উগান্ডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কয়েক শতাব্দী প্রাচীন: প্রধানমন্ত্রী মোদী

উগান্ডা সহ আফ্রিকার সমস্ত দেশ ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণবললেন প্রধানমন্ত্রী মোদী

সারা বিশ্বে উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে 'মেক ইন ইন্ডিয়া’ আজ ভারতের নতুন পরিচয় হয়ে উঠেছে: প্রধানমন্ত্রী মোদী

আফ্রিকার উন্নয়ন যাত্রায় ভারত সমসময় বিশ্বস্ত অংশীদার ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে: প্রধানমন্ত্রী মোদী

আপনারাই সঠিক অর্থে ভারতের 'রাষ্ট্রদূত': উগান্ডায় ভারতীয় সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বললেন প্রধানমন্ত্রী মোদী

আমি খুব খুশি যে অনেক আফ্রিকান দেশ আন্তর্জাতিক সৌর সংঘের সদস্য: প্রধানমন্ত্রী মোদী

 

সম্মানিত রাষ্ট্রপতি মুসেভেনি, তাঁর সুযোগ্য পত্নী মাননীয়া জেনেট মুসেভেনি এবং বিপুল সংখ্যায় আগত আমার প্রিয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভাই ও বোনেরা,

আপনাদের সকলের সঙ্গে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক, আপনত্বের সম্পর্ক। আমি আপনাদের পরিবারেরই একজন, এই বিশাল পরিবারের এক সদস্য হিসাবে আপনাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে আমার আনন্দ অনেক গুণ বেড়ে গেছে। আমাদের এই মিলনকে মহিমান্বিত করতে আজ স্বয়ং মাননীয় রাষ্ট্রপতি ও তাঁর স্ত্রী এখানে এসেছেন। তাঁদের এই উপস্থিতি ১২৫ কোটি ভারতবাসী এবং উগান্ডায় বসবাসকারী হাজার হাজার ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষদের প্রতি তাঁদের অপার ভালোবাসার প্রতীক। আমি সেজন্য রাষ্ট্রপতি মহোদয়কে অন্তর থেকে অভিনন্দন জানাই। আজ এখানে আপনাদের সবার মাঝে এসেছি আর আগামীকাল আমার উগান্ডার সংসদ ভবনে বক্তব্য রাখার সৌভাগ্য হবে। আমি শুনেছি, দু’দিন আগে দিল্লির সংসদ ভবনে আমি যখন বক্তব্য রাখছিলাম, আপনারাও সেই বক্তব্য শুনছিলেন, সমগ্র উগান্ডার মানুষ শুনছিলেন। আপনাদের সকলকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।

আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, এই প্রথম উগান্ডার সংসদ ভবনে কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখার সুযোগ পাবেন। এই সম্মান প্রদানের জন্য আমি উগান্ডার রাষ্ট্রপতি এবং জনগণকে ১২৫ কোটি ভারতবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। বন্ধুগণ, উগান্ডায় আসা এবং আপনাদের মতো সজ্জনদের সঙ্গে মিলিত হয়ে কথাবার্তা বলার সৌভাগ্য যে কোনও ভারতবাসীর জন্য আনন্দের বিষয়। আমার প্রতি আপনাদের এই উৎসাহ, স্নেহ, ভালোবাসা যেন নিরন্তর বর্ষিত হতে থাকে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার আমার উগান্ডায় আসার সৌভাগ্য হয়েছে। ১১ বছর আগে আমি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এদেশে প্রথমবার এসেছিলাম এবং আপনাদের অনেকের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছে। অনেকের সঙ্গে প্রাণভরে কথা বলারও সুযোগ হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে অনেককেই আজ আমার সামনে দেখতে পাচ্ছি। আর আমি দেখে অবাক হচ্ছিলাম যে, দেশের রাষ্ট্রপতি মহোদয় তাঁদের প্রত্যেককে আলাদাভাবে চেনেন। আপনাদের সঙ্গে তাঁর এত নিকট সম্পর্ক যে আজ সারা দিন আমরা একসঙ্গে ছিলাম, তিনি অনেক পরিবারের কথা নাম ধরে ধরে বলছিলেন। কাকে কত বছর ধরে চেনেন, কিভাবে চেনেন। আমি জানি, আপনারা নিজেদের পরিশ্রম, আচার-ব্যবহার এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে এই সম্মান অর্জন করেছেন। এই পুঁজিকে ছোট করে দেখা উচিৎ নয়। ভারত থেকে আসার পর ৩-৪ প্রজন্ম ধরে উগান্ডার মাটির সঙ্গে এই সম্পর্ক স্থাপন, এই ভালোবাসার প্রেক্ষিতেই আপনারা এই পুঁজি অর্জন করেছেন।

