


আপনাদের সকলের সঙ্গে একসঙ্গে কথা বলার এটি এ ধরণের প্রথম প্রচেষ্টা। আমাকে বলা হয়েছে যে, দেশের প্রায় প্রত্যেক ব্লক থেকে আপনারা সরাসরি এই বার্তালাপে অংশগ্রহণ করছেন। সে আপনি আশা কর্মী হন, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী কিংবা এএনএম হন না কেন, আপনারা সকলেই রাষ্ট্র নির্মাণের অগ্রণী সৈন্য। আপনাদের সাহায্য ছাড়া দেশে সুস্থ মাতৃত্ব কল্পনা করা যায় না! আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আপনারা সবাই দেশের ভিতকে, দেশের ভবিষ্যৎ-কে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। দেশের প্রত্যেক মা, প্রত্যেক শিশুকে নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব আপনারা নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এই নিরাপত্তা বলয়ের প্রথম উপাদান হ’ল সুপুষ্টি, দ্বিতীয়টি টিকাকরণ এবং তৃতীয়টি হ’ল পরিচ্ছন্নতা। এমন নয় যে আগে কেউ এসব জানতেন না কিংবা আগে কোনও প্রকল্প নির্মাণ করেননি!
এই সমস্ত বিষয় নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকে অনেক কর্মসূচি চালু হয়েছে, কিন্তু খুব বেশি সাফল্য আসেনি। আমাদের থেকে কম উন্নত, কম সম্পদশালী অনেক ছোট ছোট দেশ এসব ক্ষেত্রে অনেকগুণ এগিয়ে গেছে। অনেক ভালো কাজ করছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমরা ২০১৪ সাল থেকে একটি নতুন রণনীতি নিয়ে কাজ করা শুরু করেছি।
আপনারা সবাই খুব ভালোভাবে ‘মিশন ইন্দ্রধনুষ’ সম্পর্কে অবহিত। এই মিশন ইন্দ্রধনুষের মাধ্যমে দেশের দূরদূরান্ত এবং পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলির কাছে পৌঁছনোর লক্ষ্য স্থির করে দেশব্যাপী ছোট ছোট শিশুদের টিকাকরণ অভিযান চালু করেছি। আপনারা সকলে দ্রুত দায়িত্ব সম্পাদনের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই দেশের ৩ কোটিরও বেশি শিশু এবং ৮৫ লক্ষ থেকেও বেশি গর্ভবতী মহিলাকে নানা রোগের প্রতিষেধক টিকাকরণ করিয়েছেন। পূর্ব উত্তর প্রদেশ তথা পূর্ব ভারতের কর্মকর্তারা ভালোভাবে জানেন যে, শিশুদের জন্য ইন্সেফেলাইটিস কতটা বিপজ্জনক। এহেন মারাত্মক রোগের মোকাবিলায় আমরা টিকাকরণ প্রক্রিয়ায় জাপানি ইন্সেফেলাইটিস সহ ৫টি নতুন টিকা জুড়েছি।
তেমনই দু’বছর আগে প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষিত মাতৃত্ব অভিযান শুরু করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও আপনাদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমরা সকলেই আমার সহকর্মী সাথী। আগেকার সময়ে বলা হ’ত যে, ঈশ্বরের সহস্র হাত থাকে। এই হাজার হাতের আসল মানে হ’ল – তাঁর টিমে এরকম ৫০০ জন ছিলেন যাদের হাত সকল সমস্যার সমাধানে তাঁর হয়ে কাজ করত! আজ দেশের প্রধানমন্ত্রীর সহস্র নয়, লক্ষ লক্ষ হাত রয়েছে। আর এই হাতগুলি রয়েছে আমার সমস্ত সাথী – আপনাদের শরীরে।
