শেয়ার
 
Comments
স্মারক মুদ্রা ও ডাকটিকিট প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী
“নতুন সংসদ ভবন ১৪০ কোটি ভারতবাসীর আকাঙ্খা ও স্বপ্নের প্রতিফলন”
“এটি আমাদের গণতন্ত্রের মন্দির, যেখান থেকে সারা বিশ্বকে ভারতের সংকল্পগুলির বার্তা দেওয়া হবে”
“ভারত যখন এগোবে, সারা বিশ্বও তখন এগিয়ে চলবে”
“পবিত্র সেঙ্গলের মর্যাদা পুনরুদ্ধার করার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছে। সদনের কাজকর্ম চলার সময় এই সেঙ্গল আমাদের অনুপ্রাণিত করবে”
“আমাদের গণতন্ত্রই আমাদের অনুপ্রেরণা, আমাদের সংবিধান আমাদের সংকল্প নিতে সাহায্য করে”
“অমৃতকালে আমাদের ঐতিহ্যকে রক্ষা করে উন্নয়নের নতুন জোয়ার সঞ্চার করতে হবে”
“আজকের ভারত দাসত্বের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং প্রাচীন যুগের শিল্পকলাকে সমাদর করছে। এই নতুন সংসদ ভবন সেই প্রয়াসের একটি আদর্শ উদাহরণ”
“এই ভবনের প্রতিটি উপাদানে আমরা এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারতের ছোঁয়া পাই”
“এই প্রথম নতুন সংসদ ভবনে শ্রমিকদের অবদানের কথা চিরস্মরণীয় করে রাখা হবে”
“নতুন সংসদ ভবনের প্রতিটি ইঁট, প্রতিটি দেওয়াল, প্রতিটি উপাদান দরিদ্র মানুষদের কল্যাণে নিয়োজিত হবে”
“১৪০ কোটি ভারতবাসীর সংকল্পের ফল নতুন এই সংসদ ভবন”

লোকসভার মাননীয় অধ্যক্ষ শ্রী ওম বিড়লা জি, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান শ্রী হরিবংশ জি, মাননীয় সংসদ সদস্যগণ, সকল প্রবীণ জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ, অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং আমার প্রিয় দেশবাসী!

প্রতিটি দেশের উন্নয়ন যাত্রায় কিছু মুহূর্ত আসে, যা চিরকাল অমর হয়ে থাকে। কিছু তারিখ কালের কপালে ইতিহাসের অমোঘ স্বাক্ষর হয়ে থাকে। আজ, ২৮ মে, ২০২৩ এর এই দিনটি তেমনই একটি শুভ উপলক্ষের দিন। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আমাদের দেশ অমৃত মহোৎসব উদযাপন করছে। এই অমৃত মহোৎসবে ভারতের জনগণ তাঁদের গণতন্ত্রকে উপহার দিয়েছে সংসদের এই নতুন ভবনটি। আজ সকালে সংসদ ভবন কমপ্লেক্সে সর্বাত্মক প্রার্থনা অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। ভারতীয় গণতন্ত্রের এই সোনালী মুহূর্তটির জন্য আমি সমস্ত দেশবাসীকে অভিনন্দন জানাই।

বন্ধুগণ,

এটি শুধুই একটি ভবন নয়। এটি ১৪০ কোটি ভারতবাসীর আকাঙ্খা ও স্বপ্নের প্রতিফলন। এটি আমাদের গণতন্ত্রের মন্দির যা বিশ্বকে ভারতের সংকল্পের বার্তা দেয়। এই নতুন সংসদ ভবনটি বাস্তবতার সঙ্গে পরিকল্পনা, নির্মাণের সঙ্গে নীতি, কর্মশক্তির সঙ্গে ইচ্ছাশক্তি, অর্জনের সঙ্গে সমাধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল হিসেবে প্রমাণিত হবে। এই নতুন ভবনটি হয়ে উঠবে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যম। এই নতুন ভবনটি স্বনির্ভর ভারতের সূর্যোদয়ের সাক্ষী হবে। এই নতুন ভবনটি একটি উন্নত ভারতের সংকল্পের পরিপূর্ণতা দেখতে পাবে। নতুন ও পুরাতনের সহাবস্থানের জন্যও এই নতুন ভবনটি একটি আদর্শ স্থান হয়ে উঠবে।

