শেয়ার
 
Comments
We want to make India a hub of heritage tourism: PM Modi
Five iconic museums of the country will be made of international standards: PM Modi
Long ago, Swami Vivekananda, at Michigan University, had said that 21st century would belong to India. We must keep working hard to make sure this comes true: PM

আমার সোনার বাংলা, সকলকে নমস্কার জানাই!!

পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় রাজ্যপাল শ্রী জগদীপ ধনকর, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার মাননীয় সহকারী শ্রী প্রহ্লাদ প্যাটেল, এখানে উপস্থিত কলা ও সাহিত্য জগতের বন্ধুরা, বিশিষ্টজনেরা, সুধীবৃন্দ!

সাহিত্য-সংস্কৃতির পীঠস্থান কলকাতায় এই পরিবেশে এসে আমার মন, প্রাণ আনন্দে ভরে যায়। এই অবকাশে আমি বাংলার সমৃদ্ধশালী শিল্প-সংস্কৃতির পরিচয়কে আরও একবার প্রণাম জানাই।

বন্ধুগণ,

 

কিছুক্ষণ আগে যখন আমি এখানে পৌঁছলাম তখন এখানকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি দেখে খুব পুরনো একটি কথা মনে পড়ল।

 

তখন বয়স কম ছিল। জীবনের মূল্যবোধ এবং সেগুলির বিষয়ে জানার জন্য আগ্রহ ছিল প্রচুর। মনের কোণে অনেক প্রশ্ন ছিল যার সব উত্তর জানা ছিল না।

 

সেইসব প্রশ্নের জবাব পেতে, সুস্পষ্ট ধারণা পেতে কলকাতার এই অঞ্চলের বেলুড় মঠ আমাকে পথ দেখিয়েছিল, আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়ার ফলে মন শান্ত হয়েছিল।

 

এখন যখন এই প্রদর্শনী দেখছিলাম, তখন আমার মন সেইসব মহান শিল্পী, যাঁরা এগুলির সৃষ্টি করেছিলেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জন্মাচ্ছিল।

 

বাংলার এই মাটির যে অদ্ভূত শক্তি রয়েছে, তা আমাকে মুগ্ধ করে। আমি এই শক্তিকে প্রণাম জানাই। আর এর সঙ্গে জড়িত অতীত এবং বর্তমান দিনের সকলকে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করছি।

বন্ধুগণ,

 

আজ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত ভারতের শিল্প-সংস্কৃতি এবং সাহিত্য জগতের এক অন্যতম দিন। ভারতের শিল্প-সংস্কৃতি এবং নিজের ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে একবিংশ শতকের সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দেশ জুড়ে যে অভিযান শুরুর পরিকল্পনা করা হয়েছিল, আজ পশ্চিমবঙ্গে তা শুরু হল।

 

এই উদ্যোগ থেকে কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গ অনেকটাই লাভবান হবে। এই কারণে পশ্চিমবঙ্গে শিল্প ও সংস্কৃতির সঙ্গে আপনাদের সবাইকে এবং শিল্প-সংস্কৃতিমনা বাংলার জনগণকে অনেক অনেক অভিনন্দন।

 

বন্ধুগণ,

 

ঐতিহ্য এবং পর্যটন – এই দুটি বিষয় যার সঙ্গে আমাদের সভ্যতার ইতিহাস এবং ভাবাবেগ জড়িয়ে আছে, আমাদের পরিচয় এর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। ভারতের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে দুনিয়ার সামনে নবরূপে উপস্থাপিত করা যার মাধ্যমে ভারতের ঐতিহ্যশালী পর্যটন গড়ে উঠবে সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রের এই উদ্যোগ। এই ঐতিহ্যশালী পর্যটনের প্রসারে পশ্চিমবঙ্গ সহ পূর্ব ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা দেশে কর্মসংস্থানের অনেক সুযোগ তৈরি হবে।

 

এই অবকাশে রবীন্দ্র সেতু – হাওড়া ব্রিজকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার লক্ষ্যে ইন্টার‍্যাক্টিভ লাইট অ্যান্ড সাউন্ড প্রদর্শনী শুরু হতে চলেছে।

বন্ধুগণ,

 

আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলির সংরক্ষণ এবং তার আধুনিকীকরণ প্রয়োজন। এই ভাবনা থেকে কেন্দ্র দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলিকে সংস্কার করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রথম পর্যায়ে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, আমেদাবাদ এবং বারাণসী শহরকে বাছাই করা হয়েছে। এই ভবনগুলিতে নতুন নতুন গ্যালারি ও প্রদর্শশালা তৈরি করা হচ্ছে যেখানে থিয়েটার, নাটক এবং সঙ্গীতের অনুষ্ঠান আয়োজন করার পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।

 

এই প্রসঙ্গে বলা ভালো দেশের পাঁচটি ঐতিহ্যশালী সংগ্রহশালাকে আন্তর্জাতিক মানের করে তোলা হচ্ছে। বিশ্বের সবথেকে পুরনো মিউজিয়াম কলকাতার ভারতীয় সংগ্রহশালা দিয়ে এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি, দিল্লি, চেন্নাই, হায়দরাবাদ ও শ্রীনগরের সংগ্রহশালাগুলিরও মানোন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে।

 

বন্ধুগণ,

 

দেশের এই শহরগুলির সৌন্দর্যায়নের অত্যন্ত প্রয়োজন। এগুলির ব্যবস্থাপনার জন্য আরও সম্পদের প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ এইডেড কনজারভেশন’ গঠন করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটিকে একটি ডিম্‌ড ইউনিভার্সিটিতে পরিণত করা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

 

বন্ধুগণ,

 

কলকাতা ভারতের সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক পীঠস্থান। আপনাদের চিন্তাভাবনা অনুযায়ী কলকাতার সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্যকে নবরূপে বিশ্বের সামনে হাজির করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

 

কলকাতার চার ঐতিহ্যশালী গ্যালারি, ওল্ড কারেন্সি বিল্ডিং, বেলভেডিয়ার হাউজ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, মেটকাফে হাউজ-এর সংস্কারের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। বেলভেডিয়ারকে ‘মিউজিয়াম অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ বানানো নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। আমরা এখন সেই লক্ষ্যে ব্রতী হয়েছি। এখানে ভারত সরকারের টাঁকশাল ছিল। সেটিকে ‘মিউজিয়াম অফ কয়েনেজ অ্যান্ড কমার্স’ হিসেবে গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

 

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পাঁচটি গ্যালারির মধ্যে দুটি গ্যালারি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল যা মোটেই ঠিক নয়। এগুলিকে দ্রুত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 

আমি চাই তৃতীয় গ্যালারিটিতে স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার অংশগ্রহণের বিষয়টি স্থান পাক। ‘বিপ্লবী ভারত’ নামে একটি সংগ্রহশালা তৈরি হোক যেখানে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, অরবিন্দ ঘোষ, রাসবিহারী বসু, ক্ষুদিরাম বসু, দেশবন্ধু, বাঘাযতীন, বিনয়-বাদল-দীনেশের মতো মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জায়গা হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

স্বাধীনতা-পরবর্তী দশকগুলিতে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে নিয়ে যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে আমরা সকলেই অবগত।

 

দেশের সকলের চিন্তাভাবনাকে সম্মান করে নেতাজির নামে লালকেল্লায় সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হয়েছে। আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে একটি দ্বীপের নাম তাঁর নামে করা হয়েছে।

 

আজাদ হিন্দ সরকারের ৭৫ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে লালকেল্লা থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নেতাজিকে নিয়ে যে সমস্ত ফাইলগুলি ছিল তা সর্বসমক্ষে উন্মোচিত করা হয়েছে।

বন্ধুগণ,

 

নতুন বছরে, নতুন দশকে দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেরও যথাযথ সম্মান পাওয়া উচিৎ।

 

আমরা এখন সবাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০০তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন করছি। ২০২২ সালে দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আরেকটি সুবর্ণ সুযোগ আমাদের সামনে আসবে। ২০২২ সালে মহান সমাজ সংস্কারক এবং শিক্ষাবিদ রাজা রামমোহন রায়ের ২৫০তম জন্মজয়ন্তী এগিয়ে আসছে।

 

দেশের আত্মবিশ্বাস পুনর্জাগরণে সমাজে কন্যা, ভগিনী ও যুবসম্প্রদায়ের মর্যাদা প্রদানের জন্য তাঁর যে প্রচেষ্টা সেই ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। তাঁর ২৫০তম জন্ম জয়ন্তী বর্ষকে আমরা একটি উৎসব রূপে পালন করি, এটা আমাদের সকলের কর্তব্য।

