প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ মুম্বাইয়ের জিও ওয়ার্ল্ড সেন্টারে ওয়েভস, ২০২৫-এর উদ্বোধন করেছেন। ওয়ার্ল্ড অডিও-ভিস্যুয়াল অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্ট সামিট বা ওয়েভস-এর মতো এত বিপুল আয়োজন ভারতে এর আগে হয়নি। এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় প্রধানমন্ত্রী মহারাষ্ট্র দিবস এবং গুজরাট দিবস উপলক্ষে প্রত্যেককে শুভেচ্ছা জানান। আন্তর্জাতিক স্তরের বিশিষ্টজনেরা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং সৃজনশীল জগতের প্রথম সারির ব্যক্তিত্বরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের উপস্থিতির তাৎপর্য উল্লেখ করে বলেন, ১০০টিরও বেশি দেশের শিল্পী, সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব, উদ্ভাবক এবং নীতি-নির্ধারকরা আন্তর্জাতিক মানের প্রতিভা ও সৃজনশীলতার এক পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে এখানে সমবেত হয়েছেন। “কতগুলি শব্দের আদ্যাক্ষর নিয়ে একটি বিশেষ অর্থবহ শব্দের মধ্যে ওয়েভসকে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। এটি আসলে সংস্কৃতি, সৃজনশীলতা এবং আন্তর্জাতিক স্তরের যোগাযোগ গড়ে তোলার এক তরঙ্গ তৈরি করেছে।” চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, গেম তৈরি, অ্যানিমেশন এবং গল্প বলার ক্রমবর্ধমান জগতের যথাযথ প্রকাশ এই সম্মেলনে প্রতিফলিত হচ্ছে। এখানে দেশ-বিদেশের শিল্পী এবং উদ্ভাবকদের মধ্যে সমন্বয়ের এক মঞ্চ গড়ে তোলা হয়েছে। ঐতিহাসিক এই অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে স্বাগত ও অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।

ওয়েভস শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের গৌরবোজ্জ্বল চলচ্চিত্রের ইতিহাসের প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করে শ্রী মোদী বলেন, ১৯১৩ সালের ৩ মে ভারতের প্রথম কাহিনীচিত্র রাজা হরিশচন্দ্র মুক্তি পেয়েছিল। এই চলচ্চিত্রের নির্মাতা ছিলেন দাদাসাহেব ফালকে। মাত্র একদিন আগেই ফালকের জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। গত শতাব্দীতে ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রভাবের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে চলচ্চিত্র ভারতীয় সংস্কৃতিকে সফলভাবে পৌঁছে দিয়েছে। রাশিয়ায় রাজ কাপুরের জনপ্রিয়তা, কান চলচ্চিত্র উৎসবে সারা পৃথিবীর সত্যজিৎ রায়কে স্বীকৃতি দেওয়া, আরআরআর-এর অস্কার বিজয় – এসবের মধ্য দিয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতারা আন্তর্জাতিক স্তরে একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। গুরু দত্তের চলচ্চিত্রায়িত কাব্য, ঋত্বিক ঘটকের সমাজ সম্পর্কে ভাবনা, এ আর রহমানের সঙ্গীতশৈলী এবং এস এস রাজামৌলির পৌরাণিক কাহিনী উপস্থাপন করার মধ্য দিয়ে ভারতীয় সংস্কৃতিকে বিশ্বের হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্মারক ডাকটিকিটের মধ্য দিয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তীদের শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
ভারতে সৃজনশীলতার ক্ষমতা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতায় গুরুত্বের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সৃজনশীল শিল্পের সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে বিভিন্ন পেশাদার ব্যক্তিত্ব, যাঁরা গেম তৈরি, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র পরিচালনা এবং অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত – এঁদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মতবিনিময় করেছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি মহাত্মা গান্ধীর সার্ধ জন্মশতবার্ষিকীতে এক অনন্য উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। আজ থেকে প্রায় ৫০০-৬০০ বছর আগে নরসিম মেহতা রচিত স্তোত্র ‘বৈষ্ণব জন তো’ ১৫০টি দেশের গায়ক-গায়িকারা উপস্থাপিত করেন। আন্তর্জাতিক স্তরে গৃহীত এই শৈল্পিক ভাবনাটি সারা বিশ্বকে সম্প্রীতির এক পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত করে। এই শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত অনেকেই ‘গান্ধী ১৫০’ ভাবনায় অংশ নিয়েছিলেন। এঁরা মহাত্মা গান্ধীর দর্শন প্রচারের উদ্দেশ্যে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিও বার্তা তৈরি করেন। ভারতের সৃজনশীল জগতের শক্তি যদি আন্তর্জাতিক স্তরে সৃজনশীল জগতের শক্তির সঙ্গে মিলিত হয়, তার যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে সেটি ওয়েভস-এ প্রতিফলিত।
ওয়েভস শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম পর্বের এই সাফল্যে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। সম্মেলন আয়োজনের ক্ষেত্রে পরামর্শদাতাদের যে বোর্ড তৈরি হয়েছিল, তাঁদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রশংসা করে শ্রী মোদী বলেন, সৃজনশীল শিল্পের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হিসেবে ওয়েভস আত্মপ্রকাশ করেছে। পৃথিবীর ৬০টি দেশ থেকে প্রায় ১ লক্ষ সৃজনশীল পেশাদার ব্যক্তিত্ব এখানের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়েছেন। ৩২টি চ্যালেঞ্জের মধ্য থেকে ৮০০ জনকে বাছাই করা হয়েছে। চূড়ান্ত পর্বে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সৃজনশীল অঙ্গনে তাঁরা নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখার এক অভূতপূর্ব সুযোগ পেয়েছেন।
ওয়েভস শীর্ষ সম্মেলনের ভারত প্যাভিলিয়নে বিভিন্ন সৃজনশীল উদ্যোগে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে, সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে নানা ধরনের উদ্ভাবনের সাক্ষ্য আমরা পেয়েছি। ওয়েভস বাজারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি জানান, উদীয়মান সৃজনশীল ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্বদের মধ্যে যোগাযোগ ঘটানো সম্ভব হয়েছে। শিল্প জগতে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটানোর এই অনন্য প্রয়াসের প্রশংসা করে তিনি বলেন, এর ফলে সংশ্লিষ্ট অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং কলাকুশলীরা নতুন নতুন সুযোগ পাবেন।

সৃজনশীলতা এবং মানবজাতির অভিজ্ঞতার মধ্যে যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, মায়ের ঘুম পাড়ানি গান শুনতে শুনতে শিশুদের শৈশব কাটে। শব্দ এবং সঙ্গীতের সঙ্গে তাদের পরিচিতি এভাবেই হয়। একজন মা তাঁর সন্তানের জন্য যে স্বপ্ন বোনা শুরু করেন, ঠিক সেইভাবেই সৃজনশীল ব্যক্তিত্বরাও একটি যুগের স্বপ্নকে নির্দিষ্ট আকার দেন। ওয়েভস-এর এই সম্মেলনে দূরদর্শী ব্যক্তিত্বরা সমবেত হয়েছেন যাঁরা তাঁদের সৃষ্টির মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছেন, উৎসাহিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী জানান, যৌথ উদ্যোগের শক্তির প্রতি তাঁর আস্থা রয়েছে। শিল্পী, সৃজনশীল ব্যক্তি এবং এই শিল্পের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বদের নিষ্ঠার কারণেই আগামীদিনে ওয়েভস এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। এই শীর্ষ সম্মেলনকে সফল করে তোলার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বদের সহায়তার প্রসঙ্গটিও তিনি উল্লেখ করেন। আগামীদিনে উত্তেজনার আরও বহু তরঙ্গ সৃষ্টি হবে। ওয়েভস অনুষ্ঠানে যেসব পুরস্কার ভবিষ্যতে দেওয়া হবে সেগুলি শিল্পকলা এবং সৃজনশীল জগতের ক্ষেত্রে মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে। বিশ্বজুড়ে মানুষের মন জয় করতে, সৃজনশীলতার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে সুস্থায়ী এক অঙ্গীকারের প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