বন্ধুগণ,

নতুন পথে হাঁটার মাধ্যমেই নতুন নতুন নিদর্শন তৈরি হয়। আজ নতুন ভারত নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করছে, নতুন নতুন পথ তৈরি করছে। নতুন উদ্যম আছে, নতুন উদ্দীপনা আছে। নতুন দিক আছে, নতুন দৃষ্টি আছে। নতুন সংকল্প আছে, নতুন বিশ্বাস আছে। আর আজ আবারও গোটা বিশ্ব ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে। ভারতের সংকল্প, ভারতের মানুষের সংকল্প পূরণের দৃঢ়তা, ভারতবাসীর ভাবনার প্রখরতা, ভারতীয় জনশক্তির জিজীবিষা, শ্রদ্ধা ও আশার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। যখন ভারত এগিয়ে যায়, তখন বিশ্বও এগিয়ে যায়। সংসদের এই নতুন ভবন ভারতের উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বের উন্নয়নকেও আহ্বান জানাবে।

বন্ধুগণ,

আজ এই ঐতিহাসিক উপলক্ষ্যে, কিছুদিন আগেই সংসদের এই নতুন ভবনে পবিত্র সেঙ্গোলও স্থাপিত হয়েছে। মহান চোল সাম্রাজ্যে এই সেঙ্গোলকে কর্তব্য পথের, সেবা পথের এবং জাতির অগ্রগতির পথের প্রতীক বলে মনে করা হত। রাজাজি এবং আদিনমের সন্ন্যাসীদের পথ নির্দেশে এই সেঙ্গোল ক্রমে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হয়ে ওঠে। তামিলনাড়ু থেকে বিশেষভাবে আগত আদিনমের সন্ন্যাসীরা আজ সকালেই সংসদ ভবনে আমাদের আশীর্বাদ জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন। আমি আরেকবার তাঁদেরকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই। তাঁদেরই নির্দেশিত পদ্ধতিতে আমাদের লোকসভায় এই পবিত্র সেঙ্গোল স্থাপিত হয়েছে। সম্প্রতি এই সেঙ্গোলের ইতিহাস সংক্রান্ত অনেক তথ্যই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আমি এবিষয়ে বিস্তারিত বলতে চাই না। তবে আমি বিশ্বাস করি যে, এটা আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা এই পবিত্র সেঙ্গোলের এই মহান গরিমা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। এর মান মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি। যখনই এই নতুন সংসদ ভবনে অধিবেশন শুরু হবে, এই সেঙ্গোল আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করতে থাকবে।

বন্ধুগণ,

ভারত শুধুমাত্র একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়, এই দেশ গণতন্ত্রের জননীও, এই দেশ মাদার অফ ডেমোক্রেসি। ভারত আজ আন্তর্জাতিক গণতন্ত্রের একটি বড় ভিত্তি। গণতন্ত্র আমাদের জন্য নিছকই একটি ব্যবস্থা নয়, গণতন্ত্র আমাদের জন্য একটি শিষ্টাচার, একটি দর্শন, একটি পরম্পরা। আমাদের বেদ আমাদেরকে বিভিন্ন সভা ও সমিতির গণতান্ত্রিক আদর্শ শেখায়। মহাভারতের মতো গ্রন্থগুলিতে গণসমূহ এবং গণতন্ত্র ব্যবস্থার উল্লেখ পাওয়া যায়। আমরা বৈশালীর মতো গণতন্ত্রকে পুনঃসঞ্জীবিত করে দেখিয়েছি। আমরা ভগবান বাসবেশ্বরের অনুভব মন্টপাকে আমাদের গৌরব বলে মনে করি। তামিলনাড়ু থেকে পাওয়া ৯০০ খ্রিস্টাব্দের শিলালিপি আজও প্রত্যেককে বিস্মিত ও বিমুগ্ধ করে। আমাদের গণতন্ত্রই আমাদের প্রেরণা, আমাদের সংবিধানই আমাদের সংকল্প। এই প্রেরণা, এই সংকল্পের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি যদি কিছু থেকে থাকে, তা হল আমাদের সংসদ। আর এই সংসদ দেশের যে সমৃদ্ধ সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে তার প্রকাশ আমরা দেখতে পাই এই মন্ত্রে –

