প্রশ্ন: পূর্ব ভারত এবং পশ্চিম ভারতে শিল্পায়নের মধ্যে বিরাট ফারাকের কথা আপনি বৈহু বার বলেছেন। আপনি কি এই ব্যবধান কমাতে পেরেছেন?

প্রধানমন্ত্রী: প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিশ্রমী মানুষ থাকা সত্ত্বেও সব থেকে দুঃখজনক বাস্তব হল, পূর্ব ভারত তার ক্ষমতা অনুযায়ী সাফল্য পায়নি। পশ্চিমবঙ্গের কথাই ধরা যাক। ১৯৪৭ সালে দেশের শিল্প উৎপাদনের একটা বড় ভাগ পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসত। তার পরে একের পর এক সরকারের আমলে, তা লাগাতার কমেছে। দেশের বিভিন্ন অংশে যে সমস্যা বাসা বেঁধেছে, পশ্চিমবঙ্গ তার উপসর্গ। মূল সমস্যা দু'টি।

প্রথম সমস্যা হল, উন্নয়ন বিরোধী রাজনীতি। পশ্চাদমুখী রাজনৈতিক মতাদর্শের নামে, দশকের পর দশক ধরে, ক্ষমতাসীন লোকেরা উন্নয়ন বিরোধী রাজনীতি চালিয়েছেন। এতে শিল্পায়ন ও উদ্যোগমুখী কাজকর্মের যে দুর্দান্ত ইতিহাস ছিল, তার ক্ষয় হয়েছে। এবং এই উন্নয়নবিরোধী রাজনীতি তৃণমূলের জমানাতেও চলেছে।

দ্বিতীয় সমস্যা হল, প্রশাসনের খামতি। এটা প্রথম সমস্যার সরাসরি ফল। যেহেতু উন্নয়নের এবং সুশাসনের চিন্তাভাবনার ভিত্তিতে কোনও প্রতিযোগিতাই হয়নি, তাই গোটা অঞ্চলে সুশাসনের বড় ঘাটতি থেকে গিয়েছে। জীবনযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্যের, ব্যবসায় সহজ পরিবেশের, পরিকাঠামোর, বিদ্যুৎ থেকে প্রশিক্ষিত দক্ষ কর্মীর অভাবে এটা স্পষ্ট। এই অসাম্য কী ভাবে আমরা সমাধানের চেষ্টা করেছি, তার ছোট্ট উদাহরণ দিই। আর্থিক বৃদ্ধির জন্য বিদ্যুতের জোগান জরুরি। কিন্তু ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। আমরা এক হাজার দিনের মধ্যে মিশন মোডে কাজ করে ওই গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এর মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার গ্রাম ছিল পূর্ব ভারতে। সাত দশক ধরে এই গ্রামগুলি বিদ্যুৎবিহীন ছিল। আমরা সেখানে এক হাজার দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। এতগুলো গ্রাম ও পরিবারে যখন বিদ্যুৎ পৌঁছেছে, তখন আমরা আর্থিক কর্মকাণ্ডের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করেছি। পূর্ব ও পশ্চিম ভারতের মধ্যে এই দিনের পর দিন ফারাক থেকে যাওয়া বরাবরই যথেষ্ট চিন্তার কারণ। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই অঞ্চলের প্রচুর উন্নতির সুযোগ ঢাকা পড়ে গিয়েছে। দশকের পর দশক ধরে, সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি উন্নতির পথ আটকে রেখেছে। পশ্চিমবঙ্গে বাম জমানার ৩৪ বছরে তা বিশেষ ভাবে প্রকট। এর ফলে শিল্পায়ন, বিনিয়োগের গতিরোধ হয়েছে। এমনকি, আজকের দিনেও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল রাজ্যের আর্থিক উন্নতির সুযোগের দিকে নজর দেওয়ার বদলে নির্দিষ্ট একটি পরিবারের স্বার্থরক্ষা ও তাদের ভোটব্যাঙ্ক রক্ষায় ব্যস্ত বলে দেখা যাচ্ছে। যেমন, আমরা পশ্চিমবঙ্গে সড়ক, রেল, বন্দর পরিকাঠামো বাড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছি। যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়। তা হলে শিল্প আসবে। স্থানীয় কৃষকদের প্রয়োজনও মিটবে।