বন্ধুগণ, উগান্ডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আজকের নয়। এই সম্পর্ক কয়েক শতাব্দী প্রাচীন। আমাদের মধ্যে সম্পর্কের অনুঘটক হ’ল শ্রম এবং শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই। উগান্ডার উন্নয়ন আজ যে উচ্চতায় পৌঁছেছে, তার বুনিয়াদ মজবুত করতে উগান্ডাবাসীর রক্তঘামে ভারতীয়দের রক্তঘামের সুরভী মিশেছে। এখানে উপস্থিত নবীন প্রজন্মের মানুষদের আমি মনে করাতে চাই, আজ যে রেলগাড়িতে আপনারা সফর করেন, তা ভারত ও উগান্ডার পারস্পরিক সম্পর্ককেও গতি প্রদান করছে। একটা সময় ছিল, যখন উগান্ডা ও ভারত উভয়েই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে পরাধীনতার শেকলে বাঁধা ছিল। তখন আমাদের পূর্বজদের ভারত থেকে এখানে আনা হয়েছিল। মাথায় বন্দুকের নল ঠেকিয়ে কিংবা চাবুক মেরে মেরে তাঁদেরকে রেল লাইন পাতার কাজে বাধ্য করা হয়েছিল। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে সেই মহাত্মা শ্রমিকরা উগান্ডার ভাই-বোনেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জীবন-যুদ্ধে লড়ে গেছেন। উগান্ডার স্বাধীনতা সংগ্রামেও ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। উগান্ডা স্বাধীন হলে আমাদের অনেক পূর্বজ এদেশেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুধের মধ্যে চিনি যেমন গুলে যায়, তেমনই আমাদের পূর্বজরা উগান্ডার জনগণের সঙ্গে মিশে তাঁদের স্বভাব দিয়ে সমাজে মিষ্টত্ব বৃদ্ধি করেছেন।

