বিশ্ব এই স্তরের টিকাদান অভিযান আর কখনো দেখেনি: প্রধানমন্ত্রী
করোনার প্রেক্ষিতে ভারতীয় প্রতিক্রিয়া বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা

প্রিয় দেশবাসী,

নমস্কার!

আজকের এই দিনটার জন্য গোটা দেশ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছে। গত কয়েক মাস ধরে দেশের প্রত্যেক বাড়িতে বাচ্চা থেকে বয়স্ক মানুষ , সবার মুখে একটাই প্রশ্ন ছিল- করোনার ভ্যাকসিন কবে আসছে? আজ করোনার টিকা তৈরি হয়ে গিয়েছে, খুব কম সময়ের মধ্যেই তা তৈরি করা হয়েছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ভারতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকাকরণ অভিযান শুরু হতে চলেছে। আমি সমস্ত দেশবাসীকে এর শুভেচ্ছা জানাই। গত কয়েক মাস ধরে যে সমস্ত বৈজ্ঞানিক ও কর্মী এই ভ্যাকসিন গবেষণার কাজে দিনরাত যুক্ত ছিলেন, তাঁরা আজ বিশেষভাবে প্রশংসার যোগ্য। তাঁরা উৎসব-পার্বণ ভুলে, দিন-রাত ভুলে কাজে যুক্ত ছিলেন। সাধারণত একটি ভ্যাকসিন তৈরি করতে বহু বছর সময় লাগে। কিন্তু এই কম সময়ের মধ্যে দু-দুটি 'মেড ইন ইন্ডিয়া' ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও আরও দ্রুতগতিতে বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে। এগুলি সব ভারতের সামর্থ্য, বৈজ্ঞানিক দক্ষতা, ভারতের প্রতিভার জীবন্ত উদাহরণ। ভারতের এধরনের উপলব্ধির জন্যই রাষ্ট্র কবি রামধারী সিং দিনকর বলেছিলেন- "মানুষ যখন জোর লাগায়, পাথরও জল হয়ে যায়"।

ভাই ও বোনেরা,

ভারতের টিকাকরণ অভিযান মানবিক ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। যার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তিনিই সর্বপ্রথম করোনার টিকা পাবেন। যার করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি সবথেকে বেশি, তাকেই প্রথম টিকা দেওয়া হবে। আমাদের যত ডাক্তার, নার্স, হাসপাতালের সাফাইকর্মী, মেডিকেল ও প্যারা মেডিকেল কর্মী রয়েছেন, করোনার ভ্যাকসিন তাঁদেরই সর্বপ্রথম প্রাপ্য। সরকারি হোক বা বেসরকারি, হাসপাতালের সব কর্মীদের এই ভ্যাকসিন সর্বপ্রথম দেওয়া হবে। এরপর তাঁদের এই টিকা দেওয়া হবে যাঁরা জরুরি পরিষেবা এবং দেশের প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে যুক্ত। যেমন আমাদের সেনাবাহিনী, পুলিশকর্মী, ফায়ার ব্রিগেডের কর্মী, সাফাই কর্মচারী, এঁদের সবাইকেই অগ্রাধিকারে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। আর যেমনটা আমি আগেই বলেছিলাম, এইসব কর্মীদের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটির কাছাকাছি। এদের সকলের টিকাকরণের খরচ ভারত সরকার বহন করছে।

বন্ধুগণ,

এই টিকাকরণ অভিযানের সাফল্যের জন্য রাজ্য সরকারদের সাহায্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্রায়াল হয়েছে, মহড়া করা হয়েছে। টিকাকরণের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম কোউইনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন থেকে ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপনার প্রথম টিকা নেওয়ার পর, দ্বিতীয় ডোজ কবে দেওয়া হবে সেটাও ফোনেই জানানো হবে। আমি দেশবাসীকে মনে করাতে চাই যে করোনা ভ্যাকসিনের দুটো ডোজই আবশ্যক। একটা ডোজ নিয়ে ভুলে গেলাম, এরকম ভুল করবেন না। আর যেমন বিশেষজ্ঞররা বলেছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে প্রায় ১ মাসের সময় রাখা হয়েছে। আপনাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ২ সপ্তাহের পরই আপনার শরীরে করোনার বিরুদ্ধে লড়ার শক্তি তৈরি হবে। সেজন্য, টিকা নেওয়ার পরপরই আপনি অসাবধান হয়ে, মাস্ক খুলে, দু গজের দূরত্বের কথা ভুলে যাবেন না। আর আমি আপনাদের বলতে চাই, যেভাবে আপনারা ধৈর্য্য ধরে করোনার মোকাবিলা করেছেন, সেই ধৈর্য্য ভ্যাকসিনের সময়েও দেখান।