বিহারে আমরা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে জোর দেওয়ায় মেগা ফুড পার্ক প্রকল্পের মাধ্যমে অত্যাধুনিক শিল্প তৈরি হয়েছে। আমাদের সরকার পূর্বাঞ্চলে পরিকাঠামোর উন্নতিতে বড় রকমের পদক্ষেপ করেছে। যেমন, পূর্ব উপকূল শিল্প করিডর গড়ে তোলা। ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্ধ্রপ্রদেশ জুড়ে তা ছড়িয়ে রয়েছে। তার সঙ্গে অন্যান্য শিল্প করিডর রয়েছে। আর্থিক বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, রফতানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই করিডর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। এই করিডরগুলি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করবে। ফলে বিনিয়োগ বাড়বে। আর্থিক উন্নয়ন হবে।


প্রশ্ন: দেশে ভাল মানের কর্মসংস্থান করতে আপনি কী করবেন?

প্রধানমন্ত্রী: আমাদের দশ বছরের ট্র্যাক রেকর্ড দেখুন। আমরা সরকারি থেকে বেসরকারি ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান করেছি। মহাকাশ ক্ষেত্র থেকে স্টার্টআপ-এ নতুন কাজের রাস্তা তৈরি হয়েছে। আগে এ সবের অস্তিত্ব ছিল না। বিভিন্ন ভাবে কর্মসংস্থান তৈরির কাজ হয়েছে। প্রথমত, আমরা দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণে বিপুল বিনিয়োগ করেছি। ১ কোটি ৩৭ লক্ষের বেশি মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এঁদের অধিকাংশই প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনায় শংসাপত্র পেয়েছেন। আজ গ্রামের মহিলাদের ড্রোন পাইলট হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ড্রোন দিদি হয়ে উঠেছেন। কৃষি ক্ষেত্রে তাঁরা ড্রোন কাজে লাগাচ্ছেন। যখন গোটা দেশের মানুষ নিজেদের দক্ষতা বাড়াচ্ছেন, তখন আরও বেশি অর্থপূর্ণ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে বাধ্য।

দ্বিতীয়ত, ভারত ‘কাটিং-এজ' প্রযুক্তি ক্ষেত্রে পা রাখছে। যেখানে আমরা আগে সাহস দেখাইনি । উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎসাহভাতা বা প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেন্টিভের জন্য এটা সম্ভব হচ্ছে। আগে ভারতে মোবাইল উৎপাদন প্রায় হতই না। দশ বছর আগে দেশে শতকরা ৯৮ ভাগ মোবাইল আমদানি করা হত। এখন ৯৯ শতাংশ মোবাইল দেশে তৈরি হচ্ছে। আমরা মোবাইলের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য রফতানিকারী হয়ে উঠেছি। গোটা বিশ্বে মোবাইল তৈরির ক্ষেত্রে দেশ দ্বিতীয় স্থানে উঠেছে। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়েছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি রেকর্ড ছুঁয়েছে। সেমিকনডাক্টর শিল্পের ক্ষেত্রে একই রকম সাফল্য পেতে চাই। সেই লক্ষ্যে কাজও শুরু হয়েছে। এই সব ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তৃতীয়ত, ভারত গত দশ বছরে অভূতপূর্ব গতিতে বিশ্ব মানের পরিকাঠামো তৈরি করেছে। বিমানবন্দরের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হোক, আরও বেশি শহরে মেট্রো রেল চালু করা হোক বা দ্রুত গতিতে হাইওয়ে তৈরি করা হোক, কোনও এলাকা যাতে পিছিয়ে না থাকে, তা নিশ্চিত করছি। ভাল যোগাযোগের সুযোগ নতুন ব্যবসা ও শিল্পের উন্নতির ক্ষেত্রে অনেক দরজা খুলে দেয়। আমরা পরিকাঠামোর উন্নতিতে ১০ লক্ষ কোটি টাকার ঐতিহাসিক বরাদ্দ করেছি। এই পরিকাঠামো তৈরির ফলে কর্মসংস্থান তৈরির সংখ্যাও বেড়েছে। চতুর্থত, নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ করেছি। কেন্দ্রীয় সরকারের রোজগার মেলায় লক্ষ লক্ষ চাকরির নিয়োগপত্র বিলি করা হয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারগুলিও নির্দিষ্ট লক্ষ্য বেঁধে কাজ করছে।

