত সফর করছেন। তাঁরা সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন এবং প্রতিটি সমস্যার সমাধান করছেন।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

বর্তমানে মণিপুর বন্যা কবলিত। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে সব ধরনের সহায়তা করছে। সেখানে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দুটি দল রয়েছে। অর্থাৎ, প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের সময়েও কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথভাবে ঐ অঞ্চলে কাজ করে চলেছে। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

মণিপুরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য রাজনৈতিক ভেদাভেদকে দূরে সরিয়ে রেখে আমাদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

যাঁরা মণিপুরকে অশান্ত করতে চান, আমি তাঁদের এ ধরনের কাজে লিপ্ত না হওয়ার জন্য সতর্ক করছি। একটা সময় আসবে যখন মণিপুরের মানুষ এইসব ব্যক্তিত্বকে বর্জন করবেন।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

যাঁরা মণিপুরের ইতিহাস জানেন, তাঁদের নিশ্চয় মনে আছে এই অঞ্চলে সামাজিক বিভাজন দীর্ঘদিনের। এটিকে অস্বীকার করা যায় না। কংগ্রেসেরও এই বিষয়গুলি মনে রাখা প্রয়োজন। মণিপুরের মতো একটা ছোট্ট রাজ্যে তারা ১০ বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেছিল। এই সমস্যাগুলি রয়েছে। কিন্তু, আমাদের সময়কালে এগুলির পুনরাবৃত্তি হয়নি। বর্তমানে রাজনৈতিক লাভের কারণেই ঐ অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে অপপ্রচার চলছে।  

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমি এই পবিত্র সভার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে চাই যে, ১৯৯৩ সালেও মণিপুরে একই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল। সেই পরিস্থিতি পাঁচ বছর সেখানে ছিল। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। আমরা প্রত্যেকের কাছে এর জন্য সহযোগিতা প্রার্থনা করছি। সেখানে যাতে স্বাভাবিক অবস্থা ও শান্তি ফিরে আসে – এটিই আমাদের মূল লক্ষ্য।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমি এই বিষয়টিকে অত্যন্ত সৌভাগ্যের বলে মনে করি যে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে বেশ কিছু সময় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ করার সুযোগ আমার হয়েছে। এর ফলে, সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে আমি সচেতন হয়ে উঠেছি। জি-২০ শিখর সম্মেলনের সময় সেই অনুযায়ী, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র দিল্লি নয়, বিভিন্ন প্রদেশেও জি-২০ সংক্রান্ত আয়োজনের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঐ রাজ্যগুলির সম্ভাবনা সম্পর্কেও আন্তর্জাতিক মহল ওয়াকিবহাল হয়ে উঠেছে। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়মিত যেভাবে আলোচনা হয়েছে, তা স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে নজির।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

সংসদের এই কক্ষ রাজ্যগুলির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত। সেজন্য এই সভা প্রাদেশিক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। আমি কয়েকটি কথা বলতে চাই। বর্তমানে আমরা পরবর্তী বিপ্লবের দোরগোড়ায়। এই প্রেক্ষিতে প্রতিটি রাজ্যকে সেমিকন্ডাক্টার এবং বৈদ্যুতিন উৎপাদন সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য অনুরোধ করছি। বিনিয়োগ আকর্ষণ, সুপ্রশাসন এবং নীতিগত স্বচ্ছতার প্রশ্নে একটি প্রতিযোগিতা তৈরি হোক – এমনটাই কাম্য। সারা বিশ্ব ভারতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এর সুযোগ নেওয়া উচিৎ। 

কর্মসংস্থান নিয়ে রাজ্যগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে না কেন? তেমনটা হলে উপকৃত হবে যুব সমাজ। 

বর্তমানে উত্তর আসামে সেমিকন্ডাক্টার ক্ষেত্র দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। এর ফলে, শুধু আসামই নয়, সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চল উপকৃত হবে এবং লাভবান হবে সারা দেশ। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

২০২৩ বর্ষটিকে আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে রাষ্ট্রসংঘ। এই শস্যকে ভারতের শক্তি ও সম্ভাবনা বলে চিহ্নিত করেছে সারা বিশ্ব। বিষয়টি আমাদের ক্ষুদ্র কৃষকদের, বিশেষত যেসব অঞ্চলে জল এবং সেচ ব্যবস্থার সুবিধা কম, সেইসব এলাকার কৃষকদের পক্ষে উৎসাহজনক। আন্তর্জাতিক বাজারে মিলেটের আরও বিপণনের জন্য উদ্যোগী হতে রাজ্যগুলির কাছে আবেদন রাখছি। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমাদের দেশে মিলেট সারা বিশ্বে পুষ্টি সমস্যার মোকাবিলা করতে পারে, এই শস্য ‘সুপার ফুড’। মিলেট জনপ্রিয় হলে সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ভারতের গুরুত্ব আরও বাড়বে। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