বন্ধুগণ,

ইতিহাসে এর আগে কখনও এত বড় ধরণের টিকাকরণ অভিযান হয়নি। এই অভিযানটি কত বড়, তা এই অভিযানের প্রথম ধাপ থেকেই অনুমান করা যেতে পারে। বিশ্বে ১০০টিরও বেশি এমন দেশ রয়েছে যাদের জনসংখ্যা ৩ কোটিরও কম। এবং ভারত প্রথম পর্যায়েই ৩ কোটি মানুষের টিকাকরণ করছে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে, আমাদের এই সংখ্যাটি ৩০ কোটিতে নিয়ে যেতে হবে। যাঁরা বয়স্ক, যাঁরা গুরুতর অসুস্থ , তারা পরবর্তী পর্যায়ে টিকা পাবেন। আপনি অনুমান করতে পারেন যে ৩০ কোটি জনসংখ্যার ওপরে পৃথিবীতে কেবল তিনটি দেশ রয়েছে - ভারত, চীন এবং আমেরিকা। আর কোনও দেশের জনসংখ্যা এত বেশি নয়। এ কারণেই ভারতের টিকাকরণ অভিযান এত বড়। আর সেজন্যই এই অভিযান ভারতের সামর্থ্যের প্রতীক। এবং আমি দেশবাসীর কাছে আরও একটি কথা বলতে চাই - আমাদের বিজ্ঞানীরা, আমাদের বিশেষজ্ঞরা এই 'মেড ইন ইন্ডিয়া' ভ্যাকসিনটির সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরেই তা জরুরি অবস্থায় ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন। তাই দেশের জনগণকে অপপ্রচার ও গুজব থেকে দূরে থাকতে হবে।

বন্ধুগণ,

আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, ভারতের টিকা গবেষক, ভারতের টিকাকরণ প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই বিশ্বে প্রচুর বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে। আমাদের অতীতের উদাহরণের মাধ্যমেই এই বিশ্বাস আমরা অর্জন করেছি।

আমার প্রিয় দেশবাসী,

প্রত্যেক ভারতীয় এটা জেনে গর্বিত হবেন যে বিশ্বের প্রায় ৬০ শতাংশ শিশু যে জীবনদায়ী ভ্যাকসিন পায় তা ভারতেই তৈরি হয়। এই ভ্যাকসিন গুলো ভারতের কঠোর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে অনুমোদন পায়। 'মেড ইন ইন্ডিয়া' করোনা ভ্যাকসিনের মাধ্যমে আমাদের বিজ্ঞানীদের ওপর বিশ্বস্ততা এবং ভ্যাকসিন সম্পর্কে আমাদের দক্ষতা বিশ্বে আরও দৃঢ় হবে। এই সম্পর্কে আরও কিছু বিশেষ বিষয় রয়েছে, যা আমি আজ দেশবাসীদের জানাতে চাই। এই ভারতীয় ভ্যাকসিনগুলি বিদেশী ভ্যাকসিনগুলির তুলনায় অনেক সস্তা এবং এগুলো ব্যবহার করাও সমান সহজ। বিদেশে কিছু ভ্যাকসিন রয়েছে যার ডোজ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত এবং সেগুলি মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ফ্রিজে রাখতে হয়। যদিও, ভারতের ভ্যাকসিনগুলি এমনভাবে তৈরি যা বহু বছর ধরে ভারতে পরীক্ষিত । এই ভ্যাকসিনগুলো সংরক্ষণ থেকে পরিবহন পর্যন্ত ভারতীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতির অনুকূল। এই ভ্যাকসিনটিই এখন করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারতকে জয়ের মুখ দেখাচ্ছে।