এ সবের ফল দেখা যাচ্ছে। বার্ষিক পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ থেকে ২০২৩-এর মধ্যে জনসংখ্যার মধ্যে কর্মীদের ভাগ বেড়ে ৫৬ শতাংশ হয়েছে। বেকারত্বের হার ঐতিহাসিক ভাবে ৩.২ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০১৭ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডে (ইপিএফ) ৬ কোটির বেশি নতুন কর্মী নাম লিখিয়েছেন। সংগঠিত ক্ষেত্রে কত কাজ তৈরি হয়েছে, এতেই বোঝা যায়।

প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গে এবং পূর্ব ভারতে কর্মসংস্থানের জন্য আপনার পরিকল্পনা কী?

প্রধানমন্ত্রী: আর্থিক বৃদ্ধি, শিল্পোন্নয় ও উদ্যোগকে লালনপালন করাই আমার চিন্তার মূলে। এই রাজ্যের অব্যবহৃত ক্ষমতা বিপুল। এটা সম্ভব করতে হলে শুধু চিরাচরিত ক্ষেত্রের দিকে নজর দিলে হবে না। উঠতি শিল্পের দিকেও নজর দিতে হবে। শিল্প ক্ষেত্রে বৃদ্ধি ও পরিবেশ রক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রেখে আমরা ব্যবসার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিতে চাই। একই সঙ্গে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও রক্ষা করতে হবে। তা ছাড়া, পরিকাঠামো তৈরিতে জোর, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, পূর্ব উপকূল আর্থিক করিডরের মতো শিল্প করিডর তৈরির ফলে আরও বিনিয়োগ আসবে, ব্যবসায়িক লেনদেন বাড়বে, শিল্প বেড়ে ওঠার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হবে। তার ফলেও কাজের সুযোগ তৈরি হবে। আমরা পূর্ব ভারতে সড়ক, রেল, বন্দর ও ডিজিটাল পরিকাঠামো তৈরিতে বিপুল বিনিয়োগ করছি। পূর্ব ভারত একসময় যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা পায়নি। অবশেষে এ সবের সুবিধা পাচ্ছে। আমি কৃষি, মৎস্য, বস্ত্র ও ক্ষুদ্র শিল্পের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎসাহ দেওয়ায় বিশ্বাসী। ছোট-মাঝারি শিল্প আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। আত্মনির্ভর ভারত, উৎপাদনে উৎসাহ ভাতার মতো প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় উদ্যোগপতিদের অনেক সাহায্য দশকের পর দশক ধরে, সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি উন্নতির পথ আটকে রেখেছে। পশ্চিমবঙ্গে বাম জমানার ৩৪ বছরে তা বিশেষ ভাবে প্রকট। এর ফলে শিল্পায়ন, বিনিয়োগের গতিরোধ হয়েছে। এমনকি, আজকের দিনে ও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল রাজ্যের আর্থিক উন্নতির সুযোগের দিকে নজর দেওয়ার বদলে নির্দিষ্ট একটি পরিবারের স্বার্থরক্ষা ও তাদের ভোটব্যাঙ্ক রক্ষায় ব্যস্ত বলে দেখা যাচ্ছে। করছি। উদ্ভাবনে উৎসাহ দিচ্ছি। তৃণমূল স্তরে কর্মসংস্থান তৈরি করছি। পশ্চিমবঙ্গে ছোট ব্যবসায় শুধু ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী মুদ্ৰা যোজনায় ৩৮,৫০০ কোটি টাকার ঋণ বিলি করা হয়েছে।

প্রশ্ন: প্রথম পর্বের ভোটের পর আপনি মুসলিম, পাকিস্তান, মঙ্গলসূত্রের কথা বলে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করছেন বলে বিরোধীরা বলছেন। কী বলবেন?