একবিংশ শতকে ‘ইজ অফ লিভিং’ প্রতিটি নাগরিকের প্রাপ্য। নীতি, আইন এবং প্রণালীর প্রশ্নে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে মানুষের জীবনযাত্রা আরও সহজ করে তোলায় উদ্যোগী হতে হবে রাজ্যগুলিকে।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই পঞ্চায়েত, পুরসভা, পুর নিগম, জেলা পরিষদ – প্রশাসনের সর্বস্তরেই ছড়িয়ে পড়া উচিৎ। তেমনটা হলে তবেই আমরা সাধারণ মানুষকে দুর্নীতির হাত থেকে রেহাই দিতে পারব। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

মানব দক্ষতার বিকাশে আরও বড় ধরনের উদ্যোগ প্রয়োজন। একবিংশ শতকের ভারত গঠনে প্রশাসন, পরিষেবা প্রদান কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ – সব ক্ষেত্রেই দক্ষতার বিকাশ জরুরি। দক্ষতা নিশ্চিত হলে প্রশাসনিক স্বচ্ছতাও সম্ভব হয়ে উঠবে। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমি প্রত্যয়ী যে, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সরকারি হস্তক্ষেপ যথাসম্ভব কম হওয়া উচিৎ। সেই লক্ষ্যেই এগোনো হচ্ছে। নিজস্ব উদ্যোগে যাঁরা এগোতে চান, তাঁদের সামনে সরকারের তরফে বাধা তৈরি হওয়া উচিৎ নয়। এই বিষয়টি মাথায় রেখে প্রশাসনগত উদ্যোগ নিতে আমি রাজ্যগুলিকে অনুরোধ করছি। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের প্রবণতা বাড়ছে। এর মোকাবিলায় চাই সমন্বিত উদ্যোগ। সাধারণ মানুষের কাছে পরিশ্রুত পানীয় জল এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ায় রাজ্যগুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

এই দশক ও শতক ভারতের। কিন্তু, ইতিহাস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, অতীতে সুযোগ আসলেও নিজেদের সীমাবদ্ধতার কারণেই আমরা তা কাজে লাগাতে পারিনি। সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। ১৪০ কোটি ভারতবাসী, বিশ্বের বৃহত্তম যুব জনসংখ্যায় বলিয়ান ভারত বর্তমানে সামনে আসা সুযোগের সদ্ব্যবহারে উদ্যোগী হন – এমনটাই কাম্য। আমাদের এগোতে হবে প্রত্যয়ের সঙ্গে। ১৯৮০’র দশকে যেসব দেশ সংস্কার প্রক্রিয়ায় হাত দিয়েছিল, তারা এখন অনেক এগিয়ে গেছে। সংস্কারকে ভয় পেলে চলবে না। বরং জন-কেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়নে উদ্যোগী হতে হবে। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

উন্নত ভারতের স্বপ্ন পূরণ এককভাবে কোনও ব্যক্তির মাধ্যমে সম্ভব নয়। এই কাজ ১৪০ কোটি ভারতবাসীর। ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় স্বপ্ন পূরণ হবে বলে আমি প্রত্যয়ী।

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমি দেখেছি যে, বিনিয়োগের প্রশ্নে সারা বিশ্বের অন্যতম পছন্দ ভারত। এই সুযোগ কাজে লাগাতে রাজ্যগুলিকে সচেষ্ট হতে হবে। তেমনটা হলে প্রাদেশিক উন্নয়ন আরও জোরদার হবে। রাজ্যগুলির উন্নয়নের প্রশ্নে আমি প্রত্যয়ী। 

মাননীয় চেয়ারম্যান,

আমাদের মাননীয় সদস্যরা যেসব বিষয় তুলে ধরেছেন, তার একটা সার্বিক চিত্র দেওয়ার চেষ্টা করলাম আমি। রাষ্ট্রপতিকে তাঁর ভাষণের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি যে দিশা-নির্দেশ দিয়েছেন এবং দেশের মানুষের মধ্যে যে আত্মপ্রত্যয় জাগিয়ে তুলেছেন, তা আমাদের পাথেয়। আমার বক্তব্য এখানেই সম্পন্ন করছি। অনেক ধন্যবাদ।

 