শেতে নিপদ্দ্য-মানস্য চরাতি চরতো ভগঃ চরৈবেতি, চরৈবেতি-চরৈবেতি।।

অর্থাৎ যে থেমে যায়, তাঁর ভাগ্যও থেমে যায়। কিন্তু যে চলতে থাকে তাঁর ভাগ্যও চলতে থাকে, দৃঢ়ভাবে লক্ষ্যগুলিকে স্পর্শ করে। আর সেজন্যই -  চলতে থাকো, চলতে থাকো, চলতে থাকো!  দীর্ঘ কয়েক শতাব্দীর দাসত্বের পর, আমাদের ভারত অনেক কিছু হারিয়ে তার নতুন যাত্রা শুরু করেছিল। সেই যাত্রা কত না উত্থান পতনের মাধ্যমে, কত না সমস্যার মোকাবিলা করে, আজ স্বাধীনতার অমৃতকালে প্রবেশ করেছে। স্বাধীনতার এই অমৃতকাল আমাদের ঐতিহ্যকে সংরক্ষণের পাশাপাশি উন্নয়নের নতুন মাত্রা গড়ে তোলার অমৃতকালও। স্বাধীনতার এই অমৃত কাল দেশকে নতুন দিশা প্রদানকারী অমৃতকাল। স্বাধীনতার এই অমৃতকাল আমাদের ১৪০ কোটি মানুষের স্বপ্নকে, অসংখ্য আকাঙ্খাকে পূর্ণ করার অমৃতকাল। এই অমৃতকালের আহ্বান হল –

মুক্ত মাতৃভূমির চাই নতুন সম্মান।
নতুন পর্বের জন্য চাই নতুন প্রাণ।
মুক্ত গীত গাওয়া হচ্ছে, নবীন রাগ চাই।
নতুন পর্বের জন্য নতুন প্রাণ চাই।

আর সেজন্য ভারতের ভবিষ্যতকে উজ্জ্বল করে তুলতে এই কর্মস্থলকেও ততটাই নবীন হতে হবে, আধুনিক হতে হবে।

বন্ধুগণ,

একটা সময় ছিল যখন ভারত বিশ্বের সর্বাপেক্ষা সমৃদ্ধ এবং বৈভবশালী দেশগুলির অন্যতম ছিল। ভারতের প্রতিটি নগর থেকে শুরু করে প্রত্যেক ভবনের প্রতিটি মহলে, ভারতের মন্দিরগুলি থেকে শুরু করে প্রত্যেক মূর্তিতে, ভারতের বাস্তুকলা এবং ভারতের বিশেষজ্ঞতার জয় জয়কার ছিল। সিন্ধু সভ্যতার নগর নিয়োজন থেকে শুরু করে মৌর্য সভ্যতার সময়কার বিবিধ স্তম্ভ এবং স্তূপে, চোল শাসকদের নির্মিত অনিন্দ্যসুন্দর শিল্পসুষমামন্ডিত মন্দিরগুলি থেকে শুরু করে বিবিধ নয়নাভিরাম জলাশয় এবং বড় বড় বাঁধ পর্যন্ত - সর্বত্র ভারতের বাস্তুকারদের দক্ষতা যুগে যুগে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পর্যটকদের অবাক করে দিতো। কিন্তু কয়েকশো বছরের দাসত্ব আমাদের এই গৌরবকে হরণ করেছে। একটি এমন সময়ও এসেছিল যখন আমরা অন্যান্য দেশের বিভিন্ন নির্মাণকে দেখে মুগ্ধ হতে শুরু করি। একবিংশ শতাব্দীর নতুন ভারত, দৃঢ় আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ ভারত, এখন দাসত্বের সেই ভাবনাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ ভারত, প্রাচীনকালের সেই গৌরবময় সংস্কৃতির ধারাকে আরেকবার নিজের দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। আর সংসদের এই নতুন ভবন এই প্রচেষ্টার জীবন্ত প্রতীক হয়ে উঠেছে। আজ নতুন সংসদ ভবনকে দেখে প্রত্যেক ভারতবাসীর মন গর্বে ভরে উঠেছে। এই ভবনে ঐতিহ্যও আছে, বাস্তুও আছে। এতে কলাকৃতির সম্ভারও আছে, দক্ষতাও আছে। এতে সংস্কৃতিও আছে আর সংবিধানের স্বরও আছে।