প্রধানমন্ত্রী: অযৌক্তিক প্রশ্ন। কংগ্রেসের ইস্তাহারে বাড়াবাড়ি রকমের সাম্প্রদায়িক প্রতিশ্রুতি জায়গা করে নিয়েছে। সে জন্য সীমান্তপার থেকে কংগ্রেসের প্রশংসা পর্যন্ত করা হয়েছে। অথচ, বলা হচ্ছে আমি নাকি ভোটে মেরুকরণ করছি? আপনারাই বলুন, কোনও দলের ইস্তাহার কি কেবল নির্বাচনী ‘শো-পিস’? কোনও দলের ইস্তাহার দেশকে কোন পথে নিয়ে যেতে চাইছে তা কি সংবাদমাধ্যম মূল্যায়ন করে দেখবে না? যখন কংগ্রেসের ইস্তাহার এল তখন আমি অপেক্ষা করছিলাম যে সংবাদমাধ্যম ওই দলের বিস্ফোরক ভাবনাচিন্তাকে তুলে ধরবে। কিন্তু আমি কংগ্রেসের ইস্তাহারে মুসলিম লিগের ভাবনাচিন্তা রয়েছে বলে তুলে ধরার পরে সংবাদমাধ্যমে সে দিকে নজর দেয়। কংগ্রেসের ইস্তাহার থেকে স্পষ্ট যে তারা ধর্মভিত্তিক সংরক্ষণের প্রস্তাব করেছে। যা সংবিধানের ভাবনার সঙ্গে খাপ খায় না। এটি কংগ্রেসের সুপরিকল্পিত কৌশল, যা তারা রাজ্য স্তরে কয়েক দশক ধরে প্রয়োগ করে এসেছে। ১৯৯৫ সালে কর্নাটকে কংগ্রেস ওবিসিদের সংরক্ষণের একাংশ মুসলিমদের জন্য বরাদ্দ করেছিল। তারপরে ২০০৪ সালে কংগ্রেস অন্ধ্রপ্রদেশে তফসিলি জাতি, জনজাতি ও ওবিসিদের সংরক্ষণ থেকে মুসলিমদের সংরক্ষণ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আদালতে সেই উদ্যোগ আটকে যায়। কংগ্রেসের ২০০৯ সালের ইস্তাহারেও এই মনোভাব একেবারে স্পষ্ট ছিল। কংগ্রেস জাতীয় স্তরে ধর্মভিত্তিক সংরক্ষণ চালু করতে চেয়েছিল। এখন কর্নাটকে রাতারাতি কংগ্রেস গোটা মুসলিম সমাজকে ওবিসি বলে ঘোষণা করেছে। যা ওবিসিদের অধিকারের প্রকাশ্য লুট। তেমনি সম্পদ বণ্টন করে দেওয়ার যে প্রস্তাব কংগ্রেস রেখেছে, সেটিও সমভাবে বিপজ্জনক। কংগ্রেসের

শাহজাদা আমজনতার সম্পদের এক্স-রে করতে চাইছেন। এ দেশে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সম্পদ গচ্ছিত রাখার প্রথা রয়েছে। এখন কংগ্রেসের নজর সেই মা-বোনেদের সম্পদের উপরে গিয়ে পড়েছে। যদি আপনার পরিবার ক্রমবর্ধমান হয় এবং আপনার যদি গ্রামে একটি বাড়ি ও কর্মক্ষেত্র যে শহরে সেখানে আর একটি বাড়ি থাকে, তা হলে কংগ্রেস একটি বাড়ি কেড়ে নিয়ে তা ভোট ব্যাঙ্ককে বিলিয়ে দেবে। মোদী মোটেই পাকিস্তানকে এই নির্বাচনে টেনে আনেনি। বরং কংগ্রেস পাকিস্তানের এক প্রাক্তন মন্ত্রীকে জরুরি বার্তা পাঠালে তিনি কংগ্রেসের সমর্থনে মুখ খোলেন। এখানেই শেষ নয়।  গত কয়েক দিনে জঘন্য রাজনীতির সাক্ষী থাকতে হয়েছে। কংগ্রেসের এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সন্ত্রাসী হামলার জন্য পাকিস্তানকে ক্লিনচিট দিয়ে উল্টে সেনাকেই দোষী ঠাউরেছেন। মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের এক নেতা ২৬/১১ মুম্বই হামলায় পুলিশের মৃত্যুর জন্য হিন্দুদের দোষী সাব্যস্ত করে পাকিস্তানকে ক্লিনচিট দিয়েছেন। ইন্ডিয়া জোটে কংগ্রেসের এক অন্যতম শরিক দলের নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পাকিস্তান চুড়ি পরে বসে নেই। আমি শাহজাদার কাছে জানতে চাই, এ ধরনের মন্তব্যের উদ্দেশ্য কী। কেন পাকিস্তানের প্রতি এত ভালবাসা আর দেশের সেনার প্রতি ঘৃণা?