বন্ধুগণ,

করোনার বিরুদ্ধে আমরা আত্মবিশ্বাস এবং স্বনির্ভরতাকে ভরসা করেই লড়ে গিয়েছি। এই কঠিন লড়াইয়ে আমরা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে দুর্বল হতে দেব না, প্রতিটি ভারতীয়ই এই প্রণ করেছেন। সঙ্কট যত বড় হোক না কেন, দেশবাসী কখনই আত্মবিশ্বাস হারান নি। ভারতে প্রথম যখন করোনা ধরা পড়ে তখন দেশে করোনার পরীক্ষার একটি মাত্র পরীক্ষাগার ছিল। আমরা আমাদের সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাস রাখি এবং আজ আমাদের কাছে ২৩০০রও বেশি ল্যাবের নেটওয়ার্ক রয়েছে। প্রথমদিকে, আমরা মাস্ক, পিপিই কিট, টেস্টিং কিট, ভেন্টিলেটরের মতো জরুরি জিনিসের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। আজ আমরা এই সমস্ত জিনিস তৈরি করতে স্বাবলম্বী হয়েছি এবং সেগুলি রফতানিও করছি। আত্মবিশ্বাস এবং স্বনির্ভরতার এই শক্তিকে আমাদের টিকাকরণের পর্যায়েও শক্তিশালী করতে হবে।

বন্ধুগণ,

মহান তেলেগু কবি শ্রী গুরাজাডা আপ্পারাও বলেছিলেন- "সন্ত মন্থান কান্ত মানুকু, পৈরুগুবাদিকি তোডু পডভয় দেশমন্তে মাত্তি কদোয়ী, দেশমান্টে মনুষুলয়!" অর্থাত্ আমরা যাতে অপরের কাজে আসতে পারি সেই নিঃস্বার্থ ভাবনা আমাদের মধ্যে থাকা উচিত। রাষ্ট্র কেবল কাদা, জল, নুড়ি, পাথর দিয়ে তৈরি হয় না, রাষ্ট্রের অর্থ আমাদের মানুষ। সারা দেশ এই ভাবনা নিয়েই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। আজ যখন আমরা গত বছরের দিকে তাকিয়ে দেখি, একজন ব্যক্তি হিসেবে, একটি পরিবার হিসেবে, একটি রাষ্ট্র হিসেবে আমরা অনেক কিছু শিখেছি, অনেক কিছু দেখেছি, জেনেছি ও বুঝেছি। আজ যখন ভারত তার টিকাকরণ অভিযান শুরু করছে, আমি সেই দিনগুলিকেও স্মরণ করছি। করোনা সঙ্কটের সেই সময় প্রত্যেকেই কিছু করতে চাইছিল, তবে তাদের কাছে কোনও উপায় ছিল না। সাধারণত, কেউ অসুস্থ হলে, পুরো পরিবার অসুস্থ ব্যক্তির যত্ন নেওয়ার জন্য জড়ো হয়। তবে এই রোগটি রোগীকে নিঃসঙ্গ করে দিয়েছিল। বহু জায়গায় অসুস্থ ছোট বাচ্চাদের তাদের মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। মা চিন্তা করতেন, মা কাঁদতেন, কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও কিছুই করতে পারতেন না, সন্তানকে কোলে নিতেও পারতেন না। কোথাও বা হাসপাতালে একা বৃদ্ধ বাবা তাঁর রোগের সঙ্গে লড়াই করতে বাধ্য ছিলেন। সন্তান চেয়েও তাঁর পাশে থাকতে পারেনি। যাঁরা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন, তাঁরা অন্তিমকালে প্রাপ্য বিদায়টুকু পাননি। সেই সময়টি নিয়ে আমরা যত বেশি চিন্তা করি, মন কেঁপে ওঠে, মন খারাপ হয়ে যায়।

