প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস ২০২৩-এর জাতীয় উদযাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন। উপরাষ্ট্রপতি শ্রী জগদীপ ধনখড় মধ্যপ্রদেশের জবলপুরে নবম আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে জাতীয় উদযাপন অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন।
আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে নাগরিকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্যান্যবার যোগ দিবসে ভারতে থাকলেও এবার নির্ধারিত কর্মসূচি অনুসারে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। তাই তাঁকে এই ভিডিও বার্তার আশ্রয় নিতে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ভারতীয় সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তিনি রাষ্ট্রসঙ্ঘের সদর দপ্তরে যোগ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। ভারতের আহ্বানে ১৮০টিরও বেশি দেশের একত্রিত হওয়া ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেন তিনি। যোগকে একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের রূপ দিতে এবং আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী চেতনা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে যখন যোগ দিবস পালনের প্রস্তাব রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভায় রাখা হয়েছিল, তখন রেকর্ড সংখ্যক দেশ এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছিল বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
‘যোগের সমুদ্র বলয়’-এর ধারণা যোগ দিবসকে আরও বিশেষ করে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি যোগের আদর্শ এবং সমুদ্রের বিপুল বিস্তারের পারস্পরিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। সেনাকর্মীরা জলীয় উৎস ব্যবহার করে যে ‘যোগ ভারতমালা’ ও ‘যোগ সাগরমালা’ নির্মাণ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী তার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সুমেরু ও কুমেরুতে ভারতের যে দুটি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে তার সাহায্যে বিশ্বের দুটি মেরুও যোগের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়েছে। দেশ তথা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ যেরকম স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই অনন্য উদযাপনে অংশগ্রহণ করেছেন, তা যোগের বিপুল বিস্তার ও সুনামের প্রতিফলন।
সাধুসন্তদের উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যা কিছু আমাদের একত্রিত করে, তাই যোগ’। তিনি বলেন, সারা বিশ্ব এক পরিবার – যোগের প্রচার এই ধারণারই সম্প্রসারণ। চলতি বছরে জি২০-র সভাপতিত্বের দায়িত্বে রয়েছে ভারত। এবারের জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের মূল ভাবনা ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগের প্রচার হল ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর চেতনার প্রচার। আজ ‘বসুধৈব কুটুম্বকম-এর জন্য যোগ’-এর ভাবনায় প্রাণিত হয়ে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ একত্রে যোগাভ্যাস করছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
যোগশাস্ত্রের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি স্বাস্থ্য, সক্ষমতা ও শক্তি অর্জন করেন। যাঁরা বছরের পর বছর ধরে নিয়মিতভাবে যোগাভ্যাসের সঙ্গে জড়িত, তাঁরা এর শক্তি অনুভব করতে পারেন। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্তরে সুস্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগ এমন এক সুস্থ ও শক্তিশালী সমাজ গঠন করে, যার সম্মিলিত শক্তি অনেক বেশি। এই প্রসঙ্গে স্বচ্ছ ভারত ও স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়ার মতো প্রচারাভিযানের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এগুলি আত্মনির্ভর জাতি গঠনে ও দেশের সাংস্কৃতিক পরিচয় পুনরুদ্ধারে বিশেষ সহায়ক হয়েছে। দেশ এবং যুব সমাজ এই শক্তি অর্জনে বিপুল অবদান রেখেছে। আজ দেশের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে, যার ফলে দেশের মানুষ এবং তাঁদের জীবনেও পরিবর্তন এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের সংস্কৃতি ও সামাজিক কাঠামো, এর আধ্যাত্মিকতা ও আদর্শ এবং এর দর্শন ও দৃষ্টি সর্বদাই এমন এক ঐতিহ্যকে লালন করে এসেছে যা একত্রিত হওয়ার, গ্রহণের ও আলিঙ্গনের। ভারতীয়রা নতুন ভাবনাকে স্বাগত জানায় এবং তার সংরক্ষণ করে। এই প্রসঙ্গে তিনি দেশের সমৃদ্ধ বৈচিত্র্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যোগ এই ধরণের অনুভূতিগুলি লালনের মাধ্যমে অন্তর্দৃষ্টিকে জাগ্রত করে। যোগ আমাদের মধ্যে সেই চেতনার উন্মেষ ঘটায়, যার সুবাদে আমরা প্রতিটি জীবের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করি। এটিই সমস্ত প্রাণীর প্রতি ভালোবাসার ভিত্তি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগের মাধ্যমে আমাদের স্ববিরোধিতা, বাধা ও প্রতিরোধ দূর করতে হবে। ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর চেতনাকে বিশ্বের সামনে একটি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বক্তব্যের শেষ প্রান্তে এসে প্রধানমন্ত্রী যোগ বিষয়ক একটি শ্লোক উদ্ধৃত করে বলেন – কর্মে দক্ষতাই হল যোগ। স্বাধীনতার অমৃতকালে এই মন্ত্র সকলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন যখন প্রকৃতই নিজের কর্তব্যের প্রতি নিবেদিত হন, তখনই যোগের পরিপূর্ণতা অর্জিত হয়। তিনি বলেন, “যোগের মাধ্যমে আমরা নিঃস্বার্থ কর্মের আস্বাদ পাই, কর্ম থেকে কর্মযোগের পথে আমাদের যাত্রা নির্ধারিত হয়”। যোগের মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাব এবং এই অঙ্গীকারগুলি গ্রহণ করব বলে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “আমাদের শারীরিক শক্তি, আমাদের মানসিক প্রসারণই হবে উন্নত ভারতের ভিত্তি”।