প্রশ্ন: বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে অপব্যবহার করা এবং বিজেপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকা নেতাদের নেওয়ায় ওয়াশিং মেশিন হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আপনি কি মনে করেন না যে এর ফলে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত ব্যাহত হচ্ছে?

প্রধানমন্ত্রী: দুর্নীতিকে এত হাল্কা করে দেখাবেন না। রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতিতে জড়াতে দেখে সাধারণ মানুষ খুবই ক্রুদ্ধ। ঝাড়খণ্ডের সাম্প্রতিক ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, আমাদের তদন্ত সংস্থাগুলি ঠিক পথেই এগোচ্ছে। রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে গাদা গাদা টাকা উদ্ধার হয়েছে, এমন অনেক ঘটনা রয়েছে। শুধু বিরোধী দলের বলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? তৃণমূল নেতারা তো সব ধরনের অপরাধ করেছে, তাদের জবাব দিতে হবে।

কেন্দ্রীয় সংস্থার রাজনৈতিক অপব্যবহারের অভিযোগও ভিত্তিহীন। ইডি যে সব দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করছে, তাঁদের মাত্র তিন শতাংশ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বাকি ৯৭ শতাংশ ক্রিমিনাল এবং কিছু আধিকারিক। ব্যবস্থা তাদের বিরুদ্ধেও নেওয়া হচ্ছে। ফলে রাজনৈতিক অভিসন্ধিতে তদন্তের অভিযোগ টেকে না। আমার তো মনে হয় অপব্যবহারের উদ্বেগের বদলে নিজেদের কেলেঙ্কারি ধরা পড়া এবং গ্রেফতারের ভয় থেকে এ সব বলা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সংস্থা আইন মেনে কাজ করছে এবং তাদের তা করতে দেওয়া হোক।

প্রশ্ন: বিজেপিবিরোধী দলশাসিত দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জেলে। এতে তো বিরোধীরা সহানুভূতি পাবেন।

প্রধানমন্ত্রী: আমি তো এই প্রশ্নের যুক্তিই কিছু বুঝলাম না । যাঁরা দুর্নীতির জন্য জেলে, তাঁরা সহানুভূতি কেন পাবেন? মানুষ তাঁদের উপর ক্রুদ্ধ। মানুষ নেতাদের প্রশ্ন করছে, তাঁরা যদি দোষী না-ই হন, তা হলে সমনে সাড়া দেননি কেন? কেন তাঁরা পালাতে চেয়েছেন? কী লুকোচ্ছেন তাঁরা? সংবাদমাধ্যমের বরং মানুষকে জানানো উচিত, এই নেতাদের কেলেঙ্কারি সম্পর্কে আদালত কত কঠোর মন্তব্য করেছে। আমার বিশ্বাস, পদ, দল নির্বিশেষে দুর্নীতিগ্রস্তদের বিচার হওয়া উচিত, মানুষ এটা বোঝেন। এ-ও বোঝেন যে এনডিএ দুর্নীতি নির্মূল করতে চায়, আর ইন্ডি জোট দুর্নীতিগ্রস্তদের বাঁচাতে চায় ।

প্রশ্ন: রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে যাননি বলে বিরোধীদের দোষারোপ করছেন কেন?

প্রধানমন্ত্রী: শ্রীরামের জীবন এতই বড় এবং ভারতের সামগ্রিক স্মৃতিতে তা এতই প্রোথিত যে তা প্রত্যেক ভারতীয়ের হৃদয় স্পর্শ করেছে। তিনি প্রত্যেকের ভগবান রাম । রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা ভারতীয় সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, ৫০০ বছর তপস্যা, আত্মত্যাগ এবং ধৈর্যের পর কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন সফল হতে দেখছি। রামমন্দির ট্রাস্টের সদস্যরা উদার মনোভাব দেখিয়েছেন। মতভেদ সরিয়ে রেখে তাঁরা সব বিরোধী নেতাদের আমন্ত্রণ করেছিলেন। কিন্তু বিরোধী নেতারা ভোট ব্যাঙ্ক রাজনীতিতে এত নিমগ্ন যে তাঁরা আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। যদিও মুসলিমদের তরফে আবেদনকারী ইকবাল আনসারি, যিনি জীবনভর এই মামলা লড়েছেন, অসামান্য সৌজন্য দেখিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে নিয়েছেন এবং এই অনুষ্ঠানে গিয়েছেন।

প্রশ্ন: সন্দেশখালি কি আপনার দলের জন্য শুধুই নির্বাচনী গিমিক না অভিযোগকারিণীরা সুবিচার পাবেন?