আপনারা দেখছেন যে লোকসভার আভ্যন্তরীন অংশে যে দিকেই তাকান না কেন, দেখতে পাবেন যে এটি জাতীয় পক্ষী ময়ূরের মূল ভাবনা নিয়ে সজ্জিত হয়েছে। আজ রাজ্যসভার আভ্যন্তরীন সজ্জা জাতীয় ফুল পদ্মের মূল ভাবনা নিয়ে তৈরি হয়েছে। আর সংসদ ভবনের প্রাঙ্গণে রয়েছে আমাদের জাতীয় বৃক্ষ বটগাছ। আমাদের দেশের ভিন্ন ভিন্ন অংশে যে বৈচিত্র্য রয়েছে এই নতুন ভবনে তার সবকিছুকে সমাহিত করা হয়েছে। এতে রাজস্থান থেকে আনা গ্রেনাইট এবং বেলে পাথর লাগানো হয়েছে। আর এই যে কাঠের কারুকার্য আপনারা দেখছেন এগুলি এসেছে মহারাষ্ট্র থেকে। এই ভবনে বিছানো সমস্ত কার্পেটগুলি উত্তরপ্রদেশের ভাদোহির কারিগররা নিজেদের হাতে বুনেছেন। একভাবে এই ভবনের কণায় কণায় ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর ভাবনা পরিলক্ষিত হবে।

বন্ধুগণ,

সংসদের প্রাক্তন ভবনে আমাদের সকলের জন্য নিজেদের কাজ দ্রুত সম্পূর্ণ করা কতটা কঠিন হয়ে উঠেছিল, তা আমরা সবাই জানি। প্রযুক্তিগত নানা সমস্যা ছিল, বসার জায়গার স্থান সঙ্কুলান হচ্ছিল না। সেই জন্য বিগত দুই দশক ধরে নানা স্তরে এই আলোচনা হচ্ছিল যে দেশের স্বার্থে একটি নতুন সংসদ ভবনের প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের এটাও দেখতে হবে যে আগামী দিনে জনপ্রতিনিধির আসন সংখ্যা বাড়বে, আরও বেশি সংসদ সদস্যকে এখানে বসতে হবে, তখন তাঁরা কোথায় বসবেন?

সেজন্য এটা সময়ের দাবি ছিল যে সংসদের নতুন ভবন নির্মাণ করতে হবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত এই অনিন্দ্যসুন্দর ভবনটিতে সমস্তরকম আধুনিক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। আপনারা দেখতে পারছেন যে এই সময়েও এই সভাকক্ষে সূর্যের আলো সরাসরি আসছে। যত বেশি সম্ভব বিদ্যুৎ সাশ্রয় থেকে শুরু করে চারিদিকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির গ্যাজেটস – সুপরিকল্পিতভাবে এই সবকিছুর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

বন্ধুগণ,

আজ সকালেই আমি এই নতুন সংসদ ভবনের নির্মাতা শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মিলিত হয়েছি। এই সংসদ ভবন প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। তাঁরা এই অনিন্দ্যসুন্দর নতুন ভবন নির্মাণে নিজেদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করেছেন। আমি আনন্দিত যে তাঁদের শ্রমের প্রতি সমর্পিত একটি ডিজিটাল গ্যালারিও এই নতুন সংসদ ভবনে নির্মাণ করা হয়েছে। আর এমনটি সম্ভবত বিশ্বে প্রথমবার হয়েছে যে সংসদ ভবন নির্মাণকারী শ্রমিকদের অবদানকেও সেই ভবনের গ্যালারিতে অমর করে রাখা হয়েছে।