আজ আপনারা সবাই উগান্ডার উন্নয়ন, এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য, কলা-সংস্কৃতি, ক্রীড়া এবং সমাজের সকল ক্ষেত্রে নিজেদের প্রাণশক্তি অর্পণ করছে। এদেশের জিঞ্জায় মহাত্মা গান্ধীর অস্থি বিসর্জন হয়েছিল। আগে যেমন ভারতীয় রাজনীতিতে অনেক ভারতীয় বংশোদ্ভূত সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, আজও তেমনই অনেকেই সক্রিয় রয়েছেন। স্বর্গীয় নরেন্দ্র ভাই প্যাটেল স্বাধীন উগান্ডার সংসদে প্রথম অ-ইউরোপীয় অধ্যক্ষ সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হয়েছিলেন। যদিও তারপর এমন একটা সময় আসে, যখন সবাইকে সমস্যায় পড়তে হয়, অনেককে দেশত্যাগও করতে হয়। কিন্তু উগান্ডার জনগণ ও বর্তমান সরকার তাঁদেরকে নিজেদের অন্তর থেকে বেরিয়ে যেতে দেননি। উগান্ডার জনগণ এবং বিশেষভাবে এদেশের রাষ্ট্রপতি মহোদয় যেভাবে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের বুকে টেনে নিয়েছেন, সেজন্য আমি অন্তর থেকে তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের মধ্যে অধিকাংশেরই জন্ম এদেশে হয়েছে, অনেকের তো ভারত দেখারই সুযোগ হয়নি। অনেকে এমনও রয়েছেন, যাঁরা তাঁদের পূর্বজরা ভারতের কোন্‌ রাজ্য, গ্রাম কিংবা শহর থেকে এসেছিলেন, সে সম্পর্কেও জানেন না। কিন্তু তবুও আপনারা ভারতকে নিজেদের হৃদয়ে জীবিত রেখেছেন। হৃদয়ের একটি স্পন্দন উগান্ডার জন্য হলে অন্য স্পন্দনটি ভারতের জন্য হয়। বিশ্ববাসীর সামনে আপনারাই সঠিক অর্থে ভারতের রাজদূত। একটু আগেই যখন রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের সঙ্গে আমি মঞ্চে আসছিলাম, তখন দেখছিলাম যে আমরা পৌঁছানোর আগে এখানে কী ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। আপনারা যেভাবে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতীয় সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে তুলে ধরে সকলকে মন্ত্রমুগ্ধ করে তুলছিলেন, তাকে প্রশংসা করতেই হয়। আমার পূর্ববর্তী সফর এবং এবারের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, আপনারা বিভিন্ন ভারতীয় ভাষা, খাদ্যাভাস, কলা ও সংস্কৃতি, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং বসুধৈব কুটুম্বকম্‌ – এর ভাবনা যেভাবে আপনারা নিজেদের অস্তিত্বে ধারণ করেন, তা অতুলনীয়, সেজন্য প্রত্যেক ভারতবাসী আপনাদের জন্য গর্বিত। আমি আপনাদের অভিনন্দন ও প্রণাম জানাই।

বন্ধুগণ, উগান্ডা সহ আফ্রিকার সকল দেশ ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর অন্যতম কারণ হ’ল এই দেশগুলিতে আপনাদের মতো ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষদের বিপুল উপস্থিতি। দ্বিতীয়ত, এই দেশগুলির স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। তৃতীয়ত, আমাদের সকলের সামনে দেশকে উন্নত করার চ্যালেঞ্জ। ঐতিহাসিকভাবে পরস্পরের সুখ-দুঃখে সামিল হওয়ার পাশাপাশি আমরা সবাই পরস্পর থেকে কিছু না কিছু শিখেছি। যথাসম্ভব পরস্পরকে সাহায্য করেছি। আজও আমরা এই ভাবনা নিয়ে মিলেমিশে এগিয়ে চলেছি। আমরা উগান্ডার সঙ্গে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা সম্পর্ক স্থাপন করতে চাই। উগান্ডার সেনাবাহিনীর প্রয়োজন অনুসারে ভারত তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। বিভিন্ন অসামরিক ক্ষেত্রেও উগান্ডার সহস্রাধিক ছাত্রছাত্রী এখন ভারতে পড়াশুনা করছেন। আপনাদের মধ্যে যাঁরা নিজেরাই ভারত থেকে কর্মসূত্রে উগান্ডায় এসেছেন, তাঁরা যে ভারত ছেড়ে এসেছিলেন, আজ আর সে ভারত নেই। দেশ অনেক বদলে গেছে। উগান্ডা যেমন আফ্রিকা মহাদেশে সর্বাধিক দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়া অর্থনীতির দেশ হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে, ভারতও তেমনই বিশ্বের সর্বাধিক দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়া বড় অর্থনীতির দেশগুলির মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে। ভারতীয় অর্থ ব্যবস্থা এখন গোটা বিশ্বের উন্নয়নকে গতি প্রদান করছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ আজ ভারতের পরিচয় হয়ে উঠেছে। ভারতে নির্মিত গাড়ি, স্মার্ট ফোন আজ এমন সব দেশে রপ্তানি হচ্ছে, যে দেশগুলি থেকে এক সময়ে এইসব জিনিস আমরা ভারতে আমদানি করতাম। অদূর ভবিষ্যতেই হয়তো আপনারা উগান্ডায় সুলভে উন্নতমানের যে স্মার্টফোন কিনবেন, তাতে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ লেবেল দেখতে পাবেন। সম্প্রতি ভারতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মোবাইল নির্মাণ কোম্পানির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। ভারত তীব্রগতিতে উন্নত বিশ্বের ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হয়ে উঠছে। পাশাপাশি, ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ভারত জনগণের ক্ষমতায়নের মাধ্যম করে তুলেছে। আজ ভারতীয়রা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সকল সরকারি পরিষেবা পেতে পারেন। শিশুর জন্ম থেকে শুরু করে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিবন্ধীকরণের কাজ ডিজিটাল ও অনলাইন প্রযুক্তির মাধ্যমে করা সম্ভব হচ্ছে। দেশের প্রত্যেক বড় পঞ্চায়েতকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্তিকরণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আজ সূঁচ থেকে শুরু করে রেল লাইন, মেট্রো রেলের কামরা থেকে শুরু করে উপগ্রহ পর্যন্ত ভারতে নির্মিত ইস্পাত দিয়ে ভারতেই উৎপাদিত হচ্ছে। স্টার্ট আপ-এর হাব হিসাবেও ভারত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।