বন্ধুগণ,

 

দেশের ঐতিহ্যের সংরক্ষণ, আমাদের মহাপুরুষদের, আমাদের ইতিহাসের এই বর্ণন রাষ্ট্র নির্মাণের প্রধান অঙ্গ।

 

এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে ব্রিটিশ শাসনকালে এবং স্বাধীনতার পরও দেশের যে ইতিহাস লেখা হয়েছে সেই ইতিহাসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে তেমনভাবে দেখানো হয়নি।

 

বন্ধুগণ,

 

গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৩ সালে তাঁর একটি নিবন্ধে যা লিখেছেন আমি সেটি এখানে উল্লেখ করতে চাই। তিনি লিখেছেন, “ভারতের ইতিহাস এটা নয় যা আমরা পরীক্ষার জন্য পড়ি এবং মুখস্থ করি। কিছু মানুষ বাইরে থেকে এসে বাবা ছেলেকে হত্যা করে, ভাই ভাইকে হত্যা করে, সিংহাসনের জন্য লড়াই করে। এটি ভারতের ইতিহাস নয়। এই ইতিহাসে একথার কোন বর্ণনা নেই যে তখন ভারতের নাগরিক, ভারতের জনগণ কি করছিলেন। তাঁদের কি কোন অস্তিত্বই ছিল না।”

 

বন্ধুগণ,

 

গুরুদেব তাঁর নিবন্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ দিয়েছিলেন ঘূর্নিঝড় ও তুফানের। তিনি লিখেছিলেন, “যত তুফানই আসুক না কেন, তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল সেই সঙ্কটকালে সেখানকার মানুষ কিভাবে সেই তুফানের মোকাবিলা করেছেন।”

 

বন্ধুগণ, গুরুদেব একথাও বলেছেন যে, “ঐতিহাসিকরা সেই তুফানকে ঘরের বাইরে থেকেই দেখেছেন। যাঁরা সেই ঝড়-তুফানের মোকাবিলা করছিলেন, ঐ ইতিহাসকারেরা তাঁদের বাড়িতে যাননি। এখন যিনি বাইরে থেকে দেখবেন তিনি তো শুধুই ঝড়-তুফান দেখতে পাবেন, তাই না !  তখন সেখানকার সমাজ, সেখানকার সাধারণ মানুষ কিভাবে সেই তুফানের মোকাবিলা করেছেন সেদিকে ইতিহাসবিদদের চোখ পড়েনি।”

 

এভাবে ভারতবর্ষের ইতিহাসের অনেক কথা বাদ থেকে গেছে।

বন্ধুগণ,

 

আমাদের দেশের ইতিহাস আর তার ঐতিহ্যের দিকে যদি নজর দিই তাহলে দেখব যে, কিছু মানুষ সেই ইতিহাসকে ক্ষমতার জন্য সংঘর্ষ, হিংসা, উত্তরাধিকারের জন্য লড়াই পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছেন। কিন্তু এসবের মাঝে গুরুদেব যেমন বলেছিলেন, ইতিহাসের আরেকটি মাত্রা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমি আপনাদের মাঝে সেই বিষয়টি তুলে ধরতে চাই।

 

বন্ধুগণ,

 

সেই অস্থিরতার সময়কালে, হিংসারপরিবেশে তাঁদের মোকাবিলা করা, দেশের চেতনাকে জাগ্রত রাখা, সামলে রাখা, তাঁকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

 

দশকের পর দশক, প্রজন্মের পর প্রজন্ম, শতাব্দীর পর শতাব্দী এ কাজ কারা করেছেন? আমাদের কলা, সাহিত্য, আমাদের সঙ্গীত, আমাদের মণীষী, আমাদের সাধু, আমাদের দার্শনিকেরা এই কাজ করেছেন।

 

আর সেজন্য, ভারতের প্রত্যেক প্রান্তে আপনারা নানারকম কলা ও সঙ্গীতের বিশেষ পরম্পরা দেখতে পাবেন।

 

ভারতের প্রত্যেক প্রান্তে মণীষী ও সাধুদেরপ্রভাব দেখতে পাবেন।

 