বন্ধুগণ,

যে কোনো বিশেষজ্ঞ যদি গত নয় বছরের পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখেন, তাহলে তাঁরা পাবেন যে এই নয় বছর ভারতের নব নির্মাণের নয় বছর, গরিব কল্যাণের নয় বছর। আজ আমরা সংসদের নতুন ভবনের নির্মাণ নিয়ে গর্ব করছি, তেমনি বিগত ৯ বছর ধরে দেশের ৪ কোটি গৃহহীনের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার আনন্দেও উজ্জীবিত হয়েছি। আজ যখন আমরা এই অনিন্দ্যসুন্দর ভবন দেখে নিজেদের মাথা উঁচু করতে পারছি, তখন আমার মনে বিগত ৯ বছরে গড়ে ওঠা ১১ কোটি শৌচালয়ের আনন্দও রয়েছে। যে শৌচালয়গুলি ভারতের মা ও বোনেদের আত্মসম্মানকে রক্ষা করেছে, তাঁদের মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখিয়েছে। আজ যখন আমরা এই সংসদ ভবনে বিভিন্ন পরিষেবার কথা বলছি, তখন আমি আনন্দিত যে বিগত ৯ বছরে আমরা দেশের গ্রামগুলিকে যুক্ত করার জন্য ৪ লক্ষ কিলোমিটারেরও বেশি সড়কপথ নির্মাণ করেছি। আজ যখন আমরা এই পরিবেশ-বান্ধব ভবন দেখে আনন্দিত, তখন আমি দেশের সর্বত্র একেক বিন্দু জল সঞ্চয়ের জন্য ৫০ হাজারেরও বেশি অমৃত সরোবর নির্মাণের জন্য আনন্দিত। আজ যখন আমরা এই নতুন সংসদ ভবনের নব নির্মিত লোকসভা এবং রাজ্যসভার সভা কক্ষ দেখে আনন্দিত, তখন আমি সারা দেশে ৩০ হাজারেরও বেশি নতুন পঞ্চায়েত ভবন নির্মাণের সাফল্যে তৃপ্ত। অর্থাৎ পঞ্চায়েত ভবন থেকে শুরু করে সংসদ ভবন গড়ে তোলা পর্যন্ত আমাদের নিষ্ঠা এবং প্রেরণা একরকমই ছিল। একটাই ছিল, আর তা হল – দেশের উন্নয়ন, দেশের জনগণের উন্নয়ন।

বন্ধুগণ,

আপনাদের হয়তো মনে আছে যে গত ১৫ আগস্টে আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকে ঘোষণা করেছিলাম – এটাই উপযুক্ত সময়, এটাই যথার্থ সময়। প্রত্যেক দেশের ইতিহাসে এমন একটা সময় আসে, যখন দেশের চেতনা নতুনভাবে জেগে ওঠে। ভারতের স্বাধীনতার ২৫ বছর আগে; ১৯৪৭ সালের আগের ২৫ বছরের কথা স্মরণ করুন। স্বাধীনতা প্রাপ্তির ২৫ বছর আগে এমনই একটি সময় এসেছিল। গান্ধীজির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন গোটা দেশকে একটি আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ করে তুলেছিল। গান্ধীজি স্বরাজের সংকল্পের বার্তা সঞ্চারের মাধ্যমে প্রত্যেক ভারতবাসীকে নিজের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। এটা সেই সময় ছিল যখন প্রত্যেক ভারতীয়, স্বাধীনতার জন্য সর্বস্ব পণ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এর ফলে আমরা ১৯৪৭ সালে ভারতকে স্বাধীন দেশ হিসেবে পেয়েছি। স্বাধীনতার এই অমৃত কালও ভারতের ইতিহাসে এমনই একটি পর্যায়। আজ থেকে ২৫ বছর পর ভারত তার স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্ণ করবে। আমাদের হাতেও ২৫ বছরের অমৃত কালখণ্ড রয়েছে। এই ২৫ বছরে আমাদের সকলের উদ্যোগে ভারতকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমি জানি লক্ষ্যটা অনেক বড় এবং কঠিনও। কিন্তু প্রত্যেক দেশবাসী যদি আজ থেকে এর জন্য পূর্ণ শক্তি দিয়ে কাজ করেন, নতুন শপথ নেন, সংকল্প গ্রহণ করেন, নতুন গতিতে এগিয়ে যান, তাহলে এই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব। ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে যে আমাদের ভারতীয়দের আত্মবিশ্বাস শুধুই ভারতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম সেই সময় বিশ্বের অনেক দেশকে একটি নতুন চেতনায় উজ্জীবিত করে তুলেছিল। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে ভারত স্বাধীন হওয়ার পাশাপাশি অনেক দেশ স্বাধীনতার পথে এগিয়ে গিয়েছিল। ভারতের আত্মবিশ্বাস অন্যান্য দেশের আত্মবিশ্বাসকে সুদৃঢ় করেছে। আর সেজন্য ভারতের মতো বৈচিত্র্যময় দেশ, এত বড় জনসংখ্যার দেশ, এত বেশি সমস্যার বিরুদ্ধে লড়তে থাকা দেশ, যখন একটি আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যায় তখন তা থেকে বিশ্বের অনেক দেশ প্রেরণা গ্রহণ করে। ভারতের প্রতিটি সাফল্য, আগামী দিনে বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন ভূখণ্ডে, বিভিন্ন দেশের সাফল্য রূপে প্রেরণার কারণ হয়ে উঠবে। আজ যদি ভারত দ্রুত গতিতে দারিদ্র দূরীকরণে সফল হয়, তাহলে অনেক দেশ দারিদ্র দূরীকরণের ক্ষেত্রে আমাদের থেকে প্রেরণা পাবে। ভারতের উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার সংকল্পও অনেক দেশকে উন্নত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রেরণা যোগাবে। সেজন্য উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতের দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়।