বিশ্বে আমি যেখানেই যাই, আপনাদের মতো ভারতীয় বংশোদ্ভূত ও প্রবাসী ভারতীয়দের মনে করাতে চাই যে, আগে দেশের বাইরে ভারতের কিরকম ছবি গড়ে উঠেছিল। হাজার হাজার বছরের গৌরবময় ইতিহাস সমৃদ্ধ দেশটিকে বিশ্ববাসীর সামনে সাপ, সাঁপুড়ে, যাদুটোনার দেশ হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছিল। কিন্তু আমাদের নবীন প্রজন্ম ভারতকে আইটি সফট্‌ওয়্যারের দেশ হিসাবে তুলে ধরে এই চিত্র বদলে দিয়েছে। আজ সেই চিত্র স্টার্ট আপ-এর মাধ্যমে আরও পরিবর্তিত হচ্ছে। আপনারা শুনলে গর্ববোধ করবেন যে, বিগত দু’বছর দেশের প্রায় ১১ হাজার স্টার্ট আপ নিবন্ধীকৃত হয়েছে। দেশ ও বিশ্বের প্রয়োজন অনুসারে আমাদের নবীন প্রজন্ম নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান করছেন। বন্ধুগণ, আজ ভারতের ৬ লক্ষেরও বেশি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। দেশে আর এমন একটিও গ্রাম অবশিষ্ট নেই, যেখানে বিদ্যুৎ নেই। দেশে বিদ্যুৎ কতটা সুলভ হয়েছে, তা আপনারা বিশ্ব ব্যাঙ্কের র‍্যাঙ্কিং দিয়েই আন্দাজ করতে পারেন। বিদ্যুৎ প্রাপ্তির সরলতার নিরিখে ভারত বিশ্ব ব্যাঙ্কের র‍্যাঙ্কিং-এ ৮২ ধাপ অতিক্রম করে ইতিমধ্যেই বিশ্বে ২৯ নম্বর স্থানে পৌঁছে গেছে। পাশাপাশি, এলইডি অভিযানের মাধ্যমে বিদ্যুতের খরচ তিন ভাগের দু’ভাগ কমিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। গত চার বছরে দেশে ১০০ কোটিরও বেশি এলইডি বাল্ব বিক্রি হয়েছে। বন্ধুগণ, এভাবে ভারতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমরা আজ নতুন ভারতের সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছি।