অর্থনীতিতে ভারতের দ্রুত উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার জন্য দেশ এগিয়ে চলেছে। ফিনটেক ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বে প্রথম। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল উৎপাদক রাষ্ট্র এবং তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্ট-আপ ব্যবস্থাপনা ভারতে গড়ে উঠেছে। উন্নত ভারত গড়ে তোলার যে উদ্যোগ শুরু হয়েছে তা আগামীদিনে আরও অনেক সাফল্য নিয়ে আসবে। “ভারত শুধুমাত্র ১০০ কোটির বেশি জনসংখ্যার এক দেশই নয়, এ দেশ ১০০ কোটির বেশি গল্প তৈরি করেছে।” ভারতের ঐতিহ্যশালী শৈল্পিক ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দু’হাজার বছর আগে ভারত মুণির নাট্যশাস্ত্র মানুষের অভিজ্ঞতা এবং আবেগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিল্পকলার ক্ষমতাকে গুরুত্ব দিয়েছে। বহু যুগ আগে কালিদাসের ‘অভিজ্ঞান-শকুন্তলম’ ধ্রুপদী নাট্যের নতুন দিক নির্দেশ করে। ভারতের প্রতিটি গলিতে একটি করে গল্প তৈরি হয়, প্রতিটি পাহাড় একটি সঙ্গীত রচনা করে, প্রতিটি নদী নতুন এক ধ্বনি সৃষ্টি করে। ভারতের ৬ লক্ষ গ্রামের প্রতিটিতে নিজস্ব পল্লী সংস্কৃতি রয়েছে। প্রত্যেক গ্রামের গল্পকথনের এক অনন্য ঐতিহ্য রয়েছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকগাঁথা নিজস্ব ইতিহাসকে রক্ষা করে চলেছে। ভজন, গজল, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত অথবা সমসাময়িক সঙ্গীত – প্রত্যেকে নিজের মতো করে গল্প বলে, প্রত্যেকটি ছন্দের নিজস্ব ঐতিহ্য রয়েছে। ভারতীয় সঙ্গীতের অধ্যাত্ম চিন্তা এখানেই রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়েভস শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের শিল্প ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটছে। এই প্রসঙ্গে তিনি নাদ ব্রহ্মর কথা উল্লেখ করেন। সঙ্গীত ও নৃত্যের মাধ্যমে ভারতীয় পুরাণ আধ্যাত্মিক বিভিন্ন বিষয়কে উপস্থাপিত করেছে। ভগবান শিবের ডোমরু প্রথম ব্রহ্ম নাদ, দেবী সরস্বতীর বীনা প্রজ্ঞার ছন্দ, ভগবান কৃষ্ণের বাঁশি প্রেমের শাশ্বত বাণী এবং ভগবান বিষ্ণুর শঙ্খ ইতিবাচক শক্তিকে জাগ্রত করে। এই সম্মেলনে যেসব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপিত হচ্ছে, তার মধ্য দিয়ে ভারতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমবারের মতো ভারতের দৃষ্টিভঙ্গী এ দেশে তৈরি করা হয়েছে, সারা বিশ্বের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ভারতের গল্প কথনের ঐতিহ্য হাজার হাজার বছরের, যা এক অমূল্য সম্পদ। এ দেশের গল্প এবং কাহিনী শাশ্বত। এগুলির মধ্য দিয়ে বিজ্ঞান, ক্রীড়া, সাহসিকতার বিভিন্ন নিদর্শন পাওয়া যায়। ভারতের গল্প কথকরা বিজ্ঞানের সঙ্গে কল্পবিজ্ঞানের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁদের উদ্ভাবনী শক্তি বীরত্বের নতুন উপাদান রচনা করেছে। ওয়েভস-এর এই মঞ্চ ভারতের অনন্য সেই গল্পগুলিকে সারা বিশ্বের সামনে যেন উপস্থাপন করে, তার জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। এর ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নতুন এবং অত্যাধুনিক পন্থায় সেই কাহিনীগুলি উপস্থাপিত হবে।