আমার সাথীগণ, স্বাস্থ্যের সঙ্গে পুষ্টির প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। আর এই পুষ্টি নির্ভর করে আমাদের খাদ্যের উপর। কী খাব? কিভাবে খাব? শুধু তাই নয়, পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, টিকাকরণ করতে হবে। অল্প বয়সে বিয়ে হলে নানা স্বাস্থ্য সমস্যা হয়। মেয়েরা প্রাপ্ত বয়স্ক হলে তবেই বিয়ে দিতে হবে। আগে বিয়ে হলে আর অল্পবয়সে মা হলে, মা ও শিশু উভয়েরই স্বাস্থ্যের সংকট হতে পারে। অনেকে সেজন্য সারাজীবন রুগ্ন থেকে যান।
খাওয়ার আগে ও পরে কিভাবে হাত ধুতে হবে? এরকম অনেক বিষয়ও পুষ্টিকে প্রভাবিত করে। এসব কিছু মাথায় রেখে এ বছরেই রাজস্থানের ঝুনঝুনুতে দেশব্যাপী ‘রাষ্ট্রীয় পোষণ মিশন’ – এর সূচনা হয়েছে। এটি খুব বড় সুদূরপ্রসারী অভিযান। অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ আমি শুধুনিজের ক্ষমতায় নিইনি। এই চ্যালেঞ্জ আমি আপনাদের ভরসা করেই নিয়েছি, আপনারা অত্যন্ত সফলভাবে একাজে এগিয়ে যাচ্ছেন, ভবিষ্যতেও যাবেন! যদি আমরা পুষ্টি অভিযানের মাধ্যমে প্রত্যেক মা ও শিশু পর্যন্ত পৌঁছতে পারি, তা হলে লক্ষ লক্ষ জীবন বাঁচতে পারব। দেশের উন্নয়ন নতুন গতি পাবে।
কখনও আমরা যদি শুনি যে, কেউ জলে ডুবে যাচ্ছিল, তাঁকে কেউ বাঁচিয়েছেন, তা হলে সেই গ্রামে সেই রক্ষাকর্তাকে সকলে সারাজীবন সম্মান করে। রেল লাইনে কাটা পড়তে পড়তে কেউ যদি তার জীবন বাঁচিয়ে দেয়, আমরা সংবাদ মাধ্যমে তাঁদের প্রশংসা শুনতে পাই, টিভির পর্দায় দেখতে পাই। কিন্তু আপনারা এমন মানুষ যাঁরা প্রতিদিন নিজেদের পরিশ্রম, ত্যাগ ও তপস্যার মাধ্যমে অনেক ছোট ছোট শিশুর জীবন বাঁচান। একজন চিকিৎসক চিকিৎসার মাধ্যমে সারা জীবন ধরে যত মানুষের প্রাণ বাঁচান, আমার মনে হয় ছোট ছোট শিশু ও মায়েদের স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা, পুষ্টি ও প্রতিষেধক টিকাকরণের কাজ করে প্রত্যেক আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীও তার চেয়ে বেশি মানুষের প্রাণ বাঁচান।
এখন সারা দেশে ‘পুষ্টি মাস’ চলছে। এই কর্মসূচিকে সাফল্যমণ্ডিত করার লক্ষ্যে কর্মরত ২৪ লক্ষেরও বেশি কর্মীর নিষ্ঠা ও রাতদিনের পরিশ্রমের জন্য আজ আমি আপনাদের সর্বসমক্ষে সাদর প্রণাম জানাই। এই অভিযানে আপনারা কেমন সব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, কিভাবে সমাধান করেছেন, না করতে পারলে কিভাবে করা যাবে বলে আপনারা মনে করেন, এসব কিছু জানার জন্য আমি অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। আপনাদের কথা শুনব। এই প্রকল্পে কোনও ত্রুটি থাকলে তা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে থাকা মানুষেরা সমাধান করতে পারবেন না, আপনারাই ব্যবহারিক জীবনে নৈমিত্তিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শুধরাতে পারবেন। আর আপনাদের বক্তব্য যখন দেশ শুনবে, আপনাদের মতো আমাদের লক্ষ লক্ষ বোন ও আধিকারিকরাও এ থেকে শিখবেন। আর সেজন্য আমি আজ আপনাদের কথা শুনতে চাই।