তবে বন্ধুরা,

ওই সঙ্কটের মধ্যে, হতাশার পরিবেশে, কেউ আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করছিলেন, আমাদের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন সঙ্কটের মধ্যে ফেলেছিলেন। আমাদের চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিক্যাল কর্মী, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার, আশা কর্মী, সুইপার, পুলিশের সহযোগী এবং অন্যান্য সামনের সারিতে থাকা কর্মীরা। তাঁরা মানবতার প্রতি তাঁদের দায়িত্বকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। এঁদের অনেকেই সেসময় ছেলেমেয়ে, পরিবার থেকে দূরে থেকেছেন, অনেক দিন বাড়িতে যাননি। এরকম অনেক বন্ধুও রয়েছেন যারা কখনও বাড়ি ফিরতেই পারেননি, তাঁরা একটি প্রাণ বাঁচানোর জন্য নিজের জীবনের আহুতি দিয়েছেন। তাই আজ, করোনার প্রথম ভ্যাকসিন সমাজের স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের দিয়ে, একরকমভাবে সমাজ তার ঋণ শোধ করছে। এই টিকা সেই সমস্ত বন্ধুর প্রতি রাষ্ট্রের কৃতজ্ঞতার শ্রদ্ধাঞ্জলি!

ভাই ও বোনেরা,

মানব ইতিহাসে অনেক বিপর্যয় ঘটেছে, মহামারী দেখা দিয়েছে, ভয়ানক যুদ্ধ হয়েছে, কিন্তু কারোনার মতো চ্যালেঞ্জ কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। এটি এমন এক মহামারী, যার অভিজ্ঞতা বিজ্ঞান বা সমাজ কারও কাছে ছিল না। বিভিন্ন দেশ থেকে যে ছবিগুলি আসছিল, যে খবর আসছিল, তা ভারতীয়দের পাশাপাশি গোটা বিশ্বকে চিন্তায় ফেলেছিল। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের বড় বড় বিশেষজ্ঞরা ভারতের সম্পর্কে নানা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

তবে বন্ধুরা,

ভারতের বিশাল জনসংখ্যা, যা আমাদের দুর্বলতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল, তাকে আমরা নিজের শক্তি বানিয়ে নিয়েছি। সংবেদনশীলতা ও সহমর্মিতাকে আধার করেই ভারত লড়াই শুরু করেছিল। ভারত চব্বিশ ঘন্টা সতর্ক থেকে, সমস্ত ঘটনার ওপর নজরদারি করে ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ৩০ শে জানুয়ারী, ভারতে করোনার প্রথম খবর পাওয়া যায়, তবে এর দুই সপ্তাহেরও আগে ভারতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন হয়ে গেছিলো। গত বছর আজকের দিনেই আমরা নজরদারি শুরু করে দিয়েছিলাম। ১৭ জানুয়ারি ২০২০ ভারত তার প্রথম অ্যাডভাইজরি প্রকাশ করেছিল। ভারত তার বিমানবন্দরগুলিতে যাত্রীদের স্ক্রিনিং শুরু করা বিশ্বের প্রথম কয়েকটি দেশগুলির মধ্যে একটি।

বন্ধুগণ,

করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত যে ইচ্ছাশক্তির প্রদর্শন করেছে, যে সাহস দেখিয়েছে, যা সম্মিলিত শক্তি দেখিয়েছে, তা আগামীতে বহু প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার কাজ করবে। মনে করুন, জনতা কারফিউ করোনার বিরুদ্ধে আমাদের সমাজের সংযম এবং শৃঙ্খলারও পরীক্ষা ছিল, যাতে প্রতিটি দেশবাসী সফল হয়েছিল। জনতা কারফিউ লকডাউনের জন্য দেশকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে লকডাউনের জন্য প্রস্তুত করেছিল। আমরা তালি-থালা ও প্রদীপ জ্বালিয়ে দেশের আত্মবিশ্বাস বাঁচিয়ে রেখেছি।