বন্ধুগণ, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই আমি আপনাদের মাঝে আসার জন্য উৎসাহী ছিলাম। তিন বছর আগে আপনাদের মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয় যখন ভারত-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য ভারতে এসেছিলেন, তখনই তিনি বিনম্র আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু আমি কোনও ভাবেই আসতে পারিনি। বিগত চার বছরে আফ্রিকার সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে ভারতের বিদেশ নীতিতে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। ২০১৫ সালে যখন আমরা ইন্দো-আফ্রিকা ফার্ম শিখর সম্মেলন আয়োজন করেছিলাম, তখন প্রথমবার আফ্রকার সকল দেশের নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে প্রত্যেকেই আমাদের নিমন্ত্রণ স্বীকার করে ৪১টি দেশের সর্বময় নেতা দিল্লির সেই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আমরা হাত বাড়ালে আফ্রিকার সকল দেশ এগিয়ে এসে ভারতকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে। বিগত চার বছরে আফ্রিকার এমন একটি দেশও নেই, যেদেশে ভারতের একজন মন্ত্রীও সফরে আসেননি। রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্তরে ২০টিরও বেশি সফর সম্পন্ন হয়েছে। ইন্দো-আফ্রিকা ফার্ম শীর্ষ সম্মেলনের পর আফ্রিকার ৩২টি দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব ভারতে এসে সফর করে গেছেন। আমরা ১৮টি দেশে ভারতীয় দূতাবাস খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এগুলি চালু হলে আফ্রকায় ভারতীয় দূতাবাসের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪৭ হবে। আফ্রিকার সামাজিক বিকাশ এবং গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনে আমাদের সহযোগিতার পাশাপাশি এই দেশগুলির আর্থিক উন্নয়নেও আমরা সক্রিয় অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করেছি। ফলস্বরূপ, গত বছর আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক-এর বার্ষিক বৈঠক ভারতে আয়োজিত হয়েছে। তখন আফ্রিকার জন্য ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি লাইন্স অফ ক্রেডিটের প্রকল্প মঞ্জুর করা হয়েছে। ইন্দো-আফ্রিকা ফার্ম শীর্ষ সম্মেলনে আমাদের ১০ বিলিয়ন ডলার দায়বদ্ধতা রয়েছে। এছাড়া, ৬০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান এবং ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রীদের ভারতে পড়াশুনার জন্য ছাত্রবৃত্তি দিতেও আমরা দায়বদ্ধ। আফ্রিকার ৩৩টি দেশের জন্য ভারত ই-ভিসার সুবিধা দিয়েছে।