পদ্ম সম্মানকে জনসাধারণের সম্মাননার এক উদ্যোগ বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এর সঙ্গে ওয়েভস শীর্ষ সম্মেলনের মূল লক্ষ্যের বিষয়টির সাযুজ্য রয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, দুটি প্রয়াসই ভারতের প্রতিটি প্রান্তের প্রতিভাকে স্বীকৃতি দেওয়ার এক নতুন উদ্যোগ। স্বাধীনতার বছর কয়েক পরে পদ্ম সম্মান দেওয়া শুরু হলেও, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এককভাবে যাঁরা নানা ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসছেন, তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য পদ্ম সম্মানকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। এই পরিবর্তন ঘটার ফলে পদ্ম সম্মান এখন প্রকৃত অর্থে জাতীয় এক উৎসবে পরিণত হয়েছে। একইভাবে, ভারতের চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, অ্যানিমেশন এবং গেম তৈরির ক্ষেত্রে যে বিপুল সৃজনশীল প্রতিভা রয়েছে, সেই প্রতিভাকে বিকশিত করতে ওয়েভস সহায়তা করবে। দেশের প্রতিটি প্রান্তের শিল্পীরা যাতে আন্তর্জাতিক এই মঞ্চে স্বীকৃতি পান, তারই উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
ভারতের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী একটি সংস্কৃত স্তোত্র পাঠ করেন। তিনি বলেন, ভারতীয় সভ্যতা পার্সি এবং ইহুদিদের মতো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে স্বাগত জানিয়ে তার ঔদার্য্য প্রকাশ করেছে। এঁরা ভারতীয় সংস্কৃতিতে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছেন। ওয়েভস শীর্ষ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী এবং প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির সাফল্য এবং এই অনুষ্ঠানে তাঁদের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন শৈল্পিক উদ্যোগের সাফল্য উদযাপন, সৃজনশীল উদ্যোগকে গ্রহণ করার মতো শক্তি ভারতের রয়েছে। ওয়েভস শীর্ষ সম্মেলন সৃজনশীল ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে যোগসূত্র গড়ে তুলবে এবং শৈল্পিক ভাবনার আদানপ্রদানে সহায়তা করবে।
প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সৃজনশীল সম্প্রদায়ের সদস্যদের ভারতে আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, ভারতীয় গল্প কথনের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে যা অত্যন্ত শক্তিশালী। ভারতের গল্প কথনের যে আবেগ জড়িয়ে থাকে তা দেশ-কালের সীমানাকে অতিক্রম করে। এর মধ্য দিয়ে স্বাভাবিকভাবে এক অর্থবহ যোগসূত্র তৈরি হয়। ভারতের বিভিন্ন উপাখ্যানকে আন্তর্জাতিক শিল্পীরা যখন পরীক্ষানিরীক্ষা করেন, তখন তাঁরা দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে সেই উপাখ্যানগুলির একটি অনন্য বন্ধন উপলব্ধি করেন। ভারতে সৃষ্টি করার যে ভাবনা রয়েছে এই সাংস্কৃতিক শক্তিই তাকে বিশ্বজনীন করে তুলছে।
শ্রী মোদী বলেন, ভারতীয় চলচ্চিত্র বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে পৌঁছে গেছে। “ভারতের কমলা অর্থনীতির প্রভাতকাল এটি। বিষয়বস্তু, সৃজনশীলতা এবং সংস্কৃতি – এই তিনটি স্তম্ভের ওপর এই কমলা অর্থনীতি গড়ে উঠছে।” বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দর্শকরা ভারতীয় চলচ্চিত্রকে আরও বেশি করে বুঝতে চাইছেন। ভারতীয় বিষয়বস্তুতে তৈরি বিভিন্ন চলচ্চিত্রের দর্শক ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত কয়েক বছরে ভারতের ওটিটি শিল্প দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সিনেমার পর্দা হয়তো ছোট হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করার সুযোগ ক্রমশ বাড়ছে। ছোট ছোট পর্দায় প্রচুর বার্তা দেওয়া হচ্ছে। ভারতের খাদ্যসামগ্রী এখন সারা বিশ্বে ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। ভারতীয় সঙ্গীতও খুব শীঘ্রই পৃথিবী জুড়ে স্বীকৃতি পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ভারতের