  • Prof Sanjib Goswami May 29, 2025

    Many rejected leaders of other parties, those who fail in Lok Sabha, few who are denied nomination, some with no national contribution, many who as Rajya Sabha MP act like Zila Parishad Members seeking this or that scheme in their home district and few who only enjoy the perks but offer nothing to party or country often find themselves as Rajya Sabha MPs. Meritocracy and long term dedication to party get neglected. Without meritocracy in politics, country cannot have sustainable development. Congress ruined their own party and our Bharat mata through such negative politics. I am sure BJP under pujya Narendra Modiji will not let BJP slip into that Congress era faultline. Only with meritocracy in politics, good capable youngsters will join politics, feel pride in BJP and take our country forward. Just my thought.
  • Galasinga muvel Muvel May 27, 2025

    हमारे देश का प्रधानमंत्री जो हमारा नमस्कार
  • Jitendra Kumar April 30, 2025

    🙏🙏❤️
  • Shubhendra Singh Gaur March 02, 2025

    जय श्री राम ।
  • Shubhendra Singh Gaur March 02, 2025

    जय श्री राम
  • Dheeraj Thakur January 29, 2025

    जय श्री राम,
  • Dheeraj Thakur January 29, 2025

    जय श्री राम।
  • Dheeraj Thakur January 29, 2025

    जय श्री राम
  • krishangopal sharma Bjp December 18, 2024

    नमो नमो 🙏 जय भाजपा 🙏🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩,,
  • krishangopal sharma Bjp December 18, 2024

    नमो नमो 🙏 जय भाजपा 🙏🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩🚩,
Explore More
প্রত্যেক ভারতীয়ের রক্ত ফুটেছে: মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী

জনপ্রিয় ভাষণ

প্রত্যেক ভারতীয়ের রক্ত ফুটেছে: মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী
Wind energy centre of Atma Nirbhar Bharat: India becomes 3rd largest maker of renewable energy; wind capacity hits 51.5GW in a decade

Media Coverage

Wind energy centre of Atma Nirbhar Bharat: India becomes 3rd largest maker of renewable energy; wind capacity hits 51.5GW in a decade
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
Prime Minister and President of Cyprus interact with business leaders from Cyprus and India
June 15, 2025

Prime Minister Shri Narendra Modi along with the President of Cyprus, H.E. Nikos Christodoulides today held a Roundtable interaction with business leaders from Cyprus and India in Limassol. The participants represented diverse sectors such as banking, financial institutions, manufacturing, defence, logistics, maritime, shipping, technology, innovation, digital technologies, AI, IT services, tourism and mobility.

Highlighting India's rapid economic transformation in the last 11 years, Prime Minister noted that India, propelled by next-generation reforms, policy predictability, stable polity and Ease of Doing Business, has become the fastest growing major economy in the world. Emphasizing on the primacy being given to innovation, digital revolution, start-up and futuristic infrastructure development, he expressed confidence that India, the fifth largest economy in the world, was well positioned to become the third largest in a few years’ time. He noted that steady growth in India’s civil aviation, port, shipbuilding, digital payments and green development sectors have opened myriad opportunities for companies from Cyprus to partner with India. He further underlined the strengths of India’s skilled talent and start-up ecosystem and highlighted manufacturing, AI, Quantum, Semiconductor and Critical Minerals as new and emerging areas contributing to India’s growth story.

Prime Minister noted that Cyprus was a significant economic partner for India, particularly in the Foreign Direct Investment sector and welcomed the keen interest in Cyprus for new investments into the Indian economy. Highlighting the potential for business engagement in the financial services sector, the two leaders welcomed the signing of an MOU between NSE International Exchange GIFT CITY, Gujarat and Cyprus Stock Exchange. NIPL (NPCI International Payments Limited) and the Eurobank Cyprus reached an understanding on introducing UPI for cross border payments between the two countries which would benefit tourists and businesses. Prime Minister also welcomed the launch of the India–Greece–Cyprus (IGC) Business and Investment Council, which will foster trilateral cooperation in sectors such as shipping, logistics, renewable energy, civil aviation and digital services. Prime Minister welcomed the fact that many Indian companies see Cyprus as a gateway to Europe and hub for IT services, financial management, and tourism.

As Cyprus prepares to assume the Presidency of the EU Council next year, the two leaders reaffirmed their commitment to further strengthen India-EU Strategic Partnership. They expressed optimism about concluding the India-EU Free Trade Agreement by end of the year which would also give a major boost to trade and economic cooperation between the two countries. Prime Minister underlined that the business roundtable had given practical suggestions which would form the basis for a structured economic roadmap, ensuring long-term collaboration in trade, innovation and strategic sectors.

With shared aspirations and a future-focused approach, India and Cyprus are poised for a new era of dynamic and mutually beneficial economic cooperation.