গত বছর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ভারতের বাণিজ্যিক লেনদেন ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি আফ্রিকার সকল দেশকে আন্তর্জাতিক সৌরসংঘের সদস্য হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম। আজ আন্তর্জাতিক সৌরসঙ্ঘের সদস্য দেশগুলির প্রায় ৫০ শতাংশ আফ্রিকা মহাদেশের। আন্তর্জাতিক মঞ্চে আফ্রিকার দেশগুলি সমস্বরে ভারতকে সমর্থন জানিয়েছে। আমার মনে হয়, এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলির উপস্থিতি ধীরে ধীরে নতুন ওয়ার্ল্ড অর্ডারে মজবুত হচ্ছে। এই লক্ষ্যে আমাদের মতো দেশগুলির পারস্পরিক সহযোগিতা কোটি কোটি মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনে দেবে। যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে আপনারা সবাই নিজেদের মূল্যবান সময় বের করে এখানে এসেছেন, আমাকে আশীর্বাদ ও সম্মান জানিয়েছেন, সেজন্য আমি আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। মাননীয় রাষ্ট্রপতি এবং উগান্ডার জনগণকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আপনারা জানেন যে, ২০১৯ সালে জানুয়ারি মাসের ২২-২৩ তারিখ এবার কাশীতে প্রবাসী ভারতীয় দিবস পালন করা হবে। এই কাশীর জনগণই আমাকে ভোট দিয়ে তাঁদের প্রতিনিধি হিসাবে সংসদে পাঠিয়েছেন। তাঁদের জন্যই আমি আজ প্রধানমন্ত্রী। সেই কাশীবাসীর পক্ষ থেকে আমি আজ আপনাদের আমন্ত্রণ জানাতে এসেছি। এই প্রবাসী ভারতীয় দিবসের আয়োজন শুরু হওয়ার আগে গুজরাটে ভাইব্রেন্ট গুজরাট, গ্লোবাল ইনভেস্টার্স সামিট হবে ১৮-২০ জানুয়ারি। তার আগে ১৪ জানুয়ারি থেকে কুম্ভমেলা শুরু হচ্ছে। সেজন্য আমি আপনাদের বলব যে, গুজরাটে বিনিয়োগকারীদের শীর্ষ সম্মেলন এবং কাশীতে প্রবাসী ভারতীয় দিবস অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে প্রয়াগরাজে স্নান করে, কুম্বমেলা দেখে ২৬ জানুয়ারি আপনারা দিল্লিতে আসুন। এই এক সপ্তাহের প্যাকেজে আপনারা ভারতে অনেক কিছু দেখার সুযোগ পাবেন। আমি আজ সামনে বসে থাকা আমার উগান্ডার ভাই-বোনেদেরও আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনারাও আসুন আপনারা যে ভালোবাসা দিয়েছেন, আপনাদের দেশের প্রগতির জন্য ভারতের শুভেচ্ছা আমি বহন করে এনেছি। আপনাদের জীবনকে আরও গৌরবময় করে তুলতে ভারত আপনাদের সঙ্গে আছে। আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Explore More
শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দিরের ধ্বজারোহণ উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ

জনপ্রিয় ভাষণ

শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দিরের ধ্বজারোহণ উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ
India leads globally in renewable energy; records highest-ever 31.25 GW non-fossil addition in FY 25-26: Pralhad Joshi.

Media Coverage

India leads globally in renewable energy; records highest-ever 31.25 GW non-fossil addition in FY 25-26: Pralhad Joshi.
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
Prime Minister lauds Suprabhatam programme on Doordarshan for promoting Indian traditions and values
December 08, 2025

The Prime Minister has appreciated the Suprabhatam programme broadcast on Doordarshan, noting that it brings a refreshing start to the morning. He said the programme covers diverse themes ranging from yoga to various facets of the Indian way of life.

The Prime Minister highlighted that the show, rooted in Indian traditions and values, presents a unique blend of knowledge, inspiration and positivity.

The Prime Minister also drew attention to a special segment in the Suprabhatam programme- the Sanskrit Subhashitam. He said this segment helps spread a renewed awareness about India’s culture and heritage.

The Prime Minister shared today’s Subhashitam with viewers.

In a separate posts on X, the Prime Minister said;

“दूरदर्शन पर प्रसारित होने वाला सुप्रभातम् कार्यक्रम सुबह-सुबह ताजगी भरा एहसास देता है। इसमें योग से लेकर भारतीय जीवन शैली तक अलग-अलग पहलुओं पर चर्चा होती है। भारतीय परंपराओं और मूल्यों पर आधारित यह कार्यक्रम ज्ञान, प्रेरणा और सकारात्मकता का अद्भुत संगम है।

https://www.youtube.com/watch?v=vNPCnjgSBqU”

“सुप्रभातम् कार्यक्रम में एक विशेष हिस्से की ओर आपका ध्यान आकर्षित करना चाहूंगा। यह है संस्कृत सुभाषित। इसके माध्यम से भारतीय संस्कृति और विरासत को लेकर एक नई चेतना का संचार होता है। यह है आज का सुभाषित…”