সৃজনশীল অর্থনীতির অপার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী দিনগুলিতে ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। “চলচ্চিত্র নির্মাণ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিভিন্ন বিষয়বস্তু নির্মাণ, গেম তৈরি, ফ্যাশন এবং সঙ্গীতের ক্ষেত্রে ভারত আন্তর্জাতিক স্তরের এক কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে।” লাইভ কনসার্ট শিল্পে নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অ্যানিমেশন বাজারের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে এর আর্থিক মূল্য ৪৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার, এক দশকে যা বৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের অ্যানিমেশন এবং গ্রাফিক্স শিল্পের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে এই সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
ভারতের তরুণ সৃজনশীল ব্যক্তিত্বদের দেশের কমলা অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে শ্রী মোদী বলেন, তাঁদের আবেগ ও কঠোর পরিশ্রমই সৃজনশীলতার এক নতুন যুগের সূচনা করবে। তাঁরা গুয়াহাটির সঙ্গীতকার হতে পারেন, কোচির পডকাস্টার হতে পারেন, বেঙ্গালুরুর গেম ডিজাইনার হতে পারেন অথবা পাঞ্জাবের চলচ্চিত্র নির্মাতা হতে পারেন – তাঁদের অবদান ভারতের ক্রমবর্ধমান সৃজনশীল শিল্পকে প্রসারিত করবে। এইসব সৃজনশীল ব্যক্তিত্বদের পাশে সরকার সবসময়ই রয়েছে। স্কিল ইন্ডিয়া, স্টার্ট-আপ সাপোর্টের মতো বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে তাঁদের সহায়তা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ওয়েভস-এর মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চও তাঁদের সহায়ক হবে। সরকার এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলবে যেখানে উদ্ভাবন ও কল্পনাশক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, নতুন নতুন স্বপ্নের বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরি করা হবে। ওয়েভস সম্মেলনে সৃজনশীলতা কোডিং-এর সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। সফটওয়্যার গল্প কথনকে সহায়তা করছে। শিল্পকলা অগমেন্টেড রিয়েলিটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। তরুণ সৃজনশীল ব্যক্তিত্বদের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাঁদের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী ভারতের বিষয়বস্তু রচয়িতাদের প্রতি তাঁর আস্থা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সৃজনশীল জগতের ছবিটি বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের সৃষ্টিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ভারতীয় সৃজনশীল ব্যক্তিত্বদের যে তারুণ্যের শক্তি রয়েছে, তা যে কোন বাধা-বিপত্তিকে সরিয়ে ফেলার ক্ষমতা রাখে। তরুণ সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব, গেমার এবং ডিজিটাল শিল্পীদের সঙ্গে তিনি যখন ব্যক্তিগত স্তরে আলাপচারিতা করেন, তখন ভারতের সৃজনশীল ব্যবস্থাপনার বিপুল প্রতিভাকে তিনি খুঁজে পান। রিল, পডকাস্ট, গেম, অ্যানিমেশন, স্ট্যান্ড-আপ এবং এআর-ভিআর-এর মাধ্যমে সৃজনশীলতার নতুন দিক উন্মোচিত করতে ভারতের তারুণ্যের বিপুল শক্তি কার্যকর হবে। তরুণ প্রজন্মের কথা বিবেচনা করেই ওয়েভস-এর এই মঞ্চ গড়ে তোলা হয়েছে যেখানে তরুণ মনকে আরও স্বপ্ন দেখানো যাবে। তাঁরা তাঁদের সৃজনশীলতাকে দক্ষভাবে কাজে লাগাবেন।
একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তি-নির্ভর ব্যবস্থাপনায় সৃজনশীলতার গুরুত্বের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তি ক্রমশ মানবজাতিকে প্রভাবিত করছে। তাই, আবেগের স্পর্শকাতরতা এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে সংরক্ষণের জন্য আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। সৃজনশীল জগতের সেই ক্ষমতা রয়েছে। শুধু একটি রোবোট বানিয়ে সেই রোবোটের মধ্যে স্পর্শকাতরতা, ভাবাবেগ এবং বৌদ্ধিক উপাদানকে লালিত করলেই হবে না, শিল্পকলা, সঙ্গীত, গল্প কথনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকেও রক্ষা করতে হবে, যা হাজার হাজার বছর ধরে মানব সভ্যতা করে এসেছে। বিভেদকামী এবং ক্ষতিকর বিভিন্ন আদর্শের থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ইতিবাচক মূল্যবোধকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে ওয়েভস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই দায়িত্বকে অবহেলা করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তা যথেষ্ট ক্ষতিকারক হবে।

সৃজনশীল জগতে প্রযুক্তির প্রভাবে যে পরিবর্তন আসছে, সেই প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বজুড়ে এক সমন্বয় গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ভারতের সৃজনশীল ব্যক্তিত্বদের আন্তর্জাতিক স্তরের গল্প কথকের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। অ্যানিমেটারদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক স্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বদের পরিচয় করাতে হবে। গেমারদের বিশ্বে প্রথম সারির গেমার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ করে দিতে হবে। এভাবে দেশের সৃজনশীল জগতের যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে তাকে কাজে লাগাতে হবে। আন্তর্জাতিক সৃজনশীল ব্যক্তিত্বদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা তাঁদের কথা এ দেশের উদ্ভাবকদের কাছে তুলে ধরুন। বিনিয়োগকারীদের আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি। ভারতীয় যুব সম্প্রদায়কে এ দেশের না বলা ১ কোটি উপাখ্যান বিশ্বের কাছে উপস্থাপনের পরামর্শ দেন তিনি। ওয়েভস শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
অনুষ্ঠানে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল শ্রী সি পি রাধাকৃষ্ণন, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, ডঃ এল মুরুগন সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সম্পূর্ণ ভাষণ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
A wave of culture, creativity and universal connect. pic.twitter.com/FpfM4THC5y
— PMO India (@PMOIndia) May 1, 2025
India, with a billion-plus population, is also a land of a billion-plus stories. pic.twitter.com/qtijqtd5Ii
— PMO India (@PMOIndia) May 1, 2025
Create in India, create for the world. pic.twitter.com/cycxbiZZo7
— PMO India (@PMOIndia) May 1, 2025
The dawn of the Orange Economy in India. pic.twitter.com/g2hEX8fjHL
— PMO India (@PMOIndia) May 1, 2025
Even though the screen size is getting smaller, the scope is becoming infinite. pic.twitter.com/n0akwUrv3C
— PMO India (@PMOIndia) May 1, 2025
Today, India is emerging as a global hub for film production, digital content, gaming, fashion, music and live concerts. pic.twitter.com/ubo3q8tx7S
— PMO India (@PMOIndia) May 1, 2025
To the creators of the world — dream big and tell your story.
— PMO India (@PMOIndia) May 1, 2025
To investors — invest not just in platforms, but in people.
To Indian youth — tell your one billion untold stories to the world: PM @narendramodi pic.twitter.com/g7rwE4urf8