আর বন্ধুগণ,

যে কোনো সাফল্যের প্রথম শর্ত হল আমরা সফল হবো এই আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। আমি নিশ্চিত যে, আমাদের এই নতুন সংসদ ভবন এই আত্মবিশ্বাসকে নতুন উচ্চতা প্রদান করবে। এই এই নতুন সংসদ ভবন নতুন ভারত নির্মাণের পথে আমাদের সকলকে নতুন প্রেরণা যোগাবে। এই সংসদ ভবন প্রত্যেক ভারতবাসীর মনে কর্তব্যভাব জাগিয়ে তুলবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই নতুন সংসদ ভবনে যে জন প্রতিনিধিরা বসবেন, তাঁরা নতুন প্রেরণা নিয়ে গণতন্ত্রকে নতুন দিশা প্রদানের চেষ্টা করবেন। আমাদের ‘নেশন ফার্স্ট’ বা দেশ সর্বাগ্রে এই ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে – ‘ইদং রাষ্ট্রায় ইদং ন মম’ আমাদের কর্তব্য পথকে সর্বোপরি রাখতে হবে - ‘কর্তব্যমেব কর্তব্যং, অকর্তব্যং ন কর্তব্যং’। আমাদের নিজেদের ব্যবহারের মাধ্যমে উদাহরণ গড়ে তুলতে হবে - ‘যদ্দ্যদা – চরতি শ্রেষ্ঠঃ তত্ত্বদেব ইতরো জনঃ’। আমাদের নিরন্তর নিজেদের সংস্কার করে যেতে হবে – উদ্ধরেত আত্মনা আত্মনম্। আমাদের নিজেদের নতুন নতুন পথ নিজেদেরকেই তৈরি করতে হবে – ‘অপ্প দীপো ভবঃ’। আমাদের নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে, তপস্যা করতে হবে – ‘তপসোঁ হি পরম নাস্তি, তপসা ভিন্দতে মহত’। আমাদের জনকল্যাণকেই নিজেদের জীবনের মন্ত্র করে তুলতে হবে – ‘লোকহিতম মম করনীয়ম’। যখন সংসদের এই নতুন ভবনে আমরা নিজেদের দায়িত্বগুলি শততার সঙ্গে পালন করবো তখন দেশবাসীও নতুন প্রেরণা পাবেন।