প্রধানমন্ত্রী: আমরা সন্দেশখালির লড়াই রাস্তা থেকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে গিয়েছি। সন্দেশখালির অত্যাচারিতদের ন্যায়বিচার দিতে আমরা দায়বদ্ধ। সিবিআই তদন্ত করছে, প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে, আমি নিজে সন্দেশখালির কয়েক জন অত্যাচারিতের সঙ্গে দেখা করেছি। শুনেছি তাঁদের কী ভয়ঙ্কর অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। সারা দেশ দেখেছে, পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন কী ভাবে দোষীদের আড়াল করতে চেয়েছে। অত্যাচারিতদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আমাদের প্রার্থী রেখা পাত্র অন্যদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবেন এবং ন্যায়বিচারের জন্য লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আমরা তাঁদের পাশে আছি, এই বার্তাই আমরা রেখাকে প্রার্থী করে দিতে চেয়েছি।

প্রশ্ন: লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে আপনার আশা?

প্রধানমন্ত্রী:পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বদল চান। এক দশক আগেও আমাদের নামমাত্র উপস্থিতি ছিল সেখানে। আর আজ যদি দেখেন, বোঝাই যাচ্ছে, মানুষ আমাদের কত বিশ্বাস করেন। আমরা আত্মবিশ্বাসী, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ লোকসভা নির্বাচনে আমাদের বৃহত্তম দল হতে সাহায্য করবেন। তোষণের রাজনীতি থেকে বদল চান পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। মনে হচ্ছে, তাঁরা দুর্নীতিমুক্ত, কার্যকর প্রশাসন বলতে কী বোঝায়, তা দেখানোর সুযোগ আমাদের দিচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গ সোনার বাংলা চায়, আমরা তা দিয়ে দেখাব।

প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গের জন্য মোদীর গ্যারান্টি?

প্রধানমন্ত্রী: পশ্চিমবঙ্গের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা, বিশ্বে বাঙালির হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনা, যুবসমাজের জন্য উন্নয়ন এবং সুযোগ তৈরি করা, বিকশিত বঙ্গ, দুর্নীতিমুক্ত পশ্চিমবঙ্গ। আমাদের অন্নদাতারা আমাদের অগ্রাধিকার। ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য আরও সুবিধা, মৎস্যজীবীদের সুবিধা, গুচ্ছ শিল্প তৈরি, কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে ‘ম্যানুফ্যাকচারিং হাব তৈরি করা— পশ্চিমবঙ্গে প্রকৃত পরিবর্তন আনাই মোদীর গ্যারান্টি। আমাদের সঙ্কল্পপত্রে পশ্চিমবঙ্গের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের রূপরেখা রয়েছে।

প্রশ্ন: তৃণমূল বিজেপিকে হিন্দি বলয়ের দল বলে অভিহিত করে। পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে এর মোকাবিলা করতে পারবেন?