বন্ধুগণ,

করোনার মতো অজানা শত্রু, যার ক্রিয়া-বিক্রিয়া বড়-বড় শক্তিশালী দেশগুলি বুঝতে পারছিল না, এর সংক্রমণ রোধ করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় ছিল যে যেখানে আছে সে সেখানেই থাক। সেজন্যে, দেশে লকডাউনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত সহজ ছিল না। এত বড় জনসংখ্যাকে বাড়ির ভিতরে রাখা অসম্ভব, আমরা এটি উপলব্ধি করেছিলাম। এবং এখানে দেশে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, লকডাউন হচ্ছিল। জনগণের জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে এর প্রভাব কী হবে, অর্থব্যবস্থায় এর কী প্রভাব পড়বে তাও আমরা মূল্যায়ন করছিলাম। তবে 'জান হ্যায় তো জাহান হ্যায়' মন্ত্র অনুসরণ করে দেশে প্রতিটি ভারতীয়ের জীবন রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এবং আমরা প্রত্যেকে দেখেছি যে সঙ্গে সঙ্গে পুরো দেশ, পুরো সমাজ এই ভাবনাকে সমর্থন জানিয়েছিল। ছোট ছোট, তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্য আমি বেশ কয়েকবার দেশবাসীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছি। একদিকে যেখানে দরিদ্রদের জন্য নিখরচায় খাবার সরবরাহ করা হয়েছিল, অন্যদিকে দুধ, শাকসবজি, রেশন, গ্যাস, ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছিল। দেশে সুষ্ঠুভাবে পরিষেবা চালানোর জন্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি ২৪*৭ কন্ট্রোল রুম চালু করেছিল, যেখানে হাজার হাজার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে, মানুষের সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।

বন্ধুগণ,

করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে আমরা প্রতি পদক্ষেপে বিশ্বের সামনে নজির স্থাপন করেছি। এমন সময়ে যখন কিছু দেশ তাদের নাগরিকদের চীনের ক্রমবর্ধমান করোনা পরিস্থিতির মাঝে ফেলে দিয়েছিল, তখন ভারত চীনে আটকে পড়া প্রত্যেক ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনে।এবং শুধু ভারতীয়দের নয়, আমরা অন্যান্য অনেক দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে এনেছি। করোনার সময়ে বন্দে ভারত মিশনের আওতায় ৪৫ লক্ষেরও বেশি ভারতীয়দের বিদেশ থেকে ভারতে আনা হয়েছিল। আমার মনে আছে, একটি দেশে ভারতীয়দের পরীক্ষার জন্য মেশিন পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন ভারত এখান থেকে পুরো টেস্টিং ল্যাব ওই দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল যাতে ভারতীয়দের পরীক্ষা করতে সমস্যা না হয়।

বন্ধুগণ,

এই অতিমারীর সঙ্গে ভারত যেভাবে মোকাবিলা করেছে আজ পুরো বিশ্ব তা স্বীকার করছে। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার, স্থানীয় সংস্থা, প্রতিটি সরকারী প্রতিষ্ঠান, সামাজিক প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কীভাবে ভালভাবে কাজ করতে পারে তার উদাহরণও ভারতও বিশ্বের সামনে রেখেছিল। ইসরো, ডিআরডিও, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে কৃষক ও শ্রমিকরা কীভাবে একই সংকল্পে কাজ করতে পারে তা ভারত দেখিয়ে দিয়েছে। 'দু গজের দূরত্ব এবং মাস্ক প্রয়োজনীয়' এই মন্ত্র অনুসরণ করার ক্ষেত্রে ভারত শীর্ষস্থানীয় দেশগুলির মধ্যে ছিল।

ভাই এবং বোনেরা,

আজ, এই সমস্ত চেষ্টার ফলাফল হ'ল ভারতে করোনার মৃত্যুর হার কম এবং ঠিক হয়ে ওঠার হার অনেক বেশি। দেশে এমন অনেক জেলা রয়েছে যেখানে করোনার কারণে একজনও প্রাণ হারায় নি। এই জেলাগুলির প্রতিটি ব্যক্তি করোনার থেকে সুস্থ হয়ে নিজের বাড়ি ফিরেছে। এমন অনেক জেলাও রয়েছে যেখানে গত দুই সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণের একটিও ঘটনা ঘটেনি। এমনকি লকডাউনের প্রভাবে ধসে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারেও ভারত বিশ্বে অনেক দেশের থেকে এগিয়ে রয়েছে।