এই মণীষীদের বিচারধারা কলা ও সাহিত্যের ভিন্ন ভিন্ন স্বরূপ ইতিহাসকে নিজের মতো করে সমৃদ্ধ করেছে।

 

আপনারা সবাই এটা খুব ভালোভাবেই জানেন যে এই মহান ব্যক্তিরা ভারতের ইতিহাসের কয়েকটি বৃহত্তম সামাজিক সংস্কারের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

 

ভারতবাসী আদি শঙ্করাচার্য, থিরুনাবুক্কারাসার-এর মতো সাধু কবীরদের আশীর্বাদ পেয়েছে। অন্দাল, অক্কা মহাদেবী, ভগবান বশবেশ্বর, গুরুনানক দেবজির প্রদর্শিত পথ আজও আমাদের প্রেরণা যোগায়।

 

যখন ভারতের ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় ভক্তি আন্দোলন শুরু হয়েছে সেই দীর্ঘ কালখণ্ডে অনেক সাধু ও সংস্কারকদের রচিত গীত ও দর্শন তাকে সমৃদ্ধ করেছে। সন্ত কবীর, তুলসীদাস, একনাথ, নামদেব, সন্ত তুকারাম সমাজকে জাগ্রত করে গেছেন।

 

সমাজ পরিবর্তনের জন্য রাজা রামমোহন রায় এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রয়াস আজও ততটাই প্রেরণা যোগায়।

 

এভাবে আমরা জ্যোতিবা ফুলে, সাবিত্রীবাঈ ফুলে, গান্ধীজি, বাবাসাহেব আম্বেদকরের মতো অসংখ্য ব্যক্তিত্বকে ভারত ও ভারতের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করতে দেখি।

 

সামাজিক সংস্কার, সমাজের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সেই সময়ে নারী ক্ষমতায়নের জন্য এত প্রচেষ্টা এই রাষ্ট্র চেতনাকে জাগ্রত রাখারই তো প্রচেষ্টা ছিল।

 

আর যত নাম আপনারা দেখেছেন, অনেকের নাম আমি স্মরণ করতে পারিনি কিন্তু তাঁরা সাহিত্য, কলা এবং সঙ্গীতকে নিজেদের বার্তার মাধ্যম করে তুলেছেন। এটাই হল কলা, সঙ্গীত সাহিত্যের শক্তি।

 

তাঁরা অস্ত্রের শক্তিতে নয়, জনগণের মনে পরিবর্তন এনে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।

 

বন্ধুগণ,

 

কোন অঞ্চলের মানুষের ভাবনাই সেই অঞ্চলের আত্মার প্রতিনিধিত্ব করে। গীত, সঙ্গীত, কলা, সাহিত্যের মাধ্যমে যা বলা হয় সেটাই গণভাবনা।

 

রাজনীতিবিদ এবং সৈন্যশক্তি অস্থায়ী হয়। কিন্তু কলা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে যে জনভাবনা অভিব্যক্ত হয় সেটাই স্থায়ী প্রভাব ফেলে।

 

আর সেজন্য নিজেদের সমৃদ্ধ ইতিহাসকে, নিজেদের ঐতিহ্যকে সংরক্ষিত করা, সংবর্ধিত করা ভারতের জন্য, প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন এক সম্পদ যা আমাদের বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আলাদা করে।

 

বন্ধুগণ,

 

সংস্কৃতির সংরক্ষণ প্রসঙ্গে ডঃ মুখার্জি বলেছিলেন, “পশ্চিমী জ্ঞানের দরজা আমাদের জন্য খুলুক এতে আমাদের কোন সমস্যা নেই। আমাদের সমস্যা হল এই জ্ঞান ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজন ছিল উভয়ের মধ্যে একটি সমন্বয়ের, যাতে ভারতীয় সংস্কৃতিকে ছোট করে না দেখা হয়, তাকে শেষ করে না দেওয়া হয়।”

 

ডঃ মুখার্জির এই বক্তব্য সেই সময়েও গুরুত্বপূর্ণ ছিল আর আজও প্রাসঙ্গিক। আমাদের বিশ্বের প্রত্যেক সংস্কৃতি থেকে কিছু না কিছু শেখার থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যাতে ভারতীয় সংস্কৃতির মূল্যবোধে কোন আঁচড় না পড়ে।

