আখ চাষিদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরোহিত্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটির বৈঠকে ২০২১-২২ চিনি মরশুমে আখের ন্যায্য ও লাভজনক মূল্য (ফেয়ার অ্যান্ড রেমুনারেটিভ প্রাইস-এফআরপি) অনুমোদিত হয়েছে। কুইন্টাল প্রতি ২৯০ টাকা করে বর্তমান চিনি মরশুমে আখ চাষিদের দেওয়া হবে। এই মূল্য নির্ধারণের ফলে আখ চাষিদের স্বার্থ যথাযথভাবে সুরক্ষিত হবে। কৃষকরা ২০২১-২২ চিনি মরশুমে প্রতি কুইন্টালে আখ বিক্রি করে ২৭৫ টাকা ৫০ পয়সা পাবেন। বর্তমান মরশুমে এর বাজারদর কুইন্টাল প্রতি ২৭০ টাকা ৭৫ পয়সা।
২০২১-২২ চিনি মরশুমে আখের উৎপাদন মূল্য নির্ধারিত হয়েছে কুইন্টাল প্রতি ১৫৫ টাকা। সরকার নির্ধারিত এফআরপি কুইন্টাল প্রতি ২৯০ টাকা হওয়ার ফলে উৎপাদন ব্যায়ের থেকে কৃষক বেশি পরিমাণ অর্থ পাবেন। এর ফলে কৃষি কাজে ব্যয় হওয়া অর্থের থেকে ৫০ শতাংশ বেশি হারে কৃষক তার ফসলের দাম পাবেন।
২০২০-২১ চিনি মরশুমে চিনি কলগুলি কৃষকদের থেকে ২৯৭৬ লক্ষ টন আখ কিনেছিল। এর জন্য ব্যয় হয়েছে ৯১ হাজার কোটি টাকা। এযাবৎকালের হিসেবে এই মূল্য সর্বোচ্চ। বর্তমানে ধানের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের পর আখের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সবথেকে বেশি। আখের উৎপাদন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনা করে ২০২১-২২ চিনি মরশুমে চিনি কলগুলি ৩০৮৮ লক্ষ টন আখ কেনার পরিকল্পনা করেছে। ফলে কৃষকরা ১ লক্ষ কোটি টাকা দাম পাবেন। সরকারের কৃষক বন্ধু নীতির ফলে আখ চাষিরা যথাযথ সময়ে তাঁদের ফসলের দাম পাবেন। আগামী পয়লা অক্টোবর থেকে ২০২১-২২ চিনি মরশুম শুরু হচ্ছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটি এফআরপি বাবদ যে মূল্য নির্ধারণ করেছে সেটি এই সময় থেকে কার্যকর হবে। এর ফলে ৫ লক্ষ আখ চাষি এবং তাঁদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরা ছাড়াও চিনি কলে প্রত্যক্ষভাবে কর্মরত আরও ৫ লক্ষ শ্রমিক উপকৃত হবেন। এঁরা ছাড়াও ক্ষেতমজুর, পরিবহণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এবং চিনি শিল্পের অনুসারী শিল্পগুলিও উপকৃত হবে।
প্রেক্ষাপট :
কৃষি মূল্য এবং ব্যয় সংক্রান্ত কমিশন সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে এবং আখ চাষে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর এফআরপি নির্ধারিত হয়েছে। ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ চিনি মরশুমে যথাক্রমে ৬.২ লক্ষ মেট্রিক টন, ৩৮ লক্ষ মেট্রিক টন এবং ৫৯.৬ লক্ষ মেট্রিক টন চিনি রপ্তানী হয়েছে। বর্তমান চিনি মরশুমে রপ্তানীর পরিমাণ ধার্য করা হয়েছিল ৬০ লক্ষ মেট্রিক টন। ৭০ লক্ষ মেট্রিক টন আখ রপ্তানী করার জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ২৩ আগস্টের হিসেব অনুযায়ী ইতিমধ্যেই ৫৫ লক্ষ মেট্রিক টন আখ পাঠানো হয়েছে। বিদেশে চিনি রপ্তানীর ফলে চিনি কলগুলির মূলধনের যোগান বাড়ে।
সরকার অতিরিক্ত আখ থেকে ইথানল উৎপাদনে উৎসাহ দিচ্ছে। এই ইথানল পরিবেশ বান্ধব জ্বালানী হিসেবে পেট্রোলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। এর ফলে বৈদেশিক অর্থের সাশ্রয় হয়। কারণ পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে আমদানি করার ফলে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। গত ২ বছর ধরে ইথানল উৎপাদনে আখ ব্যবহার হওয়ার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এ বছরও তা অব্যাহত আছে। ধারণা করা হচ্ছে ২০২১-২২ চিনি মরশুমে ইথানল উৎপাদনের জন্য ৩৫ লক্ষ মেট্রিক টন চিনি ব্যবহার করা হবে। ২০২৪-২৫ চিনি মরশুমে এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৬০ লক্ষ মেট্রিক টন। বিগত ৩টি চিনি মরশুমে তেল সংস্থাগুলির কাছে ইথানল বিক্রি করে চিনি কলের মালিকরা ২২ হাজার কোটি টাকা আয় করেছে। বর্তমান চিনি মরশুমে ইথানল বিক্রি করে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা আয় হবে। আগামী ৩ বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের মধ্যে পেট্রোলে ২০ শতাংশ ইথানল মেশানোর যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে সেটি পূরণ করা হলে এর চাহিদা আরো বাড়বে। ২০১৯-২০ চিনি মরশুমে আখ চাষিদের বকেয়া ছিল ৭৫ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৫ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এখন মাত্র ১৪৩ কোটি টাকা বকেয়া আছে। বর্তমান চিনি মরশুমে ৯০,৯৫৯ কোটি টাকা এখনও বকেয়া রয়েছে। ৮৬,২৩৮ কোটি টাকার আখের দাম হিসেবে কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। চিনি রপ্তানী এবং আখ থেকে ইথানল উৎপাদন হলে আখ চাষিরা সঠিক সময় তাদের ফসলের দাম পাবেন।