প্রতিকূলতার মধ্যেও দেড় শতাধিক দেশে প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা সরবরাহকারী কয়েকটি দেশগুলির মধ্যে ভারত অন্যতম। প্যারাসিটামল, হাইড্রোক্সি-ক্লোরোকুইন হোক, টেস্ট কিট হোক, ভারত অন্যান্য দেশের লোকদেরও সুরক্ষার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছে। আজ, যখন আমরা আমাদের ভ্যাকসিন তৈরি করেছি, এখন গোটা বিশ্ব আশা নিয়ে ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাদের টিকাকরণ অভিযানের অগ্রগতির ফলে বিশ্বের অনেক দেশ আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হবে। ভারতের ভ্যাকসিন, আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা, পুরো মানবজাতির কাজে লাগুক, এটা আমাদের প্রতিশ্রুতি।

ভাই এবং বোনেরা,

এই টিকাকরণ অভিযান দীর্ঘদিন চলবে। আমরা মানুষের জীবন বাঁচানোর সুযোগ পেয়েছি। তাই, এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে দেশের স্বেচ্ছাসেবকরা এগিয়ে আসছেন। আমি তাদের স্বাগত জানাই, আমি অবশ্যই আরও স্বেচ্ছাসেবীদের এই পরিষেবায় যোগদান করার জন্য অনুরোধ করব। হ্যাঁ, আমি আগেই বলেছি, টিকাকরণের সময় এবং পরে মাস্ক, দু'গজের দূরত্ব এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা প্রয়োজন। আপনার টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে মানে এর অর্থ এই নয় যে আপনি করোনা প্রতিরোধের অন্যান্য উপায় মানবেন না। এখন আমাদের নতুন ব্রত নিতে হবে - ওষুধের পাশাপাশি অনুশাসনও! আপনারা সবাই সুস্থ থাকুন, আমি এই টিকাকরণ অভিযানের জন্য দেশকে শুভ কামনা জানাই! আমি বিশেষত দেশের বৈজ্ঞানিকদের, গবেষকদের, ল্যাবে যুক্ত সকলকে অভিনন্দন জানাই, যারা তাদের ল্যাবটিতে পুরো বছর ঋষির মতো কাটিয়েছেন এবং এই টিকাটি দেশ ও মানুষের উদ্দেশ্যে দিয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ জানাই।

আমি আপনাদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। শীঘ্রই এর সুবিধা নিন। আপনি সুস্থ থাকুন, আপনার পরিবারও সুস্থ থাকুক। পুরো মানবজাতি এই সঙ্কটের মুহুর্ত থেকে বেরিয়ে আসুক এবং আমরা সকলেই সুস্থ জীবন কাটাই। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই!

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
Positive consumer sentiments drive automobile dispatches up 12% in 2024: SIAM

Media Coverage

Positive consumer sentiments drive automobile dispatches up 12% in 2024: SIAM
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
PM Modi remembers the great Thiruvalluvar on Thiruvalluvar Day
January 15, 2025
His verses reflect the essence of Tamil culture and our philosophical heritage:PM
His teachings emphasize righteousness, compassion, and justice: PM

The Prime Minister, Shri Narendra Modi remembers the great Tamil philosopher, poet and thinker Thiruvalluvar, today, on Thiruvalluvar Day. Prime Minister Shri Modi remarked that the great Thiruvalluvar's verses reflect the essence of Tamil culture and our philosophical heritage. "His timeless work, the Tirukkural, stands as a beacon of inspiration, offering profound insights on a wide range of issues", Shri Modi stated.

The Prime Minister posted on X:

"On Thiruvalluvar Day, we remember one of our land’s greatest philosophers, poets, and thinkers, the great Thiruvalluvar. His verses reflect the essence of Tamil culture and our philosophical heritage. His teachings emphasize righteousness, compassion, and justice. His timeless work, the Tirukkural, stands as a beacon of inspiration, offering profound insights on a wide range of issues. We will continue to work hard to fulfil his vision for our society."