 

বন্ধুগণ,

 

বঙ্গভূমিতে জন্মগ্রহণ করে বড় হয়ে ওঠা দেশের সুপুত্ররা, সাধুরা ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্বকে সর্বদা বুঝেছেন, তাঁদের বৌদ্ধিক নেতৃত্ব দিয়েছেন।

 

আকাশে যদিও একটাই চাঁদ জ্বলজ্বল করে কিন্তু বিশ্বকে ভারতের আলো দেখানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ অনেক চন্দ্র দিয়েছে। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, ঈশ্বরচন্দ্র, জগদীশ চন্দ্র, কেশবচন্দ্র, বিপীন চন্দ্র এমনই অনেক চন্দ্র ভারতের পরিচয়কে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছেন।

 

চৈতন্য মহাপ্রভু থেকে শুরু করে রাজা রামমোহন রায়, স্বামী বিবেকানন্দ এবং গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গোটা বিশ্বকে এবং সম্পূর্ণ ভারতকে জাগ্রত করার কাজ করেছেন।

 

এইসব মহাপুরুষেরা সমগ্র বিশ্বকে বলেছেন, ভারত আসলে কী, আর তার আসল শক্তি কী। তাঁরা ভারতবাসীকেও অনুভব করিয়েছেন যে আমাদের আসল পুঁজি আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের অতীতের জ্ঞান-বিজ্ঞান।

 

নজরুল ইসলাম এবং লালন ফকিরের কবিতা আর সত্যজিৎ রায়ের সিনেমাগুলি এই ভাবনাকে আরও বিস্তারিত করেছে।

 

বন্ধুগণ,

 

ভারতের জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং আদি পরিচয় দেশ এবং বিশ্বের সঙ্গে পরিচিত করানোর কাজ বাংলার মাটি যেভাবে করেছে, সেই ঐতিহ্য নতুন ভারতেও সঞ্চারিত করার দায়িত্ব আপনাদের সবার। এখানকার যুব সম্প্রদায়ের।

 

এখন সময় এসেছে যখন এখান থেকে প্রত্যেক ক্ষেত্রে নতুন এবং সক্ষম নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে যাঁরা গোটা বিশ্বে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

 

আমাদের সবাইকে স্বামী বিবেকানন্দের সেই উক্তি সর্বদা মনে রাখতে হবে যা তিনি মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজনের সঙ্গে বার্তালাপের সময় বলেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁদের বলেছিলেন – “এই বর্তমান শতাব্দী যতই আপনাদের হোক, কিন্তু একবিংশ শতাব্দী ভারতের হবে।”

 

স্বামী বিবেকানন্দের সেই বিশ্বাস, সেই সঙ্কল্পকে সিদ্ধ করতে আমদের সবাইকে, প্রত্যেক দেশবাসীকে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে নিরন্তর কাজ করে যেতে হবে।

 

আর এই অভিযানে যখন পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবিরা আপনাদের সমস্ত বন্ধুদের প্রাণশক্তি, আপনাদের আশীর্বাদ পাবেন, তখন সঙ্কল্পকে সিদ্ধ করার গতিও আরও বৃদ্ধি পাবে।

 

আমি নিজে এবং কেন্দ্রীয় সরকার আপনাদের প্রত্যেক পদক্ষেপ, আপনাদের প্রত্যেক প্রচেষ্টার পাশে থাকার চেষ্টা করব। আপনাদের থেকে শেখার চেষ্টা করব।

 

আপনারা যে আত্মীয়তার সঙ্গে আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন, সেজন্য আপনাদের সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

 

Explore More
৭৬তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর জাতির উদ্দেশে ভাষণের বঙ্গানুবাদ

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৬তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর জাতির উদ্দেশে ভাষণের বঙ্গানুবাদ
PM Modi's Surprise Visit to New Parliament Building, Interaction With Construction Workers

Media Coverage

PM Modi's Surprise Visit to New Parliament Building, Interaction With Construction Workers
...

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
সোশ্যাল মিডিয়া কর্নার 31 মার্চ 2023
March 31, 2023
শেয়ার
 
Comments

People Thank PM Modi for the State-Of-The-Art Additions to India’s Infrastructure

Citizens Express Their Appreciation for Prime Minister Modi's Vision of a New India