বন্ধুগণ,

বিশ্বের সবচাইতে বড় গণতন্ত্রকে এই নতুন সংসদ ভবন একটি নতুন প্রাণশক্তি প্রদান করবে। নতুন শক্তিতে মহীহান করে তুলবে। আমাদের শ্রমিকদের পরিশ্রম ও ঘামে এই সংসদ ভবন অনিন্দ্যসুন্দর হয়ে উঠেছে। এখন আমাদের সমস্ত সাংসদদের দায়িত্ব হল এই ভবনটিকে আমরা নিজেদের সমর্পণের মাধ্যমে আরও বেশি দিব্য করে তুলবো। একটি রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের সমস্ত ১৪০ কোটি ভারতবাসীর সংকল্পই এই নতুন সংসদ ভবনের প্রাণভোমরা হয়ে উঠবে। এখানে সম্পাদিত সমস্ত সিদ্ধান্ত আগামী কয়েক শতাব্দীকে সজ্জিত ও সংরক্ষিত রাখবে। এখানে সম্পাদিত সমস্ত সিদ্ধান্ত আমাদের আগামী কয়েক প্রজন্মের মানুষদের ক্ষমতায়িত করতে সাহায্য করবে। এখানে সম্পাদিত প্রতিটি সিদ্ধান্ত ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভিত্তি হবে। এদেশের গরিব, দলিত, পীড়িত, পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন জনজাতি, দিব্যাঙ্গ এবং সমাজের সমস্ত বঞ্চিত পরিবারের ক্ষমতায়নকে সুনিশ্চিত করবে। বঞ্চিতদের অগ্রাধিকার দেওয়ার পথও এখান থেকেই খুলবে। এই নতুন সংসদ ভবনের প্রত্যেক দেওয়াল, প্রতিটি ইঁট, এর প্রতিটি বালুকাকণা গরিব মানুষের কল্যাণে সমর্পিত। আগামী ২৫ বছরে সংসদের এই নতুন ভবনে যত নতুন আইন প্রণয়ন হবে, তা ভারতকে উন্নত ভারতের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই নতুন সংসদ ভবনে যত নতুন আইন প্রণয়ন হবে, তা ভারতকে সম্পূর্ণরূপে দারিদ্র দূরীকরণে সাহায্য করবে। এই নতুন সংসদ ভবনে যে নতুন আইনগুলি প্রণয়ন হবে, তা দেশের যুব শক্তির জন্য, মহিলাদের জন্য নতুন নতুন কাজের সুযোগ গড়ে তুলবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ভারতের এই নতুন সংসদ ভবন, নতুন ভারত সৃষ্টির ভিত্তি হয়ে উঠবে। একটি সমৃদ্ধ, শক্তিশালী এবং উন্নত ভারত, নীতি, ন্যায়, সত্য, মর্যাদা এবং কর্তব্য পথে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে চলা ভারত। আমি সমস্ত ভারতবাসীকে এই নতুন সংসদ ভবনের জন্য আবেকবার অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। ধন্যবাদ!

Explore More
ভারতের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে লালকেল্লার প্রাকার থেকে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

জনপ্রিয় ভাষণ

ভারতের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে লালকেল্লার প্রাকার থেকে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
View: How PM Modi successfully turned Indian presidency into the people’s G20

Media Coverage

View: How PM Modi successfully turned Indian presidency into the people’s G20
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
PM thanks all Rajya Sabha MPs who voted for the Nari Shakti Vandan Adhiniyam
September 21, 2023
শেয়ার
 
Comments

The Prime Minister, Shri Narendra Modi thanked all the Rajya Sabha MPs who voted for the Nari Shakti Vandan Adhiniyam. He remarked that it is a defining moment in our nation's democratic journey and congratulated the 140 crore citizens of the country.

He underlined that is not merely a legislation but a tribute to the countless women who have made our nation, and it is a historic step in a commitment to ensuring their voices are heard even more effectively.

The Prime Minister posted on X:

“A defining moment in our nation's democratic journey! Congratulations to 140 crore Indians.

I thank all the Rajya Sabha MPs who voted for the Nari Shakti Vandan Adhiniyam. Such unanimous support is indeed gladdening.

With the passage of the Nari Shakti Vandan Adhiniyam in Parliament, we usher in an era of stronger representation and empowerment for the women of India. This is not merely a legislation; it is a tribute to the countless women who have made our nation. India has been enriched by their resilience and contributions.

As we celebrate today, we are reminded of the strength, courage, and indomitable spirit of all the women of our nation. This historic step is a commitment to ensuring their voices are heard even more effectively.”