মে ২-১৪-য় নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ ক্ষমতায় আসার কালে, লক্ষ লক্ষ ভারতীয়র ছিল না কোন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্তকরণের পর কেটে গেছে বেশ কয়েকটি দশক। কিন্তু আমাদের দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বহু মানুষের কাছে ছিল অধরা।

সকলের জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে জন-ধন-যোজনা চালু করা হয় এক ব্রত হিসেবে। মাত্র দু-বছরেই খোলা হয়েছে ২৩ কোটি ৯৩ লক্ষ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। আরও বেশি উৎসাহের কথা এই যে এসব অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ৪১, ৭৮৯ কোটি টাকা। অ্যাকাউন্টে জমানো টাকার সাহায্যে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে আসবে স্হিতি। এদের সামনে খুলে গেছে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ মেলার সুযোগও। এই সেদিন পর্যন্ত তারা চড়া সুদে ঋণের জন্য হাত পাততো মহাজনের কাছে। জন-ধন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ওভারড্রাফ্ট অর্থাৎ জমার চেয়ে বেশি পরিমাণ টাকা তোলা, বিমা ইত্যাদি সুয়োগ আছে এবং তা বেশ কাজে লাগানো হচ্ছে। গাড়ার দিকে ব্যালান্স অ্যাকাউন্টের সংখ্যা নিয়ে জন-ধন-যোজনার বিরুদ্ধে একাট সমালোচনার দাগা হচ্ছিল তোপ। কিন্তু এই অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কমছে লাগাতার। এ থেকে বোঝা যায় যে বহু লোক অ্যাকাউন্ট কাজে লাগাচ্ছে।

জন-ধন অ্যাকাউন্ট খোলা তড়িদগতিতে চলতে থাকায়, এনডিএ সরকারের জআম (জন-ধন, আধার, মোবাইল) ত্রিত্ব বা তিনের সম্মিলন তত্ত্ব খেটে যাচ্ছে। আধারে নথিভুক্তির ব্যাপারে সরকার খুব তৎপর। ২০১৪-র ৩০মে অবধি আধারে ৬৫ কোটি নাম তোলে মানুষ সরকার আরও ৩৫ কোটিকে আধার কার্ড দিয়েছে। এখন আধার কার্ড আছে ১০৫ কোটি ভারতীয়র। আর মোবাইল তো প্রায় প্রত্যেকের হাতে হাতে। তাই ভরতুকি বা কোন সরকার টাকা সরাসরি উপকৃতদের ব্যাঙ্ক অ্যকাউন্টে হস্তান্তর করা এখন সম্ভব। কোন দালালে দরকার নেই। দূর হয়েছে ঢিলেমিও। সরকার তাই এখন সরাসরি উপকার হস্তান্তর (ডিবিটি) প্রকল্প চালু করতে পেরেছে। এর ফলে টাকা নয়ছয় ও কারচুপি বন্ধ করা গেছে এবং গত ২ বছরে সরকার বেশ কিছু অর্থ বাঁচাতে পেরেছে। ৩১ কোটি উপকৃতের কাছে ২ বছরে সরাসরি হস্তান্তর করা হয়েছে ৬১,৮২২ কোটা টাকা। ডিবিটিএ-তে হরেক সংস্কারের উদ্যোগের দরুন ভুয়ো উপকৃতদের ছেঁটে ফেলে ও অপচয়ে লাগাম টেনে সরকার বাঁচিয়েছে সাড়ে ছত্রিশ হাজার কোটি টাকার মতো।
অতি ছোট, ছোট এবং মাঝারি শিল্প আমাদের দেশে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ লক্ষ মানুষের রুজির সংস্হান করার পাশাপাশি আমাদের অর্থনীতিতেও এদের অবদান উল্লেখযোগ্য। কিন্তু দেখা গেছে যে এদের এক সামান্য অংশের কপালে জোটে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ। ঋণের জন্য অধিকাংশ সংস্হাকে যেতে হয় মহাজনের গদিতে।
কম সুদ ও কোন জামিন ছাড়াই ঋণ দিয়ে যেসব উদ্যোগীদের সাহায্য করার জন্য এনডিএ সরকার চালু করেছে মুদ্রা যোজনা। ২০১৫-১৬-তে বিলি হয়েছে ১,৩২,৯৫৪.৭৩ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১,২২,১৮৮ কোটি টাকা। ৩ কোটি ৪৮ লক্ষ উদ্যোগী ঋণ পেয়েছে। এদের মধ্যে ১ কোটি ২৫ লক্ষ নতুন শিল্পোদ্যোগী। এরা পেয়েছে ৫৮,৯০৮ কোটি টাকা। এদের ৭৯ শতাংশই মহিলা। এদেরকে দেওয়া ঋণের পরিমাণ ৬৩,১৯০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭-তে মুদ্রা যোজনার আওতায় ঋণ বন্টনের লক্ষ্য গত বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ধার্য হয়েছে ১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

এসব পদক্ষেপের সুবাদে ভারতীয়দের জীবনে এসেছে এক প্রকৃতিগত বদলের ছাঁদ। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মত সুবিধে মৌল সুযোগহীন লোকজন পেয়েছে সহজ শর্তে, অল্প সুদে জামিনহীন ঋণ মেলার সুবিধাযুক্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। ২০১৪-র ৩০শে মে থেকে ভারতের গরিবদের জন্য বহু কিছু বদলে গেছে। ভরতুকি এবং অন্যান্য উপকারের জন্য এখন আর দালাল ধরার দরকার নেই, সরকারি দপ্তরে বারংবার হাঁটাহাটির দিনও শেষ। ডিবিটি ও জআম-এর দৌলতে উপকার হস্তান্তর সহজ, কার্যকর এবং স্বচ্ছ।