প্রধানমন্ত্রী: এটা তো খুবই সঙ্কীর্ণ ভাবনা, তৃণমূলই এমন ভাবতে পারে। ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তো পশ্চিমবঙ্গেরই, বিশেষত আধুনিক পশ্চিমবঙ্গ গঠনে তাঁর অবদান কেউ অস্বীকার করতে
জড়িয়ে রয়েছেন, পনজি স্কিম, রেশন কেলেঙ্কারি, পারে না। পশ্চিমবঙ্গেই জন্ম-কর্ম, নিয়োগ কেলেঙ্কারি, কয়লা কেলেঙ্কারি, এমনকি গরু পাচার কেলেঙ্কারি। সারা দেশ দেখেছে, যখন তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতাকে ইডি গ্রেফতার করেছে, তখন সোনা ও টাকা টয়লেট, পাইপ, ঘর—কোথা থেকে বেরোয়নি? যেখানে তাকানো যায়, লুটের চিহ্ন। বিজেপিতে সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত বা মামলাও বন্ধ করা হয়নি। কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে রয়েছেন, পনজি স্কিম, রেশন কেলেঙ্কারি, নিয়োগ কেলেঙ্কারি, কয়লা কেলেঙ্কারি, এমনকি গরু পাচার কেলেঙ্কারি। প্রতিটি কেলেঙ্কারি কোটি কোটি টাকার। সারা দেশ দেখেছে, যখন তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতাকে ইডি গ্রেফতার করেছে, তখন সোনা ও টাকা টয়লেট, পাইপ, ঘর—কোথা থেকে বেরোয়নি? যেখানে তাকানো যায়, লুটের চিহ্ন। বিজেপিতে সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত বা মামলাও বন্ধ করা হয়নি। প্রতিটি কেস চলছে এবং ন্যায় বিচারে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যারা আর্থিক আমাদের গণতন্ত্রকেই ধাক্কা দিচ্ছে? প্রধানমন্ত্রী: এই ধরনের ধারণা কোথাও নেই। আমাদের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বিশেষত নির্বাচন কমিশনের উপর দেশের মানুষের অগাধ আস্থা আছে। একটা পরাজিত জোটের মিথ্যে অপবাদে তা টলে যাবে না। কংগ্রেস হারবে বুঝতে পারলেই নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। মানুষ হাসে এ সব কথায়। কারণ, কংগ্রেস যখন কর্নাটক এবং তেলঙ্গানায় জিতেছিল, এই কমিশনই তো নির্বাচন পরিচালনা করেছিল। এটাও হাস্যকর যে, কংগ্রেস কী ভাবে ব্যালট পেপারের মতো প্রাচীন এমন দুর্দান্ত কার্যকর্তা এবং নেতারা আমাদের দলে রয়েছেন। হিংসার শিকার হয়েও আমাদের কার্যকর্তারা মানুষের সেবায় নিয়োজিত।

পশ্চিমবঙ্গ এবং পশ্চিমঙ্গের মানুষকে ভাল না বাসলে তাঁরা এত ঝুঁকি নিতেন? বিরোধীরা অনেক কিছু বলবেন, তবে আগেও তাঁরা সফল হননি। আমাদের বলা হয় উত্তর ভারতের দল, কিন্তু অন্য দলগুলির তুলনায় দক্ষিণ ভারত থেকে আমাদের সবচেয়ে বেশি সাংসদ। উত্তরপূর্ব ভারতে কয়েকটি রাজ্যে আমাদের সরকার রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশায় আমাদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এই সব রাজ্যেও শীঘ্রই আমরা ক্ষমতায় আসব। ওঁরা এটাও বলেন, বিজেপি হাতেগোনা কয়েকটি সম্প্রদায়ের। বাস্তব হল, তফসিলি জাতি, জনজাতি, ওবিসি সাংসদ ও বিধায়কেরা আমাদের দলে সবচেয়ে বেশি। বিরোধীদের অপপ্রচারের জবাব আমাদের কার্যকর্তারা কাজে দেবেন। তৃণমূলের তরফে সাধারণ মানুষকে বিভাজন এবং ভুল তথ্য দেওয়ার কৌশল নতুন নয় । অপশাসন থেকে নজর ঘোরাতে তারা মানুষকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করে।

সাক্ষাৎকারের ক্লিপিং নিচে দেওয়া হল:

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
India’s digital PRAGATI

Media Coverage

India’s digital PRAGATI
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
It is a matter of immense pride for India that Archbishop George Koovakad will be created as a Cardinal by His Holiness Pope Francis: Prime Minister
December 07, 2024

The Prime Minister remarked today that it was a matter of immense pride for India that Archbishop George Koovakad will be created as a Cardinal by His Holiness Pope Francis.

The Prime Minister’s Office handle in a post on X said:

“It is a matter of immense pride for India that Archbishop George Koovakad will be created as a Cardinal by His Holiness Pope Francis.

The Government of India sent a delegation led by Union Minister Shri George Kurian to witness this Ceremony.

Prior to the Ceremony, the Indian delegation also called on His Holiness Pope Francis.

@Pontifex

@GeorgekurianBjp”